ওজন কমাতে কে না চায়! তবে না খেয়ে, কম খেয়ে কিম্বা অন্যের ডায়েট চার্ট ফলো করে ওজন কমানো এককথায় অসম্ভব। তারজন্য চাই পুষ্টিবিদ এর সঠিক পরামর্শ। ওজন কমানো সংক্রান্ত বিভিন্ন ভ্রান্ত ধারনা ও কিভাবে আপনি আপনার ওজন নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন রইলো তার গাইডলাইন।

ওজন কমানোর উপায় সম্পর্কে আলোচনা করতে গিয়ে প্রথমেই একটা কথা বলি যে তাড়াহুড়ো করে ওজন কমানোর চেষ্টা করবেন না। একদিনে যেমন আপনার ওজন বৃদ্ধি হয়নি, তেমনি একদিনে ওজন কমানোর চেষ্টা করবেন না। ওজন কমানো কিন্তু খুব কঠিন ব্যপার নয়। মানুষ একটু চেষ্টা করলেই ওজন কমাতে পারে। সময় মতো আর সঠিক পরিমাণ মতো খাওয়াদাওয়া করা ও শরীরচর্চা ই ওজন কমানোর প্রধান হাতিয়ার।
ওজন ও সুস্থতা পরস্পরের সঙ্গে সম্পর্কিত। ওজন কমাতে গেলে অপরিসীম র্ধৈযের প্রয়োজন। তার জন্য আপনি কি খাচ্ছেন, কতটুকু পরিমাণ শরীরচর্চা করছেন সেইদিকে খেয়াল রাখতে হবে। ওজন কমানোর জন্য প্রতিযোগিতায় নামবেন না। ধীরে ধীরে করাবেন। সঠিক পুষ্টিকর খাওয়ার অভ্যাস, সামান্য কিছু পরিশ্রম যেমন লিফট ব্যবহার না করে সিঁড়ি ব্যবহার করুন। প্রতিদিন হাটুন অন্তত ৩০ মিনিট।
ওজন কমাতে হলে পুষ্টিকর খাবারকে ব্যালেন্স করে খেতে হবে। একটা প্লেটে পরিমাণ মতো ভাত বা রুটি, পরিমাণ মতো ডাল, সবজি মাছ বা চিকেনের টুকরো, স্যালাড, টকদই সব খাবার ই খাবেন কিন্তু পরিমাণ মতো এবং পুষ্টির কথা মাথায় রেখে। চেষ্টা করবেন যতটা সম্ভব বাড়িতে তৈরি খাবার খেতে। ওজন কমানোর জন্য জল খুু গুরুত্বপূর্ণ। তাই পর্যাপ্ত পরিমাণে জল, ঘরে করা যেকোনো ফলের রস খেতে হবে, অবশ্যই যদি তাতে চিনি মেশানো না হয়।
আমার কাছে একটা প্রশ্ন বারবার আসে যে এখন আবহাওয়া পরিবর্তন হচ্ছে, বেশিরভাগই গরমপ্রধান দেশ, এই তীব্র গরমে কিভাবে আমরা সুস্থ থাকবো?
প্রথমেই বলব তীব্র গরম ও আর্দ্রতায় সুস্থ থাকার জন্য প্রথমে যেটা জরুরি পর্যাপ্ত পরিমাণে জল খাওয়া। আমাদের চারিপাশে কত রকমের পুষ্টিকর খাবার আছে তা আমরা নিজেরাই জানি না। খাবার সম্পর্কে অভিজ্ঞতা থাকা খুব গুরুত্বপূর্ণ । যারা ওজন কমানোর কথা ভাবছেন একটা গোটা ডিম তাদের জন্য খুবই উপকারী। ডিমে আছে ভিটামিন 'এ' যা দৃষ্টিশক্তি উন্নত করতে সাহায্য করে। হাড়কে ভালো রাখে। খাবার সম্পর্কে অনেক ভুল ধারণা মানুষের মনের মধ্যে আছে। যেমন ডিম খেলে নাকি ওজন বাড়ে, এই ধারনা থেকে এবার বেরোতে হবে। ওজন কমাতে চাওয়া মানুষের সংখ্যা কম নয়। দিনে একটি ডিম অবশ্যই একজন প্রাপ্তবয়স্ক থেকে বাচ্চা সবার খাওয়া উচিত। যাদের হার্টের সমস্যা রয়েছে তারা কুসুম বাদ দিয়ে খাবেন। এছাড়াও ডিমে আছে প্রচুর প্রোটিন। যা মানুষের শরীরের জন্য খুবই উপকারী। আর এটা মনে রাখতে হবে প্রোটিন খাওয়ার সঙ্গে ওজন বাড়ার কোনো সম্পর্ক নেই।
ওজন কমানোর আরেকটা খুব গুরুত্বপূর্ণ উপায় হল বাইরের খাবার যতটা সম্ভব বর্জন করা। প্রসেসড ফুড বা প্রক্রিয়াজাত খাবার বর্জন করুন। ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার খেতে হবে। প্রচুর ফল, শাক-সবজি খান।
বাড়তি ওজন অনেক ধরনের বিপদ ডেকে আনে। ওবেসিটি, ডায়াবেটিস, PCOD, PCOS মতো বিভিন্ন ধরনের অসুখ। অত্যাধিক ফাস্ট ফুড এবং সেডেন্টারি জীবন এর জন্য দায়ী। তাই আজ থেকে সচেতন হয়ে উঠুন আপনার ওজন নিয়ে। শুধু সুন্দর দেখতে লাগবে বলে ওজন কমানো না সঙ্গে সুস্থ থাকার জন্য ওজন নিয়ন্ত্রণ করাটা খুব জরুরি।
আপনি যা খাচ্ছেন সেটাই ওজন বাড়াতে বা কমাতে সাহায্য করে। সেই সঙ্গে ঠিকঠাক শরীর চর্চা করুন। আপনার শরীরে কত পরিমাণ খাবার প্রয়োজন এবং কত পরিমাণ খাবার খেলে আপনার ওজন কমবে বা ঠিক থাকবে, সেই জন্য পুষ্টিবিদ এর প্রয়োজন হয়। একজন পুষ্টিবিদ আপনি কোন পেশার সঙ্গে যুক্ত, রোজ কতটা পরিশ্রম করেন , আপনার উচ্চতা, কোনও ক্রনিক অসুখ আছে কিনা বিভিন্ন বিষয়ে জেনে আপনার দৈনন্দিন শারীরবৃত্তীয় কাজের জন্য আপনার কতটা ক্যালোরি প্রয়োজন সেই ভাবে আপনার খাদ্য তালিকা নির্ধারণ করেন।
এবার আসি সহজে কি ভাবে ওজন কমাবেন? দেখুন সহজে কিছু হয় না সব কিছুর জন্য চাই অধ্যবসায়। সহজে যেমন ওজন বাড়ানো সম্ভব নয় তেমনি সহজে ওজন কমানোর সম্ভব নয়। মানুষের সবার শরীর সমান হয় না। বিভিন্ন কারণে একজন মানুষের ওজন বাড়তে কমতে পারে। তাই প্রথমে জেনে নিতে হবে ঠিক কি কারণে তার ওজন বেড়েছে বা কমেছে। সেটা কি শুধু খাদ্যভ্যাস না কোনো হরমোনের তারতম্যের কারণে ওজন বেড়েছে, নাকি শারীরিক কোন অসুস্থতা। এর সঙ্গে বেপরোয়া জীবন যাপন, জাঙ্ক ফুড খাওয়ার প্রবনতা, ক্যালোরি মেপে না খাওয়া ইত্যাদি। অনেকে মনে করেন আমি বাইরের কাজ, সৎসারের কাজ করি সারাদিন দৌড় ঝাপ করা হয় তা সত্ত্বেও আমার কেন ওজন বাড়ছে? আমি বলব এসব কাজ ছাড়াও আমাদের শরীর কে সচল রাখার জন্য আলাদা করে শরীর চর্চা করতে হবে।
একজন সুস্থ মানুষের প্রতিদিন ১০,০০০ স্টেপ হাটা উচিত। একজন মানুষের মেটাবলিজম কত ভালো তার উপর নির্ভর করে ওজন কতটা কমানো যাবে। যখনই ওজন কমানোর প্রশ্ন আসে, একটাই কথা জিম করো না হলে যোগা করে ওজন কমাও। মানে জিম ও যোগব্যায়াম হল ওজন কমানোর মূল হাতিয়ার।
ক্যালোরি ইন এবং ক্যালোরি আউট এর মধ্যে সামঞ্জস্য রক্ষা করাই ওজন কমাবার প্রধান কথা। তবে শুধু মাত্র ব্যায়াম করলেই ওজন কমানো নাও যেতে পারে। তার সাথে প্রত্যেকের চেহারা এবং জীবনযাপনের পদ্ধতি অনুযায়ী সঠিক ডায়েট অত্যন্ত জরুরি।
আপনার ওজন কমাতে নিচের টিপস গুলি পালন করুন :
১.আপনার প্রতিদিনের ডায়েটে প্রোটিন যোগ করুন:
ওজন কমানোর ক্ষেত্রে, প্রোটিন হল পুষ্টির রাজা। আপনি যে প্রোটিন খান তা হজম এবং বিপাক করার সময় আপনার শরীর বাড়তি ক্যালোরি পোড়ায়, তাই একটি উচ্চ-প্রোটিন খাদ্য প্রতিদিন ৮০-১০০ ক্যালোরি পর্যন্ত বিপাকক্রিয়াকে বাড়িয়ে তুলতে পারে। প্রকৃতপক্ষে, কিছু গবেষণা দেখায়, যেসব লোকেরা উচ্চ-প্রোটিন যুক্ত ডায়েট নেয়, তারা প্রতিদিন ৪০০ ক্যালোরি পর্যন্ত কম খায়।
২.প্রক্রিয়াজাত খাবার এড়িয়ে চলুন:
প্রক্রিয়াজাত খাবারে সাধারণত অতিরিক্ত শর্করা, অতিরিক্ত চর্বি এবং ক্যালোরি থাকে।
প্রক্রিয়াজাত খাবারগুলি আপনাকে যতটা সম্ভব বেশি খাওয়ানোর জন্যই তৈরি করা হয়েছে। অপ্রক্রিয়াজাত খাবারের তুলনায় প্রক্রিয়াজাত খাবারে আসক্তি তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি।
৩. অতিরিক্ত চিনি গ্রহণ সীমিত করুন:
প্রচুর পরিমাণে চিনি খাওয়া হৃদরোগ, টাইপ ২ ডায়াবেটিস এবং ক্যান্সার সহ বিশ্বের কিছু রোগের জন্ম দেয়। গড়ে শহুরে মানুষেরা প্রতিদিন প্রায় ১৫ চা চামচ চিনি খায়। এই পরিমাণ সাধারণত বিভিন্ন প্রক্রিয়াজাত খাবারের মধ্যে লুকিয়ে থাকে, তাই আপনি এটি উপলব্ধি না করেও প্রচুর চিনি গ্রহণ করে ফেলেন। যোগ করা চিনির পরিমাণ কমিয়ে আনা আপনার ডায়েট উন্নত করার একটি দুর্দান্ত উপায়।
৪. প্রচুর পরিমাণে জল পান করুন:
এই দাবির সত্যতা রয়েছে যে পানীয় জল ওজন কমাতে সাহায্য করতে পারে। ৫০০ মিলিলিটার (17 oz) জল পান করলে এক ঘন্টার জন্য আপনার ক্যালোরি পোড়ানোর শক্তি ২৪-৩০% বৃদ্ধি পেতে পারে। খাবারের আগে জল পান করলে ক্যালোরির পরিমাণ কমে যেতে পারে, বিশেষ করে মধ্যবয়সী এবং বয়স্ক ব্যক্তিদের জন্য। প্রতিদিন অন্তত ৮ গ্লাস জল খান।
৫. তরল ক্যালোরি এড়িয়ে চলুন :
চিনিযুক্ত কোমল পানীয়, ফলের রস, চকোলেট, দুধ এবং এনার্জি ড্রিংকস এর মতো পানীয় থেকে তরল ক্যলোরি আসে। এই পানীয়গুলি স্বাস্থ্যের জন্য খারাপ। একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে যে শিশুদের মধ্যে স্থূলত্বের ঝুঁকি ৬০% বৃদ্ধি পেয়েছে, প্রতিদিন মিষ্টি পানীয় খাওয়ার জন্য।
৬. মিষ্টি ছাড়া গ্রিন টি পান করুন:
গ্রিন টি একটি প্রাকৃতিক পানীয়, যা অ্যান্টিঅক্সিডেন্টে ভরপুর, যা চর্বি গলিয়ে ওজন কমাতে সাহায্য করে। গ্রিন টি শক্তিব্যয় ৪% বৃদ্ধি করতে পারে এবং ৭% চর্বিগলানো বৃদ্ধি করতে পারে, বিশেষত ক্ষতিকারক পেটের চর্বি।
মাচা গ্রিন টি হল এক বিশেষ ধরণের সবুজ রঙের গুঁড়ো গ্রিনটি যা সাধারণ গ্রিনটির থেকে আরও বেশী শক্তিশালী ও কার্যকরী।
৭. বেশি করে ফল ও সবজি খান
ফল এবং শাকসবজি অত্যন্ত স্বাস্হ্যকর ওজন-হ্রাস-বান্ধব খাবার। জল, পুষ্টি এবং ফাইবার উচ্চ হওয়ার পাশাপাশি, তাদের সাধারণত খুব কম শক্তি ঘনত্ব থাকে। ফলে একসাথে অনেক খাবার না খেয়ে বারবার অল্প অল্প করে খাওয়া বেশী উপকারী।যারা বেশি ফল ও সবজি খায় তাদের ওজন তুলনামূলক কম হয়।
৮. ছোট খাবারের প্লেট ব্যবহার করুন :
কিছু গবেষণায় দেখা গেছে যে ছোট প্লেট ব্যবহার করলে আপনি তুলনামূলকভাবে কম খাবার খাবেন।প্লেটের আকার নির্বিশেষে লোকেরা তাদের প্লেটগুলোকে একইভাবে পূরণ করে বলে মনে করা হয়, তাই তারা ছোট প্লেটের চেয়ে বড় প্লেটে বেশি খাবার রাখে।
৯. প্রোবায়োটিক
ইদানিংকালে প্রোবায়োটিক নামটির কথা অনেকেই শুনেছেন। কিন্তু তার কাজ, উপকারিতা , কীভাবে কাজে লাগে সেই সম্বন্ধে অনেকেই জানেন না। প্রোবায়োটিক হল বিশেষ একপ্রকার উদ্ভিজ ফাইবার। যা আমাদের কোলমের মধ্যেকার উপকারী ব্যাকটেরিয়াকে পুষ্টি দেয়। আর এগুলো হল নন ডাইজেস্টেবল ফাইবার। পরিপাকতন্ত্রের সুস্থতা বজায় রাখতে সাহায্য করে এই ফাইবার। প্রতিদিন আমরা কিছু না কিছু প্রোবায়োটিক খাবার খাই। কিন্তু কোন খাবার প্রোবায়োটিকের তালিকাভুক্ত তা অনেকেই জানেন না। প্রোবায়োটিক খাবারের মূল উৎস হল ফাইবার। আর তাই যেসব খাবারে ফাইবার বেশি থাকে সেই সব খাবার প্রোবায়োটিক হিসেবে এত ভালো।
মস্তিষ্ক ও অন্ত্রের জন্য খুবই ভালো এই প্রোবায়োটিক । এছাড়াও অন্ত্রকে স্বাভাবিক রাখতে, অস্বাস্থ্যকর ওজন বৃদ্ধি প্রতিরোধ করতে, সুগার নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে প্রোবায়োটিক। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে এবং হৃদরোগ সংক্রান্ত সমস্যাতেও সাহায্য করে প্রোবায়োটিক।
দুটি খুব সহজ রেসিপি রইলো যা আপনারা দিনের যেকোনো খাবারের সময় খেতে পারেন।
ওটস চিল্লা
কিভাবে বানাবেন:
ইনস্ট্যান্ট ওটস্ ৩০ গ্রাম,সুজি ২ টেবিল চামচ,বেসন ২ টেবিল চামচ,পেঁয়াজ ১ টা কুচোনো,ক্যাপসিকাম ১ টা ছোটো সাইজের কুচোনো,টমেটো ১ টা কুচোনো,আদা কুচি ১/২ চা চামচ,লঙ্কা কুচি ১/২ চা চামচ,ধনেপাতা কুচি ২ টেবিল চামচ,হলুদ গুঁড়ো ১/৪ চা চামচ,জিরে গুঁড়ো ১/৪ চা চামচ,লবন পরিমাণ মতো,অল্প জল দিয়ে ঘন ব্যাটার বানিয়ে ননস্টিক প্যানে তেল ব্রাশ করে পাতলা করে চিল্লা গুলো ভেজে তুলে নিন।

গ্রিলড চিকেন
কিভাবে বানাবেন:
প্রথমে চিকেন ব্রেস্ট ফিলেগুলোকে মাঝখানে চিরে নিতে হবে যাতে ম্যারিনেট করার সময়ে মশলা ঢোকে। তারপর হলুদ গুঁড়ো, কাঁচালঙ্কা বাটা, জিরে গুঁড়ো, আদা রসুন বাটা, টকদই, গরমমশলা গুঁড়ো ও পরিমাণ মতো লবন দিয়ে ভালো করে ম্যারিনেট করে ফ্রিজে রাখতে হবে ২ ঘন্টা। এরপর গ্রীল প্যানে ভালো করে অলিভ ওয়েল মাখিয়ে চিকেন ব্রেস্টগুলো উল্টেপাল্টে সেঁকে নিয়ে স্যালাডের সাথে পরিবেশন করুন।

Commenti