top of page

জন্মাষ্টমী ও যোগমায়া..

rojkarananya

আজকের তিথি যেমন কৃষ্ণের, তেমন যোগমায়ার ও। স্মরণ করছেন, সমীর চট্টোপাধ্যায়..

ভাদ্র মাসের কৃষ্ণা অষ্টমীর এক দুর্যোগময় রাত। মথুরা নগরীর সমস্ত মানুষ তখন নিদ্রায় অচেতন। কেবল কংসের কারাগারে জেগে আছেন দুজন। প্রসব বেদনায় ছটফট করছেন দেবকী। একসময় জন্ম নিল দেবকীর অষ্টম গর্ভের সন্তান। এই শিশুই তার মাতুলকে হত্যা করবে এমনই কথা হয়েছিল। সেই-ই হয়ে উঠবে মথুরার অধীশ্বর। মাতুল কংস তাই জন্মমাত্রই একে মেরে ফেলার নির্দেশ দিয়েছেন। ওদিকে গোকুলে জন্মেছিল একটি মেয়ে। আজকের দিনেই। তার বাবার নাম নন্দ, আর মা যশোদা। বাইরে প্রবল দুর্যোগ। আকাশ যেন ভেঙে পড়ছে পৃথিবীর বুকে! এরই মধ্যে উত্তাল যমুনা পেরিয়ে এলেন এক পুরুষ, সদ্যোজাত এক শিশুপুত্রকে নিয়ে। অচেতন যশোদার কোলে সেই শিশুকে রেখে, অতি সর্ন্তপণে তুলে নিলেন ওই মেয়েটিকে। জন্মের কয়েক মূহুর্ত পরেই চিরকালের জন্য পরিবারহারা হয়ে গেল সেই মেয়ে। কখনও তাকে দেখতে দেওয়া হয়নি মায়ের মুখ। কখনও সে চেনেনি বাবার আদর। বৃহত্তর স্বার্থের যূপকাষ্ঠে বলি হয়ে গেলেন সেই একরত্তির নাম। সেই-ই আদতে যোগমায়া।


মা যশোদার বুক থেকে তুলে মেয়েটিকে কোথায় আনা হল? আনা হল কংসের কারাগারে। সেখানে তার জন্য অপেক্ষা করছিল মৃত্যু। অপেক্ষা করছিল অন্ধকার। কংস রাজার সাঙ্গোপাঙ্গোরা সব তৈরি। সদ্যোজাতের ক্রন্দন ধ্বনি শোনা মাত্রই তাকে মেরে ফেলতে হবে। তারা জানত বসুদেব আর দেবকীর এই অষ্টম পুত্র সন্তানের হাতেই মৃত্যু লেখা আছে তাদের রাজা কংসরাজের। নিজের চোখের সামনে কীকরে নিজের শিশুপুত্রের মৃত্যু দেখবেন! তাই বসুদেব নিজের পুত্রকে নিশ্চিন্তে রেখে যশোদা কন্যাকে নিয়ে এলেন বলি দেওয়ার জন্য। মথুরার রাজা কংস সদ্যোজাত ছেলেটিকে মেরে ফেলতে এসে দেখতে পেলেন মেয়েটিকে। ভবিষ্যৎ ঘাতক ভেবে কংস তুলে নিয়ে গেলেন মেয়েটিকেই, হত্যা করবেন বলে। জন্মের কয়েক দণ্ডের মধ্যেই ফের হাতবদল। দ্বিতীয়বারের জন্য।

কারাগারের দেওয়ালে আছাড় মারার জন্য দু’হাতে মেয়েটিকে তুলে ধরলেন রাজা। সজোরে নিক্ষেপ করলেন পাথরে। কিন্তু তাকে মারবে সাধ্য কার! তৎক্ষণাৎ সেই কন্যা কংসের হাত থেকে মুক্ত হল। উড়ে গেল আকাশে। আট হাতে ধারণ করল ধনু, শূল, বাণ, চর্ম, অসি, শঙ্খ, চক্র, গদা! ঝলসে উঠল যোগমায়ার রূপ। কংসের উদ্দেশ্যে ভেসে এল আকাশবাণী- ‘তোমারে বধিবে যে, গোকুলে বাড়িছে সে!’


বর্ষার রাতে পরম শক্তিশালী যে মানুষটি জন্মগ্রহণ করলেন, সেই জন্মাষ্টমীকে পূণ্য তিথি হিসাবে স্মরণ করি আমরা তাঁকেই। দেশজুড়ে পালিত হয় কৃষ্ণের জন্মোৎসব। কিন্তু তার পিছনে নিঃশব্দে ঢাকা পড়ে যায় আরেকজনের কথা। আরও একটি শিশু, যারও জন্ম এই একই দিনে। যাঁর জন্যই সেদিন নৃশংস রাজ কংসের হাত থেকে রক্ষা পেয়েছিলেন, এই যশোদা-নন্দ লালা, যে সেই যোগমায়া, যে যশোদার প্রকৃত সন্তান, তার কী হল!


তেমন কোনও চর্চা হয়না যোগমায়াকে নিয়ে। কোনও কোনও সূত্র থেকে জানা যায়, কোনও এক অজানা ঘটনা পরম্পরায় তার ঠাঁই হয় দুর্গম বিন্ধ্য পর্বতের কন্দরে। সেখানেই বড় হয় সে। সিংহাসন সংঘাতের বৃত্ত তাকে ছোঁয়নি কোনওদিন। এদিকে গোকুলে কিন্তু দিব্য বেড়ে উঠছেন কৃষ্ণ। ননীচুরি, মাখনচুরির দুষ্টুমি আর পালক পিতামাতার আদরে তার শৈশব ছিল ভরপুর। ছোট থেকেই প্রতিভাবান। বহু বছর পর কৃষ্ণ যখন প্রকৃত সত্য জানতে পারলেন, তখন তিনি ফিরে গেলেন মথুরায়। তার সত্যিকারের বাবা-মায়ের কাছে। অবসান হল অত্যাচারী কংসরাজের। স্বীকৃত পেল তাঁর শ্রেষ্ঠত্বের। মেয়েটির কিন্তু কোনও খোঁজ করেনি কেউ। যোগমায়া যে পরম শক্তিশালী শ্রীকৃষ্ণের সহোদরা, তাই কি সে বলিপ্রদত্ত? সন্তান হারানোর বেদনায় মা যশোদার কোনও গোপন বহিঃপ্রকাশের খবর ও তো এই যুগ-যুগান্ত ধরে মুখে মুখে বয়ে আসা গল্পে তো আমরা সত্যিই পাই না। কৃষ্ণের ক্ষমতা, প্রভাবে অদৃশ্য হয়ে যায় যোগমায়া। তাকে মনে রাখার প্রয়োজন বোধ করে না কেউ।


আজ জন্মাষ্টমী। যোগমায়ারও জন্মদিন।


চণ্ডীর একাদশ অধ্যায়ে আমরা পাই,


নন্দগোপগৃহে জাতা যশোদাগর্ভসম্ভবা

ততস্তৌ নাশয়িষ্যামি বিন্ধ্যাচলবাসিনী।।


অর্থাৎ যশোদাগর্ভজাত যোগমায়া পরে বিন্ধ্যাচলে আসেন এবং সেখানেই শুম্ভ-নিশুম্ভ নামক দুই অসুরকে বধ করেন। মার্কণ্ডেয় পুরান মতে, তিনিই আদ্যশক্তি মহামায়া। তিনিই আবার জন্ম নিয়েছিলেন সীতারূপে। তিনি বিষ্ণুর স্ত্রী, দেবী লক্ষী। অগ্নিপুরাণ এবং ভাগবত মতে, তিনিই কৃষ্ণের জন্মলগ্নে যশোদার কোল আলো করে জন্মানো আহ্লাদিনী।

তিনি যোগমায়া। আজকের দিনে তাঁকে প্রণাম।

Opmerkingen


Rojkar Ananya New Logo copy.jpg

Your key stats for the last 30 days

Follow us on

fb png.png

©2023 to Debi Pranam. All Rights Reserved

bottom of page