গ্রীষ্মকালে প্রচন্ড গরম থেকে রেহাই পেতে কৃত্রিম শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ মেশিনের চাহিদা ইদানিং প্রচন্ড হারে বেড়েছে। কিন্তু জানেন কি খুব সহজেই বিভিন্ন রকমের ইন্ডোর প্লান্ট লাগিয়ে ঘরের তাপমাত্রা কমাতে পারেন ১০ ডিগ্রী পর্যন্ত? আপনার বাড়ির আনাচে কানাচে, ড্রয়িং রুমে, বেড রুমে এমনকি বাথরুমেও এই গাছ গুলো লাগিয়ে খুব সহজে পরিচর্যা করতে পারবেন। সৌন্দর্য বর্ধনের পাশাপাশি এটি আপনার ঘরের পরিবেশ ঠান্ডা রাখবে। চলুন দেখে নিই কি কি গাছ লাগানো যেতে পারে...

বস্টন ফার্ন:
শুধু ঘরের তাপমাত্রা কমানোই নয়, একই সঙ্গে ঘরের বাতাস পরিশুদ্ধ রাখতেও এই গাছের জুড়ি মেলা ভার।
তবে ফার্ন যেহেতু শীতল পরিবেশের গাছ, তাই এটি রাখতে হবে ছায়ায়, ঘন ঘন জল ও দিতে হবে।

অ্যালোভেরা:
এই গাছের গুণাবলীর কথা বলাই বাহুল্য। এর পাতার ভিতরে থাকে জলীয় ঔষধি উপাদান, যা ত্বকে লাগালে নিমেষে ক্ষত বা পোড়া জুড়িয়ে যায়।
একই সঙ্গে ঘরের তাপমাত্রা কমাতেও কাজে আসে অ্যালো ভেরা।
এই গাছের গোড়ায় নয় পাতায় জল স্প্রে করবেন।

স্নেক প্লান্ট:
অ্যালোভেরার মতো এই গাছের পাতাও জলীয় উপাদানে সমৃদ্ধ।
তাই জানলার কাছে রেখে দিলে তা উত্তাপ শোষণ করে নেবে, ঘরের হাওয়াকে করে তুলবে শীতল।
এতেও মাঝে মাঝে জল দেবেন।


বাম্বু পাম:
এর বড় বড় পাতা খুব সহজেই চারপাশের উষ্ণতা শোষণ করে নেয়।
তাই গ্রীষ্মে ঘর হিমশীতল রাখতে কাজে আসতে পারে বাম্বু পাম।
শুধু দিনে বেশ কয়েকবার জল দিতে ভুললে চলবে না!

স্পাইডার প্লান্ট:
মাকড়সা যেমন ছায়ার প্রাণী, তেমনই এই গাছকেও ছায়ায় রাখতে হয়।
মানে ঘরের ভিতরে রাখতে হবে। আর তাতেই এটি প্রাকৃতিক পদ্ধতিতে বাতাস পরিশুদ্ধ করবে, কমিয়ে দেবে ঘরের উষ্ণতা।

পিস লিলি:
এর অনবদ্য ফুলের শোভা যেমন চোখে শান্তি আনে, তেমনই গরমে বাতাস শীতল রেখে এটি দেহকেও আরাম দেয়।
কেনার সময়ে একটু বড় পাতা দেখে কেনা ভালো আর বেশ কয়েকটা সারি দিয়ে একসঙ্গে রাখতে হবে।

রবার প্লান্ট:
এই গাছের পাতা এমনিতেই বড় হয়!
পাশাপাশি যদি সব চেয়ে বড় পাতার শ্রেণি দেখে গাছটি কেনা হয়, তাহলে খুব তাড়াতাড়ি তা ঘর ঠান্ডা রাখবে।
এতে মাঝে মাঝেই একটু জল ছিটিয়ে দিতে হবে।

পটহোজ:
অপর নাম মানিপ্ল্যান্ট। এর পরিচর্যা করা সবথেকে সহজ।
এটি একই সঙ্গে বাতাস পরিশুদ্ধ করে ঘরের তাপমাত্রা শীতল রাখবে। তার জন্য দিনে একবার জল দিলেই যথেষ্ট!

ফিকাস বেঞ্জামিনা:
উইপিং ফিগ বলেও ডাকা হয় এই গাছকে।
অর্থাৎ এই গাছ পাতা থেকে জল ঝরে। পাতার জল ঝরার কারণে বাতাসে আর্দ্রতা তৈরি করে।
তাই ঘরে রাখলে তাপমাত্রা শীতল থাকে।
ইনডোর প্লান্ট সতেজ রাখার উপায়:
অনেক পাতার ডগার অংশ খয়েরি বা নীচের অংশ হলুদ হয়ে যায়। এমন হলে বুঝতে হবে, গাছে অতিরিক্ত জল দেওয়া হয়েছে। এই অবস্থায় প্রথমে টবের সম্পূর্ণ মাটি শুকিয়ে নিতে হবে। তারপর গাছের সব জায়গায় জল ছিটিয়ে দিতে হবে। তবে, গাছের গোঁড়ায় ঘন ঘন জল দেওয়া যাবে না।
অতিরিক্ত জল দিলে যেমন গাছের ক্ষতি হয়, একইভাবে কম জল দিলেও গাছের সজীবতা নষ্ট হয়ে যায়। এমন হলে গাছের পাতার সামনের দিকটা হলুদ হয়ে যায় এবং পরে পাতা শুকিয়ে ঝরে যায়। তখন গাছের টবের অংশ একটি নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত জলে ডুবিয়ে রাখুন এবং কিছু সময় পরে সেটা তুলে ফেলুন। এই সময়ে কয়েকদিন গাছে ঘন ঘন জল দিন।
গাছের ফুল বা পাতার রং হালকা হয়ে গেলে গাছটি ঠাণ্ডা বা আলো কম পৌঁছায় এমন জায়গায় রাখুন। কারণ অতিরিক্ত আলো ও তাপের সংস্পর্শে এসে গাছের পাতা ও ফুলের রং হালকা হয়ে যায়। তবে গাছের নতুন চারা ঠিক মতো না বাড়লে টব বারান্দায় রাখুন। আলো-বাতাস পেলে গাছ ঠিক মতো বড় হবে এবং ফাঙ্গাস জন্মাবে না।
ইনডোর প্লান্টে গাছের চারা অনেক সময় ঠিক মতো বাড়লেও কাণ্ড হলুদ হয়ে যায়। সাধারণ গাছের গোঁড়ায় অতিরিক্ত সার দেওয়ার কারণে এমনটা হয়ে থাকে। তাই এমন কিছু হলে বেশ সময় নিয়ে গাছের গোঁড়ায় বেশি করে জল দিন। জলে সার ধুয়ে গেলে এই সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে।
পাতার ডগার অংশ অনেক সময় কুঁকড়ে শুকিয়ে যায়। ঘরের তাপমাত্রা বেড়ে গেলে এই সমস্যা হয়। তাই এমন হলে সঙ্গে সঙ্গে গাছ সরিয়ে ঠাণ্ডা স্থানে রাখুন।
সারারাত গাছের গোঁড়ায় জল জমে থাকতে দেবেন না। তাহলে গাছের গোঁড়া পচে যেতে পারে। প্রতিদিন জল না দিলেও চলবে। খেয়াল রাখতে হবে টবের জল যেন একেবারে শুকিয়ে না যায়। গাছে জল দেওয়ার আগে টবের মাটি হাত দিয়ে চেপে চেপে দেখুন। ভেজা ভাব থাকলে জল দেওয়ার প্রয়োজন নেই। গরমকালে বেশি জল দেবেন, শীতকালে কম।
পোকামাকড়ের হাত থেকে গাছ রক্ষা করতে মাঝে মাঝে জীবাণুনাশক স্প্রে করতে হবে।
বেশি রোদে গাছে রেখে দেবেন না। গাছের পাতায় জল ছিটিয়ে দেওয়ার পর রোদের তাপে পাতায় স্পট তৈরি হতে পারে। এমন হলে গাছটি কিছু সময় ঠাণ্ডা স্থানে রাখুন, স্পট মিলিয়ে যাবে। গাছ ভালো থাকবে।

এছাড়াও কিছু জিনিস মাথায় রাখতে হবে:
১. গাছের পাতায় ধুলো বা ঝুল জমলে শুকনো নরম সুতি কাপড় বা হালকা স্পঞ্জ দিয়ে গাছের পাতা মুছতে পারেন। দুধ ও সমপরিমাণ জলের মিশ্রণ দিয়ে গাছের পাতা পরিষ্কার করতে পারেন। তুলি দিয়েও পরিষ্কার করতে পারেন।
২. মাটি ভেজা থাকলে লিকুইড প্লান্ট ফুড দিন। প্রয়োজনের অতিরিক্ত প্লান্ট ফুড দেবেন না। গাছের জন্য তা ক্ষতিকারক। নাইট্রোজেন, ফসফেট ও পটাশ আছে এমন লিকুইড প্লান্ট ফুডই ইনডোর প্লান্টের জন্য আদর্শ।
৩. একসঙ্গে অনেক গাছ পরিষ্কার করতে চাইলে শাওয়ারের নিচে গাছগুলো রাখুন। তবে, হালকা জল ব্যবহার করবেন। গাছের গোঁড়ার অংশ ও তার চারদিক প্লাস্টিক বা পলিথিন দিয়ে র্যাপ করে দেবেন। এতে গাছের সব মাটি ধুয়ে নষ্ট হয়ে যাবে না।
৪. ঝরে পড়া ফুল বা শুকনো পাতা টবের ভেতর থেকে ফেলে দেবেন। তাহলে গাছ ভালো থাকবে। গাছে কুঁড়ি দেখা দিলে গাছ ঘরের এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় নিয়ে রাখবেন না। এসময় টব বারবার এদিক-ওদিক সরালে গাছের কুঁড়ি ঝরে পড়তে পারে।
Comments