গরমে কোন খাবার আপনার শরীর ঠান্ডা রাখতে কাজ করে তা জানেন কি? এই তালিকায় রয়েছে অনেক খাবারই, তবে একেবারে শুরুর দিকে থাকে পান্তা ভাতের নাম। এই ভাত খেলে শরীরে শক্তি বাড়ে। সেইসঙ্গে বাড়ে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও। পান্তাভাত তৈরির জন্য আলাদা কোনো কষ্ট করতে হয় না। কেবল রাতে বেঁচে যাওয়া ভাতে জল দিয়ে রেখে পরদিন খেয়ে নিলেই হলো। এতেই মিলবে অভাবনীয় উপকারিতা।

ভিটামিন বি টুয়েলভ:
ফার্মেন্টেশনের(গাঁজন) ফলে পান্তা ভাতে ভিটামিন বি টুয়েলভ বেড়ে যায়। এটি ক্লান্তি দূর করে। কিছু ক্ষেত্রে অনিদ্রা দূর করতেও সাহায্য করে।
অ্যাসিডিটি থেকে মুক্তি:
বিজ্ঞানীদের মতে পান্তাভাত PH ব্যালেন্স করতে সাহায্য করে। আলসার রোগীদেরও সুফল দেয় ।
নতুন মায়েদের জন্য:
ফারমেন্টেশনের ফলে ল্যাকটিক অ্যাসিড তৈরি হয়। এটি স্তন্যপান করানো মায়েদের দুগ্ধ উৎপাদনে সাহায্য করে।
কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা:
ন্যাচারাল ল্যাক্সেটিভ হিসেবে কাজ করে। কোষ্ঠকাঠিন্য কমাতে সহায়তা করে।
রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ:
রক্তচাপের রোগীদের ক্ষেত্রে এটি বেশ কার্যকরী। সাধারণ ভাতের তুলনায় এতে সোডিয়ামের পরিমাণ কম। অন্যদিকে পটাশিয়ামের পরিমাণ যথেষ্ট বেশি।
রিহাইড্রেশন:
পান্তা ‘বডি রিহাইড্রেটিং ফুড’ হিসেবে পরিচিত। গরমকালের খাবার হিসেবে পান্তার জুরি মেলা ভার।
ওজন কমাতে:
ফারমেন্টেশনের কারণে পান্তায় কার্বোহাইড্রেট এবং ফ্যাটের পরিমাণ অনেকটাই কমে যায়। তাই অনেক ক্ষেত্রে ওয়েট লসে কার্যকরী হয়। তবে অবশ্যই সেটা সীমিত পরিমাণে খেতে হবে।
ঝকঝকে ত্বক:
পান্তা ভাতকে ‘বিউটি সিক্রেট অফ এশিয়া’ বলা হয়। কারণ এটি কোলাজেন তৈরিতে সাহায্য করে। এটি ত্বকের ইলাস্টিসিটি বৃদ্ধি করে। ফলে ত্বক মসৃণ, টানটান ও উজ্জ্বল দেখায়।
মাইক্রোনিউট্রিয়েন্টে ভরপুর:
পান্তা ভাতে অনেক মাইক্রোনিউট্রিয়েন্টের প্রাপ্যতা অনেক বেড়ে যায়। উদাহরণস্বরূপ - ম্যাগনেসিয়াম, ক্যালসিয়াম, আয়রনের মতো উপাদানের প্রাপ্যতা বৃদ্ধি পায়। ১০০ গ্রাম সাধারণ ভাতে ৩.৪ mg আয়রন থাকে। অন্যদিকে পান্তা ভাতের ক্ষেত্রে সেটাই দাঁড়ায় প্রায় ২১ গুণ, ৭৩.৯১mg।
কোলেস্টেরল হ্রাস:
পান্তায় কিছু রেজিস্ট্যান্স স্টার্চ তৈরি হয়। এটি অনেক ক্ষেত্রে সিরাম কোলেস্টেরল কমাতে সাহায্য করে।
উপকারি ব্যাকটেরিয়া:
প্রোবায়োটিক্সে ভরপুর পান্তা ভাত। এটি হজমশক্তি রক্ষায় সাহায্য করে। সেই সঙ্গে পান্তা সারাদিন কাজ করার জন্য শক্তি যোগাতে সাহায্য করে ।
পান্তার সাথে ডালের বড়া
কী কী লাগবে
পান্তার জন্য:
আগের দিন রাতে ভাত বানিয়ে ঠান্ডা করে তাতে জল ঢেলে রাখতে হবে। মাটির পাত্রে রাখলে ভালো মজবে।
ডালের বড়ার জন্য:
মুসুর ডাল ১কাপ, মটর ডাল ১ কাপ, কাঁচালঙ্কা ৩-৪টি, নুন চিনি স্বাদমতো, নারকেল কোরা ১/২ কাপ, গোটা পোস্ত দানা ১ টেবিল চামচ, সরষের তেল ভাজার জন্য।
কিভাবে বানাবেন
মুসুর ডাল ও মটর ডাল ৩-৪ ঘন্টা ভিজিয়ে রেখে খুব অল্প জল আর কাঁচালঙ্কা দিয়ে বেটে নিন। এবার এতে নুন, চিনি, পোস্তদানা, নারকেল কোরা ভালো করে মিশিয়ে তেল গরম করে ছোট ছোট বড়ার আকারে ভেজে তুলে নিন।
নিরামিষ কচুশাক
কী কী লাগবে
কচুশাক পরিস্কার করে টুকরো করে নেওয়া ৫০০ গ্রাম, নুন চিনি স্বাদ মতো, ভেজানো কাঁচা ছোলা বাদাম একমুঠো, নারকেল কোরা আধ কাপ, হলুদ গুঁড়ো ১/২ চা চামচ, চেরা কাঁচালঙ্কা ৪-৫ টা, সরষের তেল পরিমাণমতো, ফোড়নের জন্য তেজপাতা, শুকনো লঙ্কা, সাদা জিরে।
কিভাবে বানাবেন
কচুশাক নুন জল দিয়ে ভাঁপিয়ে নিতে হবে। সরষের তেল গরম করে তেজপাতা, শুকনো লঙ্কা, সাদা জিরে ফোড়ন দিয়ে ভাঁপানো শাক ছেড়ে নাড়তে হবে। তারপর একে একে চেরা কাঁচালঙ্কা, বাদাম, ছোলা, নারকেল কোরা, নুন, চিনি, হলুদ গুঁড়ো দিয়ে গ্যাস কম করে বেশ সময় নিয়ে শাক টানাতে হবে। শুকনো হয়ে এলে নামিয়ে নেবেন।
রেসিপি এবং ছবি সৌজন্যেঃ সমিতা হালদার
অনুলিখন সুস্মিতা মিত্র
Comments