top of page

ইলিশমঙ্গল

ইন্দিরা মুখোপাধ্যায়


বাংলার সাহিত্যসাগরে ইলিশের অবাধ বিচরণ এক সমৃদ্ধ সাংস্কৃতিক ইতিহাস। মাছের মধ্যে ইলিশ নিয়ে একটু বেশিই পক্ষপাতদুষ্ট যেন বাংলার কবি সাহিত্যিকরা। বিদগ্ধজনের মতে নাটক বিনে যেমন ইংরেজি সাহিত্য অন্ধ তেমনি ইলিশ বিনে বাংলাসাহিত্য ।

বাঙালীর খাদ্যসংস্কৃতিতে ইলিশের স্থান সর্বোচ্চে। সংস্কৃতের একটি প্রাচীন শ্লোকেই তার প্রমাণ।

"সর্বেষামেব মতস্যেনাম ইল্লিশ শ্রেষ্ঠ উচ্চতে" অর্থাৎ মাছের মধ্যে সেরা হল ইলিশ। কেউ বলে রাণী, কেউ বা রাজা।

আর তাই বুঝি সৈয়দ মুজতবা আলীর মতে, বেহেশতের খাবারের বর্ণনায় যদি ইলিশের কথা উল্লেখ থাকত, তাহলে কেউই পাপ করে নরকে যেত না।


পঞ্চদশ শতকের কবি বিজয়গুপ্তের মনসামঙ্গল কাব্যে লখিন্দর জন্মাবার আগে সনকার সাধ ভক্ষণে নানাবিধ পদের সঙ্গে দক্ষিণ সাগরের কলা দিয়ে ইলিশের ঝোলের কথা রয়েছে।


"আনিয়া ইলিশ মত্স্য/ করিল ফালাফালা/ তাহা দিয়ে রাঁধে ব্যঞ্জন/ দক্ষিণসাগর কলা"


তারও আগে দ্বাদশ শতকে পন্ডিত জীমূতবাহন সর্বপ্রথম ইলিশ মাছের নাম উল্লেখ করেছেন। সেইসময় সর্বানন্দের টীকাসর্বস্ব গ্রন্থেও "ইল্লিষ" শব্দটির উল্লেখ পাওয়া যায়।

ভারতচন্দ্র রায়গুণাকরের লেখায় "পাঙ্গাস ইলিশ" বলে একটি শব্দ পাওয়া যায়। ১৮২২ সালে হ্যামিল্টন বুকানন নামে এক সাহেব বঙ্গোপসাগরের মাছ নিয়ে গবেষণার সময় "হিলসা" শব্দটি জুড়ে দেন।আর সেই হিলসা ও ইলীশা মিলেমিশে এক হয়ে যায়।


ইল+ঈশ= ইলীশ অর্থাত জলের ঈশ্বর।


কখনো আবার গ্রাম বাংলায় ইলিশ ফিরেছে ধাঁধা হয়ে।


'রূপোর পাতে মারে ঘা, পানির বুকে ফেলল পা।'


ময়মনসিংহ গীতিকায় মাছের রাণী ইলিশের স্থান এক অমূল্য পণ্য হয়ে


'সেই ইলিশের দাম হইল সোনায় একুশ ভরি মাছ ইলিশারে'


সত্যেন্দ্রনাথ দত্তর 'ইলশেগুঁড়ি' কবিতায় পড়েছিলাম


'ইলশে গুঁড়ি ইলশে গুঁড়ি

ইলিশ মাছের ডিম

ইলশে গুঁড়ি ইলশে গুঁড়ি

দিনের বেলায় হিম।'

তা আবার গান হয়ে লোকের মুখে মুখে ফিরছে আজো।

অথবা

"হাল্কা হাওয়ায় মেঘের ছাওয়ায় ইলিশেগুড়ির নাচ / ইলশেগুঁড়ির নাচন দেখে নাচছে ইলিশমাছ "


আর বহুল প্রচলিত একটি লোকছড়া?


'ইলিশ মাছের তিরিশ কাঁটা, বোয়াল মাছের দাড়ি

বৈশাখ মাসের এক তারিখ, আইসো আমার বাড়ি'।


কিম্বা ইলিশ নিয়ে আমাদের সবার শিশুতোষ কালে যোগীন্দ্রনাথ সরকারের সেই ছড়া?


'সোনা নাচে কোণা, বলদ বাজায় ঢোল

সোনার বউ রেঁধে রেখেছে ইলিশ মাছের ঝোল।'


ইলিশমাছের গন্ধে ভাতের খিদে একধাপ বেড়ে যায়। ভাত খেয়ে ছুটির দিনে দিবানিদ্রা কিম্বা অলসদুপুরে মাছের স্তুতিগান, এও বাঙালীইয়ানার আরেক অঙ্গ । মনে হয় কী এমন স্নেহপদার্থ আছে এই ওমেগা থ্রি ফ্যাটি এসিডে? যার মোহে ইলশে পদ্যরাও ধরা দেয় ইলশেগুঁড়ির সঙ্গে । হৃদয়ের দেখভাল হয় সেই স্নেহে আর আমি জারিত হতেই ঝরতে থাকে পদ্য আমার কলমেও।


ভাই ইলিশ, তুই খলবল কর জলে,

বড় হয়ে ওঠ, তারপর আয় দেখি !

রান্নাঘরে সর্ষে বাটি, নুন-হলুদ-তেলে

জমিয়ে রাঁধি, তোকে ভাপাই লঙ্কা দুটি ডলে;


ভাতের হাঁড়ির মুখে কৌটো বন্দী ইলিশভাপা

নরম চালের গরম ভাতে মাছের কৌটো চাপা ।

সরষে ঝাঁঝে পরাণ গেল ইলিশ ম’ল দুখে

বেজায় কাঁটা, রূপোর মাছে তবুও খাব সুখে ।



কিন্তু সারাটিবছর হাপিত্যেশ এই বর্ষার মরশুমি ইলিশের জন্য। মাঝে মাঝে তব দেখা পাই। সারাটিবছর পাইনা। বৃষ্টির সঙ্গে তাঁর এক প্রগাঢ় রসায়ন। পুব হাওয়াতে হালকা দোলা, ঝিরঝির করে অবিরাম ইলিশেগুঁড়ি বৃষ্টি পড়তেই থাকবে আর ঠিক তখনি ঝাঁকেঝাঁকে গভীর জলের এই ইলিশমাছ সমুদ্রের নোনা জল সাঁতরে, জোয়ারের অনুকূলে স্বল্প পরিশ্রমে, নদীর কাছে আসবে, আমাদের ধরা দিতে।


বহুবার বাঙালবাড়িতে নিমন্ত্রিত হয়ে সরস্বতী এবং কোজাগরী লক্ষ্মীপুজোতে জোড়া ইলিশের পুজো দেখেছি । ধানদুব্বো, তেল-সিঁদুর মাখিয়ে বরণ করে নতুন শাড়ি পরিয়ে জোড়া ইলিশের পুজোর পর জমিয়ে ইলিশমাছ ভোগ দেওয়া হয়। আগে বলা হত সরস্বতীপুজোর দিনে শুরু আর ঐ লক্ষ্মীপুজোর দিনে শেষ । মধ্যিখানে আশ্বিন থেকে মাঘ অবধি আর ইলিশ খাওয়া যাবেনা। এর বিজ্ঞানসম্মত কারণটি হল মাছকে সংরক্ষণ করা । মাছকে আকারে বাড়তে দেওয়া। বৈশাখ থেকে জ্যৈষ্ঠের মধ্যে যুবতী থেকে গর্ভবতী হয়ে তবে সে বর্ষার জল পেয়ে নধর হবে। আর গুটিগুটি সেই পোয়াতি মাছ সাঁতরে সাঁতরে জোয়ারের সময় সমুদ্রের নোনা জল থেকে যত নদীর দিকে এগিয়ে আসবে তত তার শরীর থেকে আয়োডিন আর নুন ঝরে ঝরে মিষ্টতা বাড়বে। সেই অর্থে ইলিশ হল পরিযায়ী মাছ। মরশুমি সজীব শস্য। বর্ষার বিশেষ তিথিতে ধরা দেয়। বাকী সময় থাকে গভীর জলে। তখন তার মনের তল পাওয়া দুষ্কর। এইসময় সে খায় বিশেষ ধরণের জলজ শ্যাওলা। খেতে খেতে যত বাড়তে থাকে তত সে পুষ্ট ও নধর হয়। রূপে লাবণ্যে থৈ থৈ তার গর্ভিণী যৌবন যেন স্নেহ পদার্থের আধিক্যে ঢলঢল হয়। সেই বিশেষ ধরণের স্নেহপদার্থ বা ওমেগা থ্রি ফ্যাটি এসিড সব মাছে থাকেনা তাই বুঝি ইলিশের এত কদর, অনন্য স্বাদ । হৃদরোগী থেকে ছোট শিশু সকলেই খেতে পারে এই মাছ।


১৭১১ খ্রিষ্টাব্দে রামেশ্বর চক্রবর্তীর "শিবায়ন" বইতে সামান্য হলেও ইলিশের উল্লেখ আছে এভাবে- "ভেটকি ইলিশ আড়ি মা তোর গাগর কলই গড়ই কই - কত জলচর"

এর বছর দশেক বাদে রায়গুণাকর ভারতচন্দ্রের "অন্নদামঙ্গল" কাব্যে কাশীর গঙ্গায় অন্যান্য মাছের সঙ্গে নানাবিধ জলচর প্রাণীর সঙ্গে খরশুলা, তপসিয়া, পাঙ্গাশের সঙ্গে ইলিশও উঠেছিল। শিবের আদেশে বিশ্বকর্মা যখন কাশীতে দেবী অন্নপূর্ণার মন্দির নির্মাণ শুরু করবেন তখন পাতাল গঙ্গা ভোগবতীর জল ছেঁচে ফেলার কারণে এসব মাছের আমদানি হয়েছিল।



বঙ্কিমচন্দ্রের 'চন্দ্রশেখর' উপন্যাসে ইলিশের কথা আছে নবাব মীর কাশেমের স্ত্রী দলনী বেগম ও তার দাসী কুলসুমের কথোপকথনে। দলনী যখন কুলসুমকে দুঃসাহসিক কাজ করার কথা বলেন তার কুলসুম উত্তরে বলে, 'কী? ইলিশ মাছ খেতে হবে না ঠান্ডা জলে নাইতে হবে?'

আবার কমলাকান্তের দফতরে সেই মাছ নিয়ে কথার ফুলঝুরি।

যেখানে "আমার মন" প্রসঙ্গে যেন ইলিশের সুরম্য অভিষেক।

"সেখানে ইলিশ মত্‌স্য সতৈল অভিষেকের পর ঝোল গঙ্গায় স্নান করিয়া, মৃন্ময়, কাংস্যময়, কাচময় বা রজতময় সিংহাসনে উপবেশন করেন সেখানেই আমার মন প্রণত হ‌ইয়া পড়িয়া থাকে। ভক্তিরসে অভিভূত হ‌ইয়া সেই তীর্থস্থান আর ছাড়িতে চায় না"

আবার মানিক বন্দোপাধ্যায়ের 'পদ্মা নদীর মাঝি' তে সেই ইলিশের বর্ণনা?

'পদ্মায় ইলিশ মাছ ধরার মরসুম চলিতেছে। নৌকার খোল ভরিয়া জমিতে থাকে মৃত সাদা ইলিশ মাছ।লণ্ঠনের আলোয় মাছের আঁশ চকচক করে। মাছের নিষ্পলক চোখগুলিকে স্বচ্ছ নীলাভ চোখের মণির মতো দেখায়।'

শ্রী অদ্বৈত মল্লবর্মণের "তিতাস একটি নদীর নাম" এ নদীর পাড়ের জেলে বসতির জীবনের টানাপোড়েন, হাসিকান্নার সেই বিশাল পটভূমি? কিম্বা সমরেশ বসুর "গঙ্গা'য় রূপোলী জলজ শস্যের সন্ধানে ঘরছাড়া মানুষের নৌকায় জীবনযাপনের চিরন্তন সংগ্রামের চিত্রটি?

বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের "কতয় হল" নামক অনবদ্য ছোট গল্পটি সবাই কে বেশ কয়েকটি গোল দিতে পারে অনায়াসে। লেখকের লেকমার্কেট থকে ইলিশ কিনে হাতে ঝুলিয়ে বাড়ি ফেরার পথে ট্রামে, সাইকেল রিকশায় এবং সবশেষে বাড়িতে ঢোকামাত্রেই সবার মুখে এক কথা "কতোয় হল?" অর্থাত মাছটির দাম কত? সবশেষে তাঁর প্রশ্ন, যদি ভদ্রলোক শোলমাছ ঝুলিয়ে আসতেন তবে কী কেউ তাঁকে এমন প্রশ্নবাণে জর্জরিত করত? বাঙালী লেখকের লেখায় যুগে যুগে এই মত্স্য বিলাসিতা তাঁদের অকুন্ঠ মত্স্য প্রীতি থেকেই।


সাহিত্য অন্তপ্রাণ ভোজনরসিক বুদ্ধদেব বসুর কবিতার ছত্রে ছত্রেই তার প্রমাণ মেলে । ১৯৩৮ সালের ভরাবর্ষায় লেখা ইলিশ কবিতাটি অন্ততঃ তাঁর মত্স্যপ্রীতির‌ও যথেষ্ট পরিচয়বাহক।


"রাত্রিশেষে গোয়ালন্দে অন্ধ কালো মালগাড়ি ভরে জলের উজ্জ্বল শস্য,

রাশিরাশি ইলিশের শব, নদীর নিবিড়তম উল্লসের মৃত্যুর পাহাড়।

তারপর কলকাতার বিবর্ণ সকালে ঘরে-ঘরে ইলিশ ভাজার গন্ধ;

কেরানির গিন্নির ভাঁড়ার সরস সর্ষের ঝাঁঝে। এলো বর্ষা, ইলিশ উত্সব।"


তাঁদের বাড়িতে ইলিশমাছ নিয়ে প্রায় পুজোপার্বণের মত ঘটা হত। প্রতিভা বসুর হাতে বুদ্ধদেব বসুর প্রিয় পদ ছিল কাঁচা কুমড়ো দিয়ে ইলিশ মাছ। আর সেটি‌ই বসু পরিবারের সিগনেচার ডিশ। মাছ হালকা ভেজে নিয়ে কালোজিরে, কাঁচালঙ্কা দিয়ে কাঁচা কুমড়োর টুকরো নেড়েচেড়ে নিয়ে সেদ্ধ হয়ে এলে ভাজা মাছ আর কাঁচা সর্ষের তেল দিয়ে নামিয়ে নিতে হবে অতি সহজ অথচ অমূল্য এই পদটি। এটা অবিশ্যি প্রতিভা বসুর বাবার বাড়ির রান্না।


তাঁর কিশোর কবিতা ‘নদীর স্বপ্নে’ও ইলিশ মাছের কথা এসেছে। কবিতায় বড় ভাই ছোট বোন ছোকানুকে নিয়ে নৌকায় করে কিছুক্ষণ ঘুড়ে বেড়াবে। সেই সময় তারা কী কী দেখবে, কী কী করবে, সেই বর্ণনাতেই ইলিশের প্রসঙ্গ এসেছে।

‘ওটা কী? জেলের নৌকা? তাই তো!

জাল টেনে তোলা দায়,

রূপোলি নদীর রূপোলি ইলিশ-

ইশ, চোখে ঝলসায়!

ইলিশ কিনলে?- আঃ, বেশ, বেশ,

তুমি খুব ভালো, মাঝি।

উনুন ধরাও, ছোকানু দেখাক

রান্নার কারসাজি।

পইঠায় বসে ধোঁয়া-ওঠা ভাত,

টাটকা ইলিশ-ভাজা-

ছোকানু রে, তুই আকাশের রানী,

আমি পদ্মার রাজা।’



সব বাঙালবাড়ির মত‌ই ইলিশমাছে খুব আসক্তি ছিল গোস্বামীবাড়িতেও। জানালেন সাহিত্যিক হিমানীশ গোস্বামীর কন্যা হৈমন্তী। লাউশাক দিয়ে ইলিশ অন্যতম রান্না ছিল। হালকা করে ভেজে রাখা ইলিশমাছের তেলেই কালোজিরে আর কাঁচালঙ্কা ফোড়ন দিয়ে কচি লাউ ডাঁটা কেটে নিয়ে দিতে হবে। তারপর একটু লঙ্কাবাটা। লাউশাক থেকে যে জল বেরুবে সেটাতেই ভাজা মাছ দিয়ে শুকিয়ে নিতে হবে। এর মধ্যে বেগুণ, কাঁচালঙ্কা, কাঁচা তেল দিয়ে নামিয়ে নিতে হবে লাউশাক ইলিশ।

আরেকটি হল চৌকো করে পাতলা পাতলা করে কেটে নেওয়া লাউ দিয়ে ইলিশমাছ। সর্ষের তেলের মধ্যে কালোজিরে কাঁচালঙ্কা ফোড়ন দিয়ে লাউ সেদ্ধ হয়ে এলে ভাজা ইলিশমাছ দিয়ে লাউচিংড়ির মত লাউ ইলিশ আমাদের বাড়ির অন্যতম রেসিপি। বললেন, হৈমন্তী। তাঁর দাদু পরিমল গোস্বামীর স্মৃতিচিত্রণ গ্রন্থে আছে, স্নান করতে নেমে তাঁর নদীতে মাছ ধরা আর সে সময়ের বাজারের বর্ণনাও। এক পয়সায় আটটি ইলিশ অথবা একদিন জমিয়ে শুধু ইলিশের ডিম খাওয়া হত সেসময়। আর একদিন বাড়িতে শুধুই রান্না হত ইলিশের মুড়োর ঝোল আর চচ্চড়ি। দৈনিক চার পয়সায় আর মাসিক মাত্র পাঁচটাকায় সংসার চলত।


আবার সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় তো শয়নে, স্বপনে, জাগরণে ছিল এই ইলিশ। 'মহারাজ, আমি তোমার' কবিতাতেও তিনি মহারাজের চোখের জলে মাছ ধরতে চাইলেন


'মহারাজ, আমি তোমার চোখের জলে মাছ ধরেছি

মাছ না মাছি কাঁকরগাছি একলা শুয়েও বেঁচে তা আছি।'


তাঁর কথায়, "আসল ইলিশের স্বাদ দেড় কিলো থেকে পৌনে দু’কিলোতে। আমরা বাল্যকাল থেকে ইলিশের সমঝদার। আমার মতন এমন মানুষ খুব কমই আছে, যে জ্যান্ত ইলিশকে লাফাতে দেখেছে"


স্ত্রী'র হাতে শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের প্রিয় ছিল ইলিশমাছের মাথা দিয়ে চালকুমড়ো। খুব সোজা চটজলদি আর কেজো রান্না । জানিয়েছিলেন মীনাক্ষী চট্টোপাধ্যায়। রেসিপিও দিয়েছিলেন।


ইলিশমাছের মাথা নুন হলুদ মাখিয়ে তেলে ভেজে নিতে হবে। ঝিরি ঝিরি করে কাটা চালকুমড়ো হালকা করে ভাপিয়ে রাখতে হবে। এবার কড়াইতে সর্ষের তেলে আদা, জিরে বাটা দিয়ে লঙ্কা, হলুদ, নুন দিয়ে চালকুমড়ো দিয়ে নেড়েচেড়ে মাথা দিয়ে চাপা দিতে হবে। সেদ্ধ হলে মুড়ো একটু ভেঙে দিয়ে গায়ে মাখামাখা হলে নামিয়ে নিলেই তৈরী ।


সাহিত্যিকদের ইলিশ প্রীতির মাঝে রবি-নজরুলই বা বাদ যান কেন?


রবিঠাকুরের গল্পগুচ্ছের সমস্যাপুরাণেও "সেদিন সোমবার, হাটের দিন। ছোটো একটা নদীর ধারে হাট। বর্ষাকালে নদী পরিপূর্ণ হইয়া উঠিয়াছে। কতক নৌকায় এবং কতক ডাঙায় কেনাবেচা চলিতেছে, কলরবের অন্ত নাই। পণ্যদ্রব্যের মধ্যে এই আষাঢ় মাসে কাঁঠালের আমদানিই সব চেয়ে বেশি, ইলিশ মাছও যথেষ্ট"

কিম্বা মাছ নিয়ে তার সেই মজার ছড়া?


"শেষে দেখি ইলিশমাছের

জলপানে আর রুচি নাই

চিতলমাছের মুখটা দেখেই

প্রশ্ন তারে পুছি নাই।

ননদকে ভাজ বললে, তুমি

মিথ্যা এ মাছ কোটো ভাই"


সুরসিক কাজী নজরুল ইসলামেরও ইলিশ প্রীতি কিছু কম ছিল না।

১৯৩২ সালে সিরাজগঞ্জে নিখিলবঙ্গ মুসলিম যুব সম্মেলনে উপস্থিত তিনি । খেতে বসে টপাটপ বড় দু'টুকরো ইলিশ ভাজা সাবাড় করে ফেললেন তিনি। পরিবেশনকারী এগিয়ে এসে তাঁকে আরও ভাজা ইলিশ দেওয়ার চেষ্টা করতেই কবি তাকে বাধা দিয়ে বললেন বললেন, ‘আরে, করছ কী? শেষকালে আমাকে বিড়ালে কামড়াবে যে!’ উৎসুক সবাই ভাবলেন সে রান্না বুঝি পছন্দ হয়নি তাঁর। কিন্তু প্রশ্নের উত্তরে কবি নজরুল জানালেন, ‘ও, বুঝতে পারছেন না! ইলশে মাছ-যে মাছের গন্ধ মুখে লালা ঝরায়, বিড়ালকে মাতাল করে তোলে। বেশি খেলে কি আর রক্ষে আছে!’


কিন্তু আজ নেই সে অযোধ্যা, নেই সে রামরাজত্ব। তাই সবশেষে বলে উঠতে ইচ্ছে করে


অধরা এই জলজ শস্য, রূপোলী রঙের রূপসী পোষ্য

খেতেন পিতামহরা তস্য, পরিবেদনা কা কস্য !

খাচ্ছি যদিও চর্ব্যচূষ্য, তবুও অধরা বর্ষাশষ্য !

সাহিত্যিকদের সাক্ষাৎকার তথ্যসূত্রঃ- “কিংবদন্তীর হেঁশেল" (ধানসিড়ি ) / ইন্দিরা মুখোপাধ্যায়

 
 
 

Comentarios


ssss.jpg
sssss.png

QUICK LINKS

ABOUT US

WHY US

INSIGHTS

OUR TEAM

ARCHIVES

BRANDS

CONTACT

© Copyright 2025 to Debi Pranam. All Rights Reserved. Developed by SIMPACT Digital

Follow us on

Rojkar Ananya New Logo.png
fb png.png

 Key stats for the last 30 days

bottom of page