top of page

" অতি ভৈরব হরষে ।। বিধ্বংসের বছরপূর্তি...

..." অতি ভৈরব হরষে ।। " : আমফান বিধ্বস্ত কলকাতাঃ ২০ মে ২০২০ ।। লিখছেন অর্ক চৌধুরী, চিত্র- সন্দীপন চৌধুরী।


সুকুমার রায় যদি বেঁচে থাকতেন এবং তিনি ২৫ মে ২০০৯ এর “ আয়লা “ দেখে হতবাক হতেন ,তাহলে ২০ মে ২০২০ তে ঘটে যাওয়া আমফান দেখে তাঁর পাগলা দাশু-কে সঙ্গে নিয়ে ছুটে যেতেন ধর্মতলার দিকে । এবং পাগলা দাশুর হৃদপিন্ড কেঁপে উঠত । পাগলা দাশু অনেক কষ্টে বিড় বিড় করে স্বগতোক্তি করে বলতঃ “আবার সে এসেছে ফিরিয়া … !!”

আমরা কয়েক দশক আগেও ঝড় দেখেছি , এবং ফি-বছর প্রবল গ্রীষ্মে দেখে থাকি , যে ঝড় এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগগুলি তার পোষাকি নাম হল …” কালবৈশাখী ।“ বাস্তব হল , প্রতি বছর গ্রীষ্মেই আমরা প্রবল গরমে অতিষ্ঠ হয়ে কালবৈশাখীর আগমনকে স্বাগত জানাতে প্রস্তুত থাকি । EL—Nino জনিত কারণে ২০০৯ –তে এপ্রিল ও মে মাসে কালবৈশাখী প্রায় হয়নি বললেই চলে। সে বছর আমি গাঙ্গেয় অববাহিকায় জেলা শহরে ভরা গ্রীষ্মে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা উঠতে দেখেছিলাম ৪৪ ডিগ্রী সেন্টিগ্রেড । এবং নদীয়া জেলার রাণাঘাটে ল্যু—বইতে দেখেছিলাম । ফলে আনুষ্ঠানিকভাবে যেদিন “ আয়লার “ আগমনের খবর ঘোষনা হয়েছিল সেদিন আপামর জনসাধারণ সেই ঝড়কে স্বাগত জানিয়েছিল । এবং নির্ধারিত দিনের নির্দিষ্ট সময়ে সেই ঝড়ের আগমণ যখন ঘটেছিল তখন সেই জনসাধারণ ত্রাহি ত্রাহি রব ছেড়েছিল । ২৫ মে ২০২০ –র সেই আয়লার ভয়ঙ্কর তান্ডব আমি দেখেছিলাম রেলগাড়িতে বসে । আমরা সভ্যতার অহঙ্কার করে থাকি প্রতিনিয়ত । কিন্তু সভ্যতা যে প্রকৃতির কাছে কতটা অসহায় তা সেদিন অনুভব করেছিলাম আয়লার সেই তান্ডব দেখে।ঝড় প্রকৃতির অতি সাধারণ ঘটনা । ন্যাচারাল ফেনমেনান । ঠিক এই মূহুর্তে দেশের আমজনতা বিগত দু-বছর যাবৎ অসহায় কোভিড-১৯ ভাইরাস ঝড় থেকে যখন মুক্তি চাইছে ঠিক তখনই আবার এক ঝড়ের পূর্বাভাষ দিয়ে নোটিফিকেশন করেছে আবহাওয়া দপ্তর । এবারে অর্থাৎ ২০২১ –এর সেই সাইক্লোনের নামকরণ হয়েছে “ ইয়স বা যস ।“ তিনি আসছেন ….. এবং সাইক্লোন যশের ল্যান্ডফল ঘটতে পারে আগামী ২৪ / ২৫ মে ২০২১ । আমরা জানিনা তার সেই রুদ্ররূপ কেমন হবে । গত বছর আমফান এর ভয়াবহ রূপ আমরা দেখছিলাম । আমরা অর্থাৎ আমজনতা আবার আতঙ্কিত । ঝড়ের কথায় পরে আসব । তার আগে ২০ মে ২০২০ সেই আমফান এর আঘাতে কলকাতার বিধ্বস্ত অবয়বের ছবিগুলো দেখে নিইঃ …….


১) বিধ্বস্ত কলকাতা । বন্ধ বিদ্যাসাগর সেতুর পথ । স্থান –প্রিনসেপ ঘাট ।



২) কাউনসিল হাউস স্ট্রীটের ট্রেজারি বিল্ডিং । নির্জন পথে একাকী / পথভ্রান্ত ।।



৩) অবরুদ্ধ ময়দান ।



৪) অতি নির্জন অফিস পাড়া ।



৫) ইতিহাসের মহাকরণ অবরুদ্ধ ।



৬) স্ট্যান্ড রোড । স্টেট ব্যাঙ্ক সদর দপ্তর ।



৭) বিধ্বস্ত স্টক এক্সচেঞ্জ যাওয়ার রাস্তা ।



৮) জলাশয় হয়েছে ইলিয়ট পার্কের মহরকুঞ্জ ।



৯) লেকটাউন । বাঙ্গুর । ভি. আই পি . রোড ।



১০) ভি.আই. পি . রোড । বাঙ্গুর ।



১১) ভেঙ্গে গেছে সাধের বিগ-বেন ( ইমিটেশন ) ।



১২) কলকাতা স্টেশন । ঝড়ের প্রাক মূহুর্তে ।



শিয়ালদা ঝড়ের পরে । আমফান এর খেলার মাঠ ।



১৩) মৌলালি ।



১৪) স্টেট সেন্ট্রাল লাইব্রেরী । ই . এস . আই . হাসপাতালের রাস্তা ।



১৫) মাণিকতলা । মন্তব্য নিষ্প্রয়োজন ।



১৬) মহম্মদ আলী পার্ক । পুরাতন কলকাতা ।



১৭) পুলিশ ট্রেনিং স্কুল । বডিগার্ড লাইন ।





১৭) পুলিশ ট্রেনিং স্কুল । বডিগার্ড লাইন ।


১৮) বন্ধ হয়ে গেছে এস . এস . কে . এম . এপ্রোচ রোড ।



১৯) প্রাণের খোঁজে । ঝড়ের শেষে সকাল ।



২০) পোহালো ঝড়ের রাত্রি ।


কেমন করে পথ হেঁটেছিল ২০২০ আমফান …? আবহাওয়া বিশেষজ্ঞ গোকুল চন্দ্র দেবনাথ বলেছিলেন বঙ্গোপসাগরের সাইক্লোনগুলো আসলে প্রশান্ত মহাসাগরের বড় বড় ঘুর্ণিঝড়ের রেমন্যানস । প্রশান্ত মহাসাগরে ঘুর্ণিঝড়গুলো ( টাইফুন / হ্যারিকেন ) স্থলভাগে বিধ্বংসী আঘাত করার পরে দুর্বল হয়ে পড়ে । সেই দুর্বল ঝড়ের ডানাগুলো বেশিরভাগ সময়ে ধেয়ে আসে বঙ্গোপসাগরের দিকে । এবং নতুন করে শক্তি সংগ্রহ করে আবার সাইক্লোনে পরিণত হয় ।….. আমরা জানি তাবৎ বিশ্বের আবহাওয়াকে নিয়ন্ত্রণ করে প্রশান্ত মহাসাগর । আবহাওয়া বিজ্ঞানের যুগান্তকারি থিয়োরি “ ওয়াকার্স অসিলেশন / সাদার্ণ অসিলেশন / মনসুন অসিলেশন সমগ্র এশিয়া তো বটেই বাস্তবে সমগ্র বিশ্বের বর্ষার আগমন ও নির্গমনকে নিয়ন্ত্রণ করে থাকে । ওই থিয়োরির জন্ম দিয়েছিলেন স্যার গিলবার্ট ওয়াকারঃ কলকাতায় বসে । আজকের আকাশবাণী ভবন ছিল তখনকার কলকাতার আবহাওয়া বিজ্ঞানের সদর দপ্তর । সে অনেক বড় থিয়োরি । ক্ষুদ্র পরিসরে তার আলোচনা সম্ভব নয় । বাস্তব হল ১০ বছর আগেও আমাদের মত গড় জনতার হাতে আবহাওয়া বিজ্ঞান স্টাডি করার মত যন্ত্রপাতি ছিল না। এখন মোবাইল এপের সহায়তায় সাইক্লোনের গতিবিধি চলে এসেছে হাতের মুঠোয় । গত বছরের আমফান ঝড়ের গতি প্রকৃতি আমরা ধারাবাহিকভাবে ট্র্যাক করতে সমর্থ হয়েছিলাম তার ল্যান্ডফলের সাত দিন আগে থেকেই । সেবার আন্দাজ করা হয়েছিল আমফান স্থলভাগে আঘাত হানবে ২০ মে ২০২০ বেলা ১২টার পরে সম্ভবত ২ পি . এম থেকে ৩ . ৩০ পি . এম . নাগাদ । ঠিক ২৪ ঘন্টা আগে উমপুন অবস্থান করছিল ( Coverred Zone ) বালাশোর—দীঘা—চাঁদিপুর—সাগরদ্বীপ—মৌসুমি আইল্যান্ড—ফ্রেজারগঞ্জ—বকখালি—কাকদ্বীপ—নামখানারর—বাসান্তি—ক্যানিং …. !! ২০ মে ২০২০ ১৮৫ থেকে ২০০ কি . মি . এরও বেশি গতিবেগে রাত্রি সাড়ে আটটায় উমপুনের ল্যান্ডফল ঘটেছিল । স্থলভাগে সে চূড়ান্ত আঘাত হেনেছিল রাত্রি ১০ টা নাগাদ । কলকাতাকে বিধ্বস্ত করে দিয়ে আমার শহর চুচুড়াকে দূরমুশ করতে শুরু করেছিল রাত ১১ টা নাগাদ । সে ছিল এক আতঙ্কের রাত্রি । ২০০৯ সালে আমি চাকদহ স্টেশনে বসে “ আয়লার “ তান্ডব দেখেছিলাম দিনের আলোয় । আর ২০২১ এর আমফান কে দেখতে পাইনি রাতের অন্ধকারে । কারণ শহরে আলো ছিলনা । কিন্তু আমার লাইব্রেরী ঘরের কাচের জানালা পথে তার তান্ডবকে অনুভব করেছিলাম নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ চমকের আলোয় । আমার ছাদের বাগানের বড় গাছের টবগুলিকে সেদিন বাঁচাতে পারিনি । পরের দিন সকালে দেখেছিলাম ৪০০ বছরের এই শহরটাকে দুমড়ে-মুচড়ে দিয়ে উমপুন উধাও হয়ে গেছে । বলতে দ্বিধা নেই ঝড়ের দানবীয় ডানা সেদিন গঙ্গাপথ ধরে উত্তরে যাওয়ার পথে ছুঁয়ে গিয়েছিল নদীর ধারের আমার ছাদকেও । পরের চারদিন নরক যন্ত্রণা । শহর বিদ্যুৎ বিহীন । জল নেই কারও বাড়িতে । গঙ্গার ধারে বিশাল বিশাল বট—অশথ্ব –পাকুড়—শিরীষ গাছগুলোকে । সেগুলোর বয়স ন্যুনতম ২৫০ বছর । আমার স্কুলে একটি বিশাল বটগাছ ছিল । যার বয়স ২৫০ এর কম নয় [ স্কুলের বয়স ১৭১ বছর। স্কুলের বার্ষিক পত্রিকার ( ১৮৬০ ) কভারের লোগো ছিল সেই গাছ। …. সেই গাছটিকে সমূলে উপড়ে আছাড় মেরেছিল আমফান । দেখেছিলাম সেই সাইক্লোন যে পথে চলে গেছে সেই পথের দুধারের জনপদগুলোর উপর রোড-রোলার চালিয়ে গেছে । নাঃ শহরের আম—জনতাকে সেদিন উদ্ধার করতে এগিয়ে আসেনি প্রশাসন বা লোকাল বডির মহান নাগরিকরা । বিদ্যুৎ এবং জলের তীব্র কষ্ট সহ্য করতে না-পেরে আম-জনতা কুড়ুল , কাটারি হাতে নিজেরাই গাছ সরিয়ে রাস্তা ,বাজারের পথ খুলে দিয়েছিল ।

২১ মে ২০২১ আবার এক সাইক্লোনের পূর্বাভাষ । শোনা যাচ্ছে তার জন্ম হয়েছে আন্দামান সাগরের ১০ ডিগ্রী চ্যানেলে । সে ধেয়ে আসবে ওড়িশা উপকুলের পথ ধরে । নাম তার “ যশ বা ইয়শ ।“ না জানি সে আবার কোন ধরনের জোশ দেখাবে । বিগত ছয় দশকে আমি এরাজ্যে এত বেশি উপর্যুপরি সাইক্লোনের আঘাত দেখিনি । আবহাওয়া বদল ঘটছে ; সাবধান হোন …. ১৯৯৫ তে সাবধান করেছিলেন বিজ্ঞানীদের ১০৫ জনের একটি প্যানেল । তাঁদের মধ্যে ৩২ জন ছিলেন নোবেলজয়ী বিজ্ঞানী । অহং সর্বস্য সরকারি প্রশাসকরা সেই সাবধানবাণী শোনেননি । সামনের সেদিন হয়তো হয়ে উঠবে ভয়ঙ্কর । সেই প্রলয়ের দিনের ছবি করার জন্য কি কেউ ক্যামেরা হাতে পথে নামতে সমর্থ হবেন…. ? আজকের ফটোগ্রাফি জগতের কাছে তা হল সহস্র কোটি টাকার প্রশ্ন… !!


বিশেষ কৃতজ্ঞতা





 
 
 

Comments


ssss.jpg
sssss.png

QUICK LINKS

ABOUT US

WHY US

INSIGHTS

OUR TEAM

ARCHIVES

BRANDS

CONTACT

© Copyright 2025 to Debi Pranam. All Rights Reserved. Developed by SIMPACT Digital

Follow us on

Rojkar Ananya New Logo.png
fb png.png

 Key stats for the last 30 days

bottom of page