top of page
Search

যোগাসনের ইতিহাস, বিকাশ ও বিস্তার


আলোচনায় যোগাচার্য্য মধুবন্তী দে..





'যোগ' শব্দটি সংস্কৃত 'যুজ্' ধাতু থেকে এসেছে, যার অর্থ যুক্ত করা। যোগের বিকাশ চিন্হ খুঁজে পাওয়া গেছে প্রায় ৫০০০ বছর আগে। তবে কিছু সাম্প্রদায়িক গবেষনা দাবি জানায়, এই যোগের পর্ব ১০,০০০ বছরের ও আগে থেকে শুরু হয়েছে। কথিত আছে যে, হিমালয়ের কান্তি সরোবরের তীরে হাজার হাজার বছর পূর্বে আদি যোগী শিব তার এই পবিত্র জ্ঞান ৭ কিংবদন্তী ঋষিকে প্রদান করেন। বশিষ্ঠ, মরীচি, পুলত্য, পুলহ, অত্রি, অঙ্গীরা ও ত্রুতু। পরবর্তীতে এই সপ্তঋষিই যোগবিদ্যার প্রচার প্রসার করেন এশিয়া, মধ্যপ্রাচ্য এবং দক্ষিন আমেরিকায় তথা সমগ্র বিশ্বে।


১৯২০ সাল নাগাদ সিন্ধুসভ্যতার খননকার্য থেকে কিছু শিলমোহর এবং জীবাশ্ম সংগ্রহ করা হয় যেখানে যৌগিক চিত্র এবং মুর্তির সন্ধান পাওয়া যায়। কিছু জায়গায় দেখা গেছে কোনো যোগীপুরুষ সাধনার ভঙ্গিতে বসে আছেন, যা থেকে সহজেই অনুমেয় যে সেইসময় প্রাচীন ভারতে যোগবিদ্যার প্রচলন‌ ছিল। এই যুগ প্রাকবৈদিক যুগ।



যোগের ইতিহাস পর্ব:



•বৈদিক যুগ


•পূর্ব শাস্ত্রীয় যুগ


•শাস্ত্রীয় যুগ


•শাস্ত্র পরবর্তী যুগ


•আধুনিক যুগ


•সমসাময়িক যুগ



বৈদিক যুগ:


বেদ শব্দের অর্থ জ্ঞান। ১. ঋকবেদ (স্তুতি জ্ঞান), ২. যজুর্বেদ (ত্যাগের জ্ঞান), ৩. সামবেদ (জপের জ্ঞান), ৪. অথর্ব বেদ (চিকিৎসা শাস্ত্র জ্ঞান)। যোগ শব্দের সর্বপ্রথম ব্যবহার এবং সংজ্ঞা আমরা বেদ'এ খুঁজে পাই। বেদ হলো জ্ঞান আর যোগ তার সাধনা। যেন এক পরম সত্যের দুই পিঠ। ঋকবেদের কিছু মন্ত্রে যৌগিক সাধনার উল্লেখ রয়েছে। ঐতেরিয় আরন্যক, তৈত্রিয় আরন্যক ইত্যাদিতে যোগের বিভিন্ন পদ্ধতির উল্লেখ রয়েছে। এছাড়াও প্রানীবিদ্যা, 'ওম' শব্দের পারিভাষিক নাম 'প্রনব' ইত্যাদিও রয়েছে।


পূর্ব শাস্ত্রীয় যুগ:


এই যুগে বিভিন্ন উপনিষদ থেকে যোগ বিষয়ক তথ্য জ্ঞান প্রাপ্ত হয়। যেমন: কেন, কাঠ, প্রশ্ন, মুন্ডক, মান্ডুক্য ; ঐতেরিয়, ছান্দোগ্য, বৃহদারন্যক প্রভৃতি উপনিষদ গুলি যৌগিক জ্ঞানকে প্রতিভাত করে। রামায়নের বালকান্ডে জপ এবং ত্যাগের জ্ঞানের উল্লেখ, লবকুশের আশ্রমিক জীবনেও যোগ প্রশিক্ষনের উল্লেখ আছে। মহাভারতের শ্রীমদ্ভগবদগীতা'ই হলো যোগশাস্ত্রে সমৃদ্ধ জ্ঞানের সমুদ্র। সমগ্র জ্ঞান, কর্ম ও ভক্তিযোগের উল্লেখ এখানে রয়েছে।


শাস্ত্রীয় যুগ:


এই যুগে মহর্ষি পতঞ্জলি তার অষ্টাঙ্গযোগ এর দ্বারা যোগদর্শন শাস্ত্রের পদ্ধতিগত দিককে সকলের সামনে তুলে ধরেন। তার যোগসূত্রের ১৯৫ টি সূত্রের দ্বারা ৮ টি ভাগে মুক্তির পথ কে বিশ্লেষন করেছেন।


অষ্টাঙ্গযোগ:


•যম


•নিয়ম


•আসন


•প্রানায়াম


•প্রত্যাহার


•ধারনা


•ধ্যান


•সমাধি


সমসাময়িককালে গৌতম বুদ্ধ এবং মহাবীর জৈন তাদের দার্শনিক দৃষ্টিভঙ্গির মাধ্যমেও এক'ই চিন্তার প্রসার ঘটিয়েছেন। বৌদ্ধ দর্শন শাস্ত্রে ৪ আর্য্যসত্য ও অষ্টাঙ্গিক মার্গ পূর্ব বাক্যকেই সমর্থন করে। এতেও যোগশাস্ত্রের মতো চিত্তপ্রসাদনের চারভাগ: মৈত্রী, করুনা, মুদিতা ও উপেক্ষা। এক'ইভাবে জৈনধর্মেও যোগবিদ্যার সাযুস্য পাওয়া যায়। যেমন, শুভদ্রর জ্ঞানার্ণড়ে (500 AD) আসন, প্রানায়াম, মান্ডালা, ধারনা ও ধ্যানের উল্লেখ আছে। অন্যান্য শাস্ত্রতে ন্যাস এর উল্লেখ আছে, যা থেকে পরবর্তীতে যোগনিদ্রার পদ্ধতি অভিব্যক্ত করা হয়েছে।

শাস্ত্রপরবর্তী যুগ:

এইসময় যোগ অনেকবেশী সমন্বয়পূর্ন। আধ্যাত্মিকতা ও অভিজ্ঞতাবাদ এই দুই'য়ের মেলবন্ধন এই যুগে খুঁজে পাওয়া যায়। এই সময়'ই ঋষিগন‌ যোগবিদ্যাকে আয়ু এবং সুস্বাস্থ্যের কারন হিসেবে প্রচার শুরু করেন। বিভিন্ন শোষনক্রিয়া, প্রানায়াম বিষয়ক তথ্য এই সময়কার কিছু স্মৃতিশাস্ত্রে পাওয়া যায়। শিবপুরান, বায়ুপুরান, ব্রক্ষ্মান্ডপুরানে বিভিন্ন যৌগিক ক্রিয়ার উল্লেখ রয়েছে। যম নিয়মের উল্লেখ বিষ্ণুপুরানেও রয়েছে।


তান্ত্রিক বিভাগে বিভিন্ন তান্ত্রিক মুদ্রা, মন্ত্র, মান্ডালার উপস্থিতি মেলে। পঞ্চম-কার, দক্ষিনমার্গ বামমার্গের উল্লেখ বিশেষভাবে তাৎপর্যপূর্ণ। নাথ সম্প্রদায়ের মধ্যে রাজযোগ ও হঠযোগের বিবর্তনের সন্ধান পাওয়া যায়। যোগবিষয়ক গ্রন্হগুলি হলো সিদ্ধ সিদ্ধান্ত পদ্ধতি, গোরক্ষশতক, হঠ-প্রদীপিকা, শিব সংহিতা ইত্যাদি। ভক্তি সম্প্রদায়ের শ্রীমদভাগবতপুরানেও যোগ সম্পর্কিত ভক্তি সাধনার পদ্ধতির উল্লেখ মেলে।


বর্তমান যুগ:

এই যুগের যথাযথ সূচনা হিসেবে ১৮৯৩ সালে শিকাগো শহরে অনুষ্ঠিত বিশ্বধর্মসন্মেলনে স্বামী বিবেকানন্দের দৃষ্টিভঙ্গিকে গ্রহন করা হয়। তাঁর দৃষ্টিভঙ্গিতে বিভিন্ন পথগুলি যথা কর্মযোগ, জ্ঞানযোগ, রাজযোগ সব'ই যেন আলাদা মাত্রা পেয়েছে।


সমসাময়িক যুগ:

এই যুগ যোগাভ্যাস প্রক্রিয়াকে স্বাস্থ্যের সংরক্ষণ, রক্ষনাবেক্ষনের মাধ্যম হিসেবে নির্বাচন করে। সেই কারনেই এইসময় বিহার স্কুল অফ যোগ (মুঙ্গের), কৈবল্যধাম (লোনাভলা), শান্তিকুঞ্জ (হরিদ্বার), মোরারজী দেশাই ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ যোগ, এস ভ্যাসা প্রভৃতি গবেষনামূলক প্রতিষ্ঠানের সূচনা হয়েছে। বিশেষ যোগ ব্যাক্তিত্বরা হলেন স্বামী শিবানন্দ, শ্রী যোগেন্দ্র, বি কে এস আয়েঙ্গার, স্বামী মহানন্দ সরস্বতী প্রমুখরা।


সুতরাং নিঃসন্দেহে বলা যায়, যোগবিদ্যা তথা যোগদর্শন শাস্ত্র প্রাচীন ভারতের ঐতিহ্যসম। যোগবিদ্যা তার ধারাকে সেই প্রাচীনকাল থেকে অটুট রেখেছে আজকের সময় পর্যন্ত। বর্তমানে এটি শিক্ষার অন্তর্গত বিষয় বলেও নির্বাচিত হয়েছে। পাশাপাশি লক্ষাধিক মানুষ আজ যোগাভ্যাসের দ্বারা উপকৃত হচ্ছেন। এটি এখন বৈকল্পিক চিকিৎসা পদ্ধতি হিসেবে ও পরিচিত। তাই যোগসাধনাকে কোনো ধার্মিক সীমারেখার ভুল ধারনায় আবদ্ধ না রেখে আসুন এর সর্বাপেক্ষা লাভ গ্রহন করি।

Rojkar Ananya New Logo copy.jpg

Your key stats for the last 30 days

Follow us on

fb png.png

©2023 to Debi Pranam. All Rights Reserved

bottom of page