top of page
Search

একমেবাদ্বিতীয়ম জগন্নাথ মহাপ্রভু এবং রসগোল্লা উৎসব..

Updated: Jul 16

জানেন কি কেন পালন করা হয় রথযাত্রার? কি গল্প রয়েছে এর পেছনে? এত রহস্য বিজড়িত শ্রীক্ষেত্র পুরী ধামের মন্দিরে কি কি ভোগ দেওয়া হয় জগন্নাথ বলভদ্র ও সুভদ্রা কে? আর কেনই বা পালন হয় রসগোল্লা উৎসবের? রথযাত্রার শেষে আর কি কি হয় সবকিছুর হদিশ রইল এবারের রবিবারের অনন্যার পাতায়।

পুরীর জগন্নাথ বিগ্রহে সুদর্শন চক্র দণ্ডাকার। জগন্নাথ, সুভদ্রা, বলভদ্রের পিছনে যে দণ্ডটি দেখেন, সেটাই হল সুদর্শন চক্র। বলা হয়, এই যুগে শ্রীকৃষ্ণের আর যোদ্ধা রূপের প্রয়োজন নেই। সুদর্শনও তাই অন্যরূপে। জগন্নাথও তাই শুধু প্রেম আর ভালবাসার দেবতা। যাকে মনের কথা বলা যায়, গল্প করা যায়, অভিমানও করা যায়। তার বাইরে তিনিই অবশ্য জগৎপতি, রাষ্ট্রদেবতা। এই ব্রহ্মাণ্ডের মালিক। তিনিই একাধারে বিষ্ণু, তিনিই শিব, তিনিই দুর্গা, তিনিই কালী।

জগন্নাথ ধাম কি আসলে শক্তিপীঠ?

পুরীর উইমেন্স কলেজের অধ্যাপিকা ডঃ কল্যানী নন্দীর গবেষণা অনুযায়ী, জগন্নাথধাম আসলে শক্তিপীঠ। যে পাঁচটি 'ম' সহযোগে শক্তির উপাসনা হয়, সবই পাওয়া যায় জগন্নাথ মন্দিরের উপাচারে। নারিকেলের জল যখন তামার পাত্রে রাখা হয়, তখন তা 'মদ্য'‌ এর সমান। আদা সহযোগে যখন বড়া তৈরি হয়, তখন তা মাংস। আবার দেবদাসীরা যখন নৃত্যকলায় দেবতাকে খুশি করতেন, তখন তা মৈথুন। নবকলেবরে মৎস্যবলি কিংবা দিনের শেষে ৩৬ রকম পান দিয়ে দেবতার আরাধনাও হয় জগন্নাথ মন্দিরে। চলে হাতের মুদ্রার নানা ব্যবহার। অর্থাৎ শক্তি আরাধনায় যা যা হয়, সবটাই হয় এখানেও।

জগন্নাথের মূর্তি তৈরির ইতিহাস..

শবরদের আরাধ্য নীলমাধবের সন্ধান পেতে ললিতার হৃদয় জয় করে বিয়ে করেন বিদ্যাপতি। এবং স্ত্রীর মাধ্যমে শ্বশুর বিশ্বাবসুকে বুঝিয়ে নীলমাধবের দর্শন পান। এই কাহিনিটিই শ্রীক্ষেত্র বা নীলাচলের ভিত্তি। কাহিনির রকমফের বলছে, বিশ্বাবসুর বাবা শবর ব্যাধ জরা-ই হরিণের কান ভেবে শ্রীকৃষ্ণের রাতুল চরণ তিরে বিঁধে তাঁকে হত্যা করেছিলেন। শ্রীকৃষ্ণের দেহ সৎকারের সময়ে নাকি তা আগুনে পুরোটা পোড়েনি। অর্ধদগ্ধ হাতবিশিষ্ট দেহাংশ সমুদ্রে ভাসিয়ে দেওয়া হয়। ক্রমে তা শবরদের আরাধ্য হয়ে ওঠে। বিদ্যাপতির মাধ্যমে কাষ্ঠখণ্ড রূপে তার সন্ধান পেয়েছিলেন রাজা ইন্দ্রদ্যুম্ন। সেই কাঠ থেকেই বিশ্বকর্মা জগন্নাথের দারুমূর্তি নির্মাণ করেন।

সোজারথ এবং উল্টোরথ...

‘উৎকলখণ্ড’ এবং ‘দেউল তোলা’ নামক ওড়িশার প্রাচীন পুঁথিতে জগন্নাথদেবের রথযাত্রার ইতিহাস প্রসঙ্গে বলা হয়েছে যে, "এই রথযাত্রার প্রচলন হয়েছিল সত্যযুগে। সে সময় আজকের ওড়িশার নাম ছিল মালবদেশ। সেই মালবদেশের অবন্তীনগরী রাজ্যে ইন্দ্রদ্যুম্ন নামে সূর্যবংশীয় এক পরম বিষ্ণুভক্ত রাজা ছিলেন। যিনি ভগবান বিষ্ণুর এই জগন্নাথরূপী মূর্তির রথযাত্রা শুরু করার স্বপ্নাদেশ পেয়েছিলেন।"

রাজা ইন্দ্রদ্যুম্নের স্ত্রী হলে গুন্ডিচা। নীলমাধব পুরী মন্দিরে যাওয়ার সময় রাজাকে বলেছিলেন, রাজার তৈরি মন্দিরের রত্নবেদিতে তিনি যাচ্ছেন একটা শর্তে! বছরে একটি বার তাঁর জন্মবেদিতে তাঁকে ফিরিয়ে দিতেই হবে। পুরীর গুণ্ডিচা মন্দির জগন্নাথদেবের সেই জন্মবেদি। ন’দিনের গুণ্ডিচা যাত্রা হল ঈশ্বরের শিকড়ে ফেরার লগ্ন। নয়দিনের মাথায় পুরী মন্দিরে ফেরার প্রথাই হলো উল্টো রথযাত্রা।

দেবী বিমলা কে?

রামেশ্বরী সেতুবন্ধে বিমলা পুরুষোত্তমে | বিরজা ঔড্রদেশে চ কামাক্ষ্যা নীলপর্বতে ||


তিনি দেবী মহামায়ার অংশ, ৫১ সতীপীঠের অন্যতমা দেবী বিমলা। জগন্নাথের ভোগ সবার আগে সমর্পন করা হয় তাঁকেই। দেবীর পুজো হয় তন্ত্রমতে। তাঁর দর্শন না করা অবধি জগন্নাথ দর্শন সম্পূর্ণ হয় না। এই মন্দিরের চারটি অংশ। মন্দিরের দেওয়াল জুড়ে দশমহাবিদ্যার চিত্র খোদাই করা। পুরাণমতে, এখানে সতীর ডান পায়ের কড়ে আঙুল পড়েছিল। আশ্বিন মাসে টানা ষোলো দিন বিভিন্ন রূপে দেবীকে অর্চনা করা হয়। বছরের অন্যান্য দিন জগন্নাথের নিরামিষ ভোগ তাঁকে অর্পন করা হয়। কিন্তু দুর্গাপুজোর সময় তাঁকে আমিষ ভোগ নিবেদনের নিয়ম রয়েছে। বিশেষভাবে স্থানীয় কুণ্ড থেকে মাছ এনে ভোগ নিবেদন করা হয় দেবীকে। তবে পুজোর সময় তিনদিন দেবী মন্দিরে মেষ বলিও হয়। খুবই গুপ্ত পদ্ধতিতে এই সময় দেবীর পুজো হয়। বৈষ্ণব মন্দিরের মেঝেতে সেই মেষ স্পর্শ করানো হয় না। বাঁশের সিঁড়ি ব্যবহার করে বিশেষ ভাবে দেওয়া হয় বলি।


জগন্নাথের পূর্বে কেন এই মহাভোগ অর্পন করা হয় দেবী বিমলা কে?

কথিত আছে, বিষ্ণুকে প্রাণভরে দর্শনের জন্য মহাদেব একবার বৈকুণ্ঠে হাজির হন। সেই সময় বিষ্ণু আহারে বসেছেন। যা দেখে শিবের ইচ্ছা হয় নারায়ণের প্রসাদ গ্রহন করবেন। কিন্তু নারায়ণের আহার গ্রহণের পর প্রায় কিছুই আর অবশিষ্ট ছিল না। অগত্যা নারায়ণের থালায় পড়ে থাকা সামান্য অংশ মুখে দেন তিনি। এবং তিনি এতটাই আবিষ্ট ছিলেন যে সেই প্রসাদের প্রায় অনেকটাই তাঁর মুখে লেগে যায়।

বিষ্ণুভক্ত নারদ মহাদেবের মুখে লেগে থাকা প্রসাদ দেখেই বুঝতে পারেন এই প্রসাদ তাঁর উপাস্যের। সঙ্গে সঙ্গে সেখান থেকে প্রসাদ নিয়ে মুখে তোলেন তিনি। এমন সময় দেবী পার্বতীও সেখানে উপস্থিত হন। নারায়ণের প্রসাদ তাঁরও চাই, এমনই দাবী করেন স্বামীর কাছে। কিন্তু শিব তো অপারগ। তাঁর নিজেরই ঠিক মতো প্রসাদ গ্রহণ হয়নি। যেটুকু অবশিষ্ট ছিল, তা নারদ গলাদ্ধকরণ করেছেন। অগত্যা পার্বতী হাজির হন নারায়ণের কাছে। সব শুনে নারায়ণ তাঁকে আশ্বস্ত করেন পুরুষোত্তম ক্ষেত্রে তাঁর শক্তি রূপে অবস্থান করবেন দেবী। এবং নারায়ণের প্রসাদ সবার আগে তাঁকে অর্পন করা হবে। যে প্রথা আজও এতটুকু বদল হয়নি। দেবী বিমলাকে অর্পন করার পরই জগন্নাথের প্রসাদ হয়ে ওঠে মহাপ্রসাদ।

মহাপ্রসাদে ছাপ্পান ভোগ..

পুরাণ অনুযায়ী, ভগবান শ্রী বিষ্ণু মর্তলোকে এসে চারধামে যাত্রা করেন। এই চার ধাম হল বদ্রীনাথ ধাম, দ্বারকা ধাম, পুরী ধাম এবং রামেশ্বরম। প্রথমে হিমালয়ের শিখরে অবস্থিত বদ্রীনাথ ধামে তিনি স্নান করেন। তারপর গুজরাতের দ্বারকা ধামে গিয়ে বস্ত্র পরিধান করেন। ওড়িশার পুরী ধামে ভোজন করেন। আর সবশেষে রামেশ্বরমে গিয়ে বিশ্রাম নেন। এই কারণে পুরী মন্দিরে প্রতিদিন ছাপ্পান ভোগ নিবেদন করা হয়।

সকাল সাতটা থেকে আটটার মধ্যে জগন্নাথদেবকে প্রথম ভোগ দেওয়া হয়। এই ভোগকে বলা হয় গোপালবল্লভা ভোগ। এইসময় জগন্নাথ, বলভদ্র ও সুভদ্রাকে দেওয়া হয় ঘন দুধ, মাখন, নারিকেল নাড়ু, নারিকেলের জল, মিষ্টি খই, মিষ্টি দই, পাকা কলা ও সুগন্ধি ভাত। জগন্নাথদেবের ভোগ এর পরে হয় সকাল ১০টায়। যাকে বলা হয় সাকালা ধোপা। এই সময়ের ভোগকে রাজভোগ অথবা কথাভোগও বলা হয়। সকালের এই ভোগে থাকে ২০ রকমের পদ। সেগুলো হল পিঠে-পুলি, বাদকান্তি, এন্ডুরি, মাথা পুলি, দাহি, অন্ন, হামসা কেলি, বড়া কান্তি, কাকাতুয়া ঝিলি, আদা পঁচেদি, বোঁদে, টাটা খিচুড়ি, কানিকা, নুখুরা খিচুড়ি, সানা খিচুড়ি, মেন্ধা মুন্ডিয়া, আধা আনিকা, তাইলে খিচুড়ি, সাগু ও দালা খিচুড়ি।

এর পরের ভোগ হয় বেলা ১১টায়। যাকে বলা হয় ভোগা মধ্যাহ্ন ভোগা। ভক্তরা জগন্নাথ দেবকে যে ভোগের ডালা দেন, সেটাই হয় এই সময়ের ভোগ। এর পরে জগন্নাথ দেবকে ভোগ দেওয়া হয় বেলা ১২টা থেকে ১টার মধ্যে। যাকে বলা হয় মধ্যাহ্ন ভোগা। এই ভোগে থাকে ৪০টি পদ। সেগুলো হল বড় পিঠে, দমলা, মাথা পুলি, বারা, কাকারা, গোটাই, সরমনোহর, বড় ক্ষীর ছোলা, বড় আড়িশা, পানা, ছানা আরিশা, পদ্য পিঠে, কাদমবা, বিড়ি পিঠে, মির্চপানি, সানা কাদম্বরী, সুগন্ধী পোলাও, সানা পেস্তা, সাকারা, ভাগ পিঠে, পান ইত্যাদি।

এরপর সন্ধ্যা আরতি শেষে ভোগ নিবেদন করা হয় জগন্নাথ দেবকে। একে বলা হয় সন্ধিয়া ধোপা। এই সময় জগন্নাথ, বলভদ্র ও সুভদ্রাকে ৯টি পদের ভোগ দেওয়া হয়। সেগুলো হল ত্রিপুলা পোলাও, আমাশলু, সানা অলি পোলাও, কানার পুলি, পাখাল, সানাও আমল, পানি পোলাও, সাকার, মাঠ পোলাও। রাতের দিকে জগন্নাথ দেবকে ভোগ নিবেদন করা হয়, যাকে বলা হয় রাত্র ভোগা। এই ভোগের তালিকায় থাকে সরপিঠা, সীতাভোগ, সেরাগুলি পিঠা, কানজি, কাঁদালি বরা, পায়েস, লুনি, খুরুমা ইত্যাদি।

গুন্ডিচা মন্দির যাত্রাপথে বিশেষ ভোগ:

জগন্নাথদেবের মন্দির ও গুণ্ডিচার প্রায় মাঝামাঝি স্থানটির নাম ‘বলগণ্ডি’। মধ্যকালীন প্রখর রোদে এখানে বিশ্রাম করেন জগন্নাথদেব-সহ আর সকলে। তিন বিগ্রহের স্বস্তির জন্য পঞ্চামৃতের সঙ্গে সুবাসিত সুশীতল জল দিয়ে দর্পণ অভিষেক, সুগন্ধী চন্দন কর্পূর দিয়ে সর্বাঙ্গে লেপন ও চামর ও পাখা দিয়ে বাতাস করা হয়। এরপর ভোগ নিবেদন করা হয়। এতে থাকে বিভিন্ন ধরনের মিষ্টান্ন, খেজুর, আখ, নারিকেল, কলা, ফল, ক্ষীরের তৈরি বিভিন্ন মিষ্টি, সুবাসিত সুশীতল জল, কর্পূর ও লবঙ্গ দিয়ে তৈরি সুগন্ধী মশলা পান ইত্যাদি। একে বলা হয় ‘বলগণ্ডি ভোগ'।

জগন্নাথের মাসি কি সত্যিই মায়ের বোন মাসি?

জগন্নাথের এই মাসির বাড়ির ধারণাটি অবশ্য একান্তই বাঙালির কল্পনা। পুরীর মন্দিরের সেবায়েতদের কাছে রথযাত্রা মানে গুণ্ডিচা যাত্রা। গুণ্ডিচা হলেন ইন্দ্রদ্যুম্নের স্ত্রী। আর মাহেশের সেবায়েতরা বোঝান, মাসি মানে মায়ের বোন মাসি নয়। ইনি হলেন পৌর্ণমাসী। শ্রীকৃষ্ণের ব্রজের গোপিনীদের এক জন। দ্বারকায় শ্রীকৃষ্ণকে দেখতে এসে গোপিনীদের মনোবাঞ্ছা পূরণ হয়নি। এর পরেই শ্রীকৃষ্ণ ঠিক করেন, আষাঢ় মাসের শুক্লা দ্বিতীয়ায় প্রতি বছর পৌর্ণমাসীর কুটিরে তিনি ন’দিন অতিবাহিত করবেন। গোপিনীরা সেখানে ফের নিজের মতো করে পাবেন তাঁকে। জগন্নাথদেবের মাসির বাড়ি যাওয়ায় আদতে সেই গোপিনীর কুঞ্জে যাত্রারই প্রকাশ। বাঙালির মুখে মুখে মাসি হলেও পৌর্ণমাসী তাই সত্যিই মাসি নন।

নিলাদ্রী বিজয় এবং রসোগোল্লা উৎসব...

লক্ষ্মীদেবীর অনুমতি না নিয়েই ত্রয়ী ভাইবোন ন’দিনের রথযাত্রায় বেরিয়ে যান গুণ্ডিচা মন্দিরে থাকার উদ্দেশ্যে। স্বামীর এহেন আচরণে বেজায় ক্ষুব্ধ হন দেবী। উল্টোরথের দিন মাসির বাড়ি থেকে ফিরলেও মূল মন্দিরে প্রবেশ করেন না জগন্নাথ, বলভদ্র ও সুভদ্রা। মন্দিরের সামনে তিনদিন ধরে রথের উপরেই উপবিষ্ট থাকেন। একাদশীর দিন স্বর্ণালঙ্কারে সেজে ওঠেন তিনমূর্তি। দ্বাদশীর সন্ধ্যায় পালিত হয় অধরপনা। তিন বিগ্রহকে দেওয়া হয় নানাবিধ শীতল পানীয়।

তৃতীয় দিন জগন্নাথ, বলভদ্র ও সুভদ্রা মন্দিরে প্রবেশ করতে গেলে ঘটে এক মজার কান্ড! বলভদ্র আর সুভদ্রা ভালোয় ভালোয় বাড়ি ঢুকলেও যেই জগন্নাথ ঢুকতে যাবেন, লক্ষ্মী দেবী সটান মুখের উপর দুম করে দরজা বন্ধ করে দেন। কারণ তিন ভাইবোন মাসির বাড়ি থেকে দেদার আমোদ আহ্লাদ করে এসেছেন অথচ তাঁকে নিয়ে যান নি। অভিমানিনী লক্ষ্মী দেবী এই কয়দিন একা একা শ্রীমন্দিরে ছিলেন। অবশ্য মাঝখানে একদিন তিনি মাসির বাড়ি দেখা করতে গিয়েছিলেন কিন্তু জগন্নাথ তাঁকে পাত্তা দেন নি। তারই ফলস্বরূপ যাত্রা শেষে জগন্নাথদেব দেখেন বাড়ির দরজা বন্ধ।

অবস্থা বেগতিক দেখে স্ত্রীর মানভঞ্জনের জন্য বুদ্ধি করে এক হাঁড়ি রসগোল্লার আয়োজন করে জগন্নাথ তাঁকে উপহার দেন। ত্রিভুবনের অতুল ঐশ্বর্যের অধিকারিনী লক্ষ্মীর মান ভাঙে ওই রসগোল্লা খেয়ে। রসগোল্লা খাওয়ার পর অবশেষে স্বামীকে ঘরে ঢোকার অনুমতি দেন এবং খুশী মনে পতিদেবটিকে নিয়ে তিনি শ্রীমন্দিরে প্রবেশ করেন। এক বছরের মতো নিশ্চিন্ত, আর পতিদেব কাছ ছাড়া হবেন না। এরপর মন্দিরের সিংহ দুয়ার বন্ধ হয়ে যায়।

ত্রয়োদশীর দিন ভোগ হিসেবে জগন্নাথদেবের উদ্দেশ্যে কয়েকশো হাঁড়ি রসগোল্লা নিবেদন করেন সেবায়েতরা। আসলে এই মিষ্টি উপহার দেওয়া হয় লক্ষ্মী দেবীকে। লক্ষ্মীর মান ভাঙিয়ে জগন্নাথ ঘরে ফিরবেন। প্রতিবছর দাম্পত্যের এই মধুর রসের সাক্ষী থাকে আপামর জনসাধারণ। বাঙালির প্রাণের মিষ্টি রসগোল্লাতেই প্রতিবছর রথযাত্রার মধুরেণ সমাপয়েৎ হয়।


অনুলিখন: সুস্মিতা মিত্র

তথ্যসূত্র ঋণ স্বীকার:

শ্রীশ্রী রঘুনাথদাসগোস্বামী পাদ বিরচিত "মুক্তাচরিত"

আর্য্যাচার-পদ্ধতি বা পুরোহিত-দর্পণ, অখণ্ড সংস্করণ, সম্পাদনা: কৃষ্ণচন্দ্র স্মৃতিতীর্থ

দেবী পীঠ তন্ত্র, রাজা গোপ

পুরীধাম ও জগন্নাথদেবের ব্রহ্মরূপ বৃত্তান্ত

Comments


bottom of page