কেন আজও উত্তমকুমার
বাংলা ছবির মহানায়ক উত্তমকুমারের অভিনয় নিয়ে লিখছেন জাতীয় পুরস্কার প্রাপ্ত চলচ্চিত্রকার অতনু ঘোষ..

সিনেমার বয়স একশো পঁচিশ পেরিয়েছে। আজও দু'ধরনের মানুষ ক্যামেরার সামনে অডিশন দিতে আসেন। একদল প্রথমেই ঘোষণা করেন, নাটকে অভিনয় করেন বা করেছেন। অভিনয় সম্পর্কে ধারণা, শিক্ষা, অনুশীলন, সবই আছে। অন্যদল আনকোরা। সরাসরি সিনেমায় অভিনয় করতে চান। অনেকে অকপটে স্বীকার করেন, কোনও অভিজ্ঞতা নেই। বাকিরা পাড়া, ক্লাব বা স্কুল-কলেজের নাটকে দু'একবার মঞ্চে উঠেছেন। আজ থেকে প্রায় পঁচাত্তর বছর আগে নানান ফিল্ম প্রযোজনা সংস্থার আপিসে নিয়মিত হাজিরা দিচ্ছেন যে তরুণ, সেই অরুণকুমার চট্টোপাধ্যায় নিজের কি পরিচয় দিতেন? এক আনকোরা উৎসাহী, যিনি সিনেমায় অভিনয় করতে চান? নাকি, সাধারণ মধ্যবিত্ত পরিবারের ছেলে, কেরানির চাকরিতে মন বসছে না, এই লাইনে আসতে ভীষণভাবে আগ্রহী? আর তেমন কিছু বলারও ছিল না। অভিনয় শিক্ষা নেই। প্রতিষ্ঠিত নাট্যদলের অভিজ্ঞতা নেই। একমাত্র সম্বল, পাড়া বা ক্লাবের সূত্রে কয়েকবার মঞ্চে ওঠা। পরিচয় পর্বে হয়তো সেটাই প্রাধান্য পেত। কারণ আজও সিনেমার অডিশনে দু'একটা প্রশ্নের পরেই জানতে চাওয়া হয় 'আপনি নাটক করেছেন?'
ঋত্বিক ঘটকের লেখা একটি প্রবন্ধ ১৯৫০ সালে 'চলচ্চিত্র' পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। অভিনয়ে নব অধ্যায়'। উনি বলছেন, "আমাদের দেশের অভিনেতাদের মঞ্চের প্রতি বিশেষ পক্ষপাত আছে। বহুকালের ঘনিষ্ঠতা তার একটি কারণ। সে ক্ষেত্রে ছবির অভিনয় আমরা দেখেছি, চিনেছি অল্পকাল, ভালো করে তার প্রধান সমস্যাগুলি নিয়েমাথা ঘামাইনি। বহু বিখ্যাত ও কৃতিসম্পন্ন মঞ্চ-অভিনেতারা তাই এমন কথাও বলেন, চিত্রে অভিনয় নাকি আসল অভিনয় নয়; পরিচালকের হাতে থাকে প্রায় সব স্বাধীনতা, তাঁরা যা খুশি করেন। আর অভিনেতাও তাঁদেরই হাতের অনেকটা যন্ত্রের মতোই।"
সিনেমার পরিচালক কিভাবে "যা খুশি করেন" বা তাঁর হাতে অভিনেতারা কতটা 'যন্ত্র', সে আলোচনা এখানে অবান্তর। তবে এটা মানতেই হবে, খুব সম্প্রতি আমরা সিনেমার অভিনয়কে আলাদা বিভাগের স্বীকৃতি দিয়েছি। এতকাল নাট্যাভিনয়ের সঙ্গে তুলনামূলক বিচার করে এসেছি। সেযুগে আরও জোরালো ধারণা ছিল বলেই ধরে নেওয়া যায়। কাজেই, অরুণকুমার চট্টোপাধ্যায়ের নামের পাশে নির্ঘাত একটা খামতির চিহ্ন গোড়াতেই পড়ে গিয়েছিল। তিনি সে অর্থে নাটক থেকে আসেননি। বরং গানটা মন দিয়েই শিখেছিলেন। গলাও সুন্দর। তখনকার বাংলা সিনেমায় গানের গুরুত্ব অনেকখানি। কুন্দনলাল সায়গল, রবীন মজুমদার জ্বলজ্বল করছেন। কিন্তু শুধু গান দিয়ে হবে না। অভিনয়? আশেপাশে তাবড় তাবড় নাম। প্রমথেশ বড়ুয়া বড় তারকা। আছেন দুর্গাদাস বন্দ্যোপাধ্যায়, ধীরাজ ভট্টাচার্য, পাহাড়ি সান্যাল, অসিতবরণ। আরো অনেকে। নাটকের দুই মহীরুহ শিশির ভাদুড়ি, অহীন্দ্র চৌধুরীও মাঝেমধ্যে সিনেমায় দেখা দেন।
এমন কঠিন প্রতিযোগিতার মুখে পড়ে অরুণকুমার চট্টোপাধ্যায় হয়তো এক সারসত্য উপলব্ধি করেছিলেন। শুধুই একের পর এক কাজ করলে চলবে না। মাধ্যম হিসেবে সিনেমাকে চিনতে হবে। এর বৈশিষ্ট্য জানতে হবে, বুঝতে হবে। তবেই সঠিক অভিনয়শৈলীর নাগাল পাওয়া যাবে। অন্তর থেকে। গভীরভাবে। সেই বোধ, সেই উপলব্ধিকে নিজের মতো করে আত্মস্থ করেন। এ হল প্রস্তুতি পর্ব। এরপর অভিনেতাকে চরিত্রের মধ্যে সেই বাস্তবকে ফুটিয়ে অভিনেতা বাস্তবকে চেনার চেষ্টা করেন। সঙ্গে জুড়তে হয় নিজস্ব ব্যাখ্যা, সমালোচনা। এই প্রক্রিয়া পরিণত অভিনয়ের প্রাথমিক ফর্মুলা।
সিনেমায় এর প্রয়োগ কতটা আলাদা সে সম্পর্কে এলিয়া কাজান বলছেন- 'Whereas you can-and many effec- tive actors do-get away with faking, posturing, and indicating emotions on stage, it's difficult, if not impossi- ble, to get away with anything false before the camera. That instrument penetrates the husk of the actor, it reveals what's truly happening-if anything, if nothing. A close-up demands absolute truth. It's a severe and awesome trial,' নাটকে অভিনেতা ও দর্শকের দূরত্ব আদৌ অভিনয়ের খামতি ঢেকে দিতে পারে কিনা সেই বিতর্কে যাচ্ছি না। ক্যামেরা ও শব্দগ্রহণযন্ত্রের সূত্রে সিনেমায় বাস্তব কিভাবে ধরা দিচ্ছে সেটা বোঝা দরকার।
ঋত্বিক ঘটক লিখেছেন "চিত্রগ্রহণ যন্ত্র সামান্য তোলাটাও কত কাছে এসে তুলে নিয়ে হাজার গুণ বড় করে দেখাবে। ফিসফিস করে যে কথা বলার সে কথা তেমনই বলা চলবে।" এখনই অনেকে বলে উঠবেন, 'ওইজন্যেই তো সিনেমার অভিনয়ে সবকিছু কম করতে হয়!' এখানেই গণ্ডগোল। কিসের নিরিখে কম? অবধারিত জবাব, 'কেন? নাটকের চেয়ে কম?' প্রথমত, কোনও স্বাধীন, স্বয়ংসম্পূর্ণ শিল্পমাধ্যমের প্রয়োগকৌশল আলোচনা করতে অন্য একটি মাধ্যমকে মাপকাঠি করার এই প্রক্রিয়া অর্থহীন, হাস্যকর। তাছাড়া মানবসত্তার গভীর অন্তঃস্থল থেকে যে প্রতিক্রিয়া বেরিয়ে আসছে, তার ওপর নিয়ন্ত্রণের কন্ট্রোল সুইচ বসালে সেটা যে আর সত্য থাকে না। বিকৃত, মেকি হয়ে যায়। অর্থাৎ সিনেমায় তিনিই সফল অভিনেতা যিনি তাঁর মনের গভীরতম আবেগকে সারা পৃথিবীর সামনে একেবারে অকপট সত্য হিসেবে তুলে ধরতে পারেন।

এখানে মাধ্যমের প্রয়োজনে বা সীমাবদ্ধতার কারণে সত্যের ওপর কোনও ফিল্টার চাপাতে হয় না! অরুণকুমার চট্টোপাধ্যায় থেকে উত্তমকুমার হওয়ার পরেও সিনেমার অভিনয় আসলে কি বুঝতে অনেকটা সময় লেগেছিল। কিন্তু চোখ যেই খুলল, বুঝে গেলেন এখানে সহজ, সৎ অভিব্যক্তির জয়জয়কার। প্রধান অস্ত্র স্বতঃস্ফূর্ত সাবলীলতা। যত আবেগ অনুভূতি, সবকিছুর মধ্যে চূড়ান্ত বিশ্বাসযোগ্যতার শিলমোহর থাকতে হবে। দাপুটে পারফরমেন্স দেখিয়ে লাভ নেই। বরং শান্ত, নির্লিপ্ত, অন্তর্মুখী হলে নম্বর পাওয়া যায়। সুবিধে ছিল, তিনি এসেছিলেন ধোয়ামোছা সাফ স্লেট হয়ে। অভিনয় শেখেননি, শৈলী বা পদ্ধতির ওপর দখলের প্রশ্নই ওঠে না। তাই ভুল শিক্ষা বা প্রাকটিস ছেড়ে বেরোনোর চাপ নিতে হয়নি। প্রথমদিকের কাজে প্রবল অস্বস্তি, আত্মবিশ্বাসের অভাব চোখে পড়ে। তখনকার প্রচলিত অভিনয়ধারার প্রভাবও স্পষ্ট। একই ভঙ্গিতে ঘাড় ফিরিয়ে তাকানো। অতিনাটকীয় বা সুরেলা সংলাপ বলার প্রবণতা। এমনকী যে মোহিনী হাসি পরে বিশ্বজয় করলো, প্রথম যুগে সেটাও কেমন বোকা বোকা, কৃত্রিম।
এমন হওয়াই তো স্বাভাবিক। কোনও প্রাথমিকঅভিজ্ঞতা নেই। চেতনা, বোধ, ব্যক্তিত্ব পরিণত নয়। আর প্রেরণার ভাণ্ডারও শূন্য। প্রথমদিকের টানা ব্যর্থতা, পরের পর ছবি ফ্লপ, হাসিঠাট্টার পাত্র হয়ে ওঠা। অন্য কেউ হয়তো মাঠ ছেড়ে পালাতেন। কিন্তু হতাশায় ভেঙে পড়ার মানুষ তিনি নন। বার বার নতুন উদ্যমে পায়ের তলায় মাটি খুঁজেছেন। প্রথমে অল্প স্বীকৃত 'সাড়ে চুয়াত্তর' (১৯৫৩), বসু পরিবার (১৯৫২)-এর সূত্রে, তারপর আরও ক'বছরের লড়াই পেরিয়ে চূড়ান্ত সাফল্য- অগ্নিপরীক্ষা (১৯৫৪), সবার ওপরে (১৯৫৫), সাগরিকা (১৯৫৬), পথে হলো দেরি (১৯৫৭)। লাইমলাইটে আসার পর হঠাৎ নজরে পড়ল এ কী অবাক কাণ্ড! অভিনয়ের আগের খামতিগুলো অনেকটাই তো কাটিয়ে ফেলেছেন!
গোঁড়া সমালোচকেরও মুখ বন্ধ। নতুন ছেলেটিকে দর্শকের ভালো লাগছে ভালো কথা, পাশের মেয়েটিও মন কেড়েছে আরও সুসংবাদ! কিন্তু চরম সাফল্যের মুখ দেখে সবার তো মাথা ঘুরে যায়। এতো দেখা যাচ্ছে ঠান্ডা মাথায় নিজেকে শোধরাতে বদ্ধপরিকর। নতুন অভিনেতা জনপ্রিয় হলেন, তারকাও হলেন, কিন্তু অভিনয়ে জড়তা একই জায়গায় জগদ্দল পাথর হয়ে চেপে রইল এমন অনেক উদাহরণ আমরা দেখেছি। আজও দেখছি। অনেকে আবার তারকা হয়ে নিজের দুর্বল অভিনয়কে স্টাইল বলে প্রতিষ্ঠিত করার জন্যে মরিয়া হয়ে ওঠেন। কিন্তু এই বুদ্ধিমান মানুষটির সব থেকে বড় গুণ নিজের অক্ষমতাকে চিনে, মেনে নিয়ে কিভাবে তাকে সক্ষমতায় পরিণত করা যায় তার নিরলস চেষ্টা করা।
ইউটিউবে ভাইরাল হওয়া 'ছোটি সি মুলাকাত' (১৯৬৭) ছবির 'ছোটি সি মুলাকাত পেয়ার বন গয়ি' গানের দৃশ্যে বৈজয়ন্তীমালার মতো তুখোড় নাচিয়ের পাশে উত্তমকুমারকে দেখে আজকের প্রজন্মের কাছেও ওই সারসত্য ধরা পড়ছে এ লোকটা আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে নাচছে। এঁর মনে কোনও ভয় সংশয় বা ধরা পড়ার আশঙ্কা নেই। এলিয়া কাজানের সেই
কথাটা it (the camera) reveals what's truly happening-if anything, if noth ing...It's a severe and awesome trial.
আপামর বাঙালির কাছে প্রেমের প্রতীক হয়ে উঠছেন উত্তম-সুচিত্রা। আদর্শ রোম্যান্টিক নায়ক হিসেবে উত্তমকুমারের জায়গা সবে শক্তপোক্ত হচ্ছে। স্বীকৃতি পাচ্ছে তাঁর সংযত শৈলী, চেহারার আকর্ষণ, ব্যক্তিত্বের সম্মোহন। এরই মাঝে তিনি এক অদ্ভুত কীর্তি করে বসলেন। ১৯৫৯ সাল। ছবির নাম 'বিচারক'। রোম্যান্টিসিজম থেকে বেরিয়ে এসে একেবারে ধূসর চরিত্র। এক বিবাহিত উকিলের বাড়িতে অসহিষ্ণু বাতিকগ্রস্ত স্ত্রী। লোকটি এক সুন্দরী,
বুদ্ধিমতী তরুণীর প্রেমে পড়ে। হঠাৎ করেই জর্জরিত জীবনে এলো মুক্তির স্বাদ। কিছুদিনের মধ্যেই স্ত্রী দুর্ঘটনায় মারা গেলেন। প্রেমিকাকে বিয়ে করায় বাধা রইল না। বেশকিছু বছর পেরোয়। উকিল বিচারক হন। হঠাৎ একদিন এজলাসে আসা একটা খুনের মামলা জাগিয়ে তোলে তাঁর মনের গভীরে চাপা পড়ে থাকা অপরাধবোধ। চাইলে তিনি কি স্ত্রীকে দুর্ঘটনা থেকে বাঁচাতে পারতেন? নিজের সুপ্ত কামনা চরিতার্থ করার জন্যেই কি তাকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিয়েছিলেন? চূড়ান্ত মানসিক টানাপোড়েনে ক্ষতবিক্ষত হতে থাকেন বিচারক।
চিত্রনাট্য পড়েই উত্তমকুমার হয়তো বুঝতে পেরেছিলেন, এই কাজে অভিনেতা হিসেবে নিজের গণ্ডি পেরোনোর সুযোগ আছে। শুধুই মনের অতলে সাদা-কালোর অনুসন্ধান নয়, দু'বয়সের পুরুষ চরিত্র ঘিরে বিশদ মনস্তাত্বিক খোঁজ আছে। তাছাড়া পরিচালক প্রভাত মুখোপাধ্যায় গুণী প্রতিভাবান মানুষ, যাঁর সংস্পর্শে এলেও অনেককিছু শেখা যাবে। এ-মানসিকতা তাঁর ছিল সে প্রমাণ বার বার পাওয়া গেছে। মনে রাখতে হবে এর মধ্যে মুক্তি পেয়েছে পথের পাঁচালী, অপরাজিত, জলসাঘর। আধুনিক সিনেমার আঙ্গিক, অভিনয়ধারা স্বীকৃতি পেয়েছে। বদল আসছে চিত্রনাট্যের ধরনে, বাস্তবতায়। বিষয় হয়ে উঠে আসছে মানব জীবনের সংঘর্ষ, টানাপড়েন, সাদা-কালোর দ্বন্দ্ব, সমাজসচেতনতা, রাজনীতি। নতুন যুগের এমন এক পরিচালকদের সঙ্গে ইতিমধ্যেই তাঁর কাজ করা হয়ে গেছে। মৃণাল সেন। ১৯৫৫ সালে। 'রাতভোর' ছবিতে। ছবিটার সম্পর্কে বিশেষ কিছু জানা যায় না। পরে পরিচালকও নিজের প্রথম কাজকে গুরুত্ব দিতে চাননি। সে অন্য প্রসঙ্গ। কিন্তু চূড়ান্ত ব্যস্ততার মধ্যেও উত্তমকুমার 'রাতভোর' করতে রাজি হয়েছিলেন। কেরিয়ারের একেবারে শুরুতে। পয়েন্ট টু বি নোটেড।

অভিনেতা হিসেবে নানান ধরনের চরিত্রে নিজের সক্ষমতা, অক্ষমতা বিচার করার সুযোগ তিনি সহজে ছাড়তেন না। মরুতীর্থ হিংলাজ (১৯৫৯) খোকাবাবুর প্রত্যাবর্তন (১৯৬০) শেষ অঙ্ক (১৯৬৩) এসবই তাঁর প্রমাণ। নাহলে কি আর তপন সিংহের পরিচালনায় জতুগৃহ (১৯৬৪) ছবি প্রযোজনায় আগ্রহী হতেন? যদিও আগে একবার তপনবাবুর সঙ্গে কাজ করেছেন উপহার (১৯৫৫) ছবিতে, তবু প্রেমের চিরন্তন মহানায়ক হিসেবে তিনি যখন খ্যাতির শীর্ষে, তখন এমন একটা ছবি করছেন যার মূল কেন্দ্রবিন্দু বিবাহবিচ্ছেদ। সন্তানহীনতার শূন্যতায় আক্রান্ত এক দম্পতি অতি তুচ্ছ কারণেএকে অন্যের বিরুদ্ধে মারমুখী হয়ে ওঠে। হয়তো এক্ষেত্রে বিষয়ের অভিনবত্ব ছাড়াও উত্তমকুমারের কাছে অন্যতম আকর্ষণ ছিল শতদল চরিত্রের মনমেজাজের দোলাচল। সে যে কখন সহিষ্ণু কখন ক্ষিপ্ত নিজেও জানে না।
রবার্ট অল্টম্যান বলেছিলেন All the good things, in any character, are a series of accidents, এই দুর্ঘটনাগুলো আসলে অভিনয়ের অনিশ্চয়তাকে উস্কে দেয়। এর সূত্রেই ক্যামেরার সামনে তৈরি হয় ক্ষণিকের ম্যাজিক। দুর্বল অভিনেতা এমন পরিস্থিতিতে বাঁধাধরা ফর্মুলার খোঁজ করেন। যার আড়ালে ঢুকে পড়ে তিনি নিশ্চিন্ত। এই প্রক্রিয়ায় একধরনের স্টিরিওটাইপ তৈরি হয়। রক্তমাংসের মানুষ বেরিয়ে আসেনা। আর উত্তমকুমারের মতো বুদ্ধিমান শিল্পী এমন পরিস্থিতিতে নিজেকে নির্ভার করে নিয়ে চূড়ান্ত স্বতঃস্ফূর্ততায় ডুব দেন। ফলে চরিত্রের বিশ্বাসযোগ্যতা পর্দা ছেড়ে বেরিয়ে সরাসরি সংবেদনশীল দর্শককে স্পর্শ করে। তাকে অস্থির করে।
সত্যজিৎ রায়ের 'অস্তমিত নক্ষত্র' নিবন্ধে বলছেন 'প্রাথমিক আলোচনার পর আমাকে নির্দেশ দিতে হত সামান্যই। সবচেয়ে বড় কথা এই যে, নিছক নির্দেশের বাইরেও সে মাঝে মাঝে কিছু সূক্ষ্ম ডিটেল তার অভিনয়ে যোগ করত যেগুলি সম্পূর্ণ তার নিজস্ব অবদান। এই অলংকরণ কখনই বাড়াবাড়ির পর্যায় পড়ত না; এটা সব সময়েই হত আমার পক্ষে একটা অপ্রত্যাশিত উপরি প্রাপ্তি। বড় অভিনেতার একটা বড় পরিচয় এখানেই।' সত্যজিৎ রায়ের 'নায়ক' (১৯৬৬) ও 'চিড়িয়াখানা' (১৯৬৭) ছবিতে উত্তমকুমারের ভূমিকা নিয়ে অল্প পরিসরে আলোচনা করা অসম্ভব। সম্পূর্ণ ভিন্নধর্মী দুটো চরিত্রে আধুনিক চলচ্চিত্র অভিনয়ের নানান কৌশল ও তার প্রয়োগ ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। যা আজকের শিক্ষানবিশ অভিনেতাকেও আকৃষ্ট করে, অনেককিছু শেখায়।
'নায়ক' অরিন্দমের ভূমিকায় উত্তমকুমার সম্পর্কে সত্যজিৎ যখন বলেন 'নিজের কাজে খুঁত খুঁজে পাই, কিন্তু ওর কাজে পাই না', তাকে নিছক আবেগপূর্ণ স্তুতি মনে করার কোনও যুক্তি নেই। সত্যজিৎ রায় তাঁর স্পষ্টবাদিতার জন্যেই পরিচিত। অসংযত উচ্ছ্বাস প্রকাশ করার মানুষ তিনি নন। তখন বছরে আন্দাজ ৩০-৩৫টা বাংলা ছবি তৈরি হত। তারমধ্যে অন্তত ৬/৭টায় থাকতেন উত্তমকুমার। এই ছবিগুলো বাংলা ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির জন্যে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ মহানায়কের অসংখ্য, অগণিত ভক্ত। সে সংখ্যার তুলনামূলক আন্দাজ পেতেও বাংলার অন্য কোনও অভিনেতার নাম পাশে বাসানো যাবে না। তাঁর অভিনীত অনেক ছবিই কাহিনি, চিত্রনাট্য বা পরিচালনার বিচারে যথেষ্ট দুর্বল। তবু তার মধ্যে বেশ কিছু বাণিজ্যিক সাফল্য এনেছে। সেটা খুবই জরুরি। সিনেমার মতো ব্যায়বহুল মাধ্যমে জনমনোরঞ্জনের গুরুত্ব। থাকবেই। উত্তমকুমার কখনো সেটা অগ্রাহ্য করেননি। দরকার মত নিজের অভিনয়ের স্কেল বদলে নিয়েছেন। নিজের প্রতিক্রিয়া, অভিব্যক্তির মাত্রা উচ্চকিত করেছেন। প্রয়োজনে ম্যানারিজম বা মেলোড্রামাকেও প্রশ্রয় দিয়েছেন।

কোথায় কি ধরনের রসদ জোগালে উন্মত্ত ভক্তের দল 'গুরু গুরু' চিৎকারে হল ভরাবে সেটা উনি ভালোই জানতেন। এবং এই উপলব্ধির জন্যেও তাঁকে উষ্ণ অভিবাদন ও স্যালুট জানাতেই হয়। কারণ তাঁর ছবির বাণিজ্যিক সাফল্যে বাংলা ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি যে শক্ত জমি পেয়েছিল, ইতিহাসে তার গুরুত্ব অপরিসীম। ৩২ বছরের শিল্পীজীবনে তাঁর সত্তর শতাংশ কাজকে কোন বিচারের আওতায় আনাই যাবে না। কারণ সেই ছবিগুলো চিরতরে নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে। মাত্র গোটা পঞ্চাশ ছবি অক্ষত আছে। অবশ্য তার মধ্যেই বেশকিছু সেরা কাজ তার শ্রেষ্ঠ কাজের উপর।
আর শিল্পীর বিচার সবসময়ই হয় নানান মানুষের কাছে উত্তমকুমার নানান কারণে অবিস্মরণীয়। একেবারে ব্যক্তিগত অনুষঙ্গে শেষ করছি। ক'দিন আগেই চ্যানেল সার্ফ করতে গিয়ে 'দুই পৃথিবী' (১৯৮০) ছবির একটি দৃশ্যে দেখে থমকে গেলাম। অনেকবার দেখা ছবি। মাঝবয়সি সাংবাদিক মৃণালের ভূমিকায় উত্তমকুমার। ময়দানে বহুদিনের প্রেমিকার পাশে বসে আছেন। সেই চরিত্রে সুপ্রিয়াদেবী। দু'জনের মুখে বিশেষ কথা নেই। মৃণাল সামনে বহুদূরে তাকিয়ে আছে। শুধুমাত্র চোখের দৃষ্টিকে ব্যবহার করে উত্তমকুমার যেন স্পষ্ট বুঝিয়ে দেন ওই সম্পর্কের কোনও ভবিষ্যৎ নেই, প্রেমের কোনও পরিণতি নেই। শুধু দিনের পর দিন, বছরের পর বছর এইভাবে বসে থাকবেন ওরা দু'জন। এটাই ভবিতব্য।
বিশিষ্ট মার্কিন অভিনেতা মর্গান ফ্রিমানের একটা কথা মনে পড়লো - Learning how to be still, to really be still and let life happen that stillness becomes a radiance, একেবারে স্থির, নিস্পন্দ থেকে একজন অভিনেতা কতখানি ভাবপ্রকাশ করতে পারেন? এই নিয়ে আমরা অভিনয়ের ক্লাসে কত আলোচনা করি, দেশবিদেশের ছবি থেকে নানান ক্লিপিং খুঁজে বেড়াই! 'দুই পৃথিবী'র ওই দৃশ্যের রেফারেন্স নোট করে রাখলাম। ছাত্র-ছাত্রীদের দেখাব। মনে মনে বলি, আজও উত্তমকুমার!
মহানায়কের প্রিয় রান্নাবান্না..
সুপ্রিয়াদেবীর রান্না করা ভেটকির কাঁটাচচ্চড়ি ছিল অন্যতম প্রিয় খাবার, আবার রসগোল্লা খেতেন নুন ছড়িয়ে। খাওয়াদাওয়ার ক্ষেত্রে এহেন খুঁতখুঁতে ভদ্রলোককে রেঁধে বেড়ে খাইয়ে খুশি করা চাট্টিখানি কথা ছিলো না! মহানায়ক উত্তম কুমারের প্রিয় আমিষ, নিরামিষ এবং শেষপাতে অম্বল পর্যন্ত সবরকম রান্না নিয়েই এবারের রবিবারের অনন্যা। রাঁধলেন শহরের বিশিষ্ট রন্ধনশিল্পীরা।
মৌমিতা কুন্ডু মল্ল
চাঁপ ফ্রাই
কী কী লাগবে
চাঁপের মাংস ৬ টি, পেঁয়াজ ২টি চার টুকরো করা, রসুন ৮ কোয়া, আদা ২ টুকরো, কাঁচালঙ্কা ৮ টি, ডিম ২টি, আজিনোমোটো ১/২ চা চামচ, সয়া সস ১ চা চামচ, কর্নফ্লাওয়ার ১ চা চামচ।
কীভাবে বানাবেন
মাংস, আদা, রসুন, পেঁয়াজ, কাঁচালঙ্কা, নুন ও পরিমাণ মতো জল দিয়ে মাংস প্রেশারকুকারে সেদ্ধ করে নিন। জল ঝরিয়ে মাংস তুলে নিন। বাকি ছেঁকে রাখা জল জ্বাল দিয়ে ঘন করে মিক্সি তে পেস্ট করে নিন। অল্প সয়াসস, আজিনোমোটো আর চিলি সস মিশিয়ে সস বানিয়ে রাখুন।
ডিম আর কর্নফ্লাওয়ার দিয়ে গোলা বানিয়ে মাংস ডুবিয়ে লাল করে ভেজে তুলে নিন। বানিয়ে রাখা সস আর পেঁয়াজ শশা টমেটো সহ পরিবেশন করুন।
শাম্মি কাবাব
কী কী লাগবে
ছোলার ডাল ১/২ কাপ, মিহি কিমা ৫০০ গ্রাম, বড় ২ টি পেঁয়াজ চার টুকরো করে কাটা, রসুন ৬ কোয়া, আদা ২ ইঞ্চি, কাঁচালঙ্কা ৮ টি, ডিম ৩টি, পুরের জন্য (কিশমিশ, বাদাম, পেস্তা, পেঁয়াজ কুচি)।
কীভাবে বানাবেন
মাংসের কিমা, ছোলার ডাল, পেঁয়াজ, রসুন, আদা, কাঁচালঙ্কা অল্প জল দিয়ে সেদ্ধ করে নিন। এবার মিক্সিতে পেস্ট করে তার মধ্যে নুন আর ডিমের কুসুম দিয়ে মেখে রাখুন। মাঝে পুর ভরে গোল গোল টিকিয়ার মতো গড়ে নিন।ডিমের সাদা অংশ ফেটিয়ে তারমধ্যে কাবাব গুলো ডুবিয়ে ভেজে তুলে নিন। ইচ্ছে মতো সাজিয়ে পরিবেশন করুন।
বেকড স্টাফড লবস্টার
কী কী লাগবে
বড় গলদা চিংড়ি ৪ টে, ময়দা ১ চা চামচ, নুন আন্দাজমতো, মেয়োনিজ ৬ টেবিল চামচ, চিলি সস ৩ টেবিল চামচ, মাখন ৪ টেবিল চামচ।
কীভাবে বানাবেন
মাছগুলো সেদ্ধ করে সাবধানে খোসা ছাড়িয়ে নিন। খোসা যেন গোটা থাকে খেয়াল রাখতে হবে। মাছে মেয়োনিজ, চিলি সস, মাখন, নুন মেখে মিক্সিতে ঘুরিয়ে নিন। মাছের খোলায় মাখন দিয়ে মাছের পুর দিন। বেকিং ডিশে রেখে বেক করলেই তৈরী।
ডিমের রসা
কী কী লাগবে
ডিম সেদ্ধ ৪ টি, সেদ্ধ করা মাঝারি আকারের আলু ২ টি, সাদা জিরে ১/৪ চা চামচ, শুকনো লঙ্কা ৩ টি, তেজপাতা ১ টি, পেঁয়াজ বাটা ১ টেবিল চামচ, রসুন বাটা ১/২ চা চামচ, টমেটো বাটা ১ চা চামচ, আদা বাটা ১ চা চামচ, পাকা লঙ্কা বাটা ১/২ চা চামচ, নুন-স্বাদমত, হলুদ ১/২ চা চামচ, চিনি ১/২ চা চামচ, গরম মশলা গুঁড়ো ১/৪ চা চামচ, সাদা তেল ৭৫ মি.লি.।
কীভাবে বানাবেন
ডিম আর আলু নুন হলুদ মেখে আলাদা আলাদা ভেজে তুলে নিন। ঐ তেলে সাদা জিরে, শুকনো লঙ্কা, তেজপাতা ফোড়ন দিয়ে একে একে পেঁয়াজ বাটা, আদা বাটা, রসুন বাটা, টমেটো বাটা, পাকা লঙ্কা বাটা, নুন, হলুদ, চিনি দিয়ে কষুন। অল্প জল দিয়ে ভাজা আলু আর ডিম দিন। গরমমশলা গুঁড়ো ছড়িয়ে নামিয়ে নিন।
শিঙ্গি মাছের ঝোল
কী কী লাগবে
শিঙ্গি মাছ ৪টি, সাদা তেল ১ টেবিল চামচ, আদাবাটা ২ টেবিল চামচ, কাঁচালঙ্কা ৪টি, হলুদ গুঁড়ো ১ চা চামচ, নুন আন্দাজমতো, আদাকুচি ১/২ চা চামচ।
কীভাবে বানাবেন
মাছ নুন হলুদ মেখে রাখুন। তেল গরম করে আদা কুচি দিয়ে মাছগুলো সাঁতলে তুলে নিন। ঐ তেলে মেথি ফোড়ন দিয়ে জলে গোলা আদা, কাঁচালঙ্কা, নুন দিয়ে কষুন। পরিমাণ মতো জল আর মাছ দিয়ে ফুটতে দিন। যেমন ঝোল পছন্দ রেখে নামিয়ে নিলেই তৈরী।
মুরগীর স্যুপ
কী কী লাগবে
দেশি মুরগির মাংস ছোট টুকরো করা ৫০০ গ্রাম, সাদা তেল ১ টেবিল চামচ, ময়দা ১ টেবিল চামচ, দুধ আধ কাপ, নুন স্বাদ মতো, গোলমরিচ গুঁড়ো ১ চা চামচ।
কীভাবে বানাবেন
মাংস সেদ্ধ করে ছেঁকে নিন। কড়াইতে সাদা তেল গরম করে ময়দা দিয়ে নাড়ুন। দুধ ঢেলে ভালো করে মিশিয়ে স্যুপ ঢালুন। নুন গোলমরিচ মিশিয়ে নামিয়ে নিন।
মাংসের দোপেঁয়াজা
কী কী লাগবে
মাংস ১ কেজি, তেল ৩০০ গ্রাম, পেঁয়াজ কুচি ৪০০ গ্রাম, দই ৫০০ গ্রাম, ছোট পেঁয়াজ ১৫ টা, কাশ্মিরী লংকা বাটা ৪ বড় চামচ, আদা বাটা ৪ টেবিল চামচ, রসুন বাটা ২ টেবিল চামচ, ধনেবাটা ২ টেবিল চামচ, ধনেপাতা কুচি, গাওয়া ঘি, গরমমশলা গুঁড়ো( কাবাব চিনি, সামরিচ, সাজিরে, জায়ফল, জয়িত্রি, এলাচ, দারুচিনি)।
কীভাবে বানাবেন
তেল গরম করে পেঁয়াজ সোনালি করে ভেজে তুলে নিন। মাংসের টুকরো গুলো দিয়ে ভেজে তুলে নিন। একে একে লংকা বাটা, চিনি, দই, ভাজা মাংস, আদা বাটা, ধনে বাটা দিয়ে কষুন। নাড়তে নাড়তে অল্প অল্প করে রসুনবাটা দিন আর কষতে থাকুন যতক্ষন না তেল ভেসে উঠছে। ভাজা পেঁয়াজ আর ছোট পেঁয়াজ গুলো দিয়ে ঢেকে রান্না করুন। শেষে ঘি, গরমমশলা গুঁড়ো, ধনেপাতা কুচি ছড়িয়ে নামিয়ে নিন।
সহজ উপায়ে মুরগীর মাংসের কোরমা
কী কী লাগবে
মুরগীর মাংস ১২ টুকরো, ৪ টে মাঝারি আকারের পেঁয়াজ বাটা, আদা বাটা ১/২ কাপ, রসুন বাটা ২ বড় চামচ, হলুদ বাটা ৩ বড় চামচ, লঙ্কা বাটা ৩ বড় চামচ, টকদই ১ কাপ, কাজুবাদাম বাটা ৫০ গ্রাম, ক্রিম ১ কাপ, নুন চিনি স্বাদমতো।
ফোড়নের জন্য:
গোটা গরমমশলা, (জায়ফল, জয়িত্রী, কাবাব চিনি, সা জিরে, সা মরিচ) গুঁড়ো, কিশমিশ, তেজপাতা, ঘি, সরষের তেল।
তেল গরম করে মাংসের টুকরো গুলো ভেজে তুলে নিন। ঐ তেলে তেজপাতা, গোটা গরমমশলা, কিশমিশ ফোড়ন দিয়ে একে একে আদা, রসুন, পেঁয়াজ, লঙ্কা, হলুদ বাটা, দই, চিনি, নুন দিয়ে কষুন। মাংস দিয়ে ঢেকে রান্না করুন। তেল ভাসলে এককাপ গরম জল দিয়ে মাখামাখা হলে জায়ফল জয়িত্রী ইত্যাদি গুঁড়ো ঘি তে গরম করে মাংসে ঢেলে দিন। কাজুবাদাম বাটা, ক্রিম মিশিয়ে সুন্দর করে সাজিয়ে পরিবেশন করুন।
সঞ্চিতা দাস
চিংড়িমাছের বাটিচচ্চড়ি
কী কী লাগবে
চিংড়ি পাঁচশো গ্রাম মাঝারি সাইজ, আলু তিনটে ডুমো করে কাটা, হলুদ বাটা এক বড় চামচ, লঙ্কাবাটা দুই বড় চামচ, কাঁচা লঙ্কা ছ'টা চেরা, তেল ছোট কাপের এক কাপ, জল ছোট কাপের দু' কাপ। ইচ্ছে করলে সরষেবাটা, বড় চামচের দু চামচ দিতে পারো। একটা কাঁচালঙ্কা দিয়ে সরষে বাটবে।
কীভাবে বানাবেন
একটা বাটিতে (অ্যালুমিনিয়াম) চিংড়ি (ভাল করে পরিষ্কার করে) হলুদ, লঙ্কা, সরষেবাটা দিন। কাঁচালঙ্কা, তেল, আলু, জল, নুন দিয়ে মেখে বাটিটা উনুনে বসান। ভাল করে ফুটতে দিন। আঁচ অল্প করুন। জল শুকিয়ে তেল ভেসে উঠলে নামিয়ে ফেলুন। দেখবেন আলু যেন সেদ্ধ হয়। গরম ভাতের সঙ্গে পরিবেশন করুন।
কাজু চিকেন
কী কী লাগবে
মুরগির আটটা বড় পা, বড়এলাচ গুঁড়ো এক টেবিল চামচ, বড় পেঁয়াজ কুচনো তিনটে, টক দই আধ কাপ, লঙ্কাবাটা এক টেবিল চামচ, আদাবাটা এক টেবিল চামচ, রসুনবাটা এক চা চামচ, কাজু পঞ্চাশ গ্রাম, ক্রিম ছোট টিন একটা, সাদা তেল এক কাপ।
কীভাবে বানাবেন
মুরগির পা গুলো ভাল করে ধুয়ে নুন মাখিয়ে আলাদা রাখুন। উনুনে কড়াই বসান। সাদা তেল দিয়ে, গরম হলে মুরগিগুলো হালকা করে ভেজে নিন। আলাদা রাখুন।
ওই তেলে পেঁয়াজ সোনালি করে ভাজুন। আলাদা রাখুন।
এবার ওই তেলে বড় এলাচ গুঁড়ো ঢেলে দিন। তারপর দইয়ের মধ্যে লঙ্কা, আদা, রসুন, চিনি, আন্দাজ মতো নুন গুলে নিন। এলাচগুঁড়োর ওপরে ঢেলে কষান। তেল বেরিয়ে এলে ভাজা মুরগি ও ভাজা পেঁয়াজ দিয়ে দিন। ভাল করে নেড়ে ঢাকা দিন। আঁচ কমান। মুরগি সেদ্ধ হলে কাজুবাটা দিন। নামাবার সময় ক্রিম ও এক চা চামচ কেওড়ার জল দিন। ড্রেসিং করার সময় চারটে দিশি ডিম পুরো সেদ্ধ করে আধখানা করে মুরগির ওপর সাজিয়ে পরিবেশন করুন।
কাঁচকলার কোপ্তা
কী কী লাগবে
সবুজ কাঁচকলা ছ'টি, সেদ্ধ করার জন্যে জল, সামান্য নুন, কোপ্তার মধ্যে পুরের জন্য পেঁয়াজকুচি দুটো, আলমন্ড বাদাম গোটা দশেক, কিশমিশ দশ-বারোটা, অল্প তেলে ভাজা, আমন্ড বাদাম কুচি।
গ্রেভির জন্য: সাদা তেল, গোটা গরমমশলা, তেজপাতা, ধনেবাটা, আদা-রসুনবাটা, জিরেবাটা, লঙ্কাবাটা, পেঁয়াজকুচি, টম্যাটো দুটো, নুন, চিনি আন্দাজমতো, কাজুবাটা, ধনেপাতাকুচি, ক্রিম।
কীভাবে বানাবেন
কাঁচকলা সেদ্ধ করে ঠান্ডা করুন। এবার খোসা ছাড়িয়ে মিক্সিতে পেস্ট করে নিন। কড়াইয়ে সাদা তেল ছোট কাপের (দশ গ্রাম) এক কাপ দিয়ে গরম হলে পেঁয়াজ ভাজুন। ভাজা হলে রসুনবাটা, আদাবাটা কাঁচালঙ্কাবাটা এলাচগুঁড়ো, গরমমশলা গুঁড়ো দিয়ে কষুন। গন্ধ বেরোলে মাখা কলা দিয়ে ভাল করে কষুন। এবার ধনেপাতা কুচি, আধ কাপ দই, একটি ডিম ফেটিয়ে দিয়ে নাড়ুন। কষা হলে ঠান্ডা করে হাতে ময়দা মেখে কলামাখা হাতে নিয়ে বল বানিয়ে নিন। এবার একটা করে বল হাতে নিয়ে বলের মাঝখানে গর্ত করে তারমধ্যে অল্প করে পেঁয়াজ, কিশমিশ ও বাদামের পুর ভরে বলটা আবার গোল করে নিন। তেল গরম হলে কোপ্তাগুলো সোনালি করে ভেজে তুলে নিন।
গ্রেভির জন্য সাদা তেল গরম হলে গোটা গরমমশলা, তেজপাতা দিয়ে পেঁয়াজকুচি সোনালি করে ভাজুন। ভাজা হলে, ধনেবাটা, আদা-রসুনবাটা, জিরেবাটা, লঙ্কাবাটা ও চিনি অল্প জলে গুলে ভাজা পেঁয়াজের ওপর দিয়ে কষুন। দুটো টম্যাটো পেস্ট করে দিয়ে কষতে থাকুন। অল্প জল দিয়ে ফুটে উঠলে ভাজা কোপ্তা, নুন, কাজুবাটা, ক্রিম ও ধনেপাতাকুচি দিয়ে ফোটান। জায়ফল, জয়িত্রী, কাবাবচিনি, সাজিরা, সামরিচ, এলাচ, দারচিনি একসঙ্গে গুঁড়ো করে নিন।নামিয়ে এক চামচ পাউডার কোপ্তার ওপর ছড়িয়ে পরিবেশন করুন।
বাদামি মাটন কোরমা
কী কী লাগবে
পাঁঠার মাংস ৫০০ গ্রাম, বেরেস্তা ১/২ কাপ, আদা বাটা ১ টেবিল চামচ, রসুন বাটা ১ টেবিল চামচ, ধনে গুঁড়ো ১ চা চামচ, শুকনো লঙ্কা গুঁড়ো ১ চা চামচ, কাশ্মিরী লঙ্কা গুঁড়ো ১ টেবিল চামচ, ১/২ কাপ দই, আমন্ড বাদাম ১০ টা খোসা ছাড়ানো, ফ্রেশ ক্রিম ২ টেবিল চামচ, গরম মশলা(ছোট এলাচ ৩ টি, বড় এলাচ ১ টি, স্টার অ্যানিস ১ টি, দারচিনি ১ টুকরো, কাবাব চিনি ৪ টি, জায়ফল ১/৪ অংশ, জয়িত্রী ১/৪ অংশ, শাহী জিরা ১/২ চা চামচ) ড্রাই রোস্ট করে গুঁড়ো করা, সাদা তেল ২ টেবিল চামচ, ঘি ২ টেবিল চামচ, ফোড়নের জন্য (তেজপাতা -১ টা, ছোট এলাচ ১ টা, দারুচিনি ১ টুকরো)।
কীভাবে বানাবেন
বেরেস্তা, ফ্রেশ ক্রিম ও খোসা ছাড়ানো আমন্ড বেটে নিন। কড়াইতে ঘি ও সাদা তেল দিয়ে ফোড়নের উপকরণ আর মাংস দিয়ে কষুন যতক্ষন না রং সাদা হয়ে আসছে। এবার সব গুঁড়ো মশলা ও ফেটানো টক দই দিয়ে ভালো করে সাঁতলে নিতে হবে। ঘি ছেড়ে এলে বেরেস্তা, ক্রিম ও আমন্ডের পেস্ট দিয়ে খুব ভালো করে কষতে হবে। এবার ১ কাপ গরম জল দিয়ে ঢেকে আঁচ কমিয়ে ৩০-৩৫ মিনিট রান্না করতে হবে। মাংস সেদ্ধ হয়ে গেলে তৈরি করে রাখা গরম মশলা মিশিয়ে নামিয়ে সুন্দর করে সাজিয়ে পোলাও এর সাথে পরিবেশন করতে হবে মাটন কোরমা।
Comments