বর্ষায় কনজাংকটিভাইটিসের ঝুঁকি: কীভাবে সুস্থ থাকবেন?
- রোজকার অনন্যা

- Jul 12
- 2 min read
বর্ষাকাল যেমন প্রকৃতিকে শীতল করে, তেমনি আনে নানা ধরনের জীবাণুবাহিত সংক্রমণের আশঙ্কা। এর মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ ও বহুল দেখা সমস্যা হলো চোখের সংক্রমণ বা কনজাংটিভাইটিস (Conjunctivitis)। অনেকেই একে 'চোখ ওঠা' বলেও চেনেন। বর্ষার আর্দ্র পরিবেশে জীবাণু দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে, এবং এই চোখের অসুখ এক ব্যক্তি থেকে আরেকজনের মধ্যে সহজেই ছড়িয়ে যেতে পারে। তাই এই সময় সতর্ক না থাকলে পরিবারের একের পর এক সদস্য আক্রান্ত হতে পারেন।

কী এই কনজাংটিভাইটিস?
চোখের সাদা অংশ ও চোখের পাতার ভেতরের পাতা যেটি ‘কনজাংটিভা’ নামে পরিচিত, তাতে ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া বা অ্যালার্জেনের সংক্রমণ ঘটলে তাকে বলে কনজাংটিভাইটিস। চোখ লাল হয়ে যায়, জ্বালা করে, জল পড়ে, কখনো কচি গুঁজ বা পুঁজ জমে। কখনো কখনো চোখ বন্ধ হয়ে যায়, আলো সহ্য হয় না।
কেন বর্ষায় বেশি হয়?
বর্ষার সময়:
বাতাসে আর্দ্রতা বেশি থাকে, ফলে জীবাণু সহজে বেঁচে থাকে।
জমা জল, অপরিচ্ছন্নতা ও ঠান্ডা পরিবেশ সংক্রমণ বৃদ্ধিতে সহায়তা করে।
স্কুল, অফিস, বাস, ট্রেন ইত্যাদিতে ঘনিষ্ঠ মানুষের সংস্পর্শে আসার ফলে রোগ দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে।
লক্ষণগুলো কী কী?
চোখ লাল হয়ে যাওয়া
চোখ চুলকানো, জ্বালা করা
ঘুম থেকে উঠলে চোখে সাদা বা হলুদ পুঁজ
চোখ জল জল করা
আলোয় চোখে যন্ত্রণা
চোখ ফুলে যাওয়া বা ভারী লাগা
কোন কোন ধরনের কনজাংকটিভাইটিস হয়?
1. ভাইরাল কনজাংকটিভাইটিস– সবচেয়ে সংক্রামক, সাধারণত এক চোখে শুরু হয়ে অন্য চোখে ছড়িয়ে পড়ে।
2. ব্যাকটেরিয়াল কনজাংকটিভাইটিস– চোখে পুঁজ হয়, অ্যান্টিবায়োটিকের প্রয়োজন পড়ে।
3. অ্যালার্জিক কনজাংকটিভাইটিস– ধুলাবালি বা পরাগ রেণু থেকে হয়, ঋতু পরিবর্তনের সময় বাড়ে।
প্রতিরোধের উপায়
✅ ব্যক্তিগত পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখুন:
বারবার হাত ধুয়ে নিন, চোখে হাত দেবেন না।
রুমাল, তোয়ালে, চশমা কারও সঙ্গে ভাগ করে ব্যবহার করবেন না।
✅ জীবাণুমুক্ত ব্যবহার্য জিনিসপত্র:
রোজকার ব্যবহারের জিনিস (বালিশের কভার, তোয়ালে, মোবাইল, চশমা) পরিষ্কার রাখুন।
স্কুলে বাচ্চাদের রুমাল ও জলের বোতল আলাদা রাখার অভ্যাস তৈরি করুন।
✅ ঠান্ডা জল বা আই প্যাড ব্যবহার করুন:
চোখ লাল বা চুলকাচ্ছে মনে হলে ঠান্ডা জল বা পরিষ্কার আই প্যাড লাগাতে পারেন। তবে চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া কোনও ড্রপ ব্যবহার করবেন না।

✅ যোগাযোগ এড়ান:
যাঁদের চোখে সংক্রমণ আছে, তাঁদের কাছাকাছি গেলে সাবধান থাকুন। প্রয়োজনে মাস্ক ব্যবহার করুন।
নিজে আক্রান্ত হলে স্কুল/অফিসে না গিয়ে বিশ্রাম নিন।
কখন চিকিৎসকের কাছে যাবেন?
চোখে অত্যধিক ব্যথা, ফুলে যাওয়া বা দৃষ্টিশক্তি ঝাপসা হলে
শিশুর চোখে লালভাব বা জল পড়া বন্ধ না হলে
তিন দিনের মধ্যে যদি উপশম না হয়
চোখে পুঁজ বাড়তে থাকলে
বর্ষার সৌন্দর্য উপভোগ করুন, কিন্তু চোখের প্রতি থাকুক বাড়তি যত্ন। কনজাংকটিভাইটিস যদিও সাধারণ সংক্রমণ, তবুও অবহেলা করলে গুরুতর সমস্যা তৈরি হতে পারে। তাই সচেতন থাকুন, পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখুন, এবং প্রয়োজনে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে দ্বিধা করবেন না। আপনার চোখ আপনার পৃথিবী, তাকে ভালোবাসুন।








Comments