জলের অতলে, শ্রীকৃষ্ণের নগরী দ্বারকা!
- রোজকার অনন্যা
- Mar 16
- 2 min read
দ্বারকা ভারতের গুজরাট রাজ্যের একটি অন্যতম প্রাচীন ও পবিত্র শহর, যা হিন্দু ধর্মের পুরাণ এবং মহাভারতে উল্লিখিত। এটি ভগবান শ্রীকৃষ্ণের রাজধানী হিসেবে পরিচিত এবং চার ধামের মধ্যে অন্যতম। হিন্দু পুরাণ অনুযায়ী, শ্রীকৃষ্ণ যখন মথুরায় কংসকে বধ করেন, তখন কংসের পিতা জরাসন্ধ বারবার মথুরা আক্রমণ করতে থাকেন। এই কারণে শ্রীকৃষ্ণ তাঁর অনুসারীদের নিয়ে গুজরাটের পশ্চিম উপকূলে দ্বারকা নগরী প্রতিষ্ঠা করেন। বলা হয়, বিশ্বকর্মা (দেবশিল্পী) এই নগরী নির্মাণ করেছিলেন, যা ছিল সোনার তৈরি ও অত্যন্ত সমৃদ্ধ। দ্বারকা ছিল যাদব বংশের রাজধানী, এবং এটি সাতটি প্রাচীন নগরীর (সপ্তপুরী) মধ্যে একটি।

ডুবে যাওয়া দ্বারকার রহস্য
পুরাণ অনুসারে, মহাভারতের যুদ্ধের পর যাদব বংশের অভ্যন্তরীণ কলহে নগরী দুর্বল হয়ে পড়ে। শ্রীকৃষ্ণের মৃত্যুর পর, কথিত আছে যে সমুদ্র ক্রমশ শহরটি গ্রাস করে নেয়। আধুনিক প্রত্নতাত্ত্বিক গবেষণা এবং সমুদ্রের নিচে পাওয়া ধ্বংসাবশেষ ইঙ্গিত দেয় যে একসময় দ্বারকার অস্তিত্ব ছিল এবং তা সত্যিই সমুদ্রগর্ভে বিলীন হয়েছিল। প্রাচীন গ্রিক ও রোমান লেখকদের বিবরণেও দ্বারকার কথা উল্লেখ আছে। সমুদ্রতলের অনুসন্ধানে (Marine Archaeology) বেশ কিছু পুরাতাত্ত্বিক নিদর্শন পাওয়া গেছে, যা প্রমাণ করে যে এখানে প্রাচীন এক সভ্যতা ছিল। দ্বারকা শুধু ধর্মীয় স্থান নয়, এটি গুজরাটের অন্যতম প্রাচীন বন্দর শহর হিসেবেও পরিচিত ছিল।
দ্বারকা ভ্রমণের প্রধান আকর্ষণ
দ্বারকাধীশ মন্দির–
এটি দ্বারকার মূল আকর্ষণ। পাঁচতলা বিশিষ্ট এই মন্দির শ্রীকৃষ্ণকে উৎসর্গ করা হয়েছে।
বেত দ্বারকা–
এটি একটি দ্বীপ, যেখানে বিশ্বাস করা হয় যে শ্রীকৃষ্ণ তাঁর শৈশবকাল কাটিয়েছিলেন।
রুক্মিণী মন্দির–
এটি শ্রীকৃষ্ণের স্ত্রী রুক্মিণীর জন্য নির্মিত একটি বিখ্যাত মন্দির।
গোমতী ঘাট–
দ্বারকা নদীর পবিত্র স্নানের ঘাট, যেখানে স্নান করলে পাপ মোচন হয় বলে মনে করা হয়।
সুধামা সেতু–
এটি শ্রীকৃষ্ণ ও তাঁর বন্ধু সুধামার স্মরণে নির্মিত একটি দর্শনীয় স্থান।
নীলকণ্ঠ মহাদেব মন্দির–
শিবভক্তদের জন্য একটি পবিত্র স্থান।
দ্বারকা বিচ ও লাইটহাউস–
সমুদ্রের সৌন্দর্য উপভোগ করতে চাইলে এটি ভালো জায়গা।

ভ্রমণের সেরা সময়:
সাধারণত অক্টোবর থেকে মার্চ মাস দ্বারকা ভ্রমণের জন্য আদর্শ। এই সময়ে আবহাওয়া মনোরম থাকে।
কীভাবে যাবেন?
বিমান: নিকটবর্তী বিমানবন্দর জামনগর (১৩০ কিমি দূরে)।
রেল: দ্বারকা রেল স্টেশন ভারতের বিভিন্ন শহরের সঙ্গে সংযুক্ত।
সড়কপথ: গুজরাটের অন্যান্য শহর থেকে বাস বা ট্যাক্সি নিয়ে যাওয়া যায়।
থাকার ব্যবস্থা:
দ্বারকায় বিভিন্ন ধরনের হোটেল, ধর্মশালা এবং আশ্রম আছে, যা বিভিন্ন বাজেটের ভ্রমণকারীদের জন্য উপযোগী।
Comments