পলাশের আগুন রঙে নিজেকে রাঙাতে ঘুরে আসুন বেলপাহাড়ীর জঙ্গলে!
- রোজকার অনন্যা
- Mar 17
- 2 min read
পশ্চিম মেদিনীপুর জেলায় অবস্থিত বেলপাহাড়ী তার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, ঘন জঙ্গল, জলপ্রপাত এবং পাহাড়ি ভূদৃশ্যের জন্য বিখ্যাত। এটি প্রকৃতিপ্রেমীদের জন্য এক আকর্ষণীয় গন্তব্য, যেখানে সবুজ ঘেরা বন, খরস্রোতা নদী, লাল মাটির রাস্তা এবং ছোট ছোট পাহাড় মিলে এক মনোমুগ্ধকর পরিবেশ তৈরি করেছে।

বেলপাহাড়ীর জঙ্গলের বৈশিষ্ট্য:
ঘন বনভূমি – স্যাল, মহুয়া, পলাশ, শিমুল, তেঁতুলসহ নানা গাছপালায় সমৃদ্ধ বেলপাহাড়ীর জঙ্গল। বসন্তকালে এখানে পলাশ ফুলের আগুনরাঙা সৌন্দর্য মুগ্ধ করে।
বন্যপ্রাণী – হাতি, হরিণ, বুনো শুয়োর, নানা রকম পাখি ও সরীসৃপ এই জঙ্গলের বাসিন্দা।
জলপ্রপাত ও নদী – ঘন জঙ্গলের মাঝে ঘাগরু জলপ্রপাত, ডুলুং নদী, ও বন্দোয়ান জলপ্রপাত পর্যটকদের অন্যতম আকর্ষণ।
শান্ত পরিবেশ – শহরের কোলাহল থেকে দূরে নিরিবিলি পরিবেশে প্রকৃতির আসল রূপ উপভোগ করা যায়।
আদিবাসী সংস্কৃতি – সাঁওতাল, মুন্ডা ও অন্যান্য আদিবাসী গোষ্ঠীর লোকেরা এখানে বাস করেন। তাদের লোকনৃত্য, হাটবাজার ও উৎসব পর্যটকদের জন্য বাড়তি আকর্ষণ।
কেন বেলপাহাড়ীর জঙ্গল ঘুরবেন?
প্রকৃতির অপূর্ব সৌন্দর্য উপভোগ করতে
ট্রেকিং ও অ্যাডভেঞ্চার করার জন্য
বন্যপ্রাণী ও পাখিপ্রেমীদের জন্য আদর্শ স্থান
ফটোগ্রাফির জন্য অসাধারণ একটি জায়গা
আদিবাসী সংস্কৃতি ও খাবারের স্বাদ নিতে

বেলপাহাড়ীর জনপ্রিয় খাবার:
১. হাঁড়িয়া (স্থানীয় আদিবাসী পানীয়)
ধান থেকে প্রস্তুতকৃত এক ধরনের স্থানীয় মদ।
এটি বিশেষ করে আদিবাসী উৎসবে ও পার্বণে পরিবেশিত হয়।
২. মহুয়া ফুলের শরবত ও মদ
মহুয়া ফুল শুকিয়ে তৈরি করা হয় এই বিশেষ পানীয়।
এটি স্থানীয় আদিবাসীদের ঐতিহ্যের অংশ।
৩. পিঠেপুলি ও লালচাল ভাত
বেলপাহাড়ীর গ্রামগুলোর বিশেষ খাবার হলো চিতই পিঠা, পাটিসাপটা, আর ভাপা পিঠা।
লালচাল দিয়ে তৈরি ভাত এখানকার মানুষের প্রধান খাবার।
৪. দেশি মুরগির ঝোল
স্থানীয় মশলা ও গ্রামবাংলার রান্নার কৌশল ব্যবহার করে সুস্বাদু মুরগির ঝোল তৈরি করা হয়।
৫. কাঁচকলা বা কুঁড়া (পাকা কলার গুড়ো) দিয়ে তরকারি
গ্রামবাংলার ঐতিহ্যবাহী রান্নার মধ্যে পড়ে, যা সাধারণত মাছ বা আলু দিয়ে রান্না করা হয়।
৬. মাছের পদ
ডুলুং নদী থেকে ধরা দেশি মাছ দিয়ে সরষে ও পোড়া মশলার ঝোল রান্না করা হয়।
পোড়া ইলিশ ও শোল মাছের তরকারি বেশ জনপ্রিয়।
৭. সজনে ডাটা ও আলু দিয়ে সবজি
স্থানীয় গ্রামে প্রচুর সজনে গাছ থাকায় এটি বেলপাহাড়ীর মানুষদের খাবারের একটি সাধারণ উপাদান।
৮. শালপাতায় পরিবেশিত খাবার
এখানে খাবার সাধারণত প্লেটের পরিবর্তে শালপাতায় পরিবেশন করা হয়, যা পরিবেশবান্ধব এবং স্বাস্থ্যের জন্য ভালো।
বেলপাহাড়ীর খাবার শুধু স্বাদেই অনন্য নয়, বরং এটি এক বিশেষ সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের প্রতিনিধিত্ব করে। স্থানীয় উপকরণ, ঐতিহ্যবাহী রান্নার কৌশল এবং স্বতন্ত্র স্বাদের জন্য এখানকার খাবার একবার খেলে তা ভুলে যাওয়া কঠিন! হুরে কোলাহল থেকে দূরে গিয়ে প্রকৃতির মাঝে কিছুদিন কাটাতে চান, তাদের জন্য এটি একটি আদর্শ ভ্রমণস্থল।

কলকাতা থেকে বেলপাহাড়ী কিভাবে যাবেন? কোথায় থাকবেন?
কলকাতা থেকে বেলপাহাড়ী পৌঁছানোর জন্য প্রধানত সড়কপথ ব্যবহার করা হয়। প্রথমে, কলকাতা থেকে বাস বা ট্রেনের মাধ্যমে ঝাড়গ্রাম পৌঁছাতে হবে। ঝাড়গ্রাম থেকে বেলপাহাড়ী পর্যন্ত প্রায় ৪৫ কিলোমিটার দূরত্ব রয়েছে, যা স্থানীয় বাস বা ট্যাক্সির মাধ্যমে অতিক্রম করা যায়।
বেলপাহাড়ী ও আশেপাশের এলাকায় পর্যটকদের থাকার জন্য বেশ কয়েকটি হোম স্টে ও রিসোর্ট রয়েছে। এই এলাকায় মোট ৬৪টি সক্রিয় হোম স্টে ও রিসোর্ট পাওয়া যায়, যা শিলদা, নারায়নপুর, বেলপাহাড়ী, চাকাডোবা, বাঁশ পাহাড়ী, আমঝর্না, আমলাশোল, কাকরাঝর, বালিচুয়া, ঢাঙ্গি কুসুম, আগুইবিল, গোহালবেড়া, কৃষ্ণপুর ইত্যাদি স্থানে অবস্থিত। এই হোম স্টে ও রিসোর্টগুলির মধ্যে কয়েকটির গুগল লোকেশন ও ফোন নম্বরসহ বিস্তারিত তথ্য পাওয়া যায়। ভ্রমণের পূর্বে, আপনার যাত্রা ও থাকার ব্যবস্থা সম্পর্কে বিস্তারিত পরিকল্পনা করা গুরুত্বপূর্ণ। স্থানীয় পরিবহন সময়সূচী ও হোম স্টে বা রিসোর্টগুলিতে আগাম বুকিং নিশ্চিত করুন, যাতে আপনার ভ্রমণ অভিজ্ঞতা সুষ্ঠু ও আনন্দময় হয়।

Comments