সারি সারি পাইনে ঘেরা বার্মিক!
- রোজকার অনন্যা
- Mar 18
- 2 min read
পশ্চিমবঙ্গের কালিম্পং জেলার একটি সুন্দর হিমালয়ান গ্রাম। বারমেক কালিম্পংয়ের কাছেই একটা ছোট্ট গ্রাম। যেখান থেকে কাঞ্চনজঙ্ঘা হোম স্টের ঘরে বসেই দেখা যায়। চারিদিকে পাহাড় আর ফুলের বাহার নিয়ে অপেক্ষা করছে বরমেক। নাম না জানা একাধিক ফুলের ভিঁড়ে হারিয়ে যেতে মন চাইবে। এক লহমায় কয়েক মিনিটে তাপমাত্রা নেমে যাবে অনেকটা নীচে। প্রাণটা যেন জুড়িয়ে যাবে এই সময় পাহাড়ে গেলে। এটি প্রায় ৪,৮০০ ফুট উচ্চতায় অবস্থিত এবং চারপাশের পাহাড়, তিস্তা নদী এবং দুর্দান্ত কাঞ্চনজঙ্ঘার অসাধারণ দৃশ্য উপভোগ করার সুযোগ দেয়।

অপরূপ প্রাকৃতিক সৌন্দর্য:
বারমেক তার নয়নাভিরাম প্রাকৃতিক দৃশ্যের জন্য বিখ্যাত। এখানে দাঁড়িয়ে হিমালয়ের বিশাল শৃঙ্গ এবং সবুজ উপত্যকার সৌন্দর্য উপভোগ করা যায়।
নিকটবর্তী পর্যটনস্থল:
বারমেক থেকে খুব সহজেই ইচ্ছে গাঁও, রামধুরা ও সিলেরি গাঁও-এর মতো জনপ্রিয় ও অফবিট গন্তব্যগুলো ঘুরে দেখা যায়।
সংস্কৃতি ও জীবনধারা:
স্থানীয় গ্রামবাসীদের জীবনযাত্রা ও সংস্কৃতির সাথে পরিচিত হওয়ার সুযোগ এখানে পর্যটকদের জন্য একটি বিশেষ আকর্ষণ।

বার্মেক সিঙ্কোনা চাষের জন্য বিখ্যাত। সিঙ্কোনা (Cinchona) একধরনের ঔষধি গাছ, যার মূলত ছাল (bark) থেকে কুইনাইন (Quinine) নামক উপাদান আহরণ করা হয়। কুইনাইন ম্যালেরিয়ার চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয় এবং এটি বিশ্বজুড়ে গুরুত্বপূর্ণ একটি ওষুধি গাছ। সিঙ্কোনা মূলত দক্ষিণ আমেরিকার আন্দিজ পর্বতমালার স্থানীয় উদ্ভিদ, তবে বর্তমানে এটি ভারত, শ্রীলঙ্কা, জাভা, ইন্দোনেশিয়া ও আফ্রিকায় চাষ করা হয়। ভারতে ব্রিটিশরা প্রথম ১৮৬১ সালে সিঙ্কোনা চাষ শুরু করে। পশ্চিমবঙ্গের দার্জিলিং, কালিম্পং ও নীলগিরি পাহাড়ে এই গাছ চাষ করা হয়। বর্তমানে পশ্চিমবঙ্গের মালবাজার, লাবা, মিরিক, বারমেক ও কালিম্পং অঞ্চলে সরকারি উদ্যোগে সিঙ্কোনা চাষ পরিচালিত হয়।
থাকার ব্যবস্থা:
বারমেক-এ প্রধানত হোমস্টে-র মাধ্যমে থাকার ব্যবস্থা করা হয়, যা পর্যটকদের একটি স্বাচ্ছন্দ্যময় ও গ্রামীণ অভিজ্ঞতা দেয়। একটি জনপ্রিয় অপশন হলো ফুনচুক হোমস্টে, যেখানে সুন্দর ও আরামদায়ক আবাসন এবং সুস্বাদু খাবারের ব্যবস্থা রয়েছে।
সেরা সময় ভ্রমণের জন্য:
বারমেক সারাবছরই ঘোরা যায়, তবে মার্চ থেকে মে এবং সেপ্টেম্বর থেকে নভেম্বর মাস পর্যন্ত আবহাওয়া মনোরম থাকে। মেঘমুক্ত আকাশ ও শীতল পরিবেশ উপভোগ করতে চাইলে এই সময় আদর্শ। বর্ষাকালে (জুন-আগস্ট) যাওয়া এড়িয়ে চলাই ভালো, কারণ তখন ভূমিধস ও রাস্তা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকে।

কিভাবে পৌঁছাবেন:
১. ট্রেনে
প্রথমে নিউ জলপাইগুড়ি (NJP) বা শিলিগুড়ি পৌঁছাতে হবে। হাওড়া, শিয়ালদহ বা কলকাতা স্টেশন থেকে পদাতিক এক্সপ্রেস, উত্তরবঙ্গ এক্সপ্রেস, কাঞ্চনকন্যা এক্সপ্রেস, রাজধানী এক্সপ্রেস ইত্যাদি ট্রেন ধরে নিউ জলপাইগুড়ি (NJP) স্টেশনে নামতে পারেন। সময় লাগবে ১০-১২ ঘণ্টা। এরপর নিউ জলপাইগুড়ি থেকে কালিম্পং, NJP বা শিলিগুড়ি বাস স্ট্যান্ড থেকে সরাসরি কালিম্পংগামী শেয়ার জীপ (₹৪০০-৫০০) বা প্রাইভেট গাড়ি (₹২৫০০-৩০০০) ভাড়া করে যেতে পারেন। সময় লাগবে ৩-৪ ঘণ্টা।
২. বিমানে
কোলকাতা থেকে বাগডোগরা (Bagdogra) বিমানবন্দরে ফ্লাইট নিন (সময় লাগবে প্রায় ১.৫ ঘন্টা)। বাগডোগরা থেকে ট্যাক্সি বা শেয়ার জীপে কালিম্পং (প্রায় ৮০ কিমি, ৩-৪ ঘণ্টা) যেতে পারবেন।এখান থেকে প্রাইভেট ট্যাক্সি বা স্থানীয় যানবাহনের মাধ্যমে বারমেক।
৩. বাসে
কোলকাতা থেকে শিলিগুড়ি পর্যন্ত রাজ্য পরিবহণ বা প্রাইভেট ভলভো বাস চলে (সময় লাগে ১২-১৪ ঘণ্টা)। শিলিগুড়ি বাস স্ট্যান্ড থেকে সরাসরি কালিম্পংগামী বাস বা জীপ পাওয়া যায়। এখান থেকে প্রাইভেট ট্যাক্সি বা স্থানীয় যানবাহনের মাধ্যমে বারমেক পৌঁছানো যায়। রাস্তা পাহাড়ি এবং সুন্দর হওয়ায় পুরো ভ্রমণ এক মনোমুগ্ধকর অভিজ্ঞতা এনে দেয়।
Comments