রাজপুত বীরত্বের অটুট প্রাচীর কুম্ভলগড় দূর্গ!
- রোজকার অনন্যা
- Jun 14
- 2 min read
রাজস্থান রাজ্যের রাজসমন্দ জেলার অন্তর্গত কুম্ভলগড় দুর্গ (Kumbhalgarh Fort) হল ভারতের অন্যতম সুরক্ষিত দুর্গগুলির একটি। ইতিহাস, স্থাপত্য, বীরত্ব এবং রহস্যে মোড়া এই দুর্গ শুধু মেবারের গৌরব নয়, বরং সমগ্র ভারতীয় ঐতিহ্যের এক অমূল্য রত্ন। এটি ইউনেস্কো-ঘোষিত World Heritage Site হিসেবে ‘হিল ফোর্টস অফ রাজস্থান’-এর অন্তর্ভুক্ত। অনন্য প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ঘেরা কুম্ভলগড় দুর্গ বহু পর্যটক ও ইতিহাসপ্রেমীর অন্যতম আকর্ষণ।

ইতিহাস ও নির্মাণকাল:
কুম্ভলগড় দুর্গ নির্মাণ করেন মেবারের রাজা রানা কুম্ভা, ১৫ শতকে (প্রায় ১৪৪৩ খ্রিস্টাব্দ)। তিনি একাধারে রাজা, যোদ্ধা ও সংস্কৃতিপ্রেমী স্থপতিও ছিলেন। এই দুর্গেই জন্মগ্রহণ করেন মেবারের কিংবদন্তি নায়ক মহারানা প্রতাপ। রানা কুম্ভার আমলে প্রায় ৩২টি দুর্গ নির্মিত হয়, যার মধ্যে কুম্ভলগড় ছিল সবচেয়ে দুর্গম ও রণনৈতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ।
স্থাপত্য বৈশিষ্ট্য ও মাহাত্ম্য:
দুর্গটি আরাবল্লী পাহাড় অঞ্চলের উচ্চতায় অবস্থিত, প্রায় ১১০০ মিটার উঁচুতে।
এর চওড়া প্রাচীর প্রায় ৩৬ কিমি দীর্ঘ, যা চিনের মহাপ্রাচীরের পরেই বিশ্বে দ্বিতীয় বৃহত্তম প্রাচীর বলে ধরা হয়।
দুর্গের ভেতরে রয়েছে ৩৬০টিরও বেশি মন্দির যার মধ্যে হিন্দু ও জৈন মন্দির উভয়ই আছে।
প্রধান মন্দির: নীলকণ্ঠ মহাদেব মন্দির, যেখানে ২৪ ফুট উচ্চতার শিবলিঙ্গ রয়েছে।
দুর্গের প্রবেশপথ ‘রাম পোল’ অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ, এছাড়া আরও সাতটি প্রবেশদ্বার রয়েছে।
ঐতিহাসিক মাহাত্ম্য ও যুদ্ধের গাথা:
কুম্ভলগড় কখনোই শত্রুর হাতে সহজে অধিকার করা যায়নি। বহুবার মুঘল ও অন্যান্য রাজবংশেরা চেষ্টা করেও একমাত্র তখনই জয় করতে পেরেছিল যখন তিনটি শক্তিশালী সেনা (মুঘল, আম্বার ও মারওয়ার) একত্রে হামলা করেছিল, তাও মাত্র একবার।
প্রাকৃতিক পরিবেশ ও বর্তমান অবস্থা:
কুম্ভলগড় দুর্গ ঘিরে রয়েছে কুন্দলগড় অভয়ারণ্য, যা বিভিন্ন বন্যপ্রাণের আবাস। এখানে দেখা মেলে নীলগাই, হরিণ, চিতল, হায়েনা এবং পাখির বিভিন্ন প্রজাতি। বর্তমানে এটি পর্যটকদের জন্য উন্মুক্ত। রাজস্থান পর্যটন দফতরের অধীনে এই দুর্গ সংরক্ষিত এবং প্রতিদিন শত শত পর্যটক এখানে আসেন ইতিহাস ও প্রকৃতির সম্মিলিত রূপ দেখতে।

কলকাতা থেকে কুন্দলগড় দুর্গ কিভাবে যাবেন:
১. বিমানপথে:
কলকাতা থেকে উদয়পুর মহারানা প্রতাপ বিমানবন্দর (UDA) পর্যন্ত সরাসরি বা কানেক্টিং ফ্লাইটে যাওয়া যায়।
উদয়পুর থেকে কুম্ভলগড় দুর্গের দূরত্ব প্রায় ৮৫ কিমি। গাড়িতে বা ট্যাক্সিতে যেতে সময় লাগে প্রায় ২.৫ ঘণ্টা।
২. ট্রেনপথে:
কলকাতা (Howrah বা Sealdah) থেকে উদয়পুর সিটি পর্যন্ত সরাসরি ট্রেন নেই, তবে হাওড়া থেকে আজমের বা জয়পুর পর্যন্ত ট্রেন নিয়ে সেখান থেকে উদয়পুর পৌঁছনো যায়।
উদয়পুর থেকে গাড়িতে বা স্থানীয় বাসে কুম্ভলগড় পৌঁছানো যায়।
৩. সড়কপথে:
কলকাতা থেকে সড়কপথে প্রায় ১৬০০ কিমি। তবে সময়সাপেক্ষ হওয়ায় ব্যক্তিগত গাড়ি বা ট্যুর প্যাকেজ না থাকলে এটি খুব বাস্তবসম্মত নয়।
পর্যটকদের জন্য প্রয়োজনীয় তথ্য:
সময়: অক্টোবর থেকে মার্চ মাস কুম্ভলগড় ভ্রমণের জন্য আদর্শ। প্রবেশমূল্য: ভারতীয় নাগরিকদের জন্য ৪০ টাকা, বিদেশিদের জন্য ৬০০ টাকা (পরিবর্তন হতে পারে)। সময়সূচি: সকাল ৯টা থেকে সন্ধে ৬টা পর্যন্ত খোলা। সন্ধ্যায় লাইট অ্যান্ড সাউন্ড শো অনুষ্ঠিত হয়, যেখানে কুম্ভলগড় ইতিহাস উপস্থাপন করা হয়।
রাজপুর তথা মেবারের বীরত্ব, সংস্কৃতি ও আত্মপরিচয়ের জীবন্ত নিদর্শন কুম্ভলগড় দুর্গ। এটি শুধু একটি প্রতিরক্ষা দুর্গ নয়, বরং একটি কালজয়ী ইতিহাসের স্মারক। যারা ইতিহাস ও স্থাপত্য ভালোবাসেন, তাদের জীবনে একবার হলেও কুম্ভলগড় ভ্রমণ আবশ্যিক। অজেয় এই প্রাচীর আজও গর্বভরে ঘোষণা করে মেবার কভি নেহি ঝুকা!
댓글