মন্দাকিনি নদীর নীরব তীরে অবস্থিত চুচেন গ্রাম!
- রোজকার অনন্যা
- Mar 20
- 2 min read
মন্দাকিনী নদীর তীরে অবস্থিত চুচেন গ্রাম প্রকৃতির অপার সৌন্দর্যে ভরা একটি মনোরম স্থান। নদীর স্নিগ্ধ জলধারা, চারপাশের সবুজ প্রাকৃতিক দৃশ্য, আর গ্রামের শান্ত পরিবেশ একে বিশেষভাবে আকর্ষণীয় করে তুলেছে। যারা প্রকৃতিপ্রেমী এবং শান্ত পরিবেশ পছন্দ করেন, তাদের জন্য চুচেন গ্রাম এক আদর্শ জায়গা। মন্দাকিনী নদীর ধারে বসে সূর্যাস্ত উপভোগ করা, নৌকা ভ্রমণ, কিংবা গ্রামের সরল জীবনযাত্রার অভিজ্ঞতা নেওয়া—এসব কিছুই এখানে সম্ভব।

চুচেন হল ভারতের সিক্কিম রাজ্যের সোরেং উপবিভাগের অন্তর্গত একটি গ্রাম। এটি সোরেং সাব-ডিস্ট্রিক্ট সদর দপ্তর থেকে প্রায় ৪০ কিলোমিটার এবং জেলা সদর গেয়ালশিং থেকে ৩৯ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। গ্রামের মোট আয়তন ৩০৯.৪৯ হেক্টর। ২০১১ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী, চুচেন গ্রামের মোট জনসংখ্যা ছিল ৮৭৫ জন, যার মধ্যে ৪৫৭ জন পুরুষ এবং ৪১৮ জন মহিলা। গ্রামের লিঙ্গ অনুপাত প্রতি ১০০০ পুরুষে ৯১৫ জন মহিলা। এখানকার গড় সাক্ষরতার হার ৭৭.৭৬%, যেখানে পুরুষ সাক্ষরতার হার ৮৩.৮২% এবং মহিলা সাক্ষরতার হার ৭১.২৪%।
চুচেন প্রশাসনিকভাবে তাকুথাং গ্রাম পঞ্চায়েতের অধীনে পড়ে। ডিসেম্বর ২০২১ সালে, সিক্কিম সরকার সোরেংকে একটি পৃথক জেলা ঘোষণা করে, যার প্রশাসনিক এলাকার মধ্যে চুচেনও অন্তর্ভুক্ত। চুচেন গ্রামটি সোরেং-চাকুং বিধানসভা কেন্দ্রের অন্তর্গত, যা বর্তমানে শ্রী আদিত্য গোলায় (তামাং) দ্বারা প্রতিনিধিত্ব করা হচ্ছে। গ্রামের অর্থনীতি মূলত কৃষিনির্ভর, যেখানে স্থানীয় কৃষকরা ভুট্টা, ধান এবং বিভিন্ন ধরনের সবজি চাষ করে থাকেন। এখানকার সংস্কৃতি মূলত ঐতিহ্যবাহী সিক্কিমি সংস্কৃতির উপর ভিত্তি করে গড়ে উঠেছে, এবং স্থানীয় উৎসব ও রীতিনীতি সমাজ জীবনের গুরুত্বপূর্ণ অংশ।
চুচেন গ্রামটি প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর এবং হিমালয়ের অপূর্ব দৃশ্য উপভোগ করা যায়। এটি ইকো-ট্যুরিজম এবং সাংস্কৃতিক পর্যটনের জন্য একটি সম্ভাবনাময় স্থান হতে পারে। প্রশাসনিকভাবে, চুচেন সোরেং ব্লক অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সেন্টারের (BAC) অধীনে পড়ে এবং ব্লক ডেভেলপমেন্ট অফিসার (BDO) স্থানীয় শাসন ও উন্নয়ন কার্যক্রম পরিচালনা করেন। গ্রামটি সিক্কিমের প্রধান শহরগুলোর সাথে সড়কপথে সংযুক্ত, এবং নিকটবর্তী প্রধান শহর হল সোরেং। চুচেনে পৌঁছানোর জন্য পাবলিক পরিবহন এবং ব্যক্তিগত যানবাহনের সুবিধা পাওয়া যায়। চুচেন গ্রামটি সিক্কিমের ঐতিহ্যবাহী সংস্কৃতি এবং গ্রামীণ জীবনধারার এক অপূর্ব সংমিশ্রণ, যা প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের মধ্যে অবস্থিত।

কলকাতা থেকে চুচেন গ্রাম, পৌঁছানোর জন্য নিম্নলিখিত পদক্ষেপগুলি অনুসরণ করতে পারেন:
১. ট্রেন বা ফ্লাইটে নিউ জলপাইগুড়ি (NJP): কলকাতা থেকে নিউ জলপাইগুড়ি পর্যন্ত ট্রেন বা ফ্লাইটে ভ্রমণ করতে হবে। নিউ জলপাইগুড়ি সিক্কিমের নিকটবর্তী প্রধান রেলওয়ে স্টেশন।
২. নিউ জলপাইগুড়ি থেকে সোরেং: নিউ জলপাইগুড়ি থেকে সোরেং পর্যন্ত সরাসরি বাস বা শেয়ার জিপ পাওয়া যায়। ভ্রমণের সময় প্রায় ৪-৫ ঘণ্টা।
৩. সোরেং থেকে চুচেন গ্রাম: সোরেং থেকে স্থানীয় যানবাহন বা ট্যাক্সির মাধ্যমে চুচেন গ্রামে পৌঁছানো যায়।
থাকার ব্যবস্থা:
চুচেন গ্রামে থাকার জন্য সীমিত সুবিধা উপলব্ধ হতে পারে। তবে, সোরেং শহরে বিভিন্ন হোটেল ও গেস্ট হাউস রয়েছে যেখানে আপনি থাকতে পারেন। সোরেং থেকে চুচেন গ্রাম সহজেই যাতায়াত করা যায়। ভ্রমণের আগে হোটেল বুকিং নিশ্চিত করা এবং স্থানীয় পর্যটন অফিস বা অনলাইন রিভিউ দেখে থাকার ব্যবস্থা সম্পর্কে বিস্তারিত জানা উপযোগী হবে।
Comments