রূপকথার আরেক রাজ্যে!
- রোজকার অনন্যা
- Mar 6
- 2 min read
বর্ষায় শিউলিবনা জাস্ট ফাটাফাটি। কিন্তু ডিসেম্বর জানুয়ারিতে আর বৃষ্টি পাবেন কোথায়। তবে শীতেও দারুণ শিউলবনা। শুশুনিয়া পাহাড়ের কোলে ছোট্ট এক গ্রাম। শাল পিয়ালের অরণ্যে শীতের ঘন কুয়াশা আটকে থাকে। তখন বড় রহস্যময় লাগে শিউলবনার সবুজ অরণ্য! হাতে এককাপ গরম পানীয়তে চুমুক দিয়ে শীতের অরণ্য উপভোগ করতে মন্দ লাগে না, বরং দারুণ লাগে।

ঝমঝম বর্ষার চেয়ে কোনও অংশে কম লাগে অরণ্যের সৌন্দর্যে ডুব দিতো শীতকাতুরে অনেকেই ঠান্ডায় বাঁকুড়া পুরুলিয়ার নাম শুনলেই আরও একটা বাড়তি গরমজামা ব্যাগে ঢোকান। তার প্রয়োজন হবে না। রোদ্দুর এখানে। গাভীর মতো চরে। শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের শব্দটি ধার না করে পারলাম না। সত্যিই শিউলবনাতে অরণ্যের কড়া নেড়ে বাতাস এসে বলে যায় সুন্দর বাড়ি আছ? এখানকার রূপসৌন্দর্যে। মজে যেতে হবে আপন-খেয়ালেই।
শুশুনিয়া পাহাড়ের কোলে শিউলিবনা ছোট্ট এক আদিবাসী গ্রাম। চারিপাশে গাছগাছালি। তার সবুজে সবুজময় হয়ে উঠেছে শিউলিবনা। লালমাটির পথে শিউলিবনায় প্রকৃতি বুনে রেখেছে সবুজের ছবি। সবমিলিয়ে প্রাণ পাওয়া যায় শিউলিবনায়। চারিদিকে শাল-পিয়াল, মহুয়ার অরণ্য। শিউলিবনার রূপসৌন্দর্য বাড়িয়েছে পাহাড় আর অরণ্য। ১৫ কিমি দূরে বয়ে চলেছে এক নদী- শালি গঙ্গা। নদীর ধারে ঘুরলে মন ভাল হয়ে যাবে। দুপুর গড়িয়ে বিকেল নামলে যাবেন। তাহলে দেখবেন শালী গঙ্গার বুকে মনোরম সূর্যাস্ত!

এখানকার প্রাকৃতিক রূপমাধুরী মুগ্ধ করে ভ্রমণপ্রেমীদের। পাহাড়ের ওপর পার্বতীমন্দির ঘুরে আসতে পারেন, ভাল লাগবে। প্রকৃতির সঙ্গে রয়েছে বহু পুরাতাত্বিক নিদর্শন। যা জানতে, দেখতে ভাল লাগে। পাহাড়ের গায়ে খোদাই করা আছে রাজা চন্দ্র বর্মনের প্রাচীন শিলালিপি। এছাড়াওআরও আছে। চার পাঁচ কিমি দূরে পটুয়াদের গ্রাম ভরতপুর। ওঁদের গ্রামে গিয়ে দেখে আসুন শিল্পীদের হাতের ছোঁয়ায় ফুটে উঠছে পটশিল্পকলা। দেখা মিলবে পাথর শিল্পীদের। তাঁদের নিপুণ হাতে পাথর কেটে তৈরি হচ্ছে কতরকমের ভাস্কর্য, পাথরের বাসন ইত্যাদি। মনে করলে এঁদের কাছ থেকে কেনাও যায়।
শিউলিবনা থেকে ১১ কিমি দূরে ছাতনা। ইতিহাস রয়েছে এখানকার। এখানেই জন্মেছিলেন শ্রীকৃষ্ণকীর্ত্তন এর কবি বড়ু চন্ডিদাস। কবি বড়ু চন্ডীদাসকে নিয়ে বহু তর্ক-বিতর্ক আছে। তবে কোনও কোনও গবেষক মনে করেন, 'শ্রীকৃষ্ণকীর্তন' রচয়িতা বড়ু চণ্ডীদাস বাঁকুড়া জেলার ছাতনারই বাসিন্দা ছিলেন।
আবার ছাতনা নামকরণ নিয়ে আছে একাধিক মত। সেসব নিয়ে কোনও মাথাব্যথা না-থাকাই ভাল। তবুও জানা থাক, আগে এখানকার নাম ছিল ছত্রীনগর। ছত্রীনগর থেকে ছাতনা। কেউ কেউ মনে করেন এখানে ছিল ছাতিম গাছের জঙ্গল। ছাতিম থেকেই ছাতনা। শিউলিবনা থেকে গাড়ি নিয়ে আশপাশে ঘুরে আসতেও পারেন। উইকএন্ড স্টে-তে বললেই গাড়ির ব্যবস্থা করে দেবেন ওঁরা। ঘুরে আসতে পারেন, বিহারিনাথ, বড়ন্তি, গড় পঞ্চকোট, বিষ্ণুপুর, জয়পুরের জঙ্গল ইত্যাদি। চুপচাপ ঘরে বসে না-থেকে গাড়ি নিয়ে আধাবেলা ঘুরে নিতে পারেন শিউলিবনার আশপাশ। সঙ্গে নেবেন সামান্য কিছু খাবার আর জল। মন্দ লাগবে না।

কীভাবে যাবেন: কলকাতা থেকে বাসে অথবা ট্রেনে আসা যায় ছাতনা। ছাতনা থেকে ১১ কিমি শিউলিবনা। তবে জাতনা স্টেশনে সব ট্রেন থামে না। বাঁকুড়ায় থামে। তাই বাঁকুড়া স্টেশনে নামাই ভাল। এখান থেকে শিউলিবনা ২২ কিমি। উইকএন্ড স্টে-তে বললেই গাড়ি পাঠিয়ে দেবেন।
কোথায় থাকবেন: শিউলিবনা উইকএন্ড হোমস্টে, কটেজের বারান্দা থেকে দেখা যায় শুধুই সবুজ। অদূরে শুশুনিয়া আর শাল, পিয়াল, তমাল, মহুয়ার, সোনাঝুরির অরণ্য।
যোগাযোগ: অনিমেষ নন্দী, কিংশুক মজুমদার 07501844554. কটেজ ২২৫০ টাকা, টেন্ট ২৫০০ টাকা। প্রাতঃরাশ থেকে নৈশভোজ ৭০০ টাকা।
Comments