কামরাঙা জোৎস্নায় বরফাচ্ছাদিত পাহাড়!
- রোজকার অনন্যা
- Mar 6
- 2 min read
আমাদের পড়শি রাজ্য সিকিমে বহু আভ্রমণপ্রিয় মানুষ যেতে পছন্দ করেন। আর যদি সেই বেড়ানোটা হাতেগোনা কয়েকদিনের তাহলেই গ্যাংটক, পেলিং, রাবংলা, আরিটার ইত্যাদি জায়গায় বুকিং করে ফেলেন। সাধারণত এর বাইরে অন্য কোথাও যেতে চান না। এখন অবশ্য অনেকেই উত্তর সিকিমের কোনও কোনও জায়গায় বেড়াতে যান।

কিন্তু দক্ষিণ, পশ্চিম বা আর পূর্ব সিকিমে বেড়াতে যাওয়ার কথা সচরাচর শোনা যায় না। অথচ সিকিমের দক্ষিণ, পশ্চিম আর পূর্বে লুকিয়ে রয়েছে রূপসৌন্দর্যের ঐশ্বর্য! অরণ্যের সবুজে মোড়া পাহাড়, কাঞ্চনজঙ্ঘা আর রডোডেনড্রন। আর রডোডেনড্রনের কথা মনে পড়লেই পশ্চিম সিকিমের বার্সে বা ভার্সের নাম আসে। পশ্চিম সিকিমের পরিচিত এক ট্রেকিংয়ের পথ। ভার্সের পরিচিতি রডোডেনড্রন স্যাংচুয়ারির জন্য। আর এখানে কাঞ্চনজঙ্ঘা খুব কাছ থেকে দেখা যায়। সবুজের মাঝে কাঞ্চনজঙ্ঘার দর্শন মন ভাল করে দেয়। দক্ষিণ, পশ্চিম আর পূর্ব সিকিমের কোনায় কোনায় ভরপুর সৌন্দর্য।
দক্ষিণ সিকিমের ছোট্ট এক গ্রাম কিউজিং। রাবাংলা থেকে প্রায় ন'কিমি। আধঘন্টার পথ। পাহাড়ি রাস্তা খুব যে ভাল তা নয়। কিন্তু পাহাড়ের আর অরণ্যের সৌন্দর্যমাধুরী মনকে ভুলিয়ে রাখে। পাহাড়ের চড়াই-উত্তরাইয়ে নজরে পাহাড়ি ঘরদোর। প্রতিটি বাড়িতেই ফুলের বাগান। কতরকমের ফুল। কতরকমের রং। সেইসব রঙিন ফুল দেখতে দেখতে প্রাণমন কখন যে রঙে ভরে উঠবে, তা টের পাওয়াও মুশকিল! কিউজিংয়ে সকাল আর সন্ধ্যায় পাহাড়ের দুই ভিন্ন রূপ। ঝকঝকে সকালে তকতকে নীল আকাশে তুষারাবৃত কাকু আর পান্ডিম আর রাতটা যেন জোনাকজ্বলা দীপাবলির। চাঁদনি রাত যত গভীর হয় ততই তুষারাচ্ছন্ন কাক্র আর পাণ্ডিম জ্বলজ্বল করে। মনে হয় যেন কেউ চাঁদের আলোয় মশাল জ্বালিয়ে পাহাড়ের গায় রেখে গেছে। সে এক অপূর্ব অপার্থিব সৌন্দর্য!

ছোট্ট নিরিবিলি পাহাড়ি রূপসী গ্রাম কিউজিং। এই পাহাড়ি গ্রামটির প্রকৃতি মন ভরিয়ে দেয়। হিমালয়ের জানা, না-জানা প্রচুর পাখি কিউজিংয়ে। সকালের মেঘ পাহাড়ের কোলে লুকিয়ে ছবির মতো সুন্দর এই গ্রাম কখনওসখনও হানা দেয় জানালায়। সে এক অপূর্ব অনুভূতি। কিউজিংয়ের কাছেই রাবংলা। কেউ যদি মনে করেন ঘুরতে গিয়ে একটু ট্রেক করলে মন্দ হয় না, তাহলে মৈনাম যেতে পারেন। ছোট্ট ট্রেক কিন্তু রোমাঞ্চকর!
কিউজিং থেকে আর একটা দিন অনায়াসে কাটানো যায় বোরংয়ে। কিউজিংয়ের কাছেই বোরং। দূরত্ব মাত্র নাকিমি। বোরং গ্রামটিও প্রকৃতিপ্রেমীদের কাছে একটি আদর্শ জায়গা। মধুচন্দ্রিমা যাপনের জন্য ভীষণই নির্জন রোম্যান্টিক জায়গা। রূপসী বোরংয়ের গ্রামীণ রূপসৌন্দর্য উপভোগ করতে হলে হেঁটে ঘুরতে হবে। নইলে এখানকার রূপ-রসের আনন্দ নেওয়া যায় না। এখানকার উচ্ছল সিলভার ফলস। বা রুপোলি ঝরনার ঝরা জলের উচ্ছ্বাসের মোহিনী রূপ মনে এনে দেবে প্রশান্তি। কাছেই রালোং মনাস্ট্রি।

কীভাবে যাবেন: শিয়ালদা থেকে এনজেপি ট্রেন। শিলিগুড়ি থেকে সাড়ে চার থেকে পাঁচ ঘণ্টা লাগে। দূরত্ব কমবেশি ১৩০ কিমি। রাস্তা খারাপ থাকলে সময় আরও বেশি লাগতে পারে। যাওয়ার পথে চারপাশের মনোরম দৃশ্য দেখতে দেখতেই সময় কেটে যাবে, দূরত্ব বোঝা যাবে না। তিস্তার পা ঘেঁষে চলবে গাড়ি। সিকিম প্রবেশ করলেই চারপাশের পুরো দৃশ্যগুলোই বদলে যায়। গাড়ি বুক করে যেতে পারেন। ভাড়া কথা বলে নিতে হবে। শেয়ার গাড়িতে রাখংলা গিয়ে ওখান থেকে কিউজিং যাওয়ার পাড়ি পাওয়া যায়। শিলিগুড়ি থেকে রাবালা শেয়ার গাড়িতে নেবে ৪০০-৫০০টাকা। গাড়ির জন্য যোগাযোগ করতে পারেন: Basak Cab Service 08584075079/08250364852
কোথায় থাকবেন: ইয়াপোস হোমস্টে, প্রতিদিন মাথাপিছু থাকা-খাওয়া (প্রাতঃরাশ থেকে রাতের খাওয়া) ১৮০০টাকা। যোগাযোগ- রিনজিন দোর্জি ভুটিয়া, মোবাইল- 097330 99096. চাবাড়িতে থাকার জন্য: প্রাতঃরাশ-সহ ভাড়া- ৩০০০-৪০০০টাকা। যোগাযোগ- বিপ্লব দে, 09733454779/08967928334
Comentarios