পশ্চিম সিকিমের ছোট্ট এক গ্রাম চাকুং। একেবারে ঝকঝকে চকচকে। পর্যটন মানচিত্রে চাকুংয়ের নাম হয়তো পাবেন বিস্তর খোঁজাখুঁজির পর। আর আপনি স্বভাবে ভবঘুরে হন, তাহলে চাকুং আপনার হাতের মুঠোয়। ইতিমধ্যেই দু'তিনবার ঘোরা হয়ে গেছে। চাকুং একবার গিয়ে ঠিক মন বসে না। মনে হয়, আর একবার গেলে মন্দ হয় না! হ্যাঁ, ঠিক বলেছেন এত বিস্তৃত খোলামেলা জায়গা খুব কম আছে। একবারে ৩৬০ ডিগ্রি অ্যাঙ্গেলে পুরোটা পাওয়া যায় দৃষ্টিতে।

চাকুংয়ে গেলে রাত্রিবেলা তাড়াতাড়ি খেয়ে বিছানায় যেতে হবে। কেননা ভোর চারটে, সাড়ে চারটের সময় লেপ-কম্বলের মায়া ত্যাগ করে যেতে হবে চাকুংয়ের ভিউ পয়েন্টে। গেলেই বুঝতে পারবেন। মনে মনে বলতে হবে, 'যা দেখিলাম জন্মজন্মান্তরেও ভুলিব না।' দেখবেন, ধীরে ধীরে ঘুম ভাঙছে সূর্যদেবের। গায়ে তার লাল জামা। মনে পড়বে, ছোটবেলায় পড়া কাজি নজরুল ইসলামের সেই বিখ্যাত ছড়া, রবি মামা দেয় হামা/গায়ে রাঙা জামা ঐ,/দারোয়ান গায় গান। না, দারোয়ান গান গাইবে না, গান শোনাবে পাখি। ভোরের নীড় ছাড়া পাখির দল আকাশপথে উড়ান দেয় গান গাইতে, শিস দিতে দিতে। এবার প্রকৃতির মায়ার খেলায়! সূর্য তার লাল আভায় আলোকিত করে তুলেছে কাজনজঙ্ঘা। ক্রমশ দৃষ্টিগোচর হবে সেই বিখ্যাত ঘুমন্ত বুদ্ধ বা স্লিপিং বুদ্ধ-এর। যা শুনেছেন হয়তো দেখা হয়ে ওঠেনি। এবার চাক্ষুষ করলেন। চাকুং থেকে চমৎকার দেখা যায় স্লিপিং বুদ্ধ।

দেখা যাবে দার্জিলিঙের পাহাড়ে মেঘ-পাহাড়ের লুকোচুরি খেলা। দার্জিলিঙের সিঙ্গমারি আর হ্যাপি ভ্যালি দেখা যায় চাকুং থেকে। সবমিলিয়ে সেএক নৈসর্গিক অনুভূতি। প্রকৃতির বিশাল ক্যানভাসে আঁকা ছবির মতো দেখায় চাকুংকে! চারিপাশে পাহাড় আর অরণ্যের সবুজ। গাছগাছালির মাঝে উঁকি দেয়, টুকি খেলে কাঞ্চনজঙ্ঘা। মনে হয়, সবই যেন হাতের কাছে, হাতের মুঠোয়। যেন হাত বাড়ালেই করমর্দন করবে অরণ্য, পাহাড়! এমনই রমণীয় প্রাকৃতিক পরিবেশ! খুব-একটা মানুষের ভিড় নেই। বেশ নিরিবিলি।বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা নামে চাকুংয়ের মাঠে। সে আর এক রহস্য!

এমনিতেই পাহাড়ি এলাকায় সন্ধ্যা নামলে ঝুপ করে নেমে আসে অন্ধকার। সেই অন্ধকারের অন্য এক মায়াবী আকর্ষণ। চাকুংয়ের রাতে আকাশ নেমে আসে পাহাড়ের গায়। শুকতারার মতো জ্বলজ্বল করে দূরের পাহাড়। হাজারে হাজারে জোটবদ্ধ জোনাকি যেন জ্বলে ওঠে। সকালে একরকম খেলা দার্জিলিঙের পাহাড়ে, সন্ধ্যায় বা রাতের বেলায় জোনাকির মেলা! মনে হয়, এ যেন বড় সুখের সময়। মন ভরে ওঠে নির্বাক-উল্লাসে। কাছাকাছি ঘোরার জায়গা কালুক, রিনচিংপং। দূরত্ব কমবেশি ২৬ কিমি। রাবংলা ৫৮ কিমি আর পেলিং ৬৪ কিমি। জোড়থাং থেকে চাকুং মাত্র ন' কিমি। উনিশ
শতকের চাকুং মনাস্টেরি অবশ্যই দেখবেন। কয়েক বছর আগে এক ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্ত হয় মনাস্টেরি। নতুনভাবে তৈরি হয়েছে।

কীভাবে যাবেন:
চাকুং যেতে খুব একটা বেশি সময় লাগে না এনজেপি বা শিলিগুড়ি থেকে। ঘণ্টা সাড়ে তিন থেকে চার। পাহাড়ের বাঁক বেয়ে বেয়ে যখন গাড়ি ওঠে তখন চোখে পড়ে রোদ-পাহাড়ের লুকোচুরি খেলা! সঙ্গ দেয় পাইন আর ফার্ন। নাম না-জানা ফুলের জলসা পাহাড়ের চড়াই-উতরাইয়ে। চাকুংকে ভাললাগার শুরু যাত্রাপথ থেকেই। হোমস্টেতে বলে রাখলে গাড়ি পাঠিয়ে দেবে। ভাড়া- বড় গাড়ি ৬০০০ টাকা, ছোট গাড়ি ৪৫০০টাকা। তবে কথা বলে নেওয়া ভাল। কারণ, তেলের জন্য ভাড়া ওঠানামা করে। শেয়ার জিপও শিলিগুড়ি থেকে পাওয়া যায়। ভাড়া-৩০০-৩৫০ টাকা। কিংবা বাসে জোড়থাং এসে ওখান থেকে শেয়ার জিপে চলে আসা যায়।

থাকবেন কোথায়: চাকুং ব্যাম্বু হোমস্টে, প্রতিদিন মাথাপিছু থাকা-খাওয়া (প্রাতঃরাশ থেকে রাতের খাওয়া) ১৫০০টাকা। যোগাযোগ: হেমন্ত বিশ্বকর্মা, মোবাইল-06295034036.
চাকুং হোমস্টের বুকিং করে নোম্যাডিক উইকএন্ড, যোগাযোগ: 091634 28385, প্রতিদিন মাথাপিছু থাকা-খাওয়া (প্রাতঃরাশ থেকে রাতের খাওয়া) ১৬৫০টাকা। গাড়ি নিলে পড়বে ৩৫০০-৪০০০ টাকা। তবে দর ওঠানামা করতে পারে তেলের জন্য।
Comments