top of page

ছোটগল্প - অপেক্ষা

Writer: Debi PranamDebi Pranam

লিখছেন -সৌমী গুপ্ত, অলঙ্করণ - সুমন সরকার


অন্তত পঁয়তাল্লিশ মিনিট দাঁড়িয়ে আছে হা পিত‍্যেশ করে।একে তো মটকা গরম হয়ে আছে সকাল থেকে ,তার উপর পেটটা চুঁ চুঁ করছে ক্ষিদের চোটে।এরই মধ্যে কেলোদা দশ বার ফোন করেছে। শীতের রাত । রাতের অন্ধকারটা আলকাতরায় লেপে দেওয়ার মত। মেইন রাস্তার কালো সর্পিল রাস্তায় নিয়ন আলো পিছলে পড়ছে । একটা পাতলা কুয়াশার চাদর জড়িয়ে ধরেছে শহরের এই নির্জন এলাকা। পলাটাকে মেইন রাস্তার মোড়ে দাঁড় করিয়ে এসেছে। পেটে ছুটন্ত ছুঁচো নিয়ে অনেকক্ষণ ধরে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করার যে কি যন্ত্রণা টাবলা একবার ভালমত টের পেল। চেষ্টা তো কম করছে না। বার কয়েক বাইকটা নিয়ে এপাশ ওপাশ ঘুরেও এসেছে সে। দেখতে না পেলে কি করবে! এবার মুখ ফসকে দুই অক্ষর বেরিয়েই যাচ্ছিল।অঙ্কে সে বরাবর কাঁচা।তার মধ্যে গুণে গুণে চারটে ডিজিট তার সাথে আবার সামনের দুটো অক্ষরের সাথে নম্বর। নড়বড়ে অক্ষরে লিখেও রেখেছে। মাঝেমাঝে টাবলার নিজের হাতের লেখা দেখে নিজেকে বেশ ডাক্তার ডাক্তার মনে হয় । টাবলার নিজে ছাড়া কেউ উদ্ধার করা তো দূরের কথা লেখা না জিলিপির প্যাচ বুঝতে পারা দায়!

শহরের এই গলিটায় সচরাচর কেউ আসে না তেমন।মেইন রাস্তা থেকে বেশ দূরে। অন্ধকার মতো। অনেকটা দূরে একটা বস্তি পরে । তারপর ধাপার মাঠ । বাইকে চেপে আসলে ধাপার মাঠ থেকে পনেরো মিনিট চলে এলে বেমালুম ফাঁকা জায়গা। মাঠের পর মাঠ। আরও দু কিলোমিটার মাঠের মাঝখান বরাবর এগিয়ে গেলে কেলোদার গোডাউন। কেলোদা মালটা কিন্তু সরেস! বেশ বেছে বেছে একটা জায়গা ঠিক করেছে মাইরী। অবশ্য এসব কাজ তো লোকালয়ে চায়ের গুমটির পাশে সাহেব বিবি গোলাম খেলতে খেলতে হয় না । সাতপাঁচ ভেবেই চলেছে টাবলা। সামনের লাইটটা দুবার হাঁপানি রুগীর মত দপদপ করতে করতে নিভে গেল । টাবলা মুখ ফসকে বলল,"লে হালুয়া! ভগবান নাকি বাঁশের ঝাড় বে । যেখানেই যাই বাঁশঝাড় পিছন পিছন ধাওয়া করে । চারিদিকে শালা কিচ্ছু দেখতে পাচ্ছি না!' সত্যিই তাই টিমটিমে স্ট্রীট লাইট দূরে জ্বলছে বাদ বাকিটা হাতড়ে হাতড়ে খুঁজে নিতে হয় — অবশ্য ছিটেবেড়ার ঘরে থেকে আর ঘরে ছ ওয়াটের বাল্বের হলদেটে মার্কা আলো দেখে দেখে অভ‍্যাস হয়ে গেছে টাবলার। অসুবিধাটা হচ্ছে সব বাইকের নম্বর প্লেট গুলো দেখতে। যদিও এ রাস্তায় বাইক হাতে গোনা।কেলোদার বাইকটা স্ট‍্যান্ড করে তার উপর বসে আয়েশ করে একটা বিড়ি ধরালো টাবলা। বিড়ি খেলে ক্ষিদেটা বেশ কমে যায়। সিগারেটটা ধরায় তখন যখন নিজের পাড়ায় রুমির সাথে দেখা হয়।ওতে লোফার দেখায় কম। এমনিতে তো ভগবান পুরো পাঁচটা আঙুল সহ পাঞ্জার ছাপ তার মুখের মধ্যে সেঁটে দিয়েছে বাবার মত... খৈনি খেয়ে খেয়ে দাঁত গুলোর জীবাশ্মের দশা,তার মধ্যে আবার কথা বলতে গেলে শ এর দোষ আছে।

বিড়িটা সবে দুটান মেরেছে হুস করে আবার একটা বাইক চলে গেল।বাইক গুলো এমন যাচ্ছে শালা বোঝা যাচ্ছে না নম্বর প্লেট গুলো। এবার পকেট থেকে কাগজটা বের করে আবার দেখলো‌ 1313... সামনেWB24। উল্টো দিকে কুকুর গুলো ঠান্ডায় গোটা চারেক বাচ্চা নিয়ে কুঁইকুঁই করছে। দুটো লোক রাস্তায় যেতে যেতে একটু সন্দেহজনক ভাবে দেখল টাবলাকে।টাবলা তাকায় একবার। বিড়ির ধোঁয়াটা তাচ্ছিল‍্য ভাবে রিং এর মত সামনের কুয়াশাময় বাতাসে ছেড়ে দেয়।ভয় পায় না ও। বেশী ঘাঁটাতে এলে দেবে একেবারে। ছোট খাট বস্তুটি আছে ওর সাথে।ছ ছটা ঝাঁঝরা করার মোক্ষম জিনিস ভরা আছে ওর মধ্যে।

ওই যে আবার একটা বাইক।

ধুস — গোটা শহরে টাবলুর মনে হলো সুপারম‍্যানে ছেয়ে গেছে। চোখের সামনে ভোঁ ভোঁ করে আওয়াজ তীব্র গতিতে ছুটে যাওয়া দুচাকা ছাড়া বাইক চালককেও ভালো করে ঠাহর করা যায় না। কারোর কারো তো যমের দুয়ারে ইঁট পাতা আছে মনে হয় টাবলার।এত তাড়া। অবশ্য কেলোদা যার কথা বলেছে তার কি এত জোশ হবে! টাবলা ভাবে মনে মনে। বলেছে বছর ষাটের মত বয়স।

এসব কাজ মাঝে মাঝে ভালো লাগে না টাবলার। ছেড়ে দেবে একদিন এসব। মায়ের কিডনির ডায়ালিসিসে এত টাকা যায় মাসে মাসে। কিছু টাকা জমিয়ে একটা ব্যবসা শুরু করবে টাবলা।ঠিক করেছে গাড়ি সারাইয়ের দোকান খুলবে একটা, এসব ছেড়ে দেবে তখন। কেলোদার কাছ থেকে তখন হাত পাততে হবে না। কেলোদার বাইকটা হাফ দামে কিনে নেবে। এই নিয়ে তিনটে উইকেট নিয়েছে টাবলু। আর নেবে না। প্রথমটার বেলা কেলোদা সাথে ছিল। ট্রিগারে আঙুল চাপতে গিয়ে হাত ঘামছিলো—তার পরের দুটো মাখনের মত নামিয়েছিল আর লাশ দুটো গুম করে দিয়েছিল। কাকপক্ষীও টের পায়নি। সেই থেকে এসব কেসে কেলোদা টাবলাকেই ডাকে। তবে আর না—এবার সাফ সাফ নিজের পাওনা গন্ডা বুঝে নিয়ে মাকে নিয়ে চলে যাবে গ্রামের বাড়িতে। শহর থেকে দূরে। আর পাড়ার মোড়ে বাজারের কাছে তখন দোকানটা খুলে বসবে। গাড়ী সারাইয়ের দোকান। কিন্তু রুমি? তখন রুমিকে পাবে কোথায়! প্রতিদিন দু দিকে চুল বেঁধে স্কুল ড্রেস পড়ে যখন রুমি যায় ওর বাবার বাইকে চেপে টাবলার মনে হয় ওর বাবাকে নামিয়ে ওই সারথি হয়ে যাক। পিছন থেকে রুমির ছোট ছোট চুল গুলো ওড়ে তখন পুরো বলিউড সিনেমার নায়িকার মত লাগে। টাবলার তো আলিয়া ভাটের কথা মনে পড়ে যায়।

বিশ্বের যত মশা আছে সব এসে রক্ত চুষছে। চোষ যত খুশি খা!আর কত খাবি ?সবাই শালা রক্ত খাচ্ছে। কেলো দা খাচ্ছে, ডাক্তার খাচ্ছে, বাড়িওয়ালা খাচ্ছে !তোদের আর দোষ কি। চকচকে শহরের এককোণে মাছিওড়া ভ্যাদভ্যাদে নোংরা ড্রেনের গন্ধ শুঁকে যাদের একটা ছোট্ট রান্নাঘরে বস্তিবাসীদের একটা মাত্র কলতলার তীব্র গালিগালাজ শুনতে শুনতে বাড়ন্ত ভাত গলাধঃকরণ করতে হয় তাদের রক্ত জলের দরে বিকিয়ে যায়।—এই মালটাকে নামাতে পারলে হাজার কুড়ি দেবে বলেছে কেলোদা। মানুষ খুন করছে নিজের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে তার দাম হাজার কুড়ি। হাসি পেল টাবলার । উপরওয়ালা চোখ বন্ধ রেখে ওই মহিলাটার মত আদালতে ওজনদারী নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে। কিছু দেখতেই না পেলে বিচারটা করবে কি করে!

পকেট এ ফোনটা বেজে উঠল আবার।

কেলো দা উফফ–"বল বস"।

"পেয়েছিস?"

"কি পাব গুরু। এমন মাল বলেছো না মাইরি কোনও টাইম জ্ঞান নেই। পাক্কা এক ঘন্টা দাঁড়িয়ে আছি।"

"তোকে দিয়ে আর হবে না টাবলা। সবেতেই তাড়া তোর"।

"আরে কেলোদা কি বলছ! এক একটা বাইক যাচ্ছে অন্ধকারে কিছু দেখতে পাচ্ছি না। পলাটাও খবর দিচ্ছে না। এই বাইপাসের রাস্তাটা এমনি ফাঁকা অন্ধকার। শালা দাঁড়িয়ে আছি কখন থেকে।"

"ক পেগ চড়িয়েছিস রে? টাবলা আবার ফাঁকা রাস্তায় ভয় পাচ্ছে ! চুড়ি পরে বসে থাক ঘরে।"খুক খুক করে হাসলো কেলোদা।

মাথাটা গরম হয়ে গেল। মুঠিটা মাঝে মাঝে কেলো দার দু ইঞ্চিউঁচু পেটেই সেধিয়ে দিতে ইচ্ছে করে।

"বস আজ ছেড়ে দাও না–কাল বরং আরেকবার দেখব" টাবলা ক্লান্ত হয়ে বলল‌। হা হা করে উঠলো কেলো দা।"অনেক হয়েছে আর ইয়ার্কি মারিস না। পারলে আজই কর নয়তো আমি অন্য কাউকে দেখছি।"

এই মুহূর্তে টাবলুর মনে হল কালো পিস্তলটা দিয়ে কেলোদারই মাথাটা ঝাঁঝরা করে দেয় একটা গুলিতে।

কুট করে ফোনটা কেটে দেয়। এমনিতেই মনটা আজ খারাপ। আলিয়া ভাটকে আজ হেব্বি লাগছিল মাইরি। নীল আর সাদা লং ইস্কার্টে পরি পরি লাগছিল।—টাবলার তো মনে হচ্ছিল ওর সাথে কোমর দোলায় বরুণ ধাওয়ানের মত।

পাড়ার ছেলেরা টিটকারি মারে,—বলে এইট পাস ছেলে গেছে বড়লোক বাবার কনভেন্টে পরা মেয়ে কে ভালবাসতে। তাতে কিছু যায় আসে না টাবলার। কিন্তু আজ যখন পাড়ার মোড়ে অন্য ছেলের বাইকে বসে রুমি যাচ্ছিল গা ঘেঁষে পারফিউম ওড়াতে ওড়াতে তখন টাবলার মনে কে আলকাতরা ঢেলে দিয়েছে। এইসব ভালবাসাতেই যত লাফরা । পলা সেদিন বলছিল ,"ভাই প্রেম করে সিরিয়াসলি নিয়েছ কী দেবদাস হয়েছ! আর দেবদাসের মত বোকা... পৃথিবীতে আর দুটো নেই !" সেই যখন থেকে আলিয়া ভাটকে দেখেছে অন্য ছেলের সাথে তখন থেকে নিজেকে বর্ষায় ন্যাতানো মেরী বিস্কুটের মত দেবদাস লাগছে।জীবনটা কোন দিন তার হীরের খনি ছিল? ছোটবেলায় নুন আনতে পান্তা ফুরতো প্রতিদিন। মা লোকের বাড়ি কাজ করত। আর বাবা টাকা চুরি করে মদ খেয়ে এসে মাকে পেটাতো।ছোট টাবলার তখন বাবাকে মনে হতো গায়ের জোরে মেরে ফেলতে। পারতো না বলে জোরে জোরে দুলে দুলে চোখের সামনে বইয়ের পাতাগুলোর লাইনগুলো আউরাতো কিছু না বুঝে। গ্রামের স্কুলে পড়াশোনা ভালই এগোচ্ছিল। বাদ সাধলো বাবা যখন কোন বেআইনী কাজে আর খুনখারাপিতে ফেঁসে গেল। বাবা পালিয়ে গেল পুলিশের ভয়ে। যেটুকু নমো নমো করে টাকা ঠেকাতো সংসারে তাও বন্ধ হল। আর পুলিশের ও প্রতিবেশীর জেরার অত্যাচারে মা আর টাবলা চলে এল এই শহরের মামার বাড়িতে। তখন সে সবে নাইনে উঠেছে। মা এখানেও লোকের বাড়িতে কাজ করতো। আলে কালে গ্রামের বাড়ি যেত। সবাই কেমন সন্দেহের চোখে দেখে। তারপরই কেলোদার সাথে দেখা। টাবলা কেলোদার হয়ে অনেক কাজ করে দেয়। সেগুলো বেশিরভাগই বেআইনি। পেট চালাতে গেলে আইন দেখলে হয় না। তার মধ্যে গত এক বছর ধরে মায়ের ডায়ালিসিস চলছে। কি করবে ও? মামারা বলে রক্ত কথা বলে, যার বাপ অমন তার ছেলেও অমনি হবে। টাবলুর ওসব গা সওয়া হয়ে গেছে। আপনি বাঁচলে বাপের নাম।—ওর বাপ টাই তো ফেরার। পালিয়ে গেছে থেকে কোনও খবর নেয়নি কোনওদিন। জানেও না কোথায়। টাবলা ভুলেই গেছে বোধহয় মুখটা। আর দশমিক বসিয়ে দিন চালাতে গেলে রক্তের ঠিকুজি কুষ্ঠী বিচার করার সময় থাকে না।

তবু মা যখন ফ্যাচফ্যাচ করে কাঁদে তখন আড় চোখে দেখে টাবলু। দেখলেই গা টা রিরি করে। হঠাৎ মনে পড়ে যায় কপালে একটা কাটা দাগ গালে একটা জরুল কালো রংয়ের বড় লোমশ জরুল। ছোটবেলায় কতবার জিজ্ঞেস করত "বাবা এটা কি?"

বাবা হাসত আর ভয় দেখিয়ে বলতো "ভালুকের লোম লাগিয়েছি".... যে মানুষটা তার ছেলে বউকে ছেড়ে চলে গিয়ে ফিরে আসে না খোঁজ খবর নেয় না তার জন্য কোনওদিন আর কষ্ট হয়না টাবলার। এই হল মুশকিল। দু পেগ চড়ালেই টাবলার বাবার কথা মনে পড়ে , বুকের ভিতরটা চিনচিন করে আর সঙ্গে মনে আসে আলিয়া ভাটকেও। আবার না চড়ালে মানুষ খুনের মতো কাজ হয় না। তবু মনটা আজ সকাল থেকে খচখচ করছে। মা বলছিল বাবার জন্য পুজো দিতে। বাবার নাকি আজ জন্মদিন। দিয়েছে যা তা বলে মাকে মুখের উপর "এত প্রেম আসে কোথা থেকে তোমার ?ফিরে তো আসলো না এ জন্মে ,আর আসবেও না। যতই ফুল চড়াও ঘটে, পুজো দিতেও গ‍্যাঁটের পয়সা লাগে... একটা পয়সাও ঠেকাবো না আমি।"

ফোন করল পলাকে একটা"ভাই কতক্ষণ আর মশার কামড় খাব?"

"অনেক দিন বাঁচবি শালা। তোকেই ফোন করতে যাচ্ছিলাম। বুলু কালারের সোয়েটার পড়েছে আর সাদা প্যান্ট ।ধীরেন নাম লোকটার,মনে আছে তো? তুই আবার ডেকে লাফরা করিস না। পুরনো লাল বাইক। এখনি গেল দ‍্যাখ।"

টাবলা ভেবেছিল একটু চা খাবে। আশেপাশে অবশ্য কোনও দোকান নেই। পলার ফোনটা পেয়ে সজাগ হলো। দূরে একটা বাইক দেখা যায়। আসছে আস্তে আস্তে। গাড়ির নম্বরটা মনে মনে ঝালিয়ে নেয়। মাথায় কালো হেলমেট। শালা মুখটা দেখা যাচ্ছে না। ব্লু কালারের সোয়েটার আর সাদা প্যান্ট। লাল খসটে বাইক। এই লোকটাই নাকি দিল্লি থেকে এসেছে ...নামটা কি বলল পলা ধীরেন নাকি! মালটা কেলোদার চরম শত্রু জগাদার চ‍্যালাগিরি করছে ,আবার কেলোদার কারবার থেকে মাল চুরি করছে কেলোদারই গোডাউনের লোক লাগিয়ে,পুলিশের কাছেও চুলকে দিয়েছে কেলোদার নামে। আরে শালা এদিকে জানে না পুলিশকে চুলকানো কেলোদার বিরুদ্ধে ওই রাতের বেলায় সূর্য দেখার মত ঘটনা । অবশ্য এ তল্লাটে কেলোদা আর জগাদার সাপে-নেউলে সম্পর্কের কথা সবাই জানে।

আর কেলোদাকে মাঝে মাঝে দেখে মনে হয় কোলা ব্যাঙ। কালো কুতকুতে কোলা ব্যাঙ। কেলোদা কাউকে ভয় পায় না। কেলোদার যে বস মালটার হেব্বি পয়সা। সবসময় ঠান্ডা গাড়িতে ঘুরে বেড়ায়। ওপর মহলে পুরো টাকা দিয়ে বশ করে রেখেছে। ওর সাথে ঘুরলে কেলো দার দেমাক বেড়ে যায়।

টাবলা পিছু নিল বাইকটার। চারিদিকটা সুনসান। কেলোদার গোডাউনের কাছে পলেস্তারা পড়া শ্যাওলা ধরা পাঁচিল দেওয়া ঘুপচি ঘরে ঢুকে পড়ল লোকটা।টাবলা চারিদিকে চোখ বোলালো। কেউ তেমন নজরে এলো না। লোকটা দরজাটা বন্ধ করার আগেই টাবলু পিস্তলটা বের করে ট্রিগারে আঙুল চেপে ধরল লক্ষ্য করে। লোকটা লুটিয়ে পড়ল। যাক কেউ দেখেনি। লাশটা এবার গুম করতে হবে। পলাকে একবার ফোন করা দরকার। ধারে কাছেই থাকবে বলেছে। মোবাইলের টর্চটা জ্বালালো সাবধানে। দরজার ছিটকানিটা চেপে লাগালো। মুখটা দেখে চমকে উঠল টাবলা।... কপালে কাটা দাগ, গালে মোটা কালো লোমশ জরুল, চুলগুলো আধা কাঁচাপাকা। তবে যে কেলোদা বলেছিল লোকটার নাম ধীরেন... পলাও তো তাই বলল। ওর বাবার নাম তো মোহন। টাবলা প্রচন্ড ঘামতে শুরু করলো ঠান্ডাতেও,দুবার আর্তনাদ করে ডাকলো ,"বাবা ,বাবা,চোখ খোলো,আমি টাবলা, চিনতে পারছ?" গরম রক্ত বেয়ে চ্যাটচ্যাট করছে ততক্ষনে টাবলার জিনসের কাছটা। আবার ফোন করছে কেলোদা..."কিরে ফিনিস? সালটেছিস মালটাকে?"টাবলা ফোনটা কেটে দেয়।

নাকের কাছে আঙুল দিয়ে দেখে,...বুকের মধ্যে কান লাগালো, ধক ধক করছে মনে হয়...বুকের কাছটায় রক্তে ভিজে একদম সপ সপ করছে। টাবলার বুকের ভিতরটা যেন নেই হয়ে গেল । ছোটবেলা ,বাবা ,রথের মেলায় দশটাকার বাদাম ভাজা কিনে দেওয়া বাবা ,মাকে পেটানো বাবা আবার পুজোর সময় ফুটপাতে দরদাম করে ষষ্ঠীর দিন জামা কিনে দেওয়া বাবা। চোখদুটোতে আচমকা জল চলে এল । একটা আতঙ্কে গলার কাছটা শুকিয়ে যেন শক্ত কাঠ। গুলিটা কানের একটু নিচে লেগেছে... তাতেই কি!? কি করবে ভেবে পেল না । হঠাৎ মনে হল ওদের বস্তিতে রাজুর একটা অ্যাম্বুলেন্স আছে না? রাজুর নম্বরটা খোঁজে তাড়াতাড়ি ফোনে। রিং হচ্ছে! ধর ভাই ফোনটা ,এরপর অনেক দেরি হয়ে যাবে।।



Comentarios


ssss.jpg
sssss.png

QUICK LINKS

ABOUT US

WHY US

INSIGHTS

OUR TEAM

ARCHIVES

BRANDS

CONTACT

© Copyright 2025 to Debi Pranam. All Rights Reserved. Developed by SIMPACT Digital

Follow us on

Rojkar Ananya New Logo.png
fb png.png

 Key stats for the last 30 days

bottom of page