ব্যথা নিয়ে জেরবার? পেন ম্যানেজমেন্টের A to Z
ব্যথায় বেসামাল আমাদের সবার জীবন। বাচ্চা থেকে বুড়ো সকলের হাল বেহাল। ঘুম থেকে উঠে ঘাড় টনটন দিয়ে শুরু রাতে কোমর কনকন দিয়ে শেষ। কিন্তু এতেও ইতি নেই! পরদিন আবার তার নিয়মমাফিক হাজিরা। রোজকার এই বিড়ম্বনা থেকে রেহাই পাওয়ার সময় হয়েছে। সময় হয়েছে ব্যথাকে পুরোপুরি ঝেড়ে ফেলে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে যাওয়ার। কিন্তু কীভাবে? রাস্তা দেখাচ্ছেন আমাদের বিশেষজ্ঞরা।

ব্যথা নিয়ে জেরবার? এ বিষয়ে কথা বলছেন মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডাঃ আশিস মিত্র
MD (Medicine), MRCP (Ireland), MRCP (UK)
Consultant Physician (Cardiology, Diabetes, Critical Care)
RUBY GENERAL HOSPITAL , AMRI HOSPITAL
আমাদের জীবনযাত্রা এবং কাজের ধরন থেকে শরীরে নানা ধরনের ব্যথার জন্ম হতে পারে। অনেকেরই নির্দিষ্ট বয়সে পৌঁছানোর পর ব্যথা হয়ে ওঠে নিত্যসঙ্গী। দীর্ঘমেয়াদী ব্যথা স্বাভাবিক জীবনে ব্যাঘাত ঘটায় নানাভাবে।
দীর্ঘমেয়াদী এই ব্যথাগুলোর বেশিরভাগই নিয়মিত চিকিৎসা করলে ভাল হয়ে যায়।
দীর্ঘমেয়াদী ব্যথা কী?
আমাদের সবার দেহেই কম বেশি ব্যথা হয়। কিন্তু কিছু কিছু ব্যথা একেবারে জেঁকে বসে। যখন তিন মাসেরও বেশি সময় ধরে শরীরের কোনও স্থানে ব্যথা থাকে, তখন তাকে বলা হয় ক্রনিক পেইন বা দীর্ঘমেয়াদী ব্যথা। এই ব্যথা আমাদের প্রাত্যহিক কাজে ব্যাঘাত ঘটায়। শারীরিকভাবে তো বটেই, মানসিকভাবেও সমস্যার সৃষ্টি করে।
ব্যথা নিয়ে বসেছিলাম ডাঃ আশিস মিত্রের সঙ্গে।
ডাঃ মিত্র জানালেন, ব্যথার নানা রকম ফের আছে। সাধারণত তিন রকম কারনে হয়। ১। আর্থ্রাইটিসের ব্যথা, ২। নার্ভের ব্যথা, ৩। ক্যান্সারজনিত ব্যথা।

ব্যথা যখন সমস্যা
আঘাত পাওয়ার কারণে বা আর্থ্ররাইটিস মতো কোনও রোগের কারণে এই ব্যথা হতে পারে। তবে এই ধরনের ব্যথার সঠিক কোনও উৎস এখনও আবিষ্কার করা যায়নি। গবেষণা বলছে, ক্যান্সার রোগীদের শরীরের ব্যথা যদি কোনওভাবে কমানো যায়, তাহলে তাদের জীবনীশক্তি আরও বেড়ে যেতে পারে।
শুরু থেকেই চিকিৎসা করুন
শরীরের ব্যথা যখন সারছেই না, তখন বুঝতে হবে এটি সাধারণ কোনও ব্যথা নয়। বরং শরীরে কোনও সমস্যা হচ্ছে। হেলাফেলা না করে প্রথম থেকেই গুরুত্ব দিন ব্যাপারটিকে। তাহলে অনেক বড় সমস্যা থেকে রেহাই পাবেন। ব্যথার ধরন অনুযায়ী চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন।
নিজের যত্ন নিন
ব্যস্ততা থাকবেই, কিন্তু এর মধ্যেও নিজের যত্ন নেওয়া একান্ত জরুরি। ঠিকমতো স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া, কাজের ফাঁকে পর্যাপ্ত বিশ্রাম নিন এবং নিজেকে কিছুক্ষণের জন্য হলেও দুশ্চিন্তামুক্ত রাখুন। প্রাত্যহিক জীবনের রুটিন ভাল হলে ব্যথাও অনেকটা নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়।
ব্যায়ামও এক্ষেত্রে অনেক কাজে লাগতে পারে। পেশি এবং গিঁটে ব্যথার জন্য রয়েছে নির্দিষ্ট কিছু ব্যায়াম। এগুলো করে ওষুধ ছাড়াই ব্যথা সারাতে পারবেন।
ভারোত্তোলন, খালি হাতে ব্যায়াম কোমর এবং মেরুদণ্ডের জন্য ভাল। আবার সাঁতার হতে পারে গিঁটে ব্যথার সমাধান। তবে যে কোনও ব্যায়াম শুরু করার আগে আপনার চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। কারণ ব্যক্তি এবং সমস্যাভেদে ব্যায়ামও হয় আলাদা।

মনের কথা খুলে বলুন
অনেকেই ভাবেন, নিজের ব্যথার কথা প্রিয়জনকে বলা মানে তাকে বিরক্ত করা। কিন্তু মাঝে মাঝে ব্যথা হয়ে উঠতে পারে মানসিক বোঝার মতো। কাজেই প্রিয়জনকে জানান আপনার কষ্টের কথা। সব কাজ একা একা না করে সাহায্য নিন, মাঝে মাঝে কারও ওপর দায়িত্ব ছেড়ে দিয়ে একটু বিশ্রাম নিন।
যদি আপনার ব্যথা আপনাকে হতাশ কিংবা আতঙ্কিত করে তোলে, তাহলে মনোরোগ বিশেষজ্ঞের শরণাপন্ন হওয়া উচিৎ। মানসিকভাবে চাঙ্গা বোধ করলে আপনার ব্যথাও কিছুটা লাঘব হবে।
ব্যথা ক্লিনিক
ব্যথা ব্যবস্থাপনা , ব্যথা ওষুধ , ব্যথা নিয়ন্ত্রণ বা অ্যালগ্যোট্রাস , একটি যন্ত্রের শাখা যা যন্ত্রণা সহজ করার জন্য এবং দীর্ঘস্থায়ী ব্যথার সাথে জীবনযাত্রার মান উন্নয়নের জন্য আন্তঃসম্পর্কিত পদ্ধতির কাজ করে। সাধারণত ব্যথা পরিচালনা দলের মধ্যে পড়ে, চিকিৎসাবিদ, ফার্মাসিস্ট, ক্লিনিক্যাল মনোবৈজ্ঞানিক, ফিজিওথেরাপিস্ট, পেশাগত থেরাপিস্ট, চিকিৎসক সহকারী, নার্স দলের অন্যান্য মানসিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ এবং ম্যাসেজ থেরাপিস্টও।
বাতের ব্যথা
শুধু বেশি বয়সের মানুষই নন, কমবয়সীরাও বাতের সমস্যায় আক্রান্ত হতে পারে। অনেক ওষুধ খেয়েও কিছুতেই বাতের ব্যথা থেকে মুক্তি পান না বহু মানুষ। প্রায় প্রত্যেক বাড়ির বয়স্ক ব্যক্তিদের মধ্যে বাতের ব্যথার সমস্যা রয়েছে। উঠতে গেলে, বসতে গেলে বারবার যন্ত্রণায় কুঁকড়ে যাচ্ছেন তাঁরা। বাতের সমস্যা অনেক কারণে হতে পারে। অনিয়মিত জীবনযাপন, বংশগত, অন্য বিভিন্ন রোগের প্রভাবে, এছাড়া আরও অনেক কারণে বাতের সমস্যা দেখা দিতে পারে। মেয়েদের ক্ষেত্রে বয়সের সীমা ৪০, এবং পুরুষদের ক্ষেত্রে সাধারণত ৫০-এর কাছাকাছি। বাতের ব্যথা আসলে কী? কেনই বা একটা বয়সের পরে শুরু হয় এই ব্যথা?

বাতের বৃত্তান্ত অস্থিসন্ধিতে কার্টিলেজের ক্ষয়ের ফলে বাতের ব্যথা বা আর্থ্রাইটিসের ব্যথা শুরু হয়। সাদা রাবারের মতো এই কার্টিলেজের উপস্থিতি অস্থিসন্ধিতে দুটি হাড়ের মধ্যে ঘর্ষণ কমায়। তাই এর ক্ষয়ের পর শুরু হয় হাড়ের ক্ষয়, যার পরের ধাপই হল বাতের ব্যথা। মূলত দু’ ধরণের বাত বেশি দেখা যায়— অস্টিও আর্থ্রাইটিস ও রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস। এর মধ্যে ভারতবর্ষে বেশি হয় প্রথম ধরণের বাত। ডাঃ মিত্র বলছেন শরীরচর্চা ও পরিশ্রমের অভাব, অনিয়ন্ত্রিত খাওয়া-দাওয়া প্রভৃতি কারণে এই বাতের আধিক্য আমাদের দেশে। এ ছাড়া ওজন বেশি থাকলে বাতের ব্যথা হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। চিকিৎসকদের মতে কোনও ওষুধেই বাতের ব্যথা সম্পূর্ণ সারে না।
১) চিকিত্সকদের মতে, বাত সাধারণত আমাদের দুটো হাড়ের সংযোস্থলে হয়ে থাকে। তাই ছোটবেলা থেকেই হাড়ের যত্ন নেওয়া খুবই জরুরি। আমাদের এমন সমস্ত খাবার খেতে হবে, যা হাড়কে মজবুত রাখে। বাতের সমস্যা তৈরি করে যে সমস্ত খাবার যেমন, মিষ্টি, ডিম, সোয়াবিন এবং দুগ্ধজাত দ্রব্য খাওয়া কম করতে হবে। ২) বাতের ব্যথা কমাতে প্রচুর পরিমাণে তাজা শাক-সব্জি, ফল খাওয়া খুব জরুরি। মিহি চিনি, শস্যদানা, রিফাইন্ড অয়েল এবং ট্রান্স ফ্যাট খাওয়া বন্ধ করতে হবে। এবং অতিরিক্ত নুন খাওয়া ত্যাগ করতে হবে।
৩) বাতের ব্যাথায় কষ্ট পেলেও অস্থির না হয়ে মনকে শান্ত রাখতে হবে। উত্তেজিত হলে কষ্ট বাড়ে। তাই মন এবং মস্তিষ্ককে শান্ত রাখতে যোগাসন অভ্যাস করুন। ৪) আমরা সকলেই জানি, হলুদ স্বাস্থ্যের জন্য দারুণ উপকারী। ব্যথা, যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পেতে রোজকার খাবারে হলুদের ব্যবহার করুন। ৫) ব্যথা, যন্ত্রণা কমানোর জন্য দারুণ উপকারী হল ব্যায়াম। বাতের সমস্যা অতিরিক্ত হলে একজন অভিজ্ঞ ফিজিওথেরাপিস্টের সঙ্গে যোগাযোগ করুন। তিনিই বিভিন্ন ব্যায়ামের মাধ্যমে আপনার কষ্টের উপশম ঘটাতে পারবেন।
৬) বাতের ব্যথা বাড়ার একটি প্রধাণ কারণ শরীরে ভিটামিন ডি ও ক্যালশিয়ামের ঘা়টতি। ফলে নিয়মিত এই দুটি উপাদান বেশি পরিমাণে নিলে বাত আগেই আটকানো যেতে পারে।
৭) ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। তার জন্য প্রয়োজন পরিকল্পিত, নিয়ন্ত্রিত এবং ডাক্তারের পরামর্শ মাফিক খাওয়া-দাওয়া। ওজন কম থাকলে হাড়ের ওপর চাপ বেশি পড়বে না, ফলে বাত থাকলেও ব্যথা প্রতিরোধ করা যাবে অনেকটাই।
৮) নিয়মিত শরীরচর্চা করতে হবে। এর ফলে হাড়ের জয়েন্ট সক্রিয় থাকবে, তাই ব্যথা রাখা যাবে নিয়ন্ত্রণে।
৯) ফিজিওথেরাপি করান নিয়ম করে। ফিজিওথেরাপি আপনার দেহে রক্ত চলাচল বাড়াবে যা হাঁটুতে প্রদাহের ফলে বাধাপ্রাপ্ত হয় মাঝেমাঝে। এর ফলে আপনার হাড়ের জয়েন্টের সচলতাও বাড়বে।
৫) সাঁতার ব্যথা কমানোর ভীষণ ভাল দাওয়াই। নিয়মিত সাঁতার কাটলে পেশিতে চাপ কমে যায়, দেহে কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। গবেষণা বলছে হাঁটু ও নিতম্বের জোরও বাড়ে।

শীতে পেশি আর গাঁটের ব্যথা বাড়ছে?
অনেকেরই পেশি বা গাঁটে পুরনো ব্যথা থাকে। বাতের ব্যথাও থাকে অনেকের। তার অনেকগুলোই বছরের অন্য সময়ে টের পাওয়া যায় না। কিন্তু শীত পড়তে না পড়তেই সেগুলো বাড়তে থাকে। বিশেষ করে ডিসেম্বরের মাঝামাঝি সময় থেকে তাপমাত্রা দ্রুত হারে কমতে শুরু করলে সেই সব ব্যথা মারাত্মক বেড়ে যায়।
কেন বাড়ে এই ব্যথাগুলো? চিকিৎসক ডাঃ আশিস মিত্র বলছেন, এর পিছনে অনেকগুলো কারণ রয়েছে:
· শীতে রক্ত সঞ্চালন কিছুটা কমে। তার ফলে শরীরে অক্সিজেন প্রবাহের মাত্রা কমে। তাতে ব্যথা বাড়ে।
· এই সময়ে শরীর শুকিয়ে যায়, ডিহাইড্রেশন হয়। তার ফলে পেশির নমনীয়তা কমে। তাতেও ব্যথার মাত্রা বাড়ে।
· শীতকালে গায়ে রোদ কম পড়ে। ফলে শরীরে ভিটামিন ডি-এর ঘাটতি হয়। এই ঘাটতিও ব্যথার অন্যতম কারণ।
কী করে এই ব্যথা কমাবেন?
চিকিৎসকের পরামর্শে ওষুধ খেতে হবে। তবে কয়েকটি সাধারণ পদ্ধতি মনে রাখলেই এই ব্যথা কিছুটা নিয়ন্ত্রণ করা যায়।
· গরমজামা: ভালো করে গরমজামা পরুন। শরীরে তাপমাত্রা যেন খুব কমে না যায়। তাহলে ব্যথা নিয়ন্ত্রণে থাকবে।
· শরীরচর্চা করুন: নিয়মিত শরীরচর্চা পেশির নমনীয়তা বাড়িয়ে দেয়। ফলে ব্যথার আশঙ্কা কমে।
· ওজন নিয়ন্ত্রণ: শীতে শরীরচর্চার ইচ্ছা কমে। তার সঙ্গে বাড়ে অতিরিক্ত ক্যালোরি-যুক্ত খাবার খাওয়ার ইচ্ছা। ফলে ওজন বাড়ে। তাতে ব্যথাও বাড়ে। চেষ্টা করুন ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে।
· পর্যাপ্ত জল খান: পেশি বা গাঁটের ব্যথার বড় কারণ শরীর শুকিয়ে যাওয়া। বেশি করে জল খান এই সময়ে। দিনে কমপক্ষে তিন থেকে চার লিটার। তাতেও ব্যথা কমবে।
· ভিটামিন ডি: দরকার হলে চিকিৎসকের পরামর্শে ভিটামিন ডি সাপ্লিমেন্ট খেতে পারেন। তাছাড়া সামুদ্রিক মাছ খেলেও এই ভিটামিনের ঘাটতি কমবে।
· তাপ দিন: গাঁটে গাঁটে প্রচণ্ড ব্যথা হচ্ছে? ‘হট ওয়াটার ব্যাগ’ ব্যবহার করতে পারেন এই ব্যথা কমাতে। তবে এটি ব্যবহার করা আপনার জন্য ঠিক কি না, চিকিৎসকের থেকে জেনে নিতে হবে আগেই।

পিঠে ব্যথা
পিঠের ব্যথায় কাবু হয়ে পরলে পেন কিলার আর জেল স্প্রে লাগানো যায়। কিন্তু অনেক ক্ষেত্রে কাজ হয়ও না। ফলে চিকিৎসকের কাছে যেতেই হয়। ওষুধের পাশাপাশি প্রেসক্রিপশনে কিছু ব্যায়ামেরও কথা বলেন ডাক্তারবাবু। দিন সাতেক পরে দেখা যায়, সত্যি সত্যি ব্যথা উধাও!
এ রকম কমবেশি পিঠের ব্যথায় কে না ভুগেছেন! ভুল ভঙ্গিমায় চেয়ারে বসে বসেই বিপদ ডেকে আনেন অনেকেই। এই ব্যথা স্কুলের বাচ্চাদেরও হতে পারে। বাচাটির পিঠে ব্যথার কারণ খুঁজতে গিয়ে জানা গেল, ভারী বইয়ের ব্যাগ বয়েই এই দশা। তাও মাত্র ১৩ বছর বয়সেই।
চিকিৎসক আশিস মিত্র বলছেন, পিঠে ব্যথার কোনও বয়স নেই। সাধারণত তিরিশের পরে পিঠে ব্যথার প্রবণতা বাড়ে। তবে আট থেকে আশি— কেউই বিপদসীমার বাইরে নন।
আসলে মেরুদণ্ডকে ঘিরে পেশি, স্নায়ু, তরুণাস্থির জটিল বিন্যাস আমাদের পিঠ জুড়ে। মোটামুটি ভাবে দেখলে, ঘাড়ের পিছনে, পিঠের উপরের অংশে কিংবা নীচের দিকে— ব্যথা হতে পারে এই তিন জায়গার যে কোনও একটিতে।
পিঠে ব্যথা হয় কেন?
চিকিৎসকেরা বলছেন, কারণ অনেক। মেরুদণ্ডের জোরেই আমরা দু’পায়ে সোজা হয়ে চলি। হাড়, স্নায়ু, তরুণাস্থি দিয়ে তৈরি এই মেরুদণ্ড। এর যে কোনও একটিতে চোট লাগলে, টিউমার হলে, জন্মগত ত্রুটি বা যক্ষ্মার মতো কোনও রোগ দেখা দিলে, এমনকী শরীরে ভিটামিন বা মিনারেলের অভাব হলেও ব্যথা শুরু হতে পারে।
তবে অন্য অনেক কারণেও পিঠে ব্যথা হয়। রোগীর এক্স রে, এমআরআই করে বহু ক্ষেত্রে দেখা গিয়েছে, সমস্যাটা মেরুদণ্ডের নয়। শরীরের অন্য কোনও অংশের। হয়তো অগ্ন্যাশয়, লিভার বা কোলনে সমস্যা, বুকে টিউমার— সে সব ক্ষেত্রেও পিঠে ব্যথার উপসর্গ দেখা দিতে পারে। একে বলে ‘রেফার্ড পেন’। চল্লিশোর্ধ মহিলাদের ক্ষেত্রে মেনোপজের আগে বা পরে এ ধরনের ব্যথা হতে পারে।
শুধু রোগব্যাধি নয়, আমাদের দৈনন্দিন অভ্যেসের মধ্যেও লুকিয়ে রয়েছে পিঠে ব্যথার হাজারো কারণ। বিশেষ করে ব্যস্ত জীবনে অভ্যস্ত শহুরে মানুষদের মধ্যেই এর প্রকোপ বেশি। অতিরিক্ত ওজন, এক নাগাড়ে কম্পিউটারে কাজ, ঘণ্টার পর ঘণ্টা না থেমে গাড়ি চালানো, ভুল ভঙ্গিমায় বসা, কুঁজো হয়ে হাঁটা— এমন নানা কারণে সাময়িক ভাবে পিঠে ব্যথা শুরু হতে পারে। পেশিতে অতিরিক্ত চাপ পড়লেই এই ব্যথা বাড়ে। চিকিৎসকদের মতে, লাইফস্টাইলে একটু অদল বদল এনে সেগুলিকে অনায়াসে নিয়ন্ত্রণ করা যায়।
অস্থিরোগ বিশেষজ্ঞরা বলেন, ব্যথা বাগে আনতে রোজ কিছুক্ষণ হাঁটুন। দৌড়ান। সাঁতার কাটুন। নিয়মিত ব্যায়াম করুন। যোগাসন বা প্রাণায়ামও খুব উপকারী। বসার সময় খেয়াল রাখুন, পিঠ যেন সোজা থাকে। সামনে ঝুঁকে বসবেন না। কম্পিউটারের পর্দার সঙ্গে চোখের দূরত্ব এমন রাখুন, যাতে ঘাড় নোয়াতে না হয়।
যাঁরা একটানা চেয়ারে বসে কাজ করেন, দেখে নেবেন চেয়ারের উচ্চতা যেন আপনার উচ্চতার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ হয়। পা যেন অবশ্যই মাটিতে ঠেকে।
চিকিৎসক জানাচ্ছেন, ‘‘সপ্তাহ তিনেক পরেও ব্যথা না কমলে ফেলে রাখবেন না। অবশ্যই চিকিৎসকের কাছে যান। প্রয়োজনে ফিজিওথেরাপি করাতে হতে পারে। ব্যথা বাড়লে সেঁক দিয়ে দেখতে পারেন। আরাম হবে।’’
তাঁর পরামর্শ, ব্যথা কমাতে জেল স্প্রে বা সেঁক চললেও চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া মালিশ করবেন না। ফল উল্টো হতে পারে। ধূমপানের কারণেও অনেক সময় পিঠে ব্যথা হয়। যাঁরা একটানা চেয়ারে বসে কাজ করেন তাঁরা তো বটেই, যে সব কাজে শরীরে ঝাঁকুনি বেশি হয়, যেমন কল-কারখানার শ্রমিকের কাজ, দূরপাল্লার গাড়ি চালানো— সে সব ক্ষেত্রেও পিঠে ব্যথার ভয় বেশি।
নার্ভের ব্যথা
আগেই বলেছি ব্যথা অনেক কারণে হয়। তবে সব ব্যথার বহিঃপ্রকাশ হয় নার্ভের ওপর চাপ পড়া। যেমন- মেরুদণ্ডের হাড় ক্ষয় বা বেড়ে গেলে মেরুদণ্ডের মধ্যে একটা ইসব্যালান্ড দেখা দেয়। তারপর প্রতিদিনের কাজের অবস্থানগত কাজের ভুল বা ফন্টের দরুন ইমব্যালান্ড আরও বাড়তে থাকে। একসময় পার্শ্ববর্তী নার্ভের ওপর চাপ পড়ে। ফলে রোগী ব্যথা অনুভব করে এবং ব্যথা এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় সরে যেতে পারে। যেমন ঘাড়ের ব্যথা হাতে আবার কোমরের ব্যথা পায়। তার মানে মনে রাখতে হবে হাতে বা পায়ে যেখানেই হোক ব্যথাটা কোমর ও ঘাড় থেকেও হতে পারে। এই সমস্ত নার্ভের ব্যথা সবসময় এক থাকে না। কারও কারও হাঁটলে ব্যথা বাড়ে কারও আবার শুয়ে থাকলে। তবে বেশির ভাগ রোগী বলে বিশ্রামে ভালো লাগে কিন্তু কাজের সময়- ব্যথা বাড়ে, অনেকের বেলায় এর উল্টোটা হতে পারে। বর্তমানে কোমর বা ঘাড়ের ব্যথায় একটা বড় কারণ হচ্ছে ডিস্ক প্রলাপসেয় সমস্যা, এই সমস্যার ডিস্ক থেকে বের হয়ে নার্ভ বা রগের উপর চাপ দেয় ফলে রোগী ব্যথা, ঝিনঝিন, ভারি, ভারি অবশ-অবশ, জ্বালাপোড়া বা শক্তি, কম অনুভব করে। যেসব ডায়াবেটিস রোগী তাদের ডায়াবেটিকস নিয়ন্ত্রণে না রাখে তাদের হাত পায়ের নার্ভগুলোর আস্তে আস্তে কার্যক্ষমতা কমতে থাকে। ফলে তাদের গা অবশ বা ঝিনঝিন করে। এবং তা দিন দিন বাড়তে থাকে। এই সমস্ত সমস্যার মূল কারণ নার্ভের রক্ত চলাচল কম হওয়া।

ক্যানসারের ব্যথা
সাম্প্রতিক সময়ে সারা বিশ্বেই ক্যানসার অসংক্রামক রোগগুলোর মধ্যে অন্যতম। এর পরিধিও ব্যাপক আকার ধারণ করেছে। ক্রমবর্ধমান ক্যানসার রোগী পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রের জন্য তৈরি করছে নানামুখী চাপ ও সংকট। ক্যানসার শরীরের এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় ছড়িয়ে পড়ে এবং বিভিন্ন উপসর্গ তৈরি করে। ক্যানসারের ব্যথা (ক্যানসার পেইন) একটি মারাত্মক ও যন্ত্রনাদায়ক উপসর্গ। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই ব্যথা উপশমের লক্ষ্যে চিকিৎসা দেওয়া হয়ে থাকে। ওয়ার্ল্ড হসপিস অ্যান্ড প্যালিয়েটিভ কেয়ার ডে পালিত হয় অক্টোবরের দ্বিতীয় শনিবার। সে হিসাবে এবার ১০ অক্টোবর এ দিবস পালন করা হয়। এবারের প্রতিপাদ্য—মাই কেয়ার, মাই কমফোর্ট (আমার যত্ন, আমার আরাম)।
প্যালিয়েটিভ কেয়ারের মূল লক্ষ্য ক্যানসারের ব্যথায়ন চিকিৎসা প্রদানের মাধ্যমে উপশম করা। প্রায় ৮০ শতাংশ উন্নয়নশীল দেশের লোকের হসপিস ও প্যালিয়েটিভ কেয়ারের প্রয়োজন জীবনের শেষ দিনগুলোর জন্য।
ব্যথার কারণগুলো নির্ণয় করে চিকিৎসা দিলে উপশম করা যায়।
যেমন—
· ক্যানসার নিজেই ব্যথার সৃষ্টি করে।
· ক্যানসারের সঙ্গে সম্পৃক্ত মাংসপেশির খিঁচুনি, হাত-পা ফুলে যাওয়া, লিম্ফোডিমা, কোষ্ঠকাঠিন্য, বেডসোর ইত্যাদি।
· শল্যচিকিৎসাত্তোর ক্ষতের কারণে।
· রেডিওথেরাপি ও কেমোথেরাপির পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায় মুখে ও খাদ্যনালিতে ঘা হওয়া।
· নার্ভ কমপ্রেশন, নার্ভ ইনজুরি, ক্যানসারের কারণে মাথার ভেতরের সেরিব্রোস্পাইনাল ফ্লুইডের চাপ বেড়ে গেলে ব্যথা হয়।
· হাড় ও জোড়া ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়া, ক্ষয় হওয়া ও আর্থ্রাইটিসের জন্য।
এ ছাড়া রোগীর মানসিক অবস্থার পরিবর্তনের কারণে ব্যথার তীব্রতা বেড়ে যায়। দুশ্চিন্তা, ভয়ভীতি, বিষণ্নতা, হতাশাও ব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। এসব দিক বিবেচনা করে ব্যথাকে নিরাময় করাই প্রধান লক্ষ্য হওয়া উচিত, যাতে রোগীরা ব্যথামুক্ত অবস্থায় স্বাচ্ছন্দ্যে বেঁচে থাকতে পারে।

ক্যানসারের ব্যথা নিরাময়ের জন্য করণীয়
· রোগীর সঙ্গে ভালো সম্পর্ক গড়ে তোলা।
· ব্যথার নির্দিষ্ট কারণ অনুযায়ী চিকিৎসা দেওয়া।
· মানসিক চিকিৎসা প্রদানের সঙ্গে ব্যথার কারণ বিশ্লেষণ করা।
· প্রথমে সাধারণ ব্যথার ওষুধ ব্যবহার করা।
· এর পরের ধাপে এনএসআইডি যোগ করা।
· সবশেষে প্রয়োজনে মরফিন ও প্যাথেড্রিন–জাতীয় ওষুধ দেওয়া।
· নির্দিষ্ট কারণের জন্য যথাযথ চিকিৎসা দেওয়া।
পেইন ক্লিনিক
পেইন বা ব্যাথা হল, একটি কষ্টকর শারীরিক ও মানসিক অনুভূতি যা শরীরের যেকোন অংশের টিস্যু বা কলা ক্ষতিগ্রস্থ হলে হয়। পেইন বা ব্যথা অনেকটা, কেটে যাওয়া অংশে আয়োডিন দেওয়া হলে, আঙ্গুল জ্বালা করলে বা পায়ের গোড়ালি তে আঘাত লাগার মতন একটা অনুভূতি।
ব্যাথার কারন জানা ও তার চিকিৎসা এক বিশেষ বিভাগ, পেইন ক্লিনিক। যখন মেডিসিনের চিকিৎসক বা সেই সেই রোগের বিশেষজ্ঞরা ব্যথা নিয়ন্ত্রনে না আনতে পারলে তখন এই ক্লিনিকের হেলফ নেওয়া হয়। এই বিভাগে, শরীরের বিভিন্ন অংশের অ্যাকিউট ও ক্রনিক পেইনের চিকিৎসা করা হয় ।
বেশীরভাগ পেইন নিজে থেকে ঠিক হয়ে যায় যদি, কষ্টদায়ক উদ্দীপনাগুলি কমানো যায় ও শরীরের ক্ষতিগ্রস্থ অংশ সেরে উঠে। কিন্তু কিছু সময় পেইন বা ব্যাথা দীর্ঘদিন থেকে যায় ও ব্যাথার সঠিক কারনও বোঝা যায় না ।
পেইন ক্লিনিকে সাধারণত চিকিৎসা করা হয়
· পিঠের ব্যাথা বা স্লিপ ডিস্ক
· ঘারের ব্যাথা বা স্পন্ডিলাইসিস
· সাইটিকা
· হাঁটুর ব্যাথা
· কারপাল টানেল সিনড্রোম
· ট্রাইজেমিনাল নিউরালজিয়া
· কাঁধের ব্যথা
· ক্যান্সার এর ব্যাথা ইত্যাদি।
তবে যেকোনও ব্যথার ক্ষেত্রে আপনার চিকিৎসকের আগে পরামর্শ করুন। তারপর সিদ্ধান্ত নিন।
জোড়ের ব্যথা (জয়েন্ট পেন)
শরীরের কাঠামো হাড়ের তৈরি। যাকে সহজ ভাষায় কঙ্কাল বলে। এই হাড় একে অন্যের সঙ্গে জুড়ে থাকে। যাতে গোটা শরীর ঠিকঠাক ভারসাম্য বজায় রেখে চলাচল করতে পারে। শরীরের ভার বইতে পারে। তাহলে বোঝাই যাচ্ছে হাড় আমাদের শরীরের জন্য কতটা গুরুত্বপূর্ণ। দুটি হাড় যেখানে জোড়া লেগে থাকে সেই জায়গাকে বলে অস্থিসন্ধি বা বোন জয়েন্ট। এই জোড়া জায়গা কোনওভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হলে বা আঘাত লাগলে ব্যথা হতে পারে। কিন্তু জোড়ের ব্যথার আরও নানা রকম কারণ রয়েছে। তবে সেগুলো জানার আগে জানা প্রয়োজন হাড় আসলে কী, যাতে কোনও রোগ থাবা বসাতেই না পারে।
হাড় আসলে কী
এটি শরীরের লিভিং টিস্যু। এতে আজীবন ভাঙাগড়া চলতে থাকে। মূলত ক্যালশিয়ম দিয়ে হাড় তৈরি, সঙ্গে থাকে কোলাজেন, এক ধরনের প্রোটিন। হাড়ের নমনীয়তা বজায় রাখে এই কোলাজেন। হাড় সুস্থ মানেই আপনার শরীর হাজারো সমস্যা থেকে দূরে! হাড় শরীরের অন্যতম কিছু উপাদানের উৎস। যেমন, লোহিত রক্ত কণিকা আর শ্বেত রক্ত কণিকা। সুস্থ থাকতে এগুলো কতটা প্রয়োজনীয় আলাদাভাবে বলার দরকার নেই। লোহিত রক্ত কণিকা শরীরের বিভিন্ন অংশে অক্সিজেন ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় উপাদান সরবরাহ করে। শ্বেত রক্ত কণিকার কাজ রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বজায় রাখা। ক্যালশিয়মের অভাবে বা অন্য কোনও কারণে হাড় কমজোরি হলে একাধিক অসুখ হতে পারে। এগুলোর মধ্যে জয়েন্ট পেন, অস্টিয়োপোরসিস, আর্থ্রাইটিস অন্যতম।
জন্মের পর
জন্মের পর শিশুর হাড় একটু করে মজবুত হয়, বাড়তে থাকে। সেইজন্য এই সময় তার পর্যাপ্ত ক্যালশিয়ম একান্ত প্রয়োজন। কিন্তু বাইরের খাবার একদম নয়। অন্যান্য সব উপাদানের মতো মায়ের দুধ থেকে বাচ্চা প্রয়োজনীয় ক্যালশিয়ম পায়। এটা ঠিক মায়ের হাড় থেকে অনেকটা ক্যালশিয়ম দুধের সঙ্গে মিশে বাচ্চার শরীরে চলে যায়। ফলে মায়ের হাড়ে এই উপাদানের ঘাটতি হয়। সেইজন্য এইসময় মায়েদের ক্যালশিয়ম সমৃদ্ধ খাবার বেশি খাওয়া দরকার। মনে রাখবেন, বাচ্চা দুধ ছাড়ার ছ’ মাসের মধ্যে এই ঘাটতি পূরণ হয়ে যায়। তাই ভয় পাবেন না, চিন্তা করবেন না। কিন্তু ঠিক কতটা অতিরিক্ত ক্যালশিয়ম খাওয়া দরকার? ১৯ বছর বা তার থেকে বেশি বয়সের মহিলাদের (বাচ্চা বুকের দু্ধ খেলে) দিনে ক্যালশিয়মের প্রয়োজন ১০০০ মিলিগ্রাম। যদিও উচ্চতা, ওজন এবং বিভিন্ন শারীরিক অবস্থার উপর নির্ভর করে প্রত্যেকের ক্যালশিয়মের প্রয়োজন আলাদা হয়। বিশেষ করে প্রসবের পর, যখন বাচ্চা বুকের দুধ খাচ্ছে। সেজন্য অভিজ্ঞ নিউট্রিশনিস্টের পরামর্শ নেওয়া ভাল।
কচি বাচ্চার হাত পা নিয়ে বেশি টানাটানি না করলেও একটু বড় হলে আস্তে ধীরে ব্যায়াম করিয়ে দিন। এতে হাড়ের সংযোগস্থল ফ্লেক্সিবল হয়, সেগুলো সহজে বাড়তে পারে। আমাদের দেশে মনে করা হয় তেল মালিশ হাড় শক্ত করে। কিন্তু ডাক্তারি শাস্ত্রে এর কোনও প্রমাণ নেই। কিছু জায়গায় বলা হয়েছে মালিশ রক্ত চলাচল, পরিপাক ক্রিয়া, ত্বকের পক্ষে উপকারী। কিন্তু হাড়ের স্বাস্থ্য আর মালিশের তেমন কোনও সম্পর্ক নেই। শুধু মাথায় রাখতে হবে শিশু যেন মায়ের থেকে ক্যালশিয়মের পাশাপাশি পর্যাপ্ত ভিটামিন ডি পায়। কারণ, এই ভিটামিনটি ছাড়া শরীর ক্যালশিয়ম শোষন করতে পারে না।

মেয়েদের নিয়মকানুন—
ছোটবেলা থেকেই পর্যাপ্ত পরিমাণে ক্যালশিয়ম সমৃদ্ধ খাবার খেতে হবে।
এক্সারসাইজ করতে হবে।
ওজন বাড়তে দেওয়া চলবে না।
ভিটামিন ডির পরিমাণ যেন ঠিকঠাক থাকে।
বয়স ৩০ পেরিয়ে গেলে ক্যাফেন জাতীয় খাবার ও পানীয় কমিয়ে দেওয়াই ভাল।
সেইসঙ্গে নুনও যতটা সম্ভব কম খেতে হবে।
পারিবারিক ইতিহাসে হাড় বা ব্যথার সমস্যা থাকলে একটু বেশি সচেতন থাকা জরুরি।
বয়স ৪০ মানেই শরীরে এমনিতেই নানা রকম সমস্যা। সেইজন্য সুস্থ লাইফস্টাইল ও কয়েকটা নিয়ম মেনে চলতেই হবে। নিয়মিত ডাক্তারের চেকআপ করাতে একদম ভুলবেন না।
দিনে অন্তত ৩০ মিনিট এক্সারসাইজ করতেই হবে। হাঁটুতে কোনও সমস্যা না থাকলে এবং হাঁটাচলা করতে অসুবিধা না হলে মর্নিং বা ইভনিং ওয়াক খুব ভাল এক্সারসাইজ।
এই বয়সে ডায়াবিটিস, হাইপারটেনশন, ডিপ্রেশন, হার্ট, থাইরয়েড বিভিন্ন রকম সমস্যা দেখা দেয়। এগুলোর সঙ্গে ব্যথা নানারকম ভাবে জড়িয়ে রয়েছে। সেইজন্য এগুলোর চিকিৎসা সবার আগে প্রয়োজন।
বয়স বেড়ে যাওয়ার সঙ্গে হাড় ভাঙা অর্থাৎ ফ্রাকচারের সম্ভাবনা বেড়ে যায়। তাই খুব সাবধানে চলাফেরা করতে হবে। তাছাড়া এই বয়সে ভিটামিন ডি-এর ঘাটতি দেখা দিতে পারে। সচেতন থাকুন।
৫০ বছর মানেই মেনোপজের সময় এগিয়ে আসা। এই পর্যায়ে মহিলাদের শরীরের নানা রকম অসুবিধা দেখা দেয়। যেগুলো প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে হাড়ের সমস্যা বাড়ায়, শরীরে ব্যথার উপদ্রব সৃষ্টি করে। এই অবস্থায় ডাক্তারের পরামর্শ নিন। রোগ সারলেই উপসর্গ সারবে। চাইলে ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে এইচআরটি (হরমোন রিপ্লেসমেন্ট থেরাপি) করাতে পারেন।
আরেকটু বয়স বাড়লে মাঝমধ্যে বোন ডেনসিটি চেক করান। কারণ, বয়স বাড়লে হাড় পাতলা হয়ে যায়। ঘনত্ব কমে যাওয়ার ফলে সহজেই ভেঙে যায়, যন্ত্রণা বাড়ে। আগে থেকে সেটি জানা থাকলে প্রয়োজনীয় ক্যালশিয়ম ও অন্যান্য সাহায্য নিয়ে এই সমস্যা আটকানো যায়।
কচি বয়সে
প্রাপ্ত বয়স্ক হওয়ার আগে পর্যন্ত আমাদের হাড়ে বিভিন্ন পরিবর্তন চলতে থাকে। বিশেষ করে বয়ঃসন্ধিকালে। এই পরিবর্তন কিছু বিষয়ের উপর নির্ভর করে। যেমন, আশেপাশের পরিবেশ, খাওয়াদাওয়ার নিয়ম, হরমোন এবং জিন। সব ঠিক থাকলে হাড়ের বৃদ্ধি ঠিকমতো হয়। প্রাপ্ত বয়স্ক হলে হাড়ের ওজন ও ঘনত্ব (ডেনসিটি) ঠিক থাকে। সুস্থ থাকার জন্য এটি অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। সেইজন্য উঠতি বয়সে হাড়ের স্বাস্থ্যের উপর নজর দেওয়া খুব দরকারী। এই সময়েও ক্যালশিয়ম মূল মন্ত্র। সেইজন্য খেয়াল রাখুন বাচ্চার রোজকার ডায়েটে যেন পর্যাপ্ত পরিমাণে ক্যালশিয়ম সমৃদ্ধ খাবার থাকে। সেইসঙ্গে ভিটামিন ডি। পারিবারিক মেডিক্যাল হিস্ট্রিতে বাত বা হাড়ের কোনও সমস্যা থাকলে একটু বেশি সচেতন থাকুন। ভিটামিন ডি-এর পাশাপাশি ভিটামিন কে খুব গুরুত্বপূর্ণ। এই দুই ভিটামিন একত্রে হাড়কে সুস্থ রাখে, ভিটামিন কে হাড়ের প্রয়োজনীয় প্রোটিন তৈরি করতে সাহায্য করে।
হাঁটুর ব্যথা
হাঁটু গোটা শরীরের ভার বহন করে। সেইজন্য এর চাপ বেশি, ক্ষতি হওয়ার ভয়ও। হাঁটু অকেজো মানে আপনিও ঠিকঠাক কাজ করতে অক্ষম। কারণ, স্বাভাবিক হাঁটাচলা করতে সব চাইতে বেশি সাহায্য করে শরীরের এই অংশটি। তবে তিরিশ বছরের পর কম বেশি অনেকেই হাঁটুর ব্যথায় ভোগেন। কিছু কিছু সমস্যা থাকলে এই বয়সের আগেও হাঁটু ভোগাতে পারে। সেই জন্য সময় থাকতে সাবধান হওয়া প্রয়োজন।
হাঁটুর গঠন
হাঁটু তৈরি চারটি হাড় দিয়ে। ফিমার, টিবিয়া, ফিবুলা আর প্যাটেলা। এই হাড়গুলিকে ঘিরে থাকে নানারকম মাংসপেশি, লিগামেন্ট, ক্যাপসুল আর সাইনুভিয়াল মেমব্রেন। এই মেমব্রেন থেকে বেরিয়ে আসা তরল হাঁটুর জোড় সাবলীল রাখে, ক্ষয় রোধ করে। হাঁটুর ওপরের দিকে ফিমার বোন এবং নীচে শিন বোন। এর মাঝখানে থাকে কার্টিলেজ। দু’টি হাড়ের মধ্যে ঘষা লাগা আটকায় এই কার্টিলেজ। কার্টিলেজ ঠিক না থাকলে বেশি হাঁটাচলায় এতে চাপ পড়ে। তখন হাঁটুতে ব্যথা হয়।
তবে এই ধরনের কোনও সমস্যা নেই অথচ হাঁটুতে ভীষণ ব্যথা করছে, এর কারণ কিন্তু বাত। বিশেষ করে পঞ্চাশ বছরের বেশি বয়সে। নানারকম কারণে বাতের এই সমস্যা হতে পারে। যেমন, অষ্টিও আর্থ্রাইটিস, রিউমাটাইড আর্থ্রাইটিস, হাঁটুতে জন্মগত কোনও ত্রুটি, জেনেটিস সমস্যা ইত্যাদি। বয়সের সঙ্গে অনেক সময় হাড়ের ঘনত্ব কমে যায়। সেই কারণেও হাঁটুতে ব্যথা হতে পারে। কাজের প্রয়োজনে যাদের বেশি হাঁটাচলা করতে হয় বা দিনভর হাঁটু মুড়ে বসে থাকতে হয় তাদের হাঁটু ব্যথার সমস্যা বেশি হয়।
প্রায় প্রতিদিন হাঁটুতে তীব্র ব্যথা, ফুলে যাওয়া, হাঁটতে গেলে কটকট শব্দ, উঠতে বসতে অসুবিধা হলে বুঝবেন বাতের সমস্যা শুরু হয়েছে। হাঁটুতে কোনও রকম সমস্যা হলে দেরি না করে ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া জরুরি। প্রয়োজন মতো টেস্ট আর রক্ত পরীক্ষা বলে দেবে আসলে আপনার হাঁটুর ভিতরে কী চলছে।
লাগামছাড়া ওজন হাঁটুর ব্যথার আরেকটি প্রধান কারণ। শরীরের ওজন যত বাড়বে হাঁটুর ওপর তত বেশি চাপ তৈরি হবে, ফল ব্যথা। সেইজন্য সবার আগে প্রয়োজন ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা। যদি আপনার ধাত মোটার দিকে হয় বা পারিবারিক সদস্যদের শারীরিক গঠন সেদিকে ইশারা করে তাহলে সময় থাকতে সচেতন হয়ে যান। সব চাইতে ভাল ডাক্তার বা অভিজ্ঞ ডায়াটিশিয়ানের পরামর্শ নিয়ে উপযুক্ত ক্যালরি চার্ট বানিয়ে সেই মতো খাওয়াদাওয়া করা। সেইসঙ্গে হালকা কিছু এক্সসারসাইজ।
কয়েকটি বিশেষ অসুখ হাঁটুর ব্যথা বাড়িয়ে দেয়। সেগুলো কী এবং হলে কী করবেন। আসুন দেখে নেওয়া যাক—
