মল্লরাজ নির্মিত জোড় বাংলা মন্দির: এক ঐতিহ্যবাহী স্থাপত্যরত্ন!
- রোজকার অনন্যা
- 3 hours ago
- 2 min read
পশ্চিমবঙ্গের বাঁকুড়া জেলার বিষ্ণুপুর শহর ঐতিহাসিক এবং স্থাপত্যিক ঐতিহ্যের জন্য পরিচিত। এখানেই অবস্থিত এক অনন্য স্থাপত্য নিদর্শন জোড় বাংলা মন্দির। ১৭শ শতকের মাঝামাঝি সময়ে মল্ল রাজাদের শাসনকালে নির্মিত এই মন্দির আজও বাংলার প্রাচীন শিল্প-সংস্কৃতির জীবন্ত সাক্ষ্য হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।

নির্মাণকাল: আনুমানিক ১৬৫৫ খ্রিস্টাব্দ
নির্মাতা: মল্লরাজ রঘুনাথ সিং
এই মন্দিরটিকে "জোড় বাংলা" বলা হয় কারণ এটি দুটি বাংলার ঘর বা "দুইচালা" কুটির আকারে গঠিত। একটি মূল মন্দির এবং অন্যটি তার সম্মুখভাগে একটি প্রাঙ্গণ ঘর, যা একত্রে এক শরীরের মতো দেখতে। মন্দিরটি সম্পূর্ণভাবে টেরাকোটা (পোড়ামাটির) শিল্পে সাজানো। এখানে রামায়ণ, মহাভারত, কৃষ্ণলীলা এবং অন্যান্য পৌরাণিক দৃশ্য সুচারুভাবে খোদাই করা হয়েছে মৃৎশিল্পের মাধ্যমে।
স্থাপত্যের বৈশিষ্ট্য:
দুইচালা কুটির গঠন: বাংলার গ্রামীণ কুটির ঘরের আদলে গঠিত দুটি ভবন একত্রিত করে তৈরি এই মন্দির।
নিম্ন ভিত্তি ও উঁচু ছাদ: মাটির উপর মজবুত ভিত্তির ওপর নির্মিত এবং ছাদগুলি ঢালু এটি বাংলার ঐতিহ্যবাহী ছাউনি ঘরের অনুপ্রেরণা।
টেরাকোটা অলংকরণ: পোড়ামাটির চিত্রে ভগবান বিষ্ণু, রাম, কৃষ্ণ, মহিষাসুরমর্দিনী ইত্যাদি মূর্তি খোদাই করা হয়েছে।
অভ্যন্তরে গর্ভগৃহ: গর্ভগৃহে কোনো বিগ্রহ নেই, তবে এটি এক সময় সক্রিয় পূজাস্থল ছিল বলে মনে করা হয়।
ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক গুরুত্ব:
জোড় বাংলা মন্দির শুধু স্থাপত্যের নিদর্শন নয়, এটি মল্ল রাজাদের ধর্মীয় আস্থা এবং শিল্পের প্রতি নিষ্ঠার প্রতিফলন। এই মন্দিরে এক সময় নিয়মিত পূজা ও উৎসব অনুষ্ঠিত হতো। বর্তমানে এটি সংরক্ষিত ঐতিহাসিক স্থাপনা হলেও স্থানীয় জনগণের কাছে এক গুরুত্বপূর্ণ সাংস্কৃতিক কেন্দ্র।
কলকাতা থেকে যাত্রা:
1. রেলপথে:
শিয়ালদহ স্টেশন বা হাওড়া স্টেশন থেকে বিষ্ণুপুরগামী ট্রেন পাওয়া যায় (যেমন, Rupashi Bangla Express, Aranyak Express)। বিষ্ণুপুর স্টেশনে নেমে অটো বা টোটোয় করে সহজেই মন্দির চত্বরে পৌঁছানো যায়।
2. সড়কপথে:
কলকাতা থেকে NH-2 বা NH-60 ধরে প্রায় ২০০ কিমি পথ। প্রাইভেট গাড়ি বা সরকারি বাসে ৫–৬ ঘণ্টার যাত্রা।
Esplanade বা Karunamoyee থেকে বিষ্ণুপুরগামী সরকারি বাস পাওয়া যায়।
3. স্থানীয় যাতায়াত:
বিষ্ণুপুর শহরের মন্দিরপাড়া এলাকায় অবস্থিত মন্দিরটি টোটো বা সাইকেল ভ্যানে করেই শহরের বিভিন্ন মন্দির ঘুরে দেখা যায়।
পর্যটকদের জন্য টিপস
জোড় বাংলা মন্দিরের পাশাপাশি রসমন্চ, মদনমোহন মন্দির, শ্যামরায় মন্দির, সিংহদ্বার সবকটিই কাছাকাছি।
ভ্রমণের সেরা সময়: অক্টোবর থেকে ফেব্রুয়ারি
বিষ্ণুপুরের বিখ্যাত বালুচরি শাড়ি ও টেরাকোটা শিল্প কেনাকাটা করা যায়।
জোড় বাংলা মন্দির শুধু একটি স্থাপত্য নয়, এটি বাংলার ঐতিহ্যের ধারক ও বাহক। মল্ল রাজাদের শিল্পচর্চা, ধর্মানুরাগ এবং লোকশৈলীর নিদর্শন হিসেবে এই মন্দিরের গুরুত্ব অসামান্য। সময়ের সাথে সাথে এই প্রাচীন নিদর্শন যেন আমাদের নতুন প্রজন্মকেও বাংলার গৌরবময় অতীতের কথা মনে করিয়ে দেয়। ঐতিহ্যকে জানুন, রক্ষা করুন জোড় বাংলা মন্দির হোক বাংলার গর্ব।
Comments