top of page

উৎসবের অন্নভোজ, চৈত্র সেল ও এক গ্রীষ্মকালীন গল্প, বালিকার বড়ো হয়ে ওঠা, চৈত্র নবরাত্রি এবং বাসন্তী দুর্গাপূজা..

উৎসবের অন্নভোজ

ভারতের প্রায় সর্বত্রই প্রধান খাবার বলতে ভাত। তবে ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে তার ধরনটুকু আলাদা। স্বয়ং মা অন্নপূর্ণা যে দেশে ভক্তের পাতে খাবার তুলে দেন, সে দেশের মানুষের ঈশ্বর কে অদেয় আর কিছুই যে নেই। আমরা নিজেরা যা খেতে ভালোবাসি, যারা আমাদের খুব প্রিয় তাদের সে জিনিস টা খাওয়াতে ইচ্ছে হয়।

হিন্দু ধর্মে ঈশ্বর যেন আমাদের পরিবারের ই সদস্য। এ দেশে মা দুর্গা ঘরের মেয়ে তিনি আসেন চার সন্তান কে নিয়ে বাপের বাড়ি বেড়াতে। তাই নিয়ে কত উৎসব, কত অনুষ্ঠান। শ্রীকৃষ্ণের বাল্যরূপ গোপাল ও যেন বাড়ির সন্তান। তার জন্য কতই না আয়োজন প্রতি ঘরে ঘরে। দেশের বিভিন্ন প্রান্তের মন্দির গুলোতেই এ আয়োজন চলে গোটা বছর ধরে। এমনই ৬টি অন্ন-ভোগের সংকলন নিয়ে এবারের রবিবারের অনন্যার শুরু। রান্না গুলো করে ফেলতেই পারেন যে কোনো উৎসব অনুষ্ঠানে। রেসিপি রইলো।

পুরী, জগন্নাথ মন্দিরের ভোগ একবর্ণী

পুরী জগন্নাথ মন্দিরে "একবর্ণী ভোগ" (Ekbarni Bhog) একটি বিশেষ প্রসাদ, যা সম্পূর্ণভাবে ভাত (অন্ন) দিয়ে তৈরি করা হয়। এই ভোগ সেই দিনগুলিতে প্রস্তুত করা হয় যখন ভগবান জগন্নাথের জন্য কেবলমাত্র এক ধরনের খাদ্য নিবেদন করা হয়, বিশেষ করে একাদশীর দিন বা কিছু নির্দিষ্ট শুভ অনুষ্ঠানে।

কী কী লাগবে

গোবিন্দভোগ চাল ১ কাপ,

মুগ ডাল ও ছোলার ডাল ১/৪ কাপ,

Shalimar's Chef Spices হলুদ গুঁড়ো ১/ চা-চামচ,

নারকেল ১/২ কাপ,

পটল, মুলো, ঝিঙে ১ কাপ,

আদা ছেঁচে নেওয়া ১ চা-চামচ,

গোটা জিরে ১/২ চা-চামচ,

হিং ১/৪ চা-চামচ,

ঘি ৩ টেবলচামচ,

কমলালেবুর রস ১/২ কাপ,

সৈন্ধব লবণ স্বাদমতো।

কীভাবে বানাবেন

হাঁড়িতে গোবিন্দভোগ চাল, মুগ ডাল, ছোলার ডাল, কুরনো নারকেল, সব্জি আর মশলা দিয়ে দিন। এবার ৩ কাপ জল দিন। হাঁড়ির মুখটা ঢেকে দিন। চাল আর ডাল পুরোপুরি রান্না হওয়া অবধি ঢিমে আঁচে রান্না করুন। এরপর ঘি আর কমলালেবুর রস ছড়িয়ে ভালভাবে নেড়েচেড়ে নিন। আরও দু মিনিট রান্না করে নামিয়ে নিন। গরম গরম পরিবেশন করুন।


বৃন্দাবন রাধাবল্লভ জিউর মন্দিরে পঞ্চমেওয়া খিচুড়ি

"পঞ্চমেওয়া" শব্দের অর্থ পাঁচ ধরনের প্রধান উপাদান, যা এই খিচুড়িতে ব্যবহৃত হয়। চাল, মুগ ডাল বা অন্য কোনো ডাল, ঘি, শুকনো ফল (যেমন কাজু, কিসমিস, বাদাম ইত্যাদি), মিষ্টি বা গুঁড়। এটি মন্দিরের অন্যতম পবিত্র প্রসাদ, যা বিশুদ্ধ উপাদানে এবং ঐতিহ্যবাহী পদ্ধতিতে প্রস্তুত করা হয়। বিশেষ করে কার্তিক মাস, একাদশী, রাধাষ্টমী ও অন্যান্য উৎসবের সময় পঞ্চমেওয়া খিচুড়ি তৈরি করে ভগবানকে নিবেদন করা হয়।

কী কী লাগবে

বাসমতি চাল ১ কাপ,

মুগ ডাল ১/৪ কাপ,

ছোলার ডাল ১/৪ কাপ,

কাজুবাদাম,

আখরোট,

পেস্তা,

আমন্ড,

সাদা তিল,

কিশমিশ,

পাইন নাট,

চারমগজ (মেশানো) ১+১/২ কাপ,

ঘি ১/২ কাপ,

Shalimar's Chef Spices হলুদ গুঁড়ো ১/২ চা-চামচ,

জায়ফল ও জয়িত্রী ১/৪ চা-চামচ,

এলাচ পাউডার ১/৪ চা-চামচ,

ছোট এলাচ 8 (গোটা) ৪টে,

দারচিনি স্টিক ১ ইঞ্চি,

গোটা লবঙ্গ ৪-৫টা,

গোটা জিরে ১/৪ চা-চামচ,

গোটা গোলমরিচ ৪-৫টা,

নুন স্বাদমতো।

কীভাবে বানাবেন

প্রথমে চাল আর ডাল ধুয়ে নিয়ে জল ফেলে দিন। একটা তলাভারী পাত্রে ১/৪ কাপ ঘি দিন। গরম হলে আঁচ কমিয়ে চাল আর ডাল দিয়ে দিন। ৪ থেকে ৫ মিনিট ভাজুন। হলুদ দিয়ে নেড়েচেড়ে নিন। ৩ কাপ জল আর নুন দিয়ে পাত্রের মুখ ঢেকে দিন। পুরোপুরি রান্না হওয়া অবধি ঢিমে আঁচে রান্না করুন। মাঝেমধ্যে একটু ঘেঁটে নিন যাতে পুড়ে না যায়। এবার অন্য কড়াইতে বাকি ঘি দিয়ে তাতে গোটা মশলাগুলো দিয়ে দিন। কিছু ক্ষণ নেড়েচেড়ে নিয়ে বাদামের মিশ্রণটি দিয়ে দিন। শেষে দিন সাদা তিল আর পাইন নাট। বাদামি হয়ে আসা অবধি ভাজতে থাকুন। এবার খিচুড়িতে ভাজা বাদাম, কিশমিশ আর ঘি দিন। উপরে হলুদ গুঁড়ো আর এলাচ পাউডার ছড়িয়ে ৫ মিনিট রান্না করলেই তৈরি পাঁচমেওয়া খিচুড়ি। সঙ্গে দিতে পারেন আচার, পাঁপড়, তিলের নাড়ু বা ক্ষীর।


কাশ্মীরি পন্ডিতদের তৈরী তাহার

কাশ্মীরি পন্ডিতদের তৈরি "তাহার" (Taher) একটি ঐতিহ্যবাহী কাশ্মীরি ভাতের পদ, যা সাধারণত শুভ অনুষ্ঠান, উৎসব এবং ধর্মীয় উপবাসের সময় প্রস্তুত করা হয়। এটি হল হলুদ রঙের সুগন্ধি ভাত, যা সাধারণত সর্ষের তেল, ঘি, জিরা এবং কখনও কখনও শুকনো ফল দিয়ে রান্না করা হয়। তাহার সাধারণত "মুয়েজ গাদ" (Moong Dal) বা কোনো নিরামিষ তরকারির সঙ্গে পরিবেশিত হয়, যা এর স্বাদ ও পুষ্টিগুণকে আরও বৃদ্ধি করে। এটি কাশ্মীরি পন্ডিতদের ঐতিহ্যের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ এবং আধ্যাত্মিকতার সঙ্গে জড়িত একটি সহজ কিন্তু পবিত্র খাদ্য।

কী কী লাগবে

বাসমতি চাল ২ কাপ,

Shalimar's Chef Spices হলুদ গুঁড়ো ১ চা-চামচ,

নুন ১ চা-চামচ,

Shalimar's সর্ষের তেল ১ টেবলচামচ,

গোটা জিরে ১/৪ চা-চামচ,

ছোট এলাচ ৪টে,

দারচিনি ১ ইঞ্চি,

লবঙ্গ ৪-৫টা,

জল ২


কীভাবে বানাবেন

৪ কাপ জল নিন। তাতে বাসমতি চাল ১০ মিনিট ভিজিয়ে রাখুন। একটা তলা-ভারী পাত্রে চাল আর ২১/২ কাপ জল দিন। সঙ্গে দিন হলুদ আর নুন। ভালভাবে বেঁটে নিন। এবার পাত্রের ঢাকনা শক্ত করে বন্ধ করুন। চাল সেদ্ধ হয়ে আসা অবধি মাঝারি আঁচে রান্না করতে থাকুন। এবার ঢাকনা খুলে কিছু ক্ষণ নাড়াচাড়া করুন। দেখবেন, চালের লম্বা দানাগুলো যাতে ভেঙে না যায়। এরপর অন্য কড়াইতে সর্ষের তেল দিন। তেল গরম হলে তাতে গোটা জিরে, ছোট এলাচ, দারচিনি আর লবঙ্গ দিয়ে দিন। ওতে সেদ্ধ করা চাল দিয়ে অল্প নেড়েচেড়ে নিন। আলু বা পনিরের সাইড ডিশের সঙ্গে পরিবেশন করুন কাশ্মীরি তাহার।


রাজস্থানের ছড়ভূজা মন্দিরে কেশরি ভাত

রাজস্থানের ছড়ভূজা মন্দিরে যে কেশরি ভাত নিবেদন করা হয়, তা একটি বিশেষ ভোগ, যা ভগবানকে নিবেদন করার পর ভক্তদের মধ্যে প্রসাদ হিসেবে বিতরণ করা হয়। এটি একটি সুগন্ধি ও মিষ্টি ভাতের পদ, যা সাধারণত উৎসব, পূজা এবং বিশেষ অনুষ্ঠানে তৈরি করা হয়। "কেশরি" শব্দের অর্থ গেরুয়া বা হলুদ বর্ণ, যা সাধারণত কেশর (জাফরান) বা হলুদ ব্যবহার করে এই ভাতে আনা হয়। এটি শুভতার প্রতীক এবং ভগবানের প্রতি ভক্তির প্রকাশ। বিশেষ করে রামনবমী, জন্মাষ্টমী, নবরাত্রি ও একাদশী-তে এই কেশরি ভাত তৈরি করা হয়।

কী কী লাগবে

কেশর ১ গ্রাম,

বাসমতি চাল (ভিজিয়ে রাখা) ১ কাপ,

ঘি ১ টেবলচামচ,

কিশমিশ ২ টেবলচামচ,

কাজুবাদাম ৭-৮টা,

সুইটনার ৮ টেবলচামচ,

এলাচ পাউডার ১ চা-চামচ,

সুগার ক্রিস্টাল ২৫ গ্রাম।



কীভাবে বানাবেন

১ টেবলচামচ গরম জল নিন। তাতে কিছুটা কেশর গুলে নিন। এবার কড়াইতে ঘি নিন। গরম হলে কাজু আর কিশমিশ দিয়ে নেড়েচেড়ে নিন। একটা পাত্রে সেগুলো রেখে দিয়ে ওই ঘি-তেই বাসমতি চাল দিয়ে নাড়াচাড়া করুন। এরপর কড়াইতে দেড় কাপ ফুটন্ত জল দিন। সঙ্গে দিন কেশর-গোলা জল। চাল আধসেদ্ধ হলে সুইটনার দিন। জল শুকিয়ে চাল পুরোপুরি সেদ্ধ না হওয়া অবধি রান্না করুন। এলাচ পাউডার ছড়িয়ে ভালভাবে মিশিয়ে নিন। উপরে কাজুবাদাম, কিশমিশ আর সুগার ক্রিস্টাল ছড়িয়ে গানিশিং করলেই তৈরি কেশরি ভাত।


ওড়িশাতে মকর সংক্রান্তিতে মকর চাউল

ওড়িশায় মকর সংক্রান্তি উপলক্ষে যে বিশেষ ভোগ প্রস্তুত করা হয়, তার মধ্যে মকর চাউল অন্যতম। এটি একটি ঐতিহ্যবাহী প্রসাদ, যা ভগবানকে নিবেদন করার পাশাপাশি ভক্তদের মধ্যে বিতরণ করা হয়। এটি মকর সংক্রান্তি উৎসবের একটি প্রধান খাবার, যা ওড়িশার প্রতিটি ঘরে প্রস্তুত করা হয়। বিশেষ করে ভগবান সুর্যের পূজা করার সময় এই চাউল নিবেদন করা হয়। শীতকালে তিল, গুড়, নারকেল এবং দুধের সংমিশ্রণ শরীরকে উষ্ণ রাখে এবং পুষ্টি জোগায়। এটি ঐতিহ্য, ভক্তি ও পুষ্টির মিশ্রণ, যা প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে পালন করা হয়ে আসছে।


কী কী লাগবে

গোবিন্দভোগ চাল ১ কাপ,

দুধ ১+১/২ কাপ,

নারকেল ৩/৪ কাপ,

পাকা কলা ৩টে,

আপেল (টুকরো করা) ১/৪ কাপ,

আখ (টুকরো করা) ১/৩ কাপ,

চিনি ৩/৪ কাপ,

ছানা ১ কাপ,

বেদানা ২ টেবলচামচ,

এলাচ পাউডার ১ চা-চামচ,

Shalimar's Chef Spices গোলমরিচ গুঁড়ো ১ চা-চামচ,

আদা (ছেঁচে নেওয়া) ১ চা-চামচ।


কীভাবে বানাবেন

চাল ভিজিয়ে রাখুন। ২ ঘন্টা রেখে শুকিয়ে নিন। এবার ওতে কুরনো নারকেল আর অল্প দুধ দিয়ে বেটে নিন। আপেল কুচি, ছানা, চিনি, বেদানা, গোলমরিচ গুঁড়ো, আদা দিয়ে ভালভাবে মিশিয়ে ১০ মিনিট রাখুন। পরিবেশনের আগে পাকা কলা যোগ করলে স্বাদ বাড়বে আরও।


তামিলনাড়ুর মুনিয়ান্ডি স্বামী মন্দিরে ভিলাস মাটন বিরিয়ানি

তামিলনাড়ুর মুনিয়ান্ডি স্বামী মন্দিরে যে ভিলাস মাটন বিরিয়ানি প্রস্তুত করা হয়, তা বিশেষভাবে বিখ্যাত এবং এটি দক্ষিণ ভারতের ঐতিহ্যবাহী রান্নার অন্যতম নিদর্শন। এটি শুধুমাত্র ভক্তদের জন্য প্রসাদ নয়, বরং স্থানীয়দের মধ্যেও অত্যন্ত জনপ্রিয়। মুনিয়ান্ডি স্বামীকে দক্ষিণ ভারতের অনেক জায়গায় এক শক্তিশালী গ্রামদেবতা হিসেবে পূজা করা হয়, এবং এই বিরিয়ানি তাঁর প্রতি নিবেদিত এক ঐতিহ্যবাহী ভোগ। ভিলাস মাটন বিরিয়ানি শুধুমাত্র একটি খাবার নয়, এটি তামিলনাড়ুর লোকসংস্কৃতি, ভক্তি এবং স্বাদযুক্ত ঐতিহ্যের প্রতিফলন। এটি মুনিয়ান্ডি স্বামী মন্দিরে শুধুমাত্র একটি ভোগ নয়, বরং ভক্তি ও ভোজনরসিকদের জন্য এক অনন্য অভিজ্ঞতা।

কী কী লাগবে

মাটন ৫০০ গ্রাম,

জিরাগা সাম্বা চাল ৫০০ গ্রাম,

পেঁয়াজ (জুলিয়েন করে কাটা) ১টা,

টমেটো (ছোট, কুচনো) ১টা,

রসুন ৩ কোয়া,

লবঙ্গ ১-২টো,

আদা ২ টুকরো,

পুদিনাপাতা ১/২ গোছা,

ধনেপাতা ১/৪ গোছা,

কাঁচালঙ্কা ৪টে,

Shalimar's Chef Spices লঙ্কা গুঁড়ো ১+১/২ চা-চামচ,

Shalimar's Chef Spices ধনে গুঁড়ো ১ চা-চামচ,

Shalimar's sunflower অয়েল ১/৪ কাপ,

নারকেলের দুধ ১ কাপ।


ম্যারিনেট করার জন্য:

দই ১/৪ কাপ,

লেবুর রস ১/২ টেবলচামচ,

কাঁচা পেঁপে (পেস্ট করা) ১ টুকরো,

Shalimar's Chef Spices হলুদ গুঁড়ো ১/২ চা-চামচ।

ড্রাই রোস্ট করার জন্য:

তেজপাতা ১টা,

দারচিনি ১ ইঞ্চি,

লবঙ্গ ৪ টে,

মৌরি ১ চা চামচ,

গোলমরিচ ১/৪ চা-চামচ,

জিরে ১/২ চা-চামচ।


কীভাবে বানাবেন

প্রথমে মাটন ভাল করে ধুয়ে নিন। তার সঙ্গে দই, লেবুর রস, কাঁচা পেঁপের পেস্ট, হলুদ এবং সামান্য নুন মিশিয়ে নিন। এবার কিছু ক্ষণ ম্যারিনেট করে রাখুন। কমপক্ষে ৪ ঘণ্টা বা সম্ভব হলে সারারাত ওইভাবে রেখে দিন। অন্যদিকে চাল ধুয়ে নিন। চালের মধ্যে যাতে জল ঢুকতে পারে, সে জন্য ওই অবস্থায় কমপক্ষে ২০ মিনিট রেখে দিন। এরপর জল ঝরিয়ে নিয়ে চালগুলোকে একটা প্লেটে ভাল করে ছড়িয়ে দিন। এর ফলে চাল তাড়াতাড়ি শুকিয়ে যাবে। এবার কড়াইতে তেল না দিয়ে শুকনো খোলায় তেজপাতা, দারচিনি, লবঙ্গ, মৌরি, গোলমরিচ আর জিরে কিছু। নেড়েচেড়ে ভেজে নিন। হয়ে গেলে নামিয়ে নিন। ঘরে রেখে মিশ্রণটি স্বাভাবিক তাপমাত্রায় নিয়ে আসুন। এবার শুকনো মশলার এই মিশ্রণটি শিলনোড়ায় গুঁড়ো করে নিন। তারপর মশলাটিকে এয়ারটাইট জারে রেখে দিন। এবার একটা বড় কড়াইতে/৪ কাপ তেল দিন। তেল গরম হলে তাতে জুলিয়েন করা পেঁয়াজ দিয়ে দিন। যত ক্ষণ না তাতে বাদামি রং আসে, তত ক্ষণ অবধি ভাজুন। একটা চামচ দিয়ে ভাজা পেঁয়াজের অর্ধেকটা অন্য একটা প্লেটে সরিয়ে রাখুন। এরপর গ্রাইন্ডারে কিছুটা পুদিনা, ধনে, রসুন, আদা এবং চারটে কাঁচালঙ্কার সঙ্গে অল্প জল দিয়ে ভালভাবে পেস্ট করে নিন। এবার কড়াইয়ে রাখা বাকি পেঁয়াজ ভাজায় তৈরি করা পেস্টটা দিয়ে দিন। গুঁড়ো করে নেওয়া মশলায় বাকি থাকা কাঁচালঙ্কা আর টমেটো কুচি দিয়ে দিন। টুকরোগুলো নরম হয়ে আসা অবধি নাড়তে থাকুন। এবার এতে ম্যারিনেট করা মাটন দিয়ে দিন। সঙ্গে দিন দই, লেবুর রস, কাঁচা পেঁপের পেস্ট আর হলুদ। মাঝারি আঁচে ভাজতে থাকুন, যতক্ষণ না মাংস হালকা সোনালি বাদামি রঙের হয়। এরপর ২ কাপ জল ও নারকেল দুধ দিয়ে দিন। স্বাদমতো নুন দিন। কড়াইয়ের মুখটা ঢাকনা দিয়ে শক্ত করে ঢেকে দিন। মাঝারি থেকে ঢিমে আঁচে রান্না করুন যত ক্ষণ না ভাত ৭০% সেদ্ধ হয়ে আসে। এবার এতে আগে থেকে সরিয়ে রাখা ভাজা পেঁয়াজ দিয়ে দিন। সঙ্গে দিন পুদিনাপাতা। ঢাকনাটা আবার আটকে দিন। এরপর একটা ভারী তাওয়া আঁচে বসান। গরম হলে তার উপরে ভাত সহ কড়াইটা বসিয়ে দিন। কম থেকে মাঝারি আঁচে এক ঘণ্টা রান্না করুন। আঁচ বন্ধ করে আরও ১০ মিনিট রাখুন। গরম গরম পরিবেশন করুন।



 

চৈত্র সেল ও এক গ্রীষ্মকালীন গল্প

এলিজা


নতুন জামা, পুরনো স্মৃতি আর আধুনিক কমফোর্ট এই গরমে নববর্ষের ফ্যাশনে ট্র্যাডিশনের রঙিন ছোঁয়া। চৈত্র সেল, মলমলের শাড়ি, প্যাস্টেল পাঞ্জাবি থেকে হালকা কো-অর্ড, এবারের নতুন বছরের পোশাকে গুরুত্ব আরামের...

চৈত্র মানেই আগে একটা আলাদা গন্ধ আসত দোকানপাটে, এখন তার জায়গায় এসেছে নোটিফিকেশনের 'চিমটি'—"Flat 50% OFF!" কিন্তু উৎসবের প্রাণটাই তো আমাদের, যতই সময় বদলাক, সাজ-পোশাক আর একটু খুশি নিয়ে বছরটা শুরু করে দিই, কেমন? নতুন বছর তো প্রায় চলে এসেইছে। আর নতুন বছর মানেই ভুরিভোজ, ঘরবাড়ি সাজানো, আর অবশ্যই নতুন জামাকাপড়! একটা সময় ছিল, যখন প্রায় প্রতিটা বাড়িতে নববর্ষ মানেই পরিবারের সবাই স্নান করে, নতুন পোশাক পরে, একসাথে পুজো দিতে যেত। এখন আর সেই রেওয়াজটা ততটা দেখা যায় না। আধুনিক জীবনের ব্যস্ততা, অফিস-কাছারি, কাজের চাপে সব সময় ঠিক বেরিয়ে পড়া যায় না।

আরেকটা ব্যাপার ছিল চৈত্র মাসের সেল। বিভিন্ন দোকানে দারুণ ছাড় চলত, আর মা-কাকিমারা সারা বছর সেই সময়টার জন্য অপেক্ষা করতেন। বাড়ির ছোট থেকে বড়, শাড়ি, ধুতি, পাঞ্জাবি, ঘরের জামা-কাপড় সব কিছুই কেনা হতো চৈত্র সেল থেকেই। এমনকি পর্দা, বিছানার চাদরও! প্রায় প্রতিটা বাঙালি বাড়িতেই এটা ছিল একটা রিচুয়াল।

গ্লোবালাইজেশন অনেক কিছু বদলে দিলেও, চৈত্র সেল একেবারে হারিয়ে যায়নি। এখন তার নাম পাল্টে হয়েছে ‘স্টক ক্লিয়ারেন্স সেল’। বড় বড় ব্র্যান্ডগুলো সারা বছরই এই ধরণের সেল দেয়। যদিও এখন আর সেটা চৈত্র মাসের সঙ্গে ততটা সম্পর্কিত নয়, কিন্তু কেনাকাটা তো হয়ই অনলাইন বা অফলাইন, কোথাও না কোথাও কিছু না কিছু কিনেই ফেলা যায়।

আর হ্যাঁ, নিউ অ্যারাইভালস থেকেও ট্রেন্ডি পোশাক কিনে নেওয়া যায়। তবে, গ্রীষ্মের তীব্র গরমে শুধু স্টাইল না, কমফোর্টও খুব গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। তাই, এই সময়ে আরামদায়ক জামাকাপড় কেনা দরকার। নববর্ষে ফ্যাশনেবল দেখাতেই হবে, কিন্তু মাথায় রাখতে হবে আরামের কথা। ফাস্ট ফ্যাশন এড়িয়ে চলাই ভালো। এতে যেমন শরীর ভালো থাকবে, তেমনই পরিবেশের দিক থেকেও এটা এক ধাপ এগিয়ে।


পোশাক যেন একটু ঢিলে ঢালা হয়, এতে অতিরিক্ত গরমে দমবন্ধ লাগবে না। হালকা রঙ বা প্যাস্টেল শেড বেছে নিলে মনটাও থাকবে ফুরফুরে। মেটেরিয়ালের দিক দিয়ে—লিনেন, কটন লিনেন, অর্গানিক কটন আর মলমল এই সময়ের জন্য একদম পারফেক্ট। ওমেনস ফ্যাশনে এখন অনেক মডার্ন কাটস এসেছে যেগুলো গায়ে লেগে থাকে না, তাই গরমে আরামদায়ক। স্ট্রেইট প্যান্টস, কো-অর্ড সেট এই সব এখন খুব ইন ট্রেন্ড। ফ্যাশনে অনেক এক্সপেরিমেন্টও চলছে।

আর শাড়ির কথা বললে, হ্যান্ডলুম কটন শাড়িতে এখন ‘নন-স্টার্চ’ বা ‘স্টার্চ ছাড়া’ অপশন পাওয়া যাচ্ছে। পাশাপাশি, লিনেন আর মলমল শাড়িও বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে হালকা, আরামদায়ক এবং দেখতে সুন্দর। পুরুষদের ক্ষেত্রেও এখন কটন, লিনেন, কটন লিনেন তো ছিলই তাতে এবার যোগ হয়েছে মলমল।


যদিও এই মলমল শাড়িতে ব্যবহৃত মলমলের থেকে একটু মোটা হয়, তবুও সেটা আরামে কোনো কমতি রাখে না। এইসব মলমলের পাঞ্জাবি বা শার্টে এখন দারুণ প্রিন্ট আর এমব্রয়ডারি পাওয়া যায়। নিজের পার্সোনালিটির সঙ্গে মানানসই কিছু একটা বেছে নিতে পারো। তার সঙ্গে ম্যাচিং করে কটন লিনেন বা লিনেন ট্রাউজার পরে নিলে তো ফাটাফাটি লুক।

এই ধরনের পোশাক শুধু পয়লা বৈশাখ নয়, সারা গরমকাল জুড়ে আরাম দেয়। আর এখন তো এমনও ডিজাইন পাওয়া যায়, যেগুলো সারা বছরই বিভিন্ন অনুষ্ঠানে পরা যায় স্টাইলিশ এবং কামফোর্টেবল, দুই-ই। সুতরাং, সেল থেকে কেনা হোক বা ব্র্যান্ড নিউ কালেকশন পোশাক যেন গরমের উপযোগী, আরামে ভরপুর এবং স্টাইলিশ হয়, সেটা মাথায় রাখাই সবচেয়ে জরুরি।

 

বালিকার বড়ো হয়ে ওঠা

তপন বন্দ্যোপাধ্যায়

জীবনের কিছু ঘটনা অলক্ষ্যে কোথাও তৈরি হতে থাকে যার মধ্যে মানুষের কোনও হাত থাকে না। যা কোনও দিন ঘটার কথা ছিল না সেরকমই এক অভিনব ঘটনার মুখোমুখি হঠাৎ এক আন্তরিক সকালে। কাছাকছি একটা বড়ো মাঠে আমার প্রতিদিনের মর্নিং ওয়াক। কিছুণ হাঁটাহাঁটির পর ঘরে ফেরা। ফেরার পথে একটা পার্ক আছে-ভিতরে সবুজের রমরমা। কত রকমের গাছ। কত রঙের ফুল। পার্কেও প্রতিদিন ভোরে হাঁটতে থাকেন কিছু সুবেশ নারীপুরুষ, তাঁরা বড়ো মাঠে হাঁটতে না-গিয়ে পছন্দ করেন ছোটো পার্কের স্বল্পপরিসরে হাঁটা।


মর্নিং ওয়াক সেরে ফেরার পথে- পার্কের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় কখনও চোখ রাখি ভিতরের দৃশ্যে। কেউ একা হনফন করে হাঁটছেন, কেউ-কেউ জোড় বেঁধে গল্পে মত্ত হয়ে। কারও বা হাঁটার কোটা শেষ, পার্কের বেঞ্চিতে বসে গল্পগাছায় ব্যস্ত। কখনও দু'দণ্ড দাঁড়িয়ে দেখি পার্কের বাগানের নিত্যনতুন সেজে ওঠা।


এরকমই এক অলৌকিক সকালে মাঠ থেকে অন্যমনস্কভাবে ফিরছি পার্কের পাশ দিয়ে, হঠাৎ পথ অবরোধ করে দাঁড়ায় এক ছ-সাত বছরের বালিকা, কুণ্ঠা-কুণ্ঠা গলায় কিন্তু স্পষ্ট উচ্চারণে বলল, তুমি কি লেখক?



আমি বিপর্যস্ত এই অভাবিত আত্রমণে। কখনও পথ-চলতি মানুষ এরকমই কাছে এসে দাঁড়িয়ে জিজ্ঞাসা করেন, 'আপনি কি অমুক?' কিন্তু এই বালিকা তো নিতান্তই দুগ্ধপোষ্য! দাঁড়াতেই হয় অতএব, বলি, তুই কী করে জানলি?


-তা হলে ঠিকই ধরেছি। বইতে তোমার ছবি দেখেছি। আমার এম্মা লাইব্রেরি থেকে মাঝেমাঝে তোমার বই নিয়ে আসে। বইয়ের পিছনদিকে লেখকের ছবি থাকে। তোমাকে এখান দিয়ে রোজ যেতে দেখি, আমার মনে হচ্ছিল ছবিটা তোমারই।


বইয়ের মধ্যে আমার ছবি থাকে সে-তথ্য ঠিক, কিন্তু সেই ছবি দেখে আমাকে চিনে রেখেছে এতটুকু মেয়ে! তা হলে তো তার সঙ্গে একটু আলাপ জমাতেই হয়, জিজ্ঞাসা করি, কী নাম তোর? -বাড়িতে সবাই আমাকে সোনু বলে ডকে। আমার একটা ভালো নাম আছে, অভিদত্তা। - বেশ অন্যরকম নাম তো! অভিদত্তা।


-আসলে কী জানো, আমার বাবার নাম অভীক, মায়ের নাম সোমদত্তা। দুটো নমের অর্ধেক অর্ধেক নিয়ে অভিদত্তা।


-চমৎকার। আমি তার পিঠে হাত রেখে বলি, বেশ, তুই আজ থেকে আমার একটা ছোট্ট বন্ধু। সোনুর সঙ্গে ভাব পাতিয়ে, তার সঙ্গে করমর্দন করে ফিরে আসি ঘরে। মনের আয়নায় বারবার ভেসে ওঠে হাসি-হাসি ছোট্ট মুখখানা। তার কথাগুলো বাজতে থাকে টুংটাং শব্দের মতো।


তার পরদিন আবার ফিরছি, পার্কের পাশ দিয়ে আসার সময় দেখি, কালকের মতোই সোনু হাসি- হাসি মুখে দাঁড়িয়ে, গুড মর্নিং।


-ইয়েস, গুড মর্নিং, বলে জিজ্ঞাসা করি, তুই কি রোজই আসিস?


-আসিই তো রোজ। এম্মার সঙ্গে আসি তো।


সোনুর এম্মা কে তা জানা নেই, নিশ্চয় সোনুর অভিভাবক, তিনি না হয় শরীর সুস্থ রাখতে রোজ পার্কে হাঁটতে আসেন, কিন্তু এই ছোট্ট বালিকা রোজ মর্নিং ওয়াক করতে আসে-এ বড়ো বিস্ময়ের কথা। হাসি-হাসি মুখে বলল, এম্মাকে তোমার কথা বলেছি। এম্মা বলছিল তোর সঙ্গে তা হলে লেখকবাবুর বেশ বন্ধুত্ব হয়ে গেল!


অতএব এক অদ্ভুত কাকতালের মধ্যে কয়েকদিনের মধ্যে গাঢ় হয়ে ওঠে বন্ধুত্বটা। প্রতিদিন সকালে ঘরে ফেরার পথে দেখি পার্কের গেটে একই রকম হাসকুটি মুখে দাঁড়িয়ে রয়েছে সোনু, আমাকে দেখেই একটা লাফ দিয়ে উঠে ছুটে আসে, দুই হাতে আমার হাতদুটো ধরে একনাগাড়ে বলে যাবে গতকাল সারাদিনে তার কী কী অভিজ্ঞতা হয়েছে, কে কী বলেছে, কোথাও গিয়ে থাকলে তার ধারাবিবরণী।


কোনও দিন পার্কের সামনে গিয়ে দেখি সোনু অপোয় নেই, পার্কে তার নানা বয়সি বন্ধু আছে, তাদের কারও না কারও হাত ধরে পার্কের চারপাশে ঘুরছে বড়ো বড়ো পা ফেলে। হঠাৎ দূর থেকে আমাকে দেখে সেই বন্ধুর হাত ছেড়ে একছুট্টে হাঁপাতে হাঁপাতে এসে হাজির, বলে, তুমি আজ পাঁচ মিনিট আগে এসে পড়েছ।


কব্জিতে চোখ বুলিয়ে দেখি, সত্যিই তাই, বলি, কী করে বুঝলি?





-এখানে এক চল্লিশ মিনিট দাদু আছেন। তিনি পার্ক ছেড়ে চলে গেলে বুঝি তোমার আসার সময় হয়ে গেছে।


-চল্লিশ মিনিট দাদু?


-হ্যাঁ, উনি ঠিক ঘড়ি ধরে চল্লিশ মিনিট হাটেন। আজ তিনি এখনও বেরোননি। কী আশ্চর্য সোনুর সময়জ্ঞান। আমি ঠিক কখন আসব তা মুখস্থ হয়ে গেছে ওর।


তা যেদিনই একটু আগে আসি, সোনু কারও না কারও হাতে ধরে ঘুরপাক খাচ্ছে পার্কের ভিতরের বাঁধানো রাস্তা ধরে। হাঁটে, কিন্তু খেয়াল রাখে আমি পার্কের মুখে এসে গেছি কি না! আমাকে দেখতে পেলেই অমনি লাফ দিয়ে ছুটে এসে আমার হাত ধরে তার আগডুম বাগডুম গল্প। তার গল্পের বৈচিত্র্যও অনেক। নানা ধরনের বই পড়ার অভ্যাস সোনুর। কখনও ভূতের গল্প, কখনও ফেয়ারি টেল, কখনও কমিক্সের গল্প। সেই আজগুবি, অলৌকিক অথচ মজার পৃথিবীতে তার অনায়াস আনাগোনা। গল্প বলার ফুরসতে তার অভিব্যত্তিতে ছায়া পড় সেই অলীক পৃথিবীর। আমিও তার রহস্যময় পৃথিবীতে পা রাখে শামিল হই তার ভাবনার সঙ্গে। সোনুর এম্মার সঙ্গে আলাপও হয়ে গেল একদিন। তিনি সোনুর ঠাকমা। টিভি সিরিয়ালের মায়া কাটিয়ে যিনি এখনও গল্পের বইয়ের পাতায় মগ্ন থাকেন নিয়ত। তাঁর হাঁটা শেষ হলে পার্কের একটি নির্দিষ্ট বেঞ্চিতে বসে থাকেন কিছুক্ষণ। তাঁকে দেখলেই আমি বুঝতে পারি সোনুও এসেছে।

সোনুর সঙ্গে প্রতিদিন এত গল্পগাছা দেখে একদিন সোনুর এম্মা বললেন, আপনারা দু'জনে যখন নিবিষ্ট হয়ে কথা বলেন, আমার মনে পড়ে যায় রবীন্দ্রনাথের কাবুলিওয়ালার গল্পটা। কাবুলিওয়ালা ঠিক এরকমভাবেই মিনির সঙ্গে গল্প করত রোজ। তাই নাকি! বিষয়টা আমার মাথায় আসেনি এতদিন। সোনুর সঙ্গে গল্প করাটা এমনই অভ্যাসে দাঁড়িয়েছে যে, একদিন সোনু কোনও কারণে পার্কে না এলে কীরকম শূন্য-শূন্য লাগে দিনটা। সোনুর এম্মা বললেন, আজ কিছুতেই ঘুম থেকে উঠতে চাইল না। বলল, 'ভীষণ ঘুম পাচ্ছে।' কাল রাতে





ঘুমোতে অনেকটা রাত হয়ে গিয়েছিল তো।


সোনু ঠিকই তো বলেছে। অতটুকু মেয়ে রোজ ঘুম ভেঙে এত পথ যে আসে সেটাই অবাক কাণ্ড! তার বয়সি ছেলেমেয়েরা কেউ আসতে চাইবে এরকম রোজ রোজ!


পরদিন পার্কে দেখা হতে কাঁচুমাচু মুখে সোনু বলে, কাল আসতে পারিনি। এত ঘুমিয়ে পড়েছিলাম


না!


তার অপরাধী-অপরাধী মুখে দেখে হেসে পিঠ চাপড়ে সান্ত্বনা দিই, বলি, ঘুম তো আর টিভির নব নয় যে, ইচ্ছেমতো খুলব বা বন্ধ করব। ঘুম কারও নিয়ন্ত্রণে থাকে না।


সোনুও হেসে উঠে বলল, ঠিক বলেছ।


তারপর যথারীতি তার সারাদিনের রোজনামচা।

ক'দিন পরে পার্কের সামনে এসে দেখি সোনু নেই। নিশ্চয়ই আজও ঘুমিয়ে পড়েছে। বিমর্ষ মুখে ফিরে আসছি, হঠাৎ কে যেন পিছন থেকে লাফিয়ে এসে আমার হাত ধরে ঝুলে পড়ে। দেখি সোনুর মুখে দুষ্টুমির হাসি। বলি, কী রে তুই কোথায় ছিলি?


সোনু হেসে গড়িয়ে পড়ে, বলল, তোমার ঠিক পিছনেই লুকিয়ে ছিলাম। দেখছিলাম তুমি আমাকে খুঁজে পাও কি না!


হেসে উঠে বলি, বাহ, বেশ দুষ্টু তো তুই!


এই লুকোচুরি খেলায় সোনু এতটাই মজা পেল যে, মাঝেমধ্যেই পার্কের এখানে ওখানে লুকিয়ে থাকে, আর আমাকে পার্কে ঢুকে এ-ঝোপে ও-ঝোপে ঘুরে ঘুরে খুঁজে বার করতে হয় তাকে। আমিও বেশ মজা পাই তার এই দুষ্টুমির খেলায়। কোনওদিন কামিনীগাছের ঝোপের আড়ালে, কোনওদিন পামগাছের আড়ালে, কোনওদিন-


তার মধ্যে হঠাৎ একদিন দেখি সোনুর এম্মা আসেননি। বেঞ্চিটা ফাঁকা। কিছুক্ষণ চোখ চালিয়ে




সোনুকে না-দেখে ফিরে আসি বাড়িতে। কিছুক্ষণ পরেই মোবাইলে ফোন। সুইচ অন করতেই ওদিকে নারীকণ্ঠ, আমি সোনুর এম্মা বলছি। আপনি আজ মর্নিং ওয়াকে যাননি?


-হ্যাঁ। গিয়েছিলাম তো।


-এই রে। আসার সময় আপনি সোনুর সঙ্গে দেখা না-করেই চলে এসেছেন! অবাক হয়ে বলি, সোনু কি আজ পার্কে ছিল? আমি তো চোখ চালিয়ে খুঁজলাম ওকে। কোথাও


দেখতে পাইনি তো! আপনাকেও দেখতি পাইনি। ভাবলাম আজ আপনারা আসেননি!


- কিন্তু কী মুশকিল হয়েছে জানেন? আমি একটু সময়ের জন্য পাশের আশ্রমে গিয়েছিলাম। সোনু আমার সঙ্গে যায়নি। দূরের একেটা বেঞ্চে একা বসেছিল পাছে আপনি ওকে না- পেয়ে চলে যান।


-সে কী! আমি তো আপনাদের দুজনের কাউকে দেখতে না-পেয়ে ভাবলাম আজ আসেননি। -সোনু আপনার জন্যই বসেছিল। আপনাকে ও দেখতে পেয়েছে দূর থেকে। ছুটে এসেওছিল গেট পর্যন্ত। আপনাকে অনেকবার ডেকেছে, কিন্তু আপনি শুনতে পাননি। আমি এসে দেখি বেঞ্চিতেবসে হাপুশ নয়ন কাঁদছে একা-একা।


-সে কী! আমি ব্যস্ত হয়ে পড়ি, নিশ্চয় গাড়ির আওয়াজে ওর কণ্ঠস্বর কানে পৌঁছোয়নি আমার!


-খুব অভিমান হয়েছে ওর। বাড়িতে এসেও কেঁদে ভাসাচ্ছে, কিছুতেই শান্ত করতে পারছি মা! বলছে আর কোনও দিন আপনার সঙ্গে কথা বলবে না!


আমার উত্তরোত্তর বিস্ময়, ব্যস্ত হয়ে বলি, ফোনটা ওকে দিন। আমি দেখি ওর রাগ ভাঙাতে পারি কিনা!

তার পরের দশ মিনিট চলল এক খুদে অভিমানিনীর সঙ্গে কথোপকথন। তখনও হাউমাউ করে কেঁদে চলেছে আর বলছে, 'তুমি আমাকে একটুও ভালোবাসো না। তোমার সঙ্গে আমার আড়ি আড়ি


আড়ি।' অমি তাকে ক্রমাগত বোঝাতে চাইছি কীভাবে ঘটল এই ভুল-বোঝাবুঝি। কিন্তু একজন তরুণী বা যুবতীকে যত সহজে বোঝানো যায়, একটি বালিকাকে বোঝানো তার চেয়ে ঢের ঢের দুরূহ।


অনেকক্ষণ পরে ফোনের মধ্যে মুখে হাসি ফোটাতে সক্ষম হলে বলল, কাল রবিবার। একটু বেশি সময় নিয়ে আসবে। দুদিনের গল্প একদিনে শুনতে হবে।


বললাম, নিশ্চয়ই। তুই আমাকে ফাইন করে দে।


পরের দিন একটি চকোলেট পকেটে নিয়ে গিয়ে তাকে খুশি করার চেষ্টা করি। কিন্তু ভবি কি অত সহজে ভোলে! বহু (ণ রাগ দেখানোর পর বলল, এম্মা আমাকে আশ্রমে নিয়ে যেতে চেয়েছিল, কিন্তু তুমি আমাকে না দেখতে পেলে দুঃখ পাবে বলে আমি একা বসেছিলাম তোমার জন্য। আর তুমি আমাকে-


আবার অভিমান ভরে এল তার গলায়।


-ঠিক আছে, এর পর থেকে তোকে না দেখতে পেলে আমি সারা পার্ক তন্নতন্ন করে খুঁজব। দরকার হরলে পাম গাছটা বেয়ে উপরে উঠে পাতার ঝোপের মধ্যে খুঁজব।


শেষ কথাটা শুনে ফিক করে হেসে ফেলল সোনু-বিষয়টির মধ্যে যে অসম্ভব মজা লুকিয়ে আছে তাই বুঝতে পেরে। ব্যস, অমনি আমাকে (মা করে দিল। তার পরদিন থেকে আর ভুল হয় না। হঠাৎ একদিন আমার পায়ে ঢিপ করে প্রণাম করে বলল, আজ আমার জন্মদিন।

তাই! সোনু আজ বেশ সুন্দর করে সেজে এসেছে। পরিপাটি করে চুল আঁচড়ে, জংলা ছাপা নতুন একটা লং স্কার্ট পরে। হাতে একটা ছোটো ব্যাগ।


হাতের ব্যাগ থেকে একটা প্যাকেট বার করে আমার হাতে দিয়ে বলল, রিটার্ন গিফট। -তা হলে তো আজ একটা সুন্দর দিন। বাড়িতে খুব খাওয়াদাওয়া হবে নিশ্চয়! কিন্তু গিফট-ই দিলাম না। তার আগেই রিটার্ন গিফট!


-জানো, কাল রাতে আমি আর মা মিলে অনেকগুলো প্যাকেট বানিয়েছি। পার্কে আমার তো অনেক বন্ধু।


সোনুর জন্য কী গিফট দেওয়া যায় ভাবতে ভাবতে বাড়ি আসি। বই পড়তে ভালোবাসে, বই দেওয়াটাই শ্রেষ্ঠ উপহার। পরের দিন বইয়ের সঙ্গে নিলাম একটা ডায়েরি আর পেন। বললাম, এই ডায়েরিটায় রোজ কিছু না কিছু লেখার চেষ্টা করবি।


সোনু খুব সিরিয়াস হয়ে বলল, আমি কি তোমার মতো লিখতে পারি?

-তুই লিখবি তোর মতো। যা মনে আসে। এই তো সেদিন বাবা-মায়ের সঙ্গে ডুয়ার্স ঘুরে এলি। সেই ভ্রমণটা লিখে ফেল। লিখে আমাকে দেখাবি।


কঠিন সমস্যায় পড়ল সোনু। দিন তিনেক পরে ডায়েরিটা নিয়ে পার্কে এল, বলল, লিখেছি।


-বাহ। গুড গার্ল। কই দেখি কী লিখেছিস।


সোনু কাঁচুমাচু মুখে বলল, আমি কিন্তু ইংরেজিতে লিখেছি। ইংরেজিতে লিখতেই আমার বেশি ভালো লাগে।


-ঠিক আছে, যা লিখতে ভালো লাগে, সেটা লেখাই ভালো। দেখি কী লিখেছিস?


ডায়েরি খুলে পড়ে দেখি, বেশ গুছিয়ে লিখেছে ডুয়ার্সের নানা অভিনব অভিজ্ঞতা। ময়ূরের সঙ্গে ভাব হওয়া, হাতির দলের উদ্দেশে টা টা করা, রাতে একটা ভয়ংকর আওয়াজ শোনা, সেটা বাঘের কি না কে জানে। তার মা একটা বড়ো মাপের স্কুলে ইংরেজির শিক্ষক। অতএব সোনুও যে ইংরেজিতেই বেশি স্বচ্ছন্দ হবে তাতে অবাক হওয়ার কী আছে! বললাম, যখনই সময় পাবি, কিছু না কিছু লিখবি। কিছুদিনের মধ্যেই সোনুর ডায়েরি ভরে ওঠে নানা ধরনের লেখায়। একবার বাবা-মায়ের সঙ্গে ঘুরে এল পুরী থেকে। আসার সময় আমার জন্য একটা উপহার। স্থানীয় কারিগরদের তৈরি হস্তশিল্প। বেশ খুশি-খুশি লাগল। ছোট্ট মেয়েটা বাইরে বেড়াতে গিয়ে আমার কথা মনে রেখেছে, মা-বাবাকে বলে কিনে এনেছে সুন্দর কারুকাজ।

বাড়িতে এনে টেবিলের উপর সাজিয়ে রাখলাম সোনুর দেওয়া উপহার।


সে বছর আমরাও ঘুরতে গেলাম কেরালায়। প্রচুর সমুদ্র, অজস্র ব্যাক-ওয়াটার, আর মশলাপাতির বাগান আর দোকান দেখে ফেরার পথে ভাবলাম সোনুর জন্য কিছু উপহার কিনতে হবে। কোভালাম- এর সাজানো শোরুমগুলি খুঁজে কী-কিনব কী-কিনব ভাবতে ভাবতে কিনে ফেললাম একটা সালঙ্কারা হাতি। র‍্যাকে রাখার মতো। তবু মনে খুঁতখুঁত, কী জানি পছন্দ হবে কি না সোনুর!


হাতিটি কিনে মোবাইলে জানিয়েও দিলাম, তোর জন্য একটা হাতি কিনেছি।


সোনু উচ্ছ্বসিত, তাই! কী মজা!


পরদিন তার এম্মার কাছ থেকে একটা প্রতিত্রিয়াও পেলাম, 'জানেন, আপনি হাতি আনছেন শুনে সোনু কাল সারা রাত ঘুমোয়নি।' বিস্মিত হয়ে বলি, 'সে কী, কেন?' এম্মার পরবর্তী উত্তর পেয়ে আমি স্তম্ভিত। বললেন, সোনুর এখন অনেক চিন্তা। প্রথমত, হাতিটাকে নিয়ে আপনি কীসে আসবেন! ট্রেনে, না প্লেনে! প্লেনে নিশ্চয় হাতিটাকে নেবে না, তাতে প্লেন ভেঙে পড়তে পারে। তা হলে নিশ্চয় ট্রেনে করে আনবেন। কিন্তু হাওড়া স্টেশন থেকে বেহালা পর্যন্ত কীভাবে নিয়ে আসবেন! কোনও বাসে তো ধরবেই না। তা হলে হেঁটে আসতে হবে। তারপর এ-বাড়িতে কোন ঘর হাতিটার জন্য বরাদ্দ করা হবে। সবচেয়ে বড়ো ঘরটা ছাড়তেই হবে হাতিটাকে। তার পরের প্রশ্ন, হাতি কী খায়! হাতি আস্ত আস্ত কলাগাছ খায় শুনে সোনুর আরও চিন্তা। বাজারে কি কলাগাছ কিনতে পাওয়া যায়! না পাওয়া গেলে কোথা থেকে রোজ কলাগাছ কিনে আনা হবে। ওর মা বলেছে, তা হলে বাড়ির পিছনে যে কিছুটা ফাঁকা জমি আছে সেখানে কয়েক ঝাড় কলাগাছ পুতে দেবে, তা হলে আর হাতির খাবার নিয়ে কোনও ভাবনা থাকবে না। বুঝলেন, সোনু যত প্রশ্ন করছে, ওর মা দুষ্টুমি করে আরও উসকে দিচ্ছে ওকে। ভোরে উঠে কী উত্তেজনা ওর। ওর মা বলছে, এখন ওর ভুল ভাঙিয়ে কাজ নেই।


আমি বেশ হতচকিত।


কলকাত ফিরে পরদিন পার্কের সামনে পৌঁছোতে ছুটে এল সোনু। আমার আশেপাশে তাকিয়ে দেখছে হাতিটা কোথায়! আমি পার্কের একটা বেঞ্চিতে বসে যখন হাতের ব্যাগ থেকে হাতিটা বার করলাম-সোনুর মুখভঙ্গি দেখার মতো। একবার হাতিটার দিকে তাকায়, একবার আমার মুখের দিকে। তার স্বপ্নভঙ্গ হওয়ার পর্যায়গুলি একেবারে সেলুলয়েডের পর্দায় তুলে রাখার মতো।


আস্তে আস্তে বাস্তবে পা রাখার মুহূর্তে সে হঠাৎ হাতিটাকে কোলে তুলে নিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে হেসে ফেলল ফিক করে। আমিও তখন হাসছি। সোনু হাসি-হাসি মুখ করে বলল, কী সুন্দর দেখতে হাতিটকে। আমার পড়ার টেবিলে রেখে দেব ওকে।


ততক্ষণে সোনু বুঝতে পেরেছে তার মায়ের দুষ্টুমির কথাও। বলল, বুঝলে, মা ক'দিন ধরে আমার সঙ্গে এত মজা করেছে, আমি সত্যিটা বুঝতেই পারিনি!


হাতির এপিসোডটা সোনুকে এক লাফে অনেকটাই বড়ো করে দিল। বুঝতে শিখল তার ভাবনার অবাস্তবতা। তবে তার গল্পের ঝুলি রোজই উপুড় করে ঢেলে দেয় আমার কাছে।

তার মধ্যে একদিন মন-খারাপ মুখে বলল, জানো, লেখকবাবু, নতুন ক্লাসে উঠে আমার স্কুলের রুটিন বদলে গেছে। এখন আটটার মধ্যে স্কুলে ঢুকতে হবে।


-তাই নাকি!


--হ্যাঁ। আর রোজ আসতে পারব না। শুধু রবিবার-রবিবার। বলি, তা হলে আর কী করা! সপ্তাহে একদিন দেখা হবে।


--হ্যাঁ। সেদিন কিন্তু হাতে বেশি সময় রাখবে। এক সপ্তাহে অনেক গল্প জমে উঠবে। সব গল্প তোমাকে না শোনালে স্বস্তি হয় না আমার। --ঠিক আছে। তাই হবে।


সোনুর সঙ্গে অতএব সপ্তাহে একদিন। সারা সপ্তাহ ধরে কী কী করেছে, কোথায় গিয়েছে তার পাই-টু-পাই বিবরণ আমাকে শুনিয়ে তবে সে নিশ্চিন্ত।

দিন গড়াতে থাকে। একটা করে নতুন ক্লাসে ওঠে, সোনুর পড়াশুনার চাপ বেড়ে যায়, খুব ব্যস্ততা তার। অনেক সময় এমন হচ্ছে, সপ্তাহের একটা দিন- সেই রবিবারেও আসতে পারে তা নয়। স্কুলের পড়াশুনোর পাশাপাশি চলছে তার ছবি আঁকার ক্লাস, নাচের ক্লাস, গানের ক্লাস, আরও কত কী! পার্কে না-আসতে পারলেও টেলিফোনে খবর নেয়, কেমন আছো তুমি? জানো মা-বাবার সঙ্গে ঘুরে এলাম ব্যাঙ্কক হয়ে পাটোয়া। কী যে সুন্দর জায়গা।


-তা হলে ডায়েরিতে লিখে রাখ সব। দেরি হলে ভুলে যাবি। পরে পড়ব।


আরও উঁচু ক্লাসে উঠতে থাকে সোনু, ব্যস্ততা বেড়ে যায় আরও। কত রবিবার পার হয়ে যায়, সোনু আসে না। হঠাৎ একদিন মনে হয় অনেকদিন হয়ে গেল সোনুর সঙ্গে দেখা হয় না, তার টেলিফোনও আসে না আর। একদিন পার্কের পাশ দিয়ে যেতে যেতে ভাবি কী জানি সোনু কতটা বড়ো হল! হয়তো অনেকদিন পরে সোনুর সঙ্গে হঠাৎ রাস্তায় দেখা হলে ভাবব, এই কি সেই সোনু! সোনুও আমাকে দেখে, কাবুলিয়ালা গল্পের সেই মিনির মতো লজ্জা পেয়ে যাবে হঠাৎ। ঘুরে দাঁড়িয়ে দৌড় দেবে।

 

চৈত্র নবরাত্রি ইতিহাস, তাৎপর্য এবং গুরুত্ব..

চৈত্র নবরাত্রি হলো হিন্দুদের একটি গুরুত্বপূর্ণ ধর্মীয় উত্সব, যা প্রতি বছর চৈত্র মাসে উদযাপিত হয়। এটি নবরাত্রি উৎসবের দুটি প্রধান রূপের একটি, অপরটি হল শারদীয় নবরাত্রি, যা আশ্বিন মাসে পড়ে। চৈত্র মাসের শুক্লপক্ষের প্রতিপদ থেকে নবমী পর্যন্ত এই উৎসব পালিত হয়, যা সাধারণত মার্চ-এপ্রিল মাসে পড়ে। এটি বসন্ত নবরাত্রি নামেও পরিচিত।

উৎসবের গুরুত্ব ও পূজা পদ্ধতি

দেবী দুর্গার নয়টি রূপ শৈলপুত্রী, ব্রহ্মচারিণী, চন্দ্রঘণ্টা, কুষ্মাণ্ডা, স্কন্দমাতা, কাত্যায়নী, কালরাত্রি, মহাগৌরী ও সিদ্ধিদাত্রী এই নয় দিন ধরে পূজিত হন।


উপবাস (উপোস) পালন করা হয়, এবং নির্দিষ্ট নিয়ম মেনে নিরামিষ খাবার গ্রহণ করা হয়।

কুমারী পূজা এবং দুর্গা সহস্রনাম পাঠ করা হয়।

নবম দিনে রাম নবমী উদযাপিত হয়, যা ভগবান রামের জন্মতিথি।


চৈত্র নবরাত্রির গুরুত্ব

এটি বসন্তের সূচনা নির্দেশ করে এবং প্রকৃতিতে নতুন পরিবর্তন আনে।

হিন্দু ধর্ম অনুসারে, এটি আধ্যাত্মিক শক্তি বৃদ্ধির সময়।

অনেক বিশ্বাস অনুযায়ী, এই সময়ে যোগ ও ধ্যান বিশেষভাবে ফলপ্রসূ হয়।


চৈত্র নবরাত্রির পুজোর কিছু নির্দিষ্ট নিয়ম ও বিধি রয়েছে, যা অনুসরণ করলে পূজা আরো শুভ ও ফলপ্রদ হয়। নীচে দৈনিক পূজার বিধি এবং বিশেষ নিয়মাবলী দেওয়া হলো:

চৈত্র নবরাত্রির পূজার নিয়ম


প্রথম দিন (ঘটস্থাপন ও দেবীর আমন্ত্রণ)

সকালবেলা স্নান করে শুদ্ধ বস্ত্র পরিধান করুন।

ঘট স্থাপন (কলস বসানো) একটি তামার বা মাটির ঘট (কলস) স্থাপন করুন, তাতে জল, আমপাতা ও নারকেল রেখে দেবী দুর্গার আহ্বান করুন।

ঘটের পাশে গম বা জোয়ার (শস্য) বপন করা হয়, যা দেবীর আশীর্বাদ হিসেবে বৃদ্ধি পায়।

মা দুর্গার প্রতিমা বা ছবি স্থাপন করুন।

ঘি বা তেল দিয়ে দীপ প্রজ্বলন করুন।


প্রতিদিনের পূজা বিধি (২য় থেকে ৮ম দিন পর্যন্ত)

সংকল্প এই ৯ দিন মা দুর্গার পূজা ও ব্রত পালনের সংকল্প গ্রহণ করুন। উপবাস বা নিরামিষ ভোজন প্রতিদিন নিরামিষ খাবার গ্রহণ করুন, কেউ কেউ ফলাহার বা জল উপবাসও পালন করেন। দুর্গা সপ্তশতী/দুর্গা চণ্ডীর পাঠ করুন।


প্রতিদিন মা দুর্গার এক-একটি রূপের পূজা করুন:

(১ম দিন শৈলপুত্রী পূজা, ২য় দিন ব্রহ্মচারিণী পূজা, ৩য় দিন চন্দ্রঘণ্টা পূজা, ৪র্থ দিন কুষ্মাণ্ডা পূজা, ৫ম দিন স্কন্দমাতা পূজা, ৬ষ্ঠ দিন কাত্যায়নী পূজা, ৭ম দিন কালরাত্রি পূজা, ৮ম দিন মহাগৌরী পূজা)


প্রতিদিন মা দুর্গাকে ফল, দুধ, মধু, ও বিশেষ প্রসাদ নিবেদন করুন। আরতি ও চন্দন-ফুল নিবেদন করুন এবং ধূপ-দীপ জ্বালিয়ে মা দুর্গার কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করুন।


নবম দিন (নবমী পূজা ও কুমারী পূজা)

এই দিনটি বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ।

কুমারী পূজা করা হয়, যেখানে ৯টি বা ১১টি কুমারী কন্যাকে মা দুর্গার প্রতিরূপ হিসেবে পূজা করা হয়।

হবন (যজ্ঞ) ও দুর্গা সুক্ত পাঠ করা হয়।

বিশেষ প্রসাদ (পুড়ি, ছোলা ও হালুয়া) বিতরণ করা হয়।


দশম দিন (দশেরা বা বিজয়া দশমী)

ঘটস্থাপিত জল ও শস্য গঙ্গা বা পবিত্র স্থানে বিসর্জন করা হয়।

মা দুর্গার আশীর্বাদ নিয়ে উপবাস সমাপ্ত করা হয়।

পরিবারের সদস্যদের সাথে শুভ বিজয়ার শুভেচ্ছা বিনিময় করা হয়।

বিশেষ নিয়মাবলী:

✅ পূজার ৯ দিন পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখা জরুরি।

✅ নিরামিষ খাবার গ্রহণ করা শ্রেয়।

✅ রাত্রে দীপ জ্বালিয়ে রাখার প্রচলন আছে।

✅ ব্রত ও উপবাস কঠোরভাবে পালন করলে বিশেষ ফলপ্রদ হয়।


এবছর চৈত্র নবরাত্রি কবে?

চৈত্র নবরাত্রি ২০২৫ সালের ৩০শে মার্চ থেকে শুরু হয়ে ৭ই এপ্রিল পর্যন্ত চলবে। এই নয় দিন ধরে দেবী দুর্গার নয়টি রূপের পূজা করা হয়, যা হিন্দু ধর্মে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।


নবরাত্রির দিনভিত্তিক দেবী পূজার তালিকা নিম্নরূপ:

৩০শে মার্চ: শৈলপুত্রী পূজা ও ঘট স্থাপন।

৩১শে মার্চ: ব্রহ্মচারিণী পূজা

১লা এপ্রিল: চন্দ্রঘণ্টা পূজা।

২রা এপ্রিল: কুষ্মাণ্ডা পূজা।

৩রা এপ্রিল: স্কন্দমাতা পূজা।

৪ঠা এপ্রিল: কাত্যায়নী পূজা।

৫ই এপ্রিল: কালরাত্রি পূজা।

৬ই এপ্রিল: মহাগৌরী পূজা।

৭ই এপ্রিল: সিদ্ধিদাত্রী পূজা ও রাম নবমী উদযাপন।

বাসন্তী দুর্গাপূজার ইতিহাস ও গুরুত্ব

বাসন্তী দুর্গাপূজা হলো দেবী দুর্গার এক বিশেষ পূজা, যা চৈত্র মাসে অনুষ্ঠিত হয়। এটি মূলত বাঙালি হিন্দুদের মধ্যে জনপ্রিয় এবং রামচন্দ্র কর্তৃক আয়োজিত প্রথম দুর্গাপূজার স্মরণে পালন করা হয়। বাসন্তী দুর্গাপূজা সাধারণত আধ্যাত্মিকতা ও ঐতিহ্যের প্রতীক হিসেবে পালিত হয়। এটি শারদীয় দুর্গাপূজার মতো বিশাল আয়োজন না হলেও, ভক্তদের মধ্যে ভীষণ শ্রদ্ধার সঙ্গে উদযাপিত হয়। রামায়ণ অনুসারে, রামচন্দ্র শরৎকালে নয়, বরং বসন্তকালে দুর্গাপূজা করেছিলেন। তবে পরবর্তীতে শরৎকালের শারদীয় দুর্গাপূজা বেশি জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। তবুও, কিছু স্থান বিশেষ করে পশ্চিমবঙ্গ, বাংলাদেশ, ওড়িশা এবং বিহারের কিছু অঞ্চলে বাসন্তী দুর্গাপূজা পালন করা হয়।


পূজার আচার ও বিধি

বাসন্তী দুর্গাপূজা সাধারণত চার দিনব্যাপী হয়—

ষষ্ঠী: দেবীর বোধন ও অধিবাস

সপ্তমী: নবপত্রিকা স্নান ও প্রতিষ্ঠা

অষ্টমী: কুমারী পূজা ও সন্ধিপূজা

নবমী ও দশমী: হোম-যজ্ঞ ও বিসর্জন

কবে এই পুজো?

৩ এপ্রিল থেকে পুজোর তিথি শুরু। সেদিন ষষ্ঠী। বাসন্তী পুজোর অষ্টমী ও সন্ধি পুজো পড়েছে ৫ এপ্রিল। ৬ তারিখ নবমী। দশমী ৭ এপ্রিল। ৬ তারিখ দুর্গানবমীর দিন রামের জন্মতিথিকে মিলিয়ে পালন করা হবে রামনবমী।


দেবীর আগমন ও গমন

এবারে দেবীর আগমন ও গমন গজে। যা অত্যন্ত শুভ বলে মনে করে হচ্ছে। মনে করা হয় গজে আগমন হলে পৃথিবী-দেশে অর্থ বৃদ্ধি পায়। শস্য-ফসলে ভরে ওঠে পৃথিবী।


চৈত্র নবরাত্রি বসন্ত ঋতুর সূচনা উপলক্ষে উদযাপিত হয় এবং এটি নতুন সূচনা ও আধ্যাত্মিক শক্তি বৃদ্ধির প্রতীক হিসেবে গণ্য হয়। এই সময়ে উপবাস, পূজা ও ধ্যানের মাধ্যমে ভক্তরা দেবী দুর্গার আশীর্বাদ প্রার্থনা করেন।

 

留言


ssss.jpg
sssss.png

QUICK LINKS

ABOUT US

WHY US

INSIGHTS

OUR TEAM

ARCHIVES

BRANDS

CONTACT

© Copyright 2025 to Debi Pranam. All Rights Reserved. Developed by SIMPACT Digital

Follow us on

Rojkar Ananya New Logo.png
fb png.png

 Key stats for the last 30 days

bottom of page