top of page

দক্ষিণী স্বাদে বাজিমাত, বিয়ের পর ফিনান্স ম্যানেজমেন্ট, গরমে পোষ্যদের যত্ন, টিউবারকুলোসিস এবং ডায়েট, রবিবারের গল্প: বালিকার বড় হয়ে ওঠা..

দক্ষিণ ভারতের রান্না মানেই শুধু নারকেল ও কারি পাতা নয়, এটি একটি সুগন্ধি ও স্বাদবহুল ভ্রমণ, যেখানে প্রতিটি রাজ্যের আমিষ পদ তার নিজস্ব ঘ্রাণ, রঙ, আর ঐতিহ্য বহন করে। কেরালা, তামিলনাড়ু, কর্ণাটক; এই রাজ্যের রান্নায় পাওয়া যায় একদিকে ঝাঁঝালো মশলার দাপট, অন্যদিকে নারকেল দুধ ও তেঁতুলের খেলা। মুরগি, খাসি, মাছ, এমনকি চিংড়ি, প্রতিটি আমিষ উপাদান এখানে রূপ নেয় একেকটি স্বর্গীয় পদে।

সাউথ ইন্ডিয়ান ননভেজ খাবারের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো এর মসলা, ধাপে ধাপে রান্নার পদ্ধতি, আর রিচ অথচ হালকা ফ্লেভার, যা একবার খেলে মন ভরলেও, জিভ চায় আরও! এই অনন্য রন্ধনশৈলীর মধ্যে রয়েছে বিয়েবাড়ির বিরিয়ানি থেকে শুরু করে গ্রাম্য স্টাইলে তৈরি  মাছ যা প্রতিটি পদকে করে তোলে এক একটি গল্প। দক্ষিণ ভারত মানেই নারকেলের ঘ্রাণ, কারি পাতার কড়কড়ে শব্দ, আর মশলার ঝাঁঝালো গন্ধে মুখরিত এক রান্নাঘর। আজ আমরা তুলে ধরছি সাউথ ইন্ডিয়ার সবচেয়ে জনপ্রিয় ও মুখরোচক ৬টি আমিষ পদ, যা আপনার রসনা তৃপ্ত করতে বাধ্য!

চিকেন চেট্টিনাড


কী কী লাগবে

চিকেন – ৫০০ গ্রাম

পেঁয়াজ কুচি – ১ কাপ

টমেটো কুচি – ১টি

আদা-রসুন বাটা – ২ টেবিলচামচ

Shalimar's নারকেল তেল – ৩ টেবিলচামচ

শুকনো লঙ্কা – ২টি

গোটা মশলা – (দারচিনি, লবঙ্গ, এলাচ)

চেট্টিনাড মশলা (শুকনো ভাজা ও গুঁড়ো করা):

শুকনো নারকেল,

গোটা ধনে,

গোটা জিরে,

গোটা গোলমরিচ,

গোটা শুকনো লঙ্কা,

গোটা মৌরি,

নুন,

Shalimar's Chef Spices হলুদ গুঁড়ো

কীভাবে বানাবেন

১. কড়াইয়ে নারকেল তেলে গোটা মশলা ফোড়ন দিন।

২. পেঁয়াজ কুচি দিয়ে বাদামি করে ভাজুন, এরপর আদা-রসুন বাটা দিন।

৩. টমেটো ও মশলা দিয়ে কষান।

৪. চিকেন দিয়ে কষিয়ে অল্প জল দিন।

৫. ঢাকা দিয়ে রান্না করুন যতক্ষণ না মাংস নরম হয়।

৬. ওপর থেকে সামান্য নারকেল তেল ছড়িয়ে দিন।

মটন পেপার ফ্রাই


কী কী লাগবে

মটন (সেদ্ধ করা) – ৫০০ গ্রাম

পেঁয়াজ কুচি – ১ কাপ

আদা-রসুন বাটা – ১ টেবিলচামচ

Shalimar's নারকেল তেল – ২ টেবিলচামচ

Shalimar's Chef Spices কালো গোলমরিচ গুঁড়ো – ১ টেবিলচামচ

কারি পাতা – ১০-১২টি

নুন – স্বাদমতো

লেবুর রস – ১ টেবিলচামচ

কীভাবে বানাবেন

১. কড়াইয়ে নারকেল তেলে কারি পাতা ও পেঁয়াজ ভেজে নিন।

২. আদা-রসুন বাটা দিন ও নেড়েচেড়ে নিন।

৩. সেদ্ধ মটন দিন, নুন ও গোলমরিচ গুঁড়ো ছড়িয়ে ভাজুন।

৪. কষিয়ে ঝরঝরে হলে লেবুর রস ছড়িয়ে নামান।

মালাবার স্টাইল মাছের ঝোল


কী কী লাগবে

মাছ (পমফ্রেট বা রুই) – ৪ টুকরো

নারকেল দুধ – ১ কাপ

পেঁয়াজ কুচি – ১ কাপ

আদা কুচি – ১ টেবিলচামচ

কাঁচা লঙ্কা – ২টি

টমেটো কুচি – ১টি

Shalimar's নারকেল তেল – ২ টেবিলচামচ

Shalimar's Chef Spices গরম মসলা – সামান্য

নুন – স্বাদমতো


কীভাবে বানাবেন

১. মাছ হালকা হলুদ-নুন মেখে ভেজে নিন।

২. কড়াইয়ে নারকেল তেলে পেঁয়াজ, আদা, কাঁচা লঙ্কা ভাজুন।

৩. টমেটো দিয়ে নরম হলে নারকেল দুধ দিন।

৪. ফুটে উঠলে মাছ দিন, ঢাকা দিয়ে ৫-৬ মিনিট রান্না করুন।

৫. ওপর থেকে সামান্য গরম মসলা ছড়িয়ে দিন।

নারকেল দুধে ডিম


কী কী লাগবে

সেদ্ধ ডিম – ৪টি

পেঁয়াজ কুচি – ১ কাপ

আদা-রসুন বাটা – ১ টেবিলচামচ

নারকেল বাটা – ২ টেবিলচামচ (বা ঘন নারকেল দুধ)

টমেটো কুচি – ১টি

Shalimar's নারকেল তেল – ২ টেবিলচামচ

Shalimar's Chef Spices গরম মসলা – সামান্য

নুন – স্বাদ অনুযায়ী

Shalimar's Chef Spices হলুদ গুঁড়ো ১ চা চামচ

Shalimar's Chef Spices লঙ্কা গুঁড়ো ১ চা চামচ

কারি পাতা – ৮–১০টি

কীভাবে বানাবেন

১. নারকেল তেলে পেঁয়াজ ভাজুন, কারি পাতা দিন।

২. আদা-রসুন বাটা ও টমেটো দিয়ে কষান।

৩. নারকেল বাটা ও মশলা দিয়ে ভালোভাবে কষিয়ে জল দিন।

৪. ডিম ফেটে না গিয়ে সাবধানে দিয়ে দিন।

৫. ৫–৬ মিনিট ঢাকা দিয়ে রান্না করুন। ওপর থেকে গরম মসলা ছড়িয়ে নামান।

তামিল ফিশ ফ্রাই


কী কী লাগবে

মাছের টুকরো (কাতলা, সার্ডিন বা পমফ্রেট) – ৫–৬টি

আদা-রসুন বাটা – ১ টেবিলচামচ

Shalimar's Chef Spices লাল লঙ্কা গুঁড়ো – ১ চা চামচ

Shalimar's Chef Spices হলুদ গুঁড়ো– ১ চা চামচ

নুন – পরিমাণমতো

লেবুর রস – ১ টেবিলচামচ

Shalimar's নারকেল তেল – ভাজার জন্য

কারি পাতা – কয়েকটি (ঐচ্ছিক)

কীভাবে বানাবেন

১. সব মসলা, লেবুর রস দিয়ে মাছ মেখে ২০ মিনিট ম্যারিনেট করুন।

২. নারকেল তেল গরম করে মাঝারি আঁচে মাছ ভাজুন।

৩. খাস্তা ভাজা হলে নামিয়ে গরম গরম পরিবেশন করুন।

কারি পাতা ও নারকেল দিয়ে শুকনো মাংস


কী কী লাগবে

চিকেন – ৫০০ গ্রাম

কোরানো নারকেল – ১/২ কাপ

পেঁয়াজ কুচি – ১ কাপ

আদা-রসুন বাটা – ১ টেবিলচামচ

শুকনো লঙ্কা – ২টি

Shalimar's নারকেল তেল – ৩ টেবিলচামচ

কারি পাতা – ১০টি

নুন– পরিমাণমতো

Shalimar's Chef Spices হলুদ গুঁড়ো ১ চা চামচ

Shalimar's Chef Spices ধনে গুঁড়ো ১ চা চামচ


কীভাবে বানাবেন

১. চিকেন হালকা হলুদ-নুন দিয়ে সেদ্ধ করুন।

২. নারকেল তেলে পেঁয়াজ, আদা-রসুন ও কারি পাতা ভেজুন।

৩. শুকনো লঙ্কা ভাজুন, কোরানো নারকেল দিন।

৪. সেদ্ধ চিকেন মিশিয়ে কষিয়ে নিন যতক্ষণ না মশলা শুকিয়ে যায়।

৫. ওপর থেকে আরও একটু নারকেল তেল ছড়িয়ে পরিবেশন করুন।

বিয়ের পর ফিনান্স ম্যানেজমেন্ট

(ভালোবাসা থাক, সঙ্গে থাক পরিকল্পিত অর্থনীতি)

বিয়ে মানে শুধু দু’জন মানুষের নয়, দুটি জীবনের, দুটি পরিবারের এবং দুটি ভবিষ্যতের মিলন। আর এই মিলনের ভিত মজবুত রাখতে অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বিয়ের পর সঠিক আর্থিক পরিকল্পনা না থাকলে সম্পর্কের উপর প্রভাব পড়তে পারে। তাই প্রয়োজন যুগল হিসেবে একসঙ্গে অর্থ ব্যবস্থাপনার সঠিক কৌশল জানা ও প্রয়োগ করা।


একসাথে বসে অর্থনৈতিক আলোচনা করুন:

খোলামেলা আর স্বচ্ছ আলোচনায় থাকুক সম্মান

কে কোন খরচ সামলাবে তা নির্ধারণ করুন

উভয়ের আয়-ব্যয় সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারণা গড়ে তুলুন




যৌথ ও পৃথক অ্যাকাউন্ট – কোনটা উপযুক্ত?

একটি জয়েন্ট অ্যাকাউন্ট রাখতে পারেন সংসারের খরচের জন্য

ব্যক্তিগত প্রয়োজনের জন্য রাখতে পারেন ব্যক্তিগত অ্যাকাউন্ট


বাজেট তৈরি করুন প্রতি মাসে:

ঘরভাড়া, বিল, খাবার, স্বাস্থ্য, EMI, বিনোদন সব কিছু নিয়ে একটি মাসিক বাজেট চার্ট তৈরি করুন

গৃহিণী হলে তার অবদানকে আর্থিক মূল্য দিন


সঞ্চয়ের অভ্যাস গড়ে তুলুন:

প্রতি মাসে আয় থেকে কমপক্ষে ২০% সঞ্চয়ে রাখুন

ইমার্জেন্সি ফান্ড গড়ুন (৩–৬ মাসের খরচ যোগাড় করা যায় এমন)

মিউচুয়াল ফান্ড, RD, FD-এর মতো বিকল্পে বিনিয়োগ করুন


যৌথ লক্ষ্যের পরিকল্পনা করুন:

ভবিষ্যতের লক্ষ্য: বাড়ি কেনা, সন্তানের পড়াশোনা, ভ্রমণ বা অবসর

এ লক্ষ্যে মাসিক সঞ্চয় শুরু করুন


বিমা ও স্বাস্থ্যবীমা:

উভয়ের জন্য লাইফ ইন্স্যুরেন্স জরুরি

হেল্থ ইন্স্যুরেন্স রাখুন যাতে হঠাৎ চিকিৎসা ব্যয়ে বিপদ না আসে


দেনা নিয়ন্ত্রণে রাখুন:

ক্রেডিট কার্ডের ব্যবহার সচেতনভাবে করুন

অপ্রয়োজনীয় ঋণ এড়িয়ে চলুন

একসঙ্গে EMI পরিশোধের পরিকল্পনা করুন


সন্তান এলে খরচ ও সঞ্চয়ের নতুন পরিকল্পনা করুন:

জন্মের আগেই প্রস্তুতি শুরু করুন

শিক্ষা ও স্বাস্থ্য নিয়ে বিশেষ ফান্ড গঠন করুন


বিয়ের পর টাকা-পয়সা নিয়ে মনোমালিন্য না হোক, এই চেষ্টাই সবার আগে। খোলামেলা আলোচনা, সম্মিলিত পরিকল্পনা আর সঠিক সঞ্চয়ের অভ্যাসই এনে দিতে পারে নির্ভার ও সুখী দাম্পত্য জীবন। প্রেম যেমন দরকার, তেমনই দরকার একসাথে ভবিষ্যতের স্বপ্ন গড়া।

গরমে পোষ্যর যত্ন: আপনার প্রিয় বন্ধুটির সুরক্ষায় যা করবেন

গ্রীষ্মকাল শুধু আমাদের জন্যই কষ্টদায়ক নয়, আমাদের প্রিয় পোষ্য কুকুর, বিড়াল বা খরগোশের জন্যও এটি এক পরীক্ষার সময়। অতিরিক্ত গরমে তারা হিটস্ট্রোক, জল শূন্যতা, অস্বস্তি বা ত্বকের সমস্যাতে ভুগতে পারে। তাই এই সময়টায় দরকার একটু বাড়তি যত্ন ও ভালোবাসা।


পর্যাপ্ত জল দিন সবসময়

ঠান্ডা, পরিষ্কার জল সবসময় রাখা জরুরি

দিনে ২–৩ বার জল পাল্টান

কুকুর বা বিড়াল জল পান করছে কিনা খেয়াল রাখুন


খাবারে রাখুন হালকা ও পুষ্টিকর জিনিস

গরমকালে ভারী খাবার এড়িয়ে চলুন

হজমে সুবিধা হয় এমন সহজপাচ্য খাবার দিন

ভেটেরিনারির পরামর্শ নিয়ে ডায়েট পরিবর্তন করুন

তাপরোধক ছায়াযুক্ত পরিবেশ দিন

খোলা রোদে রাখবেন না

ঘরে পাখা, কুলার বা এসি ব্যবহার করুন

বাইরে হাঁটাতে নিলে ভোর বা সন্ধ্যার সময় দিন


শরীর পরিষ্কার ও ঠান্ডা রাখা

বেশি চুলওয়ালা পোষ্যের জন্য হালকা ট্রিম করা যেতে পারে

অ্যান্টি-টিক ও অ্যান্টি-ফাঙ্গাল শ্যাম্পু ব্যবহার করা যেতে পারে


হিটস্ট্রোকের লক্ষণ চিনে রাখুন

অতিরিক্ত হাঁপানো

জিভ ও মাড়ি লাল হয়ে যাওয়া

দুর্বলতা, বমি বা অজ্ঞান হয়ে যাওয়া

তৎক্ষণাৎ ঠান্ডা পরিবেশে নিয়ে যান ও ভেটেরিনারির সাহায্য নিন




নিয়মিত ভেট চেকআপ করুন

গ্রীষ্মকালে স্কিন ইনফেকশন, প্যারাসাইট বা ডিহাইড্রেশনের সমস্যা বাড়ে

সময়মতো ওষুধ, ডিওয়ার্মিং ও ভ্যাকসিন আপডেট করুন


কখনো গরম গাড়িতে একা রেখে যাবেন না

বন্ধ গাড়িতে কয়েক মিনিটের মধ্যে গরমে শ্বাসরোধ হতে পারে

এটা জীবনের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ


তারা কথা বলতে পারে না, কিন্তু আপনার যত্নে সাড়া দেয়। গরমে একটু সচেতন থাকলেই পোষ্য থাকবে হাসিখুশি ও সুস্থ। তারা পরিবারের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ, তাদের স্বাস্থ্য এবং সুরক্ষার দায়িত্বও আমাদের।

টিউবারকুলোসিস এবং ডায়েট

টিউবারকুলোসিস বা যক্ষ্মা একটি সংক্রামক রোগ যা মূলত ফুসফুসে হয়, তবে শরীরের অন্য অংশেও ছড়াতে পারে। রোগ প্রতিরোধের জন্য যেমন ওষুধ গুরুত্বপূর্ণ, তেমনই পুষ্টিকর খাদ্যও অসাধারণ ভূমিকা রাখে। যক্ষ্মা রোগীর দেহ দুর্বল হয়ে পড়ে এবং ওজন কমে যায়, তাই সঠিক ডায়েট এই রোগ থেকে দ্রুত আরোগ্য লাভে সহায়ক।


লক্ষণসমূহ (Symptoms):

যক্ষ্মার লক্ষণ সাধারণ ঠান্ডা-কাশির মতো হলেও দীর্ঘস্থায়ী এবং ধীরে ধীরে গুরুতর হয়ে ওঠে।

সাধারণ লক্ষণ:

দীর্ঘদিন ধরে কাশি (৩ সপ্তাহ বা তার বেশি)

রাতে ঘেমে যাওয়া

ওজন কমে যাওয়া

ক্ষুধামন্দা

জ্বর বা হালকা জ্বর বারবার হওয়া

বুকে ব্যথা বা শ্বাস নিতে কষ্ট

রক্ত উঠা (কাশির সঙ্গে)

অবসন্নতা ও দুর্বলতা





প্রতিকার (Remedies & Treatment):

১. ঔষধপত্র:

যক্ষ্মার প্রধান চিকিৎসা হল DOTS (Directly Observed Treatment, Short-course) পদ্ধতি।

৬ মাস থেকে ৯ মাস পর্যন্ত ধারাবাহিক ওষুধ খেতে হয়

ওষুধ বন্ধ করা চলবে না, মাঝপথে বন্ধ করলে রোগ আবার ফিরে আসে এবং আরও জটিল হয়

সরকারের টিবি ক্লিনিকে বিনামূল্যে ওষুধ পাওয়া যায়


২. পুষ্টিকর খাবার:

যেমন আগেই বলা হয়েছে, উচ্চ প্রোটিন, ক্যালরি ও ভিটামিন যুক্ত খাবার

শরীরের প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় ও সুস্থতা ত্বরান্বিত করে


৩. বিশ্রাম ও পরিচর্যা:

রোগীর বিশ্রাম দরকার

ধুলো-বালি, ঠান্ডা ও দূষণ এড়িয়ে চলা উচিত

ব্যক্তিগত পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখা গুরুত্বপূর্ণ


৪. নিয়মিত পরীক্ষা:

এক্স-রে, কফ পরীক্ষা (sputum test), CBC ইত্যাদি

নিয়মিত ডাক্তারের সঙ্গে যোগাযোগ রাখা জরুরি


৫. সংক্রমণ রোধ:

রোগীকে আলাদা ঘরে রাখা ভালো

কাশি করলে মুখে রুমাল বা মাস্ক ব্যবহার

ব্যবহৃত জিনিসপত্র পরিষ্কার রাখা

রোগ ধরা পড়লে পরিবারের অন্য সদস্যদেরও টেস্ট করা উচিত।


টিউবারকুলোসিসে কীভাবে ডায়েট সাহায্য করে?

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়

ওজন স্বাভাবিক রাখতে সাহায্য করে

ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া কমাতে সহায়ক

ক্ষয় হওয়া কোষ গঠনে সাহায্য করে


টিউবারকুলোসিস রোগীর জন্য আদর্শ খাদ্য তালিকা

১. উচ্চ প্রোটিনযুক্ত খাবার:

(যক্ষ্মা রোগে পেশী ক্ষয় হয়, তাই প্রোটিন অত্যন্ত জরুরি)

ডিম

মুরগির মাংস

মাছ

দুধ ও দুগ্ধজাত খাবার

ছোলা, মুসুর ডাল, সয়াবিন




২. ক্যালরি সমৃদ্ধ খাবার:

ঘি

মাখন

বাদাম (চিনাবাদাম, কাজু)

কলা

আলু ও শাকসবজি

৩. ভিটামিন ও মিনারেলসমৃদ্ধ খাবার:

বিশেষত ভিটামিন A, C, E এবং আয়রন, জিঙ্ক ও ক্যালসিয়াম

গাজর, পেঁপে, আম (ভিটামিন A)

আমলকি, লেবু, কমলা (ভিটামিন C)

বাদাম ও বীজ (ভিটামিন E ও জিঙ্ক)

শাকপাতা (আয়রন)


৪. জল এবং তরল:

দিনে কমপক্ষে ৩-৪ লিটার জল

ডাবের জল, লেবুর জল, স্যুপ

যেসব খাবার এড়িয়ে চলা উচিত:

অতিরিক্ত ঝাল ও ভাজাভুজি, প্রসেসড ফুড, অতিরিক্ত চিনি ও কোল্ড ড্রিঙ্কস, ধূমপান ও অ্যালকোহল

যক্ষ্মা হলে শুধু ওষুধ খেলে হবে না, দরকার শক্তপুষ্ট খাওয়াদাওয়া। ভালো খাবার মানেই ভালো লড়াই—যার ফলে রোগমুক্তি সহজ হয়। রোগীকে সময়মতো খাবার, বিশ্রাম এবং যত্ন দিলে এই যুদ্ধে জেতা সম্ভব। ডাক্তার ও পুষ্টিবিদের পরামর্শ অনুযায়ী পরিকল্পিত ডায়েট মানলেই ফল পাওয়া যায় দ্রুত। যক্ষ্মা মানেই ভয় নয়, সময়মতো ধরা পড়লে ও নিয়ম করে ওষুধ খেলে এই রোগ পুরোপুরি সেরে যায়। ভালো খাওয়া, বিশ্রাম ও সচেতনতা থাকলেই যক্ষ্মার সঙ্গে লড়াই সহজ। রোগীর পাশে থাকুন, সাহস দিন, নিয়ম মেনে চিকিৎসা করুন।

বালিকার বড় হয়ে ওঠা

তপন বন্দ্যোপাধ্যায়

কিছু ঘটনা অলক্ষ্যে কোথাও তৈরি হতে থাকে যার মধ্যে মানুষের কোনও হাত থাকে না। যা কোনও দিন ঘটার কথা ছিল না সেরকমই এক অভিনব ঘটনার মুখোমুখি হঠাৎ এক আন্তরিক সকালে। কাছাকছি একটা বড় মাঠে আমার প্রতিদিনের মর্নিং ওয়াক। কিছুক্ষণ হাঁটাহাঁটির পর ঘরে ফেরা। ফেরার পথে একটা পার্ক আছে--ভিতরে সবুজের রমরমা। কত রকমের গাছ। কত রঙের ফুল। পার্কেও প্রতিদিন ভোরে হাঁটতে থাকেন কিছু সুবেশ নারীপুরুষ, তাঁরা বড় মাঠে হাঁটতে না-গিয়ে পছন্দ করেন ছোট পার্কের স্বল্পপরিসরে হাঁটা।


মর্নিং ওয়াক সেরে ফেরার পথে পার্কের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় কখনও চোখ রাখি ভিতরের দৃশ্যে।


কেউ একা হনফন করে হাঁটছেন, কেউ-কেউ জোড় বেঁধে গল্পে মত্ত হয়ে। কারওর বা হাঁটার কোটা শেষ, পার্কের বেঞ্চিতে বসে গল্পগাছায় ব্যস্ত। কখনও দু'দণ্ড দাঁড়িয়ে দেখি পার্কের বাগানের নিত্যনতুন সেজে ওঠা।


এরকমই এক অলৌকিক সকালে মাঠ থেকে অন্যমনস্কভাবে ফিরছি পার্কের পাশ দিয়ে, হঠাৎ পথ অবরোধ করে দাঁড়ায় এক ছ'সাত বছরের বালিকা, কুণ্ঠা-কুণ্ঠা গলায় কিন্তু স্পষ্ট উচ্চারণে বলল, তুমি কি লেখক?


নাম তো! অভিদত্তা।


-আসলে কী জানো, আমার বাবার নাম অভীক, মায়ের নাম সোমদত্তা। দুটো নামের অর্ধেক অর্ধেক নিয়ে অভিদত্তা।


-চমৎকার। আমি তার পিঠে হাত রেখে বলি, বেশ, তুই আজ থেকে আমার একটা ছোট্ট বন্ধু। সোনুর সঙ্গে ভাব পাতিয়ে, তার সঙ্গে করমর্দন করে ফিরে আসি ঘরে। মনের আয়নায় বারবার ভেসে ওঠে হাসি-হাসি ছোট্ট মুখখানা। তার কথাগুলো বাজতে থাকে টুংটাং শব্দের মতো।


তার পরদিন আবার ফিরছি, পার্কের পাশ দিয়ে আসার সময় দেখি, কালকের মতোই সোনু হাসি-হাসি মুখে দাঁড়িয়ে, গুড মর্নিং।


ইয়েস, গুড মর্নিং, বলে জিজ্ঞাস্য করি, তুই কি রোজই আসিস?




হাসি-হাসি মুখে বলল, এম্মাকে তোমার কথা বলেছি। এম্মা বলছিল তোর সঙ্গে তা


হলে লেখকবাবুর বেশ বন্ধুত্ব হয়ে গেল!


আমি বিপর্যন্ত এই অভাবিত আক্রমণে। কখনও পথ-চলতি মানুষ এরকমই কাছে এসে দাঁড়িয়ে জিজ্ঞাসা করেন, "আপনি কি অমুক?" কিন্তু এই বালিকা তো নিতান্তই দুগ্ধপোষ্য। দাঁড়াতেই হয় অতএব, বলি, তুই কী করে জানলি?


-তা হলে ঠিকই ধরেছি। বইতে তোমার ছবি দেখেছি। আমার এম্মা লাইব্রেরি থেকে মাঝে মাঝে তোমার বই নিয়ে আসে। বইয়ের পিছনদিকে লেখকের ছবি থাকে। তোমাকে এখান দিয়ে রোজ যেতে দেখি, আমার মনে হচ্ছিল ছবিটা তোমারই। বইয়ের মধ্যে আমার ছবি থাকে সে-তথ্য ঠিক, কিন্তু সেই ছবি দেখে আমাকে চিনে রেখেছে এতটুকু মেয়ে। তা হলে তো তার সঙ্গে একটু আলাপ জমাতেই হয়, জিজ্ঞাসা করি, কী নাম তোর? -বাড়িতে সবাই আমাকে সোনু বলে ডকে। আমার একটা ভালো নাম আছে, অভিদত্তা। বেশ অন্যরকম


আসিই তো রোজ। এম্মার সঙ্গে আসি তো। সোনুর এম্মা কে তা জানা নেই, নিশ্চয় সোনুর অভিভাবক, তিনি না হয় শরীর সুস্থ রাখতে রোজ পার্কে হটিতে আসেন, কিন্তু এই ছোট্ট বালিকা রোজ মর্নিং ওয়াক করতে আসে- এ বড় বিস্ময়ের কথা। হাসি-হাসি মুখে বলল, এম্মাকে তোমার কথা বলেছি। এম্মা বলছিল তোর সঙ্গে তা হলে লেখকবাবুর বেশ বন্ধুত্ব হয়ে গেল!


অতএব এক অদ্ভুত কাকতালের মধ্যে কয়েকদিনের মধ্যে গাঢ় হয়ে ওঠে বন্ধুত্বটা। প্রতিদিন সকালে ঘরে ফেরার পথে দেখি পার্কের গেটে একই রকম হাসকুটে মুখে দাঁড়িয়ে রয়েছে সোনু, আমাকে দেখেই একটা লাফ দিয়ে উঠে ছুটে আসে, দুই হাতে আমার হাতদুটো ধরে একনাগাড়ে বলে যাবে গতকাল সারাদিনে তার কী কী অভিজ্ঞতা হয়েছে, কে কী বলেছে, কোথাও গিয়ে থাকলে তার ধারাবিবরণী। কোনও দিন পার্কের সামনে গিয়ে দেখি সোনু অপেক্ষায় নেই, পার্কে তার নানা বয়সি বন্ধু আছে, তাদের কারওর না কারওর হাত ধরে পার্কের চারপাশে ঘুরছে বড় বড় পা ফেলে। হঠাৎ দূর থেকে আমাকে দেখে সেই বন্ধুর হাত ছেড়ে একছুটে হাঁপাতে হাঁপাতে এসে হাজির, বলে, তুমি আজ পাঁচ মিনিট আগে এসে পড়েছ।




কবজিতে চোখ বুলিয়ে দেখি, সত্যিই তাই, বলি, কী করে বুঝলি?


-এখানে এক চল্লিশ মিনিট দাদু আছেন। তিনি পার্ক ছেড়ে চলে গেলে বুঝি তোমার আসার সময় হয়ে গেছে।


-চল্লিশ মিনিট দাদু?


-হ্যাঁ, উনি ঠিক ঘড়ি ধরে চল্লিশ মিনিট হাঁটেন। আজ তিনি এখনও বেরোননি। কী আশ্চর্য সোনুর সময়জ্ঞান। আমি ঠিক কখন আসব তা মুখস্থ হয়ে গেছে ওর।


তা যেদিনই একটু আগে আসি, সোনু কারওর না কারওর হাতে ধরে ঘুরপাক খাচ্ছে পার্কের ভিতরের বাঁধানো রাস্তা ধরে। হাঁটে, কিন্তু খেয়াল রাখে আমি পার্কের মুখে এসে গেছি কি না! আমাকে দেখতে পেলেই অমনি লাফ দিয়ে ছুটে এসে আমার হাত ধরে তার আগডুম বাগডুম গল্প। তার গল্পের বৈচিত্রও


অনেক। নানাধরনের বই পড়ার অভ্যাস সোনুর। কখনও ভূতের গল্প, কখনও ফেয়ারি টেল, কখনও কমিকসের গল্প। সেই আজগুবি, অলৌকিক অথচ মজার পৃথিবীতে তার অনায়াস আনাগোনা। গল্প বলার ফুরসতে তার অভিব্যক্তিতে ছায়া পড় সেই অলীক পৃথিবীর। আমিও তার রহস্যময় পৃথিবীতে পা রেখে শামিল হই তার ভাবনার সঙ্গে। সোনুর এম্মার সঙ্গে আলাপও হয়ে গেল একদিন। তিনি সোনুর ঠাকমা। টিভি সিরিয়ালের মায়া কাটিয়ে যিনি এখনও গল্পের বইয়ের পাতায় মগ্ন থাকেন নিয়ত। তাঁর হাঁটা শেষ হলে পার্কের একটি নির্দিষ্ট বেঞ্চিতে বসে থাকেন কিছুক্ষণ। তাঁকে দেখলেই আমি বুঝতে পারি সোনুও এসেছে।


সোনুর সঙ্গে প্রতিদিন এত গল্পগাছা দেখে একদিন সোনুর এম্মা বললেন, "আপনারা দু'জনে যখন নিবিষ্ট


হয়ে কথা বলেন, আমার মনে পড়ে যায় রবীন্দ্রনালের কাবুলিওয়ালার গল্পটা। কাবুলিওয়ালা ঠিক এরকমভাবেই মিনির সঙ্গে গল্প করত রোজ।" তাই নাকি। বিষয়টা আমার মাথায় আসেনি এতদিন। সোনুর সঙ্গে গল্প করাটা এমনই অভ্যাসে দাঁড়িয়েছে যে, একদিন সোনু কোনও কারণে পার্কে না-এলে কীরকম শূন্য-শূন্য লাগে দিনটা। সোনুর এম্মা বললেন, আজ কিছুতেই ঘুম থেকে উঠতে চাইল না। বলল, "ভীষণ ঘুম পাচ্ছে।" কাল রাতে ঘুমোতে অনেকটা রাত হয়ে গিয়েছিল তো।


সোনু ঠিকই তো বলেছে। অতটুকু মেয়ে রোজ ঘুম ভেঙে এতটা পথ যে আসে, সেটাই অবাক কাণ্ড। তার বয়সি ছেলেমেয়েরা কেউ আসতে চাইবে এরকম রোজ রোজ!


পরদিন পার্কে দেখা হতে কাঁচুমাচু মুখে সোনু বলে, "কাল আসতে পারিনি। এত ঘুমিয়ে পড়েছিলাম না।" তার অপরাধী-অপরাধী মুখ দেখে হেসে পিঠ চাপড়ে সান্ত্বনা দিই, বলি, ঘুম তো আর টিভির নব নয় যে, ইচ্ছেমতো খুলব বা বন্ধ করব। ঘুম কারও নিয়ন্ত্রণে থাকে না।


সোনুও হেসে উঠে বলল, "ঠিক বলেছ।"

তারপর যথারীতি তার সারাদিনের রোজনামচা। ক'দিন পরে পার্কের সামনে এসে দেখি সোনু নেই। নিশ্চয়ই আজও ঘুমিয়ে পড়েছে। বিমর্ষ মুখে ফিরে আসছি, হঠাৎ কে যেন পিছন থেকে লাফিয়ে এসে আমার হাত ধরে ঝুলে পড়ে। দেখি সোনুর মুখে দুষ্টুমির হাসি। বলি, কী রে তুই কোথায় ছিলি? সোনু হেসে গড়িয়ে পড়ে, বলল, "তোমার ঠিক পিছনেই লুকিয়ে ছিলাম। দেখছিলাম তুমি আমাকে খুঁজে পাও কি না!"


হেসে উঠে বলি, বাহ, বেশ দুষ্টু তো তুই!


এই লুকোচুরি খেলায় সোনু এতটাই মজা পেল যে, মাঝেমধ্যেই পার্কের এখানে-ওখানে লুকিয়ে থাকে, আর আমাকে পার্কে ঢুকে এ-ঝোপে ও-ঝোপে ঘুরে ঘুরে খুঁজে বার করতে হয় তাকে। আমিও বেশ মজা পাই তার এই দুষ্টুমির খেলায়। কোনওদিন কামিনীগাছের ঝোপের আড়ালে, কোনওদিন পামগাছের আড়ালে, কোনওদিন-তার মধ্যে হঠাৎ একদিন দেখি সোনুর এম্মা আসেননি। বেঞ্চিটা ফাঁকা। কিছুক্ষণ চোখ চালিয়ে সোনুকে না-দেখে ফিরে আসি বাড়িতে। কিছুক্ষণ পরেই মোবাইলে ফোন। সুইচ অন করতেই ওদিকে নারীকণ্ঠ, আমি সোনুর এম্মা বলছি। আপনি আজ মর্নিং ওয়াকে যাননি?


-হ্যাঁ। গিয়েছিলাম তো।


-এই রে। আসবার সময় আপনি সোনুর সঙ্গে দেখা না-করেই চলে এসেছেন। অবাক হয়ে বলি, সোনু কি আজ পার্কে ছিল? আমি তো চোখ চালিয়ে খুঁজলাম ওকে। কোথাও দেখতে পাইনি তো! আপনাকেও দেখতি পাইনি। ভাবলাম আজ আপনারা আসেননি! - কিন্তু কী মুশকিল হয়েছে জানে? আমি একটু সময়ের জন্য পাশের আশ্রমে গিয়েছিলাম। সোনু আমার সঙ্গে যায়নি। দূরের একেটা বেঞ্চে একা




সঙ্গে কথোপকথন। তখনও হাউমাউ করে কেঁদে চলেছে আর বলছে, "তুমি আমাকে একটুও ভালোবাসো না। তোমার সঙ্গে আমার আড়ি আড়ি আডি।" আমি তাকে ক্রমাগত বোঝাতে চাইছি কীভাবে ঘটল এই ভুল-বোঝাবুঝি। কিন্তু একজন তরুণী বা যুবতীকে যত সহজে বোঝানো যায়, একটি


বালিকাকে বোঝানো তার চেয়ে ঢের ঢের দুরূহ।


অনেকক্ষণ পরে ফোনের মধ্যে মুখে হাসি ফোটাতে সক্ষম হলে বলল, "কাল রবিবার। একটু বেশি সময় নিয়ে আসবে। দুদিনের গল্প একদিনে শুনতে হবে।" বললাম, নিশ্চয়ই। তুই আমাকে ফাইন করে দে। পরের দিন একটি চকোলেট পকেটে নিয়ে গিয়ে তাকে খুশি করার চেষ্টা করি। কিন্তু ভবি কি অত সহজে ভোলে। বহুক্ষণ রাগ দেখানোর পর বলল, "এম্মা আমাকে আশ্রমে নিয়ে যেতে চেয়েছিল, কিন্তু


শেষ কথাটা শুনে ফিক করে হেসে ফেলল সোনু -বিষয়টির মধ্যে যে অসম্ভব মজা লুকিয়ে আছে তাই বুঝতে পেরে। ব্যস, অমনি আমাকে ক্ষমা করে দিল।


বসেছিল পাছে আপনি ওকে না-পেয়ে চলে যান। -সে কী! আমি তো আপনাদের দুজনের কাউকে দেখতে না-পেয়ে ভাবলাম আজ আসেননি। সোনু আপনার জন্যই বসেছিল। আপনাকে ও দেখতে পেয়েছে দূর থেকে। ছুটে এসেওছিল গেট পর্যন্ত। আপনাকে অনেকবার ডেকেছে, কিন্তু আপনি শুনতে পাননি। আমি এসে দেখি বেঞ্চিতেবসে হাপুস নয়নে কাঁদছে একা-একা।


-সে কী! আমি ব্যস্ত হয়ে পড়ি, নিশ্চয় গাড়ির আওয়াজে ওর কণ্ঠস্বর কানে পৌঁছয়নি আমার! -খুব অভিমান হয়েছে ওর। বাড়িতে এসেও কেঁদে ভাসাচ্ছে, কিছুতেই শান্ত করতে পারছি না। বলছে আর কোনওদিন আপনার সঙ্গে কথা বলবে না আমার উত্তরোত্তর বিস্ময়, ব্যস্ত হয়ে বলি, ফোনটা ওকে দিন। আমি দেখি ওর রাগ ভাঙাতে পারি কিনা। তার পরের দশ মিনিট চলল এক খুদে অভিমানিনীর


তুমি আমাকে না দেখতে পেলে দুঃখ পাবে বলে আমি একা বসেছিলাম তোমার জন্য। আর তুমি আমাকে-" আবার অভিমান ভরে এল তার গলায়।

-ঠিক আছে, এর পর থেকে তোকে না দেখতে পেলে আমি সারা পার্ক তন্নতন্ন করে খুঁজব। দরকার হলে পাম গাছটা বেয়ে উপরে উঠে পাতার ঝোপের মধ্যে খুঁজব।


শেষ কথাটা শুনে ফিক করে হেসে ফেলল সোনু


-বিষয়টির মধ্যে যে অসম্ভব মজা লুকিয়ে আছে তাই বুঝতে পেরে। ব্যস, অমনি আমাকে ক্ষমা করে দিল। তার পরদিন থেকে আর ভুল হয় না। হঠাৎ একদিন আমার পায়ে ঢিপ করে প্রণাম করে বলল, "আজ আমার জন্মদিন।"


তাই! সোনু আজ বেশ সুন্দর করে সেজে এসেছে।


পরিপাটি করে চুল আঁচড়ে, জংলা ছাপা নতুন একটা


লং স্কার্ট পরে। হাতে একটা ছোট ব্যাগ। হাতের ব্যাগ থেকে একটা প্যাকেট বার করে আমার হাতে দিয়ে বলল, "রিটার্ন গিফট।" তা হলে তো আজ একটা সুন্দর দিন। বাড়িতে খুব খাওয়াদাওয়া হবে নিশ্চয়। কিন্তু গিফট ই দিলাম না। তার আগেই রিটার্ন গিফট!


জানো, কাল রাতে আমি আর মা মিলে অনেকগুলো প্যাকেট বানিয়েছি। পার্কে আমার তো অনেক বন্ধু। সোনুর জন্য কী গিফট দেওয়া যায় ভাবতে ভাবতে বাড়ি আসি। বই পড়তে ভালোবাসে, বই দেওয়াটাই শ্রেষ্ঠ উপহার। পরের দিন বইয়ের সঙ্গে নিলাম একটা ডায়েরি আর পেন। বললাম, এই ডায়েরিটায় রোজ কিছু না কিছু লেখার চেষ্টা করবি।

সোনু খুব সিরিয়াস হয়ে বলল, "আমি কি তোমার মতো লিখতে পারি?"


-তুই লিখবি তোর মতো। যা মনে আসে। এই তো সেদিন বাবা-মায়ের সঙ্গে ডুয়ার্স ঘুরে এলি। সেই ভ্রমণটা লিখে ফেল। লিখে আমাকে দেখাবি। কঠিন সমস্যায় পড়ল সোনু। দিন তিনেক পরে ডায়েরিটা নিয়ে পার্কে এল, বলল, "লিখেছি।" -বাহ। গুড গার্ল। কই দেখি কী লিখেছিস।


সোনু কাঁচুমাচু মুখে বলল, "আমি কিন্তু ইংরেজিতে লিখেছি। ইংরেজিতে লিখতেই আমার বেশি ভালো লাগে।"


-ঠিক আছে, যা লিখতে ভালো লাগে, সেটা লেখাই ভালো। দেখি কী লিখেছিস?


ডায়েরি খুলে পড়ে দেখি, বেশ গুছিয়ে লিখেছে ডুয়ার্সের নানা অভিনব অভিজ্ঞতা। ময়ূরের সঙ্গে ভাব হওয়া, হাতির দলের উদ্দেশে টা-টা করা, রাতে একটা ভয়ংকর আওয়াজ শোনা, সেটা বাঘের কি না কে জানে! তার মা একটা বড় মাপের স্কুলে ইংরেজির শিক্ষিকা। অতএব সোনুও যে ইংরেজিতেই বেশি স্বচ্ছন্দ হবে তাতে অবাক হওয়ার কী আছে। বললাম, যখনই সময় পাবি, কিছু না কিছু লিখবি। কিছুদিনের মধ্যেই সোনুর ডায়েরি ভরে ওঠে


নানাধরনের লেখায়। একবার বাবা-মায়ের সঙ্গে ঘুরে এল পুরী থেকে। আসবার সময় আমার জন্য একটা উপহার। স্থানীয় কারিগরদের তৈরি হস্তশিল্প। বেশ খুশি-খুশি লাগল। ছোট্ট মেয়েটা বাইরে বেড়াতে গিয়ে




আমার কথা মনে রেখেছে, মা-বাবাকে বলে কিনে এনেছে সুন্দর কারুকাজ। বাড়িতে এনে টেবিলের উপর সাজিয়ে রাখলাম সোনুর দেওয়া উপহার। সে বছর আমরাও ঘুরতে গেলাম কেরালায়। প্রচুর


সমুদ্র, অজস্র ব্যাক-ওয়াটার, আর মশলাপাতির বাগান আর দোকান দেখে ফেরার পথে ভাবলাম সোনুর জন্য কিছু উপহার কিনতে হবে। কোভালাম- এর সাজানো শোরুমগুলি খুঁজে কী-কিনব কী-কিনব ভাবতে ভাবতে কিনে ফেললাম একটা সালংকারা হাতি। রযাকে রাখার মতো। তবু মনে খুঁতখুঁত, কী জানি পছন্দ হবে কি না সোনুর!


হাতিটি কিনে মোবাইলে জানিয়েও দিলাম, তোর জন্য একটা হাতি কিনেছি।


সোনু উচ্ছ্বসিত, তাই। কী মজা।


পরদিন তার এম্মার কাছ থেকে একটা প্রতিক্রিয়াও


পেলাম, "জানেন, আপনি হাতি আনছেন শুনে সোনু কাল সারা রাত ঘুমোয়নি।" বিস্মিত হয়ে বলি, সে কী, কেন? এম্মার পরবর্তী উত্তর পেয়ে আমি স্তম্ভিত। বললেন, "সোনুর এখন অনেক চিন্তা। প্রথমত, হাতিটাকে নিয়ে আপনি কীসে আসবেন! ট্রেনে, না প্লেনে! প্লেনে নিশ্চয় হাতিটাকে নেবে না, তাতে প্লেন ভেঙে পড়তে পারে। তা হলে নিশ্চয় ট্রেনে করে আনবেন। কিন্তু হাওড়া স্টেশন থেকে বেহালা পর্যন্ত কীভাবে নিয়ে আসবেন! কোনও বাসে তো ধরবেই না। তা হলে হেঁটে আসতে হবে। তারপর এ-বাড়িতে কোন ঘর হাতিটার জন্য বরাদ্দ করা হবে। সবচেয়ে বড় ঘরটা ছাড়তেই হবে হাতিটাকে। তার পরের প্রশ্ন, হাতি কী খায়! হাতি আস্ত আস্ত কলাগাছ খায় শুনে সোনুর আরও চিন্তা। বাজারে কি কলাগাছ কিনতে পাওয়া যায়। না-পাওয়া গেলে কোথা থেকে রোজ কলাগাছ কিনে আনা হবে। ওর মা বলেছে, তা হলে বাড়ির পিছনে যে কিছুটা ফাঁকা জমি আছে সেখানে কয়েক ঝাড় কলাগাছ পুতে দেবে, তা হলে আর হাতির খাবার নিয়ে কোনও ভাবনা থাকবে না।


বুঝলেন, সোনু যত প্রশ্ন করছে, ওর মা দুষ্টুমি করে আরও উসকে দিচ্ছে ওকে। ভোরে উঠে কী উত্তেজনা ওর। ওর মা বলছে, এখন ওর ভুল ভাঙিয়ে কাজ নেই।" আমি বেশ হতচকিত।


কলকাত ফিরে পরদিন পার্কের সামনে পৌঁছতে ছুটে এল সোনু। আমার আশপাশে তাকিয়ে দেখছে হাতিটা কোথায়! আমি পার্কের একটা বেঞ্চিতে বসে যখন হাতের ব্যাগ থেকে হাতিটা বার করলাম- সোনুর মুখভঙ্গি দেখার মতো।


একবার হাতিটার দিকে তাকায়, একবার আমার মুখের দিকে। তার স্বপ্নভঙ্গ হওয়ার পর্যায়গুলি একেবারে সেলুলয়েডের পর্দায় তুলে রাখার মতো। আস্তে আস্তে বাস্তবে পা রাখার মুহূর্তে সে হঠাৎ হাতিটাকে কোলে তুলে নিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে হেসে ফেলল ফিক করে। আমিও তখন হাসছি। সোনু হাসি-হাসি মুখ করে বলল, "কী সুন্দর দেখতে হাতিটকে। আমার পড়ার টেবিলে রেখে দেব ওকে।"


দেখা হবে।


-হ্যাঁ। সেদিন কিন্তু হাতে বেশি সময় রাখবে।


এক সপ্তাহে অনেক গল্প জমে উঠবে। সব গল্প তোমাকে না শোনালে স্বস্তি হয় না আমার। -ঠিক আছে। তাই হবে।


সোনুর সঙ্গে অতএব সপ্তাহে একদিন। সারা সপ্তাহ ধরে কী কী করেছে, কোথায় গিয়েছে তার পাই-টু-পাই বিবরণ আমাকে শুনিয়ে তবে সে

নিশ্চিন্ত।

দিন গড়াতে থাকে। একটা করে নতুন ক্লাসে


ওঠে, সোনুর পড়াশুনার চাপ বেড়ে যায়, খুব ব্যস্ততা তার। অনেকসময় এমন হচ্ছে, সপ্তাহের একটা দিন- সেই রবিবারেও আসতে পারে তা নয়। স্কুলের পড়াশুনোর পাশাপাশি চলছে তার


ছবি আঁকার ক্লাস, নাচের ক্লাস, গানের ক্লাস,


আরও উঁচু ক্লাসে উঠতে থাকে সোনু, ব্যস্ততা বেড়ে যায় আরও। কত রবিবার পার


হয়ে যায়, সোনু আসে না।


ততক্ষণে সোনু বুঝতে পেরেছে তার মায়ের দুষ্টুমির কথাও। বলল, "বুঝলে, মা ক'দিন ধরে আমার সঙ্গে এত মজা করেছে, আমি সত্যিটা বুঝতেই পারিনি!"


হাতির এপিসোডটা সোনুকে একলাফে অনেকটাই বড় করে দিল। এবার বুঝতে শিখল তার ভাবনার অবাস্তবতা। তবে তার গল্পের ঝুলি রোজই উপুড় করে ঢেলে দেয় আমার কাছে।


তার মধ্যে একদিন মনখারাপ মুখে বলল, "জানো, লেখকবাবু, নতুন ক্লাসে উঠে আমার স্কুলের রুটিন বদলে গেছে। এখন আটটার মধ্যে স্কুলে ঢুকতে হবে।"


-তাই নাকি!


--হ্যাঁ। আর রোজ আসতে পারব না। শুধু রবিবার-রবিবার।


বলি, তা হলে আর কী করা! সপ্তাহে একদিন


আরও কত কী! পার্কে না-আসতে পারলেও


টেলিফোনে খবর নেয়, কেমন আছ তুমি? জানো


মা-বাবার সঙ্গে ঘুরে এলাম ব্যাঙ্কক হয়ে পাটোয়া। কী যে সুন্দর জায়গা।


-তা হলে ডায়েরিতে লিখে রাখ সব। দেরি হলে ভুলে যাবি। পরে পড়ব।


আরও উঁচু ক্লাসে উঠতে থাকে সোনু, ব্যস্ততা বেড়ে যায় আরও। কত রবিবার পার হয়ে যায়, সোনু আসে না। হঠাৎ একদিন মনে হয় অনেকদিন হয়ে গেল সোনুর সঙ্গে দেখা হয় না, তার টেলিফোনও আসে না আর। একদিন পার্কের পাশ দিয়ে যেতে যেতে ভাবি কী জানি সোনু কতটা বড় হল! হয়তো অনেকদিন পরে সোনুর সঙ্গে হঠাৎ রাস্তায় দেখা হলে ভাবব, এই কি সেই সোনু! সোনুও আমাকে দেখে, কাবুলিয়ালা গল্পের সেই মিনির মতো লজ্জা পেয়ে যাবে হঠাৎ। ঘুরে দাঁড়িয়ে দৌড় দেবে।



Comments


ssss.jpg
sssss.png

QUICK LINKS

ABOUT US

WHY US

INSIGHTS

OUR TEAM

ARCHIVES

BRANDS

CONTACT

© Copyright 2025 to Debi Pranam. All Rights Reserved. Developed by SIMPACT Digital

Follow us on

Rojkar Ananya New Logo.png
fb png.png

 Key stats for the last 30 days

bottom of page