top of page
Search

স্মৃতির পুজো, বনেদি বাড়ির সিক্রেট রেসিপি, সাইবার অপরাধ ও নারী..

দিন যায়, বছর যায়, সবকিছুর সঙ্গে স্মৃতিগুলোয় সরে সরে যায়। বাবুয়ানির মহানগর থেকে শুরু করে বদলে যাওয়া পুজোর স্মৃতি নিয়ে লিখছেন কমলেন্দু সরকার।



বাঙালির পুজোর আমেজ প্রতিবারই নতুনভাবে অনুভব করি মনের ভিতর। ছোটবেলাটাই যেন ফিরে ফিরে আসে বার বার। সেইসময় আশ্বিন পড়লেই আলো-বাতাস, পরিবেশ-পরিস্থিতি সবেতেই কেমন যেন পরিবর্তন আসত। সবচেয়ে ভাল লাগত আদিগন্ত মাঠে যখন কাশফুল ফুটত। কাশফুল কী ফোটে, নাকি হয়। জানি না। জানার চেষ্টাও কোনওদিন করিনি। কিন্তু পুজোর ঘ্রাণ নাকে পেতাম। দুর্গাপুজোর একটা গন্ধ আছে সেটা অন্য কোনও পুজোয় পাইনি কোনওদিন। আজও পাই না। মাঠে কাশ দেখলেই আমার সেই 'পথের পাঁচালী' অপু-দুর্গার কাশ বনে ছুটে যাওয়া, ট্রেন দেখার দৃশ্য চোখে ভাসত। এখনও ভাসে। ছোটবেলায় কত খুঁজেছি অমন একটা জায়গা পাইনি। এত বনবাদাড়ে ঘুরেছি কিন্তু ওইরকম কোনও জায়গা পেলাম না। পেলাম না কেন জানি না।


যাইহোক, আমাদের বাড়ির কাছেই ছিলেন এক ঠাকুর গড়ার কারিগর। সেই ঠাকুরের কাঠামো বাঁধা থেকে খড়ের শরীর তৈরি করা কি নিষ্ঠা ভরে করতেন। তারপর হত একমেটে, দোমেটে। কি সুন্দর আঙুলের চাপে চাপে ঠাকুরের হাতের আঙুল, পায়ের আঙুল, আরও কত কী তৈরি করতেন। নানারকম মুখের ছাঁচ ছিল তাঁর কাছে। কোনটা দুর্গার, কোনটা লক্ষ্মীর, আবার কোনট সরস্বতীর। কার্তিক, অসুর সকলেরই ভিন্ন ভিন্ন মুখের ছাঁচ ছিল। সিংহ, মোষ এগুলো সব হাতে হতে তৈরি করতেন। আরও অনেককিছু হাতের চাপে চাপে রূপ পেত। একতাল মাটি নিয়ে চেষ্টা করতাম, হত না। যেগুলো হত সেগুলো বিতিকিচ্ছিরি রূপ নিত। কিন্তু সেই শিল্পী হাসতেন। বলতেন, "ওভাবে নয়, বাবা এভাবে করো।" কাজের ফাঁকে শেখাতেন। দেখতাম কীভাবে করছেন, না পারতাম না। পরেও কোনওদিন পারিনি!


ইস্কুল থেকে ফিরেই কোনওরকমে বইখাতা রেখে, ছুটতাম। এখানে এলেই মনটা ভরে উঠত আনন্দে। ভাবতাম, ওই ঠাকুর গড়া কারিগরের মতো যদি হতে পারতাম। আজও ভাবি। ঠাকুর গড়ার কারিগর না বলে শিল্পী বলাই উচিত তাঁকে।

ওই শিল্পীর কাছে যেতাম প্রতিদিন সকাল বিকেল। দেখতাম সকালবেলার না-হওয়া অংশগুলো হয়ে গেছে। সবচেয়ে ভাল লাগত সিংহ। মনে হত এই বুঝি ঝাঁপিয়ে পড়ল। ঠাকুরের গায়ে রং পড়লেই কেমন যেন বদলে যেত। আর যখন শাড়ি, জামা-কাপড় পরানো হত তখন বেশ লাগত। আবার কোনও কোনও ঠাকুরের পরনে থাকত মাটির সাজ। সেগুলোর ছিল অন্যরকম সৌন্দর্য। চোখ আঁকা হলেই আনন্দে নেচে উঠতাম। মনটা খারাপ হত। এবার তো সবাই চলে যাবে। ফাঁকা হয়ে যাবে শিল্পীর ঘর। অনেকটা সময় ফাঁকা থাকবে। প্রতিদিন প্রতিমা শিল্পীর কাছে আসাটা একটা অভ্যাস হয়ে গেছিল। প্রায় মাস দুয়েক একই কাজ ছিল ইস্কুল ফিরে আর বিকেলে। দুর্গা মণ্ডপে মণ্ডপে চলে গেলেই শুরু হত লক্ষ্মী, কালী ঠাকুর তৈরির কাজ। কিছুটা খেদ হয়তো মিটত। দুর্গার ওই বিশালত্বের কাছে লক্ষ্মী, কালী কিছুই নয়।

মণ্ডপে মণ্ডপে ঘুরে খুব যে ঠাকুর দেখতে যেতাম তা কিন্তু নয়।বুকভরা গন্ধ! ধুনো, গুগগুলের গন্ধের একটা মাদকতা আছে। সেটা বেশ লাগে। বাড়ির পুজোগুলো ছিল ভিন্নরকম। অদ্ভুত পুজো পুজোর ঘ্রাণ পেতাম বাড়ির আনাচকানাচে। বিশেষ করে, মফসসলের বাড়ির পুজোয়। সবচেয়ে মজা লাগত প্রতিমার পাশে রাখা একমানুষ সমান তালপাতার পাখা দেখে। দু'পাশে দুটো থাকত। এখনও থাকে। ভাবতাম, কারা হাওয়া করেন ওই তালপাতার পাখা দিয়ে। বিস্ময় লাগত। এখনও লাগে। আজও কাউকে দেখলাম ওই পাখা দিয়ে হাওয়া করছেন। বনেদি বাড়ির দুর্গাপুজো দেখতে ভাল লাগে। ছবি তুলতে আরও ভাল লাগে। কত বিষয়! কত ব্যস্ততা পুজোর বাড়ির লোকজনের।


চাকরিজীবন শুরু হতেই পুজো সীমাবদ্ধ হয়ে গেল চারদিনে। আগে আবার কাগজের অফিসে কোনও ছুটিছাটা মিলত না। যেতে হত। ওই রাত্রিবেলা ফেরার পথে আলোর সাজ সব চোখে পড়ত। তখন তো থিমের পুজোটুজো ছিল না। তাই রাস্তাঘাটে ভিড় ছিল না এত। এখন তো চতুর্থী-পঞ্চমী থেকেই জনস্রোত। সেসময় ষষ্ঠীর দিন ঠাকুর দেখতে বেরোলে আওয়াজ দিত। তবে এখনও আসা-যাওয়ার পথে প্রতিমা গড়ার দু'এক ঘর শিল্পীকে দেখা যায়।

দাঁড়িয়ে পড়ি, দেখি। মনে ছোটবেলার দিনগুলো। এখনও নীল আকাশ দেখলেই ঘ্রাণ পাই কাশফুলের।

বহুবছর হল কলকাতা কিংবা শহরতলির পুজো দেখিনি। এখন যেন মনে হয়, সবকিছুই আরোপিত। ছোটবেলার নিষ্কলুস আনন্দ উধাও। তাই বাইরে বেরিয়ে যাওয়ার মধ্যে সুখ খুঁজে পাই। সেই সুখ আরও আনন্দের হয় যখন সেখানে গিয়ে পুজোর মজা পাই। পেয়েওছি। সবচেয়ে মজা পেয়েছিলাম কিরিবুরু-মেঘাতাবুক্ত গিয়ে। সে এক অভিজ্ঞতা। মনোহরপুর যখন পৌঁছেছি সন্ধ্যা নেমেছে। শুনলাম, ওপরে যাওয়ার কোনও গাড়ি নেই। একজন বললেন, "দূরে ওই ফৌজি গাড়ি দেখছেন ওদের বলুন। যদি ওরা নেয়।" গিয়ে দেখি ফৌজি নয়, আধা সেনা সিআইএসএফ। ওদের

অফিসার ছিলেন বাঙালি। বললেন, "আমাদের রেশন নেওয়া হোক, তারপর যাব। উঠে পড়বেন ওপরে। সেদিন ছিল ষষ্ঠী। গাড়ির ডালা খুলে দিলে উঠলাম। দেখি, সিমেন্টের গুঁড়োয় ভর্তি। গাড়ি যত ছোটে, তত সিমেন্ট ওড়ে। মানিয়ে নেওয়া ছাড়া উপায় নেই। যাইহোক, গাড়ি একসময় এসে পৌঁছল কিরিবুরু। ইতিমধ্যে ওই অফিসারের সঙ্গে আলাপ জমে গেছিল। উনি বললেন, "থাকবেন কোথায়?" আমরা সমস্বরে জানালাম, জানি না। উনি ওই রাতেকিরিবুরু হিলটপ বাংলোয় নিয়ে গেলেন ব্যবস্থা করে দিলেন। হঠাৎ দূর থেকে হালকা একটা ঢাকের শব্দ কানে আসে। ঢাক যেন বলছে-- আজ ষষ্ঠী, আজ ষষ্ঠী। রাত অনেক হয়েছে। বেশ ঠান্ডা। এটা ওডিশার দার্জিলিং।


সকালে বেরিয়ে অবাক হওয়ার পালা। চমৎকার জায়গা! পাশেই ভিউ পয়েন্ট বা নজরঠাঁই। এখান থেকে দেখা যায় কতশত পাহাড়। ঢেউ খেলানো সবুজ গালচে মনে হয়! চারিদিকে আহ্লাদি সবুজ! আরণ্যক অনুভূতি! প্রকৃতিতে বুঁদ হয়ে যেত হয় অখেয়ালে। বর্ষা শেষের শরতে সবুজ হয়েছে আরও ঘন সবুজ। গাছের ছায়ায় গা-শিরিশিরি। প্রকৃতির আলয়ে গা ছেড়ে দিয়ে নিজের সঙ্গে নিজের ভাল লাগা। মনের আনন্দ। এমন ভাল লাগা আরও ভাল লাগা হয়ে ওঠে যখন বতাসের শব্দে ভেসে পুরোহিতের মন্ত্রোচ্চারণ আর মৃদুমন্দ ঢাকের বোল। অপূর্ব শব্দের উষ্ণ আহবান।

পাহাড় অরণ্যের কোল ঘেঁষে মণ্ডপ। সে মণ্ডপটি ছিল বড়ই মজার।রং-বেরঙের শাড়ি দিয়ে বানানো। দুর্গা প্রতিমার মুখটি ভারী মিষ্টি। মনে হল, মা তো এমনই হয়। সাজের বাহুল্য নেই। সাজানোর আতিশয্যও নেই। কিন্তু আন্তরিকতা অঢেল। ছোটবেলার সেই ঘ্রাণ পেলাম। প্রতিমার সেই মুখ, সেই চোখ! প্রতিমাটি দু'চোখ ভরে দেখার। যেমনটা দেখতাম ইস্কুল ফিরে ওই শিল্পীর কাছে। দু'হাত ভরে প্রসাদ পেলাম পুজোর পর। খাব কী, প্রসাদের গন্ধে ছেলেবেলার জলছবি দেখি দু'হাতের ভিতর। প্রকৃতির অতলে খানিক বিশ্রাম নিতে এসে কিরিবুরু-মেঘাতাবুরুই খুঁজে পেলাম শৈশবের দিনগুলো। পুজোর দিনগুলো ফিরে এল। আদিম অরণ্যের মাঝে ঝরনা। পাথর ছুঁয়ে ছুঁয়ে তার নেমে আসা, জলের ছন্দে সংগীত হয়ে ওঠে ঝরনা শব্দ। মধ্যাহ্নের অরণ্য, পাহাড় জাদুদণ্ড বুলিয়ে দিয়েছে চারিদিকে। তাই আরও অপরূপা হয়ে উঠেছে কিরিবুরু-মেঘতাবুরুর সবুজ রাজ্যপাট।


ছোটবেলার পুজোর স্মৃতি পেয়েছিলাম ছিতকুল যাওয়ার পথে নারকান্ডায়। সেদিন ছিল দশমী। তার আগে সিমলায় অষ্টমী- নবমী। সিমলা কালীবাড়ির দুর্গাপুজোয় বেশ লেগেছিল। প্রসাদ হিসেবে গোটা গোটা হাত ভর্তি ফল দিয়েছিলেন পুরোহিত। সিমলা থেকে বেরিয়ে নারকান্ডায় পৌঁছতে বেশ বেলা হয়েছিল। দেখি সব দোকানপাট বন্ধ। এমনকী খাওয়ার হোটেল-রেস্তরাঁরও ঝাঁপে লাঠি। খাব কোথায়! পেটে তখন জনা চার-পাঁচ ইঁদুর ডন-বৈঠক দিচ্ছে। অগত্যা স্থানীয় একজনকে জিজ্ঞেস করতেই তিনি বললেন, "আজকে তো সব বন্ধ। ওই দেখুন, ওখানে দশেরার ভাণ্ডারা চলছে বসে পড়ুন। চলে যান।" এমন করে আগেও খেয়েছি। তাই বসতে কুণ্ঠা বোধ করলাম না মোটেও। আমি, নির্মল, সুজাতা আর ওদের পুত্র শর্মদীপ বসে পড়লাম। এমনিতেই পাহাড়ি লোকজন খুব ভাল, আন্তরিক হয়। আমরা কলকাতা থেকে ঘুরতে যাওয়ার পথে ভাণ্ডারায় বসে পড়েছি দেখে বাড়তি খাতির করলেন। গরম গরম খিচুড়ি, তরকারি, ভাজা, পায়েস আর মিষ্টি খাওয়া হল। অপূর্ব তার স্বাদ। এখনও মুখে লেগে আছে। তার ওপর খিদের মুখ। খেয়েদেয়ে রওনা দিলাম কিন্নরের পথে।এমনভাবে খেতে বসে যাওয়ার অভিজ্ঞতা আগেও ছিল। ছোটবেলায় দেখেছি পুজোর একদিন দরিদ্র নারায়ণ সেবা একটা ব্যাপার ছিল। কেউ কেউ বলত কাঙালি ভোজন। এটা মূলত অষ্টমী কিংবা দশমীতে হত পুজোর প্যান্ডেলে। এখন আর দেখি না। এখন খাওয়াদাওয়াটা নিজেদের মধ্যে হয়। বাইরের লোকজন নয়। কিন্তু আগে ছিল। তখন কলেজ- ইউনিভার্সিটি পড়ি। বেড়াতে গেছি। জায়গাটার নাম মনে নেই। তবে খুব জনপ্রিয় জায়গা নয়। আমাদের মতো ভবঘুরেদের জায়গা আর কী! সেটাও ছিল দুর্গাপুজোর সময়।

বরুণ, আমি, নিতাই আর একজন ছিল। এ-মুহূর্তে তার নাম মনে আসছে না। তবে শ্রীকুমার হতে পারে। আমার মনে হচ্ছে জায়গাটা ছিল বীরভূমের কোথাও একটা! বরুণ খুব জোরের সঙ্গে জানাল, জুনপুট। সেইসময় জুনপুটের কেউ নাম জানত না। যাইহোক, জুনপুটের নাম তখন কেউ শোনেনি। সেদিন ছিল নবমী। দশমী বাড়ি থাকব বলে আগের দিন ফিরছিলাম। হাঁটুজল নদী পেরিয়ে মেচেদা থেকে লোকাল ট্রেনে হাওড়া ফেরার ছিল। তা নদী পেরিয়েই দেখি একটা পুজো প্যান্ডেল। সেখানে পাত পেড়ে খাওয়ার আয়োজন চলছে। শুনলাম কাঙালি ভোজন। প্রচণ্ড খিদে পেয়েছে। আর খাওয়াটাও যদি মাগনায় হয়ে যায়, মন্দ কী! পয়সাটাও বাঁচবে। বসে পড়লাম। ক্লাবেরলোকজন এসে বললেন, আপনাদের দেখে তো অন্যরকম মনে হচ্ছে। আমরা খিদের কাছে আবার অন্যরকমের কী আছে। সবশেষে খুলেই বলতে হল। আমাদের চারজনকে একটা মাটির বাড়ির দাওয়াতে বসে খেতে দিলেন তাঁরা। তালিকায় ছিল খিচুড়ি, লাবড়া আর পায়েস। খুব যত্ন করে খাইয়েছিলেন ক্লাবকর্তারা। তবে সকলের সঙ্গে বসে খাওয়ার মজা থেকে বঞ্চিত থাকলাম।

পুজোর একটা সন্ধে আমার আজও মনে আছে। দুর্গাপুজো নয়, ছিল কোজাগরী লক্ষ্মী পুজো। গেছিলাম এক প্রত্যন্ত গ্রামে। চাঁদের আলোয় ভাসিয়ে দিচ্ছে চরাচর। হঠাৎই আকাশ ভরে গেল মেঘে। বাদল মেঘ ছেয়ে দিল জ্যোৎস্না-ধোয়া আকাশ। ঝমঝম করে প্রবল বেগে বৃষ্টি এল। মিনিট দশ-পনেরো হওয়ার পর বয়ে শরতের আকাশ খুলল তার নিজের রূপে। জলধৌত জ্যোৎস্না আরও অপরূপা। সেই গ্রামে ছিল প্রচুর নারকেল আর তালগাছ। তালপাতার ওপর চুঁইয়ে চুঁইয়ে পড়ছে জ্যোৎস্না। সে এক অপার্থিব সৌন্দর্য। মনে হচ্ছিল, কেউ যেন গলানো রুপো ঢেলে দিয়েছে তালগাছে। আর সেই গলানো রুপো গড়িয়ে গড়িয়ে পড়ছে। জভাবলাম, একটা পাত্র নিয়ে যাই গাছের নিচে, যদি পাই গলানো রুপো। আসলে অতীন্দ্রিয় সুন্দর ধরতে নেই। সে তো মায়ার খেলা! শুধু দু'চোখ ভরে দেখার! তাই আর রুপোর তালগাছ - দেখেছি দূর থেকে। রাত যত গভীর হয়েছে, ততই তার রূপ - খুলেছে পরতে পরতে। দেখতে দেখতে প্রকৃতিতে বুঁদ হয়ে কেটে যায় রাত! প্রকৃতির অতলে অপার আনন্দ! চন্দ্রাহত গ্রামজ্যোৎস্নায় ঘোর লাগে চোখে। সেই নীল চাঁদের স্মৃতি, পুজোর স্মৃতি বশ করে আছে মন-হৃদয়ের প্রবল প্রণয়ে!

 

বনেদি বাড়ির সিক্রেট রেসিপি

কথিত আছে, মা দুর্গা উত্তর কলকাতার দাঁ বাড়িতে গয়না পরেন, শোভাবাজার রাজবাড়িতে দ্বিপ্রাহরীক আহার সারেন আর রাতে নীলমণি মিত্রের বাড়িতে আড্ডা গল্পে পুজো কাটান। এছাড়াও কলকাতার উত্তর থেকে দক্ষিণে প্রাচীন কলকাতার স্মৃতি আঁকড়ে দাঁড়িয়ে থাকা বহু বনেদি বাড়িতেই জাঁকজমকের সঙ্গে দুর্গোৎসব পালিত হয়। বিচিত্র তাদের কাহিনি, নানারকম তার জাঁকজমক। এরকমই কয়েকটি বনেদি বাড়ির সিক্রেট রেসিপির হদিশ রইলো এবারের রবিবারের অনন্যায়।

পাথুরিয়া ঘাটা ঘোষ বাড়ি


কমলালেবুর ঘি ভাত

কী কী লাগবে

গোবিন্দভোগ চাল- ১ কাপ, কমলালেবু- ১ টা, খোয়া ক্ষীর -২ চামচ, চিনি- হাফ কাপ, নুন- ২ চামচ, ছোট এলাচ- ৪টে, লবঙ্গ- ৪ টে, আমন্ড- ১০ টা, কাজুবাদাম -১০ টা, কিশমিশ- ১ টা, কমলার জুস- হাফ কাপ, Shalimar's সাদা তেল

সাজাবার জন্য:

চেরি ৫ টা, পেস্তা ১০ টা

কীভাবে বানাবেন

চাল ধুয়ে ভিজিয়ে রাখতে হবে। এবার শুকনো কড়াইতে ২ চামচ ঘি দিয়ে ওর মধ্যে কাজু, কিশমিশ, আমন্ড দিয়ে ভেজে তুলে রাখুন। আরও এক চামচ ঘি দিয়ে তাতে গোটা গরম মশলাগুলো দিয়ে দিন। নেড়েচেড়ে চাল দিয়ে দিন। চাল ভাজা হলে চিনি মিশিয়ে দিন। এবার কমলালেবুর রসের সঙ্গে স্বাদমতো নুন-চিনি মিশিয়ে ভাতে ঢেলে দিন। এই রস যেন মিষ্টি হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। ১০ মিনিট পর ঢাকা খুলে খোয়া ক্ষীর, ভেজে রাখা কাজু কিশমিশ মিশিয়ে দিন। আবারও ১০ মিনিট ঢেকে রাখুন। এবার কমলার খোসা উপর থেকে ছড়িয়ে ৫ মিনিট ঢেকে রাখুন। ৫ মিনিট পর ঢাকা খুলে কাজু-পেস্তা ছড়িয়ে পরিবেশন করুন।

মার্বেল প্যালেস


মাছের বিরিয়ানি

কী কী লাগবে

মাছ- ৭৫০ গ্রাম (কাতলা, ভেটকি, বড় রুই পছন্দমতো মাছ নিন, পিস গুলো বড় হতে হবে),

বাসমতি চাল- ৫০০ গ্রাম, দই- ১ কাপ, টোম্যাটো- ১টা বড়, পেঁয়াজ- ৪টি, কাঁচালঙ্কা- ৬টি, ধনে পাতা- ১ আঁটি,

লেবুর রস- ১ চামচ, আদা রসুন বাটা- ২ চামচ, দারচিনি- ১টি স্টিক, এলাচ- ৪টি, লবঙ্গ- ৪টি, স্টার অ্যানাইস- ২টি

জায়ফল- ১টি, জয়িত্রী- ২টি পাতলা কোয়া, বিরিয়ানির মশলা, তেজপাতা, Shalimar's সাদা তেল, নুন, চিনি

কীভাবে বানাবেন

দই খুব ভালো করে ফেটিয়ে নিন। পেঁয়াজ ঝিরিঝিরি করে কেটে নিন। কাঁচালঙ্কা লম্বালম্বি চিড়ে নিন। ধনে পাতা মিহি করে কুঁচিয়ে নিন। মাছের টুকরো খুব ভালো করে ধুয়ে নেবেন। এবার একটি পাত্রে অর্ধেক কাপ ফেটানো দই, লেবুর রস আর আদা রসুনের পেস্ট ভালো করে মিশিয়ে নিন। মিশ্রনে মাছগুলি দিয়ে ম্যারিনেট করুন।বাসমতি চাল ভালো করে ধুয়ে কয়েক ঘণ্টা জলে ভিজিয়ে রাখুন। তারপর জল ঝরিয়ে নিন ভালো করে। খেয়াল রাখবেন চালে জল যেন থেকে না থেকে যায়। এবার জলে সামান্য নুন মিশিয়ে তাতে চাল সিদ্ধ করুন। একে একে তাতে তেজপাতা, দারচিনি, এলাচ, লবঙ্গ, জয়িত্রী, জায়ফল এবং স্টার অ্যানাইস দিয়ে দিন। খেয়াল রাখবেন চাল যেন আধসিদ্ধ হয়।


চাইলে গোটা মশলাগুলি ভাত থেকে তুলে নিতে পারেন।এবার একটি বড় পাত্রে তেল গরম করুন। তাতে ঝিরিঝির করে কাটা পেঁয়াজ দিয়ে দিন। সোনালি করে ভাজা হলে তাতে মেশান টোম্যাটো কুচি, বাকি অর্ধেক দই, নুন এবং চিনি। আলতো করে নাড়তে থাকুন। টোম্যাটো নরম হয়ে গেলে তাতে ম্যারিনেট করা মাছ, সামান্য বিরিয়ানির মশলা এবং কাঁচা লঙ্কা চেরা দিয়ে দিন। কষাতে থাকুন।মাছ ভালো করে কষিয়ে রান্না হয়ে গেলে গ্যাস বন্ধ করে দিন। মাছের ঝালটি আলাদা করে রেখে দিন। এবার একটি বড় ভারি পাত্র ঢিমে আঁচে গরম করুন। আধ সিদ্ধ ভাত পাত্রে ছড়িয়ে দিন। তার উপর গ্রেভি সুদ্ধ মাছ ছড়িয়ে দিন। উপরে ছড়িয়ে দিন ধনে পাতা। মাছের লেয়ারের উপর ফের ভাতের লেয়ার তৈরি করুন।চালের উপর বাকি মাছটুকু লেয়ার করে দিন। উপরে ফের ছড়িয়ে দিন ধনে পাতা। এবার পাত্রটি ঢেকে দিয়ে এয়ার টাইট করে দিন। এয়ার টাইটের জন্য আটা মেখে ঢাকনার চারপাশে আটকে দিন। এবং উপরে শিলনোড়া বা জল ভর্তি বড় পাত্র চাপিয়ে দিন। মিনিট ১৫ পাত্রটিকে আগুনের আঁচে রেখে দিন। সময়মতো পাত্র নামিয়ে সাবধানে ঢাকনা খুলে হালকা হাতে হাতা দিয়ে বিরিয়ানি মিশিয়ে নিন। গরম গরম পরিবেশন করুন।

সাবর্ণ রায়চৌধুরী বাড়ি

পুঁই চিংড়ি


কী কী লাগবে

১৫ টি মাঝারি আকারের চিংড়ি খোসা ছাড়ানো, ৩০০ গ্রাম পুঁই শাক বা মালাবার পালং শাক, ৩/৪ কাপ আলু কিউব করে কাটা, ৩/৪ কাপ কুমড়ো কিউব করে কাটা, ৩/৪ কাপ বেগুন কিউব করে কাটা, ১ চা চামচ পাঁচফোড়ন, ৩-৪ টি শুকনো লাল লঙ্কা, Shalimar's হলুদ গুঁড়ো ১ চা চামচ, দেড় চা চামচ Shalimar's লাল লঙ্কা গুঁড়ো, ৫ টেবিল চামচ Shalimar's সরিষার তেল, স্বাদে চিনি, লবণ স্বাদমতো


কীভাবে বানাবেন

চিংড়ি মাছ নুন হলুদ গুঁড়ো মেখে ভেজে তুলে নিন। ঐ তেলে শুকনো লঙ্কা, পাঁচফোড়ন দিয়ে একে একে সব সবজি, নুন, হলুদ গুঁড়ো, লঙ্কা গুঁড়ো দিয়ে ভাজুন। পুঁই শাক দিয়ে ঢেকে অল্প আঁচে রান্না করুন। সবজি থেকে বেরোনো জলেই রান্না হবে। হয়ে গেলে ভাজা চিংড়ি আর চিনি মিশিয়ে আরো কিছুক্ষন রান্না করে নামিয়ে নিলেই তৈরী।

চোরবাগান চ্যাটার্জি বাড়ি

নিরামিষ চিংড়ির মালাইকারি


কী কী লাগবে

গলদা অথবা বড় সাইজের বাগদা চিংড়ি- ১০টি, তেজপাতা- ২টি, শুকনো লঙ্কা- ২টি, দারচিনি- ১ ইঞ্চ, ছোটো এলাচ- ৪টি, লবঙ্গ- ৪টি, আদা বাটা- ১ টেবিল চামচ, নারকেল দুধ- ১ কাপ, দুধ- ১/২ কাপ, টকদই- ১/২ কাপ, Shalimar's হলুদ গুঁড়ো- ১ চা চামচ, কাশ্মীরি লঙ্কার গুঁড়ো- ২ চা চামচ, Shalimar's গরম মশলা গুঁড়ো- ১/২ চা চামচ, Shalimar's তেল- ৪ টেবিল চামচ, ঘি- ৪ টেবিল চামচ, নুন- স্বাদ অনুযায়ী, চিনি- স্বাদ অনুযায়ী


কীভাবে বানাবেন

চিংড়িগুলি খোসা ছাড়িয়ে নিন। তবে লেজের অংশটা ফেলে দেবেন না। আর যাঁরা মুড়ো খান, তাঁরা মুড়োও রেখে দিতে পারেন। তবে চিংড়ির পেটের কালো সুতোর মতো অংশটি অবশ্যই ফেলে দেবেন। চিংড়িতে অল্প নুন এবং হলুদ মাখিয়ে নিন। কড়াইয়ে সর্ষের তেল গরম করে তাতে সেগুলি সোনালি করে ভেজে নিন। তবে খেয়াল রাখবেন মাছ যেন কড়া ভাজা না হয়। চাইলে মাছ না ভেজে সিদ্ধও করে নিতে পারেন। সেক্ষেত্রে নুন-হলুদ মাখানো চিংড়িগুলি জলে ছেড়ে দিন। তাতে সামান্য সর্ষের তেল ছড়িয়ে দিন। গ্যাসের আঁচ বাড়িয়ে দিন। মাছ সিদ্ধ হয়ে এলে নামিয়ে নিন। এই জল ফেলে দেবেন না যেন! পরে গ্রেভিতে কাজে লাগতে পারে। আর জলের পরিমাণটা বুঝে নেবেন। কারণ বেশি পরিমাণে জল নিলে স্বাদ নষ্ট হয়ে যাবে। একটা পাত্রে টকদই এবং কাশ্মীরি লঙ্কার গুঁড়ো ভালো করে ফেটিয়ে নিন। এবার কড়াইয়ে ঘি গরম করে তাতে তেজপাতা, শুকনো লঙ্কা, দারচিনি, লবঙ্গ, এলাচ ফোঁড়ন দিন। সুগন্ধ উঠলে তাতে আদা বাটা দিয়ে নাড়তে থাকুন। কাঁচাগন্ধ চলে গেলে তাতে লঙ্কার গুঁড়ো মেশানো দই এবং সামান্য নুন দিয়ে ক্রমাগত নাড়তে থাকুন।মশলার তেল ছাড়লে তাতে সামান্য জলের ছিটে দিয়ে নেবেন। না হলে মশলা পুড়ে যাবে। আর গ্যাসের আঁচ সবসময় কম রাখবেন। মশলা কষা হয়ে গেলে তাতে দুধ এবং নারকেল দুধ মেশান। ক্রমাগত নাড়তে থাকুন। আঁচ কমিয়ে মিনিট দশেক ফুটতে দিন। এতে দিয়ে দিন স্বাদ অনুযায়ী চিনি। গ্রেভি বেশি ঘন হয়ে গেলে তাতে চিংড়ি সিদ্ধ করা জল দিয়ে নাড়াচাড়া করে নিন। আর চিংড়ি ভাজা দিয়ে রান্না করলে সামান্য গরম জল দিন। এবার চিংড়িগুলি এই ঝোলে দিয়ে দিন। ঝোল ঘন হওয়া অবধি আরও ৫ মিনিট রান্না করুন। শেষে মালাইকারির উপরে একটু ঘি এবং গরম মশলা ছড়িয়ে আঁচ বন্ধ করুন।

ভবানীপুর গিরিশ ভবন

ছানার কালিয়া


কী কী লাগবে

দুধ: দেড় লিটার, সাইট্রিক অ্যাসিড বা লেবুর রস: ২ টেবল চামচ, কিসমিস, পাকা টোম্যাটো: ৬টা, আদা বাটা: ২ চা চামচ, Shalimar's গুঁড়ো হলুদ: ১ চা চামচ, Shalimar's লাল লঙ্কা গুঁড়ো: ২ চা চামচ, Shalimar's জিরে গুঁড়ো: ১ চা চামচ, Shalimar's ধনে গুঁড়ো: ১ চা চামচ, Shalimar'sগরম মশলা গুঁড়ো: ১ চা চামচ, খাঁটি দেশি ঘি: ১ চা চামচ, Shalimar's তেল: ৪ টেবল চামচ, আলু: ২টো মাঝরি (ডুমো করে কাটা), দারচিনি: ১টা বড় স্টিক, ছোট এলাচ: ৩টে, লবঙ্গ: ৩টে, তেজপাতা: ২টো, নুন: স্বাদ মতো


কীভাবে বানাবেন

একটা বড় পাত্রে দুধ ফোটাতে থাকুন। আঁচ কমিয়ে সাইট্রিক অ্যাসিড বা লেবুর রস দিয়ে নাড়তে থাকুন। আস্তে আস্তে দুধে ছানা কেটে যাবে। পাতলা কাপড়ে ছানা ছেঁকে, জল ঝরিয়ে নিন। পাতলা কাপড়ে বেঁধে কলের মুখে ১ ঘণ্টা ঝুলিয়ে রাখলেই জল ঝরে যাবে। এক ঘণ্টা পর একটা বাটিতে নিন ছানা নিয়ে তার উপর নুন, গরম মশলা গুঁড়ো ছড়িয়ে ভাল করে মাখতে থাকুন। যতক্ষণ না ঠেসে মাখা হচ্ছে ভাল করে। এই মিশ্রণ থেকে হাতের আকারে ছোট ছোট বল গড়ে নিয়ে দুটো করে কিসমিস ঢুকিয়ে দিন প্রতিটা বলে। কড়াইতে তেল গরম করুন করে আলু ছাঁকা তেলে সোনালি করে ভেজে তুলুন। ওই তেলেই ছানার বল ভেজে তুলুন। ব্লেন্ডারে টোম্যাটো ভাল করে বেটে নিন। ফ্রাইং প্যানে তেল দিয়ে দারচিনি, ছোট এলাচ, লবঙ্গ, তেজ পাতা দিয়ে টোম্যাটো বাটা সঁতে করে নিন। যতক্ষণ না তেল ছাড়ছে। সামান্য নুন দেবেন। এ বার আদা বাটা দিয়ে এক মিনিট নেড়ে হলুদ, লঙ্কা গুঁড়ো, জিরে, ধনে গুঁড়ো দিয়ে নাড়তে থাকুন। এক কাপ জল দিন। সুন্দর গন্ধ বেরোলে ভেজে রাখা আলু দিয়ে চাপা দিয়ে সেদ্ধ হতে দিন। আলু সেদ্ধ হয়ে গেলে ছানার বল দিয়ে চাপা দিন। তেল ছেডে় আসা পর্যন্ত রান্না করে নামানোর আগে গরম মশলা, ঘি ছড়িয়ে দিন। পোলাও, সাদা ভাত, লুচি, পরোটা যে কোনও কিছুর সঙ্গেই খেতে পারেন।

মুক্তা রামবাবু স্ট্রিট চট্টোপাধ্যায় পরিবার

কাঁচা তেঁতুলের চাটনি


কী কী লাগবে

কাঁচা তেঁতুল, গুড়, Shalimar's হলুদ গুঁড়ো, নুন, পাঁচফোড়ন, Shalimar's সরষের তেল, সরষে বাটা


কীভাবে বানাবেন

তেল গরম করে পাঁচফোড়ন দিন। তেঁতুলের হাত দিয়ে ফাটিয়ে তাতে দিয়ে নুন, হলুদ গুঁড়ো দিয়ে ভাজুন। পরিমাণ মতো জল আর গুড় দিয়ে জ্বাল দিন। হয়ে গেলে সরষে বাটা মিশিয়ে নামিয়ে নিন।

 

সাইবার অপরাধ ও নারী

সৌরভ মিত্র

দেবীপক্ষ আসন্ন। চারপাশে উৎসবের রং লেগেছে তো বটেই, তার পাশাপাশি 'প্রতি আ বৎসরের ন্যায়, এইবারও' নিশ্চয় 'তুমি নারী তুমি দেবী', 'হোক নারীসত্তার জয়'- জাতীয় কথাবার্তায় ভরে উঠতে শুরু করেছে ফেসবুকের ওয়াল, কাগজ-পত্রিকার বিজ্ঞাপনের পাতাগুলি। শহরের আনাচকানাচে 'অঞ্জলির সময় সন্তানান দেহি বলুন, পুত্রান দেহি নয়'- জাতীয় দাবিদাওয়াও উঠতে শুরু করেছে হয়তো (এটা আলাদা কথা যে, 'সন্তান' শব্দটাও 'পুত্র'র মতো আদতে পুংলিঙ্গ, আর দু'টি শব্দই দ্বিবচন বা বহুবচনে লিঙ্গ-নিরপেক্ষ হয়ে যায়)!

কিন্তু প্রশ্ন হল, এই যে নারীকে সম্মান জানানোর এমন উদগ্র 'আগে কেবা প্রাণ করিবেক দান'-মার্কা প্রতিযোগিতা, তার কতটা আন্তরিকতা, কতটাই বা স্রেফ অর্থহীন আচার পালন? এতই যখন সদিচ্ছা, তাহলে কেনইবা পুরুষের স্যান্ডো গেঞ্জি থেকে শুরু করে সিমেন্ট বা শেভিং ক্রিমের বিজ্ঞাপনেও কোনও স্বল্পবসনার উপস্থিতির প্রয়োজন হয়? পুরুষদের কথা বাদই দিন, সার্বিকভাবে নারীদের চোখেও কি এই প্রবণতা বা ঘটনাগুলির মধ্যে কোনও মৌলিক গোলমাল ধরা পড়ে? মনে হয় না। আসলে, চিন্তাহীন ভোগবাসনা আর ভাবনাহীন পণ্যবাদ কবে যে ব্যক্তি-স্বাধীনতার লাল শালু গায়ে জড়িয়ে শালগ্রাম শিলার পাশের আসন দখল করেছে টেরই পাওয়া যায়নি! আজ যে-কোনও মুহূর্তে সারা পৃথিবীর সমস্ত ইন্টারনেট ট্রাফিকের পঞ্চাশ থেকে ষাট শতাংশের অভিমুখ বিভিন্ন পর্নোগ্রাফিক ওয়েবসাইট। আমাদের সংস্কারী দেশও পর্ন-আসক্তির দিক থেকে বিশ্বের প্রথম তিনে। না, পর্নোগ্রাফি দেখা অপরাধ নয়। কিন্তু, অর্ধেকের বেশি ইন্টারনেট সেই কাজেই 'খরচ' হলে বিষয়টা বোধহয় আর 'ব্যক্তিস্বাধীনতা'র গণ্ডিতে আটকে থাকে না। না, এগুলি অনর্থক 'ভিক্টিম-ব্যাশিং'ও নয়, ধর্ষণের জন্য খাটো পোশাককে দায়ী করার মতো নির্বোধ দোষখণ্ডনের প্রচেষ্টাও নয়। সভ্যতার অদ্ভুত কূটাভাসে তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়টাই সিংহভাগ ক্ষেত্রে বাঁদরের হাতের তরবারিতে পরিণত হয়েছে। কখন কে যে কার নাক-কান কেটে ফেলে, আন্দাজ পাওয়া দুষ্কর! ভেবে দেখুন না, সম্পর্কটা প্রেমেরই হোক বৈবাহিক (সেখানেও প্রেমের উপস্থিতি কাম্য যদিও), ঘনিষ্ঠ মুহূরে মুঠোফোনের ক্যামেরা চালু রাখার কী এমন অমোঘ তাড়না, মহান উদ্দীপনা থাকতে পারে?

যেখানে বিয়ের দু'-তিনমাসের মাথায় স্ত্রীর সঙ্গে রাগারাগির পর নিজেদেরই মধুচন্দ্রিমার চুড়ান্ত ব্যক্তিগত ভিডিয়ো শুধুমাত্র জব্দ করার উদ্দেশ্যে ওয়েবে আপলোড করে দেওয়ার মতো ঘটনাও এই দেশে ঘটেছে। প্রাকবিবাহ ব্রেক আপের 'প্রতিশোধ'-এর হাজার-হাজার গল্পও তো কারওর অজানা নয়। এই রিভেঞ্জ-পর্নোগ্রাফিরই নতুন এক রূপ 'ডোক্সিং'। তেমন কোনও রাগ বা প্রতিশোধস্পৃহা ছাড়াও মহিলাদের একান্ত 'ব্যক্তিগত' বা 'অন্তরঙ্গ' ছবি তাদের সম্মতি ছাড়াই পৌঁছে যাচ্ছে ওয়েবে। হাজারে-হাজারে শেয়ার বা ফরোয়ার্ড তো হচ্ছেই, নাম-পরিচয়-ঠিকানা ফাঁসের হুমকি দিয়ে শুরু হচ্ছে অবাধ ব্ল‍্যাকমেল। সরাসরি অর্থ বা শরীর- বিনিময়মূল্যেরও বৈচিত্রের কমতি নেই! বহুক্ষেত্রে তারপরও পরিচয় গোপন থাকছে না।


রিভেঞ্জ-পর্নোগ্রাফি বা ডোক্সিংয়ের কুশীলব উর্বর মস্তিষ্ক প্রেমিক বা স্বামীদের কথাও না হয় আপাতত সরিয়ে রাখি। আমরা দূরে কি জানি যে, মুঠোফোনে উপস্থিত প্রায় প্রত্যেকটি অ্যাপ্লিকেশন তার ব্যবহারকারীকে বুঝতে না- দিয়েই, যখন-তখন, যেখানে- সেখানে সেই ফোনেরই ক্যামেরা ও মাইক্রোফোনের মাধ্যমে শব্দ, ছবি বা ভিডিয়ো রেকর্ড করতে পারে? (কোনও অ্যাপ্লিকেশন ইনস্টল করার সময় সেটি যে 'অ্যাকসেস পারমিশন'গুলি নিয়ে থাকে, তার তালিকায় চোখ বোলালেই কথাটি অবিশ্বাস্য ঠেকবে না।) এমত অবস্থায় নিজে রেকর্ড করা তো দূরের কথা, ব্যক্তিগত মুহূর্তে ফোনের ক্যামেরাটির অভিমুখ বিপরীত দিকে রাখাই বিধেয়। কিন্তু, ও হরি আজকাল তো ফোনের দুদিকেই ক্যামেরা!


পাশের টেবিলে টেবিল না রাখুন... মোদ্দা মানবিক তার দানবিক করাই বিধেয়। সাইটগুলি সেক্স', 'ন্যুড 'হট ভিডিয়োকল'-এর লক্ষ- লক্ষ নমুনায় হয়ে রয়েছে, পড়বে বিগত কয়েক যে হোয়াটসঅ্যাপে উত্তেজক ভিডিয়োকল শুরু হয়েছে, কালজয়ী এই সমস্ত এই সমস্ত ওয়েবসাইট পৌঁছলেও ব্ল‍্যাকমেলিং, ' প্রতিদিন। সাংবাদিকদের করে রিপোর্ট প্রয়োজন রোজ একই স্থান-কাল-পাত্রের চলা শুধু। এই যে, বহু কর্মকাণ্ডের পরিণতি থাকা সত্ত্বেও ঘটনার সংখ্যা বেড়েই আমরা জাতিগতভাবেই 'জরিমানা নয়। এখন প্রশ্ন হল---সমস্যাটা প্রযুক্তির, নাকি প্রবৃত্তির?

সাইবার অপরাধ-সংক্রান্ত শিরোনামের নিচে হঠাৎ এমন 'শিবের গীত' অদ্ভুত লাগতেই পারে। কিন্তু ঘটনাচক্রে,

তো কিম কর্তব্য? আপদটিকে শুইয়ে রাখুন, থাকলে বন্ধ করে কথাটি হল, সম্পর্কের মাঝে উপস্থিতি বর্জন পর্নোগ্রাফিক ভারতীয় 'অ্যামেচার সেলফি' আর ইতিমধ্যে সম্পৃক্ত এবার উপচে যখন-তখন! এমনকি, বছরে চতুর্দিকে সংক্রান্ত স্ক্যাম সেখানে প্রদর্শিত চলচ্চিত্রগুলির উৎসও ওয়েবসাইট। ছবি বা ভিডিয়ো অবধি না চলছে দেদার সেক্সটর্শন'। এক গতে। আজকাল নতুন লেখারও বোধহয় পড়ে না। রোজ- প্রতিবেদনের নাম বদলে কিন্তু, চিন্তার বিষয় সচেতনতা বৃদ্ধির পরও, সম্ভাব্য সম্বন্ধে যথেষ্ট ধারণা এই ধরনের উত্তরোত্তর চলেছে! আসলে, বাঁচাতে' হেলমেট পরতে অভ্যস্ত, 'মাথা বাঁচাতে' সাইবার-দুনিয়া নামক ভার্চুয়াল বা কৃত্রিম দুনিয়াটির হাবভাব আমাদের চারপাশের রক্ত- মাংস, ইট-কাঠ-পাথরের বাস্তব দুনিয়ার চাইতে আলাদা কিছু নয়। বরং, 'ধরা পড়ার' সম্ভাবনা যেহেতু কম, কালো সেখানে একটু বেশিই কালো। কোনও পথচলতি মেয়েকে মৌখিক বা শারীরিকভাবে হেনস্তা করলে থানা-পুলিশ বা গণধোলাইয়ের 'ভয়' থাকে। সমস্ত ধরনের সুকুমারবৃত্তির পাশাপাশি এই 'ভয়'ও বহু অপরাধ সংঘটিত হতে দেয় না। কিন্তু, সাইবার দুনিয়ায় পা রেখে এমন বহু সুকুমার গরম- গরম 'রিলস্'-এর খোঁটায় বাধা সৃজনশক্তিহীন বলদের মতো প্রবৃত্তির ঘানি টানতে শুরু করে। (শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের ভাষায়) 'শরীর বলতে হাঁ করা মুণ্ডু আর আপদমস্তক পেট'- সুলভ যাপনে তার বেশি কী-ই বা প্রত্যাশা করা যায়! তবে দুর্ভাগ্যজনকভাবে, সদাচারী শাকাহারি ওয়েব- যাপনের পরও নিশ্চিন্তে থাকার উপায় নেই। ধরাধামে অবতীর্ণ হয়েছে 'কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা' বা 'আরটিফিশিয়াল ইনটেলিজেন্স'। এসেছে 'ডিপফেক' জাতীয় অ্যাপ্লিকেশন।


যার দৌলতে যে-কোনও মানুষের একটি পাসপোর্ট আকারের ছবি পেলেই তাকে অশ্লীল চলচিত্রের নায়ক বা নায়িকা বানিয়ে তোলা যায়। কিছু ক্ষেত্রে এতটাই নিখুঁতভাবে যে, রীতিমতো গভীর ও পেশাদার বিশ্লেষণ ছাড়া ছবি বা ভিডিয়োগুলির সত্য-মিথ্যা যাচাই করা সম্ভব হয় না। রেডিট (Reddit) নামক সোশ্যাল মিডিয়ায় এই ধরনের বেশকিছু ঘটনা ২০১৮ সাল নাগাদ সামনে এসেছিল। এই রেডিটের কিছু-কিছু ব্যবহারকারীর 'সাবরেডিট' নামক ফোরাম চালানোর অনুমতি থাকে। তার সবগুলিই যে গোলমেলে, এমন নয়। তবে এমনই কয়েকটি সাবরেডিটে প্রথমে একের পর এক তারকার ও তারপর বেছে- বেছে দক্ষিণ এশীয় মহিলাদের ভুয়ো ছবি ও ভিডিয়ো আপলোড হতে শুরু করে। বিষয়টি রেডিট সংস্থার নজরে আনার পর তারা কয়েকটি ফোরাম বন্ধ করে দেয় ও 'কারওর অনুমতি ছাড়া তার একান্ত ব্যক্তিগত ছবি/ ভিডিয়ো আপলোড করা যাবে না'- এহেন একটি পলিসিগত পরিবর্তন এনেছিল ঠিকই, কাজের কাজ বিশেষ হয়নি। রেডিট থেকে বিষয়টি ছড়িয়ে গিয়েছে ইনস্টাগ্রামের প্রাইভেট পেজে, টেলিগ্রাম-অ্যাপের বিভিন্ন চ্যানেলে।...


তবে সাধারণত 'সাইবার অপরাধ'- শব্দবন্ধটি শুনলেই এদেশে সবার প্রথমে মাথায় আসে কুখ্যাত জামতাড়া গ্যাংয়ের নানাবিধ কার্যকলাপ, নিত্যনতুন ও অভিনব সব ফন্দিফিকির। কিন্তু, আইনি বর্গীকরণ অনুসারে সেগুলি 'ফাইনান্সিয়াল ফ্রড', সেই অর্থে ঠিক 'সাইবারক্রাইম' নয়। এদেশে সাইবার অপরাধের সবচেয়ে বেশি শিকার নারীই। আর সেই অপরাধগুলির শাস্তির পরিমাণ অত্যন্ত কম। না, এই দুঃখজনক পরিস্থিতির জন্য এককথায় পুলিশের 'সদিচ্ছার অভাব' বা 'অকর্মণ্যতা'কে একতরফা দায়ী করা ঠিক নয়, সমস্যাটি বহুস্তরীয়।

প্রথমত, এদেশে নারী বা শিশুদের প্রতি ঘটে চলা শত- সহস্র সাইবার অপরাধের মধ্যে সামান্য কয়েকটিই পুলিশ এফ

আই আর অবধি পৌঁছায়। 'জেনারেল ডায়েরি' বা 'জি ডি' বিষয়টি কোনও ঘটনা বা অপরাধের নথিকরণ মাত্র। হ্যাঁ, অনেকসময় জিডি-র পরিবর্তে এফআইআর নিতে পুলিশ গড়িমসি করে বটে, কিন্তু বেশিরভাগ ক্ষেত্রে অপরাধের শিকার বা তার পরিবারই লোকজানাজানির ভয়ে পুলিশি তদন্ত চায় না। তাদের আর্জি তদন্ত চায় না পেজটা ব্লক করিয়ে দিন' বা 'তমুককে ফোন করে একটু ধমকে দিন' অবধিই সীমিত থাকে। অথচ, ২০১৯ সাল থেকেই সাইবার অপরাধ সংক্রান্ত অভিযোগ জানাতে পুলিশের সামনে উপস্থিত না-- হয়েই 'ন্যাশনাল সাইবার ক্রাইম পোর্টাল'-এ নাম প্রকাশ না-করেও অভিযোগের ব্যবস্থা চালু রয়েছে। কিন্তু, তাও দেখা যাচ্ছে যে, ২০২০ সালে এই পোর্টালে প্রায় সাড়ে সতেরো হাজার অফিযোগ জমা পড়লেও এফআইআর-এর সংখ্যা তিরিশের কম। ২০২২ সালে পোর্টালের মোট অভিযোগ ছাপান্নহাজার ছাপিয়ে গেলেও এফআইআর-এর সংখ্যা নেমে এসেছে দশেরও নিচে! হাজারে- হাজারে অভিযোগের মধ্যে কাজের চাপে সবগুলিতে নজর দেওয়া যাচ্ছে না--- এমন অবস্থা তবু মেনে নেওয়া যায়, তাই বলে দশ? এই পরিস্থিতির কারণ সাইবার অপরাধের জটিল অনুসন্ধান পদ্ধতি।

একজন তদন্তকারীকে প্রায় প্রতি পদক্ষেপেই গুগল, ফেসবুক, টুইটার, ইনস্টাগ্রাম বা বিভিন্ন পর্নোগ্রাফিক ওয়েবসাইটগুলির মতো আংশিক বা সম্পূর্ণ অনিয়ন্ত্রিত পরিষেবা দানকারী (সার্ভিস প্রোভাইডার) সংস্থার ওপরে নির্ভর করতে হয়। এই সংস্থাগুলি বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই অভারতীয়। ফলে, ভারতীয় আইনরক্ষকদের নির্দেশিকা মানার ব্যাপারে তাদের কোনও সারা দুনিয়া থেকে যে পরিমাণ প্রশ্ন এই সংস্থাগুলির কাছে ধেয়ে আসে, সবগুলির উত্তর দেওয়া তাদের পক্ষে সম্ভবও নয়। বিশাল-বিশাল আকারের একাধিক ডেটাসেন্টারের হাজার, হাজার সার্ভার ঘেঁটে কোটি-কোজ ব্যবহারকারীর নামও নির্দির এক নির্দিষ্ট সময়ের নির্দিষ্ট কোনও কাজের ফিরিস্তি খুঁজে বের করা মোটেই সহজ কাজ নয়। শুধু অভিযোগের ভিত্তিতেই তো শাস্তি হতে পারে না, অভিযোগের সত্যতাও যাচাই করতে হয়।


যেখানে 'জনসংখ্যার নিরিখে ফেসবুকের অবস্থান ভারত ও চিনের ঠিক পরেই, যেখানে প্রতি মিনিটে আট লক্ষ টুইট, পাঁচ লক্ষ ই-মেল, দশ লক্ষ পোস্ট বা বারো-তেরো লক্ষ ইনস্ট্যান্ট মেসেজ সৃষ্টি হয়ে চলেছে, সেখানে সত্যতা যাচাইয়ের কাজ সিঁড়ি-ভাঙা অঙ্কের চেয়েও কঠিন। আর তাই অপরাধীর সম্ভাব্য পরিচয় জানা না-থাকলে সুবিচারের সম্ভবনা অনেকটাই কমে যায়। কিন্তু, তাও কি তদন্ত সফল হচ্ছে না? অবশ্যই হচ্ছে। কয়েকবছর আগে হায়দরাবাদের এই ঘটনাটি যেমন। তেরো-চোদ্দো বছরের এক স্কুলছাত্রীর ফেসবুক অ্যাকউন্টে সমবয়সী আর একটি মেয়ের অ্যাকাউন্ট থেকে বন্ধুত্বের প্রস্তাব আসে।

অচেনা হলেও রিকোয়েস্ট পাঠালে প্রোফাইলটিকে তার বিশ্বাসযোগ্যই মনে হওয়ায় সে অনুরোধে সাড়াও দেয়। (এই প্রসঙ্গে বলে রাখা ভালো, একটা ভুয়ো প্রোফাইলকে বিশ্বাসযোগ্য করে তোলার জন্য অপরাধীরা অল্প সময়ের মধ্যে বিভিন্ন পোস্ট করে সেগুলির পোস্টের তারিখ এডিট করে প্রোফাইলের এমন একটা চেহারা দেয় যে, দেখে মনে হবে কয়েকদিন বা সপ্তাহখানেক নয়, দু'-তিন বছর ধরে এই প্রোফাইলে নিয়মিত পোস্ট করা হয়েছে। আর সেই পোস্টগুলির মাধ্যমে প্রকাশিত ঘটনাপঞ্জিও একটা সাধারণ পুরুষ বা নারীর গড়পড়তা জীবনযাপনের দিকে ইঙ্গিত করে। এভাবে ভুয়ো প্রোফাইলকে বিশ্বাসযোগ্যভাবে সাজিয়ে তোলার পদ্ধতিকে 'প্রোফাইল কিউরেটিং' বলা হয়।)...


যাই হোক, বন্ধুত্বের প্রস্তাব গৃহীত হওয়ার পর দ্বিতীয় 'মেয়ে'টি জানায়- তার বাবার বদলির চাকরি, সদ্য বদলি হয়ে এই শহরে এসেছে, বছরের মাঝপথে হওয়ায় নতুন স্কুলের ভর্তির বিষয়ে সমস্যা হচ্ছে, এই শহরে তার কোনও বন্ধু নেই, ইত্যাদি। নিয়মিত চ্যাটিংয়ে বন্ধুত্ব কিছুটা গভীর হলে আলোচনার গতিবিধিও ব্যক্তিগত পরিসরে প্রবেশ করতে থাকে। মজার ছলে। জানতে চায়-- তোমার কি কোনও প্রেমিক আছে? তুমি কি ভার্জিন? প্রেমিকের সঙ্গে কখনও 'সেক্সটিং' (যৌনগন্ধী কথোপথন) করেছ? কী কথা হয়েছিল তার স্ক্রিনশট দেখাও প্লিজ! কখনও 'হট সেলফি' পাঠিয়েছ? কোন ছবিটা একবার দেখাও প্লিজ। আমিও 'পোজ' শিখতে চাই। এমন আরও গন্ডা তিন-চারেক 'দুষ্ট' প্রশ্ন।...


প্রথম মেয়েটিও তার নতুন সখির কৌতূহল নিরসনে কার্পণ্য করেনি। আর তার কিছুদিন পরই নেমে আসে বিপদ! ওই সমস্ত ছবি, সমস্ত স্ক্রিনশট প্রথম মেয়েটির পরিচিত মহলে, স্কুলে, ওয়েবে ছড়িয়ে দেওয়ার হুমকি আর ব্ল‍্যাকমেলিং। সৌভাগ্যবশত শিকার মেয়েটি তার বাড়িতে ঘটনাটা জানানোয় ঘটনার তদন্ত শুরু হয়, আর ফেসবুক সংস্থা থেকে পাওয়া তথ্যের সাহায্যে মূল অপরাধী, আবদুল মাজিদ নামক এক তৃতীয় বর্ষের ইঞ্জিনিয়ারিং ছাত্রের। পুলিশ গ্রেফতারও করে। সেই গুণধরের কম্পিউটার ঘেঁটে পুলিশেরও চোখ কপালে ওঠার দশা। ততদিনে সে প্রায় দুশো স্কুলছাত্রীর নগ্ন ছবি আর ভিডিয়ো সংগ্রহ করে ফেলেছে। ব্ল‍্যাকমেলিংয়ের উপার্জনও নেহাত কম নয়, প্রায় ত্রিশলক্ষ টাকা।

শুধু এমন বন্ধু বা হতাশ প্রেমিকই নয়, হারিয়ে যাওয়া/ চুরি যাওয়া/নতুন কেনার সময় বিনিময় করা মুঠোফোনের গ্যালারিতে (ডিলিটেড বা ফরম্যাটেড হলে রিকভার করা গ্যালারিতে) উপস্থিত তথাকথিত 'ব্যক্তি-স্বাধীনতা', 'জাস্ট হ্যান্ডিং ফান' বা বৈপ্লবিক 'নিজ-শরীরের অধিকার'-এর আধুনিক ও নিয়ো-নর্মাল নমুনার সৌজন্যেও স্কুল-কলেজের ছাত্রী থেকে সাধারণ গৃহবধু, শিক্ষিকা থেকে উচ্চপদস্থ আধিকারিক অবধি বহু নারী হয় ব্ল্যাকমেইলিংয়ের শিকার হচ্ছেন, নতুবা নিত্য ভাইরাল হচ্ছেন বিবিধ হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ, টেলিগ্রাম চ্যানেল, দেশি পর্নসাইট অথবা নিভৃতচারী ডার্কওয়েবে। ব্ল‍্যাকমেলারকে শায়েস্তা করা হয়তো সহজ। কিন্তু, দ্বিতীয় ক্ষেত্রে? হাজারবার ফরোয়ার্ড হওয়া কোনও তথ্যের সূত্র খোঁজার চাইতে সম্পূর্ণ সৎ রাজনৈতিক নেতা খুঁজে পাওয়া সহজ। সে খোঁজও যদি পাওয়া যায়, যা ছড়িয়ে রইল বিশ্বভুবনে? কথায় আছে, 'What happens at web, stays at web. Usually forever!'...


নারীদের বিরুদ্ধে ঘটে চলা আরও কিছু সাধারণ সাইবার অপরাধ হল বুলিং, ট্রোলিং, চরিত্রহনন, হ্যারাসমেন্ট বা হেনস্থাকরণ। এর মধ্যে বুলিং বস্তুটি আর্সেনিকের মতো 'স্লো পয়জন'। প্রান্তসীমায় না- পৌঁছনো অবধি অনেকসময় টেরও পাওয়া যায় না। আর বোঝার পর বেশি কিছু করার অবকাশ থাকে না। জনসংখ্যার শতকরা হিসেবে সারা বিশ্বে সবচেয়ে বেশি স্মার্টফোন ব্যবহারকারী দেশ হল দক্ষিণ কোরিয়া। আর সংখ্যার নিরিখে সেদেশের এক নম্বর অপরাধ হল এই সাইবার বুলিং। সেখানে ছ'বছর বয়সি শিশুরও অপরাধী হিসেবে লিপ্ত থাকার ঘটনা সামনে এসেছে। পরিসংখ্যান বা চমকের দিক থেকে আমাদের দেশও খুব বেশি পিছিয়ে নেই। কোনও ব্যক্তি বা গোষ্ঠীকে দীর্ঘদিন ধরে যে-কোনও প্রসঙ্গে ক্রমাগত অপমান, হেনস্থা, খোঁটা দেওয়া বা মানসিকভাবে আঘাত করে চলা হল 'বুলিং'। তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহৃত হলে তা 'সাইবার বুলিং'।

কিন্তু, 'হেনস্থা' বা 'অপমান'- - এসবের মাপকাঠি কী? ইউরোপ-আমেরিকায় কাউকে 'কালো' বা 'মোটা' বললে তা বর্ণবিদ্বেষ বা বডিশেমিংয়ের মতো নিন্দনীয় কাজ। এবার কল্পনা করুন, কেউ আপনাকে কালো, মোটা বা অকর্মণ্য বলে অপমান করায় ভারতের যে-কোনও প্রান্তের যে-কোনও থানায় অভিযোগ জানাতে ঢুকেছেন। ডিউটি অফিসার কীভাবে অভ্যর্থনা জানাবে? পুলিশ অফিসার বাদ দিন, আপনার ঘনিষ্ঠ বৃত্তের বহু মানুষেরও প্রতিক্রিয়া হবে, 'তুই সেরকম বলেই লোকে বলে, তা নিয়ে এত প্যানপ্যান করার কী আছো' এই জাতীয়। সমস্যা এখানেও। জাতি হিসেবে আমরা স্পর্শকাতর' হলেও '


'সংবেদনশীল' নই। তার সঙ্গে যুক্ত হয় আমাদের সংস্কৃতিগত 'সামাজিক দূরত্ব'। (সাম্প্রতিক কোভিডকালে শব্দবন্ধটি বিখ্যাত হয়েছে বটে, মর্মে বহু আগেই তা বাসা বেঁধেছিল।) একা-একা বিচ্ছিন্ন দ্বীপের মতো মানুষ, 'হৃদয়ের কথা বলিতে ব্যাকুল শুধাইল না কেহ'। মনোবিজ্ঞানের পরিভাষা অনুযায়ী ক্রমে ডিস্ট্রেসড থেকে ডিমরালাইজড, তারপর ডিপ্রেসড ও ধীরে-ধীরে সুইসাইডাল বা আত্মহত্যাপ্রবণ হয়ে ওঠে।... বিষয়টা কষ্টকল্পনা মনে হচ্ছে? বিগত একদশকে এই রাজ্যের (বিশেষত শহরাঞ্চলে) পনেরো থেকে পঁচিশ বয়সিদের যত আত্মহত্যার ঘটনা ঘটেছে, অন্তত তার একের পাঁচভাগ মানুষ কোনও না কোনও ভাবে সাইবার বুলিংয়ের শিকার ছিল। তাদের মেসেজবক্স/ হোয়াটসঅ্যাপ/টেলিগ্রাম/ ফেসবুক ম্যাসেঞ্জার বিশ্লেষণ করে তেমনই ইঙ্গিত পাওয়া গিয়েছে। আট ও নয়ের দশকের সিনেমার রাগী নায়কদের মুখে

প্রায়শই একধরনের সংলাপ শোনা যেত। 'ইঁহা ম্যায় হি পুলিশ, ম্যায় হি আদালত, জল্লাদ ভি ম্যায় হুঁ!' এখন চিত্রনাট্যে সামান্য বদল এসেছে। সেই স্থানটি দখল করেছে সোশ্যাল মিডিয়ার ক্যাঙ্গারু কোর্ট, অত্যাধুনিক মেট্রো শহরের ভার্চুয়াল খাপ পঞ্চায়েত।

ট্রোলিং আর চরিত্রহনন আফ্রিকার জংলি কুকুরদের দলবেঁধে জ্যান্ত চিবিয়ে খাওয়ার মতোই 'প্রাকৃতিক ঘটনা'। কেউ আমার মত বা বিশ্বাসের বিরুদ্ধে কিছু লিখেছে? আচ্ছা। সেই মুহূর্ত থেকেই 'কী বলেছে' তার চেয়ে 'কে বলেছে' সেটাই হয়ে যায় মুখ্য। আর সেই 'কে' যদি কোনও মহিলা হয়, আর তার সোশ্যাল মিডিয়ায় যদি পুরুষ- বন্ধুর সঙ্গে বা মদের গ্লাস হাতে বা ক্লিভলেস পোশাক পরিহিতা ছবি আবিষ্কৃত হয়, তাহলে তো আর কথাই নেই। জনতান্ত্রিক সূক্ষ্ম অনুভূতি নিমেষের মধ্যে তাকে দেহোপজীবিনী অবধি আখ্যা দিয়ে ফেলে। কোনও মহিলা সহকর্মীদের পদোন্নতির ক্ষেত্রে যত ঘন-ঘন বিভিন্ন গোত্রের 'ফিসফাস' জন্ম নেয়, অনলাইন ট্রোলিংয়ের পরিমাণ তার চেয়ে বেশি বই কম নয়। তবে বর্তমান প্রথম সারির সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মগুলির মধ্যে বেশিরভাগই অনলাইনে মহিলাদের নিরাপত্তা ও প্রাইভেসির প্রতি গুরুত্ব দিয়ে বেশ কিছু ফিচার সংযুক্ত করেছে। সাইবার অপরাধের ক্ষেত্রে দ্রুত অভিযোগ দায়ের করার জন্য সারকারি উদ্যোগে চালু হয়েছে 'সাইবার দোস্ত' নামক অ্যাপ। কেন্দ্রীয় সরকারের 'নির্ভয়া' ফান্ড থেকে দেশের প্রতিটি রাজ্যে নারী ও শিশুদের প্রতি সংঘটিত সাইবার অপরাধের দ্রুত তদন্তের জন্য স্থাপিত হয়েছে বিশেষ ফরেনসিক ল্যাবরেটরি।...

কিন্তু, এর কোনওটিই বোধহয় সাইবার দুনিয়ায় ঘটে-চলা মহিলাদের প্রতি হয়রানি বা সহিংসতা প্রতিরোধে যথেষ্ট নয়। কোনও মহিলাকে ট্রোল করে/গালাগাল করে/অশ্লীল ছবি বা মেসেজ পাঠিয়ে একদল মানুষ যে 'তৃপ্তি' পায়, সেটা

ব্যক্তিগত অসুস্থতা তো ও শিক্ষাব্যবস্থার ব্যর্থতাও বটে। প্রযুক্তির সম্মিলিত এই রোগের ওষুধ খোঁজা বৃথা। ঘটনাচক্রে, সাইবার দুনিয়ায় যে-কোনও ধরনের 'ব্রিচ' দু'টি সম্ভাব্য কারণেই ঘটতে পারে। প্রযুক্তিগত ত্রুটি অথবা মানুষের (ব্যবহারকারীর) ত্রুটি। তথ্যপ্রযুক্তি দুনিয়া বর্তমানে যে পর্যায়ে আছে, তাতে বর্তমানে সার্ভিস প্রোভাইডারদের সার্ভার বা সিস্টেমে ঢুকে কারচুপি করে ফেলা খাতায়-কলমে অসম্ভব না হলেও অত্যন্ত দূরহ কাজ। বরং সিংহভাগ সাইবার অপরাধের ক্ষেত্রেই দেখা যায়, মূল খলনায়ক কিন্তু ব্যবহারকারীর ভুলে/ অসাবধানতায় বা স্বেচ্ছায় নেওয়া কিছু পদক্ষেপ। কারওর ইমেল বা সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাকাউন্ট বেহাত হলেও (অনেকেই যাকে ভুল করে 'অ্যাকাউন্ট হ্যাক হয়েছে' ভাবেন) আদতে তা জিমেল বা ফেসবুক সার্ভারের সমস্যা বা সুরক্ষার খামতি নয়, সেটি ব্যবহারকারীর 'পাসওয়ার্ড চুরি'র ঘটনা। আর তাই সাধারণ ব্যবহারকারীদের প্রযুক্তিগত পরামর্শ দেওয়ার ক্ষেত্রে 'জটিল ও লম্বা পাসওয়ার্ড রাখুন', 'কখনও কাউকে পাসওয়ার্ড বা ওটিপি বলবেন না', 'অ্যাকাউন্ট থেকে লগ আউট না করে বেরোবেন না', 'পাবলিক ওয়াইফাই সংযতভাবে ব্যবহার করবেন', 'কম্পিউটারে পাসওয়ার্ড টাইপ করার সময় কেউ নজর রাখছে কিনা দেখে নিন', 'অপ্রয়োজনীয় অ্যাপ ডাউনলোড করবেন না', 'সবসময় আপডেটেড সিস্টেম/ অ্যাপ ব্যবহার করবেন', 'ব্যক্তিগত সমাজ 'তথ্য সুরক্ষিত রাখবেন' জাতীয় কিছু বহুচর্চিত উপদেশ শোনানো ছাড়া বিশেষ কিছু বলার থাকে না। বস্তুত, বাস্তব জীবনে যেটুকু'সিভিক সেন্স' ও 'কমন সেন্স' মেনে না চললেই নয়, সাইবারস্পেসে সেটুকু বজায় রাখলেই অনেকটাই সুরক্ষিত থাকা ও রাখা সম্ভব।

অনেকক্ষণ কড়া-কড়া কথা হল। নটে গাছটি মুড়োনোর আগে একটু অন্য ধরনের একটা ঘটনার কথা শোনা যাক। অবশ্য সাইবারস্পেসে ঘটলেও সেটিকে ঠিক 'সাইবার অপরাধ' বলা যায় কিনা, তর্কের বিষয়।... বছর ছয়- সাত আগে কলকাতা শহরেরই একটি থানায় একজন ষাট- বাষট্টি বছর বয়সি ভদ্রলোক বিদঘুটে অভিযোগ নিয়ে এলেন। একটি বহুতল অ্যাপার্টমেন্টের ফ্ল্যাটে তাঁরা স্বামী-স্ত্রী থাকেন। একমাত্র ছেলে বেঙ্গালুরু অথবা হায়দরাবাদে কর্মরত। বাড়িতে যোগাযোগের ব্যবস্থা বলতে তিরিশ-চল্লিশ বছরের পুরনো একটি ল্যান্ডলাইন ফোন ও ভদ্রলোকের একটি মোবাইল নাম্বার।


মাস সাত-আটেক ধরে প্রায় প্রতিদিন সন্ধে আটটা থেকে ন'টার মধ্যে সেই ল্যান্ডলাইনে একটা অদ্ভুত ফোন আসে। কলার আইডি- তে তাঁরই মোবাইল নাম্বার! তুললেও অপর প্রান্ত থেকে কোনও হুমকি-টুমকি নয়, এক অচেনা মহিলার চাপা গলায় খোসগল্প ভেসে আসে! ফোন নাম্বারের রহস্য বিষয়ে প্রশ্ন করলে বলে, "আমি ম্যাজিক জানি।" ভদ্রলোক সারাদিনে কখন কোথায় গিয়েছিলেন, কবে কী কেনাকাটা করেছেন, কার সঙ্গে কতক্ষণ কথা বলেছেন, ইলেকট্রিক বিল বকেয়া আছে কিনা, ইত্যাদি বহু খুঁটিনাটিই সেই রহস্যময়ীর নখদর্পণে! একটা সময় অবধি মজার ছলে নিলেও ভদ্রলোক ততদিনে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছেন। রহস্যময়ীকে চেপে ধরলে উত্তর আসে, "সবই আপনার পাপের ফল।" এদিকে ডায়াবেটিস লুকিয়ে এক-আধদিনের নলেনগুড়ের রসগোল্লা ছাড়া জীবনে আর কোনও পাপ নেই বলেই তিনি জানেন।

বহু পীড়াপীড়িতে বেয়াড়া অভিযোগখানা গ্রহণ করে পুলিশ অফিসার ভেবেছিল, নির্ঘাত কল-স্পুফিংয়ের বদমায়েশি। ল্যান্ডলাইনের কল ডিটেইলস বের করলেই বোঝা যাবে উৎসটা কোথায়। কিন্তু, সেখানে দেখা গেল ফোনগুলো ভদ্রলোকের মোবাইল থেকেই এসেছে। শুধু তাই নয়, মোবাইল নাম্বারটির কল ডিটেইলসে দেখা গেল--- সেই নাম্বার থেকেই ফোনগুলো করা হয়েছে! এই তথ্য ভদ্রলোককে জানাতেই তিনি রেগে আগুন,"রোজ-রোজ নিজেরই এক ফোন থেকে অন্য ফোনে কল করে আমি পুলিশ-কমপ্লেন লেখাতে আসব! আমি কি পাগল?" প্রতিকার না পেয়ে তিনি কোম্পানি-সহ সিমকার্ড বদলে ফেললেন। সেদিন সন্ধেয় আবার ফোন, কলার আইডিতে এবার নতুন মোবাইল নাম্বার! "কী ভেবেছিলেন, সিম পাল্টালে আমি টের পাব না?" হ্যান্ডসেট বদলেরও দিন পাঁচেক পর এক ঘটনা! এবার পুলিশ অফিসারের সন্দেহ হয়। পুরনো হ্যান্ডসেটটি চেয়ে নেয় অ্যানালাইসিসের জন্য। যা ভেবেছিল তাই। সেটি স্পাইওয়্যার ও রিমোট অ্যাকসেস অ্যাপের সগৌরব উপস্থিতি জানান দিচ্ছিল!


পরবর্তী তদন্তে উদঘাটিত রহস্যের লম্বা কাহিনি সংক্ষেপে কিছুটা এমন। ভদ্রলোকের পুরনো হ্যান্ডসেটটি আগে তাঁর ছেলে ব্যবহার করত। সেই ছেলের 'বিশেষ বন্ধুত্ব' ছিল তাদেরই অ্যাপার্টমেন্টের ঠিক নিচের ফ্ল্যাটের এক ইঞ্জিনিয়ার কন্যার সঙ্গে। ভদ্রলোক কোনও কারণে সেই বন্ধুত্ব মেনে না-নেওয়ায় তাদের বিচ্ছেদ হয়। তারই 'প্রতিশোধ' নিতে মেয়েটি ভদ্রলোকের হ্যান্ডসেটের সিকিউরিটি ভেঙে অমন ভূতুড়ে ফোনের কাণ্ডকারখানা শুরু করে। প্রাক্তন বন্ধুর প্রাক্তন ফোনের সঙ্গে তার নিজের ফোনটির ব্লু-টুথ পেয়ারিং থাকায় ও ওপর-নিচ ফ্ল্যাট হওয়ার কারণে ব্লু-টুথ সিগন্যালের আওতায় থাকায় প্রাথমিকভাবে ব্লু-টুথ হ্যাকিংয়ের মাধ্যমে হ্যান্ডসেটের মধ্যে নিজের বানানো এমন একটি অ্যাপ প্রবেশ করিয়েছিল যাতে ফোন চালু থাকলেই তার ব্লু-টুথও চালু হয়ে যায়। আর সেই পথেই কললগ, ফোনবুক, এসএমএস ইনবক্স ঘেঁটে ভদ্রলোকের প্রায় সমস্ত গতিবিধির ওপরই সে নজর রাখত। সিমকার্ড বদলের পরও এই ব্যবস্থায় কোনও বাধা আসেনি, নতুন নাম্বারটাও সহজে জানা গিয়েছে। হ্যান্ডসেট পরিবর্তনের পর মেয়েটি এসএমএস স্পুফিংয়ের মাধ্যমে ফোনের আপডেট পাঠানোর আছিলায় স্পাইওয়্যারের লিংক পাঠিয়েছিল শুধু। ভদ্রলোক সেই লিংকে ক্লিক করে ফেলেন। তারপর... না, শেষ অবধি তিনি মেয়েটিকে পুত্রবধূ হিসেবে মেনে নিয়েছিলেন কিনা, তা জানা যায়নি...

 

Comments


bottom of page