শীত পড়লেই ঠান্ডার সঙ্গে সোনা রোদ্দুর গায়ে মেখে মন করে উড়ু উডু। না-করার কিছু নেই। শীত মানেই বাইরে বেরিয়ে পড়া। বছর শেষের পাওনা ছুটিগুলোর সদগতি করা। তবে মাস দুই-তিন দুর্গাপুজোয় একটা বড় টুর হয়ে গেছে, তাই এবার কাছেপিঠে মনোলোভা জায়গা হলে ভাল হয়। তারই খোঁজখবর দেওয়াটা আমাদের নিত্যবছরের কাজ। কাছেপিঠে দু'চার দিনের বেড়ানোর খোঁজখবর দিচ্ছেন কমলেন্দু সরকার..
চা-বাগান আর নদী সঙ্গে পাখি: সুকাটার
উত্তরবঙ্গে চলে যাওয়া যেতে পারে নতুনের খোজে। জায়গার নাম সুকাটার। বুংকুলুজের কাছেই। বুংকুলুংও ভারী সুন্দর জায়গা। পাহাড়ের রানি দার্জিলিঙের কাছেই সকলেরই পরিচিত জায়গা মিরিক। চারিদিক চা-বাগানে ঘেরা। মিরিক থেকে মাত্র ১৪ কিমি দূরে সুকাটার। চা-বাগান নদীকে পাশে রেখে প্রকৃতি এখানে অপরূপা। প্রকৃতির মধ্যে দিয়ে মন ছুট দেবে হারিয়ে যেতে। এখনও অপরিচিত এক পাহাড়ি গ্রাম সুকাটার। চলে গেলেই নতুন এক অপরিচিত গ্রামে চমৎকার ছোট্ট এক নিরিবিলি কোলাহলমুক্ত পাহাড়ি জনপদ। পাহাড়ি পথে হাঁটতে বেশ লাগে! পাখির ডাক শুনতে শুনতে মন ভরে ওঠে। ডানা মেলে দিতে হয় গাছগাছালি আর পাহাড়ের হাতছানিতে। সকাল-সন্ধ্যা পাখির ডাক সঙ্গে পাহাড়ের ঠান্ডা হাওয়ার স্পর্শ এক ভিন্ন অনুভূতি, আলাদা শিহরন এনে দেয়া আর ভোরের বেলা কত জানা, না-জানা পাখির খুনসুটি আর ফুলের গন্ধে ঘুম ভাঙে। সঙ্গীর সঙ্গে হেঁটে নদীর পারে ভালবাসার আঁকিবুকি কাটতে অপূর্ব লাগে। মনে হয়, পৃথিবীর অপর শান্তি বিরাজমান।
কীভাবে যাবেন: গাড়িতে না-গেলে ট্রেনে এনজেপি বা শিলিগুড়ি থেকে যেতে সময় লাগে কমবেশি ঘণ্টা আড়াই-তিন। গাড়ি ভাড়া তিনহাজার টাকা।
কোথায় থাকবেন: থাকা-খাওয়া মাথাপিছু ১৫৫০ টাকা। ব্রেকফাস্ট থেকে ডিনার।
বুকিংয়ের যোগাযোগ: মনপাখি, পুলক ভদ্র ফোন: 8335892044/9088219921.
একটুকরো স্বর্গ: টুকরে
মিরিকের দিকে যখন যাওয়া গেছে আরও একটা জায়গায় ঘুরে আসি। মন্দ লাগবে না। বেশ লাগবে। একটুকরো স্বর্গ টুকরে। হ্যাঁ, জায়গাটির নাম টুকরে। চা-বাগানের গ্রাম। চারিদিকে শুধুই সবুজ। তাই এই একটুকরো স্বর্গ দেখে মনে হবে, স্বর্গের রং সবুজ না- হয়ে যায় না। চা-বাগানের গ্রাম টুকরের পাশ দিয়ে বয়ে চলেছে রংবংখোলা। তার সৌন্দর্য অবর্ণনীয়। কিছুটা দূরে গোপালধারা চা-বাগান। এই রূপসির প্রেমে না-মজে উপায় নেই। পাহাড়ের পাকদণ্ডী বেয়ে সবুজের ভিতর হারিয়ে যেতে ইচ্ছে করে। সবুজ সমুদ্র যেন। পাহাড়ি বাতাস যখন স্পর্শ করে শরীর তখন মনে হয় সবুজ সমুদ্রতীরে অন্তহীন আনন্দ-সুখ জড়িয়ে ধরছে হৃদয়। পাহাড়ের গায়ে টুকরে এনে দেয় এক অপূর্ব স্বর্গীয় অনুভূতি। সবুজের ফাঁকে কমলালেবু উঁকি দেয়। দু'চার দিন অবকাশ যাপনের এক আনন্দ-ঠিকানা টুকরে। পাখির ডাকে ঘুম ভাঙেটুকরেতে। আর সারাদিন কতশত গান শোনাবে পাখির দল।
কীভাবে যাবেন: যাঁরা কলকাতা থেকে সরাসরি গাড়িতে যাবেন তাঁদের কথা ভিন্ন। যাঁরা ট্রেনে যাবেন তাঁরা এনজেপি বা শিলিগুড়ি নেমে গাড়ি করে নিন। দু'আড়াই ঘণ্টা লাগবে। গাড়ি নেবে ৩৫০০ টাকা।
কোথায় থাকবেন: সোনাখাড়ি হোমস্টে, বিপ্লব দে, ফোন: 9733454779/8967928334. ভাড়া- প্রতিদিন মাথাপিছু থাকা-খাওয়া ২০০০ টাকা।
ঘরের কাছেই আরশিনগর: বাংরিপোসি
বাংরিপোসির সৌন্দর্য রূপসি নারী যেন। যার রূপে মজে চলে যাওয়া যায় নিরুদ্দেশের পথে। তাই কাঁকর বিছানো ধুলোমাটির পথে হেঁটে চলে যাওয়া পাহাড়ের কাছে, অরণ্যের কাছে। জঙ্গলের মাঝে কোনও এক নদীর নালা বয়ে যায়। জেনেছিলাম ওটা বুড়ি বালামের নালা। ঝকঝকে জল। নীচে ক'টি নুড়িপাঘর পড়ে আছে তা গোনা যায়। নালার জলে মাছেরা খেলা করে। ঝিরিঝিরি অরণ্য- বাতাস বয়ে চলে। গাছের খসে পড়া পাতায় শিহরন জাগে শরীরে! বাংরিপোসির রাত আরও বেশি সুন্দর। ভেসে যেতে হয় আরণ্যক মদিরায়। চারিদিক ভয়ংকর অন্ধকার। রাতপাখিরা ডেকে যায়। আর যদি চাঁদনি হয় রাত। তাহলে জাদু দেখায় প্রকৃতি। কামরাঙা জ্যোৎস্নায় ভেসে যায় পথঘাট, অরণ্য। গাছগাছালির মাঝে চুঁইয়ে চুইয়ে পড়ে চাঁদের আলো! পাহাড় পেরিয়ে ওপারে উপত্যকায় বসে বিষয়ীর হাট। অপূর্ব সেই হাট। আদিবাসীদের হাট। তারাই ক্রেতা, তারাই বিক্রেতা। বিষয়ীর হাটে ঘোরাঘুরি করতে বেশ লাগে। কাছেই লুলুং। অপূর্ব জায়গা। কাছেই সিমলিপাল। ঘুরে নেওয়া যেতে পারে। গাড়ি আছে সেখানে সবমিলিয়ে বাংরিপোসি ভ্রমণ, কোনও কথা হবে না- লাজবাব। কীভাবে যাবেন: গাড়িতে খড়গপুর, লোধাশুলি, বহেরাগোড়া, জামশোলা চেকপোস্ট হয়ে বাংরিপোসি। খড়গপুর বাইপাসের আগে বালিঘাটি পেরিয়ে বাঁ হাতের রাস্তায় জলেশ্বর। জলেশ্বর পেরিয়ে বারিপাদা। তারপর বারিপাদা থেকে বাংরিপোসি। এছাড়াও কলকাতা-কেওনঝড় বাসেও যাওয়া যায়। কলকাতা থেকে বাংরিপোসি দূরত্ব কমবেশি ২২০ কিমি।
কোথায় থাকবেন: বাংরিপোসি সিমলিপাল রিসর্ট, ফোন: 09437612747.
সিমলিপাল খৈরি রিসর্ট, ফোন: 06791223292. ভাড়া: নন এসি ১০০০, এসি ১৫০০ টাকা।
অরণ্যের দিনরাত্রি: ধলভূমগড়
ধলভূমগড় যেন আলগা সুন্দরী। সাধারণ হয়েও অসাধারণ। গেছিলাম হাওড়া থেকে খড়গপুর, তারপর টাটা প্যাসেঞ্জার ধরে ধলভূমগড় স্টেশন। এই ট্রেনযাত্রাটি সারাজীবনের অভিজ্ঞতা। প্রায় কোনও কামরাতেই আলো নেই। ঘুরঘুট্টি অন্ধকার। স্টেশনে নেমেও তাই। জোনাকির দল আলো দেখিয়ে পথ দেখিয়ে নিয়ে গেল ধলভূমগড় অরণ্য আবাসে। প্রথম দর্শনেই প্রেম পড়তে হল ধলভূমগড়ের। না- পড়ে উপায় নেই। যাইহোক করে রাত কাটল। ভোরের বেলা ঘুম ভাঙে পাখির ডাকে আর অরণ্য-বাতাসের ফিসফিসানিতে। হাতমুখ কাছেই এক দোকানে উদরপূর্তি হল জিলিপি আর শিঙাড়ায়। হয়ে স্বাদ অপূর্বা এদিকে এলে খিদে বেড়ে যায়। এরপর ঘোরাঘুরির পালা। ভাঙা রাজবাড়ি দেখে অরণ্যে প্রবেশ। গাছগাছালির ছায়ায় ছায়ায় মেঠো পথে হাঁটাহাঁটি। এ এক অন্য স্বাদা ধলভূমগটের সৌন্দর্য ভিন্ন।
আগেই বলেছি আলগা সুন্দরী। এই কিশোরীর পিছন পিছন হেঁটে চলে যাওয়া যায় দূর বহুদূর। শুধু দেখার আকুলতা, ধরার নয়। তাই ধলভূমগড় চেটেপুটে দেখার লোভে হাঁটতে হাঁটতে চললাম দূরে অরণ্য মায়ায়। ফেরার কোনও টানই অনুভব করলাম না। ভাবলাম একদিন যেখানে সুনীল, শক্তি সন্দীপনরা অরণ্য শাসন করেছেন, আমরাও করলাম। মন্দ কী। সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের কাছ থেকেই ধলভূমগড় যাওয়ার সব টিপস পেয়েছিলাম একদিন। সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের 'অরণ্যের দিনরাত্রি' আমাদের চোখেও সবুজের কাজল লাগিয়েছিল, আপনাদেরও লাগাবে এ-কথা হলফ করে বলা যায়। ধলভূমগড়ের কাছেই ঘাটশিলা। মাত্র পনেরো-ষোলো কিমি। সেদিকেই রওনা হলাম। ধলভূমগড় অরণ্যে দিনকয়েক কাটানোর পর। ঘাটশিলা বাঙালির ভীষণই প্রিয় জায়গা। তাই ধলভূমগড়ে জায়গা না-পেলে ঘাটশিলা থাকুন। নিরো ঘাটশিলা থেকে ধলভূমগড় গিয়ে দেখলেন থাকার কিনা। থাকলে বুকিং করে নিন। ঘাটশিলা বেড়ানোর পাট চুকলে ধলভূমগড় থাকুন ক'দিন। কলকাতা-ঘাটশিলা দূরত্ব সড়ক পথে কমবেশি ২৪০ কিমি। ঘাটশিলা থেকে ধলভূমগড় দূরত্ব ১৫ থেকে ২০ কিমি। চমৎকার রাস্তা। ঘাটশিলায় থাকার প্রচুর হোটেল আছে।
ঘোরাঘুরির রকমফের: বিচিত্রপুর
দিঘার কাছেই বিচিত্রপুর। তবে জায়গাটি ওডিশার বালেশ্বর । ওডিশার এক চমৎকার সমুদ্র সৈকত। লাল কাঁকড়ায়
জেলায় ভরে থাকে সৈকত। দূর থেকে মনে হয়, কেউ যেন লাল কার্পেট বিছিয়ে রেখেছে সমুদ্র তীরে। মানুষের পায়ের শব্দে হুড়মুড়িয়ে তারা গর্তে প্রবেশ করে। তখন যেন খেয়াল হবে হঠাৎ কেউ যেন লাল কার্পেট গুটিয়ে রেখে ফিরে গেছে। চারিদিকে ম্যানগ্রোভ অরণ্য। মিনি সুন্দরবন যেন। এইসময় অর্থাৎ শীতে প্রচুর পরিযায়ী পাখি নজরে আসবে। বিচিত্রপুরে এই সমৃদ্ধ সৈকতে যেতে হলে নৌকা ভাড়া করতে হবে। মাথাপিছু ভাড়া ১৫০ টাকা।
কীভাবে যাবেন: কলকাতা থেকে দিঘা। দিঘা থেকে কমবেশি ১৫ কিমি। দিঘা থেকে ঘুরে নিতে পারেন। কিংবা দিখা থেকে সোজা চলে যান বিচিত্রপুর।
কোথায় থাকবেন: দিঘাতে প্রচুর হোটেল। বিচিত্রপুরেও থাকা যায়। বিচিত্রপুর ওয়াইল্ড লাইফ স্যাংচুয়ারির বাইরে থাকার জায়গা আছে।
Bichitrapur Nature Camp. একরাত দু'জনের জন্য ৩৭১৪ টাকা। ফোন: অবনীকান্ত মিশ্র 08018656987.
Online booking: www.ecotourodisha.com
সৌন্দর্যের অপর নাম: সুন্দরগ্রাম
শহর থেকে হাতছোঁয়া দূরত্বে সবুজে মোড়া আস্ত একটা অবসরযাপনের জায়গা সুন্দরগ্রাম। সৌন্দর্য এখানে লুটোপুটি খায় অলস মায়ায়। এখানে এলে কেউ যেন চোখে পরিয়ে দেয় মায়া কাজল। এ-মায়া কাজল সৌন্দর্যের বন্ধনে আঁকড়ে ধরে। এখানে বাড়ির বারান্দায় দাঁড়ালে চোখ জুড়িয়ে যায়। মন করে ওঠে আতালিপাতালি! পাখির ডাকে সম্বিৎ ফেরে। চমৎকার এক গ্রাম্য পরিবেশ মেলে এখানে। সায়েন্সসিটি থেকে মাত্র ৩৫ কিমি দূরে এই সুন্দরগ্রাম। যেতে হবে বাসন্তী হাইওয়ে ধরে। প্রকৃতির সঙ্গে মানানসই করে ঘরদোর সব সাজানো। বলা যেতে পারে। পরিবেশ বান্ধব। এখনকার রাতটি বড়ই মনোরম। সবাইমিলে সুন্দরগ্রামের কর্মরতদের বলুন কিছুক্ষণের জন্য বিজলিবাতি বন্ধ করে দিতে।
দেখবেন রাতের সৌন্দর্য-রূপ! অবাক হতে হবে। নিকষকালো অন্ধকারের মাঝে আলো দেবে শুধু টিপটাপ জোনাকি। সঙ্গে ঝিঁঝির বৃন্দগান, ওফ তৈরি করবে ভয়ংকর সুন্দর রোম্যান্টিক পরিবেশ। রয়েছে ছোট আর বড় দিঘি। মাছ ধরার আনন্দ নেওয়া যায় এই দুই জলাশয়ে। আরও ভাল লাগবে সন্ধ্যাবেলা দিঘির পাড়ে বসে গীতবিতান খুলে গলা খুলে রবীন্দ্রসংগীত গাইতে। জামা-কাপড়ের ব্যাগে সুড়ৎ করে রেখে দিতে পারেন। ভুলে গেলেও ক্ষতি নেই সুন্দরগ্রামের লোকজনই দেবে গীতবিতান। সন্ধেবেলা যখন সুন্দরগ্রামের বৈষ্ণদেবী মন্দিরে পুজো-আরতি হয় তখন কাঁসর- ঘণ্টার শব্দে বড় মায়াবী ওঠে চারিপাশ। হ্যাঁ, আপনিও ওই পুজোয় যোগ দিতে পারেন। সব নিয়ে সুন্দরের সঙ্গে অবসরযাপনের এক চমৎকার জায়গা সুন্দর গ্রাম।
কীভাবে যাবেন: ইএম বাইপাসে সায়েন্সসিটির সামনের রাস্তা বাসন্তী হাইওয়ে ধরে সোজা সুন্দরগ্রাম। গাড়িতে যাওয়াই ভাল। কোথায় থাকবেন: সুন্দরগ্রামে থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা আছে। ভাড়া- ২২০০ থেকে ২৫০০, ৩১০০, ৫০০০ টাকা ভাড়া। বুকিং- পারমিত পাল, ফোন- 9836365400. বলে রাখি সুন্দরগ্রামের নিজস্ব বুটিক আছে। সেখান থেকে তাঁতের শাড়ি, মাটির বাসনপত্র-সহ অনেককিছু পাওয়া যায়। হস্তশিল্প সামগ্রী কিনে-দেখে সময় কাটবে কিছুক্ষণ।
সুবর্ণরেখার ধারে অপূর্ব জায়গা: হাতিবাড়ি
প্রথম দর্শনেই প্রেম। হ্যাঁ, পৌঁছলেই প্রেমে না-পড়ে উপায় নেই। প্রকৃতি এখানে দু'হাত উজাড় করে দিয়েছে তার রূপ-লাবণ্য। কোনও কৃপণতা করেনি প্রকৃতি। অলস সুন্দরী সুবর্ণরেখা বয়ে চলেছে • আপন খেয়ালে। চারিদিকের গাছগাছালির সবুজের প্রতিফলনে নদীর জল সবুজ হয়ে উঠেছে। মনে গাছগাছালি তার মুখ দেখে নদী-জলের দর্পণে। আকাশের মেঘবালিকারাও মুখ দেখে যায় সুবর্ণরেখায়। তারই মাঝে ডিঙি নৌকা বা শালতি বেয়ে চলে মাঝি নদীবুকে। ওদের সঙ্গে নৌকা করে ঘোরা যায় সুবর্ণরেখায়। সে-এক সুঘ্রাণ ভোগ। হাতিবাড়ির অরণ্যের রূপসৌন্দর্য উপভোগ করতে হয় তারিয়ে তারিয়ে। নির্জন নিরিবিলি। বাতাসের স্পর্শে গাছগাছালির পাতা কথা কয়, শিস দেয়। সুবর্ণরেখার ধারে বসে সময় কেটে যায়। অনন্ত শব্দ ভেঙে যায় নিঃশব্দের উপস্থিতিতে। হাতিবাড়ির অরণ্যে শৈশব, কৈশোর, তারুণ্য, প্রৌঢ়তা- সব মিলেমিশে একাকার হয়ে যায়। প্রকৃতি এখানে ফিরিয়ে দেয় মানুষের আনন্দ, সুখ, সবকিছু। হাতের কাছেই এমন সৌন্দর্য-মাখা প্রকৃতি যে আছে তা হাতিবাড়ি না-গেলে বোঝা যাবে না। হাতের কাছেই রয়েছে আর একটি চমৎকার জায়গা ঝিল্লি পাখিরালয়। দূরত্ব কমবেশি ১০-১২ কিমি। শাল, অর্জুন ইত্যাদি গাছগাছালি ঘেরা লেকে ভিড় জমায় পরিযায়ী পাখির দল। ভাল লাগবে পরিযায়ী পাখির দলের সঙ্গে সময় কাটাতে।
কীভাবে যাবেন: কলকাতা থেকে মুম্বাই হাইওয়ে ধরে যেতে হবে হাতিবাড়ি। কমবেশি ১৯৬ কিমি।
কোথায় থাকবেন: থাকার জন্য কয়েকটি জায়গা আছে। বুকিংয়ের জন্য যোগাযোগের ফোন:
9593833711. Jhargram Tourism Website: www.jhargramtourism.com Mob: +91
9593833711
শিবাই নদীর ধারে: বেলুন
গ্রামের নাম বেলুন। অবাক হলেন? এমন নাম কোনও গ্রামের হয় নাকি। বিশ্বাস করুন, বেলুন নামেই আছে এক গ্রাম বর্ধমানে। অপরূপা প্রকৃতির কোলে সবুজ চাদরে মেলা ছোট্ট এক গ্রাম। শহরের একঘেয়েমি জীবন এবং করোনা নিয়ে নাস্তানাবুদ মন হালকা করতে অবসরযাপনের সেরা ঠিকানা হতে পারে ছবির মতো গ্রাম বেলুন। তিরিশ বিঘে জমির ওপর বিজ্ঞান মেনে তৈরি হয়েছে এক অরণ্য। সেই অরণ্যের রূপে মন মজবে আপনা হতেই। কত রকমের গাছগাছালি। ফল, ফুলের গাছে ভরা চারিপাশ। গাছগাছালির ফাঁকে ফাঁকে পাখপাখালির গুঞ্জন, কলকাকলি। মন উদাস করে দেয়! চোখে পড়তেই পারে নদীর ধারে অপেক্ষারত মেছো বিড়াল। নকশা-কাটা ডানায় প্রজাপতির ওড়াউড়ি চোখে ঘোর লাগাবে। বিস্মিত হতে হবে প্রকৃতির অপার লীলায়। পূর্ণিমার সন্ধ্যায় ভেসে যায় চারিদিক কামরাঙা জ্যোৎস্নায়। বেলুন গ্রামের রূপ-সৌন্দর্য বাড়ানোয় জলের একটা ভূমিকা রয়েছে। শিবাই নদী তো বটেই, এখানকার থাকার ঘরগুলোর সামনেই আছে ছোট ছোট পুল। সেই পুলে ভাসে পদ্ম- শালুক, রঙিন মাছ। তাই অনেকেই ডেকে থাকেন জলবাড়ি নামে। বেলুন গ্রামের কাছেই আছে গঙ্গাটিকুরি জমিদার বাড়ি। এখানকার জমিদার ছিলেন ইন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি হলেন বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় যুগের বাংলা রসসাহিত্যিক। দেখে নিতে পারেন। ভাল লাগবে। শীতে অর্থাৎ এইসময় প্রচুর পরিযায়ী পাখির দেখা মেলে। ভোরবেলা ঘুম ভাঙলে খেজুর রসের স্বাদ নিতে পারবেন গ্রামের পথে। সবমিলিয়ে এককথায় বেলুন গ্রাম অপূর্ব!
কীভাবে যাবেন: সড়ক পথে দুর্গাপুর এক্সপ্রেসওয়ে ধরে বর্ধমান-ভাতার পেরিয়ে কাটোয়ার ১২ কিমি আগে বাঁদিকের রাস্তায় বেলুন গ্রাম। কলকাতা- বেলুন দূরত্ব কমবেশি ১৮০ কিমি। কোথায় থাকবেন: বেলুন বায়োডাইভারসিটি রিসার্চ সেন্টার-এর হোমস্টে।
ব্রেকফাস্ট টু ডিনার থাকা-খাওয়া সমেত মাথাপিছু ২৫০০ টাকা। একটি ঘরে তিনজন থাকার ব্যবস্থা আছে। নদীতে ঘোরার জন্য নৌকা ভাড়া ৩০০ টাকা। যোগাযোগের ফোন: 09007009061.
বাংলার গোপালপুর: বাঁকিপুট
বাঁকিপুটকে যদি বাংলার গোপালপুর বলি তাহলে কি অত্যুক্তি হবে? মনে হয় না। গোপালপুর সমুদ্র সৈকতের মতোই তো নির্জন, নিরিবিলি, মনোরম সৌন্দর্য অপেক্ষমাণ। লাল মোরামের উধাও পথ। পথের দু'পাশে ঝাউ, ইউক্যালিপটাসের সারি। ওরা সমুদ্র- বাতাসে মাথা নেড়ে নেড়ে আমন্ত্রণ জানায় পর্যটকদের। হাত বাড়ালেই সমুদ্র। তবে জল নেমে গেলে দূরত্ব বাড়িয়ে নেয় সমুদ্র। হয়তো ফেনিল সমুদ্র একাকী থাকতে চায়। ভ্রমণবিলাসীদেরও সমুদ্রসৈকত ধরে একাকী হাঁটতে ইচ্ছে করবে বাঁকিপুটের নির্জনতা আর নিরিবিলি উপভোগ করতে। সমুদ্রসৈকতে লাল কাঁকড়ার হুটোপুটি দেখতে লাগে বেশ। আর সমুদ্রসৈকত সঙ্গী করে ঘুরে আসা দরিয়াপুর বাতিঘর।
এর ওপর থেকে বাঁকিপুটের রূপ-সৌন্দর্য লাগে ক্যানভাসে আঁকা ছবি! তবে পৌঁছতে হবে বেলা তিনটে থেকে পাঁচটার ভিতর। নইলে বিরত থাকতে হবে সৌন্দর্য উপভোগ থেকে। তবে নিরাশ করবে না প্রকৃতি। এখানকার সূর্যাস্ত অপূর্ব। তেমনই সুন্দর সুর্যোদয়। দরিয়াপুরে রয়েছে বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের কপালকুণ্ডলা মন্দির। পাঁচ কিমি দূরে পেটুয়াঘাটে দেশপ্রাণ মৎস্যবন্দর। অবশ্যই দেখবেন। ভাল লাগবে। এখানেই রসুলপুর নদী মিশেছে সাগরে। চমৎকার লাগবে চারিপাশের নৈসর্গিক শোভা। সবমিলিয়ে বাঁকিপুট অনন্য সুন্দর।
কীভাবে যাবেন: কলকাতা থেকে বাঁকিপুটের দূরত্ব কমবেশি ১৬০ কিমি। ন্যাশনাল হাইওয়ে সিক্স ধরে কোলাঘাট। তারপর ন্যাশনাল হাইওয়ে ৪১ ধরে নন্দকুমার হাইরোড। সেখান থেকে হাইওয়ে ১১৬বি ধরে কাঁথি। কাঁথি থেকে জুনপুটের বাসস্ট্যান্ড থেকে বাঘাপুটের রাস্তায় বাঁকিপুট শৌলার মোড় থেকে রাস্তা ধরে জুনপুট । দিঘা থেকে এলে
শৌলা খাল বাঁ-হাতে রেখে জুনপুটের দিকে এগিয়ে বাঁকিপুট। বাঁকিপুট থেকে ঘুরে নেওয়া উড়িয়ে যায় দিঘা, মন্দারমণি, জুনপুট, তাজপুর কোথায় থাকবেন: ঝিনুক রেসিডেন্সি, ফোন: 07047779272 ভাড়া- ১০০০- ১৬০০ টাকা। খাওয়াদাওয়া আলাদা।
অজয় নদীর ধারে: সবুজ বন
সবুজের নেশা ভয়ানক। একবার ধরলে জাপ্টে ধরবে। ঠিক পাহাড়ে যাওয়ার নেশা। আর সবুজ যদি থাকে নদী ধারে তাহলে পাওনা হয় ষোলো আনা ছেড়ে আঠারো আনা। এমনটাই সবুজ বনে এলে। অজয় নদীর ধারে একশো আশি বিঘা জমিতে কতশত গাছ্য গাছগাছালির গন্ধে নেশা লেগে যায়। চোখে লাগে ঘোরা সাত-আট রকমের অর্কিড থাকলেও ফুলের গাছ খুববেশি নয়, ফলের গাছ প্রচুর। সেই তালিকায় রয়েছে নারিকেল, আম, জাম, লিচু, কাঁঠাল ইত্যাদি। তবে সমাহার বেশি বাহারি বিদেশি গাছের। সেসব দেখলে চোখ জুড়িয়ে যায়! সবুজ বন যাওয়ার পথটি ভারী চমৎকার। গাড়ির জানালার কাচ লালমাটির ধুলোয় ঝাপসা হয়ে ওঠে। রাস্তার দু'পাশে ধানখেতে সবুজ ঢেউ লাগে বাতাসে। পথের শুধু ধানখেত নয়, আছে সোনাঝুরির সারি। সে-এক অদ্ভুত অনুভূতি।
গাছগাছালির ফাঁকে উঁকি মারে ছোট-বড় গোটা ছয়েক জলাশয়। সেখানে ফুটে থাকে শালুক আর সাত-আট রকমের শাপলা। ফুলে, গাছে হরেকরকম প্রজাপতি আর ফড়িং। আর পাখিদের কলকাকলি আর গুঞ্জন রয়েইছে। অনন্ত নীল আকাশের নীচে অফুরান সবুজ কী যে ভাল লাগে তা ভাষায় অবর্ণনীয়! সবুজ বনের সবুজের বৈচিত্র মুগ্ধ করে। রাতের অন্ধকারে অরণ্য গন্ধ মাতাল করে দেবে। আর জোনাকি ওড়াউড়ি, আধিভৌতিক শিহরন এনে দেয় সবুজ বনে। তারই মাঝে বাউল গান কিংবা আদিবাসী মন খুশ করবে আপন-খেয়ালে।
কীভাবে যাবেন: কলকাতা থেকে গুসকরা-সিউড়ি রোড ধরে বোলপুর প্রবেশের আগেই অবনী সেতু পেরিয়ে ডান হাতে সবুজ বন আট কিমি। কলকাতা-সবুজ বন দূরত্ব কমবেশি ২০০ কিমি। থাকবেন কোথায়: সবুজ বনে নন এসি কটেজ ব্রেকফাস্ট থেকে ডিনার থাকা-খাওয়া প্রতিদিন মাথাপিছু ১৫০০ টাকা। এসি হলে মাথাপিছু প্রতিদিন ১৭৫০ টাকা। বাউল কিংবা আদিবাসী নৃত্যের আয়োজন করলে লাগবে ৪০০০-৫০০০ টাকা। আর অজয় নদীরে জল থাকলে নৌকায় ঘুরলে নেবে ৫০-১০০ টাকা। যোগাযোগের ফোন: ফিরোজ মণ্ডল- 09153193458
ঝকঝকে চকচকে চাকুং
গ্রাম চাকুং। একেবারে ঝকঝকে চকচকে। পর্যটন মানচিত্রে চাকুংয়ের নাম হয়তো পাবেন বিস্তর খোঁজাখুঁজির পর। আর আপনি স্বভাবে ভবঘুরে হন, তাহলে চাকুং আপনার হাতের মুঠোয়। ইতিমধ্যেই দু'তিনবার ঘোরা হয়ে গেছে। চাকুং একবার গিয়ে ঠিক মন বসে না! মনে হয়, আর একবার গেলে মন্দ হয় না! হ্যাঁ, ঠিক বলেছেন এত বিস্তৃত খোলামেলা জায়গা খুব কম আছে। একবারে ৩৬০ ডিগ্রি অ্যাঙ্গেলে পুরোটা পাওয়া যায় দৃষ্টিতে। চাকুংয়ে গেলে রাত্রিবেলা তাড়াতাড়ি খেয়ে বিছানায় যেতে হবে। কেননা ভোর চারটে, সাড়ে চারটের সময় লেপ- কম্বলের মায়া ত্যাগ করে যেতে হবে চাকুংয়ের ভিউ পয়েন্টে। মনে মনে বলতে হবে, 'যা দেখিলাম জন্মজন্মান্তরেও ভুলিব না।' দেখবেন, ধীরে ধীরে ঘুম ভাঙছে সূর্যদেবের। গায়ে তার লাল জামা। মনে পড়বে, ছোটবেলায় পড়া কাজি নজরুল ইসলামের সেই বিখ্যাত ছড়া, রবি মামা দেয় হামা/গায়ে রাঙা জামা ঐ./ দারোয়ান গায় গান। না, দারোয়ান গান গাইবে না, গান শোনাবে পাখি। ভোরের নীড় ছাড়া পাখির দল আকাশপথে উড়ান দেয় গান গাইতে, শিস দিতে দিতে। এবার প্রকৃতির মায়ার খেলায়! সূর্য তার লাল আভায় আলোকিত করে তুলেছে কাঞ্জনজঙ্ঘা। ক্রমশ দৃষ্টিগোচর হবে সেই বিখ্যাত ঘুমন্ত বুদ্ধ বা স্লিপিং বুদ্ধ-এর। যা শুনেছেন হয়তো দেখা হয়ে ওঠেনি। এবার চাক্ষুষ করলেন। চাকুং থেকে চমৎকার দেখা যায় স্লিপিং দেখা যাবে দার্জিলিঙের পাহাড়ে মেঘ-পাহাড়ের লুকোচুরি খেলা। দার্জিলিঙের সিঙ্গমারি আর হ্যাপি ভ্যালি দেখা যায় চাকুং থেকে। সবমিলিয়ে সেএক নৈসর্গিক অনুভূতি। প্রকৃতির বিশাল ক্যানভাসে আঁকা ছবির মতো দেখায় চাকুংকে! চারিপাশে পাহাড় আর অরণ্যের সবুজ। গাছগাছালির মাঝে উঁকি দেয়, টুকি খেলে কাঞ্চনজঙ্ঘা। মনে হয়, সবই যেন হাতের কাছে, হাতের মুঠোয়। যেন হাত বাড়ালেই করমর্দন করবে অরণ্য, পাহাড়! এমনই রমণীয় প্রাকৃতিক পরিবেশ! খুব-একটা মানুষের ভিড় নেই। বেশ নিরিবিলি।
বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা নামে চাকুংয়ের মাঠে। সে আর এক রহস্য! এমনিতেই পাহাড়ি এলাকায় সন্ধ্যা নামলে ঝুপ করে নেমে আসে অন্ধকার। সেই অন্ধকারের অন্য এক মায়াবী আকর্ষণ। চাকুংয়ের রাতে আকাশ নেমে আসে পাহাড়ের গায়। শুকতারার মতো জ্বলজ্বল করে দূরের পাহাড়। হাজারে হাজারে জোটবদ্ধ জোনাকি যেন জ্বলে ওঠে। সকালে একরকম খেলা দার্জিলিঙের পাহাড়ে, সন্ধ্যায় বা রাতের বেলায় জোনাকির মেলা! মনে হয়, এ যেন বড় সুখের সময়। মন ভরে ওঠে নির্বাক-উল্লাসে। কাছাকাছি ঘোরার জায়গা কালুক, রিনচিংপং। দূরত্ব কমবেশি ২৬ কিমি। রাবংলা ৫৮ কিমি আর পেলিং ৬৪ কিমি। জোড়থাং থেকে চাকুং মাত্র ন' কিমি।
পড়শি রাজ্য সিকিমে বহু করেন। আর যদি সেই বেড়ানোটা হাতেগোনা কয়েকদিনের তাহলেই গ্যাংটক, পেলিং, রাবংলা, আরিটার ইত্যাদি জায়গায় বুকিং করে ফেলেন। সাধারণত এর বাইরে অন্য কোথাও যেতে চান না। এখন অবশ্য অনেকেই উত্তর সিকিমের কোনও কোনও জায়গায় বেড়াতে যান। কিন্তু দক্ষিণ, পশ্চিম বা আর পূর্ব সিকিমে বেড়াতে যাওয়ার কথা সচরাচর শোনা যায় না। অথচ সিকিমের দক্ষিণ, পশ্চিম আর শতকের চাকুং মনাস্টেরি অবশ্যই দেখবেন। কয়েক বছর আগে এক ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্ত হয় মনাস্টেরি। নতুনভাবে তৈরি হয়েছে।
কীভাবে যাবেন: চাকুং যেতে খুব একটা বেশি সময় লাগে না এনজেপি বা শিলিগুড়ি থেকে। ঘণ্টা সাড়ে তিন থেকে চার। পাহাড়ের বাঁক বেয়ে বেয়ে যখন গাড়ি ওঠে তখন চোখে পড়ে রোদ-পাহাড়ের লুকোচুরি খেলা! সঙ্গ দেয় পাইন আর ফার্ন। নাম না-জানা ফুলের জলসা পাহাড়ের চড়াই-উতরাইয়ে। চাকুংকে ভাললাগার শুরু যাত্রাপথ থেকেই। হোমস্টেতে বলে রাখলে গাড়ি পাঠিয়ে দেবে। ভাড়া- বড় গাড়ি ৬০০০টাকা, ছোট গাড়ি ৪৫০০ টাকা।
পূর্বে লুকিয়ে রয়েছে রূপসৌন্দর্যের ঐশ্বর্য! অরণ্যের সবুজে মোড়া পাহাড়, কাঞ্চনজঙ্ঘা আর রডোডেনড্রন। আর রডোডেনড্রনের কথা মনে পড়লেই পশ্চিম সিকিমের বার্সে বা ভার্সের নাম আসে। পশ্চিম সিকিমের পরিচিত এক ট্রেকিংয়ের পথ। ভার্সের পরিচিতি রডোডেনড্রন স্যাংচুয়ারির জন্য। আর এখানে কাঞ্চনজঙ্ঘা খুব কাছ থেকে দেখা যায়। সবুজের মাঝে কাঞ্চনজঙ্ঘার দর্শন মন ভাল করে দেয়। দক্ষিণ, পশ্চিম আর পূর্ব সিকিমের কোনায় কোনায় ভরপুর সৌন্দর্য। ওঠানামা করে। শেয়ার জিপও শিলিগুড়ি থেকে পাওয়া যায়। ভাড়া- ৩০০-৩৫০ টাকা। কিংবা বাসে জোড়থাং এসে ওখান থেকে শেয়ার জিপে চলে আসা যায়।
থাকবেন কোথায়: চাকুং ব্যাম্বু হোমস্টে, প্রতিদিন মাথাপিছু থাকা- খাওয়া (প্রাতঃরাশ থেকে রাতের খাওয়া) ১৫০০টাকা। যোগাযোগ: হেমন্ত বিশ্বকর্মা, মোবাইল- 06295034036. চাকুং হোমস্টের বুকিং করে নোম্যাডিক উইকএন্ড, যোগাযোগ: 091634 28385. প্রতিদিন মাথাপিছু থাকা-খাওয়া (প্রাতঃরাশ থেকে রাতের খাওয়া) ১৬৫০টাকা। গাড়ি নিলে পড়বে ৩৫০০-৪০০০ টাকা। তবে দর ওঠানামা করতে পারে তেলের জন্য।
দক্ষিণ সিকিমের ছোট্ট এক গ্রাম কিউজিং
রাবাংলা থেকে প্রায় ন'কিমি। আধঘণ্টার পথ। পাহাড়ি রাস্তা খুব যে ভাল তা নয়। কিন্তু পাহাড়ের আর অরণ্যের সৌন্দর্যমাধুরী মনকে ভুলিয়ে রাখে! পাহাড়ের চড়াই- উতরাইয়ে নজরে পাহাড়ি ঘরদোর। প্রতিটি বাড়িতেই ফুলের বাগান। কতরকমের ফুল। কতরকমের রং। সেইসব রঙিন ফুল দেখতে দেখতে প্রাণমন কখন যে রঙে ভরে উঠবে, তা টের পাওয়াও মুশকিল! কিউজিংয়ে সকাল আর সন্ধ্যায় পাহাড়ের দুই ভিন্ন রূপ! ঝকঝকে সকালে তকতকে নীল আকাশে তুষারাবৃত কাক্র আর পাণ্ডিম আর রাতটা যেন জোনাকজ্বলা দীপাবলির। চাঁদনি রাত যত গভীর হয় ততই তুষারাচ্ছন্ন কাক্র আর পাণ্ডিম জ্বলজ্বল করে। মনে হয় যেন কেউ চাঁদের আলোয় মশাল জ্বালিয়ে পাহাড়ের গায় রেখে গেছে। সে এক অপূর্ব অপার্থিব সৌন্দর্য।
ছোট্ট নিরিবিলি পাহাড়ি রূপসী গ্রাম কিউজিং। এই পাহাড়ি গ্রামটির প্রকৃতি মন ভরিয়ে দেয়। হিমালয়ের জানা, না-জানা প্রচুর পাখি কিউজিংয়ে। সকালের মেঘ কখনওসখনও হানা দেয় জানালায়। সে এক অপূর্ব অনুভূতি। কিউজিংয়ের কাছেই রাবংলা। কেউ যদি মনে করেন ঘুরতে গিয়ে একটু ট্রেক করলে মন্দ হয় না, তাহলে মৈনাম যেতে পারেন। ছোট্ট ট্রেক কিন্তু রোমাঞ্চকর! কিউজিং থেকে আর একটা দিন অনায়াসে কাটানো যায় বোরংয়ে। কিউজিংয়ের কাছেই বোরং। দূরত্ব মাত্র নাকিমি। বোরং গ্রামটিও প্রকৃতিপ্রেমীদের কাছে একটি আদর্শ জায়গা। মধুচন্দ্রিমা যাপনের জন্য ভীষণই নির্জন রোম্যান্টিক জায়গা। রূপসী বোরংয়ের গ্রামীণ রূপসৌন্দর্য উপভোগ করতে হলে হেঁটে ঘুরতে হবে। নইলে এখানকার রূপ-রসের আনন্দ নেওয়া যায় না। এখানকার উচ্ছল সিলভার ফলস বা রুপোলি ঝরনার ঝরা জলের উচ্ছ্বাসের মোহিনী রূপ মনে এনে দেবে প্রশান্তি! কাছেই রালোং মনাস্ট্রি।
কীভাবে যাবেন: শিয়ালদা থেকে এনজেপি ট্রেন। শিলিগুড়ি থেকে সাড়ে চার থেকে পাঁচ ঘণ্টা লাগে। দূরত্ব কমবেশি ১৩০ কিমি। রাস্তা খারাপ থাকলে সময় আরও বেশি লাগতে পারে। যাওয়ার পথে চারপাশের মনোরম দৃশ্য দেখতে দেখতেই সময় কেটে যাবে, দূরত্ব বোঝা যাবে না। তিস্তার গা- ঘেঁষে চলবে গাড়ি। সিকিম প্রবেশ করলেই চারপাশের পুরো দৃশ্যগুলোই বদলে যায়। গাড়ি বুক করে যেতে পারেন। ভাড়া কথা বলে নিতে হবে। শেয়ার গাড়িতে রাবংলা গিয়ে ওখান থেকে কিউজিং যাওয়ার গাড়ি পাওয়া যায়। শিলিগুড়ি থেকে রাবংলা শেয়ার গাড়িতে নেবে ৪০০-৫০০টাকা। গাড়ির জন্য যোগাযোগ করতে পারেন: Basak Cab Service-08584075079/08250364852.
কোথায় থাকবেন: ইয়াপোস হোমস্টে, প্রতিদিন মাথাপিছু থাকা-খাওয়া (প্রাতঃরাশ থেকে রাতের খাওয়া) ১৮০০টাকা। যোগাযোগ- রিনজিন দোর্জি ভুটিয়া, মোবাইল- 097330 99096, চাবাড়িতে থাকার জন্য: প্রাতঃরাশ-সহ ভাড়া- ৩০০০- ৪০০০ টাকা। অতিরিক্ত ব্যক্তির জন্য লাগবে ৬০০টাক, প্রাতঃরাশ-সহ। যোগাযোগ- বিপ্লব দে,
09733454779/08967928334
চমৎকার এক গ্রাম লুংসেল
লাভা, লোলেগাঁওয়ের এ সৌন্দর্যের কথা ভ্রমণপিপাসুদের মুখে মুখে। এখন এইসব জায়গা বহুল পরিচিত। কিন্তু লুংসেল-এর কথা সম্ভবত এখনও না-জানা নয়তো অল্প জানা। যেতে পারেন আপার লুংসেল। আছে লোয়ার লুংসেলও। কালিম্পংয়ের আপার লুংসেলে গেলে মন ভরে যাবেই। পুরো পাহাড়ি পথের সৌন্দর্য অপূর্ব! চমৎকার একশান্ত, সুন্দর গ্রাম। গজলডোবা, ওদলাবাড়ি হয়ে আপার লুংসেল। পথের দু'ধারে শুধুই চা- বাগান। পাথরঝোড়া চা-বাগান থেকে কমবেশি ১২ কিমি চড়াই পাহাড়ি পথ। তার পরেই লুংসেন। চারপাশে সবুজ এক নিরিবিলি, নির্জন গ্রাম। এলাচ বাগান। লুংসেলে রাত্রিবাস এক অপূর্ব অভিজ্ঞতা! এখানথেকে তিন কিমি দূরত্বে আর সুন্দর জায়গা অপেক্ষায় আছে ভ্রমণপ্রেমীদের। ঝান্ডি থেকে সূর্যোদয় দেখা সারাজীবনের স্মৃতি হয়ে মনের ভিতর উথাল-পাতাল করবে!
লুংসেল চমৎকার এক গ্রাম। একপাশ দিয়ে বয়ে যায় ছোট্ট এক পাহাড়ি নদী গীত খোলা। এই গীত খোলা থেকে হয়েছে ঘিস নদী। একটা নদী যে-কোনও জায়গার বিউটি স্পট। লুংসেলেও তার অন্যথা হয়নি। বর্ষাকালে এই নদী অবশ্য অন্য রূপ ধারণ করে। প্রাকৃতিক পরিবেশের সঙ্গে তাল মিলিয়ে নানারকমের প্রচুর পাহাড়ি পাখি এই গ্রামে। বহুরকম রংবেরঙের ফুল গাছ পাহাড়ের চড়াই-উতরাইয়ে। লুংসেল গ্রামে আসবার পুরো পথটাই রূপকথার রাজ্যের মতো।
লুংসেল থেকে দেখা যায় লাভা, লোলেগাঁও। যাওয়াও যায় আশপাশের বহু জায়গায়। যেমন- -ঝান্ডি, সুনতালে, সামাভিয়ান চা-বাগান ইত্যাদি। তবে, যাঁরা হেঁটে ঘুরতে পছন্দ তাঁদের কাছে সেরা জায়গা নোকদাড়া ঝিল। পাঁচ কিমি হাঁটলেই পৌঁছে যাবেন এই ঝিলে। গিয়ে বোটিং করুন। ভাল লাগবে। গাড়িও যাবে। গাড়িতে যেতে হবে ১৫ কিমি।
পাহাড়ি গ্রাম লুংসেলে মেঘেদের আনাগোনা লেগেই থাকে।
লুংসেলের শান্ত, শীতল প্রকৃতিতে যেন স্বর্গীয় অনুভূতি। চা, প্রাতঃরাশ সেরে এই অনুভূতি সঙ্গী করে বেরিয়ে পড়ুন থ্রি সিস্টার্স ওয়াটারফলস-এর দিকে। হোমস্টে থেকে মাত্র দেড় কিমি। পাবেন ব্রিটিশদের তৈরি হেরিটেজ পুল। হোমস্টের ঠিক পাঁচশো মিটার এখানে নিজেকে হারিয়ে ফেলবেন প্রকৃতির মাঝে। ৩৬০ ভিউ পয়েন্ট থেকে নজরে দেখা যাবে ডুয়ার্সের রূপ-মাধুর্যে। বিস্মিত হবেন। ভাববেন এত সৌন্দর্য লুকিয়ে ছিল দৃষ্টির আড়ালে! এখানেই শেষ নয়, আরও অনেককিছু আছে লুংসেল গ্রামে। তার জন্য ভোরের বেলা লেপ-কম্বল ছেড়ে উঠতে হবে। আর বিকেলের চা-কফি পান করে যেতে হবে বাসনেটদাড়া কিংবা চাকুমদাড়া হেরিটেজ। এখান থেকে দেখা যায় মনভুলানো সূর্যোদয় এবং সূর্যাস্ত। সবমিলিয়ে লুংসেল অবসর যাপনের এক অন্যতম সেরা ঠিকানা।
কীভাবে যাবেন: শিয়ালদা থেকে ট্রেনে এনজেপি নেমে লুংসেন। দূরত্ব ৭০ কিমি। হোমস্টেতে বললে গাড়ি পাঠিয়ে দেবে। ভাড়া- ৩০০০থেকে ৩৫০০টাকা। তবে সবচেয়ে ভাল শিয়ালদা থেকে কাঞ্চনকন্যায় যাওয়া। নিউমাল জংশনে নামুন। ওখান থেকে লুংসেল ৩৮ কিমি। গাড়ি ভাড়া- ২৫০০ থেকে ৩০০০টাকা।
কোথায় থাকবেন: প্রকৃতির মাঝে চমৎকার এক হোমস্টে সঞ্জীবনী হোমস্টে, আপার লুংসেল। যোগাযোগ- সঞ্জীব ছেত্রী, মোবাইল- 091261 94489. সঞ্জীবের ব্যবহার অতি চমৎকার। অত্যন্ত সুভদ্র। সঞ্জীবের জন্য লুংসেল আরও ভাল লাগে। ঝরঝরে বাংলাও বলেন।
হোমস্টের ভাড়া- প্রতিদিন মাথাপিছু থাকা-খাওয়া (প্রাতঃরাশ থেকে রাতের খাওয়া) ১৫০০টাকা। অফসিজনে ১৩০০ টাকা।
পাউরুটির নানারকম
সকালের জলখাবার হোক বা অফিসের টিফিন, পাউরুটি বেশ জনপ্রিয়। পাউরুটি দিয়ে তৈরি যে কোনও খাবার বানাতেও সময় কম লাগে। তাই অনেকেই বাড়িতে বেশি করে পাউরুটি মজুত করে রাখেন। তবে অনেক সময়ে বাড়তি কিছু পাউরুটি ফ্রিজে থেকেই যায়। সেগুলি কি ফেলে দেন? পাউরুটি যদি ব্যবহারের মেয়াদ উত্তীর্ণ না হয়ে যায়, তা হলে সেগুলি দিয়েই বানিয়ে নিতে পারেন রকমারি কয়েকটি খাবার।
মীরাতুন নাহার
ব্রেড মালাই টোস্ট
কী কী লাগবে
ব্রেড স্লাইস, লিকুইড দুধ, গুঁড়ো দুধ, চিনি, মাখন
কীভাবে বানাবেন
পাউরুটির ধার কেটে বাদ দিয়ে চার টুকরো করে কেটে নিন। দুই কাপ চিনি ও দুই কাপ জল ফুটিয়ে সিরা বানিয়ে নিন। মাখন গরম করে পাউরুটির টুকরো লাল করে ভেজে তুলে নিন। চিনির রসে ভিজিয়ে তুলে রাখুন। দুধ জ্বাল দিয়ে অর্ধেক হলে চিনি ও গুঁড়ো দুধ মিশিয়ে ক্ষীরের মতো বানিয়ে নিন। এবার একটা করে পাউরুটির টুকরো রেখে তার ওপর ক্ষীর রেখে ওপরে আর একটি পাউরুটির স্লাইস চাপা দিয়ে ঠান্ডা ঠান্ডা পরিবেশন করুন।
কিমা স্টাফড ব্রেড বল
কী কী লাগবে
চিকেন কিমা, ব্রেড, পেঁয়াজ কুচি, আদা কুচি, রসুন কুচি, কাঁচা লঙ্কা কুচি, ধনে পাতা কুচি, shalimar's ধনে গুঁড়ো, shalimar's হলুদ গুঁড়ো, shalimar's জিরা গুঁড়ো, shalimar's লঙ্কা গুঁড়ো, shalimar's গরম মশলা গুঁড়ো, shalimar's সাদা তেল
কীভাবে বানাবেন
কড়াই এ তেল গরম কবে প্রথমে পেঁয়াজ কুচি দিয়ে ভালো করে ভেজে এর মধ্যে একে একে আদা কুচি, রসুন কুচি, কাঁচা লঙ্কা কুচি, নুন, হলুদ, জিরা গুঁড়ো, ধনে গুঁড়ো দিয়ে ভালো করে কষিয়ে নিন। চিকেন কিমা দিয়ে মশলার সাথে ভালো করে নেড়েচেড়ে রান্না করুন। শেষে ধনে পাতা কুচি ও গরম মসলা গুঁড়ো দিয়ে নামিয়ে নিন। এবার ব্রেডের চারদিক কেটে জলে ভিজিয়ে হাত দিয়ে চেপে চেপে জল ঝরিয়ে নিয়ে এর মধ্যে কিমার পুর দিয়ে, হাতের মুঠোয় চেপে গোল বলের মত করে গড়ে নিতে হবে।
কড়াইয়ে তেল গরম করে তাতে বলগুলো মুচমুচে করে ভেজে সস এবং স্যালাড সহ পরিবেশন করুন।
সঙ্গীতা তালুকদার
মুগ পনীর বার্গার
কী কী লাগবে
অঙ্কুরিত মুগ ৮ টেবিল চামচ, পনির ৮ টেবিল চামচ, কুরিয়ে নেওয়া গাজর ৪ টেবিল চামচ, পেঁয়াজ কুচি ৪ টেবিল চামচ, ধনেপাতা কুচি ২ টেবিল চামচ, চিলি ফ্লেক্স ১/২টেবিল চামচ, চিজ ২ টেবিল চামচ, লবন স্বাদ অনুযায়ী, আভোকাডো,, লেটুসপাতা পাতা, টমেটোর রিং, ক্যাপসিকামের রিং, পেঁয়াজের রিং, টুথপিক, বার্গার ব্রেড, shalimar's সাদা তেল
কীভাবে বানাবেন
প্রথমে মুগডাল মিক্সারে আধা ভাঙ্গা করে নিন। এতে পনির হাত দিয়ে ভেঙ্গে মিশিয়ে দিন। একে একে বাকি সব উপকরণ দিয়ে ভালো করে মেখে নিন। বার্গারের আকারে গড়ে ডুবো তেলে বা ফ্রাইং প্যানে সামান্য তেল দিয়ে ভেজে তুলে নিন।
একটি এভোকাডোর বীজ বের করে এতে সামান্য লবন, চিলি ফ্লেক্স আর সামান্য লেবুর রস মিশিয়ে একটি মিশ্রণ বানিয়ে রাখুন। এবার বার্গার ব্রেড হালকা দু পিঠ সেঁকে নিয়ে এর একদিকে আভোকাডোর মিশ্রন লাগিয়ে একে একে লেটুসপাতা, টমেটো স্লাইস, ক্যাপসিকামের রিং, পেঁয়াজের রিং সাজিয়ে ওপরে রাখুন মুগ পনিরের প্যাটি। বার্গার ব্রেডের অপর টুকরো টি ওপরে রেখে টুথপিক গুঁজে পরিবেশন করুন।
মশলা ফ্রেঞ্চ টোস্ট
কী কী লাগবে
ব্রেড স্লাইস ২ পিস, ডিম ৪ টি, পেঁয়াজ কুচি ১ টেবিল চামচ, লঙ্কা কুচি ১ চা চামচ, ধনেপাতা কুচি ১ টেবিল চামচ, ক্যাপসিকাম কুচি ২ টেবিল চামচ, অঙ্কুরিত মুগ ২ টেবিল চামচ, পোস্ত দানা ২ টেবিল চামচ, লবন স্বাদ অনুযায়ী, shalimar's সাদা তেল
কীভাবে বানাবেন
একটি বাটিতে সব উপকরণ মিশিয়ে নিন। ব্রেড স্লাইস গুলো ছোটো টুকরোতে কেটে নিয়ে ডিমের গোলাতে ডুবিয়ে লাল করে ভেজে তুলে নিলেই তৈরী। গরম চা আর টমেটো কেচাপ এর সাথে পরিবেশন করুন এই মশলা ফ্রেঞ্চ টোস্ট।
সৌমাশ্রী ভট্টাচার্য্য
সয়া ব্রেড রোল
কী কী লাগবে
৪ টে ব্রেড, ১ কাপ সয়াবিন, ১ টি পেঁয়াজ কুচানো, ১ টি কাঁচালঙ্কা কুচি, ১ চা চামচ ধনেপাতা কুচি, ২ টেবিল চামচ চিনে বাদাম কুচি, ১/২ চা চামচ shalimar's গরমমশলা গুঁড়ো, ১/৪ চা চামচ shalimar's হলুদ গুঁড়ো, ১/৪ চা চামচ shalimar's লঙ্কা গুঁড়ো, ১/৪ চা চামচ shalimar's জিরা গুঁড়ো, লবণ, shalimar's সাদা তেল, মাখন
কীভাবে বানাবেন
পরিমাণ মতো গরম জলে সয়াবিন দশ মিনিট ভিজিয়ে রাখতে হবে। তারপর, জল থেকে তুলে, চেপে চেপে অধিক জলটুকু সয়াবিনের গা থেকে ফেলে ব্লেন্ডারে বেটে নিতে হবে।
এবার, একটি পাত্রে প্রয়োজনমতো সাদা তেল দিয়ে চিনেবাদাম গুলোকে ভেজে তুলে নিন। একে একে পেঁয়াজ কুচি, লঙ্কা কুচি দিয়ে ভালোভাবে নেড়েচেড়ে নিয়ে তারপর একে একে সয়াবিনের পেস্ট, লবণ, লঙ্কা গুঁড়ো, হলুদ গুঁড়ো, জিরে গুঁড়ো এবং গরম মশলা গুঁড়ো ছড়িয়ে ভালো করে নাড়াচাড়া করে, ভাজা বাদাম মিশিয়ে, একদম শুকনো ঝরঝরে হলে নামিয়ে ঠান্ডা করে নিতে হবে। এবার, ব্রেডের চারিধারের মোটা অংশ কেটে ফেলে বেলনের সাহায্যে একটু চেপে চেপে বেলে নিন। মাঝে পুর ভরে রোলের মতো গড়ে ১৫ মিনিট ফ্রিজে রাখুন। প্যানে মাগন ব্রাশ করে সাবধানে উল্টে পাল্টে সেঁকে নিন। গরম গরম পরিবেশন করুন মেয়োনিজ, টমেটো সস এবং স্যালাডের সাথে।
ব্রেড রসমালাই
কী কী লাগবে
১/২ লিটার ক্রিম সহ দুধ, ৬ টি ব্রেড, ১/২ কাপ চিনি,
১ চিমটি কেশর, ১ চা চামচ পেস্তা কুচি, ১/৪ চা চামচ কাস্টার্ড পাউডার
কীভাবে বানাবেন
এক চামচ দুধে কেশর ভিজিয়ে রাখুন। অন্য পাত্রে আধকাপ দুধে কাস্টার্ড পাউডার গুলে রাখুন। এবার বাকি দুধটা জ্বাল দিয়ে অর্ধেক করে নিন। চিনি মিশিয়ে সমানে নাড়তে থাকুন, খেয়াল রাখবেন যাতে দুধ কেটে না যায়। দুধে গোলা কাস্টার্ড পাউডার দিয়ে ভালো করে নাড়াচাড়া করে, শেষে কেশর দিন। নামিয়ে ঠাণ্ডা হলে ফ্রিজে রাখুন। অন্যদিকে কুকি কাটার বা বাটির সাহায্যে পাউরুটি গুলোকে গোল করে কেটে নিন। ছোট ছোট বাটিতে পাউরুটির টুকরোগুলো রেখে উপর থেকে ঘন দুধের মালাই ছড়িয়ে দিন। উপর থেকে পেস্তা কুচি ছড়িয়ে ইচ্ছে মতো সাজিয়ে পরিবেশন করুন ঠান্ডা ঠান্ডা রসমালাই।
জয়িতা বর্মন
ফ্লাওয়ারী চিজ গার্লিক ব্রেড
কী কী লাগবে
shalimar's সাদা তেল, রসুন কুচি, নুন, মাখন, চিলি ফ্লেক্স, অরেগানো, চিজ কিউব, ধনেপাতা, মোজারেলা চিজ
কীভাবে বানাবেন
প্যানে তেল গরম করে তাতে রসুন কুচি ও নুন দিন। বাদামি না হওয়া পর্যন্ত ভাজুন। এবার একটি ব্লেন্ডিং জারে ভাজা রসুন, মাখন, চিলি ফ্লেক্স, অরেগানো, চিজ কিউব এবং ধনেপাতা দিন। ভালো করে ব্লেন্ড করে ঘন পেস্ট তৈরি করুন। এবার পাউরুটির টুকরো নিন এবং তার উপরে এই মিশ্রণ ছড়িয়ে, গ্রেট করা মোজারেলা চিজ দিয়ে মাইক্রোওয়েভে রান্না করুন। মাইক্রোওয়েভ না থাকলে এটি একটি প্যানে ও করতে পারেন। এর জন্য প্যানে মাখন দিন। তারপর পাউরুটির স্লাইস প্যানের ওপর রেখে ঢেকে দিন। মাঝারি আঁচে গরম করুন। সময় লাগবে মাত্র ২ থেকে ৩ মিনিট।
ব্রেড মালাই চমচম
কী কী লাগবে
পাউরুটি ১০ টি স্লাইস, ১/৪ কাপ চিনি, ১/২ কাপ জল, হলুদ রং,
মালাই স্টাফিং বানানোর জন্য:
৩ টেবিল চামচ মিল্ক পাউডার, ৩ চামচ মালাই, ৩ টেবিল চামচ কনডেন্সড মিল্ক, ১ চামচ চিনি কুচোনো কাজুবাদাম, আমন্ড বাদাম, পেস্তা
সাজানোর জন্য: সামান্য চকলেট গুঁড়ো ও চেরি
কীভাবে বানাবেন
প্রথমে ব্রেড স্লাইস গুলোকে কুকি কাটারের সাহায্যে গোল করে কেটে নিতে হবে। এরপর ফ্রাইং পানে একটু ঘি ও তেল ব্রাশ করে হালকা করে পাউরুটি গুলোকে ভেজে নিতে হবে। মালাইয়ের সব উপকরণ একসঙ্গে মিশিয়ে রাখুন। চিনি, জল হলুদ রং জ্বাল দিয়ে সিরা তৈরি করে নিন। ভাজা পাউরুটি এই রসে ডুবিয়ে মালাইয়ের মিশ্রন ছড়িয়ে আর একটি পাউরুটির স্লাইস চাপা দিন। ডেসিকেটেড কোকোনাট, চকলেট গুঁড়ো ও চেরি দিয়ে ইচ্ছে মতো সাজিয়ে পরিবেশন করুন।
সুতপা বৈদ্য
ব্রেড পটেটো রোল
কী কী লাগবে
৬ পিস বড় ব্রেড, ২ টো আলু সেদ্ধ, ১ টেবিল চামচ shalimar's তেল, ১/৪ চা চামচ গোটা জিরে, ১ টা মাঝারি সাইজের পেয়াজ কুচি, ১/২ চা চামচ আদা রসুন বাটা, ১ টা কাঁচা লঙ্কা কুচি, ১ মুঠো ধনেপাতা কুচি, ১/৪ চা চামচ shalimar's হলুদ গুঁড়ো, ১/২ চা চামচ shalimar's জিরে গুঁড়ো, ১/৪ চা চামচ shalimar's ধনে গুঁড়ো, ১/৪ চা চামচ shalimar's লঙ্কা গুঁড়ো, ১/৪ চা চামচ চাট মশলা, স্বাদ অনুসারে লবন, ১ টা ডিম, সামান্য গোল মরিচ গুঁড়ো, ১ কাপ বিস্কুটের গুঁড়ো, ভাজার জন্য প্রয়োজন অনুসারে shalimar's তেল
কীভাবে বানাবেন
প্রথমে কড়াইতে তেল গরম করে গোটা জিরে দিয়ে, পেঁয়াজ কুচি একটু ভেজে একে একে আদা, রসুন বাটা, জিরে গুঁড়ো, ধনে গুঁড়ো, কাঁচা লঙ্কা, লঙ্কা গুঁড়ো, হলুদ সামান্য জলের সাহায্যে একটু কষিয়ে, হাতের সাহায্যে ভাঙা সেদ্ধ আলু, চাট মশলা, পরিমাণ মতো লবন, ধনেপাতা কুচি দিয়ে সব কিছু মিশিয়ে গ্যাস অফ করে নামিয়ে ঠান্ডা করে নিতে হবে। ততক্ষণ ব্রেড বেলে চারদিকের ব্রাউন অংশ কেটে, মাঝখানে লম্বা করে আলুর পুর দিয়ে চারপাশে জল লাগিয়ে রোলের আকারে করে আঙ্গুলের সাহায্যে সব দিক আটকে দিতে হবে। এভাবে সব গুলো গড়ে নিয়ে, একটি ডিমে সামান্য লবন ও গোলমরিচ গুড়ো ভালো করে মিশিয়ে, রোলগুলো ডুবিয়ে, গায়ে বিস্কুটের গুড়ো লাগিয়ে ডিপ ফ্রাই করে তুলে নিলেই তৈরি ব্রেড পটেটো রোল।
চিলি পনির স্যান্ডউইচ
কী কী লাগবে
১০০ গ্রাম পনির, ৬ টি ব্রেড, ২ টেবিল চামচ shalimar's সাদা তেল, ১ টা মাঝারি পেঁয়াজ, ১ টা ছোট ক্যাপসিকাম, ১/২ চা চামচ আদা বাটা, ১/২ চা চামচ রসুন বাটা, ১ টা কাঁচা লঙ্কা, ১/২ চা চামচ লবন, ১ চা চামচ চিলি সস, ১ চা চামচ সয়া সস, ১/২ চা চামচ ভিনিগার, ২ টেবিল চামচ কর্নফ্লাওয়ার, ১ চা চামচ ময়দা, ১ টেবিল চামচ টমেটো সস,
১ টা শশার স্লাইস, প্রয়োজন মতো বাটার
কীভাবে বানাবেন
প্রথমে পনিরের ছোট টুকরো করে নিতে হবে। এবার ১ টেবিল চামচ কর্নফ্লাওয়ার, ১ টেবিল চামচ ময়দা ও স্বাদ মত লবণ পনিরের উপরে ছড়িয়ে হালকা হাতে বা চামচের সাহায্যে একটু মাখিয়ে নিতে হবে। এবার সাদা তেল গরম করে এগুলো শ্যালো ফ্রাই করে তুলে নিতে হবে। তারপর ঐ তেলে পেঁয়াজ নাড়তে নাড়তে একে একে ক্যাপসিকামের টুকরো, আদা রসুন বাটা , কাঁচালঙ্কা, গোল মরিচ গুঁড়ো, সয়া সস, টমেটো সস, চিলি সস, স্বাদ মতো লবন, ভেজে রাখা পনির, ২ চামচ জলে গোলা ১ টেবিল চামচ কর্নফ্লাওয়ার দিয়ে মিনিট খানেক নাড়িয়ে গ্যাস অফ করে দিতে হবে। ব্রেড গুলোতে অল্প অল্প বাটার লাগিয়ে পাতলা শশার স্লাইস দিয়ে উপরে চিলি পনির রেখে অন্য একটি ব্রেড দিয়ে ঢেকে দিন। এভাবে সবগুলো রেডি করে তাওয়ায় একটু চেপে চেপে দু'পিঠ সেঁকে নিলেই তৈরি চিলি পনির স্যান্ডউইচ।
Commentaires