top of page

শ্রাবণ সোমবার, বর্ষার স্বাদে মুগডালের ছয় রকম রেসিপি, বর্ষায় ভাইরাল জ্বর ও কনজাংটিভাইটিস, প্রকৃতি ও লোকসংস্কৃতির মিলনে, মেঘে ভেজা পুরুলিয়া, ৫০ বছর পরেও আরণ্যক কেন এখনো প্রাসঙ্গিক?

শ্রাবণ সোমবার: ইতিহাস, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি

ree

ভারতীয় উপমহাদেশের ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক পরম্পরায় শ্রাবণ মাসের গুরুত্ব অপরিসীম। এই সময় প্রকৃতি যেমন ধীরে ধীরে জলভরা নদী-নালায় উদ্ভাসিত হয়, তেমনি ভক্তিভাবেও পরিপূর্ণ হয় হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের হৃদয়। শ্রাবণের প্রতি সোমবারে শিব আরাধনার যে রীতি তার পিছনে রয়েছে গভীর বিশ্বাস, পুরাণের ভিত্তি ও সমাজ-সংস্কৃতির এক নিবিড় চিত্র।

ree

হিন্দু পুরাণ অনুসারে, সমুদ্র মন্থনের সময় যখন বিষ ‘কালকূট’ বেরিয়ে আসে, তখন গোটা সৃষ্টি ধ্বংসের মুখে পড়ে। সেই সময় মহাদেব শিব বিষ পান করেন এবং বিষ গলায় ধারণ করে ‘নীলকণ্ঠ’ নামে খ্যাত হন। শিবের এই আত্মোৎসর্গের স্মৃতিতে শ্রাবণ মাসে তাঁর পূজার্চনা বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ। বিশেষত শ্রাবণ সোমবার এই দিনটি শিবের উপাসনার শ্রেষ্ঠ দিন হিসেবে বিবেচিত হয়। শ্রাবণের প্রথম সোমবার থেকেই শুরু হয় এক ধারাবাহিক উপবাস, ব্রত ও পুজোর পর্ব। অনেক ভক্ত ‘সোমবার ব্রত’ পালন করেন উপবাস করে দিনভর শিব মন্ত্র জপ, রুদ্রাভিষেক, বেলপাতা ও জল অর্পণ করে মহাদেবের কৃপালাভের আশায় নতজানু হন। বাঙালির ঘরে ঘরে এইদিন বেলপাতা, ধুতি, শ্বেতপুষ্প, দুধ, দই, মধু, ঘি ও গঙ্গাজল দিয়ে ‘ষোলোপচার’ পদ্ধতিতে পুজো হয়। নারীরা পরিবারের মঙ্গল কামনায় ও অবিবাহিতারা আদর্শ স্বামী লাভের আশায় এই ব্রত পালন করে থাকেন। উত্তরভারতের কিছু অঞ্চলে আবার ‘সাওন সোমবার’ উপলক্ষে হাতে মেহেন্দি দেওয়া, শিব-পার্বতীর গান গাওয়া এক সামাজিক উৎসবের রূপ নিয়েছে।

ree

প্রকৃতিপ্রেমী শিবের পুজোর জন্য শ্রাবণ মাসকেই কেন বেছে নেওয়া হয়েছে এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজলে দেখা যায়, বর্ষাকাল কৃষিজীবী সমাজের এক নবজাগরণের সময়। এই সময় জলপ্রবাহ ও উর্বরতার প্রতীক শিবের পূজা প্রকৃতি ও প্রাণের সঙ্গে ঐক্য গড়ে তোলে। বাংলার কিছু অঞ্চলে শ্রাবণ সোমবার উপলক্ষে লোকনাট্য, মেলাও অনুষ্ঠিত হয়। শিব ঠাকুরের গাজন, ধামসা-মাদলের ছন্দে গ্রামীণ মানুষের শ্রদ্ধা-ভক্তি মিশে যায় উৎসবের আবহে। নকশিকাঁথা, পটচিত্র, মাটির পাত্রে শিব-পার্বতীর চিত্র এ সময় স্থান পায় হাটে-বাজারে। শ্রাবণ সোমবার কেবল কোনও একদিনের উপবাস নয়, এটি এক অন্তর্জাগরণের আহ্বান। ব্রহ্মাণ্ডের ভারসাম্য রক্ষায় মহাদেবের নৈঃস্বার্থ্য আজকের সমাজে সেই বার্তাই যেন নতুনভাবে উচ্চারিত হয়।


শ্রাবণ মাসে বিশেষ করে মহিলারা যখন শিব আরাধনায় রত হন, তখন তাঁরা হাতে সবুজ কাচের চুড়ি পরেন এটি শুধুই একটি সাজের অংশ নয়, বরং বহু প্রাচীন বিশ্বাস ও প্রতীকের বাহক। সবুজ মানে প্রকৃতি, নবজন্ম, ও জীবন। শ্রাবণ বর্ষাকালের মাস চারদিকে সবুজের সমারোহ। এই সময় প্রকৃতির নবজীবনের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে নারীরাও সবুজ রঙ পরেন, যা উর্বরতা, দীর্ঘায়ু, সুস্থতা এবং পরিবারের মঙ্গল কামনার প্রতীক। বিবাহিত নারীরা বিশ্বাস করেন যে সবুজ চুড়ি শিব-পার্বতীর আশীর্বাদ এনে দেয়, স্বামীর দীর্ঘায়ু ও পরিবারের সুস্থতা রক্ষা করে। অবিবাহিতারাও পরেন আদর্শ জীবনসঙ্গী লাভের আশায়। কাচ সহজে ভেঙে যায়, আবার সহজেই তৈরি হয় এটি জীবনের ক্ষণস্থায়ীত্ব ও পুনর্জন্মের ভাবকে নির্দেশ করে। কাচের শব্দ (চুড়ির ঝনঝনানি) গৃহস্থ জীবনের আনন্দের প্রতিধ্বনি বলে মনে করা হয়।

ree

মহারাষ্ট্র, উত্তরপ্রদেশ, মধ্যপ্রদেশ, বিহার, ও রাজস্থান এসব রাজ্যে শ্রাবণ সোমবারে চুড়ি পরা এক গুরুত্বপূর্ণ রীতি। অনেক জায়গায় "চুড়ি উৎসব" (Bangle Ceremony) পালন করা হয়, যেখানে নারীরা একে অপরকে সবুজ চুড়ি পরিয়ে দেন, প্রসাদ বিতরণ করেন, ও একত্রে ভজন গেয়ে উৎসব পালন করেন। শ্রাবণ সোমবারে সবুজ কাচের চুড়ি শুধু শোভা নয়, বরং তা নারী-জীবনের প্রার্থনা, ভক্তি ও সৌভাগ্যের রঙ। এই রঙে মিশে থাকে মাতৃত্ব, প্রেম ও ভগবানের আশীর্বাদের অনন্ত আকুতি। শ্রাবণ মাসের সোমবার হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের কাছে একান্ত পবিত্র ও তপস্যার দিন। এই দিনে শিবভক্তরা ব্রত, উপোস ও নিয়মমাফিক পুজার মাধ্যমে মহাদেবের কৃপা প্রার্থনা করেন। বিশেষ করে নারীদের মধ্যে এই ব্রত পালনের প্রবল উৎসাহ দেখা যায় পরিবারের মঙ্গল, স্বামীর দীর্ঘায়ু ও সন্তানের সুস্থতার আশায়। শ্রাবণ সোমবারের পুজো সাধারণত ভোরবেলায় স্নান সেরে নিষ্ঠাভরে করা হয়। যদি মন্দিরে যাওয়া সম্ভব না হয়, ঘরেই মাটি, পাথর বা ধাতুর শিবলিঙ্গ প্রতিষ্ঠা করে পুজো করা যায়।


পুজোর উপকরণে যা যা লাগে:

গঙ্গাজল বা বিশুদ্ধ জল

বেলপাতা (ত্রিদল বিশিষ্ট, দাগছাড়া)

ধুতুরা ফুল ও ফল

আকন্দ ফুল

কাঁচা দুধ, দই, মধু, ঘি ও চিনি – পঞ্চামৃত তৈরির জন্য

সাদা ফুল (যেমন দুধরাজ, শেফালি, অপরাজিতা)

ধূপ, দীপ, চন্দন, ভোগ (প্রসাদ)

রুদ্রাক্ষ মালা (জপ করার জন্য)

শ্বেতবস্ত্র ও সাদা ধুতি বা শাড়ি পরিধান

ree

শিবের প্রিয় ফুল ও ফল:

শিব ঠাকুরের পছন্দের ফুল খুব নির্দিষ্ট। বেলপাতা তো সর্বজনবিদিত, তবে তাঁর বিশেষ পছন্দের ফুলগুলির মধ্যে রয়েছে:

আকন্দ ও ধুতুরা ফুল ও ফল: মহাদেবের প্রিয়তম, তামসিক প্রকৃতির প্রতীক।

শ্বেত অর্কিড বা চন্দ্রমল্লিকা: নির্মলতা ও নির্লিপ্ততার প্রতীক।

কাঁঠালের ফল ও কাঁঠালের বীজ কিছু অঞ্চলে রন্ধনভোগে ব্যবহৃত হয়।

তবে চাঁপা, কেতকী, গাঁদা ইত্যাদি ফুল শিবপুজায় নিষিদ্ধ বলে মনে করা হয়। চাঁপা ও কেতকী ফুলের পেছনে পুরাণকথাও রয়েছে, যা অপছন্দের কারণ ব্যাখ্যা করে।


🪷 বিশেষ পুজোআচার ও রীতি

শিবলিঙ্গে জল বা দুধ ধারার মতো ঢেলে দেওয়াকে ‘জলাভিষেক’ বলা হয়, যা শ্রেষ্ঠ পুজাচর্চা।

পঞ্চামৃত দিয়ে স্নান করানো, তারপর গঙ্গাজল ছিটিয়ে শুদ্ধি করা হয়।

বেলপাতা সংখ্যায় ৩, ৫, ৭ বা ১১টি দেওয়া হয়।

ওঁ নমঃ শিবায় বা মহামৃত্যুঞ্জয় মন্ত্র ১০৮ বার জপ করলে ব্রতের পূর্ণ ফল লাভ হয়।


প্রসাদে যা যা দেওয়া হয়:

খেঁজুর ও নারকেল

দুধ-চিঁড়ে বা দুধ-সন্দেশ

গুড়-মুড়ি বা খই

বাতাসা ও কলা

অনেক পরিবারে সুজি বা মোহনভোগের মতো উপকরণও ব্যবহৃত হয়

শ্রাবণ সোমবারে অনেকে দিনভর উপোস রাখেন। কেউ কেউ নির্জলা উপবাস (জল ছাড়া), কেউ আবার ফলাহার ও নিরামিষ আহারে দিন কাটান।


উপোসে যা খাওয়া যায়:

দুধ, ফল (কলা, আপেল, আম, আঙুর)

সাদা মাখন বা ঘোল

সাতু জল

সাবুদানা খিচুড়ি (লবণ ছাড়া বা সিঙ্ঘাড়ার লবণ দিয়ে)

আলু সেদ্ধ ও শসা

নারকেল জল

কাঁচা দুধে ভিজানো চিঁড়ে বা গুড়-মুড়ি

ree

নিরামিষ, নিরক্ত, এবং অহিংস খাদ্যই শ্রাবণের উপোসের প্রধান ধর্ম। অনেকেই সন্ধ্যার পরে একবেলা ফল বা সামান্য ভাত খান একে ‘একান্ন’ বা ‘একবেলার আহার’ বলা হয়। শ্রাবণ সোমবার কেবল একটি রীতিমাত্র নয় এটি প্রকৃতি, পরমেশ্বর ও মানুষের ভক্তিময় সংলাপ। শিবের মতো সংযমী, ত্যাগী ও ধৈর্যশীল হতে শিখিয়ে যায় এই ব্রত। বর্তমান সময়ে, যখন মানুষ জাগতিক উদ্বেগে ক্লান্ত, তখন এমন উপবাস ও পুজো একধরনের মানসিক পরিশুদ্ধির পথ। এই শ্রাবণেও আসুন আমরা অন্তর থেকে বলি ‘ওঁ নমঃ শিবায়’ এবং বাঁচিয়ে রাখি আমাদের বিশ্বাস, আচার ও সংস্কৃতির অমূল্য উত্তরাধিকার।

ree

বর্ষার স্বাদে মুগডালের ছয় রকম রেসিপি..

বর্ষার দিনে বৃষ্টির শব্দ আর ধোঁয়া ওঠা গরম ভাতের পাশে একবাটি সুস্বাদু মুগডাল যেন মনকেও তৃপ্তি দেয়। বাংলার ঘরে ঘরে মুগডাল দিয়ে তৈরি হয় নানা পদ কখনও তা ভাজা, কখনও নিরামিষ, আবার কখনও মাংস বা মাছের সঙ্গেও। চলুন দেখে নেওয়া যাক ছয়টি ভিন্ন স্বাদের মুগডাল রেসিপি। বৃষ্টির দিনে মুগডালেই হোক গন্ধ, রং, স্বাদ আর ভালোলাগার গল্প!

ree

ভাজা মুগডালের খিচুড়ি

কী কী লাগবে

  • গোবিন্দভোগ চাল (বা বাসমতি) – ১ কাপ

  • মুগডাল – ১ কাপ

  • আলু – ১টি, মাঝারি টুকরো করে কাটা

  • ফুলকপি – ছোট ছোট টুকরো, ১ কাপ

  • মটরশুঁটি – ১/২ কাপ (ঐচ্ছিক)

  • আদা বাটা – ১ টেবিল চামচ

  • তেজপাতা – ২টি

  • শুকনো লঙ্কা – ২টি

  • ঘি – ২ টেবিল চামচ

  • Shalimar's Sunflower তেল – ২ টেবিল চামচ

  • Shalimar's Chef Spices হলুদ গুঁড়ো – ১/২ চা চামচ

  • নুন ও চিনি – পরিমাণমতো

  • Shalimar's Chef Spices গরম মশলা গুঁড়ো – ১/২ চা চামচ

  • কাঁচা লঙ্কা – ২টি (চিরে রাখা)

ree

কীভাবে বানাবেন

  1. মুগডাল ভাজা:

    • শুকনো কড়াইয়ে মুগডাল হালকা করে সোনালি রঙ হওয়া পর্যন্ত ভেজে নিন।

    • ভাজার পর ডাল ২০ মিনিট ভিজিয়ে রাখুন।

  2. চাল ধোয়া:

    • চাল পরিষ্কার করে ধুয়ে একপাশে রেখে দিন।

  3. সবজি ভাজা:

    • আলু, ফুলকপি ও মটরশুঁটি সামান্য হলুদ-নুন মিশিয়ে হালকা করে ভেজে তুলে রাখুন।

  4. খিচুড়ি রান্না:

    • কড়াইয়ে সাদা তেল ও ঘি গরম করে তেজপাতা ও শুকনো লঙ্কা ফোড়ন দিন।

    • আদা বাটা দিয়ে কষান। এরপর ভাজা ডাল ও চাল দিয়ে আরও কিছুক্ষণ নেড়েচেড়ে নিন।

    • ভাজা সবজি মিশিয়ে দিন।

    • পরিমাণমতো গরম জল (প্রায় ৪ কাপ) দিয়ে ঢেকে দিন।

    • নুন, চিনি ও কাঁচা লঙ্কা যোগ করুন।

    • ঢেকে মাঝারি আঁচে ১৫–২০ মিনিট রান্না করুন যতক্ষণ না চাল ও ডাল সেদ্ধ হয়ে যায়।

  5. শেষে:

    • গরম মশলা গুঁড়ো ও সামান্য ঘি ছড়িয়ে দিন।

    • ২ মিনিট ঢেকে রেখে দিন, তারপর গরম গরম পরিবেশন করুন।

    ree

    মুগডালের প্যাটি বার্গার

    স্বাদে পুষ্টি, বার্গারে দেশি টুইস্ট! আজকালকার হেলদি খাওয়ার প্রবণতার মাঝে আমরা খুঁজে ফিরি এমন কিছু, যা স্বাদেও জমজমাট আবার শরীরের দিকেও সদয়। ঠিক তেমনই এক অভিনব রেসিপি হলো মুগডালের প্যাটি বার্গার। প্রোটিনে ভরপুর মুগডাল দিয়ে তৈরি এই বার্গার প্যাটি, ভেজ না হলে বুঝতেই পারবেন না! ঘরোয়া উপকরণে তৈরি, খেতে দুর্দান্ত এবং সহজেই বানানো যায়।


    কী কী লাগবে

    প্যাটি তৈরির জন্য:

    • মুগডাল (ভেজানো ও সেদ্ধ) – ১ কাপ

    • সেদ্ধ আলু – ১টি মাঝারি

    • আদা বাটা – ১ চা চামচ

    • কাঁচা লঙ্কা কুচি – ১টি

    • ধনেপাতা কুচি – ২ টেবিল চামচ

    • Shalimar's Chef Spices জিরে গুঁড়ো – ½ চা চামচ

    • Shalimar's Chef Spices গরম মসলা – ¼ চা চামচ

    • লেবুর রস – ১ চা চামচ

    • নুন – স্বাদ অনুযায়ী

    • কর্নফ্লাওয়ার/ব্রেডক্রাম্ব – বেঁধে রাখতে

    • Shalimar's Sunflower তেল – ভাজার জন্য

    বার্গার সাজানোর জন্য:

    • বার্গার বান – ২টি

    • টমেটো সস বা মেয়োনিজ

    • কাঁচা পেঁয়াজ ও টমেটো স্লাইস

    • লেটুস পাতা বা পছন্দসই সালাড

    • চিজ স্লাইস (ঐচ্ছিক)

      ree

    কীভাবে বানাবেন

    প্যাটি তৈরি:

    সেদ্ধ মুগডাল ভালো করে জল ঝরিয়ে নিন।

    একটি বাটিতে মুগডাল, সেদ্ধ আলু, আদা, কাঁচা লঙ্কা, ধনেপাতা, মসলা, নুন ও লেবুর রস দিয়ে ভালো করে মেখে নিন।

    মিশ্রণটি যদি বেশি নরম হয়, তাহলে কর্নফ্লাওয়ার বা ব্রেডক্রাম্ব মিশিয়ে প্যাটি তৈরির জন্য উপযুক্ত করুন।

    গোল আকারে প্যাটি বানিয়ে গরম তেলে হালকা করে সেঁকে নিন বা shallow fry করুন।

    বার্গার সাজানো:

    বার্গার বান দু’ভাগে কেটে হালকা করে তেলে টোস্ট করুন।

    নিচের বানটিতে সস বা মেয়োনিজ লাগিয়ে লেটুস দিন।

    তার ওপর প্যাটি, টমেটো-পেঁয়াজ স্লাইস ও চিজ দিন।

    উপর থেকে বান চাপা দিয়ে পরিবেশন করুন।

    পরামর্শ:

    • আপনি চাইলে বেক করে প্যাটি বানাতে পারেন।

    • প্যাটি-তে কাঁচা আমচুর বা আচার মশলা দিলে এক ভিন্ন ফিউশন টেস্ট পাবেন।

ree

মাংসের কিমা দিয়ে মুগডাল

প্রোটিনের দ্বিগুণ স্বাদে এক অনন্য মিলন.. যখন ঘরে থাকে সেদ্ধ মুগডাল আর ফ্রিজে থাকে কিছু মাংসের কিমা তখন একটু অন্যরকম রান্না করতেই মন চায়। মুগডালের মৃদু স্বাদ আর কিমার রিচ, স্পাইসি ফ্লেভার একসঙ্গে মিশে তৈরি করে এক অসাধারণ রান্না যা বাঙালির দুপুর বা রাতের খাবারে নতুন মাত্রা যোগ করে।


কী কী লাগবে

  1. মুগডাল – ১ কাপ (ভেজানো ও আধসেদ্ধ)

  2. খাসির কিমা – ২০০ গ্রাম

  3. পেঁয়াজ কুচি – ২টি মাঝারি

  4. রসুন বাটা – ১ চা চামচ

  5. আদা বাটা – ১ চা চামচ

  6. টমেটো কুচি – ১টি মাঝারি

  7. কাঁচা লঙ্কা – ২-৩টি (ফালি করে কাটা)

  8. Shalimar's Chef Spices হলুদ গুঁড়ো – ½ চা চামচ

  9. Shalimar's Chef Spices মরিচ গুঁড়ো – ১ চা চামচ

  10. Shalimar's Chef Spices জিরে গুঁড়ো – ½ চা চামচ

  11. Shalimar's Chef Spices গরম মশলা গুঁড়ো – ½ চা চামচ

  12. তেজপাতা – ১টি

  13. দারচিনি, এলাচ, লবঙ্গ – ১/২ টুকরো করে

  14. নুন – স্বাদ মতো

  15. চিনি – ½ চা চামচ (ঐচ্ছিক)

  16. Shalimar's সরষের তেল – পরিমাণমতো

  17. ধনেপাতা কুচি – পরিবেশনের জন্য


কীভাবে বানাবেন

  1. একটি পাত্রে তেল গরম করে তেজপাতা, দারচিনি, এলাচ, লবঙ্গ ফোড়ন দিন।

  2. এবার পেঁয়াজ কুচি দিয়ে বাদামি করে ভেজে নিন।

  3. আদা-রসুন বাটা দিয়ে ভালো করে কষান।

  4. টমেটো, নুন, চিনি ও গুঁড়ো মশলা দিয়ে মশলা ভালোভাবে ভাজুন যতক্ষণ না তেল ছাড়ে।

  5. কিমা দিয়ে ভালো করে কষিয়ে নিন, যাতে কাঁচা গন্ধ চলে যায় ও জল শুকিয়ে আসে।

  6. এবার আধসেদ্ধ মুগডাল মিশিয়ে দিন এবং আরও কিছুক্ষণ কষান।

  7. ১ কাপ মতন গরম জল দিয়ে ডাল-রসা ভালোভাবে মিশিয়ে ঢেকে দিন। মাঝারি আঁচে ১০-১২ মিনিট রান্না করুন যতক্ষণ না কিমা ও ডাল একসাথে গলে মিশে যায়।

  8. জল শুকিয়ে এলে একটু ঘন তরকারির মত হলে নামিয়ে নিন।

  9. ওপর থেকে ছড়িয়ে দিন কাঁচা লঙ্কা ও ধনেপাতা কুচি।

পরামর্শ:

  • গরম ভাতের সাথে পরিবেশন করুন, সঙ্গে কাঁচা পেঁয়াজ-লেবু থাকলেই জমে যাবে।

  • পরোটার সাথেও দারুন খেতে লাগে।

ree

মুগ স্প্রাউট স্যালাড

সুস্থতার স্বাদ, প্রতিটি কামড়ে। মুগ স্প্রাউট মানেই প্রোটিন, ফাইবার ও ভিটামিনে ভরপুর এক সুপারফুড। আর এই স্প্রাউট দিয়ে তৈরি স্যালাড শুধু শরীরের জন্য ভালোই নয়, স্বাদেও চমৎকার। এটি ব্রেকফাস্ট, সন্ধ্যাবেলার হেলদি স্ন্যাকস বা লাঞ্চের সাইড ডিস হিসেবে আদর্শ।

কী কী লাগবে

  • মুগ স্প্রাউট (সিদ্ধ না, কাঁচা বা হালকা ভাপে সেদ্ধ করা) – ১ কাপ

  • টমেটো (চিকন কাটা) – ১টি

  • শশা (চিকন কাটা) – ১টি

  • পেঁয়াজ (পাতলা কুচি) – ১টি ছোট

  • কাঁচা লঙ্কা (ঐচ্ছিক) – ১টি কুচি

  • লেবুর রস – ১ টেবিল চামচ

  • ধনেপাতা কুচি – ২ টেবিল চামচ

  • বিট নুন / সাদা নুন – স্বাদ অনুযায়ী

  • Shalimar's Chef Spices জিরে গুঁড়ো – ½ চা চামচ

  • অলিভ অয়েল – ১ চা চামচ (ঐচ্ছিক)


ree

কীভাবে বানাবেন

  1. একটি বড় বাটিতে স্প্রাউট, টমেটো, শশা, পেঁয়াজ, কাঁচা লঙ্কা, ধনেপাতা সব একসাথে মিশিয়ে নিন।

  2. উপর থেকে লেবুর রস, বিট নুন, জিরে গুঁড়ো ও অলিভ অয়েল ছড়িয়ে দিন।

  3. সব উপকরণ ভালোভাবে মিশিয়ে নিন।

  4. ৫-১০ মিনিট রেখে পরিবেশন করুন যাতে সব স্বাদ মিশে যায়।

    পরিবেশন টিপস:

  5. ফ্রিজে ঠান্ডা করে খেলে আরও ভালো লাগে।

  6. চাইলে এর মধ্যে বেদানা, সিদ্ধ চানা বা সেদ্ধ কর্নও যোগ করতে পারেন।

    ree

    মুগডালের দই বড়া

    হালকা, উপকারী, আর একেবারে মুখরোচক! যেখানে স্বাদ আর স্বাস্থ্যের মধ্যে ভারসাম্য খুঁজছেন, সেখানেই মুগডালের দই বড়া হয়ে উঠতে পারে আপনার সেরা বিকল্প। প্রোটিনে ভরপুর মুগডাল দিয়ে তৈরি বড়া, ঠান্ডা দই আর ঝাল-মিষ্টি টক চাটনির মেলবন্ধন এক কথায় স্বর্গীয়!


    কী কী লাগবে

    বড়ার জন্য:

    • মুগডাল – ১ কাপ (৪-৫ ঘণ্টা ভিজিয়ে রাখা)

    • আদা – ১ চা চামচ (কুচি বা বাটা)

    • কাঁচা লঙ্কা – ১টি (ঐচ্ছিক)

    • নুন – স্বাদ মতো

    • Shalimar's সরষের তেল – ভাজার জন্য

    দই মিশ্রণ:

    • ফেটানো টক দই – ২ কাপ

    • চিনি – ১-২ চা চামচ

    • বিট নুন – ½ চা চামচ

    • Shalimar's Chef Spices জিরে গুঁড়ো – ½ চা চামচ

    • Shalimar's Chef Spices লঙ্কার গুঁড়ো – ½ চা চামচ

    • ধনেপাতা কুচি – সাজানোর জন্য

    টপিং (ঐচ্ছিক):

    • ইমলি টক মিষ্টি চাটনি

    • কাঁচা লঙ্কা কুচি

    • বুন্দি বা পাপড়

    ree

    কীভাবে বানাবেন

    বড়া তৈরি:

    ভিজানো মুগডাল থেকে জল ঝরিয়ে, আদা, লঙ্কা ও নুন দিয়ে মিহি করে বেটে নিন (একটু জল দিয়ে)।

    মিশ্রণটি হাতে নিয়ে কয়েক মিনিট ফেটান, এতে বড়া হালকা ও ফ্লাফি হবে।

    কড়ায় তেল গরম করে ছোট ছোট বড়া চামচ দিয়ে ছেড়ে দিন ও সোনালি করে ভেজে তুলুন।

    বড়াগুলো কুসুম গরম জলে ১০ মিনিট ভিজিয়ে রাখুন, তারপর হাতে চাপ দিয়ে জল ঝরিয়ে নিন।

    দই প্রস্তুতি:

    টক দই ভালো করে ফেটে নিন যাতে কোনো দলা না থাকে।

    তাতে চিনি, বিট নুন, ভাজা জিরে গুঁড়ো ও লঙ্কা গুঁড়ো মিশিয়ে নিন।

    এখন বড়াগুলো দইয়ে ডুবিয়ে দিয়ে কিছুক্ষণ রেখে দিন।

    পরিবেশন:

    • ঠান্ডা ঠান্ডা পরিবেশন করুন উপরে ধনেপাতা, টক চাটনি আর একটু জিরে গুঁড়ো ছড়িয়ে।

    • চাইলে সঙ্গে পাপড়, বুন্দি বা দই ফুচকার ফিলিংও দিতে পারেন।

    ree

    মুগ ডালের চিল্লা

    স্বাস্থ্যকর দিনের শুরু এক ঝটপট চিল্লা দিয়ে! চিল্লা বলতে অনেকেই সাধারণত বেসনের কথা ভাবেন, কিন্তু যদি সেটা হয় ভেজানো মুগডাল দিয়ে, তাহলে পুষ্টিগুণ বেড়ে যায় দ্বিগুণ! প্রোটিন, ফাইবার আর হালকা মশলার মিশেলে এই চিল্লা একেবারে পারফেক্ট হেলদি বাঙালি ফিউশন খাবার।

    কী কী লাগবে

    মুগডাল (সবুজ বা ছোলা ছাড়ানো) – ১ কাপ (৪-৫ ঘণ্টা ভিজিয়ে রাখা)

    আদা – ১ চা চামচ (কুচি বা বাটা)

    কাঁচা লঙ্কা – ১টি

    পেঁয়াজ কুচি – ১টি ছোট

    টমেটো কুচি – ১টি ছোট (ঐচ্ছিক)

    গাজর বা ক্যাপসিকাম কুচি – ২ টেবিল চামচ (ঐচ্ছিক)

    ধনেপাতা কুচি – ২ টেবিল চামচ

    জিরে – ½ চা চামচ

    নুন – স্বাদ অনুযায়ী

    Shalimar's Sunflower তেল – চিল্লা ভাজার জন্য


    ree

    কীভাবে বানাবেন

    ভিজানো মুগডাল থেকে জল ঝরিয়ে, আদা, লঙ্কা ও জিরে দিয়ে ব্লেন্ডারে মিহি করে বেটে নিন। চাইলে একটু জল দিন। ব্যাটার যেন ডোশার মত মাঝারি ঘন হয়।

    এই ব্যাটারে পেঁয়াজ, টমেটো, ধনেপাতা ও অন্যান্য সবজি কুচি মিশিয়ে দিন। নুন দিয়ে ভালোভাবে নেড়ে নিন।

    একটি ননস্টিক তাওয়া গরম করে হালকা তেল মাখিয়ে দিন।এবার একটি বড় চামচ ব্যাটার তুলে মাঝখানে ঢেলে চামচ দিয়ে গোল করে ছড়িয়ে দিন।

    উপর থেকে হালকা তেল ছড়িয়ে দিন এবং ঢেকে দিন মাঝারি আঁচে ২-৩ মিনিট।

    নীচে সোনালি হয়ে এলে উল্টে দিন ও অন্য পাশটাও ভেজে নিন।

    পরিবেশন টিপস:

    • ধনিয়া পুদিনা চাটনি, টক দই, টমেটো কেচাপ বা ইমলি চাটনির সঙ্গে পরিবেশন করুন।

    • চাইলে এই চিল্লার মধ্যে চিজ বা পনির ফিলিং দিয়েও বানাতে পারেন – দারুন লাগে!

বর্ষায় ভাইরাল জ্বর ও কনজাংটিভাইটিস: সচেতন থাকুন, সুস্থ থাকুন

ree

প্রকৃতির নতুন প্রাণের ঋতু বর্ষা আমাদের অনেক স্বস্তি এনে দেয়, কিন্তু এর সঙ্গে আসে নানা রকম সংক্রমণ ও অসুস্থতা। তার মধ্যে ভাইরাল জ্বর ও কনজাংটিভাইটিস বর্ষাকালের অন্যতম সাধারণ দুটি সমস্যা। একটু অসতর্ক হলেই পরিবারের একজনের থেকে পুরো পরিবারের মধ্যে ছড়িয়ে পড়তে পারে এই রোগ। তাই বর্ষায় সুস্থ থাকতে হলে সচেতনতা ও প্রতিরোধই একমাত্র উপায়।

ভাইরাল জ্বর: বর্ষার নীরব বিপদ

বর্ষার সময় পরিবেশে আর্দ্রতা বেড়ে যায়, জল জমে থাকে, মশার প্রজনন বৃদ্ধি পায় এই সবই ভাইরাল সংক্রমণের অনুকূল পরিবেশ তৈরি করে। ভাইরাল জ্বর সাধারণত ইনফ্লুয়েঞ্জা, ডেঙ্গু, চিকুনগুনিয়া, এডিনো ভাইরাস ইত্যাদি দ্বারা হয়ে থাকে।

ree

লক্ষণসমূহ:

  • হঠাৎ করে জ্বর ওঠা (১০১°F বা তার উপরে)

  • মাথাব্যথা ও শরীরব্যথা

  • সর্দি, কাশি ও গলা ব্যথা

  • দুর্বলতা ও ক্লান্তি

  • চোখ জ্বালা করা বা পান পড়া

  • মাঝে মাঝে পাতলা পায়খানা বা বমি

ree

চিকিৎসা ও করণীয়:

  • বিশ্রাম নিন ও প্রচুর তরল পান করুন

  • খাবার হালকা ও সহজপাচ্য রাখুন

  • প্যারাসিটামল বা চিকিৎসকের নির্দেশিত ওষুধ গ্রহণ করুন

  • দীর্ঘস্থায়ী জ্বর হলে অবশ্যই রক্ত পরীক্ষা করান

  • ডেঙ্গুর লক্ষণ থাকলে প্লেটলেট কাউন্ট চেক করা জরুরি

ree

কনজাংটিভাইটিস: চোখের সতর্ক সংকেত

কনজাংটিভাইটিস মূলত চোখের সংক্রমণ যা ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া অথবা অ্যালার্জির কারণে হতে পারে। বর্ষাকালে ভাইরাল কনজাংটিভাইটিস ছোঁয়াচে রূপে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ে। স্কুল, অফিস, গণপরিবহণে সহজেই এটি একজন থেকে অন্যজনের মধ্যে সংক্রমিত হতে পারে।


প্রধান লক্ষণ:

  • চোখ লাল হয়ে যাওয়া

  • চোখ জ্বালা ও চুলকানি

  • জলের মত তরল বা পুঁজ বের হওয়া

  • সকালে চোখ আটকে যাওয়া

  • এক চোখ থেকে আরেক চোখে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়া


সতর্কতা ও প্রতিকার:

  • চোখে হাত না দেওয়া এবং বারবার হাত ধোয়া

  • আক্রান্ত ব্যক্তির তোয়ালে, রুমাল, বালিশ ব্যবহার না করা

  • চোখে ঠান্ডা জল দিয়ে ধোয়া

  • চিকিৎসকের পরামর্শে আইড্রপ ব্যবহার

  • বাইরে গেলে সানগ্লাস ব্যবহার

    ree

প্রতিরোধই সবচেয়ে বড় চিকিৎসা

বর্ষাকালে ভাইরাল সংক্রমণ রোধে কিছু সহজ সতর্কতা মেনে চললেই অনেক রোগ থেকে বাঁচা সম্ভব:

✅ জলের বোতল নিজস্ব রাখুন

✅ হাত ধোয়া ও স্যানিটাইজার ব্যবহার করুন

✅ ভেজা জামাকাপড় বা জুতো পরে দীর্ঘক্ষণ থাকবেন না

✅ ঘরবাড়ি ও আশপাশ পরিষ্কার রাখুন

✅ মশা থেকে বাঁচতে মশারি ও রিপেলেন্ট ব্যবহার করুন


বর্ষা যেমন প্রকৃতিকে নতুন করে সাজায়, তেমনি আমাদের শরীরেও আঘাত হানতে পারে যদি আমরা অসতর্ক থাকি। ভাইরাল জ্বর ও কনজাংটিভাইটিসের মতো ছোঁয়াচে অসুখকে উপেক্ষা করলে বড় বিপদে পড়তে হতে পারে। তাই বর্ষাকালে নিজের ও পরিবারের প্রতি একটু বাড়তি যত্ন নিন। আর মনে রাখুন, সচেতনতা ও পরিচ্ছন্নতা এই দুটি হল বর্ষাকালের সবচেয়ে বড় অস্ত্র।

ree

পরামর্শ: এই সময়ে হালকা, সুষম খাবার গ্রহণ করুন এবং শরীরচর্চা করুন শরীর সুস্থ থাকলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও থাকবে মজবুত।

প্রকৃতি ও লোকসংস্কৃতির মিলনে মেঘে ভেজা পুরুলিয়া

ree

পুরুলিয়া নামটা শুনলেই লাল মাটির পথ, শাল-পলাশের বন, ঢোল-মাদলের আওয়াজ আর রঙিন ছৌ মুখোশের ছবি চোখে ভেসে ওঠে। পশ্চিমবঙ্গের দক্ষিণ-পশ্চিম প্রান্তে অবস্থিত এই জেলাটি প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও লোকসংস্কৃতির অপূর্ব মেলবন্ধনের কারণে এক বিশেষ পরিচিতি লাভ করেছে। আর বর্ষাকালে, যখন আকাশ ঢাকা থাকে কুয়াশায়, ঝর্ণা গর্জে ওঠে পাহাড়ের কোলে, আর গাঁয়ের মাটিতে গড়ায় বৃষ্টির জল, তখন পুরুলিয়া যেন রূপকথার এক জীবন্ত অধ্যায় হয়ে ওঠে। বর্ষার আগমনে পুরুলিয়ার প্রকৃতি এক বিশেষ রূপ পায়। অযোধ্যা পাহাড় থেকে শুরু করে শিমুলতলা, বাঘমুন্ডি, ঝালদা কিংবা শঙ্খ নদীর তীরে সর্বত্র বৃষ্টির ছোঁয়ায় সবুজে মোড়া এক স্বপ্নজগৎ তৈরি হয়। পুরুলিয়ার অযোধ্যা পাহাড় শুধু ট্রেকিং বা রক ক্লাইম্বিং-এর জন্য নয়, বর্ষায় এক দর্শনীয় স্থান হয়ে ওঠে। পাহাড়ি রাস্তায় ঘন কুয়াশা ও মেঘের খেলা দেখতে দেখতে মনে হয়, আপনি প্রকৃতির কোনো অচেনা কবিতার মধ্যে পা রেখেছেন। বর্ষায় ঘুমন্ত ঝর্ণাগুলি যেন জীবন্ত হয়ে ওঠে।

ree
  • বামনি ঝর্ণা: অযোধ্যা পাহাড়ের কোলঘেঁষে বয়ে চলা এই ঝর্ণাটি বর্ষায় তার পূর্ণ রূপে দেখা যায়।

  • মার্বেল লেক: লাল মাটির পাশে নীলচে সবুজ জলের লেক বর্ষায় আরও গভীর নীল হয়ে ওঠে।

  • থুপুঞ্জিয়া ও খায়রাবেড়ি: স্থানীয়দের কাছে প্রিয় কিছু পাহাড়ি ঝর্ণা, যেগুলি এখনও পর্যটনের মূল স্রোতের বাইরে।


শাল, সেগুন, মহুয়া, কুসুম, খেঁজুর গাছ বর্ষায় গা ধুয়ে নতুন সবুজ পোশাকে নিজেকে সাজায়। বনের মধ্যে দিয়ে হেঁটে গেলে পাখির ডাক, জোনাকির আলো আর ভেজা পাতার গন্ধে আত্মা মিশে যায় প্রকৃতির সঙ্গে। পুরুলিয়া শুধুমাত্র প্রাকৃতিক নয়, এটি এক প্রাণবন্ত সংস্কৃতির ক্ষেত্র। এখানকার মানুষ বৃষ্টি দেখে শুধু ছাতা খোঁজে না, তারা উৎসব খোঁজে। বর্ষাকালে ধান রোপণের মৌসুমে গান, নাচ, ঢোল, বাঁশি আর মুখোশে মুখর হয়ে ওঠে গোটা অঞ্চল। পুরুলিয়ার ছৌ নৃত্য আজ UNESCO-র তালিকাভুক্ত। মুখোশ পরে পৌরাণিক কাহিনি ও বীরত্বের গল্প বলার এই নৃত্য বর্ষাকালে বিভিন্ন উৎসব ও মেলার মাধ্যমে আরও জীবন্ত হয়ে ওঠে।

ree

গগনভেঙ্গে বর্ষার মাঝে ছৌ শিল্পীরা নাচেন যেন মেঘের সঙ্গে তাদেরও কথোপকথন চলছে। "ধিম ধিম ধিম বাজে মাদল, গাঁয়ের রাঁধুনি পিঠে বানায় জলভরা কাল" এভাবেই ঝুমুর গান বর্ষার প্রকৃতি, প্রেম আর পল্লীজীবনকে এক করে তোলে। স্থানীয় মেয়েরা দল বেঁধে গান গায়, নাচে, মাঠে কাজ করে সব কিছুই এক অনাবিল ছন্দে। ছৌ মুখোশের কারিগররা বর্ষাকালে নতুন মুখোশ তৈরিতে ব্যস্ত থাকেন। কাগজ, কাঠ ও কাপড়ে তৈরি হয় মুখোশ রাবণ, অর্জুন, মহিষাসুর, দুর্গা প্রত্যেকটি চরিত্র নিজের নিজস্ব ছন্দে কথা বলে। পাশাপাশি পুরুলিয়ার কিছু অংশে পটচিত্র ও কাঁথা শিল্পও জেগে ওঠে বৃষ্টির দিনে।


বর্ষাকাল পুরুলিয়ার কৃষিজীবনে এক নতুন আশার আলো নিয়ে আসে। জমিতে বৃষ্টির জল পড়লে গাঁয়ের মানুষ আনন্দে ফেটে পড়ে। ধান রোপণের সময় মাটিতে কোমরজলে দাঁড়িয়ে সাঁওতাল নারীরা গান গায়, হাসে, একে অপরকে জল ছিটিয়ে খেলে।

  • করম উৎসব, নবান্ন ইত্যাদি বর্ষায় পালন হওয়া উৎসবগুলিও মানুষকে একত্র করে।

  • সাঁওতালি বিয়ে, খেওড়া, মহুয়ার উৎসব সব কিছুর পেছনে থাকে বর্ষার প্রাকৃতিক আবহ।


বর্ষাকালে যারা প্রকৃতিপ্রেমী, ফটোগ্রাফার, ট্রেকার বা কেবলমাত্র প্রকৃতির নৈঃশব্দ্য খুঁজছেন তাঁদের জন্য পুরুলিয়া আদর্শ। পর্যটকদের জন্য কিছু উল্লেখযোগ্য অভিজ্ঞতা:

  • হোমস্টে অভিজ্ঞতা: স্থানীয় পরিবারে থেকে সাঁওতালি জীবনযাত্রা দেখা ও অনুভব করা

  • লোকশিল্পীদের সঙ্গে সময় কাটানো: শিল্পীরা কীভাবে মুখোশ বানান বা ছৌর পোশাক তৈরি করেন, তা দেখা ও শেখা

  • বর্ষা ট্রেকিং: শিমুলতলা বা অযোধ্যা পাহাড়ে বর্ষার ট্রেক এক অনন্য অভিজ্ঞতা

  • ফটোগ্রাফি: প্রতিটি ঝর্ণা, কুয়াশার ছায়া, মাদলের ছন্দ ফ্রেমবন্দি করার সুযোগ


ree

পুরুলিয়া একসঙ্গে প্রকৃতি, সংস্কৃতি ও মানুষের মিলনের ভূমি। বর্ষাকালে এই ভূমি যেন আরও বেশি প্রাণবন্ত হয়ে ওঠে প্রতিটি গাছ, প্রতিটি গান, প্রতিটি হাসিতে বৃষ্টি মিশে থাকে। এটি শুধু একটি ভ্রমণ গন্তব্য নয়, এটি এক অনুভব, এক আবেগ। মেঘে ভেজা পুরুলিয়া যেন প্রকৃতির কোলে বোনা এক সুরেলা লোকগাথা যেখানে বৃষ্টি মানে শুধু জল নয়, বরং জীবনের রঙ।

অতিরিক্ত তথ্য:

বিষয়ে

বিস্তারিত

ভ্রমণের সেরা সময়

জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর (বর্ষাকাল)

কিভাবে যাবেন

কলকাতা থেকে ট্রেন (পুরুলিয়া জংশন), গাড়িতে ৭-৮ ঘণ্টা

থাকার ব্যবস্থা

বাঘমুন্ডি, অযোধ্যা, শিমুলতলা অঞ্চলে হোমস্টে, লজ

দরকারি জিনিস

রেইনকোট, হালকা পোশাক, ক্যামেরা, স্যানিটাইজার, স্থানীয় গাইড

৫০ বছর পরেও আরণ্যক কেন এখনো প্রাসঙ্গিক?

বাংলা সাহিত্যের অন্যতম শ্রেষ্ঠ উপন্যাস আরণ্যক কবি বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের এক অনন্য সৃষ্টি। প্রথম প্রকাশ ১৯৩৯ সালে, অথচ আজ, ৫০ বছর কেন, ৮৫ বছর পরেও এই উপন্যাস আমাদের মনের গভীরে অনুরণন তোলে।প্রশ্ন উঠতে পারে, আধুনিক জীবনের এত পরিবর্তনের মধ্যেও কেন আরণ্যক আজও প্রাসঙ্গিক? কেন একজন শহুরে পাঠক আজও এই উপন্যাসে নিজেকে খুঁজে পান? এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতেই ফিরে যেতে হবে বিভূতিভূষণের অরণ্যবাসের সেই অন্তরঙ্গ, নিঃশব্দ, অথচ গভীর জীবনদর্শনের দিকে।

ree

আরণ্যক মানে কেবল গাছপালা, বনজঙ্গল আর অরণ্যের বিবরণ নয়। এটি এক মনোজগতিক রূপান্তরের গল্প যেখানে একজন শহুরে মানুষ (সতীনাথ) ধীরে ধীরে মিশে যায় প্রকৃতির সঙ্গে, এবং সেই মিশ্রণ তাকে বদলে দেয়। আজকের যুগেও, যখন শহরের কোলাহলে হারিয়ে যাচ্ছে মানসিক স্বস্তি, যখন "ডিজিটাল ডিটক্স" বা "মাইন্ডফুলনেস"-এর মতো শব্দ ব্যবহার করে মানুষ শান্তির খোঁজে প্রাকৃতিক আশ্রয় খুঁজে বেড়ায় তখন আরণ্যক যেন এক পুরোনো অথচ চিরনতুন উত্তর! আরণ্যকে আমরা দেখি সতীনাথের চোখে। এক আধা-সরকারি কেরানি, যিনি জমিদারির হিসেব রাখতে গিয়েছিলেন বিহারের অরণ্য অঞ্চলে, আর সেখানে ধীরে ধীরে হারিয়ে ফেলেন শহুরে অস্তিত্বের ছায়া।

এই উপন্যাস প্রকৃতিকে দেখে কেবল দ্রব্য নয়, এক সত্তা হিসেবে:

“এই অরণ্য, এই পল্লী, এই দুর্ভেদ্য শাল বন, যেন আমার হৃদয়ের অঙ্গ।”

আধুনিক কালে যখন পরিবেশ দূষণ, গ্লোবাল ওয়ার্মিং, জীববৈচিত্র্য ধ্বংস এসব আমাদের চরম সংকটে ফেলছে, তখন আরণ্যক আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয়, প্রকৃতি আমাদের শত্রু নয়, সহচর

আরণ্যকের এক বড় প্রাপ্তি সেটি তার অরণ্যবাসীদের জীবনচিত্র।

  • রমণী হেমন্তবালা, যার জীবনে প্রেম নেই, আশা নেই, তবুও সে সতীনাথকে দেখে জেগে ওঠে।

  • ক্ষুধার্ত শ্রমিকদের মিছিল,

  • রাস্তাঘাটহীন প্রান্তিক গ্রাম,

  • বণিক ও বনবাসীদের ভিন্ন জীবনপ্রবাহ এই সবকিছু আজকের সমাজেও বিদ্যমান।

এই উপন্যাস আজও প্রাসঙ্গিক কারণ বিভূতিভূষণ "নিম্নবর্গ"-এর কথা বলেছিলেন অত্যন্ত সহানুভূতির সঙ্গে যা আজকের সামাজিক ও রাজনৈতিক আলোচনার মূল কেন্দ্রবিন্দু।

ree

এই আত্মজিজ্ঞাসা, আত্মঅন্বেষণ আজকের দুনিয়াতেও ভীষণ প্রাসঙ্গিক যেখানে মানুষ বাইরের চাকচিক্যর মধ্যেও নিঃসঙ্গতা আর অর্থহীনতায় ভুগছে। আরণ্যকের সবচেয়ে বড় শক্তি তার ভাষা তাতে যেমন আছে প্রকৃতির বর্ণনা,তেমনি আছে দার্শনিক নির্জনতা। আজকের দিনে যখন সাহিত্যে গভীরতা খুঁজে পাওয়া কঠিন হয়ে পড়েছে, আরণ্যক আমাদের শেখায় কীভাবে প্রকৃতি, মানুষ ও আত্মাকে এক সুতোর মালায় গেঁথে ফেলা যায়। আরণ্যক কেবল একটি উপন্যাস নয়, এটি এক আত্মিক যাত্রা।একটি আত্মদর্শনের গল্প, যেখানে মানুষ প্রকৃতির মধ্যে নিজেকে খুঁজে পায়। আধুনিক মানুষের যান্ত্রিক জীবন, নিঃসঙ্গতা, কর্পোরেট ব্যস্ততা, সামাজিক বিচ্ছিন্নতা সবকিছুর মাঝে দাঁড়িয়ে আরণ্যক যেন এক শিকড়ে ফেরার ডাক। ৫০ বছর নয়, ১০০ বছর পরেও এই উপন্যাস আমাদের প্রশ্ন করবে “তুমি নিজেকে কবে শেষ দেখেছিলে, সেই নীরব অরণ্যের ভিতরে?”

রবিবারের গল্প:

ree

অপেক্ষা

মনজিৎ গাইন


সাগ্নিক লেখালেখিতে এখন সবে একটা জায়গা করেছে। কলেজ স্ট্রিটের অনেক কাগজেই সে লিখছে। তবে সে লেখে মূলত গল্প-উপন্যাস। সেদিনকে তার আলাপ হল 'অনুসন্ধান' পত্রিকার সম্পাদক অমল ধরের সঙ্গে। অমলবাবু উঠতি লেখকদের ভালোই স্নেহ করেন ও উৎসাহ দেন। ও অনেকক্ষণ ধরেই তাকে একটা কথা জিজ্ঞাসা করতে চাইছিল কিন্তু পারছে না। তারপর একটু সাহস করে সে জিজ্ঞাসা করেই ফেলল, 'অমলবাবু, আপনার মেয়ে অমৃতা কেমন আছে? আমি যাদবপুরে ওর সিনিয়র ছিলাম।"


অমলবাবু সগ্নিকের কথা শুনে একটু থমকালেন। অনেক সময়ই নতুন লেখকরা সম্পাদকের কাছে আসার জন্যে বিভিন্ন পরিচয়ের কথা বলে, বিভিন্ন যোগাযোগের কথা বলে। কিন্তু এই ব্যাপারটা তিনিও যেন নিতে পারলেন না। তিনি বললেন, "তোমার কোথাও একটা ভুল হচ্ছে। আমার তো অমৃতা নামের কোনও মেয়ে নেই। ইন ফ্যাক্ট আমার কোনও মেয়েই নেই।" সাগ্নিক অনেকের সামনে বেশ অপ্রস্তুতেই পড়ল। এটা কী


হল? এত বছর ধরে সে যেটা জেনে এসেছে তার নড়চড় হল কী করে? তার মানে এত বছর ধরে সে একটা ভুল তথ্য জেনে এসেছে। তাহলে তাকে ভুল তথ্য কে দিল? এইসব ভাবতে ভাবতে সে পৌঁছে যায় নব্বইয়ের দশকের একেবারে শেষের দিকে। যখন সে নতুন ভর্তি হয়েছে যাদবপুর ইউনিভার্সিটির তুলনামূলক সাহিত্যে এমএতে। যাদবপুর মানে তখন একেবারে টপে যাচ্ছে। সারা কলকাতার সকল সুন্দরীরা যেন সেইসময়ে যাদবপুরেই পড়ছে। সেও কম যায় না, যেরকম গ্লামার তেমনি স্মার্ট। তবে ক্লাসের বান্ধবীরা ছাড়া সেরকম কারওর সঙ্গে মেশে না।


সেদিনকে সে শেষবিকেলে দোতলায় নোটিস বোর্ডে ক্লাস রুটিন দেখছে। শেষবিকেলের আলোয় সে দেখতে পেল ইউজি ফার্স্ট ইয়ারের একজনকে সাদা শালওয়ার ও কালো ওড়নায়। সে সেখানে মন দিয়ে বসল। জানে না ফার্স্ট ইয়ারের সেই নবাগতা তাকে খেয়াল করল কিনা। কিন্তু তার মনের মধ্যে প্রেমের অনুরণন যে খুব ভালোভাবেই শুরু হয়ে গিয়েছে। সে বিকেলের পড়ন্ত আলোয় চেয়ে থাকল তার দিকে। ভালোবাসা শুধু ভালোবাসা।


বেশ কিছুদিন বাদে সাগ্নিক তার বন্ধুদের সঙ্গে মিলে কলকাতা বইমেলায় গিয়েছে। সেখানে সন্ধেবেলায় আবছা অন্ধকারে দেখা সেদিনের বিকেলে দেখা সেই নবাগতার সঙ্গে। সাগ্নিক তার সঙ্গে থাকা অর্পিতাকে জানায়, "অ্যাই অর্পিতা, তুই ওই মেয়েটাকে দেখতে পাচ্ছিস?"


"কোন মেয়েটা বল তো?"


"ওই যে বাবা-মায়ের সঙ্গে সামনে রয়েছে।"


"হ্যাঁ, দেখতে পাচ্ছি। কেন, কী ব্যাপার বল তো, তোর কি ব্যথা?"


"আরে, ইয়ার্কি মারিস না। আমাদের ডিপার্টমেন্টের ফার্স্ট


ইয়ার। তুই একটু ওর নামটা জিজ্ঞাসা কর না।"


ওর কথা শুনে অর্পিতার মুখে দুষ্টুমিষ্টি হাসি। সে হাসতে হাসতেই বলে, "হ্যাঁ, সে আমি তোর হয়ে ওর নাম জানতে চাইছি কিন্তু তোকে কথা দিতে হবে আজকে আমাদের সবাইকে বইমেলায় ভালো করে খাওয়ানোর।"


"হ্যাঁ রে বাবা হ্যাঁ, আমি তোদের সবাইকেই খাওয়াব। কিন্তু শর্ত একটাই আগে ওর নামটা তোর জেনে আসতে হবে।


"হ্যাঁ, আগে কাজ তারপর খাওয়া।"


অর্পিতা সোজা চলে গিয়েছে ওদের কাছে। তারপর সেখানে গিয়ে মেয়েটার কাছে জিজ্ঞাসা, "অ্যাই মেয়ে, আমি অর্পিতা কমপ্যারেটিভের পিজি ফার্স্ট ইয়ার। তুমি তো আমাদের ডিপার্টমেন্টের। কী নাম তোমার?"


"আমার নাম স্বাগতা। তুমিও কি বইমেলায় ঘুরতে এসেছ?" "হ্যাঁ, ঘুরতে এসেছি আমাদের ডিপার্টমেন্টের সব বন্ধুদের সঙ্গে। ডিপার্টমেন্টে তোমাকে দেখেছিলাম, তাই তোমাকে এখানে দেখে তোমার নাম জানতে চলে এলাম।"


"না-না, খুব ভালো করেছ।"


"কোনও দরকার পড়লে তাহলে আমাকে জানিও।"


"হ্যাঁ দিদি, অবশ্যই জানাব।"


"তাহলে কাকু-কাকিমা, আপনারা স্বাগতাকে নিয়ে ঘুরুন,


আমি আবার বন্ধুদের কাছে চলে যাই।" এটা বলে অর্পিতা আবার বন্ধুদের কাছে ফিরে এল। আর ফিরেই সাগ্নিকের কাছে ওর আবদার, "তাহলে নাম তো জেনে নিলাম এবারে আমাদের খাওয়া।"


সবাই মিলে এরপর বইমেলায় হইহই করে খাওয়াদাওয়া হল। সাগ্নিকের মনে এখন খুব আনন্দ। কয়েকদিনের মধ্যেই সাগ্নিক খেয়াল করল স্বাগতা দোতলার করিডোরে একাই রয়েছে। ওর মনে দুরুদুরু। প্রাথমিক ইতস্ততা কাটিয়ে সে সোজা চলে গেল করিডরে। তারপর ওকে দেখে কিছু কথা, "স্বাগতা, তোমাকে কিছু কথা বলার ছিল।" হঠাৎ করে নিজের নাম ওর মুখে শুনে স্বাগতা বেশ অবাক হয়েই ওকে জিজ্ঞাসা করল, "তুমি আমার নাম জানলে কী করে, এর আগে তো আমাদের সঙ্গে সেইভাবে কোনওদিন কথা হয়নি।" "ওই যে বইমেলায় তুমি বাবা-মায়ের সঙ্গে গিয়েছিলে আর অর্পিতা তোমার নাম জিজ্ঞাসা করল। আমরা সব ওর সঙ্গেই ছিলাম।" "এবারে বুঝতে পারলাম। তোমার নাম কী দাদা?" "সাগ্নিক।"


"হ্যাঁ, বলো তুমি আমাকে কী বলবে।"


"বলছি তোকে কয়েকদিন আগে বিকেলে নোটিস বোর্ডের


সামনে দেখেছিলাম মনে হয় ক্লাস রুটিন কপি করছিলিস। শেষবিকেলের আলোয় তোকে আমার খুব ভালো লেগে গিয়েছে। আমি তোকে ভালোবেসে ফেলেছি।"


"ও, তাই। হ্যাঁ, সেদিন তুমিও ছিলে। আমার মনে পড়েছে কিন্তু আমার যে আবার ওইসব ভালোলাগা ভালোবাসার রাস্তায় যাতায়াত নেই। আসলে কী জানো তো সাগ্নিকদা, আমি কনভেন্ট এডুকেটেড। সো আই হ্যাভ সাম কনভেনশনস। সেইজন্যে এটা ওই পর্যন্তই থাকলে মনে হয় ভালো হয়।"


সাগ্নিক খুবই হতাশ এই কথা শুনে। সে মনে মনে খুবই কষ্ট পেয়েছে। সে যে এরমধ্যে স্বাগতাকে কতটা ভালোবেসে ফেলেছে সে ওর নিজের ধারণার বাইরে। কিন্তু স্বাগতাকে সে কিছুই বোঝাতে পারল না। তার পরেও সে বেশ কয়েকবার স্বাগতার কাছে পৌঁছতে চেষ্টা করেছে কিন্তু ওর কাছে সে পৌঁছতে পারলেও কোনওভাবেই তার মনের কাছে সে পৌঁছতে পারছে না। বারবার সে হতাশ হচ্ছে। এইভাবে পরের বছর চলে এল। সে সুযোগ পেলেই স্বাগতার কাছে যায়। নানানভাবে তার সঙ্গে কথা বলে কিন্তু ওইদিক থেকে একেবারেই কোনও সুযোগ নেই। আবার স্বাগতা তার সঙ্গে খুবই স্বাভাবিকভাবে কথা বলে। সে কথা বলতে গেলে এড়িয়ে যায় না কিন্তু ওইটুকুই। তার বেশি সে আর কোনওভাবেই এগোতে পারছে না। প্রেম ভালোবাসা অনেক অনেক দূরের ব্যাপার।


সেদিন সে মন ভার করেই ডিপার্টমেন্টের দোতলায় দাঁড়িয়ে আছে। আরেকটু দূরে সে দেখতে পেল নতুন ফার্স্ট ইয়ারের কয়েকজন কথা বলছে। এক নবাগতার চোখে মনে হল অসীম গভীরতা। তার মনে এই ভাবনা একটু ঝিলিক দিয়ে গেল এরকম একজনের প্রেমে সে যদি পড়তে পারত তাহলে সে হয়তো স্বাগতাকে ভালোবেসে হতাশা পাওয়ার থেকে অন্তত কিছুটা হলেও স্বস্তি পেত।


কিন্তু ওইটুকুই। তারপর ওর মনের থেকে নবাগতার ভাবনা উড়ে গিয়ে আবার শেষবিকেলের আলোয় দেখা স্বাগতার ভাবনা। ও মনে হয় এই ভাবনা থেকে কোনওভাবেই বেরোতে পারবে না।


এরমধ্যে সাগ্নিককে আবার ডিপার্টমেন্টের ভোটেও দাঁড়াতে হয়েছে সবার দাবিতে। এই নিয়েই ও একটু ব্যস্ত। সবার সঙ্গে কথা বলা। তখনই ও জানতে পারল ফার্স্ট ইয়ারে যার চোখে সে গভীরতা দেখেছিল তার নাম অমৃতা। আর ওদের ক্লাসে আরও একজন অমৃতা আছে যে আবার সবসময় জয়ের সঙ্গে থাকে। ওদের দেখলে মনে হয় ভালোবাসার দুই কপোত-কপোতী! ডিপার্টমেন্টের নানান জায়গায়, ইউনিভার্সিটির নানান জায়গায় ওদের দুজনকে সবসময়ই একসঙ্গেই দেখা যায়। জয় আবার সাগ্নিকের কাছে প্রায়ই আসে নানান কারণে। ও এখন বাংলা সিনেমা নিয়ে নানান লেখা লিখছে। সেইসব নিয়ে মাঝে মাঝেই সাগ্নিকের সঙ্গে বসে। আর যখন জয় ওর সঙ্গে বসে তখন বেশিরভাগ সময়ই ওর সঙ্গে থাকে অমৃতা। ও নিজেও সাগ্নিকের সঙ্গে নানান কথা বলে। ডিপার্টমেন্টের এই দুই জুনিয়ারের জুটিকে সাগ্নিকের ভালোই লাগে।


সেদিনকে জয় ওকে ডাকছে, "সাগ্নিকদা, তোমার সঙ্গে একটু কথা ছিল।"


ও ভাবল নিশ্চয়ই জয় বাংলা সিনেমা নিয়ে নতুন কোনও লেখা লিখেছে তাই নিয়ে আলোচনা করবে, ওর মতামত নেবে। ওর নিজেরও এই আলোচনায় অংশ নিতে ভালোই লাগে। তাই ওর উত্তর, "হ্যাঁ জয়, কী বলবি, নতুন কোনও লেখা লিখেছিস?"


"না দাদা, একটা অন্য ব্যাপার নিয়ে তোমার সঙ্গে কথা ছিল।"


জয় অন্যদিন যেরকম স্বাভাবিকভাবে কথা বলে আজকে কেমন যেন একটু অন্যরকম তার ভাব। সেই অবস্থায় সে বলে, "হ্যাঁ, তুই এখানেই বলতে পারিস।"


"আসলে কী জানো তো অমৃতা তোমার প্রতি অনুরক্ত। সে তোমাকে খুবই পছন্দ করে। ও তোমার সঙ্গে আলাদা করে একটু কথা বলতে চায়।"

ree

সাগ্নিক একেবারেই আকাশ থেকে পড়েছে জয়ের কথা শুনে। অমৃতা তো জয়ের সঙ্গেই সারাক্ষণ থাকে। তারপর তার আবার ওকে ভালো লাগে! সত্যি জয়ের মনে কী যে চলছে। জয়ের সঙ্গে ও থাকে বলেই সাগ্নিকের সঙ্গে আলাপ। আর সেই শেষপর্যন্ত সাগ্নিকের প্রেমে পড়ে গেল। ও ভাবছে তখন জয়ের অবস্থা। জয়কে এমনিতে সাগ্নিক জুনিয়র হিসাবে যথেষ্টই পছন্দ করে, স্নেহও করে। জয়ের জন্যেই তার সঙ্গে অমৃতার আলাপ। অমৃতাকে ও নিজে শুধুমাত্র জয়ের প্রেমিকা হিসেবেই দেখে। আর আজকে সেই জয়ের অমৃতা তার প্রেমে পড়ে গেল। এটা সে যে নিজে ভাবতেই পারছে না। তারপর সে ভাবছে জয়ের অবস্থা। ওর নিজের পুরো সহানুভূতি পরিষ্কারই জয়ের সঙ্গে। সে সঙ্গেসঙ্গে ভেবে নিল তাকে কী করতে হবে। জয়কে এই পরিস্থিতি থেকে তাকে দায়িত্ব নিয়ে বার করতে হবে। সে ওর পাশে দাঁড়ানোর জন্যেই বলল, "তুই চিন্তা করিস না জয়। আমাকে ঠিক কী করতে হবে বল।"


সাগ্নিকের কথা শুনে জয় কী বলবে সেটা ঠিক বুঝে উঠতে পারল না। আসলে ও মনে হয় সাগ্নিকের কাছ থেকে এরকম একটা উত্তর কোনওভাবেই আশা করেনি। সাগ্নিকও বুঝতে পারছে জয়ের অবস্থা। আসলে এই অবস্থায় জয় নিজে আর কী বলবে। যা করার তাকেই করতে হবে। শুধুমাত্র তার জন্যে এরকম একটা দুর্দান্ত জুটি সমস্যায় পড়বে এটা একেবারেই অনভিপ্রেত। তাই সে নিজে থেকেই বলল, "আমি তোর জন্যে এটাই করতে পারি অমৃতার মন থেকে এইসব ভাবনা দূর করবার জন্যে ওকে বলতে পারি। এটা ও কী করে ভাবল। একেবারেই এটা ও ঠিক করেনি! আমাকে নিয়ে এইসব ভাবনা কী করে এল ওর মনে আমি নিজে সত্যি অবাক হচ্ছি। আমি ওকে অন্যরকম ভাবতাম কিন্তু অমৃতা আমাকে ভুল প্রমাণ করল। তুই একদম চিন্তা করিস না। আমি এই সব সমস্যাই খুব ভালোভাবে মিটিয়ে দেব। তুই শুধু অমৃতাকে একবার আমারনিয়ে আয়, আমি খুব ভালো করেই তাকে বুঝিয়ে বলব।"


জয় তখন একেবারেই কাঁচুমাচু অবস্থায় শুধু ওর ডিপার্টমেন্টের সিনিয়রকে বলল, "দেখো সাগ্নিকদা, তুমি একটু সফটলি ওকে বুঝিয়ে বোলো। আসলে আমার মনে হয়েছে ওর তোমার প্রতি ফিলিংস খুবই স্ট্রং। আর আমার সঙ্গে তোমার ঘনিষ্ঠতা বেশি বলে আমাকেই দায়িত্ব দিয়েছে তোমাকে বলার।"


"হ্যাঁ হ্যাঁ, আমি ওকে বুঝিয়েই বলব আর সফটলিই বলব। তোকে এইসব নিয়ে বেশি চিন্তা করতে হবে না। তুই শুধু একবার অমৃতাকে আমার সঙ্গে দেখা করতে বল।" জয় আর কোনও উত্তর না দিয়ে শুধু ঘাড় নাড়ল।


পরের দিন সাগ্নিক ডিপার্টমেন্টের সিঁড়ি দিয়ে নামছে।


হঠাৎ করেই অমৃতার মুখোমুখি। ওকে দেখে মনে হল সে যেন তাকেই খুঁজছিল। তবে এ অমৃতা জয়ের অমৃতা নয়।


সেদিন বারান্দায় যাকে দেখে মনের মধ্যে হালকা হলেও ভালোলাগার অনুভূতি জেগেছিল, মনে হয়েছিল এরকম একজন অতল চোখের কন্যার সঙ্গে সে যদি সম্পর্কে জড়াতে পারত, এ সেই অমৃতা। সে তাকে দেখে একেবারে রাগে ফায়ার, "তুমি কী মনে করো নিজেকে, তুমি আমার মনের মধ্যের অনুভূতিগুলো পাল্টাবে। সরি, জয়কে এইভাবে আমার হয়ে তোমাকে বলবার জন্যে পাঠানোর জন্যে। কিন্তু তোমার কাছ থেকে আমাকে নিয়ে এই ধরনের কথা আমি আশা করিনি।"


সাগ্নিকের তখন চরম অবাক হওয়ার পালা। যা, সে তো এই অমৃতাকে ভাবেনি জয়ের কথার মধ্যে। ও কিছু ওকে বলতে চায় কিন্তু সেই উত্তেজনার মুহূর্তে সাগ্নিক হয়তো সেইভাবে বলে উঠতে পারল না তার ভুল বোঝার কথা বা অমৃতাও হয়তো বুঝে উঠতে পারল না সাগ্নিকের কথা। একসঙ্গে একগাদা কথা বলে সে সোজা বেরিয়ে অটো ধরে নেয়। সাগ্নিক তাকিয়ে থাকে ওর চলে যাওয়া পথের দিকে।


পরে একদিন সাগ্নিক ওর সঙ্গে কিছু কথা বলার চেষ্টা করেছিল কোথায় ভুল বোঝাবুঝি হয়েছিল সেটা ওকে বোঝানোর। কিন্তু জানে না সে সফল হতে পেরেছিল কিনা। তারপর ইউনিভার্সিটিতে আরও বেশ কিছুদিন থাকলেও অমৃতার সঙ্গে সেইভাবে কথা বলে উঠতে পারেনি হয়তো আবার কোনও ভুল বোঝাবুঝি ঘটবে সেই আশঙ্কায় বা হয়তো স্বাগতা একদিন রাজি হয়ে যাবে সেই আশায়।


সাগ্নিক যাদবপুর ছাড়ার সঙ্গে সঙ্গেই এসএসসি দিয়ে স্কুলে ঢুকে গেল। তারপর এক দুবার যাদবপুর গেলেও অমৃতার সঙ্গে দেখা হলেও সে আর কোনও কথা বলে উঠতে পারেনি। তবে ইচ্ছা ছিল লেখালেখির জগতে এসে হয়তো বা অনুসন্ধান পত্রিকার সম্পাদকের সূত্রে সে হয়তো অমৃতার সঙ্গে আরেকবার কথা বলে তার নিজের কথা বলবে, তার ভালো লাগার কথা বলবে, ভুল বোঝাবুঝির কথা বলবে। কিন্তু অনুসন্ধান পত্রিকার সম্পাদক অমল ধরের কথা শুনে সে বুঝল অমৃতা যে অনুসন্ধান পত্রিকার সম্পাদকের মেয়ে সেই জানাটাও তার আরও একটা ভুল। সবকিছুই শুধু ভুল আর ভুল বোঝাবুঝি।


এখন শুধু অপেক্ষা যদি কোনও সময় আবার কোথাও একটা দেখা বা যোগাযোগ হয়ে যায় তাহলে হয়তো সে সবকিছু খুলে বলে মনের ভার কমাবে। তখন হয়তো অনেক দেরি হয়ে যাবে, হয়তো দুজনে অচেনা হয়ে যাবে, হয়তো তখনও সে সামনাসামনি সবকিছু বলে উঠতে পারবে না। তবুও অপেক্ষায় থাকা...

ree

Comments


ssss.jpg
sssss.png

QUICK LINKS

ABOUT US

WHY US

INSIGHTS

OUR TEAM

ARCHIVES

BRANDS

CONTACT

© Copyright 2025 to Debi Pranam. All Rights Reserved. Developed by SIMPACT Digital

Follow us on

Rojkar Ananya New Logo.png
fb png.png

 Key stats for the last 30 days

bottom of page