top of page

সেরা পাঁচটি কলকাতা ডার্বি.. ইলিশ বনাম চিংড়ি.. ইলিশ-চিংড়ির একডজন রেসিপি.. রবিবারের গল্প: তীর্থযাত্রা..

সেরা পাঁচটি কলকাতা ডার্বি

ইতিহাসের গন্ধ মাখা ইস্টবেঙ্গল বনাম মোহনবাগান কলকাতা ডার্বি। পরাধীন ভারত থেকে বর্তমান সময়ের সাক্ষী; ঘটি বাঙাল, ইলিশ চিংড়ির এই চিরন্তন লড়াই।

ree

১৯৫৭ সাল থেকে ডুরান্ড কাপে দুই দল একে অপরের বিরুদ্ধে মুখোমুখি হচ্ছে। সেই থেকে এখনও পর্যন্ত দুই দল মোট ২০ বার একে অপরের মুখোমুখি হয়েছে। যারমধ্যে রয়েছে ১১ টা ফাইনাল। ইস্টবেঙ্গল যার মধ্যে থেকে জিতেছে ৮ টিতে, অন্যদিকে মোহনবাগান জিতেছে ৭ টিতে। এই দ্বৈরথ উপহার দিয়েছে অসংখ্য ঐতিহাসিক ম্যাচের। কিন্তু এই দুই দলের খেলার ইতিহাসে সেরা পাঁচটি ম্যাচ কোনগুলো তা বলা সত্যি কঠিন। তবে শেষ পঞ্চাশ বছরের ইতিহাসে এগিয়ে কোন দল? কারা এগিয়ে বাঙাল না ঘটি? চলুন দেখে নিই।

ree

. ৩০ সেপ্টেম্বর ১৯৭৫

ইস্টবেঙ্গল ৫

মোহনবাগান ০

ডার্বির ইতিহাসে সেরা ম্যাচের কথা বলতে গেলে ১৯৭৫-এর ৩০ সেপ্টেম্বর লাল-হলুদের শিল্ড জয়ের কথা বলতেই হবে। ১৯৭০ থেকে ১৯৭৫ পর্যন্ত সময়কালে ইস্টবেঙ্গল সমস্ত ভারতীয় ট্রফি সহ ৬ বার কলকাতা লিগ ও এই মহা ম্যাচ জয় করে শিল্ড পেয়েছিল। লাল-হলুদের হয়ে শ্যাম থাপা ২টি ও রঞ্জিত মুখার্জি, সুরজিৎ সেনগুপ্ত এবং শুভঙ্কর সান্যাল একটি করে গোল করেছিলেন।

ree

২. ১৩ জুলাই ১৯৯৭

ইস্টবেঙ্গল ৪

মোহনবাগান ১

ফেডারেশন কাপের সেমি ফাইনাল ডার্বির ইতিহাসে স্মরণীয় একটি দিন। যুবভারতী দর্শক সংখ্যার নিরিখে এইদিন রেকর্ড তৈরি করেছিল। উপস্থিত ছিলেন ১ লক্ষ ৩১ হাজারের বেশি দর্শক। ইস্টবেঙ্গলের হয়ে প্রথম গোলটি করেছিলেন নাজিমুল হক, এরপর বাইচুংয়ের হ্যাট্রিক সহ মোট চার গোল, অপরদিকে মোহনবাগানের হয়ে গোলটি করেছিলেন চিমা ওকেরি।

ree

৩. ২০০৭,

মোহনবাগান ৪

ইস্টবেঙ্গল ৩

মোহনবাগানের সুব্রত ভট্টাচার্য সেই সময় ছিলেন ইস্টবেঙ্গলের কোচ। ম্যাচের প্রথমার্ধে লালম পুইয়া, ব্যারেটো ও ভেঙ্কটেশের গোলে ৩-০ ব্যবধানে এগিয়ে যায় সবুজ মেরুন। মোহনবাগান সমর্থকরা তখন ১৯৭৫-এর ৫-০ হারের বদলা নেওয়ার স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছিলেন। দ্বিতীয়ার্ধে ঘুরে দাঁড়ায় ইস্টবেঙ্গল। আলভিটো দুটি ও এডনিলসন একটি গোল করেন। হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের শেষে ভেঙ্কটেশ নিজের দ্বিতীয় গোল করে মোহনবাগানকে জয় এনে দেন।

ree

৪. ২৫ অক্টোবর ২০০৯

মোহনবাগান ৫

ইস্টবেঙ্গল ৩

এই ম্যাচে অসাধারণ খেলেছিলেন সেই সময়কার মোহনবাগানের নাইজেরিয় ফুটবলার চিডি এডে। চিডির চার গোল সহ মনীশ মৈথানী একটি গোল করেন মোহনবাগানের হয়ে। অপরদিকে ইস্টবেঙ্গলের হয়ে গোল ইয়াকুবু ২ টি ও নির্মল ছেত্রী ১টি। ৫-৩ ব্যবধানে জেতে মোহনবাগান।

ree

৫. ৬ সেপ্টেম্বর ২০১৫,

ইস্টবেঙ্গল ৪

মোহনবাগান ০

এই ঐতিহাসিক ম্যাচে ইস্টবেঙ্গলের হয়ে ২ গোল করেছিলেন কোরিয়ান ফুটবলার ডু ডং হিউন। এছাড়াও অপর দুটি গোল করেছিলেন রাহুল ভেকে ও রফিক।

ree

ডায়মন্ডের দর্পচূর্ণ:

১৯৯৭ সালের ১৩ জুলাই - ভারতীয় ফুটবলের ইতিহাসে সর্বোচ্চ উত্তেজনার দিন। ২৭ বছর আগে রবিবাসরীয় ডার্বিঘিরে যে পরিমাণ হাইপ তৈরি হয়েছিল, তা সম্ভবত প্রথমবার দেখেছিল ভারতীয় ফুটবল। সেদিন ১,৩১,০০০ দর্শকের সামনে এমন একটি ম্যাচ হয়েছিল, যা শুধু কলকাতা ডার্বি নয়, ভারতীয় ফুটবলের ইতিহাসে ঠাঁই পেয়ে গিয়েছে।

ree

ইলিশ চিংড়ির একডজন


খেলার মাঠে যত ই যুদ্ধ থাকুক, খাওয়ার পাতে বেশ মিলেমিশে একাকার হয়ে থাকেন এনারা। এমনই একডজন রেসিপি রইলো আজ।

ree

হাতে মাখা ইলিশ


কী কী লাগবে

ইলিশ মাছ ৪ টুকরো, পেঁয়াজ কুচি ১/২ কাপ, Shalimar's Chef Spices লঙ্কা গুঁড়ো ১ চা চামচ, Shalimar's Chef Spices হলুদ গুঁড়ো ১ চা চামচ, কাঁচালঙ্কা ৪-৫ টা, Shalimar's সরষের তেল ৩ টেবিল চামচ, নুন ১/২ টেবিল চামচ, জল পরিমাণমতো

ree

কীভাবে বানাবেন

কড়াইতে পেঁয়াজ কুচি, লঙ্কা গুঁড়ো, হলুদ গুঁড়ো, কাঁচালঙ্কা, সরষের তেল, নুন একসাথে চটকে কিছুক্ষন রাখুন। মজে নরম হলে ওর মধ্যে মাছ আর সামান্য জল মাখিয়ে ২০মিনিট রাখুন। কড়াই সহ আঁচে বসিয়ে ঢেকে রান্না করুন ১০ মিনিট। গরম ভাতের সঙ্গে খুব ভালো লাগে।

ree

কচুরলতি দিয়ে ইলিশ


কী কী লাগবে

কচুর লতি ১ কাপ, নারকেল কোরা ২ টেবিল চামচ, Shalimar's Chef Spices হলুদ গুঁড়ো ১ চা চামচ, Shalimar's Chef Spices লঙ্কা গুঁড়ো ১ চা চামচ, পেঁয়াজ কুচি ২ টেবিল চামচ, রসুন কুচি ১ টেবিল চামচ, কাঁচালঙ্কা ৪-৫ টা, নুন স্বাদমতো, তেল ২ টেবিল চামচ, জল পরিমাণমতো, ইলিশ মাছ ১/২ কাপ

ree

কীভাবে বানাবেন

কচুর লতি জলে ভাপিয়ে ভালো করে জল ঝরিয়ে নিন। তেল গরম করে একে একে সব মশলা অল্প জল দিয়ে কষুন। এবার নারকেল কোরা দিয়ে অল্প আঁচে কষুন। কষানো হলে চিংড়ি মাছ গুলো দিয়ে ভালো করে কষে কচুর লতি দিয়ে নেড়েচেড়ে কাঁচালঙ্কা দিয়ে ১০ মিনিট দমে রেখে পরিবেশন করুন।

ree

ইলিশ মাছের কোরমা


কী কী লাগবে

ইলিশ মাছ ৪ টুকরো, ঘি ১ টেবিল চামচ, Shalimar's Mustard তেল ১/৪ কাপ, পেঁয়াজ কুচি ১/২ কাপ, নুন স্বাদ মতো, পেঁয়াজ বাটা ১/৪ কাপ, কাজুবাদাম বাটা দেড় টেবিল চামচ, Shalimar's Chef Spices লঙ্কা গুঁড়ো ১/২ চা চামচ, Shalimar's Chef Spices জিরা গুঁড়ো ১/২ চা চামচ, টকদই ১/৪ কাপ, কাঁচালঙ্কা ৪-৫ টা, দুধ ১/২ কাপ, চিনি ১ চা চামচ, বেরেস্তা ১/৪ কাপ

ree

কীভাবে বানাবেন

প্যানে তেল ও ঘি একসাথে গরম করে পেঁয়াজ কুচি দিয়ে নাড়ুন। নরম হলে পেঁয়াজ বাটা দিয়ে কিছুক্ষণ নেড়ে বাদাম বাটা, জিরে গুঁড়ো, লঙ্কা গুঁড়ো, নুন ও সামান্য জল দিয়ে কষুন। তেল ভাসলে জল ঝরানো টকদই দিয়ে কষুন। এবার চেরা কাঁচালঙ্কা আর জল দিয়ে ফুটে উঠলে মাছগুলো দিয়ে ঢেকে ৪-৫ মিনিট রান্না করুন। উল্টে দিয়ে আরো ৪-৫ মিনিট রান্না করুন। দুধ আর চিনি মিশিয়ে ফুটতে দিন। বেশ গা মাখা হয়ে তেল ভেসে উঠলে বেরেস্তা ছড়িয়ে পরিবেশন করুন।

ree

তন্দুরী ইলিশ


কী কী লাগবে

ইলিশ মাছ ৪ টুকরো, তন্দুরী মশলা ১ টেবিল চামচ, Shalimar's Mustard তেল ১ টেবিল চামচ, জল ঝরানো টকদই ১ টেবিল চামচ, নুন স্বাদমতো, Shalimar's Chef Spices লংকা গুঁড়ো ১ চা চামচ, Shalimar's Chef Spices হলুদ গুঁড়ো ১/২ চা চামচ, Shalimar's Chef Spices কসৌরি মেথি

সাজানোর জন্য

স্যালাড আর সবুজ চাটনি

ree

কীভাবে বানাবেন

একটি পাত্রে একে একে জল ঝরানো টকদই, নুন, হলুদ গুঁড়ো, লঙ্কা গুঁড়ো, তন্দুরী মশলা, কসৌরি মেথি, সরষের তেল ভালো করে ফেটিয়ে নিন। ওর মধ্যে মাছের টুকরোগুলো দিয়ে মেখে আরো ১০ মিনিট রাখুন‌। বেকিং ট্রেতে তেল ব্রাশ করে মাছের টুকরোগুলো রেখে গ্রিল করুন ৫ মিনিট। সাবধানে উল্টে আরো ৩ মিনিট রাখুন। সবুজ চাটনি আর স্যালাডের সাথে পরিবেশন করুন।

ree

দুধমানকচু পাতায় ইলিশ ভাঁপা


কী কী লাগবে

ইলিশ মাছ ৪ টুকরো, সাদা সরষে বাটা ১ টেবিল চামচ, পোস্তবাটা ১ টেবিল চামচ, নুন স্বাদমতো, কাঁচালঙ্কা বাটা ১ চা চামচ, চেরা কাঁচালঙ্কা ২টি, Shalimar's Chef Spices হলুদ গুঁড়ো ১ চা চামচ, Shalimar's সরষের তেল ২ টেবিল চামচ, দুধ মানকচু পাতা ৪টি, কালোজিরে ১/২ চা চামচ।

ree

কীভাবে বানাবেন

মাছগুলো নুন হলুদ গুঁড়ো মেখে রাখুন মিনিট পাঁচেক। এবার একটি পাত্রে সরষে বাটা, পোস্ত বাটা, কাঁচালঙ্কা বাটা, চেরা কাঁচালঙ্কা, সরষের তেল, কালোজিরে একসাথে মেখে নিন। প্রতিটি কচুপাতায় তেল মাখিয়ে মাঝখানে একটি করে মাছের টুকরো রেখে ভালো করে মুড়ে সুতো দিয়ে বেঁধে স্টিলের টিফিন বক্সে ভরে ঢাকনা বন্ধ করে প্রেশার কুকারে ভাঁপিয়ে নিন। পরিবেশনের সময় ওপর থেকে আর একটু কাঁচা সরষের তেল ওপরে ছড়িয়ে দেবেন।

ree

শাপলা দিয়ে ইলিশ


কী কী লাগবে

ইলিশের টুকরো, জিরে বাটা ১ চা চামচ, চেরা কাঁচালঙ্কা ৪টি, Shalimar's Chef Spices হলুদ গুঁড়ো ১/২ চা চামচ, টুকরো করা শাপলা ১ কাপ, কালোজিরে ১/২ চা চামচ, নুন স্বাদমতো, Shalimar's সরষের তেল ২ টেবিল চামচ


কীভাবে বানাবেন

মাছগুলো নুন হলুদ মেখে ভেজে তুলে রাখুন। ঐ তেলে কালোজিরে , কাঁচালঙ্কা ফোড়ন দিয়ে একে একে টুকরো করা শাপলা, নুন, হলুদ গুঁড়ো, জিরে বাটা দিয়ে অল্প আঁচে কষুন। পরিমাণ মতো জল দিয়ে ফুটতে দিন। ভাজা মাছ দিয়ে আরো কিছু সময় রান্না করুন। গরমভাতের সাথে খুব ভালো লাগবে।

ree

প্ৰন টেম্পুরা


কী কী লাগবে

চিংড়ি মাছ, আদা+ রসুন+ কাঁচালঙ্কা বাটা, লেবুর রস, নুন, Shalimar's Chef Spices গোলমরিচ গুঁড়ো, ময়দা, কর্নফ্লাওয়ার, সোডা ওয়াটার, Shalimar's Sunflower তেল


কিভাবে বানাবেন

প্রথমে চিংড়ি মাছ গুলো খুব ভালো করে পরিষ্কার করে ধুয়ে লেবুর রস, নুন, আদা রসুন কাঁচালঙ্কা বাটা দিয়ে আধঘন্টা ম্যারিনেট করে রাখতে হবে। অন্যদিকে ব্যাটার বানানোর জন্য একটি পাত্রে ৪ টেবিল চামচ ময়দা, ২ টেবিল চামচ কর্নফ্লাওয়ার, গোলমরিচ গুঁড়ো, নুন ও সোডা ওয়াটার দিয়ে ঘন ব্যাটার বানিয়ে নিতে হবে। এবার ওই ব্যাটারের মধ্যে মাছগুলো ডুবিয়ে সাদা তেলে ফ্রাই করতে হবে। ফ্রায়েড প্ৰণ গুলো স্যালাড ও মেয়োনিজ এর সাথে গরম গরম পরিবেশন করুন।

ree

লাউপাতায় তিলবাটা চিংড়ি


কী কী লাগবে

চিংড়ি মাছ ৫০০ গ্রাম, সাদা তিল বাটা ২ টেবিল চামচ, নারকেল বাটা ১ টেবিল চামচ, কাঁচা লঙ্কা বাটা ১ চা চামচ, নুন চিনি স্বাদ মতো, Shalimar's Chef Spices হলুদ গুঁড়ো ১/২ চা চামচ, লাউপাতা পরিমাণ মতো


কীভাবে বানাবেন

লাউপাতা ছাড়া বাকি সব উপকরণ একসঙ্গে মাখিয়ে রাখুন। লাউপাতায় মাঝখানে মেখে রাখা মিশ্রনসহ চিংড়ি মাছ রেখে ভালো করে মুড়ে সুতো দিয়ে বেঁধে নিন। ননস্টিক তাওয়াতে রেখে ঢেকে খুব অল্প আঁচে রান্না করুন। মাছ এবং পাতা দিয়ে বেরোনো জলে রান্না হবে, তবুও খেয়াল রাখবেন। প্রয়োজনে জলের ছিটে দেবেন। হয়ে গেলে গরম ভাতের সঙ্গে পরিবেশন করুন।

ree

চিংড়ি মাছের বাটি চচ্চড়ি


কী কী লাগবে

চিংড়ি মাছ ৫০০ গ্রাম, ডুমো করে কাটা ৩ টে আলু, হলুদ বাটা ১ টেবিল চামচ, লঙ্কা বাটা ২ টেবিল চামচ, কাঁচালঙ্কা চেরা ৬টি, ছোট এক কাপ Shalimar's Mustard তেল, ছোট ২ কাপ জল, সরষে বাটা ২ টেবিল চামচ।


কীভাবে বানাবেন

একটি অ্যালুমিনিয়ামের পাত্রে একে একে সব উপকরণ দিয়ে ভালো করে মেখে নিন। বাটি সহ উনুনে বসান। আলু সেদ্ধ হয়ে জল শুকিয়ে তেল ভেসে উঠলে নামিয়ে গরম ভাতের সঙ্গে পরিবেশন করুন।

ree

চিংড়ি মালাইকারি


কী কী লাগবে

চিংড়ি মাছ ৫০০ গ্রাম, নুন স্বাদ মতো, Shalimar's Chef Spices হলুদ গুঁড়ো ১ চা চামচ, সাদা তেল ৪ টেবিল চামচ, ঘি ১+১ চা চামচ, শুকনো লঙ্কা ১ টা, তেজপাতা ১ টা, গোটা গরমমশলা (লবঙ্গ, দারচিনি, এলাচ), পেঁয়াজ বাটা ২ টেবিল চামচ, Shalimar's Chef Spices কাশ্মীরী লঙ্কা গুঁড়ো ১ চা চামচ, আদাবাটা ১ চা চামচ, চিনি স্বাদমতো, নারকেলের দুধ ১ কাপ, ফেটানো টকদই ১ টেবিল চামচ, Shalimar's Chef Spices গরমমশলা গুঁড়ো ১ চা চামচ।


কীভাবে বানাবেন

চিংড়ি মাছ নুন হলুদ মেখে ভেজে তুলে নিন। ঐ তেলে একটু ঘি দিয়ে একে একে পেঁয়াজ বাটা, আদা বাটা, নুন, হলুদ গুঁড়ো, চিনি, কাশ্মীরী লঙ্কা গুঁড়ো, টকদই দিয়ে কষুন। ভাজা চিংড়ি দিয়ে আরও কিছুক্ষণ কষে নারকেলের দুধ দিয়ে ফুটতে দিন। ঘি গরমমশলা গুঁড়ো ছড়িয়ে নামিয়ে পরিবেশন করুন গরম ভাতের সঙ্গে।

ree

ডাব চিংড়ি


কী কী লাগবে

চিংড়ি মাছ ৩০০ গ্রাম, সাদা সরষে ১ চা চামচ + কালো সরষে ১ চা চামচ একসাথে বেটে নেওয়া, ৩ টে কাঁচালঙ্কা ও অল্প নুন দিয়ে ডাবের ভেতরের শাঁস বাটা আধ কাপ, নারকেলের দুধ ৩ টেবিল চামচ, ২ টো কাঁচালঙ্কা চেরা, নুন চিনি স্বাদ অনুযায়ী, Shalimar's সর্ষের তেল ৪ টেবিলচামচ, Shalimar's Chef Spices হলুদ গুঁড়ো ১ চা চামচ, ডাব ১ টা, মেখে রাখা আটা পরিমাণ মতো।


কীভাবে বানাবেন

ধুয়ে পরিষ্কার করা চিংড়ি মাছ নুন হলুদ মেখে রাখুন। এবার একে একে সরষে বাটা, ডাবের শাঁস বাটা, চেরা কাঁচা লঙ্কা, নুন, চিনি, হলুদ গুঁড়ো, সরষের তেল এবং নারকেলের দুধ দিয়ে মাছগুলো ভালো করে মেখে নিন। ডাবের মুখটা গোল করে এমনভাবে কেটে নিতে হবে যাতে ভেতরে চিংড়ি মাছটা পুরতে সুবিধা হয় এবং কেটে নেয়ার পর ডাবের ওপরের ঢাকনাটা রেখে দিতে হবে। এবার মশলা দিয়ে মেখে রাখা মাছটা চামচের সাহায্যে ডাবের ভেতরে ভরে নিন এবং ওপরে ঢাকনাটা দিয়ে বন্ধ করে আটা মাখা দিয়ে আটকে দিন। কড়াইতে কিছুটা জল গরম করে তার মধ্যে একটা ছোট বাটির ওপর ডাবটা বসিয়ে ওপর থেকে ঢেকে প্রায় কুড়ি মিনিট মত রান্না করুন। ওভাবেই রেখে দিন পরিবেশনের আগে পর্যন্ত। গরমভাতের সাথে ভালো লাগবে।

ree

প্রন মালাই কাবাব উইথ ম্যাঙ্গো সস


কী কী লাগবে

মাঝারি সাইজের চিংড়ি মাছ ২০০ গ্রাম, জল ঝরানো টকদই ৫০ গ্রাম, গ্রেটেড চিজ ২ টেবিল চামচ, Shalimar's Chef Spices গোলমরিচ গুঁড়ো ১ টেবিল চামচ, Shalimar's Chef Spices গরম মশলা গুঁড়ো ১ চা চামচ, আদা বাটা ১ চা চামচ, রসুন বাটা ১ চা চামচ, পাতি লেবুর রস ১ টেবিল চামচ, Shalimar's Sunflower তেল ১ টেবিল চামচ, স্বাদ অনুযায়ী নুন, ১ টেবিল চামচ মাখন।

ম্যাঙ্গো সসের জন্য:

কাঁচা-পাকা আম ১ টা, বিটনুন ১/২ চা চামচ, ১/২ চা চামচ কাসুন্দি, চিনি ১/২ চামচ।


কীভাবে বানাবেন

চিংড়ি মাছ পরিষ্কার করে একে একে পাতিলেবুর রস, নুন, টক দই, গ্রেটেড চিজ, আদা বাটা, রসুন বাটা, গোলমরিচ গুঁড়ো, গরমমশলা গুঁড়ো, সাদা তেল একসঙ্গে মিশিয়ে রাখুন আধঘণ্টা। এরপর স্কিউয়ার এ গেঁথে গ্রিলিং প্যানে মাখন ব্রাশ করে মাঝারি আঁচে সেঁকে নিলেই তৈরী প্রন মালাই কাবাব। ম্যাঙ্গো সসের সব উপকরণ একসঙ্গে পিউরি করে নিলেই সস তৈরী। ইচ্ছে মতো সাজিয়ে পরিবেশন করুন।

ree

ইলিশ পুরাণ

ইন্দিরা মুখোপাধ্যায়


বাংলার সাহিত্যসাগরে ইলিশের অবাধ বিচরণ এক সমৃদ্ধ সাংস্কৃতিক ইতিহাস। মাছের মধ্যে ইলিশ নিয়ে একটু বেশিই পক্ষপাতদুষ্ট যেন বাংলার কবি সাহিত্যিকরা। বিদগ্ধজনের মতে নাটক বিনে যেমন ইংরেজি সাহিত্য অন্ধ তেমনি ইলিশ বিনে বাংলাসাহিত্য ।

বাঙালীর খাদ্যসংস্কৃতিতে ইলিশের স্থান সর্বোচ্চে। সংস্কৃতের একটি প্রাচীন শ্লোকেই তার প্রমাণ।

"সর্বেষামেব মতস্যেনাম ইল্লিশ শ্রেষ্ঠ উচ্চতে" অর্থাৎ মাছের মধ্যে সেরা হল ইলিশ। কেউ বলে রাণী, কেউ বা রাজা।

আর তাই বুঝি সৈয়দ মুজতবা আলীর মতে, বেহেশতের খাবারের বর্ণনায় যদি ইলিশের কথা উল্লেখ থাকত, তাহলে কেউই পাপ করে নরকে যেত না।

ree

পঞ্চদশ শতকের কবি বিজয়গুপ্তের মনসামঙ্গল কাব্যে লখিন্দর জন্মাবার আগে সনকার সাধ ভক্ষণে নানাবিধ পদের সঙ্গে দক্ষিণ সাগরের কলা দিয়ে ইলিশের ঝোলের কথা রয়েছে।

"আনিয়া ইলিশ মত্স্য/ করিল ফালাফালা/ তাহা দিয়ে রাঁধে ব্যঞ্জন/ দক্ষিণসাগর কলা"

ree

তারও আগে দ্বাদশ শতকে পন্ডিত জীমূতবাহন সর্বপ্রথম ইলিশ মাছের নাম উল্লেখ করেছেন। সেইসময় সর্বানন্দের টীকাসর্বস্ব গ্রন্থেও "ইল্লিষ" শব্দটির উল্লেখ পাওয়া যায়।

ভারতচন্দ্র রায়গুণাকরের লেখায় "পাঙ্গাস ইলিশ" বলে একটি শব্দ পাওয়া যায়। ১৮২২ সালে হ্যামিল্টন বুকানন নামে এক সাহেব বঙ্গোপসাগরের মাছ নিয়ে গবেষণার সময় "হিলসা" শব্দটি জুড়ে দেন।আর সেই হিলসা ও ইলীশা মিলেমিশে এক হয়ে যায়।

ree

ইল+ঈশ= ইলীশ অর্থাত জলের ঈশ্বর।

কখনো আবার গ্রাম বাংলায় ইলিশ ফিরেছে ধাঁধা হয়ে।

'রূপোর পাতে মারে ঘা, পানির বুকে ফেলল পা।'

ময়মনসিংহ গীতিকায় মাছের রাণী ইলিশের স্থান এক অমূল্য পণ্য হয়ে

'সেই ইলিশের দাম হইল সোনায় একুশ ভরি মাছ ইলিশারে'

সত্যন্দ্রনাথ দত্তর 'ইলশেগুঁড়ি' কবিতায় পড়েছিলাম

'ইলশে গুঁড়ি ইলশে গুঁড়ি

ইলিশ মাছের ডিম

ইলশে গুঁড়ি ইলশে গুঁড়ি

দিনের বেলায় হিম।'

তা আবার গান হয়ে লোকের মুখে মুখে ফিরছে আজো।

অথবা

"হাল্কা হাওয়ায় মেঘের ছাওয়ায় ইলিশেগুড়ির নাচ / ইলশেগুঁড়ির নাচন দেখে নাচছে ইলিশমাছ "

আর বহুল প্রচলিত একটি লোকছড়া?


'ইলিশ মাছের তিরিশ কাঁটা, বোয়াল মাছের দাড়ি

বৈশাখ মাসের এক তারিখ, আইসো আমার বাড়ি'।


কিম্বা ইলিশ নিয়ে আমাদের সবার শিশুতোষ কালে যোগীন্দ্রনাথ সরকারের সেই ছড়া?


'সোনা নাচে কোণা, বলদ বাজায় ঢোল

সোনার বউ রেঁধে রেখেছে ইলিশ মাছের ঝোল।'

ইলিশমাছের গন্ধে ভাতের খিদে একধাপ বেড়ে যায়। ভাত খেয়ে ছুটির দিনে দিবানিদ্রা কিম্বা অলসদুপুরে মাছের স্তুতিগান, এও বাঙালীইয়ানার আরেক অঙ্গ । মনে হয় কী এমন স্নেহপদার্থ আছে এই ওমেগা থ্রি ফ্যাটি এসিডে? যার মোহে ইলশে পদ্যরাও ধরা দেয় ইলশেগুঁড়ির সঙ্গে । হৃদয়ের দেখভাল হয় সেই স্নেহে আর আমি জারিত হতেই ঝরতে থাকে পদ্য আমার কলমেও।

ree

ভাই ইলিশ, তুই খলবল কর জলে,

বড় হয়ে ওঠ, তারপর আয় দেখি !

রান্নাঘরে সর্ষে বাটি, নুন-হলুদ-তেলে

জমিয়ে রাঁধি, তোকে ভাপাই লঙ্কা দুটি ডলে;


ভাতের হাঁড়ির মুখে কৌটো বন্দী ইলিশভাপা

নরম চালের গরম ভাতে মাছের কৌটো চাপা ।

সরষে ঝাঁঝে পরাণ গেল ইলিশ ম’ল দুখে

বেজায় কাঁটা, রূপোর মাছে তবুও খাব সুখে ।


কিন্তু সারাটিবছর হাপিত্যেশ এই বর্ষার মরশুমি ইলিশের জন্য। মাঝে মাঝে তব দেখা পাই। সারাটিবছর পাইনা। বৃষ্টির সঙ্গে তাঁর এক প্রগাঢ় রসায়ন। পুব হাওয়াতে হালকা দোলা, ঝিরঝির করে অবিরাম ইলিশেগুঁড়ি বৃষ্টি পড়তেই থাকবে আর ঠিক তখনি ঝাঁকেঝাঁকে গভীর জলের এই ইলিশমাছ সমুদ্রের নোনা জল সাঁতরে, জোয়ারের অনুকূলে স্বল্প পরিশ্রমে, নদীর কাছে আসবে, আমাদের ধরা দিতে।

ree

বহুবার বাঙালবাড়িতে নিমন্ত্রিত হয়ে সরস্বতী এবং কোজাগরী লক্ষ্মীপুজোতে জোড়া ইলিশের পুজো দেখেছি । ধানদুব্বো, তেল-সিঁদুর মাখিয়ে বরণ করে নতুন শাড়ি পরিয়ে জোড়া ইলিশের পুজোর পর জমিয়ে ইলিশমাছ ভোগ দেওয়া হয়। আগে বলা হত সরস্বতীপুজোর দিনে শুরু আর ঐ লক্ষ্মীপুজোর দিনে শেষ । মধ্যিখানে আশ্বিন থেকে মাঘ অবধি আর ইলিশ খাওয়া যাবেনা। এর বিজ্ঞানসম্মত কারণটি হল মাছকে সংরক্ষণ করা । মাছকে আকারে বাড়তে দেওয়া। বৈশাখ থেকে জ্যৈষ্ঠের মধ্যে যুবতী থেকে গর্ভবতী হয়ে তবে সে বর্ষার জল পেয়ে নধর হবে। আর গুটিগুটি সেই পোয়াতি মাছ সাঁতরে সাঁতরে জোয়ারের সময় সমুদ্রের নোনা জল থেকে যত নদীর দিকে এগিয়ে আসবে তত তার শরীর থেকে আয়োডিন আর নুন ঝরে ঝরে মিষ্টতা বাড়বে। সেই অর্থে ইলিশ হল পরিযায়ী মাছ। মরশুমি সজীব শস্য। বর্ষার বিশেষ তিথিতে ধরা দেয়। বাকী সময় থাকে গভীর জলে। তখন তার মনের তল পাওয়া দুষ্কর। এইসময় সে খায় বিশেষ ধরণের জলজ শ্যাওলা। খেতে খেতে যত বাড়তে থাকে তত সে পুষ্ট ও নধর হয়। রূপে লাবণ্যে থৈ থৈ তার গর্ভিণী যৌবন যেন স্নেহ পদার্থের আধিক্যে ঢলঢল হয়। সেই বিশেষ ধরণের স্নেহপদার্থ বা ওমেগা থ্রি ফ্যাটি এসিড সব মাছে থাকেনা তাই বুঝি ইলিশের এত কদর, অনন্য স্বাদ । হৃদরোগী থেকে ছোট শিশু সকলেই খেতে পারে এই মাছ।


১৭১১ খ্রিষ্টাব্দে রামেশ্বর চক্রবর্তীর "শিবায়ন" বইতে সামান্য হলেও ইলিশের উল্লেখ আছে এভাবে- "ভেটকি ইলিশ আড়ি মা তোর গাগর কলই গড়ই কই - কত জলচর"

এর বছর দশেক বাদে রায়গুণাকর ভারতচন্দ্রের "অন্নদামঙ্গল" কাব্যে কাশীর গঙ্গায় অন্যান্য মাছের সঙ্গে নানাবিধ জলচর প্রাণীর সঙ্গে খরশুলা, তপসিয়া, পাঙ্গাশের সঙ্গে ইলিশও উঠেছিল। শিবের আদেশে বিশ্বকর্মা যখন কাশীতে দেবী অন্নপূর্ণার মন্দির নির্মাণ শুরু করবেন তখন পাতাল গঙ্গা ভোগবতীর জল ছেঁচে ফেলার কারণে এসব মাছের আমদানি হয়েছিল।


বঙ্কিমচন্দ্রের 'চন্দ্রশেখর' উপন্যাসে ইলিশের কথা আছে নবাব মীর কাশেমের স্ত্রী দলনী বেগম ও তার দাসী কুলসুমের কথোপকথনে। দলনী যখন কুলসুমকে দুঃসাহসিক কাজ করার কথা বলেন তার কুলসুম উত্তরে বলে, 'কী? ইলিশ মাছ খেতে হবে না ঠান্ডা জলে নাইতে হবে?'

ree

আবার কমলাকান্তের দফতরে সেই মাছ নিয়ে কথার ফুলঝুরি।

যেখানে "আমার মন" প্রসঙ্গে যেন ইলিশের সুরম্য অভিষেক।

"সেখানে ইলিশ মত্‌স্য সতৈল অভিষেকের পর ঝোল গঙ্গায় স্নান করিয়া, মৃন্ময়, কাংস্যময়, কাচময় বা রজতময় সিংহাসনে উপবেশন করেন সেখানেই আমার মন প্রণত হ‌ইয়া পড়িয়া থাকে। ভক্তিরসে অভিভূত হ‌ইয়া সেই তীর্থস্থান আর ছাড়িতে চায় না"

আবার মানিক বন্দোপাধ্যায়ের 'পদ্মা নদীর মাঝি' তে সেই ইলিশের বর্ণনা?

'পদ্মায় ইলিশ মাছ ধরার মরসুম চলিতেছে। নৌকার খোল ভরিয়া জমিতে থাকে মৃত সাদা ইলিশ মাছ।লণ্ঠনের আলোয় মাছের আঁশ চকচক করে। মাছের নিষ্পলক চোখগুলিকে স্বচ্ছ নীলাভ চোখের মণির মতো দেখায়।'

শ্রী অদ্বৈত মল্লবর্মণের "তিতাস একটি নদীর নাম" এ নদীর পাড়ের জেলে বসতির জীবনের টানাপোড়েন, হাসিকান্নার সেই বিশাল পটভূমি? কিম্বা সমরেশ বসুর "গঙ্গা'য় রূপোলী জলজ শস্যের সন্ধানে ঘরছাড়া মানুষের নৌকায় জীবনযাপনের চিরন্তন সংগ্রামের চিত্রটি?


বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের "কতয় হল" নামক অনবদ্য ছোট গল্পটি সবাই কে বেশ কয়েকটি গোল দিতে পারে অনায়াসে। লেখকের লেকমার্কেট থকে ইলিশ কিনে হাতে ঝুলিয়ে বাড়ি ফেরার পথে ট্রামে, সাইকেল রিকশায় এবং সবশেষে বাড়িতে ঢোকামাত্রেই সবার মুখে এক কথা "কতোয় হল?" অর্থাত মাছটির দাম কত? সবশেষে তাঁর প্রশ্ন, যদি ভদ্রলোক শোলমাছ ঝুলিয়ে আসতেন তবে কী কেউ তাঁকে এমন প্রশ্নবাণে জর্জরিত করত? বাঙালী লেখকের লেখায় যুগে যুগে এই মত্স্য বিলাসিতা তাঁদের অকুন্ঠ মত্স্য প্রীতি থেকেই।

ree

সাহিত্য অন্তপ্রাণ ভোজনরসিক বুদ্ধদেব বসুর কবিতার ছত্রে ছত্রেই তার প্রমাণ মেলে । ১৯৩৮ সালের ভরাবর্ষায় লেখা ইলিশ কবিতাটি অন্ততঃ তাঁর মত্স্যপ্রীতির‌ও যথেষ্ট পরিচয়বাহক।


"রাত্রিশেষে গোয়ালন্দে অন্ধ কালো মালগাড়ি ভরে জলের উজ্জ্বল শস্য,

রাশিরাশি ইলিশের শব, নদীর নিবিড়তম উল্লসের মৃত্যুর পাহাড়।

তারপর কলকাতার বিবর্ণ সকালে ঘরে-ঘরে ইলিশ ভাজার গন্ধ;

কেরানির গিন্নির ভাঁড়ার সরস সর্ষের ঝাঁঝে। এলো বর্ষা, ইলিশ উত্সব।"


তাঁদের বাড়িতে ইলিশমাছ নিয়ে প্রায় পুজোপার্বণের মত ঘটা হত। প্রতিভা বসুর হাতে বুদ্ধদেব বসুর প্রিয় পদ ছিল কাঁচা কুমড়ো দিয়ে ইলিশ মাছ। আর সেটি‌ই বসু পরিবারের সিগনেচার ডিশ। মাছ হালকা ভেজে নিয়ে কালোজিরে, কাঁচালঙ্কা দিয়ে কাঁচা কুমড়োর টুকরো নেড়েচেড়ে নিয়ে সেদ্ধ হয়ে এলে ভাজা মাছ আর কাঁচা সর্ষের তেল দিয়ে নামিয়ে নিতে হবে অতি সহজ অথচ অমূল্য এই পদটি। এটা অবিশ্যি প্রতিভা বসুর বাবার বাড়ির রান্না।


তাঁর কিশোর কবিতা ‘নদীর স্বপ্নে’ও ইলিশ মাছের কথা এসেছে। কবিতায় বড় ভাই ছোট বোন ছোকানুকে নিয়ে নৌকায় করে কিছুক্ষণ ঘুড়ে বেড়াবে। সেই সময় তারা কী কী দেখবে, কী কী করবে, সেই বর্ণনাতেই ইলিশের প্রসঙ্গ এসেছে।

‘ওটা কী? জেলের নৌকা? তাই তো!

জাল টেনে তোলা দায়,

রূপোলি নদীর রূপোলি ইলিশ-

ইশ, চোখে ঝলসায়!

ইলিশ কিনলে?- আঃ, বেশ, বেশ,

তুমি খুব ভালো, মাঝি।

উনুন ধরাও, ছোকানু দেখাক

রান্নার কারসাজি।

পইঠায় বসে ধোঁয়া-ওঠা ভাত,

টাটকা ইলিশ-ভাজা-

ছোকানু রে, তুই আকাশের রানী,

আমি পদ্মার রাজা।’


সব বাঙালবাড়ির মত‌ই ইলিশমাছে খুব আসক্তি ছিল গোস্বামীবাড়িতেও। জানালেন সাহিত্যিক হিমানীশ গোস্বামীর কন্যা হৈমন্তী। লাউশাক দিয়ে ইলিশ অন্যতম রান্না ছিল। হালকা করে ভেজে রাখা ইলিশমাছের তেলেই কালোজিরে আর কাঁচালঙ্কা ফোড়ন দিয়ে কচি লাউ ডাঁটা কেটে নিয়ে দিতে হবে। তারপর একটু লঙ্কাবাটা। লাউশাক থেকে যে জল বেরুবে সেটাতেই ভাজা মাছ দিয়ে শুকিয়ে নিতে হবে। এর মধ্যে বেগুণ, কাঁচালঙ্কা, কাঁচা তেল দিয়ে নামিয়ে নিতে হবে লাউশাক ইলিশ।


আরেকটি হল চৌকো করে পাতলা পাতলা করে কেটে নেওয়া লাউ দিয়ে ইলিশমাছ। সর্ষের তেলের মধ্যে কালোজিরে কাঁচালঙ্কা ফোড়ন দিয়ে লাউ সেদ্ধ হয়ে এলে ভাজা ইলিশমাছ দিয়ে লাউচিংড়ির মত লাউ ইলিশ আমাদের বাড়ির অন্যতম রেসিপি। বললেন, হৈমন্তী। তাঁর দাদু পরিমল গোস্বামীর স্মৃতিচিত্রণ গ্রন্থে আছে, স্নান করতে নেমে তাঁর নদীতে মাছ ধরা আর সে সময়ের বাজারের বর্ণনাও। এক পয়সায় আটটি ইলিশ অথবা একদিন জমিয়ে শুধু ইলিশের ডিম খাওয়া হত সেসময়। আর একদিন বাড়িতে শুধুই রান্না হত ইলিশের মুড়োর ঝোল আর চচ্চড়ি। দৈনিক চার পয়সায় আর মাসিক মাত্র পাঁচটাকায় সংসার চলত।

ree

আবার সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় তো শয়নে, স্বপনে, জাগরণে ছিল এই ইলিশ। 'মহারাজ, আমি তোমার' কবিতাতেও তিনি মহারাজের চোখের জলে মাছ ধরতে চাইলেন


'মহারাজ, আমি তোমার চোখের জলে মাছ ধরেছি

মাছ না মাছি কাঁকরগাছি একলা শুয়েও বেঁচে তা আছি।'

তাঁর কথায়, "আসল ইলিশের স্বাদ দেড় কিলো থেকে পৌনে দু’কিলোতে। আমরা বাল্যকাল থেকে ইলিশের সমঝদার। আমার মতন এমন মানুষ খুব কমই আছে, যে জ্যান্ত ইলিশকে লাফাতে দেখেছে"


স্ত্রী'র হাতে শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের প্রিয় ছিল ইলিশমাছের মাথা দিয়ে চালকুমড়ো। খুব সোজা চটজলদি আর কেজো রান্না । জানিয়েছিলেন মীনাক্ষী চট্টোপাধ্যায়। রেসিপিও দিয়েছিলেন। ইলিশমাছের মাথা নুন হলুদ মাখিয়ে তেলে ভেজে নিতে হবে। ঝিরি ঝিরি করে কাটা চালকুমড়ো হালকা করে ভাপিয়ে রাখতে হবে। এবার কড়াইতে সর্ষের তেলে আদা, জিরে বাটা দিয়ে লঙ্কা, হলুদ, নুন দিয়ে চালকুমড়ো দিয়ে নেড়েচেড়ে মাথা দিয়ে চাপা দিতে হবে। সেদ্ধ হলে মুড়ো একটু ভেঙে দিয়ে গায়ে মাখামাখা হলে নামিয়ে নিলেই তৈরী ।সাহিত্যিকদের ইলিশ প্রীতির মাঝে রবি-নজরুলই বা বাদ যান কেন?


রবিঠাকুরের গল্পগুচ্ছের সমস্যাপুরাণেও "সেদিন সোমবার, হাটের দিন। ছোটো একটা নদীর ধারে হাট। বর্ষাকালে নদী পরিপূর্ণ হইয়া উঠিয়াছে। কতক নৌকায় এবং কতক ডাঙায় কেনাবেচা চলিতেছে, কলরবের অন্ত নাই। পণ্যদ্রব্যের মধ্যে এই আষাঢ় মাসে কাঁঠালের আমদানিই সব চেয়ে বেশি, ইলিশ মাছও যথেষ্ট"

কিম্বা মাছ নিয়ে তার সেই মজার ছড়া?

ree

"শেষে দেখি ইলিশমাছের

জলপানে আর রুচি নাই

চিতলমাছের মুখটা দেখেই

প্রশ্ন তারে পুছি নাই।

ননদকে ভাজ বললে, তুমি

মিথ্যা এ মাছ কোটো ভাই"


সুরসিক কাজী নজরুল ইসলামেরও ইলিশ প্রীতি কিছু কম ছিল না।

১৯৩২ সালে সিরাজগঞ্জে নিখিলবঙ্গ মুসলিম যুব সম্মেলনে উপস্থিত তিনি । খেতে বসে টপাটপ বড় দু'টুকরো ইলিশ ভাজা সাবাড় করে ফেললেন তিনি। পরিবেশনকারী এগিয়ে এসে তাঁকে আরও ভাজা ইলিশ দেওয়ার চেষ্টা করতেই কবি তাকে বাধা দিয়ে বললেন বললেন, ‘আরে, করছ কী? শেষকালে আমাকে বিড়ালে কামড়াবে যে!’ উৎসুক সবাই ভাবলেন সে রান্না বুঝি পছন্দ হয়নি তাঁর। কিন্তু প্রশ্নের উত্তরে কবি নজরুল জানালেন, ‘ও, বুঝতে পারছেন না! ইলশে মাছ-যে মাছের গন্ধ মুখে লালা ঝরায়, বিড়ালকে মাতাল করে তোলে। বেশি খেলে কি আর রক্ষে আছে!’


কিন্তু আজ নেই সে অযোধ্যা, নেই সে রামরাজত্ব। তাই সবশেষে বলে উঠতে ইচ্ছে করে,

অধরা এই জলজ শস্য, রূপোলী রঙের রূপসী পোষ্য

খেতেন পিতামহরা তস্য, পরিবেদনা কা কস্য !

খাচ্ছি যদিও চর্ব্যচূষ্য, তবুও অধরা বর্ষাশষ্য !

সাহিত্যে মোহনবাগানী চিংড়ি

ইন্দিরা মুখোপাধ্যায়


আমাদের ঘটিবাড়ির লোকজনের চিংড়ি নামের এই পতঙ্গশ্রেণীর প্রোটিনের ওপর পক্ষপাত একটু যেন বেশিই। তাদের রোজকার মেনুতে মৎস্যগোত্রীয় না হয়েও সসম্মানে এবং নিজগুণে উত্তীর্ণ এই পোকাটির যেন অবারিত দ্বার (shrimp recipes)। সেই লেগ্যাসি বয়ে বেড়াতে গিয়ে বাড়ির বাজার সরকারও বুঝে যান একসময় পুঁইশাক/ ওল/ মোচা/ থোড়/ লাউ/ কাঁকুড় এসব নিলে চিংড়ি মাস্ট। তা সে লবস্টার কো বাবালোগ হোক বা দীনের তারিণী ঘুষো কিংবা কুচো। আর তাই বুঝি খাস ঘটিবাড়ির মেয়ে নবনীতা দেবসেনের ভালো-বাসার বাড়িতে আমাদের সই বৈঠকের বার্ষিক জন্মদিনে তাঁর মা রাধারাণী দেবীর প্রিয় পদ মোচা চিংড়ি বা চিংড়ি মালাইকারী কখনও বাদ পড়তে দেখিনি।

ree

চিংড়ি মাছ নয় আর সম্পূর্ণ অন্যজাতের সজীব বলেই বুঝি ওদের এত স্বাদ। আঁশটে ব্যাপরটা নেই। আছে এক অন্য রসায়ন। সংস্কৃত শ্লোকে পর্যন্ত চিংড়ি নিয়ে ঠাট্টা পড়েছিলাম কল্যাণী দত্তের ‘থোড় বড়ি খাড়া’য়।


গলদাং বাগদাং রস্যাং নারিকেলসমণ্বিতাং।।

অলাবুলৌভনাং কৃত্বা ভক্ষিতব্যং ‘শুভেযোগে’।


রবিঠাকুরের কাদম্বরী বৌঠান তো তাঁর প্রিয় বন্ধু সেই ছোট্ট দেওরটির জন্য রোজ পান্তাভাতের পাশটিতে কুচো চিংড়ি ভাজা রাখতে ভুলতেন না। রবি কবিরও চিংড়ি-প্রীতি ছিল বলেই না এমন ছড়া লিখতে পেরেছিলেন?


গলদা চিংড়ি তিংড়িমিংড়ি,

লম্বা দাঁড়ার করতাল।

পাকড়াশিদের কাঁকড়া-ডােবায়

মাকড়সাদের হরতাল।


তা এই সন্ধিপদীদের তুমুল কনসার্টের ব্যান্ডমাস্টার যে চিংড়ি তা সবাই জানে।


রবিঠাকুরের সহজপাঠ প্রথমভাগে চিংড়ির সঙ্গে আমাদের প্রথম আলাপ সেই অনুস্বর অধ্যায়ে। “কাংলা, তোর ঝুড়িতে কী? ঝুড়িতে আছে পালং শাক, পিড়িং শাক, ট্যাংরা মাছ, চিংড়ি মাছ।” বলাই বাহুল্য সংসারবাবুর মায়েরও কিন্তু অতি পছন্দের তা। আর চন্দ্রবিন্দু চ্যাপ্টারে? তিমি ওঠে গাঁ গাঁ করে/চিঁ চিঁ করে চিংড়ি

ree

অথবা


মাছ এল সব কাৎলাপাড়া, খয়রাহাটি ঝেঁটিয়ে,

মোটা মোটা চিংড়ি ওঠে পাঁকের তলা ঘেঁটিয়ে।


গল্পগুচ্ছের অন্যতম গল্প ‘রামকানাইয়ের নির্বুদ্ধিতা’র শুরুতেও রয়েছে চিংড়িমাছের ঝালচচ্চড়ির কথা। গলদা, বাগদা তো মহার্ঘ আর ধানখেতের চাবড়া চিংড়ি, বা হরিণা চিংড়ি? সেও তো প্রোটিন আর ক্যালসিয়ামে ভরপুর সুখাদ্যের তালিকায় পড়ে। বৃন্দাবনে যেমন ‘কানু বিনে গীত নাই’, তেমনই ঘটিবাড়ির হেঁশেলে চিংড়ি বিনে আমিষপদ নাই। আলু-পেঁয়াজ দিয়ে বাটিচচ্চড়ি থেকে পিঁয়াজকলি, লাউ থেকে ওল কপি, পুঁই শাক থেকে চিচিঙ্গে সবেরই অন্যতম অনুঘটক হল এই কুচো চিংড়ি (shrimp recipes)। রান্নাঘরের অগতির গতি, ছোট ছেলেপুলের পাতের ভাত ওঠানোর যাদুকাঠি— সবই সেই চিংড়ি। সামান্য ঘাস দিয়ে রাঁধলেও বুঝি অনন্য স্বাদ হবে। কবি সরল দেও তো তাই এমন সুললিত ছড়া লিখেছেন চিংড়ি নিয়ে। কারণ তার নাম মুখে এলেই যে মুখের মধ্যে লালারস নিঃসরণে উথালপাতাল হয় রসনা। ঘরকা চিংড়ি ঘাটকা চিংড়ি

আটকা জলে টাটকা চিংড়ি

চিংড়িমাছের গয়নাগাটি

গয়না ছাড়া হয় না খাঁটি।

ree

শীতের উত্তুরে হাওয়ায় নাচন লাগলেই রাস্তার ধারে দেখবেন সবুজ কলাপাতায় ধবধবে সাদা চিংড়ির সবচাইতে সস্তার ভার্সন নিয়ে বসে পড়েছে গাঁয়ের মানুষজন। ঘুসো বা দুধসাদা এই ন্যানো চিংড়ির গাঁয়েঘরে নাম ফুল-চিংড়ি। কাদার মতো নরম তাই কেউ বলে কাদা চিংড়ি। সবশুদ্ধ ধুয়ে নিয়ে বড়া করতে হয়। এর পুষ্টিগুণ প্রচুর। ক্যালসিয়াম আর প্রোটিনসর্বস্ব এর মেদহীন, গয়নাগাটি ছাড়া স্লিম শরীর। বারেবারে ভালো করে ধুয়ে জল চেপে, নুন, হলুদ, লংকা গুঁড়ো দিয়ে ম্যারিনেট করে সামান্য বেসন, পোস্ত, কাঁচালংকা কুচি ছড়িয়ে আলতো হাতে চেপে নিয়ে ছাঁকা সরষের তেলে ভেজে ডালের সঙ্গে সাজিয়ে দিলেই কেল্লাফতে। তবে রোজ নয়, মাঝেমধ্যে চলতেই পারে এই ডিপ ফ্রায়েড মুচমুচে সুস্বাদু বস্তুটি। চিংড়ির কথা উঠলেই মনে পড়ে যায় আমার এক রগুড়ে মামার কথা। ওঁদের সময় কত্ত বড় চিংড়ি খেয়েছিলেন তা বোঝানোর জন্য উনি একবার বলেছিলেন “এ আর কি চিংড়ি খাস তোরা? আমরা যে চিংড়ি খেয়েছি তার খোলাগুলো ডাস্টবিনে পড়ে থাকলে তার মধ্যে দিয়ে কুকুরের বাচ্ছা ঢুকতো আর বেরুত।”

আমাদের সাদামাটা বাঙালির সংসারে এসব এখন গালগল্প।বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে মাছভাত, পিঠেপায়েসের মতো চিংড়ি নিয়ে আদিখ্যেতাও কিন্তু শিখরে। বাঙালির এই চিংড়ি-বিলাস বহু প্রাচীন। বিজয়গুপ্তের মঙ্গলকাব্যে ও পূর্ব বাংলার মধ্যযুগীয় রান্নার চিত্রেও সেই চিংড়ির স্বাদ ।

‘ভিতরে মরিচ গুঁড়া বাহিরে জুড়ায় সুতা।

তৈলে পাক করিয়া রান্ধে চিংড়ির মাথা’

ree

এরে কয় বাঙালির চিংড়ি বিলাস। পদ্ম,মান, কচুপাতার মধ্যে চিংড়িমাছ, সর্ষে, পোস্ত, কাঁচালংকা আর তেল, নুন দিয়ে ভাতের মধ্যে ভাপিয়ে পাতা সহ ভাত মেখে খাওয়া আজকের রেস্তোরাঁয় মহার্ঘ ডেলিকেসি। আর মালয়েশিয়া থেকে শিখে আসা রেসিপি মহার্ঘ্য চিংড়ি মালাইকারি? আবার গোপাল ভাঁড়ের বিধবা পিসিমার বাড়ি যাবার আগে পকেটে কুচো চিংড়ি ভাজা নেওয়া আর গিয়ে পিসিমার নিরামিষ লাউয়ের তরকারির ওপর সেই চিংড়িভাজা ছড়িয়ে পিসিমার কাছ থেকে টাকা আদায় করা… সামান্য জিনিসের অসামান্য স্বাদ হলে এমনই তো হবার কথা। বাঙালের ইলিশ আর ঘটিদের চিংড়ি নিয়ে বাকবিতণ্ডা বা আদিখ্যেতা জীবনেও মিটবে না।

মাছ না হয়েও পতঙ্গ শ্রেণীর চিংড়ির আলাদা কদর আমিষ মহলে। তার গায়ে মাছের লাল রক্ত না থাক, রাজকীয়তা কিছু কম নেই। তার শরীরে আঁশ না থাক, স্বাদে কিছু ঘাটতি নেই। ইলিশের মতো শুধু মরশুমি জলজ শস্য নয় বলে এর সম্বচ্ছরি আদরও বাঙালি রান্নাঘরে কম পড়েনি কোনওকালে। স্বাদে-গন্ধে অতুলনীয়তার কারণেই আপামর বাঙালি তাকে একছত্র অধিকার দিয়ে আসছে বাজারের মাছের থলেতে। যার সামর্থ্য আছে সে খায় “জলের ভিতর মাছ কত রস ভরা/ দাড়ী গোঁপ জটাধারী জামাজোড়া পরা” মহার্ঘ্য গলদা, বাগদা চিংড়ি। যার নেই, সে ধানখেতের চাবড়া থেকে হরিণা চিংড়ি খায়। যে আরও দীন, সে কুচো ঘুষো যা পায় তাই ছড়িয়ে রান্না করে, শুধু দুটো ভাত উঠবে বলে।

আর তাই তো ভোজনরসিক ঈশ্বর গুপ্ত মহাশয় চিংড়ি কে “অমৃতের খনি” অভিহিত করে “আমিষের সভাপতি মীন শিরোমণি” বলে বিশেষ মর্যাদা দিয়েছেন।

তার রূপে-গুণে মুগ্ধ কবি আরও লিখেছেন—


“গলদা চিংড়ি মাছ নাম যার মোচা / পড়েছে চরণতলে এলাইয়া কোঁচা”

সেই যে সুপাচক, সুরস্রষ্টা সলিল চৌধুরী একবার এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন না, “Good food is an integral part of life”! তা সেই সুখাদ্যের সম্ভারে চিংড়ির কদর তো আজীবন থেকেই গেল।


চিংড়ির পুর-ভরা লাউপাতা বেসনে ডুবিয়ে ভাজা যে পণ্ডিত অজয় চক্রবর্তীর প্রিয় পদ আর বিনা পেঁয়াজে চিংড়ির পোলাও শ্রীকুমার চট্টোপাধ্যায়ের ফেবারিট তা জেনেছিলাম সেবার কিংবদন্তীর হেঁশেলের খোঁজ নিতে গিয়ে।

ree

কলাপাতায় মুড়ে সর্ষে নারকোল কোরা দিয়ে চিংড়ি ভাপা খেতে খেতে নয়ত আমিষপ্রিয় সাহিত্যিক বুদ্ধদেব বসু বলেন, “সবজীর পদ হল জাপানী মাল আর মাছ-মাংস হল জার্মান মাল”!


চিংড়িপোকার এমনই মাহাত্ম্য যে সত্যজিৎ রায়ের বাড়ির ভোজসভার অন্যতম মেনু এখনও চিংড়ির কাটলেট কারি, রায় পরিবারের ট্র্যাডিশন মেনে। আর জাদুকর জুনিয়র পিসি সরকার আজও না কি মিস করেন তাঁর দিদিমার হাতের অসামান্য সেই চিংড়ির একটা কেজো রান্না চিংড়িপোড়ার স্বাদ! বলেছিলেন সেবার— “চিংড়িমাছ উনুনের পিঠে রাখতেন দিদিমা। সঙ্গে রসুন কুচি। এবার সর্ষের তেলে কালোজিরে কাঁচালংকা ফোড়ন দিয়ে একসঙ্গে বেটে নেওয়া চিংড়ি আর রসুন দিয়ে শুকনো ভাত যেন স্বর্গীয় মেনু।” ফুড কলামনিস্ট ভীর সাঙ্ঘবী এ রেসিপি শুনলেই হয়ত বলতেন, “রুড ফুড অফ বেঙ্গল”।


নবনীতাদিও বলেছিলেন সেবার, চিংড়িমাছ খুব পছন্দের, কারণ কাঁটা বেছে খেতে হয় না। “ফুলচিংড়ির বড়া খেতে বড্ড ভালোবাসি রে….”


বলেছিলাম “দিদি, হান্ড্রেড পারসেন্ট এগ্রিড উইথ ইউ, আমাদের বাড়িতেও যে চল আছে এর…”

আর তাই তো প্রজ্ঞাসুন্দরী দেবী থেকে পূর্ণিমা ঠাকুর, বেলা দে থেকে বিপ্রদাস মুখোপাধ্যায় সবার রেসিপি বইয়ের ডেটাবেস যেন থইথই চিংড়িমাছের রেসিপিতে। তবু তো চিনেদের গোল্ডেন ফ্রায়েড প্রন অথবা চিলি গারলিক শ্রিম্প আর জাপানি প্রন টেম্পুরার কথা বলা হল না। সাউথ ইস্ট এশিয়ার রেস্তোরাঁ তো উপচে পড়ে কেবলই সামুদ্রিক চিংড়িবিলাসে। আর কন্টিনেন্টাল স্টার্টার প্রন ককটেল বা শ্রিম্প অন টোস্ট, লবস্টার থার্মিডর বা ভারতীয় দক্ষিণী মালাবারি প্রন কিংবা প্রন বালচাও? তারাই বা কীসে কম?

ree

তবে এহেন সন্ধিপদীর প্রতি বাঙালির উথলে ওঠা আদি অকৃত্রিম রসনার সঙ্গে মোহনবাগান-ইষ্টবেঙ্গল, উত্তম-সৌমিত্র, হেমন্ত-মান্না নামক দ্বন্দ সমাসগুলির মতো ইলিশ-চিংড়িও যে দাপটের সঙ্গে পঙক্তিভোজে চিরকাল বসে পড়বে আর পাত পেড়ে খেয়ে তবেই উঠবে, তা বলাই বাহুল্য।

তীর্থযাত্রা

স্বপ্নময় চক্রবর্তী



এ কটা কালো পাঁঠা ব্যাঁ-ব্যাঁ করছে। গলায় জবা ফুলের মালা। পীঠাটার গায়ে সকালের আলো পড়েছে। ১৯৮০-র এক শারদ প্রাতে বেজে উঠেছে আলোক মজির। সেনবাবুর নাতনি ধোঁয়া ওগরানো ধূপদানি রেখে গেল উঠানে বলি হবে। নবমী। কালো পাঁঠাটাকে সামনের পুকুরে পানা সরিয়ে স্নান করিয়ে আনা হয়েছে। এই পুকুরেই সেন বাড়ির বাসনকোসন মাজা হয়, হেগে কাপড় ধোয়া হয়, ফলত, এই জল ততটা পবিত্র নয়, তাই গঙ্গাজল ছিটিয়ে দেয়া হল, জবা ফুলের মালা পরানো হল, এবার হাড়িকাটের দিকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। যে বলি দেবে, তার রং ফর্সা, গোলগাল মুখ। মসৃণ ত্বকে কী পেলবতা, মনেই হবে না লোকটা বলি দিতে পারে।


প্রতি বছর এই লোকটাকেই বলি দিতে দেখে আসছে তিমিরবরণ। কেউ কি বিশ্বাস করবে এই লোকটার একটা নাচের ইস্কুল আছে?


এই আদরবাবু নাকি নাচও শেখান। সেন পরিবার বাঙাল।


আদরকে সেন বাড়ির কর্তামশাই 'আদইরগা' বলে ডাকেন। যে পাঁঠার ঠ্যাং ধরেছে আশ্চর্য, ওর গলায় তুলসীর মালা। মানে লোকটা বৈষ্ণব।


ক্ত-বৈষ্ণবদের সমন্বয় ঘটেছিল বাংলায় হয়তো শ'চারেক বছর আগে, কৃষ্ণ-কালী মূর্তির ধারণাও তৈরি করা হয়েছিল, কিন্তু চাক্ষুষ এই অভিজ্ঞতা তিমিরের অদ্ভুত লাগল। এই লোকটাকে আগে দেখেনি তিমির। ঢাক বেজে উঠল। আদর পাঁঠাটার মাথায় একটু হাত বুলিয়ে আদর করল। পাঁঠার গলাটা হাড়িকাটের উপর সেট করে হুড়কো লাগিয়ে দিল। তিমিরের স্কুলে শেখা ছড়া মনে পড়ল- 'নবদ্বীপের গঙ্গার ঘাটে শ্রী চৈতন্য পাঁঠা কাটে নিত্যানন্দ ধরে পাঁঠার ঠ্যাং রে...।' ঢাক বাজছে। দশ-বারোজন মানুষ দাঁড়িয়ে আছে 'পূণ্য হউক' পোজ-এ। হঠাৎ একজন রোগা, হিলহিলে চেহারার ছেলে এসে হাড়িকাটের কাছাকাছি একটা কালো রঙের চ্যাপ্টা আয়তকার টেপ রেকর্ডার পেতে দিল। একটা ছেলে রুমাল বের করে যত্ন করে টেপ রেকর্ডারের গায়ে ছিটকে পড়া রক্ত মুছতে লাগল। তারপর টেপ রেকর্ডটাকে আদর করার মতো গায়ে হাত বুলিয়ে দিল। তিমির দেখল-ছেলেটার উপরের ঠোঁটা কাটা। জোড়েনি। পুরোহিত মশাই কোমরে হাত রেখে এগিয়ে এসে বলল- এটা কী হল?


ছেলেটা বলল এঁকর্ডিং।


- মানে কী?


- এই যে আওয়াজগুলো, এঁকর্ডিং করলাম


- অনুমতি নিয়েছ আমার।


তুলসীমালা গলায় দেয়া চৌকো মুখের লোকটা বলল- ও আমার ভাগ্নে মতন হয়, কর্তামশাইকে বলা আছে।


সেনকর্তা কাছেই ছিলেন। উনি হাতটা সামনে মেলে ধরলেন। মানে- ঠিক আছে।


তিমিরদের উল্টোদিকের বাড়িটাই হল সেন বাড়ি। বেশ কিছুটা জমি নিয়েই ওই বাঙাল বাড়িটা। দশ-বারো কাঠা তো হবেই। ওদের ঘরগুলো ছড়ানো-ছিটানো। মাঝখানে বড় উঠোন। একটি


মাত্র পাকাবাড়ি, যার ছাদ ঢালাই করা, বাকি দুতিনটে বাড়ি টিনের। চারিদিকে সুপুরি গাছ। সেনবাবুদের আদিবাড়ি ছিল বরিশাল জেলায়। প্রতিবার দুর্গাপুজোয় নবমীর দিন তিমিরদের বাড়ির সবার নিমন্ত্রণ থাকে। তিমিররা যায়। উঠোনে তালপাতার আসন আর কলাপাতা বসিয়ে লম্বা সারি তৈরি করা হয়। প্রতিটি সারির মধ্যে ফাঁকা জায়গা রাখা থাকে। একটা সারি ব্রাহ্মণদের দ্বিতীয় সারিটা বৈদ্য এবং কায়স্থদের। এরপর একটু বেশি ফাঁকা জায়গা রেখে অন্যান্য জাতির লোকজন। সাহা বাড়ি, পাল বাড়ি ঢাকি, ঢুলিরা সবাই একসারিতে। তিমির কিছু মনে করে না। ওরা তো সিডিউল কাস্ট, এই ১৯৭৮ সালেও ভেদাভেদটা করেই গেছে। তিমির নিজেও তো এসসি কোটাকেই চাকরিটা পেরেছে। কী করা যাবে। অফিসেও তো ওকে শুনতে হয় পরমেন্টের সোনার চাঁদ ছেলে। সেনকর্তার বড় নাতি তিমিরের বন্ধু। বলে


কিছু মনে করিস না, দাদু যত দিন আছেন, এই নিয়মটা চালাতেই হবে। ওর কাছেই শুনেছিল সেনকর্তা নাকি চেয়েছিলেন বদ্যিরা আর ব্রাহ্মণরা এক পংক্তিতেই বসবেন। কারণ,


বদ্যিদেরও উপনয়ন হয়। বদ্যিরা অথর্ববেদ জ্ঞানী। কিন্তু ওদের গুরুদেব স্বয়ং আপত্তি করেছেন। তিমির দেখল এলাকার সিপিএম নেতাও ওদের সারিতেই বসেছে। গত বছর বামফ্রন্ট থাকা দলের কাউন্সিলার। সরকার হয়েছে। এই সিপিএম নেতা বিকাশ হালদার ক্ষমতায়


এই মাংসের ধোঁয়া ওঠা ঝোলটার জন্যই এই প্রতীক্ষা নিরামিষ মাংস'। পেঁয়াজ-রসুন ছাড়াই এই মাংস রান্না হয়। মাংসটা যেন আমিষ নয়, পেঁয়াজ-রসুনটাই আমিষ। এই দুনিয়ায় কত যে রগড় ছড়ানো-ছেটানো। তিমির দেখল তুলসীমালা গলায় দেয়া যুবকটি, যে পাঁঠার ঠ্যাং ধরেছিল, সে বামুনদের সারিতেই বসে খাচ্ছে। গোঁসাই বলে তুলসীমালা গলায় থাকলেই ওই সারিতে বসা যায় না। ওই তো ঢাকি দু'জন, গলায় তুলসীমালা। তিমিরদের সারিতেই বসেছে। ওই ছেলেটিকে দেখা গেল যে পাঁঠার মুণ্ডচ্ছেদের আর্তনাদ রেকর্ড করেছিল। ওকে নিশ্চয়ই খেতে বলেনি ওরা। সেনকর্তা যতটা পারেন বরিশাল টিকিয়ে রেখেছেন এখনও। শুক্ত, মোচার তরকারি, মানকচুর তরকারির পর সেই ধোঁয়া ওঠা মাংস-ঝোল। মাংস মাত্র দু'টুকরোই পাতে পড়ল, কিন্তু ঝোলটাই তো অপূর্ব। বেশ ঝাল হয়েছে, চোখে জল। এই চোখের জলটাই তো আনন্দাশ্রু।


খাওয়াদাওয়ার তদারকি করেছিলেন সেনকর্তা নিজে। 'অর পরে আরও দুই হাতা কচু দ্যাও'। 'আরে এক্কারে হুগনা ভাত, দুই হাতা ঝুল দ্যাও'। এসব করছেন। মাংস দিতে বলছেন না কিন্তু যদি বেঁচে যায় পরদিন নাতি-নাতনিরা খাবে। সেনকর্তা তিমিরকে বলল- শোনলাম আকাশবাণীতে চাকরি পাইছ। খোব আনন্দের কথা। যাবার আগে একটু কথা কমু।


আঁচিয়ে এসে তিমির সেন কর্তার কাছে গেল। সেনকর্তার বয়স হয়তো আশির কাছাকাছি হবে।


সেনকর্তা বললেন- আকাশবাণীতে কি কর তিমু? তুমি গানবাজন জানো বইলা তো জানতাম না। তিমির বলল, না, গান বাজনা নয়। অন্য কাজ।


তবে কি কথা ফুঁক? মানি, গানটানের আগে পরে যে বলা হয় অমুকের গান শুনবেন, অমুকের গান শুনলেন। এয়া কর?


- না, নিজে করি না, যারা এসব বলেন, ওদের বলে অ্যামাউসার। আমার কাজ ওদের তদারকি করা যেন ঠিক করে সব প্রোগ্রামগুলি ব্রডকাস্ট হয় সেটা দেখা। আমাদের বলে ট্রান্সমিশন এগজিকিউটিভ। ডিউটি অফিসারও বলে।


এসব বলার সময় বেশ গর্ব হচ্ছিল তিমিরের। তিমির দেখল- ওদের সেই আদরবাবু, তুলসীমালা গলায় রাখা লোকটা মানে যে বলি দিয়েছিল এবং যে পাঁঠার ঠ্যাং ধরেছিল, ওরাও দাঁড়িয়েছে এসে। সেনকর্তা বললেন-ডিউটির অফিসার? খুব তো বড় পদ।


না, বড় পোস্ট নয়। নামটাই ওরকম।


- নিশ্চই বড় পোস্ট, নয়তো কেউ মাস্টারি ছাইড়া জয়েন করে? আমার একখান রিকুয়েস্ট আছে আমি তো রেডিও শুনি, খুব রেডিও শুনি। শোনালাম সব দুর্গাপূজার বৃত্তান্ত। গত চাইর দিন ধইর্যান দুফরবেলা শুনি। আমার বাড়ির দুর্গাপূজাও খুব প্রাচীন এবং ঐতিহ্যপূর্ণ, বোজছ। আগে আমার গ্রামে দুর্গাপূজা হইত। আমার পূর্বপুরুষ ছিলেন লাকুটিয়া জমিদার বাড়ির রাজ বৈদ্য। তিরিশ কানি নিষ্কর জমি ছিল, বোজছ। সেই দুর্গাপূজাটা আমি, ভূপতি স্যান শত কষ্ট, বিপর্যয়, অনটন সত্বেও আমি আজও ধইরা রাখছি, এইডা সুললিত কন্ঠে ব্যাতার তরঙ্গে কইয়া দিবার ব্যবস্থা কইরো। রিকুয়েস্ট করলাম, বোজছ...।


তিমির কিছু বলে না। কী বলবে? এরকম তো কত


দুর্গাপুজোই হচ্ছে। হাজার হাজার। তবে উনি ঠিকই বলেছেন। জমিদার বাড়ি, বনেদি বাড়ির পুজোটুজো নিয়ে তো প্রোগ্রাম হয়েছে। তিমির কি করে বলবে- ওসব তো হাইফাই পুজো দাদু, আপনার পুজোটা তো হাইফাই নয়, আপনার বাড়ির পুজোয় তো সিনেমা আর্টিস্ট আসে না, মল্লিক বাড়িতে রঞ্জিত মল্লিক আছে, লাহা বাড়ি, দেব বাড়ি, সাবর্ণ চৌধুরীদের কত বড় দুর্গা দালান- আপনার কী আছে দাদু?... তবে করা কি যায় না একেবারে? অ্যাঙ্গেল পাল্টালেই হয়। যেমন 'দুর্গার ভোগে কচুর তরকারি'। কিন্তু তিমিরের তো প্রোগ্রাম তৈরির ক্ষমতা নেই। ও হল সুপারভাইজার ধরনের কর্মী। একটা প্রমোশন হ'লে প্রোগ্রাম এগজিকিউটিভ হবে। কী তীমু, কিছু কও না ক্যান? তিমির বলে- আমি তো এই সবে জয়েন করেছি দাদু, আমি চেষ্টা করে দেখব। এ বছরটা তো হয়ে গেল।


- হহ। আগামী বছরে কইয়া দিবার ব্যবস্থা কইর,


সুললিত মধুর কণ্ঠে যদি নিলীমা সান্যালের কণ্ঠে হয়, তবে তো উত্তম...।


- নীলিমা স্যন্যাল তো খবর পড়েন। দিল্লি থেকে।


- আইছ্য, নীলিমা সান্যালের দরকার নাই দেবদুলাল?


উনিও তো খবর পড়েন। নিউজ তো আলাদা সেকশন।


তো কী হইছে তয়?


ওখানে হবে না। আমাদের প্রোগ্রাম অপশন আলাদা।রা আমাদের আলাদা অ্যানাউন্সার আছে।


আইচ্ছা। সেইডা তোমার যা ভালো মনে কর। তাইলে নেক্স্ট বার রেডিওতে শোনা যাইবে। আরও একটা বছর


বাঁইচ্চা য্যান যাহি হে মা দুর্গা।


তিমির জানে, মিছে কথা বলল। ও তো নিজে প্রোগ্রাম


করতে পারে না। ডিউটি অফিসাররা যে একেবারেই


প্রোগ্রাম বানাতে পারে না তা নয়, প্রস্তাব মানে।


প্রোপোজাল দিয়ে অ্যাপ্রুভাল নিতে হয় বসদের থেকে।


এটায় অ্যাপ্রুভাল পাওয়া যাবে না, শিশুর।


যখন সেনকর্তার সঙ্গে এইসব কথাবার্তা হচ্ছিল, তখন


আরও দু'চারজন জড়ো হয়ে গিয়েছিল। বিনুনিতে ফিতে


বাধা গদ্য শাড়ি পরা একটি মেয়ে মুগ্ধ দৃষ্টিতে তিমিরকে


দেখছিল। সেই দু'জনও ছিল,


- যে পাঁঠার ঠ্যাং ধরেছিল, এবং যে কোপ মেরেছিল।


আদইরা গা নামের কোপ মারার লোকটা বলল- হেমন্ত


সন্ধ্যা, মান্না দে, শচীন দেববর্মন সবাইকে দেখেছেন।


তিমির পাঞ্জাবি পরে গিয়েছিল। পাঞ্জাবির কলার ছিল না। তিমির বেশ বুঝতে পারছিল এবার ঘাড়ের কাছ থেকে


ডানা গজাচ্ছে দু'পাশে। বলল- দেখা শুধু? হেমন্তদা,


সন্ধ্যাদি এদের সঙ্গে কথাও বলেছি। আর মান্না দে গান


রেকর্ডিং করতে আসেন না, উনি অডিশনে ফেল।


করেছিলেন কিনা, দ্বিতীয়বার আর অডিশন দেননি। তবে


ওঁর রেকর্ড বাজাই আমরা আর শচীন দেববর্মন তো বন্ধে থাকেন। সেই আদইরগা নামক লোকটার চোখে বিস্ময়।


বলে- বলেন কী? মান্না দে ফেল করেছিলেন?


বিজ্ঞের মত ঘাড় নাড়ায় তিমির। বিনুনিতে ফুল অটা


মেয়েটা বলে- শুক্লা ব্যানার্জিকে দেখেছেন?


তিমির বলে হ্যাঁ কেন দেখব না?


শোভনলাল মুখার্জি? গৌতম চক্রবর্তী?


- হ্যাঁ তো, শোভনদার সঙ্গে তো একসঙ্গে চা খাই।


- কী দারুণ অভিনয় করেন, তাই না?


- হ্যাঁ। আর জগন্নাথ বসুর সঙ্গেও কথা কন?


- কেন কইব না।


এবার ঠ্যাং ধরা লোকটা বলল- আমি করতাল, খঞ্জনি


এসব বাজাই। ঢোলও পারি। রেডিওতে ছবি


বন্দ্যোপাধ্যায়, রাধারানিদের কীর্তন শুনি। ওঁদের সঙ্গে


যদি বাজাতে পারতাম...। আমার নিজেরও একটা


কীর্তনের গুরুপ আছে। শ্রাদ্ধ বাড়িতে বায়নে নিয়ে গায়ন


করি। এই যে আমার কার্ড। রাখেন। যদি জীবনে


একবার রেডিওতে কিছু করতে পারি, জীবন সার্থক হয়। তিমির দেখল কার্ডে লেখা আছে 'বিষ্ণুপ্রিয়া কীর্তন


জ। প্রোঃ শ্রী গোকুলানন্দ গোস্বামী। যেকোনও


অনুষ্ঠানে, মঞ্চে, মন্দিরে, আত্মামুক্তি কর্মে কীর্তন গাওনকরা হয়।'


তিমির কার্ডটাকে দেখলো। গেরুয়া রঙের কার্ড। এবার লোকটাকে ভালো করে দেখলো- যাকে বলে পর্যবেক্ষণ।


অনেকটা চৌকো মতন মুখ। চওড়া চোয়াল পেশি বহুল চেহারা। বৈষ্ণবদের মধ্যে এমন চেহারা কমই দেখা যায়। এজন্যই বোধহয় পাঁঠার ঠ্যাং ধরার জন্য আদরবাবু একে ধরে এনেছিলেন। নিত্যানন্দ ও বেশ বলশালী ছিলেন, এ জন্যই শাক্তদের ব্যঙ্গ ছড়াটায় বলাছিল- নিত্যানন্দ ধরে পাঁঠার ঠ্যাং।


এর পরের লাইন কাটিও বেশ মজার।


তারপরে জগাই এসে


মাংস চাহিল হেসে


নিত্যানন্দ মারে তারে ল্যাং।


জগাইয়ের মত গুন্ডাকেও লেঙ্গি মারার ক্ষমতা দেখানো হয়েছে সেই ছড়ায়।


নিত্যানন্দের সময়েই শাক্ত-বৈষ্ণব সমন্বয়ের কাজ শুরু হয়ে গিয়েছিল। নিত্যানন্দ তাঁর ছাপ্পান্ন বছর বয়সে বিবাহ করেছিলেন। খড়দহে আশ্রম করেছিলেন। উনি দুর্গাপূজাও চালু করে দিয়েছিলেন। যদিও পাঁঠাবলির পরিবর্তে চালকুমড়ো বলি হয়। খড়দহে এদের আশ্রমে আজও দুর্গাপূজা হয়। নিমতা অঞ্চলে থাকার সুবাদে তিমির এসব জানে। তিমির জিজ্ঞাসা করল- গোস্বামীবাবু, একটা কৌতূহল হচ্ছে। আপনার চেহারা দেখে মনে হচ্ছে এক্সারসাইজ করেন। অথচ খঞ্জনি বাজান, করতাল বাজান, কীর্তন করেন...


লোকটি বলে আমার কি তবে ড্রাম বাজানো উচিত ছিল? কীর্তন না গেয়ে কাউবয় সং গাওয়া উচিত ছিল? বডি বিল্ডিং করলে কীর্তন গাওয়া যায়।


তিমির বলে ঠিকই, ঠিক কথা, কিন্তু কীর্তন তো একটা কোমল রস...


গোস্বামী বলেন- ওটা তো ভিতরে। আর ছাগল তো বাইরে। দেহ আর মন তো আলাদা। পৃথিবী কি বিচিত্র। তিমির ভাবে। সঙ্গে সঙ্গেই ওর মনে হয় সমীরদাকে এই লোকটার কথা বলবে। সমীর ঘোষ। সমীরদা 'নানা রঙের মানুষ' নামে একটা অনুষ্ঠান করে। সপ্তাহে একদিন করে হয়। বিচিত্র সব মানুষদের সঙ্গে সাক্ষাৎকার ভিত্তিক অনুষ্ঠান। রাস্তার কুকুরদের খাওয়ানো মানুষ, রেলের প্ল্যাটফর্মে মাদুর বিছিয়ে বিনে পয়সায় অঙ্কের মাস্টারমশাইগিরি করেন এমন মানুষ, পকেটমারদের ট্রেনিং দেয়া মানুষ, কুকুর ট্রেনার, রেসের মাঠের জকি, গরুর দালাল, বাঁদর খেলা দেখায় এমন লোক, এদের নিয়ে অনুষ্ঠান করেছে। তিমিরও এমন দু-তিনটে ইন্টারভিউ নিয়েছে। গোস্বামী মশাই বলছেন- আসলে কি জানেন, আমাদের পূর্বপুরুষ শাক্ত ছিল, এখন আর বলতে লজ্জা কি, আমার ঠাকুরদাদার বাবা নাকি ছিল ডাকাত। আমার ঠাকুরদাদাও নাকি মুগুর ভাঁজতেন।


ঠাকুরদাদাই হরি মন্ত্রে দীক্ষা নিয়েছিলেন। তার বাবা-মা দু'জনই কীর্তন গাইতেন। আমার ফ্যামিলি ব্যাকগ্রাউন্ড আছে স্যর। রেডিওতে যদি...। সঙ্গীত শিল্পী হিসেবে ঢোকানোর চেয়ে ওই নানা রঙের মানুষে নিয়ে নেয়া বরং অনেক সহজ।


তিমির বলে- কীর্তনের জন্য তো অডিশন দিতে হয়। অডিশনে পাশ করতে হয়।


- সে পাশ করে যাব। আপনি আছেন তো। ব্যাকিং। ব্যাকিং থাকলে পাশ করতে কী অসুবিধে?


ব্যাকিং এ অডিশনে পাশ ফেল হয় না। আমাদের হাত গাতে না। বাইরের এক্সপার্ট থাকে।


তাহলে নয় খোলই বাজাব। বাজনদারদের নামও অ্যানাউনূস করে তো।


এই তো। এক্কেবারে ফিচারের ক্যারেক্টার। কীর্তনে মধুর পদ গায়, আবার বারবেল তোলে। পাঁঠাবলিতে সাহায্যকারী রাধা বিরহে কাঁদে, আবার নিজে নামটুকু প্রচারের জন্য পাগল।


তিমির বলল- ঠিক আছে, আমি অন্য একটা প্রোগ্রামে আপনাতে ঢুকিয়ে দেবার চেষ্টা করব। আপনার নাম বলা হবে, একবার নয়, বারবার। গানও গাইবেন দু-চার কলি। বলতে বলতেই তিমিরের মাথায় তৈরি হয়ে গেছে নানা রঙের মানুষ এর নতুন একটি পর্ব। আজ আপনাদের সামনে আর একজন রঙিন মানুষের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিচ্ছি। শ্রী গোকুলানন্দ গোস্বামী। কীভাবে পরিচয় করাই?- ব্যায়ামবিদ? ঠিক আছে। প্রত্যেকদিন বারবেল এবং মুন্ডর নিয়ে দেহচর্চা করেন। তালবিদ নামে


কোনও গ্রাহ্য শব্দ হয় কিনা জানি না, তবে ইনি ঢোল, খোল, খঞ্জনি, করতাল ইত্যাদি তাল বাদ্য বাদনে পটু। শুধু তাই নয়। গোস্বামী মশাই নিজের আঙুল মটকে বললেন স্যর, তাহলে আপনার ঠিকানাটা... যদি কার্ড থাকে।


তিমির বলে- আমার কোনও ভিজিটিং কার্ড নেই। আপনার কার্ড তো রইলই। আমিই যোগাযোগ করে নেব।


সমীর ঘোষ দীর্ঘদিনের প্রোগ্রাম এগজিকিউটিভ। রোগা মানুষটী, গাল ভাঙা, কিন্তু প্রচণ্ড কড়া লোক। চ্যাটাং চ্যাটাং কথা বলে দেন। স্টেশন ডিরেক্টরের ঘরেও সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে চোখের


দিকে চেয়ে কথা বলেন, আবার দরকার হলে দিলীপ ঘোষ বা অমিয় চট্টোপাধ্যায়ের মতো ব্যক্তিত্বময় খ্যাতিমান অ্যানাউন্সারদেন। কোনও ভুল কানে এলে সোজা বলে দেন। এই আকাশবাণীতে নাকি আগে খুব স্যরট্যার বলার রেওয়াজ ছিল, এখন শুধু টপ বসদের স্যর বলা হয়। ডিউটি অফিসাররা প্রমোশোন পেয়ে প্রোগ্রাম এগজিকিউটিভ হয়। তারপর অ্যাসিস্ট্যান্ট স্টেশন


ডিরেক্টর, তারপর স্টেশন ডিরেক্টর। এছাড়া আছেন প্রোডাকশন অ্যাসিস্ট্যান্ট এবং প্রডিউসার। পুরোদস্তুর সরকারী কর্মচারী বলতে যা বোঝায়, এঁরা তা নন। এঁদের বলা হয় স্টাফ আর্টিস্ট। অ্যানাউন্সার, মানে ঘোষকরাও স্টাফ আর্টিস্ট। ওঁরা আন্দোলন শুরু করে দিয়েছেন পুরোদস্তুর সরকারি কর্মচারী হিসাবে গণ্য হবার দাবিতে, তাহলে ওঁরাও প্রমোশন পেয়ে স্টেশন ডিরেক্টার হতে পারবেন।


তিমির যখন সমীর ঘোষের ঘরে ঢুকল, তখন ওখানে জটলা। বিভাস বসু, সুহাস চৌধুরী, অতীন চ্যাটার্জিরাও রয়েছেন। এঁর সব জাঁদরেল অফিসার। তিমির সমীর ঘোষকে বলল- স্যর, একটা প্রপোজাল ছিল...


সমীর ঘোষ বললেন- তোমাকে বলেছি স্যর বলবে না, সমীরনবলবে। পরে এসো। এখন জরুরি মিটিং চলছে। মিটিংয়ের বিষয়টা তো জানে তিমির। যদি স্টাফ আর্টিস্টরাও প্রোমশনের অধিকারটা আদায় করে নিতে পারে, তাহলে ইউপিএসসি/এসএসসি পরীক্ষা দিয়ে চাকরি পাওয়া রেগুলার স্টাফদের প্রমোশনের সুযোগ কমে যাবে। সুতরাং দিল্লিতে প্রতিবাদপত্র লিখতে হবে। তিমিরও রেগুলার স্টাফ। তবে নতুন বলে এত ভাবে না এইসব নিয়ে।


পরে সমীর ঘোষের সঙ্গে কথা বলে অনুমতি পেল। একটা নোটও লিখল এবং সেটার অ্যাপ্রুভাল হল। গোকুলানন্দ গোস্বামীকে স্টুডিওতে ডাকা হবে। এই আকাশবাণী ভবনের আশপাশ দিয়ে অনেকবারই যাতায়াত করেছে গোকুলানন্দ, কিন্তু সেভাবে দেখেনি, যাকে বলে অবলোকন। শ্রীরাধিকার অষ্টসখীর এক সখী ইন্দুলেখা খেদ করছিল- হেরিব না কৃষ্ণমুখ শুধু বাড়ে জ্বালা। ঘোর অঙ্গে কভু নাহি ধরা দিবে কালা। যে কৃষ্ণকে পাব না, কেন বৃথা তার দিকে তাকানো। গোকুলানন্দও কোনও দিন আকাশবাণী ভবনটার দিকে ভালো করে তাকায়নি। আজ রাস্তার ওপার থেকে হাঁ করে দেখতে লাগল বাড়িটা। বাড়ির থাম, দোতলার রেলিং। সামনে লেখা আকাশবাণী ভবন। লালচে পাথরের তৈরি। এই বাড়ি থেকেই ভোরের সূচনা হয়। ভোরবেলা বেজে ওঠে শ্রীরাধার হুাদিসী। তারপর বন্দেমাতারম। তারপর মহাপুরুষের কথা। তারপর দেশ বন্দনা। দুপুরে অনুরোধের আসর শুনতে গিয়ে বাবার কানমলা খাওয়া। এই বাড়িতেই ছবি বন্দ্যোপাধ্যায়, আবার এই বাড়িতেই মনোহর আইচ, এই বাড়িতেই নীলমণি দাস। এই বাড়িতেই তরজা গান, এই বাড়িতেই মহিষাসুরমর্দিনী। গোকুলানন্দের সঙ্গে রয়েছে আর একটি রোগা পাতলা ছেলে। ওর নাম বিপদ ভঞ্জন রুজ। ওর কাঁধে একটা শান্তিনিকেতনী ঝোলা, তার ভিতরে তোয়ালে মোড়ানো ফিলিপ্স-এর চ্যাপ্টা টেপ রেকর্ডার। এই ছেলেটাই গোকুলানন্দর সঙ্গে সেন বাড়ির দুর্গাপুজোয় এসেছিল, এবং বলির পাঁঠার মৃত্যুকালীন আর্তনাদ রেকর্ড করেছিল। গোকুলানন্দ ভিতরে ঢোকে। শ্বেতপাথরের মেঝে। ঢুকতেই বাঁদিকে একটা ছোট টেবিল। সেখানে কোথায় যাবে জিজ্ঞাসা করা হয়। গোকুলানন্দ সগর্বে বলে রেকর্ডিং আছে। ওর কাছে কনট্রাক্টের চিঠি আছে কিনা জিজ্ঞাসা করা হয়। গোকুলানন্দ খাকি খামের ভিতরে যত্নে রাখা কাগজটা দেখায়। ওটাই কনট্রাক্ট ফর্ম। এই কাগজে ভারতের রাষ্ট্রপতির পক্ষ থেকে গোকুলানন্দ গোস্বামীকে অনুরোধ করা হয়েছে একটা ইন্টারভিউ দেওয়ার জন্য, সেটার অমুক তারিখ রেকর্ডিং এবং অমুক তারিখে ব্রডকাস্ট। এইসঙ্গে আর একটা কাগজ ছিল, সেখানে ছাপাই করা ছিল যে এই পনের মিনিটের সাক্ষাৎকার অনুষ্ঠানের জন্য দুশো পঞ্চাশ টাকা পাব এ শর্তে আমি রাজি। সেখানে সই করে স্টেশন ডিরেক্টারকে আগেই পাঠিয়ে দিয়েছে পোস্টে। সব ইংলিশ চিঠি। সম্মানের ব্যাপার। বাড়ি থেকে বের হওয়ার সময় মা যখন সাবধানে যাস বলেছিল, গোকুলানন্দ বেশ চিৎকার করেই বলেছিল, যেন পাঁচ জনে শোনে- আরে রেডিও অফিসে যাব, এতে আর সাবধানে যাওয়ার কী আছে। বাসে উঠব, আর এক্কেবারে রেডিও অফিসে গিয়ে নামব। আকাশবাণী বললেই কন্ডাক্টর নামিয়ে দেবে। বাক্যরচনাগুলো এমনভাবে করছিল গোকুল, যেন প্রতিটি বাক্যেই রেডিও অফিস, বা আকাশবাণী শব্দটা বেশ পোক্তভাবে থাকে। শুনুক পাড়ার লোক। জানুক ও এলিতেলি লোক নয়।


রিসেপশনে থেকে বলে দেয় বাঁদিকের সিঁড়ি দিয়ে উঠে দোতলায় চলে যান, সমীর ঘোষের ঘরে। সাহেবের নাম লেখা আছে বাইরে।


বাঁদিকে একটা শ্বেতপাথরের সিঁড়ি দেখতে পেল


গোকুলানন্দ। সিঁড়ির দিকে যাওয়ার আগেই সামনের দিকে দেখতে পেল বিকট সবুজ দু'ভাগ করা দরজা খুলে একঝলক ঠান্ডা হাওয়া নিয়ে একজন কর্মী মতো মহিলা বেরিয়ে এলেন, যেন জ্যান্ত সরস্বতী। হাতে ফাইল। ওর পিছন পিছন আরও দু'জন। এরকম সরস্বতীর মতো


নারীটাই বুঝি রেডিও দিদিমণি। হংসরাজ সিনেমাটা এসেছিল মায়াপুরী হলে। ওই গান থেকে উঠে এসেছে যেন এই দিদিমণি। গানের রানি।


ও দিদিমণি গানের রানি দাও গাইতে আমায় রেডিও ইস্টিশনে আমি যে অনেক আশায় ঘুরে ঘুরে এসেছি এইখানে। কত সব গুণী গায়েন হেথায় করেন গান ওঁনাদের পায়ের তলে দাও না আমায় স্থান। দু'ভাগ করা সবুজ দরজাটার দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকে গোকুলানন্দ। শ্বেতপাথরের সিঁড়িটা কেমন ঘোরানো। সিঁড়ির পাশে রেলিং। গোকুলানন্দ দোতলায় উঠছিল। ওর পিছনে পিছনে বিপদভঞ্জন। গোকুল এখন সত্যি সত্যিই তীর্থস্থানের দিকে চলেছে। যেন গোকুল। কৃষ্ণ-বলরামের লীলাক্ষেত্র। ওখানে পৌঁছে যাওয়া ভাগ্যের ব্যাপার। স্বপ্নে গোকুল দেখেছে ও, কিন্তু এ বাড়ির ভিতরটা দেখেনি কখনও। যে-সিঁড়ি দিয়ে উঠেছেন বীরেন ভদ্র, বাণীকুমার, পঙ্কজকুমার, ইন্দিরাদি, বেলাদি এই সিঁড়ি দিয়েই তো উঠেছেন, নেমেছেন। আহা! তাঁদের পদরেণু রয়েছে এখানেই।


ধুলো মাথায় নিতে সাধ হয়, কিন্তু ওকে গেঁয়ো ভাবতে ওখানে দাঁড়ালো দিদিমণিরা। যাক। এখন উপরে উঠছে। সিঁড়িতে। বৈকুণ্ঠধামের সিঁড়ি। 'বৈকুণ্ঠধামেই তীর্থযাত্রা করছে ও।


Comments


ssss.jpg
sssss.png

QUICK LINKS

ABOUT US

WHY US

INSIGHTS

OUR TEAM

ARCHIVES

BRANDS

CONTACT

© Copyright 2025 to Debi Pranam. All Rights Reserved. Developed by SIMPACT Digital

Follow us on

Rojkar Ananya New Logo.png
fb png.png

 Key stats for the last 30 days

bottom of page