top of page

দশপ্রহরণধারিণী দেবী দুর্গা, এই দশ অস্ত্রের তাৎপর্য কী?, পুজোর অন্দরসজ্জা, সৌন্দর্যে বসতে লক্ষ্মী, রবিবারের গল্প: দক্ষিণ মেঘের যক্ষিণী..

দশপ্রহরণধারিণী দেবী দুর্গা : দশ অস্ত্রের তাৎপর্য

ree

শক্তির দেবী দুর্গাকে আমরা ‘দশপ্রহরণধারিণী’ নামে জানি। অর্থাৎ, তিনি দশটি ভিন্ন প্রহরণ বা অস্ত্র ধারণ করেন। প্রতিটি অস্ত্রই মহাশক্তির একেকটি প্রতীক মানব জীবনের একেকটি শক্তি, গুণ, নীতি ও সংগ্রামী মানসিকতার প্রতিফলন। পুরাণ মতে, অসুরদের বিনাশ করে ধর্ম ও ন্যায় প্রতিষ্ঠার জন্য দেবতারা নিজেদের অস্ত্র ও শক্তি দেবীকে অর্পণ করেছিলেন। তাই এই দশ অস্ত্র কেবল ভৌতিক অস্ত্র নয়, এগুলি মহাজাগতিক শক্তির প্রতীক, মানব সমাজকে ন্যায় ও কল্যাণের পথে পরিচালিত করার উপকরণ। এই প্রবন্ধে আমরা দেবী দুর্গার দশ অস্ত্রের পুরাণকথা, প্রতীকী ব্যাখ্যা ও আধুনিক তাৎপর্য নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব।

ree

১. ত্রিশূল (শিবের দান)

প্রতীকী অর্থ:ত্রিশূল তিনটি দণ্ড নিয়ে গঠিত—সত্ত্ব, রজঃ ও তমঃ; অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যৎ; ইচ্ছা, কর্ম ও জ্ঞান। ত্রিশূল হলো ত্রিগুণাতীত শক্তির প্রতীক। দেবী দুর্গা ত্রিশূল ধারণ করে মানুষের মধ্যে ভারসাম্য স্থাপন করেন এবং অন্যায় শক্তিকে ধ্বংস করেন।

আধুনিক তাৎপর্য:ত্রিশূল আমাদের শেখায় জীবনে ভারসাম্য বজায় রাখা। জীবনের অশুভ, অজ্ঞতা ও দুর্বলতাকে বিনাশ করতে দৃঢ় মনোবল গড়ে তুলতে হবে।

পুরাণকথা:শিব নিজ করকমল থেকে ত্রিশূল তুলে দুর্গাকে দেন। দেবী এই ত্রিশূল দিয়েই মহিষাসুরের বুকে আঘাত করেছিলেন।

লোকপ্রচলিত কাহিনী:গ্রামীণ বাংলায় বিশ্বাস আছে, বাড়ির প্রবেশদ্বারে ত্রিশূল রাখলে ভূতপ্রেত দূরে থাকে। দুর্গাপূজার সময় মহিষাসুরের প্রতিমায় দেখা যায়, ত্রিশূলই তার বিনাশের প্রধান অস্ত্র।

তাৎপর্য:ত্রিশূল মানে জীবনের তিন গুণ (সত্ত্ব, রজঃ, তমঃ) জয় করা।

ree

২. সুদর্শন চক্র (বিষ্ণুর দান)

প্রতীকী অর্থ:চক্র হলো সময়ের প্রতীক। এটি ঘূর্ণায়মান, অর্থাৎ সময়ের চক্র কারও জন্য থেমে থাকে না। এটি জ্ঞান ও কর্মের মিলিত শক্তি।

আধুনিক তাৎপর্য:মানবজীবনে কর্মের ফল ভোগ করতেই হয়। তাই সুদর্শন চক্র আমাদের কর্মফলের শিক্ষা দেয়, সৎকর্মের মাধ্যমে সময়কে সঠিক পথে ব্যবহার করতে হবে।

পুরাণকথা:ভগবান বিষ্ণুর অগ্নি-প্রতাপ থেকে উদ্ভূত চক্র দেবীকে দেওয়া হয়। মহিষাসুর যখন রূপ পরিবর্তন করে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করছিল, দেবী তখন চক্র ঘুরিয়ে অসুর সেনাদের ধ্বংস করেন।

লোকপ্রচলিত কাহিনী:বঙ্গের কিছু অঞ্চলে বিশ্বাস করা হয়, দুর্গার হাতে চক্র থাকায় গ্রামে অশুভ প্রভাব ঢুকতে পারে না।

তাৎপর্য:চক্র মানে সময়, কর্মফল ও ধর্মচক্রের গতি।

ree

৩. শঙ্খ (বরুণের দান)

প্রতীকী অর্থ:শঙ্খ হলো সৃষ্টির ধ্বনি ‘ওঁ’-এর প্রতীক। এটি শান্তি, শুদ্ধতা ও ইতিবাচক শক্তির প্রতীক। যুদ্ধে শঙ্খধ্বনি মানসিক দৃঢ়তা জাগায়।

আধুনিক তাৎপর্য:শঙ্খ আমাদের মনে করিয়ে দেয়, প্রতিটি যাত্রা বা কর্ম শুরু করার আগে শুদ্ধ চিন্তা ও শুভ শক্তিকে আহ্বান করতে হবে।

পুরাণকথা:সমুদ্রদেব বরুণ নিজের শঙ্খ দুর্গাকে দান করেছিলেন। যুদ্ধক্ষেত্রে দেবী যখন শঙ্খ বাজালেন, অসুররা ভয়ে কেঁপে উঠল।

লোকপ্রচলিত কাহিনী:বাংলায় দুর্গাপূজার সময় প্রতিদিন শঙ্খ বাজানো হয়, যাতে অশুভ শক্তি দূরে থাকে।

তাৎপর্য:শঙ্খ হলো শান্তি, শুদ্ধতা ও ‘ওঁ’ ধ্বনির প্রতীক।

ree

৪. ধনুক (বায়ুর দান)

প্রতীকী অর্থ:ধনুক প্রতীক লক্ষ্যভেদের। ধনুক টানতে হলে ধৈর্য, মনোযোগ ও একাগ্রতা প্রয়োজন।

আধুনিক তাৎপর্য:ধনুক আমাদের জীবনে লক্ষ্য স্থির করার শিক্ষা দেয়। যে ব্যক্তি লক্ষ্যহীন, সে সফল হতে পারে না।

পুরাণকথা:বায়ুদেব দেবীকে অদ্ভুত শক্তিশালী ধনুক দেন। দেবী সেই ধনুক টেনে অসুরদের লক্ষ্যভেদ করেন।

লোকপ্রচলিত কাহিনী:গ্রামীণ কাহিনীতে বলা হয়, দেবী ধনুক টেনে মহিষাসুরকে আহত করলে পৃথিবীতে বজ্রধ্বনির মতো শব্দ হয়েছিল।

তাৎপর্য:ধনুক প্রতীক লক্ষ্য ও একাগ্রতার।

ree

৫. তীর (সূর্যের দান)

প্রতীকী অর্থ:তীর প্রতীক গতি ও শক্তির। একবার ছেড়ে দিলে আর ফিরে আসে না—ঠিক যেমন মানবজীবনে সময় ও কর্ম।

আধুনিক তাৎপর্য:তীর আমাদের শেখায় দ্রুত ও সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়ার প্রয়োজনীয়তা। বিলম্ব করলে লক্ষ্যভ্রষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

পুরাণকথা:সূর্যদেব তাঁর তেজ থেকে প্রখর তীর তৈরি করে দুর্গাকে দেন। এই তীর আলোর মতো অন্ধকার ছিন্ন করে।

লোকপ্রচলিত কাহিনী:লোকবিশ্বাস আছে, পূজার ঘরে প্রদীপ জ্বালানো মানে সূর্যতীরের প্রতীক। এটি অন্ধকার ও অশুভ শক্তিকে সরিয়ে দেয়।

তাৎপর্য:তীর হলো সিদ্ধান্ত ও দ্রুত কর্ম।


৬. বজ্র (ইন্দ্রের দান)

প্রতীকী অর্থ:বজ্র হলো অটল দৃঢ়তার প্রতীক। যেমন পাহাড় ভেদ করতে বজ্র সক্ষম, তেমনি অদম্য ইচ্ছাশক্তি সব বাধা অতিক্রম করতে পারে।

আধুনিক তাৎপর্য:মানবজীবনে সংকট ও প্রতিকূলতার বিরুদ্ধে দাঁড়াতে হলে অদম্য সাহস ও শক্ত মানসিকতা প্রয়োজন।

পুরাণকথা:ইন্দ্র নিজের বজ্র অস্ত্র দুর্গাকে দেন। মহিষাসুরের শক্তিশালী সেনাপতি চণ্ড-মুণ্ডদের দমনে বজ্র ব্যবহার হয়েছিল।

লোকপ্রচলিত কাহিনী:বাংলার গ্রামীণ প্রবাদে শোনা যায়, বজ্রপাতের সময় দেবী অসুরদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেন।

তাৎপর্য:বজ্র হলো সাহস, অদম্য শক্তি ও দৃঢ়তা।

ree

৭. তরবারি (কালী বা অন্য দেবতার দান)

প্রতীকী অর্থ:তরবারি হলো প্রখর বুদ্ধি ও সিদ্ধান্তের প্রতীক। এটি অজ্ঞতা, ভয় ও মিথ্যাকে ছেদ করে সত্যের পথ উন্মুক্ত করে।

আধুনিক তাৎপর্য:তরবারি আমাদের শিক্ষা দেয় স্পষ্ট চিন্তা ও দৃঢ় সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা থাকা দরকার।

পুরাণকথা:শিব বা কখনও কালী দুর্গাকে তরবারি দেন। এই তরবারি দিয়ে দেবী অসুরদের মুণ্ডচ্ছেদ করেন।

লোকপ্রচলিত কাহিনী:বাংলার মঙ্গলকাব্যে বলা হয়েছে, দেবী তরবারি চালালে আকাশে আগুনের মতো ঝলক দেখা যেত।

তাৎপর্য:তরবারি প্রতীক জ্ঞান ও বুদ্ধির।

ree

৮. গদা (বৃহস্পতির দান)

প্রতীকী অর্থ:গদা প্রতীক শক্তি, জ্ঞান ও কর্তৃত্বের। এটি অসুরদের দমন করার হাতিয়ার।

আধুনিক তাৎপর্য:গদা আমাদের শেখায়, শক্তির সঙ্গে সঙ্গে জ্ঞান ও ন্যায়বোধ প্রয়োজন। শক্তি যদি সৎ পথে না ব্যবহৃত হয়, তবে তা ধ্বংস ডেকে আনে।

পুরাণকথা:গুরু বৃহস্পতি নিজের গদা দুর্গাকে দেন। এটি দিয়ে দেবী অসুরদের সেনাপতি রক্তবীজকে দমন করেছিলেন।

লোকপ্রচলিত কাহিনী:গ্রামীণ মেলায় দুর্গার গদা হাতে প্রতিমা দেখে মানুষ বিশ্বাস করে, এই শক্তি তাদের রক্ষা করবে।

তাৎপর্য:গদা হলো শক্তি, জ্ঞান ও কর্তৃত্বের প্রতীক।


৯. পদ্ম (ব্রহ্মার দান)

প্রতীকী অর্থ:পদ্ম হলো পবিত্রতা, সৌন্দর্য ও সৃজনশীলতার প্রতীক। কাদা থেকে জন্ম নিয়েও পদ্ম কলুষিত হয় না।

আধুনিক তাৎপর্য:মানুষকে শেখায় সংসারের অশান্তি ও মলিনতার মাঝেও পবিত্র ও নির্মল থাকা সম্ভব।

পুরাণকথা:ব্রহ্মা দেবীকে পদ্ম দেন। যুদ্ধক্ষেত্রেও দেবীর হাতে পদ্ম দেখা যায় যা শান্তি ও সৃজনশীলতার প্রতীক।

লোকপ্রচলিত কাহিনী:দুর্গাপূজার কুমোরটুলির শিল্পীরা দেবীর হাতে পদ্ম দেন, কারণ এটি মঙ্গল ও পবিত্রতার প্রতীক।

তাৎপর্য:পদ্ম শেখায় কলুষিত পরিবেশেও পবিত্র থাকা সম্ভব।

ree

১০. সাপ বা নাগপাশ (শক্তির প্রতীক)

প্রতীকী অর্থ:নাগপাশ হলো নিয়ন্ত্রণ, সংযম ও শক্তির প্রতীক। এটি অসুরদের বেঁধে ফেলতে ব্যবহৃত হয়েছিল।

আধুনিক তাৎপর্য:নাগপাশ শেখায়—সংযম ও আত্মনিয়ন্ত্রণ ছাড়া প্রকৃত মুক্তি পাওয়া যায় না।

পুরাণকথা:অনেক শাস্ত্রে উল্লেখ আছে, দেবী দুর্গা নাগপাশ ধারণ করেন। এর সাহায্যে তিনি অসুরদের বেঁধে ফেলেন।

লোকপ্রচলিত কাহিনী:গ্রামীণ বিশ্বাস—দেবী সাপ দিয়ে অসুরদের বেঁধেছিলেন, তাই গ্রামে নাগদেবতার পূজা করলে অশুভ শক্তি দূর হয়।

তাৎপর্য:নাগপাশ প্রতীক সংযম, নিয়ন্ত্রণ ও আত্মশক্তির।


দশটি অস্ত্রই একে অপরকে সম্পূর্ণ করে। কোনোটি জ্ঞান, কোনোটি শক্তি, কোনোটি সাহস, কোনোটি পবিত্রতার প্রতীক। একত্রে এগুলি মানবজীবনের পূর্ণতা প্রকাশ করে। ত্রিশূল ও তরবারি দেখায় সত্য-অসত্যের লড়াই।চক্র ও তীর বোঝায় সময় ও কর্মের অপরিহার্যতা। বজ্র ও গদা হলো অদম্য শক্তি ও কর্তৃত্ব। পদ্ম ও শঙ্খ হলো সৌন্দর্য, সৃষ্টিশক্তি ও শান্তির প্রতীক।ধনুক হলো লক্ষ্য নির্ধারণ। নাগপাশ হলো নিয়ন্ত্রণ ও সংযম।

ree

আজকের যুগে এই দশ অস্ত্র আমাদের আত্মিক, নৈতিক ও সামাজিক শক্তি গড়ার প্রতীক। দুর্নীতি, লোভ, হিংসা, অশিক্ষা, বৈষম্য- এই আধুনিক অসুরদের বিনাশ করতে হলে দুর্গার এই অস্ত্রগুলোকে আমাদের জীবনে গ্রহণ করতে হবে।

  • ত্রিশূল শেখায় ভারসাম্য।

  • চক্র শেখায় কর্মফল।

  • শঙ্খ শেখায় ইতিবাচক শক্তি।

  • ধনুক ও তীর শেখায় মনোযোগ ও সিদ্ধান্ত।

  • বজ্র ও গদা শেখায় সাহস।

  • পদ্ম শেখায় পবিত্রতা।

  • নাগপাশ শেখায় আত্মনিয়ন্ত্রণ।

ree

দেবী দুর্গা কেবল অসুরবিনাশিনী নন, তিনি মানবজীবনের প্রতিটি গুণ ও শক্তির প্রতীক। তাঁর দশপ্রহরণধারণ আমাদের মনে করিয়ে দেয় যে, ন্যায়ের পথে চলতে গেলে জ্ঞান, শক্তি, সাহস, সংযম ও পবিত্রতা সব কিছুরই প্রয়োজন।

দুর্গাপূজার সময় আমরা যখন দেবীর আরাধনা করি, তখন শুধু বাহ্যিক পূজা নয়, অন্তরের পূজাও জরুরি। নিজের ভিতরে এই দশ অস্ত্রের প্রতীকী শক্তিকে ধারণ করতে পারলেই জীবনের অশুভ শক্তিকে জয় করা সম্ভব।

ree

পুজোর অন্দরসজ্জা


শারদীয়া দুর্গোৎসব বাঙালির শ্রেষ্ঠ উৎসব। শুধু পুজোর দিনগুলিই নয়, এই উৎসবকে ঘিরে প্রস্তুতিই যেন আলাদা আনন্দ। নতুন জামাকাপড় কেনা, আলপনা আঁকা, প্রতিমা গড়া, প্যান্ডেল সাজানো থেকে শুরু করে ঘরের ভেতরের অন্দরসজ্জাও পুজোর আবহ তৈরি করে তোলে। অন্দরসজ্জা মানেই শুধু বাড়ি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করা নয়; বরং তাকে নতুন সাজে, নতুন রূপে সাজানো, যাতে অতিথি-আত্মীয় থেকে প্রতিবেশী সবাই ঘরের উষ্ণতা ও উৎসবের আবহ অনুভব করতে পারেন। এই প্রবন্ধে আমরা পুজোর অন্দরসজ্জার বিভিন্ন দিক যেমন পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা, রঙ ও আলো, আসবাবের রদবদল, ফুল ও আলপনা, পরিবেশবান্ধব সজ্জা ইত্যাদি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব।

ree

১. বাড়ি পরিষ্কার ও প্রস্তুতি

অন্দরসজ্জার প্রথম ধাপ হলো বাড়ি পরিষ্কার করা। দুর্গাপুজোর আগে থেকেই বাঙালি বাড়ি ধোয়া-মোছায় মন দেন।

  • দেওয়াল ধোয়া বা নতুন রঙ করানো

  • পুরোনো জিনিস ফেলে দেওয়া বা পুনর্ব্যবহার

  • জানলা-দরজা ধুয়ে ফেলা

  • ঘরের প্রতিটি কোণ ঝাড়পোঁছ করা

বলা হয়, পরিচ্ছন্ন পরিবেশেই শুভ শক্তির আগমন ঘটে। তাই বাড়ি পরিষ্কার রাখার মধ্যেও এক ধরনের ধর্মীয় তাৎপর্য রয়েছে।

ree

২. রঙ ও আলোর খেলা

পুজোর অন্দরসজ্জায় রঙের ব্যবহার খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

  • লাল ও সাদা: দুর্গাপুজোর মূল রঙ। লাল প্রতীক শক্তি, আর সাদা প্রতীক শান্তির। ঘরের পর্দা, কুশন, টেবিলক্লথ ইত্যাদিতে এই রঙ ব্যবহার করলে উৎসবের আমেজ দ্বিগুণ হয়।

  • সোনালি ও হলুদ: ঐশ্বর্য ও আনন্দের প্রতীক। প্রদীপ বা লণ্ঠনের আলোয় সোনালি ঝলক অন্দরকে উজ্জ্বল করে তোলে।

  • আলো: এখন ফেয়ারি লাইট বা LED লাইট দিয়ে জানলা, বারান্দা ও ঘরের ভিতর সাজানো হয়। পাশাপাশি মাটির প্রদীপ বা দিয়া ব্যবহার করলে ঐতিহ্যও বজায় থাকে।

ree

৩. আসবাবের রদবদল

বাড়ির পুরোনো আসবাবগুলো পুজোর সময় নতুন করে সাজানো যায়।

  • কাঠের আসবাব পালিশ করা বা রঙ করানো

  • সোফায় নতুন কভার বা রঙিন কুশন

  • ডাইনিং টেবিলে ফুল বা ছোট শো-পিস

  • দেয়ালে নতুন ছবি, পোস্টার বা ফ্রেম

এতে বাড়ি একেবারে নতুন রূপ পায়।

ree

৪. ফুল ও আলপনা

ফুল দুর্গাপুজোর অপরিহার্য অংশ।

  • শিউলি ফুল দিয়ে দরজার কাছে থালা সাজানো

  • গাঁদা ফুলের মালা দিয়ে দরজা ও জানলা সাজানো

  • পদ্মফুল, রজনীগন্ধা বা গোলাপ দিয়ে অতিথি অভ্যর্থনা

  • ঘরের মেঝেতে চাল-গোলাপি রঙ দিয়ে আলপনা আঁকা

আলপনা বাঙালির ঐতিহ্য। দুর্গার পদচিহ্ন আঁকা হয় যাতে দেবীর আগমন শুভ হয়।

ree

৫. পূজোর আসন ও মণ্ডপসজ্জা

যারা বাড়িতে দুর্গাপুজো করেন, তাঁদের জন্য আসনসজ্জা খুব গুরুত্বপূর্ণ।

  • সাদা কাপড়ে ঢাকা পরিষ্কার আসন

  • চারদিকে কলা গাছ, আমপল্লব ও নারকেল

  • গঙ্গাজল ভরা কলস ও শঙ্খ সাজানো

  • ধূপ-ধুনো ও প্রদীপের সুবাস

এগুলো ঘরের অন্দরকে দেবীময় করে তোলে।


৬. পরিবেশবান্ধব অন্দরসজ্জা

আজকের দিনে অনেকেই প্লাস্টিক বা ক্ষতিকর সামগ্রী বাদ দিয়ে পরিবেশবান্ধব উপকরণে অন্দরসজ্জা করেন।

  • মাটির প্রদীপ

  • খড়, বেত বা বাঁশের তৈরি শো-পিস

  • ঝুড়ি বা কুলুঙ্গি সাজানোর জন্য জুট বা কাপড়ের ব্যবহার

  • পুনর্ব্যবহারযোগ্য কাগজের ফুল বা রঙিন লণ্ঠন


ree

এতে যেমন প্রকৃতি রক্ষা হয়, তেমনি বাড়ির সাজও অনন্য হয়।


৭. গন্ধ ও সঙ্গীতের ভূমিকা

অন্দরসজ্জা শুধু চোখের জন্য নয়, মনকেও আনন্দ দিতে হয়।

  • ধূপ, চন্দন, ধুনোর গন্ধ ঘরকে পূজার আবহ এনে দেয়।

  • কাঁসার ঘণ্টার ধ্বনি বা শঙ্খধ্বনি অন্দরকে পবিত্র করে।

  • রেডিও বা সাউন্ড সিস্টেমে মহালয়ার চণ্ডীপাঠ, পূজার গান বা রবীন্দ্রসংগীত বাজালে উৎসবের অনুভূতি আরও বাড়ে

  • ree

৮. শিশু ও পরিবারের অংশগ্রহণ

পুজোর অন্দরসজ্জা কেবল বড়দের কাজ নয়। ছোটদের অংশগ্রহণ থাকলে আনন্দ দ্বিগুণ হয়।

  • শিশুরা কাগজের ফুল বানাতে পারে

  • আলপনা আঁকায় অংশ নিতে পারে

  • ছোট হাতের প্রদীপ সাজানো বা কুশন সাজানোর কাজ করতে পারে

এতে পরিবারে মিলনমেলার আবহ তৈরি হয়


৯. আধুনিক ও ঐতিহ্যের মেলবন্ধন

বর্তমান সময়ে অনেকেই আধুনিক সাজসজ্জা করেন—ফেয়ারি লাইট, থিমেটিক ওয়াল ডেকোর, কাচের শো-পিস ইত্যাদি। কিন্তু এর সঙ্গে যদি ঐতিহ্যবাহী প্রদীপ, আলপনা ও ফুলের সাজ মিলিয়ে নেওয়া যায়, তবে অন্দরসজ্জা আরও প্রাণবন্ত হয়।

১০. অতিথি অভ্যর্থনা

পুজোর সময় আত্মীয়-স্বজন বাড়িতে আসেন। তাই ড্রয়িংরুম ও ডাইনিংরুম বিশেষভাবে সাজানো জরুরি।

  • প্রবেশদ্বারে ফুলের মালা বা আলপনা

  • অতিথিদের জন্য বিশেষ আসন

  • টেবিলে মিষ্টি, ফল বা পানীয় সাজানো

  • দেওয়ালে দেবীর ছবি বা প্রতীক

এতে অতিথিরা দেবীর আশীর্বাদ ও ঘরের উষ্ণতা অনুভব করেন।

ree

পুজোর অন্দরসজ্জা কেবল সৌন্দর্যবর্ধন নয়, এটি আধ্যাত্মিক প্রস্তুতিও বটে। পরিচ্ছন্নতা, আলো, ফুল, রঙ ও সংগীতের মেলবন্ধনেই সৃষ্টি হয় পুজোর আবহ। দুর্গার আগমনে ঘর যেন পূর্ণ হয় শুভ শক্তি ও আনন্দে এটাই অন্দরসজ্জার মূল উদ্দেশ্য। আজকের দিনে আধুনিকতার সঙ্গে ঐতিহ্যের সমন্বয় ঘটিয়ে আমরা যদি পুজোর অন্দরসজ্জা করি, তবে তা কেবল চোখকে আনন্দ দেবে না, বরং মনেও এনে দেবে শান্তি, ভক্তি ও একাত্মতার অনুভূতি।

সৌন্দর্যে বসতে লক্ষ্মী


ভারতীয় সংস্কৃতিতে একটি বহুল প্রচলিত প্রবাদ হলো “সৌন্দর্যে বসতে লক্ষ্মী”। অর্থাৎ, যেখানে সৌন্দর্য আছে, সেখানেই সম্পদ, সমৃদ্ধি ও সৌভাগ্যের দেবী লক্ষ্মীর আবাস ঘটে। শুধু বাহ্যিক সাজ নয়, সৌন্দর্যের মধ্যে লুকিয়ে থাকে শৃঙ্খলা, পরিচ্ছন্নতা, নান্দনিকতা এবং শান্তি। এই প্রবন্ধে আমরা সৌন্দর্যের বিভিন্ন রূপ, তার তাৎপর্য এবং সমাজজীবনে এর প্রভাব নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব। সৌন্দর্য মানে শুধু দেহসৌষ্ঠব নয়। এটি প্রকৃতি, চরিত্র, শিল্পকলা, চিন্তাধারা এবং আচার-আচরণের সমষ্টি।

ree
  • প্রকৃতির সৌন্দর্য: গঙ্গার ঘাট, শিউলি ফুলের সুবাস, শরতের সাদা মেঘ।

  • মানব সৌন্দর্য: কেবল রূপে নয়, ব্যবহারে, বিনয়ে ও সদাচরণে।

  • কর্মের সৌন্দর্য: নিষ্ঠা, সততা ও নিষ্কলুষতার প্রকাশ।


ধর্মীয় ও পুরাণিক তাৎপর্য

লক্ষ্মী দেবীকে আমরা দেখি পদ্মাসনে, হাতে পদ্মফুল। পদ্ম যেমন কাদার মধ্যে থেকেও নির্মল থাকে, তেমনি সৌন্দর্যও কলুষতার ঊর্ধ্বে।

  • লক্ষ্মী = সমৃদ্ধি: ধন, ধান্য ও ঐশ্বর্যের প্রতীক।

  • সৌন্দর্য = মঙ্গল: যেখানে সৌন্দর্য, সেখানে শান্তি, কল্যাণ ও মঙ্গল প্রতিষ্ঠিত হয়।

  • তাই প্রাচীন কালে ঘর-বাড়ি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখাকে লক্ষ্মীপূজার অঙ্গ হিসেবে ধরা হতো।


সৌন্দর্য ও সমাজ

সৌন্দর্যের প্রভাব শুধু ব্যক্তিজীবনে নয়, সমাজজীবনেও অপরিসীম।

  • সুন্দর পরিবেশে মানুষের মন শান্ত থাকে।

  • শিল্পকলা, স্থাপত্য, সংগীত ও সাহিত্যের সৌন্দর্য সমাজকে উন্নতির পথে নিয়ে যায়।

  • একটি সুন্দর আচরণ বা মধুর বাক্য মানুষের মন জয় করতে পারে, যা অর্থ দিয়ে সম্ভব নয়।


গৃহসজ্জা ও সৌন্দর্য

গ্রামীণ বাংলার প্রবাদ “লক্ষ্মী কলসে বাস করেন”। তাই ঘরের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা সৌন্দর্যের প্রথম ধাপ।

  • আঙিনায় আলপনা, প্রদীপ ও ফুলের সাজ।

  • গৃহস্থালির সামগ্রী সুশৃঙ্খলভাবে রাখা।

  • অতিথি অভ্যর্থনার হাসি।এসবই ঘরে লক্ষ্মীর আবাহন করে।

ree

চারিত্রিক সৌন্দর্য

যে মানুষ সৎ, বিনয়ী ও সহৃদয়—তাঁর ভেতরের সৌন্দর্য বাইরের রূপের চেয়ে অনেক বড়।

  • সততা ও পরিশ্রম চারিত্রিক সৌন্দর্যের ভিত্তি।

  • দয়া, সহানুভূতি ও ভালোবাসা মানুষের মনে স্থায়ী ছাপ ফেলে।

  • পুরাণে বলা হয়েছে, লক্ষ্মী দেবী সর্বদা সত্যবাদী ও দয়ালু মানুষের গৃহে অবস্থান করেন।


শিল্প ও সাহিত্যে সৌন্দর্যের প্রকাশ

  • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কবিতায় সৌন্দর্য মানেই মাধুর্য ও সত্যের প্রকাশ।

  • শরৎচন্দ্রের উপন্যাসে নারীর সৌন্দর্য শুধু রূপে নয়, তাঁর ত্যাগ ও সাহসিকতায়।

  • মন্দির-স্থাপত্য থেকে পল্লীচিত্র—সবখানেই সৌন্দর্যের উপস্থিতি লক্ষ্মীর আবাসের ইঙ্গিত দেয়।


সৌন্দর্য ও অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি

যেখানে সৌন্দর্য থাকে, সেখানেই আকর্ষণ ও সমৃদ্ধি জন্ম নেয়।

  • পর্যটন শিল্পের বিকাশ মূলত সৌন্দর্যের উপর নির্ভরশীল।

  • সুন্দর নকশা ও শিল্পকর্মের বাজারমূল্য বেশি।

  • পরিচ্ছন্ন ও নান্দনিক পরিবেশে ব্যবসা-বাণিজ্য সমৃদ্ধ হয়।


সৌন্দর্য ও আধ্যাত্মিকতা

আধ্যাত্মিক সৌন্দর্য মানে অন্তরের শান্তি।

  • যোগ ও ধ্যান মানুষকে ভেতরে সুন্দর করে।

  • সত্য, ধ্যান ও সৎচিন্তা সৌন্দর্যের আধ্যাত্মিক রূপ।

  • এই সৌন্দর্যের মাঝেই লক্ষ্মীর প্রকৃত বসতি।

ree

পরিবেশ সৌন্দর্য ও প্রকৃতি রক্ষা

প্রকৃতিকে সুন্দর রাখা মানে লক্ষ্মীকে আহ্বান করা।

  • বৃক্ষরোপণ, নদী-পরিষ্কার, দূষণ রোধই প্রকৃতির সৌন্দর্য রক্ষা।

  • সবুজ বনানী, নির্মল বাতাস, পরিশুদ্ধ জল এসবই লক্ষ্মীর করুণা।


“সৌন্দর্যে বসতে লক্ষ্মী” এ শুধু প্রবাদ নয়, জীবনদর্শন। যেখানে শৃঙ্খলা, পরিচ্ছন্নতা, নান্দনিকতা, সদাচরণ ও ভেতরের আলো আছে, সেখানেই সত্যিকার অর্থে দেবী লক্ষ্মীর আবাস। সৌন্দর্য মানে শুধু বাহ্যিক সাজ নয়; বরং ভেতরের শান্তি, সত্য ও শুভ্রতার প্রকাশ। তাই আমাদের প্রতিটি কর্ম, আচরণ ও চিন্তায় সৌন্দর্য আনাই হবে লক্ষ্মীর প্রকৃত পূজা।

ree

দক্ষিণ মেঘের যক্ষিণী


উত্তম দত্ত


দূর থেকে তোমার লেখা পড়ে তোমাকে ঈশ্বর বলে মনে হত।


কল্পনায় তোমার সঙ্গে কথা বলে সারারাত জেগে থাকতাম আমি।


টেলিফোনে তোমার গলা শুনে মনে হত, মানুষের কণ্ঠস্বর এত সুন্দর হতে পারো।


মুগ্ধতায় বিবশ আমি


তোমার জন্য স্বামী পুত্র-নিরাপদ-দাম্পত্য আভেনিউ ছেড়ে চলে এসেছি খালি পায়ে।


উত্তপ্ত মরুষড় শান্ত হয়ে গেলে একদিন মনে হয়।


যে লেখে সে তুমি নও।


তোমার চুল ক্রমশ পাতলা হয়ে আসছে। বিসদৃশ মধ্যদেশ, ঘুমের মধ্যে ভৌতিক নাসিকা গর্জন, ভোরবেলা বাসি মুখের দুগছি, ভূতজিতে আঁচিল। সারাদিনের কথাবার্তায় রোম্যান্টিকতার চিহ্নমাত্র নেই।


এমন কি সঙ্গমমুহূর্তেও আমার প্রাক্তন স্বামী ও প্রেমিকদের চাইতে নিতান্ত সাধারণ তুমি। অথচ তোমার কবিতায় ছিল অবিশ্বাস্য স্বপ্নের উড়ান। দূরন্ত পাগলামি। বর্ষার ব্রহ্মপুত্রের উন্মত্ততা।।


ঘরের মানুষ হিসেবে এখই মলিন তুমি, এতই পাঁচাপাঁচি, বাতিল রিকশার মতো এত সাধারণ


শান্তিনিকেতনের মেলায় দেখা তরুণ বাঁশিওয়ালাটিও তোমার চাইতে অ-সাধারণ।


এখন নিজান রাত্রিতে তোমাকে ছেড়ে তোমার লেখার কাছে ফিরে যাই। একদা প্রিয় লেখাগুলি খুঁজে খুঁজে পড়ি। যদি ফিরে পাই পুরনো তোমাকে। অচিরেই হাই ওঠে। ঘুম পায়। তোমার কোনও লেখাই আজ আমাকে টানে না আর।

ree

Comments


ssss.jpg
sssss.png

QUICK LINKS

ABOUT US

WHY US

INSIGHTS

OUR TEAM

ARCHIVES

BRANDS

CONTACT

© Copyright 2025 to Debi Pranam. All Rights Reserved. Developed by SIMPACT Digital

Follow us on

Rojkar Ananya New Logo.png
fb png.png

 Key stats for the last 30 days

bottom of page