পুরীর মন্দিরের সেই স্পেশাল খাজা, এবার হবে বাড়িতেই। রেসিপি দিলেন শিল্পী মৃধা।
- রোজকার অনন্যা
- Jun 24
- 2 min read
ভারতের বহু প্রাচীন মিষ্টির মধ্যে অন্যতম হলো খাজা। ময়দা, ঘি ও চিনি এই সাধারণ উপকরণে তৈরি খাজা যেমন খেতে মুচমুচে, তেমনই এর রন্ধনশৈলী ও ঐতিহ্য বেশ জটিল ও প্রাচীন। যদিও ভারতবর্ষের বিভিন্ন রাজ্যে খাজার নানা রূপ দেখা যায়, পুরীর খাজার মতো স্বাদ আর মাহাত্ম্য আজও অন্য কোথাও অধরা। জগন্নাথ দেবের প্রসাদরূপে এই মিষ্টির এক আলাদা ধর্মীয় মর্যাদা রয়েছে।
খাজার উৎপত্তি নিয়ে বিভিন্ন লোককাহিনি প্রচলিত। কেউ বলেন, খাজার শিকড় মগধ বা মৌর্য যুগে, আবার কেউ বলেন এটি ভগবান বুদ্ধের সময় থেকেই প্রচলিত। কিংবদন্তি অনুযায়ী, রাজগীর থেকে নালন্দা যাওয়ার পথে সিলাও অঞ্চলের খাজা ভগবান বুদ্ধের পছন্দ হয় এবং তার শিষ্যদের মধ্যে জনপ্রিয়তা পায়। অন্য মতে, অন্ধ্রপ্রদেশের কাকিনাদা অঞ্চল থেকে ‘মাদাতা খাজা’ ও ‘গোত্তম খাজা’ নামক দুই রকমের খাজা আসে পুরীতে। কিন্তু এই মিষ্টি সত্যিকারের ভক্তি ও গুরুত্ব পায় তখন, যখন এটি জগন্নাথদেবের বিখ্যাত ছপ্পান ভোগ-এর একটি অনিবার্য অঙ্গ হয়ে ওঠে। আজকের দিনে, খাজা শুধু পুরীর নয় সমগ্র ওড়িশার গর্ব। জগন্নাথ মন্দিরের প্রসাদ হিসেবে এই মিষ্টি ভক্তদের কাছে পবিত্র এবং সুস্বাদু দুই-ই।

কী কী লাগবে
ময়দা – ২ কাপ
ঘি – ২ টেবিলচামচ (ময়দায় মিশানোর জন্য)
বেকিং পাউডার – ১ চিমটে
জল – প্রয়োজনমতো
ঘি বা Shalimar's sunflower তেল – ভাজার জন্য
চিনি সিরার জন্য:
চিনি – ১ কাপ
জল – ½ কাপ
এলাচ – ২-৩টি (ঐচ্ছিক)
লেবুর রস – ১ চা চামচ (সিরা জমাট না বাঁধার জন্য)
কীভাবে বানাবেন
1. ডো তৈরি:
একটি বড় পাত্রে ময়দা, বেকিং পাউডার ও ঘি মিশিয়ে হাত দিয়ে ভালো করে মেখে নিন। এরপর অল্প অল্প জল যোগ করে নরম কিন্তু টাইট ডো তৈরি করুন। ভেজা কাপড়ে ঢেকে ১৫-২০ মিনিট ঢেকে রাখুন।
2. চিনি সিরা তৈরি:
একটি পাত্রে চিনি ও জল মিশিয়ে জ্বাল দিতে থাকুন। সিরা সামান্য ঘন হয়ে এলে এলাচ ও লেবুর রস দিয়ে নামিয়ে রাখুন।
3. খাজা বানানো:
ডো থেকে ছোট ছোট লেচি কেটে রুটি বেলে নিন। ২-৩টি পাতলা রুটি একটির ওপর আরেকটি রেখে মাঝখানে সামান্য ঘি লাগিয়ে রোল করে নিন। এরপর রোলটি কেটে মাঝখান থেকে হালকা চেপে দিন—এতে সুন্দর স্তর তৈরি হবে।

4. ভাজা:
কড়ায় ঘি/তেল গরম করে মাঝারি আঁচে খাজাগুলি মুচমুচে ও সোনালি হওয়া পর্যন্ত ভাজুন।
5. সিরায় ডোবানো:
গরম খাজাগুলি কিছুক্ষণ চিনির সিরায় ডুবিয়ে রেখে তুলে নিন। ঠান্ডা হলে খাজার বাইরের স্তর শক্ত ও ভিতরটা হালকা নরম হবে।
খাজা শুধু একটি মিষ্টি নয়, এটি এক ঐতিহ্যের বাহক। পুরীর গলি থেকে শুরু করে জগন্নাথদেবের বিখ্যাত প্রসাদ তালিকা পর্যন্ত এর উপস্থিতি নাড়িয়ে দেয় ভক্তের হৃদয়। শতাব্দী প্রাচীন এই মিষ্টি আজও একই রকম জনপ্রিয়, এবং এর স্বাদে আজও ধরা পড়ে অতীতের গৌরব। একবার বাড়িতে তৈরি করে দেখুন, খাজার আসল মজাই বুঝতে পারবেন!
Comments