স্তনের সমস্যায় কখন ও কেন চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি?
- রোজকার অনন্যা
- Oct 14
- 2 min read
স্তনের সমস্যায় অনেক সময় মানসিক উদ্বেগ দেখা দেয়। স্তনের যে কোনও সমস্যায় দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া অত্যন্ত জরুরি। এতে যেমন রোগ নির্ণয় সঠিক হয়, তেমনই দ্রুত চিকিৎসাও শুরু করা সম্ভব। যদি আপনি স্তনে ব্যথা, গাঁট, স্রাব, ত্বকের রঙের পরিবর্তন, নিপল বা স্তনবৃন্ত ভেতরে ঢুকে যাওয়া বা বগলে গাঁট লক্ষ্য করেন, তাহলে একটুও সময় নষ্ট না করে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।

সমস্যার প্রকৃতির ওপর নির্ভর করছে, আপনি পারিবারিক চিকিৎসকের পরামর্শ নেবেন, না স্ত্রীরোগ বা স্তনরোগ বিশেষজ্ঞের কাছে যাবেন। চিকিৎসক আপনাকে চিকিৎসার সঠিক দিশা বা চিকিৎসা–সংক্রান্ত যাবতীয় সিদ্ধান্ত নিতে সাহায্য করবেন। স্তনে কোনও সমস্যা অনুভব করলে পারিবারিক চিকিৎসকের কাছে গেলে, তিনি সমস্যার প্রাথমিক মূল্যায়ন করতে পারেন।
স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ বা গাইনেকোলজিস্ট, যাঁরা মহিলাদের প্রজনন স্বাস্থ্য নিয়ে কাজ করেন, হরমোনজনিত কারণে স্তনে কোনও সমস্যা দেখা দিলে তা নির্ধারণে সাহায্য করতে পারেন স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞরা। আর স্তনরোগ বিশেষজ্ঞ বা ব্রেস্ট সার্জেন যাঁরা, তাঁরা রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসার প্রয়োজনে অস্ত্রোপচার করতে পারেন। স্তনে ক্যান্সার ধরা পড়লে তার চিকিৎসা ও রোগীর যত্নে অঙ্কোলজিস্ট, অর্থাৎ, ক্যান্সার বিশেষজ্ঞদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। আর রোগ নির্ণয়ে রেডিওলজিস্টদের অবদান অনস্বীকার্য। ম্যামোগ্রাম বা আলট্রাসাউন্ডের মতো ইমেজিং টেস্টের মাধ্যমে স্তনের সমস্যা শনাক্ত করেন রেডিওলজিস্টরা।
স্তনের সমস্যায় চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়ার গুরুত্ব
স্তনের সুস্থতা একজন নারীর সামগ্রিক স্বাস্থ্যের গুরুত্বপূর্ণ অংশ। ৫০ বছর বা তার বেশি বয়সী মহিলাদের অথবা যাঁদের পরিবারে (রক্তের সম্পর্ক রয়েছে এমন আত্মীয়) স্তন ক্যান্সারের ইতিহাস রয়েছে, তাঁদের বছরে অন্তত একবার স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা উচিত।
স্তনে সমস্যার কিছু সাধারণ লক্ষণ
● স্তনে গাঁট বা টিস্যু ঘন হওয়া
● স্তন বা নিপলের আকার বা গঠনে পরিবর্তন
● নিপল থেকে স্রাব নিঃসৃত হওয়া এবং
● স্তনে ব্যথা বা অস্বস্তি
প্রতিরোধের উপায়
চিকিৎসকের কাছে গেলে তিনি প্রথমে ক্লিনিক্যাল ব্রেস্ট এগজামিনেশন করেন, যা রোগ নির্ণয়ের প্রথম ধাপ। ক্লিনিক্যাল ব্রেস্ট এগজামিনেশনে সন্দেহজনক কিছু ধরা পড়লে ম্যামোগ্রাম, আলট্রাসাউন্ড বা বায়োপ্সি করা হতে পারে। এটা মনে রাখা জরুরি যে, স্তনের সব সমস্যা ক্যান্সারজনিত নয়। অনেক সময় ক্যান্সারবিহীন স্তনের সমস্যাতেও ব্যথা বা অস্বস্তি দেখা দিতে পারে। যেমন, ফাইব্রোসিস্টিক ব্রেস্ট ডিজিজ। এটি খুবই কমন সমস্যা। এতে স্তনে গাঁট ও অস্বস্তি দেখা দেয়। এটি নন–ক্যান্সারাস হলেও, চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি, যাতে সমস্যা গুরুতর পর্যায়ে না পৌঁছয়।

নিয়মিত ডাক্তারি–পরীক্ষা ছাড়াও, নিজের হাতে স্তন পরীক্ষা করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। প্রতিমাসে নিজেই নিজের স্তন পরীক্ষা, অর্থাৎ, ব্রেস্ট সেল্ফ এগজামিনেশন করা উচিত, যাতে স্তনে কোনও পরিবর্তন বা অস্বাভাবিকতা আগেভাগে ধরা পড়ে। যদি কোনও অস্বাভাবিকতা লক্ষ্য করেন, সঙ্গে সঙ্গে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। ৪০ ঊর্ধ্ব মহিলাদের প্রতি ১–২ বছর অন্তর ম্যামোগ্রাম করানো উচিত। আর যাঁদের পরিবারে স্তন ক্যান্সারের ইতিহাস বা ঝুঁকি বেশি, তাঁদের ক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী আরও আগে থেকেই স্ক্রিনিং শুরু করা দরকার। স্তনের সমস্যার আগাম শনাক্তকরণ চিকিৎসার সাফল্য ও ফলাফলকে অনেক উন্নত করে। কারণ প্রাথমিক পর্যায়ে স্তন ক্যান্সার শনাক্ত হলে, ৯৫% ক্ষেত্রেই এটি সম্পূর্ণরূপে নিরাময়যোগ্য।
Comments