top of page

বাতাসে বিষ, নিঃশ্বাসে যুদ্ধ, ঋতু পরিবর্তনে নাজেহাল ফুসফুস‌!‌

ডাঃ রাজা বসু

এমবিবিএস, এমআরসিপি (ইউকে), আইডিসিসিএম, ইডিআইসি, ইউরোপীয়ান ডিপ্লোমা ইন অ্যাডাল্ট রেসপিরেটরি মেডিসিন (ইডিএআরএম), এসসিই রেসপিরেটরি মেডিসিন, আরসিপি (‌ইউকে)

কনসালট্যান্ট ফিজিশিয়ান এবং পালমোনোলজিস্ট, পিয়ারলেস হসপিটাল, কলকাতা


ree

ঋতু পরিবর্তনের এই সময়টা শ্বাসজনিত রোগীদের জন্য বেশ চ্যালেঞ্জিং। বিশেষ করে যাঁরা অ্যাজমা বা সিওপিডি (ক্রনিক অবস্ট্রাকটিভ পালমোনারি ডিজিজ)‌–তে ভুগছেন, তাঁদের জন্য এই সময়টা বেশ কষ্টদায়ক হয়ে ওঠে। হঠাৎ আবহাওয়ার পরিবর্তন, বাতাসে ধুলোবালি ও ফুলের রেণুর পরিমাণ বেড়ে যাওয়া, সঙ্গে দূষণ—সব মিলিয়ে দেখা দেয় শ্বাসপ্রশ্বাসে সমস্যা।

 

অ্যাজমা ও সিওপিডি–র মধ্যে পার্থক্য কোথায়?‌

ডাঃ বসু:‌ অ্যাজমা ও সিওপিডি দুটোই শ্বাসনালীর অসুখ হলেও, এদের মধ্যে পার্থক্য রয়েছে। অ্যাজমা হল রিভার্সেবল। অর্থাৎ, ঠিকমতো ইনহেলার নিলে ফুসফুসের কার্যকারিতা অনেকটাই স্বাভাবিক হয়ে যায়। অন্যদিকে, সিওপিডি–তে একবার ফুসফুসের ক্ষতি হলে, তা সম্পূর্ণ আগের অবস্থায় ফেরে না। এছাড়া, অ্যাজমা সাধারণত তরুণ বয়সে বেশি দেখা যায়, আর সিওপিডি দেখা দেয় ৫০ বছরের ঊর্ধ্বে বয়স্কদের মধ্যে, বিশেষ করে যাঁরা দীর্ঘদিন ধূমপান করেছেন।

 

ঋতু পরিবর্তনের সময় ফুসফুসের সমস্যা বাড়ে কেন?‌

ডাঃ বসু: এই সময় বাতাসে ধুলোবালি, পরাগরেণু ও দূষণ সৃষ্টিকারী কণার পরিমাণ বাড়ে। এখন প্রায় সবাই এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্স (AQI) শব্দটির সঙ্গে পরিচিত। দিল্লি–সহ দেশের অনেক শহরে AQI এতটাই খারাপ যে, শিশু থেকে প্রবীণ—সবারই নিঃশ্বাস নিতে কষ্ট হয়। বাজির ধোঁয়া, যানবাহনের ধোঁয়া ও আবহাওয়ার পরিবর্তন—সব মিলিয়ে অনেক সময় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। যেহেতু পরিবেশ ও ঋতু পরিবর্তন আমাদের হাতে নেই, তাই নিজেকে সুরক্ষিত রাখা ও প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নেওয়াই সবচেয়ে জরুরি।

 

এই সময় কী কী উপসর্গ দেখা দিলে চিকিৎসকের পরামর্শ জরুরি?‌

‌ডাঃ বসু: শ্বাসকষ্ট, শো–শো শব্দ, হাঁচি–কাশি বা ঘুমের সময় কাশি— এগুলো অবহেলা না করে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি। স্পাইরোমেট্রি টেস্ট করে ফুসফুসের কার্যকারিতা যাচাই করা হয়। রোগ যত তাড়াতাড়ি ধরা যায়, চিকিৎসার ফল ততই ভালো। নিউমোনিয়া বা ভাইরাল সংক্রমণ হলে ইনহেলার দিয়ে ফুসফুসের প্রদাহ কমানো সম্ভব। সাধারণত ২–৩ সপ্তাহের ইনহেলার কোর্সে রোগের উপশম হয়। এছাড়া ভাইরাল জ্বরের ক্ষেত্রে অযথা ওভার দ্যা কাউন্টার অ্যান্টিবায়োটিক খাবেন না। চিকিৎসকের পরামর্শে প্রয়োজনে অ্যান্টি–ভাইরাল ওষুধ খাওয়া যেতে পারে।

 

শ্বাসজনিত অসুখের ক্ষেত্রে ইনহেলার কতটা গুরুত্বপূর্ণ?‌

ডাঃ বসু: ‌অ্যাজমার ক্ষেত্রে ইনহেলার সঠিকভাবে ব্যবহার করলে এই সময় খুব একটা সমস্যা হয় না। এখন এসেছে SMART (সিঙ্গেল মেইনটেনেন্স অ্যান্ড রিলিভার থেরাপি) ইনহেলার থেরাপি—যা একই সঙ্গে অ্যাজমা প্রতিরোধ ও তীব্র অ্যাটাকের সময় রিলিফ দেয়। যদি ইনহেলার নেওয়ার পরও হাঁচি, কাশি বা শ্বাসকষ্ট বাড়ে, তবে চিকিৎসকের সঙ্গে কথা বলে ডোজ বাড়ানো বা অ্যান্টি–অ্যালার্জিক ওষুধ শুরু করা যায়। অন্যদিকে, চিকিৎসকের পরামর্শ মতো ইনহেলার নিলে সিওপিডি–ও নিয়ন্ত্রণ সম্ভব।

 

সিওপিডি রোগীদের জন্য কি বাড়তি কোনও সতর্কতা দরকার?‌

ডাঃ বসু: সিওপিডি রোগীদের ক্ষেত্রে ফুসফুসের স্থায়ী ক্ষতি হয়, তাই রোগ বাড়লে তা সামলানো কঠিন। ইনহেলার, নেবুলাইজার, এমনকি অ্যান্টিবায়োটিকেরও প্রয়োজন হতে পারে। সিওপিডি রোগীদের অধিকাংশই প্রবীণ এবং অনেকেরই হার্টের সমস্যা থাকে, ফলে শারীরিক ধকল তাঁরা খুব একটা সহ্য করতে পারেন না। তাই চিকিৎসকের নিয়মিত ফলোআপে থাকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সিওপিডি রোগীদের ক্ষেত্রে মাঝে মাঝে লং টার্ম অক্সিজেন থেরাপি দরকার হয়। তবে চিকিৎসকের পরামর্শ ব্যতীত অক্সিজেন নেওয়া বিপজ্জনক হতে পারে। সিওপিডি রোগীদের রক্তের অক্সিজেন স্যাচুরেশন ৯২–৯৪% থাকা দরকার।


ree

 

ঋতু পরিবর্তন জনিত সমস্যা প্রতিরোধে ভ্যাকসিনের ভূমিকা কতটা?‌

ডাঃ বসু: ‌সিওপিডি রোগীদের জন্য ভ্যাকসিনের গুরুত্ব অপরিসীম। এছাড়া যাঁদের বয়স ৬৫ ঊর্ধ্ব বা যাঁরা ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, কোলেস্টেরল ইত্যাদি সমস্যায় ভুগছেন, তাঁদেরও ভ্যাকসিন নেওয়া জরুরি। যেমন— ১.‌ ‌ইনফ্লুয়েঞ্জা ভ্যাকসিন। যেটা প্রতি বছর নিতে হবে, ২.‌ নিউমোনিয়া ভ্যাকসিন (Prevenar 20), একবার নিলে দীর্ঘ সময় সুরক্ষা দেয়, ৩.‌ কোভিড, আরএস ভাইরাস, পার্টুসিস ও সিংরিক্স (হারপিস প্রতিরোধী) ভ্যাকসিনও চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে নেওয়া দরকার।

 

রাইনাইটিস বা অ্যালার্জির সমস্যা শীতে বড্ড ভোগায়। এর চিকিৎসা কী?‌

ডাঃ বসু:‌ নাক বন্ধ হয়ে থাকা, নাক দিয়ে জল পড়া, চোখ লাল হওয়া— এগুলো পেরিনিয়াল রাইনাইটিস–এর লক্ষণ হতে পারে। এসব ক্ষেত্রে ট্যাবলেটের চেয়ে স্টেরয়েড নেজাল স্প্রে বেশি কার্যকর। কারণ এটি লোকালি কাজ করে, এতে শরীরে কোনও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দেয় না।

 

ঋতু পরিবর্তনের এই সময় সুস্থ থাকতে কী করণীয়?‌

ডাঃ বসু:‌ ধুলোবালি থেকে দূরে থাকুন ● ঘরবাড়ি পরিষ্কার‌–পরিচ্ছন্ন রাখুন ● বাড়িতে পোষ্য থাকলে তাকেও পরিষ্কার–পরিচ্ছন্ন রাখুন ● ধূপ, ধুনোর বদলে মোমবাতি জ্বালান ● চিকিৎসকের‌ পরামর্শমতো নিয়মিত ইনহেলার নিন ● মাস্ক পরুন এবং দূষিত এলাকা যতটা সম্ভব এড়িয়ে চলুন ● ধূমপান একদমই নয়। মনে রাখবেন প্রত্যক্ষ ধূমপানের মতো পরোক্ষ ধূমপানও সমান ক্ষতিকর। ক্ষতিকর ই–সিগারেটও ● চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া ওভ্যার দ্যা কাউন্টার অ্যান্টিবায়োটিক একদমই নয়। ঋতু পরিবর্তন বা দূষণ আমরা নিয়ন্ত্রণ করতে পারি না, কিন্তু নিজের যত্ন নেওয়া আমাদের হাতেই। ইনহেলার সঠিকভাবে ব্যবহার, চিকিৎসকের ফলোআপ থাকা, ধূমপান সম্পূর্ণ বর্জন, সময়মতো ভ্যাকসিন নেওয়া—এগুলোই হতে পারে শ্বাসনালীর রোগ থেকে সুরক্ষার মূলমন্ত্র। প্রিভেনশন ইজ বেটার দ্যান কিওর—যত আগে সচেতন হবেন, ফুসফুস ততই সুস্থ থাকবে।‌

Comments


ssss.jpg
sssss.png

QUICK LINKS

ABOUT US

WHY US

INSIGHTS

OUR TEAM

ARCHIVES

BRANDS

CONTACT

© Copyright 2025 to Debi Pranam. All Rights Reserved. Developed by SIMPACT Digital

Follow us on

Rojkar Ananya New Logo.png
fb png.png

 Key stats for the last 30 days

bottom of page