সচেতনতার অভাবই মহিলাদের ঠেলে দিচ্ছে হার্টের অসুখের দিকে!
- রোজকার অনন্যা
- Jun 22
- 2 min read
ডাঃ দেবাণু ঘোষ রায়
সিনিয়র কনসালট্যান্ট কার্ডিওলজিস্ট
পিয়ারলেস হসপিটাল অ্যান্ড বি কে রায় রিসার্চ সেন্টার, কলকাতা

বিভিন্ন সমীক্ষায় দেখা গেছে, হার্টের অসুখ নিয়ে পুরুষরা যতটা সচেতন, মহিলারা ততটা নন। এ ব্যাপারে তাঁরা অনেকটাই উদাসীন। আর এই সচেতনতার অভাব, উদাসীনতাই তাঁদের ঠেলে দিচ্ছে হার্টের অসুখের দিকে। আমরা এখন যে ধরনের জীবনযাপনে অভ্যস্ত, তাতে পুরুষ–মহিলা উভয়েরই হার্টের অসুখের ঝুঁকিতে রয়েছেন। কেউ–ই বলতে পারবেন না, তিনি ঝুঁকিহীন। মহিলারা ভাবেন, মেনোপজের আগে পর্যন্ত ইস্ট্রোজেন হরমোনের রক্ষাকবচ তো রয়েছে, তাহলে আর চিন্তা কিসের! এটা তাঁদের স্বপ্নের জগতে বাস ছাড়া আর কিছুই নয়। কারণ বর্তমানে একাধিক সমীক্ষা রিপোর্ট বলছে, মেনোপজের অনেক আগেই প্রায় ২০ শতাংশ মহিলা পড়ছেন হার্টের অসুখের কবলে। এর জন্য দায়ী জীবনযাপনে শৃঙ্খলার অভাব। ইস্ট্রোজেনের রক্ষাকবচও পারছে না রক্ষা করতে। ৩০ থেকে ৪০ বছর বা তার কম বয়সেই দেখা দিচ্ছে হৃদ্রোগ।
আমাদের সমাজ ব্যবস্থায় মহিলাদের স্বাস্থ্য সম্পর্কে সচেতনতার অভাব আজকের নয়, দীর্ঘদিনের৷ বুকে ব্যথা বা বুকে চাপা কষ্ট হলে, তাঁরা সেটাকে খুব একটা গুরুত্ব দেন না। ভাবেন, গ্যাস–অম্বল। আর এই গুরুত্ব না দেবার পরিণতি মারাত্মক। হৃদ্রোগ বা হার্ট অ্যাটাক৷
মহিলাদের জীবনে ইস্ট্রোজেন হরমোনের গুরুত্ব অপরিসীম৷ যতদিন স্বাভাবিক মেনস্ট্রুয়েশন চলে, ততদিন ডিম্বাশয় থেকে স্বাভাবিক মাত্রায় এই হরমোন নিঃসরণ হয়। হার্টের অসুখ প্রতিরোধে এই হরমোনের কার্যকরী ভূমিকা রয়েছে। কিন্তু তামকজাত দ্রব্যের সেবন, আর সঙ্গে যদি ডায়াবেটিস থাকে, তাহলে নষ্ট হয় ইস্ট্রোজেনের কার্যকারিতা। রক্ষাকবচ হারিয়ে ফেলে তার ক্ষমতা।
বর্তমানে বেশিরভাগ মানুষই ফাস্ট ফুড, জাঙ্ক ফুডের মোহ এড়াতে পারেন না। আর এতে শরীরে ঢোকে অতিরিক্ত ক্যালরি, অস্বাস্থ্যকর ফ্যাট। সেই সঙ্গে কায়িক পরিশ্রম, অর্থাৎ, নিয়মিত হাঁটা, শরীরচর্চা ইত্যাদিতে তীব্র অনীহা। ফলে ওবেসিটির পাশাপাশি শরীরে বাসা বাধছে ডায়াবেটিস। দেখা দিচ্ছে উচ্চ রক্তচাপ। রক্তে বাড়ছে খারাপ কোলেস্টেরল অর্থাৎ, এলডিএল–এর পরিমাণ। আর এখন তো স্ট্রেসহীন জীবনযাপন অকল্পনীয়। এই ওবেসিটি, ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, এলডিএল কোলেস্টেরল, স্ট্রেস—সবগুলোই হার্টের অসুখের অন্যতম প্রধান রিস্ক ফ্যাক্টর। যে কোনও মুহূর্তেই ঘটাতে পারে হার্ট অ্যাটাকের মতো ঘটনা।

হার্ট অ্যাটাক হলে প্রতিটা সেকেন্ড খুব গুরুত্বপূর্ণ। রুগিকে যত দ্রুত অত্যাধুনিক চিকিৎসা–পরিষেবার আওতায় আনা যায়, ততই মঙ্গল। আর এ কাজে ২৪ ঘণ্টাই আপনার পাশে রয়েছে কলকাতার পিয়ারলেস হসপিটালের ‘চেস্ট পেইন ইউনিট’। কার্ডিয়াক ইমার্জেন্সি ম্যানেজমেন্ট টিমের তত্ত্বাবধানে হৃদ্রোগে আক্রান্তকে বাড়ি থেকে হসপিটালে আনার জন্য রয়েছে বিশেষভাবে প্রস্তুত কার্ডিয়াক অ্যাম্বুলেন্স। ‘ডক্টরস হেল্পলাইন’— ৮৯৮১০–৮০০০৮–এ ফোন করলেই নিমেষে পৌঁছে যাবে কার্ডিয়াক অ্যাম্বুলেন্স। হার্ট অ্যাটাকের পর যেহেতু প্রতিটা সেকেন্ড খুব গুরুত্বপূর্ণ, তাই কার্ডিয়াক ইমার্জেন্সি ম্যানেজমেন্ট টিমের বিশেষজ্ঞরা বাড়িতেই শুরু করেন চিকিৎসা।
হার্টের পরিস্থিতি বুঝতে করা হয় ইসিজি এবং ট্রপ–টি টেস্ট। অ্যাম্বুলেন্সেও থেমে থাকে না চিকিৎসা। হসপিটালের ক্যাথ ল্যাবকে দেওয়া হয় প্রস্তুত কথার নির্দেশ। যাতে হসপিটালে পৌঁছনোর সঙ্গে সঙ্গে প্রসিডিওর শুরু করা যায়। হার্ট অ্যাটাকের ৯০ মিনিটের মধ্যে আঞ্জিওপ্লাস্টি করে, হার্টের ব্লক খুলে রক্ত সঞ্চালন স্বাভাবিক করে দিতে পারলে, হার্টের মাস্লকে যেমন বাঁচানো সম্ভব, তেমনই অনেক জটিলতাও এড়ানো সম্ভব। কোনও কারণে ৯০ মিনিটের মধ্যে আঞ্জিওপ্লাস্টি করা সম্ভব না হলে, চেষ্টা করুন হার্ট অ্যাটাকের অন্তত ৬ ঘণ্টার মধ্যে যাতে প্রাইমারি অ্যাঞ্জিওপ্লাস্টি করা যায়। হার্ট অ্যাটাকের পর রুগিকে সুস্থ জীবনে ফেরাতে অ্যাঞ্জিওপ্লাস্টির গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে।
Comentarios