প্রখর দারুণ অতি দগ্ধদিন। বাঁচতে গেলে AC চালাতেই হবে, যদি সে ব্যবস্থা থাকে।কিন্তু কপালে ভাঁজ বিদ্যুতের বিল! দিনরাত AC চালালেও বিদ্যুতের বিল কম আসবে। কীভাবে? জানাচ্ছেন সমীর চট্টোপাধ্যায়

গ্রীষ্মের শুরুতেই চড়চড় করে যেরকম পারদ চড়ছে, তাতে সামনের দিনগুলোর যে কেমন অবস্থা হবে, তা ভেবেই আতঙ্ক হচ্ছে নিশ্চয়ই। মানুষ তো অসুস্থ হয়ে পরছেন। প্রবল গরম থেকে বাঁচতে আমরা সবাই-ই নানা বিকল্প খুঁজছি। যাঁদের একটু সামর্থ্য আছে, তাঁরা শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্র নির্ভর হয়ে পরছেন। উপায় নেই। এই যন্ত্রের উপর নির্ভরশীল হওয়াটা এখন আর বিলাসিতা নয়, মানুষের দৈনন্দিনতার প্রয়োজনের তালিকায় উঠে এসেছে। তাই বোধহয় প্রায় AC-র উপরে নির্ভরশীল হয়ে পড়েছি আমরা। কিন্তু সমস্যাটা অন্য জায়গায়। AC-র ব্যবহার মধ্যবিত্ত জীবনের উপর থাবা বসায়। এই যন্ত্রের সেবা নিতে গেলে আপনাকে অনেক বেশি মূল্য চোকাতে হয়। সরাসরি প্রভাব পড়ে আমাদের বিদ্যুতের বিলের উপরে। প্রাত্যহিক বাজেটের ঘাটতি পড়তে বাধ্য। তাই মনের শান্তিতে শারীরিক সুখটাও অনুভব করতে পারি না। থালে উপায়? আছে। এমন কিছু পদ্ধতির প্রয়োগ, যেখানে পর্যাপ্ত AC-র ব্যবহারেও সেই পরিমাণ বিলের দাপট সইতে হবে না। এই গরমে প্রতিটি মানুষ সুস্থ, ভালো থাক, সেটাই আমরা চাই। শুধু আমি ব্যবহার করব, আমি ফল পাব, আর যাঁরা জানবেন না, তাঁরা কষ্ট পাবেন, এমনটা মোটেই চাই না। ভালো থাকি আমরা সবাই, এটাই আমাদের নববর্ষের ব্রত। তাই এখানে আমরা এমন কিছু টিপস দেব, যাতে আপনি মন খুলে AC ব্যবহার করতে পারবেন। গরমে আরামও পাবেন আবার বিদ্যুতের বিলও আপনার টেনশন বাড়বে না।
AC-কে Default temperature-এ সেট করুন
একটি রিপোর্ট অনুযায়ী, AC-র তাপমাত্রা এক ডিগ্রি বাড়ালে প্রায় ৬ শতাংশ বিদ্যুৎ সাশ্রয় হয়। আপনি আপনার AC-র তাপমাত্রা যত কমে সেট করবেন, তার কম্প্রেসার তত বেশি সময় কাজ করবে। এতে বিদ্যুৎ বিল বাড়বে। তাই আপনি যদি ডিফল্ট তাপমাত্রায় এসি ব্যবহার করেন তবে আপনি ২৫ শতাংশ পর্যন্ত বিদ্যুৎ সাশ্রয় করতে পারবেন। রিমোর্টের সেটিংসে গিয়ে সেট করা যায়।
AC কে ২৪ ডিগ্রি সেলসিয়াসে রাখুন
আমাদের শরীরের তাপমাত্রা গড়ে ৩৬ থেকে ৩৭ ডিগ্রির মধ্যে থাকে। তাই, কোনও রুমের সার্বিক তাপমাত্রা এর থেকে কম থাকলে আমাদের ঠান্ডা লাগে। তাই আমাদের ১৮ নয়, তার পরিবর্তে ২৪ ডিগ্রি তাপমাত্রায় রেখে AC ব্যবহার করলে তাপমাত্রাও খুব কম থাকে না, ঠান্ডাও লাগে, বিদ্যুৎ খরচও কমে।
AC-র সঙ্গে ফ্যানও ব্যবহার করুন
এসির সঙ্গে সিলিং ফ্যান ব্যবহার করুন। এর ফলে এসি-র ঠান্ডা হাওয়া ঘরের সব কোণায় পৌঁছে যাবে। একইসঙ্গে ঘরে থাকা গরম হাওয়াও বাইরে বেরিয়ে যাবে। শুধু তাই নয়, এসি সহ ফ্যান ব্যবহার করে বিদ্যুৎও সাশ্রয় হবে। কম্প্রেসারে জোরও পড়ে না, তাড়াতাড়ি ঘরও ঠাণ্ডা হয়। AC-র কম ব্যবহারে বিদ্যুতের বিলও কমে।
এসি সার্ভিসিং করুন
ফেলে রাখলে হবে না। নিয়মিত AC সার্ভিসিং করতে হবে। এর ডাক্ট এবং ভেন্টে ময়লা জমে যায়, ফলে ঘরে ঠান্ডা হাওয়া পাঠানোর জন্য অতিরিক্ত প্রেশার পড়ে এর ভিতরে থাকা কম্প্রেসরে। বাড়ে বিদ্যুৎ খরচও। সার্ভিসিং ঠিক করে করা থাকলে ৫-১৫ শতাংশ পর্যন্ত বিদ্যুৎ খরচ কম হতে পারে। নিয়মিত সার্ভিসিং করলে এসি নষ্ট হয় না, বারবার খারাপও হয় না।
ঘর বন্ধ রাখুন
এয়ার কন্ডিশনার ব্যবহার করার সময় দরজা-জানালা সবসময় বন্ধ রাখুন, যাতে ঘর থেকে ঠান্ডা বাতাস বের না হয়। এ ছাড়া ঘরে যাতে সূর্যের তাপ বেশি না পড়ে সেদিকে খেয়াল রাখুন। জানেন কি, সূর্যের তাপে এসির লোড বেড়ে যায় এবং তাতে বিদ্যুৎ খরচও বাড়ে।
বৈদ্যুতিক যন্ত্রের ব্যবহার এড়িয়ে চলুন
AC ব্যবহারের সময় টিভি, ফ্রিজ, কম্পিউটারের মতো বৈদ্যুতিক ডিভাইস ব্যবহার না করাই ভাল। কারণ, এই ডিভাইসগুলো প্রচুর হিট জেনেরেট করে। এসি চালু করার আগে এগুলো সুইচ অফ করতে ভুলবেন না।
কমপক্ষে ১৫ মিনিটের জন্য এসি চলতে দিন
আদর্শগত ভাবে যেকোনও ঘরে এসি চালু রাখার জন্য কুলিং সিস্টেম বন্ধ না করে কমপক্ষে ১৫ মিনিটের জন্য এসি চলতে দেওয়া উচিত। তবে এর জন্য প্রতিদিন এক বা দুই ঘণ্টা ডাউনটাইম প্রয়োজন হবে। অবশ্যই মনে রাখতে হবে যে, এসি ইউনিট কতক্ষণ চালানো হবে তার উপর নির্ভর করেই তাপমাত্রার পরিমাণ স্থির করা দরকার।
উচ্চ তাপমাত্রায় একটানা এসি না চালানোই ভাল
গরমের দিনে নিজেকে ঠান্ডা রাখতে বেশির ভাগ সময়ই দিনরাত এসি ব্যবহার করেন অনেকে, তাও অতি উচ্চ তাপমাত্রায়। সকলেই চান গরমের সময় তাঁর এসি মেশিনটি মসৃণ ভাবে চলুক। কিন্তু এমন করতে থাকলে এসির ইভাপোরেটর কয়েল জমে যেতে পারে।
শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থায় চাপ
এসি একটানা চালানোর জন্য এর যন্ত্রাংশের একটা নির্দিষ্ট গতি প্রয়োজন। এর ফলে এয়ার কন্ডিশনার সিস্টেমে প্রচণ্ড চাপ পড়ে। সাধারণত বেশিরভাগ এসি ইউনিট ৬৫ থেকে ৮০ ডিগ্রির মধ্যে থার্মোস্ট্যাট সেট করলে ভাল কাজ করতে পারে।
এসি ইউনিট চেক করা প্রয়োজন:
যে কোনও এসি সিস্টেম উচ্চ তাপমাত্রায় আসতে কিছুটা সময় লাগতে পারে। নিজের এসি ইউনিটটি গ্রীষ্মের জন্য প্রস্তুত কিনা তা প্রথমেই নিশ্চিত করে নিতে হবে। সেজন্য, C&C, হিটিং এবং এয়ার কন্ডিশনিং-এ চালু করে দেখতে হবে।
যদি AC-তে বেশি সময় কাটান তাহলে 'সিক বিল্ডিং সিনড্রোম' বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে
দিন দিন বাড়ছে গরম। নাজেহাল অবস্থা সাধারণ মানুষের। আগামী দিনে আর্দ্রতা (Humidity) আরও বাড়তে পারে। এই পরিস্থিতিতে গরম থেকে বাঁচতে মানুষ বিভিন্ন পদ্ধতি অবলম্বন করছে। কেউ চালাচ্ছে পাখা (Fan), তো কেউ কুলারের (Cooler) সাহায্য নিচ্ছে। কিন্তু আজকাল AC-র ব্যবহারও অনেক বেড়ে গেছে। আপনিও যদি গরম থেকে বাঁচতে বেশিরভাগ সময় AC-তে কাটান, তবে আপনার সাবধান হওয়া উচিত। কারণ, এর অনেক পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া রয়েছে। এটি আপনাকে অসুস্থ করে তুলতে পারে।
অসুস্থ করে তুলতে পারে AC
স্বাস্থ্যবিষয়ক একটি ওয়েবসাইট বলছে, আপনি যদি AC-তে বেশি সময় কাটান তাহলে 'সিক বিল্ডিং সিনড্রোম' বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এ কারণে মাথাব্যথা, শুকনো কাশি, ক্লান্তি, মাথা ঘোরা, বমি বমি ভাব, কোনও কাজে একাগ্রতার অভাবের মতো সমস্যা দেখা দিতে পারে। তাই বিকেল ও সন্ধ্যায় AC-র ব্যবহার একেবারেই কমিয়ে দিতে হবে।
কী কী ভাবে ক্ষতি করে ?
দীর্ঘক্ষণ AC-তে থাকার কারণে শরীরের আর্দ্রতা নষ্ট হয়ে যায়। ত্বকের বাইরের স্তরে জলের অভাব দেখা দেয়। এর কারণে ত্বক ফাটা শুরু করে এবং শুষ্ক হয়ে যায়।
দীর্ঘ সময় ধরে AC চালানোর ফলে ত্বক কুঁচকে যেতে পারে। বলিরেখা ও সূক্ষ্ম রেখা দেখা দিতে শুরু করে। বার্ধক্যও দ্রুত বাড়ে। এসির ঠান্ডা বাতাস শরীরে জলশূন্যতার সমস্যা ডেকে আনতে পারে। এসির ঠান্ডা বাতাস কাশি, সর্দি ও শ্বাসকষ্টের মতো সমস্যা বাড়ায়। এয়ার কন্ডিশনারের অতিরিক্ত ব্যবহার অ্যালার্জি এবং হাঁপানির ঝুঁকি বাড়ায়। AC-র বাতাস চোখ ও ত্বকে চুলকানির সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। তাই বেশিক্ষণ এসিতে থাকা উচিত নয়।
প্রবল গরমে পকেটে এসি থাকুক সবসময়ে
গরম থেকে আরাম দিতে পারে একমাত্র এসির হাওয়া। তবে সবসময় তো আর এসি চালিয়ে রাখা সম্ভব নয়, না সব ঘরে এসি রাখা সম্ভব। কিন্তু সেই মুশিকিলের আসানও রয়েছে হাতের কাছেই। প্রতিদিন যেভাবে বিশ্ব উষ্ণায়ন বাড়ছে, তার প্রভাব পড়েছে এ দেশের আবহাওয়ার উপরে। পরিস্থিতি এমন দাঁড়িয়েছে যে গরমের দিনে এসি ছাড়া থাকাই কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। আর থাকবেনই বা কেন? যখন হাতের কাছেই রয়েছে পোর্টেবল এয়ার কন্ডিশনার। বিশ্বাস হচ্ছে না তো? কিন্তু এই গরমে আপনিও পেতে পারেন সস্তায় এসির আরাম। আর তার জন্য ঘরে আনুন পোর্টেবল এসি, যা ট্র্যাডিশনাক এয়ার কন্ডিশনারের তুলনায় অনেক কম খরচে দেবে ঠান্ডা ঠান্ডা কুল কুল হাওয়া। এই পোর্টেবল এয়ার কন্ডিশনারের মাধ্যমে আপনি নিজের ঘরের তপমাত্রা সহজই নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন। আর বিদ্যুতের বিলও থাকবে নিয়ন্ত্রণে। সহজেই ব্যবহার করা যায় এই পোর্টেবল এসি। নেই কোনও বিকট শব্দ। নেই ইনস্টলেশনে অসুবিধাও। সব মিলিয়ে সস্তায় পুষ্টিকর শীতাতপ যন্ত্র চাইলে এর থেকে ভালো বিকল্প হতেই পারে না।
পোর্টেবল এয়ার কন্ডিশনার...
নর্ডিক হিউগা এয়ারচিল পার্সোনাল এয়ার কন্ডিশনার
অফিস হোক বা বাড়ি, নর্ডিকের এই পোর্টেবল এয়ারকন্ডিশনারটি কিন্তু আপমার জন্য আদর্শ। ইন বিল্ট হিউমিডিফায়ারের সঙ্গে থ্রি লেভেলস অব কুলি ও পাওয়ারফুল ফ্যানের সঙ্গে আসছে গ্যাজেটটি। যা অন্তত ৩০ স্কোয়ার ফিট পর্যন্ত এলাকা ঠান্ডা করতে পারে। ওই পোর্টেবল এসির ফ্যানে আবার রয়েছে এলইডি লাইড, যা আপামর মুড অনুযায়ী অ্যাডজাস্ট করতে পারবেন। এ ছাড়া এয়ার কুলারে থাকছে দুটি রিমুভেল এয়ার ফিল্টার এবং থাকছে একটি ওয়াটার ট্যাঙ্ক। যা পরিষ্কার করা বেশ সহজ। স্লিক, সুন্দর ও আধুনিক ডিজাইনের এই পোর্টেবল এসি দেবে আপনাকে আল্টিমেট কুলিং অভিজ্ঞতা।
সেরোবিয়ার রিচার্জেবল পোর্টেবল এয়ার
রিচার্জেবল এই পোর্টেবল এসিও কিন্তু হতে পারে আপনার জন্য দুর্দান্ত অপশন। যেখানে আপনি পেয়ে যাবেন পাওয়ারফুল থ্রি স্পিড ফ্যান, তার সঙ্গে আসছে ১২০ ডিগ্রি অসিলেটিং ফিচার, যা সব জায়গায় সমান হাওয়া বণ্টন করে। ফোর ইন ওয়ান অ্যারোমাথেরাপি মিস্টিং ফ্যানের সঙ্গে আসছে। যা আপনাকে রিল্যাক্স হতে সাহায্য করে। লাইটওয়েট এই গ্যাজেটটি যেকোনও জায়গায় ক্যারি করে নেওয়ার জন্য আদর্শ।
জেনেরিক পোর্টেবল এয়ার কন্ডিশনার
অল্প জায়গা ঠান্ডা করার জন্য আদর্শ এই যন্ত্র। ফোর ইন ওয়ান এফেক্টিভ ইভাপোরেটিভ পারসোনাল এয়ার কুলার এটি। যা আসছে ফোর উইন্ড স্পিড ও টু কুল মিস্ট সেটিংয়ের সঙ্গে। ২ থেকে ৮ ঘণ্টার টাইমারের সঙ্গে কালারফুল নাইটলাইটের সঙ্গে আসছে পোর্টেবল এসিটি। রাত্রিবেলা ব্যবহারের জন্য আদর্শ। পাশাপাশি ওজনেও হাল্কা। বিদ্যুৎসাশ্রয়ীও বটে।
এয়ার চয়েস পোর্টেবল এয়ার কন্ডিশনার ফ্যান
বেস্ট চয়েস হতে পারে কিন্তু এয়ার চয়েসের এই যন্ত্রটি। বিল্ট ইন আইসবক্সের সঙ্গে আসছে এই মডেলটি। থ্রি স্পিড সেটিংসের সঙ্গে আসছে মডেলটি, যা আপনাকে দেবে দুর্দান্ত কমফোর্ট। এই পোর্টেবল মডেলটিতেও রয়েছে বিভিন্ন রঙের এলইডি লাইট, যা ঘরকে করে তুলবে আরও রঙিন, আরও ঝলমলে। তার সঙ্গে থাকছে ইউএসবি চার্জিং পোর্ট, যার মাধ্য়মে ফোন বা অন্যান্য ডিভাইসও চার্জ করা যাবে।
ভিরস্কি পোর্টেবল এয়ার কন্ডিশনার
খুদে ঘরের জন্য দুর্ধর্ষ অপশন এই পোর্টেবল এসি। ৩ স্পিড ফ্যান, টাচস্ক্রিন কন্ট্রোল এবং ইভাপোরেটিভ এয়ার কুলার ফিচারও সঙ্গে থাকছে। ইউএসবি পোর্টের সঙ্গে থাকছে এসিটি, যার মাধ্যমে কোনও জায়গায় যেকোনও সময়ে ব্যবহার করা যাবে।
গরমে ফ্যান-এসি চালিয়েও বিদ্যুৎ বিল কমাবেন যেভাবে
প্রচণ্ড গরমে ভরসা শুধু ফ্যান, পাখা ও এসির বাতাস। তবে এসব একনাগাড়ে চালালেই তো হবে না! মাস শেষে গুনতে হবে হাজার হাজার টাকা। এরই মধ্যে অনেকেই হয়তো বিদ্যুৎ বিল দিতে গিয়ে টের পাচ্ছেন বিষয়টি! গরম এলেই হু হু করে বাড়তে থাকে বিদ্যুৎ বিল। এমন পরিস্থিতিতে বিদ্যুৎ সাশ্রয় করা জরুরি।
সহজ কিছু কৌশল অবলম্বন করলেই গরমে বিদ্যুৎ বিল কমানো সম্ভব।
এসি ব্যবহারে সতর্কতা
গরমে অনেকেই নিয়মিত এসি ব্যবহার করেন। এতে বিদ্যুৎ বেশি খরচ হওয়াটাই স্বাভাবিক। এজন্য নিয়মিত এসি সার্ভিসিং করিয়ে তাপমাত্রা নির্ধারণ করে নিন। ফলে বিদ্যুৎ বিল কমানো যেতে পারে।
আরেকটি ছোট্ট অভ্যাসের মাধ্যমেও কমাতে পারেন বিদ্যুৎ বিল। ঘুমানোর আগে এসিতে টাইমার লাগিয়ে নিন। ২-৩ ঘণ্টার মধ্যেই ঘর ঠান্ডা হয়ে যাবে। তারপর এসির দরকার হবে না। অনেকেই ঘুমানোর কারণে পরে এসি বন্ধ করতে পারেন না। তাই সারারাত এসি চলতেই থাকে, যা অপ্রয়োজনীয়। তাই ঘুমানোর আগে টাইমার সেট করে রাখার মাধ্যমেও আপনি বিদ্যুৎ বিল কমাতে পারবেন।
ভেন্টিলেশনের ব্যবস্থা
অনেকের ঘরেই ভেন্টিলেশনের অভাবে দিনেও ঘর অন্ধকার থাকে। এ কারণে লাইট জ্বালিয়ে রাখতে হয়। এমন ঘর হলে বিদ্যুৎ বিল বেশি হওয়াটাই স্বাভাবিক।
তাই চেষ্টা করুন চারপাশে খোলা এবং পর্যাপ্ত আলো আসে এমন ঘরে থাকতে। তাহলে শরীরও সুস্থ থাকবে আর বিদ্যুৎ বিলও বাঁচবে।
সোলার এনার্জি ব্যবহার
সোলার এনার্জি কাজে লাগালে বিদ্যুৎ বিলে সবচেয়ে বেশি সাশ্রয় সম্ভব। এটি লাগানোর সময় ব্যয় হলেও, পরে এর সুফল বুঝতে পারবেন।
বিদ্যুতের ইউনিট গণনা করুন
বিদ্যুৎ বিল হাতে পেলেই মূল্য পরিশোধ করে তা রেখে দেবেন না। অন্তত একবার হলেও বিলে চোখ রাখুন। কোন মাসে কত ইউনিট খরচ হয়েছে সে হিসাব রাখুন।
অদৃশ্য বিদ্যুৎ ব্যয়
অনেকেই ঘণ্টার পর ঘণ্টা টিভি, মিউজিক চালিয়ে রাখেন। এছাড়া বিভিন্ন প্লাগ লাগিয়ে রাখেন সুইচবোর্ডের পোর্টে। এগুলো সবই বিদ্যুতের অদৃশ্য ব্যয়।
খারাপ সুইচ বদলানো জরুরি
বাড়িতে সুইচের ওয়ারিং খারাপ হলে, অনেক সময় সুইচ অফ করা সত্ত্বেও লাইট জ্বলতে থাকে। এ সময় স্বাভাবিকভাবেই বিদ্যুৎ বিল বাড়তে থাকে।
ফ্রিজ পরিষ্কার রাখুন
ফ্রিজে যত বেশি জিনিসপত্র রাখবেন; ততই ফ্রিজ নোংরা হবে এবং বিদ্যুৎ বিল বাড়বে। ফ্রিজ নোংরা থাকলে ঠান্ডা হতে সময় লাগে। ফলে অধিক বিদ্যুৎ ব্যয় হয়।
অ্যাপলায়েন্স ব্যবহারে ক্ষেত্রে
এসি, ওয়াশিং মেশিন, ফ্রিজ, ইনভার্টার বা গিজার কেনার সময় লক্ষ্য রাখবেন, এগুলো ৫ স্টার অ্যাপলায়েন্স কি না। স্টারের সংখ্যা যত বেশি হবে; ততটাই কম বিদ্যুৎ ব্যয় করবে। এগুলো একটু দামি হলেও দীর্ঘমেয়াদি সুফল পাবেন।
ঘরের পর্দা বদলানো
গরমে ঘরে ভারী পর্দা ব্যবহার করুন। কারণ ঘরের তাপমাত্রা বেশি হলে কুলার বা এসি ঘর ঠান্ডা করতে বেশি সময় নেয়। ফলে বিদ্যুৎ বিলও বাড়ে। তাই ঘরের হালকা পর্দা বদলে ফেলুন।
নাজেহাল গরমে এসি ছাড়াই ঘর ঠান্ডা করুন
প্রখর রৌদ্রে জ্বালাপোড়া অবস্থা ঘরে বাইরে সর্বত্র। রাস্তায় বেরোনোর কথা তো ছেড়েই দিলাম, ঘরের মধ্যেই ফ্যানের হাওয়ায় নেই কোনওরকম স্বস্তি। একমাত্র এসিই আপনাকে আরাম দিতে পারে। কিন্তু আমাদের মধ্যবিত্ত বাঙালিদের সবার বাড়িতে নেই এসি, সামর্থ্যও নেই অধিকাংশের। তাই এসির কথা ভুলে যান, প্রাকৃতিক নিয়মে কীভাবে ঘরকে ঠান্ডা রাখা যায় সে নিয়ে আসুন দুচার কথা বলে শেষ করি।
১) শৌখিন পর্দা রেখে দিন। গরমকালে বাঙালির অতি পরিচিত খসখস টাঙান জানলায়। এতে বাইরের তাপ সবচেয়ে ভাল আটকানো যায়। আগে অফিস-কাছারিতে খসখস জলে ভিজিয়ে দেওয়া হত। কিন্তু তা না করলেও চলবে। বাইরের তাপ খসখসে আটকে বাকি ব্যবস্থা অন্যভাবে করুন।
২) ‘সামার মুড সিলিং ফ্যান’ ব্যবহার করুন। সাধারণত সিলিং ফ্যান দু’রকমের হয়ে থাকে। একটি ক্লক ওয়াইজ ঘোরে এবং আরেকটি এন্টিক্লক ওয়াইজ ঘোরে। আমরা সাধারণত যেটা দেখি তার উল্টা দিকে পাখা ঘোরা ফ্যানকেই সামার মুড সিলিং ফ্যান বলে। এই ফ্যান বাইরে থেকে ঘরে ঠান্ডা বাতাস টেনে এনে ঘরকে ঠান্ডা রাখে। আধুনিক ফ্যানগুলোতে দুটি অপশনই দেওয়া থাকে।
৩) কাচের জানলা যাঁদের, তাঁরা খসখসের বদলে শৌখিন ‘ব্লাইন্ডস ইনস্টল’ করতে পারেন। এতেও পুরোপুরি আটকানো যায় বাইরের তাপ।
৪) গরমের সময়ে ওভারহেড ট্যাঙ্কে বেশি জল রাখবেন না। জল তাড়াতাড়ি তেতে আগুন হয়ে যায়। গরম জলের ভাপ সব সময়েই বেশি। তাই সেই জল যখন ব্যবহার করবেন তার গরম বাষ্প ঘরও গরম করে তুলবে। তাই প্রয়োজন মতো অল্প অল্প জল তুলে ব্যবহার করুন। এতে জলটাও ঠান্ডা পাওয়া যাবে।
৫) সূর্যাস্তের পরে ঘরের জানলা-দরজা খুলে দিন। ঠান্ডা বাতাসে ঘরের গুমোট হাওয়া তাড়ান। অতি পরিচিত ঘর ঠান্ডা করার পদ্ধতি। কিন্তু নিয়ম করে করা হয়ে ওঠে না অনেক সময়।
৬) বাড়ির লাগোয়া জমি থাকলে পূর্ব ও পশ্চিম দিকে বড় গাছ লাগান। এতে সারাদিন বাড়িতে রোদ পড়ার হাত থেকে বাঁচবেন। ঘরও অপেক্ষাকৃত ঠান্ডা থাকবে।
৭) বেশ কিছু ইন্ডোর প্লান্ট রয়েছে, যা বাড়ির মধ্যে রাখলে ঘর ঠান্ডা থাকে। যেমন অ্যালোভেরা, বস্টন ফার্ন, স্নেক প্লান্ট, উইপিং ফিগ, অ্যারিকা পাম ইত্যাদি। ঘরের বাতাসকেও শুদ্ধ করে এই গাছগুলি।
৮) বাড়ির মধ্যে কয়েকটি জায়গায় বড় মাটির মালসায় জল রাখুন ও তাতে কয়েকটি সুগন্ধি ফুল ফেলে দিন। দিনে দু’তিনবার জল পালটান। ঠান্ডা জলের বাষ্পে ঘর ঠান্ডা থাকবে। ভ্যাপসা গন্ধও হবে না।
৯) তুলোর বালিশের পরিবর্তে বাজরার বালিশ ব্যবহার করুন গরমকালে। তুলোর বালিশ খুব তাড়াতাড়ি গরম হয়ে যায়।
১০) সন্ধেবেলা ছাড়াও দুপুরের আগে আর একবার ঘরের সব দরজা-জানলা খুলে হাওয়া খেলতে দিন। মুখোমুখি জানলা খুলে দিলে সবচেয়ে ভাল। ঘরের গুমোট খুব ভাল দূর হয়।
১১) সাধারণ বাল্ব-টিউব পাল্টে ব্যবহার করুন এলইডি বাল্ব। কারণ ইনক্যান্ডেসেন্ট বাল্ব থেকে গরম হয়ে যায় ঘর।
১২) দিনে দু’বার করে ঘর ও জানলার স্ল্যাব ভাল করে মুছুন। এতেও ঘর ঠান্ডা হতে সাহায্য করবে।
১৩) ইলেকট্রিশিয়ান ডেকে পাখার ব্লেড একটু অন্যভাবে লাগান, যাতে পাখা ঘোরে অ্যান্টি-ক্লকওয়াইজ। এভাবে পাখা ঘুরলে গরম হাওয়া নীচে নামবে না, বরং উল্টোটাই হবে।
Comentários