ছোটবেলার খুনসুটি থেকে সবথেকে প্রিয় বন্ধু হয়ে ওঠা... মারামারি থেকে সমস্ত রকম আদর আবদার অভিযোগ যার কাছে, সম্পর্ক টা তো এমন'ই। দিদির কাছে রাখিবন্ধন স্পেশ্যাল দিন তো বটেই; ভাইয়ের কাছেও কম কিছু নয়। পছন্দমতো রাখী পড়িয়ে, উপহার আদানপ্রদান শেষে খাওয়াদাওয়াটা বাদ দিলে সবটাই যেন অসম্পূর্ন থেকে যায়। তাই জমিয়ে খাওয়াদাওয়ার জন্য ফাটিয়ে আয়োজন করলেন খাদ্যবাজী ক্লাবের ২১ জন সদস্য....
মরিচ মুলেঠি রোজ নানখাটাই ফিরনি
তমালী মজুমদার
নানখাটাই টার্ট
কী কী লাগবে
1 কাপ ময়দা
1/2 কাপ বেসন
2 টেবিল চামচ সুজি
1 চা চামচ বেকিং পাউডার
100 গ্রাম কনডেন্সড মিল্ক
1/2 চা চামচ এলাচ গুঁড়ো
1/2 কাপ বাটার
2-3 চা চামচ লিকুইড দুধ
1/4 চা চামচ নুন
কিভাবে বানাবেন
ময়দা, বেসন, সুজি, সব একসাথে নিয়ে চালুনিতে চেলে নিতে হবে যাতে কোন শক্ত অংশ না থাকে। এবার ওর মধ্যে নুন, বেকিং পাউডার, কনডেন্সডড মিল্ক, বাটার, এলাচ গুঁড়ো দিয়ে মেখে নিতে হবে। প্রয়োজনে দু-এক চামচ লিকুইড দুধ মেশানো যেতে পারে।
এবার ঐ ডো থেকে ছোট ছোট বল বানিয়ে. বেকিং ট্রে তে টার্ট মোল্ডে অল্প তেল ব্রাশ করে টার্টের আকার দিতে হবে। প্রিহিটেড মাইক্রোওয়েভে দশ মিনিট বেক করে নিলেই তৈরি নানখাটাই টার্ট।
রোজ ফিরনি
কী কী লাগবে
🔸বাসমতি চাল ধুয়ে শুকিয়ে গুঁড়ো করা অর্ধেক কাপ
🔸দুধ-2 কাপ
🔸 কনডেন্স মিল্ক -100গ্রাম
🔸রোজ সিরাপ-1/2 কাপ
🔸গোলাপের পাপড়ি 1 কাপ
🔸মুলেঠি: 4
🔸কালো মরিচ : 1 চামচ
🔸চেরি কিনে পেস্ট করে সিরাপ করা 1 কাপ
কিভাবে বানাবেন
🔸প্রথমে দুধ টা গ্যাস এ বসিয়ে দিন। যখন ফুটতে থাকবে তখন চারটে স্টিক মুলেঠি আর এক চামচ কালো মরিচ দিন।
দুধ ঘন হয়ে এলে চাল এর গুঁড়ো, গোলাপ পাপড়ি, রোজ সিরাপ তা মিশিয়ে সমানে নাড়তে থাকুন যাতে তলাতে না লেগে যায় আর চাল গুলো দলা না পাকিয়ে যায়।
এবার চাল সেদ্ধ হয়ে এলে কনডেন্সড মিল্ক মিশিয়ে ঘন হয়ে এলে তার মধ্যে চেরি সিরাপ দিয়ে নামিয়ে নিন।
এবার আগে থেকে বানানো নান খাটাই টার্ট এ ফিরনি টা ঢেলে উপরে কালো মরিচ, চেরি, গোলাপের পাপড়ি, রোজ সিরাপ আর তবক দিয়ে পরিবেশন করতে হবে মরিচ মুলেঠি রোজ নান খাটাই ফিরনি।
সেমাই এর পুডিং
ঈশিতা বিশ্বাস
কী কী লাগবে:
১ টেবিল চামচ আগার আগার পাউডার
২ চামচ দুধ
২ টেবিল চামচ সাদা তেল
১/২ কাপ সেমাই
১/৪ কাপ চিনি
১/২ কাপ মালাই
এক চিমটি নুন
কিভাবে বানাবেন
প্রথমে ২ টেবিল চামচ দুধ এ ১ টেবিল চামচ আগার আগার পাউডার গুলে নিতে হবে। কড়াই তে ২ টেবিল চামচ তেল দিয়ে সেমাই ভেজে নিতে হবে। তারপর ২ কাপ দুধের মধ্যে চিনি দিয়ে ভালো করে ফোটাতে হবে। সেমাই আর নুন দিয়ে একটা রাঁধুন। কিছুক্ষন পর মালাই আর আগার আগার এর মিশ্রণ ঢেলে দিয়ে ভালো করে নাড়িয়ে নামিয়ে নিতে হবে। একটা গোল পাত্রে ঢেলে একটু ঠান্ডা হলেই ফ্রিজ এ 20 মিনিট রেখে ইচ্ছে মতন সাজিয়ে পরিবেশন করুন।
চকলেট মালাই কাস্টার্ড স্যান্ডুইচ কেক
শতাব্দী দত্ত
কী কী লাগবে
ফুল ক্রীম মিল্ক (৫০০ মি:লি:)
কনডেন্সড মিল্ক (২০০ গ্ৰাম)
কাস্টার্ড পাউডার (৩ টেবিল চামচ)
ডার্ক চকোলেট (৩০০ গ্ৰাম)
দুধের সরের পেষ্ট (৪ টেবিল চামচ)
পাউরুটির স্লাইস (৯ পিস)
সুগার সিরাপ (৫ টেবিল চামচ)
চপড আমন্ড (৩ টেবিল চামচ)
মাখন (৫০ গ্ৰাম)
কিভাবে বানাবেন
প্রথমে একটি পাত্রে অল্প ফুল ক্রীম মিল্ক আর কাস্টার্ড পাউডার একসঙ্গে খুব ভালো করে মিশিয়ে নিয়ে একটি স্মুথ মিশ্রণ বানিয়ে নিতে হবে যাতে কোন দানা দানা না থাকে।
এরপর একটি ননস্টিক প্যানে হালকা আঁচে ফুল ক্রীম মিল্ক ,দুধের সরের পেস্ট আর কনডেন্সড মিল্ক একসঙ্গে ভালো করে ফুটিয়ে নিয়ে তাতে ফুল ক্রীম মিল্ক আর কাস্টার্ড পাউডারের মিশ্রণ অল্প অল্প করে পুরোটা মেশাতে হবে আর হালকা আঁচে ভালো করে নাড়িয়ে নাড়িয়ে একটা ঘন মিশ্রণ বানিয়ে নিতে হবে।
এবার পাউরুটির চারপাশের খয়েরী অংশটা বাদ দিয়ে আরেকটি ননস্টিক প্যানে মাখন দিয়ে মুচমুচে করে টোস্ট করে নিতে হবে।
ডার্ক চকলেট ডবল বয়েলিং পদ্ধতিতে মেল্ট করে নিতে হবে।
এরপর একটি বেকিং ট্রেতে সামান্য মাখন দিয়ে গ্ৰিস করে তাতে প্রথমে মুচমুচে টোস্টেড পাউরুটির লেয়ার সাজিয়ে অল্প সুগার সিরাপ ছড়িয়ে পাউরুটি ময়েস্ট করে নিয়ে তার উপর মেল্টেড চকলেট এর মিশ্রণ ঢেলে আবার উপরে সুগার সিরাপে ময়েস্ট করা টোস্টেড পাউরুটির লেয়ার এবং সবার উপরে মালাই কাস্টার্ড এর লেয়ার ও চপড আমন্ড দিয়ে সাজিয়ে ফ্রিজে কিছুক্ষণ রেখে সেট করে নিতে হবে।
এবার ইচ্ছে অনুযায়ী টুকরো করে কেটে পরিবেশন করতে হবে রাখি স্পেশাল চকলেট মালাই কাস্টার্ড স্যান্ডুইচ কেক।
বানানা চিজ বল
শম্পা সর্দার
কী কী লাগবে
পাকা কলা ৩টে মিডিয়াম সাইজ
চীজ কিউব ২ টো
ডিম ১ টা
ময়দা ১/৩ কাপ
কর্নফ্লাওয়ার ১/৪ কাপ
ব্রেডক্রাম্বস ১/২ কাপ
ভ্যানিলা এসেন্স ১/২ চা চামচ
দারচিনি পাওডার ১/৪ চা চামচ
সাদা তেল পরিমানমতো
জল প্রয়োজনমতো
কিভাবে বানাবেন
প্রথমে কলাগুলো খোসা সমেত একটু সেদ্ধ করে নিতে হবে।
এবার করার খোসা ছাড়িয়ে চটকে নিয়ে ওতে একে একে ময়দা, কর্নফ্লাওয়ার, দারচিনি পাউডার আর ভ্যানিলা এসেন্স দিয়ে ভালো করে মেশাতে হবে। খুব শক্ত মনে হলে অল্প জল মেশানো যেতে পারে।
এবার চীজ কিউব গুলো চার টুকরো করে কেটে নিতে হবে।
এরপর ঐ কলার মিশ্রন থেকে অল্প অল্প করে নিয়ে হাত দিয়ে গোল করে বাটির মতো বানিয়ে প্রত্যেকটা বাটিতে একটা করে চীজ এর টুকরো দিয়ে মুখটা বন্ধ করে দিয়ে বলের মতো গড়ে নিতে হবে।
এবার একটা বাটিতে ডিমটা ভেঙ্গে নিয়ে ভালো করে ফেটিয়ে নিতে হবে।
এরপর ঐ বলগুলো ডিমের গোলায় ডুবিয়ে নিয়ে ব্রেডক্রাম্বস এ কোট করে নিতে হবে।
এবার একটা প্যানে পরিমান মতো তেল গরম করে ওতে ঐ কলার বলগুলো মাঝারি আঁচে গোল্ডেন ব্রাউন করে ভেজে তুলে নিতে হবে।
এবার গরম গরম ব্যানানা চীজ বল সার্ভ করতে হবে।
ডোনাট
পৌলমী দাস
কী কী লাগবে
▪️এক চা চামচ ড্রাই ইস্ট পাউডার
▪️হাফ কাপ উষ্ণ গরম লিকুইড দুধ
▪️হাফ কাপ চিনি
▪️হাফ চা চামচ নুন
▪️দুই কাপ ময়দা
▪️একটা ডিম
▪️এক টেবিল চামচ বাটার
▪️হাফ টেবিল চামচ ভ্যানিলা এসেন্স
▪️চার টেবিল চামচ উষ্ণ গরম জল
▪️এক চা চামচ বেকিং পাউডার
▪️ভাজার জন্য সাদা তেল
▪️গারনিশিংয়ের জন্য জ্যাম, পাউডার সুগার, মেল্টেড চকোলেট
কিভাবে বানাবেন:
ড্রাই ইস্ট প্রথমে উষ্ণ গরম জলে মিশিয়ে ঢেকে রেস্টে রাখতে হবে ১০ মিনিট। ইস্ট ফোমের মতো হয়ে গেলে তাতে সমস্ত উপকরণ মিশিয়ে ভালো ভাবে মেখে একটা মণ্ড তৈরী করতে হবে। এটাকে ঢেকে রেস্টে রাখতে হবে আরও ২ ঘণ্টা।
২ ঘণ্টা পর লেচি কেটে বেলে নিতে হবে। ডোনাট কাটার দিয়ে সেপ করে নিতে হবে। আমি নিজের হাতে ইচ্ছেমতো সেপ করেছি। ঢেকে আরও ১০ মিনিট রাখতে হবে।
এবার একটা প্যানে সাদা তেল গরম করে লো ফ্লেমে লালচে বাদামী করে ভেজে নিতে হবে সব ডোনাটগুলো। এবার একটু ঠান্ডা হলে ইচ্ছেমতো গার্নিশিং করে নিলেই রেডি হোমমেড ডোনাট।
গোলাপী কুলফি
পৌলমী সরকার জানা
কী কী লাগবে:
১ লিটার ফুল ফ্যাট দুধ
হাফ কাপ খোয়া ক্ষীর গ্রেট করা
১ কাপ চিনি
২ টেবিল চামচ রসে সিরাপ
২ টেবিল চামচ পেস্তা কুচি
কিভাবে বানাবেন
প্রথমে দুধ একটা কড়াইয়ে ভালো করে নেড়েচেড়ে প্রায় ১০ মিনিটের মত কম আছে ফোটাতে হবে। এরপর এতে খোয়া ক্ষীর দিয়ে ভালো করে নাড়তে হবে। খোয়া টা ভালো করে দুধে মিশে গেলে আঁচ বাড়িয়ে এবার চিনি দিয়ে ফোটাতে হবে প্রায় ৫ মিনিট। চিনি ভালো করে ফুটে গেলে আঁচ বন্ধ করে রোজ সিরাপ টা ভালো করে মিশিয়ে দিতে হবে। এবার এই মিশ্রণটি যে পাত্রে কুলফি বসানো হবে সেই পাত্রে গরম অবস্থাতেই ঢেলে দিন। ভালো করে ঢেকে ৪ থেকে ৫ ঘণ্টা রাখলেই তৈরি হয়ে যাবে গোলাপী কুলফি। উপর থেকে পেস্তা কুচি ছড়িয়ে পরিবেশন করতে হবে।
পনির সিমুই পায়েস উইথ ড্রাই ফ্রুট গোলাপ জামুন
শ্রাবন্তী বনিক
কী কী লাগবে
1 কাপ মিল্ক মেড
1/2 কাপ পনির
5-6 চামচ সিমুই
2 চামচ রোজ সিরাপ
5 চামচ চিনি
2 কাপ দুধ
1/2 কাপ ড্রাই ফ্রুট
5 চামচ গুড়ো দুধ
1 কাপ ঘী
1 চামচ এলাচ গুঁড়ো
1 কাপ চিনি
কিভাবে বানাবেন
প্রথমে একটা কড়াইয়ে দুধ আর মিল্ক মেড মিশিয়ে ভালো করে ঘন হতে দিন। এবার তাতে সিমুই দিয়ে সিম আঁচে হতে দিন। এবার চিনি আর পনির হাত দিয়ে মিশিয়ে নিন। সমস্ত কিছু ভালো করে মিশে গেলে রোজ সিরাপ মিশিয়ে গ্যাস বন্ধ করে দিন। ছোট ছোট মাটির বাটিতে ঢেলে ফ্রিজে রেখে ঠাণ্ডা করুন। পনির, গুঁড়ো দুধ, চিনি মিশিয়ে মাঝে ড্রাই ফ্রুটস কুচি পুরে ছোট ছোট বল বানিয়ে নিন। ঘি গরম করে ভেজে তুলে নিন। জ আর চিনি জ্বাল দিয়ে একতারে রস বানিয়ে গোলাপজামুন গুলো ভিজিয়ে রাখুন।
রোজ পনির পায়েস এর মধ্যে একটি করে গোলাপ জামুন দিয়ে ওপর দিয়ে ড্রাই ফ্রুট কুচি আর গোলাপ পাপড়ি ছড়িয়ে পরিবেশন করুন।
ঠাকুর বাড়ির ভাতের কোফতা
বুলবুল চট্টোপাধ্যায়
কী কী লাগবে
গোবিন্দ ভোগ চাল: ১/২ কাপ
খোয়া ক্ষীর: ৫০ গ্রাম
কেশর দুধ: ২ চা চামচ
কিসমিস
ঘি: ২ চা চামচ
সুজি: ১ কাপ
ময়দা অল্প
দই
কাঁচা লঙ্কা কুচি: ২ চা চামচ
নুন: ১ চা চামচ
আদা বাটা: ৩ চা চামচ
লঙ্কা বাটা: ২ চা চামচ
সাদা তেল
কিভাবে বানাবেন
ভাত বানিয়ে ভালো করে মেখে নিন। এর মধ্যে কাঁচা লঙ্কা কুচি , খোয়া ক্ষীর, কেশর দুধ ও ঘিয়ে ভাজা কিসমিস কুচি ছড়িয়ে দিন ভালো করে মেখে নিন। সব কিছু একসঙ্গে মেখে ছোট ছোট বল বানিয়ে নিতে হবে। সব কিছু একসঙ্গে মেখে ছোট ছোট বল বানিয়ে নিতে হবে। আদা ও লঙ্কা পেস্ট করতে হবে। এটিতে নুন দিয়ে দইয়ের সঙ্গে মেশাতে ও ফেটাতে হবে। এবার বলগুলি ময়দাতে রোল করে নিন। তার পরে দইয়ের মিশ্রণে রোল করে . সুজির মধ্যে রোল করে নিন ( ৩ টে মিশ্রনেই একে একে খুব ভালো করে রোল করতে হবে। বেশ কিছুক্ষন ফ্রিজে রেখে দিন। ( সুজি টা ভালো করে বসার জন্য।) তেল গরম করে ভালো করে ভেজে তুলে নিলেই তৈরী।
চকোলেট - কুমড়োর হালুয়া
সৌম্যদীপ দাস
কী কী লাগবে-
কুমড়ো ২০০ গ্রাম , কাজু ৫০ গ্রাম , চকোলেট ১০ গ্রাম , ঘী , এলাচ গুঁড়ো , মিল্কমেড ও পেস্তা বাদাম পরিমান মতো
কিভাবে বানাবেন
- প্রথমে কুমড়ো ঝাঁঝরি করে নিতে হবে । এরপর কড়াইতে ঘী গরম করে কাজু ভেজে নিতে হবে । এরপর কড়াইতে কুমড়ো দিয়ে কিছুক্ষণ ধরে ভাজতে হবে , যাতে সেই কুমড়োর কাঁচা ভাব চলে যায় । সুগন্ধের জন্য দিয়ে দিতে হবে এলাচ গুঁড়ো । এরপর ভাজা হয়ে আসলে পরিমান মতো মিল্কমেড দিতে হবে যাতে স্বাদ ভালো হয়। এরপর মধ্যেখানে একটু জায়গা ফাঁকা করে খুব অল্প পরিমানে চকোলেট দিয়ে ভালো করে গলিয়ে পুরো জিনিসটায় মিশিয়ে দিতে হবে । তাহলেই তৈরী হয়ে যাবে এই হালুয়া । পরিবেশনের সময়ে কাজু ও পেস্তা বাদামের টুকরো ছড়িয়ে দিলে বেশ ভালো লাগবে ।
চিকেন চাপলি কাবাব
সৃজিতা অধিকারী
কী কী লাগবে
৩০০ গ্রাম কিমা
একটা টমেটো
একটা পেঁয়াজ
একটা আলু
দুটো কাঁচা লঙ্কা
পরিমাণ মত ধনেপাতা
এক চা চামচ আদা রসুন পেস্ট
এক চামচ লঙ্কা গুঁড়ো ,
১/২ চামচ হলুদ গুঁড়ো,
এক চামচ চাট মশলা,
১/২ চামচ চিলি ফ্লেক্স,
লবন
সাদা তেল
একটা ডিম
এক কাপ বেসন
আদ কাপ ছাতু
ভাজার জন্য সাদা তেল
কিভাবে বানাবেন
প্রথমে কিমা ধুয়ে ভালো করে জল ঝরিয়ে নিতে হবে। তারপর সব উপকরণ গুলো মাখিয়ে ফ্রিজ এ এক ঘন্টা রেখে দিতে হবে।
নন স্টিক তাওয়া গরম হলেই একটু তেল দিয়ে আঁচটা ধীমে করে দিতে হবে । হাতের তালুতে তেল মাখিয়ে কাবাব চেপটা আকার দিয়ে তারপর ভালো করে তাওয়া তে ভেজে নিলেই তৈরী চিকেন চাপলি কাবাব। সার্ভ করুন স্যালাড আর সস দিয়ে।
বাগদা চিংড়ির পোলাও
অঞ্জুশ্রী মান্ডি
কী কী লাগবে
বাগদা চিংড়ি ২
গোবিন্দভোগ চাল
১ কাপ
তেজপাতা ১
গোটা গরম মশলা (দারচিনি, এলাচ ৩, লবঙ্গ ৪) একটু থেঁতো করে নেওয়া
পেঁয়াজ কুচি ২ টো মাঝারি
আদা বাটা ১ চা চামচ
কাঁচালঙ্কা বাটা ১/২ চা চামচ
হলুদ গুঁড়ো ১চা চামচ
গরম মশলা গুঁড়ো ১চামচ
নুন স্বাদ অনুসারে
চিনি ১ চামচ
সাদা তেল ২বড়ো চামচ
ঘি ১ বড়ো চামচ
চেরা কাঁচা লঙ্কা ৩ টি
চালের দ্বিগুণ পরিমাণ জল
কিভাবে বানাবেন
প্রথমে চিংড়ি মাছ গুলোতে নুন হলুদ মাখিয়ে ১০ মিনিট রেখে দিতে হবে। চাল টা ভালো করে ধুয়ে ৩০ মিনিট রাখতে হবে।
এরপর কড়াতে সাদা তেল আর ঘি মিশিয়ে গরম হলে চিংড়ি মাছ গুলো ভেজে তুলে নিয়ে ওই তেলেই তেজপাতা আর থেঁতো করা গরম মশলা টা দিয়ে গন্ধ বেরোলে পেঁয়াজ কুচি টা দিয়ে ভাজতে হবে, পেঁয়াজ ভাজা হলে আদা বাটা টা অল্প একটু জল দিয়ে মিশিয়ে ভাজতে হবে, কাঁচা গন্ধ টা চলে গেলে কাঁচা লঙ্কা বাটা দিয়ে অল্প নেড়ে চেড়ে ওতে ভেজানো চাল টা দিয়ে ভালো করে ভাজতে হবে। এরপর ওতে হলুদ গুঁড়ো আর গরম মশলা গুঁড়ো দিয়ে ভালো করে নেড়ে চেড়ে জল টা দিয়ে আর স্বাদ অনুসারে নুন দিয়ে ঢেকে ১০মিনিট রান্না করতে হবে মাঝারি আঁচে। চালটা ৮০% মতো সেদ্ধ হলে ঢাকা খুলে চিনি, চেরা কাঁচা লঙ্কা আর চিংড়ি মাছ টা দিয়ে ভালো করে নেড়ে চেড়ে মিশিয়ে আরো মিনিট ৫/৭ রান্না করতে হবে। মিনিট সাতেক পরে আঁচ বন্ধ করে কিছুক্ষণ ঢেকে রাখতে হবে।
চিংড়ি পোলাও তৈরি, সালাড আর রায়তা র সাথে পরিবেশন করুন এই পোলাও।
ড্রাই ফ্রুটস খাজানা কাজু ফিংগার
বর্নালী সাহা
কী কী লাগবে
🔹এক প্যাকেট লিকুইড দুধ
🔹চার টেবিল চামচ গুঁড়ো দুধ
🔹পরিমাণ মতন কাজু, পেস্তা, আমন্ড ভেতরের পুর বানাবার জন্য
🔹এক কাপ কাজু ওপরে লেয়ার তৈরির জন্য
🔹এক কাপ জল শিরা তৈরির জন্য
🔹এক কাপ চিনি
🔹এক চামচ ঘি
কিভাবে বানাবেন
প্রথমেই লিকুইড দুধ টিকে জ্বাল দিয়ে ঘন করে নিতে হবে এবং ওর মধ্যে সামান্য ঘি আর গুঁড়ো দুধ ও ড্রাই ফুড গুলো কুচি করে দিয়ে ক্রমাগত নেড়ে ঘন করতে হবে। এবং যখন দুধ ঘন হয়ে পুর তৈরি করার মতন শক্ত হয়ে যাবে তখন ঠান্ডা করতে দিতে হবে।
এবার কাজুটিকে মিক্সিতে অল্প অল্প করে ডাস্ট করে নিতে হবে একবারে না চালিয়ে থামিয়ে থামিয়ে মিক্সি চালিয়ে এটা করতে হবে।
একটি প্যানে হাফ কাপ চিনি দিয়ে সিরা তৈরি করে নিতে হবে যতক্ষণ না সিরাটি চিটচিটে ভাব আসবে।এবার কাজু গুড়োটা দিয়ে অনবরত নাড়তে হবে যতক্ষণ না প্যান থেকে ছেড়ে এলে ঠান্ডা করতে দিতে হবে।
হালকা ঠান্ডা হলে গোল গোল লুচির মতন হাত দিয়ে চ্যাপ্টা করে তার মধ্যে ক্ষীর আর ড্রাই ফ্রুট এর পুরটা দিয়ে বন্ধ করে ফিঙ্গার এর আকার দিতে হবে। তাহলে তৈরি হয়ে যাবে ড্রাই ফ্রুট খাজানা কাজু ফিঙ্গার।
মাওয়া গুজিয়া
ডঃ সুপর্না সাহা ভাওয়াল
কী কী লাগবে
ময়দা
ঘি
ড্রাই ফ্রুটস
গুঁড়ো চিনি
এলাচ গুঁড়ো
এক চিমটি নুন মেশানো জল
সাজানোর জন্য শুকনো গোলাপের পাপড়ি, বাদাম এবং তবক
কিভাবে বানাবেন
ময়দাতে নুন আর ঘি মিশিয়ে অল্প অল্প করে জল দিয়ে শক্ত ডো বানিয়ে ৩০মিনিট রাখুন। ঘি গরম করে ওতে খোয়া দিয়ে বাদামী করে ভাজুন। একটি প্লেটে ঢেলে ড্রাই ফ্রুটস কুচি মেশান। ময়দার লেচি কেটে একটু মোটা করে বেলে এই পুর ভরে অর্ধচন্দ্রাকৃতি শেপে গড়ে নিন। বই গরম করে ধিমে আঁচে সোনালী করে ভেজে তুলে নিলেই তৈরী মাওয়া গুজিয়া। ইচ্ছে হলে সুগার সিরাপে কোট করতে পারেন। এবার ওপরে তবক, গোলাপের পাপড়ি আর বাদাম কুচি ছড়িয়ে পরিবেশন করুন।
বাদাম মঞ্জরী
ভুবনেশ্বরী সাঁতরা
কী কী লাগবে
৩০০ গ্রাম ছানা,
খোয়াক্ষীর 100 গ্রাম,
চিনেবাদামের গুঁড়ো ১/২কাপ,
গাওয়া ঘি ৩-৪ চামচ,
মিল্ক মেড ১০০ গ্রাম,
চিনি ১ কাপ,
১/২ চামচ এলাচ গুঁড়ো,
গুঁড়ো কাজু ৩ চামচ,
সাজানোর জন্য কিসমিস ২ চামচ বা বেদানার দানা
কিভাবে বানাবেন
ছানাটা ভালো করে মেখে নিন। তারপর ফ্রাইপ্যান গরম হলে ২ চামচ ঘি দিন। তারপর মেখে রাখা ছানাটা ফ্রাই প্যানে দিয়ে নাড়তে হবে। কিছুক্ষণ নাড়াচাড়া করার পর ওর মধ্যে মিল্ক মেড দিয়ে দিতে হবে, মিল্ক মেড দিয়ে ওটাকে ভালোভাবে ছানার সাথে মিশিয়ে নাড়তে হবে, এবার একে একে চিনি দিয়ে নেড়ে নিতে হবে, চিনিটা একটু গলে মিশে গেলে তারপর খোয়া ক্ষীর দিয়ে নেড়েচেড়ে নিতে হবে সাথে সাথে ওর মধ্যে বাদাম গুঁড়োটা দিয়ে দিতে হবে। এটাকে ভালোভাবে নেড়েচেড়ে নিতে হবে। এলাচ গুঁড়ো দিয়ে নেড়েচেড়ে টাইট হয়ে এলে একটা প্লেটে নামিয়ে নিন ।একটু ঠান্ডা হয়ে গেলে এটাতে কাজু গুঁড়ো ছড়িয়ে বরফির আকারে কেটে উপর থেকে কিসমিস বা বেদানা ছড়িয়ে দিলেই তৈরি।
রাইস কেক
সিসিলী বর্মন
কী কী লাগবে
ভেজানো চাল ১ কাপ (গুঁড়ো করা),
তালের ক্কাথ দেড় কাপ,
১ কাপ চিনি,
নারকেল কোরা ১কাপ,
গুঁড়ো দুধ ১/২কাপ,
ছোটো ছোটো করে নারকেল কাটা ২-৩ চা-চামচ,
১ চা-চামচ ঘি,
কলাপাতা গোল করে কাটা ২টো
কিভাবে বানাবেন
একটা বড় পাত্রের মধ্যে একে একে করে চাল গুঁড়ো, চিনি, দুধ, নারকেল, তাল ক্কাথ দিয়ে ভালো করে মেখে নিতে হবে। তারপর প্রেশার কুকারের মধ্যে একটা কলা পাতা দিয়ে অল্প ঘি মাখিয়ে নিতে হবে। মেখে রাখা মিশ্রণটি পুরো ঢেলে দিয়ে তার উপর দিয়ে কুচি করা নারকেল ছড়িয়ে দিয়ে তার উপর দিয়ে ঘি লাগানো কলা পাতা দিয়ে প্রেশার কুকারের সিটি খুলে ঢাকনাটা লাগিয়ে দিতে হবে। এরপর গ্যাস জ্বালিয়ে রুটি করার তাওয়া বসিয়ে ২০০ গ্রাম লবন দিয়ে তার উপর প্রেশার কুকার বসিয়ে দিতে হবে। অল্প আঁচে করতে হবে এক ঘন্টা কুড়ি মিনিট লাগবে। হয়ে গেলে বন্ধ করে দিতে হবে। তার পর এক ঘন্টা বাদে প্রেসারের ঢাকনা খুলে আসে আসে করে কেকটা বের করতে হবে। তৈরি হয়ে গেলো রাইস কেক। এরপর টুকরো করে কেটে ইচ্ছে মতো সাজিয়ে পরিবেশন করুন।
ছানার পায়েস
সুবিনয় মজুমদার
কী কী লাগবে
দুধ - ১.৫ লিটার
লেবুর রস - চার টেবিল চামচ
জাফরান - সামান্য
কিসমিস - ১০ থেকে ১৫ টা
কাজু - ১০ থেকে ১৫ টা
পেস্তা - ১০ টা কুচি করে কাটা
ঘি- ১ টেবিল চামচ
এলাচ - ২ টো
মিল্কমেড - ২০০ গ্ৰাম
কিভাবে বানাবেন
৫০০ মিলি দুধ ভালো করে ফুটিয়ে তাতে লেবুর রস মিশিয়ে ছানা বানিয়ে নিতে হবে। ছানার জল ছেঁকে তাতে জল দিয়ে ভালো করে ধুয়ে নিতে হবে। একটা পাত্রে এক চামচ ঘি দিয়ে তাতে ছানা দিয়ে হালকা আঁচে মিনিট দুয়েক নাড়াচাড়া করে ঠান্ডা করে নিতে হবে। ৩ টেবিল চামচ দুধে জাফরান মিশিয়ে মিনিট দশেক রেখে দিতে হবে। এরপর কড়াই তে ১ লিটার দুধ দিয়ে ভালো করে ফুটিয়ে নিতে হবে। ছানা দিয়ে ধিমে আঁচে মিশিয়ে নিতে হবে। এতে এলাচ ও জাফরান মেশানো দুধ টা দিয়ে দিতে হবে। এতে মিল্কমেড দিয়ে ভালো করে মিশিয়ে নিতে হবে। কাজু ও কিসমিস মিশিয়ে মিনিট দুয়েক রেখে নামিয়ে ঠাণ্ডা করে নিতে হবে। ওপর থেকে পেস্তা কুচি ছড়িয়ে পরিবেশন করুন।
মোচা চিংড়ির মুইঠ্যা
ছন্দা গুহ
কী কী লাগবে
কুচিয়ে নেওয়া মোচা - ২ বাটি
চিংড়ি মাছ - ৩০০ গ্রাম
একটা মাঝারি সাইজের আলু
বেসন - ২ টেবিল চামচ
নুন - স্বাদ এবং পরিমাণ মতো
হলুদ গুঁড়ো - পরিমাণ মতো
চিনি - স্বাদমতো
কাঁচা লঙ্কা - পরিমাণ মতো
আদা - পরিমাণ মতো
টমেটো - ১টা
কাশ্মিরী লঙ্কাগুড়ো
গরম মশলা গুঁড়ো
টক দই - ১ টেবিল চামচ
তেজপাতা - বড় একটা
ঘী
সাদা জিরে
সাদা জিরের গুঁড়ো
সরষের তেল
কিভাবে বানাবেন
মুইঠ্যার জন্য
প্রথমে মোচা কেটে হলুদ জলে কুচিয়ে রেখেছি, তারপর চিংড়ি মাছ ভালো করে ধুয়ে নুন হলুদ মাখিয়ে গরম জলে সেদ্ধ করে নিন। জল ঝরিয়ে চটকে নিন। কাঁচালঙ্কা, আদা বেটে নিন। চিংড়ি মাছ মিক্সিতে হাফ পেস্ট করে নিন, কিছু চি়ংড়ি গোটা রেখে দেবেন।
এরপর একটা পাত্রে একে একে মোচা, পেস্ট করা চিংড়ি, নুন, হলুদ, চিনি, এক টেবিল চামচ আদা কাঁচালঙ্কা বাটা, বেসন, সামান্য লাল লঙ্কা গুঁড়ো, গরম মশলা গুঁড়ো, চটকে নেওয়া সেদ্ধ আলু সব দিয়ে ভালো করে মেখে নিয়ে ভেতরে একটা করে চিংড়ি মাছ দিয়ে মুইঠ্যা গড়ে ডুবো তেলে ভেজে তুলে নিন।
গ্রেভীর জন্য
আদা , কাঁচালঙ্কা, টমেটো পেস্ট করে নিন, ফ্রাইপ্যানে তেল গরম করে তাতে সাদা জিরে, তেজপাতা ফোড়ন দিয়ে তাতে আর একটু টমেটো দিয়ে নেড়েচেড়ে বেটে নেওয়া পেস্ট টা দিয়ে কষিয়ে, তারপর তাতে একে একে হলুদ , জিরে গুঁড়ো, কাশ্মিরী লঙ্কাগুড়ো, নুন,টক দই ,স্বাদ মতো চিনি দিয়ে আবার ভালো করে কষিয়ে নিয়ে তাতে পরিমাণ মতো জল দিন। ঝোল ফুটে উঠলে তাতে মুইঠ্যা গুলো ছেড়ে দিন। খুব ভালো করে ফুটে গেলে পরিমাণ মতো ঝোল রেখে শেষে ঘী, গরমমশলা আর চেরা কাঁচালঙ্কা দিয়ে নামিয়ে গরম গরম ভাতের সঙ্গে পরিবেশন করেছি ।
কাঁচা কলার কোফতা
শালিনী মিশ্রা বাজপেয়ী
কী কী লাগবে
কাঁচকলা – ৩টে
মাঝারি সাইজের সেদ্ধ আলু – ১ টি
Cornflour বা ময়দা – ২ টেবিলচামচ
শুকনো খোলায় ভেজে রাখা জিরে ধনে শুকনোলঙ্কা গুঁড়ো মানে ভাজা মশলা – ৩ টেবিল চামচ
আদা কাঁচালঙ্কা বাটা – ৪ টেবিল চামচ
টোম্যাটো কুচি – ১ টি
ডুমো করে কেটে রাখা আলু – ১ টা আলু
তেজপাতা – ২ টি
গোটা জিরে – ১ চা চামচ
নুন ও চিনি – পরিমানমতো
হলুদ গুঁড়ো – আন্দাজ মতো
সামান্য ঘি
গরমমশলা গুঁড়ো – ১ চা চামচ
ভাজার জন্য সাদা তেল
মুল রান্নার জন্য সর্ষের তেল – ৪ টেবিল চামচ
কিভাবে বানাবেন
প্রথমে খোসা শুদ্ধ কাঁচকলা নুন হলুদ দিয়ে সেদ্ধ করে খোসা ছাড়িয়ে চটকে নিতে হবে। এরপর তাতে সেদ্ধ আলু, আদা কাঁচালঙ্কা বাটা, নুন, মিষ্টি, হলুদ গুঁড়ো, ভাজা মশলা গুঁড়ো, cornflour এই সবকিছু দিয়ে ভালো করে মেখে নিতে হবে। এরপর হাতে তেল মেখে নিয়ে কোফতা গড়ে নিয়ে সাদা তেলে ভেজে তুলতে হবে। এরপর কড়াইতে সর্ষের তেল দিয়ে তেজপাতা গোটা জিরে ফোড়ন দিয়ে ডুমো করে কেটে রাখা আলু দিয়ে একটু নেড়েচেরে ভাজা ভাজা করে টোম্যাটো কুচি দিতে হবে। এরপর নুন হলুদ দিয়ে নেড়ে আদা কাঁচালঙ্কা বাটা দিয়ে আবার নেড়ে মশলা ভালো করে কষিয়ে নিতে হবে, এরপর ভাজা মশলা গুঁড়ো দিয়ে আবার কষাতে হবে প্রয়োজনে গরম জল দেওয়া যেতে পারে এইসময় তা না হলে মশলা পুরে যেতে পারে। মশলা কষে এলে ও মশলা থেকে তেল ছেড়ে এলে গ্রেভির জন্য গরম জল পরিমান মতো দিতে হবে সাথে নুন ও দিয়ে দিতে হবে স্বাদমত, তবে কোফতা তে যেহেতু একদম জল টেনে নেয় তাই ঝোল টা সামান্য বেশি রাখাই ভালো। ঝোল ফুটে এলে একদম নামানোর দুই মিনিট আগে কোফতা গুলো দিয়ে সামান্য চিনি দিয়ে ঘি গরমমশলা ছড়িয়ে গ্যাস বন্ধ করে ঢেকে রেখে দিতে হবে।
এরপর গরম গরম সার্ভ করুন ভাত, পোলাও, পরোটা যে কোনো কিছুর সঙ্গে এই কাঁচকলার কোফতা কারি।
কোকোনাট ক্রানবেরী লাড্ডু
সোমা রায়
কী কী লাগবে
১ চা চামচ ঘি
১/৪ র্থ কাপ শুকনো ক্র্যানবেরি
১/৪র্থ কাপ কনডেন্সড মিল্ক
১/৪র্থ কাপ চিনি
1 ১কাপ ডেসিকেটেড নারকেল পাউডার
2 চামচ দুধ (যদি প্রয়োজন হয়)
সাজানোর জন্য কাটা ড্রাই ফ্রুটস
কিভাবে বানাবেন
1. প্যানে কিছু জল নিয়ে শুকনো ক্র্যানবেরি আর চিনি দিয়ে ৫ মিনিট সেদ্ধ করুন। পিউরি করে নিন। অন্য একটি প্যানে ঘি দিয়ে নারকেল গুড়ো ভাজুন। কনডেন্সড মিল্ক আর ক্রানবেরী পিউরি দিয়ে বেশ ঘন হলে নামিয়ে নিন। অল্প গরম থাকা অবস্থায় লাড্ডুর মতো গড়ে নিয়ে শুকনো নারকেল গুঁড়ো তে গড়িয়ে নিলেই তৈরি। ইচ্ছে হলে মাঝে ড্রাই ফ্রুটস কুচির পুর দিতে পারেন।
ম্যাঙ্গো ট্রে
দীপান্বিতা মহাদানী
কী কী লাগবে
আমের পাল্প ১ কাপ
ঘন দুধ আধ কাপ
মধু দুই টেবিল চামচ
ময়দা এক কাপ
সাদা তেল
নুন
স্পার্কেল
কিভাবে বানাবেন
দুধ আর আমের পাল্প জ্বাল দিয়ে ঘন করে নিন। ক্ষীরের মতো হলে মধু মিশিয়ে ঠান্ডা করুন। ময়দা, নুন,তেল আর পরিমানমতো জল দিয়ে ডো বানিয়ে নিন। লেচি কেটে পাতলা করে বেলে ট্রের আকার দিন। ভেজে তুলে নিয়ে তাতে আমক্ষীর আর স্পার্কেল দিয়ে সাজিয়ে পরিবেশন করুন।
ইন্সট্যান্ট কাঁচাগোল্লা
মৌমিতা বিশ্বাস
কী কী লাগবে
১ লিটার দুধের ছানা
গুঁড়ো দুধ ১ কাপ
ঘি
গুঁড়ো চিনি আধ কাপ
এলাচ গুঁড়ো
গোলাপ জল
বাদাম কুচি
কিভাবে বানাবেন
ছানা হাত দিয়ে ভাল করে মেখে নিন। গুঁড়ো দুধ, চিনি, এলাচ গুঁড়ো মেখে গোল গোল বল বানিয়ে নিন। ফ্রিজে রেখে ঠাণ্ডা ঠাণ্ডা পরিবেশন করুন।
ঝুলনযাত্রা, বন্ধুদিন এবং
ইন্দিরা মুখোপাধ্যায়
"সেই ভোর থেকে উঠে পিকলু ঝুলন সাজাতে ব্যস্ত। একটু করে সাজায় আর মা'কে হাঁক দেয়, ওমা! দেখো না, কেমন হল? মা শশব্যস্তে রান্নাঘর থেকে বলে, খাসা হয়েছে। ভরে ওঠে পিকলুর ঝুলনবাগান। ভাদ্রের মেঘমুক্ত নীল আকাশে ছেঁড়া ছেঁড়া সাদা মেঘ...পেঁজাতুলোর মত ভেসে বেড়ায়। পিকলুদের স্কুল ছুটি আজ। সে বন্ধুদের কাছ থেকে জড়ো করেছে কত পুতুল । ভাঙ্গা আয়নার কাঁচের এক চিলতে নীল নদী। কলকল করে নীলগোলা জল বয়ে চলেছে সেখান দিয়ে। ওপর দিয়ে নদী পেরোনোর ছোট্ট বাঁশের সাঁকো। নদীর ধারে ছোট বড় মাঝারি গাছ...একটা শুকনো ডালে ছোট্ট খঞ্জনা পাখীও দোলা খাচ্ছে মনের সুখে। সবুজ পাতা ভর্তি গাছে বসেছে ল্যাজঝোলা পাখীটা। আর মনের সুখে গান গেয়ে চলেছে। সাঁকো পেরিয়ে চলেছে সারেসারে মানুষ। কৃষ্ণনগরের মাটীর পুতুল সব। কারো মাথায় খড়ের আঁটি, কারোর পিঠে ঝোলাভর্তি আনাজপাতি। সাঁকোর গায়ে হেলান দিয়ে একটা ভিখারি ভিক্ষে চাইছে। বয়সের ভারে সে কুব্জ ও কিছুটা ন্যুব্জ। একটা ঠ্যালাগাড়ি চলেছে সাঁকোর ওপর দিয়ে। তাতে রয়েছে মেলায় বিক্রির জন্য মাটির পুতুল, মাটির ফল, তালপাতার হাতপাখা, বাঁশের বাঁশী, কাঠের খেলনা আরো কতকিছু! নদীর ওপরে ডিঙিনৌকায় জাল ফেলে মাছ ধরছে দু-চারজন জেলে। নদী পেরিয়ে দূরে গ্রামের মেঠোরাস্তা। সেখানে সাইকেলে চড়ে লোক যাচ্ছে। মোরাম ফেলে রাস্তা লাল করেছে পিকলু। ওখানেই সকলে যাবে। একটা কদমগাছের নীচে সকলে জড়ো হবে আজ। ঝুলনযাত্রা তাই। কদমতলায় মেলাও বসেছে ঝুলনের। সেখানে একটা প্লাস্টিকের নাগরদোলাও রেখেছে পিকলু । ছোটো ছেলেমেয়েরাও জড়ো হতে শুরু করেছে। জিরো ওয়াটের নীল-হলুদ টুনিবাল্বও লাগিয়ে দিয়েছে পিকলুর বন্ধুরা। মেলায় একটু আলো না দিলে কেমন ন্যাড়ান্যাড়া লাগে যে!
হারিয়ে যায় পিকলু। রাধাকৃষ্ণ দোলনায় ঝুলবে ক'দিন। মা কিনে দিয়েছে মেলা থেকে। নিখুঁত চোখমুখ। হাসিহাসি মুখ। পিকলু ভাবে, এভাবেই যেন ঠাকুর হাসিমুখে সবসময় থাকে ওদের দুজনের সঙ্গে। আর যেন থাকে পাড়ার সব বন্ধুরা...পিকু, টুসু, বিল্টু, হাবুল। সকলেই যেন ওর পাশে থাকে রোজ রোজ আর সারাটা জীবন। রোজ হোক বন্ধুদিন। সারাবছর অনেক দুঃখ পিকলুদের। কিন্তু এই ঝুলনের ক'টাদিন অনেক অনেক আনন্দ আর মজা "
এ ছিল আমার লেখা "পিকলুর ঝুলন ও জুনো" গল্পের কয়েকটি লাইন।
রেডিওতে ভেসে আসা..."কুসুমদোলায় দোলে শ্যামরায়, তমাল শাখে দোলা ঝোলে দুজনে…" ছোট্টবেলায় গানটা গেয়ে মা ঘুম পাড়াত পিকলুকে...
হ্যাঁ, আমরাও পিকলুর মত ইথার তরঙ্গে ভেসে আসা গানের সুর নিয়েই বড় হয়েছি। আমরাও ঝুলন সাজিয়েছি বৈকি।
বরানগরে আমাদের স্কুল থেকে ফেরার পথে প্রতিবছর দেখেছি পিকলুর মত ছোটছোট ছেলেমেয়েদের নিষ্ঠাভরে ঝুলন সাজাতে। আটপৌরে, সাবেকী সব বাড়ির দালানের দ্বার ছিল সকলের জন্য অবারিত। সটান স্কুলের জুতো খুলে হাত ধুয়েই ছুট সেখানে। অপার বিস্ময়ে তাকিয়ে থাকতাম তাদের যোগাড় দেখে। আর কি নিখুঁত সেই সজ্জা! কি নেই সেখানে! সারাবছর ধরে পিকলুরা বুঝি সঞ্চয় করে শুকনোগাছের ডাল, প্লাসটিকের ফুল, একটুকরো ভাঙা আয়না, শুকনো ফলের বীজ, নানা ধরণের নুড়িপাথর, কাঁকর, মোরাম, সাদাবালি, হলদে বালি, পুতুল আরো কত কি! শুধু অপেক্ষা এই বিশেষ দিনটির জন্য। সাতদিন আগে থেকেই শুরু হয়ে যেত মহড়া। কি অপূর্ব সৃষ্টিশীলতা ছিল ছোট বড়ো সকলের মধ্যে! যেন ইন্ডোর গেমের তুমুল আয়োজন। কেউ দিচ্ছে আইডিয়া। কেউ দিচ্ছে অর্থ, বাড়ির বড়োরা দিচ্ছে সাপোর্ট আর কেউ শুধুই বিশ্বাসে মিলায়ে বস্তু।
মায়ের হাত ধরে প্রতিবছর যেতাম বরানগর পাঠবাড়ির ঝুলন-উত্সব দেখতে। দেখবার মত সে ঝুলন! আর মেলা হল উপরি পাওনা। নীল রং গায়ে মাখিয়ে, মাথায় মুকুট পরিয়ে, পরচুলা লাগিয়ে ছোট্ট কৃষ্ণ আর একটি ফুটফুটে মেয়েকে রাধা সাজিয়ে লাইভ ঝুলন মিছিল বেরত আমাদের মফস্বলী শহরে। পাঠবাড়ির মন্দিরের মধ্যে আলাদা আলাদা ঘরের মধ্যে কৃষ্ণের শৈশবজীবনের উল্লেখযোগ্য ঘটনা যেমন তাঁর জন্ম, পুতনাবধ, কালীয়দমন, অঘাসুর-বকাসুর বধ, দধিমন্থনকে পুতুলের মাধ্যমে সাজানো হত। কি পারিপাট্য সেই ঝুলনযাত্রার! ফেরার পথে মেলা থেকে কাচের চুড়ি, মাটির পুতুল আর গরম জিলিপি হত উপরি পাওনা।
মহামিলনের জন্যই বুঝি এমন ঢালাও আয়োজন চলে আসছে সনাতন হিন্দুধর্মে? নয়ত জ্যৈষ্ঠে স্নানযাত্রা, আষাঢ়ে রথযাত্রা, শ্রাবণে ঝুলনযাত্রা, কার্তিকে রাসযাত্রা আর ফাল্গুনে দোলযাত্রার মত এত এত উৎসব মণ্ডিত যাত্রা পালনে সামিল হয় হাজার হাজার মানুষ? রাধাকৃষ্ণতো প্রতীকি।
তবে বছরের বিশেষ তিনটে পূর্ণিমায় শ্রীকৃষ্ণের লীলা বা যাত্রা খুব গুরুত্বপূর্ণ। দোলযাত্রা দোলপূর্ণিমায়, ঝুলনযাত্রা শ্রাবণ পুর্ণিমায় ও রাসযাত্রা রাসপূর্ণিমাতে। এই তিন লীলা তত্ত্বের প্রতীকস্বরূপ বর্ণনা হল যথাক্রমে স্পন্দন, হিন্দোল এবং উল্লাস। ঝুলনযাত্রা বর্ষার লীলা। কিছুটা কৃষিপ্রধান দেশের বাম্পার ফসল ফলানোর আনন্দে। ঠিক কার্তিকের রাসযাত্রা সেই ফসল উঠবে বলে।
বছরের বিশেষ দিনগুলোতে তিথিক্ষণ মেনে কেন আমরা এখনো জমায়েত হই মেলা প্রাঙ্গণে? কেনই বা রথের রশিতে টান দি কিম্বা মুঠোমুঠো ফাগ আবীরে রাঙিয়ে দি বন্ধুর মুখ? আর কেনই বা ঝুলনযাত্রার শেষে রাখী বেঁধে দিয়ে মিষ্টিমুখ করায় আমার বন্ধু ?
রাধাকৃষ্ণ, ঝুলন সাজানো, এসব তো মানুষের মনগড়া। আসল তো মাঝেমাঝে সম্পর্কটাকে ঝালিয়ে নেওয়া। কৃষ্ণ স্বয়ং সেকথাও বুঝেছিলেন। হঠাত হঠাত মথুরা থেকে বৃন্দাবন, সেখান থেকে দ্বারকা ...তাঁর সামাজিক, রাজনৈতিক, কূটনৈতিক ব্যস্তসমস্ত কর্মসূচীর টানাপোড়েনে শ্রীরাধার সঙ্গে সম্পর্কটা মাঝেমাঝেই যায় যায় হয়ে দাঁড়াতো। তাই তো এই উতসবের মধ্যে দিয়ে আবারো মধুর সম্পর্কটা টিঁকিয়ে রাখার চেষ্ট করে যাওয়া। একান্তে দিনকয়েক কাছের করে পাওয়া। দুজনের কত শৃঙ্গার, ভৃঙ্গারে গল্পমুখর দিনরাত এক হয়ে যাওয়া। ঋতুবৈচিত্রের ওঠাপড়ায় মন ভালো করে দেওয়া আর সর্বোপরি মানভঞ্জন করে একটা জম্পেশ গেটটুগেদার।
শ্রাবণ মাসে একাদশী থেকে পূর্ণিমা, এই পাঁচদিনব্যাপী অনুষ্ঠিত হয় বৈষ্ণব ধর্মের অন্যতম এই ঝুলন উৎসব। শ্রাবণী পূর্ণিমাকে একাধারে ঝুলন পূর্ণিমা বা রাখিপূর্ণিমাও বলে। এবছর শ্রাবণ ছিল মলমাস তাই ভাদ্রের পূর্ণিমায় ঝুলনযাত্রা।
তবে অন্য্যন্য যাত্রাগুলির থেকে ঝুলনযাত্রা একটু ভিন্ন। এটি রূপকধর্মী। দোলা বা হিন্দোলনের অর্থ হল সুখ-দুঃখ, বিরহ-মিলনময় মানুষের জীবনের প্রকৃত অর্থই হল ঘড়ির পেন্ডুলামের মত চলমানতায় ভরা। একবার আসবে দুঃখ। তারপরেই সুখ। কখনো বিরহ, কখনো মিলন। কখনো আনন্দ, কখনো বিষাদ। স্থির হয়ে থাকাটা জীবন নয়। এই দোলনার আসা ও যাওয়াটি হল রূপকমাত্র। তাই জন্যেই তো বলে "চক্রবৎ পরিবর্তন্তে সুখানি চ দুখানি চ"
উপনিষদে বলে "আনন্দ ব্রহ্মেতি ব্যজনাত" অর্থাত ব্রহ্ম আনন্দস্বরূপ। কিন্তু তিনি একা সেই কাজ করবেন কি করে? তাইতো তিনি সৃষ্টি করেন বন্ধু-বান্ধব, পিতামাতা, দাসদাসী, ভাইবোন, স্বামী-স্ত্রীর মত সম্পর্কের জালে আবদ্ধ মানুষদের। আর প্রেমের আবাহনে পুরুষ আর প্রকৃতির যৌথ উদ্যোগে গড়ে ওঠে হিন্দোলন বা ঝুলনের মত উত্সব। সম্পর্ক টিকিয়ে রাখার জন্য সৃষ্টিকর্তা প্রজাপিতা ব্রহ্মের এরূপ দায়বদ্ধতা। মানুষ যাতে মানুষকে নিয়ে অহোরাত্র বেঁঁচে থাকে আর সেখানেই ঝুলন নামক মিলনোত্সবের সার্থকতা !
শ্রীমদ্ভাগবতে বলে, বর্ষণমুখর বৃন্দাবন তখন বানভাসি। বর্ষণসিক্ত ধরিত্রী সবুজ। নদীনালা বর্ষার আনন্দে থৈ থৈ। ফসল ফলেছে অঢেল। প্রাণীকুল খলখল কলধ্বনিতে মুখর। পক্ষীকুল মনের আনন্দে সরব তাদের কূজনে। আসন্ন পূর্ণিমার রূপোলী জ্যোত্স্নায় ব্যপ্ত আদিগন্ত চরাচর। এমন প্রাকৃতিক আবাহনে মেতে উঠলেন শ্রীরাধিকা তাঁর দয়িতের সঙ্গে। মানুষের জীবনের মতই মিলনের আর্তি। বহুদিনের অদর্শনের অপ্রত্যাশিত প্রাপ্তি।
তাই বুঝি তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায় যখন বলেন…"মধুর মধুর বংশী বাজে, কোথা কোন কদমতলীতে" নজরুলের গানে বেজে ওঠে, "সখী বাঁধলো বাঁধলো ঝুলনিয়া, নামিল মেখলা মোর বাদরিয়া" আর অতুলপ্রসাদ সেনের ভাষায় সেই একই আবেদন… "শ্রাবণঝুলাতে, বাদল বাতে তোরা, আয়গো কে ঝুলিবি আয়…" আবার রবিঠাকুর বলে ওঠেন এভাবেই…
দে দোল্ দোল্ ।
দে দোল্ দোল্ ।
এ মহাসাগরে তুফান তোল্।
আধুনিক গীতিকার শ্যামল গুপ্তও থেমে থাকেন নি। বলে উঠেছিলেন এভাবেই… "বাঁধো ঝুলনা, তমাল বনে, এসো দুলি দুজনে…”
সত্যিই এ যেন পরাণের সাথে পরাণ বাঁধার চিরন্তন উত্সব! চির বন্ধুতার আবেগে মাখোমাখো সম্মিলন।
ঝুলন নামের সেই মিটিং গ্রাউন্ডের বাস্তব বাগানটি কিন্তু এখন সোশ্যাল মিডিয়ার আঙিনায় আর অগণিত বন্ধুতার হাতছনিতে আমরা প্রতিনিয়তই গড়ে চলেছি ভারচ্যুয়াল ঝুলন। কেউ দেয় ছবি। কেউ বলে বাহ্! কেউ লেখে কবিতা, আমরা বলি অপূর্ব! কেউ আবার লেখে গল্প। আমরা বলি অনবদ্য! এ ও তো সেই সাঁঝ সকালে ঝুলন সাজিয়ে বসে থাকা..কিছুটা সামাজিক হওয়ার আকাঙ্খায়, কিছুটা বন্ধুত্বের আস্বাদ পাওয়ার লোভে। পিকলু ঝুলন সাজায় আর বসে বসে ভাবে কখন রাস্তা দিয়ে লোক যাবে আর আমার সাজানো ঝুলন দেখে বলবে "বাহ্ পিকলু, দারুণ সাজিয়েছো" কেউ বলবে, পিকলু এবার বুঝি কাঠের গুঁড়োতে সবুজ রংটা কম মাখানো হয়েছে? কিম্বা কেউ বলবে, কি পিকলু? পড়াশোনা শিকেয় তুলে শুধু ঝুলন করলেই চলবে?
বহুযুগ আগে থেকে ব্রজভূমি বৃন্দাবনে মহাসমারোহে অনুষ্ঠিত হত ঝুলনযাত্রা। শ্রীকৃষ্ণ এবং শ্রীরাধিকা তাঁদের অষ্টসখী ইন্দুরেখা, চিত্রা, চম্পকলতা, ললিতা, বিশাখা, তুঙ্গবিদ্যা, সুদেবী এবং রঙ্গদেবীর সঙ্গে মেতে উঠেছিলেন ঐ দিনে। রাধাগোবিন্দের প্রচলিত এই ঝুলনযাত্রা চলতে চলতে পাঁচদিনের দিন এসে পড়ে পূর্ণিমায় রাখীবন্ধন যা এখন গ্লোবাল মার্কেটে আরো জনপ্রিয়। ই-কর্মাসের রমরমায় দেশ হতে দেশান্তরে একটিমাত্র মাউসের ক্লিকে রাখী ও সেই সঙ্গে উপহার পৌঁছে যায় বন্ধুর হাতে। এই রাখীবাঁধার চল নিয়ে নানাজনের নানা মত।
পুরাণের কাহিনী অনুযায়ী দেবতারা যখন অসুরদের দৌরাত্ম্যে স্বর্গ থেকে ক্ষমতাচ্যুত তখন দেবরাজ ইন্দ্র দেবগুরু বৃহস্পতির শরণাপন্ন হলেন। ইন্দ্রের স্ত্রী পৌলমী তখন বৃহস্পতির নির্দেশে ইন্দ্রের হাতে বেঁধে দিলেন একগুচ্ছ রাখী। এই রাখী হল রক্ষাকবচ যা দেবরাজকে রক্ষা করবে অসুরদের সকলপ্রকার অত্যাচারের হাত থেকে। শ্রাবণী পূর্ণিমার দিনে রাখী পরার পরেই নাকি দেবরাজ ইন্দ্র সমর্থ হয়েছিলেন অসুরদের পরাস্ত করে স্বর্গরাজ্য উদ্ধ্বার করতে।
ইতিহাস বলে অনেক কাহিনী।
তার মধ্যে বাঙালীদের কাছে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য হল লর্ড কার্জনের বঙ্গভঙ্গ ও রাখীবন্ধনে রবিঠাকুরের অগ্রণী ভূমিকা। ১৯০৫ সালে লর্ড কার্জন বাংলাকে দুভাগ করে বসলেন। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এই বঙ্গভঙ্গের তীব্র বিরোধিতা করে দেশপ্রেমের মন্ত্রে জাতীয়তাবাদকে আরো সোচ্চার করার চেষ্টায় জাতিধর্ম নির্বিশেষে, আপামর জনসাধারণের হাতে রাখী বাঁধলেন। বীজমন্ত্র একটাই। ভ্রাতৃত্বের বন্ধনে দেশবাসীকে একসূত্রে আবদ্ধ করা।
সেইথেকে রাখীপূর্ণিমার দিনটি বাঙালীর মননে, স্মরণে আরো গুরুত্ব পেয়ে আসছে।
রাখী হল সেই রক্ষাবন্ধনের কবচ যা পরিয়ে দিলে কোনো অমঙ্গলের আশঙ্কা থাকেনা। তাই বুঝি মা যশোদা কৃষ্ণের হাতে এই মঙ্গলসূত্র বা ডোর বেঁধে দিতেন। বালগোপাল অরণ্যে, প্রান্তরে গোচারণায় যেতেন সখাসখীদের সঙ্গে, তার যাতে কোনো অনিষ্ট না হয় সেই জন্য। আবার ব্রজবালারা কিশোর কৃষ্ণের হাতে ফুলের রাখী বেঁধে দিতেন প্রেম-প্রীতির বন্ধন হিসেবে। রাখী হল স্নেহ-ভালবাসার বন্ধন দিয়ে মোড়া এক রক্ষাকবচ যা কেবল মাত্র ভাই-বোনের সম্পর্কের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়।
মোগলসম্রাট হুমায়ুনের হাতে রাখী বেঁধেছিলেন রাজপুতানার রাজকন্যা কর্ণাবতী। প্রবল পরাক্রমশালী বাহাদুর শাহর কাছে পরাজিত হয়ে রাজকন্যা খুব ভেঙে পড়লেন। কিন্তু রক্ষাবন্ধনের দিনেও দাদার মতন শুভাকাঙ্খী হুমায়ুনকে রাখী পাঠাতে ভুলে গেলেননা। সৌহার্দ্যপূর্ণ বন্ধনের এই রাখী পাওয়া মাত্রই মোগলসম্রাট হুমায়ুন বুঝলেন ভগিনীসমা কর্ণাবতীর আবেগ। ততক্ষণাত তিনি ভগিনীর সম্মান ও তার রাজ্যের গৌরব বাঁচাতে সসৈন্যে অস্ত্রসজ্জিত হয়ে শত্রুপক্ষকে আক্রমণ করলেন। কর্ণাবতী ততক্ষণে সতী হয়ে অগ্নিশিখায় আত্মাহুতি দিয়েছেন। হুমায়ুন সেখানে পৌঁছেই ভগিনীর জন্য অশ্রুপাত করেন।
কিংবদন্তীর কড়চা বলে, গ্রীক সম্রাট আলেকজান্ডারের ব্যাকট্রিয়ান ধর্মপত্নী রোকসানা পুরুর সঙ্গে তাঁর স্বামীর ঝিলামের তীরে যুদ্ধের প্রাক্কালে প্রতিপক্ষ পুরুর হাতে নিজে রাখী বেঁধে দিয়েছিলেন। পুরুরাজা এই রাখীবন্ধনে তৃপ্ত হয়ে এক লহমায় যুদ্ধাস্ত্র নামিয়ে ফেলেছিলেন। সে যাত্রায় এভাবে রোকসানা তার স্বামী আলেকজান্ডারের প্রাণ রক্ষা করতে পেরেছিল কেবলমাত্র একগুচ্ছ রাখীর জন্য।
এখন রাখীর জন্য পণ্যসংস্কৃতির বাজার বেশ গরম। কত অফারের হাতছানি, কত ডিসকাউন্ট। রাখীর বাম্পার বিজ্ঞাপনে চাপা পড়ে যায় ভ্রাতৃত্ববোধের নরম আবেগ। ঝাঁপিয়ে পড়ে ক্রেতা। মিষ্টি, গয়না, এমনকি উপহারের দোকানেও চলতে থাকে ভীড়। এও যেন ব্যাবসার নতুন এক স্ট্র্যাটেজি। ব্যাবসায় থাকে প্রতিনিয়ত ওঠাপড়া, অনেকটা শেয়ারবাজারের মত। এই বিশেষ দিনগুলোতে আবারো তাকে কিছুটা দুলিয়ে তোলার চেষ্টা। বিক্রির গ্রাফ বাড়তে থাকে ক'টা দিন।
আসলে ঝুলনযাত্রাও এক মিলনোৎসব। ভগবান স্বয়ং এই সময়ে গোলকধামে অবতীর্ণ হন। ভক্তের সঙ্গে মিশে যান লীলার ছলে। দোলনার মত গতিশীল মানুষের জীবন। ঝুলনের দোলনায় অধিষ্ঠিত রাধাকৃষ্ণ তো প্রতীকি মাত্র । তাদের দোলনায় দোলা, তারপরেই পুরনো স্থানে ফিরে তারপর সাম্যাবস্থায় আসা সবটুকুনি মনে করিয়ে দেয় জীবনের মূলমন্ত্র চরৈবেতির কথা।
স্থান-কাল-পাত্রভেদে মানুষের সঙ্গে মানুষের এক নিবিড় সম্পর্কের সমীকরণে জড়িয়ে রয়েছে এই ঝুলন অনন্তকাল ধরে।
আচ্ছা ঝুলন কী মেনে চলে গ্যালিলিওর সূত্র? পেন্ডুলামের সাম্যাবস্থা থেকে পর্যায়ক্রমে একবার ডাইনে ও একবার বাঁয়ে যাওয়া, আবারো সাম্যাবস্থায় ফেরত আসা...এও তো দোলনার মত। ঝুলনের দোলনায় অধিষ্ঠিত রাধাকৃষ্ণ তো ভরযুক্ত পেন্ডুলামের প্রতীক। এই দোলনার টাইমপিরিয়ডও কী পেন্ডুলামের গতির মত? হতেই হবে কারণ দৈর্ঘ্য বাড়ালে সে অনেক কম সময় নেবে দুলতে। আর দৈর্ঘ্য ছোট হলে সে তাড়াতাড়ি দুলবে। আর সেটাই তো পেন্ডুলামের জীবনদর্শন। রাধাকৃষ্ণের মধ্যিখানে কোথাও নিহিত পেন্ডুলাম বা ববের সেন্টার অফ গ্র্যাভিটি। ধরা যাক দোলনা ঝুলছে যেখান থেকে সেই ওপর থেকে ঐ সেন্টার অফ গ্র্যাভিটির দৈর্ঘ্যটি হল পেন্ডুলামের দৈর্ঘ্য ‘L’ আর মাধ্যাকর্ষণজনিত ধ্রুবক ‘g' সেটির মানও একই, পৃথিবীর সর্বত্র…বৃন্দাবন থেকে নবদ্বীপে। তাহলে নিশ্চয়ই ঝুলনও মেনে চলে গ্যালিলিওর সূত্র যেখানে স্থান-কাল-পাত্রভেদে টাইমপিরিয়ড ‘T’, দৈর্ঘ্য ‘L’ অদ্ভূত এক সম্পর্কের সমীকরণে জড়িয়ে আছে অনন্তকাল ধরে।
গণিতজ্ঞ গ্যালিলিও আবার একজন দার্শনিক। আর দার্শনিক উপলব্ধি যখন তখন এভাবেও ভাবিনা কেন? মন যখন ক্ষুদ্র তখন মনের চাঞ্চল্য দ্রুত ঠিক আমাদের পিকলুর মত আর সেই মনের উপলব্ধি যখন গভীরে প্রসারিত তখন তার চাঞ্চল্য শ্লথ ঠিক আমাদের মত পরিণত মানুষের যেমন হয় আর কি। কারণ গ্যালিলিও বলেছেন পেন্ডুলামের দৈর্ঘ্য হল টাইম পিরিয়ডের বর্গের সঙ্গে সমানুপাতিক। এই বুঝি ঝুলনের বৈজ্ঞানিক জীবনদর্শন।
কালের পেন্ডুলাম কী আর স্থির থাকে? পেন্ডুলাম স্থির থাকা মানে তো ঘড়ি বন্ধ হয়ে যাওয়া। চলাই তার কাজ। চলাই জীবন। আজ সারাবিশ্বের যা পরিস্থিতি তাতে মনে হয় বারেবারে ফিরে আসুক এই মহামিলনের উৎসব! আরও আরও মেতে উঠুক মানুষ এই বন্ধুদিন পালনে।
শুভ ঝুলনযাত্রা! শুভ রাখীপূর্ণিমা!
Yorumlar