লড়াইয়ের মাঠে ইষ্ট ইলিস যেমন আদরের, তেমনই মোহন চিংড়িও আবেগের। পাবলিক ভোটে দুপক্ষই এগিয়ে। আসুন পাঠকের আবেগ চিংড়ি চর্চায় মেতে উঠি আরেকবার। জবরদস্ত রেসিপি সম্ভার নিয়ে থাকছেন সুস্মিতা মিত্র এবং সঙ্গে চর্চায় সমীর চট্টোপাধ্যায়...

চিংড়ি খেতে ভালোবাসেন না এমন লোক খুঁজে পাওয়া মুশকিল! দেশ বিদেশী সমস্ত রকম ঘরানাতেই রয়েছে চিংড়ির হাজার হাজার রেসিপি। উৎসব অনুষ্ঠান হোক কিম্বা ছুটির দিন, অতিথি আপ্যায়ন অথবা পটলাক পার্টি সবেতেই মানানসই চিংড়ি। কুচো, বাগদা অথবা গলদা, কাটা ছাড়া এহেন সুস্বাদু এবং নির্বিবাদী মাছ আর একটাও খুঁজে পাবেন'না একথা হলফ করে বলতে পারি! আজ রইলো চিংড়ির ২০ টি তাকলাগানো রেসিপি। বানিয়ে ফেলুন আপনার রান্নাঘরে..

দুষ্টু বিশ্বাস
গন্ধরাজ বাগদা
কী কী লাগবে
বাগদা চিংড়ি ৫০০ গ্ৰাম
গন্ধরাজ লেবুর রস
গন্ধরাজ লেবুর জেষ্ট-- ১চা চামচ
গোলমরিচের গুঁড়ো -- ১চা চামচ
গন্ধরাজ লেবুর পাতা -৩/৪টে
সেদ্ধ পেঁয়াজ বাটা -- ৩টেবিলচামচ
রসুন বাটা -১টেবিলচামচ
আদা বাটা --১টেবিলচামচ
টকদই --১কাপ
সাদাতেল-- হাফকাপ
চেরা কাঁচালঙ্কা -- ৫/৬টা

কীভাবে বানাবেন
চিংড়িতে নুন, গোলমরিচের গুঁড়ো, গন্ধরাজ লেবুর জেষ্ট মাখিয়ে রাখুন ১ ঘন্টা।
কড়াইতে সাদাতেল গরম করে তাতে চিংড়ি সাঁতলে নিন।
এবার তুলে নিয়ে ঐ তেলে রসুন বাটা দিয়ে নাড়াচাড়া করে সেদ্ধ পেঁয়াজ বাটা দিয়ে কষতে হবে, তেল ছাড়লে ফেটানো টকদই দিয়ে ভালো ভাবে নেড়ে মিশিয়ে আবারও তেল ছাড়া পর্যন্ত কষুন।
এবার চিংড়ি দিয়ে কিছুক্ষণ রান্নাকরে ১কাপ উষ্ণ জল দিন গ্ৰেভি হবার মতো।
ফুটে এলে গোলমরিচের গুঁড়ো ছড়িয়ে গ্যাস বন্ধ করুন।
এবার ওপর থেকে গন্ধরাজ লেবুর রস,জেষ্ট আর পাতা মিশিয়ে ঢেকে রাখুন মিনিট পনেরো তারপর গরম ভাত অথবা পোলাও দিয়ে পরিবেশন করুন গন্ধরাজ বাগদা।

চিংড়ি দিয়ে গাঠীকচুর ডাল
কী কী লাগবে
গাঠীকচু অথবা মুখীকচু- ২৫০গ্ৰাম
ছোটো চিংড়ি -- ১০০গ্ৰাম
কালোজিরে -- ১চিমটে
মেথি -- ১চিমটে
তেজপাতা -- ১টা
ধনেপাতা --১মুঠো
সরষের তেল --২চা চামচ
নুন-- পরিমাণ মতো
হলুদ -১চা চামচ
জিরের গুঁড়ো--১টেবিলচামচ
লঙ্কার গুঁড়ো --১চা চামচ
কীভাবে বানাবেন
গাঠীকচু খোসা ছাড়িয়ে নিয়ে নুন দিয়ে কচলে ধুয়ে নিয়ে ভালো ভাবে সেদ্ধ করে নিতে হবে।
সেদ্ধটা এমন হতে হবে যাতে খুব সহজে গলে যায়, এমনিতেই গাঠী কচু পিচ্ছিল স্বভাবের হওয়ার দরুন খুব তাড়াতাড়ি সেদ্ধ হয়ে যায়।
চিংড়ি ও পরিস্কার করে ধুয়ে নিয়ে নুন হলুদ মাখিয়ে রাখতে হবে।
একটা বাটিতে জিরের গুঁড়ো, লঙ্কার গুঁড়ো ,নুন হলুদ একটু জল দিয়ে ভিজিয়ে রাখতে হবে।
এবার প্যানে সরষের তেল গরম করে চিংড়ি দিয়ে হালকা ভেজে তুলে রাখতে হবে।
এখন ঐ তেলে তেজপাতা, কালোজিরে,মেথি ফোঁড়ন দিয়ে ভিজিয়ে রাখা মশলা দিয়ে কষিয়ে সেদ্ধ করা গাঠীকচু দিতে হবে।
হাতা দিয়ে একটু ভেঙে ভেঙে দিয়ে ভাজা চিংড়ি আর এককাপ মতো জল দিয়ে একটু ফুটিয়ে নিয়ে ধনেপাতা কুচি ছড়িয়ে নামিয়ে নিতে হবে।
গরম ভাত দিয়ে পরিবেশন করুন গাঠীকচুর ডাল।

বরিশালী চিংড়ি ভাপা
কী কী লাগবে
বাগদা চিংড়ি-- ৫০০গ্ৰাম
দোমালা নারকেল কোরা-- ১কাপ
সাদা + কালো সরষে বাটা--২ টেবিলচামচ
সরষের তেল --২ টেবিলচামচ
নুন -স্বাদমতো
হলুদ-- ২ চা চামচ
খোয়াক্ষীর --১ টেবিলচামচ
কীভাবে বানাবেন
চিংড়ি র খোসা ছাড়িয়ে পিঠের কালো সুতো ফেলে পরিস্কার করে ধুয়ে নিন।
এবার সমস্ত উপকরণ একসঙ্গে নিয়ে চিংড়ির সঙ্গে মিশিয়ে নিন।
একটা টিফিন বক্সে ভরে নিয়ে ভাপিয়ে নিলেই রেডি বরিশালী চিংড়ি ভাপা।

কুচো চিংড়ির বড়া
কী কী লাগবে
কুচো চিংড়ি - ২৫০ গ্রাম
মসুর ডাল বাটা - ১/২ কাপ
চালের গুঁড়ো - ১ টেবিল চামচ
কালো জিরে- ১/২ চা চামচ
আদা রসুন বাটা - ১ চা চামচ
কাঁচা লঙ্কা কুচি - স্বাদমতো
নুন পরিমান মতো
চিনি ১/২ চা চামচ
হলুদ ১/২ চা চামচ
সরষের তেল পরিমাণমতো

কীভাবে বানাবেন
চিংড়ি মাছ পরিষ্কার করে বেছে ধুয়ে নুন হলুদ মাখিয়ে নিন।
আগে থেকে ভিজিয়ে রাখা মুসুর ডাল বেটে নিন।
এবার একটি পাত্রে চিংড়ি মাছ, ডাল বাটা, চাল গুঁড়ো, কালো জিরে, কাঁচা লঙ্কা কুচি, আদা রসুন বাটা, নুন, চিনি, হলুদ - সব এক সাথে ভালো করে মেখে নিন।
কড়াইতে সরষের তেল গরম করে, কম মাঝারি আঁচে ছোটো ছোটো বড়ার আকারে ছেড়ে উল্টে পাল্টে লাল করে ভেজে তুলুন। আঁচ বেশি করলে বড়ার ভেতর কাঁচা থাকতে পারে।
গরম ভাত, খিচুড়ি বা বিকেলে চা এর সাথে পরিবেশন করুন।

সুতপা দে
শাপলা চিংড়ি
কী কী লাগবে
১ আঁটি শাপলা ( ৫০০ গ্রামের মত )
১ কাপের থেকে কম পরিমাণ ছোট চিংড়ি
১/৩ কাপ তেল
৪-৫ টি কাঁচা মরিচ
১/৩ কাপ পেঁয়াজ কুঁচি
১ চা চামচ পেঁয়াজ বাটা
১ চা চামচ আদা রসুন বাটা
১/২ চা চামচ হলুদের গুঁড়ো
১/২ চা চামচ মরিচের গুঁড়ো
১/২ চা চামচ জিরা গুঁড়ো
১/৪ চা চামচ ধনে গুঁড়ো
১/৪ কাপ ধনেপাতা কুঁচি
লবণ স্বাদমত
জল পরিমাণমত
কীভাবে বানাবেন
প্রথমে কড়াইতে তেল গরম করতে হবে। আঁচ মোটামোটি বাড়ানোই থাকবে।
এরপর পেঁয়াজ আর লঙ্কা হালকা ভেজে নিতে হবে।
এরপর দিতে হবে আদা, রসুন এবং পেঁয়াজ বাটা হালকা ভেজে নিতে হবে।
এরপর হলুদ, জিরা, ধনে, লঙ্কা গুঁড়ো এবং লবণ দিতে হবে।
সামান্য জল দিয়ে এই মশলাটিকে কষিয়ে নিতে হবে মৃদু আঁচে।
এখন চিংড়ীগুলো দিয়ে দিতে হবে।
ঢেকে রান্না করুন ১৫ মিনিট।
এবার ধনেপাতা কুচি ছড়িয়ে গরম গরম পরিবেশন করুন।

নারকেল চিংড়ি
কী কী লাগবে
৪৫০ গ্রাম চিংড়ি মাছ
১ টা নারকেল কোরা
১ টা পেঁয়াজ কুচি
১ চা চামচ আদা বাটা
১ চা চামচ রসুন কুচি
১ চা চামচ লাল লঙ্কার গুঁড়ো
১ চা চামচ হলুদ গুঁড়ো
১ চা চামচ জিরা
১ টা তেজপাতা
১/২ চা চামচ গরম মসলা
স্বাদ অনুযায়ী নুন ও চিনি
প্রয়োজন অনুযায়ী তেল
কীভাবে বানাবেন
চিংড়ি মাছ ধুয়ে নুন ও হলুদ গুঁড়ো দিয়ে তেল গরম করে তাতে গোটা জিরে তেজপাতা ফোঁড়ন দিন।
পেঁয়াজ কুচি দিয়ে ভালো করে ভাজুন আদা রসুন বাটা দিয়ে নাড়াচাড়া করে মাছ দিয়ে দিন নাড়াচাড়া করে নিন।
নারকেল কোরা দিয়ে ভালো করে ভাজুন লাল লঙ্কার গুঁড়ো দিয়ে মিশিয়ে নিন।
গরম মসলা গুঁড়ো দিয়ে মিশিয়ে নিন।
চিনি ও গরম মসলা গুঁড়ো দিয়ে মিশিয়ে নিন এবং পরিবেশন করুন।

চিংড়ি মাছ ও ফুলকপির রসা
কী কী লাগবে
৪০০ গ্রাম চিংড়ি মাছ
১ টা ফুলকপি
২ টো আলু
১ টা টমেটো
২ টো পেঁয়াজ
৫-৬ টা কাঁচা লঙ্কা
২ চা চামচ রসুন বাটা
১ চা চামচ আদা বাটা
১ চা চামচ কাশ্মীরি লঙ্কা গুঁড়ো
১ টুকরো দারচিনি
২ টো ছোট এলাচ
দেড় চা চামচ হলুদের গুঁড়ো
স্বাদমতো নুন ও চিনি
প্রয়োজন অনুযায়ী তেল
কীভাবে বানাবেন
সব উপকরণ একজায়গায় করে কেটে নিতে নিতে হবে আর চিংড়ি মাছ ধুয়ে খোসা ছাড়িয়ে পরিষ্কার করে নিতে হবে।
কড়াতে তেল গরম হলে ফুলকপি ভেজে তুলে নিতে হবে।
এবার ঐ তেলের মধ্যে গোটা গরম মসলা ফোড়ন দিয়ে পেঁয়াজ কুচি দিয়ে ভাজতে হবে।
পেঁয়াজ একটু লাল হলে তাতে লঙ্কা ও রসুন বাটা দিয়ে নাড়তে হবে।
একটু ভাজা হলে তারপর ওর মধ্যে চিংড়ি মাছ ভাজা ফুলকপি ও আলু দিয়ে ভালো করে নাড়তে হবে।
তারপর লঙ্কা ও হলুদের গুঁড়ো দিয়ে ভালো করে কষাতে হবে।
তেল ছাড়তে শুরু করলে ওর মধ্যে স্বাদমত নুন ও চিনি দিয়ে পরিমান মতো জল দিয়ে একটু ফুটতে দিতে হবে।
ঝোল ফুটে ঘন হলে নামিয়ে নিতে হবে।

কচুপাতা চিংড়ি
কী কী লাগবে
কচুপাতা: ১০টি
কুচো চিংড়ি: ৫০০ গ্রাম
সর্ষের তেল: ২০০ গ্রাম
সর্ষে বাটা: ৩ টেবিল চামচ
কাজুবাদাম: ২ টেবিল চামচ
পোস্ত বাটা : ৪ টেবিল চামচ
নারকেল কোরা: এক কাপ
কাঁচালঙ্কা: ৫ টি
নুন ও চিনি: স্বাদমতো
হলুদ গুঁড়ো: দু’চা চামচ
পাতিলেবু: ১ টি
কীভাবে বানাবেন
কচুপাতা ধুয়ে কুচি করে কেটে নুন ও লেবু মেশানো গরম জলে হালকা ভাপিয়ে নিতে হবে।
এ বার কচুপাতাগুলি ছেঁকে জল ফেলে দিন। কড়াইতে আবারও তেল গরম করে নিন।
এ বার চিংড়ি মাছে নুন, হলুদ মাখিয়ে হালকা করে ভেজে নিন।
এর পর কাঁচালঙ্কা বাটা, কাজুবাদাম বাটা, পোস্ত বাটা এবং সর্ষে বাটা দিয়ে চিংড়ি সেদ্ধ না হওয়া পর্যন্ত নাড়তে থাকুন।
স্বাদমতো নুন, চিনি দিয়ে নারকেল কোরা মিশিয়ে দিন। নামানোর মিনিট দুয়েক আগে ভাপিয়ে রাখা কচুপাতা কুচি দিয়ে দিতে হবে।
গ্যাসের আঁচ বন্ধ করে এক চামচ সর্ষের তেল ছড়িয়ে রান্নাটি ঢেকে রাখুন। গরম ভাতের সঙ্গে পরিবেশন করুন কচুপাতা চিংড়ি।

চিংড়ী মাছের মাথার বড়া
কী কী লাগবে
২ কাপ চিংড়ি মাথা
১ কাপ পেঁয়াজ কুচি
৩-৪ টা কাঁচা লঙ্কা কুচি
১ চা চামচ আদা বাটা
১ চা চামচ রসুন বাটা
১ চা চামচ রসুন কুচি
১ চা চামচ ধনে আর জিরার গুঁড়ো
১/২ চা চামচ গরম মশলা
২ চা চামচ ময়দা
১ চা চামচ বেসন
স্বাদমতো লবন
প্রয়োজন অনুযায়ী ধনেপাতা কুচি
পরিমাণ মত ভাজার জন্য তেল
কীভাবে বানাবেন
একটা বড় বাটিতে চিংড়ি মাছের মাথা গুলো নিয়ে বারবার খুব ভাল করে জল দিয়ে ধুয়ে নিন।
একটা মিহি জালের চালনিতে মাথাগুলো ছড়িয়ে দিয়ে মিনিট পাঁচেক রেখে দিন।
এবার মাথাগুলো মিহি করে শিলপাটায় বেটে নিন।
একটা বাটিতে উপরের সব কিছু পরিমান মতো দিয়ে ভালো করে মেখে নিন।
প্যানে তেল গরম করে তার মধ্যে চিংড়ির মাথার মিশ্রণটা অল্প অল্প করে দিয়ে চ্যাপ্টা বড়ার মতো করে ভেজে নিন।

পারমিতা নন্দী
রসুন পোস্ত চিংড়ি
কী কী লাগবে
পোস্ত দেড়শ গ্রাম
চিংড়ি ( বড়) – ১০টি
রসুন (বড়) – ১ টি (আস্ত কোয়া)
লাল লঙ্কা – ৩টি (কুঁচি করে কাটা)
কাঁচা লঙ্কা – ৩টি (কুঁচি করে কাটা)
শুকনো লঙ্কা অপশনাল
টমেটো – ১টি (কুঁচি করে কাটা)
চিনি স্বাদমতো
লবণ – স্বাদমত
সরিষার তেল – পরিমাণমতো
কীভাবে বানাবেন
প্রথমেই চিংড়ি ভালভাবে পরিষ্কার করে ধুয়ে জল ঝরিয়ে নিন।
একটি পাত্রে তেল গরম করার জন্য আঁচে বসান।
তেল গরম হয়ে এলে এতে রসুন দিন।
কিছুক্ষণ পর এতে চিংড়ি, পোস্ত বাটা ও সামান্য জল দিয়ে নেড়ে দিন।
আঁচ কমিয়ে দিয়ে জল না শুকানো পর্যন্ত রান্না করুন।

ডিম চিংড়ির চপ
কী কী লাগবে
খোসা ছাড়ানো বড় চিংড়ি ২ কাপ
আদাবাটা আধা চা চামচ
মরিচ গুঁড়া আধা চা চামচ
গোলমরিচ গুঁড়ো আধা চামচ
পিঁয়াজকুচি ২ টেবিল চামচ
রসুন কুচি ১ চা চামচ
কাঁচামরিচ কুচি আধা চা চামচ
পুদিনা পাতা কুচি ১ চা চামচ
ডিম ১ টি, সেদ্ধ ডিম চারটি সেদ্ধ ডিমের ভেতর থেকে হলুদ অংশটি বার করে নিতে হবে।
ময়দা ১ টেবিল চামচ
লবণ স্বাদমতো,
তেল পরিমাণমতো
কীভাবে বানাবেন
প্রথমে চিংড়ি খোসা ছাড়িয়ে ধুয়ে নিতে হবে।
এরপর একটি পাত্রে সব মসলা, লবণ, পিঁয়াজ, রসুন, কাঁচামরিচ এবং পুদিনাপাতা কুঁচি দিয়ে ভালো করে মিশিয়ে নিতে হবে।
এই মিশ্রণটি অল্প তেলে নাড়াচাড়া করে পুর তৈরি করে নিতে হবে।
এরপর এই পুরটি সেদ্ধ ডিমের গর্তের মধ্যে ভরে ডুবো তেলে ভাজতে হবে।
তার আগে ডিম আর ময়দার গোলায় ডুবিয়ে নিতে হবে।
মিশ্রণটি আঠালো করার জন্য ময়দা দিলে ভালো হবে।
ভেজে তুলে সসের সঙ্গে গরম গরম পরিবেশন করুন মজাদার ডিম চিংড়ির চপ।

চিংড়ির পাকোড়া
কী কী লাগবে
কুচো চিংড়ি - ২৫০ গ্রাম
মসুর ডাল বাটা - ১/২ কাপ
চালের গুঁড়ো - ১ টেবিল চামচ
কালো জিরে- ১/২ চা চামচ
আদা রসুন বাটা - ১ চা চামচ
কাঁচা লঙ্কা কুচি - স্বাদমতো
নুন
চিনি
হলুদ
সরষের তেল
কীভাবে বানাবেন
চিংড়ি মাছ পরিষ্কার করে বেছে ধুয়ে নুন হলুদ মাখিয়ে নিন।
আগে থেকে ভিজিয়ে রাখা মুসুর ডাল বেটে নিন।
এবার একটি পাত্রে চিংড়ি মাছ, ডাল বাটা, চাল গুঁড়ো, কালো জিরে, কাঁচা লঙ্কা কুচি, আদা রসুন বাটা, নুন, চিনি, হলুদ - সব এক সাথে ভালো করে মেখে নিন।
কড়াইতে সরষের তেল গরম করে, কম মাঝারি আঁচে ছোটো ছোটো বড়ার আকারে ছেড়ে উল্টে পাল্টে লাল করে ভেজে তুলুন।
আঁচ বেশি করলে বড়ার ভেতর কাঁচা থাকতে পারে।
গরম ভাত, খিচুড়ি বা বিকেলে চা এর সাথে পরিবেশন করুন।

চিংড়ির দোপেঁয়াজা
কী কী লাগবে
বড় চিংড়ি মাছ ৮ থেকে ১০টি,
পেঁয়াজ কুচি দুই কাপ,
সয়াবিন তেল ৩/৪ কাপ,
লবন স্বাদ মতো,
হলুদ গুঁড়ো আধ চামচ,
রসুন বাটা আধ চামচ,
জিরা বাটা ১/৪ চামচ,
কাঁচা লঙ্কা চার থেকে পাঁচটি,
লঙ্কা গুঁড়ো এক চা চামচ
কীভাবে বানাবেন
প্রথমে চিংড়ি মাছের খোসা ছাড়িয়ে, কেটে ভালো করে ধুয়ে নিন।
তারপর পেঁয়াজগুলো ভালো করে ধুয়ে কুচি কুচি করে কেটে নিন।
এবার প্যান বসিয়ে তেল গরম করুন।
তেল গরম হলে তাতে পেঁয়াজ দিয়ে ভেজে নিন।
পেঁয়াজ হালকা বাদামি হলে তাতে দুটি থেকে তিনটি কাঁচা লঙ্কা কেটে দিয়ে দিন।
পেঁয়াজ ও লঙ্কা ভাজা হয়ে গেলে কেটে রাখা চিংড়িগুলো দিয়ে দিন এর সঙ্গে হলুদ, লবণ ও জিরা বাটা দিয়ে দিন।
এরপর এক কাপ পরিমান জল দিয়ে ভালো করে নেড়ে মাঝারী আঁচে ১৫ থেকে ২০ মিনিট ঢেকে রান্না করুন।
২০ মিনিট পরে জল শুকিয়ে গেলে নামিয়ে পরিবেশন করুন মজাদার চিংড়ির দোপেয়াজা।
অনেকেই বেরেস্তা করে ওপর দিকে ছড়িয়ে দিতে পারেন।

সুস্মিতা চক্রবর্তী
ওলকপি চিংড়ি
কী কী লাগবে
২ টো ওল কপি
১৫০ গ্রাম চিংড়ি মাছ
১ টা ছোট টমেটো কুচি
৩ টে কাঁচা লঙ্কা বাটা
১ মুঠো মটরশুঁটি
১ চা চামচ আদা বাটা
১ চা চামচ ধনে জিরা বাটা
১ টেবিল চামচ হলুদ গুঁড়ো
স্বাদ অনুযায়ী নুন
১ চিমটি চিনি
৩ টেবিল চামচ সর্ষের তেল
১/২ চা চামচ গোটা জিরা
কীভাবে বানাবেন
প্রথমে ওল ছোট ছোট করে কেটে ধুয়ে কুকারে ভালো করে ভালো করে সেদ্ধ করে নিতে হবে।
কড়াতে তেল দিয়ে জিরা ফোড়ন দিয়ে টমেটো সমস্ত মসলা চিংড়ি মাছ দিয়ে ভালো করে কষিয়ে নিতে হবে।
কষানো হয়ে গেলে ওল দিয়ে ভালো করে মিশিয়ে পাঁচ মিনিট চাপা দিয়ে রাখতে হবে।
৫ মিনিট বাদে ঢাকা খুলে নামিয়ে নিতে হবে।

মোচা চিংড়ির ঘন্ট
কী কী লাগবে
১/২ মোচা
১ টা আলু
১০০ গ্রাম ছোট চিংড়ি মাছ
১/২ চা চামচ হলুদ গুঁড়ো
১.৫ চা চামচ ধনে জিরে গুঁড়ো
১ চা চামচ আদা কাঁচা লঙ্কা বাটা
১/২ চা চামচ লাল লঙ্কার গুঁড়ো
১/৪ চা চামচ গরম মশলা গুঁড়ো
১/২ নারকেল কোরা
২ টেবিল চামচ নারকেল কুচি
১/২ চা চামচ জিরা
১ টা তেজপাতা
১ টা শুকনো লঙ্কা
২ টো লবঙ্গ
১ টা ছোট এলাচ
১ টুকরো দারচিনি
স্বাদ মত নুন ও চিনি
পরিমাণ মত তেল ও ঘি
কীভাবে বানাবেন
চিংড়ি মাছ ধুয়ে নুন হলুদ দিয়ে ভালো করে ভাজুন এবং তুলে রাখুন।
মোচা কুচি করে কেটে নিন এবং নুন হলুদ দিয়ে ভালো করে সিদ্ধ করে নিন।
তেল গরম করে তাতে জিরা তেজপাতা গোটা গরম মশলা ও শুকনো লঙ্কা ফোড়ন দিয়ে দিন।
নারকেল কুচি দিয়ে ভালো করে ভাজুন এবং আলু দিয়ে দিন নুন হলুদ দিয়ে ভালো করে ভাজুন।
এবার ধনে জিরে গুঁড়ো আধা কাঁচা লঙ্কা বাটা দিয়ে ভালো করে কষিয়ে নিন, লাল লঙ্কার গুঁড়ো মিশিয়ে নিন এবং ভাপানো মোচা দিয়ে ভালো করে কষিয়ে নিন।
সব শেষে চিংড়ি মাছ দিয়ে দিন এবং চিনি, ঘি ও গরম মশলা গুঁড়ো মিশিয়ে নামিয়ে নিন।

লাউ কুমড়া চিংড়ির ঘন্ট
কী কী লাগবে
১/৪ লাউ
২০০ গ্রাম চিংড়ি
১ ছোট ফালি কুমড়ো
১/২ চা চামচ আদা বাটা
১.৫ চা চামচ ধনে জিরে গুঁড়ো
১/৪ চা চামচ হলুদ গুঁড়ো
১/২ চা চামচ লাল লঙ্কার গুঁড়ো
১/৪ নারকেল কোরা
২টো কাঁচালঙ্কা কুচি
১ চা চামচ জিরা
১ টা তেজপাতা
১/৪ চা চামচ গরম মশলা গুঁড়ো
স্বাদ মত নুন ও চিনি
পরিমাণ মত তেল ও ঘি
কীভাবে বানাবেন
আগে লাউ ও কুমড়ো কুচি করে কেটে নিন এবং মাছ ধুয়ে নুন হলুদ মাখিয়ে নিন।
এবার তেল গরম করে তাতে মাছ দিয়ে দিন এবং ভাল করে ভাজুন, তুলে রাখুন।
একটি বাটিতে সব মশলা জল দিয়ে গুলে রাখুন। তেলের মধ্যে জিরা তেজপাতা ও কাঁচালঙ্কা কুচি দিয়ে নেড়ে নিন।
লাউ কুমড়া টুকরো দিয়ে দিন এবং ভাল করে ভাজুন নুন হলুদ দিয়ে, ঢাকা দিয়ে দিন।
লাউ কুমড়া নরম হয়ে গেলে আদা বাটা ও গুলে রাখা মশলা দিয়ে দিন কষিয়ে নিন এবং মাছ দিয়ে ভালো করে মিশিয়ে আঁচ কমিয়ে দিন।
নারকেল কোরা দিয়ে ভালো করে মিশিয়ে নিন এবং গায়ে গায়ে হলে ঘি ও গরম মশলা গুঁড়ো মিশিয়ে নামিয়ে নিন।

চিংড়ি ভাঁপা
কী কী লাগবে
২ টো গলদা চিংড়ি
২ চা চামচ সর্ষে
২ চা চামচ পোস্ত দানা
১/৪ কাপ নারকেল কোরা
২-৩ টে কাঁচা মরিচ
১/২ চা চামচ হলুদ গুঁড়ো
১/৪ কাপ নারকেল দুধ
স্বাদ মত নুন ও চিনি
পরিমাণ মত তেল
কীভাবে বানাবেন
চিংড়ি মাছ ধুয়ে নুন হলুদ মাখিয়ে নিতে হবে এবং তেল গরম করে ভাজতে হবে।
নারকেল সরষে পোস্ত কাঁচালঙ্কা দিয়ে সাথে বেটে নিতে হবে এবং মাছ হালকা ভাজা হলেই বাটা মশলাটা দিয়ে দিতে হবে।
দু এক মিনিট নাড়াচাড়া করে নারকেলের দুধ দিয়ে ভালো করে মিশিয়ে আঁচ কমিয়ে ভাপাতে হবে।
মাছ নরম হলে সামান্য চিনি দিয়ে নামিয়ে নিতে হবে।

সরষে পোস্ত দিয়ে কচুর লতি চিংড়ি
কী কী লাগবে
১ আঁটি কচুর লতি
১০০ গ্রাম চিংড়ি
১ টা পেঁয়াজ কুচি
৩-৪ কোয়া রসুন কুচি
দেড় চা চামচ সর্ষে
১ চা চামচ পোস্তদানা
৩ টে কাঁচা লঙ্কা
১/৪ নারকেল কোরা
১/২ চা চামচ হলুদ গুঁড়ো
১/২ চা চামচ কালো জিরা
স্বাদ মত নুন ও চিনি
পরিমাণ মত তেল
কীভাবে বানাবেন
কচুর লতি আশ ছাড়িয়ে টুকরো করে কেটে নিন এবং চিংড়ি মাছ ধুয়ে নুন হলুদ দিয়ে ভালো করে ভাজুন, তুলে রাখুন।
কড়াই এ তেল গরম করে তাতে কালো জিরা ও কাঁচা লঙ্কা কুচি দিয়ে নেড়ে পেঁয়াজ কুচি ও রসুন কুচি দিয়ে ভালো করে ভাজুন, এবং লতি দিয়ে দিন।
নুন হলুদ দিয়ে ভালো করে ভাজুন এবং ঢাকা দিয়ে দিন, আঁচ কমিয়ে দিন।
সেদ্ধ করে নিন এবং সর্ষে পোস্ত, কাঁচা লঙ্কা কুচি ও নারকেল কোরা বেটে নিন।
লতি সেদ্ধ হয়ে গেলে বাটা মশলা দিয়ে দিন এবং চিংড়ি মাছ দিয়ে মিশিয়ে নিন।
স্বাদ মত নুন ও চিনি দিয়ে ভালো করে কষিয়ে নিন এবং পরিবেশন করুন।

সঞ্চিতা দাস
সরষে পোস্ত চিংড়ি
কী কী লাগবে
চিংড়ি মাছ
নুন
হলুদ গুঁড়ো
সাদা সরষে
কালো সরষে
পোস্ত
কাঁচালঙ্কা
সরষের তেল
কীভাবে বানাবেন
প্রথমেই পরিমান মতো চিংড়ি মাছ নিয়ে তাতে আন্দাজমতো নুন, ১/৪ চা চামচ হলুদ গুঁড়ো দিয়ে ভালো করে মাখিয়ে নিতে হবে।
এরপর কড়াইতে কিছুটা সরষের তেল গরম করে চিংড়ি মাছ গুলো দিয়ে ভেজে নিতে হবে।
তারপর একটি মিক্সিং জারে ১ চামচ সাদা সরষে,১ চা চামচ কালো সরষে, ২ চা চামচ পোস্ত, ২ টো কাঁচা লংকা, সামান্য নুন দিয়ে ভালো করে পেস্ট করে নিতে হবে।
তারপর মাছ ভাজার তেলের মধ্যে ১ চামচ সরষের তেল দিয়ে ১ চামচ কালোজিরে, কাঁচা লংকা দিয়ে কিছুক্ষণ নাড়াচাড়া করে নিতে হবে।
এরপর বেটে রাখা মসলা দিয়ে ভালো করে মিশিয়ে নিতে হবে।
তারপর স্বাদমতো নুন ও সামান্য জল, সামান্য চিনি, ভেজে রাখা মাছ, চেরা কাঁচা লংকা দিয়ে ভালো করে ফুটিয়ে ৫ মিনিট রান্না করে নিতে হবে।
উপর দিয়ে কাঁচা সরষের তেল ছড়িয়ে নামিয়ে নিলেই একেবারে তৈরি ‛সর্ষে পোস্ত চিংড়ি’।

থোড়-চিংড়ি
কী কী লাগবে
দু ফালি কাঁঠালি কলার থোড়,
মাঝারি সাইজের চিংড়ি ১০০ গ্রাম
নারকেলকোরা আধ কাপ,
আদা বাটা আধ চা চামচ,
পোস্ত বাটা ১ টেবিল চামচ,
চার পাঁচটা কাঁচা লংকা,
অল্প হলুদের গুঁড়ো
নুন চিনি প্রয়োজনমতো,
পাঁচফোড়ন আধ চা চামচ
কীভাবে বানাবেন
থোড় আলুভাজার মত সরু সরু করে কেটে নুন হলুদ মাখিয়ে চটকে নিন।
চিংড়ি মাছ খোসা ছড়িয়ে ধুয়ে ভেজে রাখুন।
কড়াইতে সর্ষের তেল গরম করে পাঁচফোড়ন আর কাঁচা লংকা ফোড়ন দিন।
চটকানো থোড় ঢেলে একটু নাড়াচাড়া করে নুন, চিনি, আদা বাটা দিয়ে নেড়ে নিন।
অল্প জল দিয়ে ঢাকা দিন। অল্প জল থাকতে নারকেলকোরা ও ভাজা চিংড়ি মাছ দিয়ে নাড়ুন।
জল শুকিয়ে এলে পোস্ত-বাটা জলে গুলে থোড়ের ওপর দিয়ে নেড়েচেড়ে বেশ মাখো মাখো হলে গ্যাস অফ করে দিন।

মোহন চিংড়ি
লিখেছেন সমীর চট্টোপাধ্যায়
ফুটবল ম্যাচেও এই চিংড়ি মাছ যে বাঙাল-ঘটি লড়াইয়ে ঘটিদের অন্যতম হাতিয়ার তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। ইস্টবেঙ্গল বনাম মোহনবাগান এর খেলায় দুই পক্ষরই মাছ নিয়ে উত্তেজনা নেহাত কম নয়। বাঙালরা মাঠের গ্যালারিতে ইলিশ এর ছবি ঝোলালে ঘটিরা ঝোলায় চিংড়ির ছবি। আজীবন মোহন বাগানের হয়ে খাবার পাতেও একাই ডিফেন্ড করে চলেছে চিংড়ি। আহা! মাছ নিয়েও যে লড়াই হতে পারে তা বোধহয় বাঙালিদের না দেখলে জানাই যেত না। মোহন বাগান দলের সঙ্গে কবে থেকে যে চিংড়ি নাম জুড়ে গেছে তা নিয়েও না মত রয়েছে। ডার্বিতে মোহন বাগান জিতলেই ঘরে ঘরে গরম গরম ভাতে চিংড়ির বাহার। মাঠ থেকে বাড়ি, চিংড়ি বনাম ইলিশের প্রতি বাঙালির আবেগ চিরকালীন।

এতো গেল খেলার মাঠের উত্তেজনা। কিন্তু বাঙালির এই উত্তেজনা খেলার পরে বাজারেও দেখা যায়। কে কত কেজির বাগদা আর গলদা নেবেন তা নিয়ে এক ক্রেতা বনাম অপর ক্রেতার ঠোকাঠুকি লেগে যায়। বাঙালি যতদিন বাঁচবে এই আবেগের লড়াই ততদিন চলবে। বাঙালির ভোজনবাহারে চিংড়ি একেবারে পাকাপাকি স্থান করে নিয়েছে। বাঙালির রকমারি পদে চিংড়ি জুড়েছে এক অনন্য মাত্রা। জলের পোকা তো কি হয়েছে চিংড়ি তো আর ফেলনা নয়! বাঙালির চিংড়ি দিয়ে তৈরি নানারকমারি পদ তাই আন্তর্জাতিক স্তরেও জায়গা করে ফেলেছে।

আদি কথা চিংড়ির
পুরো পৃথিবীর হিসাবে বলতে গেলে, চিংড়ি মাছ আরও পুরোনো বাসিন্দা। প্রায় ৫০ কোটি বছর আগে চিংড়ির ফসিলের সন্ধান মিলেছে। সেই হিসেবে চিংড়ি ডাইনোসরদেরও বয়োজ্যেষ্ঠ। চিংড়ি পোকা না মাছ, এই নিয়ে তর্ক-বিতর্ক আছে। কোটি বছর আগের চিংড়ি নিয়ে ভিন্ন একটি গবেষণার ফলাফল জানলে চোখ কপালে উঠে যেতে পারে।
এই কোটি বছর আগে চিংড়ি কিন্তু পোকা ছিল না। আবার মাছের মতোও ছিল না। রীতিমতো দৈত্যাকার ছিল। ক্যামব্রিয়ান সময়কালে সামুদ্রিক চিংড়িই ছিল দৈত্যাকার। দেখতে ভয়ানক। গবেষকেরা জানান, সেই দৈত্যাকার প্রাণির দৈর্ঘ্য ছিল তিন ফুটের মতো। অদ্ভুতদর্শন এই সামুদ্রিক দৈত্যের নাম অ্যানোমালোক্যারিস ক্যানাডেনিসিস। যার অর্থ হলো, কানাডা থেকে আসা অদ্ভুতাকার চিংড়ি মাছ। এই প্রাণির পেছনের দিকে লেজের মতো অংশ ছিল বলে গবেষকেরা মনে করেন।
অ্যানোমালোক্যারিসরা ছিল সেই সময়কার সবচেয়ে বড় সাদা হাঙর। শরীরের জোরের চেয়ে গতিই ছিল এই প্রাণিটির টিকে থাকার রহস্য। আমেরিকান মিউজিয়াম অব ন্যাচারাল হিস্ট্রির গবেষক রাসেল বিকনেল জানান, দেখতে ভয়ানক হলেও অ্যানোমালোক্যারিসরা ছোট প্রাণি শিকারে অভিজ্ঞ ছিল। নখ ও শরীরের আকার বড় হলেও খাদ্যশৃঙ্খলে সরল অবস্থান ছিল এদের।
ইতিহাস ঘেঁটে জা জানতে পারি, প্রায় ৫৩ কোটি ৮০ লক্ষ বছর আগে ক্যামব্রিয়ান সময়কাল শুরু হয়। সে সময় প্রথম জটিল প্রকৃতির সামুদ্রিক প্রাণের বিকাশ ঘটে। সেই সময়কার সামুদ্রিক প্রাণিদের সামনের অংশে বিশালাকার নখ দেখা যায়। সেই নখ দিয়ে শিকার ধরে নিজেদের মতো ভেঙেচুরে খাবার হিসেবে গ্রহণের প্রবণতা ছিল তাদের মধ্যে। গবেষকেরা ত্রিমাত্রিক ডিজিটাল পদ্ধতিতে অ্যানোমালোক্যারিসের শারীরিক অবস্থার নকশা তৈরি করেন। কম্পিউটেশনাল ফ্লুইড ডায়নামিকস ব্যবহার করে চিংড়ি মাছের নকশা করেন গবেষকেরা। কানাডার বার্জেস শেল এলাকায় পাওয়া ফসিল গবেষণা করে এ তথ্য প্রকাশ করেছেন। যুক্তরাজ্যের দ্য রয়েল সোসাইটির গবেষণাপত্রে একটি নিবন্ধে চিংড়ির বিস্তারিত প্রকাশ করা হয়েছে। এই প্রজাতির প্রথম ফসিল শনাক্ত হয় ১৮৮৬ সালে। কানাডার জিওলজিক্যাল সার্ভের গবেষক রিচার্ড ম্যাককনেল প্রথম মাউন্ট স্টিফেন পর্বত এলাকা থেকে এসব ফসিলের সন্ধান পান। এদের হাঙর মনে করা হলেও প্রকৃত হাঙর পৃথিবীতে আসে আরও পরে। ৩৮ কোটি বছর আগে ক্ল্যাডোশেলাশে নামের প্রকৃত হাঙরদের প্রকৃতিতে দেখা যায়। এদের ৭টি ফুলকা ছিল। আধুনিক হাঙরের চেয়ে বিশালাকার ছিল সেই সময়ের হাঙরগুলো।
চিংড়ি আদিকাল থেকেই একটি মূল্যবান এবং সুস্বাদু খাদ্য আইটেম। প্রাচীন রোমান এবং গ্রীক যুগ জুড়ে, এটি আবিষ্কৃত হয়েছিল যে লোকেরা চিংড়ির বৈশিষ্ট্যযুক্ত রেসিপিগুলি দিয়ে রান্নার বই তৈরি করেছিল। খ্রিস্টীয় ৪ এবং ৫ ম শতাব্দীতে জনপ্রিয় একটি খাবারের মধ্যে ছিল চিংড়িকে ডুমুর পাতায় মুড়ে রান্না করা এবং পরিবেশন করা। ১২৮০ সালে, মার্কো পোলো তার চীন ভ্রমণের সময় চিংড়ির পুষ্টিকর মূল্য সম্পর্কে লিখেছিলেন। তিনি আবিষ্কার করেছিলেন যে চিংড়ি তাদের পুষ্টিকর এবং বহুমুখী প্রকৃতির কারণে ৭ম শতাব্দী থেকে চীনা খাবারের উপর একটি ভারী প্রভাব ফেলেছিল । এই সময়ে চিংড়ি একটি অবিশ্বাস্যভাবে জনপ্রিয় খাবারের তালিকায় ছিল। সেগুলি কিন্তু এখনও বর্তমানের চীনা খাবারের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
আটপৌরে কথায় চিংড়ি

এ তো গেল চিংড়ির আদি কথা। এবার আসি, আটপৌরে চিংড়ির কথায়। যে চিংড়ি আমরা চিনি। যে চিংড়ি আমরা খাই। যে চিংড়িকে আমরা ভালোবাসি। যে চিংড়ি আমাদের আবেগের। সে চিংড়ির কথায়।
আসলে চিংড়ির অনেক গুণ। আমরা অনেকটাই জানি না। দেখুন চিংড়ি পছন্দ করেন না, এমন লোক হয়ত কমই আছেন। দস্তা, লোহা, ভিটামিন বি টুয়েলভ সমৃদ্ধ এই মাছ বা ‘পোকা’টির একটি বিশেষ গুণের কথা বিশেষভাব বলতেই হয়। চিংড়িতে আছে প্রচুর পরিমাণে আয়োডিন। আর আয়োডিন একজন মানুষের সুস্থ জীবনের জন্য কতটা প্রয়োজনীয় তা আমরা ছোটবেলা থেকে সবাই জানি। বিভিন্ন সমীক্ষার ফলাফল থেকে জানা যায়, বিশ্বের প্রায় দুশো কোটি মানুষ আয়োডিনের অভাবে ভোগেন। আয়োডিনের অভাবে যে গলগণ্ড রোগ হয়, সে সম্পর্কে আমরা সকলেই অবগত। এছাড়াও আরও একটি গুরুতর সমস্যা হতে পারে আয়োডিনের অভাবে। থাইরক্সিন (টি-ফোর) এবং ট্রাইআইডোথাইরোনিন (টি-থ্রি) থাইরয়েডের এই দুটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হরমোনের মাঝে আয়োডিনের উপস্থিতি মেলে।
থাইরয়েডের সুস্থতার জন্য দুটোই জরুরি। ‘অ্যানালস অফ পেডিয়াট্রিক এন্ডোক্রিনোলজি অ্যান্ড মেটাবলিজম’-এর পর্যালোচনা বলে, “থাইরয়েড’-এর রোগের সঙ্গে শরীরে আয়রন বা লোহার ঘাটতির গভীর সম্পর্ক পাওয়া গেছে।” যুক্তরাষ্ট্রের ‘দ্য ন্যাশনাল ইন্সটিটিউট অফ হেলথ বলছে, “থাইরয়েড-স্টিমুলেটিং হরমোন (টিএসএইচ)’-এর অতি সক্রিয়তা বা অতিরিক্ত বৃদ্ধি থামাতে আয়োডিন প্রয়োজন হয়। ‘টিএসএইচ’-এর ওই অতি সক্রিয়তা থেকেই দেখা দেয় ‘হাইপোথাইরয়েডিজম’ এবং ‘হাইপারথাইরয়েডিজম’।” এই দুই রোগ সরাসরি থাইরয়েড হরমোনের সঙ্গে যুক্ত। থাইরয়েড গ্রন্থি পর্যাপ্ত পরিমাণে হরমোন তৈরি করতে না পারলে ‘হাইপোথাইরয়েডিজম’ হয়। এই সমস্যা ডেকে আনতে পারে অস্বাভাবিক স্থুলতা ও হৃদরোগ।
অপরদিকে হাইপারথাইরয়েডিজমের ক্ষেত্রে থাইরয়েড গ্রন্থি অতিরিক্ত পরিমাণে থাইরয়েড হরমোন তৈরি করতে থাকে। এ থেকে আকস্মিক ওজন কমে যায়, চুল পাতলা হয়ে যায়, অবসাদ দেখা দেয়, মানসিক অস্বস্তি বাড়ে। এই দুই রোগের সম্ভাবনা কমাতে প্রয়োজন শরীরে নিয়মিত আয়োডিনের সরবরাহ নিশ্চিত করা। দৈনিক আয়োডিন চাহিদার ৯ শতাংশ পূরণ হতে পারে শুধু ৮৫ গ্রাম চিংড়ি দিয়ে। কারণ ৮৫ গ্রাম চিংড়িতে মিলবে প্রায় ১৩ মাইক্রো গ্রাম আয়োডিন। চিংড়ি ছাড়াও অন্যান্য সামুদ্রিক খাবারে প্রচুর পরিমাণে আয়োডিন থাকে। অন্যান্য সামুদ্রিক খাবারের তুলনায় চিংড়ি বেশ সহজলভ্য এবং দামেও সস্তা। তাই শরীরে আয়োডিনের সরবরাহ ঠিক রাখতে খাদ্যতালিকায় নিয়মিত চিংড়ি রাখা উচিৎ।
স্বাদে গন্ধে চিংড়ি সেরা

বাঙালির পাতে চিংড়ি মালাইকারির ষোল আনাই চাই গরমাগরম ভাতে! মালাইকারি থেকে ভাপা, চিংড়ির স্বাদ যায় না মাপা! চিংড়ি তো নানা প্রকারের। যেমন কুচো চিংড়ি, বাগদা চিংড়ি, মেতি চিংড়ি, গলদা চিংড়ি, কাদা চিংড়ি, মোচা চিংড়ি, চাবড়া চিংড়ি ইত্যাদি। এদের মধ্যে গলদা এবং বাগদা চিংড়ি তো মেগাস্টার। তাদের স্বাদও অতুলনীয়। সাধারণত চিংড়ির আকার হয় ২.৫সেমি থেকে ৩০সেমি। মোট ৫৬ টি প্রজাতির চিংড়ি পাওয়া যায়। এক একটি চিংড়ির ডিজাইন এক এক রকম। দেখলে আপনার চোখ জুড়িয়ে যায়। ভারতবর্ষ জুড়ে এর রাজ। তবে একে এক এক জায়গায় এক এক নামে চেনে। বাংলায় নাম চিংড়ি, ওড়িশাতে চিংগুদি, তামিলে এরা, মারাঠিতে সুঙ্গাত, কেরালাতে চেমিন।
হ্যাঁ, যে মালাইকারির কথা বলছিলাম। যেকোনও চিংড়িপ্রেমীর জিভে জল আনতে রাজকীয় মালাইকারি একাই একশো। আজও বাঙালি রেস্তোরাঁতে এই মালাইকারির রাজকীয় বাহার রয়েছে। মালাইকারির মতোই আরও একটি চিংড়ির নামি পদ, জনপ্রিয়ও বটে। নাম ডাব চিংড়ি। পয়লা বৈশাখ থেকে শুরু করে দুর্গাপূজার নবমীর রেস্তোরাঁর খাওয়া-দাওয়া, ডাব চিংড়ি ছাড়া, একেবারে অসম্পূর্ণ থেকে যায়। কচি ডাবের মধ্যে সর্ষে দিয়ে তৈরি চিংড়ির এই পদটি-আহা... খাদ্য রসিকের প্রাণের আরাম। অসাধারণ স্বাদে এই ডাব চিংড়ি আজও বাঙালির কাছে সেরা। কলকাতা ছাড়িয়ে সুদূর মুম্বই, দিল্লি, চেন্নাইতেও ছড়িয়ে পড়েছে এই ডাব চিংড়ির স্বাদ।
এছাড়াও বাঙালির চিংড়ির রকমারি পদে রয়েছে চিংড়ি ভাপা, লাউ চিংড়ি, চিংড়ির দোপেয়াজা, কচুলতি দিয়ে চিংড়ি, মোচা চিংড়ি, আরও কত কি! সত্যি এই জলের পোকার স্বাদ আপামোর বাঙালিকে আজও মাতিয়ে রেখেছে।
বাঙালি যতদিন বাঁচবে কবজি ডুবিয়ে চিংড়ি খাবে। আর চিংড়ি সারা বছর আপামোর বাঙালির পাতে রয়েছে। যেকোনও উৎসবই হোক কিংবা ঘরোয়া অনুষ্ঠান চিংড়ি থাকবেই। তার জায়গা নেয় এমন কারোর সাধ্যি নেই। ইলিশ যদি বাঙালির কাছে একদিনের মহারাজ হয়। তবে চিংড়ি সারাবছরের মহারাজ।
স্বাস্থ্য সুখে চিংড়ি খান
ক্যালসিয়ামের উৎস হিসাবে চিংড়িকে ধরা হয়। ক্যালসিয়াম ছাড়াও চিংড়িতে প্রায় ১৪% ফসফরাস থাকে, যা মানবদেহের দাত ও হাঁড়কে মজবুত ও শক্ত করতে মুখ্য ভুমিকা পালন করে। চিংড়িতে প্রচুর পরিমান প্রোটিন থাকায় শরীরের যেকোনও প্রকার ক্ষত সৃষ্টি হলে তা দ্রুত সারাতে সাহায্য করে। কেননা শরীরের প্রোটিনের অভাব হলে ক্ষত সারতে দেরি হয়। আবার চিংড়ি মাছে প্রায় ১৪% কপার থাকে; তাই চিংড়ি মাছ খেলে থাইরয়েডজনিত সমস্যা দূর হয়। কপার মানবদেহের গ্রন্থির কার্যকরিতা বৃদ্ধি করে এবং থাইরয়েড হরমোনের মাত্রা ঠিক রাখে। আবার ম্যাগনেশিয়ামের (৮%) উপস্থিতি টাইপ-২ ডায়াবেটিসের হাত থেকে রক্ষা করে। চিংড়িতে প্রায় ৫৭% সেলিনিয়াম থাকে, যা শরীরে ক্যানসার কোষ সৃষ্টিতে বাঁধা দেয়। আবার চাহিদার প্রায় ২৫% ভিটামিন বি-১২ পাওয়া যায় চিংড়ি থেকে যা, রক্তে হিমোগ্লোবিন বাড়াতে ও রক্ত স্বল্পতা দূর করতে সাহায্য করে। শুধু তাই নয়, চিংড়িতে ভিটামিন বি-১২ ও ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড থাকায় হৃদপিন্ড সুস্থ রাখে এবং স্মৃতিশক্তি বাড়াতে সাহায্য করে। এমনকি এটি লিভার ভাল রাখতেও সহায়তা করে। তবে যাদের শরীরে অ্যালার্জি রয়েছে তাদের চিংড়ি মাছ খেতে সাবধনতা অবলম্বন করতে হবে।
জেনে নিন কেন খাবেন চিংড়ি
দুপুরে ভাতের পাতে প্রায়শই চিংড়ির পদ তৈরি হয়ে থাকে। সুস্বাদু এই মাছ অনেকেরই প্রিয়। চিংড়ি স্বাদ ছাড়া গুণেও বেশ উপকারি, সে কথা আগেও বললাম। এখন সংক্ষেপে জেনে নিই, চিংড়ি খাব! কেন খাবই চিংড়ি!
১) শরীরে ক্যানসার কোষের বৃদ্ধি করতে দেয় না চিংড়ি। এতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে সেলেনিয়াম।
২) ডায়াবেটিসের হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্যও চিংড়ি খাব। কারণ চিংড়িতে থাকা ম্যাগনেশিয়াম দেহকে টাইপ-২ ডায়বেটিসের হাত থেকে রক্ষা করে।
৩) যাদের মুটিয়ে যাওয়ার ভয় আছে, তাঁরা নির্দ্বিধায় চিংড়ি খান। চিংড়ি শরীরে ফ্যাট জমতে বাধা দেয়।
৪) ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিডে সমৃদ্ধ এই খাবার হৃৎপিণ্ড ভালো রাখতে সাহায্য করে।
৫) চিংড়ি হল প্রচুর পরিমাণ ক্যালসিয়ামের উৎস। ফলে হাড়, দাঁত সব ভালো থাকে।
জয় চিংড়ির জয়!
জয়...
Comments