top of page

আদুরে শীতে জিভের আরাম, পাহাড় থেকে মরুভূমি..

শীত পড়তেই মনটা খাই খাই করে। অথচ বাইরের খাবার খেতে বাধা-বিপত্তি। তাই চিন্তা না করে বাড়িতেই বানিয়ে ফেলুন মন-পসন্দ শীতকাতুরে রান্নাবান্না। সাজেশন দিলেন বিশিষ্ট শেফরা।



পনির টিক্কা

কী কী লাগবে

৪ চামচ দই, নুন, ২০০ গ্রাম পনির, ২ টেবিল চামচ আদা রসুন এবং লঙ্কা পেস্ট, ১ টেবিল চামচ Shalimar's কাশ্মীরী লঙ্কার গুঁড়ো, ১ টেবিল চামচ  Shalimar's ধনে গুঁড়ো, ১/২ টেবিল চামচ  Shalimar's জিরা গুঁড়ো, ১/২ চামচ  Shalimar's কালো মরিচ গুঁড়ো, ১ লেবুর রস, ১/২ চামচ Shalimar's চাট মশলা, ১/২ চামচ Shalimar's গরম মশলা গুঁড়ো, ১.৫ টেবিল চামচ বেসন, ১-২ চামচ Shalimar's সর্ষের তেল।

কীভাবে বানাবেন

সমস্ত উপকরণ এবং পনির মেখে নিন একসাথে। সব মেরিনেট করুন। কিউবড ক্যাপসিকাম এবং পেঁয়াজ যোগ করুন। ৫-৬ ঘন্টার জন্য মেরিনেট করুন, এটি ফ্রিজে দিন। ৩০ মিনিট থেকে ১ ঘন্টা ধরে রাখুন। তারপরে একটি গ্রিল স্টিক বা স্কিউয়ার নিন। এটিতে তেল দিন, একটি কিউব পনির, ১টি ক্যাপসিকাম কিউব, একটি পেঁয়াজ কিউব নিন এবং মার্জিনে কিছু জায়গা রেখে দিন। এটিকে গ্যাসের শিখার ওপরে ধরে রাখুন এবং গ্রিল করুন। পুরোপুরি রান্না হয়েছে কিনা দেখার জন্য এটি ঘুরিয়ে রাখুন। অতিরিক্ত মেরিনেডের ক্ষেত্রে এটি শেষ অবধি রেখে দিন এবং একটি প্যানে রান্না করুন।

খামান কাটোরি ধোকলা

কী কী লাগবে

৪ টেবিল চামচ ছোলা ময়দা, ১/২ চা-চামচ নুন, ১/২ চা-চামচ চিনি,  Shalimar's হলুদ গুঁড়ো চিমটি, ফলের সল্ট (ইনো), ২-৩ গোটা সবুজ মরিচ, সর্ষে দানা।

কীভাবে বানাবেন

রঙের জন্য ৪ চামচ ছোলা ময়দা, ১/২ চামচ নুন, ১/২ চামচ চিনি এবং এক চিমটি হলুদ মিশিয়ে নিন। শুকনো উপাদানগুলিতে মেশান। তারপরে আস্তে আস্তে জলে যোগ করুন, যতখণ না সেমি লিক্যুইড তৈরি হয়। এটি সহজেই বাটিগুলিতে স্লাইড করার জন্য যথেষ্ট পুরু হওয়া উচিত। এটি ১০ মিনিটের জন্য একপাশে রেখে দিন। একটি wok রাখুন, জল যোগ করুন। একটি স্ট্যান্ড বা একটি বাটিতে রাখুন, তারপরে একটি প্লেট যুক্ত করুন। ১০ মিনিটের জন্য জল ফুটতে দিন। ১০ মিনিটের পরে আঁচ বন্ধ করুন। বাটারটি আবার গরম করতে দিন, এক চিমটি ইনো (ফলের লবণ) দিন বাটারটি ৩-৪ টি ছোট ছোট বাটি বা একটি একক বড় কভার পাত্রে বিভাজন করুন। বাটিগুলি গ্রিজ করুন। সাবধানে প্লেটে বাটি রাখুন। একটি ঢাকনা দিয়ে রাখুন এবং এটি কমপক্ষে ১৫ মিনিটের জন্য বাষ্প হতে দিন। ছুরি পরীক্ষা, বা টুথপিক পরীক্ষা করুন। যদি তারা পরিষ্কার হয়ে আসে তবে আপনার খাবার প্রস্তুত। না হলে তাদের আরও ৫ মিনিট ধরে রান্না করুন। টেম্পারিং একটি প্যানে দুই চামচ তেল গরম করুন, সরিষা এবং পুরো সবুজ মরিচ যোগ করুন, এটি রান্না হতে দিন। একবার সরষের দানা ফাটা শুরু করলে জল যোগ করুন। সাবধান থাকুন কারণ এই পর্যায়ে জল ছড়িয়ে পড়ে। শিখা কমিয়ে নিন, দুই চামচ চিনি এবং কিছুটা নুন যুক্ত করুন। ফুটতে দিন। শিখাটি বন্ধ করুন, এক চামচ নুন এবং তরল দিয়ে আপনার খাবার তৈরি করুন।


পালং পনীর

কী কী লাগবে

১ কেজি পালং শাক, ৩০০ গ্রাম পনির কিউব, ২ চা চামচ Shalimar's সাদা তেল, সামান্য নুন, ১ চা চামচ গোটা জিরে, ২টো শুকনো লঙ্কা, ৩ টে মাঝারি মাপের পেঁয়াজ, ২ ইঞ্চি মাপের আদা কুচি, ১০ কোয়া রসুন, ২ টো কাঁচালঙ্কা, ২ চা চামচ  Shalimar's সানফ্লাওয়ার তেল, ১টা বড় মাপের টমেটো কুচি, ২ চা চামচ Shalimar's সাদা তেল, ২ চা চামচ মাখন, ১ টা স্টার অ্যানিস, ২ টুকরো দারচিনি, ২টো এলাচ, ৪টে লবঙ্গ, ১ চামচ রোস্টেড জিরে গুঁড়ো, ১ চামচ  Shalimar's ধনে গুঁড়ো, ১ চামচ Shalimar's কাশ্মীরি শুকনো লঙ্কা গুঁড়ো, ১ চা চামচ Shalimar's হলুদগুঁড়ো, ২ টেবিল চামচ ফ্রেশ ক্রিম, Shalimar's কসৌরী মেথি ১ চা চামচ।

কীভাবে বানাবেন

প্রথমে পালং শাক ২ মিনিট গরম জলে সেদ্ধ করে জল ঝরিয়ে বেটে নিন। পনির কিউব করে কেটে নিন। কড়াইতে তেল গরম করে সামান্য নুন দিন। পনির হালকা ভেজে তুলে ৫ মিনিট জলে ডুবিয়ে রেখে তুলে নিন। এর পর গোটা জিরে, শুকনো লঙ্কা, পেঁয়াজ, আদা কুচি, রসুন, কাঁচালঙ্কা, টমেটো একসাথে পেস্ট করে নিন। এর পর কড়াইতে তেল ও মাখন দিয়ে তাতে একে একে স্টার অ্যানিস, দারচিনি, এলাচ, লবঙ্গ, রোস্টেড জিরে গুঁড়ো, ধনে গুঁড়ো, কাশ্মীরি শুকনো লঙ্কা গুঁড়ো, হলুদগুঁড়ো হালকা আঁচে ৫ মিনিট কষান। এর পর বেটে রাখা পালং শাক ও মশলা দিয়ে মাঝারি আঁচে আরো 5 মিনিট কষান। স্বাদ অনুযায়ী নুন, চিনি, ভেজে রাখা পনীর, কসৌরী মেথি ও ফ্রেশ ক্রিম মিশিয়ে রুটি বা পরোটার সাথে পরিবেশন করুন।




হরিয়ালি ফুলকপি

কী কী লাগবে

ফুলকপি ১টা (টুকরো করে ফুল ছাড়িয়ে নেওয়া), আলু ২টো (টুকরো করে কাটা),  Shalimar's তেল ১ কাপ, জিরে ১ চা চামচ।


সর্ষে পোস্ত মিশ্রনের জন্য লাগবে:

সাদা সর্ষে ১ চামচ, কালো সর্ষে ১ চামচ, নারকেল কোড়া ২ টেবিল চামচ, পোস্ত ১ চামচ, কাঁচালংকা ২টি, নুন স্বাদমত,  Shalimar's হলুদ গুড়ো, ১/২ চা চামচ, চিনি ১ চা চামচ


হরিয়ালি পেস্ট এর জন্য লাগবে:

পেঁয়াজ কুচি ২ টেবিল চামচ, রসুন ৬ কোয়া, কাজু ৮টা, ধনে পাতা ১ আঁটি, টক দই ২ চামচ, নুন স্বাদ মতো, চিনি ১ চা চামচ, কাঁচা লংকা ৬ টা।

কীভাবে বানাবেন

ননস্টিক প্যানে ১ চামচ তেল গরম করতে হবে এতে পেঁয়াজ, রসুন, লংকা, ধনেপাতা, কাজুবাদাম, নুন, চিনি দিয়ে সাঁতলে নিয়ে ঠান্ডা করে বেটে ওর মধ্যে টকদই মিশিয়ে রাখুন। অন্য দিকে দু রকম সর্যে, পোস্ত, লংকা, নারকেল, নুন আর হলুদ একসাথে বেটে রাখুন। এবারে কড়াই আঁচে বসিয়ে তেল গরম করে জিরে ফোড়ন দিয়ে আলু আর ফুলকপি নুন-হলুদ দিয়ে ভাজুন। এবার সর্ষে পোস্ত বাটা দিয়ে সামান্য নেড়ে জল ঢেলে কপি আর আলু সেদ্ধ হতে দিন। মাখামাখা হলে হরিয়ালি পেস্ট ঢেলে ঢেকে আরো কিছু সময় রেখে নামিয়ে নিলেই তৈরী হরিয়ালি ফুলকপি। টেম্পারিং একটি প্যানে দুই চামচ তেল গরম করুন, সরিষা এবং পুরো সবুজ লঙ্কা যোগ করুন, এটি রান্না হতে দিন। একবার সর্ষের দানা ফাটা শুরু করলে জল যোগ করুন। সাবধান থাকুন কারণ এই পর্যায়ে জল ছড়িয়ে পড়ে। শিখা কমিয়ে নিন, দুই চামচ চিনি এবং কিছুটি নুন যুক্ত করুন। ফুটে গেলেই তৈরি আপনার হরিয়ালি ফুলকপি।


পেঁয়াজকলি মেটে চচ্চড়ী

কী কী লাগবে

পাঁঠার মেটে ৫০০ গ্রাম, পেঁয়াজবাটা ২ টেবিল চামচ, আদা রসুন বাটা ২ চা চামচ, নুন স্বাদ মতো, Shalimar's হলুদ গুঁড়ো ১ চা চামচ, Shalimar's জিরে গুঁড়ো ১ চা চামচ,  Shalimar's লংকা গুঁড়ো ১ চা চামচ, টমেটো কুচি মাঝারি ১টা, পেঁয়াজকলি কুচোনো ২০০ গ্রাম, গরমমশলা বাটা ১ চা চামচ,  Shalimar's সরষের তেল ১ কাপ, শুকনো লংকা ২টি, তেজপাতা ২টি, গোটা জিরে ১ চা চামচ।

কীভাবে বানাবেন

একটি পাত্রে মেটে, নুন, হলুদ, পেঁয়াজবাটা, আদা রসুন বাটা, জিরে গুড়ো, লংকা গুড়ো একসাথে মেখে রাখুন আধঘন্টা। তেল গরম করে তেজপাতা, জিরে, শুকনো লংকা ফোড়ন দিয়ে মেখে রাখা মেটে ঢেলে ঢেকে অল্প আঁচে রান্না হতে দিন। সেদ্ধ হলে অল্প জল, টমেটো কুচি আর কুচোনো পেয়াজকলি দিয়ে মিশিয়ে ঢেকে আরো কিছু সময় রান্না করুন। তেল ওপরে ভেসে উঠে কথা কষা হলে গরমমশলা বাটা মিশিয়ে নামিয়ে গরম ভাত বা রুটির সাথে খান।


বিটরুট চিকেন মোমো

কী কী লাগবে

বিট বাটা ২ টেবিল চামচ, ময়দা ২ কাপ, চিকেন কিমা ২০০ গ্রাম, নুন স্বাদ মতো, সয়া সস ১ চা চামচ, Shalimar's গোলমরিচ গুঁড়ো ১ চা চামচ, ধনেপাতা কুচি ১ চা চামচ, Shalimar's সাদা তেল ২ চা চামচ, পেঁয়াজকুচি ১ চা চামচ, রসুন কুচি ১/২ চা চামচ।

কীভাবে বানাবেন

একটি পাত্রে ময়দা, বিটবাটা, নুন, সাদা তেল একসাথে মিশিয়ে পরিমাণ মতো জল দিয়ে ডো মেখে নিন। এবার একটি পাত্রে বাকি সব উপকরণ মিশিয়ে পুর বানিয়ে নিন। ময়দার ডো থেকে লেচি কেটে ছোট ছোট লুচির মতো বেলে মাঝে পুর দিয়ে ইচ্ছে মতো শেপে মোমো গুলো বানিয়ে স্টিমারে ভাপিয়ে নিলেই তৈরী। পছন্দের চাটনির সাথে পরিবেশন করুন ভিন্ন স্বাদের বিটরুট মোমো।


বেগুন বাসন্তী

কী কী লাগবে

বেগুন ২টি, টকদই ও চা চামচ, সরষেবাটা ২ চা চামচ, Shalimar's হলুদ গুঁড়ো ১ চা চামচ, কাঁচালঙ্কা ২টি, কালোজিরে ১ চা চামচ, শুকনো লঙ্কা ২টি, তেঁতুল ১/২ চা চামচ, সরষের তেল ১ কাপ, চিনি স্বাদ মতো।

কীভাবে বানাবেন

বেগুন কেটে ভেজে তুলে নিন। টক দইয়ের সঙ্গে পরিমাণ মতো হলুদ মিশিয়ে ভালো করে ফেটিয়ে নিলেও কড়াইয়ে তেল থাকবে, তাতে শুকনো লঙ্কা ও কালোজিরে দিন সরষেবাটা, কাঁচালঙ্কা। বাসন্তী রঙের এই মিশ্রণাটি নামানোর আসো ভেজে রাখা বেগুনগুলোর ওপর ছড়িয়ে পরিবেশন করুন।


জলপাই এর আচার

কী কী লাগবে

টুকরো করে ভাঁপিয়ে নেওয়া জলপাই ২৫০ গ্রাম, ভেলি গুড় ১৫০ গ্রাম, ভাজা মশলা (মৌরি, ধনে, পাঁচফোড়ন, শুকনো লংকা) গুঁড়ো ১ টেবিল চামচ, বিট নুন ১ চা চামচ, নুন স্বাদ মতো, Shalimar's হলুদ গুঁড়ো চা চামচ, Shalimar's সরষের তেল 2 টেবিল চামচ।

কীভাবে বানাবেন

তেল গরম করে জলপাই নুন আর হলুদ গুঁড়ো দিয়ে অল্প ভাজুন। এবার ওর মধ্যে গুড় আর খুব অল্প জল দিয়ে ফুটতে দিন। মাখামাখা হলে ভাজা মশলা আর বিট নুন মিশিয়ে নামিয়ে ঠান্ডা করে কাচের বয়ামে রাখুন। মাঝে মাঝে রোদে দেবেন অনেক দিন ভালো থাকবে।


মটন কিমা স্টাফড টমেটো


কী কী লাগবে

টমেটো ৪টি, সেদ্ধ মটন কিমা ১ কাপ, নুন চিনি স্বাদ মতো, আদা রসুন বাটা ১ চামচ, টমেটো সস ২ চামচ, কাঁচালংকা কুচি ১ চামচ, Shalimar's গোলমরিচ গুঁড়ো ১/২ চামচ, Shalimar's সাদা তেল ২ চামচ, গ্রেটেড চিজ ১/২ কাপ, মিক্সড হার্ব ১/২ চামচ

কীভাবে বানাবেন

তেল গরম করে একে একে সেদ্ধ মটন কিমা, আদা রসুন বাটা, নুন, গোলমরিচ গুঁড়ো, টমেটো সস, কাঁচালংকা কুচি দিয়ে কষে পুর বানিয়ে নিন। টমেটোর মুখ কেটে স্কুপের সাহায্যে পাল্প বের করে ওর মধ্যে কিমার পুর ভরে ওপর থেকে গ্রেটেড চিজ দিয়ে মিক্সড হার্ব আর অলিভ অয়েল ছড়িয়ে ১৬০ ডিগ্রিতে বেক করুন ১০ মিনিট। গার্লিক ব্রেডের সাথে পরিবেশন করুন।

সরষে পোস্ত চিংড়ি


কী কী লাগবে

১ টেবিল চামচ কালো সরষে বাটা, ১ টেবিল চামচ পোস্ত বাটা, ১ টেবিল চামচ সাদা সরষে বাটা, ১ টেবিল চামচ নারকেল বাটা, ৪ টেবিল চামচ Shalimar's সরষের তেল, স্বাদ অনুযায়ী লবণ, ১ চা চামচ চিনি, ১.৫ চা চামচ Shalimar's হলুদ গুঁড়ো, ২ টি কাঁচালঙ্কা বাটা, ৪ টি কাঁচালঙ্কা, ১/২ কাপ নারকেলের দুধ

কীভাবে বানাবেন

চিংড়ি মাছগুলো ভালো করে ধুয়ে নুন এবং হলুদ মাখিয়ে নিতে হবে। এবার তেল গরম হলে মাছগুলো ভেজে নিতে হবে। এবার ১ বাটিতে সরষে বাটা, কাঁচালঙ্কা বাটা, পোস্ত বাটা, নারকেল বাটা দিয়ে একসঙ্গে জল দিয়ে গুলে একটা পেস্ট বানিয়ে নিতে হবে। এবার এই সর্ষে পোস্ত নারকেলের পেস্টটা চিংড়ি মাছের মধ্যে দিয়ে দিতে হবে। হলুদ গুঁড়ো, পরিমাণ মতো লবণ, চিনির নারকেলের দুধটা দিয়ে ঢাকা দিয়ে দিতে হবে। দশ মিনিট পর গোটা কাঁচা লঙ্কা আর সরষের তেল ছড়িয়ে গ্যাস অফ করে দিতে হবে। ৫ মিনিট স্ট্যান্ডিং টাইমে রেখে গরম ভাতের সঙ্গে পরিবেশন করতে হবে।

চিকেন লেগ পিস উইংস ফ্রাই


কী কী লাগবে

চিকেনের কোটিং এর জন্য শুকনো উপকরণ: ৬ টুকরো চিকেন, ১. ঢা চামচ রসুনবাটা, ১৪ চামচ আদাবাটা, ২ চামচ সয়াসস, ১ চা চামচ Shalimar's লঙ্কা গুঁড়ো, স্বাদ অনুযায়ী নুন, ১/২ চা চামচ, Shalimar's গোলমরিচের গুঁড়ো, ১৪ চামচ অরিগ্যানো ২ টো ডিম, ১ কাপ দুধ, ১ টেবিল চামচ ভিনিগার, ১.৫ কাপ ময়দা ১/৪ কাপ কর্ণ ফ্লাওয়ার, ১/২ চা চামচ নুন, ১/২ চা চামচ রসুনবাটা, ১/২ চা চামচ Shalimar's লঙ্কা গুঁড়ো, ১/২ চা চামচ Shalimar's হলুদ গুঁড়ো (ঐচ্ছিক), ১/২ চা চামচ সাদা গোলমরিচের গুঁড়ো, ১/২ চা চামচ মৌরি, ১/২ চা চামচ Shalimar's ধনেগুঁড়ো, ১/২ চা চামচ বেকিং পাউডার, ৪০০ গ্রাম ডীপ ফ্রাই করার জন্য Shalimar's সাদা তেল

কীভাবে বানাবেন

শুরুতেই চিকেনের পিসগুলো পরিষ্কার করে ধুয়ে নিতে হবে আর আর নিতে হবে বাটার মিষ্কের জন্য দুধ ও ভিনিগার। সামে বাকি উপকরণ গুলোও গুছিয়ে নিতে হবে। এবার মশলাগুল্যে দিয়ে চিকেনের পিসগুলো হাত দিয়ে ভালোভাবে মেখে নিতে হবে। আলাদা একটা পাত্রে ডিম ও বাটারমিল্ক ভালোভাবে মিশিয়ে চিকেনের পিসগুলো তাতে ডুবিয়ে ঢেকে রেখে দিতে হবে কমপক্ষে ৪ ঘন্টার জন্যে। চিকেনগুলো কোট করতে শুকনো উপকরণগুলো গুছিয়ে নিতে হবে। খুব ভালো করে মিশিয়ে নিতে হবে সমস্ত উপকরণগুলো। ৪ ঘন্টা ম্যারিনেশনের পর রান্না করার অন্তত আধঘন্টা আগে চিকেনগুলো বেরকরে রাখতে হবে। এবার ওই মিশ্রনটার থেকে চিকেনগুলো আলাদা করে তুলে রাখতে হবে। এবার চিকেনগুলো কোটিং করতে হবে। কোটিং এর ক্ষেত্রে চিকেনগুলোকে প্রথমে শুকনো উপকরণে খুব ভালো করে চেপে চেপে কোট করে তারপর তুলে ঝেড়ে নিয়ে ওই আগের তৈরি ডিম আর বাটার মিষ্কের গোলায় চুবিয়ে নিতে হবে। গোলায় চুবিয়ে তারপর আবার একবার ময়দার কোটিং করে ভালোভাবে কেড়ে নিয়ে ডীপ ফ্রাই করতে হবে। প্যানে তেল হাইহীটে গরম করে তারপর মিডিয়াম হাঁটে রেখে চিকেনগুলো দিয়ে ১২ ১৫ মিনিট করে সময় নিয়ে ভাজতে হবে। একবারে বাড়িয়ে দিলে বাইরেটা কালার ধরে যাবে কিন্তু ভেতরটা ভাজা হবেনা। এইভাবেই সবকটা ভেজে নিতে হবে।

গোলবাড়ির স্টাইলে কষা চিকেন


কী কী লাগবে

৭০০ গ্রাম মুরগির মাংস, স্বাদ মতো নুন, পরিমান মতো Shalimar's সরষে তেল, ২ টেবিল চামচ আদা বাটা, ৩ টেবিল চামচ রসুন বাটা, ২ টেবিল চামচ Shalimar's হলুদ গুঁড়ো, ২ টেবিল চামচ Shalimar's লঙ্কার গুঁড়ো, ২ টেবিল চামচ Shalimar's ধনে গুঁড়ো, ২ টেবিল চামচ Shalimar's জিরে গুঁড়ো, ১ কাপ টক দই, ২টি তেজপাতা, ২ টুকরো দারচিনি, ৪টি বড় পেঁয়াজ (দুটি পেঁয়াজ বেরেস্তা বানানোর জন্য আর দুটি বাটা করার জন্য), ১ টেবিল চামচ Shalimar's কাশ্মীরি লঙ্কার গুঁড়ো, ১টি জয়িত্রী, ১টি জায়ফল, ১ টেবিল চামচ গোটা ধনে, ১ টেবিল গোটা জিরে, ৫টি এলাচ, ১টি স্টার অ্যানিস, ১ কাপ ব্ল‍্যাক টি, ১ টেবিল চামচ কসুরি মেথি, ১ চা চামচ চিনি, ১ চা চামচ গোলমরিচ গোটা

কীভাবে বানাবেন

চিকেন টক দই, আদা রসুন বাটা, হলুদ লঙ্কার গুঁড়ো, জিরে গুঁড়ো, ধনেগুঁড়ো মাখিয়ে ৪ ঘন্টা রেখে দিতে হবে। শুকনো কড়াইতে জয়িত্রী, জায়ফল, ধনে গোটা, গোটা জিরে, এলাচ, স্টার অ্যানিস, গোলমরিচ গোটা রোস্ট করে মিক্সিতে গুঁড়ো করে রাখতে হবে। কড়াইতে তেল দিয়ে তাতে কুচি করা পেঁয়াজ ভালো করে সোনালি রং করে ভেজে নিতে হবে

এবং ভেজে নেওয়ার পর পেঁয়াজ ঠান্ডা করে নিয়ে ভাজা পেঁয়াজ মিক্সিতে বেটে পেঁয়াজের বেরেস্তা করে নিতে হবে। কড়াইতে তেল গরম করে তেজপাতা, দারচিনি, এলাচ, চিনি, পেঁয়াজ বাটা, আদা বাটা, রসুন বাটা কষতে হবে মাংসটা দিয়ে অনবরত। বেশ কথা হলে লঙ্কার গুঁড়ো, কাশ্মীরি লঙ্কার গুঁড়ো, নুন, হলুদ, মিক্সিতে গুঁড়ো করা মশলা দিয়ে আবার অনেকক্ষণ কষতে হবে। এরপর পেঁয়াজের বেরেস্তা দিয়ে আরো ভালো করে কষিয়ে নিতে হবে যাতে কোনোভাবেই তলায় লেগে না যায়। এবার সবটা ভালো করে কষিয়ে নিয়ে পাঁচ মিনিটের জন্য ঢাকা দিয়ে রাখতে হবে। মাঝে আবার নাড়তে হবে ঢাকা খুলে। এবার আগে থেকে তৈরি করে রাখা ১ কাপ ব্ল‍্যাক টি দিয়ে মিশিয়ে ঢাকা দিয়ে মাংস সেদ্ধ করতে দিতে হবে। মাঝে মাঝে ঢাকা খুলে নাড়াতে হবে; যাতে কোনোভাবে তলায় লেগে না যায়। ঢাকা খুলে যদি মনে হয় চিকেন সেদ্ধ হয়ে গেছে ভালোভাবে নাড়িয়ে নিয়ে কসুরি মেথি দিয়ে একটু নাড়িয়ে- চাড়িয়ে গ্যাস বন্ধ করে কিছুক্ষণ ঢাকা দিয়ে রাখলেই তৈরি আমাদের সকলের প্রিয় গোলবাড়ির স্টাইলে কষা চিকেন। লুচি, পরোটা, রুমালি রুটিন অথবা তন্দুরি রুটির সঙ্গে গোলবাড়ির স্টাইলে গরম গরম কষা মাংস পরিবেশন করা যেতে পারে।

 

পাহাড় থেকে মরুভূমি

শীতের ছুটিতে কোথায় যাবেন তার হদিশ দিলেন কমলেন্দু সরকার।

বাঙালির প্রথম পছন্দ পাহাড়। সেই তালিকায় থাকে গাড়োয়ালই থাকে বেশি। আর গাড়োয়াল মানেই হরিদ্বার। এটাই গাড়োয়াল প্রবেশদ্বার। আর হরিদ্বার গেলেই বাঙালি ভোগেন স্মৃতিমধুর অতীতে। 'আগের বার দাদা বউদি আর মাসির হোটেলে ঠিক জমিয়ে খাওয়াটা হয়নি, এবার জমিয়ে খেয়ে ওপর দিকে উঠব।' কারও কারও পছন্দের তালিকার প্রথমেই থাকে রাবড়ি। তাই দুপুরের খাওয়াদাওয়া হলে সপাটে দুপুরের ভাতঘুম দিয়ে হর কি পৌড়িতে সন্ধ্যারতি দেখুন। জানি, আগে বহুবার দেখেছেন, এবারেও দেখুন। বারবার ভাল লাগে হরিদ্বারের সন্ধ্যারতি। এ কখনও পুরনো হয় না।

আরতি শেষে রাবড়ি আর শোন হালুয়া খেয়ে হোটেল বা ধর্মশালার ঘরে ঢুকুন। হরিদ্বারের আশপাশে দেখার অনেক জায়গা আছে। অটোতে ঘুরে নিন। পরদিন কখন বেরোবেন ঠিক করে নিপাট ঘুমে ডুবে যান। কেননা, ভোরবেলা এসে বেল টিপবে গাড়ির ড্রাইভার। যে-গাড়িটি ঠিক করে রেখেছেন আগেই। জল, কিছু শুকনো খাবার নিয়ে উঠুন গাড়িতে। ভোরবেলা তো একপ্রস্ত চা- বিস্কুট হয়ে গেছে। আবার হবে রাস্তায়। সেইসঙ্গে জলখাবারও সেরে নেবেন। গাড়োয়ালের আলুপরোটার স্বাদের তো ভাগ হবে না। আচার কিংবা টকদই দিয়ে দারুণ লাগবে। টকদই বা আচার দিয়ে খেলে চা-কফি কিছুক্ষণ পর খাবেন। নইলে শরীর খারাপ হতে পারে।

প্রথম থামা ঋষিকেশ। এই জায়গাটি হরিদ্বারের মতো বাঙালির মনের জায়গা, প্রাণের জায়গা। এখানে বেশি সময় নষ্ট না-করে এগিয়ে যান গন্তব্যে। ফেরার সময় তো বুকিং আছে ঋষিকেশে। তখন চেটেপুটে ঘুরে নেবেনঋষিকেশ। রেস্তরাঁয় খাবার অর্ডার দিয়ে ঋষিকেশ দেখে নিন ঝাঁকিদর্শনে। দেখুন, একমাত্র লক্ষ্মণমন্দির। লছমন ঝুলার ধারেই তো খেতে বসেছেন রেস্তরাঁয়। ঝুলা পেরিয়ে চলে যান গঙ্গার ওপারে। ভাল লাগবে। হাতে সময় থাকলে ১২ কিমি দূরে নীলকণ্ঠ পাহাড়। বহু পুরনো ভরতমন্দির। বারো শতকে নির্মাণ করেছিলেন আদি শঙ্করাচার্য। কাছেই বালাজি আর চন্দ্রমৌলিশ্বর শিবমন্দির। ঝাঁকিদর্শন শেষে জলখাবার। তারপর আবার রওনা। এবারে ঠিক পঞ্চপ্রয়াগ যাবেন। প্রথমেই দেবপ্রয়াগ। অলকানন্দা এবং ভাগীরথী নদীর মিলন দেব প্রয়াগ। প্রথম প্রয়াগ। দুই নদীর মিলনে গঙ্গা। এই প্রয়াগ ঘিরে বহু কিংবদন্তি প্রচলিত। পাঁচটি প্রয়াগের ভিতর সবচেয়ে সুন্দর দেবপ্রয়াগ। এখানকার প্রাকৃতিক দৃশ্য অনির্বচনীয়! এই প্রয়াগের নামকরণ দেবশর্মা নামে এক ব্রাহ্মণের নামে। তাঁর তপস্যায় প্রীত হয়ে বিষ্ণু বর দেন, এই পবিত্রভূমি ব্রাহ্মণের নামেই স্মরণ করবে মানুষ যুগ যুগ ধরে। এখানে নাকি ব্রাহ্মণ হত্যার (রাবণ) অপরাধে প্রায়শ্চিত্ত করেছিলেন রামচন্দ্র। দেবপ্রয়াগ থেকে ৭৫ কিমি ল্যান্সডাউন। ঘণ্টা তিনের জার্নি। সবুজে মোড়া। প্রকৃতি এখানে বড়ই মনোমোহিনী! ভিউ পয়েন্ট চমৎকার দৃশ্য সব নজরে আসে। সানসেট পয়েন্টটি অসাধারণ! এখান থেকে পাউরি ৭৭-৭৮ কিমি। সুন্দর জায়গা। পাউরি জিএমভিএন-এর টুরিস্ট লজ থেকে উন্মুক্ত আকাশের নীচে দেখা যায় চৌখাম্বা, নন্দাদেবী, হাতি পাহাড়, কেদারনাথ, কেদারডোম ইত্যাদি ইত্যাদি। ঝকঝকে আকাশে চকচকে পর্বতশৃঙ্গ দেখার আনন্দই ভিন্ন! পাউরির কাছেই খিরসু। দূরত্ব মাত্র ১৯ কিমি। দেবদারু, ওক, পাইন গাছগাছালিতে মোড়া খিরসু। বহুরকম পাখি উড়ে যায়, গাছের পাতার আড়ালে বসে ডাকে। এখান থেকে ঠিক একঘণ্টার দূরত্বে অলকানন্দার ধারে শ্রীনগর। একসময় গাড়োয়াল রাজাদের রাজধানী ছিল শ্রীনগর। এখানকার সেরা আকর্ষণ কমলেশ্বর শিবমন্দির ইত্যাদি ইত্যাদি।

দেবপ্রয়াগের ৬৭ কিমি দূরে রুদ্রপ্রয়াগ। অলকানন্দা-মন্দাকিনীর সঙ্গমে এই রুদ্রপ্রয়াগ। বলা হয়, জ্ঞান ও ভক্তির মিলন হল এই প্রয়াগে। প্রচলিত কিংবদন্তি, নারদ মুনি এখানে বসে সংগীত সাধনা করেছিলেন। ছবির মতো সুন্দর। পাহাড়ে ঘেরা রুদ্রপ্রয়াগ। এখানকার প্রধান দেবস্থান গঙ্গেশ্বর মহাদেব বা রুদ্রনাথ শিবমন্দির। আরও অনেক মন্দির আছে। এখানেই জিম করবেট মেরেছিলেন নরখাদক চিতাকে। ঘুরে আসতে পারেন ২৫ কিমি দূরে চমৎকার এক পাহাড়ি জায়গা চন্দ্রপুরী। এখান থেকে দেখা যায় কেদারনাথ পাহাড়ের অপূর্ব দৃশ্য। ইচ্ছে করলে থেকে যেতেও পারেন জিএমভিএন-এর টুরিস্ট রেস্ট হাউস আছে। রুদ্রপ্রয়াগের কাছেই আরও একটি ছবির মতো জায়গা রয়েছে। মেরেকেটে ঘণ্টাদেড় কনকচৌড়ি। কনকচৌড়ি থেকে জঙ্গলের ভিতর দিয়ে তিন কিমি হাঁটাপথে কার্তিকস্বামী মন্দির। পাহাড়ের ওপর। ডানদিকে গাড়োয়াল হিমালয়ের সব বরফাচ্ছাদিত পর্বতশৃঙ্গ আর বাঁদিকে আরও সব পাহাড় আর অরণ্য! গাড়োয়ালের অন্যতম সেরা জায়গা কার্তকস্বামী। এখানকার রূপসৌন্দর্য অবর্ণনীয়।


রুদ্রপ্রয়াগ থেকে কর্ণপ্রয়াগ। ঘণ্টা দেড়েকের ৩৩ কিমি জার্নি। পিণ্ডারি গঙ্গা আর অলকানন্দার সঙ্গম। এখান থেকে ১৭ কিমি দূরে আদিবদ্রী। কর্ণপ্রয়াগের চারিপাশ বড়ই মনোরম। কিংবদন্তি, এখানে তপস্যা করেছিলেন কুস্তীপুত্র কর্ণ। তপস্যায় বসার আগে কর্ণের মনোবাসনা হল গঙ্গায় স্নান সেরে নেবেন। তাঁর মনোবাঞ্ছা পূরণ করলেন গঙ্গা। তিনি প্রবাহিত হলেন পিণ্ডারি নদীর ভিতরে। সঙ্গমের ধারেই কর্ণের মন্দির।

কর্ণপ্রয়াগ থেকে মাত্র ২০ কিমি দূরত্বে নন্দপ্রয়াগ। গাড়িতে মিনিট পঞ্চাশ। মন্দাকিনী এসে মিশছে অলকানন্দায়। কিংবদন্তি, দানবীর রাজা নন্দ এই সঙ্গমের ধারে করেছিলেন মহাযজ্ঞ। রাজা নন্দের নামেই নামকরণ নন্দপ্রয়াগ। কিংবদন্তি, সেই পৌরাণিক কালে এই পথে যাচ্ছিলেন শিব এবং পার্বতী। পথক্লান্ত পার্বতীর হয়ে পড়লেন তৃষ্ণায় কাতর। তাঁর তৃষ্ণা নিবারণের জন্য হাতের ত্রিশূল ছুড়ে মারলেন পাহাড়ের গায়। সৃষ্টি হল নন্দাদেবীর। নন্দপ্রয়াগ থেকে ৭০ কিমি বিষ্ণুপ্রয়াগ। গাড়িতে ঘণ্টা তিন। এখানে মিশেছে বিষ্ণুগঙ্গা আর ধৌলিগঙ্গা। অলকানন্দারই - নতুন নাম এখানে বিষ্ণুগঙ্গা। এখানে দু'টি নদীই প্রচণ্ড বেগবান। কিংবদন্তি, মহর্ষি নারদ এখানে বসে করেছিলেন বিষ্ণুর তপস্যা। তাই নাম হয়েছে বিষ্ণুপ্রয়াগ। সম্ভবত একমাত্র প্রয়াগ যেখানে রাত্রিবাসের কোনও জায়গা নেই। এখান থেকে মাত্র ১৩ কিমি জোশীমঠ। জোশীমঠে থেকে আউলি, বদ্রীনারায়ণ অনায়াসেই ঘুরে নেওয়া যেতে পারে। বাড়তি পাওনা হতেই পারে জোশীমঠ-আউলি রোপওয়ে চাপা। আউলি ঠিক যেন রূপকথার রাজ্য। শীতকালে ভিন্ন রূপ আউলির। আকাশ পরিষ্কার থাকলে ঝকমক করে নন্দাদেবী, কামেট, মানা, দুনাগিরি ইত্যাদি সৰ পৰ্বতশৃঙ্গ। জোশীমঠও চমৎকার জায়গা। ১৫ কিমি দূরে অপূর্ব জায়গা তপোবন। শান্ত, নির্জন, নিরিবিলি।


জোশীমঠ থাকবেন আর বদ্রীনাথ যাবেন না, এ আবার হয় নাকি! ৪৫ কিমি পথ, দু'ঘণ্টা মতো লাগে। মহাতীর্থ বদ্রীনাথ। এপার-ওপারে নর আর নারায়ণ পর্বত। কিছুটা পিছনে নীলকণ্ঠ। কৃষ্ণ এবং অর্জুন তাঁদের পূর্ব জন্মে ছিলেন নর এবং নারায়ণ নামে দুই ঋষি। তাঁরা এখানে বসে তপস্যা করেছিলেন। দেবর্ষি নারদও বিষ্ণুদর্শনের আশায় এখানে তপস্যা করেন। ব্যাসগুহায় বসে ব্যাসদেব মহাভারত রচনা করেন। তাঁকে ওই কাজে সাহায্য করেন গণেশ। বদ্রীনাথ থেকে মাত্র চার কিমি দূরে ভারতের শেষগ্রাম মানা। কাছেই কেশবপ্রয়াগ। এখানে বাঁধনহারা সরস্বতী ঝাঁপিয়ে পড়েছে অলকানন্দার বুকে। আরও নানাবিধ কাহিনি ছড়িয়ে আছে বদ্রীর।


অনেকেই আবার ঠিক করেছেন হরিদ্বার থেকে উত্তরকাশী হয়ে গঙ্গোত্রী যাবেন, পারলে গোমুখ। হরিদ্বার থেকে উত্তরকাশী প্রায় দু'শো কিমি। ছ'ঘণ্টা তো লাগবেই। যাওয়ার মাঝেমধ্যে থামা, চা-টা খাওয়া ধরে রাখতে হবে আরও ঘণ্টা দুই অতিরিক্ত। তার মানে ছয় যোগ দুই অর্থাৎ আট, আট ঘণ্টা। উত্তরকাশীতে একটি বা দু'টি রাত অতবাহিত করে গঙ্গোত্রী। উত্তরকাশী ছোট্ট জায়গা কিন্তু চমৎকার। বিশেষ করে, গঙ্গার ধারটি। কালীকমলি ধর্মশালায় রাতকাটানো সারাজীবনের এক অনন্য অভিজ্ঞতা। অতীতে উত্তরকাশীর নাম ছিল বরাহাট। কিংবদন্তি, এখানেই কিরাতবেশী শিবের সঙ্গে যুদ্ধ হয় অর্জুনের। পঞ্চপাণ্ডবকে হত্যার জন্য এখানেই দুর্যোধন নির্মাণ করেন জতুগৃহ। স্থানমাহাত্ম্যে বারাণসীর সঙ্গে উত্তরকাশীকে তুলনা করা হয়। তাই নাম উত্তরকাশী। আবার অনেকেই বলেন, কাশী থেকে বিতাড়িত দেবতারা এসে বাস করতেন এখানে তাই নাম উত্তরকাশী। উত্তরকাশী থেকে একাধিক ট্রেকিং রুট আছে। নচিকেতা তাল, ডোডিতাল, দায়রা বুগিয়াল ইত্যাদি।

তবে উত্তরকাশী থেকে সরাসরি গঙ্গোত্রী না গিয়ে একটা রাত সেনাশহর হরসিল থাকা। অপূর্ব জায়গা হরসিল। একেবারে গঙ্গার ধারে জিএমভিএন-এর থাকার জায়গা। একেবারে নদীর ধারে আড্ডার জন্য রয়েছে কাচ-ঘেরা ছোট আড্ডাঘর। ওখানে বসে চা-টা খেতে দারুণ লাগবে। প্রকৃতির মাঝে নিজেকে বিলিয়ে দেওয়া।

হরসিল অত্যন্ত মনোরম জায়গা। পাইন, ওক অরণ্যের মাঝে আপেল খেত। এখানে প্রচুর আপেল হয়। হরসিলে রাজ কাপুর শুটিং করেছিলেন 'রাম তেরি গঙ্গা মইলি'র। হরসিলের রূপসৌন্দর্যে মোহিত হয়ে কেউ কেউ বলেন মিনি কাশ্মীর। হরসিল থেকে গঙ্গোত্রীর দূরত্ব ২৬ কিমি। গাড়িতে ঘণ্টাখানেক।

পুত্রের পাপস্খলনের জন্য গঙ্গোত্রীতে তপস্যা করেছিলেন রাজা ভগীরথ। তাঁর তপস্যায় সন্তুষ্ট দেবী গঙ্গা জন্ম নেন গোমুখে। কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধের পর এখানে যজ্ঞ করেন পঞ্চপাণ্ডব। গঙ্গোত্রী দর্শনে এবং এখানকার জল সামান্যতম মুখে দিলে কয়েকশো জন্মের পাপক্ষয় হয়, আর অবগাহন স্নানে হাজার জন্মের। এখানে আছে শ্বেতশুভ্র গঙ্গামন্দির। প্রতি সন্ধ্যায় গঙ্গার তীরে আরতি হয়। মন্ত্রোচ্চারণের সঙ্গে গঙ্গার বয়ে যাওয়া ছলাৎ ছল ছলাৎ ছল শব্দ, ধ্যানগম্ভীর প্রকৃতির সঙ্গে মিশে অসাধারণ এক পরিবেশ তৈরি হয় গঙ্গোত্রীতে! গঙ্গোত্রী মন্দির খোলা থাকে অক্ষয়তৃতীয়া থেকে দীপাবলি।


অনেকেই হরিদ্বার থেকে দেরাদুন, মুসৌরি যেতে চান। হরিদ্বার থেকে দেরাদুন কমবেশি ৭০ কিমি। ঘণ্টা দুই লাগে। উত্তরাখণ্ডের রাজধানী। কিংবদন্তি, এখানে নাকি বাস ছিল দ্রোণ-এর। পঞ্চপাণ্ডবও এখানে এসেছিলেন। রাম-লক্ষ্মণও। তাই দেরাদুন হল মহাভারত, রামায়ণের জায়গা। অতীতের নাম কেদারখণ্ড। সাজানো-গোছানো ছবির পরিষ্কার জায়গা। প্রায় সাড়ে পাঁচ কিমি দূরে তপকেশ্বর শিবমন্দির। গুহার ভিতর শিবলিঙ্গের ওপর বিরামহীন টপটপ করে জল ঝরে। কিছুটা দূরে তিব্বতি গুফা।

১১ কিমি দূরে সহস্রধারা। এর জলে নাকি একাধিক ব্যাধি নিরাময় হয়। কাছেই গাছগাছালি ঘেরা খরস্রোতা নদী বালদি। প্রাকৃতিক সৌন্দর্য অপূর্ব। এখানে প্রচুর পাখি রয়েছে। আছে লক্ষ্মণ সিদ্ধ। শিবমন্দিরে শিবের সঙ্গে আছেন লক্ষ্মণও। স্টেশনের কাছেই দরবার সাহিব। হোলির সময় এখানে হয় রঙিন উৎসব। দেরাদুন থেকে সাত কিমি মতো দূরত্বে চন্দ্রবাণীমন্দির। মহর্ষি গৌতম-এর বাস ছিল এখানে। তাই কুণ্ডটির নামও গৌতমকুণ্ড। পাঁচ কিমি দূরে তপোবন। ছিল গুরু দ্রোণাচার্য-এর সাধনার জায়গা। এছাড়াও আরও অনেক জায়গা আছে দেরাদুনে।


দেরাদুন থেকে ৩৫ কিমি দূরে বাঙালির প্রিয় বেড়ানোর জায়গা মুসৌরি। শুধু বাঙালি বলি কেন, ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরুর প্রিয় জায়গা ছিল। মুসৌরিকে তিনি বলেছিলেন, 'পাহাড়ের রানি।' দেরাদুন থেকে গাড়িতে ঘণ্টা দেড়েক লাগে। মুসৌরি একটি চমৎকার শৈলশহর। চারিপাশে ছোটবড় পাহাড়। তারই মাঝে বিউটি স্পটের মতো পাইন, ফার, ওক, রডোডেনড্রন। সবমিলিয়ে মুসৌরির অপরূপা সুন্দরী!


মুসৌরির সেরা আকর্ষণ গান হিল। রোপওয়ে আছে পাহাড়ের ওপর যাওয়ার জন্য। ওপর থেকে পুরো মুসৌরি শহরকে পাখির চোখে দেখা যায়। সে-দৃশ্য অপূর্ব! সূর্যাস্তের সৌন্দর্য দেখতে হলে যেতেই হবে। আট কিমি দূরত্বে ক্লাউড এন্ড অর্থাৎ মেঘের শেষ। খুব জনপ্রিয় জায়গা। আরও একটি ভাললাগার জায়গা মুসৌরি লেক। এখান থেকে দুন উপত্যকার অপূর্ব দৃশ্য নজরে আসে। বোটিংয়ে মজা আছে এই হ্রদে।

১৫ কিমি দূরে কেম্পটি ফলস বা ঝরনা। সূর্যকিরণে ঝরনার জলে রামধনু তৈরি হয়। আছে কিছুটা দূরে মোসি, ভাট্টা আর ঝারিপানি ঝরনা তিনটি চমৎকার। পিকনিকের আদর্শ। বেড়াতে গিয়ে হয়ে যেতেই মিঠে রোদে চড়ুইভাতি। মুসৌরির সবচেয়ে উঁচু জায়গা লাল টিব্বা। এখান থেকে নজরে আসে একাধিক বরফাচ্ছাদিত পর্বতশৃঙ্গ। মুসৌরি থেকে ৮১ কিমি দূরে মনোলোভা শৈলউপত্যকা চাক্রাতা। আকাশছোঁয়া পাহাড় আর পাইন, ওকের অরণ্য মন ভরিয়ে দেবে চাক্রাতার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য। আর আছে ধনৌলটি। এক গভীর নিরিবিলি নির্জনে জায়গাটি দু'দণ্ড মনে শান্তি দেবে। চারিপাশে দেবদারু, পাইনের অরণ্যছায়ায় মন আনন্দে হু হু করে ওঠে। ধনৌলটি না গেলে তার সৌন্দর্য উপলব্ধি করা যাবে না। কারণ, এখানকার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য অবর্ণনীয়। ধনৌলটির ৩০-৩১ কিমি দূরে চাম্বা। গাড়োয়ালের পাহাড়ি শহর। চমৎকার জায়গা। এখানে বহুরকম বহুরঙের ফুল ফোটে। শোভাবর্ধন করে চাম্বার।


অনেকেই যাবেন কুমায়ুন হিমালয়। নৈনিতাল হল বাঙালির কাছে সবচেয়ে জনপ্রিয়। নৈনিতালকে বলা হয় City of Lake. নৈনিতাল ছাড়াও ভীমতাল, সাততাল বেড়ানোর জনপ্রিয় জায়গা। গাড়োয়াল হোক বা কুমায়ুন, উত্তরাখণ্ড মানেই দেবভূমি। আর নৈনিতাল তো ৫১ সতীপীঠের একটি। সতীর চোখ অর্থাৎ নয়ন পড়েছিল এখানে। তাই দেবীর নাম নয়না দেবী। লেকের দক্ষিণ পাড়ে দেবীর মন্দির। স্থানীয় মানুষের কাছে নৈনি মাতার মন্দির। কুমায়ুন হিমালয়ের শৈলশহর নৈনিতাল থেকে বরফমোড়া হিমালয়ের দৃশ্য অপূর্ব! কুমায়ন হিমালয়ে লেক নৈনিকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে এই পাহাড়ি শহর।

কুমায়ুন হিমালয়ে নৈনিতাল ছাড়া বাঙালির বেড়ানোর অন্যতম প্রিয় জায়গা কৌশানি, আলমোড়া। আলমোড়ার সঙ্গে বাঙালির পরিচয় অনেকদিনের। বিবেকানন্দের প্রিয় জায়গার একটি। উদয়শংকর এখানে তাঁর নাচের স্কুল 'অল ইন্ডিয়া ও কালচারাল সেন্টার' খুলেছিলেন। আলমোড়ায় প্রাকৃতিক সৌন্দর্য আর মন্দির পাশাপাশি আছে। এখানকার হিমালয়ের রূপ-লাবণ্য মন ভরিয়ে দেবে। উত্তরাখণ্ডের ছোট্ট এক পাহাড়ি জায়গা কৌশানি। যেন একেবারে রূপকথার দেশ! প্রাকৃতিক সৌন্দর্য অতুলনীয়।


এখান উন্মুক্ত আকাশের নীচে দেখা যায় ত্রিশূল, নন্দাদেবী, পঞ্চচুল্লি। কৌশানির উন্মুক্ত আকাশ মেঘ পাহাড়ে মাখামাখি। কৌশানির নৈসর্গিক দৃশ্য মনোরম লাগে গান্ধী আশ্রমের চত্বরে। মহাত্মা গান্ধীও এসে অভিভূত হয়েছিলেন কৌশানির অপরূপ সৌন্দর্যে। সময়টা সম্ভবত ১৯২৯। এখানকার সৌন্দর্যে মুগ্ধ গান্ধীজি বলেন, ভারতের সুইজারল্যান্ড। পরবর্তী সময়ে গান্ধীজি স্মৃতিবিজড়িত স্থানটিতেই হয় গান্ধী আশ্রম। এবার উত্তরাখণ্ড ছেড়ে চলি হিমাচল প্রদেশ। বাঙালির প্রিয় ঠিকানার একটি। ঠিক করেছেন পাঠানকোট হয়ে ঢুকবেন হিমাচল প্রদেশ। ডালহৌসি নাকি ধরমশালা, কোনটা আগে যাবেন ভাবছেন। পাঠানকোট থেকে দুটোরই দূরত্ব প্রায় একই। চার-পাঁচ কিমির ফারাক। আগে ধরমশালা যান। আপার নাকি লোয়ার, কোনটাই থাকবেন, ঠিক আছে? নাকি গিয়ে ঠিক করবেন ভাবছেন। তাহলে আপার ধরমশালা থাকুন। অনেক সুন্দর, অনেক ফাঁকা। ধরমশালার পরিচিতি ভারতের স্কটল্যান্ড। ধৌলাধার পর্বতমালা আগলে রেখেছে ধরমশালা। দেবদারু, ওকে, পাইনের অরণ্যময় ধরমশালার নৈসর্গিক সৌন্দর্য বড়ই মনোরম। গাছগাছালির আড়ালে পাখির ডাক ভীষণই মায়াময় করে তোলে ধরমশালা।

আপার ধরমশালার পরিচিতি ম্যাকলয়েডগঞ্জ নামেই। এর আর এক পরিচয় ভারতের লাসা। তিব্বতিদের দ্বিতীয় বাসভূমি। দলাই লামা এখানে থাকেন। গড়ে উঠেছে বিশাল এক মনাস্ট্রি। এখানে রয়েছে অবলোকিতেশ্বর, পদ্মসম্ভবা এবং বুদ্ধের মূর্তি। এখান থেকে মাত্র এক কিমি দূরে ধরমকোট। গাদ্দিরা থাকেন এখানে। এখানকার নৈসর্গিক সৌন্দর্য অপূর্ব! তবে সবচেয়ে সুন্দর আরও ওপরে নাড্ডি। এই জায়গাটি থেকে ধৌলাধারের পর্বতশৃঙ্গগুলি পরিষ্কার এবং চমৎকার দেখা যায়। সে এক আলাদা রূপসৌন্দর্য! অবশ্যই আবহাওয়া পরিষ্কার থাকলে।


ধরমশালা থেকে ২৭ কিমি ওক, পাইনে ঘেরা কাবেরী গ্রাম। শান্ত, নিরিবিলি, নির্জন এক পাহাড়ি গ্রাম। এখান থেকে কিছু দূরে কাবেরী লেক। ধরমশালা থেকে ১০ কিমি দূরে ভাগসুনাথ। তবে বহু পুরনো শিবমন্দির যেতে হলে দেড় কিমির হাঁটাপথ। কিংবদন্তি, দৈত্যরাজ ভাগসুনাথের বাসভূমি। ১১ কিমি দূরে ডাল লেক। লেকটিকে ঘিরে রয়েছে পাইন, ওক, দেবদারুর অরণ্য। আর আছে গগনচুম্বী পর্বত। লেকের ধারে ধ্রুবেশ্বর শিবমন্দির। এই লেক নিয়ে একটি প্রচলিত কিংবদন্তি, মহাদেব এখানে বসে মগ্ন ছিলেন গভীর ধ্যানে। সেইসময় তাঁর জটা থেকে গড়িয়ে পড়ে জল। সেই জলে সৃষ্টি এই ডাল লেক।


ধরমশালা থেকে কাংড়া গাড়িতে ৪০ মিনিট।মিনিট। চিনা পরিব্রাজক হিউ এন সাঙ এর লেখায় পাওয়া যায় কাংড়ার কথা। জাহাঙ্গির নূরজাহান কাংড়ায় ঘুরতে এসেছিলেন। এখানকার দুর্গটি দারুণ। কিন্তু বর্তমানে আছে শুধু ধ্বংসাবশেষ। ছবির মতো সুন্দর এখানকার প্রকৃতি একসময় কাংড়ার খ্যাতি ছিল মিনিয়েচার পেন্টিংসের জন্য। কাংড়া পেন্টিংসের বিষয়বস্তু মূলত রাধাকৃষ্ণের লীলা। কাংড়া চিত্রকলার বিশাল এক সংগ্রহ আছে ভূরি সিং মিউজিয়ামে। এছাড়াও আরও অনেককিছু। সেসব দেখবেন যখন চাম্বা যাবেন।

একান্ন পীঠের আর সতীপীঠ জ্বালামুখী। এখানে পতিত হয়েছিল দেবীর জিভ। গর্ভগৃহের অনির্বাণ অগ্নিশিখাই হলেন দেবী। এখানে দেবী হলেন অম্বিকা আর ভৈরব উন্মত্ত। কাংড়া থেকে জ্বালামুখী মাত্র ৩৫ কিমি। গাড়িতে ঘণ্টাখানেক লাগে। জ্বালামুখী মন্দিরের চূড়া সোনায় মুড়ে দিয়েছিলেন মহারাজা রণজিৎ সিং। মাথার ওপরে ছত্রটি মুঘল সম্রাট আকবর নির্মাণ করে দিয়েছিলেন দেবীর মাহাত্ম্যে। জনশ্রুতি, এখানে অগ্নিশিখা স্পর্শ করলে হাত পোড়ে না।


ঘোরাঘুরি শেষ এবারের গন্তব্য ডালহৌসি। ব্যাগপত্র গুছিয়ে গাড়িতে রেখেছেন, নাকি ধরমশালা ফিরে পরদিন রওনা দেওয়া। জ্বালামুখী থেকে ডালহৌসি ১৪৪ কিমি, সময় লাগতে পারে ঘণ্টা সাড়ে চার। আর ধরমশালা থেকে ১১৮ কিমি। গাড়িতে ঘণ্টা চারেক। ডালহৌসির প্রকৃতি আভিজাত্যের সঙ্গে সৌন্দর্যের মিশেলে অনন্যসাধারণ। আর ডালহৌসির বাঙালির যোগাযোগ বহুদিনের। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এসেছিলেন ছোটবেলায় বাবা মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুরের হাত ধরে। রবীন্দ্রনাথের লেখায় ডালহৌসির কথা আছে। দেবেন্দ্রনাথ প্রায়ই আসতেন এখানে। ঠাকুরবাড়ি এখনও আছে। বর্তমানে সেনাদের থাকবার জায়গা। বাড়ির সামনে লেখা আছে। আর এক বাঙালি হলেন নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু। দু'জনেই বাঙালির সবচেয়ে প্রিয় মানুষ। ডালহৌসি বাসস্ট্যান্ডের কাছেই সুভাষ বাওলি। তিরিশের দশকে তিনি জেল থেকে ছাড়া পেয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন। এখানে ছিলেন প্রায় বছরখানেক। এখানকার জল খেয়ে সুস্থ হয়ে ওঠেন। এখনও নল দিয়ে জল পড়ে।

১০ কিমি দূরে ডাইন কুণ্ড। পাহাড়ি বাতাসে পাথরে পাথরে - বেজে ওঠে সুর। তাই এর আরেক নাম সংগীত পাহাড় বা Singing Hill, জায়গাটিও চমৎকার! ডালহৌসিতে এখনও ইংরেজ স্থাপত্যের অনেককিছুই চোখে পড়বে। ডালহৌসির ২১ কিমি দূরে খাজিয়ার। ভারতের সুইজারল্যান্ড। ধরমশালা হল স্কটল্যান্ড। খাজিয়ারের অতুলনীয় সৌন্দর্য! সামনে বিশাল সবুজ উপত্যকা আর পাইনের গভীর অরণ্য আর তারই মাঝে জোট্ট একটি লেক্য আট কিমি দূরে কালাউপ স্যাংচুয়ারি। ফার, পাইন, ওকের গভীর জঙ্গল। প্রচুর wildlife আছে। তার মধ্যে কালো ভালুক, লেপার্ড, হরিণ ইত্যাদি আছে। আছে বহুরকম পাখি। কাছেই খাজিনাগমন্দির। বারো শতকে তৈরি। অনেকেই ডালহৌসি থেকে গাজিয়ার ঘুরে যান। কিন্তু খাজিয়ার না. থাকলে এখান প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করা যায় না।




খাজিয়ার থেকে ২৩ কিমি দূরে চাম্বা। একঘণ্টা মতো লাগে গাড়িতে। বহু পুরনো পাহাড়ি শহর। ৯২০-তে এই শহরের পত্তন করেছিলেন রাজা সাহিল বার্মা। রাজকন্যা চম্পাবতীর জন্য ভারমোর থেকে রাজধানী নিয়ে আসেন এখানে। রাজকন্যার নামেই শহরের নাম চাম্বা। চাম্বার রুমাল আর এমব্রয়ডারির কাজ ভুবনবিখ্যাত। এখানে বিশাল এক মাঠ চৌগান। রবি নদীর ধারে। চাম্বা বিখ্যাত মন্দিরের জন্য। এখানে রয়েছে মন্দির কমপ্লেক্স। সেসব মন্দিরের স্থাপত্য অসাধারণ! ভূরি সিং মিউজিয়াম-এর কথা আগেই বলা। অবশ্যই ভিতরে যাবেন। নইলে অনেকটাই অদেখা থেকে যাবে।


চাম্বা থেকে ৬০ কিমি দূরে ভারমোর। দু'আড়াই ঘণ্টার মধ্যে পৌঁছে যাওয়া যায়। দুর্দান্ত রাস্তা। পথের দু'পাশের প্রকৃতিও অপূর্ব! সারাক্ষণ পথে সঙ্গ দেয় ইরাবতী নদী। ভারমোর থেকে হাঁটাপথে যেতে হয় মণিমাহেশ। ভারমোর আর এক মন্দিরনগরী। মন্দিরের পটভূমিতে দূরে বরফ পাহাড়ের হাতছানি এক স্বর্গীয় আনন্দ নিয়ে আসে মনো এখানে মনে হয় হাত ছোঁয়ালেই আকাশ!

হিমাচলের কিন্নর এখন বাঙালির কাছে বেড়ানোর প্রিয় জায়গা। অনেকেই কুলু, মানালি ঘুরে জালোরি পাস হয়ে নারাকান্ডা। তারপর নারকান্ডা থেকে রামপুর হয়ে কল্পা, সাংলা, ছিতকুল। তবে বেশিরভাগ ভ্রমণ প্রিয় মানুষ সিমলা হয়েই যান কিন্নরের বিভিন্ন জায়গায়। দার্জিলিঙের মতোই সিমলা হল বাঙালির এক প্রিয় শৈলশহর। আর সিমলার কালীবাড়ি বাঙালির প্রিয় গন্তব্য। আর কালীবাড়িতে দুপুরের খাওয়াদাওয়া করেননি এমন বাঙালি খুঁজে পাওয়া যাবে না। কালীবাড়ির দুর্গাপুজোও খুবই জনপ্রিয়। সিমলা ম্যালের আড্ডাও বাঙালির কাছে প্রিয়। ম্যালের গির্জাটি বহু পুরনো।

সিমলা থেকে দু'কিমি দূরত্বে জাকু হিলস। উচ্চতা আট হাজার ফুটেরও বেশি। এখান থেকে পুরো সিমলা শহরকে পাখির চোখে দেখা যায়। কিংবদন্তি, হনুমান যখন লক্ষ্মণের জন্য গন্ধমাদন পাহাড় নিয়ে যাচ্ছিলেন তখন পথক্লান্তি দূর করতে এখানে বসে খানিক বিশ্রাম নেন। পাহাড়ের ওপরেহনুমানমন্দির এবং তাঁর পায়ের ছাপ আছে। আশপাশে ঘোরাঘুরির বহু জায়গা রয়েছে। শুধু খোঁজ করে চলে যাওয়া। সিমলা থেকে কুফরি ১৫ কিমি, আধঘণ্টার রাস্তা। ছোট্ট একটা পাহাড়ি গ্রাম। প্রাকৃতিক রূপসৌন্দর্যে ভরপুর কুফরি। শীতে বরফের চাদরে ঢাকা পড়ে চারিদিক। সেইসময় স্কি-র আসর বসে। এখানে এলে অবশ্যই ইয়াকের পিঠে এক চক্কর ঘোরার অভিজ্ঞতা নেবেন। কুফরি থেকে রামপুর যাওয়ার পথে ফান্ড। ছবির মতো সুন্দর।


কুফরি থেকে নারকান্ডা ৪৮ কিমি। গাড়িতে লাগে ঘণ্টা দেড়েক। ওক, পাইনের ঘন অরণ্য নারকান্ডার সৌন্দর্যের শ্রীবৃদ্ধি ঘটিয়েছে। শীতে বরফের সাদা চাদরে মোড়া থাকে নারকান্ডা। সেইসময় পাহাড়ের ঢালে স্কি হয়। দেশ-বিদেশের বহু মানুষ আসেন স্কিয়িং করতে। নারকান্ডার উচ্চতা সাতাশশো মিটারের কিছু বেশি। আর আট কিমি দূরে তেত্রিশশো মিটার উচ্চতায় হাতু পিক। পাহাড়ের ওপর হাতু মায়ের মন্দির। যাওয়ার পথটি ভীষণই সুন্দর। ওক, পাইনের অরণ্য-মাঝে আপেল খেত বাড়তি আকর্ষণ। নারকান্ডা থেকে সাত কিমি দূরে কাছেরি গ্রামে আছে বহু পুরনো মহামায়া মন্দির।


নারকান্ডা ঘুরে রওনা দেওয়া রামপুরের দিকে। নারকান্ডা থেকে রামপুর ৬৬ কিমি। গাড়িতে সময় লাগে দু'ঘণ্টা। পুরনো কালের বুশাহর রাজ্যের রাজধানী। শতদ্রু নদীর ধারে ছোট্ট ছিমছাম শহর। এতটুকু ময়লা নেই কোথাও। অতীতকালে তিব্বতের বাণিজ্যিক যোগাযোগের গুরুত্বপূর্ণ শহর ছিল রামপুর। রাজাদের পদম রাজপ্রাসাদটি অপূর্ব! এখানকার রামপুরী চাদরের খুব নাম। শতদ্রু নদীর পারেই রামপুরের আপার এবং লোয়ার মার্কেট। দু'টি বাজারেই অনেককিছু পাওয়া যায়। লোয়ার মার্কেট আপার মার্কেটের তুলনায় কিছুটা সস্তা। যাওয়ার সময় দেখে নিয়ে ফেরার পথে কেনা সবচেয়ে বুদ্ধিমানের কাজ।


রামপুর থেকে রওনা দেওয়া সারাহানের উদ্দেশে। রামপুর থেকে সারাহান ৩৫ কিমি। সময় খুব জোর দেড় ঘণ্টা। শ্রীখণ্ড মহাদেব পর্বতের কোলে সবুজের দেশ সারাহান। প্রকৃতি ছাড়াও এখানকার প্রধান ভীমাকালী মন্দির। হিন্দু মন্দিরে বৌদ্ধরীতির অলাকরণ। অপূর্ব! ভীমাকালী হলেন বুশাহার রাজাদের উপাস্য দেবী। মন্দিরলাগোয়া গেস্ট হাউসটি বেশ ভাল। হিমাচলের রাজ্য পাখি মোনাল বা মুনাল এখানে দেখা যায়। আরও অনেক পাখি আছে সারাহানে। সারাহান থেকে সাংলার দূরত্ব সামান্য কিছু বেশি। তাই প্রথমে কল্পা যাওয়াটাই ভাল। সারাহান থেকে কল্পা ৭৮ কিমি। সময় লাগে ঘণ্টা আড়াই। কল্পার তিন গ্রাম- কল্পনা, চিনি আর রোগী। কল্পার যেখানেই থাকুন না কেন কিন্নর-কৈলাসের চুড়ো। জনশ্রুতি, মহাদেবের আশ্রয় এর শৃঙ্গ। দিনের যখনই চোখ মেলবেন তখনই দেখবেন পাহাড়চূড়ায় কালো লম্বা পাথরের রং পরিবর্তন। বিশেষ করে, সূর্যোদয় আর সূর্যাস্তের সময় অপূর্ব লাগে!


কল্পার নৈসর্গিক সৌন্দর্য উপভোগ করতে হয় ধীরে ধীরে। ওক, পাইনের ফাঁকে তুষারাবৃত পাহাড়শৃঙ্গগুলি উঁকি আরও সৌন্দর্য বৃদ্ধি করে কল্পার! কল্পাকে বলা হয়, স্বর্গের রাজ্য! এখানকার আপেল ভুবনবিখ্যাত। এখানকার আপেলের সাইজ অনেক বড়। এত বড় সবুজ আপেল নাকি আর কোথাও পাওয়া যায় না। এই আপেল গাছ থেকে পেড়ে খাওয়ার সৌভাগ্য হয়েছিল। আপেলে কামড় দেওয়ার সঙ্গেসঙ্গে সারা হাতে রসে ভরে যায়।


কল্পা থেকে ১৩ কিমি দূরে রেকং পিও। আগের সৌন্দর্য আর প্রকৃতির মজা বর্তমানে তেমন আরনেই। তবে রোগী গ্রামের শেষে গিয়ে দাঁড়ালে আমেরিকার ক্যানিয়নের পাওয়া যায়। চিনি গ্রামের বহু কিয়াবের শায়নের আদর্য পাওয়া যায়। দেখে আসা গ্রামবাসীর হাতের সূক্ষ্ম কাজ। কল্পা থেকে সাংলা ৩১ কিমি। পাহাড়ের চড়াই-উতরাই পথটি নয়নাভিরাম। আর সাংলা পৌঁছলে বিস্মিত হতে হয়। বিশাল উন্মুক্ত বসপা উপত্যকা। দূরে একধার দিয়ে বয়ে যায় শতদ্রু। পাইন, দেওদারের অরণ্য অপরূপা সাংলার সৌন্দর্য বৃদ্ধি করেছে। কিছুটা দূরে বুশাহার রাজাদের দুর্গ কামুর। দুর্গের ভিতর কামাখ্যা মায়ের মন্দির।

সাংলা থেকে ছিতকুল মাত্র ২৩ কিমি। ভারতের শেষ গ্রাম ছিতকুল। পুরনো দিনে তিব্বতের সঙ্গে বাণিজ্য হত এই পথে। দ্বিতকুল হল রূপকথার দেশ। বরফ এবং গাছগাছালির সবুজ একসঙ্গে দেখা যায় ছিতকুলে। স্থানীয় দেবীর পাঁচশো বছরের পুরনো মন্দির আছে এখানে। দুর্গাপুজোর দশেরার দিন বড় উৎসব হয়। পড়াশোনা এবং কাজের জন্য যাঁরা গ্রামের বাইরে থাকেন তাঁরা সকলেই ফিরে আসেন এই ছোট্ট গ্রামে। ছিতকুলের সৌন্দর্য অপরিসীম। পুরো এলাকায় প্রচণ্ড বরফ পড়ে। শীতে তো বরফে ঢেকে যায়। অন্যান্য জায়গার থেকে ছিতকুল অনেক বেশি ঠান্ডা। তাই সাংলা থেকে ঘুরে যেতে পারেন অনায়াসেই। সাংলা থেকে ছিতকুল আসবার পথে রকছাম পড়বে। ছবির মতো গ্রাম্য

পাহাড় বেড়ানো অনেক হল। এবার যাওয়া যাক, বালির দেশ মরুভূমি। মরুভূমির যে অনন্য সৌন্দর্য থাকে তা মরুদেশে না গেলে বোঝা যাবে না মরুভূমির রূপের বাহার! শুরু হোক গোলাপি শহর জয়পুর থেকে। রাজস্থানের রাজধানী। একসময় জয়পুরের রাজধানী ছিল অম্বর পাহাড়ে। মহারাজ সোয়াই জয়সিংহ তাঁর রাজ্য চালানোর সুবিধার জন্য সমতলে রাজধানী বানালেন। রাজা জয় সিংহের নামেই নামকরণ হল জয়পুর। আর শহর সাজানোর ভার পড়ল বাঙালি স্থপতি বিদ্যাধর ভট্টাচার্যর ওপর। জয়পুরই আমাদের দেশের প্রথম পরিকল্পিত শহর। আর জয়পুর গোলাপি শহর হওয়ার পিছনের কারণ হল, ১৮৭৬ সালে প্রিন্স অফ ওয়েলস এর জয়পুর ভ্রমণ! তাঁর সম্মানার্থে মহারাজা রাম সিং সারা শহর গোলাপি রঙে রাঙিয়ে দিলেন।

জয়পুরে দেখার বহু কিছু আছে। তার মধ্যে অবশ্যই করে দেখতে হবে, নইলে জয়পুর ঘোরাঘুরিই বৃথা হাওয়ামহল, সিটি প্যালেস, যন্তরমন্তর, নাহারগড় ফোর্ট, জয়গড় দুর্গ (এখানেই আছে সবচেয়ে বড় কামান জয়বান), অম্বর • প্রাসাদ, জলমহল, মোতি ডুংরি, শিশোদিয়া রানি বাগ, গলতা, রামনিবাস বাগ ইত্যাদি।


জয়পুর থেকে সারারাতের জার্নি উদয়পুর। রাত্রিবেলা বাসে চাপলে ভোরের পাখির ডাকের সঙ্গে পৌঁছে যায় উদয়পুর। রাজস্থানের শ্বেত শহর। আরাবল্লি পাহাড়ের কোলে ছবির মতো, স্বপ্নের শহর। উদয়পুরকে বলা হয় প্রাচ্যের ভেনিস। প্রকৃতির উজাড় করা সৌন্দর্যের সঙ্গে মিশ্রণ ঘটেছে মানুষের তৈরি শিল্পশৈলী। দুইয়ে মিলিয়ে উদয়পুর হয়েছে সুন্দর থেকে সুন্দরতম! উদয়পুরেও দেখবার অনেককিছু আছে। তার মধ্যে..


পিচোলা লেকের পাড়ে সিটি প্যালেস আলাদা করে নজর কাড়ে। লেকের চারপাশে গাছগাছালি ঘেরা। আছে জগনিবাস প্রাসাদ আর জগমন্দির। পূর্ণিমার রাতে লেকে নৌকাভ্রমণ সারাজীবনের অভিজ্ঞতা! আছে ফতেহ সাগর লেক। কিছুটা দূরে সহেলিও কি বাড়ি। মহারানা তাঁর সখীদের সঙ্গে এখানে অবসর যাপন করতেন। শ্বেতপাথরের এই প্রাসাদে রয়েছে ছোট্ট এক বাগান আর বহু ফোয়ারা। সেসব ফোয়ারার আছে রোম্যান্টিক নাম। শহর থেকে বেশকিছুটা দূরে রাজসমন্দ লেক। পাশেই আছে বেশ কয়েকটি মন্দির। উদয়পুর থেকে ৪০-৪২ কিমি দূরে হলদিঘাটি। যার কথা আমরা সকলেই বাল্যে ইতিহাসে পড়েছি। হ্যাঁ, এখানেই মুঘল সম্রাট আকবর। এর সেনাদের সঙ্গে মরণপণ যুদ্ধ করেছিলেন রানা প্রতাপ সিংহ। প্রাণ দিয়েছিল প্রভুভক্ত ঘোড়া চৈতক। ৪৮ কিমি দূরে নাথদ্বারা। জনশ্রুতি, মুঘলদের আক্রমণ থেকে বাঁচতে কৃষ্ণের মূর্তি বৃন্দাবন থেকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল নিরাপদ কোনও জায়গায়। এখানে এসে গরুর গাড়ির চাকা আটকে যায় কাদায়। তাকে আর নাড়ানো যায়নি। সঙ্গী পুরোহিতেরা এখানেই কৃষ্ণের মূর্তি প্রতিষ্ঠা করার সিদ্ধান্ত নেন। সেই থেকে কৃষ্ণষ্ণ এখানে শ্রীনাথজি হিসেবে পূজিত হন। ঘুরে এলে খারাপ লাগবে না জয়সমন্দ লেক এবং জয়সমন্দ স্যাংচুয়ারি। এখানে প্রচুর বন্যপ্রাণী আছে।

উদয়পুর থেকে চিতোর ঘণ্টা দুইয়ের জার্নি। কমবেশি ১১১ কিমি। চমৎকার জায়গা এবং ইতিহাসে ঠাসা চিতোর। ইতিহাসের এক উজ্জ্বল অধ্যায় চিতোরগড়। এখানকার প্রতিটি ধুলোকণায় মিশে আছে রাজপুত বীরদের শৌর্যবীর্য। শত শত রাজপুত নারীর জহরব্রতের কথা এখনও উড়ে বেড়ায় চিতোরের বাতাসে। কান পাতলে শোনা যায় কৃষ্ণপ্রেমী মীরা বাঈয়ের সুরেলা কন্ঠের গান। তাঁর মন্দিরে গেলে যেন ইতিহাসের পৃষ্ঠা থেকে উঠে আসে সেকালের সেইসব দৃশ্যাবলী। চিতোরের ধ্বংসাবশেষ গৌরবময় ইতিহাসের সাক্ষী। চিতোর না গেলে রাজস্থান ভ্রমণ অসম্পূর্ণ থেকে যায়।


কিংবদন্তি, এই চিতোরগড় নির্মাণ করেছিলেন মধ্যম পাণ্ডবভীম। ইতিহাস বলে সাত শতকে এই দুর্গ করেছিলেন মৌর্য বংশের শাসকেরা। তবে এই দুর্গ সবচেয়ে বেশি শাসন করেছিলেন শিশোদিয়া রাজারা। বহু কাহিনি ছড়িয়ে আছে চিতোরের পথে ও প্রান্তরে। বিশেষ করে, পদ্মিনীকে অনেক কাহিনি। অনেকেই বলে থাকেন, পদ্মিনী একটি কল্পিত চরিত্র। সে যাইহোক, ভাবতে ভাল লাগে, শুনতে ভাল লাগে পদ্মিনী-কাহিনি। এখানে আছে বিজয়স্তম্ভ, কীর্তিস্তম্ভ, রানা কুম্ভের প্রাসাদ, সরোবরের মাঝে পদ্মিনীর প্রাসাদ, চিতোরেশ্বরী মন্দির, কুম্ভ শ্যাম মন্দির ইত্যাদি। চিতোরকে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখতে সময় লাগে অনেক। তবে, আপনার বা আপনাদের হাতে অত সময় নেই, তাই ঝাঁকিদর্শনের মাঝে গাইডের কথাগুলো শুনুন, মনে রাখুন, নইলে লিখে রাখুন।


অধিকাংশ বাঙালির কাছে রাজস্থান ভ্রমণ মানেই সোনার কেল্লা। আর সোনার কেল্লার অর্থ জয়সালমের। এই শহরের এক জন্মকাহিনি আছে। অর্জুনকে একবার বলেছিলেন শ্রীকৃষ্ণ, তাঁর যাদবকুলেরই কোনও এক বংশধর নতুন এক রাজ্য গড়ে তুলবেন ত্রিকূট পাহাড়ে। বারো, শতকের মাঝামাঝি যাদব বংশের রাজা রাওয়াল জয়সাল ভাঁর পুরনো রাজ্য ছেড়ে দিয়ে ত্রিকূট পাহাড়ের ওপর গড়ে তোলেন নতুন রাজধানী। নিজের নামেই নামকরণ করলেন জয়সালমের। এটি বহু পুরনো। চিতোরগড়ের পরই নির্মিত হয়েছিল এই দুর্গ। হলুদ রঙের বেলেপাথরে তৈরি। সূর্যকিরণে মনে হয় সোনায় মোড়া। বিশ্ববরেণ্য পরিচালক সত্যজিৎ রায়ের সুবাদে আজ বিশ্বব্যাপী এর পরিচিতি 'সোনার কেল্লা'। এই কেল্লার কাজ অপূর্ব! সারা প্রাসাদজুড়ে জাফরির কাজ বিস্মিত করে। জেনানা মহল, রংমহল, গুজবিলাস, জুনা মহল, মোতি মহল-

এইসব মহলের সূক্ষ্ম কারুকাজ অবাক দৃষ্টিতে অপলক থাকতে হয়! দুর্গের অন্দরমহলে অনেকগুলি মন্দির আছে। সোনার কেল্লায় গেলেই সত্যজিৎ রায়ের ছবিটি চোখে ভাসে। তবে, মুকুলের বাড়ির একেবারে ভগ্নদশা।


জয়সালমের থেকে কিছুটা দূরে লোদুর্ভা। রাওয়াল জয়সালের পুরনো রাজধানী। আজ এখানে কেবলই ধ্বংসাবশেষ। ১৭ কিমি দূরে উড ফসিল পার্ক। এখানে আছে ১৮ কোটি বছরের পুরনো ফসিল। দেখলেই শিহরন জাগে! ৪০-৪২ কিমি দূরে ডেজার্ট ন্যাশনাল পার্ক বা মরু জাতীয় উদ্যান। এখানে বহুরকম প্রাণী দেখা যায়। আমাদের চোখে পড়েছিল চিঙ্কারা ছাড়াও ডেজার্ট ফক্স। বহুরকমের পাখি আছে। দেখেছিলাম প্রচুর গ্রেট ইন্ডিয়ান বাস্টার্ড। আছে সাম বালিয়াড়ি। কিছুটা দূরে খুরি গ্রাম। এই দুই জায়গার sand dunes বা বালিয়াড়ি অপূর্ব! সামের চেয়ে ঘুরির বালিয়াড়ি বেশি ভাল। থর মরুভূমির মাঝে গ্রামটির সৌন্দর্য অপূর্ব! মানুষগুলো আরও ভাল। বালিয়াড়িতে উটের পিঠে চেপে সাফারি করতে বেশ রোমাঞ্চ জাগে! উটের পিঠে ওঠা না নামার পর লালমোহনবাবুর কথা মনে আসে। মনে পড়ে তাঁর সংলাপ, "উট একটা সাংঘাতিক জন্তু মশাই।"

রাজস্থান বিশাল এক মরু রাজ্য। একবারে দেখা সম্ভব নয়। বারেবারে আসতে হয়। আর রাজস্থানে বারবার আসাও যায়। তাই আপাতত যোধপুর দিয়ে শেষ করা যাক। রাজস্থানের দ্বিতীয় বৃহৎ শহর যোধপুর। এখানকার মেহরণগড় দুর্গের ভিতর ঢুকলে মনে হয় যেন রূপকথার রাজ্যে প্রবেশ করলাম! সাড়ে পাঁচশো বছরেরও বেশিপুরনো দুর্গ! এই দুর্গ নির্মাণ করেছিলেন রাও যোধাজি। দুর্গে প্রবেশদ্বার দু'টি। একটি জয়পোল, অন্যটি ফতেপোল বা বিজয় তোরণ। এছাড়াও রয়েছে আরও পাঁচটি প্রবেশদ্বার। একটি প্রবেশপথেই আছে ১৫ জন সতী নারীর হাতের ছাপ। এঁরা সকলেই সহমরণে গেছিলেন রাজা মান সিংহের চিতায়। দুর্গের ভিতর যেন অরণ্যদেবের খুলি গুহা। আছে রাজাদের ব্যবহার করা বহুরকম জিনিসপত্র। সম্রাট আকবরের তরবারি আছে। আছে শাহজাহানের ব্যবহৃত পোশাক। সেই পোশাক দেখলে বোঝা কী বিশাল চেহারা ছিল মুঘল সম্রাটের! দুর্গের নীচে যশোবন্ত থাডা। এটি রাজপুত রাজাদের সমাধি। কাছেই উমেদ ভবন। বিশাল প্রাসাদ। এখানেও দেখার আছে অনেককিছু। শহর থেকে আট কিমি দূরে মান্ডোর। দেড়হাজার বছরেরও বেশি পুরনো কৃষ্ণমন্দির!


ইতিহাসের থেকে ছুটি নিয়ে কিছুক্ষণ ধরা দেওয়া যাক প্রকৃতির মাঝে। পাঁচ কিমি দূরে গাছগাছালি ঘেরা বালসমন্দ লেক। আর ১১ কিমি দূরে কৈলানা লেক। আর ২০-২৫ কিমি দূরত্বে গুড়া বিষ্ণোই। অরণ্যের মাঝে প্রচুর পাখপাখালি চোখে পড়বে। আর পরিযায়ী পাখিরা দলে দলে ভিড় করে সর্দার সমন্দ লেকে। তবে যেটা যাবেনই, সেই জায়গার নাম ঔশিয়া।

যোধপুর থেকে বিকানেরের পথে ৬০ কিমি। থর মরুভূমির মাঝে এক মরূদ্যান। প্রায় দেড়হাজার বছর আগে ওশিয়া ছিল খুবই সমৃদ্ধশালী জনপদ। বহু কিছু ধ্বংস হলেও রয়ে গেছে অনেককিছু! এখনও অক্ষত হিন্দু এবং জৈন মন্দির। চমৎকার ওইসব মন্দিরের স্থাপত্য। রাজস্থানের একমাত্র হিল স্টেশন মাউন্ট আবু। এই স্থান ঘিরে বহু কিংবদন্তি চালু। চমৎকার জায়গা। বেশ ঠান্ডা ঠান্ডা থাকে। নাক্কি লেক ঘিরেই মাউন্ট আবুর সবকিছু। কিংবদন্তি বলে, দেবতারা নখ দিয়ে এই লেক তৈরি করেছিলেন! নাক্কি লেক থেকে কিছুটা দূরে সানসেট পয়েন্ট। এখান থেকে সূর্যাস্ত দেখা এক রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতা। বহু মানুষ আসেন সূর্যাস্তের সময়। দশ-এগারো কিমি দূরে অচলগড়। এখন আর কিছুই নেই। সবই ধ্বংস্তূপে পরিণত।


চার কিমি দূরে দিলওয়াড়া। এখান পাঁচটি জৈন মন্দির আছে- আদিনাথ, নেমিনাথ, পার্শ্বনাথ, ঋষভদেব এবং মহাবীর। বাইরে থেকে কিচ্ছু বোঝা যায় না ভিতরে কী বিস্ময় লুকিয়ে আছে। যা দেখলে অবস্থা হতবাক! মন্দিরের ভাস্কর্য, শিল্পশৈলী শিল্পীর কল্পনা- সবমিলিয়ে অভূতপূর্ব! শোনা যায়, বহিরাগত শত্রুর হাত থেকে রক্ষার জন্য বাইরের অবস্থা সাধারণ করে রাখা হয়েছে। দিলওয়াড়া দেখা সারাজীবনের অপূর্ব এক অভিজ্ঞতা সঞ্চয়!

 

 
 
 

Comments


ssss.jpg
sssss.png

QUICK LINKS

ABOUT US

WHY US

INSIGHTS

OUR TEAM

ARCHIVES

BRANDS

CONTACT

© Copyright 2025 to Debi Pranam. All Rights Reserved. Developed by SIMPACT Digital

Follow us on

Rojkar Ananya New Logo.png
fb png.png

 Key stats for the last 30 days

bottom of page