বসন্ত পঞ্চমীকে বলা হয় শ্রী পঞ্চমী। শ্রী অর্থাৎ লক্ষী। দেবী সরস্বতীর সঙ্গে 'শ্রী' কি সম্পর্ক এ প্রশ্ন মাথায় আসতেই পারে। দেবী সরস্বতীর আশীর্বাদে বিদ্যালাভ যাতে জীবনকে শ্রীমন্ডিত করে জীবনের লক্ষ্য স্থির করে দেয় তাই সরস্বতীর হাতে যবের শিস দিয়ে তাতে লক্ষ্মীত্ত্ব অর্পণ করা হয়। এ কারণেই এই দিনটিকে বলা হয় শ্রীপঞ্চমী।


সরস্বতী, লক্ষ্মী ও পার্বতী হিন্দুধর্মে "ত্রিদেবী" নামে পরিচিত। ধ্যানমন্ত্রে বর্ণিত প্রতিমাকল্পতে দেবী সরস্বতীকে শ্বেতবর্ণা, শ্বেতপদ্মে আসীনা, মুক্তার হারে ভূষিতা, পদ্মলোচনা ও বীণাপুস্তকধারিণী এক দিব্য নারীমূর্তিরূপে কল্পনা করা হয়েছে। দেবী সরস্বতীর ঐশ্বর্য হল জ্ঞান। তাঁর সর্বাঙ্গ দুধের মতো ধবধবে সাদা তবে চোখের মণি, মাথার চুল ও ভ্রু-দুটি কালো। গলায় মুক্তোর মালা, অন্যান্য সমস্ত অলঙ্কারই সাদা। প্রসন্ন দিব্য বিগ্রহের বাঁহাতে বীণা। শুদ্ধসত্ত্ব দেবীর পরিহিত বস্ত্রাদিও শ্বেতবর্ণের। ডানহাতে শ্বেতপদ্ম। বাহন হাঁসটিও শ্বেতপদ্মের মতো সাদা। তিনি জ্ঞান, সঙ্গীত, শিল্পকলা, বাক্য, প্রজ্ঞা ও বিদ্যার্জনের দেবী। দেবী রূপে সরস্বতীর প্রথম উল্লেখ পাওয়া যায় ঋগ্বেদে।
অম্বিতমে নদীতমে দেবিতমে সরস্বতি (अम्बितमे नदीतमे देवितमे सरस्वति)
— ঋগ্বেদ ২.৪১.১৬[১৬]
অর্থাৎ সরস্বতী হলেন মাতৃকাগণের মধ্যে শ্রেষ্ঠ, নদীগণের মধ্যে শ্রেষ্ঠ এবং দেবীগণের মধ্যে শ্রেষ্ঠ।

সরস্ (सरस्) ও ৱতী (वती) – এই দুই সংস্কৃত শব্দের সন্ধির মাধ্যমে সরস্বতী নামটির উৎপত্তি। সরস্ শব্দের আক্ষরিক অর্থ হ্রদ বা সরোবর হলেও এটির অপর অর্থ "বাক্য"; ৱতী শব্দের অর্থ "যিনি অধিষ্ঠাত্রী"। নামটি আদিতে "সরস্বতী" নামে পরিচিত এক বা একাধিক নদীর সঙ্গে যুক্ত হলেও এই নামটির আক্ষরিক অর্থ তাই হয় "যে দেবী পুষ্করিণী, হ্রদ ও সরোবরের অধিকারিণী" বা ক্ষেত্রবিশেষে "যে দেবী বাক্যের অধিকারিণী"।
সংস্কৃত ব্যাকরণ অনুযায়ী "সরস্বতী" শব্দটির সন্ধিবিচ্ছেদ এভাবেও হতে পারে - সরসু+অতি; সেক্ষেত্রে শব্দটির অর্থ দাঁড়ায় "যা প্রচুর জল ধারণ করে"।অপর ব্যাখ্যা অনুযায়ী, "সর" শব্দের অর্থ "সার" বা "নির্যাস" এবং "স্ব" শব্দের অর্থ "আত্ম"। এই অর্থ ধরলে "সরস্বতী" নামটির অর্থ দাঁড়ায় "যিনি আত্মার সার উপলব্ধি করতে সহায়তা করেন" অথবা "যিনি (পরব্রহ্মের) সার ব্যক্তির আত্মার সঙ্গে মিলিত করেন"।

সাধারণত দ্বিভূজা বা চতুর্ভূজা মূর্তিতে পূজিতা হন তিনি। দ্বিভূজা মূর্তিতে তাঁর হাতে থাকে বীণা ও পুস্তক অথবা লেখনী/কলম ও পুস্তক; চতুর্ভূজা মূর্তিতে থাকে পুস্তক, অক্ষমালা, সুধাকলস ও বীণা; অথবা ব্যাখ্যা মুদ্রা, বীণা, সুধাকলস ও পুস্তক; অথবা অক্ষমালা, দুটি শ্বেত পদ্ম ও পুস্তক; অথবা পাশ, অঙ্কুশ, বিদ্যা বা পুস্তক ও অক্ষ মালা। হিন্দুধর্মে এই প্রত্যেকটি বস্তুরই প্রতীকী অর্থ রয়েছে।

দেবীর বাহন রাজহাঁস কেন?
রাজহাঁসকে যদি দুধ এবং জলের মিশ্রণ দেওয়া হয়, জল ত্যাগ করে শুধু দুধ পান করার অনন্য ক্ষমতা রাজহাঁসের রয়েছে। এই বৈশিষ্ট্যটি জীবনের জটিলতার মধ্যে জ্ঞানান্বেষণ, ভাল এবং মন্দের মধ্যে পার্থক্য করার ক্ষমতা, অসত্য থেকে সত্য, বাহ্যিক প্রদর্শন থেকে সারাংশ এবং অদৃশ্য থেকে চিরন্তন এর রূপক হিসাবে কাজ করে। রাজহাঁসের সাথে তার যোগসূত্রের কারণে, সরস্বতীকে হংসবাহিনী ও বলা হয়। রাজহাঁস আধ্যাত্মিক পরিপূর্ণতা, উৎকর্ষ এবং মোক্ষের প্রতীক।

দেবীর জন্ম বৃত্তান্ত:
ভগবত পুরাণ অনুযায়ী, দেবী আদ্যার অংশ হিসেবে জন্ম হয় দেবী সরস্বতীর। শুম্ভ ও নিশুম্ভ নামে ২ দৈত্য একবার মর্ত্য ও স্বর্গে তাণ্ডব চালায়। তাদের অত্যাচারের হাত থেকে দেবলোক ও ভূলোককে রক্ষা করতে দেবী দুর্গার শরীর থেকে জন্ম হয় আরেক দেবীর। তিনি কৌশিকী। তিনিই সরস্বতী। পদ্মপুরাণ মতে, সরস্বতী দক্ষরাজের কন্যা, কাশ্যপ মুনির পত্নী। আবার ব্রহ্মবৈবর্ত পুরাণ মতে তিনি নারায়ণের ঘরণী।

প্রজাপতি ব্রক্ষ্মা এবং দেবী সরস্বতী:
মৎস্য পুরাণ অনুসারে, সৃষ্টির উদ্দেশ্যে ব্রহ্মা নিজের থেকে সরস্বতীকে সৃষ্টি করেছিলেন। এরপর তাঁর রূপে মোহিত হয়ে ব্রহ্মা তাকে তীব্রভাবে কামনা করতে শুরু করেন এবং তার দিকে তাকানো বন্ধ করতে পারেন না। ব্রহ্মার কামার্ত দৃষ্টি লক্ষ্য করে, সরস্বতী তাকে প্রদক্ষিণ করতে শুরু করেন। সরস্বতীকে দেখার জন্য মুখ না ঘোরানোর ইচ্ছায় ব্রহ্মা তার মাথার পাশে এবং পিছনে মুখ সৃষ্টি করেন। সরস্বতী তখন আকাশে লম্ফ দিলেন এবং ব্রহ্মার কাছ থেকে একটি পঞ্চম মুখ উপরের দিকে তাকিয়ে উঠে আসে। পলায়ন করতে অক্ষম হয়ে, সরস্বতী ব্রহ্মাকে বিবাহ করেন।

দেবী সরস্বতীর তান্ত্রিক রূপ 'মাতঙ্গী':
তিনি মহাবিদ্যার বা দশ তান্ত্রিক দেবীর অন্যতম এবং হিন্দু মাতৃদেবীর একটি রূপ। তাকে সঙ্গীত ও শিক্ষার দেবী সরস্বতীর তান্ত্রিক রূপ বলে মনে করা হয়। মাতঙ্গী বাগ্মীতা, সঙ্গীত, জ্ঞান এবং শিল্পকলা পরিচালনা করেন। তার উপাসনা অলৌকিক ক্ষমতা অর্জনের জন্য নির্ধারিত, বিশেষ করে শত্রুর উপর নিয়ন্ত্রণ অর্জন, অন্যকে নিজের প্রতি আকৃষ্ট করা, শিল্পকলায় দক্ষতা অর্জন এবং সর্বোচ্চ জ্ঞান অর্জন করা।

এবছর সরস্বতী পুজো কবে?
বিশুদ্ধ সিদ্ধান্তমতে পঞ্চমী তিথি শুরু হবে, ১৯ মাঘ, রবিবার। সকাল ৯ টা ১৬ মিনিটে শুরু হবে পুজো। পঞ্চমী তিথি শেষ হবে ৩ ফেব্রুয়ারি সোমবার, সকাল ৬ টা ৫৩ মিনিটে।

পুজোর বিশেষ নিয়ম:
সকালে নিম হলুদ বাটা মেখে স্নান সেরে শুদ্ধ বস্ত্র পরুন। পুজোর স্থানে একটি পিড়ির ওপর সাদা কাপড় পেতে সরস্বতীর মূর্তি স্থাপন করুন। মূর্তির সামনে জলভর্তি ঘট বসিয়ে তার ওপরে রাখুন আমের পল্লব ও তারওপর পান পাতা। একপাশে হলুদ, আতপ চাল, সাদা ও বাসন্তী রঙের ফুল, পাঁচ রকম ফল, মিষ্টি, নৈবেদ্য। মূর্তির এক পাশে রাখুন কাঁচা দুধ ভর্তি দোয়াত, খাগের কলম ও বই। আমের মুকুল, পলাশ ফুল অবশ্যই অর্পণ করবেন। সঙ্গীত বা নৃত্যশিল্পী হলে এই শিল্পের সঙ্গে যুক্ত সামগ্রীও মূর্তির পাশে রাখতে পারেন।

বসন্ত পঞ্চমী স্পেশ্যাল একডজন পুজোর ভোগ
সরস্বতী পুজোয় নিবেদন করুন এই বিশেষ ভোগ। একডজন রেসিপি দিলেন অনন্যা পরিবারের সদস্যরা।

স্বাগতা সাহা
ভোগের নবরত্ন খিচুড়ি
কী কী লাগবে
৪০০ গ্ৰাম গোবিন্দভোগ চাল, ৪০০ গ্ৰাম মূগডাল, ৪-৫ টেবিল চামচ ঘি, ২ টেবিল চামচ Shalimar's সর্ষের তেল, ১ বাটি কিউব করে কাটা ভাজা পনির, ৪-৫ টেবিল চামচ কাজুবাদাম ভাজা, ১ বাটি (মাঝারি) ফুলকপি, ১ বাটি (মাঝারি) আলু টুকরো করে কেটে সেদ্ধ করা, ১ বাটি (মাঝারি) গাজর টুকরো করে কাটা, ১ বাটি বিনস্ টুকরো করে কাটা, ১/২ বাটি মটরশুঁটি, পরিমাণ মত হালকা উষ্ণ গরম জল, স্বাদ মতো নুন, ১/২ চা চামচ Shalimar's হলুদ গুঁড়ো, ৩-৪ টেবিল চামচ আদা বাটা, ৩-৪ টেবিল চামচ ঘি, ৪-৫ টেবিল চামচ Shalimar's সর্ষের তেল, ২ টেবিল চামচ চিনি, ৪-৫ টুকরো কাঁচালঙ্কা, ১ চা চামচ গোটা জিরে, ৩-৪ টি শুকনো লঙ্কা, ৩-৪ টি তেজপাতা টুকরো করা, ২-৩ টেবিল চামচ কিশমিশ, ৫-৬ টুকরো এলাচ, ৫-৬ টুকরো ১" দারুচিনি, ২ টেবিল চামচ Shalimar's জিরা গুঁড়ো, ২-৩ টেবিল চামচ Shalimar's গরম মশলা

কীভাবে বানাবেন
গোবিন্দভোগ চাল ভালো করে মুছে ঘি মাখিয়ে রাখুন অন্তত ১/২ ঘন্টা। শুকনো খোলায় মুগডাল ভেজে রাখুন। পনির, ফুলকপি, গাজর, আলু, বিনস্ ভেজে নিন তুলে নিন। কড়াই এ সরষের তেল গরম করে ফোড়নের উপকরণ দিয়ে গরম জল, মুগডাল দিয়ে ফুটতে দিন। ৫-৬ মিনিট পর চাল, স্বাদমতো নুন, তেজপাতা, কাঁচালঙ্কা দিন। সবকিছু একসঙ্গে নাড়তে থাকুন ১০-১২ মিনিট। পনির, কিশমিশ, কাজুবাদাম ভাজা, আলু, গাজর, ফুলকপি, মটরশুটি, বিনস্ সব একসঙ্গে মিশিয়ে দিন।আদা বাটা দিয়ে দিন। ৫-৭ মিনিট ফোটানোর পর হলুদ ও চিনি মেশান। তারপর সময়ের শেষে ঘি, গরম মশলা গুঁড়ো মিশিয়ে নামিয়ে নিন। তৈরী হয়ে গেলো ভোগের নবরত্ন খিচুড়ি।

নিরামিষ ধোঁকার ডালনা
কী কী লাগবে
ছোলার ডাল ২০০ গ্রাম, টমেটো বাটা ১ টি, আদার টুকরো ১ ইঞ্চি, আদা বাটা ১ টেবিল চামচ, কাঁচা লঙ্কা ৪-৫ টি, তেজপাতা ১ টি, Shalimar's লঙ্কা গুঁড়ো ১ চা চামচ, Shalimar's হলুদ গুঁড়ো ১ চা চামচ, Shalimar's জিরে গুঁড়ো ২ চা চামচ, Shalimar's ধনে গুঁড়ো ২ চা চামচ, চিনি ২ টেবিল চামচ, নুন স্বাদ অনুযায়ী, Shalimar's তেল পরিমাণ মতো, ঘি ১ টেবিল চামচ, Shalimar's গরম মশলা গুঁড়ো ১/২ চা চামচ, শুকনো লঙ্কা ২ টি, কাজুবাদাম বাটা এবং পোস্ত বাটা ২ চা চামচ করে

কীভাবে বানাবেন
ছোলার ডাল ৫-৬ ঘণ্টা ভিজিয়ে রেখে ওর মধ্যে আদা আর কাঁচালঙ্কা দিয়ে বেটে নিন। কড়াইতে ২ টেবিল চামচ তেল দিয়ে ডাল বাটার মিশ্রণ ঢেলে দিন। একে একে স্বাদ অনুযায়ী নুন, ১ টেবিল চামচ চিনি, ১ চা চামচ জিরে গুঁড়ো, ১ চা চামচ ধনে গুঁড়ো দিয়ে অল্প আঁচে নেড়ে নিন। একটা পাত্রে তেল মাখিয়ে ওর মধ্যে শুকনো করা ডালের মিশ্রণ ঢেলে সমানভাবে ছড়িয়ে দিন। ছুরি দিয়ে বরফির আকারে কেটে নিন মিশ্রণটা গরম থাকতে থাকতেই। তারপর ঠান্ডা হলে টুকরোগুলো কড়াইতে পর্যাপ্ত পরিমাণে তেল দিয়ে সাবধানে লালচে করে ভেজে তুলে রাখুন। এবার কড়াইতে ২ টেবিল চামচ তেল গরম করে তেজপাতা, শুকনো লঙ্কা ফোড়ন দিয়ে বাকি চিনি দিন। চিনি গলে এলে একে একে টমেটো বাটা, আদা বাটা, লঙ্কা গুঁড়ো, হলুদ গুঁড়ো, জিরে গুঁড়ো, ধনে গুঁড়ো আর স্বাদ অনুযায়ী নুন দিয়ে ভালো করে কষতে থাকুন।কাজুবাদাম বাটা ও পোস্ত বাটা দিন। মশলা থেকে তেল ছেড়ে আসলে পরিমাণ মত জল ঢেলে দিন। ঝোল ফুটে উঠলে ধোঁকা গুলো দিয়ে অল্প আঁচে ২-৩ মিনিট ফুটিয়ে নিন। নামানোর আগে ঘি, গরম মশলা গুঁড়ো ছড়িয়ে নামিয়ে নিন।

ছানার পুর ভরা পটলের দোলমা
কী কী লাগবে
বড় পটল ৫০০ গ্ৰাম, নুন-স্বাদ অনুযায়ী, Shalimar's হলুদ গুঁড়ো ২ চা চামচ, ছানা ৩০০ গ্ৰাম, আদা বাটা ১ চা চামচ, লঙ্কা বাটা ১ চা চামচ, Shalimar's জিরে গুঁড়ো ২ চা চামচ, Shalimar's ধনে গুঁড়ো ১ চা চামচ, Shalimar's লাল লঙ্কার গুঁড়ো ৩ চা চামচ, Shalimar's গরম মশলা ১ চা চামচ, ঘি ২ টেবিল চামচ, কিসমিস কুচি ১/২ কাপ, কাজুবাদাম কুচি ১/২ কাপ, গোটা জিরে ১/২ চা চামচ, তেজপাতা ২ টো, এলাচ ৩ টে, লবঙ্গ ৪ টে, দারুচিনি ২ টো বড় টুকরো, টকদই ১/২ কাপ, গোটা কাঁচালঙ্কা ৪ টে, Shalimar's সরষের তেল পরিমান মতো

কীভাবে বানাবেন
ছুরি দিয়ে পটলের গা ভালো করে চেঁচে, মুখের একদিক কেটে একটি চামচ দিয়ে পটলের ভিতরে থাকা সব দানা বের করে, ধুয়ে সামান্য নুন ও হলুদ মাখিয়ে রাখতে হবে। একটি থালায় ৩০০ গ্রাম ছানা নিয়ে তাতে ১/২ চা চামচ আদা বাটা, লঙ্কা বাটা, চিনি, নুন, ১ চা চামচ জিরে গুঁড়ো, ১ চা চামচ লাল লঙ্কার গুঁড়ো, ১/৪ চামচ গরম মশলা গুঁড়ো দিয়ে ভালো করে মেখে নিতে হবে। একটি কড়াইতে ১ চা চামচ সরষের তেল গরম করে তাতে ছানা, কিশমিশ কুচি, কাজুবাদাম কুচি একসাথে মিশিয়ে নিতে হবে। অন্য একটি কড়াইতে ৪ টেবিল চামচ সরষের তেল গরম করে পটল গুলো ভেজে নিতে হবে। আগে থেকে করে রাখা ছানার পুর পটলের ভিতর ভরে রাখতে হবে। একটি বাটিতে ২ চা চামচ কাশ্মীরি লঙ্কার গুঁড়ো, ১ চা চামচ জিরে গুঁড়ো, ১ চা চামচ ধনে গুঁড়ো, ১/৪ চা চামচ হলুদ গুঁড়ো ও সামান্য একটু জল দিয়ে ভালো করে মিশিয়ে রাখতে হবে। এরপর কিছুটা ভাঙা কাজু, ৪ টে কাঁচা লঙ্কা, ১/২ কাপ টকদই একসাথে বেটে নিতে হবে। এরপর কড়াইতে ২ টেবিল চামচ সরষের তেল গরম করে ১/২ চা চামচ গোটা জিরে, ২ টো তেজপাতা, ৩ টে ছোট এলাচ, ২ টো দারুচিনি, ৪ টে লবঙ্গ দিয়ে একটু ভেজে একে একে ১/২ চা চামচ চিনি, আদা, জিরে, ধনের পেস্টটা দিয়ে কষুন। তেল ছেড়ে এলে তাতে কাজুবাদাম ও দই এর পেস্ট দিয়ে আরও কিছু সময় কষুন। নুন আর গরমজল দিয়ে ফুটে উঠলে পটল গুলো সাবধানে দিয়ে ২ মিনিট রান্না করুন। নামানোর আগে ঘি ও গরম মশলা দিয়ে নাড়াচাড়া করে নামিয়ে নিলেই তৈরি ছানার পুরভরা পটলের দোলমা।

গোলাপ রসগোল্লা
কী কী লাগবে
১ লিটার ফুল ক্রিম দুধ, ১ চা চামচ ময়দা, ১ কাপ চিনি, ৩ কাপ জল, ৩-৪ ফোঁটা রোজ ফুড কালার, ৫-৬ ফোঁটা রোজ এসেন্স, ১ টেবিল চামচ ভিনিগার + ১ টেবিল চামচ জল

কীভাবে বানাবেন
দুধ জ্বাল দিয়ে ফুটে উঠলে গ্যাস বন্ধ করে ভিনিগার ও জলের মিশ্রন টা দুধের মধ্যে আস্তে আস্তে দিয়ে নাড়তে থাকতে হবে। ছানা কেটে গেলে ছেঁকে, জল দিয়ে ২-৩ বার ধুয়ে, কাপড় বা ছাঁকনিতে জল ঝরানোর জন্য রেখে দিতে হবে ১৫-৩০ মিনিট। এবার ময়দা ও রোজ ফুড কালার মিশিয়ে ভালো করে হাতের তালু দিয়ে মেখে নিতে হবে। হাতের তালুতে তেল চকচক করলে বুঝতে হবে ঠিকঠাক মাখা হয়েছে। এবার সমান সাইজের বল বানিয়ে নিতে হবে। অন্য একটি পাত্রে চিনি ও জল দিয়ে ফুটতে দিতে হবে। ফুটে উঠলে রোজ এসেন্স মিশিয়ে, ছানার বলগুলো ছেড়ে চাপা দিতে হবে। চড়া আঁচে ফুটতে দিতে হবে। ১০ মিনিট পর ঢাকা সরিয়ে একটু উল্টে পাল্টে দিয়ে গ্যাসের আঁচ মাঝারি করে দিতে হবে। মোট ২৫-৩০ মিনিট পর দেখা যাবে গোলাপ রসগোল্লা প্রায় তৈরী। এরপর কিছুক্ষণ ঢেকে রেখে ইচ্ছে মতো সাজিয়ে পরিবেশন করুন গরম গরম গোলাপ রসগোল্লা।

পনিরের ডাল
কী কী লাগবে
মুগ ডাল ১ কাপ, পনির ৩০০ গ্ৰাম, কড়াইশুঁ টি ১ কাপ, Shalimar's জিরা গুঁড়ো ১/২ চা চামচ, Shalimar's হলুদ গুঁড়ো ১/২ চা চামচ, Shalimar's গরম মশলা গুঁড়ো ১/৪ চা চামচ, হিং ১ চিমটি, আদাবাটা ১ চা চামচ, তেজপাতা ১ টা, শুকনো লঙ্কা ২ টো, গোটা জিরা অল্প, নুন মিস্টি স্বাদমতো, ঘি ৪ টেবিল চামচ
কীভাবে বানাবেন
মুগ ডাল শুকনো ভেজে নিয়ে সেদ্ধ করে নিন। পনির কিউব করে কেটে ঘি তে ভেজে তুলে নিন। জিরা, তেজপাতা, শুকনো লঙ্কা, তেজপাতা, হিং, আদা বাটা ফোড়ন দিয়ে হলুদ গুঁড়ো, জিরে গুঁড়ো অল্প জলের ছিটে দিয়ে কষুন। সেদ্ধ ডাল, আন্দাজ মতো জল, নুন, চিনি, ভেজে রাখা পনির, কড়াইশুঁটি দই দিয়ে কিছুসময় রান্না করে গরমমশলা গুঁড়ো ছড়িয়ে পরিবেশন করুন।

ছানার পায়েস
কী কী লাগবে
দুধ ২ কেজি, চিনি ৫০০গ্ৰাম, ছোটো এলাচ ৬ টি, কাজুবাদাম গুঁড়ো, আমন্ড গুঁড়ো ও পেস্তাবাদাম কুচি প্রয়োজন মতো

কীভাবে বানাবেন
১ কেজি দুধ জ্বাল দিয়ে ছানা কাটিয়ে নিন। সাদা কাপড়ে ভালো করে চেপে চেপে জল ঝরিয়ে নিন। ১ চা চামচ চিনি দিয়ে ছানাটিকে হাতের তালু দিয়ে ঘষে ঘষে ৬-৭ মিনিট মতো মেখে নিন। এবার এর থেকে ছোট ছোট গোল গোল বল বানিয়ে নিতে হবে। বাকি ১ কেজি দুধ ফুটিয়ে ঘন করে ৫০০ গ্রাম মতো করে নেবেন। এলাচ আর কাজুবাদাম, আমণ্ড গুঁড়ো দিয়ে ১৫ মিনিট মতো ঠাণ্ডা হতে দিন। কারন ফুটন্ত দুধে ছানার বল দিলে দুধ কেটে যেতে পারে। এবার কম আচে বলগুলো ছেড়ে ৫-৬ মিনিট বাদে নামিয়ে নেবেন। দেখবেন যে ছানার বলগুলো ফুলে বড় হয়ে গেছে। এরপর ওপরে পেস্তা কুচি ছড়িয়ে ইচ্ছে মতো সাজিয়ে গরম বা ঠান্ডা পরিবেশন করুন ছানার পায়েস।

সঞ্চিতা দাস
মৌরি ছানার রসা
কী কী লাগবে
২০০ গ্রাম পনীর, ১/৪ কাপ মটরশুঁটি, ২ চা চামচ মৌরি, ১ কাপ দুধ, ১ টেবিল চামচ মৌরি গুঁড়ো, ২ চা চামচ আদা বাটা, ১-২ টো তেজপাতা, ৩-৪ টে চেরা কাঁচালঙ্কা, ১ টেবিল চামচ Shalimar's সরষের তেল, ১/৪ চা চামচ চিনি, নুন স্বাদ মতো
কীভাবে বানাবেন
তেল গরম করে নুন মাখানো পনীর হালকা ভেজে তুলে নিন। জলে মৌরি গুঁড়ো ভিজিয়ে রাখুন। তেলে তেজপাতা আর গোটা মৌরি ফোড়ন দিয়ে একে একে আদা বাটা, চেরা কাঁচালঙ্কা, মৌরির পেস্ট, নুন দিয়ে কষুন। মটরশুঁটি, ভাজা পনীর দিয়ে নেড়েচেড়ে গরম দুধ দিন। চিনি মিশিয়ে নামিয়ে নিন।

গন্ধরাজ ঘোল পোলাও
কী কী লাগবে
বাসমতি চাল ২৫০ গ্রাম, নুন স্বাদমত, টকদই ৩ টেবিল চামচ, Shalimar's হলুদ গুঁড়ো, গন্ধরাজ লেবুর রস ২ চা চামচ, গন্ধরাজ লেবুর জেস্ট ১ চা চামচ, চেরা কাঁচালঙ্কা ২টি, চিনি ২ চা চামচ, ঘি ২ টেবিল চামচ, কাজুবাদাম কিশমিশ, গন্ধরাজ লেবুর পাতা ৪ টি
কীভাবে বানাবেন
চাল ভিজিয়ে রেখে জল ঝরিয়ে রাখুন। ঘি গরম করে কাজু কিশমিশ ভেজে তুলে নিন। টকদই, গন্ধরাজ লেবুর রস আর পরিমান মতো জল মিশিয়ে ঘোল বানিয়ে রাখুন। এবার প্যানে চাল, নুন, হলুদ গুঁড়ো, চেরা কাচালঙ্কা দিয়ে অল্প নেড়ে ঘোল ঢেলে ঢেকে রান্না করুন। চাল সেদ্ধ হয়ে ঝরঝরে হলে চিনি, ভাজা কাজুবাদাম কিশমিশ, গন্ধরাজ লেবুর জেস্ট আর পাতা দিয়ে আধঘন্টা ঢেকে রেখে পরিবেশন করুন এই একদম ভিন্ন স্বাদের পোলাও।

মুগ ফুলকপির ঘন্ট
কী কী লাগবে
১ টা মাঝারি মাপের ফুলকপি, ১/২ কাপ মুগডাল, ১ চা চামচ Shalimar's হলুদ গুঁড়ো, দেড় চা চামচ আদা বাটা, ৬-৭ টা চেরা কাঁচালঙ্কা, ৩ টেবিল চামচ Shalimar's তেল, ১ টেবিল চামচ ঘি, ১/২ চা চামচ চিনি, স্বাদ মতো নুন

কীভাবে বানাবেন
মুগডাল শুকনো খোলায় ভেজে ধুয়ে সেদ্ধ করে নিন। নুন হলুদ গুঁড়ো দিয়ে ফুলকপি ভাপিয়ে নিন। এবার তেল গরম করে বাদামী করে ভেজে তুলে নিন। ঐ তেলে আদা বাটা, চেরা কাঁচালঙ্কা, নুন, হলুদ গুঁড়ো, চিনি, ভাজা ফুলকপি অল্প জল দিয়ে কষুন। সেদ্ধ মুগডাল দিয়ে ঢেকে রান্না করুন। ঘি মিশিয়ে নামিয়ে নিন।

মোচার নিরামিষ পাতুরি
কী কী লাগবে
কুচোনো সেদ্ধ মোচা ২০০ গ্রাম, পোস্ত + সর্ষে বাটা ২ টেবিল চামচ, নারকেল কোরা ২ টেবিল চামচ, Shalimar's সর্ষের তেল পরিমাণমতো, কাঁচালঙ্কা বাটা ১ চা চামচ, নুন চিনি স্বাদ মতো, কলাপাতা, টুথপিক
কীভাবে বানাবেন
সেদ্ধ মোচা শিলনোড়া বা মিক্সিতে বেটে নিন। এর সঙ্গে নুন, চিনি, সর্ষে পোস্ত বাটা ও নারকেল কোরা মিশিয়ে নিয়ে কিছুক্ষণ ঢেকে রাখুন। লঙ্কা বাটা ও সর্ষের তেল মাখিয়ে নিন। কলাপাতার মধ্যে ২ চামচ মোচা বাটা নিয়ে পাতুরির মতো মুড়ে টুথপিক গেঁথে নিন। তাওয়ায় তেল লাগিয়ে কলাপাতা মোড়া মোচা বাটা এপিঠ ওপিঠ করে সেঁকে নিন ভালো করে। গরম ভাতের সঙ্গে পরিবেশন করুন।

নারকেল মাখা লাউ
কী কী লাগবে
১ টা লাউ ছোট টুকরো করা, ১/২ কাপ নারকেল কোরা, ৩-৪ টে চেরা কাঁচালঙ্কা, ১০ টি থেঁতো করা Shalimar's গোলমরিচ, ১ চা চামচ চিনি, ২ টেবিল চামচ Shalimar's তেল, স্বাদমতো নুন

কীভাবে বানাবেন
একটি পাত্রে লাউ, নারকেল কোরা, গোলমরিচ, কাঁচা লঙ্কা, নুন, চিনি, সরষের তেল মিশিয়ে নিন। প্যানে এই মিশ্রণ দিয়ে ঢেকে অল্প আঁচে রান্না করুন। মজলে ওপরে আরো কিছুটা নারকেল কোরা আর সর্ষের তেল ছড়িয়ে পরিবেশন করুন।

কমলালেবুর পোলাও
কী কী লাগবে
গোবিন্দভোগ চাল ১ কাপ, কমলালেবু ১টা, খোয়া ক্ষীর ২ চামচ, চিনি ১/২ কাপ, নুন ২ চামচ, ছোট এলাচ ৪টে, লবঙ্গ ৪টে, আমন্ড ৮-১০ টা, কাজুবাদাম ১০-১৫ টা, কিশমিশ ১০-১৫ টা, কমলালেবুর রস ১/২ কাপ

কীভাবে বানাবেন
চাল ধুয়ে ভিজিয়ে রাখতে হবে। এবার শুকনো কড়াইতে ২ চামচ ঘি দিয়ে ওর মধ্যে কাজু, কিশমিশ, আমন্ড দিয়ে ভেজে তুলে রাখুন। আরও এক চামচ ঘি দিয়ে তাতে গোটা গরম মশলাগুলো দিয়ে দিন। নেড়েচেড়ে চাল দিয়ে দিন। চাল ভাজা হলে চিনি মিশিয়ে দিন। এবার কমলালেবুর রসের সঙ্গে স্বাদমতো নুন-চিনি মিশিয়ে ঢেলে দিন। এই রস যেন মিষ্টি হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। অল্প আঁচে ঢেকে রান্না করুন। ১০ মিনিট পর ঢাকা খুলে খোয়া ক্ষীর, ভেজে রাখা কাজু কিশমিশ মিশিয়ে দিন। আবারও ১০ মিনিট ঢেকে রাখুন। এবার কমলার খোসা উপর থেকে ছড়িয়ে ৫ মিনিট ঢেকে রেখে পরিবেশন করুন।

Comentarios