top of page

অক্ষয় তৃতীয়া: পূজায় পূণ্য, আচারে ঐতিহ্য, ঋতু-বদলে হালকা রান্না, ভিটামিন "সানশাইন", ওয়ার্ক ফ্রম হোম এ অন্দরসজ্জা, গরমেও থাকুন সতেজ ও প্রাণবন্ত, রবিবারের গল্প: কায়াহীনের সংসার

Updated: Apr 27

অক্ষয় তৃতীয়া, এই তিথিকে বলা হয় "অক্ষয় ফলদায়িনী" অর্থাৎ এমন একটি দিন, যার সঙ্গে জড়িয়ে আছে অনন্ত কল্যাণ, অমল সম্পদ ও চিরস্থায়ী সৌভাগ্যের আশীর্বাদ। বৈশাখ মাসের শুক্লপক্ষের তৃতীয়া দিনে পালিত এই উৎসব হিন্দু ধর্মে যেমন পবিত্র, তেমনই জনমানসে গেঁথে আছে ঐতিহ্য ও বিশ্বাসের গভীর শিকড়। দেবতা পরশুরামের জন্ম, গঙ্গার অবতরণ, দ্রৌপদীর বস্ত্ররক্ষা, মহাভারতের রচনা, এসব পৌরাণিক ঘটনা এই দিনের মাহাত্ম্য আরও বাড়িয়ে তোলে।




আজকের দিনে এটি শুধু ধর্মীয় উৎসব নয়, সোনার বাজার, দান-পূণ্য ও নতুন সূচনার অন্যতম শ্রেষ্ঠ সময় হিসেবেও পরিচিত। বছরের অনেক তিথিই শুভ হিসেবে গণ্য হলেও অক্ষয় তৃতীয়া যেন তাদের মধ্যেও এক স্বতন্ত্র মহিমায় উজ্জ্বল। "অক্ষয়" শব্দের অর্থ যা কখনও ক্ষয় হয় না। এই তৃতীয়ার মাহাত্ম্যও ঠিক তেমনি যে শুভ কর্ম আজকের দিনে শুরু হয়, তার ফল অক্ষয় হয়ে থাকে বলেই বিশ্বাস। ধর্ম, ইতিহাস, পৌরাণিক কাহিনি, লোকাচার ও সমকালীন সামাজিক রীতি সব মিলে এই দিনটি হয়ে উঠেছে বহুমাত্রিক তাৎপর্যের বাহক।


পৌরাণিক ইতিহাসে অক্ষয় তৃতীয়া

অক্ষয় তৃতীয়ার মাহাত্ম্য বহু ঐতিহাসিক ও পৌরাণিক ঘটনার সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। বিষ্ণুর ষষ্ঠ অবতার পরশুরামের জন্ম এই দিনেই ঘটেছিল। দেবতা পরশুরাম ছিলেন ব্রাহ্মণ ও ক্ষত্রিয় গুণের সমন্বয়ে গঠিত এক বিরল চরিত্র, যিনি শত্রুনাশ এবং ধর্মরক্ষার প্রতীক হয়ে ওঠেন। অক্ষয় তৃতীয়ার দিনেই রাজা ভগীরথের তপস্যার ফলস্বরূপ দেবী গঙ্গা স্বর্গ থেকে মর্ত্যে অবতীর্ণ হন। একই দিনে দেবী অন্নপূর্ণার আবির্ভাব ঘটে, যাঁকে অন্ন ও সমৃদ্ধির দেবী হিসেবে পূজা করা হয়। অন্যদিকে, এই তিথিতে মহর্ষি বেদব্যাস ও ভগবান গণেশ একসঙ্গে মহাভারতের রচনা শুরু করেছিলেন, যা ভারতীয় সাহিত্যের অন্যতম ভিত্তি। শ্রীকৃষ্ণের সঙ্গে সুদামার পুনর্মিলনও এই দিনে ঘটেছিল, যেখানে বন্ধুত্ব ও নিঃস্বার্থ দানের নিদর্শন রচিত হয়।


ধর্মীয় গুরুত্ব ও লোকাচার

এই দিনটিকে বিশেষভাবে শুভ বলে মানা হয় নানা ধর্মীয় কার্যকলাপের জন্য। অনেকেই এই দিন গৃহপ্রবেশ, ব্যবসা শুরু, বিবাহ বা সন্তানের উপনয়ন ইত্যাদি শুভ কাজের জন্য বেছে নেন। পুরীতে জগন্নাথদেবের রথ তৈরির কাজও শুরু হয় এই দিন থেকেই। উত্তর ভারতে চারধাম যাত্রার দ্বার এই দিনেই খুলে দেওয়া হয়। সাধারণ মানুষের বিশ্বাস এই দিন দান করলে তার পূণ্য বহুগুণে বৃদ্ধি পায় এবং তা কখনও ক্ষয় হয় না। তাই বহু ঘরে আজও ব্রাহ্মণ, গরিব, ভিক্ষুক কিংবা গবাদি পশুর প্রতিও দান করা হয়।


আধুনিক সমাজে অক্ষয় তৃতীয়া

আজকের দিনে অক্ষয় তৃতীয়া আর শুধুমাত্র পূজার দিন নয়, এটি হয়ে উঠেছে সোনা বা রূপা কেনার অন্যতম শুভ দিন। জুয়েলারি ব্যবসায়ীরা এই দিনটির উপর অনেকটাই নির্ভরশীল। এই সংস্কার এসেছে সেই বিশ্বাস থেকে যে, আজকের দিনে কেনা ধন-সম্পদ কখনও নষ্ট হয় না এবং ভবিষ্যতে তা অক্ষয় সম্পদে পরিণত হয়। অনেক ব্যবসায়ী এই দিনে হালখাতা শুরু করেন। ক্রেতাদের নিমন্ত্রণ করে মিষ্টিমুখ করানো হয় এই প্রথার মধ্যেও লুকিয়ে আছে সামাজিক বন্ধনের মধুরতা।


বিশেষ আচার ও রীতি:

১. সোনা ও রূপা কেনা: এই দিনে সোনা বা রূপা কেনা অতি শুভ। বিশ্বাস করা হয়, এটি ভবিষ্যতের অক্ষয় সমৃদ্ধির প্রতীক।

২. দান ও পূণ্য লাভ: বস্ত্র, খাদ্য, জল, ছাতা, ফল বা অর্থ দান করলে বহু গুণ পূণ্যলাভ হয়। বিশেষত ব্রাহ্মণ, দরিদ্র ও গাভীকে দান এই তিথিতে বিশেষ মহৎ কর্ম।

৩. হালখাতা ও নতুন হিসাব শুরু: বাঙালি ব্যবসায়ীরা আজকের দিনে হালখাতা করেন। পুরোনো দেনা-পাওনার নিষ্পত্তি করে নতুন বছরের জন্য হিসাব খোলা হয়।

৪. চার ধামের দরজা খোলা: এই দিনেই কেদারনাথ, বদরিনাথ, গঙ্গোত্রী ও যমুনোত্রীর মন্দিরের দরজা খুলে যায়। যাত্রা শুরু হয় হিন্দুদের আধ্যাত্মিক পরিভ্রমণের।

৫. পিতৃ তর্পণ ও পূর্বপুরুষ স্মরণ: কিছু অঞ্চলে পূর্বপুরুষদের স্মরণে তর্পণও করা হয়, যাতে তাঁদের আশীর্বাদে বংশের সমৃদ্ধি বজায় থাকে।

অক্ষয় তৃতীয়া পূজার নিয়ম ও বিশেষ আচার:

পূজার পূর্বপ্রস্তুতি:

গৃহস্থালি ও পূজার স্থান পরিষ্কার করুন।

ভোরে স্নান সেরে শুদ্ধ বস্ত্র পরিধান করুন।

পূজার স্থানে লাল বা হলুদ কাপড় বিছিয়ে দেব-দেবীর আসন তৈরি করুন।

পূর্ব বা উত্তর দিকে মুখ করে পূজা করাই শ্রেয়।


পূজায় যাঁদের পূজা করা হয়:

1. দেবী লক্ষ্মী – সম্পদ ও সৌভাগ্যের দেবী

2. শ্রীবিষ্ণু/নারায়ণ – রক্ষাকর্তা ও চিরকল্যাণের প্রতীক

3. শ্রীগণেশ – বাধা নাশ ও শুভ সূচনার দেবতা

4. কুবের – ঐশ্বর্যের অধিষ্ঠাতা

5. দেবী অন্নপূর্ণা – খাদ্যের দেবী, ঘরে অন্নের পূর্ণতা নিশ্চিত করেন

পূজার উপকরণ (সামগ্রী):

গঙ্গা জল, চন্দন, কুমকুম, হলুদ, ধূপ, দীপ, ফুল, ফল, চাল, দূর্বা ঘাস, নারকেল, সুপারি, পান, তিল, মিষ্টি, সোনার গহনা বা রূপা (প্রতীকী বা আসল), লক্ষ্মী ও গণেশের ছবি বা মূর্তি, কলা গাছের পাতা, হলুদ-লাল সুতো


পূজার সময়:

৩০ এপ্রিল ২০২৫, বুধবার

তৃতীয়া তিথি শুরু: ২৯ এপ্রিল রাত ১১:৪৭ মিনিট

তৃতীয়া তিথি শেষ: ৩০ এপ্রিল রাত ১০:২০ মিনিট

পূজার শুভ সময়: সকাল ৫:০৫ – ১১:৩৪

গরমে হালকা রান্না: স্বাদ ও স্বস্তির এক মেলবন্ধন...


গ্রীষ্মের প্রচণ্ড দাবদাহে ভারী খাবার অনেক সময় শরীরকে আরও ক্লান্ত করে তোলে। এই সময় চাই হালকা, সহজপাচ্য এবং পুষ্টিকর খাবার, যা শরীরে প্রশান্তি আনে এবং জলশূন্যতা প্রতিরোধ করে। "গরমে হালকা রান্না" তাই শুধু খাবারের কথা নয়, সুস্থতার কথাও বলে। সহজপাচ্য, জলীয় খাদ্য এবং স্বল্প মশলাদার রান্না শুধু শরীরকে ঠান্ডা রাখে না, বরং মনকেও সতেজ করে। তাই এই গ্রীষ্মে হালকা রান্নার স্বাদ উপভোগ করুন এবং সুস্থ থাকুন।

সবজি দিয়ে মাছের ঝোল

গরমকালে মশলাদার ঝাল খাবারের পরিবর্তে হালকা ও স্নিগ্ধ স্বাদের খাবারই শরীরের জন্য ভালো। মাছের সঙ্গে নানা রকম সবজি মিশিয়ে তৈরি ঝোল শরীরকে শীতল রাখে, পুষ্টিও দেয়। এটি সহজপাচ্য এবং বাচ্চা থেকে বয়স্ক, সবার জন্য উপযোগী।

কী কী লাগবে

রুই/কাতলা মাছ – ৪ টুকরো

আলু – ১টি (মাঝারি সাইজ, চওড়া করে কাটা)

পটল – ৪টি (চৌকো করে কাটা)

ঝিঙ্গে – ১টি (চাকা করে কাটা)

লাউ – ১ কাপ (কিউব করে কাটা)

বেগুন – ১টি (মাঝারি, বড় টুকরো করা)

টমেটো – ১টি (চৌকো করে কাটা)

কাঁচা লঙ্কা – ২টি (চিরে নেওয়া)

কালোজিরা – ১/২ চা চামচ

Shalimar's Chef Spices হলুদ গুঁড়ো – ১ চা চামচ

নুন – স্বাদমতো

Shalimar's সরষের তেল – ৩ টেবিল চামচ

জল – পরিমাণমতো

ধনেপাতা কুচি – ১ টেবিল চামচ (সাজানোর জন্য)

কীভাবে বানাবেন

মাছের টুকরোগুলোতে নুন ও হলুদ মাখিয়ে নিন। কড়াইতে সরষের তেল গরম করে মাছ লালচে করে ভেজে তুলে রাখুন। একই তেলে সামান্য কালোজিরা ফোড়ন দিন। এবার আলু, পটল, ঝিঙ্গে, লাউ, বেগুন দিয়ে নাড়াচাড়া করুন। সামান্য নুন ও হলুদ দিয়ে ঢেকে কিছুক্ষণ দিন মিডিয়াম আঁচে সবজি সাঁতলে নিন। সবজি নরম হতে শুরু করলে টমেটো আর কাঁচা লঙ্কা যোগ করুন। ২-৩ মিনিট নাড়াচাড়া করে পরিমাণমতো গরম জল দিন। ফুটে উঠলে ভাজা মাছ গুলি দিয়ে দিন। মাঝারি আঁচে ৫-৭ মিনিট রান্না করুন, যতক্ষণ না মাছ ও সবজি ভালোভাবে মিশে যায়। নামানোর আগে ধনেপাতা কুচি ছড়িয়ে দিন। হালকা ঝোলের টানটান স্বাদ পেতে গরম ভাতের সঙ্গে পরিবেশন করুন। গরমকালে সবজি আর মাছের এই হালকা ঝোল শরীরকে ঠান্ডা রাখে, পেট ভরে কিন্তু মন ভারী হয় না। সহজপাচ্য, সুস্বাদু এবং একেবারে ঘরোয়া স্বাদের এই পদ গরম দুপুরের জন্য আদর্শ।


সজনে ডাটা চচ্চড়ি

সজনে ডাটা মানেই ভরপুর পুষ্টি আর গ্রীষ্মের স্বাদ। আলু, বেগুন আর সরষের ঝাঁজ মেশানো হালকা চচ্চড়ি গরমের দিনে একেবারে দারুণ উপযোগী। কম তেলে, কম মশলায় তৈরি এই সহজপাচ্য খাবার শরীর ঠান্ডা রাখে, আবার মনও ভরে যায়।

কী কী লাগবে

সজনে ডাটা – ৮-১০টি (ছুলে ছোট টুকরো করে কাটা)

আলু – ১টি (চৌকো করে কাটা)

বেগুন – ১টি (চৌকো করে কাটা)

কুমড়ো – ১ কাপ (কিউব করে কাটা) (ঐচ্ছিক)

কাঁচা লঙ্কা – ৩-৪টি (চিরে নেওয়া)

সরষের বাটা – ২ টেবিল চামচ

পোস্ত বাটা – ১ টেবিল চামচ (ঐচ্ছিক)

শুকনো লঙ্কা – ১টি

পাঁচফোড়ন – ১/২ চা চামচ

Shalimar's সরষের তেল – ২ টেবিল চামচ

নুন – স্বাদমতো

চিনি – ১/২ চা চামচ (ঐচ্ছিক)

জল – প্রয়োজনমতো

কীভাবে বানাবেন

সজনে ডাটাগুলো ভালো করে ছুলে ছোট টুকরো করে নিন। আলু, বেগুন ও কুমড়ো সমান আকারে কেটে রাখুন। কড়াইয়ে সরষের তেল গরম করে পাঁচফোড়ন আর শুকনো লঙ্কা ফোড়ন দিন। গন্ধ ছড়িয়ে পড়লে আলু যোগ করে একটু নাড়ুন। আলু কিছুটা ভাজা হলে বেগুন, কুমড়ো এবং সজনে ডাটা যোগ করুন। নুন আর কাঁচা লঙ্কা দিয়ে মিশিয়ে দিন। অল্প জল ছিটিয়ে ঢেকে দিন, যাতে সবজি সিদ্ধ হতে পারে। সবজি আধা সেদ্ধ হলে সরষে বাটা (আর চাইলে পোস্ত বাটা) মিশিয়ে দিন। ভালোভাবে নাড়াচাড়া করে দিন। চাইলে একটু চিনি যোগ করতে পারেন স্বাদ ব্যালেন্সের জন্য। কম আঁচে ঢাকা দিয়ে রান্না করুন যতক্ষণ না সবজি একদম মোলায়েম হয়ে আসে এবং জল শুকিয়ে আসে। শেষে চাইলে উপর থেকে কাঁচা সরষের তেল দিন বাড়তি স্বাদের জন্য। গরম ভাতের সাথে পরিবেশন করুন। সঙ্গে একটুখানি কাঁচা লঙ্কা থাকলে তো কথাই নেই!

দুধ শুক্তো

শুক্তো মানেই তেতো আর নরম স্বাদের এক মিষ্টি স্মৃতি। "দুধ শুক্তো" তারই একটু অন্যরকম রূপ যেখানে দুধের কোমলতা শুক্তোর তেতো স্বাদকে মোলায়েম করে দেয়। গরমের দিনে হালকা, সহজপাচ্য এবং পরিপূর্ণ পুষ্টিকর এই পদ শরীর ও মনের ক্লান্তি দূর করে।


কী কী লাগবে

করলা (উচ্ছে) – ১টি (পাতলা করে কাটা)

আলু – ১টি (চৌকো করে কাটা)

বেগুন – ১টি (মাঝারি সাইজ, বড় টুকরো করা)

পটল – ৩-৪টি (চৌকো করে কাটা)

লাউ – ১ কাপ (কাটা) (ঐচ্ছিক)

নারকেল কুচি – ২ টেবিল চামচ

রাধুনি (বা শুকনো মেথি দানা) – ১/২ চা চামচ

শুকনো লঙ্কা – ১টি

নুন – স্বাদমতো

চিনি – ১ চা চামচ (ঐচ্ছিক)

দুধ – ১ কাপ

Shalimar's সরষের তেল – ২ টেবিল চামচ

জল – পরিমাণমতো

কীভাবে বানাবেন

করলা পাতলা করে কেটে সামান্য নুন মেখে কিছুক্ষণ রেখে দিন, তারপর জল দিয়ে ধুয়ে নিন (তেতো কমানোর জন্য)।

সবজি গুলো সমান আকারে কেটে রাখুন। কড়াইয়ে সরষের তেল গরম করে প্রথমে করলা ভেজে তুলে রাখুন। পরে অন্য সব সবজি (আলু, পটল, বেগুন ইত্যাদি) সামান্য নুন দিয়ে হালকা ভেজে তুলে রাখুন। কড়াইয়ে আবার একটু তেল গরম করে রাধুনি (বা মেথি দানা) আর শুকনো লঙ্কা ফোড়ন দিন। এরপর ভাজা সবজি ও করলা যোগ করুন। অল্প জল দিয়ে সবজিগুলো ঢেকে দিন এবং নরম হওয়া পর্যন্ত রান্না করুন। সবজি সেদ্ধ হলে চিনি যোগ করুন (ঐচ্ছিক)। আঁচ কমিয়ে দুধ ঢেলে দিন। ধীরে ধীরে নাড়তে থাকুন যাতে দুধ কেটে না যায়। ২-৩ মিনিট ফুটিয়ে নামিয়ে নিন। পরিবেশনের আগে উপর থেকে ঘষা নারকেল ছড়িয়ে দিন। ইচ্ছে করলে একটু সরষের তেল ছড়িয়ে বাড়তি গন্ধ যোগ করতে পারেন। গরম ভাতের সঙ্গে পরিবেশন করুন এই মোলায়েম ও সুস্বাদু দুধ শুক্তো। গরমের দিনে এর মৃদু, শান্ত স্বাদ এক আলাদা তৃপ্তির অনুভূতি এনে দেয়।

দই বেগুন

ভাজা বেগুন আর ঠান্ডা টকদইয়ের সংমিশ্রণে তৈরি "দই বেগুন" গরমকালে দেহ ও মনের প্রশান্তি আনে। এই পদে মশলা খুব কম ব্যবহার হয়, তাই এটি সহজপাচ্য এবং স্বাস্থ্যকর। বিশেষ করে গরমে টকদই শরীর ঠান্ডা রাখতে দারুণ কার্যকরী।


কী কী লাগবে

বেগুন – ১টি বড় (চওড়া করে গোল গোল স্লাইস কাটা)

টক দই – ১ কাপ (মাখানো)

সরষের তেল – ৩ টেবিল চামচ

শুকনো লঙ্কা – ১টি

কাঁচা লঙ্কা – ২টি (চিরে নেওয়া)

কালোজিরা – ১/২ চা চামচ

নুন – স্বাদমতো

চিনি – ১ চা চামচ (ঐচ্ছিক)

বিটনুন – সামান্য (ঐচ্ছিক)

Shalimar's Chef Spices জিরে গুঁড়ো – ১/২ চা চামচ (ঐচ্ছিক)

কীভাবে বানাবেন

বেগুনের স্লাইসগুলোতে সামান্য নুন মেখে রাখুন। কড়াইয়ে সরষের তেল গরম করে বেগুনের টুকরোগুলো দু'পিঠে সুন্দর লালচে করে ভেজে নিন। ভাজা বেগুন তুলে মুছিয়ে রাখুন। একই তেলে কালোজিরা আর শুকনো লঙ্কা ফোড়ন দিন। দই মসৃণ করে ফেটিয়ে নিন। চাইলে সামান্য নুন, চিনি এবং বিটনুন মিশিয়ে দিতে পারেন। দইতে সামান্য ভাজা জিরে গুঁড়োও মিশিয়ে নিতে পারেন বাড়তি সুগন্ধের জন্য। দইয়ের মধ্যে ভাজা বেগুনের টুকরোগুলো দিন। ওপরে ফোড়ন ছড়িয়ে দিন। চাইলে কিছু কাঁচা লঙ্কা ছড়িয়ে দিন ঝাঁঝালো স্বাদের জন্য। ঠান্ডা করে পরিবেশন করুন। গরম ভাতের পাশে দই বেগুন থাকলে আলাদা করে আর কিছু চাই না!

কাঁচা আম দিয়ে মুগ ডাল

কাঁচা আমের টক-মিষ্টি স্বাদ আর মুগ ডালের মৃদু ঘ্রাণ মিশে তৈরি হয় এক অনবদ্য হালকা পদ। গরমের দুপুরে ভাতের সঙ্গে কাঁচা আম মুগ ডালের মোলায়েম স্বাদ শরীর ও মন দুটোই ঠান্ডা করে দেয়।


কী কী লাগবে

মুগ ডাল – ১ কাপ (ভাজা)

কাঁচা আম – ১টি (মাঝারি, খোসা ছাড়িয়ে পাতলা ফালি করে কাটা)

শুকনো লঙ্কা – ২টি

কাঁচা লঙ্কা – ২টি (চিরে নেওয়া)

Shalimar's Chef Spices হলুদ গুঁড়ো – ১/২ চা চামচ

নুন – স্বাদমতো

চিনি – ১ চা চামচ (ইচ্ছা হলে)

Shalimar's সরষের তেল – ২ টেবিল চামচ

জল – প্রয়োজনমতো

কীভাবে বানাবেন

প্রথমে শুকনো কড়াইয়ে মুগ ডাল হালকা বাদামি হওয়া পর্যন্ত ভেজে নিন। এরপর জল দিয়ে ডাল আধা সেদ্ধ করে নিন। অতিরিক্ত গলানো নয়, একটু দানা দানা থাকবে এমনভাবে। কড়াইয়ে সরষের তেল গরম করে শুকনো লঙ্কা ও সামান্য কাঁচা লঙ্কা ফোড়ন দিন। তারপর কাঁচা আমের ফালি দিয়ে কিছুক্ষণ নেড়ে নিন। ভাজা কাঁচা আমে ফুটন্ত মুগ ডাল ঢেলে দিন। নুন, হলুদ গুঁড়ো এবং সামান্য চিনি (যদি ব্যবহার করেন) মিশিয়ে দিন। মাঝারি আঁচে কিছুক্ষণ ফুটিয়ে নিন, যাতে আমের টক আর ডালের মিষ্টি সুন্দরভাবে মিশে যায়। প্রয়োজনে আরেকটু জল যোগ করে পাতলা ঝোলের মতো করে নিতে পারেন। গরম ভাতের সঙ্গে পরিবেশন করুন। সঙ্গে যদি একটু আলু ভাজা বা বেগুন ভাজা থাকে, তাহলে গরমের দুপুর হবে একেবারে স্বপ্নের মতো! গ্রীষ্মের দুপুরে এই স্নিগ্ধ টক-মিষ্টি স্বাদের ডাল প্রাণ জুড়িয়ে দেয়।

ঝিঙে আলু পোস্ত

গরমকালে ভারী খাবারের পরিবর্তে চাই হালকা, সহজপাচ্য এবং কম মশলাদার রান্না। ঝিঙে ও আলু দিয়ে তৈরি পোস্তর পদ তারই আদর্শ উদাহরণ। পোস্ত বাঙালির রান্নাঘরের গর্ব, আর ঝিঙে ও আলুর সঙ্গে মিশে এটি হয়ে ওঠে অবিশ্বাস্য স্বাদের এক হালকা খাবার।


কী কী লাগবে

ঝিঙে – ৩টি (চাকা করে কাটা)

আলু – ২টি (চৌকো করে কাটা)

পোস্ত– ৩ টেবিল চামচ

কাঁচা লঙ্কা – ২-৩টি (বাটা বা ফালি করে)

কালোজিরা – ১/২ চা চামচ

Shalimar's সরষের তেল – ২ টেবিল চামচ

নুন – স্বাদমতো

Shalimar's Chef Spices হলুদ গুঁড়ো – সামান্য (ইচ্ছা হলে)

জল – পরিমাণমতো

কীভাবে বানাবেন

পোস্ত ১৫-২০ মিনিট ভিজিয়ে রেখে মিহি করে বেটে নিন। চাইলে কাঁচা লঙ্কা একসঙ্গে বেটে নিতে পারেন। ঝিঙে ও আলু চৌকো টুকরো করে কেটে নিন। কড়াইয়ে সরষের তেল গরম করে কালোজিরা ফোড়ন দিন। তারপরে আলু দিয়ে সামান্য নুন ও অল্প হলুদ দিয়ে ভেজে নিন। আলু কিছুটা নরম হলে ঝিঙে যোগ করুন। ২-৩ মিনিট নাড়াচাড়া করে পোস্ত বাটা ও কাঁচা লঙ্কা মিশিয়ে দিন। ভালো করে মিশিয়ে অল্প জল ছিটিয়ে ঢেকে দিন। ৭-৮ মিনিট ঢেকে রান্না করুন। সবজি নরম হয়ে এলে এবং পোস্ত ভালোভাবে মিশে গেলে গ্যাস বন্ধ করুন। ইচ্ছে হলে ওপর থেকে আরেক চামচ কাঁচা সরষের তেল ছড়িয়ে দিতে পারেন বাড়তি সুগন্ধের জন্য। গরম গরম ভাতের সঙ্গে পরিবেশন করুন এই অপূর্ব ঝিঙে আলু পোস্ত। সঙ্গে চাইলে একটুখানি কাঁচা লঙ্কা আর পাতিলেবু থাকলে তো কথাই নেই! "ঝিঙে আলু পোস্ত" হলো এমন একটি পদ, যা হালকা অথচ তৃপ্তিদায়ক। শরীর-মন দুইকেই শান্তি দেয় গরমকালে। প্রাচীন বাঙালি ঐতিহ্যের স্বাদ আজও এই সহজ রেসিপিতে জীবন্ত।

বড়ার ডালনা

বড়া মানেই বাঙালির ঘরে উৎসবের সুবাস। পঞ্চবাটির ডাল, মটর ডাল, বা বেসন দিয়ে তৈরি মচমচে বড়া আর তার সাথে পাতলা অথচ সুস্বাদু আলু আর টমেটোর ডালনা গরম ভাতের সঙ্গী হিসেবে অতুলনীয়। নিরামিষ রান্নার মধ্যেও কত স্বাদ থাকতে পারে, বড়ার ডালনা তার প্রমাণ।


কী কী লাগবে

বড়া বানানোর জন্য:

মুসুর ডাল – ১ কাপ (ভিজিয়ে বেটে নেওয়া)

কাঁচা লঙ্কা – ২টি (কুচি)

আদা – ১ চা চামচ (কুচি)

নুন – স্বাদমতো

Shalimar's সরষের তেল – ভাজার জন্য


ডালনার জন্য:

আলু – ২টি (চৌকো করে কাটা)

টমেটো – ১টি (কুচানো)

শুকনো লঙ্কা – ১টি

তেজপাতা – ১টি

আদা বাটা – ১ টেবিল চামচ

Shalimar's Chef Spices জিরে গুঁড়ো – ১ চা চামচ

Shalimar's Chef Spices ধনে গুঁড়ো – ১ চা চামচ

Shalimar's Chef Spices হলুদ গুঁড়ো – ১/২ চা চামচ

নুন – স্বাদমতো

চিনি – সামান্য

Shalimar's Chef Spicesগরম মশলা গুঁড়ো – ১/২ চা চামচ

সরষের তেল – ২ টেবিল চামচ

জল – প্রয়োজনমতো


কীভাবে বানাবেন

মুসুর ডাল ভিজিয়ে জল ঝরিয়ে ভালো করে বেটে নিন (খুব বেশি পাতলা নয়)। এতে কাঁচা লঙ্কা কুচি, আদা কুচি, নুন মিশিয়ে দিন। কড়াইয়ে সরষের তেল গরম করে ছোট ছোট বড়া ভাজুন। সোনালি হলে তুলে রাখুন। কড়াইয়ে তেল গরম করে শুকনো লঙ্কা ও তেজপাতা ফোড়ন দিন, আলু যোগ করে সামান্য নুন, হলুদ মিশিয়ে নাড়ুন। আলু সোনালি হতে শুরু করলে টমেটো আর আদা বাটা দিন। এরপর ধনে গুঁড়ো, জিরে গুঁড়ো মিশিয়ে ভালো করে কষান। মসলা কষানো হয়ে গেলে পরিমাণমতো জল দিন। ঝোল ফুটে উঠলে আলু সেদ্ধ হওয়া পর্যন্ত রান্না করুন। আলু সেদ্ধ হয়ে এলে ভাজা বড়া গুলো দিয়ে দিন। বড়া দিয়ে ২-৩ মিনিট ফুটিয়ে নিন, যাতে বড়া একটু ঝোল টেনে নেয়। শেষে সামান্য গরম মশলা ছড়িয়ে গ্যাস বন্ধ করুন। গরম ভাতের সঙ্গে পরিবেশন করুন এই মচমচে বড়ার ডালনা। সঙ্গে চাইলে একটু কাঁচা লঙ্কা আর ঘি থাকলে আরও জমে যাবে। "বড়ার ডালনা" হলো বাঙালি নিরামিষ রান্নার ঐতিহ্যের এক অপরূপ উদাহরণ। সাধাসিধে এই পদেই আছে শুদ্ধতার স্বাদ, মায়ের হাতের রান্নার গন্ধ।


গ্রীষ্মের দাবদাহে শরীর ও মনের স্বস্তির জন্য দরকার সহজপাচ্য, পুষ্টিকর এবং হালকা স্বাদের খাবার। বাঙালি রান্নার ভাণ্ডারে এমন অগণিত রত্ন আছে, যা কম মশলা, সামান্য উপকরণ আর প্রচুর যত্ন দিয়ে তৈরি হয়। সবজি আর মাছের পাতলা ঝোলের মৃদু স্বাদ হোক, কিংবা ঝিঙে-আলুর পোস্তর সরলতা প্রতিটি পদই গ্রীষ্মের ক্লান্ত দুপুরে এক টুকরো শান্তির অনুভূতি এনে দেয়। কাঁচা আমের টক মুগ ডালের ঠান্ডা ছোঁয়া বা দই বেগুনের কোমলতা শরীরের ভিতরকার উত্তাপ কমিয়ে দেয় অবলীলায়। দুধের কোমলতার সঙ্গে মিশে থাকা শুক্তোর পুরনো স্বাদ, সজনে ডাটার সরল চচ্চড়ি, কিংবা মচমচে বড়ার ডালনার সরল অথচ পরিপূর্ণ আনন্দ প্রতিটি পদে আছে বাংলার রান্নাঘরের আদি ঐতিহ্য ও মমতার ছাপ। এই সব রেসিপির মূল আকর্ষণ তাদের স্বাভাবিকতা, মৌলিকতা এবং পুষ্টিগুণ। এগুলো শুধু পেট ভরায় না, হৃদয়ও ভরিয়ে দেয়। তাই গরমের দিনে যখন শরীর চায় একটু হালকা খাবার, তখন এধরনের সরল অথচ মধুর স্বাদের রান্নাই হয়ে ওঠে সত্যিকারের আশ্রয়।

সানশাইন ভিটামিনের অভাব: আপনিও কি ঝুঁকিতে রয়েছেন?

ভিটামিন ডি আমাদের শরীরের জন্য একটি অত্যাবশ্যক উপাদান, যা কেবল হাড় শক্ত রাখাই নয়, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানো, মানসিক স্বাস্থ্যের ভারসাম্য বজায় রাখা ও কোষের সঠিক কার্যকারিতা নিশ্চিত করার জন্য অপরিহার্য। অথচ আধুনিক শহুরে জীবনে, ঘরে বসে থাকা, রোদ এড়িয়ে চলা ও খাদ্যাভ্যাসের অবহেলার কারণে বহু মানুষ ভিটামিন ডি-এর ঘাটতিতে ভুগছেন এমনকি বুঝতেই পারছেন না! এই ঘাটতি ধীরে ধীরে শরীরে বিভিন্ন জটিলতা সৃষ্টি করতে পারে, যা সময়মতো প্রতিরোধ না করলে দীর্ঘমেয়াদি সমস্যা ডেকে আনতে পারে।

ভিটামিন ডি-এর ঘাটতির কারণসমূহ:

পর্যাপ্ত সূর্যালোক না পাওয়া

ইনডোরে দীর্ঘ সময় কাটানো

খাদ্যাভাসে ভিটামিন ডি-সমৃদ্ধ খাবারের অভাব

গাঢ় ত্বক

স্থূলতা

কিডনি ও লিভারের সমস্যা

কিছু ওষুধের দীর্ঘমেয়াদি ব্যবহার


উপসর্গসমূহ:


শিশুদের মধ্যে:

হাড় নরম হয়ে যাওয়া (রিকেটস)

মাথার খুলি দেরিতে শক্ত হওয়া

বারবার ঠান্ডা লাগা

পা বেঁকে যাওয়া

প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে:

হাড়ে ও মাংসপেশিতে ব্যথা

অতিরিক্ত ক্লান্তি ও দুর্বলতা

ঘনঘন অসুস্থ হওয়া

বিষণ্ণতা ও মানসিক অবসাদ

চুল পড়ে যাওয়া


কারা সতর্ক হবেন?

গর্ভবতী ও স্তন্যদায়ী মায়েরা

৬০ বছরের ঊর্ধ্বে বয়স্ক ব্যক্তি

যারা ইনডোরে বেশি সময় কাটান

গাঢ় ত্বকের মানুষ

ফুলহাতা পোশাক পরা মহিলারা

স্থূল বা ওবেসিটি আক্রান্ত ব্যক্তি

কিডনি/লিভার রোগে আক্রান্ত ব্যক্তি

শিশুরা ও কিশোর-কিশোরীরা

যারা নির্দিষ্ট কিছু ওষুধ (যেমন স্টেরয়েড, এপিলেপসির ওষুধ) দীর্ঘদিন খাচ্ছেন

পুষ্টিবিদের পরামর্শ:

প্রতিদিন সকাল ৮টা থেকে ১১টার মধ্যে অন্তত ১৫–২০ মিনিট সূর্যালোক গ্রহণ করুন

খাদ্যতালিকায় রাখুন: সামুদ্রিক মাছ (স্যামন, টুনা), ডিমের কুসুম, কলিজা, ভিটামিন ডি-ফোর্টিফায়েড দুধ/সিরিয়াল, মাশরুম

হাড়ের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে ক্যালসিয়াম ও ম্যাগনেসিয়ামযুক্ত খাবার খান

ডাক্তারি পরামর্শ অনুযায়ী প্রয়োজনে ভিটামিন ডি সাপ্লিমেন্ট নিন

বছরে অন্তত একবার রক্তে ভিটামিন ডি-এর মাত্রা পরীক্ষা করান


প্রতিকার ও প্রতিরোধ:

সূর্যরশ্মিকে জীবনের অংশ করে তুলুন

সুষম খাদ্যগ্রহণ নিশ্চিত করুন

সঠিক জীবনযাপনের অভ্যাস গড়ে তুলুন

নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করান

ভিটামিন ডি-এর অভাব একটি নীরব বিপদ উপসর্গগুলো সাধারণ হলেও প্রভাব হতে পারে গভীর। তাই সচেতনতা, সঠিক খাদ্যাভ্যাস, পর্যাপ্ত সূর্যালোক গ্রহণ ও প্রয়োজন অনুযায়ী সাপ্লিমেন্ট গ্রহণই হতে পারে সুস্থতার মূল চাবিকাঠি। বরং আগে থেকেই সচেতন হলে, আপনি নিজেকে ও পরিবারের সদস্যদের ভিটামিন ডি-এর ঘাটতিজনিত নানা রোগ থেকে রক্ষা করতে পারবেন। মনে রাখবেন, প্রতিরোধই সর্বোত্তম চিকিৎসা।

বাড়িতে অফিস: আধুনিক ও আরামদায়ক অন্দর সজ্জার দিশা

আজকের ওয়ার্ক-ফ্রম-হোম (Work From Home) সংস্কৃতিতে একটি সুন্দর ও কার্যকর হোম অফিস স্পেস অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ঘরের ভেতরেই একটি নির্দিষ্ট জায়গা যদি কাজের উপযোগী করে সাজানো যায়, তাহলে বাড়ে মনোযোগ, কাজের গতি এবং মানসিক শান্তিও।


আদর্শ অন্দরসজ্জার মূল দিকগুলো:


১. আলাদা ও নিরিবিলি স্থান বেছে নিন

ঘরের এমন একটি কোণা বা কক্ষ বেছে নিন যেখানে বাইরের আওয়াজ বা পরিবারের কার্যকলাপ খুব কম প্রভাব ফেলে।

জানালার পাশে হলে প্রাকৃতিক আলো পাওয়া যায়, যা চোখের জন্যও ভালো।

২. আলো ও বায়ু চলাচলের ব্যবস্থা

দিনের বেলায় প্রাকৃতিক আলো বেশি করে আসা উচিত। রাতের কাজের জন্য সাদা বা ওয়ার্ম LED ডেস্ক ল্যাম্প ব্যবহার করুন। হালকা পর্দা বা ব্লাইন্ড রাখলে আলো নিয়ন্ত্রণ করা সহজ হয়।


৩. ফার্নিচার বাছাইয়ে গুরুত্ব দিন

আরামদায়ক চেয়ার (ergonomic chair) ও উপযুক্ত উচ্চতার ডেস্ক নির্বাচন করুন। কাঠের ডেস্ক বা মিনিমাল ডিজাইনের ফোল্ডেবল টেবিল হতে পারে ভালো পছন্দ।


৪. রঙের ব্যবহার

হালকা ও ঠান্ডা রঙ যেমন অফ-হোয়াইট, মিন্ট, প্যাস্টেল ব্লু বা স্যান্ডবেজ মানসিক প্রশান্তি আনে এবং ঘরকে বড় দেখায়। খুব বেশি উজ্জ্বল বা গা dark় রঙ এড়িয়ে চলুন।


৫. সংরক্ষণের জায়গা তৈরি করুন

কাগজপত্র, বই, স্টেশনারি রাখার জন্য শেলফ, ক্যাবিনেট বা ওয়াল হ্যাঙ্গার ব্যবহার করতে পারেন। ফাইল ও কেবলগুলো গুছিয়ে রাখার জন্য কর্ড ম্যানেজার বা অর্গানাইজার রাখুন।

৬. ব্যক্তিত্ব মেলে ধরুন

ডেস্কের পাশে প্রিয় কোটেশন, ইনস্পিরেশনাল পোস্টার, ছোট গাছ বা পারিবারিক ছবির ফ্রেম রাখলে ভালো অনুভূতি হয়। ঘর সাজাতে হালকা কাঠের শেলফ, গ্রীন প্ল্যান্টস, নরম রাগ বা কার্পেট ব্যবহার করতে পারেন।


৭. শব্দ নিয়ন্ত্রণে ব্যবস্থা

সাউন্ড অ্যাবসর্বিং ম্যাট, ভারী পর্দা, বা ছোট বইয়ের র‍্যাক ঘরে ইকো কমায়। Zoom/Google Meet কলের সময় নিরিবিলি পরিবেশ তৈরি হয়।


একটু সৃজনশীলতার স্পর্শ দিন

হোয়াইটবোর্ড বা পিনবোর্ড ব্যবহার করুন কাজের তালিকা রাখতে। অ্যারোমাথেরাপি ক্যান্ডল বা এসেনশিয়াল অয়েল ডিফিউজার কাজের মানসিক চাপ কমাতে সহায়ক হতে পারে। রেট্রো ল্যাম্প বা হ্যান্ডক্রাফটেড ডেস্ক উপকরণ আপনার অফিস স্পেসকে করে তুলবে অনন্য।


বাড়ির ভেতরেই যদি আপনি আপনার কাজের জন্য একটি স্টাইলিশ, সুশৃঙ্খল এবং আরামদায়ক পরিবেশ তৈরি করতে পারেন, তাহলে তা কেবল কাজের গতি বাড়াবে না, বরং মানসিক স্বাস্থ্যের জন্যও হবে ইতিবাচক। অন্দরসজ্জা মানে শুধু শোভা নয় এটি প্রোডাক্টিভিটি ও প্রশান্তিরও চাবিকাঠি।

গরমেও থাকুন সতেজ ও প্রাণবন্ত!

গ্রীষ্মকাল মানেই প্রচণ্ড রোদ, ঘাম, ধুলা ও গরম হাওয়া। এই আবহাওয়ায় আমাদের ত্বক ও চুল বেশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। অতিরিক্ত ঘাম, তেল ও ধুলাবালির কারণে ত্বকে ব্রণ, র‍্যাশ, রোদে পোড়া দাগ এবং চুলে রুক্ষতা, চুল পড়া কিংবা স্ক্যাল্প ইনফেকশনের মতো সমস্যা দেখা দিতে পারে। তাই গরমের দিনে সৌন্দর্য রক্ষার জন্য চাই একটু বাড়তি সচেতনতা ও যত্ন।

গরমে ত্বকের সাধারণ সমস্যা:

অতিরিক্ত তেল বের হওয়া

ব্রণ ও র‍্যাশ

রোদে পোড়া দাগ (Sunburn)

ত্বকের কালচে ভাব

অতিরিক্ত ঘামের কারণে ত্বকে চুলকানি বা ফাঙ্গাল ইনফেকশন


গরমে চুলের সাধারণ সমস্যা:

স্ক্যাল্প ঘেমে যাওয়া ও দুর্গন্ধ

চুল পড়া বেড়ে যাওয়া

চুল রুক্ষ ও প্রাণহীন হওয়া

চুলে ড্যাণ্ড্রাফ বা ফাঙ্গাল ইনফেকশন


ত্বকের যত্নে করণীয়:

1. সঠিক ক্লিনজিং: দিনে দু'বার মুখ ধুয়ে নিন সালফেট-মুক্ত ফেসওয়াশ দিয়ে।

2. টোনিং ও ময়শ্চারাইজিং: টোনার ব্যবহার করলে ত্বকের পোরস সংকুচিত হয়। ত্বকের ধরন অনুযায়ী হালকা ময়শ্চারাইজার ব্যবহার করুন।

3. সানস্ক্রিন: বাড়ির ভিতরেও ব্যবহার করুন SPF ৩০ বা তার বেশি সানস্ক্রিন।

4. স্ক্রাবিং: সপ্তাহে একবার স্ক্রাব করলে মৃত কোষ দূর হয় এবং ত্বক উজ্জ্বল দেখায়।

5. জল পান: দিনে অন্তত ৮-১০ গ্লাস জল পান করুন—ত্বক ভেতর থেকে হাইড্রেট থাকবে।

6. হালকা মেকআপ: গ্রীষ্মে ভারী মেকআপ পরিহার করুন।


চুলের যত্নে করণীয়

1. সপ্তাহে ২–৩ বার শ্যাম্পু করুন: ঘাম ও ধুলো জমে থাকলে ইনফেকশন হতে পারে।

2. হালকা কন্ডিশনার ব্যবহার করুন: চুলকে সফট ও ম্যানেজেবল রাখে।

3. তেল ম্যাসাজ: নারকেল বা অলিভ অয়েল হালকা গরম করে মাথায় ম্যাসাজ করলে স্ক্যাল্পে রক্ত সঞ্চালন বাড়ে।

4. চুল ঢেকে বাইরে যান: স্কার্ফ বা হ্যাট পরা ভালো।

5. হিট স্টাইলিং এড়িয়ে চলুন: গরমে হেয়ার ড্রায়ার, স্ট্রেইনার ব্যবহার করলে চুল আরও রুক্ষ হয়ে যায়।

ঘরোয়া কিছু টিপস

ত্বকের জন্য: টক দই ও বেসন মিশিয়ে ফেসপ্যাক করুন।

সানবার্নে: শসার রস বা অ্যালোভেরা জেল লাগাতে পারেন।

চুলের জন্য: মেথি বাটা ও দই মিশিয়ে হেয়ারপ্যাক দিন।

স্ক্যাল্প ঠান্ডা রাখতে: পুদিনা পাতার রস ও গোলাপ জল ব্যবহার করুন।


গরমকালে ত্বক ও চুলের যত্ন মানে শুধু বাহ্যিক সাজগোজ নয় বরং ভেতর থেকে সুস্থ রাখা। নিয়মিত পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা, সঠিক ডায়েট ও পর্যাপ্ত জলপানের মাধ্যমে সহজেই গ্রীষ্মের রুক্ষতা থেকে ত্বক ও চুলকে রক্ষা করা যায়। নিজের যত্ন নিন, কারণ আপনি ভালো থাকলেই আপনার চারপাশ উজ্জ্বল থাকবে।

কায়াহীনের সংসার

সোমা ব্যানার্জী


সকালে উঠে বাসি কাজ না সেরে তুম্বো মুখে আম গাছের ডালে পা ঝুলিয়ে বসেছিল অন্নদা সুন্দরী। আজ দিন কয়েক হল মন মেজাজ বেজায় খারাপ তার। আর হবে নাই বা কেন ! তার এতদিনের সংসারে আগুন ধরেছে । আর ধরিয়েছে কে , না তার এতো দিনের সঙ্গী ওই বুড়ো ! বুড়োর এই বয়েসে কি ভীমরতি ধরলো গা !

একটু বসে মনের জ্বালা জুড়োবে সে জো নেই। খেন্তি ঝি কাজে এসেই অন্নদাকে বসে থাকতে দেখে অবাক । গিন্নী তো এত বেলা পর্যন্ত পা ঝুলিয়ে বসে থাকার লোক নয় বাপু। অন্য দিন কাজে ঢুকতে না ঢুকতেই খেন্তিকে কাজের ফিরিস্তি দেয়।

সে উপরমুখো চেয়ে গালে হাত দিয়ে কইলো , " হাই গো মা এত বেলা হই গেল তুমি এখনও বসে কেনে গো ! "

" মেলা না বকে নিজের কাজ সার তো বাছা। রোজ রোজ তোকে এক কথা বলে আর পারি নে খেন্তি ।" অন্নদা ঝামটে উঠলো।


" ইহ যত দোষ এই খেন্তির। ভালো কইতে গেনু তাতেও মেজাজ দেখো বুড়ির । " গজগজ করতে করতে কাজে লাগলো সে।

অন্নদা গাছের ওপর উদাস মুখে বসেই রইলো। একমাস আগেও যখন ওই জয়শ্রী থুড়ি জ্যাস মেয়েটা এ বাড়িতে এসেছিল নেমন্তন্ন খেতে তখনও কি সে জানতো যে এই মেয়েই তার সংসারে কাল ডেকে আনবে । না হলে সে থোড়াই নেমন্তন্ন করে খাওয়াতো ।

যেদিন কত্তা এসে বললো , "এ পাড়ায় একটা মিষ্টি ফুটফুটে মেয়ে একাই এসেছে , একেবারে নতুন। ওই আম বাগানের পাশের আস শ্যাওড়া গাছটায় মন খারাপ করে একা একাই বসে থাকে বেচারি। এখানে কিছুই চেনে না জানে না। কি খায় কে জানে। বলি গিন্নী একবার বাড়িতে ডাকবে নাকি ! "

সন্তানহীন অন্নদা সুন্দরীর মনটা টনটন করে উঠেছিল , " আহা কার বাছা গো কে জানে এই রাজ্যে হঠাৎ এসে পড়লো। আমরা না হয় দুজনে একসাথেই এসেছিলাম। যাও যাও তুমি আজ রাতেই এখানে খেতে বলে এসো। আমি নিজে রাঁধবো'খন।"

কত্তা তখনই বেরিয়ে পড়েছিলেন। অন্নদা ফের পিছু ডেকে বলে দিলেন , " শোনো তুমি বরং সঙ্গে করেই ওকে নিয়ে এসো।"

তা কত্তা নিয়ে এসেছিলেন । তার মন্দ লাগে নি মেয়েটিকে। অল্প বয়েস , দেখতেও বেশ। দেখ না দেখ মুখে ইংরিজির খই ফুটছে ঠিকই কিন্তু তার সঙ্গে মিষ্টি করে কথা কইছিলো। আর হাসিটি ভারী মন কাড়া। তিনি গল্প করতে করতে ভাবছিলেন , " কার কোল খালি করে এই বয়েসে চলে এলো গো ! মাথা খালি তার মানে বে থা সংসার কিছুই হয়ে ওঠেনি। তা নাই হলো এ রাজ্যে কি পাত্রের অভাব নাকি। আমরাই চারহাত এক করে দেব না হয়।"

যা হোক এর পরেও মেয়েটা যখন তখন এ বাড়িতে আসতো। অন্নদা সুন্দরী আর তার কত্তমশাই আদিনাথের পাতানো নাতি আকাশ নীলের সঙ্গেও বেশ ভাব হয়েছিল তার। আকাশ নীল চমৎকার ছেলে। এম টেক ইঞ্জিনিয়ার ছিল , দেখতেও চমৎকার। দুটিকে গল্প , খুনসুটি করতে দেখে অন্নদা দু চোখ ভরে দেখতেন আর মিটিমিটি হাসতেন। কি ভাবতেন তা অবশ্য কোনোদিন কারো কাছেই খোলসা করে বলেন নি। তবে কত্তা কে বলবেন ভাবছিলেন । তার মধ্যেই তো এই এই দুর্যোগের মেঘ ঘনালো। তিনি অবশ্য প্রথমটা কিছু টের পান নি। জ্যাস এলে প্রতিবেশীরা কৌতূহলী হয়ে পড়ে , কি সব যেন ফিসফাস করে। ও ওদের কাজ না কম্ম ! যখনই দেখো গাছের ডালে পা ঝুলিয়ে বসে আছে আর পর নিন্দা পরচর্চা করছে। বেঁচে থাকতেও এই করতো বোধ হয় । ওই যে বলে না স্বভাব যায় না মলে ! এই সবই মনে মনে ভাবতেন তিনি।

ভুলটা ভাঙলো দিন সাতেক আগে। আজকাল এই ভুতের রাজ্যে প্রেতবুক আর ঘোস্টঅ্যাপের খুব রমরমা। হবে নাই বা কেন ! মানুষগুলো ওপার থেকে এপারে এসেও ফেসবুক , হোয়াটসঅ্যাপের নেশা মোটেই ছাড়তে পারে না। কেঁদে কেঁদে মরে। তাই জন্যই গুটিকয় সাহেব ভূত এই ফেসবুকের আদলে প্রেতবুক আর হোয়াটসঅ্যাপের আদলে ঘোস্টঅ্যাপ বানিয়ে ফেলেছে। এখন যাকে দেখো তার হাতেই স্মার্টফোন তাইতে মুখ গুঁজে সব যমালয় নেটওয়ার্কিং করে চলেছে। তাকেও কত্তা আদিনাথ একখানা স্মার্ট ফোন কিনে দিয়েছেন। ঘোস্টঅ্যাপ তিনি ব্যবহার করেন , কারণ পাড়ার কমিউনিটির খবর , খেন্তি কাজে আসবে কি না এসব খবর তাকে রাখতে হয় ওই ঘোস্টঅ্যাপের মাধ্যমেই তবে প্রেতবুক তিনি করেন না।

সেদিন বাজারে গিয়েছিলেন একটু গুগলি কিনবেন বলে , হঠাৎ সুরমার সঙ্গে দেখা বহুকাল বাদে। এটা ওটা কথার পর সুরমা তাকে চাপা গলায় বলে উঠলো , " হ্যাঁ রে অন্ন আদিনাথ দার ব্যাপারটা কি বলতো !"

অন্নদা বুঝতে না পেরে হড়বড় করে বললেন, " ওর আবার কি খবর ! ঠিকই আছে ।"

" তুই যে কবে বুঝবি অন্নদা !" ফোঁস করে দীর্ঘশ্বাস ফেললো সুরমা , " বলি ওই অল্প বয়েসী মেয়েটা কে রে যার সঙ্গে আদিনাথদা গলা জড়িয়ে ছবি দিচ্ছে। আবার কি সব ক্যাপশন ছবির ! বুড়ো বয়সে এসব ! বলিহারি যাই বাপু ! চলি রে অন্ন , একা মানুষ গিয়ে আবার মেলা কাজ আমার ।"

সুরমা বাড়ির পথ ধরার পর অন্নদাও বাড়িমুখো হলেন। মনে মনে ভাবছিলেন , " সুরমাটার ভারী সন্দেহ বাতিক। বেঁচে থাকতে ওর বর ওকে ঠকিয়ে একখানা বিয়ে করেছিল। সেই থেকে কাউকে বিশ্বাস করে না বেচারি।"

গোটা দিন কাজের চাপে মনেও ছিল না কিছু। সন্ধ্যেবেলা আদিনাথ আড্ডা মেরে ফিরে ফ্রেশ হতে যেই গেছেন ফোন পিয়ানোর আওয়াজ করে নোটিফিকেশন ঢুকলো একখানা। হঠাৎ কি মনে হলো ফোনটা হাতে নিলেন অন্নদা। কোনো দিন যা করেন না তাই করলেন। ফোন হাতে নিয়ে আদিনাথের প্রেতবুকখানা খুলে ফেললেন। খুলেই তার চক্ষু ছানাবড়া। ওমাগো , এসব কি ! জ্যাসের সঙ্গে একটার পর একটা ছবি পোস্ট করেছেন আদিনাথ। আর কি সব ছবির শিরোনাম , জশন ই ইসক , জোড়ি নম্বর ওয়ান আরো কি কি সব জানি ! আর লোকেরও বলিহারি তাতে কত কমেন্ট আর লাইকের বন্যা। এমনকি আকাশ নীল পর্যন্ত প্রত্যেকটি ছবিতে কমেন্ট করেছে ! বিশ্বাসঘাতক সব ! এই বুড়িটার চোখ বাঁচিয়ে সব কটা অনাসৃষ্টি কান্ডতে যোগ দিয়েছে তাহলে !

আদিনাথের গলার আওয়াজ পেতেই ফোন রেখে দিয়েছিলেন। ইচ্ছে হচ্ছিল বুড়োর গলা টিপে দেন। কিন্তু হায় ভূত হলে আর তো মারা যাবে না । তাই মনের রাগ মনেই চেপে রইলেন। ভালো করে খেয়াল করে দেখলেন আদিনাথ আজকাল সব সময় হাসি হাসি মুখে থাকেন। যখন ইচ্ছে হুটহাট বেরিয়ে যাচ্ছেন। বাড়ি এসে খেয়ে ঘুমিয়ে পড়াই এখন তার কাজ। অন্নদা যে গুছিয়ে চেপে ধরবেন সে সময়ই হচ্ছে কই। বিছানায় শুয়েই নাক ডাকতে থাকে তার। অন্নদা কাউকেই কিছু বলতেও পারছেন না। দিন কয়েক হলো পাড়ার লোকজন তাকে দেখেই গুজগুজ ফিসফাস করছে তিনি রক্তচক্ষু করে তাকালেই সব ভাল মানুষের মত মুখ করে কাজ মন দেয়। কিন্তু তিনি পরিষ্কার বুঝতে পারেন ওরা মুখ চেপে হাসি গোপন করে তাকে দেখে। মাথায় আগুন জ্বলে অন্নদা সুন্দরীর। ওই বুড়োর একদিন কি তার একদিন করেই ছাড়বেন তিনি। গাছের ডালে বসে কি করা যায় তাই ভাবছিলেন । চিন্তার জল ছিঁড়ল খেন্তির গলার আওয়াজে।

" ও গিন্নী মা বলি বসে বসে কি ভাবছো গা ! কত্তা বাবু হেঁশেলে পচা কই আর কাদা চিংড়ি এনে রেখে গেছে । রাঁধবে কখন গা ? পিঁয়াজ রসুন বেটে দিয়ে যাব তো বলো ? এতো বেলা হলো মুখে তো কিছুটি দাও নি। তোমার আবার কি হল ! বলি বসে বসে পা দোলালে হবে ?"

" পিন্ডি খাব ! পিন্ডি এনে দে আমার ! ওসব মাছ টান মারে ফেলে দিগে যা দেখি। জ্বালাস নে আমাকে !"

অন্নদার কথায় গালে হাত দিলো খেন্তি , " ও মা গো মা ! আবার পিন্ডি খাবে কি গো ! পিন্ডি খেয়েই তো এপারে এইয়েছ। তাও পেট ভরেনি ? যা পারো করো বাপু। আমি গরীব লোক। অত কথায় কাজ কি ! এখনও চার ঘরে কাজ বাকি। দাড়ানোর সময় আছে নাকি আমার। ভালো বলতে গেনু তা উনি খ্যারখ্যার করে উঠলেন। আর পারি না বাপু। কবে কে মুক্তি পাব কে জানে। ভূতের নেত্য দেখে দেখে চোখ পচে গেল গা !" গজ গজ করতে করতে চলে গেল খেন্তি।

বসে বসে বেলা প্রায় পড়ে এলো। আদিনাথ আজ বাড়ি ফেরেন নি। বহুবার ফোন করলেও বার বার সুইচ অফ বলছে । এমন তো কোনো দিন হয় না।

অল্প অল্প শীতল বাতাস বইছে। অন্নদা ভাবতে ভাবতে একটু ঝিমোচ্ছিল বোধ হয় চোখ বুজে। টুং করে একখানা মেসেজ ঢুকলো ঘোস্টঅ্যাপে। তন্দ্রা ভেঙে চমকে ফোনখানা কোঁচড় থেকে বের করে চোখের সামনে ধরলো অন্নদা সুন্দরী। অজানা নম্বর থেকে একখানা মেসেজ এসেছে। মেসেজটা খুলতেই যেন শক লাগলো তার । পরিষ্কার বাংলায় লেখা রয়েছে , " চারহাত আজ এক হতে চলেছে। কাদের হাত ? জানতে হলে আজ রাতে রমনার মাঠে গা ছমছম ম্যারেজ হলে আসুন । সব পরিষ্কার হয়ে যাবে।"

ঘুম ছুটে চোখ থেকে আগুন বের হতে লাগলো। তিনি বুঝতে পারলেন আজ এই কারণেই বুড়োর আজ বাড়ি ফেরা হয় নি। আজ একটা হেস্তনেস্ত করতেই হবে। ঝপ করে মাটিতে নামলেন অন্নদা। ঘরে গিয়ে একখানা চওড়া ঢালা লাল পাড়ের গরদ পরলেন। এটা ভারী প্রিয় শাড়ি ছিল। একসময় এটা পরে দুর্গা বরণে গেলে সবাই বলতো চোখ ফেরানো যায় না। বড় করে এক খানা সিঁদুরের টিপ আঁকলেন কপালে। ঝনাত করে আঁচলে বাঁধা চাবির গোছা ঘুরিয়ে পিঠের দিকে ফেলে যখন রমখিলাওনের রিকশায় উঠলেন তখন আঁধার নেমে গেছে। পাড়ার রাস্তাঘাট একটি ফাঁকা আজ। লোকজন বোধ হয় সব ওই বিটলে বুড়োর বিয়ে খেতে গেছে।

রোসো হওয়াচ্ছি চার হাত এক তোমাদের !

….." এ মাইজি কাঁহা জানা হ্যায় ?" রামখিলাওনের গলার আওয়াজে সৎবিত ফিরলো।

….." ওই যে রমনার মাঠে নতুন বিয়ে বাড়ি তৈরি হুয়া ওইখানে যানা হ্যায়। চলো তাড়াতাড়ি । "

….." জ্বী মাইজী "।


রামখিলাওন একটু আশ্চর্য হলো মাইজি আজ একটু অন্যরকম যেন। অন্য দিন দেখা হলেই তার বউ ফুলমতিয়ার খবর নেয় আজ কিছুই বললো না।

রমনার মাঠের কাছে আসতেই চোখে পড়লো গা ছমছম ম্যারেজ হলের বাইরে ঘেঁটু ফুলের সজ্জা। কাছে এসে রামখিলাওন অন্নদাকে নামিয়ে রিকশা সাইড করে নিজেও টুক করে ঢুকে পড়লো। রক্তচক্ষু করে ব্যাপারটা দেখলেন অন্নদা। এলাহী আয়োজন। সাউন্ড বক্সে লো ভলিউমে ব্যাঙের ডাক আর শেয়ালের ডাকের ফিউশন বাজছে। চারিদিকে টুপটাপ আলো। ইউনিফর্ম পরা ক্যাটারিংয়ের লোকজন গ্লাসে বরফ দেওয়া পানা আর কি সব মেশানো সবুজ রঙের সরবত , রক্ত দেওয়া ওয়াইন সার্ভ করে বেড়াচ্ছে হাতে ট্রে নিয়ে। ওদিকে রান্নার খুশবু ভেসে আসছে। পাশের বাড়ির ছেলেপুলেগুলো হাতে সরবতের গ্লাস নিয়ে এদিক পানেই আসছিল হল্লা করতে করতে , অন্নদা কে দেখেই কোথায় সেঁধিয়ে পড়লো।

অন্নদার এবার কান্না পাচ্ছিল। বেঁচে থাকতে পঁচিশ আর মরার পর না হোক আরো পঁচিশ মোট পঞ্চাশ বছর একসাথে থাকা। তারপর ও লোকটা পারলো এমন ধোঁকা দিতে তাকে ! সামান্য নাক টেনে বাড়ির ভিতর দুপদুপ করে পা ফেলে ঢুকলেন তিনি। ভিতরের বাগানে বিয়ের আসর বসেছে। কাছে গিয়ে কোমরে হাত দিয়ে তিনি একখানা বাজখাঁই চিৎকার দিতে যাবেন হঠাৎ তার হাতখানা কে যেন আস্তে করে ধরলো। চমকে চেয়ে দেখেন আকাশ নীল। কি চমৎকার দেখাচ্ছে। জরীর কাজ করা তসর রঙা পাঞ্জাবি আর ধুতি পরেছে সে। কোথায় এমন সুন্দর নাতির বউ বরণ করবেন তা না অলপ্পেয়ে মিনসে এই বুড়ো বয়সে বিয়েতে বসলো। তিনি চোখ চেয়ে ভালো করে চাইতে পারছিলেন না আকাশ নীলের দিকে। সেই কারণেই বোধ হয় আকাশ নীলের গলার ঘেঁটু ফুলের মালা ঝুলছে খেয়ালই করলেন না তিনি। গুমগুমে গলায় বলে উঠলেন , " তিনি কই , তাকে চাই ।"

তাকে দেখেই চারিদিকে এসে পড়েছে এসে পড়েছে গুনগুন। তার মধ্যে দিয়েই তিনি আকাশের হাত ধরে বিয়ের মণ্ডপের দিকে গেলেন।

বিয়ের মণ্ডপের কাছে গিয়ে তার হাত ছেড়ে আকাশ নীল মণ্ডপের ভেতর ঢুকে পড়লো। ওদিকে কনে কে একদল পিড়িতে চাপিয়ে ঢুকে পড়েছে মণ্ডপে। তার চোখ তখন এদিক ওদিক আদিনাথ কে খুঁজছে। বুড়ো গেল কই। ঠিক ঘাপটি মেরেছে তাকে দেখেই। ওদিকে কারা যেন উলু দিয়ে উঠলো।

হঠাৎ তিনি হতবাক হয়ে দেখলেন জ্যাস আর আকাশ নীল মুখোমুখি দাড়িয়ে একে অপরের গলায় মালা পরিয়ে দিল। পাশে দাড়িয়ে বেম্মদত্তি বলে উঠলেন , কই মেয়েকে কে সম্প্রদান করবেন চলে আসুন।

হঠাৎ পাশ থেকে খুব নরম গলায় আদিনাথ বলে উঠলেন , "কই গো গিন্নী চলো। আমার নাতনি আর তোমার নাতির আজ বিয়ে যে ! বিয়েতে বসি চলো। আমাদের নিজেদের সন্তান সুখ আমরা পাইনি তাতে কি একেবারে নাতি নাতনির জোড়া সুখ। সুদে আসলে কেমন পুষিয়ে দিলুম বলো ।"


অন্নদার তখন চোখ ভর্তি জল। তিনি কি সব ভেবে বসেছিলেন এতো দিন ধরে। সবাই সব জেনে বুঝে মজা দেখছিল তবে। আসেপাশের জমায়েত ভূতেরা সব হো হো করে হেসে উঠলো। পাড়ার চ্যাংড়া ভূতেরা কেউ কেউ এক কাঠি সরেস তারা বললে চলো দাদু দিদা তোমাদের ও আজ আবার বিয়ে হয়ে যাক। অন্নদা সুন্দরী লজ্জায় মরেন আর কি !

বিয়ের পরে ভূতেদের বিরাট বাসর বসলো রমনার মাঠে। ধুতি পাঞ্জাবি পরা আদিনাথ সেই বাসরে অন্নদা সুন্দরীর চারিদিকে ঘুরে ঘুরে গাইতে লাগলেন , " মন দিলে না বঁধূ , মন নিলে না বঁধূ ……"

অন্নদা সুন্দরী ঘোমটা দাঁতে চেপে জলভরা চোখে একখানা কটাক্ষ হেনে মধুর হেসে বললেন , " আ মরণ !"


Commentaires


ssss.jpg
sssss.png

QUICK LINKS

ABOUT US

WHY US

INSIGHTS

OUR TEAM

ARCHIVES

BRANDS

CONTACT

© Copyright 2025 to Debi Pranam. All Rights Reserved. Developed by SIMPACT Digital

Follow us on

Rojkar Ananya New Logo.png
fb png.png

 Key stats for the last 30 days

bottom of page