top of page

বাঙালির মনে প্রাণে রবীন্দ্রনাথ, পশ্চিমবঙ্গের GI ট্যাগ প্রাপ্ত পণ্যের গল্প, ডিমের স্বাদ সমাচার, স্থূলতা কমাতে এমারেল্ড লেজার, রবিবারের গল্প: সন্ন্যাসী ভূত..

Updated: May 4

বাঙালির মনে প্রাণে রবীন্দ্রনাথ

"তুমি রবে নিরবে হৃদয়ে মম…" এই একটি পংক্তিতেই যেন ধরা পড়ে যায় কবিগুরুর চিরস্থায়ী অস্তিত্ব বাঙালির হৃদয়ে। সময় যতই এগোয়, সমাজ যতই বদলায়, রবীন্দ্রনাথ যেন ততই বেশি সমকালীন হয়ে ওঠেন। তিনি শুধু একজন কবি, সাহিত্যিক কিংবা সুরস্রষ্টা নন, তিনি এক ভাবনা, এক চেতনা, এক জীবনদর্শন।

রবীন্দ্রনাথ: একটি আবেগের নাম

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বাঙালির জীবনের প্রতিটি অধ্যায়ে কোথাও না কোথাও জড়িয়ে আছেন। শিশুর মুখে সহজ পাঠ, প্রেমিক-প্রেমিকার ঠোঁটে অনন্ত প্রেমের গান, বিপ্লবীর কণ্ঠে চেতনার জোয়ার, কিংবা বৃদ্ধের চোখে স্মৃতিমেদুরতা সবখানেই রবীন্দ্রনাথ।

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর (১৮৬১-১৯৪১) ছিলেন বাংলা সাহিত্যের অমর কবি, দার্শনিক, সুরস্রষ্টা, নাট্যকার ও চিত্রশিল্পী। তিনি ছিলেন প্রথম এশিয় যিনি সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার লাভ করেন। ১৯১৩ সালে তাঁর লেখা কাব্যগ্রন্থ "গীতাঞ্জলি"-র জন্য তিনি এই সম্মানে ভূষিত হন। রবীন্দ্রনাথ জন্মগ্রহণ করেন ৭ই মে, ১৮৬১ সালে, কলকাতার জোড়াসাঁকোর ঠাকুর পরিবারে। তাঁর পিতা ছিলেন দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর, যিনি ব্রাহ্ম আন্দোলনের একজন গুরুত্বপূর্ণ নেতা। মাতা সারদা দেবী। ঠাকুর পরিবার ছিল সংস্কৃতি, সাহিত্য ও সমাজ সংস্কারের ক্ষেত্রে অগ্রণী।

রবীন্দ্রনাথের প্রথাগত শিক্ষা ছিল বিচিত্র। প্রথমে পাঠ শুরু হয় কলকাতার একাধিক বিদ্যালয়ে, পরে কিছুদিন ইংল্যান্ডে আইন পড়ার জন্য পাঠানো হলেও, তিনি তাতে আগ্রহ হারিয়ে লেখালেখি ও সংগীতচর্চায় মন দেন। রবীন্দ্রনাথ প্রায় সবধরনের সাহিত্যরূপে সিদ্ধহস্ত ছিলেন। কবিতা, গান, নাটক, গল্প, উপন্যাস, প্রবন্ধ; সব শাখায় তিনি নতুন মাত্রা এনেছিলেন। তিনি শান্তিনিকেতনে ‘বিশ্বভারতী’ বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন, যা শিক্ষার এক বিকল্প পথ হিসেবে বিবেচিত হয়। তিনি ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের প্রতি সহানুভূতিশীল ছিলেন, যদিও রাজনৈতিক লড়াইয়ের বদলে সাংস্কৃতিক জাগরণকে প্রাধান্য দিয়েছেন। ১৯১৫ সালে ব্রিটিশ সরকার তাঁকে ‘নাইট’ উপাধি প্রদান করলেও, ১৯১৯ সালে জালিয়ানওয়ালাবাগ হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে তিনি তা প্রত্যাখ্যান করেন। ৭ই আগস্ট, ১৯৪১ সালে কলকাতার জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়িতেই শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন বিশ্বকবি।


রবীন্দ্রনাথের বংশের আসল পদবী ‘ঠাকুর’ নয়!

আমরা আজ ‘রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর’ নামে যাঁকে জানি, বাংলা সাহিত্যের শ্রেষ্ঠতম কবি ও চিন্তাবিদ হিসেবে যাঁকে মানি, তাঁর বংশের আসল পদবী কিন্তু ‘ঠাকুর’ ছিল না! এই তথ্য শুনে অনেকেই চমকে উঠবেন—কিন্তু ইতিহাসের পাতা ঘেঁটে জানা যায়, ঠাকুর পরিবারের পূর্বসূরিদের আসল পদবী ছিল ‘কুশারী’। ‘কুশারী’ পদবীটি আসলে ছিল এক ব্রাহ্মণ বংশের, যারা পূর্ববঙ্গের যশোর জেলার (বর্তমানে বাংলাদেশের) এক অংশে বাস করতেন। সেই বংশের একজন সদস্য, পঞ্চানন কুশারী, ধর্মীয় ও সামাজিক কারণে কলকাতার দিকে পাড়ি জমান। ধীরে ধীরে এই পরিবার কলকাতার জমিদার ও বিদ্বৎসমাজে নিজের অবস্থান গড়ে তোলে।


তখনকার দিনে অনেকেই ‘ঠাকুর’ উপাধি ব্যবহার করতেন ধর্মীয় বা সামাজিক সম্মানের নিদর্শন হিসেবে, ঠিক যেমন ‘পণ্ডিত’ বা ‘চৌধুরী’ উপাধি ব্যবহৃত হত। এই ‘ঠাকুর’ উপাধিটি ক্রমে রবীন্দ্রনাথের পরিবারে স্থায়ী পদবী হিসেবে প্রতিষ্ঠা পায়, আর সেই নামেই তাঁরা পরবর্তী প্রজন্মে পরিচিত হন। এখানে লক্ষ্যণীয় যে, রবীন্দ্রনাথ নিজেও বহুবার তাঁর রচনায় তাঁর পারিবারিক ঐতিহ্য ও পূর্বপুরুষদের কথা উল্লেখ করেছেন, যদিও কখনওই সরাসরি পদবী পরিবর্তনের প্রসঙ্গ তুলে ধরেননি। তবে ঠাকুর পরিবারের ইতিহাস নিয়ে যারা গবেষণা করেছেন, তাঁদের অনেকেই এই তথ্য তুলে ধরেছেন এবং প্রমাণ করেছেন যে রবীন্দ্রনাথের বংশের প্রাচীন পদবী ছিল ‘কুশারী’। রবীন্দ্রনাথের পরিবারের এই রূপান্তর যেন আমাদের ইতিহাস চর্চাকে আরও সমৃদ্ধ করে, এবং মনে করিয়ে দেয় নাম, পদবী কিংবা উপাধির বাইরে গিয়ে একজন মানুষের পরিচয় গড়ে ওঠে তাঁর কাজ ও অবদানের মাধ্যমে। আর সেই নিরিখে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর চিরকালই আমাদের 'বিশ্বকবি'।


রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জীবনের শেষ কয়েক মাস

“মৃত্যু যদি হয়, সে হোক এমন মৃত্যু; যা হয় গভীর শান্তিময়, পরিপূর্ণ বিসর্জনের মধ্যে।”

এই পংক্তিগুলি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নিজেরই লেখা। তাঁর জীবন যেমন অসীম সৃষ্টিশীলতায় পূর্ণ, তেমনই তাঁর মৃত্যুও যেন এক অনির্বচনীয় আত্মসমর্পণ। ৮০ বছরের দীর্ঘ জীবনের শেষে কবিগুরু যখন মৃত্যুর দিকে ধীরে ধীরে এগিয়ে যাচ্ছেন, তখনও তিনি থামেননি লিখেছেন, ভেবেছেন, অনুভব করেছেন এক জাগ্রত চেতনার সঙ্গে। রবীন্দ্রনাথের জীবনের শেষ কয়েক মাস ছিল যেমন শারীরিক যন্ত্রণায় পূর্ণ, তেমনি মানসিকভাবে গভীর, প্রজ্ঞাময় ও অনন্য।

১৯৪০ সালের পর থেকেই রবীন্দ্রনাথের শারীরিক অবস্থা দ্রুত অবনতি ঘটতে শুরু করে। প্রোস্টেট গ্ল্যান্ডের সমস্যায় তিনি কষ্ট পাচ্ছিলেন। বারবার রক্তস্রাব, দুর্বলতা, অজ্ঞান হয়ে যাওয়া; এসব নিয়মিত ঘটনা হয়ে দাঁড়ায়। শান্তিনিকেতনে অবস্থানকালীন সময়ে চিকিৎসা চললেও গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় তাঁকে কলকাতার জোড়াসাঁকোর পৈতৃক বাসভবনে ফিরিয়ে আনা হয় ১৯৪১ সালের জুলাই মাসে। জুলাই মাসে তাঁর অস্ত্রোপচার হয়। চিকিৎসক ছিলেন বিখ্যাত ডাক্তার বিধানচন্দ্র রায়, পরবর্তীকালে যিনি পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী হন। অস্ত্রোপচারের পর কিছুদিন সামান্য উন্নতি দেখা দিলেও পরে তা আর স্থায়ী হয়নি। অপারেশনের যন্ত্রণায় কবি প্রায় নিঃশেষ হয়ে পড়েন, কিন্তু মন ছিল সম্পূর্ণ সচল ও জাগ্রত।


যখন শরীর একে একে বিদায় নিচ্ছিল, তখনো রবীন্দ্রনাথের কলম থামেনি। শেষ মাসগুলোতে তিনি রচনা করেন কিছু অসামান্য কবিতা ও প্রবন্ধ, যেগুলোর মধ্যে ফুটে ওঠে জীবনের প্রতি তাঁর গভীর উপলব্ধি ও মৃত্যুর প্রতি আত্মসমর্পণের নির্লিপ্ত ধ্যান। এই সময়ে রচিত কবিতাগুলোর মধ্যে “সহজপাঠ” ও “তুমি রবে নিরবে” বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। তাঁর শেষ প্রবন্ধ ‘সভ্যতার সংকট’ এ তিনি বিশ্বযুদ্ধ, উপনিবেশবাদ, আর্থসামাজিক বৈষম্য নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেন। তাঁর এই ভাবনাগুলো আজও সমান প্রাসঙ্গিক। জোড়াসাঁকোয় তাঁর চারপাশে ছিলেন প্রিয়জনেরা; কন্যা মীরা দেবী, পুত্র রথীন্দ্রনাথ, এবং ঘনিষ্ঠ আত্মীয়স্বজনেরা। ঠাকুরবাড়ির পরিবেশ ছিল নীরব, স্নেহময় এবং শ্রদ্ধায় পরিপূর্ণ। এই শেষ দিনগুলোয় কবি বহুবার তাঁর জীবনকে ফিরে দেখেছেন, আত্মবিশ্লেষণ করেছেন, এবং যেন এক ধ্যানমগ্ন মনের মধ্যে নিজেকে বিলিয়ে দিয়েছেন।

৭ই আগস্ট ১৯৪১। দুপুর নাগাদ কবি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। সেই মুহূর্তে কলকাতার আকাশ যেন এক বিষাদময় স্তব্ধতায় ডুবে গিয়েছিল। দেশজুড়ে শোকের ছায়া নেমে আসে। সংবাদ ছড়িয়ে পড়ে দ্রুত, এবং কবির মরদেহ শান্তিনিকেতনে নিয়ে গিয়ে দাহ করা হয়। রবীন্দ্রনাথ তাঁর মৃত্যুকে কেবলই দেহান্তর বলে দেখেছেন। তাঁর একটি বিখ্যাত কবিতায় তিনি লিখেছেন: “শেষ নাহি যে, শেষ কথা কে বলবে?”


এ যেন তাঁর জীবনবোধেরই প্রতিধ্বনি; যেখানে মৃত্যু শেষ নয়, বরং এক রূপান্তরের পথ।

ঐতিহ্যের ছাপ, পশ্চিমবঙ্গের গর্ব; জিআই ট্যাগপ্রাপ্ত পণ্যের গল্প

পশ্চিমবঙ্গ, একটি রাজ্য যা ইতিহাস, সংস্কৃতি ও শৈল্পিক ঐতিহ্যে পরিপূর্ণ। এখানকার প্রতিটি অঞ্চলেই লুকিয়ে আছে অনন্য সব হস্তশিল্প, কৃষিপণ্য ও গৌরবময় রন্ধনশৈলী। এই ঐতিহ্যের আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি হিসেবে বহু পণ্য ইতিমধ্যে পেয়েছে ভৌগোলিক নির্দেশক (GI) ট্যাগ। GI ট্যাগ শুধু একটি চিহ্ন নয়, এটি একেকটি অঞ্চলের স্বকীয়তা, গুণমান এবং সংস্কৃতির নির্ভরযোগ্য স্বীকৃতি। পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন জেলা থেকে উঠে আসা এই GI ট্যাগপ্রাপ্ত পণ্যগুলি আজ রাজ্যের পরিচিতি বহন করছে বিশ্বমঞ্চে।


বাংলার গন্ধমাখা স্বাদ ও ফসল

দার্জিলিং চা– বাংলার সুবাসে মোড়া গৌরব

স্বাদে, সুবাসে, আর ঐতিহ্যে অনন্য দার্জিলিং চা শুধু এক কাপ পানীয় নয়, এটি বাংলার সংস্কৃতি ও গর্বের প্রতীক। বিশ্বের প্রথম চা যা পেয়েছে GI (Geographical Indication) ট্যাগ, সেই বিশেষ স্বীকৃতি যা বলে দেয় এর উৎপত্তি, তার মান, এবং তার স্বাতন্ত্র্য শুধুই দার্জিলিং-এর মাটিতেই সম্ভব। প্রতিটি চুমুকে মেলে হিমালয়ের স্পর্শ, পাহাড়ি হাওয়ার ছোঁয়া, আর বাংলার প্রকৃতির নিঃশব্দ গল্প। এই চা শুধু স্বাদ নয়, একটি অনুভূতি; বাংলার অহংকার।


জয়নগরের মোয়া– শীতের স্নেহে মোড়া বাংলার মিষ্টি ভালোবাসা

খেজুর গুড়ের গাঢ় সুবাস, কনকচূড় ধানের খইয়ের মোলায়েম পরশ আর নিপুণ হাতে তৈরি জয়নগরের মোয়া; এটি শুধু একটি মিষ্টি নয়, বরং গ্রামবাংলার শীতের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। শীত এলেই ঘরে ঘরে ফিরে আসে এই অমৃত স্বাদ; যা আমাদের শৈশবের গল্প, ঠাকুরমার হাত, আর বাংলার শিকড়ের সঙ্গে জুড়ে থাকা হাজারো স্মৃতির জানালা খুলে দেয়।

জয়নগরের মোয়া; শীতের সকাল আর মায়ের স্নেহে ভেজা এক টুকরো মিষ্টি অতীত।


মুর্শিদাবাদের ছানাবড়া– নবাবি রুচির এক অতুলনীয় ঐতিহ্য

মিষ্টির রাজ্যে অনেক নাম রয়েছে, কিন্তু মুর্শিদাবাদের ছানাবড়ার মতো ঐতিহ্যবাহী রসনাসুখ খুব কমই আছে। বড়ো আকারের, ছানার নরম ছোঁয়া আর বিশেষ কৌশলে তৈরি এই মিষ্টান্নটি শুধু স্বাদে নয়, ঐতিহ্যে নবাবি আমলের গর্ব বহন করে। মুর্শিদাবাদের রাজপ্রাসাদ থেকে সাধারণ বাঙালির মিষ্টির প্লেট ছানাবড়া আজও সময়কে জয় করে দাঁড়িয়ে আছে ইতিহাস আর গৌরবের প্রতীক হয়ে।


নলেন গুড়ের সন্দেশ– শীতের রসে মিশে থাকা বাংলার সোনালি সুখ

শীত মানেই নলেন গুড়, আর নলেন গুড় মানেই সন্দেশ!এই মিষ্টান্ন শুধু স্বাদে নয়, আবেগে জড়িয়ে থাকে প্রতিটি বাঙালির হৃদয়ে। ঠান্ডা হাওয়ার মধ্যে যখন কুয়াশা মেশে, তখনই আসে নলেন গুড়ের সন্দেশ; একেবারে ঘরের স্বাদ। শীতের রসনায় মোড়া বাংলার গর্ব, ঐতিহ্য আর মায়ার মিষ্টি গল্প।

বারুইপুরের পেয়ারা– স্বাদে, ঘ্রাণে, গর্বে অনন্য

বাংলার দক্ষিণ প্রান্তে ছোট্ট শহর বারুইপুর; সেখানকার মাটি আর জলবায়ু যেন বিশেষ এক আশীর্বাদ পেয়েছে পেয়ারা চাষের জন্য। এখানকার পেয়ারা শুধু স্বাদের জন্য নয়, তার ঘ্রাণ, রসাল গঠন আর প্রাকৃতিক পুষ্টিগুণের জন্যও বিখ্যাত।

হালকা টক-মিষ্টি স্বাদের এই পেয়ারা খেলে মনে হয় "এ শুধু ফল নয়, এ যেন প্রকৃতির উপহার।"


মালদার ফজলি, লক্ষ্মণভোগ ও হিমসাগর– বাংলার রাজকীয় আমত্রয়

যদি আমকে বলা হয় ফলের রাজা, তবে মালদার মাটি সেই রাজ্যের রাজভবন।বাংলার গ্রীষ্মকাল মানেই এই তিনজন রাজপুরুষের আগমন – ফজলি, লক্ষ্মণভোগ আর হিমসাগর (খিরসাপাতি)।

  • ফজলি – আকারে বৃহৎ, রসাল ও দীর্ঘস্থায়ী; যেন রাজপ্রাসাদের ধৈর্যশীল উত্তরাধিকারী।

  • লক্ষ্মণভোগ – মিষ্টি, কোমল ও ঘ্রাণে অপূর্ব; নামেই যেন আশীর্বাদ।

  • হিমসাগর (খিরসাপাতি) – তুলনাহীন স্বাদের অধিকারী, গাঢ় সোনালি রঙ ও মসৃণ গঠন তাকে করেছে বাঙালির প্রিয়তম।


কালোনুনিয়া, রাঁধুনিপাগল, গোবিন্দভোগ ও তুলাইপাঞ্জি – বাংলার সুবাসিত চালের মহারথী

যেখানে ভাত শুধু খাবার নয়, সেখানে চালের প্রতি বাঙালির ভালোবাসা হয়ে ওঠে শ্রদ্ধা। আর সেই শ্রদ্ধার চূড়ান্ত রূপ হল বাংলার চারটি অতুলনীয় চাল কালোনুনিয়া, রাঁধুনিপাগল, গোবিন্দভোগ ও তুলাইপাঞ্জি।

  • কালোনুনিয়া – গভীর রঙ ও অনন্য সুগন্ধে রান্নার সময়ে মন ভরে দেয়।

  • রাঁধুনিপাগল – এমন এক ঘ্রাণ যার জন্য রাঁধুনিরা মুগ্ধ, আর নামেই যেন গল্প।

  • গোবিন্দভোগ – খিচুড়ি, ভোগ বা পায়েস এই চাল ছাড়া যেন অসম্পূর্ণ বাঙালির পূজা ও পার্বণ।

  • তুলাইপাঞ্জি – হালকা, দানায় দানায় মসৃণতা; পশ্চিমবঙ্গ-বাংলাদেশ সীমান্তে এক ঐতিহ্যের ধারক।

এই চালগুলো শুধু রান্নার উপকরণ নয় এগুলো বাংলার মাটি, ঘ্রাণ, ও গর্বের গল্প বলে।


সুন্দরবনের মধু– প্রকৃতির অরণ্যমূলক সোনালি রস

বিশ্বের বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ অরণ্য, সুন্দরবন শুধু রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার-এর জন্য নয়, তুলনাহীন প্রাকৃতিক মধুর জন্যও বিশ্ববিখ্যাত। গরান, গেওয়া, সুন্দরী ইত্যাদি গাছের ফুল থেকে মৌমাছিরা সংগ্রহ করে এই মধু যার রং, স্বাদ ও ঔষধিগুণ অন্য যেকোনো মধুর থেকে অনন্য। সুন্দরবনের মৌচাষীরা জীবন বাজি রেখে জঙ্গলে ঢোকেন, বাঘ ও প্রকৃতির ভয়ঙ্করতা অতিক্রম করে সংগ্রহ করেন এই অমূল্য সম্পদ। এই মধু শুধু স্বাদে নয় এটি একটি সাহসিকতার প্রতীক, একটি জীবিকা, এবং বাংলার এক গুরুত্বপূর্ণ GI ট্যাগপ্রাপ্ত প্রাকৃতিক রত্ন।

শিল্পের আঁচলে বোনা বাংলার গল্প

বালুচরি শাড়ি– বিষ্ণুপুরের রেশমে বোনা কাহিনির ক্যানভাস

শুধু শাড়ি নয়, বালুচরি আসলে একটি গল্প। মুর্শিদকালের রাজসভা, কৃষ্ণলীলা, রামায়ণ-মহাভারতের দৃশ্য সব যেন রেশমের সুতোয় বোনা জীবন্ত ছবি হয়ে উঠে আসে বিষ্ণুপুরের তাঁতশিল্পীদের হাতেএই শাড়ির প্রতিটি পাড়, আঁচল আর বুননে থাকে বাংলার পুরাণ, ইতিহাস ও অপূর্ব কারিগরির নিদর্শন। রাজকীয় ধাঁচ, জটিল ডিজাইন, আর মিহি রেশমের পরত বালুচরি একাধারে ঐতিহ্য, শিল্প ও আত্মপরিচয়ের প্রতীক।


ধনিয়াখালি, গরদ ও কোরিয়াল– বাংলার বুননের তিন স্বতন্ত্র অধ্যায়

ধনিয়াখালি শাড়ি – হুগলির ধনিয়াখালি অঞ্চলে জন্ম নেওয়া এই হালকা, সরু পাড়ওয়ালা তুলো শাড়ি বাঙালি মহিলাদের প্রাত্যহিক পরিধানে এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। আরামদায়ক, সহজ বয়ন ও মাটির গন্ধ মেশানো এই শাড়ি বাঙালির গ্রাম্য জীবনের এক জীবন্ত প্রতিচ্ছবি।

গরদ শাড়ি – মূলত গাঢ় সীম ও দুধসাদা বডি-ওয়ালা এই রেশমি শাড়ি শাস্ত্রীয় ভাবধারায় গৃহস্থালি ও পূজা-পার্বণের জন্য আদর্শ। মুর্শিদাবাদে উৎপন্ন এই শাড়ি নরম রেশমে তৈরি, আর তার স্নিগ্ধতা যেন বাঙালির আন্তরিকতার প্রতীক।

কোরিয়াল শাড়ি – গরদের একটি রাজকীয় সংস্করণ, গাঢ় লাল পাড় এবং সাদা বডি-ওয়ালা এই শাড়িটি বাংলার পূজোর সাজ ও বিয়ের ঐতিহ্যে দীর্ঘকাল ধরে স্থান করে নিয়েছে। এটি ঐতিহ্য ও আভিজাত্যের এক অনবদ্য নিদর্শন।


নকশিকাঁথা– নারীর হাতের ছোঁয়ায় বোনা শত শত গল্প

প্রতিটি সেলাই যেন একটি স্মৃতি, প্রতিটি নকশা যেন এক জীবনের প্রতিচ্ছবি। নকশিকাঁথা, বাংলার নারীহৃদয়ের এক অনবদ্য শিল্প, যেখানে পুরোনো শাড়ি কিংবা কাপড় নতুন প্রাণ পায় প্রেম, বিয়ে, সন্তান, যুদ্ধ, দেবদেবী কিংবা প্রকৃতির ছবি হয়ে। গাঁথা হয় চুপিচুপি গল্প, নিঃশব্দ ভালোবাসা, মনের কথাগুলি — সুতোয় বাঁধা আবেগ।নকশিকাঁথা একাধারে লোকশিল্প, ইতিহাস ও আত্মপরিচয়ের নিদর্শন যা মা-ঠাকুমার বুকের ভেতর থেকে উঠে এসে হাতের কাজ হয়ে আমাদের ভবিষ্যতের দিকে এগিয়ে চলে।


শান্তিনিকেতনের চামড়ার কাজ– কবিতার ছায়ায় গড়ে ওঠা শিল্পসৃষ্টি

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের আদর্শে শান্তিনিকেতনে গড়ে ওঠে শুধুমাত্র বিদ্যার নয়, শিল্পচর্চারও এক স্বতন্ত্র পরিসর। সেই অনুপ্রেরণায় জন্ম নেয় শান্তিনিকেতনের চামড়ার কাজ হাতে তৈরি ব্যাগ, জুতো, মানিব্যাগ, বেল্ট, ডায়েরি কভার প্রভৃতি, যেখানে রঙ, নকশা আর মাটির ঘ্রাণ এক অপূর্ব সংমিশ্রণ তৈরি করে। এই শিল্পে আলপনা, প্রকৃতি ও লোকশিল্পের ছোঁয়া মেলে প্রতিটি ডিজাইনে, যা একাধারে ব্যবহারিক এবং শিল্পনির্ভর। গ্রামীণ কারিগরের নিপুণ হাতে গড়ে ওঠা প্রতিটি টুকরো যেন শান্তিনিকেতনের মাটিতে লেখা এক শিল্পকবিতা।

মেদিনীপুরের মাদুর– মাটির কাছাকাছি জীবন ও শিল্পের গল্প

মাদুরকাঠি দিয়ে তৈরি এই মাদুর শুধু বসার বা শোয়ার পাটি নয় এটি একেকটি গৃহস্থ পরিবারের ঐতিহ্য, আর মেদিনীপুরের মহিলাদের পরিশ্রম ও শিল্পচেতনায় গড়ে ওঠা এক নিপুণ শিল্পকর্ম। নারীরা দল বেঁধে বসে রঙিন সুতো দিয়ে নানা নকশা বুনে গড়ে তোলে মাদুর, যার প্রতিটি রেখা, জ্যামিতিক প্যাটার্ন, বা ফুলের নকশা বাংলার লোকজ জীবনের প্রতিচ্ছবি। মাদুর যেমন পরিবেশবান্ধব, তেমনি টেকসই ও নান্দনিক। এটি ভারতের GI ট্যাগপ্রাপ্ত এক গর্বজনক হস্তশিল্প।


পুরুলিয়ার চৌ মুখোশ– মুখে নয়, মুখোশে ফুটে ওঠে বাংলার আত্মা

লোকনৃত্য ‘ছৌ’ কেবল নাচ নয় এটি এক চলমান চিত্রনাট্য, যার প্রাণ চৌ মুখোশ। পুরুলিয়ার কারিগরেরা মাটি, কাগজ, কাপড় আর রঙ দিয়ে গড়ে তোলেন এই জীবন্ত মুখাবয়ব যা কখনো দেবতা, কখনো অসুর, আবার কখনো বীরপুঙ্গবের প্রতিরূপ। প্রতিটি মুখোশ শুধু চেহারা নয়, তা হয়ে ওঠে চরিত্রের প্রতিচ্ছবি।উঁচু পলকা নাক, গোল চোখ, ঝলমলে রঙ আর অলংকরণের ভেতর দিয়ে ফুটে ওঠে বাংলার রঙিন লোকনাট্যের ইতিহাস। এই মুখোশ তৈরি শুধু শিল্প নয়, পুরুলিয়ার উপজাতি জীবনের আত্মপরিচয়।


বাঁকুড়ার ঘোড়া– টেরাকোটায় গড়া বাংলার মাটি ও শিল্পের সম্মিলন

বাঁকুড়া জেলার সূক্ষ্ম মাটি আর কারিগরের নিপুণ হাতের ছোঁয়ায় গড়ে ওঠে বাঁকুড়ার ঘোড়া একটি মৃৎশিল্পের রত্ন, যা শুধুই শৈল্পিক নয়, সাংস্কৃতিক ও আধ্যাত্মিক গুরুত্বে ভরপুর। দু'কানে লম্বা পাতা, উঁচু গ্রীবা, ঝকঝকে নকশা আর প্রতীকী গঠন প্রতিটি বাঁকুড়ার ঘোড়া যেন একেকটি জীবন্ত প্রতিমূর্তি। এটি একসময় ছিল ধর্মীয় পূজার অর্ঘ্য, আজ তা বাংলার লোকশিল্প ও নান্দনিকতার আন্তর্জাতিক প্রতীক।

বেঙ্গল পটচিত্র– তুলির টানে গল্প, সুরে বোনা স্মৃতির ক্যানভাস

পটুয়া শিল্পী শুধু চিত্রকর নন তিনি গল্পকার, গায়ক এবং সমাজের এক নির্ভীক বার্তাবাহক। পটচিত্র, অর্থাৎ ক্যানভাসে আঁকা চলমান চিত্রগল্প। মাটির রং, হাতের তুলি, আর শতাব্দীপ্রাচীন পদ্ধতিতে পটুয়ারা আঁকেন রামায়ণ, মহাভারত, মনসামঙ্গল, সমাজবিরোধী ঘটনা, পরিবেশ আন্দোলন এমনকি আজকের সমসাময়িক বিষয়ের ওপরও।

প্রতিটি পটের সঙ্গে থাকে পটগান যেখানে সুরে-সুরে ভেসে আসে ছবির গল্প।


কেন গুরুত্বপূর্ণ এই GI ট্যাগ?

ভৌগোলিক নির্দেশক ট্যাগ শুধুমাত্র গুণগত মানের স্বীকৃতিই দেয় না, এটি নির্দিষ্ট অঞ্চল থেকে উৎপন্ন পণ্যকে নকল থেকে রক্ষা করে, বাজারে আস্থা তৈরি করে এবং রপ্তানি সম্ভাবনাকে উন্মুক্ত করে। এছাড়াও স্থানীয় শিল্পী, কৃষক ও কারিগরদের সামাজিক ও আর্থিক অবস্থান মজবুত করে তোলে।

বাংলার প্রতিটি জিআই ট্যাগপ্রাপ্ত পণ্য একটি গল্প বলে; স্বাদ, শিল্প আর সংগ্রামের গল্প। এগুলি শুধু ঐতিহ্যের নিদর্শন নয়, বরং আগামী প্রজন্মের জন্য উত্তরাধিকার। পশ্চিমবঙ্গের এই স্বীকৃতি ও সাফল্য কেবল গর্বের নয়, তা আমাদের দায়িত্বও; এই ঐতিহ্যকে রক্ষা করা, জগতে তুলে ধরা। কারণ বাংলা শুধু কথা বলে না, বাংলার প্রতিটি শাড়ি, চাল, মিষ্টি আর শিল্পকর্মের মধ্যেই লুকিয়ে থাকে তার প্রকৃত পরিচয়।

ডিমের স্বাদ সমাচার...

সকালে সিদ্ধ, দুপুরে কারি, সন্ধ্যায় ডিম-পাউরুটি কিংবা রাতের ভর্তা; ডিম যেন প্রতিটি বাঙালির রান্নাঘরের নির্ভরযোগ্য বন্ধু। প্রোটিন, আয়রন, ভিটামিন B12 শরীরের প্রয়োজনীয় পুষ্টিগুণে ভরপুর এই ছোট্ট গোল খাবারটি যেমন সহজে রান্না করা যায়, তেমনি প্রতিটি বয়সের পছন্দের তালিকায় জায়গা করে নেয়। সিদ্ধ হোক বা পোচ, কারি হোক বা ডেভিল; ডিম মানেই স্বাদ ও শক্তির এক সহজ উপায়।

ছোট হলেও রান্নার দুনিয়ায় এর প্রভাব বিশাল। পুষ্টি, স্বাদ আর বহুমুখিতা; এই তিনে মিলে ডিম হয়ে উঠেছে বাঙালির নিত্যদিনের ভরসার খাবার। ভর্তা থেকে শুরু করে বিরিয়ানি, স্ন্যাকস থেকে ডেজার্ট; সব জায়গাতেই ডিমের সরব উপস্থিতি। এই সংখ্যায় আমরা তুলে ধরেছি এমন কিছু সহজ, কম সময়ে তৈরি করা যায় এমন ডিমের রেসিপি, যা একদিকে যেমন সুস্বাদু, অন্যদিকে তেমনই পুষ্টিকর।

ডিম ভুনা

কী কী লাগবে

  • ডিম – ৪টি (সিদ্ধ করে খোসা ছাড়ানো)

  • পেঁয়াজ – ২টি মাঝারি, পাতলা কাটা

  • রসুন বাটা – ১ চা চামচ

  • আদা বাটা – ১ চা চামচ

  • টমেটো – ১টি মাঝারি, কুচি করে কাটা

  • কাঁচা লঙ্কা – ২টি (চিরে রাখা)

  • Shalimar's Chef Spices হলুদ গুঁড়ো – ½ চা চামচ

  • Shalimar's Chef Spices লঙ্কা গুঁড়ো – ১ চা চামচ (স্বাদমতো কম-বেশি)

  • Shalimar's Chef Spices ধনে গুঁড়ো – ১ চা চামচ

  • Shalimar's Chef Spices গরম মশলা গুঁড়ো – ½ চা চামচ

  • লবণ – স্বাদমতো

  • চিনি – এক চিমটি

  • Shalimar's সরষের তেল – ৩ টেবিল চামচ

  • ধনে পাতা – সাজার জন্য

কীভাবে বানাবেন

সিদ্ধ ডিমে হালকা করে কাঁটা দিয়ে নিন। গরম তেলে হালকা করে লালচে করে ভেজে তুলে রাখুন। কড়াইয়ে সরষের তেল গরম করে পেঁয়াজ দিন। হালকা বাদামি রঙ হওয়া পর্যন্ত ভাজুন। আদা-রসুন বাটা দিয়ে দিন, কাঁচা গন্ধ চলে যাওয়া পর্যন্ত ভাজুন। টমেটো, হলুদ, লঙ্কা গুঁড়ো, ধনে গুঁড়ো, লবণ ও এক চিমটি চিনি দিয়ে ভালোভাবে কষান যতক্ষণ না তেল ছেড়ে দেয়। ভাজা ডিম কড়াইয়ে দিয়ে ভালোভাবে মসলার সঙ্গে মিশিয়ে ৫-৭ মিনিট ভুনে নিন। শেষে গরম মশলা ছড়িয়ে দিন। উপর থেকে কুচি ধনে পাতা ছড়িয়ে গরম ভাত বা পরোটার সঙ্গে পরিবেশন করুন।

ডিম ভর্তা

কী কী লাগবে

  • সিদ্ধ ডিম – ৩টি

  • পেঁয়াজ – ১টি (সুক্ষ্ম কুচি)

  • কাঁচা লঙ্কা – ২টি (সূক্ষ্ম কুচি)

  • রসুন – ৩-৪ কোয়া (চেঁছে বা কুচি করে নেওয়া)

  • Shalimar's সরষের তেল – ১.৫ টেবিল চামচ

  • নুন – স্বাদমতো

  • কাঁচা ধনে পাতা – ১ টেবিল চামচ (কুচি করে নেওয়া)

  • লেবুর রস – ১ চা চামচ (ঐচ্ছিক)

  • সিদ্ধ আলু – ১টি (ঐচ্ছিক, ভরাট করতে চাইলে)

কীভাবে বানাবেন

সিদ্ধ ডিমগুলো ভালোভাবে চটকে নিন বা কাঁটাচামচ দিয়ে গুঁড়ো করে নিন। একটি বড় বাটিতে গুঁড়ো ডিমের সঙ্গে পেঁয়াজ, কাঁচা লঙ্কা, রসুন, নুন, সরষের তেল, ধনে পাতা এবং (ঐচ্ছিকভাবে) সিদ্ধ আলু একসাথে মিশিয়ে নিন। হাত দিয়ে ভালোভাবে মেখে নিন যাতে সবকিছু ভালোভাবে মিশে যায়। চাইলে একটু লেবুর রস দিয়ে দিন স্বাদে ঝাঁঝ বাড়াতে। গরম ভাতের পাশে, ডাল বা সবজি দিয়ে গরম পরিবেশন করুন। একটু সরষের তেল উপর দিয়ে ছড়িয়ে দিলে স্বাদ আরও বেড়ে যায়। একটু পোড়া রসুন কুচি দিলে বাড়তি ঘ্রাণ আসে। চাইলে ধনেপাতার বদলে পুদিনা পাতা দিয়েও ট্রাই করতে পারেন।

ডিম পরোটা

কী কী লাগবে

পরোটার জন্য:

  • ময়দা বা আটা – ১ কাপ

  • লবণ – স্বাদমতো

  • Shalimar's sunflower তেল – ১ চা চামচ (ময়ানে)

  • জল – পরিমাণমতো (মাখার জন্য)

ডিম মিশ্রণের জন্য:

  • ডিম – ২টি

  • পেঁয়াজ – ১টি (সুক্ষ্ম কুচি)

  • কাঁচা লঙ্কা – ১-২টি (কুচি করা)

  • ধনে পাতা – ১ টেবিল চামচ (কুচানো)

  • লবণ – স্বাদমতো

  • Shalimar's Chef Spices হলুদ গুঁড়ো – এক চিমটি (ঐচ্ছিক)

  • Shalimar's sunflower তেল – ভাজার জন্য

কীভাবে বানাবেন

আটা/ময়দার মধ্যে লবণ ও তেল মিশিয়ে পরিমাণমতো জল দিয়ে নরম করে মেখে ১৫ মিনিট ঢেকে রাখুন। একটি পাত্রে ডিম ভেঙে তাতে কুচি পেঁয়াজ, কাঁচা লঙ্কা, ধনে পাতা, লবণ ও সামান্য হলুদ গুঁড়ো মিশিয়ে ভালোভাবে ফেটিয়ে নিন। মেখে রাখা আটার থেকে লেচি কেটে রুটি বেলে নিন। তাওয়া গরম করে রুটিটা হালকা সেঁকে নিন (একপিঠ আধা সেঁকা হলেই যথেষ্ট)। আধা সেঁকা রুটিটার উপরে মাঝখানে ডিমের মিশ্রণ ঢালুন। রুটির চারদিক থেকে তুলে এনে ডিম ঢেকে চারকোনা আকারে মুড়ে দিন। সামান্য চেপে দিয়ে উল্টে-পাল্টে ভাজুন। চারপাশে তেল ছড়িয়ে দিন।মিডিয়াম আঁচে দু’পিঠ সোনালি হওয়া পর্যন্ত ভাজুন। গরম গরম ডিম পরোটা পরিবেশন করুন টমেটো সস, কাসুন্দি বা টক দইয়ের সঙ্গে।

ডিমের দোপেয়াজা

কী কী লাগবে

  • ডিম – ৪টি (সিদ্ধ, খোসা ছাড়ানো)

  • পেঁয়াজ – ৩টি (২টি পাতলা কুচি, ১টি মোটা গোল করে কাটা)

  • রসুন বাটা – ১ চা চামচ

  • আদা বাটা – ১ চা চামচ

  • টমেটো – ১টি (কুচি করে কাটা)

  • কাঁচা লঙ্কা – ২টি (চিরে রাখা)

  • Shalimar's Chef Spices হলুদ গুঁড়ো – ½ চা চামচ

  • Shalimar's Chef Spices লঙ্কা গুঁড়ো – ১ চা চামচ

  • Shalimar's Chef Spices ধনে গুঁড়ো – ১ চা চামচ

  • Shalimar's Chef Spices গরম মশলা গুঁড়ো – ½ চা চামচ

  • চিনি – ½ চা চামচ

  • লবণ – স্বাদমতো

  • Shalimar's সরষের তেল – ৩ টেবিল চামচ

  • ধনে পাতা – সাজানোর জন্য

কীভাবে বানাবেন

সিদ্ধ ডিমে হালকা করে কাঁটা দিয়ে দিন। সামান্য নুন-হলুদ মাখিয়ে গরম তেলে হালকা লালচে করে ভেজে তুলে রাখুন।

কড়াইয়ে তেল গরম করে প্রথমে মোটা গোল কাটা পেঁয়াজগুলো হালকা লালচে করে ভেজে তুলে রাখুন (এই অংশটাই “দো-পেঁয়াজা”-র পরিচয়)। এবার কুচি পেঁয়াজ দিয়ে দিন, লালচে হওয়া পর্যন্ত ভাজুন। তাতে দিন আদা-রসুন বাটা, কাঁচা লঙ্কা, টমেটো, হলুদ গুঁড়ো, লঙ্কা গুঁড়ো, ধনে গুঁড়ো, লবণ ও চিনি। ভালোভাবে কষান যতক্ষণ না তেল ছেড়ে দেয়। মসলায় ভাজা ডিম আর আগে ভাজা মোটা পেঁয়াজগুলো দিয়ে ভালোভাবে মিশিয়ে ৫ মিনিট ভুনে নিন। শেষে গরম মশলা ছড়িয়ে দিন। কুচি ধনে পাতা ছড়িয়ে গরম ভাত, লুচি বা পরোটার সঙ্গে পরিবেশন করুন।

ডিম পাকোড়া

কী কী লাগবে

  • ডিম – ৩টি (সিদ্ধ করে অর্ধেক করে কেটে ৬ টুকরো)

  • বেসন – ১ কাপ

  • চালের গুঁড়ো – ১ টেবিল চামচ (ক্রিস্পির জন্য)

  • পেঁয়াজ – ১টি (সুক্ষ্ম কুচি)

  • কাঁচা লঙ্কা – ১–২টি (কুচি)

  • ধনে পাতা – ১ টেবিল চামচ (কুচানো)

  • Shalimar's Chef Spices হলুদ গুঁড়ো – ¼ চা চামচ

  • Shalimar's Chef Spices লঙ্কা গুঁড়ো – ½ চা চামচ (স্বাদমতো)

  • বেকিং সোডা – এক চিমটি (ঐচ্ছিক, ফুলন্ত করার জন্য)

  • লবণ – স্বাদমতো

  • জল – পরিমাণমতো (ঘন মিশ্রণ তৈরি করার জন্য)

  • Shalimar's সরষের তেল – ভাজার জন্য

কীভাবে বানাবেন

কীভাবে বানাবেনএকটি পাত্রে বেসন, চালের গুঁড়ো, কুচি পেঁয়াজ, কাঁচা লঙ্কা, ধনে পাতা, হলুদ, লঙ্কা গুঁড়ো, লবণ এবং বেকিং সোডা মিশিয়ে নিন। অল্প অল্প জল দিয়ে মাঝারি ঘন ব্যাটার তৈরি করুন (খুব পাতলা নয়, যেন ডিমে ভালোভাবে লেগে থাকে)। সিদ্ধ ডিমগুলো অর্ধেক করে কাটুন (প্রতি ডিমে ২ টুকরো)। চাইলে একটু লবণ ছড়িয়ে নিতে পারেন। কড়াইয়ে তেল গরম করুন। ডিমের টুকরোগুলো ব্যাটারে ডুবিয়ে গরম তেলে ছাড়ুন। মিডিয়াম আঁচে দুই পিঠ সোনালি হওয়া পর্যন্ত ভাজুন। টিস্যু পেপারে ছেঁকে তুলে গরম গরম পরিবেশন করুন সস বা কাসুন্দির সঙ্গে।

ডিম ডেভিল

কী কী লাগবে

  • ডিম – ৪টি (সিদ্ধ)

  • আলু – ১টি মাঝারি (সিদ্ধ ও চটকানো)

  • পেঁয়াজ – ১টি (সুক্ষ্ম কুচি)

  • আদা-রসুন বাটা – ১ চা চামচ

  • কাঁচা লঙ্কা – ২টি কুচি

  • ধনে পাতা – ১ টেবিল চামচ (কুচি)

  • Shalimar's Chef Spices লঙ্কা গুঁড়ো – ½ চা চামচ

  • Shalimar's Chef Spices গরম মশলা – ½ চা চামচ

  • Shalimar's Chef Spices ধনে গুঁড়ো – ½ চা চামচ

  • চিনি – এক চিমটি

  • লবণ – স্বাদমতো

  • Shalimar's সরষের তেল – ভাজার জন্য

কোটিংয়ের জন্য:

  • ময়দা বা কর্নফ্লাওয়ার – ২ টেবিল চামচ (জলে গোলা পাতলা ব্যাটার)

  • ব্রেডক্রাম্বস – পরিমাণমতো

  • ডিম – ১টি (ফেটানো, ঐচ্ছিক)

কীভাবে বানাবেন

সিদ্ধ ডিমগুলো খোসা ছাড়িয়ে মাঝখান দিয়ে কেটে নিন (প্রতি ডিমে ২ টুকরো)। কড়াইয়ে অল্প তেল দিয়ে পেঁয়াজ, আদা-রসুন বাটা, কাঁচা লঙ্কা ভেজে নিন। এতে দিন লঙ্কা গুঁড়ো, ধনে গুঁড়ো, গরম মশলা, চিনি ও লবণ। ভালোভাবে কষান, তারপর চটকানো আলু আর কুচি ধনে পাতা মেশান। ভালোভাবে মিশিয়ে কিছুক্ষণ ঠাণ্ডা হতে দিন। প্রতিটি ডিমের টুকরোর কেটে রাখা দিকটা উপরে রেখে তার চারপাশে আলুর মশলা দিয়ে গোল বা ডিমের মতো আকারে মুড়ে দিন। প্রতিটি ডিম ডেভিল ময়দা বা ডিমের ব্যাটারে ডুবিয়ে ব্রেডক্রাম্বসে গড়িয়ে নিন। কড়াইয়ে তেল গরম করে মিডিয়াম আঁচে ডেভিলগুলো সোনালি ও মচমচে হওয়া পর্যন্ত ভাজুন। গরম গরম পরিবেশন করুন কাসুন্দি, টমেটো সস বা পেঁয়াজ স্যালাডের সঙ্গে। চাইলে আলুর বদলে মুরগির কিমা দিয়ে চিকেন ডিম ডেভিল বানাতে পারেন।


ডিমের রেসিপি শুধু পেট নয়, মনও ভরায়। সঠিক উপকরণ ও একটু ভালোবাসা দিয়ে প্রতিদিনের সাধারণ ডিমও হয়ে উঠতে পারে অসাধারণ এক উপাদেয় খাবার। রোজকার অনন্যার পাঠক-পাঠিকাদের জন্য এই রেসিপিগুলো যেন হয়ে ওঠে দৈনন্দিন জীবনের সহজ সমাধান সুস্বাদু, সহজ আর সময়-সাশ্রয়ী।

স্থূলতা কমাতে এমারেল্ড লেজার: আধুনিক প্রযুক্তির এক নিরাপদ হাতিয়ার

স্থূলতা এই শব্দটি আজ বিশ্বব্যাপী এক বিশাল স্বাস্থ্য সংকটের নাম। অতিরিক্ত ওজন যেমন নানা শারীরিক জটিলতার কারণ, তেমনি আত্মবিশ্বাসের ওপরও ফেলতে পারে গভীর প্রভাব। ডায়েট, ব্যায়াম, ওষুধ কিংবা অস্ত্রোপচার; স্থূলতা মোকাবিলায় বহু পথ থাকলেও অনেকেই খুঁজছেন এমন এক উপায় যা নিরাপদ, ব্যথাহীন এবং কার্যকর। এমতাবস্থায় আধুনিক বিজ্ঞান আমাদের সামনে এনেছে এক নতুন দিগন্ত "এমারেল্ড লেজার"।

এমারেল্ড লেজার কী?

এমারেল্ড লেজার (Emerald Laser) হলো একটি FDA অনুমোদিত, নন-ইনভেসিভ লো-লেভেল লেজার থেরাপি। এটি মূলত শরীরের নির্দিষ্ট অংশে জমে থাকা অতিরিক্ত চর্বি কমাতে সহায়তা করে। এই থেরাপিতে ব্যবহৃত হয় 532 ন্যানোমিটারের সবুজ তরঙ্গদৈর্ঘ্যের লেজার, যা চর্বি কোষকে ধ্বংস না করে শুধু তাদের অভ্যন্তরের ফ্যাট বের করে আনে। ফলে শরীরের গঠনে আসে কাঙ্ক্ষিত পরিবর্তন।


কেন জনপ্রিয় হচ্ছে এই পদ্ধতি?

অস্ত্রোপচার ছাড়াই ফ্যাট কমানো, ব্যথাহীন এবং পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াহীন চিকিৎসা, বডি কন্ট্যুরিং-এর জন্য উপযুক্ত, গর্ভাশয়, কোমর, উরু বা বাহুর মতো নির্দিষ্ট অঞ্চলে ফোকাস, এটি এমন একমাত্র লেজার থেরাপি যা ৪০ BMI পর্যন্ত ব্যক্তিদের জন্য কার্যকর এবং নিরাপদ বলে বিবেচিত।

চিকিৎসার খরচ ও প্রক্রিয়া

চিকিৎসার খরচ নির্ভর করে অঞ্চল ও সেশন সংখ্যার ওপর। একাধিক সেশনের জন্য খরচ পড়তে পারে ₹৪০,০০০ থেকে ₹৫,০০০০০ পর্যন্ত। প্রতিটি সেশন প্রায় ৩০ মিনিটের এবং ৮–১২টি সেশন প্রয়োজন হতে পারে।


চিকিৎসার পর করণীয়?

পরিমিত খাদ্যাভ্যাস বজায় রাখা

নিয়মিত ব্যায়াম করা

চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ফলো-আপ করা

কারা করাতে পারবেন?

যারা ডায়েট বা ব্যায়াম করেও নির্দিষ্ট অংশের চর্বি কমাতে পারছেন না, অথবা অস্ত্রোপচারে ভয় পাচ্ছেন, তাঁদের জন্য এটি একটি আদর্শ পদ্ধতি। তবে গর্ভবতী মহিলা, পেসমেকার ব্যবহারকারী বা ফটোসেনসিটিভ রোগীরা চিকিৎসার আগে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেবেন।


স্থূলতা যেমন এক শারীরিক বোঝা, তেমনি এক মানসিক ভারও বটে। এমারেল্ড লেজার আধুনিক যুগের এক প্রযুক্তিভিত্তিক সহজ সমাধান হতে পারে, যদি এটি সঠিকভাবে ও সঠিক ব্যক্তির তত্ত্বাবধানে নেওয়া হয়। তাই চিকিৎসা গ্রহণের আগে অবশ্যই বিশেষজ্ঞের সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়াই বুদ্ধিমানের কাজ।

সন্ন্যাসী ভূত

বনানী শিকদার

এর আগে কয়েকবার অলোকা চোরের মতো মুখ চুন করে এবাড়িতে ঢুকেছে। কখনো বলেছে, 'জানেন কাকু, গতকাল রাতে একদম ঘুম হল না। আমার বাড়ির পাশের নয়নচূড় বেলগাছ থেকে সমানে কারও কান্নার আওয়াজ শুনতে পাচ্ছিলাম।' কখনো বলেছে, 'পাশের গ্রাম থেকে আমার বোন এসেছিল, সন্ধ্যার পরে ওকে এগিয়ে দিচ্ছিলাম, দেখলাম শান্তিচূড় বেলগাছটা অশান্ত হয়ে উঠেছে, জোরে জোরে দুলছে, অথচ কোন ঝড় নেই, বাতাস নেই।' কখনো বলেছে, 'রাতে শিবরামের বাড়িতে রান্না করে ফেরার পথে কমলচূড় বেলগাছের নীচে প্রদীপের আলো জ্বলছিল। কিন্তু সেখানে কাউকে দেখলাম না। কোন মানুষের দায় পড়েছে বলেন তো যে বেলগাছের পুজো করবে?'

কোন লাভ হয়নি। অলোকার ভূতদর্শন নিয়ে কাকু মোটেও বিচলিত হননি। শুনেছেন আর বলেছেন, 'যত্তসব গপ্প।'

একবার অলোকা বলেছিল, 'আজ সন্ন্যাসীটাকে দেখলাম। ধোপার দোকানের পেছনে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে কি যেন করছিল। আমাকে দেখেই পাশের শঙ্খচূড় বেলগাছটার দিকে হাঁটা দিল। দু'পা যেতেই ফিকে হয়ে গেল তার চেহারা। চার পা যেতেই একেবারে অদৃশ্য।'

তাতেও কাকু নির্বিকার।

অলোকার কাকু হলেন ডাক্তার রতন বিশ্বাস।

আজ সে হন্তদন্ত হয়ে ঢুকল রতন বিশ্বাসের বাড়িতে। বলল, 'আপনে তো ডাক্তার। বলেন তো একটা এইসা মোটা মানুষের ওজন কমে তিরিশ কেজি হতে কেমন সময় লাগে?'

রতন বিশ্বাস বললেন, 'অনেকদিনও লাগতে পারে, আবার অল্পদিনও।'

'একদিনে হয়?'

'না।'

'এক ঘণ্টায়?'

'না রে বাবা।'

'এক মিনিটে?'

'মাথাটা কি খারাপ হয়েছে তোর?'

'আমার মাথা ঠিক আছে। কিন্ত আজ আমি যা দেখেছি তা দেখলে আপনের মাথা নির্ঘাত খারাপ হত। সেদিনের একশ কেজি ওজনের সন্ন্যাসীটা আমার চোখের সামনে এক মিনিটে তিরিশ কেজির হয়ে গেল। আরও আশ্চর্যের ব্যাপার কি জানেন? তার গেরুয়া লুঙ্গিটা একটুও ঢিলে হল না। সে একটা বড় তামাক পাতা চিবোচ্ছিল আর আমার দিকে চেয়ে চেয়ে হাসছিল।' সন্ন্যাসীর দর্শনকে সত্যি প্রমাণ করতে অলোকা তার গলায় জোর ঢালল, 'আমি দেখেছি, দেখেছি, দেখেছি।' সে বলল, 'কাকিমা মারা গেলে আপনে একা বাড়িতে কী করে থাকবেন কাকু? ওই ব্যাটা সন্ন্যাসী তো কাকিমার সঙ্গে দেখা করতে আসবে।'

রতন বিশ্বাস অনেকদিন থেকে বীরভূমের বাহাদূরপুর গ্রামের পৈতৃক বাড়িতে অবসরপ্রাপ্ত জীবন যাপন করছেন। বয়স বিরাশিকে অতিক্রম করে গেছে। ছেলেমেয়ে নেই। শরীরের নানাধরনের অবক্ষয় হতে হতে স্ত্রী এখন শয্যাশায়ী। লোক চেনার ক্ষমতাও হারিয়ে ফেলেছেন। রান্নাবান্নার জন্যই অলোকার প্রতিদিন এবাড়িতে আসা। তার মতো আরেকজন আছে―সাধনা। সাধনা রতন বিশ্বাসের স্ত্রীর দেখাশোনা করে। অলোকার ছুটি হয় বিকেলে; সাধনার রাতে, রোগীকে খাওয়ানোর পর। ন'টার সময় রতন বিশ্বাসের এক খুড়তুতো ভাইয়ের ছেলে, রত্নদীপ আসে। চক্ষু বিশেষজ্ঞ। বছর দেড়েক হল সে কলকাতার প্রাইভেট হসপিটালের চাকরি ছেড়ে গ্রামে এসেছে। ইচ্ছে এখানে একটা নার্সিং হোম খোলার।

*

এই সন্ন্যাসীটি সাধারণ সন্ন্যাসী নয়। ভূত। বেলগাছে থাকে। কেউ ভূত-সন্ন্যাসীর দর্শন পেয়েছে, কেউ শ্রবণ করেছে তার কথা। দর্শনের ব্যাপারটা কার কোন বেলগাছে হয়েছে তা বোঝানো রীতিমত দুষ্কর হয়ে যাচ্ছিল। গ্রামে বেলগাছের সংখ্যা একশর উপর। তাই অন্ততপক্ষে কয়েকটি গাছের নামকরণ হয়েছে নয়নচূড়, শান্তিচূড়, মণিচুড়, কমলচূড়, লতিকাচূড় বলে। যাদের ভূত-সন্ন্যাসীর দর্শনের দুর্ভাগ্য হয়নি সাধনা তাদের দলে। তবে আলো, কম্পন দেখার এবং কান্না বা ভৌতিক শব্দ শোনার অভিজ্ঞতা সেও প্রাপ্ত করেছে।

রতন বিশ্বাস নিজেকে ছাড়া আর কাউকে বিশ্বাস করেন না। তিনি কলকাতায় শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জি মেডিক্যাল কলেজ থেকে এমবিবিএস করেছেন। ইন্টার্নশিপের পর কলকাতাতেই এমএস ইন সার্জারি এবং এমসিএইচ। ডাক্তারি চর্চার সময়টাতে অনেক মানুষের জীবনকালকে দীর্ঘ করেছেন। অনেক মানুষের মৃত্যুর সাক্ষীও হয়েছেন। পেশায় নিষ্ঠা রেখে অনেক কাটাছেঁড়া করেছেন, অনেক মৃত মুখ এবং শরীর দেখেছেন। কখনো মনে হয়নি রাতের অন্ধকারে মনের আয়নাতে পর্যন্ত সেসব মুখ এবং শরীর জীবন্ত হয়ে উঠতে পারে। ভূত-সন্ন্যাসী-কথনের পরম্পরা গ্রামে চলছে বেশ কয়েক দশক ধরে। কিন্তু আজ অলোকার কথা রতন বিশ্বাসের শরীরে ভয়ের শিহরণ তুলল। এইজন্যই বুঝি বার্ধক্যকে শৈশবের পরিবর্তিত রূপ বলা হয়। তিনি অলোকাকে বললেন, 'এত সাহস!'

অলোকা চলে গেলে রতন বিশ্বাস পাশের ঘরে বিছানায় শায়িত স্ত্রীর সামনে গিয়ে দাঁড়ালেন। পঞ্চান্ন বছর একসঙ্গে রইলেন কিন্তু সুখ কখনই তাঁদের সঙ্গ দিল না। অনেক টাকা এল ঘরে, সন্তান এল না। অনেক চিকিৎসা হল, দু'জনার মধ্যে অনেক ভুলবোঝাবুঝি হল, অনেকবার অনেকদিনের জন্য মুখ দেখাদেখিও বন্ধ হল কিন্তু কোনকিছুই সমস্যার অবসান ঘটাতে পারল না। শেষে যখন বয়স এগিয়ে এসে সমস্যা নিজের পায়ের নীচে চেপে দিল, সুখের জন্য উন্মুক্ত করে দিল দরজা তখন সুখের বদলে অসুখ ঢুকে পড়ল ঘরে। দৃষ্টিশক্তি প্রখর হলেও হাজার চেষ্টা করে স্ত্রী তাঁকে চিনতে পারছেন না। তিনিও স্ত্রীর মুখখানা নিখুঁতভাবে পর্যবেক্ষণ করতে পারছেন না। তাঁর দৃষ্টিশক্তি একেবারেই কমে গেছে। আজ স্ত্রীকে দেখতে এসে তিনি যেন মুহূর্তের জন্য তাঁর বিছানার পাশে পাঁচ-সাড়ে ফুট উচ্চতার কিছু একটাকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখলেন। বুঝতে পারলেন না কি। নাকি কে। কি সে? বা কে সে? বোঝার আগেই অদৃশ্য হয়ে গেল। তিনি সাধনাকে দেখলেন। স্ত্রীকে রাতের খাবার খাইয়ে দিতে এসেছে। দুর্বল পা নিয়ে যথাসম্ভব তাড়াতাড়ি রতন বিশ্বাস নিজের ঘরে ফিরে এলেন। বিছানায় শুয়ে শুয়ে ভাবতে লাগলেন সে কি সাধনাই ছিল? আগেই ঢুকেছিল ঘরে? তিনি পরে দেখেছেন? নাহ্‌, তাঁর ডাক্তারের সাহসী সত্তাটা আর সাহসী থাকছে না।

কয়েকদিন ধরে পরিচিত ঘরগুলোতে অপরিচিতির রঙ লাগছে। কখনো তিনি চোখের সামনে দিয়ে পাখিকে উড়ে যেতে দেখছেন, কখনো কালো জানোয়ারকে সামনে দেখা দিয়েই অদৃশ্য হয়ে যেতে দেখছেন। তিনি নিজেকে বলছেন, 'আমি জানি কেন এমন হয়।' নিজেকে প্রশ্ন করছেন, 'কেন?' নিজেই পরে উত্তর খুঁজে পাচ্ছেন না। তিনি ভাবতে বাধ্য হচ্ছেন, 'আমি জানতাম কেন এমন হয়।' আবার নিজেকে প্রশ্ন করছেন, 'জানতাম বলছ কেন? এখন কী হল সে জানার?' নিজেকেই উত্তর দিচ্ছেন, 'ভুলে গেছি। আমার এখন অন্য কথা মনে পড়ছে।'

রতন বিশ্বাসের মনে পড়ছে বাইপাস সার্জারি করছিলেন...পেশেন্টটাকে বাঁচাতে পারেননি। একটা ছেলের হৃৎপিণ্ডে ছিদ্র ছিল, তাকেও তিনি...। একজন মহিলার স্টেন্টিং-এর সময় কি হল কে জানে, সে দম ছেড়ে দিল...। আরও অনেক ঘটনা। কখনো স্পষ্ট, কখনো ঝাপসা। বাড়ি অপরিচিত হয়ে যেতে থাকলেও তিনি সেই বাড়িকেই বেশি করে আঁকরে ধরে থাকতে চাইছেন। হয়ে যাচ্ছেন এক ভীষণ ভীতসন্তস্ত্র ঘরকুনো। এতটাই ঘরকুনো যে বাইরে বেরনো একপ্রকার বন্ধ করে দিয়েছেন। কমিয়ে দিয়েছেন স্ত্রীর কাছে যাওয়া।

রতন বিশ্বাস মনের শক্ত আবরণের মধ্যের শিলা যে গলতে শুরু করেছে তা কাউকে বুঝতে দিতে চাইছেন না। তবু বুঝি গলিত শিলার আঁচ বাইরে বেরিয়েই পড়েছে। অলোকা এটুকু অন্তত বুঝেছে তিনি একা থাকতে চাইছেন। সে আসে, কাজ করে, চলে যায়, কাকুকে আর বিরক্ত না করে। সাধনা একইরকম। চুপচাপ। না অন্যকে বিরক্ত করার অভ্যেস তার কখনো ছিল, না এখন তৈরি হয়েছে। এক রাতে টয়লেটে যাবেন বলে রতন বিশ্বাস বিছানা থেকে মেঝেতে পা রাখতে গিয়ে একটি সাদা কাপড়ে আবৃত শরীরের অনাবৃত মুখ দেখলেন। মুখটি পরিচিত। তিনি ভয়ে তাড়াতাড়ি পা-টাকে উঠিয়ে নিলেন। মুখটাও শরীর থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে তাঁর মুখের সামনে হাওয়ায় ভাসতে লাগল। তিনি চোখ বন্ধ করলেন। কয়েক সেকেন্ড বাদে যখন চোখ খুললেন দেখলেন মুখটা পালটে গেছে। কিন্তু পালটে যাওয়া মুখটিও পরিচিত। আবার চোখ বন্ধ করলেন, আবার খুললেন। কয়েকবার চোখ বন্ধ হওয়া এবং খোলার মাঝে কয়েকটি ভিন্ন পরিচিত মুখ সামনে এল। সবশেষের মুখটি থেকে হঠাৎ মাংস-চামড়া সরে গেল। বেরিয়ে পড়ল তার কঙ্কাল। রতন বিশ্বাস চিৎকার করে উঠলেন, 'কে তুমি? কে? চলে যাও এখান থেকে।'


রত্নদীপ শুরু শুরুতে এসেই জ্যাঠার ঘরে ঢুকত। তাঁর সঙ্গে দু-চারটে কথা বলত। তাদের কথাবার্তা ডাক্তারি বিষয়েই হত। তার নার্সিং হোম নিয়ে হত। ইভেস্টমেন্ট নিয়ে হত। কিন্তু পরে সে জেঠার সঙ্গে কথা কমিয়ে দিল। আসে, রাতে থাকে, সকালে চলে যায়। আজ চিৎকার শুনে রত্নদীপ জেঠার ঘরে ছুটে এল। জিজ্ঞেস করল, 'কাকে চলে যেতে বলছ?'

'ওকে। ওকে। ওকে চলে যেতে বলছি আমি।'

'কে?'

'দেখতে পাচ্ছ না?'

'না তো!' রত্নদীপ চারিদিকে তাকিয়ে দেখল কেউ নেই। সে জেঠার চোখের দিকে চোখ রাখল। জেঠাও তার দিকে সন্ধিগ্ধ চোখে তাকালেন। মুহূর্তে তিনি নিজেকে সামনে নিলেন। লজ্জা প্রকাশ পেল তাঁর মুখে। 'একটা খারাপ স্বপ্ন দেখেছিলাম। তুমি যাও।'

রত্নদীপ তবু গেল না। ঘরের লাইটটা জ্বালিয়ে দিল। 'তুমি কি ভূত দেখেছিলে?'

'ধ্যুস!'

হাসল রত্নদীপ, 'নার্সিং হোমটা হয়ে গেলে সবার আগে তোমার চোখের সার্জারি করব।'

রতন বিশ্বাস বললেন, 'সেই আশাতেই বসে আছি।' উত্তর দেবার ইচ্ছে তাঁর ছিল না, কিন্তু দিতে হল। কারণ তিনি রত্নদীপকে বোঝাতে চেয়েছেন যে তিনি মূল স্রোতেই আছেন।

'সন্ন্যাসীটা বড়ই উপদ্রব শুরু করেছে আজকাল। তোমার বাগানের বেল গাছটাতে আবার বাসা বাঁধেনি তো? যদিও প্রাচীর আছে...ভূত একবার মনস্থির করলে টপকাতে কতক্ষণ লাগে!'

বাড়িটি বিশাল। পৌনে দু'বিঘে জমির উপর। জমির এক চতুর্থাংশ নিয়েছে কয়েকটি পাকা ঘর। পাকা ঘরকে বেষ্টিত করে রেখেছে ন'ফুট উঁচু প্রাচীর। পাকা ঘরগুলোর পেছনের প্রাচীরের পরে বাগান। বাগানের পরে আবার প্রাচীর।


'ভূতের আবার মন! ভূত কোন গরু, ঘোড়া নয় যে প্রাচীর টপকাবে!"

'কি বলেন জ্যাঠা, ভূতের মন নেই! ভূতের মনও আছে, প্রাণও আছে।'

জীবন নিয়ে গবেষণা করতে গিয়ে রতন বিশ্বাস এক জায়গায় পড়েছিলেন, জীবন হল জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত এমন এক অবস্থা যা শুধুমাত্র জীবন্ত কোষের মধ্যে দেখা যায়। হেসেছিলেন তিনি। জীবনের সংজ্ঞা দিতে গিয়ে ঘুরে ফিরে জীবন শব্দটাকেই ব্যবহার করতে হচ্ছে। জীবন এবং জীবন্ত একই শব্দের দুটো রূপ―জীবন হল বিশেষ্য এবং জীবন্ত বিশেষণ। রতন বিশ্বাস রত্নদীপকেই বলেছিলেন, 'জীবন্ত কোষ' না বলে 'প্রাণযুক্ত জিনিস' বলা উচিত।

রত্নদীপ বলল, 'কলেজে একদিন আমরাও ভূত নিয়ে অনেক গবেষণা করছিলাম...'

'যেমন?'

'ওই, ভূতের প্রাণ আছি কিনা। যেমন, বলছিলাম শরীরে হাড় তো থাকেই, যখন মানুষের রূপে আসে তখন মাংসও থাকে সুতরাং নিশ্চয় কোষ আছে। ভূত স্বাধীনভাবে নিজের ক্রিয়াকলাপ চালাতে পারে, অন্যের শরীরে প্রবেশ করলে পরজীবীর মতো আচরণ করে। ভূত খাদ্য গ্রহণ করে; অধিকাংশ ক্ষেত্রে কাঁচা খাবার খায়, কাঁচা মাংসও। শ্বসন করে; খাবার হজম তো শ্বসন ছাড়া হবে না, তাছাড়া তার চোখের গর্তের নীচে ওই গর্তটা তো নাকই। শ্বাস নেবে না তো নাক আছে কেন! চলন-গমন তো করেই, মানুষের চেয়েও দ্রুত করে, এই আছে তো এই নেই। এত গতীতে স্থান পরিবর্তন করে যে দেখাই যায় না। প্রজনন করে; একটা মানুষ থেকে যদি একটাই ভূত তৈরি হত তাহলে এত ভূত থাকত না। তাছাড়া খচ্চরও তো প্রজনন করে না। তাই বলে কি বলব যে খচ্চের অস্তিত্ব নেই! ভূতের চেহারাগত বৃদ্ধি আছে, এক সেকেন্ডে হাতকে এক কিলোমিটার লম্বা করে ফেলে। মিউটেশন আছে; মিউটেশন হয়ে হয়েই তো এত ধরনের ভূতের সৃষ্টি হল। ব্রহ্মদৈত্য, মামদো ভূত, গেছো ভূত, মেছো ভূত, শাঁকচুন্নি। এখন বেরিয়েছে নিউ ভেরিয়েশন―সন্ন্যাসী ভূত। ভূত উদ্ভিদ, প্রাণী এবং মানুষের রোগ সৃষ্টি করে; গেছো ভূত যে গাছে থাকে সে গাছই রোগগ্রস্ত হয়ে পড়ে। মানুষকে তো ভূতের রোগে পায়ই পায়, অন্যান্য প্রাণীদেরও পায়। তারা অকারণ লাফালাফি এবং ছোটাছুটি করে।' একসঙ্গে অনেকগুলো কথা বলে ফেলে রত্নদীপ লক্ষ করে রতন বিশ্বাস সামনের দেওয়ালের দিকে স্থির দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছেন। সে জিজ্ঞেস করে, 'কি ভাবছ?'

হুঁশ ফিরে পান রতন বিশ্বাস। 'কিছু না। তুমি আজ আমার পাশে শোও। শরীরটা ঠিক লাগছে না।' রাতে এক স্বপ্ন এল। তাঁর বাগানের বেলগাছটার নীচে সন্ন্যাসী ভূত দাঁড়িয়ে। তাঁকে বলছে, তামাক আমার বড় প্রিয়। আগামীকাল রাত সাড়ে সাতটায় পর ঠিক এইখানটায় তিনটে তামাকের পাতা রেখে দেবে। নইলে আগামীকালের রাতই তোমার শেষ রাত হবে।' ভয়ে ভয়ে সন্ন্যাসীকে জিজ্ঞেস করলেন রতন বিশ্বাস, 'আর যদি রেখে দিই?'

'ভালো হবে।'

'তুমি কখন আসবে?'

'পৌনে আটটায়।'

ঘুম ভাঙতেই দেখলেন পাশে রত্নদীপ শুয়ে আছে। শোনা কথা, সন্ন্যাসী ভূতের এমন নির্দেশ গ্রামের অনেককেই দিয়েছে। এটাও শোনা কথা, তাঁর নির্দেশ মেনেই নাকি তারা ভূতের ভয় থেকে মুক্তি পেয়েছে। একটু জোর মনে। সকাল হল। আরেকটু তাজা হল মন। ভাবলেন, 'কিছুই না গ্রামের অশুভ প্রভাব পড়েছে মনের ওপর। বয়স হয়েছে, কষ্টকর হবে, তবু যেভাবেই হোক এই বাড়ি বিক্রি করে স্ত্রীকে নিয়েই কলকাতায় চলে যাব। বেলগাছ নেই তো সন্ন্যাসী ভূতের ভুতুড়ে কারবারও নেই। এই বয়সে কাঁপা হাতে সার্জারি করতে গিয়ে একশটা রোগী মরলেও তাদের আত্মা আমাকে তাড়া করবে না। কলকাতা কখনো ডাক্তারদের ওপর ভূতের অত্যাচার সহ্য করেনি, করবেও না সহ্য। ওই শহরটাই আমার জন্য এক বিশাল সহায়।' তবু এখনকার মতো সুরক্ষা কবচটি পাওয়া যায় কিনা তা তাঁকে যাচাই করে নিতেই হবে। তাছাড়া বিদ্রোহী হওয়ারই বা কী প্রয়োজন! রতন বিশ্বাস রত্নদীপের প্রায় পেছন পেছন বাড়ি থেকে বেরোলেন। বাজারে গিয়ে তিনটে দোকান থেকে কিনলেন তিনটে তামাকের পাতা। তারপর সারাদিন ঘড়ি দেখে দেখে সময়ের প্রতীক্ষা করলেন।

ঠিক আটটাতেই টর্চ হাতে তিনি বেলগাছের নীচে পৌঁছে গেলেন। সযত্নে একটা কলাপাতার উপর তামাকের পাতা তিনটে রেখে বাড়ির এবং বাগানের মাঝের প্রাচীরের টিনের গেটটার কাছে প্রায় শ্বাসরুদ্ধ অবস্থায় বসে রইলেন। পৌনে আটটা বাজল। টর্চ জ্বালাতে সাহস হল না। চোখের তারাতে জোর লাগিয়েও মাংস অথবা হাড়ের কোন চেহারা দেখা গেল না। কিন্তু আটটা বাজতে না বাজতেই তামাক পোড়ার ঝাঁঝালো গন্ধ ছড়িয়ে পড়ল চারিদিকে।


Comments


ssss.jpg
sssss.png

QUICK LINKS

ABOUT US

WHY US

INSIGHTS

OUR TEAM

ARCHIVES

BRANDS

CONTACT

© Copyright 2025 to Debi Pranam. All Rights Reserved. Developed by SIMPACT Digital

Follow us on

Rojkar Ananya New Logo.png
fb png.png

 Key stats for the last 30 days

bottom of page