চৈতন্যদেবের স্মৃতি বিজড়িত পানিহাটি কীভাবে হয়ে উঠল কালীক্ষেত্র? মাংস ছাড়া আমিষ, ঘরে ঘরে টেরারিয়াম, ডায়াবেটিসে চিনির বিকল্প, রবিবারের গল্প: সাহেব ডাঙ্গার কুঠি বাড়ি
- রোজকার অনন্যা
- 5 days ago
- 17 min read
চৈতন্যদেবের স্মৃতি বিজড়িত পানিহাটি কীভাবে হয়ে উঠল কালীক্ষেত্র?
পশ্চিমবঙ্গের নদীঘেরা এক প্রাচীন জনপদ পানিহাটি। ইতিহাসের পাতায় এই নাম উঠে এসেছে বারবার, বিশেষত শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর বৈষ্ণব আন্দোলনের আবহে। কিন্তু সেই পানিহাটিই আবার লোকবিশ্বাস, আধ্যাত্মিকতা ও তান্ত্রিক উপাসনার ধারায় রূপ নেয় এক শক্তিপীঠসদৃশ কালীক্ষেত্রে। কীভাবে ঘটল এই রূপান্তর? ইতিহাস আর লোককাহিনির সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে আমরা খুঁজে দেখি সেই পথচলার গল্প।

নিত্যানন্দের পবিত্র দধি-চিড়া উৎসব
১৫শ শতকের শেষদিকে চৈতন্যদেবের অনুগত শ্রীনিত্যানন্দ প্রভু পানিহাটিতে আয়োজন করেন এক ব্যতিক্রমী মহোৎসব দধি চিড়া উৎসব। শ্রীরঘুনন্দন দাস গোস্বামীর প্রতি এক অভিনব শাস্তিমূলক অনুগ্রহরূপে এই মহোৎসবের সূচনা করেন তিনি। চিড়া, দধি, কাঁদা কলা, মিষ্টি দই ও নানা খাদ্যদ্রব্য দিয়ে হাজার হাজার ভক্তকে বিতরণ করা হয় প্রসাদ।
এই উৎসব চৈতন্য মতের সহিষ্ণুতা ও প্রেমভক্তির প্রতীক হয়ে ওঠে, এবং পানিহাটি হয়ে ওঠে বৈষ্ণবদের এক তীর্থক্ষেত্র। আজও “দধি-চিড়া মহোৎসব” পালিত হয় ধুমধামে, আষাঢ় মাসের শুক্ল পক্ষের ত্রয়োদশীতে।

তন্ত্র ও কালীর আবাহন
কিন্তু এই বৈষ্ণবপ্রধান জনপদেরই এক কোণে ধীরে ধীরে মাথা তোলে শাক্ত উপাসনার এক প্রবল ধারা। লোককথা বলে, এই অঞ্চলেই মা কালী এক তান্ত্রিক সাধকের আহ্বানে আবির্ভূত হয়েছিলেন—অন্ধকারকে বিদীর্ণ করে আলোর প্রতীক হয়ে।একাধিক প্রাচীন কালীমন্দির যেমন পানিহাটির বরাহী কালী, রক্ষা কালী ও মহাকালী মন্দির প্রমাণ দেয় এই অঞ্চল কালীর শক্তিক্ষেত্র হিসেবেও সমাদৃত ছিল। তন্ত্রসাধনার উপযুক্ত স্থান হিসেবে গঙ্গার ধারে, নিবিড় গ্রাম্য পরিবেশ ও অলৌকিক ঘটনার আবহেই গড়ে ওঠে পানিহাটির কালীক্ষেত্র রূপ।

সহাবস্থানের এক অনন্য দৃষ্টান্ত
বিরল এক সামাজিক ও আধ্যাত্মিক সহাবস্থান আমরা দেখতে পাই পানিহাটিতে। একদিকে চৈতন্য-নিত্যানন্দের নামসংকীর্তনের প্রেমভাব, অন্যদিকে কালীর রুদ্র রূপের আরাধনা, দুটো একসাথে মিশে গিয়ে গড়ে তোলে এক জটিল অথচ ভারসাম্যপূর্ণ সংস্কৃতিপট। এই সহাবস্থানের কারণেই পানিহাটি শুধুই বৈষ্ণবতীর্থ নয়, হয়ে ওঠে "কালীক্ষেত্র" যেখানে শক্তি ও ভক্তির এক অপূর্ব মিলন ঘটে।

পানিহাটির নামেই কি নিহিত আছে ইঙ্গিত?
পানিহাটি নামটির মধ্যেই অনেক গবেষকের মতে ‘পানির ঘাট’ অর্থাৎ নদীঘাটের বার্তা আছে। আবার কেউ কেউ বলেন, ‘পাণি’ অর্থে কর (হাত), এবং ‘হাটি’ মানে বসতি বা গ্রাম অর্থাৎ ঈশ্বরের করস্পর্শ পাওয়া পবিত্র ভূমি। এই ব্যাখ্যাগুলিও পানিহাটিকে এক অলৌকিক শক্তিবিশিষ্ট অঞ্চল হিসেবে উপস্থাপন করে, যা তার কালীক্ষেত্র রূপ পাওয়াকে আরও অর্থবহ করে তোলে।

স্মৃতির জোয়ারে কালির তীর্থ
আজকের পানিহাটি শুধু ইতিহাস নয়, বিশ্বাস, আধ্যাত্মিকতা আর আচার-অনুষ্ঠানের অনবদ্য সংমিশ্রণ। চৈতন্যদেবের করুণাময় স্মৃতি, নিত্যানন্দ প্রভুর মহোৎসব আর মা কালীর শক্তি এই ত্রিধারায় গড়ে ওঠা পানিহাটি যেন এক সমসাময়িক কাশী, যেখানে আধ্যাত্মিক চেতনা আজও প্রবহমান। তাই এই জনপদ কেবল বৈষ্ণব বা শাক্ত নয় এই ভূমি এক সহনশীলতা, সম্প্রীতি ও সাধনার মিলনক্ষেত্র। এই কারণেই পানিহাটি হয়ে উঠেছে "কালীক্ষেত্র" যেখানে অতীত ও বর্তমান, লোককথা ও ইতিহাস মিলেমিশে একাকার।

আপনি কি জানেন?
পানিহাটি রেল স্টেশন সংলগ্ন এলাকাতেই দধি চিড়া উৎসব হয়।
স্থানীয় কিছু গবেষক দাবি করেন, পানিহাটির মাটির নিচে পুরাতন তান্ত্রিক ধ্বংসাবশেষ এখনো লুকিয়ে আছে।
পানিহাটির "ভীমগড়" অঞ্চলে ভীম ও হনুমানের মিলিত স্মৃতিচিহ্ন রয়েছে বলে অনেকে বিশ্বাস করেন।

মাংস ছাড়া আমিষ
স্বাদ আর স্বাস্থ্যসম্মত পুষ্টির সন্ধানে বহু পরিবার মাংসের পরিবর্তে খুঁজে নিচ্ছে এমন কিছু বিকল্প, যা একদিকে যেমন প্রোটিনে ভরপুর, অন্যদিকে রান্নাতেও সহজ আর সুস্বাদু। আমরা তুলে ধরেছি মাশরুম, কাঁচা কাঁঠাল, সয়া, মোচা ও কাবলি ছোলা এই পাঁচটি জনপ্রিয় মাংস বিকল্প উপকরণ ব্যবহার করে তৈরি করা ১০টি অভিনব রেসিপি। সাধারণ তরকারি থেকে শুরু করে বিরিয়ানি, কাবাব, চপ, এমনকি টাকো বা স্প্যাগেটির মতো ফিউশন খাবার, এই সব রেসিপিই আপনাকে দেবে মাংসের মতই রসাল স্বাদ, কিন্তু অনেক বেশি হালকা ও স্বাস্থ্যকর উপায়ে।

ইঁচড়ের গালৌটি কাবাব
নবাবি স্বাদ, নিরামিষ রূপে!
লখনউর গালৌটি কাবাব মূলত একটি বিখ্যাত মাটনের পদ, যা জিভে গলে যায় এমন নরম ও সুগন্ধি। কিন্তু আপনি জানেন কি? নিরামিষ রান্নাতেও সেই গলদঘর্ম স্বাদ আনা সম্ভব কাঁচা কাঁঠাল দিয়ে! এতে থাকবে মাংসের মতো টেক্সচার, কিন্তু অনেক হালকা, স্বাস্থ্যকর আর নিরামিষ।
কী কী লাগবে
কাঁচা কাঁঠাল (সেদ্ধ ও ম্যাশ করা): ১.৫ কাপ
ছানা: ২ কাপ
আদা-রসুন বাটা: ১ টেবিল চামচ
Shalimar's Chef Spices গরম মসলা: ১ চা চামচ
কেওড়া জল: ১ চা চামচ
ঘি: ১ চা চামচ
Shalimar's Chef Spices লাল লঙ্কা গুঁড়ো: ১ চা চামচ
নুন: স্বাদমতো
Shalimar's সরষের তেল

কীভাবে বানাবেন
একটি পাত্রে কাঁঠালের সঙ্গে ছানা, আদা-রসুন বাটা, গরম মসলা, লাল মরিচ গুঁড়ো, নুন ও কেওড়ার জল ভালোভাবে মিশিয়ে নিন। মিশ্রণটি যেন নরম ও আঠালো হয়, এমন হওয়া চাই। মিশ্রণ থেকে ছোট ছোট টিকিয়া আকারে বানিয়ে রাখুন। একটি ফ্রাইপ্যানে ঘি গরম করে কম আঁচে ধীরে ধীরে কাবাবগুলো ভেজে নিন। দুই দিকই সুন্দর করে সোনালি ও মচমচে হলে নামিয়ে নিন। এই সুগন্ধি ও মোলায়েম কাবাব পরিবেশন করুন ধনেপাতা চাটনি, লেবুর স্লাইস এবং কাঁচা পেঁয়াজের সঙ্গে। ইচ্ছা করলে পরোটা বা রুমালি রুটির সঙ্গেও খেতে পারেন।

মোচার কিমা কারি
মোচায় মাংসের ছোঁয়া, স্বাদে একেবারে বাঙালিয়ানায় ভরা!
মোচা বহু প্রাচীন ও পুষ্টিকর এক উপাদান। সাধারণত ঝাল বা বড়া হিসেবে খাওয়া হলেও, একে যখন মিহি করে রান্না করা হয় মসলা দিয়ে, তখন সে হয়ে ওঠে একেবারে মাংসের কিমার মতো স্বাদ ও গন্ধযুক্ত একটি অসাধারণ নিরামিষ পদ। এই রেসিপিটি উপযুক্ত দুপুরের ভাতের সঙ্গে, কিংবা লুচি/পরোটা দিয়েও জমে ওঠে।
কী কী লাগবে
মোচা (সেদ্ধ ও কুচানো): ১ কাপ
আলু (কাটা): ১টি
পেঁয়াজ (কুচানো): ১টি
টমেটো (কুচানো): ১টি
Shalimar's Chef Spices লঙ্কা গুঁড়ো: ১ চা চামচ
Shalimar's Chef Spices জিরে গুঁড়ো: ১ চা চামচ
Shalimar's Chef Spices হলুদ গুঁড়ো: ১ চা চামচ
Shalimar's Chef Spices গরম মসলা গুঁড়ো: ১ চা চামচ
Shalimar's সরষের তেল,
নুন,
সামান্য চিনি

কীভাবে বানাবেন
কলা ফুলের বাইরের মোটা অংশ ছাড়িয়ে ভেতরের ফুলগুলো কুচিয়ে নিন এবং লবণ-হলুদের জলে ১০ মিনিট সেদ্ধ করুন। পরে জল ঝরিয়ে রাখুন। কড়াইয়ে সরষের তেল গরম করে জিরে ও শুকনো লঙ্কা ফোড়ন দিন। এরপর পেঁয়াজ ও আদা-রসুন বাটা দিয়ে ভালোভাবে কষান যতক্ষণ না রঙ ধরে। আলু কিউব দিয়ে নেড়ে কিছুক্ষণ ভাজুন। এরপর টমেটো, হলুদ, নুন ও চিনি দিয়ে মসলা ভালো করে ভেজে নিন। সেদ্ধ মোচা কুচি দিয়ে ভালো করে কষান। কিছুক্ষণের মধ্যে মিশ্রণটা শুকনো ও মাংসের কিমার মতো রং ও গন্ধ ধারণ করবে। জল অল্পই দিন, যেন মাখা মাখা ঝোল তৈরি হয়। গরম মসলা ছড়িয়ে ঢাকা দিয়ে কয়েক মিনিট দমে রাখুন। এই মোচার কিমা পরিবেশন করুন গরম ভাতের সঙ্গে, বা বাটির মধ্যে একটু ঘি দিয়ে গরম লুচির পাশে। এটি আদর্শ নিরামিষ দুপুরের পদ, যা মাংসপ্রেমীদেরও মুগ্ধ করে।

সয়া কিমা টাকো
মেক্সিকান খাদ্যসংস্কৃতিতে বাঙালি ছোঁয়া!
এই জনপ্রিয় মেক্সিকান স্ট্রিট ফুড এখন শহুরে ফুড লাভারদের প্লেটে এক চেনা নাম। কিন্তু আপনি কি জানেন, মাংস ছাড়াও এই টাকো তৈরি হতে পারে স্বাস্থ্যকর, প্রোটিনে ভরপুর নিরামিষ উপাদানে? এই রেসিপিতে সয়া দিয়ে তৈরি হচ্ছে এক অনন্য “কিমা” যা টাকোর পুর হিসেবে একেবারে উপযুক্ত। সহজ, ফিউশন এবং বাচ্চা থেকে বড়ো সবার পছন্দ!
কী কী লাগবে
১ কাপ সয়া কিমা (সেদ্ধ করে জল ঝরানো)
১টি পেঁয়াজ (কুচানো),
১টি টমেটো (কুচানো)
পাপরিকা/ Shalimar's Chef Spices লঙ্কা গুঁড়ো: ১ চা চামচ
Shalimar's Chef Spices জিরে গুঁড়ো: ১ চা চামচ
টাকো শেল,
সালসা,
লেটুস,
আদা-রসুন বাটা: ১ টেবিল চামচ
Shalimar's Sunflower তেল
কীভাবে বানাবেন
সয়া দানা সেদ্ধ করে জল ঝরিয়ে ম্যাশ করুন। একটি কড়াইতে তেল গরম করে পেঁয়াজ, আদা-রসুন বাটা ও টমেটো দিয়ে কষান। পাপরিকা, জিরে, নুন ও গোলমরিচ মিশিয়ে দিন। ১–২ মিনিট কষে নিন। সয়া মিশিয়ে ভালো করে নেড়ে মশলার সঙ্গে মিশিয়ে দিন। মাঝারি আঁচে ৪–৫ মিনিট রান্না করুন যতক্ষণ না সয়া শুকিয়ে মশলাধারী “কিমা” রূপ নেয়। টাকো শেল গরম করে তার মধ্যে সয়া কিমা দিন। ওপরে সালসা, লেটুস ও কুচানো চিজ ছড়িয়ে পরিবেশন করুন। সয়া কিমা টাকো যেখানে ভারতীয় প্রোটিনের সঙ্গে জড়িয়ে আছে মেক্সিকোর রঙিন স্বাদ! স্বাস্থ্য আর রুচির মধ্যে তৈরি এক আন্তর্জাতিক সেতুবন্ধন।

মাশরুম স্ট্রোগানফ
ক্রিমি ইউরোপিয়ান স্বাদ, এখন নিরামিষে!
স্ট্রোগানফ হল একটি ক্লাসিক রাশিয়ান খাবার, যেখানে সাধারণত বিফ থাকে মাখন আর ক্রিমে রান্না করা। কিন্তু নিরামিষ খাদ্যপ্রেমীদের জন্যও এর আছে এক স্বর্গীয় রূপ। মাশরুমের মাংসল টেক্সচার আর হালকা টক ক্রিমের মিশেলে তৈরি এই ডিশটি রাইস, পাস্তা বা ম্যাশড পটেটোর সঙ্গে অসাধারণ লাগে।
কী কী লাগবে
মাশরুম (স্লাইস করে কাটা): ২০০ গ্রাম
পেঁয়াজ,
রসুন,
সরষে
সাওয়ার ক্রিম বা ঘন টক দই
Shalimar's Chef Spices গোলমরিচ গুঁড়ো,
হার্বস
মাখন/ Shalimar's Sunflower তেল
কীভাবে বানাবেন
মাশরুম ধুয়ে কাটুন পাতলা চাক করে। একটি প্যানে মাখন গরম করুন। পেঁয়াজ ভাজুন পেঁয়াজ হালকা সোনালি হলে রসুন দিন। গন্ধ বেরোলে মাশরুম দিয়ে দিন। মাশরুম থেকে জল ছাড়বে, সেটি শুকিয়ে গেলে সরষে দিন ও নেড়ে নিন। সাওয়ার ক্রিম বা ঘন টক দই দিন, অল্প আঁচে ভালোভাবে মিশিয়ে ২-৩ মিনিট রান্না করুন। গোলমরিচ, নুন, ওরেগানো ছড়িয়ে গরম গরম নামিয়ে ফেলুন। পরিবেশন করুন বাটার রাইস, স্প্যাগেটি পাস্তা বা ম্যাশড পটেটো এর সঙ্গে। চাইলে পাশে গার্লিক ব্রেড দিলেও জমে যায়।

কাবলি ছোলার শর্মা র্যাপ
নিরামিষেও ঝাঁঝালো শর্মার স্বাদ!
শর্মা মানেই আমাদের কল্পনায় মাংস-মাখানো রোল। কিন্তু আপনি জানেন কি, কাবলি ছোলা (চানা) দিয়েও তৈরি করা যায় দারুণ ঝালঝোলা, প্রোটিন-সমৃদ্ধ এক র্যাপ, যা খেতে যেমন সুস্বাদু, তেমনি হালকা ও পেট ভরানো। এই রেসিপিটি বাচ্চাদের টিফিন, বড়দের লাঞ্চ বা সন্ধ্যার হেলদি স্ন্যাকস সবেতেই অনন্য।
কী কী লাগবে
সেদ্ধ কাবলি ছোলা: ১ কাপ
Shalimar's Chef Spices জিরে গুঁড়ো: ১ চা চামচ,
Shalimar's Chef Spices ধনে গুঁড়ো: ১ চা চামচ,
পাপরিকা / Shalimar's Chef Spices লঙ্কা গুঁড়ো: ১ চা চামচ
রসুন,
লেবুর রস
হ্যামাস,
লেটুস,
পেঁয়াজ,
র্যাপ রুটি
Shalimar's Sunflower তেল
কীভাবে বানাবেন
সেদ্ধ ছোলা ভালো করে চেপে ম্যাশ করুন। তার সঙ্গে জিরে, ধনে, পাপরিকা, রসুন কুচি, নুন, গোলমরিচ, অলিভ অয়েল ও লেবুর রস মিশিয়ে ১০ মিনিট রেখে দিন। একটি প্যানে মেরিনেট করা ছোলা মাঝারি আঁচে ৫–৬ মিনিট ভেজে নিন যতক্ষণ না তা মসলা ধরে ও হালকা মচমচে হয়। র্যাপ রুটিতে হ্যামাস লাগান। তার উপর ছোলা মিশ্রণ ছড়িয়ে দিন। এবার কুচানো লেটুস, পেঁয়াজ ও টমেটো যোগ করুন। রুটি রোল করে সামান্য গ্রিল করুন অথবা তাওয়ায় হালকা গরম করে পরিবেশন করুন। চাইলে চিজ গ্রেট করে দিতে পারেন শিশুদের জন্য। মায়োনেজ বা কাসুন্দি দিয়ে পরিবেশন করলে বাড়তি স্বাদ পাবেন। শীতল পানীয় বা লেমনেডের সঙ্গে একটি দারুণ হেলদি কমপ্লিট মিল।

মাশরুম সিক কাবাব
নিরামিষ কাবাবে তন্দুরি স্বাদের ছোঁয়া!
সিক কাবাব সাধারণত মাংস দিয়ে বানানো হয় এবং তন্দুরে রান্না করা হয়। কিন্তু আপনি কি জানেন? মাশরুম ও পনির/তোফুর মতো উপাদান দিয়ে তৈরি এই নিরামিষ সিক কাবাব খেতে তেমনই জিভে জল আনা স্বাদ এনে দিতে পারে। এই রেসিপিটি স্বাস্থ্যকর, প্রোটিন-সমৃদ্ধ এবং পার্টি স্ন্যাকস হিসেবেও দারুণ কাজ করে।
মাশরুম (সেদ্ধ করে কুচি করা) ১.৫ কাপ
পনির বা তোফু ½ কাপ
আদা-রসুন বাটা ১ চা চামচ
কাঁচালঙ্কা কুচি ১টি
ধনে পাতা কুচি ১ টেবিল চামচ
Shalimar's Chef Spices গরম মসলা গুঁড়ো: ১ চা চামচ
লেবুর রস ১ চা চামচ
বেসন / ওটস পাউডার ২ টেবিল চামচ (বাইন্ডিং-এর জন্য)
নুন,
Shalimar's Chef Spices গোলমরিচ গুঁড়ো: ১ চা চামচ
সিক বা কাঠি প্রয়োজনমতো
ঘি বা Shalimar's sunflower তেল ঝলসে নেওয়ার জন্য

কীভাবে বানাবেন
একটি পাত্রে মাশরুম, পনির/তোফু, আদা-রসুন বাটা, কাঁচালঙ্কা, ধনে পাতা, মসলা, নুন, লেবুর রস ও বেসন মিশিয়ে ভালো করে মেখে নিন। মিশ্রণটি যেন হাতে গেঁথে যায় এমনভাবে নরম ও আঠালো হয়। মিশ্রণটি ছোট ছোট অংশ করে সিক বা কাঠির গায়ে লম্বা আকৃতিতে গেঁথে নিন (যেমন রেস্টুরেন্টে সিক কাবাব দেখা যায়)। চাইলে ওভেনে গ্রিল করুন (১৮০°C তে ১০-১২ মিনিট) অথবা নন-স্টিক প্যানে অল্প তেলে পেঁয়াজ সহ ঝলসে নিন। কাবাব গরম গরম নামিয়ে পেঁয়াজ ও লেবুর ফালি দিয়ে পরিবেশন করুন। ধনেপাতা চাটনি বা টক দইয়ের ডিপ সঙ্গে দিন। তন্দুরি ফ্লেভার আনতে কয়লার ধোঁয়া ব্যবহার করুন একটি গরম কয়লা ছোট বাটিতে রেখে ঘি ছিটিয়ে ঢেকে রাখুন ৫ মিনিট। পার্টির জন্য ছোট কাঠি বা টুথপিক ব্যবহার করে ছোট ছোট “কাবাব বাইটস” তৈরি করতে পারেন।

ঘরে ঘরে টেরারিয়াম – সবুজের নান্দনিক ছোঁয়া শহুরে জীবনে
আজকের শহুরে ব্যস্ত জীবনে প্রকৃতি যেন দিন দিন দূরে সরে যাচ্ছে। ছোট ফ্ল্যাট, ব্যালকনি-হীন আবাসন, ওড়না-বাঁধা জানালার ফাঁক গলে ঢুকে পড়া ধুলো... সব মিলিয়ে যেন গাছগাছালির সঙ্গে আমাদের সম্পর্কটা অনেকটাই ফিকে। অথচ মানুষ প্রকৃতির সন্তান, সবুজকে ছুঁয়ে থাকলেই তার মন ভাল থাকে। এই শূন্যতা পূরণে ঘরোয়া গার্ডেনিংয়ের এক অসাধারণ পদ্ধতি হলো টেরারিয়াম।

টেরারিয়াম কী?
টেরারিয়াম হলো একটি কাঁচের পাত্রে গাছপালা বসিয়ে তৈরি করা ক্ষুদ্রতর বাগান। একে বলা যায় “বটল গার্ডেন” বা "miniature indoor forest"। সাধারণত স্বচ্ছ কাঁচের পাত্র, ছোট পাথর, কিছু মাটি ও শৈল্পিকভাবে বাছাই করা গাছপালা দিয়ে এটি তৈরি হয়।
কেন টেরারিয়াম আজ ঘরে ঘরে?
১. স্থান সাশ্রয়ী — এক চিমটে জায়গাতেও বসানো যায়।
২. রক্ষণাবেক্ষণ সহজ — অতিরিক্ত জল বা আলো দরকার পড়ে না।
৩. সাজসজ্জায় অভিনবত্ব — ঘরের ডেকোরেশনে জ্যোতির্ময়তা আনে।
৪. মানসিক প্রশান্তি — জীবন্ত সবুজের স্পর্শ মনকে শান্ত করে।
৫. নতুন প্রজন্মের প্রকৃতিপ্রীতি জাগানো — শিশুদের শেখাতে পারেন গাছের যত্ন।

টেরারিয়াম বানানোর উপায়
যা লাগবে:
একটি কাঁচের পাত্র (ফিশবোল, মোমবাতির গ্লাস, পুরনো জার)
ছোট পাথর বা কঙ্কর (ড্রেনেজের জন্য)
অ্যাক্টিভেটেড চারকোল (গন্ধ রোধে সাহায্য করে)
পটিং সয়েল
ছোট সাকুলেন্ট বা শেড-লাভিং গাছ (জেড প্ল্যান্ট, স্নেক প্ল্যান্ট, পেপারোমিয়া, ফার্ন, মস প্রভৃতি)
ডেকোরেটিভ এলিমেন্ট (সাদা পাথর, ছোট স্ট্যাচু, মিনি ফেনস)
পদ্ধতি:
প্রথমে পাত্রের নিচে কঙ্কর বিছিয়ে নিন।
তার উপর চারকোল ও মাটি দিন।
এরপর পছন্দসই গাছগুলি রোপণ করুন।
উপরে হালকা জল ছিটিয়ে দিন।
চাইলে নান্দনিক ছোট মডেল বা পাথর দিয়ে সাজিয়ে তুলুন।
সরাসরি রোদে রাখবেন না, তবে আলোকজ্জ্বল জায়গায় রাখুন।
সপ্তাহে একবার হালকা করে জল দিন (সাকুলেন্ট হলে ১০-১৫ দিনে একবার)।
মাঝে মাঝে কাচ মুছে পরিষ্কার করুন যাতে আলো ঢুকতে পারে।
যদি গাছ হলদে বা ছত্রাকযুক্ত হয়ে যায়, সরিয়ে ফেলুন।
আজকাল বার্থডে, হাউসওয়ার্মিং, বেবি শাওয়ার বা রিটার্ন গিফট হিসেবেও টেরারিয়াম জনপ্রিয়। পরিবেশবান্ধব, ব্যবহারিক ও মনোগ্রাহী—সবদিক থেকেই এক অনন্য উপহার। টেরারিয়াম আমাদের ঘরের মধ্যে প্রকৃতির একটা ছোট্ট জানালা। দিনে দিনে এই ‘সবুজ শিল্প’ শহুরে জীবনের ক্লান্ত ঘরে প্রাণ এনে দিচ্ছে। কাঁচের মধ্যে গাছের এই জগৎ যেন প্রতিদিন বলে ওঠে "সবুজে বাঁচো, সবুজে থাকো!"
ডায়াবেটিসে চিনির বিকল্প
ডায়াবেটিসে চিনি গ্রহণ নিয়ন্ত্রণে রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এটি রক্তে শর্করার মাত্রা দ্রুত বাড়িয়ে দেয়। তবে তার মানে এই নয় যে, মিষ্টির সব দরজা বন্ধ! চিনির বিকল্প হিসেবে এখন অনেক স্বাস্থ্যকর ও স্বাভাবিক উপাদান পাওয়া যায় যেগুলি ডায়াবেটিকদের জন্য তুলনামূলক নিরাপদ।

নিচে ডায়াবেটিসে উপযোগী প্রাকৃতিক ও কৃত্রিম চিনির বিকল্প গুলির তালিকা এবং তাদের বৈশিষ্ট্য দেওয়া হলো:
প্রাকৃতিক চিনির বিকল্প
১. স্টিভিয়া (Stevia)
একটি প্রাকৃতিক উদ্ভিদের পাতার নির্যাস।
২০০–৩০০ গুণ বেশি মিষ্টি, কিন্তু ক্যালোরি প্রায় শূন্য।
রক্তে শর্করার মাত্রা বাড়ায় না।
চা, কফি, হালকা মিষ্টি বা রুটি তৈরিতে ব্যবহৃত হয়।
উপযুক্ত: দীর্ঘমেয়াদি ব্যবহারে নিরাপদ। গর্ভবতীদের জন্যও তুলনামূলক নিরাপদ।

২. খেজুরের নির্যাস (Date Syrup)
প্রাকৃতিক হলেও গ্লাইসেমিক ইনডেক্স মাঝারি।
অল্পমাত্রায় খেলে ভালো, তবে ডায়াবেটিসের তীব্র অবস্থায় সীমিত ব্যবহার করা উচিত।
৩. নারকেল চিনি (Coconut Sugar)
গ্লাইসেমিক ইনডেক্স অপেক্ষাকৃত কম (GI ≈ 35)।
মিনারেল ও ফাইবার থাকে।
পরিমিত ব্যবহারে ডায়াবেটিকদের জন্য কিছুটা উপযোগী।
৪. ইরিথ্রিটল (Erythritol)
একটি সুগার অ্যালকোহল, প্রাকৃতিক উৎস থেকেও তৈরি হয়।
ক্যালোরি প্রায় শূন্য, রক্তে শর্করার ওপর প্রভাব ফেলে না।
অনেকেই এটি স্টিভিয়ার সঙ্গে মিশিয়ে ব্যবহার করেন।
উপযুক্ত: হজমে সহজ, তবে বেশি খেলে পেটের সমস্যা হতে পারে।
৫. মঙ্ক ফ্রুট (Monk Fruit Extract)
চীনা ফল থেকে তৈরি, ১৫০–২০০ গুণ বেশি মিষ্টি।
কোনো ক্যালোরি নেই, ব্লাড সুগারে প্রভাব পড়ে না।
স্বাদে কিছুটা স্টিভিয়ার মতো, তবে aftertaste কম।
কৃত্রিম চিনির বিকল্প (Artificial Sweeteners)
▪ অ্যাসপারটেম (Aspartame)
▪ স্যাকারিন (Saccharin)
▪ সুক্রালোজ (Sucralose)
▪ এসেসালফেম কে (Acesulfame-K)
এইসব কৃত্রিম মিষ্টিকারক FDA অনুমোদিত হলেও দীর্ঘমেয়াদি ব্যবহারে বিতর্ক রয়েছে। বিশেষ করে যাঁদের কিডনি, লিভার সমস্যা আছে বা গর্ভাবস্থা চলছে, তাঁদের সতর্ক থাকা উচিত।

সঠিক ব্যবহারের কিছু পরামর্শ:
মিষ্টির লোভ সামলাতে চিনি বিকল্প হঠাৎ বেশি পরিমাণে ব্যবহার করবেন না।
প্রতিদিনের ক্যালোরির হিসাব রাখুন।
চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া বাজারজাত “ডায়াবেটিক ফ্রেন্ডলি” প্রোডাক্ট বিশ্বাস করবেন না, সব কিছুর গ্লাইসেমিক ইনডেক্স ও উপাদান যাচাই করুন।
স্টিভিয়া ও ইরিথ্রিটল মিশিয়ে ঘরোয়া মিষ্টি বানালে সবচেয়ে স্বাস্থ্যকর হয়।
ডায়াবেটিস মানেই যে মিষ্টিকে পুরোপুরি বিদায় দিতে হবে, তা নয়। বরং বেছে নিতে হবে সঠিক বিকল্প, নিয়ন্ত্রিত মাত্রায়। প্রাকৃতিক, ক্যালোরিহীন ও কম GI যুক্ত উপাদানই আপনার আসল বন্ধু।
সাহেব ডাঙার কুঠি বাড়ি
বিশ্বজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়

পর্ব,, ১
ডুমুরদহ স্টেশন থেকে টোটো নিয়ে শঙ্কুরা যখন সাহেব ডাঙার উদ্দেশ্যে রওনা দিলো, ঘড়িতে বিকেল চারটে। বাদল , দীপু আর শঙ্কু গলায় গলায় বন্ধু । ওদের এডভেঞ্চার একটাই, টিউশন অফ হলেই সোজা ট্রেন চেপে অজানার উদ্দেশে পাড়ি দেওয়া। আজও রঘু স্যার কলকাতায় কাজে আটকে গেছে,ফিরতে পারেনি, তাই এডভেঞ্চার এ বেরোনো। কোন্নগর স্টেশন থেকে দিব্বি উঠে পড়ে কাটোয়া লোকালে। গাড়ি চুঁচুড়া , ব্যান্ডেল হয়ে এগিয়ে চলেছে । গল্প, ঝালমুড়ি, শোনপাঁপড়ি,খাওয়াদাওয়া করতে করতে বিকেল হয়ে যায়।
- এই শঙ্কু, এবার নেমে ব্যাক করি। দীপুর কথায় শঙ্কু ঘড়ি দেখে, প্রায় পাঁচটা।
- ঠিক আছে, নেক্সট স্টেশনে নামি।
ডুমুরদহ স্টেশন, তিনজন চায়ের দোকানে ঢোকে, চা নেয়। জানতে পারে, ডাউন ট্রেন আসতে এক ঘণ্টা লাগবে। লেটও করতে পারে।

- আচ্ছা আঙ্কেল,আশেপাশে দেখার কি আছে? শঙ্কুর কথায় দোকানদার বলে,
- এখানেই ওঙ্কারনাথ আশ্রম, নীলকর সাহেবের কুঠী বাড়ি, ঠ্যাঙারে কালুর কালিমন্দির, রণপ গ্রাম,, সবই আশেপাশে।
-এই দীপু, চল, একটা টোটো নিয়ে আধ ঘন্টা ঘুরে ডাউন ট্রেন ধরি । এখানে বসেই বা কি করবো? শঙ্কুর কথায় সকলে উঠে টোটো ধরে।
গাড়ি ওঙ্কারনাথ আশ্রম দেখিয়ে ঠ্যাঙারে কালু, এক সময় ডাকাত ছিলো। বিহার উড়িষ্যা আসাম এর মেল ট্রেনে ডাকাতি করতো। কালুর ঠ্যাঙারে বাহিনী ছিলো।
টোটো অবশেষে কুঠি বাড়ির কাছাকাছি। গঙ্গার ধার দিয়ে রাস্তা। মনোরম দৃশ্য।
- ড্রাইভার আঙ্কেল,কুঠি বাড়ি কবে হয়েছিল?হিস্ট্রি একটু বলবে?
শঙ্কুর কথায় ড্রাইভার বলে, তখন ইংরেজ আমল। নীল চাষের সময়ে সাহেবরা এই বাড়ি বানায়। শোনা যায়,ভাগীরথীর ওপারে চরকৃষ্ণবাটির এক গোসাই মেয়েকে বড়সাহেব ভালবেসে বিয়ে করে কুঠি বাড়িতে তোলে।
- সেতো ভালোই, কিন্তু তারপর? দীপুর তর সইছে না।
- কিন্তু তার পরের ঘটনা মর্মান্তিক। একদিন নদী পেরিয়ে নৌকায় কয়েকশো লেঠেল রাতের অন্ধকারে কুঠি বাড়ি আক্রমণ করে।ঘুমন্ত অবস্থায় সাহেবকে বেঁধে নিয়ে যায়। কিন্তু সাহেব বউকে ফেলে যায় ।
- তারপর সাহেবকে মেরে দিলো? বাদল জিজ্ঞেস করে।
দীপু হেসে বলে, আরে এতো দেখছি লায়লা মজনু কেস ।
- ড্রাইভার আঙ্কেল টোটো চালাতে চালাতে বললো,না না প্রাণে মারেনি, তবে পরদিন সন্ধ্যে বেলায় সাহেবের বাঙালি বউ নদীর ধারে দেখে, শেয়াল কিছু একটা খাচ্ছে, পাশে সাহেবের টুপী, জুতো। মনে হয় গ্রামের লোকজন আধমরা করে ফেলে গেছিলো, পরে শেয়ালে খেয়ে নিয়েছে।

- ইস কি প্যাথেটিক স্টোরি । কিন্তু আঙ্কেল শেষটা কি ঘটলো? মানে সাহেব বউ কুঠি বাড়িতেই থেকে গেলো?
- না না, শোনা যায়, হাঁটতে হাঁটতে ব্যান্ডেল চার্চএ গিয়ে যীশুর কাছে ক্ষমা চেয়ে পাশের গঙ্গায় ঝাঁপ দেয়।
টোটো প্রায় কুঠিবাড়ি চলে এসেছে। হঠাৎ চারিদিক কালো করে শো শো বাতাসের শব্দ। আকাশ অন্ধকার করে আসে। মেঘের গর্জন কান ফাটিয়ে দিচ্ছে।
- কি আঙ্কেল, ঝড় উঠবে নাকি? দীপুর কথায় ড্রাইভার আঙ্কেল বলে। বৈশাখ মাস পড়েছে, হতেই পারে। তবে আমরা কুঠি বাড়ির কাছাকাছি। ভিজবো না।
টোটো এগিয়ে চলে।মুহুর্তে কালবৈশাখী, দমকা বাতাসে চারিদিক ধূলো উড়িয়ে, অন্ধকার করে আসে । একি বিপদ!!
টোটো রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে যায়। ড্রাইভার তিনজন কে নিয়ে পাশেই পাকুর গাছের নিচে আশ্রয় নেয়। কিন্তু সাংঘাতিক ঝড়ে সব যেনো লন্ডভন্ড , পাশেই কদম গাছের প্রকাণ্ড ডাল ভেঙে একেবারে রাস্তায় ।শুরু হলো মুষলধারে বৃষ্টি,সঙ্গে তীব্র বাজ পড়ার শব্দ।
- কিরে শঙ্কু, তোর কথা শুনে মহাবিপদে পড়লাম। কেনো যে এলাম! দীপুর কথায় বাদল বলে ওঠে, ভালোই তো, এটাও এডভেঞ্চার মোমেন্ট।
শুরু হয় ভয়ঙ্কর ঝড়ের তাণ্ডব। বৃষ্টির তীব্র গতির মধ্যে বাজ পড়ার বিকট শব্দ কান ফাটিয়ে দিচ্ছে। এবার সত্যি ওরা ভয় পায়।কালো আকাশে বিদ্যুতের আলো ফালা ফালা করে দিচ্ছে।যেনো প্রলয়ের পূর্বাভাস।
- এইযে ছেলেরা, তোমরা আমার সাথে ছুটে এসো। গাছের তলায় বেশি বাজ পড়ে।সামনেই কুঠিবাড়ি, ছুটে এসো,বলেই ড্রাইভার উর্দুশ্বাসে দৌড়ায়। পিছনে ওরা তিনজন।
মারাত্মক ঝড় বৃষ্টির মধ্যে শঙ্কুরা হাজির হলো বিশাল জমিদার বাড়িতে। ঘুটঘুটে অন্ধকারে। জনপ্রানী নেই।মাঝে বিদ্যুতের ঝলকে ওরা সকলে বারান্দার চাতালে দাঁড়ায়। বাড়িটা শঙ্কুর ঝাপসা চেনা ।
- এই শঙ্কু, কি বিপদে পড়লাম বলতো। এবার ফিরবো কি করে?
দীপুর কথায় বাদল চিৎকার করে, আমি বারন করেছিলাম। শুনলি না, এইবার দেখ এডভেঞ্চার কাকে বলে।
- আরে তোমরা ঝগড়া বন্ধ করো,ঐ দেখো, আমার গাড়িটা ঝড়ে গাছে ধাক্কা খায়। ঠাকুর, এবার কি হবে!
প্রচণ্ড জলের ঝাপটা সবাইকে ভিজিয়ে দিচ্ছে। কিন্তু শঙ্কু একটু আনমনা ,পিছনে তাকায়, বিদ্যুতের ঝলকানি। স্পষ্ট দেখে,ঐতো দোতলার সিঁড়ি, দরজার উপরে বেলজিয়াম কালার গ্লাস, দেওয়ালের দুদিকে মকর মুখ। তার উপরে রানী ভিক্টোরিয়ার পাথরের মূর্তি।
শঙ্কু ধীরে ধীরে সিঁড়ি বেয়ে উপরে ওঠে। বাদল চিৎকার করে, এই শঙ্কু, কোথায় যাচ্ছিস? চারিদিক অন্ধকার। নেমে আয়।
এর মধ্যে টোটো আঙ্কেল ছুটে বেড়িয়ে যায়। দীপু ডাকে, আঙ্কেল,আমাদের ছেড়ে কোথায় যাচ্ছো?
ঝড় ঝঞ্ঝায় অন্ধকারে কিছুই দেখা যাচ্ছে না। বিকট শব্দে মূহ মূহ বাজ পড়ছে। দীপু চিৎকার করে ওঠে, এই শঙ্কু কোথায় গেলি?

পর্ব,,,২
প্রায় ঘণ্টাখানেক প্রলয়কাণ্ড ঘটে যাওয়ার পর বাইরে বৃষ্টি কিছুটা কমেছে। চারিদিক ঘুটঘুটে অন্ধকার। পশ্চিম দূর আকাশে তখনও বিদ্যুতের ঝলকানি। দীপু পকেটের মোবাইল নিয়ে দেখে, টাওয়ার নেই, টর্চ অন করে, চিৎকার করে,, এই শঙ্কু, কোথায় গেলি?
কথাগুলো খান খান হয়ে বিরাট কুঠি বাড়িতে ঘুরপাক খায়। বাদল বলে, চল উপরে, কেউ যখন নেই, তখন ভয়ের কি আছে। শঙ্কুকে পেয়ে যাবো।
ওরা গুটিগুটি পায়ে উপরে ওঠে। দরজা খোলা,চারিদিক সুন্দর একটা কেকের গন্ধ। কেউ যেনো কেক খাচ্ছে।
- এই শঙ্কু, একা একা কোথায় বসে কেক খাচ্ছিস? বাহ্ বাহ্, এই বন্ধুত্ব? এই শঙ্কু, লুকিয়ে কেনো?
কোনও উত্তর নেই, বাদল বিরক্ত হয়। মোবাইল আলো জ্বালিয়ে অন্যান্য ঘর গুলো দেখে। বিশাল আকারের পুরনো বাড়ি। আবলুস কাঠের আসবাব, উপরে শিলিং এর চারিদিক যিশু মেরী শান্তা হরিণ ভেড়ার খোদাই মূর্তি ,, আর কোনায় কোনায় হরিণের মুখ। কালো সাদা দাবার খোপ কাটা পাথরের মেঝে। দেওয়াল জুড়ে বড় বড় মলিন ছবি। সব ঘরেই কাঠের টেবিল চেয়ার, সিলিংয়ে তেল বাতির হাঙ্গার, মাঝে মাঝে চামচিকার কর্কশ চিৎকার আর ডানার খাপট ।
- এই দীপু একটা শব্দ পাচ্ছিস? ভালো করে শোন, ওই দেখ,,,
- ঠিকতো, উপরে পিয়ানো বাজছে, সঙ্গে অস্পষ্ট কোনো গান,, শোন,,শোন,,
- তাইতো,কিন্তু শঙ্কু গেলো কোথায়?
ওরা পায়ে পায়ে অন্য ঘর গুলো দেখে। ঘুট ঘুটে অন্ধকার। জানলা দিয়ে বাইরে তাকায়। ওরে বাবা, অনেক উপরে উঠে এসেছি! ওই দেখ রাস্তা।
- এই বাদল, নিচে চল, আমার কিন্তু ভয় করছে।
- কিন্তু শঙ্কু ! ওতো উপরেই উঠেছে।
হঠাৎ সিঁড়ি দিয়ে কেউ উপরে উঠছে। কাঠের সিঁড়িতে ঠক ঠক পায়ের শব্দ । একটা আলোর রেখা ক্রমশ পরিষ্কার হয়। দীপু বাদল মূহুর্তে মোবাইলের টর্চ নিভিয়ে দরজার আড়ালে লুকিয়ে পরে ।
কিন্তু আলোটা সিঁড়ি বেয়ে সোজা ছাদের দিকে উঠে যায়।
দীপু ফিসফিস করে বলে,কে উঠলো? মুখটা দেখতে পেলাম না।
- অপেক্ষা কর, কোনও অশরীরী আত্মা ঘুরে বেড়াচ্ছে।আমাদের টের পায়নি,, বাদলের কথায় দীপুর পা দুটো কেঁপে ওঠে। বলে,, আমার কিন্তু ভীষণ ভয় করছে। চল ,নিচে নেমে ছুট লাগাই।
- চুপ, এখন নামলেই ধরা পরে যাবো। বরং লক্ষ করি, আগন্তুক আত্মা না কোনও লোক।
কিছুক্ষণ ওরা দুজন ঘাপটি মেরে থাকার পর বাদল ধীরে ধীরে বাঁ দিকের ঝুল বারান্দায় দিয়ে সোজা বেলকনিতে যায়। পিছনে দীপু।
- এই দীপু, একটা গর্জন শুনতে পাচ্ছিস? জলের আওয়াজ।
- তাইতো। কিন্তু এখানে জল !
কথা শেষ হয়না, বাদল বলে, ওই দেখ, দূরে সাদা রেখা, ওটাই গঙ্গা মনে হয়।আমরা আসার সময়ে গঙ্গার ধার দিয়েই এলাম।

আকাশ অনেকটাই পরিষ্কার , ছানাকাটা মেঘ পশ্চিম আকাশ জুড়ে। বিদ্যুতের মলিন আলো তখনও মাঝে মাঝে দেখা যাচ্ছে।ঝড়বৃষ্টি থেমে গেছে অনেকক্ষণ।চারিদিক লন্ডভন্ড। প্রবল ঝড়ে বহু গাছপালা ভেঙে মাটিতে পড়ে আছে। ধ্বংসের নিস্তব্দতা।
- এই দীপু, শঙ্কু কে একবার ডাকবি?
- খবরদার না। ও এখানে থাকলে নিশ্চয়ই আমাদের খুঁজতো।
- মানে!! কি বলতে চাইছিস? আস্ত একটা ছেলে উধাও?
- চুপ চুপ, দূরে তাকা, ওই গঙ্গার দিকে,,
- সেই আলোটা না? আশেপাশে অনেক গুলো আলো।
- মনে হয় শিয়াল কুকুর হবে, চোখ জ্বলজ্বল করছে।
- কিন্তু দুজন হাঁটছে। ব্যপারটা কি?
- মনে হয়, টোটোওয়ালা আর শঙ্কু আলো নিয়ে আমাদের খোঁজে এদিকে আসছে।
দীপু বাদল আপেক্ষায় থাকে, আলো ক্রমশঃ কাছে আসে। আরো কাছে, আশ্চর্য ব্যাপার!মোমবাতি হাতে সেই সিঁড়ির আলো আবার উঠছে।
- দীপু ফিসফিস করে বলে, এই বাদল, ঐতো আমাদের শঙ্কু। ডাক ডাক,,
- তাহলে সিঁড়িতে কি শঙ্কু উঠে ছিলো? কিন্তু ও গঙ্গার পাড়ে গেলো কি করে? ব্যাপারটা কেমন অদ্ভুত লাগছে।
রাত গভীর, ওরা দুই বন্ধু চুপ করে অপেক্ষা করে শঙ্কু কখন উপরে ওঠে। আলোটা ধীরে ধীরে উপরে আসলেও আর দেখা যায় না।
দীপু,বাদল মোবাইল দেখে।নেটওয়ার্ক নেই।অন্ধকারে কোথায় যাবে? হঠাৎ নদীর ধারে শিয়াল ডেকে ওঠে। সঙ্গে সঙ্গে কুকুর গুলো চিৎকার করে ছোটাছুটি করে।আলোটা জ্বালাবে? কিন্তু যদি কোনও বিপদ আসে। তাই দীপু বলে, এখন চুপচাপ বসে থাক। ব্যাগে জল আছে, দুজনা খাই । অপেক্ষায় করি, সকাল হোক।
সামনের বারান্দায় চুপটি করে দুজন বসে। বাড়িতে নিশ্চই এতক্ষণ থানা পুলিশ হয়ে গেছে। সকলেই খুঁজতে বেরিয়েছে। কিন্তু ওরা যে কুঠি বাড়িতে আটকে, সেকি জানে। সাতপাঁচ ভাবছে, হঠাৎ দীপু ফিস ফিস করে বলে, নিচে তাকা , সিঁড়িতে কেউ বসে আছে।
- তাইতো দেখছি, মহিলা মনে হচ্ছে। এলো চুল, সাদা শাড়ি,অন্ধকার মুখটা বোঝা যাচ্ছে না।
- চুপ চুপ উঠে দঁড়িয়েছে, ওই দেখে চুল উড়ছে,।
- কিন্তু ঝড় তো নেই।
একটা কান্নার আওয়াজ ভেসে আসছে, মনে হয় ডুকরে কাঁদছে। হঠাৎ মহিলাটির ছায়া গঙ্গার পথ ধরে হাওয়ার গতিতে ছুটছে, কান্নার বিকট আওয়াজ।
দীপু, বাদল ভয়তে পিলারের আড়ালে সিঁটিয়ে যায়। উঁকি মারে।
আস্তে আস্তে কান্না মিলিয়ে যায়।মহিলাকে আর দেখা যায়না।
- এই দীপু, তাহলে কি সাহেবের বউ এসেছিল? ভয়ঙ্কর ব্যাপার।
- মনে হয় আমাদের টের পায়নি। কেনযে কুঠি বাড়িতে এলাম! ভোর হলেই কেটে পরতে হবে।

পর্ব,,৩//
পুবের আকাশে এক চিলতে আলোর রেখা ফুটে উঠেছে।চারিদিক জমাট অন্ধকার ক্রমশ ফিকে হচ্ছে। বিরাট পরিখার ওপাশে ঘন জঙ্গলের ভিতরে দুয়েকটা পাখি ডাকছে। কাছেই কাল পেঁচা মাঝে মাঝে ডেকে উঠছে। বৃষ্টির পরে গঙ্গার জলীয় ঠাণ্ডা বাতাস বইছে। নিঝুম রাত, শুধু এক নাগারে ঝিঝি পোকা ডাকছে।
দীপু বাদল পিলারে হেলান দিয়ে কখন যে ঘুমিয়ে পরেছে।
হঠাৎ কার্নিশে উপর থেকে কয়েকটা বাদুর বিকট শব্দে ডানা ঝাপটে উড়ে যেতেই দীপু ধরফর করে উঠে বাদল কে ডাকে।
- এই বাদল, ওই দেখ, পূব আকাশ ফরসা হচ্ছে। একটু পরেই ভোরের আলো ফুটবে।
কথা শেষ হয়না, হঠাৎ কুকুর ডাকে। ওরা উঠে বারান্দা দিয়ে হেঁটে শেষ প্রান্তে সেই কোনার ঘরে যায়। জানলা দিয়ে গঙ্গার দিকে তাকায়। এখন আর জলের সেই গর্জন নেই।প্রকৃতি শান্ত।চারিদিক ধুসর চাদরের মাঝে জলের রেখা দেখা যাচ্ছে।
হঠাৎ দীপু ফিসফিস করে বলে, ওই দেখ নদী থেকে সেই দুজন উঠে আছে। জেলে মনে হয়। ভালোই হলো, এদিকে এলে আমরাও ওদের সাথে রাস্তায় বেরিয়ে যাবো।
ছায়া মূর্তি দুটো ক্রমশ কাছে আসে।
দুই আগন্তুক এর একজন হ্যাট কোর্ট পড়া, হাতে লম্বা লাঠি, আর অন্য জন এক মহিলা। অবাক কাণ্ড। এরা কোথা থেকে এলো?
- এই বাদল, এরা কি কুঠি সাহেব আর তার বাঙালি বউ ?
- মনে তো হচ্ছে। এতো বছর পরেও ওদের অতৃপ্ত আত্মা কুঠি বাড়িতে ভালবাসা খোঁজে।
সাহেব বিবি ক্রমশ আরও কাছে আসে, তারপর বাড়ির সিঁড়ির সামনে দাঁড়ায়।
হাতে মোমবাতি, ধূপ।অন্ধকারে মুখ দেখা যাচ্ছে না। কিন্তু একজন অন্ধকারে মিলিয়ে যায়।
দীপু চিৎকার করতে কিছু গেলে বাদল মুখ চেপে ধরে। কানে ফিস ফিস করে বলে, চুপ, চুপ ,এখন টের পেলে আর রক্ষে নেই।
আগন্তুক সাহেব সিঁড়ি দিয়ে ওঠে। বারান্দা দিয়ে পরিক্রমা করে। বড়ো বড়ো তৈল চিত্রে ধূপ দেখায়। শেষ প্রান্তের ঘরে ঢুকে দরজা বন্ধ করে।
- এই দীপু, সাহেব দেখছি, কিন্তু সাহেবের বউটা কোথায় গেলো ?
- ওই দেখ, সাহেব ওদিকে যাচ্ছে। চল চল বারান্দা দিয়ে ওদিক চল, দেখি একবার। কিন্তু সাবধান।
ওরা মৃদু আলোয় সোজা শেষ ঘরের জানলায় উঁকি দেয়। মার্বেল পাথর বসানো ঝাঁ চকচকে ঘরে একটা বৃহৎ ছবি দেওয়ালে ঝুলছে। কিন্তু সাহেব নেই। গেলো কোথা? ঘরময় ধূপের সুগন্ধ, মোমবাতির জ্বলছে।কে জালালো?
- এই বাদল, কোনায় দেখ,আগন্তুক চুপটি করে বসে। চোখ বন্ধ।
- কিন্তু দীপু, মনে হচ্ছে ওটা সাহেব নয়, টুপি কোর্ট কিছুই নেই, অন্য কেউ।
ভোরের পাখিরা ডাকছে,অন্ধকারের চাদর সরিয়ে হালকা আলোর আভা বিরাট কুঠি বাড়ির ঘুলঘুলি দিয়ে প্রবেশ করছে।পাশের গ্রাম থেকে ভোরের আজান শোনা যাচ্ছে। নদীর ধারে শেয়ালের সেই চেনা ডাক। দীপু বাদল বেলকুনির দিক থেকে নদীর দিকে তাকায়,সাদা শেয়ালের পাল গলা উঁচু করে তার স্বরে চিৎকার করছে হুকা হু ওয়া,, ।
- এই বাদল, এবার পালাই চল। ওই দেখ, রাস্তায় গরুর গাড়ি বেরিয়েছে। আর ভয় নেই। কিন্তু শঙ্কু কোথায় যে গেলো,,,
হঠাৎ নিচের ঘর থেকে মেয়ের কান্নার গলা।,,,

দীপু পালিয়ে আয়,, বলেই বাদল সিঁড়ি বেয়ে একদম উঠোনে, দীপুও উর্দুশ্বাসে নিচে নেমেই ছুট লাগায়। দুই বন্ধু বেশ খানিকটা পথ দৌড়ে হাঁপিয়ে যায়।ওদের দৌড়াতে দেখে পিছন থেকে এক বয়স্ক লোকের গলা,, ও ছেলে, তোমার ছুটছো কেনো? কুকুরে তারা করবে।
দীপু থমকে দাঁড়ায়, বলে, আংকেল,স্টেশনের রাস্তাটা কোন দিকে?
- ঐতো, একটু এগিয়ে বাঁ দিকে,
- ওকে, বলেই দুজন জোর কদমে হেঁটে যায়। স্টেশনে ওঠে।শুনশান প্ল্যাটফর্ম, জনপ্রানী নেই, শুধু দূরে একটা দোকানের ঝাপ খোলা।
ওরা গিয়ে বেঞ্চে বসে, দুটো চায়ের অর্ডার করে। ভিতর থেকে চেনা গলা, কিরে দীপু, সারারাত কুঠি বাড়ি ছিলি?
বাদল দীপু বিস্ফারিত চোখে ভিতরে তাকায়,, শঙ্কুকে দেখে।
- তুই সারা রাত এখানে ছিলি?
শঙ্কু চায়ে চুমুক দিয়ে বলে, আমিতো ঝড় শেষেই চলে এসেছি,তোদের কতো ডাকলাম, সারা পেলাম না। আমি ভাবলাম তোরা স্টেশনে চলে এসেছিস।
-দাঁড়া দাঁড়া, তুই প্রথম কুঠি বাড়ি ঢুকে উপরে উঠেছিলিস, মনে আছে?
- সে আছে, আসলে জানিসতো, ওই কুঠি বাড়িতে আমার ঠাকুরদা মুন্সী ছিলো।ছোটবেলায় বাবার সাথে একবার পোড়ো বাড়ি দেখতে এসেছিলাম,তাই কেমন চেনা মনে হচ্ছিল। যাকগে, ট্রেন ঢুকছে,তাড়াতাড়ি চা খেয়ে নে। বাইদি বাই, তোরা সারারাত কুঠি বাড়িতেই ছিলিস? অন্ধকারে ভয় করেনি?
শঙ্কুর কথার কোনো উত্তর শোনার আগেই মাইকে ট্রেনের অ্যানাউন্স,, ডাউন কাটোয়া লোকাল এক নম্বর প্ল্যাটফর্মে ঢুকছে।
Commentaires