top of page

মধুচন্দ্রিমায় ভারতসফর, জাঙ্ক ফুডের বদলে কী খাবেন? হালকা শীতের স্টাইল স্টেটমেন্ট, রবিবারের গল্প: রক্তের দাগ..

মধুচন্দ্রিমায় ভারতসফর

ree

বিবাহের উৎসব শেষ, ক্লান্তি ও আনন্দের ঢেউ মিলেমিশে আছে জীবনের নতুন অধ্যায়ে। আর এই অধ্যায়ের প্রথম পাতা খুলে যায় মধুচন্দ্রিমা নামের এক অনিন্দ্য সফরে। ভালোবাসার মানুষটির হাত ধরে দূর অচিন দেশে নয়, বরং নিজের দেশের অজস্র রঙে রঙিন প্রান্তরে ঘুরে আসা এ এক অন্যরকম অভিজ্ঞতা। ভারতবর্ষ, তার প্রকৃতি, সংস্কৃতি, পাহাড়-সাগর-মরুভূমি সব মিলিয়ে যেন মধুচন্দ্রিমার জন্য ঈশ্বরেরই নির্মিত এক অনুপম মানচিত্র। ভারত এমন এক দেশ, যেখানে প্রতিটি রাজ্য যেন এক একটি নতুন অনুভব। উত্তর থেকে দক্ষিণ, পূর্ব থেকে পশ্চিম প্রকৃতি, খাবার, ভাষা, পোশাক, মানুষ সবকিছুই আলাদা, অথচ কোথাও যেন এক অদৃশ্য বন্ধনে বাঁধা। তাই বিদেশে না গিয়েও এখানে মেলে ইউরোপের পাহাড়ি সৌন্দর্য, মালদ্বীপের মতো নীল জলরাশি, আফ্রিকার মরু, আর দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সবুজ জঙ্গল। এই বৈচিত্র্যই মধুচন্দ্রিমাকে করে তোলে আরও রোমাঞ্চকর।

ree

সিমলা-মানালি: ক্লাসিক রোম্যান্সের ঠিকানা

মধুচন্দ্রিমার জন্য বহু যুগ ধরেই সিমলা ও মানালি প্রথম সারির পছন্দ। ব্রিটিশ আমলের রাজকীয় সৌন্দর্য, বরফে মোড়া পাহাড়, আর কাঠের তৈরি ছোট ছোট কটেজ যেন প্রেমের নিভৃত আশ্রয়। ডিসেম্বর থেকে মার্চ পর্যন্ত বরফপাতের সময় মানালির সোলাং ভ্যালি বা রোহতাং পাসে দাঁড়িয়ে তুষার-খেলার আনন্দে ডুবে থাকা নবদম্পতির মুখে ফুটে ওঠে নতুন জীবনের প্রথম হাসি। রাতের বেলা উনুনের পাশে বসে গরম মোমো, মাখনচা রুটি আর স্থানীয় সিডার ওয়াইন—এই ছোট ছোট মুহূর্তই শীতের ভেতর উষ্ণতা জাগায়।


গোয়া: স্বাধীনতার ঢেউয়ে প্রেমের উল্লাস

যাঁরা খানিকটা রোমাঞ্চপ্রিয়, তাঁদের কাছে মধুচন্দ্রিমা মানেই গোয়া। সমুদ্রতটে সূর্যাস্ত দেখা, বাইক চালিয়ে নীল উপকূল ঘোরা, ঝুম বৃষ্টিতে ভেজা রাস্তার ক্যাফেতে গিটার বাজানো—গোয়ায় সবকিছুতেই রয়েছে এক অবাধ উন্মাদনা।

উত্তর গোয়ার পার্টি বিচ থেকে দক্ষিণ গোয়ার নিরিবিলি পালোলেম পর্যন্ত প্রতিটি কোণ প্রেমিক-প্রেমিকার জন্য ভিন্ন অনুভবের ঠিকানা। এখানকার পর্তুগিজ স্থাপত্য, রঙিন বাজার, সি-ফুড আর ছুটির হাওয়া নবদম্পতিদের কাছে গোয়াকে বানায় এক “forever memory”।

ree

কেরালা: প্রকৃতির কোলে শান্তির মধুচন্দ্রিমা

যাঁরা ব্যস্ততা থেকে পালিয়ে নির্জনে ভালোবাসার মুহূর্ত কাটাতে চান, তাঁদের জন্য কেরালা এক পরম স্বর্গ। আলেপ্পির ব্যাকওয়াটার, কোচির পুরনো শহর, বা মুনারের চা-বাগানের ঢালু পাহাড় সবই যেন এক সিনেমার দৃশ্য।

হাউসবোটে ভেসে বেড়ানো, নারকেল গাছের ছায়ায় দুপুরের ঘুম, আর সুগন্ধি কেরালা ফিশ কারি এই অভিজ্ঞতা মধুচন্দ্রিমাকে করে তোলে ধ্যানমগ্ন। কেরালার মানুষ ও সংস্কৃতিতেও আছে এক প্রশান্ত সৌন্দর্য, যা প্রেমকে আরও গভীর করে তোলে।


আন্দামান: নীল জলে নিভৃত প্রেমের দ্বীপ

যাঁরা প্রকৃতি ও সাগরপ্রেমী, তাঁদের জন্য আন্দামান এক স্বপ্ন। নীল আকাশ, স্বচ্ছ জল, ঝিনুকভরা সৈকত, আর জেলিফিশের আলোয় ঝলমল রাত রাধানগর বিচ বা হ্যাভলক আইল্যান্ডে মধুচন্দ্রিমা যেন এক নিঃশব্দ কবিতা।

স্কুবা ডাইভিং বা স্নরকেলিংয়ের মতো কার্যকলাপেও যোগ দিতে পারেন দম্পতিরা, একসঙ্গে জলের নিচে দেখা যেতে পারে রঙিন সামুদ্রিক জীবন। এখানকার শান্ত পরিবেশে প্রেম যেন অন্য মাত্রা পায় শব্দহীন, গভীর, ও স্থির।

ree

রাজস্থান: মরুভূমির রঙে রাজকীয় ভালোবাসা

রাজস্থান মানেই রাজকন্যার শহর, রাজবাড়ি, মরুভূমির গোধূলি আর রাজকীয় আতিথেয়তা। উদয়পুর, জয়পুর, জোধপুর প্রতিটি শহরই যেন রোম্যান্সের প্রতীক। উদয়পুরের পিচোলা হ্রদে সন্ধ্যার নৌভ্রমণ বা সিটি প্যালেসের ছাদ থেকে সূর্যাস্ত দেখা নবদম্পতির জন্য এক অনুপম মুহূর্ত। থার মরুভূমিতে ক্যাম্প ফায়ার, তারাভরা আকাশ, রাজস্থানি সংগীত আর হস্তনির্মিত রাজস্থানি থালি প্রেমের এক অন্য রূপ পেতে পারেন এখানে।


সিকিম ও দার্জিলিং: মেঘ, কুয়াশা ও চায়ের সুবাস

হিমালয়ের কোলে ছোট ছোট পাহাড়ি গ্রাম গ্যাংটক, পেলিং, ইয়ুমথাং, আর দার্জিলিং সবই যেন প্রেমের স্বর্গ। সকালের প্রথম সূর্য যখন কাঞ্চনজঙ্ঘার চূড়ায় পড়ে, তখন নবদম্পতির মুখে সেই আলো পড়ে যায় জীবনের প্রথম ভোরের মতো।

দার্জিলিং চা-বাগানের মাঝ দিয়ে হাঁটা, টয় ট্রেনের জানালা দিয়ে পাহাড় দেখা বা মিরিক লেকে বোটিং মিলিয়ে এক রূপকথার সফর।

ree

কাশ্মীর: পৃথিবীর স্বর্গে প্রেমের কবিতা

“যদি পৃথিবীতে স্বর্গ কোথাও থাকে, তবে তা এখানে, এখানেই”- এই কথাটাই যেন কাশ্মীরকে সবচেয়ে ভালোভাবে বর্ণনা করে। ডাল লেকে হাউসবোট, শিকারায় ভেসে ফুল বিক্রেতার কাছ থেকে লাল গোলাপ কেনা, গুলমার্গের বরফ, আর পাহেলগামের সবুজ সবই মিলে কাশ্মীরকে করে তোলে নবদম্পতির স্বপ্নভূমি। এখানকার আপেল বাগান, কেশর ক্ষেত, উলের শাল আর কাহওয়া চায়ে মিশে থাকে অমলিন ভালোবাসা।


মেঘালয় ও অরুণাচল: অজানার টানে নিভৃত প্রেম

যাঁরা খানিকটা অফবিট গন্তব্য খোঁজেন, তাঁদের জন্য মেঘালয় এক আদর্শ স্থান। চেরাপুঞ্জির রুট ব্রিজ, নোকরেকের অরণ্য, আর সোয়ংপিডংয়ের নীল নদী সবই একদম আলাদা অভিজ্ঞতা দেয়। অরুণাচলে তাওয়াং-এর বৌদ্ধমঠ বা বোমদিলার উপত্যকায় সূর্যাস্তের রঙ প্রেমকে নতুনভাবে চিনতে শেখায়। এইসব জায়গা এখন ধীরে ধীরে মধুচন্দ্রিমার নতুন মানচিত্রে জায়গা করে নিচ্ছে।

ree

রোম্যান্সের পাশাপাশি রন্ধনসফর

প্রতিটি গন্তব্যের স্বাদ আলাদা। রাজস্থানের ডাল-বাটি-চুরমা, গোয়ার প্রন কারি, কাশ্মীরের রোগনজোশ, কেরালার আপ্পম-স্ট্যু বা সিকিমের থুকপা সবই যেন প্রেমের ভাষার অন্য রূপ। মধুচন্দ্রিমার সময় একসঙ্গে স্থানীয় খাবার খাওয়া শুধু আনন্দ নয়, সম্পর্কেও আনে নতুন রসায়ন।


এখনকার ট্রেন্ড: মিনি-মুন ও ইকো-ট্রাভেল

আজকের নবদম্পতিরা অনেকেই বেছে নিচ্ছেন "মিনি-মুন" অর্থাৎ ছোট পরিসরের, কিন্তু অভিজ্ঞতায় ভরপুর সফর।

দার্জিলিং, কোডাইকানাল, কুর্গ, বা পুদুচেরি এখন এই তালিকায় এগিয়ে। এছাড়া পরিবেশ সচেতন তরুণ প্রজন্ম বেছে নিচ্ছে ইকো-রিসোর্ট, সাস্টেইনেবল ট্রাভেল যেখানে প্রকৃতিকে রক্ষা করেই উপভোগ করা যায় ভ্রমণ ও ভালোবাসা।

ree

পরিকল্পনা ও প্রস্তুতি

মধুচন্দ্রিমা শুধুই ভ্রমণ নয়, এটি একটি আবেগ। তাই পরিকল্পনা জরুরি!

সময় বাছাই: ঋতু অনুযায়ী গন্তব্য নির্ধারণ করা।

বাজেট ও বুকিং: অফ সিজনে গেলে খরচ কম, তবে আগে থেকে বুকিং করাই বুদ্ধিমানের।

স্থানীয় সংস্কৃতির প্রতি সম্মান: স্থানীয়দের রীতিনীতি, পোশাক, খাদ্যাভ্যাস সম্পর্কে জানা ভালো।

নিরাপত্তা ও স্বাস্থ্য: প্রাথমিক ওষুধ, প্রয়োজনীয় নথি ও নিরাপত্তা অ্যাপ সঙ্গে রাখা।


মধুচন্দ্রিমা শুধু দুটি মানুষের একসঙ্গে ঘোরাঘুরি নয়, বরং একে অপরকে নতুনভাবে চিনে নেওয়ার সময়। আর ভারত সেই পরিচয়ের জন্য এক অমলিন পটভূমি। এখানে প্রেম শুধু পাহাড়, সাগর বা মরুভূমিতে নয় থাকে প্রতিটি মন্দিরের ঘণ্টাধ্বনিতে, প্রতিটি চায়ের কাপে, প্রতিটি সূর্যাস্তের নরম আলোয়। এই দেশই শেখায়, ভালোবাসা মানে একসঙ্গে পথ চলা মাটির গন্ধে, রোদে, বৃষ্টিতে, আর সেই চিরচেনা ভারতীয় রঙে।

ree

জাঙ্ক ফুডের বদলে কী খাবেন?

ree

আজকের ব্যস্ত জীবনে “ফাস্ট ফুড” মানেই যেন সুবিধা ও স্বাদের সহজ সমাধান। কাজের ফাঁকে, পড়াশোনার চাপে বা অবসর বিনোদনে বার্গার, পিৎজা, চিপস, প্যাকেটজাত জুস, কোল্ড ড্রিঙ্ক, নুডলস, রোল, পেস্ট্রি আমাদের জীবনের অঙ্গ হয়ে উঠেছে। কিন্তু এই সাময়িক তৃপ্তির পেছনে লুকিয়ে আছে বহু স্বাস্থ্যঝুঁকি স্থূলতা, ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, লিভারের সমস্যা থেকে শুরু করে মানসিক ক্লান্তি পর্যন্ত। পুষ্টিবিদদের মতে, জাঙ্ক ফুড বা প্রক্রিয়াজাত খাবারের মূল সমস্যা হলো এর উচ্চ পরিমাণ ট্রান্স ফ্যাট, রিফাইনড কার্বোহাইড্রেট, অতিরিক্ত লবণ ও চিনি। এগুলো শরীরে ধীরে ধীরে বিষের মতো কাজ করে, বিপাকের গতি কমিয়ে দেয় এবং হৃদ্‌যন্ত্রের ওপর চাপ ফেলে। তবে সব ফাস্ট ফুডের বিকল্পই যে বিরক্তিকর বা নিরস হতে হবে, তা নয়। পুষ্টিবিদের মতে, সামান্য সচেতনতা ও কিছু স্মার্ট বদল আনলেই আমাদের খাবারের প্লেট হতে পারে একই সঙ্গে স্বাস্থ্যকর ও মুখরোচক।


১. বার্গার বা পিৎজার বদলে হোল-গ্রেইন বিকল্প

পুষ্টিবিদরা বলেন, ময়দা-ভিত্তিক পিৎজা বা বার্গার বানের বদলে হোল-হুইট বা মাল্টিগ্রেন রুটি ব্যবহার করলে ফাইবার বাড়ে, হজমের সমস্যা কমে। বিকল্প: ঘরে তৈরি আটা পিৎজা টপিংসে সবজি, টমেটো সসের বদলে বাড়িতে তৈরি পিউরি। হোল-হুইট বার্গার মটরশুঁটি বা ছোলার প্যাটিস দিয়ে।

ree

২. চিপস বা ফ্রাইয়ের বদলে রোস্টেড স্ন্যাকস

প্যাকেটজাত চিপস, ফ্রেঞ্চ ফ্রাই বা নামকিনে থাকে প্রচুর ট্রান্স ফ্যাট ও লবণ।

বিকল্প: ওভেনে বেক করা রোস্টেড ছোলা, মাখনা বা বাদাম।

সুইট পটেটো ফ্রাই — এয়ার ফ্রায়ারে অল্প তেলেই তৈরি করা যায়।

পপকর্ন (ঘরে তৈরি, নুন-হলুদ ছাড়া) — কম ক্যালোরির একটি মজাদার বিকল্প।


৩. চকোলেট, কেক, পেস্ট্রির বদলে প্রাকৃতিক মিষ্টি উৎস

চিনিযুক্ত মিষ্টি খাবার রক্তে গ্লুকোজ বাড়িয়ে দ্রুত ক্লান্তি ডেকে আনে।

বিকল্প: খেজুর, কিশমিশ, শুকনো ডুমুর, কলা বা আপেল।

ওটস ও খেজুরের লাড্ডু বা পিনাট বাটার বল — কোনো অতিরিক্ত চিনি ছাড়াই।

ডার্ক চকোলেট (৭০% কোকো বা তার বেশি) – মাপে খেলে অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের ভালো উৎস।

ree

৪. কোল্ড ড্রিঙ্ক বা এনার্জি ড্রিঙ্কের বদলে হাইড্রেটিং পানীয়

বেশিরভাগ কোল্ড ড্রিঙ্কে থাকে কৃত্রিম রং, চিনি ও ক্যাফিন।

বিকল্প: লেবু জল, ডাবের জল, চিয়া সিড মিশ্রিত জল।

বাড়িতে তৈরি বাটারমিল্ক।

গ্রীন টি বা মিন্ট-ইনফিউজড ওয়াটার।


৫. ইনস্ট্যান্ট নুডলসের বদলে ঘরে তৈরি হেলদি সংস্করণ

ইনস্ট্যান্ট নুডলসে অতিরিক্ত সোডিয়াম ও অ্যাডিটিভ থাকে।

বিকল্প: আটা বা মিলেট নুডলস — প্রচুর সবজি দিয়ে রান্না করুন।

সুজি বা রাইস নুডলস — সয়া সসের বদলে হালকা লেবুর রস ও অলিভ অয়েল।

ree

৬. প্যাকেট স্যান্ডউইচের বদলে ঘরে তৈরি ব্রেকফাস্ট স্ন্যাক

বাজারের স্যান্ডউইচে থাকে মেয়োনিজ, প্রসেসড মাংস ও চিজ।

বিকল্প: গ্রিলড ভেজি স্যান্ডউইচ — ঘরে তৈরি পিনাট বাটার বা হিউমাস স্প্রেড ব্যবহার করুন।

চিকেন ওট র‍্যাপ বা ডিম-সবজি টোস্ট — প্রোটিন ও ফাইবারে ভরপুর।


৭. ফাস্ট ফুডের বদলে দেশি খাবার

পুষ্টিবিদদের মতে, “আমাদের ঘরের খাবারই আসল সুপারফুড।”

বিকল্প: ডাল-ভাত-সবজি বা খিচুড়ি – সুষম পুষ্টির আদর্শ সংমিশ্রণ।

ইডলি, উপমা, পোহা, চিঁড়ের পোলাও – সহজে হজমযোগ্য, কম তেলে তৈরি।

মৌসুমি ফল ও দই – হালকা, পেট ভরানো এবং গাট হেলথের জন্য উপকারী।

ree

ডায়েটিশিয়ান ডা. মধুমিতা দত্তর কথায়,

“খাবার থেকে আনন্দ পাওয়াটা গুরুত্বপূর্ণ, কিন্তু সেই আনন্দ যেন ক্ষণস্থায়ী না হয়। জাঙ্ক ফুড শরীরের ভিতর ধীরে ধীরে ক্ষতি করে, তাই সচেতনভাবে তার বিকল্প বেছে নেওয়া জরুরি। প্রতিদিনের প্লেটে যত রঙ থাকবে শাকসবজি, ফল, ডাল, বাদাম ততই তা পুষ্টিকর হবে।”


জাঙ্ক ফুড পুরোপুরি বাদ দেওয়া হয়তো কঠিন, কিন্তু ধীরে ধীরে স্বাস্থ্যকর অভ্যাস তৈরি করা সম্ভব। সপ্তাহে একদিনের “চিট ডে”-তে প্রিয় খাবার খাওয়া যায়, কিন্তু বাকি দিনগুলোতে সঠিক পুষ্টি বজায় রাখাই মূল লক্ষ্য।

শরীরকে ভালোবাসতে শিখুন কারণ আপনি যা খান, সেটাই ধীরে ধীরে আপনার শরীর ও মনের রূপ নেয়।

ree

হালকা শীতের স্টাইল স্টেটমেন্ট: ফ্যাশনে উষ্ণতার ছোঁয়া

ree

শহরের আকাশে হালকা কুয়াশা, বাতাসে ঠান্ডার ইঙ্গিত, সকালের রোদে একটুকরো নরম উষ্ণতা এটাই হালকা শীতের সময়। না অতিরিক্ত পোশাকের ভার, না গরম কাপড়ের গুমোট বরং নিজের স্টাইলকে প্রকাশ করার আদর্শ মৌসুম। পুজো-পরবর্তী এই সময়ে যেমন বেড়ানো বা আড্ডার রুটিন বেড়ে যায়, তেমনই বাড়ে ফ্যাশনের সঙ্গে এক্সপেরিমেন্ট করার সুযোগও। ফ্যাশন বিশেষজ্ঞদের মতে, হালকা শীত মানে লেয়ারিং-এর খেলা, রঙের উৎসব আর কমফর্টের সঙ্গে স্টাইলের ভারসাম্য। তাই এই মৌসুমে পোশাক, অ্যাকসেসরিজ, মেকআপ সবেতেই যেন ফুটে ওঠে ব্যক্তিত্বের উজ্জ্বল প্রকাশ। হালকা শীতে ভারী কোট বা জ্যাকেটের প্রয়োজন নেই। বরং পাতলা ডেনিম জ্যাকেট, ক্রপড শ্রাগ, হালকা সোয়েটার বা লং শার্টের সংমিশ্রণেই তৈরি হতে পারে দারুণ লেয়ার্ড লুক। সাদা টি-শার্টের ওপর ডেনিম জ্যাকেট, কুর্তার সঙ্গে কটন শ্রাগ বা কাডিগান, কিংবা ফ্লোরাল টপের ওপর নিটেড ভেস্ট এসবেই আসে ট্রেন্ডি টাচ। এই স্তরবিন্যাস যেমন ফ্যাশনকে নতুন মাত্রা দেয়, তেমনই ঠান্ডা হাওয়া থেকেও শরীরকে রক্ষা করে।


শীতের শুরুতে ভারী উলের বদলে ব্যবহার করা যায় টুইড, কর্ডরয় বা ডেনিম প্যান্ট। এগুলো উষ্ণ রাখে এবং দেখতে এলিগ্যান্ট। স্কিনি জিনস বা ওয়াইড-লেগ প্যান্টের সঙ্গে বুট একেবারে পারফেক্ট কম্বিনেশন। কলেজগামী তরুণীরা প্যালাজোর সঙ্গে লং টপ বা সোয়েটার মেলাতে পারেন। ট্রেন্ডে আছে হাই-ওয়েস্ট ট্রাউজার ও ক্রপ সোয়েটার কম্বো, যা যেমন আরামদায়ক তেমনই চটকদার। এই সময়ে অ্যাকসেসরিজই আসল হাইলাইট। উজ্জ্বল রঙের স্কার্ফ বা প্রিন্টেড স্টোল ফাঁকা গলার পোশাকে এনে দেয় প্রাণ। কাশ্মীরি উলের শাল বা পশমিনা দোপাট্টা নতুনভাবে বাঁধলে তা আরও ফ্যাশনেবল হয়ে ওঠে এক কাঁধে ফেলে, কোমরে গিঁট দিয়ে বা হালকা পিনে আটকিয়ে। হালকা জ্যুয়েলারির সঙ্গে মিলিয়ে নিলে পুরো লুকটি আরও আকর্ষণীয় হয়। শীত মানেই ফ্যাশনেবল ফুটওয়্যার। ছোট হিলের অ্যাঙ্কল বুট বা সুয়েড লোফার প্রতিদিনের পোশাকেও এনে দেয় গ্ল্যামার। স্নিকার্স আবার সবসময়েরই প্রিয় ডেনিম, ড্রেস, বা ট্রাউজার যেখানেই হোক মানিয়ে যায়। পোশাকের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে ব্যাগ বেছে নেওয়াও গুরুত্বপূর্ণ। লেদার ক্রসবডি ব্যাগ বা টোট ব্যাগ এই মৌসুমে বিশেষ জনপ্রিয়। ফেল্ট হ্যাট বা বিনি ক্যাপ শুধু উষ্ণ রাখে না, সম্পূর্ণ লুকটিকেও করে তোলে স্টাইলিশ।

ree

শীতের হাওয়ায় ত্বক শুষ্ক হয়ে পড়ে, তাই মেকআপে গুরুত্ব দিতে হবে হাইড্রেশনকে। ডিউই বেস, নিড শেডের লিপস্টিক ও হালকা মাসকারা এই মৌসুমের সিগনেচার লুক। গালে সামান্য ব্লাশ ও হাইলাইটার দিলে মুখে ফুটে ওঠে নরম উজ্জ্বলতা, যা স্বাভাবিক গ্লোকে বাড়িয়ে তোলে। শুধু মহিলারা নন, পুরুষদের ফ্যাশনেও এই সময়ে আসে বৈচিত্র্য। কটন সোয়েটশার্ট, লাইট জ্যাকেট, হুডি বা ফুল হাতা শার্ট অফিস থেকে আড্ডা, সবক্ষেত্রেই মানানসই। জিনস বা চিনো ট্রাউজারের সঙ্গে সাদা স্নিকার্স সবসময়েরই ক্লাসিক কম্বিনেশন। স্টাইল কনসালট্যান্ট অনন্যা চক্রবর্তীর মতে, “হালকা শীত মানে নিজের ব্যক্তিত্বকে প্রকাশ করার সেরা সময়। রঙ, কাপড়, ডিজাইন সব নিয়ে খেলুন, কিন্তু আরাম যেন প্রথম শর্ত হয়। আপনি যদি স্বাচ্ছন্দ্যে থাকেন, সেই আত্মবিশ্বাসই আপনার আসল স্টাইল।”


শেষ পর্যন্ত, শীতের আগমনী হাওয়া যেন শুধু আবহাওয়ার পরিবর্তন নয়, মেজাজেরও বদল। এই মৌসুমে ফ্যাশন হোক মজার, হোক রঙিন, হোক নিজের মতো কারণ স্টাইল মানে শুধু পোশাক নয়, নিজেকে প্রকাশ করার এক শিল্প।

রক্তের দাগ

দীপঙ্কর ঘোষ

ree

আমি সবে তখন মাধ্যমিক পাশ করে কলেজে উঠেছি। বয়স ষোলো হবে। বন্ধু বান্ধবদের দেখাদেখি বিজ্ঞান শাখায় ভর্তি হয়েছি। কিন্তু ফিজিক্স কেমিস্ট্রি কিছুই মাথায় ঢুকছে না। তার উপর নতুন পরিবেশে নিজেকে খুব একটা খাপ খাওয়াতেও পারছিলাম না। সব মিলিয়ে মনের দিক দিয়ে ভেঙে পড়েছিলাম। আমার অবস্থা দেখে বাবা একদিন বলল, 'যা মনি ক'দিনের জন্য কোথাও ঘুরে আয়। মনটা ভাল লাগবে।'

গুরুগম্ভীর বাবা যে এমন রেয়াত দেবেন ভাবতেই পারিনি। বাবাকে আমার কখনো কখনো অন্তর্যামী মনে হয়। মনের সব গোপন কথা বাবা যেন চোখ দেখে বলে দিতে পারে।


দেখতে দেখতে পুজোর বন্ধ এসে গেল। পুজোর বন্ধ ঘোষণার দু তিনদিন আগে এক সকালে আমি বাবার ঘরে ঢুকে বললাম, 'বাবা তুমি যে সেদিন বলেছিলে...'

- কি বলেছিলাম ?

ree

-ওই ঘুরতে যাওয়ার কথা।

- তা, যা না। কোথায় যাবি ঠিক করেছিস কিছু ?

আমি এ কদিন ভেবে ভেবে ঠিক করেই রেখেছিলাম। বললাম, 'রাঙা পিসির বাড়ি।'

বাবা বলল, 'সে তো অনেক দূর। ট্রেনে যেতে হবে। পারবি একা যেতে, না মানিক'কে বলব তোকে ছেড়ে আসতে ?'

মানিক বাবার অফিসের পিয়ন। পঁচিশ ছাব্বিশ বছরের যুবক। ছোটবেলা থেকেই আমাদের বাড়ির সাথে ঘনিষ্ঠতা। তার বাবা আমাদের বাসায় বাঁশ বেতের কাজ, পুকুর পরিষ্কার, এসব করত। বাবা ওকে সাধু বলে ডাকত। একদিন অসুস্থ শরীরে ফর্সা এক কিশোরকে নিয়ে সাধু কাকা আমাদের বাড়ির বারান্দায় এসে বসে রইল। বাবা বলল, 'কি হল সাধু, শরীর খারাপ নাকি; আর সাথে এ কে ?'

সাধু কাকা বলল, 'আমার পুলা। ওরে আফনার কাছে সমঝাইতে আইছি। আমার কখন কী হয় ঠাকুর জানে।'

বাবা বলল, 'ওর বয়স কত হয়েছে ?'

সাধু কাকা হাতের তালুতে আঙ্গুল দিয়ে গুনতে শুরু করল।

ছেলেটা তার বাবার দিকে অল্পক্ষন তাকিয়ে মিনমিনে গলায় বলল, সতেরো।

বাবা বলল, কী নাম তোমার?

- মানিক।

ree

- ঠিক আছে মানিক, তুমি আপাতত আমার বাড়িতে থেকে যাও। বাজার হাট করবে আর আমার ছেলেটাকে দেখে রাখবে।

সেই থেকে মানিকদা বছর তিনেক আমাদের বাড়িতেই ছিল। তারপর বাবা সুযোগ বুঝে ওকে নিজের অফিসে ঢুকিয়ে দিয়েছিল ।

চাকরি পাওয়ার পর মানিকদা আমাদের পাড়াতেই একটা বাড়িতে ভাড়া নিল । কিন্তু দিনে দু-তিনবার আমাদের বাড়িতে সে আসবেই।

আমি বয়সে মানিকদা থেকে সাত-আট বছরের ছোট। কিন্তু আমাদের বাড়িতে তিন বছর থাকার সময় আমার ছায়া সঙ্গী হিসেবে ছিল। সে থেকেই আমার সাথে তার একটা ভীষণ বন্ধুত্ব হয়ে গিয়েছিল। মানিকদার মনটা একটা ছোট্ট শিশুর মত। সাদা বক তার খুব প্রিয়। বক দেখতে সকাল সকাল পুকুর পাড়ে গিয়ে বসে থাকত। প্লেনের শব্দ পেলেই এক দৌড়ে উঠনে। সাথে আমাকে চিৎকার দিয়ে ডাকা ।

ree

কিন্তু মানিকদা'কে সাথে নিয়ে রাঙা পিসির বাড়িতে যাওয়ার কথায় আমি না করলাম। আমার মনে হল এখন আমি বড় হয়ে গেছি। এখন থেকে একা একা একটু আধটু ঘুরে বেড়ানোর অভ্যাস করা উচিত। তাই বাবাকে বললাম, 'না বাবা থাক আমি একাই যেতে পারব।'

বাবা বলল, 'তাহলে ঠিক আছে আমি তোর রাঙা পিসিকে খবর পাঠাচ্ছি তুই যাচ্ছিস।'

- ঠিক আছে বাবা।

পরের সপ্তাহে পুজোর বন্ধ শুরু হয়ে গেল। আমিও বন্ধ শুরু হওয়ার পরের দিনই রাঙার বাড়িতে যাওয়ার জন্য ট্রেনে চেপে বসলাম। মানিকদা আমাকে ছাড়তে স্টেশনে এসেছিল। বারবার বলছিল, 'পারবি তো মনি ? একা কোথাও যাসনি এর আগে। সাবধানে যাবি। কেউ কিছু দিলে খাবি না। টাকা পয়সা ভেতরের পকেট রাখবি।'


ট্রেন ছাড়ার আগে মানিকদা কামরা থেকে নেমে আমার জানালার পাশে দাঁড়িয়ে রইল। ট্রেনের চাকা ঘুরতেই আমি হাত নাড়লাম। মানিকদাও হাত দেখাল। আমি জানালা দিয়ে দেখলাম ট্রেনটা যতক্ষণ দেখা যাচ্ছে মানিকদা ততক্ষণ প্লাটফর্মে দাঁড়িয়ে আছে।

ree

ছোট স্টেশন কাশিপুর। ট্রেনের একটা বগিই শুধু প্লাটফর্মে জায়গা হয়েছে। একটা ঘুপচি দোকানে চা বিস্কুট পান বিড়ি বিক্রি হচ্ছে। আর আছে একটা খদ্দের বিহীন ভোজনালয়। গামছা লাগিয়ে দোকানি দরজায় দাঁড়িয়ে আছে। আমাকে দেখে, 'আসুন আসুন দাদাবাবু গরম গরম ডাল ভাজা ডিমের ঝোল আছে'- বলে ডেকে উঠল।

বেলা তখন অনেক হয়েছে। সেই কোন সকালে ট্রেনে চড়েছি। ক্ষুধায় পেটে ইঁদুর ডন বৈঠক দিচ্ছে। কিন্তু এখানে এখন খাওয়ার কোন মানে হয়না। কারণ স্টেশন থেকে রেল লাইন ধরে হাঁটলে রাঙার বাড়ি পনেরো বিশ মিনিটের পথ হবে। এপথ আমার অজানা নয়। বাবার সাথে এ রাস্তা দিয়ে বহুবার রাঙা পিসির বাড়ি এসেছি।

রেললাইনের পাশের বাড়ি গুলোর বোধহয় কোনো পরিবর্তন হয় না। ছোটবেলা থেকে যেভাবে দেখে আসছি আজও সেভাবেই আছে। পরিবারগুলোও বদলায়নি। কেউ রিটায়ার করলে তার ছেলেপুলেরা চাকরিতে ঢুকে যায়। ফলে কলোনির লোকজনের খুব একটা এদিক সেদিক হয়না। এখানের লোকগুলো খুব মিশুক। আমাকে প্রায় সবাই চেনে।

রেল লাইন ধরে আমাকে হাঁটতে দেখে এ বাড়ি সে বাড়ি থেকে অনেকেই হাত দেখাল ।

রাঙাপিসি আমাকে দেখে আহ্লাদে আটখানা। ছোটবেলা থেকেই আমাকে ভীষণ স্নেহ করেন। বাবা থেকে বয়সে বেশ বড়। ষাটের কাছাকাছি হবে বয়স। পিসেমশাই রেলে চাকরি করতেন। এখন পিসতুতো ভাই করে। ফলে আগের কোয়ার্টারেই আছেন। বাপ মা আর বেটা এই তিন মিলে সংসার। ছেলের এখনো বিয়ে শাদী করাননি। পাত্রী দেখছেন হন্নে হয়ে । কিন্তু এক মায়ের এক ছেলে তাই বাচবিচার বিস্তর।

ree

পিসেমশাই বারান্দায় বসে পানের বাটা সাজাচ্ছেন। সন্ধে হলেই বাটা ভর্তি পান নিয়ে ক্লাবঘরে তাস খেলতে যাবেন। ফিরতে ফিরতে রাত হবে। এই আড্ডায় বুড়ো জোয়ান সব একাকার। দু-একজন নেশাখোর যে নেই তা নয়। পিসেমশাই অবশ্য নেশা করেন না। এক খিলি জর্দা পান হলেই চলে যায়।

আমাকে দেখেই তর্জন গর্জন শুরু করলেন, 'শরীরের এই কী হাল বানিয়েছিস ? খাওয়া-দাওয়া করিস না ? এটুকু পথ আসতে হাঁফিয়ে উঠেছিস !'

এধরনের চিল্লাচিল্লি তাঁর অভ্যাস।

আমি কিছু বলতে যাবার আগেই রাঙ্গা হাত ধরে আমাকে ভেতরে নিয়ে গেলেন।

- বস বাবা বস। কত দিন পর এসেছিস। হাতমুখ ধুয়ে নে, আমি ভাত বাড়ছি।

আমি কুয়োর দিকে যেতে যেতে জিজ্ঞেস করলাম, 'ফুলদা কোথায় ?'

ফুলদা মানে রাঙাপিসির ছেলে।

রাঙা বললেন, 'একটু আগে ভাত খেয়ে আবার স্টেশনে গেছে। তুই আসবি জেনে খুব খুশি হয়েছে।'

আমি ভাত খেয়ে একটু জিরিয়ে নিতে বিছানায় গা এলিয়ে দিলাম। কখন চোখ লেগে গেছিল বলতে পারিনা। চোখ মেলে দেখি রাত আটটা বাজে। পাশের বিছানায় ফুলদা শুয়ে আছে। একই ঘরে দুটো সিঙ্গেল খাট। একটা পড়ার টেবিল দুটো বেতের চেয়ার। একটা আলনাও আছে অবশ্য। ওটাতে সব ফুলদার কাপড়চোপড়। তবে ব্যাচেলারদের ঘর যেভাবে থাকে সেভাবে নয়। কাপড়চোপড় গুলো সব পরিপাটি করে আলনায় সাজানো।

ফুলদা গলা পর্যন্ত একটা কম্বল টেনে শুয়ে আছে। আমি আস্তে আস্তে বিছানা ছেড়ে উঠলাম। আমার ওঠার শব্দ পেয়ে ফুলদা জিজ্ঞেস করল, 'কিরে মনি সব ঠিক আছে ? রাস্তায় কোন অসুবিধে হয়নি তো ?'

- অসুবিধে হবে কেন ? আমি কি আর সেই ছোট্ট মনি ? কলেজে পড়ি, কলেজ।

ফুলদা হো হো করে হেসে উঠল।

ree

দুদিন পর হঠাৎ দুপুরবেলা পিসেমশাইর কাছে খবর এলো যে তার বড় ভাইর নাকি হার্ট অ্যাটাক হয়েছে। ম্যাসিভ অ্যাটাক ।

পিসেমশাইয়ের ভাই থাকেন মাইজগ্রাম। অজপাড়াগাঁ। সেখান থেকে সরকারি হাসপাতালে নিয়ে যাবার জোগাড় যন্ত্র করতে করতেই রোগী অক্কা পেয়েছে।

খবর শুনে পিসেমশাই রাঙাপিসিকে নিয়ে পাগলের মতো ছুটে বাসস্ট্যান্ডের দিকে গেলেন। রাঙা যেতে যেতে বলে গেলেন, 'তোরা দু ভাই মিলে ঘর দেখিস। আজ আর ফিরতে পারব বলে মনে হয় না।'

ফিরতে না পারারই কথা। এখান থেকে মাইজগ্রাম যেতে সন্ধে হয়ে যাবে। রাতে ফিরতে চাইলেও গাড়ি পাবেন না।

এদিকে আজ ফুলদারও নাইট ডিউটি। সেও চলে যাবে সন্ধ্যেয় । ফিরবে কাল সকালে। অর্থাৎ আজ রাত আমি এ বাড়িতে একা।

সন্ধের সময় আকাশটা মেঘলা করে এলো। কাল শুনেছিলাম কোনদিকে নাকি নিম্নচাপের সৃষ্টি হয়েছে। ফুলদা নাইট ডিউটিতে যাওয়ার আগে সাহস দিল, 'ভয় পাস না মনি, তাড়াতাড়ি খেয়ে টিভি দেখে শুয়ে থাকিস। কোনো অসুবিধে হলে পাশের কোয়ার্টারের ওদের ডাকিস।'

আমি অবশ্য অত ভয় পাইনা। রাতে শ্মশানের পাশ দিয়ে কতদিন স্যারের বাড়ি থেকে একা একা ঘরে গেছি। সেজো মামার বাড়িতে গিয়ে নদীর পাড় ধরে যে পথে রাতে হেঁটেছি লোক সেটাকে দোষী জায়গা বলে।

তাই ফুলদার কথায় মনে মনে একটু হাসলাম। বললাম, 'চোর ডাকাতের তো নেয়ার মতো কিছু নেই আমার কাছে। আর ভুত-প্রেত ? শুনেছি আজকাল তারা উল্টো মানুষকেই ভয় পায়।' ফুলটা আমার সাহস দেখে সাহেবদের মতো ঘাড় কাত করে হাসল।


তবে একা একা থাকাটা যে ভয়ের থেকে কষ্টের বেশি সেটা একটু পরেই বুঝলাম। বড্ডো একঘেয়ে লাগছিল। বিছানায় শুয়ে বসে কতক্ষণ আর কাটানো যায়। আকাশের অবস্থা ভাল নয়। মনে হচ্ছে ঝড় উঠবে। টিভিটা যাচ্ছে আর আসছে। এভাবে টিভি দেখতে নেই। বাজ পড়লে টিভি চলে যেতে পারে। তাই টিভি বন্ধ করে দিলাম। আমার একাকিত্বের একমাত্র সঙ্গী ছিল বেচারা। কিন্তু তার ভালোর জন্যই তার সঙ্গ ছাড়লাম। ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখি এতক্ষণে মাত্র নটা বেজেছে । লাইটটা একবার কেঁপে উঠলো। মনে হয় চলে যেতে পারে। তাড়াতাড়ি ভাত খেয়ে নেয়া ভাল। কারেন্ট চলে গেলে বিপত্তি হয়ে যাবে। ফুলদা বিকেলে আমার জন্য নিরামিষ ভাত রান্না করেছে। আজ থেকে তার অশৌচ। জ্যাঠামশাই মারা গেছেন। দাহ সংস্কার না হওয়া পর্যন্ত উপবাসই থাকতে হবে। তাই সে খায়নি।

আমি ফুলকপির তরকারি আর আলু ভাজা দিয়ে ভাত খেয়ে বাথরুম গিয়ে আসলাম। ওদের বাথরুমটা পেছনের উঠানে। বাইরে গিয়ে একটা ঠান্ডা হওয়ার ধাক্কা গায়ে লাগল। বাতাস উঠেছে। তুফান এলো বলে। তাড়াতাড়ি ঘরে এসে ভাল করে দরজাগুলো ঠিক মতো লেগেছে কিনা দেখছি। লাইট'টা আবার কেঁপে উঠল। গতিক সুবিধের নয়। তাড়াতাড়ি একটা মোমবাতি জোগাড় করে রাখতে হবে। কিন্তু এতো আর আমার নিজের বাড়ি নয় যে জানা থাকবে মোমবাতি দেশলাই কোথায় আছে!

এদিক-ওদিক দেখতে দেখতে বাতিটা দু-তিনবার জ্বলে নিবে একেবারেই নিভে গেল। এখন হাঁটতে গিয়েও ঠেস খাচ্ছি। সেসময় আজকের মতো হাতে হাতে মোবাইল ফোন ছিল না যে জ্বালিয়ে নেব। ভরে ভরে পা ফেলে আস্তে আস্তে ঠাকুর ঘরে গিয়ে ঢুকলাম। মোমবাতি পেলে এখানেই পাওয়া যাবে। হঠাৎ বিদ্যুৎ চমকে উঠল। ওই এক ঝলকের আলোতেই দেখলাম এক প্যাকেট মোমবাতি তাকের উপর রাখা আছে। একটা মোমবাতি জ্বালিয়ে মাটিতে বসালাম। নিভে গেলেও আগুন লাগার সম্ভাবনা নেই। আরেকটা পাশেই রেখে দিলাম।

ree

বিছানায় শুয়ে অল্পক্ষণের মধ্যেই ঘুমিয়ে গেলাম। হঠাৎ মনে হলো কে যেন আমার নাম ধরে খুব জোরে জোরে ডাকছে আর ক্রমাগত জানলায় থাবা দিয়ে যাচ্ছে। ঘরটা পুরো অন্ধকার। এখনো কারেন্ট আসেনি। মোমবাতিটা হয়তো অনেক আগেই নিভে গেছে। বাইরে অঝোরে বৃষ্টি পড়ছে। আমি বিছানা ছেড়ে উঠে আওয়াজটা বোঝার চেষ্টা করলাম। সত্যিই খুব পরিচিত স্বরে কে যেন, মনি ও মনি বলে ডেকে যাচ্ছে। আমি জানালার পাশে এসে প্রশ্ন করলাম, কে ?

- দরজাটা খোল।

- কিন্তু কে আপনি?

- আরে আমি মানিকদা।

- মানিকদা ?

- হ্যাঁ রে।

- এত রাতে ?

- আরে বলছি সব, আগে দরজাটা তো খোল।

- দাঁড়াও আসছি।

বলে প্রথমে মাটি থেকে আরেকটা মোমবাতি নিয়ে দেশলাই দিয়ে জ্বালিয়ে সাত পাঁচ ভাবতে ভাবতে দরজার কাছে গেলাম।

দরজার ছিটকিনিটা খুলে সামান্য ফাঁক করে আগে মুখটা দেখলাম। সত্যিই তো মানিকদা !! ভিজে চুপসে গেছে। মানিকদা আমাকে দেখে সামান্য হেসে বললো, 'ভিতরে তো ঢুকতে দে। ভীষণ ঠান্ডা লাগছে।'

আমি দরজা ছেড়ে সরে দাঁড়ালাম। হাজারো প্রশ্ন আমার মাথায় কিলবিল করছে। কোনটা আগে করব ভেবে পাচ্ছি না। আমার অবস্থা দেখে মানিকদা প্রথমে বললো, 'সেই কখন থেকে দরজায় ধাক্কাচ্ছি। কেউ সাড়া দিচ্ছে না।'

- দেবে কে? ঘরে তো আমি ছাড়া আর কেউ নেই।

- কেন ; কোথায় সব ?

- বলছি দাঁড়াও । কিন্তু তুমি আগে বলো এতো রাতে কোত্থেকে?

- কাকাবাবু আমাকে দুপুরে বললেন, যা মানিক তুই গিয়ে মনিকের ঘরে নিয়ে আয়।

- বাবা বলল ?

- হ্যাঁ রে। কাকিমা সকালে সিঁড়ি থেকে পড়ে পা ভেঙেছেন।

- সে কি?

হ্যাঁ, মাথা ঘুরেছিল। প্রেসার বেশি তো তাই।

আমার বুকটা ধক্ করে উঠলো। অনেক সময় মানুষ মৃত্যুর খবর সরাসরি না দিয়ে ছোটখাটো দুর্ঘটনার খবর প্রথমে দেয়। পরে আস্তে আস্তে সব খুলে বলে। তাই উদ্বিগ্ন হয়ে জিজ্ঞেস করলাম, 'মা এখন কেমন আছে ?'

- তুই চিন্তা করিস না। সব ঠিক আছে। সকালে গিয়ে দেখবি।

- তা তুমি দুপুরের ট্রেনে উঠে এত রাতে কেন এসে পৌঁছলে ?

- আর বলিস না, যত্তসব বিচ্ছিরি ঝামেলা। রায়পুর জংশনে এসে একটা লোক এক নম্বর প্লাটফর্ম থেকে দু নম্বর প্লাটফর্মে যেতে গিয়ে একটা চলন্ত ইঞ্জিনের নিচে ঢুকে যায়। আর তারপরই সব গন্ডগোল লেগে যায়। ওই ইন্জিনটা আমাদের ট্রেনে লাগানোর কথা ছিল। এনিয়ে ট্রেন অনেকক্ষণ স্টেশনে আটকে রাখা হয়। লোকটা বড় খারাপ ভাবে মরেছে রে।

বলতে বলতে মানিকদার গলা ধরে এলো । চোখের সামনে রেলে কাটা মানুষ দেখেছে কিনা। এখনো স্বাভাবিক হতে পারছেনা। শরীর আর মনের উপর দিয়ে তার একটা বড় ধকল গেছে। চেহারাটা দেখতে কেমন যেন ফ্যাকাশে লাগছে। চোখ দুটো গর্তে ঢুকে গেছে। আওয়াজটা ভাঙা ভাঙা আসছে। বৃষ্টিতে ভিজে প্রচুর ঠাণ্ডা লেগেছে। আমি কিছু বলার আগেই মানিকদা একটা গামছা টেনে নিয়ে মাথা পা মুছছে। মানিকদা সাথে কোনো ব্যাগ আনেনি। তাই ভেজা কাপড় বদলে পরার মতো আর কোনো ড্রেস নেই । হয়তো ভেবেছিল বিকেলে পৌঁছে সন্ধের শেষ ট্রেনে আমাকে নিয়ে ফিরে যাবে।

মানিকদার ভেজা কাপড় থেকে ফোঁটা ফোঁটা হয়ে জল পড়ছে। আমার শার্ট প্যান্ট তার গায়ে হবেনা। সে আমার থেকে লম্বা আর স্বাস্থ্যবান। তাই আমি তাকে ফুলদার পাজামা আর ঘরে পরার পাঞ্জাবি আলনা থেকে দিয়ে বললাম, 'ভেজা কাপড় ছেড়ে এগুলো পরে নাও।'

মানিকদা কাপড়চোপড় ছেড়ে বলল, 'ঠিক আছে মনি তুই এখন শুয়ে যা।'

আমি বললাম, 'না না সে কি করে হয়। তুমি কিছু খেয়ে নাও। খালি পেটে ঘুমাবে নাকি ?'

- তাও ঠিক। কিন্তু এত রাতে তুই আমাকে খাওয়াবি কী?

- ভাত তো নেই। যা ছিল সব খেয়ে ফেলেছি। দাঁড়াও তোমাকে বিস্কুট আর কেক খেতে দিচ্ছি। কষ্ট করে রাতটা কাটিয়ে নাও।

মানিকদা হেসে বলল, 'তাই দে। সেই কোন সকালে খেয়েছি। রায়পুরে ট্রেন অনেকক্ষণ ছিল। খেতে পারতাম।কিন্তু লাশটার যা অবস্থা দেখেছি তারপর আর খেতে পারিনি।'

লাশের কথা বলতে গিয়ে মানিকদার খুব কষ্ট হচ্ছিল। শেষের কথাগুলো আর বলতে পারেনি। শুধু ঠোঁটদুটো কেঁপেছে। খুবই স্বাভাবিক, এত পাশ থেকে জ্যান্ত একটা মানুষ কাটা পড়তে দেখলে তার বর্ণনা দিতে কার ভাল লাগবে?আমিও তাই আর জানার আগ্রহ দেখাইনি। বললাম, 'ওসব বাদ দাও মানিকদা। লোকটার এ ভাবেই মৃত্যু লেখা ছিল। যাও শুয়ে পড়ো।'

মানিকদা গিয়ে ফুলদার বিছানায় শুয়ে পড়ল। দুদিকে দুটো বিছানা মধ্যেখানে মাটিতে মোমবাতি জ্বলছে।


বৃষ্টিটা একটু ধরে এসেছে। প্রচন্ড ঠান্ডা লাগছে। মানিকদা দেখলাম কম্বল দিয়ে মাথা অবধি ঢেকে রেখেছে। আমারও চোখ দুটো বুজে আসছে। একবার দেওয়াল ঘড়িটার দিকে তাকিয়ে দেখলাম রাত প্রায় একটা। তারপর আর বলতে পারিনা।

দেরি করে ঘুমানোয় সকালে উঠতে একটু বেলা হয়ে গেল। তাও হয়তো ঘুম ভাঙতো না যদিনা ফুলদা দরজায় কড়া না নাড়তো। ফুলদার ডাকে ঘুম থেকে উঠে বাইরের ঘরে গিয়ে দরজা খুলে দিলাম। ফুলদা বললো, 'যা ঘুম দিচ্ছিলিরে মনি। ডাকতে ডাকতে হয়রান।'

আমি বললাম, 'দেরিতে ঘুমিয়েছিলাম তো তাই।'

ফুলদা বাইরের ঘরে বসেই জুতা আর শার্ট খুলতে খুলতে বলল, 'আরো আগেই আসতাম কিন্তু রায়পুরে একটা ট্রেন দুর্ঘটনার জন্য সবগুলো ট্রেন লেট হয়ে গেল।'

আমি বললাম, 'হ্যাঁ জানি তো।'

-তুই কী করে জানিস ?

-কেন জানব না? একজন লোক ট্রেনে কাটা পড়ে মারা গেছে। তাই ট্রেন লেট হয়েছে।

- আশ্চর্য ! তুই রাতে শুয়ে শুয়ে এসব জানলি কী করে ?

আমি বললাম, 'রাতে মানিকদা এলো। সে সামনে থেকে সব দেখেছে। তার মুখ থেকেই সব শুনলাম।'

- মানিক এসেছে ?

ree

- হ্যাঁ।

- কখন ?

অনেক রাতে বৃষ্টিতে ভিজে ভিজে খুব কষ্ট করে এসেছে। বাবা পাঠিয়েছে। আমাকে এক্ষুনি ওর সাথে বাড়ি যেতে হবে। মা পা ভেঙেছে।

- বলিস কিরে ! মানিক কোথায়?

- ওই তো, তোমার বিছানায় শুয়ে আছে। অনেক রাতে এসেছে তো তাই ঘুম ভাঙেনি।

- চল দেখি।

বলে ফুলদা ভেতরের ঘরে ঢুকলো। ঘরে ঢুকে আমরা দুজনেই অবাক। বিছানায় কেউ নেই ! ফুলদা বলল, 'কোথায় মানিক? এখানে তো কেউ নেই!

সত্যিই তো বিছানা খালি ! তাহলে এত সকালে মানিকদা গেল কোথায় ! গেলেও ঘরের দরজাটা ভেতর থেকে বন্ধ করে গেল কী করে?

ফুলদা বলল, 'রাতে স্বপ্ন টপ্ন দেখিস নি তো ? লোকটা কি ভোজবাজির মত উবে গেল ?'

সত্যিই কি আমি স্বপ্ন দেখছিলাম? যদি স্বপ্নই হবে তাহলে ট্রেনে মানুষ কাটার কথা কী করে হুবহু মিলে গেল!

তাছাড়া বিছানার দিকে তাকালে এখনও বোঝা যায় কেউ এখানে রাতে শুয়েছিল। চাদরটা কুঁচকানো। কম্বলটা এখনো ভাঁজ করা হয়নি।

ফুলদা এক দৃষ্টিতে বিছানার দিকে দেখছে। মানিকদা যে সত্যিই রাতে এসেছিল তা বোঝাতে আমি এদিক সেদিক থেকে প্রমাণ খোঁজার চেষ্টা করছি।

হঠাৎ আমার চোখ গেলো ফুলদার পাজামা আর পাঞ্জাবির দিকে। যেগুলো মানিকদা'কে পরতে দিয়েছিলাম। সেগুলো এখনো চেয়ারে ফেলে রাখা আছে। আমি ফুলদাকে বললাম, 'ওই দেখো তোমার পাঞ্জাবি আর পাজামা মানিকদা রাতে পরে শুয়েছিল। ওগুলো তুমি আলনায় ভাঁজ করে রেখে গিয়েছিলে। এখন দেখো কেমন বাসি কাপর হয়ে পড়ে আছে।'

ফুলদা এগিয়ে গিয়ে পাঞ্জাবিটা হাতে নিয়ে দেখল। ওর চোখ ঠিকরে বেরিয়ে আসতে চাইছে।

হঠাৎ দরজায় কড়া নাড়ার শব্দ পেলাম। আমি আর ফুলটা একজন আরেকজনের মুখের দিকে দেখছি। অজানা আশঙ্কায় দুজনেই উদ্বিগ্ন। ফুলদা সাহস করে এগিয়ে গেল। আমি একবার ভাবলাম হয়তো মানিকদা হবে। ভোরে বেরিয়ে গিয়েছিল। এখন ফিরে এসেছে। ফুলদা টলতে টলতে দরজার কাছে গিয়ে আরেকবার বিছানার দিকে ঘুরে দেখল। দরজায় আরেকবার টোকা পড়ল। ফুলদা দরজা খুলে দিল। দরজায় বাবা দাঁড়িয়ে !

সকাল সকাল বাবা কেন ? তাহলে কি মা' র শরীর খুবই খারাপ? এ অবস্থায় মা'কে ঘরে রেখে বাবা নিজে এলো কেন ? বাবাকে কেমন যেন বিধ্বস্ত লাগছে। চোখ দুটো গর্তে। মাথার চুলগুলো কে যেন দু হাতে ঘেটে দিয়েছে। আমি ভয়ে ভয়ে জিজ্ঞেস করলাম, 'বাবা কী হয়েছে ? মা ঠিক আছে তো ? মা'র নাকি পা ভেঙেছে?'

বাবা বসতে গিয়েও দাঁড়িয়ে গেল। আমার দিকে এগিয়ে এসে বলল, 'তুই জানলি কী করে যে তোর মা'র পা ভেঙেছে ?'

- কেন, মানিকদা বলল।

- মানিক ? তা'কে কোথায় পেলি ?

- কাল রাতে এসেছিল; এখন কোথায় বেরিয়ে গেছে।

- তোর মাথা ঠিক আছে তো মনি ?

- কেন বাবা ?

- মানিক আর নেই রে !

আমি আর ফুলদা কেঁপে উঠলাম।

ree

- তোর মা'র কাল পা ভাঙ্গার পর আমি মানিককে দুপুরের ট্রেনে তোকে নিতে পাঠিয়েছিলাম। রায়পুর স্টেশনে ট্রেন থেকে নেমেছিল। হঠাৎ ট্রেন ছাড়ার ঘন্টি শুনে ওভার ব্রিজ দিয়ে পার হতে সময় লাগবে ভেবে একটা লাইন ক্রস করে পরেরটায় যেতে চেয়েছিল। তাড়াহুড়োয় সে খেয়ালই করেনি যে এই লাইনে একটা ইঞ্জিন আসছে। লাইন থেকে প্লাটফর্মে উঠতে যাওয়ার সময় সে ইঞ্জিনের নিচে ঢুকে যায়। মুহূর্তে সব শেষ হয়ে গেল রে।

আমি থর থর করে কাঁপছি। ফুলদা আমার হাত ধরল। আমার মুখ দিয়ে কথা বেরোচ্ছে না। ফুলদাই বাবাকে কাল রাতের কথা সব বলল। আমরা তিনজন বিছানার কাছে এলাম। বিছানার চাদরটা তখনো কুঁচকানো । কম্বলটা পা দিয়ে সরিয়ে একটু আগে কে যেন নেমে চলে গেছে। এই শীতের সকালেও বাবা ঘামছে। বাবা ডান হাতে বিছানাটা হাতিয়ে দেখছে। বিছানা থেকে মানিকদার গায়ে দেওয়া পাঞ্জাবি'টা হাতে নিয়ে দেখতে দেখতে বাবার শুধু বলল, 'শেষ যাত্রায় যাবার আগে মানিক তোর টানে এখানে এসেছিল রে মনি এই দেখ পাঞ্জাবিতে এখনো রক্তের দাগ লেগে আছে।'


Comments


ssss.jpg
sssss.png

QUICK LINKS

ABOUT US

WHY US

INSIGHTS

OUR TEAM

ARCHIVES

BRANDS

CONTACT

© Copyright 2025 to Debi Pranam. All Rights Reserved. Developed by SIMPACT Digital

Follow us on

Rojkar Ananya New Logo.png
fb png.png

 Key stats for the last 30 days

bottom of page