শীতের বিয়ের সাজ, স্ক্যাল্পের শুষ্কতা কমান, সম্পর্কে বিচ্ছেদ এবং দ্বিতীয় বিয়ে, রবিবারের গল্প: ভূত বৃত্তান্ত
- রোজকার অনন্যা

- Nov 15
- 13 min read
শীতের বিয়ের সাজ

শীতকাল মানে খাওয়া দাওয়া আর বেড়াতে যাওয়া, আর খাওয়া দাওয়া মানেই বিয়ে বাড়ি, তবে বিয়েবাড়ির মানে শুধু খাওয়া দাওয়া নয়, সঙ্গে অবশ্যই সাজগোজ। এইবারে শীতে বিয়ে বাড়ির সাজে কি কি ধরনের স্টাইল করা যেতে পারে সেই নিয়ে কিছু আইডিয়া..
শীতকাল মানে খাওয়া দাওয়া আর বেড়াতে যাওয়া, আর খাওয়া দাওয়া মানেই বিয়ে বাড়ি, তবে বিয়েবাড়ির মানে শুধু খাওয়া দাওয়া নয়, সঙ্গে অবশ্যই সাজগোজ। এইবারে শীতে বিয়ে বাড়ির সাজে কি কি ধরনের স্টাইল করা যেতে পারে সেই নিয়ে কিছু আইডিয়া..

এলিজা
এবার বিয়ের বর কনের বা বিয়ে বাড়ির নিমন্ত্রিতদের সাজ পোশাকে বড় জায়গা নেবে সাসটেইনেবল ফ্যাশন। এছাড়া থাকবে প্রচুর পরিমাণ প্যাস্টেল শেডের পোশাক, মেটালিক কালার হাইলাইট, বেরি কালার,প্রমিনেন্ট কালার, হাইটকনট্রাস্ট, একই কালারের বিভিন্ন শেড, লাইট ওয়েট ফেব্রিক, আন ইজুয়াল কাট, মিউটেড কালার্স, বোল্ড পার্টি লুক ইত্যাদি।
লক্ষ্য করলে দেখা যাবে আজকাল সবাই নিজের বিয়েতে এমন কিছু একটা করতে পছন্দ করেন যেটা কিনা সকলের থেকে আলাদা। ফলত যেমন সাসটেইনেবল ফ্যাশন এবার বিয়ের অন্যতম অংশ ঠিক তেমনি আমরা ওভার ড্রামাটিক পোশাক দেখতে পাবো এবার বিয়ের সিজনে, কিছু বিয়েতে যেমন নির্দিষ্ট থিম থাকবে পোশাকের জন্য, অন্য ক্ষেত্রে বিয়েতে কোন থিম না থাকলেও সাজ লার্জার দ্যান লাইফ হবে। তবে মজার কথা এই যে আজকাল শুধু মেয়েদের পোশাকেই যে অনেক ভ্যারাইটি থাকে তা নয়, ছেলেদের পোশাকেও রয়েছে প্রচুর ভ্যারাইটি। বিশেষত শীতকালের বিয়ে বাড়িতে ছেলেদের পরার জন্য যেমন রয়েছে স্যুট,শেরওয়ানি,ধুতি পাঞ্জাবি, শাল বা চাদর, ঠিক তেমনি জায়গা করে নিয়েছে প্রিন্সেস কোট, টাক্সেডো ,বন্ধ গলা, জহর জ্যাকেট, আংরাখা, বেনিয়ান জাতীয় পোশাক। তবে এইবার পুরুষদের পোশাকে কিছু মর্ডান কাট এর ট্রেডিশনাল পোষাক ও চোখে পড়বে।
বিয়ে বাড়ির সে শহরের মধ্যেই হোক কিংবা শহরের বাইরে, আজকাল সবকিছুতেই সাসটেইনেবিলিটি একটা বড় রোল প্লে করে। সেক্ষেত্রে এই ধরনের পোশাক যেটা কিনা মিক্স অ্যান্ড ম্যাচ করে পরা যায় তেমন পোশাক নজর কাড়বে।
সাসটেইনেবল থিম - আজকাল সব জায়গাতেই সাসটেইনেবলিটি র বহুল প্রয়োগ আমরা দেখতে পাচ্ছি, নিজেদের লাইফ স্টাইলের সমস্ত ক্ষেত্রে, ঘর সাজানো হোক, পোশাক আশাক হোক কিংবা ব্যবহারিক জিনিসপত্রের ক্ষেত্রে সকল সচেতন মানুষের সাসটেইনেবল লাইফ স্টাইলের দিকে ঝুঁকছেন। বিয়ের অনুষ্ঠান ও তাই সাসটেইনেবিলিটি এড়িয়ে করা সম্ভবই নয় তা সে বিয়ে বাড়ি সাজানোই হোক কিংবা বিয়ে বাড়ির পোশাক, কনে হয়তো নিজের মায়ের বা ঠাকুরমার বিয়ের পোশাকে সাজবেন নিজের বিয়েতে, বর ও পরে নিতে পারবেন নিজের বাবা কিংবা ঠাকুরদা অথবা ফ্যামিলির এর কারোর ধুতি। তবে শুধু বর কনেই নয়, বিয়ে বাড়ির নিমন্ত্রিতরাও পুরনো শাড়ি ধুতি বা অন্যান্য পোষাক মিক্স ম্যাচ করে বা রি ডিজাইন করে পরতে পারেন। এসব কিছু ছাড়াও নতুন পোশাকও এমনভাবে বানানো হবে যা রিইউজ, রি পারপাসিং বা মিক্স ম্যাচ করে পরবর্তীকালে পরা সম্ভব হয়। আজকাল অনেকেই ডেস্টিনেশন ম্যারেজ করে থাকে, সে ক্ষেত্রে এরকম সুযোগ এর সদ্ব্যবহার করতে পারেন। সস্টেইনেবেল ফ্যাশনের মূল মন্ত্র যেহেতু একই জিনিস একাধিকবার ব্যবহার করা কিংবা পুরনো জিনিসকে রিপারপাসিং করা, সে ক্ষেত্রে মিক্স ম্যাচ করে দু একটা জিনিস বিয়ের অনুষ্ঠানগুলির মধ্যে একাধিকবার ব্যবহার করা যেতে পারে, তাতে লাগেজও কম বইতে হবে।
ইথিরিয়াল থিম - পোশাক হবে স্বপ্নের মত যা কিনা এই পৃথিবীতে থেকে কল্পনাও করা যায় না বলা যেতে পারে স্বর্গীয় কিংবা কল্পনাতীত সুন্দর । এরকম কোন বিয়ে বাড়ির জন্য লাল , কমলা , উজ্জ্বল গোলাপী পোশাক ব্যবহার করা যেতেই পারে, মহিলারা শাড়ির সাথে ওড়না এবং চাদর/শাল একসঙ্গে স্টাইল করতে পারেন, পুরুষরা ধুতি, কুর্তা, ওড়না, চাদরে সৃষ্টি করতে পারেন এক স্বর্গীয় সাজ পোষাক।

হুইমজিকাল থিম - এবারের বিয়ের মরশুমে হুইমজিকাল থিমের পোশাকেও দেখা যেতে পারে বর কনে কিংবা নিমন্ত্রিতদের। বিশেষত ডেসটিনেশান ওয়েডিং এর ক্ষেত্রে এই ধরনের পোশাক বেশি করে চোখে পড়বে। কারণ অল্প এলিমেন্টেই অনেকখানি এক্সট্রাভ্যাগেন্ট লুক তৈরি করতে পারে। হুইমজিকাল থিম এ নির্দিষ্টভাবে ফরমাল বা ট্রেডিশনাল ডিজাইনের দরকার পড়ে না। এর মধ্যে যেমন হাই -লো হেমলাইন থাকবে, তেমনই থাকবে এক্সট্রা ভ্যাগেন্ট স্লিভ এর ব্যবহার। এছাড়াও আমরা দেখতে পাবো বিভিন্ন আনইউজুয়াল কাটস, এক্সেসরিজ এবং এমব্যালিশমেন্ট এর ব্যবহার।
মডার্ন মিক্সড উইথ ট্র্যাডিশনাল থিম -
প্রাক্তন ট্রেডিশনাল চিন্তাভাবনার সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে চলবে মডার্ন চিন্তাভাবনা সে বিয়ে বাড়ির সাজ পোশাকই হোক কিংবা বিয়ের জায়গা সাজানোর থিম অথবা খাওয়ার দাওয়া কিংবা পোশাক, এক্ষেত্রে পুরুষরা শার্ট আর কুর্তার মাঝামাঝি এক ধরনের কুর্তা ব্যবহার করতে পারেন। সঙ্গে থাকবে সিগারেট প্যান্ট আর পাজামার মাঝামাঝি এক ধরনের ট্রাউজার। মহিলাদের ক্ষেত্রে এথনিক গাউন উইথ হাই স্লিট চোখে পড়বে। ঠিক একইভাবে ইন্দো ওয়েস্টার্ন এর প্রচুর ব্যবহার করা যেতে পারে।
শাড়ির সাথে কেপ বা জ্যাকেট একসাথে স্টাইল করা যেতে পারে
লেহেঙ্গার সাথে পরা যেতে পারে ক্রপ টপ অথবা শার্ট, প্যান্ট শাড়ি কিম্বা শাড়ি গাউন ও ট্র্যাডিশনাল এর সাথে মডার্ন টুইস্ট দেবে, এই ধরনের পোশাক ট্রাভেলিং এর জন্য ও ভালো।
এছাড়াও এবার বিয়ের মরশুমে ট্রেন্ড করবে, মিস ম্যাচ ব্রাইডস মেড দের পোশাক, বার্বি থিম এর মহিলাদের পোশাক, পার্সোনালাইজড এমবালিশমেন্ট এন্ড এক্সেসারি, ভেল এর ব্যবহার, আইভরি, বা সাদা পোশাক, উজ্জ্বল রঙের পোশাক, অ্যাটাচড ওড়না, মিনিমালিস্ট পোশাক, ছোট ব্লাউজ, মারমেইড লেহেঙ্গা, কনট্রাস্ট কালার কম্বিনেশন, ফ্লোরাল ট্যাক্সেডো, ফ্লোরাল শেরওয়ানি, ফ্লোরাল লেহেঙ্গা, শাড়ি, ওড়না, পুরুষদের পোশাকেও জরী / চুমকির কাজ, লেয়ারিং ইত্যাদি।

শীতকালের বিয়েবাড়ি, তাও যদি হয় ডেস্টিনেশন ওয়েডিং তাহলে তো আর কথাই নেই, সাজগোজ, খাওয়া-দাওয়ার সাথে জুড়ে যাবে বেড়ানো, আর টুকটাক কিছু ছোটোখাটো জিনিস সঙ্গে রাখলেই আলাদা করে বেড়াতে যাওয়ার লাগেজ নিতে হবে না, তাই এমন সুযোগ এলে মিনিমালিস্ট অথবা ফাজ ফ্রি পোশাক বেছে নেওয়া ভালো। তবে এক্ষেত্রে জুতোর দিকে অবশ্যই নজর দিতে হবে জুতো যেনো কমফোর্টেবল হয়, এক্সেসারী কম কিন্তু স্টেটমেন্ট পিস নেওয়া ভালো, সানগ্লাস আর সানস্ক্রিন অবশ্যই সাথে রাখতে হবে। তাহলেই সম্পূর্ণ ট্রিপ টা এনজয় করা যাবে।
লাগেজ নিতে হবে না, তাই এমন সুযোগ এলে মিনিমালিস্ট অথবা ফাজ ফ্রি পোশাক বেছে নেওয়া ভালো। তবে এক্ষেত্রে জুতোর দিকে অবশ্যই নজর দিতে হবে জুতো যেনো কমফোর্টেবল হয়, এক্সেসারী কম কিন্তু স্টেটমেন্ট পিস নেওয়া ভালো, সানগ্লাস আর সানস্ক্রিন অবশ্যই সাথে রাখতে হবে। তাহলেই সম্পূর্ণ ট্রিপ টা এনজয় করা যাবে।
স্ক্যাল্পের শুষ্কতা কমান
চুলের সৌন্দর্যের মূলভিত্তি হল সুস্থ স্ক্যাল্প। আমাদের দেশে যদিও চুলের যত্ন নিয়ে নানা টিপস ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে, কিন্তু স্ক্যাল্পের শুষ্কতার সমস্যা নিয়ে সচেতনতা তুলনামূলক কম। শীতের সময়, অতিরিক্ত দূষণ, হার্ড ওয়াটার, অনিয়ন্ত্রিত কেমিক্যালযুক্ত প্রোডাক্ট ব্যবহার, স্ট্রেস এই সব মিলেই স্ক্যাল্পে টান টান ভাব, চুলকানি, খসখসে খুশকি, লালচে ভাব বা জ্বালা তৈরি হয়। শুষ্ক স্ক্যাল্প শুধু অস্বস্তিই বাড়ায় না, চুলের গোড়া দুর্বল করে ফেলে, হেয়ার ফল, ফ্রিজিনেস, ভাঙন এবং স্প্লিট এন্ডস বাড়িয়ে তোলে। তাই স্ক্যাল্পের শুষ্কতার সমাধান শুধু সৌন্দর্যের নয়, একটি স্বাস্থ্যগত প্রয়োজন। এই প্রতিবেদনে আমরা জানব স্ক্যাল্প কেন শুষ্ক হয়, কীভাবে সহজে ঘরোয়া উপায়ে ও জীবনযাপনে পরিবর্তন এনে এ সমস্যাকে নিয়ন্ত্রণ করা যায়, এবং কখন বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া জরুরি।

স্ক্যাল্প শুষ্ক হওয়ার প্রধান কারণ:
১. প্রাকৃতিক তেলের অভাব
স্ক্যাল্পে সেবাম গ্রন্থি থাকে যা প্রাকৃতিক তেল তৈরি করে। যখন এই তেল তৈরির প্রক্রিয়া কমে যায়, তখন স্ক্যাল্প আর্দ্রতা হারায়। বয়স, জেনেটিক্স, হরমোনাল ইমব্যালেন্স এই তেল তৈরির প্রক্রিয়াকে প্রভাবিত করতে পারে।
২. শীতকালীন শুষ্ক আবহাওয়া
শীতকালে বাতাসের আদ্রর্তা কমে যায়। ফলে স্ক্যাল্প থেকে জলীয় অংশ দ্রুত বের হয়ে গিয়ে শুষ্কতা বাড়ে। অনেকের ক্ষেত্রে শীতে খুশকি ও রুক্ষতা একসঙ্গে বেড়ে যায়।
৩. অতিরিক্ত শ্যাম্পু বা হট-ওয়াটার বাথ
বারবার শ্যাম্পু করলে স্ক্যাল্পের প্রাকৃতিক তেল ধুয়ে যায়। আবার খুব গরম জল দিয়ে মাথা ধুলেও স্ক্যাল্পের আর্দ্রতা নষ্ট হয়।
৪. কেমিক্যাল–যুক্ত প্রোডাক্ট ব্যবহার
হার্শ সালফেট, অ্যালকোহল, পারফিউমযুক্ত শ্যাম্পু কন্ডিশনার স্ক্যাল্পে জ্বালা এবং ডিহাইড্রেশন বাড়ায়।
৫. ডায়েট ও ডিহাইড্রেশন
জল কম খাওয়া, ওমেগা–৩ ফ্যাটি অ্যাসিডের অভাব, প্রোটিন-ঘাটতি স্ক্যাল্পের শুষ্কতা বাড়ায়।
৬. অ্যালার্জি বা স্কিন কন্ডিশন
অ্যালার্জিক কন্টাক্ট ডার্মাটাইটিস, সোরিয়াসিস, সেবোরিক ডার্মাটাইটিসের মতো সমস্যা থেকেও চুলকানি ও শুষ্কতা তৈরি হতে পারে।
স্ক্যাল্প শুষ্কতার লক্ষণ:
টান টান অনুভূতি
চুলকানি
খসখসে ত্বক উঠে আসা
চুল রুক্ষ হয়ে যাওয়া
চুল পড়ে যাওয়া বৃদ্ধি
লালচে ভাব বা জ্বালা
এই লক্ষণগুলো নিয়মিত দেখা দিলে অবহেলা করলে স্ক্যাল্পের ইনফ্লামেশন পর্যন্ত হতে পারে।

স্ক্যাল্পের শুষ্কতা কমানোর ঘরোয়া উপায়:
১. উষ্ণ নারকেল তেলের মাসাজ
নারকেল তেলে প্রাকৃতিক ফ্যাটি অ্যাসিড থাকে যা স্ক্যাল্পকে গভীরভাবে হাইড্রেট করে।
কীভাবে করবেন:
হালকা গরম করা তেল স্ক্যাল্পে ৫-৭ মিনিট ম্যাসাজ করুন। রাতে রেখে সকালে মাইল্ড শ্যাম্পুতে ধুয়ে ফেলুন। সপ্তাহে ২-৩ বার করলে ভালো ফল পাবেন।
২. অ্যালো ভেরা জেল
অ্যালো ভেরা একটি প্রাকৃতিক হাইড্রেটর।
ব্যবহার:
ফ্রেশ অ্যালো জেল স্ক্যাল্পে লাগিয়ে ৩০ মিনিট রেখে ধুয়ে ফেলুন।
৩. অলিভ অয়েল ও মধুর হেয়ার মাস্ক
মধুর হিউমেকট্যান্ট প্রকৃতি স্ক্যাল্পে জল ধরে রাখে।
মাস্ক রেসিপি:
২ চামচ অলিভ অয়েল + ১ চামচ মধু মিশিয়ে স্ক্যাল্পে লাগান। ২০ মিনিট পর ধুয়ে ফেলুন।
৪. দই ও মেথি পেস্ট
দইয়ের ল্যাকটিক অ্যাসিড স্ক্যাল্পকে নরম করে।
ব্যবহার:
ভিজিয়ে রাখা মেথি বাটা ও দই মিশিয়ে স্ক্যাল্পে লাগান। এটি খুশকির সমস্যাও কমায়।
৫. তিল তেল ও লেবুর রস
শুষ্কতা ও খুশকি দুটোই কমাতে সাহায্য করে। তবে লেবু সংবেদনশীল স্ক্যাল্পে কম ব্যবহার করবেন।

সঠিক শ্যাম্পু ও হেয়ারকেয়ার রুটিন:
১. সালফেট–ফ্রি শ্যাম্পু নির্বাচন করুন
সালফেট স্ক্যাল্প থেকে প্রাকৃতিক তেল দ্রুত সরিয়ে দেয়। Dry scalp-এর জন্য sulfate-free, paraben-free, alcohol-free শ্যাম্পু উপযোগী।
২. সপ্তাহে ২ বার চুল ধোয়া
বারবার শ্যাম্পুতে স্ক্যাল্প শুকিয়ে যায়, আবার একেবারে না ধুলেও ময়লা জমে সমস্যা বাড়ে। তাই ব্যালান্স দরকার।
৩. হালকা গরম জল ব্যবহার
অতিরিক্ত গরম জল এড়িয়ে হালকা গরম বা ঠান্ডা জল ব্যবহার করুন।
৪. কন্ডিশনার কেবল চুলের নিচের অংশে
স্ক্যাল্পে কন্ডিশনার দিলে তা ত্বকের পোর ব্লক করতে পারে। তাই লেন্থে ব্যবহার করুন।
৫. সপ্তাহে একবার ডিপ–অয়েলিং
নারকেল, বাদাম, অ্যাভোকাডো বা জোজোবা তেল স্ক্যাল্প স্বাস্থ্য রক্ষায় সাহায্য করে।
ডায়েট ও লাইফস্টাইল পরিবর্তন:
১. জল বেশি পান করুন
শরীর হাইড্রেটেড থাকলে স্ক্যাল্পও স্বাভাবিক আর্দ্রতা ধরে রাখতে পারে।
২. ওমেগা–৩ ফ্যাটি অ্যাসিড
ফ্ল্যাক্সসিড, আখরোট, সামন মাছ স্ক্যাল্পের শুষ্কতা কমাতে কার্যকর।
৩. ভিটামিন A, E, D যুক্ত খাবার
এগুলো স্ক্যাল্পে রক্তসঞ্চালন বাড়ায় এবং স্বাস্থ্যকর ত্বক গঠনে সহায়ক।

৪. স্ট্রেস কমান
স্ট্রেস হরমোনের ভারসাম্য নষ্ট করে, যার ফলে স্ক্যাল্পের তেল নিঃসরণ কমে যায়। মেডিটেশন, যোগাভ্যাস দারুণ উপকারী।
যে ভুলগুলো করলে স্ক্যাল্প আরও শুষ্ক হয়:
খুব ঘন ঘন শ্যাম্পু করা
নিয়মিত স্ট্রেটনার/হেয়ার ড্রায়ার ব্যবহার
অ্যালকোহলযুক্ত স্টাইলিং প্রোডাক্ট
অত্যধিক স্ক্রাবিং
স্ক্যাল্পে সুগন্ধি স্প্রে ব্যবহার
কখন বিশেষজ্ঞের কাছে যাবেন?
চলুন জেনে নিই কোন কোন ক্ষেত্রে ডার্মাটোলজিস্টের সাহায্য নেওয়া জরুরি।
•চুলকানি, লালচে ভাব বা জ্বালা দীর্ঘদিন ধরে থাকলে
•স্ক্যাল্পে ঘন খুশকি বা খোসা জমে গেলে
•ব্যথা বা ক্ষত দেখা দিলে
•চুল পড়া হঠাৎ অনেক বেড়ে গেলে
এ ধরনের ক্ষেত্রে মেডিক্যাল গ্রেড শ্যাম্পু বা বিশেষ চিকিৎসার দরকার হতে পারে।
স্ক্যাল্পের শুষ্কতা আজকাল খুব সাধারণ একটি সমস্যা হলেও সচেতন যত্নে এটি খুব সহজেই নিয়ন্ত্রণ করা যায়। ব্যালান্সড শ্যাম্পু রুটিন, পুষ্টিকর ডায়েট, পর্যাপ্ত জলপান, সঠিক তেল ব্যবহার এবং ঘরোয়া মাসাজ-এই কয়েকটি অভ্যাসই স্ক্যাল্পকে ফিরিয়ে দিতে পারে প্রাকৃতিক আর্দ্রতা। আর স্ক্যাল্প সুস্থ থাকলেই চুল হবে মজবুত, নরম এবং উজ্জ্বল। তাই চুলের যত্ন মানেই শুধু শ্যাম্পু-কন্ডিশনার নয় স্ক্যাল্পের স্বাস্থ্য রক্ষা আরও বেশি গুরুত্বপূর্ণ।

সম্পর্কে বিচ্ছেদ এবং দ্বিতীয় বিয়ে
মানুষের জীবন প্রবাহ কখনও সরলরেখায় চলে না। সম্পর্কের ক্ষেত্রে তো নয়ই। প্রতিটি সম্পর্ক তার নিজস্ব ছন্দে, অভ্যাসে, টানাপোড়েনে উন্নতি করে, আবার কখনও থেমে যায়। সমাজে বিয়ে মানে শুধু একটি রিচুয়াল নয় এটি দুইজন মানুষের ভরসা, প্রতিশ্রুতি, স্বপ্ন ও পরস্পরের প্রতি দায়বদ্ধতার যাত্রা। কিন্তু সব সম্পর্ক একই পথে এগোয় না। কখনও কখনও বিবাহিত জীবন ভেঙে যায় মানসিক অশান্তি, অমিল, অসম্মান, নির্যাতন, অবিশ্বাস বা অসুখী সহবাসের কারণে। বিচ্ছেদ যা একসময় সমাজে “বেআব্রু” বলে ধরা হত আজ অনেক বেশি স্বাভাবিক হয়ে উঠেছে। মানুষের মানসিক স্বাস্থ্য, নিরাপত্তা, মর্যাদা ও সুখকে অগ্রাধিকার দেওয়ার যে চর্চা আজ গড়ে উঠছে, বিচ্ছেদ তারই স্বাভাবিক অঙ্গ। আর এই বিচ্ছেদের পরে দ্বিতীয় বিয়ে এটাও আজ আর নতুন নয়। বরং, এটি এক নতুন শুরুর সাহস, আত্মসম্মান ও আত্মবিশ্বাসের নিদর্শন। এই প্রতিবেদনে আমরা জানব বিচ্ছেদের বাস্তবতা, মানসিক প্রভাব, সমাজের দৃষ্টিভঙ্গি, দ্বিতীয় বিয়ের প্রতি সামাজিক অবস্থান এবং ব্যক্তির আত্মপরিচয়ের নির্মাণে দ্বিতীয় বিয়ের ভূমিকা।
বিচ্ছেদ: সম্পর্কের শেষ না কি নতুন পথের শুরু?
একটি সম্পর্ক ভাঙার সিদ্ধান্ত কখনও হঠাৎ আসে না। সাধারণত দীর্ঘদিনের মানসিক ক্লান্তি, অবহেলা, অমিল, অপমান, বা নিপীড়নের অভিজ্ঞতার পর মানুষ বিচ্ছেদের সিধান্ত নিতে বাধ্য হয়।
বিচ্ছেদের প্রধান কারণগুলো:
1. মানসিক অমিল: একে অপরের ভাবনা, চাহিদা, লক্ষ্য বা মূল্যবোধ মেলেনা।
2. যোগাযোগের অভাব: কথাবার্তা কমে যাওয়া, ভুল বোঝাবুঝি জমে ওঠা।
3. অর্থনৈতিক চাপ: অনেক দম্পতির সম্পর্কে অর্থনৈতিক অস্থিরতা বড় ভূমিকা রাখে।
4. বিশ্বাসঘাতকতা: সম্পর্ক ভাঙার অন্যতম প্রধান কারণ।
5. নির্যাতন বা অসহ্য বিবাহিত জীবন: শারীরিক, মানসিক বা আর্থিক নির্যাতন।
6. পারিবারিক হস্তক্ষেপ: বিশেষ করে যৌথ পরিবারে দাম্পত্যে অশান্তি বাড়ে।
যখন একটি সম্পর্ক শেষ হয়, তখন শুধু দুই জন নয়, দুই পরিবার, সন্তান, বন্ধুবান্ধব অনেকেই আবেগীয় ভাবে প্রভাবিত হয়। তাই বিচ্ছেদ কোনও ব্যর্থতা নয়; বরং এমন একটি পরিস্থিতির বাস্তব স্বীকারোক্তি, যেখানে একসঙ্গে থাকা ক্ষতিকর হয়ে উঠেছে।

বিচ্ছেদের মানসিক প্রভাব
বিচ্ছেদ মানসিকভাবে অত্যন্ত কঠিন একটি ধাপ। অনেকেই এটিকে “মৃত্যুর মতো শোক” বলে তুলনা করেন। কারণ মানুষের জীবনের বহু আশা, পরিচয় ও সামাজিক অবস্থান একসঙ্গে বদলে যায়।
১. শোক ও আঘাতের অনুভূতি
একটি দীর্ঘ সম্পর্ক ভেঙে গেলে মনে হয়, জীবনের একটি বড় অংশ যেন শেষ হয়ে গেল।
২. অপরাধবোধ
অনেকেই মনে করেন “আমি কি আরও চেষ্টা করতে পারতাম?”, “আমি কি দোষী?”
৩. আত্মবিশ্বাসের অভাব
অনেক সময় মনে হয় “আমি কি ভালো সঙ্গী হতে পারি?”, “আমার মধ্যে কি কোনও ত্রুটি ছিল?”
৪. সমাজের চাপ
বিশেষ করে নারীদের ক্ষেত্রে বিচ্ছেদের পর সামাজিক বিচার আরও কঠোর হতে পারে।
৫. তবু আশার আলো
সময় গেলে মানুষ নতুনভাবে নিজেকে আবিষ্কার করে, নিজের মূল্যবোধ ও চাহিদা বুঝতে শেখে।
সমাজের দৃষ্টিতে বিচ্ছেদ: আমরা কোথায় দাঁড়িয়ে?
একসময় বিচ্ছেদ মানেই সামাজিক কটাক্ষ, ‘ঠিক মতো সংসার করতে জানেনা’ এই ধারণাগুলো বিশেষ করে নারীদের জন্য ছিল অত্যন্ত অপমানজনক। তবে পরিবর্তন হয়েছে
আজ অনেকেই মানছেন একটি অসুখী বিয়ের চেয়ে বিচ্ছেদ ভালো।
শহুরে সমাজে বিচ্ছেদ স্বাভাবিকীকরণ বাড়ছে।
কর্মজীবী নারী, শিক্ষিত পরিবার এবং যুব প্রজন্ম সম্পর্কের মানসিক স্বাস্থ্যকে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে।
সামাজিক মাধ্যমে আগের তুলনায় সহমর্মিতা বাড়ছে।
তবুও ভারতের মতো সমাজে এখনও বিচ্ছেদ মানে অনেকের চোখে “সমস্যা”, বিশেষ করে মেয়েদের ক্ষেত্রে। আর এই জায়গা থেকেই দ্বিতীয় বিয়ে নিয়ে আরও বেশি জটিলতা তৈরি হয়।

দ্বিতীয় বিয়ে: কেন এটি জরুরি ও সম্পূর্ণ স্বাভাবিক?
মানুষ সামাজিক প্রাণী। একাকিত্ব, অভিমান, আশাহত হওয়া এসব অনুভূতির মধ্যে থেকেও সে আবার নতুন শুরু করতে চায়। দ্বিতীয় বিয়ে তাই কোনও ‘সমঝোতা’ নয় বরং একটি সচেতন সিদ্ধান্ত।
১. সম্পর্কের দ্বিতীয় সুযোগ
একটি সম্পর্ক ভেঙেছে বলে সব সম্পর্ক ভেঙে যাবে এমন নয়। দ্বিতীয় বিয়েতে মানুষ আগের ভুল থেকে শেখে, আরও প্রাপ্তবয়স্ক ও বাস্তববাদী হয়।

২. মানসিক স্থিতি
জীবনের নতুন সঙ্গী মানসিক শান্তি, নিরাপত্তা ও সাপোর্ট সিস্টেম তৈরি করতে সাহায্য করে।
৩. সন্তানের জন্য স্থিতিশীল পরিবেশ
যদি সন্তান থাকে, তবে একজন সুস্থ সঙ্গী পরিবারকে আরও নিরাপদ, শক্তিশালী পরিবেশ দেয়।
৪. নিজের প্রতি ভালোবাসা
দ্বিতীয় বিয়ে আসলে আত্মমর্যাদার পুনর্গঠন “আমি সুখ পাওয়ার যোগ্য” এই বিশ্বাসের পুনরুদ্ধার।
সমাজের চোখে দ্বিতীয় বিয়ে: বাধা ও পরিবর্তন
দ্বিতীয় বিয়েকে সমাজ এখনো পুরোপুরি স্বাভাবিকভাবে নিতে শিখেনি।
নারীর দ্বিতীয় বিয়ে নিয়ে বাড়তি কটাক্ষ
“তোমার তো বাচ্চা আছে, এখনই বিয়ে করছো?”
“সামলাতে পারোনি, তাই বিচ্ছেদ!”
“এবার ঠিক থাকবে তো?”
এই ধরনের মন্তব্য আজও নারীদের আরও সংবেদনশীল করে তোলে।
পুরুষদের ক্ষেত্রে সামাজিক সমর্থন তুলনামূলক বেশি
পুরুষরা দ্বিতীয় বিয়ে করলে সাধারণত সমাজ বেশি সহজভাবে নেয়। নারীদের ক্ষেত্রে বিচার কঠোর হয়।
তবুও পরিবর্তন আসছে
সোশ্যাল মিডিয়ায় সমর্থন বাড়ছে।
নতুন প্রজন্ম সম্পর্কের স্বাধীনতাকে মূল্য দিচ্ছে।
অনেক পরিবার এখন দ্বিতীয় বিয়েকে উৎসাহ দেয়।
দ্বিতীয় বিয়েতে কীভাবে এগোবেন?

একটি সম্পর্ক ভেঙে যাওয়ার পর নতুন সম্পর্ক শুরু করা সহজ নয়। সতর্কতা জরুরি।
১. অতীতকে সম্পূর্ণভাবে প্রসেস করা
আগের সম্পর্কের আঘাত নিয়ে নতুন সম্পর্কে ঢোকা উচিত নয়। নিজের অনুভূতিগুলো পরিষ্কারভাবে বোঝা দরকার।
২. সঙ্গীর প্রতি খোলামেলা হওয়া
দ্বিতীয় বিয়েতে বিশ্বাস স্থাপনের জন্য স্বচ্ছতা খুব গুরুত্বপূর্ণ।
৩. সীমারেখা নির্ধারণ
নিজের ব্যক্তিগত সময়, স্পেস, মানসিক চাহিদা সবকিছু পরস্পরকে জানানো দরকার।
৪. সন্তানের সাথে সৎ যোগাযোগ
সন্তান থাকলে তার অনুভূতিও গুরুত্বপূর্ণ। তাকে সময় দিয়ে, বোঝানোর পরেই নতুন সম্পর্কে এগোনো উচিত।
৫. পারস্পরিক সম্মান
দ্বিতীয় বিয়েতে দুই পক্ষই অনেক বেশি পরিণত থাকে।
আহংকার, অপ্রয়োজনীয় তুলনা এসব কম থাকলে সম্পর্ক দীর্ঘস্থায়ী হয়!

আইনি দিক:
বিচ্ছেদ ও দ্বিতীয় বিয়ের ক্ষেত্রে কিছু প্রাথমিক আইন জানা জরুরি।
বিবাহবিচ্ছেদের ডিক্রি পাওয়া না পর্যন্ত দ্বিতীয় বিয়ে আইনত বৈধ নয়।
সন্তানের কাস্টডি, মেইনটেনেন্স, প্রপার্টি মালিকানা এসব আগেই নির্ধারিত থাকা উচিত।
দ্বিতীয় বিয়ের রেজিস্ট্রেশন, প্রয়োজনীয় কাগজপত্র, আইনগত পরিচয় সব পরিষ্কার থাকা জরুরি।
বিচ্ছেদ কোনও ব্যর্থতা নয় এটি এক সাহসী পদক্ষেপ। দ্বিতীয় বিয়ে কোনও অপরাধ নয় এটি মানুষের জীবনে সুখের নতুন সম্ভাবনা। জীবনের যাত্রাপথে কোনও সম্পর্ক ভেঙে গেলে তার মানে এই নয় যে জীবন ভেঙে গেল। বরং সেটিই নতুন করে নিজেকে খুঁজে পাওয়ার, নিজের প্রতি দায়িত্ব নেওয়ার এবং আবার একবার সুখী হওয়ার সুযোগ তৈরি করে। আজকের সমাজে বিচ্ছেদ ও দ্বিতীয় বিয়েকে আরও মানবিক চোখে দেখার প্রয়োজন কারণ প্রত্যেক মানুষই ভালবাসা, সম্মান এবং নিরাপদ সম্পর্ক পাওয়ার যোগ্য। সম্পর্ক শেষ হলেও জীবন থেমে থাকে না। বরং কখনও কখনও একটি সম্পর্ক ভাঙাই মানুষের জীবনে নতুন সুখের দরজা খুলে দেয়।

ভূতবৃত্তান্ত
তপন বন্দ্যোপাধ্যায়
মাদারিপুর গাঁয়ে প্রায়ই কাকে না কাকে ভূতে ধরত, এমন ধরত যে কিছুতেই নামতে চাইত না৷ খবরটা হু হু করে রটে যেত দূর থেকে দূরান্তরে৷ ততক্ষণে কপালে মস্ত লাল ফোঁটা–কাটা, ঝাঁকড়া–চুলো, ভাটার মতো জ্বলতে থাকা ওঝা এসে পৌঁছত সেই ভূত তাড়াতে৷ আর সেই বাড়ির সামনে তখন অজস্র দর্শনার্থীর ভিড়৷
যাকে ভূতে ধরেছে, সে তো থাকে ঘরের ভিতর, ওঝাও তার ঘাড় থেকে ভূত তাড়াবে বলে সেই ঘরে অন্তরীণ হয়, সুতরাং বাইরে থেকে ওঝার তাড়পানি, অজস্র গালিগালাজ, সেই সঙ্গে বেত বা ঝাঁটা দিয়ে পিটুনির শব্দ—সবই সেই অদৃশ্য ভূতের উদ্দেশে, তা ছাড়া আর কিছু দৃশ্যমান হয় না৷
বাড়ির বাইরে দাঁড়িয়ে ভয়ে হিম হয়ে সেই আতঙ্ক অনুভব করে ফিরে আসতে হয় বাড়িতে৷
কিন্তু সেদিন তার ব্যত্যয় ঘটল৷ ফিরছিলাম স্কুল থেকে, হঠাৎ দেখি এক জেলেবাড়ির সামনে খুব ভিড়৷ তো আমিও ভিড় দেখে দু-দণ্ড দাঁড়িয়ে বোঝার চেষ্টা করি কী কারণে ভিড়। গ্রামেগঞ্জে জীবন চলে রয়েবসে, হঠাৎ কোনও উত্তেজনার কারণ ঘটলে সবাই ছুটে আসে—কী ঘটেছে সেই ঘটনা নিয়ে দু–দশদিন আলোচনা–রটনা চলবে, যতদিন না নতুন কোনও ঘটনার আবির্ভাব ঘটে৷

সেদিন শুনলাম, জেলেবউকে ভূতে পেয়েছে, ধরেছে তার কতদিন আগে মরে যাওয়া শ্বশুর৷ কাল সন্ধেবেলা পেয়েছে, আজ বিকেল হতে চলল, এখনও বহাল তবিয়তে তার ঘাড়ে৷ কোথায় তক্কে তক্কে ছিল ওঝা, খবর পাওয়ামাত্র আজ দুপুরের দিকে সে-ও এসে উপস্থিত৷ কিন্তু তাদের ঘরটা তো বেজায় ছোটো, সেখানে ভূতে-পাওয়া বউকে নিয়ে সেঁধিয়ে যাওয়ার পরিসর নেই, অতএব বউটি মুখ থুবড়ে পড়ে আছে বাড়ির সামনে উঠোনে, তার সামনে একটা বলশালী ঝাঁটা নিয়ে দাঁড়িয়ে সেই ওঝা৷
এই ওঝাকে আগে কোনও দিন দেখিনি—একটু রোগাপানা, কিন্তু চোখদুটো ঠিকরে বেরোচ্ছে চোখের কোটরের বাইরে৷ সেই মুখ থুবড়ে পড়ে থাকা বউটির উদ্দেশে সে থেকে থেকে চিৎকার করে বলছে, “মারের এখনও হয়েছে কি? মেরে তোর পিঠ ভেঙে দেব! বল, তুই যাবি কি না?”
––“না, যাব না, আমার ওপর অনেক অত্যাচার হয়েছে বাবা।”
বলে একটুও রেহাই দেয় না ছেলেটা—মদ খেয়ে এসে বাবা-মাকে অকথা–কুকথা বলবে, বউটাকে মারবে, এ তো আর সহ্য করা যায় না। “আজ আমার একদিন, আর ভোলার একদিন, কিছুতেই এ-বাড়ি ছেড়ে যাব না।”
ভোলা হল এই বউটির স্বামী, তাকিয়ে দেখি ভিড়ের মধ্যে লুকিয়ে দেখছে তার বাবার কাণ্ডকারখানা৷ মুখটা চুপসে গেছে ভয়ে৷ তার বাবা মারা গেছে তাও ক-বছর হয়ে গেল, হঠাৎ এতদিন কোথায় তক্কে তক্কে বসে ছিল, আজ হঠাৎ তার বউয়ের ঘাড়ে—
ভূত বিষয়ে আমাদের এক মাস্টারমশাই প্রায়ই বলেন, “ভূত বলে কিচ্ছু নেই৷ ও হল এক ধরনের হিস্টেরিয়া৷” কিন্তু হিস্টেরিয়ার রোগী কি এরকম তেড়িয়া হয়ে কথা বলে?
লক্ষ করে দেখি, ইতিমধ্যে প্রচণ্ড মার খেয়েছে বউটি৷ মারের চোটে তার পিঠ রক্তারক্তি, মার খেয়ে গোঙাচ্ছে সেই অবস্থায়, আচ্ছন্নতার মধ্যে কীরকম তড়পে চলেছে সেই ওঝার উদ্দেশে৷ যদিও সেই কথাগুলোর একটুও আমাদের কাছে স্পষ্ট হচ্ছিল না, কিন্তু ওঝা নিশ্চয় বুঝতে পারছিল, তার গোঙানির উত্তরে আরও ক্রুদ্ধ হয়ে চেঁচাতে লাগল, “যাবি না! তোর এত সাহস! জানিস তোর সামনে কে দাঁড়িয়ে আছে? তোর যম!”
বলেই একটা ছড়া কাটতে শুরু করে, দ্রুতবেগে আদড়ে যাওয়া সেই ছড়ার দু–চারটে শব্দ যা আমাদের কানে আসছিল, তা এরকমঃ

শ্যাওড়া গাছে থাকিস যদি সপাং
চাঁপার ডালে থাকিস যদি সপাং
সাতখানা গাঁ পার হয়ে এই কিস্টো ওঝা
হাজির যখন হয়েছে আজ
মেরেই তোরে করবে পাটলাস।
বলেই সপাং সপাং করে সেই ঝাঁটা দিয়ে মারতে শুরু করল তার পিঠে৷ সেই মার দেখে আমারই শরীর খারাপ লাগতে শুরু করে, আর আমার পাশে আরও কতক মেয়ে–বউ দাঁড়িয়ে দেখছিল সেই দৃশ্য, তারা চোখমুখ কুঁচকে বলছিল, “আহা বেচারি! আননাটা মুখচোরা মেয়ে, আর ওর শ্বশুর কিনা ধরল ওকেই! কী মারটাই না খাচ্ছে!”
ক্রমে ভিড় বাড়তে শুরু করে, চারদিক থেকে নানা মন্তব্যও, তার মধ্যে ঝাঁটাপেটা চলছে নির্মমভাবে৷
কিছুক্ষণ পর জেলে–বউ নেতিয়ে পড়ল মাটিতে, হাঁপাতে হাঁপাতে বলল, “যাব, যাব, চলে যাব।”

এতক্ষণে ওঝা–লোকটির মুখে বিজয়ীর হাসি৷ হাতের ঝাঁটাটি শূন্যে ঘোরাতে ঘোরাতে বলল, “যাবি না মানে! কিস্টো ওঝা যখন কেসটা নিয়েছে, তখন তার হাতেই তোর মৃত্যু।”
জেলে–বউ তখনও গোঙানো কণ্ঠস্বরে বলে চলেছে, “কিন্তু এও বলে যাচ্ছি, ভোলা যদি তান্ডাইমান্ডাই করে, তা হলে কিন্তু আবার আসবো।”
বলেই সেই নেতিয়ে পড়া বউটার কাছে গিয়ে ঝুঁকে পড়ে বলল, “বল, কীভাবে যাবি? ওই শিরীষগাছটার ডাল ভেঙে যাবি? না জলভর্তি কলসি মুখে নিয়ে যাবি?”
ওঝার কথায় উপস্থিত দর্শকদের মধ্যে বেশ সাড়া পড়ে যায়৷ আমি নিজেও খুব উত্তেজিত বোধ করি, কেন না এর আগে বহুবার শুনেছি গাঁয়ে ভূতে–পাওয়া লোকদের ঘাড় থেকে যখন ভূতেরা চলে যায়, যাওয়ার সময়টা নাকি রীতিমতো রোমহর্ষক৷ এমন নাকি হয় যে, ভূতরা যখন চলে যায়, অশথগাছের মস্ত ডাল ভেঙে পড়ে মড়মড় করে৷
বিষয়টা নিয়ে ঘোর সন্দেহ ছিল আমার৷ ভূত ব্যাপারটা খুবই রহস্যময়৷ হিস্টেরিয়া হলে কি মানুষ এরকম উল্টোপাল্টা বকে?

জেলে–বউ এবার বলল, “কলসি! কলসি!”
ওঝা তৎক্ষণাৎ ভিড়ের উদ্দেশে চেঁচিয়ে বলল, “আই কে আছো! এক কলসি জল নে এসো!”
তার কথা শেষ না হতে পাশের বাড়ির একজন বউ কাঁখে করে নিয়ে এল একটা মাটির কলসি ভর্তি জল নিয়ে৷ সেই কলসি তার সামনে রেখে ওঝা বলল, “কাঁখে করে নে যাবি না! দাঁতে করে তুলে নে যাবি! এক পা, দু পা, তিন পা—ব্যস, তারপর যেন তোকে আর এদিগরে না দেখি!”
পরক্ষণেই যে দৃশ্য চোখের সামনে ঘটল, তা প্রায় অবিশ্বাস্য৷ নেতিয়ে পড়া জেলে–বউ উঠোনে বসে, তারপর সেই জলভর্তি কলসির কানা চেপে ধরল তার দু–পাটি দাঁতের মধ্যে৷ ভারী কলসিটা সত্যিই তুলে ধরল দাঁত দিয়ে, অবশ্য সোজা হয়ে দাঁড়াতে পারল না, একটু নুয়ে এগিয়ে গেল এক–দুই–তিন পা, তারপর কলসিসুদ্ধ দড়াম করে উল্টে পড়ল মাটিতে৷ কলসি ভেঙে চুরমার, সারা উঠোন জলে জলময়৷
মাটিতে পড়েই জেলে–বউ একেবারে অজ্ঞান, তার দুই হাতে মুঠি লেগে গেল শক্ত করে, দু–চোখ বোজা, দাঁতে দাঁত লেগে শরীর স্থির৷

সমস্ত উঠোনে তখন লোকে লোকারণ্য৷ কয়েকজন বউ তাকে ঘিরে ধরে তার মুখে দিতে শুরু করল জলের ঝাপটা৷ একের পর এক ঝাপটা দিতে কিছুক্ষণ করে বড়ো করে একটা শ্বাস ফেলল সেই জেলে–বউ৷ অমনি সমস্বরে সবাই বলল, “ও রে! জ্ঞান ফিরেছে! জ্ঞান ফিরেছে!”
তারও কিছুক্ষণ পর সে অতিকষ্টে উঠোনে বসল মাটিতে৷ বাকি বউরা তক্ষুনি ভিজে গোবর হয়ে যাওয়া তার শরীরটা ধরে ধরে নিয়ে গেল ঘরের ভিতর৷
ওঝা তখন তার তর্জনী শূন্যে ঘোরাতে ঘোরাতে বলল, “আই যাও সব! কাছেপিঠে থাকবে না! এখনও তেনার আত্মা কিন্তু কাছেপিঠে আছে!”
বলতেই অমনি ভিড় পাতলা হতে শুরু করে৷

আমরাও দ্রুত ঘরমুখো৷ যেতে যেতে মনে হচ্ছিল, কলসি–ভরা জল দাঁতে তুলে নিয়ে যাওয়া বেশ কষ্টকর, কিন্তু সে তবু সম্ভব৷ কিন্তু ভূতটা যদি বলত, শিরীষগাছের ডাল ভেঙে যাবে—সত্যিই কি পারত? ভূতটা বেশ চালাক আছে বলেই সহজ উপায়টা মেনে নিয়েছে৷








Comments