top of page

বালিয়াড়ি আর ইতিহাসে মোড়া রাজস্থান, সবুজে ঢাকা অন্দরসজ্জা, প্রিয় পোষ্যের শীতকালীন যত্ন, কিচেন ক্যানভাসে সেরা ১০, রবিবারের গল্প : পরান মাঝির পানসী

বালিয়াড়ি আর ইতিহাসে মোড়া রাজস্থান...

ree

ভারতের উত্তর-পশ্চিম সীমান্তে অবস্থিত রাজস্থান শুধু ভৌগোলিক আয়তনে নয় সংস্কৃতি, ইতিহাস, স্থাপত্য, লোকজ জীবন ও বীরত্বগাথায়ও দেশের অন্যতম সমৃদ্ধ অঞ্চল। ‘বর্ণময় ভূমি’ নামে খ্যাত এই রাজ্যকে অনেকেই ভারতের হৃদয় বলেন, আবার কেউ কেউ মনে করেন, রাজস্থান হলো মরুর মধ্যে লুকিয়ে থাকা এক চিরায়ত সভ্যতার টাইম ক্যাপসুল। এখানে প্রতিটি শহর, প্রতিটি প্রাসাদ, প্রতিটি দুর্গ এবং প্রতিটি মন্দিরে রাজপুত রাজাদের রাজনৈতিক ইতিহাস, যুদ্ধজয়, রোমান্স, শিল্পসৌন্দর্য এবং ধর্মবিশ্বাসের গভীর ছাপ রয়ে গেছে। রাজস্থানের দীর্ঘ মরুভূমি, হাতির কদমে কাঁপা রাজপুত প্রাসাদ, গোলাপী শহর জয়পুরের জাঁকজমক, জোধপুরের নীলঘেরা আকাশিয়া শহর, উদয়পুরের হ্রদ-নগরীর নরম কোমল সৌন্দর্য এই সব মিলিয়ে রাজস্থান যেন একটি বই, যার প্রতিটি পাতাতেই রয়েছে আলাদা গল্প। চলুন জেনে নিই রাজস্থানের ইতিহাস, ভ্রমণযোগ্য স্থান, পরিবেশ-সংস্কৃতি, স্থানীয় খাবার, নিরাপত্তা ও ভ্রমণপরিকল্পনা সম্পর্কে। এই প্রতিবেদনে সবকিছু সমন্বিতভাবে তুলে ধরা হলো, যাতে পর্যটকরা সহজেই নিজেদের যাত্রাপথ নির্ধারণ করতে পারেন।


রাজস্থানের ইতিহাস মূলত রাজপুতদের বীরত্বগাঁথার উপর প্রতিষ্ঠিত। অজেয় দুর্গ, বিশাল যুদ্ধক্ষেত্র, বিদেশি আক্রমণ প্রতিরোধ, বিজয়োল্লাস ও আত্মত্যাগ সবকিছুই এই ভূমির পরিচয়ে মিশে আছে। চিত্তোরগড় থেকে কুম্ভলগড়, জোধপুর থেকে জয়সলমের, জয়পুর থেকে উদয়পুর প্রতিটি শহরই রাজপুত বংশের রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক উত্থান-পতনের সাক্ষী। মুঘল আমলেও রাজস্থান ছিল কৌশলগত রাজনীতি ও জোটের বিশেষ কেন্দ্র। রাজপুত, মুঘল ও পরে মারাঠা শাসন এই বহুমুখী রাজনৈতিক বিন্যাস রাজস্থানের স্থাপত্যশিল্পকে গভীরভাবে প্রভাবিত করেছে।


সামাজিক জীবনে রাজস্থানীরা শান্ত, অতিথিপরায়ণ, বিশ্বাসী এবং সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য নিয়ে গর্বিত। তাঁদের পোশাক থেকে লোকসংগীত সবকিছুর মধ্যেই পাওয়া যায় মরুপ্রান্তরের নিজস্ব স্বর। তাই রাজস্থান ভ্রমণে প্রতিটি পর্যটক শুধু দর্শনীয় স্থাপনা নয়, এখানকার জীবন্ত সংস্কৃতি, জীবনধারা এবং মানুষের উষ্ণ ব্যবহারের অভিজ্ঞতাও সঙ্গে নিয়ে ফিরেন।


থর মরুভূমি রাজস্থানের পশ্চিমাংশ জুড়ে বিস্তৃত। জয়সলমের, বারমের এবং বিকানেরের মতো জেলাগুলোতে বালুকাবেলা, উটযাত্রা, মরুভূমির রাতের আঁধারে লোকগান এসব পর্যটকদের কাছে এক অনন্য অভিজ্ঞতা হিসেবে বিবেচিত। অন্যদিকে উদয়পুর, মাউন্ট আবু, কোটায় হ্রদ-সংলগ্ন সৌন্দর্য এবং পাহাড়ি গাছগাছালির আলাদা পরিবেশ। রাজস্থানের আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক। গ্রীষ্মে তাপমাত্রা বেড়ে যায়, তবে শীতকালে আবহাওয়া অত্যন্ত মনোরম, যা ভ্রমণের আদর্শ সময়। রাজস্থানের রাজধানী জয়পুর ইতিহাস, ঐতিহ্য, স্থাপত্য এবং বাণিজ্যের উজ্জ্বল কেন্দ্র। ব্রিটিশ আমলে শহরটি গোলাপী রঙে রঞ্জিত হওয়ায় ‘পিংক সিটি’ নামে পরিচিত হয়। আজও সেই ঐতিহ্য ধরে রাখা হয়েছে।


ree

আম্বের দূর্গ :

জয়পুর থেকে ১১ কিলোমিটার দূরে পাহাড়চূড়ায় অবস্থিত অম্বর বা আম্বের দূর্গ রাজপুত ও মুঘল স্থাপত্যের মনোমুগ্ধকর মিলনস্থল। লালপাথর ও সাদা মার্বেলের সমন্বয়ে নির্মিত এই প্রাসাদে রয়েছে বিরাট প্রাঙ্গণ, শীশ-মহলের চকচকে কারুকার্য, রাজবাড়ির পুরনো অঙ্গন, এবং ছবি তুলতে আদর্শ বহু স্থান।


সিটি প্যালেস :

অষ্টাদশ শতাব্দীতে নির্মিত সিটি প্যালেস জয়পুরের আভিজাত্য ও শিল্পকুশলতার অন্যতম নিদর্শন। প্রতিটি কক্ষে মার্বেল কারুকাজ, রাজকীয় শোভা, জালি কাজ, জাফরি নকশা যেন শতাব্দীর পুরনো গল্প বলে। প্রাসাদে জালেব চক ও ত্রিপোলিয়া গেট দুই প্রধান প্রবেশদ্বার।


হাওয়া মহল :

১৭৯৯ সালে মহারাজা সওয়াই প্রতাপ সিংহ নির্মিত হাওয়া মহল পাঁচতলা উচ্চ, বায়ু চলাচলের সুবিধার্থে বেন্ধব জালি-সজ্জিত। এই স্থাপনাটি মূলত রাজবংশের রানীরা বাইরের পৃথিবী দেখার জন্য ব্যবহার করতেন। গোলাপী ও লাল বেলেপাথরে নির্মিত এই রাজকীয় মুখচ্ছবি আজও জয়পুর ভ্রমণের সবচেয়ে পরিচিত প্রতীক।


যন্তর মন্তর :

মহারাজা সওয়াই জয় সিংহ নির্মিত পাঁচটি মানমন্দিরের মধ্যে জয়পুরের যন্তর মন্তর বৃহত্তম এবং সবচেয়ে সুসংরক্ষিত। এখানে রয়েছে পাথর ও মার্বেল দ্বারা নির্মিত বিভিন্ন জ্যোতির্বৈজ্ঞানিক যন্ত্র। সূর্যের ছায়া, সময় নির্ণয়, গ্রহ-নক্ষত্র পর্যবেক্ষণ সবকিছু এখানে এক বৈজ্ঞানিক শৈলীতে উপস্থাপিত।


অ্যালবার্ট হল মিউজিয়াম :

লন্ডনের আলবার্ট মিউজিয়ামের আদলে নির্মিত রাজস্থানের প্রাচীনতম যাদুঘর। ইন্দো-সারাসেনিক স্থাপত্যশৈলীর অনন্য উদাহরণ এই স্থাপনাটি রাজস্থানের ঐতিহাসিক প্রত্নসম্পদের গুরুত্বপূর্ণ ভাণ্ডার।


জোধপুর :

জোধপুরকে বলা হয় ‘ব্লু সিটি’। পুরোনো শহরের ঘরবাড়িতে নীল রঙের প্রলেপ জোধপুরকে অন্য সব শহর থেকে আলাদা করে। আকাশের নীলের সঙ্গে শহরের নীলের মিলনে সৃষ্টি হয়েছে অতুলনীয় চিত্র।

মেহরানগড় দূর্গ জোধপুরের আকাশরেখায় যেন শাসকের মতো দাঁড়িয়ে আছে। পাহাড়চূড়ায় অবস্থিত এই বিশাল দুর্গের প্রাচীরের উচ্চতা দেখে প্রথমবার যে কেউ বিস্মিত হবেন। দুর্গের ভেতরে রয়েছে রাজপ্রাসাদের কক্ষ, পুরনো রাজকীয় আসবাব, যুদ্ধাস্ত্র, বাদ্যযন্ত্র, লোকজ শিল্পকলা সব মিলিয়ে ইতিহাসের জীবন্ত জাদুঘর।


ree

জয়সলমের :

থর মরুভূমির কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত জয়সলমের তার সোনালি বেলেপাথরের জন্য ‘গোল্ডেন সিটি’ নামে পরিচিত। জয়সলমের দূর্গ যেন রূপকথার কাহিনির মতো আজও অসংখ্য পরিবার এই দুর্গের ভেতরে বাস করে, যা এটিকে ভারতে ‘জীবন্ত দুর্গ’ হিসেবে আলাদা স্থান দিয়েছে।বছরের শীতকালে এখানে অনুষ্ঠিত মরু উৎসব বিদেশি পর্যটকদেরও আকৃষ্ট করে। বালিয়াড়িতে সূর্যোদয়, উটের পিঠে মরুর ভ্রমণ, লোকগানের সুর, আগুনের আলোয় রাতের খাবার সব মিলিয়ে জয়সলমের এক স্বপ্নলোকের মতো অভিজ্ঞতা। পাটোয়া-কি-হাভেলি জয়সলমেরের অসামান্য স্থাপত্যকীর্তির অন্যতম। সূক্ষ্ম জালি কাজ ও শিল্পকর্ম এই হাভেলিকে রাজস্থানের সেরা জালি স্থাপনার শ্রেণিতে স্থান দিয়েছে।


উদয়পুর :

উদয়পুরকে বলা হয় ‘লেক সিটি’। চারদিকে পাহাড়ঘেরা হ্রদ, রাজপ্রাসাদ, নরম রঙের ঘরবাড়ি সব মিলিয়ে উদয়পুর রাজস্থানের সবচেয়ে রোমান্টিক শহর। পিছলা হ্রদের ধারে দাঁড়িয়ে থাকা সিটি প্যালেসের সৌন্দর্য সূর্যাস্তের আলোয় আরও উজ্জ্বল হয়ে ওঠে। হ্রদের মাঝখানে ভাসমান লেক প্যালেস বিশ্বের অন্যতম পরিচিত বিলাসবহুল হোটেল। কিছুটা উত্তরে মাউন্ট আবু রাজস্থানের একমাত্র পাহাড়ি স্টেশন। গ্রীষ্মে এখানে অগণিত পর্যটকের ভিড় থাকে। নাক্কি লেক, গুরু শিখর পয়েন্ট, দিলওয়ারা জৈন মন্দির সবকিছু মিলিয়ে মাউন্ট আবু ভ্রমণকারীদের বিশেষ পছন্দ।


চিত্তোরগড় :

রাজস্থানের সবচেয়ে ভীতিপ্রদ অথচ ঐতিহাসিক দুর্গ হলো চিত্তোরগড় দুর্গ। মেভার রাজপুতানার রাজধানী হিসেবে এটি বহু যুদ্ধের সাক্ষী। মহারানি পদ্মিনীর কাহিনি, আলাউদ্দিন খিলজির আক্রমণ, জোহরের উত্তপ্ত গল্প চিত্তোরগড় যেন রাজপুত বীরত্বের কেন্দ্রবিন্দু। দূর্গের ভেতরে রয়েছে বিজয় স্তম্ভ, রানা কুম্ভ প্রাসাদ, পদ্মিনী প্রাসাদ, পুরোনো মন্দির এবং বিস্তৃত পরিখা।


কুম্ভলগড় :

রানা কুম্ভ নির্মিত এই দুর্গের প্রাচীর এতটাই দীর্ঘ যে অনেকেই একে ভারতের গ্রেট ওয়াল বলেন। পাহাড়ঘেরা প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এবং দুর্গের অভ্যন্তরের মন্দিরসমূহ কুম্ভলগড়কে রাজস্থানের অনন্য আকর্ষণে পরিণত করেছে।


সারিস্কা ও রণথম্ভোর :

রাজস্থান শুধু প্রাসাদ-দুর্গ নয়; এখানে রয়েছে ভারতের দুটি উল্লেখযোগ্য জাতীয় উদ্যানও। রণথম্ভোর বাঘ সংরক্ষণে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র। বাঘছবির জন্য সারা বিশ্বের ফটোগ্রাফাররা এখানে আসেন। সারিস্কা জাতীয় উদ্যান-এ রয়েছে হরিণ, চিতাবাঘ, লঙ্গুর, অভিজাত পাখির প্রজাতি ও ঘন বনানী।প্রকৃতির যে দৃশ্যে সংগ্রাম, সহাবস্থান এবং সৌন্দর্যের সমন্বয় পাওয়া যায় এই উদ্যানগুলো তার শ্রেষ্ঠ উদাহরণ।


রাজস্থানের খাবারে দেখা যায় দুই ধরনের স্বাদ একদিকে শুকনো আবহাওয়ার কারণে তৈরি টেকসই, নিরামিষ পদ; অন্যদিকে রাজপুত রাজাদের শিকারের প্রভাব।

দাল-বাটি-চুরমা, গট্টে-কি-সবজি, কের-সাংগ্রি, খিচা, মির্চি বড়া, লাল মাস, সাফেদ মাস রাজস্থানের খাবার তার আবহাওয়ার মতোই তেজি ও স্বকীয়।


ree

কীভাবে পৌঁছবেন?


বিমানযোগে : জয়পুর, জোধপুর, উদয়পুর- এই তিন শহরে আন্তর্জাতিক ও অভ্যন্তরীণ বিমানসুবিধা রয়েছে।


রেলে : দিল্লি, মুম্বাই, কলকাতা সহ বড় শহরগুলোর সঙ্গে সুসংযুক্ত রেলপথ।


সড়কপথে : জাতীয় সড়ক ৮, ১১, ১২ দিয়ে সহজেই প্রবেশ করা যায়।


ভ্রমণের সেরা সময় :

অক্টোবর থেকে মার্চ রাজস্থানের শীতকাল ভ্রমণের জন্য আদর্শ। তখন আবহাওয়া ঠান্ডা, আকাশ পরিষ্কার এবং মরুভূমি ভ্রমণের জন্যও অনুকূল।


নিরাপত্তা ও ভ্রমণ পরামর্শ :

মরুভূমিতে সন্ধ্যার পর তাপমাত্রা দ্রুত কম উপযুক্ত পোশাক সঙ্গে রাখুন। দুর্গ-প্রাসাদে হাঁটার পথ কখনও কখনও খাড়া সতর্ক থাকুন। স্থানীয় গাইড নিলে ইতিহাস জানা সহজ হয়। মরু এলাকায় পর্যাপ্ত জল বহন করুন। জয়পুর, জোধপুর, জয়সলমের শহরে রাতের পরিবেশ নিরাপদ, তবে নির্জন জায়গা এড়িয়ে চলা বাঞ্ছনীয়।


রাজস্থান মানেই বর্ণ, বীরত্ব, সৌন্দর্য ও অসীম গল্পের দেশ। এ এক ইতিহাস, শিল্প, যুদ্ধ, প্রেম, বিসর্জন এবং লোকজ জীবনের এক পূর্ণাঙ্গ যাত্রা। প্রতিটি শহর আলাদা, প্রতিটি গন্তব্যের আলাদা রঙ, আলাদা স্বাদ। কখনও হাওয়া মহলের জালি দিয়ে প্রবেশ করা আলো ছায়ায় চোখ আটকে যায়, কখনও মরুভূমির নীরবতায় উটের ঘণ্টাধ্বনি মুগ্ধ করে, কখনও জয়সলমেরের সোনালি দেয়ালে ঠিকরে ওঠে অন্য এক কালজয়ী সভ্যতার দীপ্তি। রাজস্থান এমনই বহু গল্পের সংকলন। একবার গেলে, মনে হবে ফিরে আসতেই হবে বারবার।


ree

সবুজে ঢাকা অন্দরসজ্জা :

শহুরে জীবনে প্রতিনিয়ত বাড়ছে কংক্রিটের বিস্তার এবং ভিড়-কোলাহল। প্রতিদিনের ব্যস্ত রুটিন, গৃহস্থালির চাপ, যানজট আর কাজের ক্লান্তিতে মানুষ আজ ক্রমেই প্রাকৃতিক আবহ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ছে। এমন প্রেক্ষাপটে আধুনিক অন্দরসজ্জার জগতে ‘সবুজে ঢাকা ঘর’ এক নতুন দিশা দেখাচ্ছে। ইন্টেরিয়র ডিজাইনের এই ধারা শুধু ঘরের সৌন্দর্য বাড়ায় না, বরং মানসিক প্রশান্তি, স্বাস্থ্য এবং পরিবেশসচেতনতার এক ভারসাম্য রচনা করে। ঘরের দেওয়াল, জানালা, কোণ কিংবা ছাদ-যে কোনও সহজ জায়গাকেই সবুজে ঢেকে দেওয়ার প্রবণতা আজ বিশ্বজুড়ে জনপ্রিয়। প্রকৃতির স্পর্শকে ঘরে আমন্ত্রণ জানানোর অর্থ কেবল শিল্পবোধের বিস্তার নয়; বরং এটি জীবনযাপনের এক অন্তরঙ্গ দার্শনিকতা।


ঘরের পরিবেশে সবুজের উপস্থিতি মানুষের মস্তিষ্কে প্রশান্তি সৃষ্টি করে-এটি বহু গবেষণায় প্রমাণিত। প্রকৃতির রং, বিশেষত সবুজ, চোখ ও মনে চিরদিনই আরামের অনুভূতি জাগায়। যখন ঘরের ভেতর বিভিন্ন আকারের সবুজ গাছ রাখা হয়, তখন ঘরটি যেন নিঃশ্বাস নিতে শেখে। মনোবিজ্ঞানীরা বলেন, শহরের কংক্রিটের ভিড়ের মাঝে মানুষ প্রাকৃতিক দৃশ্য বা সবুজ পাতার দিকে তাকালে তার হৃদস্পন্দন স্বাভাবিক হয়, মানসিক চাপ কমে যায়, মেজাজ ভালো থাকে। তাই আজ ঘর সাজানোর সঙ্গে মানসিক স্বাস্থ্যের সম্পর্কটিও নতুনভাবে মূল্যায়িত হচ্ছে।


অন্যদিকে ঘরোয়া গাছ বাতাসকে পরিশুদ্ধ করে, এটিও একটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ। বহুল আলোচিত NASA Clean Air Study-তে বলা হয়, কিছু ঘরোয়া উদ্ভিদ ঘরের বাতাস থেকে ক্ষতিকর রাসায়নিক উপাদান শোষণ করতে সক্ষম। শহরের বাড়িগুলোতে যেখানে জানালা সবসময় খোলা রাখা সম্ভব হয় না, কিংবা আশপাশের পরিবেশে দূষণের আধিক্য রয়েছে, সেখানে ইনডোর প্ল্যান্ট একটি প্রাকৃতিক বায়ুশোধক হিসেবে কাজ করে। স্নেক প্ল্যান্ট, মানিপ্ল্যান্ট বা স্পাইডার প্ল্যান্টের মতো উদ্ভিদ খুব কম আলো ও জলেই বেড়ে ওঠে, এবং ঘরকে রাখে নির্মল ও সতেজ।


ইন্টেরিয়রের নান্দনিকতার ক্ষেত্রেও সবুজের ভূমিকা অপরিসীম। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ঘর সাজানোর ধারা বদলেছে। আজ কাঠ, বাঁশ, বেত, ম্যাক্রামে, সেরামিক কিংবা টেরাকোটার পট ব্যবহার করে গাছ রাখার নানান স্টাইল দেখা যায়। কোণের ফাঁকা জায়গায় বড় আকারের অ্যারিকা পাম, জানালার গ্রিলে ঝুলন্ত মানিপ্ল্যান্ট বা শেলফে রাখা ছোট সাক্যুলেন্ট—সব মিলিয়ে ঘর যেন এক শিল্পময় গ্যালারিতে পরিণত হয়। আলো ছায়ার খেলা, গাছের পাতার নড়াচড়া এবং প্রাকৃতিক সবুজের উপস্থিতি ঘরের স্থিরতাকে বদলে দেয় প্রাণচঞ্চলতায়। ছোট্ট ফ্ল্যাট হোক বা বড় ডুপ্লেক্স, সবুজের ছোঁয়া দিলে ঘরটি মুহূর্তেই হয়ে ওঠে প্রশান্ত ও বাসযোগ্য।


অন্দরসজ্জায় সবুজ ব্যবহারের ক্ষেত্রে বাড়ির বিভিন্ন অংশের আলাদা আলাদা বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী নির্দিষ্ট পরিকল্পনা করা জরুরি। ড্রইংরুমে সাধারণত আলো বেশি থাকে, তাই এখানে বড় গাছ রাখলে আকর্ষণীয় লাগে। রাবার প্ল্যান্ট, অ্যারিকা পাম বা ফিডল-লিফ ফিগের মতো গাছ ঘরের কেন্দ্রবিন্দুকে আধুনিক ও দৃষ্টিনন্দন করে তোলে। টেলিভিশন ইউনিটের দুই পাশে উঁচু পাতার গাছ রাখলে ঘরের ভারসাম্য তৈরি হয়। অন্যদিকে সেন্টার টেবিল বা কর্নার শেলফে ছোট সাক্যুলেন্ট বা মনিপ্ল্যান্ট রাখা যেতে পারে। এমনকি ওয়াল-মাউন্টেড প্ল্যান্টার ব্যবহার করলে দেওয়ালও শিল্পকর্মের মতো ফুটে ওঠে।


শোবার ঘর সাজানোর ক্ষেত্রে কিছু বাড়তি সতর্কতা প্রয়োজন। এই ঘরে এমন গাছ রাখা উচিত যা রাতে অক্সিজেন ছাড়ে বা ঘুমের জন্য উপকারী পরিবেশ তৈরি করে। স্নেক প্ল্যান্ট, পিস লিলি বা ল্যাভেন্ডারের মতো গাছ রাতে বাতাসকে আরও নির্মল করে তোলে এবং মানসিক শান্তি আনে। বিছানার পাশের টেবিলে বা জানলার ধারে একটি ছোট টব রাখলেই ঘর পায় কোমল, শান্ত সৌন্দর্য। শোবার ঘরে খুব বড় বা অতিরিক্ত গাছ রাখা উচিত নয়, বরং হালকা ও পরিচ্ছন্ন বিন্যাসই উপযুক্ত।


ree

রান্নাঘরে সবুজের ব্যবহার কার্যকরী এবং নান্দনিক দুই-ই। আজকাল অনেকেই রান্নাঘরে ‘হরব গার্ডেন’ তৈরি করেন যেখানে তুলসি, ধনে, পুদিনা বা অ্যালো ভেরার মতো গাছ রাখা হয়। ছোট পটে বা রেলিং হ্যাঙ্গারে গাছ রাখলে রান্নাঘরের কাজেও সুবিধা হয় এবং সঙ্গে সঙ্গে রান্নাঘরটি হয়ে ওঠে সুগন্ধি ও সজীব। আর্দ্রতার কারণে ফার্নের মতো গাছ বাথরুমে বেশ ভালো থাকে। বাথরুমের জানলার আলো ও বাতাসে এই গাছগুলো দ্রুত বাড়ে এবং বাথরুমকেও স্পা-এর মতো অনুভূতি এনে দেয়।


বাড়ির বারান্দা বা ছাদের ক্ষেত্রে সবুজ অন্দরসজ্জা যেন এক নতুন জগৎ তৈরি করে। বারান্দা থাকলে সেখানে টবের সারি, ঝুলন্ত পট, উঁচু-নিচু প্ল্যান্ট স্ট্যান্ড এবং আলো–ছায়ার সঠিক বিন্যাস মিলিয়ে একটি ‘মিনি গার্ডেন’ বানানো যায়। তুলনামূলক ছোট বারান্দাতেও উল্লম্বভাবে প্ল্যান্টার সাজিয়ে কম জায়গায় বেশি সবুজ আনা সম্ভব। সন্ধ্যায় বারান্দার হালকা আলোয় গাছপালার ছায়া পড়লে সেই পরিবেশটি হয়ে ওঠে প্রশান্তিদায়ক- প্রতিদিনের ক্লান্তি দূর করার জন্য আদর্শ।


ঘরোয়া গাছের যত্ন নেওয়া সবুজ অন্দরসজ্জার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অংশ। শুধু গাছ কিনে এনে সাজিয়ে রাখলেই কাজ শেষ হয় না; বরং গাছের আলো, জল, মাটি ও আর্দ্রতার উপযুক্ত সামঞ্জস্য বজায় রাখতে হয়। অনেকেই ভুলভাবে অতিরিক্ত জল দেন, যার ফলে গাছের শিকড় পচে যায়। আবার কিছু গাছ কম আলো বা বেশি ছায়ায় ভালো থাকে, আর কিছু গাছ সরাসরি রোদ পছন্দ করে। তাই গাছের প্রজাতি অনুযায়ী যত্ন নেওয়া অত্যন্ত জরুরি। আজকাল শহরবাসীর ব্যস্ত জীবনে স্বয়ংক্রিয় ওয়াটারিং সিস্টেম, ময়েশ্চার সেন্সর বা কম মেইনটেনেন্স গাছ বেছে নেওয়ার প্রবণতাও বাড়ছে।


সবুজে ঢাকা অন্দরসজ্জা টেকসই জীবনধারার প্রতীকও বটে। প্রাকৃতিক উপকরণ-যেমন জুট, বাঁশ, বেত বা কাঠ-ব্যবহার করে তৈরি প্ল্যান্টার কিংবা স্ট্যান্ড পরিবেশবান্ধব হওয়ার পাশাপাশি ঘরকে দেয় উষ্ণতা ও আভিজাত্য। প্লাস্টিকের ব্যবহার কমানো, পুনর্ব্যবহারযোগ্য পট, জৈব সার ব্যবহার এবং বৃষ্টির জল সংরক্ষণ-সব মিলিয়ে এই সাজসজ্জা পরিবেশের প্রতি দায়বদ্ধতারও এক নিদর্শন। যারা ঘরকে প্রকৃতির সঙ্গে একাত্ম করে তুলতে চান, তাদের কাছে সবুজ অন্দরসজ্জা শুধু ফ্যাশন নয়; বরং জীবনযাপনের একটি স্থায়ী রূপান্তর।


সবশেষে বলা যায়, সবুজে ঢাকা অন্দরসজ্জা আধুনিক ঘর সাজানোর এমন একটি ধারা, যা সৌন্দর্য, স্বাস্থ্য এবং মানসিক সুস্থতার চমৎকার সমন্বয় ঘটায়। সবুজ শুধুমাত্র একটি রঙ নয়, এটি জীবনের প্রতীক; পুনর্জন্মের, শান্তির, আশার প্রতীক। ঘরকে সবুজে সাজানো মানে ঘরে প্রকৃতিকে ফিরিয়ে আনা। ব্যস্ত শহুরে জীবনচক্রে এই ছোট্ট সবুজ কোণই হতে পারে আমাদের প্রতিদিনের প্রশান্তির আশ্রয়। আধুনিক স্থাপত্যের সঙ্গে প্রাকৃতিক উপাদানের মেলবন্ধন ভবিষ্যতের অন্দরসজ্জায় আরও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে এ নিয়ে কোনও সন্দেহ নেই। ঘরে এনে রাখা এই সবুজ স্পর্শ আমাদের মনে করিয়ে দেয়, প্রকৃতি কখনোই দূরে নয়; সঠিক যত্নে ও ভালোবাসায় তার সৌন্দর্যকে আমরা প্রতিদিনের জীবনেই অনুভব করতে পারি।

ree

প্রিয় পোষ্যের শীতকালীন যত্ন


শীতকাল মানুষের মতোই পোষ্য প্রাণীদের জন্যও নানা চ্যালেঞ্জ নিয়ে আসে। তাপমাত্রা কমে যাওয়া, শুষ্ক বাতাস, হাড়কাঁপানো ঠান্ডা, রোগবালাইয়ের ঝুঁকি- সব মিলিয়ে পোষ্যদের শারীরিক আর আর্থসামাজিক পরিবেশে বড় পরিবর্তন ঘটে। এই সময়ে যত্নে সামান্য অবহেলা দেখা দিতে পারে নানা ধরনের অসুস্থতা, আচরণগত পরিবর্তন বা প্রতিরোধক্ষমতা কমে যাওয়ার ঝুঁকি। তাই শীতের শুরুতেই পোষ্যপ্রেমীদের উচিত তাদের চারপেয়ে বা পাখি-পোষা সদস্যদের জন্য একটি সুসংহত যত্ন-পরিকল্পনা তৈরি করা। এই প্রতিবেদনে শীতকালে পোষ্যদের স্বাস্থ্য, পরিচর্যা, খাদ্যাভ্যাস, ত্বক-লোমের যত্ন, ঘরোয়া পরিবেশ, এবং সাধারণ আচরণগত দিকসহ প্রয়োজনীয় সব ক্ষেত্র নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।

ree

শীত এলে অনেক পোষ্যই হঠাৎ অলস, কম সচল বা খিদে কমে যাওয়ার অভিজ্ঞতা নিয়ে থাকে। তাপমাত্রা কমলে তাদের শরীরকে উষ্ণ রাখতে অতিরিক্ত শক্তি প্রয়োজন হয়। ফলে বেশি ক্যালরি ব্যয় হয়, কিন্তু অনেক সময় তাদের খাদ্যাভ্যাস একই থাকে বা কমে যায়। শীতের শুষ্ক বাতাসে ত্বক ফেটে যাওয়া, ত্বক শুষ্ক হয়ে খসখসে হওয়া, চুলকানি, জয়েন্ট-ব্যথা, আর্থ্রাইটিসের বাড়াবাড়ি এসবও হয় অত্যন্ত সাধারণ সমস্যা। বয়স্ক পোষ্যদের ক্ষেত্রে ব্যথা-যন্ত্রণার মাত্রা বাড়ে। ছোট প্রজাতির কুকুর বা কম লোমওয়ালা বিড়ালের ক্ষেত্রে ঠান্ডা দ্রুত শরীরে প্রভাব ফেলে। ঘরে থাকা পাখি যেমন লাভবার্ড, মুনিয়া, বদরি কিংবা কচ্ছপ–খরগোশদের ক্ষেত্রেও তাপমাত্রার ওঠানামা সরাসরি বিপদ ডেকে আনতে পারে।


শীতকালে পোষ্যকে উষ্ণ রাখার প্রথম শর্ত হলো তাদের জন্য নিরাপদ ও আরামদায়ক আবাস। ঘরের যেসব অংশে ঠান্ডা বাতাস ঢোকে বা যেখানে মেঝে ঠান্ডা হয় সেসব জায়গায় পোষ্যকে রাখা উচিত নয়। পোষ্যের বিছানার নিচে মোটা তোশক, থার্মাল বেড, ফ্লিস কম্বল, বা পোষ্য-উপযোগী হিটেড ম্যাট ব্যবহার পুরো শীতকাল তাদের আরাম দেয়। তবে খেয়াল রাখতে হবে যান্ত্রিক হিটারের গরম সরাসরি পোষ্যের ওপর লাগা উচিত নয়। কারণ এতে ত্বক অতিরিক্ত শুকিয়ে যেতে পারে অথবা হিটারের কাছে গিয়ে পুড়ে যাওয়ার আশঙ্কাও থাকে। যেসব বাড়িতে বিড়াল থাকে, তারা ইলেকট্রিক তারের ওপর শোয়া বা খেলার প্রবণতা রাখে তাই সেগুলি যথাযথ সুরক্ষিত থাকতে হবে।


ree

শীতকালে শরীর উষ্ণ রাখতে পোষ্যদের এনার্জি ব্যয় বেড়ে যায়। তাই তাদের খাদ্যে সহজপাচ্য কিন্তু পুষ্টিকর খাবার দিতে হবে। কুকুর ও বিড়ালের জন্য শীতকালে হাই-প্রোটিন ডায়েট, ওমেগা–৩ ফ্যাটি অ্যাসিড, চিকেন স্টু, স্যুপ-জাতীয় হালকা গরম খাবার, এবং উপযুক্ত পরিমাণে কার্বোহাইড্রেট অত্যন্ত উপকারী। কুকুরের ক্ষেত্রে সামান্য গরম জল মিশিয়ে শুকনো খাবার দিলে খাবারের গন্ধ বাড়ে, হজমও সহজ হয়। ছোট পাখিদের জন্য শীতকালে ফ্রেশ সবজি, বীজ, মিলেট, এবং হালকা গরম জল খুব উপকারী।

কচ্ছপের ক্ষেত্রে সঠিক তাপমাত্রা বজায় রেখে ভেজিটেবল ডায়েট এবং পরিষ্কার জল অপরিহার্য।

সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো পোষ্য যেন পর্যাপ্ত পরিমাণে জল পান করে। শীতকালে অনেক পোষ্যই কম জল খায়, ফলে ডিহাইড্রেশন হয়ে যায় অজান্তেই। তাই তাদের কাছে সর্বদা হালকা গরম, সতেজ জল রাখতে হবে।


শীতকালে অনেকেই পোষ্যকে স্নান করানো বন্ধ করে দেন, কিন্তু তা সঠিক নয়। শীতেও হাইজিন বজায় রাখা জরুরি। মাসে অন্তত একবার হালকা গরম জলে স্নান করানো নিরাপদ। তবে ঠান্ডা জলে কখনোই স্নান করানো যাবে না। স্নানের পরপরই পোষ্যের শরীর ভালোভাবে শুকিয়ে দিতে হবে। হেয়ার ড্রায়ার ব্যবহার করা যায়, তবে কম তাপমাত্রায় ও দূর থেকে ব্যবহার করা নিরাপদ। অতিরিক্ত স্নান করালে ত্বক আরও শুষ্ক হয়ে চুলকানি বাড়তে পারে- বিশেষ করে বিড়ালের ক্ষেত্রে। তাই ভেজা কাপড় দিয়ে পরিষ্কার করা বা হাইপোঅ্যালার্জেনিক ওয়াইপ ব্যবহার করা যেতে পারে।


ত্বক ও লোমের বিশেষ যত্ন :

শীতের বাতাস প্রাকৃতিকভাবেই শুষ্ক। ফলে পোষ্যের ত্বক দ্রুত আর্দ্রতা হারায়। তাই এই সময়ে লোম–ত্বকের আলাদা যত্ন নেওয়া জরুরি। কুকুর ও বিড়ালের ক্ষেত্রে নিয়মিত ব্রাশ করলে রক্তসঞ্চালন বাড়ে, মৃত চুল ঝরে যায় এবং ত্বকের প্রাকৃতিক তেল সারা শরীরে ছড়িয়ে পড়ে। ওমেগা–৩, ওমেগা–৬ সাপ্লিমেন্ট, কুকুর–বিড়াল–নিরাপদ তেল দিয়ে হালকা মাসাজ, বা ভেট-রেকমেন্ডেড ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করা যেতে পারে। পোষ্যের পায়ের প্যাড সহজেই ফেটে যায় ঠান্ডায়। তাই তাদের পায়ে পেট বাম, কোকোনাট–বেসড লোশন, বা গ্লিসারিন–ভিত্তিক ক্রিম প্রয়োগ করলে ফাটল কমে।

ree

শীতকালে অনেক পোষ্যই অলস হয়ে পড়ে, বাইরে যেতে চায় না। কিন্তু দৈনিক ব্যায়াম তাদের মানসিক ও শারীরিক স্বাস্থ্যের জন্য অপরিহার্য। কুকুরকে দিনের রোদেলা সময়ে হাঁটাতে নিয়ে যাওয়া সবচেয়ে ভালো। ঘরের মধ্যে খেলাধুলা, বল ধরা, টাগ–অফ–ওয়ার, বা ছোট ট্রেনিং সেশন তাদের সক্রিয় রাখে। বিড়ালের ক্ষেত্রে লেজার লাইট, পাজল টয়, এবং স্ক্র্যাচিং পোস্ট তাদের উদ্দীপ্ত করে। পাখিদের ক্ষেত্রে খাঁচার বাইরে অল্প সময় বিচরণ বা খেলনা দেওয়া তাদের স্ট্রেস কমায়। এভাবে ব্যায়াম এবং মানসিক উদ্দীপনা মিলিয়ে পোষ্য শারীরিক সুস্থতার পাশাপাশি আচরণগত দিক থেকেও স্থিতিশীল থাকে।


ree

বয়স্ক ও অসুস্থ পোষ্যের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা :


বয়স্ক পোষ্য, বিশেষ করে যাদের আর্থ্রাইটিস বা জয়েন্ট সমস্যা আছে, তাদের শীতকালে ব্যথা বেড়ে যায়। তাই তাদের থাকার জায়গা যেন ঠান্ডা না হয়, সেটি নিশ্চিত করতে হবে। হিটেড ব্লাঙ্কেট বা থার্মাল বেড তাদের জন্য অত্যন্ত উপকারী। ভেট-এর পরামর্শ অনুযায়ী জয়েন্ট সাপোর্ট সাপ্লিমেন্ট শুরু করা যেতে পারে। ডায়াবেটিস, কিডনি সমস্যা বা শ্বাসকষ্টে ভোগা পোষ্যদের ক্ষেত্রে শীত বিশেষ ঝুঁকিপূর্ণ। তাই নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা, ওষুধ, ডায়েট এবং পরিবেশের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ সবই সমান গুরুত্বের।


সংক্রমণ প্রতিরোধ ও টিকাকরণ :


শীতকালে ভাইরাসবাহিত রোগের প্রভাব অনেক প্রাণীরই বেড়ে যায়। তাই সব পোষ্যের টিকা যথাসময়ে আপডেট আছে কি না তা পরীক্ষা করা জরুরি। ইনফ্লুয়েঞ্জা, ডিসটেম্পার, পারভো, র‍্যাবিস প্রতিটি টিকার সঠিক সময়সূচি মেনে চলা উচিত। এছাড়া, শীতকালে ফ্লি ও টিকের প্রকোপ তুলনামূলক কম হলেও সম্পূর্ণ বন্ধ হয় না। তাই পোষ্য ও ঘরের নিয়মিত পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখতে হবে।


অনেকেই শীতে পোষ্যকে সোয়েটার, হুডি বা জ্যাকেট পরান। এটি ছোট প্রজাতির কুকুর, কম লোমওয়ালা পোষ্য, বা রোগা প্রাণীদের জন্য উপকারী হলেও সকলের জন্য বাধ্যতামূলক নয়। পোষ্যের পোশাক যেন খুব আঁটসাঁট না হয়, যেন বাতাস চলাচল বাধা না পায় এটি নিশ্চিত করতে হবে। ভিজে গেলে সঙ্গে সঙ্গে বদলে দিতে হবে, কারণ ভেজা পোশাক উল্টো ঠান্ডা বাড়ায়। বিড়ালের ক্ষেত্রে পোশাক সাধারণত তারা পছন্দ করে না এবং স্ট্রেসড হয়ে যায়, তাই প্রয়োজন না হলে পরানো উচিত নয়।


যেসব ভুলগুলি শীতকালে একেবারেই করবেন না :


ঠান্ডা জলে স্নান করানো, অতিরিক্ত খাবার দিয়ে স্থূলতা বাড়ানো, বাইরে নিয়ে গিয়ে কুকুরকে দীর্ঘক্ষণ বরফ ঠান্ডায় দাঁড় করিয়ে রাখা, হিটার সরাসরি পোষ্যের দিকে তাক করা, টিকা ও ডিওয়ার্মিং উপেক্ষা, বয়স্ক পোষ্যের ব্যথার সঙ্কেত অগ্রাহ্য করা, শুষ্ক ত্বকের সমস্যা অবহেলা করা। এই ভুলগুলো পোষ্যের শারীরিক ক্ষতি, রোগ বা দীর্ঘমেয়াদে মানসিক চাপ বাড়াতে পারে, যা সহজেই প্রতিরোধযোগ্য।


ভেটের পরামর্শ কেন অপরিহার্য ?

শীতকালে পোষ্যের আচরণ বা শারীরিক অবস্থায় যেকোনো বড় পরিবর্তন দেখা দিলে ভেটের পরামর্শ নেওয়া জরুরি।কুকুর–বিড়ালের নাকে অতিরিক্ত শুষ্কতা, কাশি, হাঁচি, শ্বাস নিতে কষ্ট হওয়া বা খাবার না খাওয়া এসব ইঙ্গিত হতে পারে গুরুতর অসুস্থতার। ভেট সঠিক পরীক্ষা, রক্তপরীক্ষা, সাপ্লিমেন্ট, বা প্রয়োজন হলে ওষুধ দিয়ে সমস্যা সমাধান করতে সাহায্য করেন।


পোষ্য শুধুই প্রাণী নয় তারা আমাদের পরিবারেরই একজন সদস্য। তাই শীতকালে তাদের যত্ন নেওয়া শুধু দায়িত্ব নয়, ভালোবাসারই প্রকাশ। তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ, পুষ্টিকর ডায়েট, নিয়মিত ব্যায়াম, পরিচ্ছন্নতা, টিকা ও রোগ প্রতিরোধ সব মিলিয়ে একটি পূর্ণাঙ্গ শীতকালীন যত্নবিধি পোষ্যের সুস্থতা নিশ্চিত করে। মানুষের মতোই পোষ্যেরাও উষ্ণতা, নিরাপত্তা, আর আদর চায়। শীতের সকাল থেকে রাত পর্যন্ত সামান্য নজরদারি, উষ্ণ পরিবেশ ও সঠিক যত্নই পারে তাদের পুরো ঋতু জুড়ে সুস্থ সবল রাখতে। প্রিয় পোষ্যদের শীতকাল যেন আনন্দময়, স্বাস্থ্যজ্জ্বল ও আরামদায়ক হয় এই প্রত্যাশাই সকল পোষ্যপ্রেমীর।

ree

কিচেন ক্যানভাসে সেরা ১০

রান্না কেবল খাবার নয় এ এক সৃজনশীলতা, আনন্দ ও গল্পের মিশ্রণ। কিচেন ক্যানভাস গ্রুপের এই প্রতিযোগিতায় সদস্যরা জমা দিয়েছেন নানা স্বাদ, কল্পনা ও প্রজন্মের রান্নার গল্প। বিচারকেরা বেছে নিয়েছেন সেরা ১০টি রেসিপি, যা স্বাদ, সৃজনশীলতা ও উপস্থাপনায় বিশেষ। এই সংকলন শুধু রেসিপি নয়, রান্নার আনন্দ, পরিশ্রম এবং উদ্ভাবনার গল্পও বয়ে আনে। প্রতিটি রেসিপি আপনাকে নতুন কিছু চেষ্টা করার প্রেরণা দেবে এবং রান্নাঘরে আনন্দ ছড়িয়ে দেবে।


রান্না কেবল খাবার নয় এ এক সৃজনশীলতা, আনন্দ ও গল্পের মিশ্রণ। কিচেন ক্যানভাস গ্রুপের এই প্রতিযোগিতায় সদস্যরা জমা দিয়েছেন নানা স্বাদ, কল্পনা ও প্রজন্মের রান্নার গল্প। বিচারকেরা বেছে নিয়েছেন সেরা ১০টি রেসিপি, যা স্বাদ, সৃজনশীলতা ও উপস্থাপনায় বিশেষ। এই সংকলন শুধু রেসিপি নয়, রান্নার আনন্দ, পরিশ্রম এবং উদ্ভাবনার গল্পও বয়ে আনে। প্রতিটি রেসিপি আপনাকে নতুন কিছু চেষ্টা করার প্রেরণা দেবে এবং রান্নাঘরে আনন্দ ছড়িয়ে দেবে।


ree

আম ফিরনি

পৌলমী পান্ডে

কী কী লাগবে :

বাসমতি চাল – ১/৪ কাপ, ফুল-ফ্যাট দুধ – ১ লিটার, কনডেন্সড মিল্ক – ১/২ কাপ (অথবা চিনি – ১/৩ কাপ), এলাচ গুঁড়ো – ১/২ চা চামচ, জাফরান, আমের পাল্প – ১ কাপ, পেস্তা/বাদাম – ১ টেবিল চামচ, গোলাপ পাপড়ি বা আমের টুকরো – সাজানোর জন্য।


ree

কীভাবে বানাবেন :

চাল ধুয়ে ৩০ মিনিট ভিজিয়ে নিন, তারপর অল্প দুধ বা জল দিয়ে মোটা পেস্ট তৈরি করুন। দুধ ফুটিয়ে কম আঁচে চালের পেস্ট মিশিয়ে ১৫–২০ মিনিট নাড়ুন যতক্ষণ দুধ ঘন না হয়।কনডেন্সড মিল্ক বা চিনি, এলাচ, জাফরান মিশিয়ে ৫ মিনিট রান্না করুন। ঠান্ডা হতে দিন, তারপর আমের পাল্প মিশান। মিশ্রণ ছোট বাটিতে ঢেলে ফ্রিজে ২ ঘণ্টা ঠান্ডা করুন। পরিবেশনের আগে পেস্তা, বাদাম বা গোলাপ পাপড়ি দিয়ে সাজান।


চটজলদি সন্দেশ

লিসা মুখার্জি

কী কী লাগবে :

ছানা ২ কাপ, গুঁড়ো দুধ ৫–৬ টেবিল চামচ, এলাচ গুঁড়ো এক চিমটি, চিনি ৪-৫ টেবিল চামচ (স্বাদ অনুযায়ী)


ree

কীভাবে বানাবেন :

ছানা একটি থালায় চেপে চেপে নরম করে নিন। কড়াই গরম করে ছানা দিয়ে নাড়াচাড়া করুন। একে একে চিনি, গুঁড়ো দুধ এবং এলাচ মেশান। কিছুক্ষণ ভালো করে নাড়ুন। নামিয়ে ঠান্ডা হতে দিন। ঠান্ডা হলে ইচ্ছামতো কেটে পরিবেশন করুন।

ree

বিট গাজরের হালুয়া

মৌসুমী দাস

কী কী লাগবে :

ফুল ফ্যাট দুধ – ১ লিটার, বীট বাটা – ৭৫০ গ্রাম, গাজর বাটা – ২৫০ গ্রাম, কাজু কুচি – ৫ চা চামচ, কিসমিস কুচি – ৫ চা চামচ, আমন্ড কুচি – ৫ চা চামচ, পেস্তা কুচি – ৫ চা চামচ, চিনি – ১০০ গ্রাম, ঘি – ৫ টেবিল চামচ, ছোট এলাচ গুঁড়ো – ১ চা চামচ


ree

কীভাবে বানাবেন :

বীট ও গাজর বেটে নিন। দুধ ফুটিয়ে বাটা বীট ও গাজর মিশিয়ে ঢেকে রান্না করুন। সিদ্ধ হলে কাজু, কিসমিস, আমন্ড, পেস্তা ও চিনি মেশান। হালুয়া শুকিয়ে এলে ঘি ও এলাচ গুঁড়ো দিন। উপরে বাকি ড্রাই ফ্রুট ছড়িয়ে গরম বা ঠান্ডা পরিবেশন করুন।


ree

ফুলকপির কেশরী সন্দেশ

শ্রাবন্তী দত্ত

কী কী লাগবে :

ফুলকপি ১টি মাঝারি, গ্রেটেড খোয়া ক্ষীর ১ কাপ, কনডেন্সড মিল্ক ১/২ কাপ, চিনি ১/৪ কাপ, ছোট এলাচ গুঁড়ো ১ চা চামচ, হলুদ গুঁড়ো ১/২ চা চামচ, কেশর ১ চিমটে, ঘি ৬ টেবিল চামচ


ree

কীভাবে বানাবেন :

ফুলকপি ছোট টুকরো করে সেদ্ধ করুন। জল ঝরিয়ে গ্রেটেড খোয়া ক্ষীর মিশিয়ে মাখুন। গরম ঘিতে মিশ্রণ নাড়ুন, এলাচ ও চিনি মেশান। কনডেন্সড মিল্ক যোগ করে নাড়তে নাড়তে মাখা মাখা হলে কেশর মিশিয়ে নামিয়ে নিন। হালকা ঠান্ডা হলে ছাঁচে ঘি মাখিয়ে মিশ্রণ দিয়ে সন্দেশ তৈরি করুন।


মুড়ি কেশরী ভাপা সন্দেশ

কেয়া দত্ত

কী কী লাগবে :

মুড়ি গুঁড়ো ২ কাপ, দুধ ৫০০ মিলি, চিনি ১ কাপ, মিল্কমেড ১/২ কাপ, কেশর ১/২ চা চামচ, ঘী ৪ টেবিল চামচ


ree

কীভাবে বানাবেন :

মুড়ি ড্রাই রোস্ট করে গুড়ো করুন। অল্প দুধ গরম করে কেশর দিয়ে রাখুন। প্যানে ঘী গরম করে মুড়ি ভেজে দুধ, চিনি, মিল্কমেড ও কেশর দুধ মিশিয়ে মন্ড তৈরি করুন। ঠান্ডা করে ফুলের আকারে গড়ে নিন। জল দিয়ে ভাপে ২৫-৩০ মিনিট সিদ্ধ করে ঠান্ডা করে পরিবেশন করুন।


ree

জামের রসে সাজানো ঝাল নোনতা পাটিসাপটা :

তন্দ্রা নাথ

কী কী লাগবে :

ময়দা ১ কাপ, সুজি ১/২ কাপ, চালের গুঁড়ো ১/৪ কাপ, কালো জাম ১০০ গ্রাম, জল ২ কাপ, বাঁধাকপি ১ কাপ, গ্রেড করা গাজর ১ কাপ, ক্যাপসিকাম কুচি ১/২ কাপ, টমেটো কুচি ১/২ কাপ, কাঁচা লংকা কুচি ২টি, গোলমরিচ গুঁড়ো ১ চামচ, চিনি ১ চামচ, নুন স্বাদমতো, সাদা তেল ১/২ কাপ, আদার রস ১ চামচ, টমেটো সস ১/২ কাপ, সাজানোর জন্য টমেটো সস, স্যালাড, মেয়োনিজ


ree

কীভাবে বানাবেন :

ময়দা, সুজি, চালের গুঁড়ো ও নুন মিশিয়ে জল দিয়ে ব্যাটার তৈরি করে ১ ঘণ্টা রেস্ট করুন। কালো জাম মিক্সি করে পেস্ট তৈরি করুন। তেলে বাঁধাকপি, গাজর, ক্যাপসিকাম, টমেটো, লংকা ও মশলা দিয়ে পুর তৈরি করুন। ব্যাটারে জামের পেস্ট ও আদার রস মিশিয়ে নিন। ফ্রাইং প্যানে ব্যাটার ছিটিয়ে পুর দিয়ে ফোল্ড করুন। সব পাটিসাপটা তৈরি করে প্লেটিং করুন, সাজান টমেটো সস ও মেয়োনিজ দিয়ে।



বাটার গার্লিক চিকেন ও চাইনিজ ফ্রাইড রাইস

ছন্দা নন্দী

বাটার গার্লিক চিকেন


কী কী লাগবে :

মুরগির বোনলেস ৫০০ গ্রাম, আদা-রসুন বাটা ২ চামচ, রসুন কুচি ৩ টেবিল চামচ, আদা কুচি ২ টেবিল চামচ, মাখন ২ টেবিল চামচ, লবণ, গোলমরিচ গুঁড়ো, সয়া সস ১ টেবিল চামচ, পেঁয়াজ কুচি প্রয়োজন মত, তেল ভাজার জন্য, ময়দা ৩ চামচ, কর্ন ফ্লাওয়ার ২ চামচ, ভিনিগার, ডিমের সাদা অংশ ১টি, চিনি স্বাদমতো


ree

কীভাবে বানাবেন :

মাংস ধুয়ে নুন, আদা-রসুন বাটা, ময়দা, কর্ন ফ্লাওয়ার, ডিমের সাদা অংশ, ভিনিগার, সয়া সস ও গোলমরিচ মিশিয়ে ১০–১৫ মিনিট মেরিনেট করুন। তেলে সোনালি হওয়া পর্যন্ত ভেজে নিন। অন্য প্যানে মাখন গরম করে পেঁয়াজ, রসুন ও আদা কুচি হালকা বাদামী করে ভেজে মাংস ঢেলে দিন। সয়া সস, চিনি মিশিয়ে সামান্য কর্ন ফ্লাওয়ার গুলে দিয়ে গ্রেভি ঘন হলে নামিয়ে পরিবেশন করুন।


ree

চাইনিজ ফ্রাইড রাইস


কী কী লাগবে :

বসুমতি চাল ২৫০ গ্রাম, বিন্স, ক্যাপসিকাম, গাজর, বাঁধাকপি পাতা, পেঁয়াজ, রসুন, আদা, লঙ্কা কুচি, সয়া সস, সাদা তেল, লবণ, গোলমরিচ ও অন্যান্য মশলা স্বাদ অনুযায়ী


কীভাবে বানাবেন :

চাল ধুয়ে ২০ মিনিট ভিজিয়ে রাখুন, জল ও নুন দিয়ে আলডেন্টে ভাত সিদ্ধ করুন। তেলে সবজি ভেজে পেঁয়াজ ও মশলা দিয়ে হালকা ভাজুন। ভাত দিয়ে মিশিয়ে সয়া সস, লবণ, গোলমরিচ দিয়ে ২–৩ মিনিট রান্না করুন। সামান্য লঙ্কা কুচি দিয়ে গার্লিক চিকেনের সাথে পরিবেশন করুন।


লাউ পাতায় কাতলা পাতুরি

যুথি চক্রবর্তী

কী কী লাগবে :

লাউ পাতা ৫–৬টি, সরিষার তেল ২ কাপ, হলুদ গুঁড়ো ১ চা চামচ, কাতলা মাছ ৫–৬ টুকরো, সাদা সরিষা ১০০ গ্রাম, পোস্ত দানা ৫০ গ্রাম, কাজুবাদাম ২০ গ্রাম, কাঁচা লঙ্কা ৫–৬টি (আধা কাটা), লবণ ও চিনি স্বাদমতো


ree

কীভাবে বানাবেন :

সরিষা, পোস্ত দানা, কাজুবাদাম, লবণ, ১ টেবিল চামচ তেল ও আধা কাপ জল দিয়ে মিহি পেস্ট তৈরি করুন। মাছের টুকরোগুলো লবণ ও হলুদ মাখিয়ে ৪ টেবিল চামচ তেলে হালকা ভেজে আলাদা রাখুন। লাউ পাতা ধুয়ে শুকিয়ে ননস্টিক প্যানে হালকা শেকে নিন। ভাজা মাছের উপর পেস্ট মাখান। লাউ পাতায় মাছ রাখুন, তেল ও কাঁচা লঙ্কা দিয়ে চারপাশ মুড়ুন। ননস্টিক প্যানে ২ টেবিল চামচ তেল দিয়ে পাতুরি দু’পিঠে সোনালি বাদামি হওয়া পর্যন্ত ভাজুন, ঢাকনা দিয়ে ভেতর পর্যন্ত সেদ্ধ করুন। গরম গরম ভাতের সঙ্গে পরিবেশন করুন।


ree

আফগানি চিকেন

সমিতা সর

কী কী লাগবে :

চিকেন ৬০০ গ্রাম, টকদই ১৫০ গ্রাম, ধনেপাতা ও পুদিনাপাতা, পেঁয়াজ ২টি, রসুন ১০–১২ কোয়া, আদা ২ টুকরো, লঙ্কা প্রয়োজন মতো, গোলমরিচ গুঁড়ো, নুন, হলুদ প্রয়োজন মতো, তেল ও ঘি, লবঙ্গ ও ছোট এলাচ, সর্ষের তেল অল্প।


ree

কীভাবে বানাবেন :

ধনেপাতা, পুদিনাপাতা, আদা, পেঁয়াজ, রসুন ও লঙ্কা মিক্সিতে পেস্ট করুন। টকদইতে পেস্ট মিশিয়ে চিকেন ম্যারিনেট করুন, নুন, হলুদ, গোলমরিচ ও সর্ষের তেল দিয়ে ৩০ মিনিট রাখুন। কড়াইয়ে তেল, এলাচ ও লবঙ্গ ফোড়ন দিয়ে ম্যারিনেট করা চিকেন কম আঁচে ঢেকে রান্না করুন, ধনেপাতা ও জিরে গুঁড়ো, গোলমরিচ, কসুরিমেথি মিশিয়ে যতক্ষণ না তেল বের হয়। গ্রিল বা প্যানে তেল দিয়ে চিকেন দুই পাশে লালাভ রঙে হালকা ভেজে নিন। কড়াইয়ে তৈরি গ্রেভিতে ভাজা চিকেন দিয়ে ৪–৫ মিনিট ঢেকে রান্না করুন। মাংস থেকে তেল বের হলে এবং সুসিদ্ধ হলে নামিয়ে পরিবেশন করুন মটর পোলাও বা পছন্দের রাইসের সঙ্গে।


ree

দই কাতলা

রত্না বর্ধন

কী কী লাগবে :

পাকা কাতলা মাছ ৩ পিস/২০০ গ্রাম, টক দই ২০০ গ্রাম, কাজু বাদাম ৭–৮ টি, পোস্ত ১ টেবিল চামচ, মৌরি ১ টেবিল চামচ, ছোট এলাচ ২টি, লবঙ্গ ২টি, দারুচিনি ১ টুকরো, তেজ পাতা ১টি, শুকনো লঙ্কা ২টি, আদা-রসুন ও কাঁচা লঙ্কা বাটা ১ টেবিল চামচ, কাঁচা লঙ্কা ৪–৫টি, সাদা তেল প্রয়োজন মতো, লবণ স্বাদমতো, সামান্য চিনি, অল্প হলুদ, ধনে ও জিরে গুঁড়ো ১+১ চা চামচ, পিঁয়াজ বাটা ১টি (বড়)


ree

কীভাবে বানাবেন :

মাছ ধুয়ে লবণ, হলুদ ও তেল মেখে ৪–৫ মিনিট রাখুন। কাজু, পোস্ত ও মৌরী জল দিয়ে মিহি পেস্ট তৈরি করুন। আদা-রসুন ও ৩টি কাঁচা লঙ্কা একসাথে বেটে রাখুন। কড়াইয়ে তেল গরম করে মাছ দুইপিঠ হালকা ভেজে তুলে রাখুন। একই তেলে তেজপাতা, শুকনো লঙ্কা ফোড়ন, পিঁয়াজ বাটা ভেজে নিন। তারপর আদা-রসুন বাটা, বাদাম-পোস্ত পেস্ট, ধনে-জিরে গুঁড়ো ও লঙ্কা বাটা মিশিয়ে নাড়ুন। ফেটানো টকদই, লবণ ও চিনি দিয়ে নাড়তে থাকুন। ঝোল শুকিয়ে আসলে জল দিয়ে ফুটান। ঝোলে মাছ দিয়ে গ্রেভি ঘন হলে নামিয়ে পরিবেশন করুন। ওপর থেকে কাঁচা লঙ্কা, বেরেস্ত ও ধনেপাতা ছড়িয়ে সাজান।

ree

পরান মাঝির পানসী

                                     

শোভনলাল আধারকার


সে অনেক কাল আগের ঘটনা। তখনও রূপ-নারায়ণ নদীর উপর পাকা ব্রিজ, সড়ক কিছুই হয়নি। খেয়া নৌকা করে নদী পারাপার করতে হত। যে জায়গার কথা বলছি সেটা বঙ্গোপসাগরের কাছাকাছি, তাই জোয়ারের সময় নদীতে ঢেউ খুব বেশি হয় আর পূর্ণিমা-অমাবস্যা আর কোটালের সময় তো কথাই নেই। তখন নদী আর সাগরের মধ্যে তফাৎ বিশেষ থাকত না।


মফঃস্বল কলেজে পড়াতাম তখন, থাকতাম মেসে; শনিবার বিকালে থার্ড ইয়ার অনার্সের ক্লাসটা শেষ করেই দৌড়তাম বাস ধরতে। চল্লিশ মিনিট বাস জার্নির পর নদীর ঘাটে এসে খেয়া নৌকায় নদী পার করে কলকাতার বাস ধরতাম আমি আর সতীর্থ ইংরাজির প্রফেসর দিলীপ রায়। তারপর সোমবার খুব ভোরে আবার মোমিনপুর থেকে বাস ধরে খেয়া পেরিয়ে কর্মস্থলে। দিলীপ-দা ছিলেন আমার সিনিয়র, উত্তর কলকাতার বাসিন্দা আর আমি থাকতাম মধ্য কলকাতার পার্ক সার্কাস অঞ্চলে।


সেদিনটা ছিল শনিবার; কি যেন পারিবারিক কারণে দিলীপ-দা ছুটি নিয়েছিলেন, তাই কলকাতা ফেরার পথে আমার কোন সঙ্গী ছিল না। ওদিকে সামনেই পরীক্ষা থাকায় দিনের শেষ ক্লাসটা একটু লম্বা টানতে হয়েছিল। তাই বেরোতে দেরী হয়ে গেল। নদীর ঘাটে এসে দেখলাম নদীতে ভরা জোয়ার আর মাঝিরা ঘাটে নৌকা বেঁধে রাস্তার ধারে বসা ওদের তালপাতার ছাউনের কুঁড়েতে শুয়ে-বসে বিবিধ ভারতীতে গান শুনছে। একজন মাঝি বুঝি আমার পায়ের আওয়াজ শুনে বেরিয়ে এসেছিল, বলল,

“বাবু, আজকের আর পারাপার করতে পারবেন নি, কোটালের ভরা জোয়ার তায় রাত হয়ে গেছে, দেখেন না নদী যেন রাগে ফুঁসছে; নৌকা আজ আর চলবে নি গো বাবু; ওদিকে পাঁচ মিনিটের মধ্যে শহরের লাস্ট বাস ছেড়ে যাচ্ছে, বাড়ি ফিরে যান বাবু, কাল ভোরে ভোরে প্রথম বাস ধরবেন, ও পারের প্রথম বাসও পেয়ে যাবেন।”


আমি ঘাড় নেড়ে প্রায় স্বগতোক্তিতে বললাম,

“তা তো বুঝলাম, কিন্তু আমার যাওয়া খুব দরকার, বাড়িতে বিশেষ অসুবিধা আছে।”


লোকটি আমার কথা না শুনেই তার তালপাতার ঝুগগিতে ঢুকে দরজা বন্ধ করে দিল।

ree

নিরুপায় হয়ে ফিরে যাবার জন্য বাসের দিকে এগোচ্ছিলাম, এমন সময় কোথা থেকে একজন ঢ্যাঙা লম্বা ‘খ্যাঙরা কাঠির মাথায় আলু’ মত চেহারার, হাঁটুর উপরে খাটো ধুতি পরা আর মাথায় মাঝিদের মত একটা মলিন গামছা বাঁধা মানুষ আমার সামনে এসে স্থানীয় ভাষায় বলল,

“পারে যাবেন নাকি গো বাবু?”


আমি যেন হাতে স্বর্গ পেলাম। বললাম,

“যেতে পারবে মাঝি? এই ভরা জোয়ারে? ডবল ভাড়া দেব।”


অন্ধকারে নোংরা এবড়ো-খেবড়ো ভাঙাচোরা দু’পাটি দাঁত বের করে তাচ্ছিল্যভরে হাসল লোকটি,

“কোথায় জোয়ার বাবু, ভাটা পড়তিছে, এমন কত কোটালের জোয়ারে পারাপার করলাম, এতো কিছু লয়, হাঁটু জল বাবু।”


আমি শহুরে ছেলে, ওর কথায় খানিকটা ভরসা পেলেও পুরোপুরি সাহস পেলাম না, তবু একবার অন্ধকার নদীর দিকে তাকিয়ে সাহস সঞ্চয়ের চেষ্টা করতে লাগলাম। দেখতে দেখতে কোথা থেকে আরও তিনজন লোক এগিয়ে এলো; বোধকরি ওরাও নদী পেরবার জন্য বাস স্ট্যান্ডের চায়ের দোকানে বসে অপেক্ষা করছিল। ওরা তিনজন এক পলক আমার পানে চেয়ে একে অন্যের মুখ চাওয়া চাওয়ি করতে লাগল।


ওদিকে ঢ্যাঙা লিকলিকে ‘মাঝি’ও নিজের লিকলিকে সরু বুক চাপড়ে সাহস দিতে লাগল,

“চলেন কেনে বাবু, কোন চিন্তা নাই, পরাণ মাঝি থাকতেই ভয় কিসের?”


তিনজন নবাগতের মধ্যে একজন বলে উঠল,

“চলেন ক্যানে বাবু, পরাণ-দা যখন ভরসা দিচ্ছেন তখন আর কোন চিন্তা লাই।”


নবাগতদের আর একজনও বলল,

“এ অঞ্চলে পরাণ মাঝির নামে বাঘে গরুতে একঘাটে জল খায়; নদীও সামলে ঢেউ তোলে বাবু।”


তৃতীয় জন বলল,

“চলেন বাবু চলেন, আমদেরও যাওয়া খুব দরকার, হাসপাতালে রুগী মর মর।”


মনে মনে আমিও ভাবলাম, বাড়িতে সবাই আমার ফেরার জন্যে মুখ চেয়ে বসে থাকবে। না গেলে ওদের চিন্তা বাড়বে—সারাটা রাত ওদের দুশ্চিন্তায় কাটবে।


ঘাটে নেমে দেখলাম নৌকাটা সাধারণ খেয়া নৌকা নয়—সামান্য ছোট আর সৌখিন দেখতে ‘পানসি’ টাইপ নৌকাটি। মনে মনে ভাবলাম,

‘ভালই হয়েছে, শুনেছি ছোট নৌকা সহজে ডোবে না, মোচার খোলার মত ভেসে থাকে।’


শেষ পর্যন্ত দুগগা দুগগা বলে আমরা চারজন একে একে নৌকাতে উঠেই বসলাম। ঢ্যাঙা মাঝি জলে নেমে নৌকাকে সামান্য ঠেলে দিয়ে নিজেও উঠে শক্ত হাতে হাল ধরে বসে পড়ল। দেখতে দেখতে স্রোতের টানে তীরের মতো ছুটল নৌকা। এইবার নিজের সিদ্ধান্তে খুশি হয়ে পকেট থেকে সিগারেট দেশলাই বের করে আগুন জ্বালালাম। ওরা তিনজন ঘেঁষাঘেঁষি করে বসে রাতের নদীর ঠাণ্ডা বাতাস থেকে বাঁচতে কোঁচার কাপড় মাথায় টেনে নিয়ে ঝিমোতে লাগল।


ree

কিছু দূর দিয়ে একটা মালবওয়া মাঝারি আকারের স্টিমার দ্রুতবেগে উত্তর দিকে চলে গেল। ফলে নদীতে ঢেউয়ের আকারও বাড়তে লাগল।


আর একটু পরে নৌকা মাঝ নদীতে আসতেই এক এক পাহাড়ের মতো উঁচু ঢেউ এসে ধাক্কা মারতে লাগল নৌকাকে। ঢেউয়ের আঘাতে নৌকা কখনও ১০ ফুট ঢেউ-এর মাথায় আবার পর মুহূর্তে ১২ ফুট জলের নিচে ঢুকে যেতে লাগল। তখন মনে হচ্ছিল জলের একটা গভীর কুয়োর মধ্যে ঢুকে গেল আমাদের পানসী—চারিদিকে জল, মাঝখানে নৌকায় আমরা পাঁচজন মানুষ। আতঙ্কগ্রস্ত আমি একবার মাঝির দিকে তাকাই আর একবার আপাদমস্তক কাপড়ে মোড়া আমার তিন সাথীর দিকে তাকাই; কিন্তু মনে হল ওদের তিন জনের কোনো হুশ নেই, ঘোমটার বাইরে কি চলছে।


পরাণ মাঝিও মাঝে মাঝে ঢেউয়ের মাঝে অদৃশ্য হয়ে যাচ্ছিল, আবার কখনও বা পরাণ মাঝি অদৃশ্য হয়ে যাচ্ছিল আর থেকে থেকে একটা সম্পূর্ণ নর-কঙ্কালের অবয়ব দেখা যাচ্ছিল। সভ্যভাবে মনকে সান্ত্বনা দিলাম: পাহাড় প্রমাণ ঢেউ থেকে ছিটানো জলের পর্দার আড়ালে পরাণ মাঝিকে দেখতে ওরকম মনে হচ্ছে। মনকে বুঝালে কি হবে, ভয়ে আতঙ্কে আমার হাত-পা ঠাণ্ডা হয়ে এলো। আঙুল থেকে জ্বলন্ত সিগারেটটা পড়ে গেল জলে।


এবার ভীষণ আতঙ্কগ্রস্ত আমি বার বার নিজের বোকামির জন্য আফসোস করতে লাগলাম। কিন্তু এখন আফসোস করে আর কি হবে? ভয়ে, আতঙ্কে আমার চোখ বন্ধ হয়ে এলো। এমন সময় চোখ বন্ধ করে দুর্গা নাম জপ করা ছাড়া কি আর করা যায়? ওদিকে চেয়ে দেখলাম আমার তিন সাথী জড়াজড়ি করে নিঃশব্দে সাদা কাপড়ের আড়ালে বসে আছে—যেন প্রাণহীন শ্বেত পাথরের ডেলা, ঢেউয়ের দোলায় দুলছে। নৌকা এভাবে কতক্ষণ মোচার খোসার মতো জলের উপর নিচে করেছে জানি না। চোখ খুলে তাকাতেও আমার ভয় করছিল অথবা সীমাহীন আতঙ্কেই বুঝি আমার দু’চোখ স্বাভাবিক ভাবেই বন্ধ হয়ে গিয়েছিল।


হঠাৎ খুব কাছ দিয়ে যাওয়া একটা ছোট স্টিমারের ভেঁপুর আওয়াজে আচমকা আমার চোখ খুলে গেল। সভ্যভাবে কৃষ্ণা ত্রয়োদশীর এক ফালি চাঁদের ম্লান আলোকে চেয়ে দেখি মাঝি কোথায়? ঢেউয়ের দোলায় ছোট পানসী নৌকাটি মোচার খোসার মতো ভাসছিল। হঠাৎ আবিষ্কার করলাম, নৌকার খোলের মাঝখানে আতঙ্কগ্রস্ত আমি একা বসে আছি আর চারটি নরকঙ্কাল আমার চারপাশে দাঁড়িয়ে দূরে নদী পারের শ্মশান থেকে খোল কর্তালের শব্দের তালে তালে দু’হাত হাত তুলে পরম উল্লাসে নাচছে আর অবোধ্য ভাষায় গান করছে।


হঠাৎ মনে হল, আমি ত সাঁতার জানি, তাহলে বসে আছি কেন? কিন্তু উঠে দাঁড়াতে গিয়ে মাথাটা বন বন করে ঘুরে গেল। আর সঙ্গে সঙ্গে ভয়ে, আতঙ্কে টলতে টলতে নৌকার পাটাতনের উপর উপুড় হয়ে পড়ে আমি অজ্ঞান হয়ে গেলাম।


তারপর কি ভাবে যে দশ মাইল দূরের ঘাটে গিয়ে নৌকা পৌঁছল আমি জানি না। কপালের কোন থেকে টন টন করে একটা ব্যথা অনুভব করছিলাম; স্বাভাবিকভাবেই হাত চলে গেল ওখানে, কপালের কেটে যাওয়া স্থান থেকে বেরিয়ে আসা রক্ত জমাট বেঁধে নদীর বাঁধের মতো উঁচু হয়ে রয়েছে। আধো জাগা আধো স্বপ্নের মতো চারপাশে লোকজনের অস্পষ্ট কথাবার্তা কানে ভেসে আসছিল:


ree

“বাপরে, পরাণ মাঝির আর এক শিকার অল্পের জন্য ফসকে গেল।”

“দারুণ বেঁচে গেছে ভদ্রলোক।”

“এটা নিয়ে পরাণ মাঝির চার নম্বর শিকার হয়ে গেল।”

“এবার অ-সফল হওয়াতে পরাণ মাঝি কিন্তু তক্কে তক্কে থাকবে—এবার কার পালা, ভগবান জানেন।”

“ভাগ্যে ভোরে ভোরে ইলিশ ধরার নৌকার নকুল মাঝির চোখ পড়েছিল মোচার খোলার মতো ভাসমান নৌকোটার পানে, তাই টেনে নিয়ে এলো এই পঞ্চমুণ্ডীর শ্মশান ঘাটে।”


“ধন্যবাদ, অনেক ধন্যবাদ তোমাকে নকুল-দা।”


নকুল মাঝির স্বর শুনতে পেলাম:

“আমি বাঁচাবার কে ভাই? যিনি হামেশাই বাঁচান তিনিই বাঁচিয়েছেন বাবুকে।”

ree

Comments


ssss.jpg
sssss.png

QUICK LINKS

ABOUT US

WHY US

INSIGHTS

OUR TEAM

ARCHIVES

BRANDS

CONTACT

© Copyright 2025 to Debi Pranam. All Rights Reserved. Developed by SIMPACT Digital

Follow us on

Rojkar Ananya New Logo.png
fb png.png

 Key stats for the last 30 days

bottom of page