top of page

থান্ডার ড্রাগনের দেশ ভুটান.. মাটনের মহাভোজ..

আমি শ্রী সরোজ মজুমদার, একজন পদার্থবিদ্যার স্কুল শিক্ষক, ভ্রমণ করতে ভালোবাসি। সময় ও সুযোগ পেলেই ভ্রমণে বেরিয়ে পড়ি। এবার বেরিয়ে পড়েছিলাম হিমালয়ের কোলে অবস্থিত আমাদের প্রতিবেশী দেশ ভুটানের উদ্দ্যেশে। বাড়ি থেকে বেরিয়েছিলাম ১৫ই মে ২০২৪, বুধবার ও ভ্রমণ সেরে বাড়ি ফিরেছিলাম ২৩শে মে ২০২৪, বৃহস্পতিবার। আমি আমার প্রতিদিনের যাত্রাপথের কাহিনী নিম্নে বর্ণনা করলাম।

১ম দিন ১৫/০৫/২৪

এরা সুখের লাগি চাহে প্রেম ... তো এবার আঁখি সুখের লাগি একটু সুখের দেশে যাওয়ার সাধ জাগলো। কোথায় কী বাকি খোঁজ নিয়ে দেখি / কী আছে অঙ্গ রাজ্য / দেশে না বিদেশে, ভেবে হল শেষে / ভুটান যাওয়াই ধার্য। প্রস্তুতির প্রথম পর্যায়ে ১৩১৪৯-কাঞ্চন কন্যা এক্সপ্রেস ট্রেনের কনফার্ম টিকিটটা কেটে নিশ্চিন্ত হলাম।

ভুটান দক্ষিণ এশিয়ায় হিমালয়ের কোলে অবস্থিত স্থলবেষ্টিত একটি রাষ্ট্র যাকে ভুটানিরা মাতৃভাষা জংখায় 'দ্রুক ইয়ুল' বা 'বজ্র ড্রাগনের দেশ' নামে ডাকে। ভুটান উত্তরে তিব্বত, পশ্চিমে ভারতের সিকিম, পূর্বে অরুণাচল প্রদেশ এবং দক্ষিণে আসাম ও পশ্চিমবঙ্গ দ্বারা পরিবেষ্টিত। ভুটান শব্দটি এসেছে সংস্কৃত শব্দ "ভূ-উত্থান" থেকে যার অর্থ "উঁচু ভূমি"। ভূটানের আকার, আকৃতি ও পার্বত্য ভূ-প্রকৃতি সুইজারল্যান্ডের সদৃশ বলে দেশটিকে অনেক সময় এশিয়ার সুইজারল্যান্ড বলা হয়। ১৫ই মে রাত ৮:৩৫এ শিয়ালদহ স্টেশন থেকে কাঞ্চন কন্যায় যাত্রা শুরু হলো। বর্ধমান, শান্তিনিকেতন, মালদা হয়ে ট্রেন ছুটে চললো।

২য় দিন ১৬/০৫/২৪

ডালখোলা, শিলিগুড়ি হয়ে পরদিন দুপুর ১২টায় হাসিমারা স্টেশনে পৌছালাম। ডুয়ার্সের জঙ্গলের মধ্যে দিয়ে আসার সময় ট্রেনের জানালা দিয়ে দেখা দুপাশের চাবাগান, সবুজ প্রকৃতি আর ট্রেনের বাঁক মন কেড়ে নেয়। হাসিমারা থেকে ১৯কিমি পথ পেরিয়ে ভারত ও ভুটানের সীমান্তবর্তী শহর জয়গাওয়ের হোটেলে এসে ফ্রেশ হয়ে মধ্যান্ন ভোজন সেরে নিলাম। একটু বিশ্রাম নিয়ে বিকেলে পায়ে হেঁটে ভুটান গেট দেখে ইমিগ্রেশন অফিসে সচিত্র পরিচয়পত্র দেখিয়ে ভুটানের ফুন্টশোলিংএ প্রবেশ করলাম। ফুন্টশোলিংএর রাস্তাঘাট, বাড়ি ঘর খুব সুন্দর, পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন। পায়ে পায়ে জাঙটোপেলরি লাখাং বৌদ্ধ মন্দির, ফুন্টশোলিং মার্কেট ও এখানকার অলি গলি ঘুরে সন্ধ্যায় জয়গাওয়ে ফিরে এলাম। জয়গাওয়ের মার্কেটটিও দারুন জমাটি। লাইন দিয়ে দলবদ্ধ ট্রাকের দল চলেছে ভারতের সীমানা পেরিয়ে ভুটানের অন্দরে।

রাতঠিকানা: হোটেল ক্লাসিক ইন; এম.জি রোড, জয়গাও, আলিপুরদুয়ার, ওয়েস্ট বেঙ্গল-৭৩৬১৮২। দূরাভাষ: ০৮৩২৭৩৯১২৯৬

৩য় দিন ১৭/০৫/২৪

প্রাতঃভ্রমণ সেরে প্রাতঃরাশ করে নিয়ে ভুটানের ফুন্টশোলিং ইমিগ্রেশন অফিসে চলে এলাম। পাসপোর্ট অথবা ভোটার কার্ড সাথে দুই কপি ফটো; ১২০০টাকা প্রতিদিন হিসেবে ৫দিনের ৬০০০টাকা এস.ডি.এফ দিয়ে ভুটানে প্রবেশের অনুমতি পত্র মিললো। ভুটানে ব্যবহারের জন্য ভুটান টেলিকমের একটি বি.টি টুরিস্ট সিম নিয়ে নিলাম। ভুটান ভ্রমণে সাথে গাইড নেয়া বাধ্যতামূলক।

গাড়িতে বসে গাইডের কাছে ভুটানের গল্প শুনতে শুনতে দুটি চেক পোস্ট পেরিয়ে দুপুর ১২:৪৫এ গেদুতে বৌদ্ধ উপাসনালয় “অষ্ট ধৰ্ম কায়া স্তূপাতে” এসে দাঁড়ালাম। ভুটানের সময় ভারতের চেয়ে ৩০মিনিট এগিয়ে। সবুজ ভুটানের আঁকা বাঁকা পাহাড়ি পথ ধরে চুখার ড্যাম ভিউ রেস্তোরাতে এসে লাঞ্চ সেরে নিলাম। এখান থেকে ওয়াংচু নদীতে তৈরি চুখা বাঁধটি দেখা যায় যেখানে একটি জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র আছে। ভুটানে পর্যাপ্ত পরিমান জলবিদ্যুৎ উৎপন্ন হওয়ায় ভুটান ভারতে তা রপ্তানি করে। ফুন্টশোলিং-থিম্পু হাইওয়ের পাশে দারুন সুন্দর ওয়াংখা জলপ্রপাত দেখতে পেলাম। ভুটানের রাস্তাঘাট নির্মাণ ও রক্ষণাবেক্ষন করে ভারতের বর্ডার রোডস অর্গানাইজেশন বা বি.আর.ও।

চিমাখা, চাপচা, দামচু হয়ে ভুটানের মনোমুগ্ধকর সবুজ উপতক্যার রস আস্বাদন করতে করতে পারো চু, থিম্পু চু ও ওয়াং চু নদীর সঙ্গমস্থল চুজোমে এসে পৌছালাম। ভুটানি ভাষায় ‘চু’ কথার অর্থ নদী। এখানে ওয়াং চু নদীর উপরের ব্রিজ থেকে চারিদিকের দৃশ্য অসাধারণ। এখান থেকে রাস্তা বিভক্ত হয়ে যথাক্রমে পারো, হা-ভ্যালি ও থিম্পুর দিকে গেছে। থিম্পুর দিকে যাওয়ার পথের মুখে একটি সুদৃশ্য তোরণ ও তার পাশে ভুটানের রাজা রানীর একটি বরো প্রতিকৃতি রয়েছে। ভুটানে রয়েছে একটি সাংবিধানিক রাজতন্ত্র যেখানে একজন রাজা (দ্রুক গয়ালপো) রাষ্ট্রের প্রধান এবং সরকার প্রধান একজন প্রধানমন্ত্রী। চুজোমে একটি সুন্দর বিকেল কাটিয়ে রাজধানী থিম্পুর উদ্যেশে পাড়ি দিলাম। শৈলশহর থিম্পু শহরে ঢোকার মুখে একটি সুন্দর ওয়েলকাম গেট আছে। রাতের খাওয়াদাওয়া শেষ করে রাস্তায় হাঁটতে বেরিয়ে চারিদিকে পাহাড়ের গায়ে আলোর রোশনাই কে “আলোতে আলোতে ঢাকা” বলে মনে হচ্ছিলো। পাহাড়ের একটু নিচে থিম্পু চু নদীর তীরে একটি আলোকোজ্জ্বল সবুজ খেলার মাঠে রাতের বেলা ফুটবল খেলা দেখতে বেশ লাগছিল।

রাতঠিকানা: সিলভারপাইন বুটিক; নিয়ার থিম্ফু ওয়েলকাম গেট, থিম্ফু-১১০০১, ভুটান। দূরাভাষ: +৯৭৫১৭৬৪৯৭২০

৪র্থ দিন ১৮/০৫/২৪

প্রাতঃভ্রমণে বেরিয়ে থিম্ফুর পাহাড়ি রাস্তা ধরে হাঁটতে হাঁটতে চলে গেলাম পাহাড়ের নিচে থিম্ফু চু নদীর তীরে। সবুজ বনানীর মধ্য দিয়ে কলরোল তুলে বয়ে যাওয়া ওয়াংচু নদী ও পাহাড়ের গাঁয়ে মাখা সূর্যোদয়ের প্রথম কিরণ মনকে আবিষ্ট করে দিলো। আজ পুরো থিম্পু শহর ঘুরে দেখার দিন।

শান্তি ও সমৃদ্ধির প্রতীক গ্রেট বুদ্ধ ডোরডেনমা হল থিম্ফুর পাহাড়ে চূড়ায় অবস্থিত ১৭৭ফুট উঁচু একটি বিশাল সোনালী ধাতব বুদ্ধ মূর্তি। এখানে ভিতরে এক লক্ষেরও বেশি ছোট বুদ্ধের মূর্তি রয়েছে, যার প্রত্যেকটি গ্রেট বুদ্ধ ডোরডেনমার মতো। এখান থেকে থিম্পু উপত্যকার প্যানোরমিক দৃশ্য দেখার পর এই স্থান ছেড়ে যেতে আর মন চাইবে না।

ভুটানের একমাত্র হিন্দু মন্দির রাজধানী থিম্পুর চংবংদুতে রয়েছে। এই দুর্গা মাতার মন্দিরে মা দূর্গা, মা কালীর মূর্তি সহ একটি বরো শিবলিঙ্গ আছে। মন্দিরটি খুব সুন্দর। মন্দির থেকে থিম্পু শহর এবং আশেপাশের পাহাড়ের মিলিয়ন ডলার ভিউ পাওয়া যায়।

ঐতিহ্যবাহী থিম্পুর জিলুখায় রয়েছে মেয়েদের জন্য শতাব্দী প্রাচীন “থাংথং দেওয়াচেন দুপথপ নানারি” বৌদ্ধ মঠ। এখানে সন্ন্যাসীনিরা আধ্যাত্মিকতা এবং বৌদ্ধ ধর্মের জন্য তাদের জীবন উৎসর্গ করেছেন। এখান থেকে ভুটানের রাজার প্রাসাদ দেখতে পাওয়া যায়। নানারিতে প্রসাদ হিসেবে পরিবেশন করা হয় লাল চালের ভাত ও অন্যান্য জিনিসের সাথে ভুটানের জাতীয় খাবার ‘এমা দাতশি’ যা বড় সবুজ মরিচ এবং চিজ দিয়ে তৈরি; যার স্বাদ আমিও নিলাম। এখান থেকে বেরোবার পর কিছুটা সময় বৃষ্টির মধ্যে পড়লাম।

থিম্পুর পাহাড়ে সবুজ ঘাসের গালিচার মধ্যে অবস্থিত অনন্য সুন্দর বৌদ্ধ মন্দির বা প্যাগোডা “ন্যাশনাল মেমোরিয়াল চোরটেন” যা বিশ্ব শান্তি ও সমৃদ্ধির জন্য নিবেদিত। চোরটেনের স্থাপত্যে রয়েছে তিব্বতি শৈলী। এখানে পর্যটকদের প্রবেশের জন্য টিকিট লাগে। ভুটানের নিজের মুদ্রা 'গুলট্রাম' এর মতো ভুটানে সর্বত্র ভারতীয় মুদ্রা ‘রুপি’ চলে।


থিম্পু শহরে ঢোকার মুখে একটি সুন্দর ওয়েলকাম গেট আছে। রাতের খাওয়াদাওয়া শেষ করে রাস্তায় হাঁটতে বেরিয়ে চারিদিকে পাহাড়ের গায়ে আলোর রোশনাই কে “আলোতে আলোতে ঢাকা” বলে মনে হচ্ছিলো। পাহাড়ের একটু নিচে থিম্পু চু নদীর তীরে একটি আলোকোজ্জ্বল সবুজ খেলার মাঠে রাতের বেলা ফুটবল খেলা দেখতে বেশ লাগছিল।

রাতঠিকানা: সিলভারপাইন বুটিক; নিয়ার থিম্ফু ওয়েলকাম গেট, থিম্ফু-১১০০১, ভুটান। দূরাভাষ: +৯৭৫১৭৬৪৯৭২০

নগাওয়াং নামগিয়াল দ্বারা নির্মিত হয়েছিল, যিনি ভুটানকে একীভূত করেছিলেন। সিমতোখা জং-এ ভাষা ও সাংস্কৃতিক অধ্যয়নের ব্যবস্থা রয়েছে, যেখানে সারা ভুটান থেকে শিক্ষার্থীরা তাদের দেশের মাতৃভাষা জংখা, সংস্কৃতি এবং ঐতিহ্য সম্পর্কে জানতে আসে। আমাদের গাইড জং এর পুরো ইতিহাস সংক্ষেপে বুঝিয়ে বলছিলেন এবং জানালেন যে জং কথার অর্থ দুর্গ। জং এর ভিতর ঘুরতে ঘুরতে একদল ছোট ছাত্রদের সাথে দেখা হয়ে গেল যাদের সাথে কিছুটা সময় কাটিয়ে, একসাথে ছবি তুলে পরবর্তী গন্তব্যের জন্য বেরিয়ে পড়লাম।

থিম্পুর কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত সিম্পলি ভুটান হল একটি ইন্টারেক্টিভ লিভিং মিউজিয়াম (জীবন্ত যাদুঘর) যা ভুটানের ঐতিহ্যবাহী জীবনের বিভিন্ন দিকের দ্রুত পরিচিতি দেয়। নির্দিষ্ট মূল্যের টিকিট কেটে প্রবেশের সময় দর্শকদের স্থানীয় সুরা ‘আরা’ পানাহার দিয়ে অভ্যর্থনা জানানো হয়। এটিকে জীবন্ত যাদুঘর বলা হয় কারণ এখানে ভুটানের সংস্কৃতি, পোশাক, স্থাপত্য, ভাস্কর্য, লোকনৃত্য, সঙ্গীত, ক্রীড়া এবং স্থানীয় খাবার ইত্যাদি প্রদর্শন ও পরিবেশন করা হয়। ভুটানের জাতীয় খেলা তীরন্দাজিতে পর্যটকরা অংশ নিতে পারেন। এখানে ভুটানের ছেলেদের পোশাক ‘ঘো’ ও মেয়েদের পোশাক ‘কিরা’ পরে ছবি তোলার ব্যবস্থা আছে। নদী মো চু মিলিত হয়ে পুনা তাং চু নদী নাম নিয়ে প্রবাহিত হয়েছে আর এই সঙ্গমস্থলের কাছেই রয়েছে ঐতিহ্যবাহী ভুটানি স্থাপত্যের একটি অত্যাশ্চর্য উদাহরণ পুনাখা জং দুর্গটি। টিকিট কেটে মো চু নদীর উপর নির্মিত কাঠের সেতু অতিক্রম করে মূল দুর্গে প্রবেশের আগে ডানপাশে মো চু নদীর তীরে রাজকুমারী গাছে বেগুনি বর্ণের ফুলের শোভা পথ আটকে দাঁড়াল। একটি খাড়া কাঠের সিঁড়ি বেয়ে দুর্গের মধ্যে ঢুকে দেখি কেন্দ্রীয় প্রাঙ্গণে একটি বোধি গাছ রয়েছে। দুর্গের ভিতরে মন্দির এবং প্রশাসনিক অফিস আছে। সবমিলিয়ে দুর্গের বাইরের ও ভিতরের দৃশ্য এক রোমাঞ্চকর অনুভূতি তৈরি করে।

থিম্পুর দক্ষিণ-পূর্বে অবস্থিত সিমতোখা জং ভুটানের প্রাচীনতম জংগুলির মধ্যে একটি, যেটি ১৬২৮ সালে রাজা শাবদ্রুং নগাওয়াং নামগিয়াল দ্বারা নির্মিত হয়েছিল, যিনি ভুটানকে একীভূত করেছিলেন। সিমতোখা জং-এ ভাষা ও সাংস্কৃতিক অধ্যয়নের ব্যবস্থা রয়েছে, যেখানে সারা ভুটান থেকে শিক্ষার্থীরা তাদের দেশের মাতৃভাষা জংখা, সংস্কৃতি এবং ঐতিহ্য সম্পর্কে জানতে আসে। আমাদের গাইড জং এর পুরো ইতিহাস সংক্ষেপে বুঝিয়ে বলছিলেন এবং জানালেন যে জং কথার অর্থ দুর্গ। জং এর ভিতর ঘুরতে ঘুরতে একদল ছোট ছাত্রদের সাথে দেখা হয়ে গেল যাদের সাথে কিছুটা সময় কাটিয়ে, একসাথে ছবি তুলে পরবর্তী গন্তব্যের জন্য বেরিয়ে পড়লাম।

থিম্পুর কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত সিম্পলি ভুটান হল একটি ইন্টারেক্টিভ লিভিং মিউজিয়াম (জীবন্ত যাদুঘর) যা ভুটানের ঐতিহ্যবাহী জীবনের বিভিন্ন দিকের দ্রুত পরিচিতি দেয়। নির্দিষ্ট মূল্যের টিকিট কেটে প্রবেশের সময় দর্শকদের স্থানীয় সুরা ‘আরা’ পানাহার দিয়ে অভ্যর্থনা জানানো হয়। এটিকে জীবন্ত যাদুঘর বলা হয় কারণ এখানে ভুটানের সংস্কৃতি, পোশাক, স্থাপত্য, ভাস্কর্য, লোকনৃত্য, সঙ্গীত, ক্রীড়া এবং স্থানীয় খাবার ইত্যাদি প্রদর্শন ও পরিবেশন করা হয়। ভুটানের জাতীয় খেলা তীরন্দাজিতে পর্যটকরা অংশ নিতে পারেন। এখানে ভুটানের ছেলেদের পোশাক ‘ঘো’ ও মেয়েদের পোশাক ‘কিরা’ পরে ছবি তোলার ব্যবস্থা আছে।


ভুটানের রয়্যাল টাকিন সংরক্ষণ অভয়ারণ্যটিতে জাতীয় প্রাণী টাকিন সহ ইয়াক, বুনো শূকর, সাম্বার হরিণ ও বিভিন্ন বন্য প্রাণী দেখতে পাওয়া যায়। নির্দিস্ট স্থানে গাড়ি পার্ক করে কিছুটা চড়াই পথ পেরিয়ে, টিকিট কেটে এখানে প্রবেশ করতে হয়। অদ্ভুত চেহারার প্রাণী টাকিন যা গরু এবং ছাগলের সমন্বয়ে তৈরী।

পড়ন্ত বিকেলে চলে এলাম থিম্পুর প্রাণ কেন্দ্র ক্লক টাওয়ার গ্রাউন্ডে। শহরের মাঝখানে এটি একটি খোলা প্যাভিলিয়ন যেখানে কনসার্ট সহ যেকোনো সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়। এখানে বসে বন্ধু এবং পরিবারের সাথে সময় কাটাতে পারেন। চারপাশে অনেক দোকান ও রেস্তোরাঁ আছে যেখানে কেনাকাটা ও খাওয়া দাওয়া উভয়ই করা যেতে পারে। রাস্তার দুপাশেই গাড়ি পার্কিং এর ব্যবস্থা আছে। এখানকার ট্রাফিক পুলিশ হাতের ইশারায় যানবাহন নিয়ন্ত্রণ করে এবং যেকোনো চলন্ত গাড়ি জেব্রা ক্রসিংএ মানুষজন পারাপার হতে দেখলেই দাঁড়িয়ে যায়। ভুটানের গাড়ির ড্রাইভাররা সাধারণত হর্ন বাজান না।

৫ম দিন ১৯/০৫/২৪

সাত সকালে ঝিরি ঝিরি বৃষ্টির মধ্যে হাঁটতে বেরিয়ে থিম্ফু চু নদীর কলকল্লোলের মধ্যে রাস্তার পশে নাম না জানা অনেক রূপসী ফুল ও একটি ভারতীয় এইচ.পি এর পেট্রল পাম্প দেখলাম। পাহাড়ের গায়ে সাদা মেঘের ভেলা ভেসে বেরাচ্ছিল।

বেশ ঠান্ডার মধ্যে থিম্পু থেকে পুনাখা যাওয়ার পথে সকাল দশটায় ১০,১৭১ফুট উচ্চতায় অবস্থিত ডোচুলা গিরিপথের ডোচুলা চোরটেন বৌদ্ধ মন্দিরে পৌছালাম। এখানে ১০৮টি চরটেন বা স্তূপা রয়েছে যা ভুটানি সৈন্যদের স্মৃতিতে নির্মিত। ডোচুলা থেকে চারিপাশের প্যানোরামিক দৃশ্য শ্বাসরুদ্ধকর। পশে একটু উপরে একটি পার্ক রয়েছে যেখানে একাধিক মেডিটেশন কেভ আছে।

ভুটানের পুরাতন রাজধানী শৈলশহর পুনাখায় পুরুষ নদী ফো চু এবং নারী নদী মো চু মিলিত হয়ে পুনা তাং চু নদী নাম নিয়ে প্রবাহিত হয়েছে আর এই সঙ্গমস্থলের কাছেই রয়েছে ঐতিহ্যবাহী ভুটানি স্থাপত্যের একটি অত্যাশ্চর্য উদাহরণ পুনাখা জং দুর্গটি। টিকিট কেটে মো চু নদীর উপর নির্মিত কাঠের সেতু অতিক্রম করে মূল দুর্গে প্রবেশের আগে ডানপাশে মো চু নদীর তীরে রাজকুমারী গাছে বেগুনি বর্ণের ফুলের শোভা পথ আটকে দাঁড়াল। একটি খাড়া কাঠের সিঁড়ি বেয়ে দুর্গের মধ্যে ঢুকে দেখি কেন্দ্রীয় প্রাঙ্গণে একটি বোধি গাছ রয়েছে। দুর্গের ভিতরে মন্দির এবং প্রশাসনিক অফিস আছে। সবমিলিয়ে দুর্গের বাইরের ও ভিতরের দৃশ্য এক রোমাঞ্চকর অনুভূতি তৈরি করে।

পুনাখা জং এর অনতিদূরে ফো চু নদীর উপরে রয়েছে রঙিন প্রার্থনা পতাকায় সজ্জিত ভুটানের দীর্ঘতম ঝুলন্ত সেতু পনাখা সাসপেনশন ব্রিজ। হাওয়ার প্রবাহে দুলন্ত সেতুর উপর দিয়ে হেঁটে ওপারে চলে গেলাম। এখানে ‘ব্রিজ ভিউ’ নামে একটি রেস্তোরা আছে। সেতুর মাঝখান থেকে নদীর দৃশ্য মনোমুগ্ধকর। ঝুলন্ত সেতুটি দুটি পাহাড়ি গ্রামকে সংযোগ করতে সাহায্য করে।

পুনাখা রেসিডেন্সি হোটেলে মধ্যান্ন ভোজন সম্পন্ন করে চলে এলাম ১৪৯৯ সালে লামা ড্রুকপা কুয়েনলি দ্বারা নির্মিত ‘চিমি লাখাং’ ফার্টিলিটি মন্দিরে(ফ্যালাস টেম্পল)। এখানে পুরুষাঙ্গের পুজো হয় এবং নিঃসন্তান দম্পতিরা সন্তান কামনায় এখানে পুজো দিতে আসেন। পুনাখায় পাহাড়ের গায়ে ধাপ চাষ পদ্ধতিতে প্রচুর লাল চালের ধান চাষ হয় যা ভুটানের প্রধান খাবার।

৬ষ্ঠ দিন ২০/০৫/২৪

সকাল সকাল ঘন সবুজ পাইনের বনে হারিয়ে যেতে মন্দ লাগছিলো না। প্রায় জনমানব শুন্য রাস্তা, চারিদিকে সবুজের সমারহ, মাথার উপর ভেসে যাওয়া সাদা মেঘের পালের মধ্যে দিয়ে আজকের সূর্যোদয় হল। প্রাতঃরাশ সেরে বিশ্বের সবচেয়ে আকারে বড় বইয়ের বাড়ি থিম্পুতে ভুটানের জাতীয় গ্রন্থাগারে চলে এলাম। এখানে বইয়ের বিশাল সংগ্রহ রয়েছে। গ্রন্থাগারের অন্দরে ফটোগ্রাফির অনুমতি নেই। থিম্পুতে অবস্থিত ফোক হেরিটেজ মিউজিয়াম কাওয়াজাংসা একটি অনন্য প্রতিষ্ঠান যা ভুটানি জনগণের সমৃদ্ধ সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য, জীবনধারা, রীতিনীতি এবং কারুশিল্প প্রদর্শন করে। যাদুঘরটিতে এন্ট্রি ফি দিয়ে প্রবেশ করতে হয়। এখানে ভুটানি টেক্সটাইল, পোশাক গহনা এবং অন্যান্য সামগ্রীর প্রদর্শনও রয়েছে যা ইচ্ছে করলে কেনা যেতে পারে। এখানে একটি রেস্তোরাঁ আছে যারা ভুটানের খাবার পরিবেশন করে। মিউজিয়ামে “হট স্টোন বাথের” প্রদর্শন আছে যেখানে ভুটানিরা প্রথমে পাথরগুলিকে আগুন দিয়ে গরম করে স্নানের জলের মধ্যে রাখে।


থিম্পু শহরকে ছেড়ে এবার পারোর পথে বেরিয়ে পড়লাম। পথে যেতে যেতে গাড়িতে বসে গাইডের কাছ থেকে জানতে পারলাম যে রাজ পরিবারের সদস্য ছাড়া সাধারণ ভুটানিদের নামের সাথে কোন পদবি থাকে না এবং প্রথাগতভাবে বিবাহের পর বরেরা কনের পারিবারিক ঘরে স্থানান্তরিত হয়। চুজোম ব্রিজ পেরিয়ে পারোর উপত্যকার কাছা কাছি পৌঁছে পারো চু নদীর তীরে একটি ভিউ পয়েন্টে নদীর জল ছুঁয়ে দেখার জন্য দাঁড়াতে হলো। নদীর স্ফটিক-স্বচ্ছ জলের কলরোল, পাখির কিচিরমিচির শব্দ এবং গাছের পাতার মধ্য দিয়ে মৃদু বাতাসের ঝিরঝির আওয়াজ মনোরম পরিবেশে তৈরি করে। নদীর তীরে একাধিক সুদৃশ্য ব্যালান্সড স্টোন পিরামিডও দেখতে পাওয়া গেল।




ভুটানের জাতীয় জাদুঘর হলো পশ্চিম ভুটানের পারো শহরে অবস্থিত একটি সাংস্কৃতিক জাদুঘর। টিকিট কেটে মিউজিয়ামে ঢোকার আগে ব্যাগ ও ফোন একটা লকারে রেখে যেতে হবে। জাদুঘরটি দুই ভাগে বিভক্ত; ১মটি ছোট জাদুঘর ও ২য়টি ওয়াচ টাওয়ার মিউজিয়াম। এখানে ভুটানের ইতিহাসকে ধরে রাখে হয়েছে। বৌদ্ধ ধর্মের লিপি থেকে শুরু করে পূর্বপুরুষদের যুদ্ধে ব্যাবহৃত অস্ত্র, পোশাক, রান্নার বাসনপত্র, ডাকটিকিট, কৃষি কাজে ব্যাবহৃত সরঞ্জাম, বিভিন্ন প্রাণীর দেহাবশেষ সবকিছু এখানে সংরক্ষিত আছে। এখানে একটি ভিউপয়েন্ট আছে যেখান থেকে পারো শহরের মনোরম দৃশ্য এবং পারো বিমানবন্দরের রানওয়ে দেখতে পাওয়া যা পারো চু নদীর তীরে রিনপুং জং বা পারো জং ভুটানের বৃহত্তম এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বৌদ্ধ মঠগুলির মধ্যে একটি যা ভুটানি স্থাপত্যের এক অত্যাশ্চর্য উদাহরণ। এটি একটি আধ্যাত্মিক ও প্রশাসনিক কেন্দ্র হিসাবে কাজ করে। জংয়ে কয়েকটি মন্দির রয়েছে, যেখানে সন্ন্যাসীরা প্রতিদিনের প্রার্থনা এবং আচার-অনুষ্ঠানে নিযুক্ত হন। জংএর সামনে একটি বরো কমলা লেবু গাছে প্রচুর পাঁকা কমলা লেবু দেখতে পেলাম।

বিকেলে পায়ে হেঁটে পারো শহর দেখতে বেরিয়ে পড়লাম। এখানেও পাহাড়ের গায়ে ধাপ চাষ পদ্ধতিতে ধান চাষ হয়। পাহাড়ের ফাঁক দিয়ে একটি বিমান কে এসে মাথার উপর দিয়ে চক্কর কেটে পারো বিমানবন্দরে নেমে যেতে দেখলাম। স্থানীয় একটি রেস্তোরাঁতে ভুটানের জনপ্রিয় পানীয় বাটার টি বা মাখন চায়ের স্বাদ নিলাম। সন্ধ্যা নামতেই পারো শহর আলোয় ঝলমল করে উঠলো। এখানকার অধিকাংশ শোপিসের দোকানে কাঠের বা প্লাস্টিকের তৈরি পুরুষাঙ্গের(ফ্যালাস) শোপিস বিক্রি হতে দেখলাম যা কিনা ভুটানে সৌভাগ্যের প্রতীক হিসেবে মানা হয়।

রাতঠিকানা: হোটেল সেন্টার পয়েন্ট; পারো টাউন, পারো-১২০০১, ভুটান। দূরাভাষ: +৯৭৫১৭৬৭৪১৮৮


৭ম দিন ২১/০৫/২৪

রাতে হোটেলের জানালা দিয়ে বাইরের পাহাড়ের দিকে তাকিয়ে বৃষ্টি দেখছিলাম আর একটু উৎকন্ঠিত হচ্ছিলাম। রাতে ভালো ঘুম হলো না। ভোর পাঁচটায় আমার গাড়ির ড্রাইভার দিচেন ফোন করে বললো “সাবজি কেয়া করেগা, বারিস হো রাহি হ্যায়”। আমি বললাম চিন্তা কোরনা, তুমি পৌনে সাতটায় চলে এসো। দিচেন ঠিক সময় মতো এসে হোটেল থেকে আমাকে নিয়ে বেরিয়ে পড়ল।

সারা রাতের বৃষ্টিতে রাস্তা ভিজে গেছে আর পাহাড় আরো সবুজ হয়ে গেছে। দিচেন আমাকে টাইগার নেস্টের কার পার্কিং এ নামিয়ে দিয়ে চলে গেলো। তৎসং টিকিট কাউন্টার যেটি সকাল সাতটা থেকে দুপুর একটা পর্যন্ত খোলা থাকে; সেখান থেকে ১০০০টাকার বিনিময়ে একটি টিকিট নিয়ে সকাল ৭:২০তে টাইগার নেস্টের উদ্যেশে ট্রেকিং শুরু করলাম। সমুদ্র পৃষ্ঠ থেকে ১০,২৩৬ফুট উচ্চতায় অবস্থিত টাইগার নেস্ট ট্রেকিংয়ে যাওয়া আসা দিয়ে মোট দূরত্ব ৬.৪কিমি। ঘন সবুজ পাহাড়ি বনের মধ্যে দিয়ে মেঠো চড়াই পথে এগোতে থাকলাম। একটানা পাহাড়ের উপরের দিকে হেঁটে উঠতে থাকায় শারীরিক কষ্টের কারণে মাঝে মাঝে একটু দাঁড়িয়ে নিচ্ছিলাম। সকাল আটটায় তৎসং ক্যাফেটেরিয়াতে পৌঁছে গেলাম। ঘোড়ার পিঠেও চেপে ক্যাফেটেরিয়ার আগে পর্যন্ত আসা যায়।


ক্যাফেটেরিয়া থেকে টাইগার নেস্ট মনাস্ট্রির খুব সুন্দর ভিউ পাওয়া যায়। আবার হাঁটতে শুরু করলাম। বেশ কিছুটা যাওয়ার পর রেলিং সহ বাঁধানো ধাপ যুক্ত রাস্তা পেলাম। যত এগোচ্ছিলাম পাহাড়ের খাঁজে অবস্থিত টাইগার নেস্টকে দেখতে ততো অপরূপ লাগছিল। পথে সুন্দর তৎসং জলপ্রপাত পেলাম। অবশেষে চড়াই-উতরাই পেরিয়ে সকাল ৯:২৫এ টাইগার নেস্টে মনাস্ট্রিতে পৌছালাম। কাউন্টারে টিকিট, ব্যাগ ও মোবাইল সব জমা করে গাইডের সাথে টাইগার নেস্ট মনাস্ট্রির মধ্যে প্রবেশ করলাম। জুতো খুলে রেখে একে একে মনাস্ট্রির ভিতর সব মন্দির, গুহা ও দর্শনীয় স্থান গুলি দেখে, বিস্কুট সহ এক কাপ গরম চা পান করে বাইরে এসে ব্যাগ ও মোবাইল, কাউন্টার থেকে ফেরত নিলাম। ফিরতি পথে তৎসং ক্যাফেটেরিয়াতে মধ্যান্ন ভোজন সমাপ্ত করে দুপুর ১২:৩০এ কার পার্কিংয়ে ফিরে দিচেনের গাড়িতে করে পাহাড়ি আঁকা বাঁকা অপরূপ সবুজ পথ ধরে চেলেলা গিরিপথের উদ্যেশে যাত্রা শুরু করলাম।

চলতি পথে “পারো এয়ারপোর্ট বার্ড’স আই ভিউ পয়েন্টে” একটু দাঁড়ালাম যেখান থেকে পুরো পারো এয়ারপোর্টটিকে দেখা যায়। এখান থেকে বিমান ওঠা নামার দৃশ্য চিরদিন মনের ক্যানভাসে আঁকা থাকবে। ভুটানের জাতীয় বিমান সংস্থা “ড্রুক এয়ার” যার পরিষেবা আমাদের কলকাতা থেকে চালু আছে। দুপুর আড়াইটেয় কনকনে ঠান্ডা আর দমকা হওয়ার মধ্যে ১৩,০৮৩ফুট উঁচু ভুটানের সর্বোচ্চ মোটরযানযোগ্য রাস্তা চেলেলা পাসে পৌছালাম। এখানে প্রায় সব জায়গাতেই বৌদ্ধদের টাঙ্গানো প্রেয়ার ফ্ল্যাগ আছে। কিছুদূর উপরে উঠে যাবার পর সারি সারি বিশাল সব পাহাড় আর তাদের মাঝে উপত্যকায় ছোট ছোট ঘরবাড়ি দেখা যায়। এখান থেকে ‘হা’ উপত্যকার সুন্দর রূপ নজর কাড়বে।

গাড়ি: দিচেন, মারুতি অল্টো ৮০০, পারো টাউন, পারো-১২০০১, ভুটান। দূরাভাষ: +৯৭৫১৭৬২০১৯৬


৮ম, ৯ম দিন ২২,২৩/০৫/২৪

এবার বাড়ি ফেরার পালা। গাড়িতে বসে গাইডের কাছে ভুটানের অনেক কাহিনী শুনলাম। ভুটানের ৭১% এলাকা অরণ্য আচ্ছাদিত হওয়ায়, ভুটান পৃথিবীর একমাত্র কার্বন নেগেটিভ দেশ। ভুটানে উচ্চ মাধ্যমিক পর্যন্ত শিক্ষা এবং সবার জন্য চিকিৎসা পুরোপুরি ফ্রি।

ভুটানের অধিবাসীরা বৌদ্ধ ধর্মে বিশ্বাসী এবং সবাই বেশ শান্ত স্বভাবের। মৃত ব্যক্তির আত্মার শান্তি কামনায় ভুটানের বিভিন্ন স্থানে পাহাড়ের খাঁজে খাঁজে ছোট ছোট স্তূপা রাখতে দেখা যায়। ভুটানের রাস্তার পাশের অনেক দোকানে ফুচকার ন্যায় দেখতে একটু আকারে বরো খাবার এবং চীজ কিউব এর চেন ঝোলানো অবস্থায় থাকে। চুজোম ব্রিজ পেরিয়ে চুখা, গেদু হয়ে ফুন্টশোলিংএ ভুটানের ইমিগ্রেশন অফিসে পৌঁছে সমস্ত নিয়মনীতি পালন করে ভারতের জয়গাওয়ে এসে মধ্যান্য ভোজন সেরে হাসিমারা স্টেশনে চলে এলাম। বিকেল ০৪:০২এর ১৩১৫০-কাঞ্চন কন্যা এক্সপ্রেস ট্রেনে সওয়ারী হয়ে একই পথে পরদিন সকাল ৮:২০তে শিয়ালদহে পৌঁছে লোকাল ট্রেন ধরে বেলঘরিয়ার বাড়ি ফিরলাম।

মাটনের মহাভোজ

মাটন মানেই বাঙালি নিয়মের আলু-ঝোলের চাহিদা এমন নয়। বরং বাংলার রান্নাঘরের নানা উপকরণ ও মশলা দিয়ে মটনের বিভিন্ন পদ কব্জি ডুবিয়ে খেতে পছন্দই করেন ভোজনরসিকরা। কিছু মশলার পরিমাণ এ দিক ও দিক করলে আর কিছু যোগ বিয়োগেই মাংসের নানা পদ তৈরি করা যায়। চিরচেনা স্বাদ পাল্টে একটু অন্যরকম স্বাদে মাটনকে আবিষ্কার করতে হলে এই রেসিপি গুলো আপনাকে বানাতেই হবে।

মাটন‌ চাপ

কী কী লাগবেঃ

৪০০ গ্রাম মটন (পাঁজর), ৩টি বড় পেঁয়াজ কাটা, ২চামচ আদা বাটা, ১ চামচ রসুন বাটা, ১টি বড় এলাচ গুড়ো করা, ২টি ছোট এলাচের দানা, ২টি দারচিনি, ২টি লাল লঙ্কা, ১/৪ চামচ লবঙ্গ, ১ চামচ কাশ্মীরি লাল লঙ্কা পাউডার, ১/২ চামচ হলুদ পাউডার, ১/৪ চামচ জিরা পাউডার, ৪টি গোটা গোলমরিচ, ২ চামচ সর্ষের তেল, ১ কাপ দই ফেটানো, নুন স্বাদ মতো।


কীভাবে বানাবেনঃ

রান্নার প্রথমেই মটন চাপ বানানোর জন্য পাঁজরগুলি ভালো করে জলে ধুয়ে টিস্যু পেপারে জল শুষতে রেখে দিন। এবার একটি বড় বাটিতে দই ফেটানো, নুন, হাফ আদা-রসুন বাটা নিয়ে ভালো করে মিক্স করতে থাকুন, এরপর সেই মিস্কচারে মটন পিসগুলি ভালো করে ডুবিয়ে কোটিং করতে হবে এবং ম্যারিনেট করে অন্তত ২ ঘন্টা ফ্রিজে রেখে দিন। এদিকে, প্রেসার কুকার মাঝারি আঁচে বসিয়ে তাতে কাটা পেঁয়াজগুলি ঢেলে ভাজতে থাকুন যতক্ষণ না গোল্ডেন ব্রাউন হচ্ছে। গোল্ডেন ব্রাউন পেঁয়াজ হতে থাকলেই তাতে বাকি থাকা আদা-রসুন বাটা, ২চামচ জল, গোটা গোলমরিচ, লাল লঙ্কা, কাশ্মীরি লাল লঙ্কা পাউডার, জিরা পাউডার, নুন ও বড় এলাচ গুড়ো মিশিয়ে ভালো করে নাড়তে থাকুন। কয়েক মিনিট নাড়ার পর ম্যারিনেট করা মটন পিসগুলি ঢেলে দিন প্রেসার কুকারে। মটনগুলি ঢালার পর ফের ১৫ মিনিট ভালো করে নাড়তে থাকুন এবং হাফ কাপ জল মিশিয়ে প্রেসারের ঢাকনা বন্ধ করে ৫টি সিটি পরা পর্যন্ত রান্না হতে দিন। ৫টি সিটি হয়ে গেলে আঁচ বন্ধ করে কিছুক্ষন রেখে প্রেসার খুলে দেখে নেবেন নুনের পরিমাণ, প্রয়োজনে দিতে পারেন। যদি দেখেন মটন পিসগুলি ভালো সেদ্ধ হয়নি, তবে ফের ১/৪ কাপ জল ঢেলে আরও কয়েকটি সিটি দিয়ে দেবেন। প্রেসার খুলে দেখবেন জল শুকিয়ে গিয়েছে, তখন ছোট এলাচ পাউডার ওপরে ছড়িয়ে অন্তত ১৫ মিনিট রেখে দিতে হবে। সবশেষে, গরম গরম মটন চাপ রুমালি রুটির সঙ্গে পরিবেশন করে ফেলুন।

দই মটনকারি

কী কী লাগবেঃ

৮০০ গ্রাম মটন (১ইঞ্চি পিসে কাটা), ১টি বড় পেঁয়াজ কাটা, ২ চামচ ঘি, ১ কাপ ফেটানো দই, ১ চামচ রসুন কুচি, ধনে পাতা কুচি (গার্নিশিং এর জন্য)।

গোটা মশলা যা লাগবেঃ

৪টি গোটা বড় গোলমরিচ, ৪টি লবঙ্গ, ১টি দারচিনি, ২টি তেজ পাতা।

গুঁড়ো মশলা যা লাগবেঃ

১ চামচ লাল লঙ্কা পাউডার, ১/২ চামচ হলুদ পাউডার, ২ চামচ গরম মশলা পাউডার।


কীভাবে বানাবেনঃ

রান্না শুরুর আগেই মটন পিসগুলি ভালো করে ধুয়ে সরিয়ে রাখুন। এবারে মাঝারি আঁচে একটি বড় প্যান বসিয়ে ঘি গরম করতে দিন এবং তাতে গোটা মশলাগুলির সঙ্গে কাটা পেঁয়াজগুলি দিয়ে ভাজতে থাকুন। ভাজার সময় নুন ছড়িয়ে দিন যাতে পেঁয়াজগুলি নরম হতে থাকে। পেঁয়াজগুলি ব্রাউন হতে থাকলে তাতে মটন পিসগুলি ঢেলে ভালো করে নাড়তে হবে। ৫ মিনিট এইভাবে নেড়ে ভাজা ভাজা করতে হবে। তারপর তাতে দই ফেটানো, লাল লঙ্কা পাউডার, হলুদ পাউডার ও নুন দিয়ে নেড়ে মাঝারি আঁচে প্যান ঢেকে অন্তত ৪০-৪৫ মিনিট রান্না হতে দিন। মাঝে একবার ঢাকনা খুলে দেখে নেবেন গ্রেভি শুকিয়ে গেলে সামান্য জল ঢেলে ফের ঢেকে রান্না হতে দেবেন। তারপর গরম মশলা পাউডার ও রসুন কুচি দিয়ে নেড়ে দেবেন। ফের ঢেকে রান্না হতে দিন এবং মাঝে কোন ছোট কাঠি দিয়ে মটন সেদ্ধ হয়েছে কিনা যাচাই করে নিন। ৫০ মিনিট পর প্যানের ঢাকনা খুলে নুন দেখে নিন এবং আঁচ বন্ধ করে ওপরে ধনে পাতা কুচি ও পেঁয়াজের কাটা রিং ছড়িয়ে দিয়ে নামিয়ে ফেলুন।

হিমাচলি পাহাড়ি মটন

কী কী লাগবেঃ

৫০০ গ্রাম মটন (হাড় সহ), ১টি তেজ পাতা, ১টি বড় এলাচ, ২টি ছোট এলাচ, ৩টি লবঙ্গ, ১ ইঞ্চি আদা কুচো করা, ১ চামচ রসুন কুচো, ৪টি লবঙ্গ টুকরো, ২টি বড় পেঁয়াজ কাটা, ২টি টমেটো কাটা, ১/২ কাপ দই, ১টি কাঁচা লঙ্কা (লম্বা চেরা), ১/৪ চামচ হলুদ পাউডার, ১ চামচ গরম মশলা পাউডার, ২ চামচ ধনে পাউডার, নুন স্বাদ মতো, রান্নার তেল।


কীভাবে বানাবেনঃ

রান্না শুরুর আগেই মটন পিসগুলি দই দিয়ে ভালো করে মাখিয়ে অন্তত ২ ঘন্টা ম্যারিনেট করতে রেখে দিন ফ্রিজে। এদিকে, আঁচে প্রেসার কুকার বসিয়ে, তেল গরম করতে দিয়ে তাতে গোটা মশলাগুলি যেমন তেজ পাতা, বড় এলাচ, ছোট এলাচ এবং লবঙ্গ একটু সাঁতলে নিতে হবে। কিছুক্ষণ এভাবে মশলাগুলি ভাজার পর হালকা লাল হলে তাতে আদা কুচানো ও রসুন কুচি একসঙ্গে দিয়ে দেবেন। কয়েক মিনিট সাঁতলানোর পর কাটা পেঁয়াজগুলি ঢেলে নাড়তে হবে, যতক্ষণ না পেঁয়াজগুলি হালকা নরম হয়ে লাল হচ্ছে। এরপর, ম্যারিনেট করা মটন পিসগুলি ঢেলে দিয়ে তাতে টমেটো কাটা দিয়ে ভালো করে নাড়তে হবে। কিছুক্ষণ পর লক্ষ্য করবেন ম্যারিনেট করা মটনের দই ফুটতে শুরু করেছে, তখন ধনে পাউডার, হলুদ পাউডার ও গরম মশলা পাউডার মিশিয়ে নাড়তে থাকুন। ভালো করে নাড়তে নাড়তে তাতে স্বাদ মতো নুন মিশিয়ে প্রেসারের ঢাকনা লাগিয়ে ৬টি সিটি পড়া পর্যন্ত রান্না হতে দিন। ৬টি সিটি হয়ে গেলে কিছুক্ষন রেখে প্রেসার খুলে গরম হিমাচলি পাহাড়ি মটন নামিয়ে নান কিংবা পরোটার সঙ্গে পরিবেশন করুন।

মটন কোফতা কারি

কী কী লাগবেঃ

১৫০ গ্রাম মটন কিমা, ১টি পেঁয়াজ কাটা, ১টি কাঁচালঙ্কা, ৪ কোয়া রসুন, ১ ইঞ্চি আদা, ২টি এলাচ, ২টি লবঙ্গ, ১ ইঞ্চি দারচিনি, ১ চামচ মৌরি, নুন স্বাদ মতো।


কারি বানাতে যা লাগবেঃ ১টি পেয়াজ (কুচি করা), ১টি টমেটো কুচানো, ১ চামচ জিরা, ৩ কোয়া রসুন, ১ ইঞ্চি আদা, ১টি কাঁচা লঙ্কা, ১ চামচ লাল লঙ্কা পাউডার, ১/২ চামচ হলুদ পাউডার, নুন স্বাদ মতো।


কীভাবে বানাবেনঃ

রান্না শুরুর প্রথমেই মটন কিমাগুলি ভালো করে জলে ধুয়ে নিয়ে জল ঝরতে রেখে দিতে হবে। এদিকে, একটি প্যানে তেল গরম করে কাটা পেঁয়াজগুলি হালকা ব্রাউন করে ভেজে নিতে হবে মটন কিমার জন্য, হয়ে গেলে সরিয়ে রাখুন। এবারে, মিক্সার গ্রাইন্ডারে কাঁচা লঙ্কা, আদা-রসুন, এলাচ, লবঙ্গ ও মৌরি সব দিয়ে তার সঙ্গে মটন কিমাগুলি ঢেলে, পেঁয়াজ ভাজাগুলি দিয়ে এবং একটু নুন ছড়িয়ে ভালো করে একটি পেস্ট বানিয়ে নিতে হবে। তারপর, কিমাগুলির একেকটি দিয়ে ছোট ছোট কোফতার বল বানিয়ে নিন। এরপর, প্যানে তেল গরম করতে দিন। ভালো করে গরম হলে সেই তেলে একেক করে কিমা বলগুলি ছেড়ে গোল্ডেন ব্রাউন হওয়া অবধি ফ্রাই করতে থাকুন। এবার কারি বানাতে কারির মশলাগুলির একটি পেস্ট বানিয়ে ফেলুন। তারপর পেস্টটি প্যানে দিয়ে সাঁতলাতে থাকুন এবং লাল লঙ্কা পাউডার ও হলুদ পাউডার মিশিয়ে অন্তত ১০ মিনিট নাড়তে থাকুন। এরপর একটু জল মিশিয়ে ভালো করে রান্না হতে দিন। ১০ মিনিট পর কিমা বলগুলি সব ঢেলে দিন প্যানে এবং ১৫ মিনিট কম আঁচে ফুটতে দিন। ১৫ মিনিট পর গ্রেভি ঘন হয়ে উঠলে আপনার সুস্বাদু মটন কোফতা কারি নামিয়ে পরিবেশন করে ফেলুন।

সুখা মটন ভিন্ডালু

কী কী লাগবেঃ

৭৫০ গ্রাম মাটন (ছোট পিস করা), ১/২ চামচ হলুদ পাইয়ার ১০টি গোটা গোলমরিচ জালঙ্গ, আম, ১/ আনা কুচানো, ১০ কোয়া রসুন কুচানো, ১০টি শুকনো লাল লঙ্গা, ২ চামচ লেবু রস, ১ ইঞ্চি দারচিনি ১/২ কাপ ভিনিগার, ও চামচ ভেজিটেবল অয়েল, ১টি পেঁয়াজ বাটা, মুল স্বাস মাতো, ১ চামচ ব্রাউন সুগার।


কীভাবে বানাবেনঃ

রাঙা শুরুর প্রথমেই ভিনিগারে গোটা ছোলমরিচ, লবঙ্গ, শুকনো লাল লঙ্কা, জিরা, আলা কুচানো, রসুন কুচানো সব একসঙ্গে ভিজিয়ে রাখতে হবে অন্তত আধ ঘন্টা। আধ ঘণ্টা ভিজিয়ে রাখার পর এই মশলাগুলির একটি পেস্ট তৈরি করে নিতে হবে। এই পেস্টটি এবার মটনের ছোট পিসগুলিতে ভালো করে মাখিয়ে ৬ ঘন্টা ম্যারিনেট করতে রেখে দিতে হবে। ৬ ঘন্টা পর এই ম্যারিনেট করা মটনগুলি প্রেসার কুকারে ৪-৫টি সিটি দিয়ে সেদ্ধ করে নিতে হবে। এদিকে, প্যানে তেল গরম করতে দিন। তেল গরম হলেই তাতে পেঁয়াজ পেস্ট ও দারচিনি দিয়ে সাঁতলাতে হবে। পেঁয়াজ পেস্টটি হাল্কা ব্রাউন হলেই সেদ্ধ করা মটনগুলি ঢেলে দিয়ে তাতে ব্রাউন সুগার মিশিয়ে রান্না হতে দিন যতক্ষণ অবধি মটনগুলি একটু হাল্কা ব্রাউন হয়ে শুকিয়ে না আসে। কিছু সময় আঁচে এভাবে নেড়ে নামিয়ে পরিবেশন করে ফেলুন সুস্বাদু সুখা মটন ভিন্ডালু।

মটন দোপেঁয়াজা

কী কী লাগবেঃ

৪৫০ গ্রাম মটন (ছোট টুকরো করা), ১টি বড় পেঁয়াজ (লম্বা কাটা), ১ চামচ আদা- রসুন বাটা, ১/২ চামচ হলুদ পাউডার, ১/২ কাপ দই, ১ চামচ লাল লঙ্কা পাউয়ার ১ চামচ জিরা পাউডার, ১ চামচ ধনে পাউডার, ১ চামচ গরম মশলা পাউডার, ২টি কাঁচা লঙ্কা কাটা, ২ চামচ অলিভ অয়েল, ধনে পাতা কুচানো, নুন স্বাদ মতো, ১/২ চামচ লেবু রস, ১টি পেঁয়াজ বড় বড় টুকরো করা, ৬টি শুকনো লাল লঙ্কা।


কীভাবে বানাবেনঃ

রান্নার আগে থেকেই মটন টুকরোগুলি ভালো করে ধুয়ে রেখে দেবেন। এদিকে মাঝারি আঁচে প্যান বসিয়ে তাতে তেল গরম করতে দিন। তেল গরম হলে তাতে পেঁয়াজ কাটাগুলি ঢেলে ভাজতে থাকুন, যতক্ষণ না ব্রাউন হচ্ছে। একটু মুন ছড়িয়ে দিন স্বাদ মতো যাতে পেঁয়াজগুলি নরম হয়ে যায়। ২-৩মিনিট সাঁতলানোর পর যখন পেঁয়াজগুলি ব্রাউন হবে তখন আদা-রসুন বাটা মিশিয়ে দিন। অন্তত ২৫ মিনিট সাঁতলাতে থাকুন আদা-রসুনের কাঁচা গন্ধ দূর হওয়া পর্যন্ত। এরপর, হলুদ পাউডার, মটন টুকরোগুলি ঢেলে ভালো করে মিশিয়ে নাড়তে থাকুন। তারপর একটু জল মিশিয়ে হাই আঁচে অন্তত ৩০মিনিট রান্না করতে হবে। জল শুকোতে শুরু করলে প্রয়োজনে জল মেশাবেন। তারপর, গরম মশলা, কুচানো ধনে পাতা ও নুন ছড়িয়ে ফের নাড়তে থাকুন। এদিকে আরেকটি প্যানে, ১ চামচ তেল গরম করে তাতে শুকনো লাল লঙ্কাগুলি হালকা ভেজে নিন। এরপর বড় টুকরে পেঁয়াজগুলি ঢেলে ফের ভাজতে থাকুন। এরপর এই পেঁয়াজ লম্বা ভাজাট মটন রান্না হওয়া প্যানে ঢেলে দিন। ভালো করে মিক্স করে ১০ মিনিট কম আঁচে ঢাকনা দিয়ে রান্না হতে দিন। ১০ মিনিট পর ঢাকনা খুলে ওপরে লেবু রস ছড়িয়ে আচ বন্ধ করে নামিয়ে নিন মটন দোপিঁয়াজা এবং পরিবেশন করে ফেলুন বাটার নান কিংবা রুটির সঙ্গে।

দই মটন কোফতা

কী কী লাগবেঃ

৩০০ গ্রাম মাটন কিমা, ১ চামচ এলাচ পাউডার, ১ ইঞ্চি আদা কুরনো।

কারি বানাতে যা লাগবেঃ

১ কাপ দই, ১/৪ কাপ দুধ, ১টি তেজ পাতা, ১ ইঞ্চি দারচিনি, ৩টি লবঙ্গ, ১ চামচ মৌরি, ১ চামচ জিরা, ১ চামচ আদা পাউডার, ১/২ চামচ হলুদ পাউডার, নুন স্বাদ মতো, দি।


কীভাবে বানাবেনঃ

মাটন কিমা ভালো করে ধুয়ে জল করতে রেখে দেবেন আগে থেকেই। এরপর, মিক্সার গ্রাইন্ডারে কিমা, এলাচ পাউডার এবং আদা নিয়ে ভালো করে একটি মিশ্রণ বানিয়ে নিতে হবে। একবার এই মিশ্রণটি বনানো হয়ে যাওয়ার পর, কিমা মিক্সচারটির একেক করে টিউবের আকারে কিমা টিউব বানাতে হবে। এদিকে, কড়াইতে ঘি গরম করতে দিন। ঘি গরম হলেই তাতে তেজ পাতা, জিরা, দারচিনি, লবঙ্গ ও মৌরি দিয়ে সাঁতলাতে থাকুন কয়েক মিনিট। সুন্দর অ্যারোমা বের হলেই ১ কাপ জলে দই ফেটিয়ে সেই দই কড়াইতে ঢেলে নাড়তে থাকুন কম আঁচে। এরপর, হলুদ পাউডার, আদা পাউডার, নুন ভালো করে মিক্স করে ও দুধ মিশিয়ে ভালো করে নাড়তে থাকুন ফোটা অবধি। এবারে, দুধ ফুটতে ফুটতে তাতে কিমা টিউবগুলি ডুবিয়ে ২০ মিনিট কড়াই ঢেকে রান্না হতে দিন। ২০ মিনিট পর ঢাকনা খুলে যখন দেখবেন কিমাগুলিতে গ্রেভি ঢুকে গেছে, তখনই আঁচ বন্ধ করে নামিয়ে ফেলুন দই মটন কোফতা এবং পরিবেশন করে ফেলুন গরম ভাতের সঙ্গে।

মালাবার মটন রোস্ট

কী কী লাগবেঃ

৬০০ গ্রাম মটন, ১টি বড় পেঁয়াজ (লম্বা কাটা), ১টি টমেটো (লম্বা কাটা), ১ চামচ আদা পেস্ট, ১ চামচ রসুন পেস্ট, ২ চামচ লাল লঙ্কা পাউডার, ১/২ চামচ হলুদ। পাউডার, ১ চুটকি কারি পাতা, নুন স্বাদ মতো।

মশলা বানাতে যা যা লাগবেঃ

১ টি পেঁয়াজ (কাটা), ৩টি শুকনো লাল লঙ্কা, একটু কারি পাতা, ২ চামচ জিরা পাউডার, ১/২ চামচ মেথি দানা, ১/২ চামচ গোলমরিচ পাউডার, ১/৪ চামচ গরম মশলা পাউডার, ১ চামচ রান্নার নারকেল তেল, নুন স্বাদ মতো।


কীভাবে বানাবেনঃ

রান্না শুরুর প্রথমেই মটনগুলি ভালো করে ধুয়ে রাখতে হবে। এরপর ম্যারিনেট করার জন্য একটি বড় পাত্রে মটনগুলির সঙ্গে পেঁয়াজ কাটা ও টমেটো কাটা, আদা রসুন পেস্ট, লাল লঙ্কা পাউডার, হলুদ পাউডার, নুন স্বাদ মতো, ও কিছু কারি পাতা একসঙ্গে ভালো করে মেখে অন্তত ৩০ মিনিট ম্যারিনেট করতে রেখে দিন। ৩০ মিনিট পর ম্যারিনেট করা মটনগুলি প্রেসার কুকারে ৪টি সিটি দিয়ে সেদ্ধ করে রেখে দিন। অন্যদিকে, একটি প্যানে তেল গরম করতে দিন এবং তেল গরম হলে তাতে কারি পাতা ও লাল শুকনো লঙ্কা দিয়ে সাঁতলাতে থাকুন। কিছুক্ষণ পর, কাটা পেঁয়াজগুলি ঢেলে সাঁতলাতে থাকুন। পেঁয়াজগুলি নরম হতে থাকলে তাতে জিরা পাউডার, মেথি দানা, গোলমরিচ পাউডার, গরম মশলা পাউডার, নুন দিয়ে ভালো করে নাড়তে থাকুন। এই সময়, সেদ্ধ করা মটনগুলি ঢেলে মশলাগুলির সঙ্গে মিশিয়ে রান্না হতে দিন। গ্রেভিতে পরিণত হতে থাকলে ওপরে কারি পাতার ছড়িয়ে দিয়ে নামিয়ে টেবিলে পরিবেশন করে ফেলুন মালাবার মটন রোস্ট।

 

Comments


ssss.jpg
sssss.png

QUICK LINKS

ABOUT US

WHY US

INSIGHTS

OUR TEAM

ARCHIVES

BRANDS

CONTACT

© Copyright 2025 to Debi Pranam. All Rights Reserved. Developed by SIMPACT Digital

Follow us on

Rojkar Ananya New Logo.png
fb png.png

 Key stats for the last 30 days

bottom of page