বিরিয়ানি এল দেশে, কলকাতায়...বিরিয়ানির বারো কাহন..
- রোজকার অনন্যা
- Aug 4, 2024
- 19 min read
বিরিয়ানি এল দেশে, কলকাতায়
কমলেন্দু সরকার
বিরিয়ানির ফারসি শব্দ বিরীয়েন। এর অর্থ মাংস বা মাছ সহযোগে প্রস্তুত পোলাও জাতীয় খাবার বিশেষ।
কেউ কেউ বলেন খ্রিস্টাব্দ দুই নাগাদ আমাদের দেশে বিরিয়ানির প্রবেশ আরবের বণিকদের পিছু পিছু। তামিল সাহিত্যে পাওয়া যায় 'ওন সরু' নামে একধরনের খাবারের। ভাতের সঙ্গে মাংস, ঘি, হলুদ, ধনে, মরিচ, তেজপাতা সহযোগে বানানো হত এই খাবার। যার সঙ্গে আধুনিক বিরিয়ানির অনেকটাই মিল। মধ্যযুগের নামী আরবীয় শিক্ষাবিদ ও গবেষক অলবেরুনি দেখেছিলেন, সুলতানি আমলে রাজপ্রাসাদের হেঁশেলের খাদ্যতালিকায় বিরিয়ানি জাতীয় খাবার। তবে খাদ্য-বিশেষজ্ঞরা মনে করেন এই খাবারটি আদৌ বিরিয়ানি কিনা সন্দেহ আছে।

১৩৯৮-এর ডিসেম্বরে তৈমুর লং নব্বই হাজার সেনা নিয়ে দিল্লির উপকণ্ঠে আসেন দিল্লি দখলের জন্য। বিশাল সেনাবাহিনীর জন্য তৈমুর রাঁধুনিদের নির্দেশ দেন ভাত- মাংস সমেত একটা জবরদস্ত খাবার তৈরি করার। সেনাদের বাহুবল বাড়াতে। ওই খাবার তৈরি হত বিশাল বিশাল মাটির হাঁড়িতে। সেনাবাহিনীর সেই খাবারই নাকি আধুনিক বিরিয়ানি।
তাজমহলের কারণে ভারতের ইতিহাসে অমর হয়ে আছেন মুঘল সম্রাজ্ঞী মুমতাজ মহল। ভালবাসার প্রতীক হয়ে দাঁড়িয়ে আগরার মাটিতে তাজমহল। প্রেম বা ভালবাসার সঙ্গে জড়িয়ে আছে খাওয়া। রেস্তরাঁয় খেতে খেতে প্রেমালাপ নতুন কিছু নয়। কিন্তু ওই খাওয়ার টেবিলে প্রেমিক-প্রেমিকার সঙ্গে প্রেম-সম্রাজ্ঞী মমতাজ যে হাজির থাকেন, সে-খবর ক'জন রাখেন। এখন তো রেস্তরাঁয় খেতে যাওয়া মানেই তালিকায় বিরিয়ানি। সকলের প্রিয় বিরিয়ানি।
জনশ্রুতি, একবার শাহজাহান-পত্নী মুমতাজ মহল মুঘল সেনাদের অবস্থা দেখতে গেলেন সেনা-ছাউনিতে। সম্রাজ্ঞী খুব দুঃখ পেলেন সেনাদের শারীরিক অবস্থা দেখে। বিস্মিতও হলেন। সঙ্গেসঙ্গে রাঁধুনিকে নির্দেশ দিলেন চাল আর মাংস দিয়ে পুষ্টিকর একটা খাবার বানাতে। যে-খাবার সেনাদের ভগ্ন শরীরের শ্রীবৃদ্ধি করবে। সম্রাজ্ঞীর আদেশ অমান্য করার সাহস ছিল না রাঁধুনির। সেনা- হেঁশলের এই খাবারটি সেনাদের শুধু স্বাস্থ্য ফেরায়নি, রসনা তৃপ্তও করেছিল। সেই খবর পৌঁছেছিল মুঘল সম্রাটের কানে। তিনিও মুঘল-হেঁশেলে বাবুর্চিদের আদেশ অমন খাবার বানাতে। তাই মুঘল সম্রাটের খাবার টেবিলে এল সুস্বাদু এই খাবার।
আবার কেউ কেউ বলেন, মুঘল সম্রাজ্ঞী সেনা ছাউনি পরিদর্শনে গিয়ে দেখেন সেখানকার হেঁশেলে বিরিয়ানি রান্না হতে। রাঁধুনির বেশ কয়েক কদম। উনিশ শতকে। ১৮৫৬, ১৩ মে নদীপথে (গঙ্গা) নির্বাসিত নবাব ওয়াজিদ আলি শাহ কলকাতা পৌঁছলেন। ইংরেজ সরকার তাঁকে বন্দি করে। পাঠানো হল ফোর্ট উইলিয়াম। নবাবের বন্দিদশা কাটে ৯ জুলাই, ১৯৫৮। মুক্তি পেয়ে নবাব সটান চলে আসেন মেটিয়াবুরুজ। জীবনের শেষ তিরিশটি বছর কাটে এখানেই। তিনি মেটিয়াবুরুজকে গড়ে তুলেছিলেন দ্বিতীয় লখনউ। কেমন ছিল সেইসময়? নবাবের সঙ্গে এসেছিলেন আবদুল হলীম 'শরর'। তিনি লিখেছেন- 'মেটিয়াবুরুজে চমৎকার সব ইমারতের একটা সুন্দর শহরই গড়ে তুলেছিলেন।... সমস্ত বাড়ি, বাগান, কুঞ্জ ও সবুজ মাঠের চারিদিকে ছিল উঁচু দেওয়ালের ঘের।... মোদ্দা কথা, বাদশাহের অবস্থানের ফলে কলকাতার কাছে দ্বিতীয় লখনউ প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল'।
কাছ থেকে রেসিপি জেনে মুঘল হেঁশেলের বাবুর্চিকে রান্না করার নির্দেশ দিয়েছিলেন। এই খাবারই বিরিয়ানির শুরু। ভোজনরসিক মুঘলরাই ভারতে যেখানেই গিয়েছেন সেখানেই ভোজনবিলাসীদের মাঝে ছড়িয়ে দিয়েছেন বিরিয়ানির স্বাদ। সেই খাবার আবার স্থানীয় রাঁধুনিদের হাতে পেয়েছে নতুন মাত্রা, নতুন স্বাদ। আর তাই তো কলকাতা থাকে ঢাকা, হায়দরাবাদ থেকে পেশোয়ার অবধি বিরিয়ানির এত রকমফের। এত বৈচিত্র্য! নানা স্বাদ! যাইহোক না কেন, বোঝা গেল বিরিয়ানি ভারতে পা রেখেছে তুর্কি কিংবা মুঘলদের হাত ধরে।
কিন্তু কলকাতা শহরে কার হাত ধরে এল বিরিয়ানি?
কলকাতা শৌখিন শহর। সব পেয়েছির শহর। তাই বিরিয়ানি পাবে না, তা তো হয় না, হয়ওনি। কলকাতাবাসী বিরিয়ানি খেয়ে মহাখুশি। এসব জানতে গেলে পিছিয়ে যেতে হবে শৌখিন আর সব পেয়েছির শহর কলকাতায় এখন হাত বাড়ালেই বিরিয়ানি। এখন তো পাড়ায় পাড়ায় বিরিয়ানির দোকান গজিয়ে উঠেছে। আট-নয়ের দশকের রোলের দোকানের মতো। তবে বিরিয়ানি হল খানদানি খাবার। সম্রাট, নবাবদের হেঁশেল থেকে সাধারণের কাছে এসেছে। তবুও এর আভিজাত্য নষ্ট হয়নি। এ হল ক্রিকেট। টেস্ট হোক বা টি-টোয়েন্টি। ক্রিকেট হল বিরিয়ানি। গাব্বায় ভারতের জয়ে প্রচুর হইচই হল। ঠিক তেমন ভাল হোটেল-রেস্তরাঁর বিরিয়ানির গন্ধ নাসিকাময় করে তোলে। জয় বিরিয়ানির জয়, বলে বেরিয়ে পড়েন বিরিয়ানিবিলাসীগণ। কিন্তু কলকাতা শহরে বিরিয়ানির সঙ্গে পরিচয় করালেন কে? লাখ কথার প্রশ্ন।
কে আবার নবাব ওয়াজিদ আলি শাহ। লখনউ থেকে নির্বাসিত হয়ে কলকাতা হল তাঁর গন্তব্য। লখনউ থেকে কলকাতা আসার সময় মেটিয়াবুরুজে গোটা রসুইঘর তুলে এনেছিলেন নবাব। নবাব মহলের অন্দরে সেই হেঁশেলে নবাবের খানা তৈরি শুরু দম পোখত মানে ঢিমে আঁচে রান্না। বিরিয়ানির গন্ধে ম-ম করত নবাবের রান্নাঘর। সেই গন্ধ নবাব-মহল থেকে ভেসে বেড়াত শহরের আনাচকানাচে। খাওয়াদাওয়ার পর একখিলি পান না-হলে চলে নবাবের। সেই পানওয়ালাকেও বগলদাবা করে এনে ফেললেন মেটিয়াবুরুজে। দুপুরে বিরিয়ানির পর একখিলি পান তো খুব জরুরি। বিরিয়ানির সঙ্গে ভাল খাওয়ার প্রচলনও কলকাতায়।
নবাবের মনোরঞ্জনের জন্য এসেছিলেন সেই ঘুড়ি বানানোওয়ালাও। নবাবের হেঁশেল থেকে বিরিয়ানি রেসিপি এল আমজনতার কাছে। বিরিয়ানি খেয়ে সবাই খুশি। সে-খবর পৌঁছালো নবাবের কর্ণকুহরে। খুশ হলেন নবাব। কেননা, তিনি ছিলেন খানে কা অউর খিলানে কা শওখিন অর্থাৎ খেতে এবং খাওয়াতে ভীষণ পছন্দ করতেন, ভালবাসতেন। তবে কলকাতা এসে লখনউ বিরিয়ানির সঙ্গে কিছুটা তফাত ঘটল। নবাবের দেশের বিরিয়ানিতে থাকত শুধুই মাংস। এখানে মাংসের সঙ্গে যোগ হল আলু। তাই অনেকেই মনে করেন, বিরিয়ানিতে আলু দেওয়া শিখিয়েছেন নবাব ওয়াজিদ আলি শাহ। এ-নিয়ে কেউ কেউ অন্য মত পোষণ করেন। কম তর্ক-বিতর্ক নেই। থাকুক গে। সেসব খাদ্য বিশেষজ্ঞ আর ইতিহাসবিদদের ব্যাপার।
আমজনতা কিন্তু বিরিয়ানিতে আলু ভালবাসেন। বিরিয়ানি আর পাঁঠার মাংসে আলু না-থাকলেই খাওয়াটাই ঠিক জমে না। বিরিয়ানি পাতে পড়লেই আগে ইতিউতি করে আলু খোঁজেন বিরিয়ানিবিলাসীরা। ও হ্যাঁ, একথা-সেকথাতে বলাই হয়নি। নবাব ওয়াজিদ আলি শাহ বাবুর্চিকে নির্দেশ দিয়েছিলেন, অওয়াধি বিরিয়ানির মতো বেশি মশলা দিয়ে রান্না না-করতে। কম মশলা দিয়ে বিরিয়ানি যেন হয় অল্প মশলায় রান্না।
ওদিকে রাঁধুনির মশলা বেশি দিয়ে বিরিয়ানি তৈরি করাতে হাত হয়ে গেছে লম্বা। কিন্তু নবাবের নির্দেশ অমান্য করবে কে। রাঁধুনি তেতো মুখে কম মশলার বিরিয়ানি রান্না করলেন। সে বিরিয়ানির স্বাদ হল অন্যরকম। সুস্বাদু বিরিয়ানি খেয়ে বিশাল এক ঢেঁকুর তুলে নবাব আদেশ করলেন দু'খিলি পানের। সেইথেকে লখনউ কিংবা অওয়াধি বিরিয়ানির সঙ্গে কলকাতার। বিরিয়ানির সামান্য হলেও তফাত পাওয়া যায়। এজন্য প্রশংসা প্রাপ্য ওয়াজেদ আলি শাহর সেই কম মশলার বিরিয়ানি রাঁধার নির্দেশ।
বিরিয়ানির হাঁড়ি সবসময়ই লাল রঙের কাপড়ে থাকে ঢাকা। অনেকেরই মনে প্রশ্ন জাগে কেন?
স্পেনে ষাঁড়ের লড়াইয়ের ষাঁড়কে আকর্ষিত করার জন্য লাল কাপড় দোলানো হয় তার সামনে। তাহলে কি ভোজনবিলাসীদের বিরিয়ানির হাঁড়ির দিকে নজর ফেরাতে লাল কাপড় বাঁধার চলন। মুঘল সম্রাট হুমায়ুনের খাওয়ার টেবিলে রুপোর পাত্রে যেসব খাবার থাকত সেগুলো ঢাকা থাকত লাল কাপড়ে এবং পোর্সেলিন বা চিনামাটির পাত্রের খাবার ঢাকা থাকত সাদা কাপড়ে। শুধু মাত্র খাবার টেবিলে নয়, উপঢৌকন যেত এই নিয়মেও। শুধু অন্দরমহলে নয়, এই নিয়ম চালু ছিল মুঘল দরবারেও। এই রীতি মানতেন অওধের নবাবরাও। সেইথেকেই নাকি বিরিয়ানির রুপোলি হাঁড়িতে লাল কাপড় দিয়ে ঢেকে রাখার নিয়ম-রীতি চলে আসছে।
আসলে লাল হল ভালবাসা, আবেগ, উষ্ণতা, সৌভাগ্য, আনন্দ- উৎসবের রং। হৃদয়েরও রং লাল। উষ্ণ অভ্যর্থনা প্রকাশিত হয় লাল রঙে। তাই তো লাল কার্পেট বিছিয়ে অতিথিদের আহবান করা হয়। আর লাল গোলাপ? সে তো প্রেম- ভালবাসার প্রতীক। লাল কাপড় জড়ানো বিরিয়ানির হাঁড়ি? সে তো ভাললাগার হাতছানি। বিরিয়ানি-বিলাসে গা-ভাসানো।
বিরিয়ানির বারো কাহন
১৮৫৬ সালে নবাব ওয়াজিদ আলি শাহ কলকাতায় আসার পরেই এই শহরে বিরিয়ানির পথচলা শুরু হয়। তার পরেই বিরিয়ানির স্বাদগন্ধকে আপন করে নিয়েছে শহরবাসী। বাঙালির বিরিয়ানিপ্রেম থুড়ি, বিরিয়ানির আলুর প্রতি প্রেম কারও অজানা নয়। শহরের রাস্তাঘাটের অলি-গলিতে এখন বিরিয়ানির দোকান। দোকানের ১০০ মিটারের মধ্যে এসে পড়লেই নাকে আসে বিরিয়ানির গন্ধ! দূর থেকে চোখে পড়ে লাল কাপড়ে মোড়া বিরিয়ানির বিশাল হাঁড়ি।
উত্তর থেকে দক্ষিণ, কুমার কাশ্মীর থেকে কন্যাকুমারীর ভোল বদলানোয় অদ্বিতীয় বিরিয়ানি। চপচপে খাঁটি ঘি-এ মাখামাখি সাদা আর হলুদ চালের মধ্যে ভালোবাসার বুক চিরে উঁকি দেয় রেওয়াজি খাসির স্বাদ বাঙালি রসনায় আজও অমলিন। আর রয়েছে আলু। পেঁয়াজ রস ও কেশরের গন্ধে মুখে পড়ার সঙ্গে সঙ্গে গলে যায়। প্রতি গ্রাসের সঙ্গে মাত করে দেয় মিঠে আতরের মিষ্টি গন্ধ। এই শহর এখন বিয়ে, জন্মদিন, পিকনিক সবেতেই জায়গা করে নিয়েছে বিরিয়ানি, সে চিকেন হোক বা মটন। বিরিয়ানি থাকলে ভোজন রসিক বাঙালির আর কিছুই চায় না। বিয়ে বাড়িতেও এখন মাছের কালিয়ার জায়গা করে নিয়েছে বিরিয়ানি। এখানে সেই এক ডজন বিরিয়ানি কথা।
আফগানিস্তানের সিল্ক রুট নাকি কালিকট বন্দর-কোন পথে প্রথম বিরিয়ানি এদেশে আসে? তা নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। তা থাক। তবে পার্সিদের হাত ধরেই এদেশে যে পা রেখেছিল বিরিয়ানি, তা নিশ্চিত। অনেকটা ওই রকম, বনিকের মানদণ্ড, পোহালে শর্বরী, দেখা দিল রাজদন্ড রূপে। এটা কিন্তু সদর্থক অর্থেই পড়বেন আপনারা। কারণ এলাম, দেখলাম, জয় করলাম গোছের মেজাজ নিয়ে সবাইকে পিছনে ফেলে ধীরে ধীরে দেশের জাতীয় খাবারে পরিনত হয়েছে এই বিরিয়ানি।

নবাব ওয়াজিদ শাহের হাত ধরে বিরিয়ানি আসে কলকাতায়, ঔরঙ্গজেবের হাত ধরে জন্ম হয় হায়দরাবাদি বিরিয়ানির। জাতি, ভাষার বৈচিত্রের মতোই দেশের বিভিন্ন প্রান্তে বিরিয়ানিও তাই বৈচিত্রময়। আসুন বিরিয়ানি প্রেমিদের বলি, শুধু চিকেন, মাটন বিরিয়ানিই নয়, আছে ভিন্ন ভিন্ন প্রকারের বিরিয়ানিও। তেমনই বলি এক ডজন বিরিয়ানির কথা।
১। অওয়াধি বিরিয়ানি
বিরিয়ানির ইতিহাস ঘাটলে অওয়াধি বিরিয়ানিই বোধহয় হবে সবথেকে আদি নাম। লক্ষ্ণৌর অওয়াধি বিরিয়ানির অনুপ্রেরণা নিয়েই সারা ভারতে জনপ্রিয়তা পেয়েছে বিরিয়ানি। ঐতিহ্যশালী পুক্তি প্রথা মেনেই রান্না করা হয় এই বিরিয়ানি। মশলার সঙ্গে আধসেদ্ধ করা হয় মাংস, অন্যদিকে দারচিনি, জয়িত্রী ও কেসর সহযোগে সেদ্ধ করা হয় সুগন্ধী বাসমতী চাল। হাঁড়িতে এই চাল ও মাংস পরতে পরতে সাজিয়ে দমে রান্না হয় অওয়াধি বিরিয়ানি। হালকা কমলা রঙের চালের মাঝে তুলতুলে নরম মাংসের সুস্বাদু পদ অওয়াধি বিরিয়ানি। লা জবাব...
কী কী লাগবে
মাটন ৫০০ থেকে ৭০০ গ্রাম, বাসমতি চাল এক কেজি, দুধ ছোট দু’কাপ, ঘি ৩-৪ চা চামচ, আন্দাজ মতো লঙ্কা, হলুদ, জিরে, গরম মশলা, আদা বাটা, রসুন বাটা, তেজপাতা, বড় এলাচ, ছোট এলাচ, দারুচিনি, লবঙ্গ, জায়ফল, জায়েত্রি, গোটা জিরে, মিঠা আতর, রাইস ফ্লেভার, বিরিয়ানি ফ্লেভার, কেওড়ার জল, কেশর
কীভাবে বানাবেন
প্রথমে বাসমতি চাল ফুটিয়ে নিতে হবে। ছোট এলাচ, বড় এলাচ, তেজপাতা, দারুচিনি, জায়েত্রি, নুন দিয়ে চাল সিদ্ধ করে নেওয়ার পর জল ঝরিয়ে নিয়ে রাখুন। আর একটি পাত্রে মাটন সিদ্ধ করে নিন। তেল, আদা এবং রসুন বাটার মধ্যে মাংস ফেলে সিদ্ধ করার সময়ে নুন, ধনের গুঁড়ো, জিরের গুঁড়ো গরম মশলা, জায়েত্রী, কেওড়ার জলও দিতে হবে। মাংস ও তার নির্যাস (মাটন স্টক) —দু’টোই ব্যবহার হবে বিরিয়ানিতে। এবার যে পাত্রে বিরিয়ানি রান্না হবে (হাঁড়ি হলে ভাল হয়) সেখানে দুধ ঢেলে দিন। দুধের মধ্যে মেশাতে হবে কেশর, কেওড়ার জল, মিঠা আতর, রাইস ফ্লেভার, বিরিয়ানি ফ্লেভার, একটু লবণ, চিনি। দুধটা ফুটতে শুরু করলে এর সঙ্গে মেশান মাটনের টুকরো, আলু। মাটন স্টক চার হাতা মতো মিশিয়ে দিন। মশলা হিসাবে যোগ করুন লাল লঙ্কা, কাশ্মীরি লঙ্কা, গরম মশলা, জায়েত্রী এবং ঘি। গ্রেভিটা ভাল ভাবে মিশে গেলে ভাত ছড়িয়ে দিন উপরে। তারপর মিঠা আতর, কেওড়ার জল, রাইস ফ্লেভার এবং ঘি ছড়িয়ে হাঁড়ির ঢাকনা এঁটে দিন ধারে আটার মাখা দিয়ে। এবার হাঁড়িটিকে অন্তত ত্রিশ থেকে পয়তাল্লিশ মিনিট দম দিন। ঢাকনা খুললেই আওয়াধি মাটন বিরিয়ানি তৈরি।
২। হায়দরাবাদি বিরিয়ানি
প্রাচীনত্বের বিচারে অওয়াধি বিরিয়ানি পরেই পাকাপাকি স্থানের অধিকারী হায়দরাবাদি বিরিয়ানি। কচ্ছি বা 'কাঁচা' পদ্ধতিতে রান্না করা হয় এই বিরিয়ানি। কাঁচা মাংস, চাল ও মশলা একসঙ্গে হাঁড়িতে দিয়ে রান্না হয়। প্রচুর মশলা ও শুকনো ফল এই বিরিয়ানির বৈশিষ্ট্য। সবশেষে ওপরে ছড়ানো হয় ভাজা পেঁয়াজ। মূলত ইরানের রন্ধন পদ্ধতি এই কচ্ছি।
কী কী লাগবে
৫০০ গ্রাম চাল, ১ কেজি মাটন, ৩ কাপ পেঁয়াজ (বেরেস্তা করে রাখা), ২ চা চামচ আদা বাটা, ২ চা চামচ রসুন বাটা, ১ চা চামচ হলুদ গুড়ো, ১ চা চামচ জিরা গুড়ো, ১ চা চামচ ধনে গুড়ো, ১ চা চামচ লঙ্কা গুড়ো, ১ চা চামচ গরম মশলা গুঁড়ো, ২ চা চামচ বিরিয়ানি মশলা গুঁড়ো, ২ চা চামচ ধনে পাতা কুচি ২ চা চামচ পুদিনা পাতা কুচি, ২ চা চামচ কাঁচা লঙ্কা কুচি, ১/২ কাপ টক দই, স্বাদ মত নুন, ১ চা চামচ ঘি, ২ চিমটি কেশর, ১/২ কাপ উষ্ণ গরম দুধ, ৬-৮ টি ছোট এলাচ (সবুজ), ৬-৮ টি লবঙ্গ, ৬-৮ টি গোলমরিচ, ৩ ইঞ্চি দারুচিনি, ১ চা চামচ সাদা তেল, প্রয়োজন মত বেশ কিছু তেজপাতা, পরিমাণ মত আলুমিনিয়াম ফয়েল
কীভাবে বানাবেন
প্রথমে মাটন ভাল করে ধুয়ে জল ঝরিয়ে নিতে হবে, এবারে একে একে ১ কাপ পেঁয়াজ বেরেস্তা বাটা, রসুন বাটা, আদা বাটা, লঙ্কার গুঁড়ো, হলুদ গুঁড়ো, ধনে গুঁড়ো, জিরা গুঁড়ো, টক দই, গরম মসলা গুঁড়ো, ১ চামচ বিরিয়ানি মশলা, স্বাদ মত নুন, ১ চিমটে কেশর দিয়ে ভাল করে মেখে ম্যারিনেট করতে হবে ২৪ থেকে ৪৮ ঘণ্টা।
এবারে ১/২ কাপ উষ্ণ গরম দুধে ১ চিমটে কেশর ভিজিয়ে ঢাকা দিয়ে রাখুন। এবারে চালটা ৩০ মিনিট মত ভিজিয়ে রাখুন। আর ম্যারিনেট করা মাংস ফ্রীজ থেকে বের করে সাধারণ তাপমাত্রায় আসা পর্যন্ত অপেক্ষা করুন। এবারে একটি পাত্রে জল নিয়ে সেটাকে গরম করে তাতে প্রয়োজন মত নুন, ১ চামচ তেল, দারুচিনি, ছোট এলাচ, গোলমরিচ, লবঙ্গ দিন এবং তার পরে চাল দিয়ে সেটাকে ৭০% রান্না করে জল ঝরিয়ে নিন।

এবারে একটি পাত্রের নীচে পুরোটাই তেজপাতা বিছিয়ে দিন, ভাল ভাবে না বসলে একটু ঘি বা তেল ব্রাশ করে নিন, তার ওপরে ম্যারিনেট করা মাংস ভালো করে বিছিয়ে দিন। এবারে তার উপরে কিছু পেঁয়াজ বেরেস্তা ছড়িয়ে তার উপরে অর্ধেক করে ধনে পাতা কুচি, পুদিনা পাতা কুচি, কাঁচা লঙ্কা কুচি ভাল করে ছড়িয়ে দিয়ে ভাত দিয়ে দিন।
এবারে উপর থেকে বাকি ধনে পাতা কুচি, পুদিনা পাতা কুচি, কাঁচা লঙ্কা কুচি, দুধে ভেজানো কেশর, সামান্য একটু জল, পেঁয়াজ বেরেস্তা, গরম মসলা গুঁড়ো, বিরিয়ানি মশলা গুঁড়ো এবং ঘি ছড়িয়ে দিয়ে একটি ফয়েল পেপার ২ বা ৩ বার করে দিয়ে ভাল করে মুড়ে ঢাকনা দিয়ে ঢেকে পাত্র টিকে পুরো বন্ধ করে দিন। এবারে একটি লোহার তাওয়া বা রুটি ভাঁজার তাওয়ার ওপরে রেখে প্রথমে ১০ মিনিট বেশি আঁচে, তারপরে ৪০ মিনিট দমে রেখে গ্যাস বন্ধ করে দিন। গরম গরম পরিবেশন করুন হায়দ্রাবাদী কাচ্চি দম বিরিয়ানি।
৩। কলকাতা বিরিয়ানি
নবাব ওয়াজিদ আলি শাহ যখন কলকাতায় আসেন সেই সময় বিরিয়ানিতে নরম মাংসের পরিবর্ত হিসেবে চালু করেন আলু। বর্তমানে কলকাতার বিরিয়ানির অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ এই আলু। শুধু আলু নয়, এখন কলকাতার বিরিয়ানি মানেই মাংসের পাশে আলু ও ডিম। জনপ্রিয়তার বিচারে ও হায়দরাবাদি বিরিয়ানির পরেই স্থান অওয়াধি কলকাতা বিরিয়ানির।
কী কী লাগবে
১ কেজি বাসমতি বা লম্বা দানার চাল, দেড় কিলোগ্রাম খাসির মাংস, মাঝারি আলু (ইচ্ছেমতো), ৩টি মাঝারি পেঁয়াজ,২ চা চামচ রসুনবাটা, আধ চা চামচ আদা বাটা, একটি লেবুর রস, আধ কাপ দই, ১ চা চামচ কাশ্মীরি লঙ্কার গুঁড়ো, ৯ ফোঁটা মিঠে আতর,অল্প জাফরান, ৪ টেবিল চামচ দুধ, ৫টি তেজপাতা, ২-৩ ইঞ্চি দারচিনি, ৮-১০টি লবঙ্গ, ১০টি এলাচ, ১ চা চামচ হলুদ গুঁড়ো, ১০-১২ টেবিল চামচ ঘি, আধ কাপ সাদা তেল, নুন-প্রয়োজন মতো, ৪টি সেদ্ধ ডিম, ৫০ গ্রাম তেজপাতা
মশলার জন্য-
১ চা চামচ শাহ জিরা, ১ চা চামচ গোলমরিচ, ২৫টি এলাচ, অল্প জয়িত্রি, কিছু দারুচিনি, জায়ফল, ১ চা চামচ কাবাব চিনি, কয়েকটি লবঙ্গ
কীভাবে বানাবেন
প্রথমে আলু ধুয়ে, খোসা ছাড়িয়ে, মাপ অনুযায়ী অর্ধেক বা চার টুকরো করে প্রেসার কুকারে রেখে দিন। ৪-৫ কাপ জল দিন। এতে ১ চা চামচ নুন এবং ১ চা চামচ হলুদ গুঁড়ো দিন। তারপর আঁচ বাড়িয়ে কুকারটিকে বসিয়ে রাখুন এবং ২টি সিটি দেওয়ার পরে আঁচ বন্ধ করুন। আলু পুরোপুরি ঠান্ডা হয়ে গেলে মাঝারি আঁচে আধ কাপ ঘি এবং আধ কাপ তেল একটি প্যানে গরম করুন। তারপর আলুগুলিকে সোনালি-বাদামি রং না হওয়া পর্যন্ত ভাজুন। আলু ভাজার পর ওই প্যানেই পেঁয়াজ কুচিয়ে ভেজে বেরেস্তা তৈরি করে রাখুন। এরপর ১ চা চামচ জিরে, ১ চা চামচ গোলমরিচ, ২৫টি সবুজ এলাচ, অল্প জয়িত্রী, দারচিনি এবং জায়ফল, ১ চা চামচ কাবাব চিনি আর লবঙ্গ অল্প আঁচে ভাজুন। মশলা থেকে সুগন্ধ বেরোতে শুরু করলে আঁচ বন্ধ করে দিন। এটিকে ঠান্ডা করুন। তারপরে গ্রাইন্ডার ব্যবহার করে সমস্ত মশলা পিষে নিন। কলকাতা-স্টাইলের বিরিয়ানিতে ব্যবহারের জন্য আপনার মশলা প্রস্তুত।
একটি পাত্রে মাংসের টুকরোগুলি ভাল ভাবে ধুয়ে নিন। এ বার প্রথমে একটি পাত্রে আধ কাপ দই নিন, তার পর ১ চা চামচ কাশ্মীরি লঙ্কা গুঁড়ো এবং আধ চা চামচ নুন দিন। একসঙ্গে ভাল করে মিশিয়ে নিন। তারপর মাংসের টুকরো, ২ চা চামচ রসুনবাটা, আধ চা চামচ আদাবাটা যোগ করে একসঙ্গে ভাল করে মেশান। তারপর দেড় চা চামচ বিরিয়ানির মশলা, যা আগে প্রস্তুত করেছিলেন সেটি মাংসের সঙ্গে সুন্দর ভাবে মেশান। এর পর যোগ করুন লেবুর রস। সবশেষে এক মুঠো বেরেস্তা করে একসঙ্গে মিশিয়ে নিন। এখন অন্তত ৪৫ মিনিট থেকে ১ ঘন্টার জন্য ম্যারিনেট করুন। এর পর একটি প্যান নিন, এটি মাঝারি আঁচে রাখুন, তারপর প্যানে ম্যারিনেট করা মাংস রাখুন। এটিকে রান্না হতে দিন, দুই মিনিট পরে টুকরোগুলি নামিয়ে দিন এবং একটি ঢাকনা দিয়ে প্যানটি ঢেকে দশ মিনিটের জন্য রান্না করুন।
বিরিয়ানির জন্য ভাত একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। তাই অতি সুগন্ধি লম্বা বাসমতি চাল বা লম্বা দানার দেরাদুন চাল বেছে নেওয়াই ভাল। ভাল করে চাল ধুয়ে নিন এবং তার পরে কমপক্ষে ৩০ মিনিটের জন্য ভিজিয়ে রাখুন। এরপর একটি বড় পাত্রের তিন-চতুর্থাংশ জলে ভর্তি করে, এটিকে চড়া আঁচে রাখুন। দেড় চা চামচ নুন, ২ চা চামচ তেল, ৫টি তেজপাতা , এলাচ , লবঙ্গ, দারচিনি মিশিয়ে জল ফুটতে দিন। ফুটতে থাকলে ভেজানো চাল ছেঁকে জলে দিন। ভাত ৮০ শতাংশের বেশি রান্না করা যাবে না।
কলকাতা বিরিয়ানি তৈরি করতে প্রথমে ডেকচি বা হাঁড়ির মধ্যে তেজপাতা ছড়িয়ে দিন তারপর ভাত দিন এবং সবশেষে রান্না করা মাংস রাখুন। এই ভাবে কয়েকটি স্তরে ভাত আর মাংস রাখুন। তার পর আলু, সামান্য মাংসের গ্রেভি, বিরিয়ানি মসলা ছিটিয়ে, জাফরান দুধ, মিঠে আতর, ভাজা পেঁয়াজ, লবণ, আবার ভাত দিন। ভাত, মাংস এবং আলু শেষ না হওয়া পর্যন্ত প্রক্রিয়াটি চালিয়ে যান। তার পর উপর থেকে ৩-৪ চামচ ঘি, এক চিমটে বিরিয়ানি মশলা ছড়িয়ে প্রক্রিয়াটি শেষ করুন। সবশেষে ভাতের উপরে সিদ্ধ ডিম দিয়ে পাত্রের ঢাকনা বন্ধ করুন। সর্বোচ্চ ৩০ মিনিট থেকে ৪৫ মিনিট সময় লাগবে। সময় পেরিয়ে গেলে ঢাকনা খুলে দেখুন, আপনার কলকাতা স্টাইলের বিরিয়ানি একেবারে তৈরি।
৪। থালাসারি বিরিয়ানি ও কোঝিকোড় বিরিয়ানি
কেরল উপকূলের ছোট শহর থালাসারিতে জন্ম খালাসারি বিরিয়ানির। তবে বাসমতী চাল নয়, স্থানীয় জিরাকসল চালে রান্না হয় এই বিরিয়ানি। মাংস ও চাল আলাদা আলাদ ভাবে রান্নার পর ওপরে সাজিয়ে দেওয়া হয় ভাজা পেঁয়াজ, কাজু ও কিসমিস। কেরলে জয়নপ্রিয়তায় থালাসারি বিরিয়ানির পরেই আসে মাপিলা বিরিয়ানি। এই বিরিয়ানিরই অপর নাম কোঝিকোড় বিরিয়ানি। কালিকট বন্দরে ঘাঁটি গেঁড়ে মাপিলা গোষ্ঠী এই বিরিয়ানির প্রবর্তন করে। শুধু বিরিয়ানি নয়, মাপিলাদের স্বতন্ত্র সব রেসিপি কালিকটের ঐতিহ্য।
কী কী লাগবে
৫০০ গ্রাম চাল, কাঁচা কলা ২ টি, ল্যাম্ব লেগ ২০০ গ্রাম, নারকেল একটি, ধনে গুঁড়া ১৫গ্রাম, লাল মরিচের গুঁড়া ১৫ গ্রাম, হলুদ গুঁড়া ৫ গ্রাম, মৌরি ৫ গ্রাম, খোসা ছাড়ানো রসুন ৫ গ্রাম, কারি পাতা
১ চামচ, ১ কাপ পেঁয়াজ বেরেস্তা, রসুন বাটা, আদা বাটা
কীভাবে বানাবেন
কলা খোসা ছাড়িয়ে ১/২'' টুকরো করে কেটে নিন। লবণ জলে ধুয়ে আলাদা করে রাখুন। ভেড়ার পা পরিষ্কার করে ১'' বর্গাকার টুকরো করে কেটে নিন। চাল, পেঁয়াজ বেরেস্তা, রসুন বাটা, আদা বাটা, ভেড়ার মাংস এবং কলা মরিচ, ধনে এবং হলুদের সাথে মেশান এবং মাংস নরম হওয়া পর্যন্ত ঢেকে রান্না করুন। গ্রেট করা নারকেল, মৌরি এবং রসুনের মিহি পেস্ট তৈরি করুন। কারি পাতা এবং লবণের সাথে তরকারিতে এই পেস্টটি যোগ করুন। মাংস পুরোপুরি সেদ্ধ না হওয়া পর্যন্ত আঁচে রেখে গরম গরম পরিবেশন করুন।
৫। দিদিগুল থালাপাকাটি বিরিয়ানি
তামিল নাড়ুর দিন্দিগুল শহরের সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে থালাকাপাটি বিরিয়ানি ইতিহাস। তামিল নাড়ু গেলে খেতে ভুলবেন না। শ্রীরাগা সাম্বা চাল ও কান্নিভাড়ি মাংসের মেলবন্ধনে রান্না করা হয় এই বিরিয়ানি। তবে এই বিরিয়ানি সুখ্যাতি মূলত সুগন্ধীর জন্য।
কেন এই বিরিয়ানিকে থালাপাকাট্টি বিরিয়ানি বলা হয় ?
মিঃ নাগাসামি নাইডু যিনি ডিন্ডিগুলে আনন্দ ভিলাস হোটেল চালাতেন, তিনি তার গ্রাহকদের পরিবেশন করার সময় একটি থালাপা (ভারতীয় পাগড়ি) পরতেন। পরে বিরিয়ানির স্বাদ এবং তার থালাপা (পাগড়ি) মানুষের স্মৃতিতে থেকে যায় এবং অতঃপর তাকে থালাপাকাটি বিরিয়ানি বলা হয়।
কী কী লাগবে
হাড় সহ মাটনের টুকরো- ৫০০ গ্রাম,জিরা সাম্বা চাল- ১/২ কেজি (৩ কাপ),ছোট পেঁয়াজ/শ্যালটস- ৩০০ গ্রাম,টমেটো মাঝারি- ৩টি,কাঁচালঙ্কা- ৪টি,আদা ও রসুনের পেস্ট- ৪ টেবিল চামচ,লাল লঙ্কা গুঁড়ো- ২ থেকে ৩ চা চামচ,ধনে গুঁড়ো- ১ চা চামচ,হলুদ গুঁড়ো- ১/৪ চা চামচ,পুদিনা পাতা- ১ আঁটি,ধনে পাতা- অল্প,ঘি- ৪ টেবিল চামচ (ঐচ্ছিক),জল- ৪ + ১/২ কাপ
ফোড়নের জন্য:
তেজপাতা- ২টি, দারুচিনির কাঠি ১" টুকরো- ২টি, এলাচ- ৪টি, লবঙ্গ- ৬টি, মারাটি মগ্গু- ১টি, আনাচি পু- অল্প, স্টার অ্যানিস- ১টি, তেল- ১/৪কাপ
কীভাবে বানাবেন
শ্যালটগুলি খোসা ছাড়িয়ে নিন। টমেটো কেটে নিন। পুদিনা এবং ধনে পাতা উভয়ই পরিষ্কার করে কেটে নিন। কাঁচা মরিচ অর্ধেক করে ভেঙ্গে নিন। চাল ধুয়ে ৪ কাপ পানিতে ৩০ মিনিট ভিজিয়ে রাখুন। মাটন টুকরা পরিষ্কার এবং ধুয়ে. প্রেসার কুকারে তেল গরম করুন, গরম তেলে টেম্পারিং পুরো মশলা যোগ করুন এবং 1 মিনিটের জন্য ভাজুন। প্যানে পেঁয়াজ এবং কাঁচালঙ্কা যোগ করুন, পেঁয়াজ ফ্যাকাশে না হওয়া পর্যন্ত ভাজুন। আদা এবং রসুনের পেস্ট যোগ করুন এবং আদা এবং রসুন পাতার কাঁচা গন্ধ না হওয়া পর্যন্ত ভাজুন। প্যানে কাটা পুদিনা এবং ধনেপাতা (কিছুটা সাজানোর জন্য সংরক্ষণ করুন) যোগ করুন এবং এক মিনিটের জন্য ভাজুন। মাটনের টুকরা যোগ করুন এবং কয়েক মিনিটের জন্য ভাজুন যতক্ষণ না মাটন ফ্যাকাশে হয়ে যায় এবং সামান্য শুকিয়ে যায়। এই পর্যায়ে কাটা টমেটো, লাল লঙ্কা গুঁড়ো, হলুদ গুঁড়ো, ধনে গুঁড়ো, মাটন যোগ করুন এবং টমেটো কোমল না হওয়া পর্যন্ত ভালভাবে মেশান। প্যানে একটি ১/২ কাপ জল যোগ করুন, ঢাকনা দিয়ে ঢেকে দিন এবং ১০ মিনিট বা ৩ টি শিস না হওয়া পর্যন্ত মাটনের টুকরোগুলিকে চাপ দিন। প্যানের চাপ বের হয়ে গেলে, মাটনে জল এবং প্রয়োজনীয় লবণের সাথে ভেজানো চাল যোগ করুন এবং ফুটতে দিন। চাল দ্বারা ১/২ জল শুষে নেওয়া না হওয়া পর্যন্ত ভালভাবে নাড়ুন, আঁচ কমিয়ে দিন, ঢাকনা দিয়ে প্যান ঢেকে প্রায় ১৫ মিনিট রান্না করুন যতক্ষণ না চাল কোমল হয় (চাল রান্না করবেন না)। চাল সিদ্ধ হয়ে সেদ্ধ হয়ে গেলে ঘি, বাকি পুদিনা ধনেপাতা দিয়ে ভালো করে মেশান। ডালচা ও পেঁয়াজ রায়তার সাথে গরম গরম থালাপাকাটি বিরিয়ানি পরিবেশন করুন।
৬। কল্যাণী বিরিয়ানি
না, বিধানচন্দ্র রায়ের স্বপ্ন নগরী, পশ্চিমবঙ্গের কল্যাণীতে এই বিরিয়ানি পাওয়া যাবে না। পাবেন কর্ণাটকে। কর্ণাটকের বিদার অঞ্চলের কল্যাণী বিরিয়ানি গরীবের হায়দরাবাদি বিরিয়ানি হিসেবে খ্যাত। ব্রিটিশ সাম্রাজ্যে একঘরে হয়ে পড়েন কল্যাণীর নবাবরা। কথিত আছে, মুঘল রাজসভার এক বাবুর্চির হাতে বাস্তবায়িত হয় কল্যাণী বিরিয়ানি। গরুর মাংসের বড় টুকরো, গোটা জিরে, গোটা ধনে ও টমেটো সমৃদ্ধ এই বিরিয়ানির সঙ্গে প্রায় কোনও মিলই নেই মুঘলাই বা হায়দরাবাদি বিরিয়ানির। এই রান্নার প্রধান উপকরণগুলি হলো তুলশীমালা চাল অথবা বাসমতী চাল, খাসির বা গরুর মাংস অথবা মুরগীর মাংস, দই, পেঁয়াজ, দারুচিনি, লবঙ্গ, এলাচ, তেজপাতা, জায়ফল, শাহী জিরা, জয়ত্রি, তারকা মৌরি (বিরিয়ানি ফুল), লেবু এবং জাফরান। ধনেপাতা এবং ভাজা পেঁয়াজ খাবারকে সুশোভিত করতে ব্যবহৃত হয়।
কী কী লাগবে
বাসমতী চাল, নুন, মাটন, হলুদগুঁড়ো, বিশেষ গরমমশলা, তেল ও ঘি, পেঁয়াজ, আদা রসুন পেস্ট, দই, কাজু, সুলতানাস/কিশমিশ, ধনে পাতা, পুদিনাপাতা, জাফরান।
বিশেষ গরমমশলা তৈরি করতে লাগবে: (দারচিনি, মৌরি, জিরে, এলাচ কালো এবং সবুজ উভয়ই, লবঙ্গ, তেজপাতা, জায়ফল ও ধনে) ড্ৰাই রোস্ট করে গুঁড়িয়ে নিন।
কীভাবে বানাবেন
কড়াইতে তেল গরম স্লাইস করা পেঁয়াজ ভেজে বেরেস্তা করে নিন। বাসমতি চাল ধুয়ে ১ ঘণ্টা ভিজিয়ে রাখুন। ধনেপাতা এবং পুদিনা কেটে আলাদা করে রাখুন। কিশমিশ এবং কাজু ঘিয়ে ভেজে আলাদা করে রাখুন। গরম দুধে জাফরান ভিজিয়ে আলাদা করে রাখুন। স্পেশ্যাল গরম মশলা তৈরি করে নিন।
একটি বড় পাত্রে মাটন নিন। পেঁয়াজ বাটা, অদা-রসুন বাটা, লঙ্কাবাটা, হলুদ, টকদই, জিরে-ধনেগুঁড়ো, গরমমশলা ভালভাবে মেশান। কমপক্ষে ৪-৫ ঘন্টা ম্যারিনেট করে ফ্রিজে রেখে দিন। রান্নার ১ ঘন্টা আগে ফ্রিজ থেকে মাটন বের করে নিতে হবে। বাসমতী চাল অর্ধেকটা সেদ্ধ করে জল ঝরিয়ে রাখতে হবে।
কড়াইতে ঘি গরম করে নিয়ে ম্যারিনেট করা মাংস ভাল করে কষিয়ে নিন। তেল ছেড়ে এলে প্রেসারকুকারে দিয়ে একটু সেদ্ধ করে নিন। অন্যান্য মশলার সঙ্গে পুদিনার একটা রিফ্রেশিং গন্ধ থাকে। ছড়ানো একটা কড়াইতে, প্রথমে মাংস দিন কিছুটা। তার ওপরে চাল। অল্প বেরেস্তা, পুদিনা, জাফরান আর ঘি দিন। আবার কিছুটা মাংস আর চাল দিয়ে বেরেস্তা ঘি পুদিনা দিন। কড়াই ঢাকা দিয়ে আঁচ কমিয়ে দমে রাখুন ২০ মিনিট। আর পরিবেশন করুন গরম গরম।
৭। অম্বর বিরিয়ানি
তামিলনাড়ুর আকরোট এলাকায় জনপ্রিয়তা পেয়েছে এই বিরিয়ানি। লম্বা বাসমতী চালের পরিবর্তে এই বিরিয়ানিতে ব্যবহার করা হয় ছোট শ্রীরাগা সাম্বা চাল। পাকি পদ্ধতিতে দমে রান্না করা হয় বিরিয়ানি। রসুন, দারচিনি, লবঙ্গ, পুদিনা, লঙ্কা, লেবু সহযোগে এই বিরিয়ানি যেন একেবারেই স্বতন্ত্র। দইয়ে ভেজানো মাংসের স্বাদও যেন অপূর্ব।
কিংবদন্তি আম্বুর বা অম্বর বিরিয়ানি ভেলোর জেলার ছোট শহর আম্বুর থেকে এসেছে। ধনে, পুদিনা এবং দই দিয়ে এর স্বাদ বাড়ানো হয় বলে এটি আলাদা হয়ে যায়। বিরিয়ানির গোপন রেসিপিটি হুসেন বেগ দ্বারা তৈরি করা হয়, যিনি আর্কটের নবাবের রান্নাঘরে রান্না করতেন। স্বাদটি শীঘ্রই মানুষের হৃদয়ে একটি জায়গা পেয়েছে এবং রাজ্যের চারপাশে ভক্তদের কাছে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। একটি ছোট প্রতিষ্ঠান হিসাবে যা শুরু হয়েছিল তা এক শতাব্দী পরে একটি সফল, বিশাল ব্র্যান্ডে পরিণত হয়েছিল। আম্বুর স্টাইলের বিরিয়ানির মশলার মাত্রা বাকিগুলোর চেয়ে হালকা এবং জিরা ভাত এবং মাটনের সাথে বেগুনের তরকারি এবং শসার রায়তা দিয়ে তৈরি করা হয়। ব্যবহৃত বিশেষ জাতের চালকে সিরাগা সাম্বা বলা হয়। আম্বুর স্টার বিরিয়ানি, যেমনটি এখন বলা হয়, সফলভাবে হুসেন বেগের বংশধরদের দ্বারা পরিচালিত হয়।
কী কী লাগবে
মাংস টুকরো মধ্যে কাটা, দই, আদা রসুন পেস্ট, পেঁয়াজ পাতলা করে কাটা, বাসমতি চাল ভিজিয়ে রাখা, জল, লবন
মসলা পেস্টের জন্য:
নারকেল কোরা, পোস্তদানা, ধনে, জিরা, মৌরি, লবঙ্গ, সবুজ এলাচের শুঁটি, দারচিনি, হলুদ গুঁড়ো, লাল লঙ্কা গুঁড়ো, গরম মশলা, রান্নার জন্য তেল, গার্নিশের জন্য ভাজা পেঁয়াজ, পুদিনা পাতা এবং ধনে পাতা
কীভাবে বানাবেন
দই, আদা-রসুন পেস্ট এবং মশলা দিয়ে মাংস ম্যারিনেট করুন। একটি বড় পাত্রে তেল গরম করুন এবং পেঁয়াজ সোনালি বাদামী হওয়া পর্যন্ত ভাজুন।
ম্যারিনেট করা মাংস যোগ করুন এবং কোমল হওয়া পর্যন্ত রান্না করুন। একটি আলাদা প্যানে, মশলাগুলি ভাজুন এবং নারকেল এবং পোস্ত দানা দিয়ে পিষে একটি মসলা পেস্ট তৈরি করুন। পাত্রে মসলা পেস্ট যোগ করুন এবং কয়েক মিনিট রান্না করুন। পাত্রে ভেজানো চাল, জল এবং লবণ যোগ করুন এবং ভাত না হওয়া পর্যন্ত রান্না করুন। ভাজা পেঁয়াজ, পুদিনা পাতা, ধনেপাতা দিয়ে সাজিয়ে নিন। রায়তা বা সালনের সাথে গরম গরম পরিবেশন করুন।
৮। ভাটকালি বিরিয়ানি
ম্যাঙ্গালোর উপকূলের ছোট শহর ভাটকলে জন্ম এই বিরিয়ানির। এখানে মাংস, চাল, মশলা সব আলাদা আলাদ ভাবে তৈরি করা হয়। পরিবেশনের মাত্র কয়েক সেকেন্ড আগে একসঙ্গে মেশানো হয় সবকিছু। মশলার মধ্যে থাকে পেঁয়াজ, লঙ্কা ও অন্যান্য মশলা। যার সঙ্গে মেশানো হয় চাল ও মুরগির মাংস। ওপরে সাজানো হয় কারিপাতা।
কী কী লাগবে
২ কাপ বাসমতি চাল, ৫০০ গ্রাম কাটা মাংস (মুরগি বা মাটন), ২-৩টি এলাচ, ৪ টেবিল চামচ ঘি, ২ টেবিল চামচ বিরিয়ানি মসলা, ২টি চেরা কাঁচালঙ্কা, ২ টেবিল চামচ আদা-রসুন বাটা, ২টি তেজপাতা, ১/৪ কাপ তাজা কাটা পুদিনা পাতা, ৩ টি কাটা টমেটো, ৩ টি বড় কাটা পেঁয়াজ, দুধে এক চিমটি জাফরান, ৩টি লবঙ্গ, ১/২ কাপ দই, ১ কাপ তাজা কাটা ধনে পাতা, ২ টেবিল চামচ তেল
কীভাবে বানাবেন
একটি বড় পাত্র নিন, এটি গরম করুন এবং এতে ঘি দিন। পেঁয়াজ কুচি ভাজুন, গার্নিশ করার জন্য অর্ধেক আলাদা রাখুন। পেঁয়াজের সাথে আদা-রসুন পেস্ট এবং পুরো মশলা যোগ করুন এবং কাঁচা সুগন্ধ না হওয়া পর্যন্ত সেঁকে নিন।
মিশ্রণে কাঁচালঙ্কা, টমেটো এবং বিরিয়ানি মসলা ঢেলে তেল আলাদা না হওয়া পর্যন্ত রান্না করুন। পাত্রে মাংস দিয়ে বাদামী হওয়া পর্যন্ত ভাজুন। মিশ্রণটিকে ক্রিমি এবং পুষ্টিকর করতে স্বাদমতো দই, পুদিনা পাতা এবং লবণ যোগ করুন। এটি মাংসের টুকরোগুলোকেও কোমল ও নরম করে তুলবে। বাসমতি চালের সাথে মাংসের স্তর দিন এবং রান্না করতে দিন। কয়েক মিনিট পর জাফরান দুধ, সেদ্ধ ও ভাজা আলু, ধনে পাতা এবং ভাজা পেঁয়াজ কুঁচি দিয়ে বিরিয়ানির উপরে দিন। পাত্রটি আটা দিয়ে বন্ধ করুন এবং কম আঁচে ৩০ মিনিটের জন্য রান্না করুন। রায়তা ও আচারের সাথে গরম গরম বিরিয়ানি পরিবেশন করুন।
৯। মেমোনি বিরিয়ানি
মেমোনি বিরিয়ানি খেয়েছেন? গুজরাতে যারা গেছেন, তাঁরা খেয়ে থাকবেন। তবে আমি যে মেমোনি বিরিয়ানি খেয়েছি, আপনি তেমনটা নাও খেতে পারেন। পদ্ধতিগত পরিবর্তন থাকতেই পারে। থাকতে পারে স্বাদেরও বদল। গুজরাতে বিভিন্ন গোষ্ঠী যেমন বোহরি, মেমন প্রত্যেকেরই রয়েছে বিরিয়ানি রান্নার স্বতন্ত্র পদ্ধতি। পাকিস্তানের সিন্ধ প্রদেশের সিদ্ধি বিরিয়ানির পদ্ধতি মেনে রান্না করা হয় মেমনি বিরিয়ানি। তবে সিন্ধি বিরিয়ানিতে ব্যবহৃত টমেটো বা আলু থাকে না মেমনি বিরিয়ানিতে। থাকে না কেসরও। চালের রঙ এখানে পুরোটাই আসে মশলা থেকেও। স্বাদেও মেমনি বিরিয়ানি বেশ মশলাদার, ঝাল ঝাল।
কী কী লাগবে
৫০০ গ্রাম বাসমতি চাল,
১ টেবিল চামচ গোটা গরম মসলা,
১/২ চা চামচ জিরা,
১ টি তেজপাতা,
১ চা চামচ ঘি,
১ চামচ ভিনেগার,
৫০০ গ্রাম চিকেন, ৩টি মাঝারি সাইজের পেঁয়াজ, ৫-৬ টি কাঁচালঙ্কা , ৩ টেবিল চামচ আদা রসুন বাটা, ১/২ চা চামচ হলুদ, ১ ইঞ্চি দারুচিনি, ৭টি গোলমরিচ, ৩টি লবঙ্গ, ১ চা চামচ জিরা, ১ টি কালো এলাচ, লবন, ১ কাপ ভাজা পেঁয়াজ কুঁচি, ৩ টেবিল চামচ দই, ১টা লেবুর রস, ৬টি পুদিনা পাতা, ১ চা চামচ কালো মরিচ গুঁড়া, ১/২ চা চামচ গরম মসলা গুঁড়া, ১/২ কাপ তেল, কয়েকটি জাফরান গুঁড়ো করে ১/৪ কাপ দুধে ভিজিয়ে রাখুন, ১ কাপ তেল, ৩ টেবিল চামচ ঘি
কীভাবে বানাবেন
একটি বড় পাত্রে জল ফুটিয়ে নিন। গরম মসলা আর চাল দিন। এবার লবণ ও লেবু দিন। ৮০% পর্যন্ত ভাত রান্না করুন। একবার করেছি। জল ছেঁকে একপাশে রাখুন। পেঁয়াজ, আদা রসুন এবং কাঁচালঙ্কা পিষে নিন। জিরা এবং পুরো গরম মসলার সাথে এই পেস্টটি মুরগিতে যোগ করুন। প্রেসার কুক ২টি সিটি দিন। মসলা ঠান্ডা হয়ে গেলে, সমস্ত উপাদান যোগ করুন। ভালভাবে মেশান। মসলা দিয়ে পরে ভাতের একটি স্তর ছড়িয়ে দিন। এবার চালের আরেকটি স্তর ছড়িয়ে দিন। ঘি ছিটিয়ে দিন। জাফরান দুধ দিন। ভেজা কাপড় বা অ্যালুমিনিয়াম ফয়েল দিয়ে ঢেকে ঢাকনা দিন যাতে বাতাস বের না হয়। ৫ মিনিটের জন্য চড়া আঁচে রান্না করুন। তারপরে ২৫ মিনিটের জন্য অল্প আঁচে রাখুন। বুরহানি বা মাঠা দিয়ে গরম গরম পরিবেশন করুন।
১০। বেরি বিরিয়ানি
কর্ণাটকের দক্ষিণ কন্নড় এলাকার বেরি বিরিয়ানির স্বাদ ম্যাঙ্গালোর বিরিয়ানির কাছাকাছি। তবে সারা ভারতের মধ্যে সবথেকে হালকা বোধহয় এই বিরিয়ানিই। ঘিয়ের গন্ধ মাখা এই বিরিয়ানি রান্নার আগে সারারাত মশলায় মাখিয়ে রাখা হয় চাল, চিকেন, মাটন, বিফ ও চিংড়ি।

কী কী লাগবে
বোনলেস চিকেন ৫০০ গ্রাম, বাসমতী চাল ৫০০ গ্রাম, ক্র্যান বেরি বা ড্রাই বেরি ১০০ গ্রাম, কাজু-কিশমিশ ১০০ গ্রাম, বেরেস্তা আধ কাপ, শাহি গরম মশলা ১ টেবল চামচ, দুধে ভেজানো জাফরান ৩ টেবল চামচ, কেওড়া জল ১ টেবল চামচ, জিরে-ধনে-হলুদ-লঙ্কা গুঁড়ো ১ টেবল চামচ করে, আদা-রসুন বাটা ২ টেবল চামচ, নুন-চিনি স্বাদমত, ঘি ৫ টেবিল চামচ, সাদা তেল ২ টেবল চামচ, গোটা গরম মশলা, তেজপাতা
কীভাবে বানাবেন
প্রথমে ক্র্যানবেরি বা ড্রাই বেরি জলে ভিজিয়ে রাখুন। এবার ডেকচিতে ঘি ও তেল দিয়ে তাতে তেজপাতা ও গরম মশলা ফোড়ন দিন। চিকেনের টুকরোগুলো দিয়ে তাতে আদা-রসুন বাটা বাকি মশলা দিয়ে কষিয়ে তাতে আগে থেকে ভেজানো বাসমতী চাল, শাহি গরম মশলা দিয়ে ওপর থেকে বেরি, ড্রাই ফ্রুট ও বেরেস্তা ছড়িয়ে কম আঁচে দমে রান্না করুন। পোলাও হয়ে এলে ওপর থেকে জাফরান ও কেওড়া জল ছড়িয়ে নিলেই তৈরি চিকেন বেরি বিরিয়ানি।
১১। তেহরি
মুঘল হেঁসেলে ধর্মপ্রাণ হিন্দুদের জন্য রান্না হতো তেহরি বিরিয়ানি। সম্পূর্ণ নিরামিষ এই বিরিয়ানিতে মাংসের বদলে ব্যবহার করা হয় আলু। কাশ্মীরের অন্যতম জনপ্রিয় স্ট্রিট ফুড তেহরি।
কী কী লাগবে
মুরগি-৫০০গ্রাম (ছোট ছোট পিস করে কাটা), জল ঝরানো টকদই- ১/২ কাপ, পেঁয়াজ কুঁচি- ১ কাপ,
আদা বাটা- ২ টেবিল চামচ, রসুন বাটা- ২ চা চামচ, পেঁয়াজ বাটা- ৩ চা চামচ, এলাচ- ৩-৪টি, জয়ফল বাটা- ১/২ চা চামচ, দারচিনি ২-৩ টি, লবঙ্গ- বেশ কয়েকটা, তেজপাতা- ২-৩ টি,সরষের তেল- ৪ টেবিল চামচ, নুন- স্বাদমতো, বাসমতি চাল- ৩ কাপ, সরষের তেল- ১/২ কাপ, নুন- স্বাদমতো, কাঁচা লঙ্কা- স্বাদমতো, বেরেস্তা- ১/২ কাপ,
কীভাবে বানাবেন
চিকেনের সঙ্গে উপরের সবকিছু উপকরণ একসঙ্গে মেখে ম্যারিনেট করে রাখুন ঘন্টা খানেক। সময় হয়ে গেলে একদম অল্প জল দিয়ে মাংসের পিসগুলি রান্না করুন ঘড়ি ধরে ২৫ মিনিট। হালকা ঝোল থাকবে, তেল উপরে উঠে আসলেই বুঝবেন তৈরি হয়ে গেছে। বড় একটা হাড়িতে সরষের তেল দিয়ে তাতে পরিমাণ মতো চাল আর নুন দিয়ে দিন।চালটা একটু ভেজে নিয়ে তাতে ৫ কাপ ফুটন্ত গরম জল আর রান্না করা মুরগির টুকরোগুলো দিন।এরপর ভাজা পেঁয়াজ যোগ করুন।এবার আভেনের আঁচটা বাড়িয়ে দিন। যখন চাল ফুটে উঠবে, তখন জল শুকাতে থাকবে।এই সময় আঁচ একদম কমিয়ে উপরে কাঁচালঙ্কা ছড়িয়ে ঢাকনা আটকে দিন। এরপর রান্না করুন ২০ মিনিট। সরাসরি আগুনে না দিয়ে নিচে একটি তাওয়া দিয়ে দিন। তাওয়া না থাকলে একটা হাড়িতে গরম জল নিয়ে তার উপর তেহারির হাঁড়ি বসিয়ে দিন। ঢাকনা ভালোভাবে লাগিয়ে দেবেন। খেয়াল রাখবেন, ভাপ যেন বেরিয়ে না যায়। হয়ে গেলে গরম গরম পরিবেশন করুন।
১২। কামপুরি বিরিয়ানি
অসমের মুসলিম শহর কামপুরের বিরিয়ানি বিখ্যাত রঙের কারণে। প্রথমে মুরগির মাংস, গাজর, বিন, আলু, ক্যাপসিকাম ও মশলা দিয়ে রান্না করা হয়। পরে এই মাংস মেশানো হয় চালের সঙ্গে। এই তালিকা ছাড়াও ভারতের বিভিন্ন শহরে দেখতে পাওয়া যায় বিরিয়ানির বিবর্তনের বিভিন্ন নিদর্শন। অস্ত্র বিরিয়ানি, চেট্টিনাড় বিরিয়ানি, বম্বে বিরিয়ানি, হায়দরাবাদের দুধ কি বিরিয়ানি ইত্যাদি..
বিরিয়ানি যখন ঠাকুরের প্রসাদ-
দক্ষিণ ভারতের সেই মন্দির। মুনিয়ান্ডি স্বামী মন্দির। মন্দিরে চিকেন এবং মাটন বিরিয়ানিই হল একমাত্র প্রসাদ। তামিলনাড়ুর বিখ্যাত মাদুরাই শহর থেকে ৪৫ কিলোমিটার ভিতরে চলে গেলে ভেদাঙাম্পতি গ্রামে তিরুমঙ্গলাম তালুক। সেখানেই অবস্থিত এই মন্দির। ৮৩ বছর ধরে ঐতিহ্য মেনে বিরিয়ানি প্রসাদ হিসাবে বিলি হয়ে আসছে। স্থানীয়দের বিশ্বাস, মন্দিরের দেবতা অনেকটা আমাদের মতোই বিরিয়ানি-প্রেমী ছিলেন। তাই তাকে সন্তুষ্ট রাখতেই এই নিয়ম।
প্রত্যেক বছর জানুয়ারির ২৪ থেকে ২৬ তারিখ এই মন্দিরে খুব বড় উৎসব হয়। সেখানে প্রধান ভোগ হিসেবে থাকে চিকেন এবং মাটন বিরিয়ানি। মন্দির সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রায় দু'হাজার কেজি চাল, আড়াইশো মুরগি এবং দু'শো খাসি লাগে বিপুল পরিমাণ বিরিয়ানির জন্য। এখানেই কিন্তু শেষ নয় এই বিরিয়ানির মাহাত্ম্য। দক্ষিণ ভারতে সুব্বা নাইডু নামে এক ব্যবসায়ী সাতের দশকে খুলে ফেলেন শ্রী মুনিয়ান্ডি বিলাস রেস্তোরাঁ। এই মুহূর্তে সাফল্যের শীর্ষে থাকা এই রেস্তোরাঁর হাজারটি শাখা ছড়িয়ে রয়েছে গোটা দক্ষিণ ভারত জুড়ে। আজও দিনের প্রথম ক্রেতার টাকা আলাদা করে সরিয়ে রেখে তা পাঠানো হয় মুনিয়ান্ডি স্বামী মন্দিরের তহবিলে।
Comments