top of page

প্যান্ডোরার বাক্স, মায়ের হাতের রান্না, থাইরয়েড ভালো রাখতে কী খাবেন? ডেভিড ম্যাক্বাচন ও একটি বইয়ের কথা..

রবিবারের অনন্যা, সংখ্যা ৯৩, ২০ অক্টোবর, ২০২৪


প্যান্ডোরার বাক্স

তৃষা নন্দী

আমরা, যারা বড় হয়েছি নব্বইয়ের দশকে, আমরা যারা বেড়ে উঠেছি মফস্বলের পাড়ায়, বিকেলে স্কুলফেরতা খেলতে বেরিয়েছি মাঠে কিংবা নিদেনপক্ষে গলিতে, তাদের মধ্যে প্রায় প্রত্যেকেরই নিজস্ব বেশ কিছু সম্পদের খনি ছিল। সেই খনি কখনও ইশকুলের টিনের বাক্স, ঠাকুমার পুরোনো ট্রাঙ্ক অথবা বাড়ির বাড়তি যাহোক একটা কোনো বাক্স প্যাঁটরা। আমাদের একান্ত নিজস্ব প্যান্ডোরার বাক্স! গ্রীক পুরাণ অনুযায়ী, প্রথম নারী ছিল প্যান্ডোরা। তার বিয়ে হয় এপিমেথিউসের সঙ্গে। আর সেই বিয়েতে দেবরাজ জিউ উপহার দেন এই বাক্সটা।

তবে এটাকে খুলতে নিষেধ করেন। কৌতুহলের বশে একদিন প্যান্ডোরা খুলে ফেলে বাক্সটা। আর সেখান থেকে বেরিয়ে পড়ে দুঃখ, হতাশা... যা কিছু খারাপ। কোনোরকমে বাক্সটা বন্ধ করে দেয় সে। ভেতরে থেকে যায় শুধু আশা। আসলে প্যান্ডোরার বাক্সে ভর্তি ছিল দুঃখ হতাশা আর আশা। বেঁচে থাকতে গেলে দুটোই তো প্রয়োজন। আমাদের বাক্সরাও ঠিক তেমনি। সেইসব বাক্সদের বাইরের রূপের অহংকার ছিল না বটে, কিন্তু ভেতরে পোরা থাকত আশ্চর্য সমস্ত গুপ্তধন। প্রথম ব্যর্থ প্রেমের চিঠি, খারাপ মার্কস পাওয়া মার্কশীট, দাদুর দেওয়া প্রথম কলম, আর কত কত ভালো লাগার ম্যাগাজিনের পাতা। অনেকদিন বাদে বাড়ি ফিরে সেইসব গুপ্তধন ঘটিতে গেলে দুম করে খুঁজে পাওয়া যায় কবেকার হলদে হয়ে যাওয়া পত্রিকা। গল্পে তার দাগ লাগেনি বটে, কিন্তু পাতায় পাতায় পোকায় খাওয়া নকশা।


আমরা যারা গল্প জমা করে রাখতে চেয়েছি ছোটবেলায়, বড় হয়ে তারাই নিজেদের গল্প খুঁজতে বাড়ি ছেড়ে পাড়ি দিই দূরে। তারপর দূর থেকে আরো দূরে। অফিস, কেরিয়ার, জীবন আর নিঃসঙ্গতা একসাথে জাপটে ধরলে হঠাৎ কোনো একটা বৃষ্টির দুপুরে বা প্রথম শীতের বিকেলে মনে পড়ে যায় সেইসব পুরোনো গল্পদেরকথা। মনের ভেতরেই ফিরতে হয় তখন। গল্পের পাতা নাড়াচাড়া করে মাথার ভেতর। একদিন হয়তো কেজিদরে বিক্রি হয়ে যায় সব পুরোনো বাক্স ভর্তি ম্যাগাজিন, পাতা। তবু থেকে যায়। কোথাও না কোথাও থেকে যায়। গল্প, কবিতা, কমিক্স, রান্না, গেরস্থালি আরো কত টুকিটাকি। পিডিএফ কিন্ডল আর সফট কপির দিনে একবারও কি হাতে ছুঁয়ে দেখতে ইচ্ছে করে না তাদের?

করে।


ঠিক যেমন, খুব জ্বর এলে মায়ের কাছে যেতে ইচ্ছে করে। অনলাইনে খাবার অর্ডার করতে গিয়ে বাড়ির রান্না খেতে ইচ্ছে করে। উইকএন্ড এলে ইচ্ছে হয় একমাসের গরমের ছুটি পেতে। স্মার্ট টিভিতে রবিবার দুপুরে দেখতে ইচ্ছে করে শক্তিমান। হোয়াটস অ্যাপ গ্রুপের পুরোনো বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিতে ইচ্ছে করে সামনাসামনি। ঠিক তেমনই এইসব ইচ্ছেরা। সব ইচ্ছে সত্যি হয় না। আসলে আরো বড় বড় অনেক ইচ্ছে পূরণ করতে গিয়েই আমরা মাঝে মধ্যে জেনেবুঝে ছেঁটে ফেলি আগাছার মতো কিছু ছোটখাটো ইচ্ছে। ম্যাগাজিন কিনতে আর দোকানে ভিড় জমাই না তাই। পাতা উলটে দেখার সময়টুকু দিয়ে দিই মুঠোয় ধরা ফোনটাকে। এই পাতা, আঠা, বাঁধাই, ভারি ভারি ছাপার মেশিন সবটাই হয়তো হারিয়ে যাবে একদিন। হারিয়ে যাবে এই বিশাল কর্মকান্ডের সাথে যুক্ত অজস্র মানুষ। ঘাম ঝরিয়ে আর বিনোদনের পাতা ছাপানো হবে না কোনোদিন। নাকি হারিয়ে যাবে আমাদের ভাষাটাই?

আসলে আমরা ভুলে যাই, যা কিছু বদল তা তো মানুষই আনে। আমরাই আনি। নিজেদের প্রয়োজনে সংক্ষেপিত করে নিতে চাই। দুনিয়াটাকেও। আমেরিকায় বসেও তাই রাতারাতি পিডিএফে পড়ে ফেলা যায় সদ্য প্রকাশিত পুজোসংখ্যা। এমন অসম্ভব তো মানুষই পারে! প্যান্ডোরার বাক্সের আকার তাই এখন অনেকটা ছোট। হাতের মুঠোয় ধরে ফেলা যায়। এই বাক্সে আর মরচে ধরে না। কিন্তু অনেক অনেক বছর পরে বাক্স খুলে হলদে ম্যাগাজিনের পাতা ওল্টানোর আনন্দ কি দিতে পারবে মোবাইলের স্ক্রোল? উত্তর খুঁজে যাই বরং! আমরা হয়তো আনন্দের অনুভূতির সংজ্ঞাটাই বদলেফেলব একদিন। বদলে যাওয়া ভালো না খারাপ সেই বিতর্ক নাহয় চলুক। স্মৃতি আর ভবিষ্যত পায়ে পা দিয়ে ঝগড়া করে যাক।

তারপর হয়তো একদিন আমাদের মাথায় হাত বুলিয়ে গল্প শোনাবে আর্টিফিশিয়াল ইন্টিলিজেন্স। কফির কাপ নিয়ে আড্ডা দেব কোনো একটা রোবোটের সাথে। শুধু সে সব গল্প, সে সব আড্ডাগুলো যেন বাংলা ভাষাতে হয়। আমাদের ভাষাটুকু বেঁচে থাকুক। আমাদের অক্ষরগুলো অক্ষয় থাকুক। পিডিএফে হোক, সফট কপিতেই হোক, আমাদের উত্তরসূরীরা যেন বাংলা হরফটুকু দেখে চিনতে পারে। চাওয়া বলতে এটুকুই!

 

মায়ের হাতের রান্না

বিয়ের পর নিজের বাড়ি ছেড়ে আসা। নিজের ঘর-বাড়ি-পাড়া, প্রিয়বন্ধু একে একে পেছনে ফেলে আসতে হয় সবটাই। নিজের পছন্দ- অপছন্দ কে ধুয়ে মুছে মানিয়ে নিতে হয় সম্পূর্ণ নতুন এক পরিবারে। তাদের পছন্দ টাকে মাথায় রেখে থালা সাজাতে হয় প্রতিদিনের। এর মধ্যে কোথায় যেন হারিয়ে যায় নিজের প্রিয় খাবারগুলো, মায়ের হাতের রান্না..


সবাইকে যত্নে ভাত বেড়ে খাইয়ে, সবশেষে নিজে একা যখন খেতে বসে, মনের কোথাও কড়া নেড়ে যায় মায়ের হাতের মাছের ঝোল ভাতের মায়ামাখা স্বাদ। এমনই ১০টি রেসিপি, সবার সঙ্গে ভাগ করে নিলেন রন্ধনশিল্পী সুপর্না মন্ডল।

ইলিশের ননীবাহার

কী কী লাগবে

ইলিশ ৪ টুকরো, দুধ ১০০ মি.লি, মালাই ২০০ মি.লি, গোলমরিচ ২ চা চামচ, মাখন ২০ গ্রাম, নুন (স্বাদমত), কাঁচা লঙ্কা ৫-৬ টা (মাঝখান থেকে চিরে নেওয়া)।

কীভাবে বানাবেন

প্রথমে ইলিশের টুকরোগুলোতে অল্প গোলমরিচ আর নুন মাখিয়ে ১৫ মিনিট রেখে দিন। এবারের প্যানে মাখন দিন। মাখন গরম হলে তাতে কাঁচালঙ্কা দিয়ে সামান্য নাড়াচাড়া করে মাছের টুকরোগুলো দিয়ে দিন। কিছুক্ষন পর মাছগুলি উল্টে দিন । ৪-৫ মিনিট পর দুধ দিন। দুধ ফুটে উঠলে এর মধ্যে ফ্রেস ক্রিম মেশান। এবার এরমধ্যে স্বাদমতো নুন ও গোলমরিচ মিশিয়ে আরো ৩-৪ মিনিট রেখে দিলেই তৈরী ইলিশের ননীবাহার।

বরিশালি ইলিশ

কী কী লাগবে

ইলিশ মাছ ৫০০ গ্ৰাম, সরষে বাটা ১০০ গ্ৰাম, কাঁচালঙ্কা বাটা ১ চা চামচ, গোটা কাঁচালঙ্কা ৪ টুকরো, নারকেল বাটা ৫ চা চামচ, পোস্ত বাটা ২ চা চামচ, Shalimar's সরষের তেল ৫০ গ্ৰাম, কালোজিরে ১ চিমটি,  Shalimar's হলুদ গুঁড়ো ১/২ চা চামচ, টকদই ৩ চা চামচ, নুন স্বাদমতো।



কীভাবে বানাবেন

সরষের তেল গরম করে কালোজিরে ফোড়ন দিয়ে একে একে সরষে বাটা, কাঁচালঙ্কা বাটা, ফেটানো টকদই, নুন, হলুদ গুঁড়ো দিয়ে অল্প নেড়ে চেড়ে মাছগুলো আর অল্প জল দিয়ে ঢেকে দিন। নারকেল বাটা, পোস্ত বাটা আর চেরা কাঁচা লঙ্কা মিশিয়ে ২-৩ মিনিট রেখে নামিয়ে নিন।

ভাপা ইলিশ

কী কী লাগবে

ইলিশ মাছ ৬ টুকরো, ২ টেবিল চামচ সাদা কালো সরষে ও ৫-৬ টা কাঁচালঙ্কা একসাথে বাটা, নুন স্বাদ মতো,  Shalimar's হলুদ গুঁড়ো ১ চা চামচ, চেরা কাঁচালঙ্কা ২টো, কালোজিরা ১/২ চা চামচ,  Shalimar's সরষের তেল ৪ টেবিল চামচ।


কীভাবে বানাবেন

একটি পাত্রে একে একে সব উপকরণ একসঙ্গে মেখে নিন। স্টিলের টিফিন বক্সে ঢেলে ঢাকনা বন্ধ করে ভাপিয়ে নিলেই তৈরী ইলিশ ভাপা।

ইলিশের তেল বেগুন

কী কী লাগবে


কীভাবে বানাবেন

তেল গরম করে নুন হলুদ দিয়ে বেগুন ভেজে তুলে নিন। ঐ তেলে কালোজিরা কাঁচালঙ্কা ফোড়ন দিয়ে মাছগুলো সাজিয়ে দিন। একটি পাত্রে সরষে বাটা, কাঁচালঙ্কা বাটা, নুন, হলুদ গুঁড়ো জলে গুলে মাছের ওপর ঢেলে ঢেকে রান্না করুন। ৪-৫ মিনিট পর ভাজা বেগুন দিয়ে মিশিয়ে নামিয়ে পরিবেশন করুন ভাতের সঙ্গে।

মালাই ইলিশ

কী কী লাগবে

ইলিশ মাছ ৬ টুকরো, পেঁয়াজ বাটা: ২টো বড়, ছোট এলাচ: ৫ টি, আদা বাটা: ২ চামচ, নারকেলের দুধ: ১ কাপ, পোস্ত বাটা: ২ চামচ, কাজু বাটা: ২ চামচ, ফ্রেশ ক্রিম: ৪ চামচ, ঘি: ২ চামচ, পরিমাণ মতো নুন,  Shalimar's সাদা তেল, চিনি, কাঁচা লঙ্কা


কীভাবে বানাবেন

মাছ ধুয়ে নুন এবং লেবুর রস দিয়ে ম্যারিনেট করে রাখুন। এ বার কড়াইতে ২ চামচ সাদা তেল এবং ২চামচ ঘি গরম করে তাতে পেঁয়াজ বাটা, আদা বাটা, নারকেলের দুধ, ছোট এলাচ, পোস্ত বাটা সহ বাকি উপকরণ দিয়ে ভাল ভাবে ফুটিয়ে গ্রেভি বানিয়ে নিন। এ বার মাছের টুকরোগুলো দিয়ে দিন। কিছুক্ষণ পর আবার উলটে দিন। নামানোর আগে ফ্রেশ ক্রিম ছড়িয়ে পরিবেশন করুন।

সরষে পোস্ত ইলিশ

কী কী লাগবে

ইলিশ মাছ, কালো সর্ষে, সাদা সর্ষে, পোস্ত,  Shalimar's সর্ষের তেল, নুন, কাঁচালঙ্কা,  Shalimar's হলুদ, টকদই




কীভাবে বানাবেন

সর্ষে ২ ঘণ্টা জলে ভিজিয়ে রাখুন। তার পরে জল ভিজিয়ে রাখা সর্ষে ছেঁকে নিন। দুরকমের সর্ষে, পোস্ত, নুন, কাঁচালঙ্কা, টকদই একসঙ্গে মিক্সিতে বেটে নিন। এবার এই পেস্টটি একটি বাটিতে ঢেলে নিয়ে ওতে ইলিশ মাছ, হলুদগুঁড়ো, সর্ষের তেল, চেরা কাঁচালঙ্কা এবং স্বাদমতো নুন দিয়ে সবকিছু একসঙ্গে ভালোভাবে মেখে নিতে হবে। এরপর সমস্ত ম্যারিনেট করা মাছটা একটা টিফিনবক্সে ভরে মিনিট ২০-২৫-এর জন্যে ভাপিয়ে নিলেই তৈরি হয়ে যাবে সরষে পোস্ত ইলিশ।

কাসুন্দি ইলিশ

কী কী লাগবে

ইলিশ মাছ ৬ টুকরো, কাসুন্দি-১/২ কাপ,  Shalimar's হলুদ গুঁড়ো-১/৪ চা চামচ,  Shalimar's সর্ষের তেল-১/৪ কাপ, কাঁচালঙ্কা ৪-৫টা, নুন-স্বাদ মতো


কীভাবে বানাবেন

একটা বড় কড়াইতে কাসুন্দি, তেল, নুন ও হলুদ একসঙ্গে নিয়ে ইলিশ মাছের টুকরোয় মাখিয়ে নিন। এর উপরে কাঁচালঙ্কা চিরে দিন। ১৫ থেকে ২০ মিনিট এই মিশ্রণ মাখিয়ে রেখে দিন। এর পর একটি টিফিন বাক্সে কাসুন্দি মাখানো মাছগুলি রেখে দিন। এবার কড়াইতে জল গরম করতে দিন। মাছ ভরা বাক্সটি ওই ফুটন্ত জলের মধ্যে বসিয়ে দিন। মিনিট ১৫ পরে নামিয়ে গরম ভাতের সঙ্গে পরিবেশন করুন কাসুন্দি ইলিশ।

দই ইলিশ

কী কী লাগবে

ইলিশ (২০০ গ্রাম) (৪ টুকরো), নুন (১ টেবল চামচ),  Shalimar's হলুদ (দেড় গ্রাম),  Shalimar's সর্ষের তেল (৩০ মিলি), টকদই (১ কাপ) (জল, নুন ও চিনি মিশিয়ে ফেটানো), সাদা সর্ষে (৫ গ্রাম), কাঁচালঙ্কা (৪টে)।


কীভাবে বানাবেন

ইলিশের গায়ে নুন-হলুদ মাখিয়ে ১৫ মিনিট রাখুন। সাদা সর্ষে, সামান্য নুন ও দুটো কাঁচালঙ্কা অল্প জল দিয়ে বেটে নিন। এবার একটা ননস্টিক প্যানে ম্যারিনেট করা ইলিশ, সর্ষে বাটা, ফেটানো দই, সামান্য হলুদ ও চেরা কাঁচালঙ্কা ও আধ কাপ জল দিন। ওপরে সর্ষের তেল ছড়িয়ে ও নুন দিয়ে ঢাকনা চাপা দিয়ে হালকা আঁচে বসান। ২০ মিনিট পর, আঁচ বন্ধ করে দিন ও সাদা ভাতের সঙ্গে দই ইলিশ পরিবেশন করুন।

নারকেল দুধে ইলিশ

কী কী লাগবে

ইলিশের ৪টি বড় টুকরো, হলুদ সর্ষেবাটা ২ টেবিল চামচ, দই ২ টেবিল চামচ, নরম নারিকেলের শাঁস ১ কাপ, নারিকেলের জল ২ টেবিল চামচ,  Shalimar's সর্ষের তেল ৪ টেবিল চামচ, কাঁচালঙ্কা ৪টি, কালোজিরা ১ চিমটি,  Shalimar's হলুদ ১/২ চা চামচ,  Shalimar's লাল লঙ্কাগুঁড়ো ১/২ চা-চামচ, স্বাদমতো নুন


কীভাবে বানাবেন

নারিকেলের শাঁস জল দিয়ে বেটে নিন। একটি পাত্রে এই মিশ্রণ, নুন, হলুদগুঁড়ো, লঙ্কাগুঁড়ো, দই, সর্ষেবাটা, সর্ষের তেল ফেটিয়ে নিন। সাবধানে মাছগুলো এর মধ্যে মিশিয়ে ৩০ মিনিট রাখুন। কড়াইতে তেল গরম করে কালোজিরা আর কাঁচালঙ্কা ফোড়ন দিয়ে মশলা-সহ মাছগুলো দিয়ে ঢেকে রান্না করুন। ২-৩ মিনিট পর উল্টে আরও ৫-৬ মিনিট রান্না করলেই তৈরি হয়ে যাবে অসাধারণ স্বাদের নারকেলি ইলিশ।

ইলিশের উল্লাস

কী কী লাগবে

৪ পিস ইলিশ মাছের টুকরো, ৩ চা চামচ গোটা কালো সর্ষে, এক টেবিল চামচ রসুন কুচি, গোটা শুকনো লঙ্কা ৩ পিস, ২ চা চামচ ভিনিগার, ৬ চা চামচ  Shalimar's সর্ষের তেল, স্বাদমতো নুন


কীভাবে বানাবেন

মিক্সিতে সর্ষে আর শুকনো লঙ্কা ভালোভাবে গুঁড়ো করে নিন ৷ এই গুঁড়ো মিশ্রণটিতে ভিনিগার, রসুন, হলুদ গুঁড়ো, নুন এবং জল দিয়ে ভালো করে একটা পেস্ট বানিয়ে নিতে হবে ৷ এবার এই পেস্টটি কাঁচা মাছে কিছুক্ষণ মাখিয়ে রেখে দিন ৷ কিছু সময় পর এই মশলা মাখানো মাছগুলি একটি প্যানে গ্যাসে বসিয়ে দিতে হবে ৷ এতে সর্ষের তেল দিয়ে নেড়ে চেড়ে ঢাকা দিয়ে সিদ্ধ করে নিতে হবে ৷ মাছ থেকে জল বেরলে সেই জলেই সিদ্ধ হবে মাছ ৷ মাছে একবার ফুট ধরলে তৈরি ইলিশের উল্লাস ৷ এবার গরম গরম ভাতের সঙ্গে পরিবেশন করুন ইলিশের উল্লাস ৷

 

থাইরয়েড ভালো রাখতে কী খাবেন?

পরামর্শ দিলেন পুষ্টিবিদ রেশমী মিত্র


থাইরয়েড গ্ল্যান্ড এবং নিউট্রিশন

থাইরয়েড গ্রন্থিটি ঘাড়ের সামনে অবস্থিত একটি দু-ইঞ্চি দৈর্ঘ্যের প্রজাপতি-আকৃতির একটি অঙ্গ। এটি থাইরয়েড হরমোন তৈরি করে এবং সঞ্চয় করে যা শরীরের প্রায় প্রতিটি সিস্টেমকে প্রভাবিত করে। এটি আমাদের এন্ডোক্রাইন সিস্টেমের একটি অংশ। থাইরয়েড হরমোন হল সেই হরমোন যা শরীরের মেটাবলিজমকে নিয়ন্ত্রণ করে, মেটাবলিজম-এর মাধ্যমে শরীর খাওয়া খাবারকে শক্তিতে রূপান্তরিত করে। শরীরের সমস্ত কোষের কাজ করার জন্য শক্তি প্রয়োজন।


থাইরয়েড নিঃসৃত প্রধান দুটি হরমোন হল- থাইরক্সিন (T4) এবং ট্রাইওডোথাইরোনিন (13)- যারা সম্মিলিতভাবে থাইরয়েড হরমোন তৈরি করে। আমাদের শরীর একটি জটিল ফিডব্যাক লুপের মাধ্যমে আমাদের থাইরয়েড হরমোনের (T3 এবং T4) মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে। আমাদের হাইপোথ্যালামাস থাইরোট্রপিন- রিলিজিং হরমোন (TRH) নিঃসরণ করে, যা আমাদের পিটুইটারি গ্রন্থিকে থাইরয়েড-উত্তেজক হরমোন (TSH) নিঃসরণ করতে ট্রিগার করে, যা আমাদের থাইরয়েড গ্রন্থিকে 13 এবং 14 নিঃসরণ করতে উদ্দীপিত করে।

থাইরয়েড হরমোন হল সেই হরমোন যা আপনার শরীরের বিপাকের গতি নিয়ন্ত্রণ করার জন্য প্রধানত দায়ী। শিশুদের মধ্যে, থাইরয়েড হরমোন মস্তিষ্কেরবিকাশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। হরমোন হল রাসায়নিক পদার্থ যা রক্তের মাধ্যমে অঙ্গ, পেশি এবং অন্যান্য টিস্যুতে বার্তা বহন করে শরীরের বিভিন্ন ফাংশনগুলিকে সমন্বয় করে। এই সংকেতগুলি শরীরকে বলে, যে কী করতে হবে এবং কখন এটি করতে হবে।


থাইরয়েড হরমোন আসলে আপনার থাইরয়েড গ্রন্থি যে দুটি প্রধান হরমোন নিঃসরণ করে তার সংমিশ্রণ; থাইরক্সিন (T4) এবং ট্রায়োডোথাইরোনিন (T3)। এগুলিকে প্রায়শই সম্মিলিতভাবে 'থাইরয়েড হরমোন' হিসেবে উল্লেখ করা হয় কারণ 14 মূলত নিষ্ক্রিয়, যেখানে 13 সক্রিয়। আমাদের শরীরের কিছু অঙ্গ T4 কে 13 তে রূপান্তরিত করে যাতে এটি আমাদের কোষ এবং বিপাককে প্রভাবিত করতে পারে। থাইরয়েড রক্তে ক্যালসিয়ামের মাত্রা কমিয়ে নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করার জন্য ক্যালসিটোনিন নামক একটি হরমোন নিঃসরণ করে। ক্যালসিটোনিন 'থাইরয়েড হরমোন নামে গোষ্ঠীভুক্ত নয়, এবং এটি আপনার শরীরের বিপাককে প্রভাবিত করে না যেমন 13 এবং T4 করে।

অস্বাভাবিক থাইরয়েড হরমোনের মাত্রার সঙ্গে কোন অবস্থার সম্পর্ক রয়েছে?

অস্বাভাবিক থাইরয়েড হরমোনের মাত্রার ফলে যে বিষয়গুলো ঘটতে পারে। হাইপোথাইরয়েডিজম (আন্ডার অ্যাক্টিভ থাইরয়েড)। পহাশিমোটো রোগ (একটি অটোইমিউন অবস্থা যা হাইপোথাইরয়েডিজম সৃষ্টি করে)। হাইপারথাইরয়েডিজম (অতি সক্রিয় থাইরয়েড) গ্রেভস ডিজিজ (একটি অটোইমিউন অবস্থা যা হাইপারথাইরয়েডিজম সৃষ্টি করে)।থাইরয়েডাইটিস (থাইরয়েডের প্রদাহ)।

থাইরয়েড নোডুলস। গলগণ্ড (বর্ধিত থাইরয়েড গ্রন্থি)।

থাইরয়েড ক্যানসার


হাইপোথাইরয়েডিজম কি?

থাইরয়েড গ্রন্থির অনিয়ম কার্যকলাপের জন্য সবচেয়ে বেশি যে অসুখ দেখা যায় সেটি হল, হাইপোথাইরয়েডিজম। হাইপোথাইরয়েডিজম, থাইরয়েড গ্রন্থি পর্যাপ্ত থাইরয়েড হরমোন নিঃসরণ করে না, এমনকী যখন প্রচুর TSH থাকে। হাইপোথাইরয়েডিজম হল একটি অটোইমিউন রোগ যার অপর নাম হাশিমোটো ডিজিজ। অন্যদিকে, থাইরয়েড গ্রন্থি অনেকসময় পর্যাপ্ত TSH পায় না। এটি ঘটে যখন পিটুইটারি গ্রন্থি সঠিকভাবে কাজ না-করে এবং একে সেকেন্ডারি হাইপোথাইরয়েডিজম বলা হয়।

যখন থাইরয়েড সঠিকভাবে কাজ করে না, তখন এটি চরম ক্লান্তি এবং কোষ্ঠকাঠিন্য-সহ বিভিন্ন উপসর্গের কারণ হতে পারে। বিভিন্ন গবেষণা দেখায় যে, ওষুধ ছাড়াও, খাদ্যতালিকাগতএবং জীবনযাত্রার পরিবর্তনগুলি হাইপোথাইরয়েডিজম। এর নির্দিষ্ট লক্ষণগুলি হ্রাস করতে এবং হাইপোথাইরয়েডিজমে আক্রান্ত ব্যক্তিদের জীবনের সামগ্রিক মান উন্নত করতে সহায়তা করে।


অনেক পুষ্টি উপাদান থাইরয়েড ফাংশন অপ্টিমাইজে একটি ভূমিকা পালন করে। যাইহোক, পুষ্টির ঘাটতি এবং অতিরিক্ত পুষ্টি গ্রহণ উভয়ই লক্ষণগুলিকে ট্রিগার বা বাড়িয়ে তুলতে পারে। সর্বোত্তম থাইরয়েড স্বাস্থ্যের জন্য পুষ্টির অবস্থা নির্ধারণের জন্য একজন ডায়েটিশিয়ান বা নিউট্রিশননিস্টের পরামর্শ নেওয়া জরুরি।

যে খাবারগুলি খেলে হাইপো থাইরয়েডের উপশম ঘটতে হাশিমোটোর রোগীদের ক্ষেত্রে সেলেনিয়ামের উপকারিতা:


আয়োডিন:

আয়োডিন শরীরের একটি গুরুত্বপূর্ণ পুষ্টি উপাদান এবং থাইরয়েড ফাংশনের জন্য অপরিহার্য; থাইরয়েড হরমোন আয়োডিনের সমন্বয়ে গঠিত। বিশ্বব্যাপী দেখা যায় যে হাইপোথাইরয়েডিজমের প্রধান কারণ হল আয়োডিনের ঘাটতি। তাই আয়োডিনযুক্ত লবণ গ্রহণের পরামর্শ দেওয়া হয়। এছাড়া মাছ, দুধ, শস্য প্রভৃতি ও আয়োডিনের প্রধান উৎস।

আয়োডিন, একটি ট্রেস এলিমেন্ট হিসেবে, থাইরয়েড গ্রন্থি হরমোন সংশ্লেষণের জন্য একটি প্রয়োজনীয় উপাদান। এটি একটি অপরিহার্য উপাদান যা থাইরয়েড গ্রন্থিকে থাইরয়েড হরমোন থাইরক্সিন (T4) এবং ট্রায়োডোথাইরোনিন (T3) তৈরি করতে সাহায্য করে। থাইরয়েড হরমোন এবং আয়োডিন বিপাক সংশ্লেষণ। তিনটি আয়োডিন অণু ট্রাইওডোথাইরোনিন তৈরি করতে এবং চারটি থাইরক্সিনের জন্য ব্যবহৃত হয়।

ভিটামিন ডি:

ভিটামিন ডি-এর ঘাটতি হাশিমোটোর সঙ্গে যুক্ত, তবে এটা স্পষ্ট নয় যে ভিটামিন ডি-এর কম মাত্রা হাশিমোটোর প্রত্যক্ষ কারণ নাকি রোগ প্রক্রিয়ার ফলাফল। ভিটামিন ডি রয়েছে এমন খাবারের মধ্যে রয়েছে চর্বিযুক্ত মাছ, দুধ, দুগ্ধজাত খাবার, ডিম এবং মাশরুম। সূর্যালোকও একটি সম্ভাব্য উৎস, তবে ভিটামিন উৎপাদনের পরিমাণ ঋতু এবং অক্ষাংশের উপর নির্ভর করে। যদি ক্লায়েন্টদের ভিটামিন D-এর মাত্রা কম থাকে, তাহলে পরিপূরক D3 প্রয়োজন হতে পারে।


সেলেনিয়াম:

সেলেনিয়ামের সর্বোচ্চ ঘনত্ব থাইরয়েড গ্রন্থিতে পাওয়া যায়, এবং এটি থাইরয়েড ফাংশনের অবিচ্ছেদ্য এনজাইমগুলির একটি প্রয়োজনীয় উপাদান। সেলেনিয়াম একটি অপরিহার্য ট্রেস এলিমেন্ট এবং এটি ইমিউনের উপর গভীর প্রভাব ফেলে। বিভিন্ন গবেষণার থাইরয়েড অ্যান্টিবডি টাইটার এবং দেখানো হয়েছে, কিন্তু সেলিনিয়ামও একটি নির্ধারিত মাত্রার মধ্যে গ্রহণ করা উচিত। কারণ, সেলেনিয়ামের অত্যধিক গ্রহণ গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল যন্ত্রণার কারণ হতে পারে বা এমনকী টাইপ 2 ডায়াবেটিস এবং ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়াতে পারে। তাই ক্লায়েন্টরা তাদের সেলেনিয়ামের মাত্রা পরীক্ষা করে এবং তাদের ডায়েটে স্বাস্থ্যকর, সেলেনিয়াম-সমৃদ্ধ খাবার যেমন ব্রাজিল বাদাম, টুনা, কাঁকড়া এবং গলদা চিংড়ি অন্তর্ভুক্ত করে লাভবান হবে।

ভিটামিন B12:

গবেষণায় দেখা গেছে যে হাইপোথাইরয়েডিজম-এ আক্রান্ত প্রায় 30% মানুষদের মধ্যে ভিটামিন B12-এর অভাব দেখা যায়। ভিটামিন B12 কম থাকলে থাইরয়েড হরমোনের সংশ্লেষণ ব্যাহত হয়, যার ফলে হাইপোথাইরয়েডিজমের লক্ষণগুলি আরও খারাপ হয়। B12-এর খাদ্য উৎসের মধ্যে রয়েছে মাছ, ডিম, মাংস যেমন লিভার, পেশির মাংস এবং দুগ্ধজাত খাবার। ভেগান উৎসগুলির মধ্যে রয়েছে চাল, গম, ভুট্টা, ওটস এবং অন্যান্য সিরিয়াল।


গয়ট্রোজেন

ব্রোকলি, ফুলকপি এবং বাঁধাকপির মতো ক্রুসিফেরাস শাকসবজি প্রাকৃতিকভাবে গয়ট্রিন নামক একটি যৌগ নির্গত করে যখন সেগুলি হাইড্রোলাইজড হয়ে যায় বা ভেঙে যায়। গোইট্রিন থাইরয়েড হরমোনের সংশ্লেষণে বাধা সৃষ্টি করে। যাইহোক, এটি সাধারণত তখনই উদ্বেগের বিষয় হয় যখন এটি আয়োডিনের অভাবের সঙ্গে যুক্ত হয়। সয়া আরেকটি সম্ভাব্য গয়ট্রোজেন।সয়াতে থাকা আইসোফ্ল্যাভোনগুলি থাইরয়েড হরমোন। সংশ্লেষণকে কমিয়ে দিতে পারে। তাই এই ধরনের খাবারগুলি না খাওয়াই ভালো।


খাদ্য, সাপ্লিমেন্ট এবং ঔষধ:

ক্যালসিয়াম সাপ্লিমেন্টগুলির থাইরয়েড ওষুধের সঠিক শোষণে বাধা সৃষ্টি সম্ভাবনা রয়েছে, তাই রোগীদের উভয়ই গ্রহণ করার সময় অবশ্যই এই বিষয়টি বিবেচনা করতে হবে। ক্যালসিয়াম সাপ্লিমেন্ট এবং থাইরয়েড ওষুধের মধ্যে অন্তত চার ঘণ্টার ব্যবধান রাখার পরামর্শ দেওয়া হয়। কফি এবং ফাইবার সাপ্লিমেন্ট থাইরয়েড ওষুধের শোষণ কম করে, তাই রোগীদের এক ঘণ্টার ব্যবধানে সেগুলি গ্রহণ করা উচিত। ক্রোমিয়াম পিকোলিনেট, যা রক্তে শর্করার নিয়ন্ত্রণ এবং ওজন কমানোর জন্য ব্যবহার করা হয়, এরাও থাইরয়েড ওষুধের শোষণকে ব্যাহত করে। কেউ যদি ক্রোমিয়াম পিকোলিনেট খান, তাহলে তাদের থাইরয়েড ওষুধ খাওয়ার ৩-৪ ঘণ্টা পরে এটা খাওয়া উচিত। ফল, শাকসবজি এবং চায়ে পাওয়া ফ্ল্যাভোনয়েডের কার্ডিওভাসকুলার রোগের জন্য উপকারী। যাইহোক, উচ্চমাত্রার ফ্ল্যাভোনয়েড সাপ্লিমেন্টগুলি থাইরয়েডের কার্যকারিতাকে দমন করতে পারে। প্রাকৃতিক স্ট্যান্ডার্ড ডেটাবেস থাইরয়েড ফাংশনের উপর সম্ভাব্য প্রভাব ফেলে এমন সাপ্লিমেন্টগুলির একটি তালিকা প্রদান করে, তাই সতর্কতা অবলম্বন করা বুদ্ধিমানের কাজ।

ওজন

হাইপোথাইরয়েডিজমে আক্রান্ত বেশিরভাগ লোকই হরমোনের মাত্রা স্থিতিশীল না-হওয়া পর্যন্ত অস্বাভাবিক ওজন বৃদ্ধি এবং ওজন কমাতে অসুবিধা অনুভব করে। অধিকন্তু, গ্রেভস রোগে আক্রান্ত রোগীদের উচ্চ এবং নিম্ন থাইরয়েড হরমোনের মাত্রা অনুভব করা সাধারণ, তাই ভারসাম্য অর্জন করতে কয়েক মাস সময় লাগতে পারে। এই সময়ের মধ্যে পুষ্টিকর খাবার গাওয়া, নিয়মিত ব্যায়াম করা, স্ট্রেস কমানো এবং পর্যাপ্ত ঘুমানোর মতো স্বাস্থ্যকর আচরণের উপর ফোকাস করা দরকার।


ওজন কমাতে সবচেয়ে করা দরকার হল ক্যালোরি এবং কার্বোহাইড্রেট নিয়ন্ত্রিত খাবারের পরিকল্পনা করা। আমাদের শর্করা, চর্বিযুক্ত খাবার, ফাস্ট ফুড প্রকৃতিগুলিকে এড়িয়ে চলতে হবে। অপরদিকে চর্বিরীন প্রোটিন, শাকসবজি, ফল, ওমেগা-১, উচ্চ ফাইবারযুক্ত খাবারের উপর জোর দেওয়া থাইরয়েড রোগের সঙ্গে সম্পর্কিত অসুস্থতাগুলি প্রতিরোধ করতে সাহায্য করতে পারে এবং এর সঙ্গে সঙ্গে, ফাইবার কোষ্ঠকাঠিন্য উপশম করতে পারে যা হাইপোথাইরয়েডিজম-এর রোগীরা প্রায়শই অনুভব করে।

ব্যায়াম

থাইরয়েড রোগ এবং সুস্বাস্থ্য নিয়ে আলোচনা শারীরিক ক্রিয়াকলাপের গুরুত্বের উপর জোর না দিয়ে সম্পূর্ণ হয় না। হাইপোথাইরয়েডিজম-এর জন্য কিছু যোগ ব্যায়াম উপকারী হতে পারে। এগুলি হল:


১। শবাসন,

২। ধনুরাসন,

৩। সর্বাঙ্গাসন,

৪। হালাসন,

৫। মাৎস্যাসন,

৬। মার্জার্যাসন,

৭। নাভাসন,

৮। উষ্ট্রাসন,

৯। ভুজঙ্গাসন,

১০। সেতুবন্ধাসন,

১১। শিশু আসন,

১২। সূর্য নমস্কার,

১৩। শীর্ষাসন


ওটস উপমা

কী কী লাগবে

১/৪ কাপ গাজরকুচি, ১/৪ কাপ বিনসকুচি, ১/২ কাপ পেঁয়াজকুচি, ১/৪ কাপ টোম্যাটোকুচি, ১/২ চা-চামচ গোটা কালো সর্ষে, ১ টা গোটা শুকনোলঙ্কা, ৮-১০টা কারিপাতা, স্বাদমতো নুন, মিষ্টি, ১/২ কাপ টকদই ১/২ চামচ গোটা আমচুর পাউডার, ৪ টেবিল চামচ সাদা তেল


কীভাবে বানাবেন

প্রথমে ওটস শুকনো কড়ায় ২ মিনিট অল্প নাড়াচাড়া করে সেকে নিতে হবে। এবার ওটস সরিয়ে রেখে সাদা তেল গরম করে গোটা সর্ষে, কারি লপাতা ও শুকনোলঙ্কা ফোড়ন দিতে হবে। এবার পেঁয়াজকুচি দিয়ে দুমিনিট ভেজে নিতে হবে। এরপর একে একে বাদাম, গাজর কুচি ও বিনসকুচি দিয়ে ভেজে নিতে হবে। এবার টোম্যাটোকুচি দিয়ে দুমিনিট নাড়াচাড়া করতে হবে। এরপর ওটস দিয়ে আরও দুমিনিট নাড়াচাড়া করে একে একে কাঁচালঙ্কাকুচি, নুন ও আমচুর পাউডার দিয়ে দিতে হবে। এবার টকদই ভালো করে ফেটিয়ে জল দিয়ে পাতলা করে ওটসের মধ্যে মিশিয়ে দিতে হবে। হাফ কাপ জল দিয়ে কম আঁচে ঢাকনা দিয়ে দুমিনিট রেখে দিলেই তৈরি ওটস উপমা|

 

ডেভিড ম্যাক্বাচন ও একটি বইয়ের কথা

দেবাশিস মুখোপাধ্যায়


ইটিকে বাংলা মন্দিরের আকর গ্রন্থ বলা যায়। ১৯৭২ সালে প্রকাশিত হবার আগে বাংলার মন্দির বিষয়ে, বিশেষ করে মন্দিরের সংখ্যা অবস্থান বা চরিত্রের কথা বাঙালি তেমনভাবে জানতেন না। বইটির নাম 'দ্য লেট মিডিভ্যাল টেম্পলস অব বেথুন: অরিজিনস অ্যান্ড ক্ল্যাসিফিকেশনস'। লেখক ডেভিড জে, ম্যাক্কাচন। প্রকাশক 'দি এশিয়াটিক সোসাইটি'। লেখা ৮০পৃষ্ঠা, ১৫৯ টি মন্দিরের আলোকচিত্র আর ভূমিনকশা রয়েছে ৬টি। প্রথম প্রকাশ পায় ১৯৭২ সালে। অনেকদিন ছাপা ছিল না বইটি। ১৯৯-তে দ্বিতীয়বার, ২০০৪-এ তৃতীয়বারের জন্যে মুদ্রিত হয়। একটি বই প্রকাশকের বদান্যতায় কীভাবে নষ্ট হতে পারে, তার চমৎকার (!) উদাহরণ এই তৃতীয়বারের মুদ্রণটি। প্রথমবারের মুদ্রণ এবং শেষবারের বইটি পাশাপাশি রাখলেই উদাহরণ স্বচ্ছ হয়ে ধরা পড়বে পাঠকের দৃষ্টিতে।

বইটির কথা লেখার আগে লেখকের পরিচয়টা একটু দিয়ে নেওয়া যাক। ডেভিড ম্যাককাচন-এর জন্ম ইংল্যান্ডের কভেনট্রি শহরে। কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যায়ের গুনী ছাত্র। স্থানীয় ট্রেগোর সোসাইটিতে সম্পাদকও হয়েছিলেন। রবীন্দ্রনাথ, ভারতবর্ষ এবং সত্যজিৎ রায়ের সিনেমার প্রতি আগ্রহে তিনি ভারতে চলে এসেছিলেন। তার আগে কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ফরাসি, জার্মান এবং ইংরেজি সাহিত্য নিয়ে পড়াশোনার পর দু' বছর অধ্যাপনা করেছিলেন ফরাসি দেশে। ভারতে এসে প্রথমে আড়াই বছর শান্তিনিকেতনে কাটিয়ে ১৯৬০ সালে তিনি যাদবুর বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াতে আসেন। কলকাতায় এসেই বিশেষ আগ্রহে দেখা করতে গেলেন সত্যজিৎ রায়ের সঙ্গে। পাশ্চাত্যে দেখা করতে গেলেন সত্যজিৎ রায়ের সঙ্গে। পাশ্চাত্য সঙ্গীতের প্রতিও আগ্রহ ছিল যুবকের। ওই একটি কারণেই খুব তাড়াতাড়ি সত্যজিতের প্রিয় পাত্র হয়ে ওঠেন ডেভিড। ১৯৬১ সাল নাগাদ সত্যজিতের সঙ্গে দুবরাজপুর যান। 'অভিযান' ছবির শুটিং দেখতে লোকেশনের আশেপাশে কয়েকটি মন্দির দেখে তাঁর ভালো লাগে। মন্দিরের স্থাপত্যশৈলী, টেরাকোটার কারুকার্যগুলির বিবরণ ও বিশেষত্ব তাঁকেএকটু বুঝিয়ে দেন।


শান্তিনিকেতনে থাকতে আশেপাশের কিছু মন্দির দেখেছিলেন। কিন্তু মন্দিরের বিশেষত্ব সেভাবে তাঁর চোখে পড়েনি এর আগে। যুবক ডেভিড আগ্রহী হয়ে ওঠেন। আরও কয়েকটি মন্দির দেখে বুঝতে পারেন অনেক মন্দির নষ্ট হয়ে গেছে। তবুও যা অবশিষ্ট আছে তাকে এখনও রক্ষা করা যেতে পারে। বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপনার মাঝে সপ্তাহান্তে তিনি শুধু পশ্চিমবঙ্গের নয়, পূর্ববাংলারও গ্রাম- গ্রামান্তরে, দূরদূরান্তে বারংবার পরিভ্রমণ করে মন্দির পুরাকীর্তিগুলি তথ্য সরেজমিনে সংগ্রহ করতে শুরু করলেন। অর্থাভাবে, অর্ধাহারে, অনাহারে, ঝড়বৃষ্টিতে মাইলের পর মাইল হেঁটে, সাইকেলে সারাদিন অমানুষিক পরিশ্রম করার পর, আশ্রয়ে ফিরে মন্দিরগুলির পুঙ্খানুপুঙ্খ বিবরণ লিখে রাখতেন খাতায়। ছবি তুলে রাখতেন প্রতিটি মন্দিরের। মন্দিরের গায়ে গজিয়ে ওঠা আগাছা কেটে পরিষ্কার করতেন। মন্দিরের গায়ের বড় গাছ মারার জন্যে সঙ্গে 'ট্রি-কিলার' ওষুধের বোতল নিয়ে ঘুরতেন। মন্দিরের প্রতি ভালবাসা, নিষ্ঠা, কতর্ব্যবোধ এবং অবিচলিত অধ্যবসায় তিনি দশ-এগারো বছর ধরে খুঁজে পেতে প্রায় পাঁচ হাজার টেরাকোটা মন্দির সরেজমিনে দেখেছিলেন। ছবি তুলেছিলেন প্রায় কুড়ি হাজার।

গ্রাম ভ্রমণের সময় যাঁদের সঙ্গে আলাপ হত, যাঁদের কাছ থেকে সামান্য উপকার পেতেন, তাঁদের কোনও উপকার করতে পারলে ধন্য হতেন। তাঁদের ছবি তুলে পাঠাতে ভুলতেন না। পঞ্চানন রায়ের লেখায় পড়েছি, তাঁর বাড়ির পুঁথি সংগ্রহের একটি বিরাট তালিকা উনি টাইপ করে তার চারটি কপি পাঠিয়ে দিয়েছিলেন। গ্রামের পণ্ডিতদের নিয়ে এসে কলকাতায় বক্তৃতার ব্যবস্থা করতেন। মেদিনীপুরের আমদাবাদের কুমিরমারা গ্রামের পটশিল্পীদের উনিই আমাদের সামনে নিয়ে এসেছিলেন। চেষ্টা করেছিলেন একটি শিল্পী-পল্লী গড়ে তোলার। গ্রামের বিভিন্ন শিল্পীদের একত্র করে তাদের কাজের সুবিধে করে দিয়েছিলেন। কামার, কুমোর, শাঁখারীদের সঙ্গে পটুয়াদেরও পুনর্বাসন দেবার চেষ্টা করেছিলেন।


বেত ও বাঁশের কাজের জন্যে ডোমেদেরও নিয়ে এসেছিলেন। পরে গ্রাম্যশিল্প ও পুরাতত্ত্বের একটি মিউজিয়াম স্থাপন করা হয়েছে এই গ্রামটিতে। তাঁর সম্মানে এই শিল্প- গ্রামটির নাম রাখা হয়েছে 'ডেভিড গ্রাম'। শুধু গ্রামের কথাই বা বলি কেন, বিশ্ববিদ্যালয়েও তাঁর সহমর্মিতার কথা সকলে, একবাক্যে স্বীকার করতেন। 'যাদবপুরের তুলনামূলক সাহিত্য বিভাগে উনি আঠারো শতকী ইউরোপীয় সাহিত্যের ক্লাস নিতেন, ফাঁকে ফাঁকে একাধিকএদেশীয় উৎকৃষ্ট পত্রিকার সম্পাদনায় তাঁর নিঃশব্দ অথচ অনিবার্য সহায়তা কলকাতায় আমরা প্রাপ্য বলেই ধরে নিয়েছিলাম।' জানিয়েছিলেন তাঁর সহকর্মী নরেশ গুহ। 'কখনও প্রুফ দেখছে। কখনও কেন্দ্রীয় বা রাজ্য সরকারের অনুরোধে প্রবন্ধ লিখছে, হঠাৎ চলে যাচ্ছে দুর্গম কোনও গ্রামের স্কুলে তার নিজের তোলা মন্দিরের স্লাইড দেখিয়ে বক্তৃতা করতে।'


নিজের স্বাছন্দ্যের জন্যে কখনও তাঁকে কেউ খরচ করতে দেখেনি। খুব সাধারণ পোশাক পরতেন। খাবারের আয়োজনও অতি সাধারণ। কিন্তু এদেশের দরিদ্র কিন্তু উৎসাহী গবেষকের জন্যে লন্ডন থেকে দামী বই নিয়ে এসে উপহার দিতেন। এমনকি নিজে কোনও বই কিনলে বিশ্ববিদ্যালয়ের নোটিশ বোর্ডে বিজ্ঞপ্তির মত করে বইগুলির নামোল্লেখ করে জানিয়ে দিতেন। কারও প্রয়োজন হলে বইগুলি নিয়ে যেতে পারে।

সে বইটির কথা বলছিলাম, মাত্র বিয়াল্লিশ বছর বয়সে মারা যাবার পর প্রকাশিত হয়েছিল তাঁর লেখা এই বইটি 'দ্য মিডিভ্যাল টেম্পলস অব বেঙ্গল', বাংলার মন্দির বিষয়ে সেই সময়ে একমাত্র আকরগ্রন্থ। মারা যাবার আগেই যদিও বইটির কাজ সম্পূর্ণ করে যেতে পেরেছিলেন। তিনি মন্দিরগুলির পর্যবেক্ষণের সময় একটা নিজস্ব নিয়ম মেনে চলতেন। প্রথমে মন্দিরগুলি চারিদিক থেকে দেখে নিতেন। তারপর ছবি তুলতেন সবদিক থেকে, যাতে মন্দিরের আকারগত বৈশিষ্ট্য, বিভিন্ন অলংকরণ ও ছবির প্যানেলগুলি ধরে রাখা যায়। এরপর মন্দিরের মাপজোক করে তৈরি করে ফেললেন মন্দিরের ভূমিনকশা। খুঁজে বার করতেন মন্দিরের নির্মাণকাল, মন্দিরের মূর্তির পরিচয়, প্রতিষ্ঠাতার পরিচয় বার করতেন অনুসন্ধানে। এইসব তথ্য তিনি বইটিতে ব্যবহার করেছিলেন। তথ্যগুলি সংগ্রহ করে তাকে সঠিক ও সম্পূর্ণভাবে মন্দিরের কীর্তি অনুসরণে প্রাথমিক বিভাগ, তারপর উপরিভাগ অনুসারে বিন্যস্ত করেছেন।


প্রথমে মন্দিরগুলির শ্রেণিবিভাজন করেছিলেন বুনিয়াদি ভাবনায়। যেমন 'ট্রাডিশনাল' 'হাই স্টাইল', 'ইঙ্গো-ইসলামিক', অক্টোখোনাল', 'ক্ল্যাট রুজড' ইত্যাদি। অর্থাৎ সাধারণ দৃষ্টিতে গঠনশৈলী অনুযায়ী। পরের অধ্যায়ের বিস্তৃতভাবে শ্রেণিবিভাজন। এর বাইরে অন্য ধরনের আকৃতিগত মন্দিরগুলির তালিকা তৈরি করলেন। যে মন্দিরগুলি ভেঙে যাওয়ার পর নতুন করে গড়া হয়েছিল, সেগুলির তালিকা করেছিলেন পৃথকভাবে। অর্থাৎ তাঁর তালিকা দেখে এক নজরেই বলে দেওয়া যায় বাংলার দু-চালা, চার-চালা, নবরত্ন মন্দিরগুলির অবস্থান কোথায়। এবং যেকোনো একটি মন্দিরের পরিচয় থেকে পাওয়া যাবে মন্দিরের ঠিকানা, কোন দেবতার মন্দির, উচ্চতা, আয়তন, কারুকার্যের বৈশিষ্ট এবং প্রতিষ্ঠা কাল। তাঁর নোট খাতাগুলি সংরক্ষিত হয়েছিল বিদেশের বিশ্ববিদ্যালয়ে। পরে তা থেকে রচিত হয়েছিল একটি বিশালাকার গ্রন্থ, 'ব্রিক টেম্পলস অফ বেঙ্গলঃ ফ্রম দি আরকাইভস অফ ডেভিড ম্যাককাচন'। সে প্রসঙ্গ বারান্তরে।



 

 
 
 

Commentaires


ssss.jpg
sssss.png

QUICK LINKS

ABOUT US

WHY US

INSIGHTS

OUR TEAM

ARCHIVES

BRANDS

CONTACT

© Copyright 2025 to Debi Pranam. All Rights Reserved. Developed by SIMPACT Digital

Follow us on

Rojkar Ananya New Logo.png
fb png.png

 Key stats for the last 30 days

bottom of page