বর্ষায় মধুচন্দ্রিমায় কোথায় যাবেন? কত মাস বয়স থেকে বাচ্চার খাবারে নুন চিনি যোগ করতে পারেন?অন্যরকম ব্রেকফাস্ট.. ত্বক ও চুলের যত্নে সিরাম.. রবিবারের গল্প: ভয়ঙ্কর সেই তান্ত্রিক..
- রোজকার অনন্যা
- Jun 14
- 13 min read
Updated: Jun 15
বর্ষায় মধুচন্দ্রিমা: ভালোবাসার সফরের জন্য ৫ স্বপ্নপুরী গন্তব্য
বর্ষা মানেই যেন হৃদয় ছুঁয়ে যাওয়া এক প্রেমের সময়। আকাশের কান্না আর মাটির ঘ্রাণ, সবুজে ঢেকে যাওয়া প্রকৃতি আর শীতল বাতাস এইসব কিছু মিলে একটি মধুচন্দ্রিমাকে করে তোলে আরও আবেগঘন, আরও নিবিড়। সদ্যবিবাহিত দম্পতিরা এই সময়টিকে স্মরণীয় করে তুলতে পারেন কলকাতা থেকে সহজেই পৌঁছনো যায় এমন কিছু স্বল্পপরিচিত অথচ অপূর্ব সৌন্দর্যে ভরপুর জায়গায়। রইল তেমনই পাঁচটি স্বপ্নপুরী গন্তব্যের সন্ধান।

১. লাভা ও লোলেগাঁও (দার্জিলিং জেলার কোলে):
এই দুই ছোট্ট পাহাড়ি গ্রাম বর্ষার সময় মেঘের রাজ্যে পরিণত হয়। নিউ জলপাইগুড়ি থেকে গাড়ি বা শেয়ার জিপে সহজেই পৌঁছনো যায় লাভা-লোলেগাঁও। চারপাশে ঘন অরণ্য, দূরে দেখা যায় কাঞ্চনজঙ্ঘা, আর হঠাৎ হঠাৎ মেঘ এসে ঢেকে দেয় দিগন্ত। বিশেষ আকর্ষণ হলো লোলেগাঁওয়ের হ্যাংগিং ব্রিজ, যেখানে ঘন বৃষ্টির মাঝে হেঁটে যাওয়ার অভিজ্ঞতা সত্যিই রোমাঞ্চকর। লাভার সাইলেন্স ভ্যালি বা লোলেগাঁওয়ের sunrise point থেকে সূর্যোদয় দেখা, সেই অভিজ্ঞতা নবদম্পতির কাছে আজীবনের মতো থেকে যাবে।

কলকাতা থেকে ট্রেনে নিউ জলপাইগুড়ি (NJP) পৌঁছে সেখান থেকে গাড়ি ভাড়া করে প্রথমে লাভা যান (প্রায় ১০০ কিমি)। লাভায় ১-২ দিন থাকুন, মনাস্টেরি, নেউরা ভ্যালি ন্যাশনাল পার্ক আর পাখি দেখা উপভোগ করুন। এরপর গাড়িতে ২৪ কিমি দূরের লোলেগাঁও ঘুরে নিন, ক্যানোপি ওয়াক আর জংগলটপ থেকে সূর্যোদয় দেখুন। দুটো জায়গাতেই হোমস্টে বা রিসোর্টে থাকা যায়। ৩-৪ দিনেই সম্পূর্ণ ঘুরে কলকাতায় ফিরতে পারবেন।
২. নেতারহাট (ঝাড়খণ্ড):
‘ছোটনাগপুরের কাশ্মীর’ নামটি একেবারেই অযথা নয়। নেতারহাট বর্ষার সময় কুয়াশায় ঢেকে যায় বনভূমি, পাহাড় আর রাস্তা। কলকাতা থেকে রাঁচি হয়ে গাড়িতে করে পৌঁছনো যায়। এখানকার Sunset Point, Magnolia Point, ও Lodh Falls যেন প্রকৃতির হাতে আঁকা একেকটি ছবি। ভিড় কম, দামি হোটেলের চাপ নেই—বরং আছে শান্তি, নির্জনতা, আর ঘন সবুজে মোড়া রোমান্টিক পরিবেশ। যারা চুপচাপ জায়গায় একে অপরকে একটু বেশি করে জানতে চান, তাঁদের জন্য আদর্শ।
কলকাতা থেকে ট্রেনে বা গাড়িতে রাঁচি পৌঁছে সেখান থেকে গাড়িতে নেতারহাট যান (প্রায় ৪ ঘন্টা)। প্রথম দিন সন্ধ্যায় Magnolia বা Sunset Point থেকে সূর্যাস্ত উপভোগ করুন। দ্বিতীয় দিন সকালে Sunrise Point আর Koel View Point ঘুরুন, এরপর Upper ও Lower Ghaghri জলপ্রপাত দেখুন। পাইন জঙ্গল আর নির্জন পাহাড়ি রাস্তা হেঁটে দেখুন। তৃতীয় দিন চাইলে Betla National Park ঘুরে রাঁচি ফিরুন। ২-৩ দিনের ছুটি কাটাতে নেতারহাট একেবারে শান্ত, অফবিট হিল স্টেশন!

৩. অযোধ্যা পাহাড় ও বামনি ফলস (পুরুলিয়া):
যাঁরা অফবিট এবং ন্যাচারাল গন্তব্য খুঁজছেন, তাঁদের জন্য অযোধ্যা পাহাড় ও তার আশেপাশের অঞ্চল এক আদর্শ গন্তব্য। কলকাতা থেকে গাড়িতে ৭ ঘণ্টার মতো সময় লাগে। বামনি জলপ্রপাত, মারবাজার ড্যাম, খৈরাবেরা বাঁধ, আর পাহাড়ি কংক্রিট রাস্তার ঘোরালো মোড় বর্ষায় ভিজে আরও মনকাড়া হয়ে ওঠে। বৃষ্টির ফোঁটার সঙ্গে গাছের পাতার শব্দ মিলে যায় হৃদয়ের ছন্দে, আর সেখানে দাঁড়িয়ে দুজন মানুষ ভালোবাসার নতুন সংজ্ঞা খুঁজে নিতে পারেন।
পুরুলিয়া জেলার অযোধ্যা পাহাড় একটি জনপ্রিয় অফবিট ট্রেকিং ও পিকনিক স্পট। অযোধ্যা পাহাড় ঘিরে আছে ঘন জঙ্গল, ছোট ছোট গ্রাম আর লাল মাটির রাস্তা প্রকৃতিপ্রেমীদের জন্য স্বর্গ। এখানেই বামনি জলপ্রপাত, পাহাড়ি জঙ্গলের মধ্যে অবস্থিত বর্ষায় সবচেয়ে সুন্দর দেখা যায়। পাহাড়ে সেরেঙ্গা ভিউ পয়েন্ট, মায়াবাদী হিল টপ, ঝর্না ঘিরে অজস্র ছবির সুযোগ। শীতকাল বা বর্ষাকাল ভ্রমণের সেরা সময়। একই সফরে মুরুগুমা ড্যাম, খৈরাবেরা ড্যামও দেখে নেওয়া যায়।
৪. কালিম্পং:
দার্জিলিং ও গ্যাংটকের মাঝে অবস্থিত এই শহর বর্ষায় এক অন্যরকম মায়াবী রূপ ধারণ করে। পাহাড়ে মেঘের খেলা, ছোট ছোট কফি শপ, ও চার্চ বা মনাস্টেরির পাশে একান্ত সময় কাটানোর সুযোগ সব কিছু মিলে এটি মধুচন্দ্রিমার জন্য দারুণ জায়গা। Delo Park, Pine View Nursery, এবং Durpin Monastery– এই কয়েকটি স্পটে দুজন মিলে সময় কাটালে শহরের কোলাহল একেবারেই ভুলে যাবেন। বর্ষায় ঠান্ডা হাওয়া ও মেঘের ছোঁয়া ভালোলাগার চেয়ে বেশি কিছু জাগিয়ে তোলে।

কলকাতা থেকে ৬০০ কিমি দূরত্বে Kalimpong, যাত্রায় ট্রেন/গাড়ি + ব্যাগডোগরা থেকে ট্যাক্সি দিয়ে পৌঁছান (১৪–২০ ঘন্টা)। ১২৫০ মিটার উচ্চতায়, Deolo ও Durpin Hill–এ থেকে Kanchenjunga‑এর মনোরম হিমালয় দৃশ্য উপভোগ করুন। প্রতিবছরের বসন্ত ও গ্রীষ্মে ফ্লাওয়ার মার্কেট (অর্কিড, ক্যাকটাস) ও নার্সারিতে ঘুরতে পারেন। Zang Dhok Palri ফোডাং মঠ ও Lepcha Museum‑এ সংস্কৃতি ও ইতিহাস জানুন এবং Neora Valley NP‑এ বন্যপ্রাণীর সংস্পর্শে আসুন। Darjeeling‑এর তুলনায় Kalimpong অনেক বেশি শান্ত, কম ভিড় আরেকটি আইডিয়াল হিল গন্তব্য, একটি ছোট গেটেওয়ে হিসেবে ব্যবহার করে আশেপাশের গ্রাম‑ডুয়ারার নদীতীরও এক্সপ্লোর করুন খুবই অফবিট, আরামদায়ক!
৫. শান্তিনিকেতন:
যাঁরা পাহাড় না গিয়ে বর্ষায় ভিন্নধর্মী অনুভব পেতে চান, তাঁদের জন্য শান্তিনিকেতন আদর্শ। রবীন্দ্রনাথের স্মৃতিমাখা এই শহর বর্ষায় যেন কবিতার মত হয়ে ওঠে। কোপাই নদীর ধারে ছাতা হাতে হাঁটা, বৃষ্টি ভেজা খোলা মাঠে বসে গানের সুরে মুগ্ধ হওয়া, আর বল্লভপুরের জঙ্গলে ঘুরে বেড়ানো এই অভিজ্ঞতাগুলো একে অপরকে আরও কাছাকাছি নিয়ে আসে। এখানকার কুটির শিল্পের গ্রাম, শান্তির বাজার বা স্থানীয় কাঁসার বাসনে খাবার খাওয়াও এক নিজস্ব স্বাদ এনে দেয়।

কলকাতা থেকে প্রায় ১৫০ কিমি দূরে, রবীন্দ্রনাথের স্বপ্নের আশ্রম নগরী শান্তিনিকেতন। বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়, রবীন্দ্র ভবন, উপাসনাগৃহ আর উত্তরায়ণ কমপ্লেক্স ঘুরে দেখা যায়। শনিবার সোনাঝুড়ি হাটে হস্তশিল্প আর বাউল গান উপভোগ করা যায়। অমর কুটির থেকে নানা হস্তশিল্প কেনা যায়। বল্লভপুর অভয়ারণ্যে হরিণ পার্ক দেখে আসতে পারেন। শান্তিপূর্ণ পরিবেশ আর শিল্প-সংস্কৃতির জন্য ১-২ দিনের সুন্দর গেটওয়ে!

বর্ষায় মধুচন্দ্রিমা কেবল একটি সফর নয়, তা এক গভীর মানসিক অভিজ্ঞতা। প্রকৃতির মাঝে হারিয়ে যাওয়া, একে অপরকে নতুন করে চেনা ও ভালোবাসার সুরে জীবন শুরু করার উপযুক্ত সময় এটি। কলকাতার কাছাকাছি এই গন্তব্যগুলোতে খুব বেশি ঝক্কি ছাড়াই পৌঁছনো যায়, এবং প্রতিটিই নিজস্ব ঘরানায় রোমান্সের এক নতুন সংজ্ঞা তৈরি করে। তাই এই বর্ষায় প্ল্যান করে ফেলুন ভালোবাসার সফর কারণ বৃষ্টির মত অনুভূতিও যদি ভাগ করে নেওয়া যায়, তবে জীবনের পথও সহজ হয়ে ওঠে।

বাচ্চার খাবারে নুন বা চিনি, কবে থেকে, কতটা? জানুন ডাক্তার ও পুষ্টিবিদের মতামত..

শিশুর প্রথম খাবার ঘিরে বাবা-মা, দাদু-ঠাম্মা সকলের মধ্যেই নানা আগ্রহ, উদ্বেগ এবং ভালোবাসা থাকে। ছ’মাস বয়সের পর যখন শিশুকে ধীরে ধীরে মায়ের দুধের পাশাপাশি বাড়ির রান্না খাওয়ানো শুরু হয়, তখন একটা সাধারণ প্রশ্ন উঠে আসে “এই খাবারে নুন বা চিনি দেওয়া যাবে কি?” আমাদের অভ্যস্ত ধারণা হলো, একটু নুন দিলে খাবার ‘সুচিন্তিত’ হয় বা একটু চিনি দিলে বাচ্চা খেতে আগ্রহ পায়। কিন্তু শিশুদের স্বাস্থ্য এবং ভবিষ্যতের রোগপ্রবণতা বিবেচনা করে আধুনিক চিকিৎসাবিজ্ঞান ও পুষ্টিবিদদের মতামত এই বিষয়ে অনেকটাই ভিন্ন।

বিশেষজ্ঞদের মতামত কী বলছে?
জাতীয় ও আন্তর্জাতিক স্বাস্থ্য সংস্থাগুলি, যেমন WHO (World Health Organization), American Academy of Pediatrics এবং Indian Academy of Pediatrics, একমত যে ১ বছরের নিচে শিশুদের খাবারে অতিরিক্ত নুন বা চিনি সম্পূর্ণভাবে এড়িয়ে চলা উচিত।
নুন (লবণ):
WHO-এর মতে, এক বছরের কম বয়সি শিশুর কিডনি এখনও পুরোপুরি পরিণত নয়। ফলে অতিরিক্ত সোডিয়াম (নুন) তাদের কিডনির ওপর চাপ ফেলে এবং ভবিষ্যতে উচ্চ রক্তচাপের ঝুঁকি বাড়ায়। শিশুর প্রয়োজনীয় লবণ সাধারণ খাবারের (যেমন চাল, ডাল, শাকসবজি, ফল) মধ্যেই স্বাভাবিকভাবে থেকে যায়, আলাদা করে নুন দেওয়ার দরকার পড়ে না।

পুষ্টিবিদদের সুপারিশ:
১ বছর পর্যন্ত সম্পূর্ণ নুনহীন খাবার দিন।
১–৩ বছর বয়সে দিনে সর্বাধিক ২ গ্রাম (মানে আধ চামচেরও কম) সোডিয়ামই যথেষ্ট।
৫ বছরের নিচে শিশুদের খাবারে প্রসেসড বা প্যাকেটজাত খাবার এড়ানো উচিত কারণ সেগুলিতে লবণের পরিমাণ বেশি থাকে।
চিনি (চিনির গুঁড়া, গুড়, মধু):
বাচ্চাকে মিষ্টি খাওয়ালে সে সেই স্বাদে অভ্যস্ত হয়ে পড়ে। এতে ভবিষ্যতে তাকে স্বাস্থ্যকর, কম-মিষ্টি খাবার খাওয়ানো কঠিন হয়ে দাঁড়ায়। চিনি দাঁতের ক্ষয় বাড়ায়, ওজন বাড়ায় এবং টাইপ-২ ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়ায়।

বিশেষ পরামর্শ:
১ বছর বয়সের আগে শিশুকে মধুও না দেওয়াই ভালো, কারণ এতে botulism নামক একধরনের ব্যাকটেরিয়া থাকতে পারে যা নবজাতকের পক্ষে বিপজ্জনক। ফলের প্রাকৃতিক মিষ্টতা (যেমন কলা, আপেল, চিরে মিশিয়ে) দিয়ে বাচ্চার স্বাদ তৈরি করা যেতে পারে। ২ বছরের আগে অতিরিক্ত চিনি বা ডেজার্ট জাতীয় খাবার না দেওয়াই বাঞ্ছনীয়।
কীভাবে স্বাদ তৈরি করবেন?
অনেক পুষ্টিবিদের মতে, ৬ মাস থেকে ১২ মাস বয়সের মাঝে বাচ্চাদের স্বাদ গঠনের জন্য ‘ক্লিন’ খাবার দেওয়া সবচেয়ে কার্যকর। চাল-ডাল-সবজি দিয়ে পাতলা খিচুড়ি বা স্যুপ, মিহি করে বাটা সবজি বা ফল, নোনতা বা মিষ্টি ছাড়াই রান্না করা খাবার। এতে শিশু খাবারের প্রকৃত স্বাদ চিনতে শেখে, এবং ভবিষ্যতে স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস গড়ে ওঠে।
অতিরিক্ত নুন ও চিনি কেবল শিশুদের বর্তমান স্বাস্থ্য নয়, ভবিষ্যতের দিক থেকেও ক্ষতিকর। তাই চিকিৎসক ও পুষ্টিবিদরা পরামর্শ দেন, কমপক্ষে এক বছর পর্যন্ত শিশুর খাদ্যতালিকা থেকে নুন-চিনি বাদ রাখা উচিত। বরং প্রাকৃতিক স্বাদ, মৌলিক পুষ্টি ও অভ্যেস গড়ে তোলার দিকেই জোর দেওয়া হোক। মনে রাখতে হবে, স্বাস্থ্যকর অভ্যাস ছোটবেলাতেই গড়ে ওঠে, আর তার ভিত্তিতে তৈরি হয় সুস্থ ভবিষ্যৎ।

রোজকার রুটিনে একটু টুইস্ট: অন্যরকম ব্রেকফাস্টের স্বাদে সকাল শুরু
সকালের খাবারকে বলা হয় দিনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মিল। কিন্তু প্রতিদিন সেই একই রুটি-সবজি বা পোহা-উপমা খেতে খেতে কি আপনারও মন হাঁপিয়ে ওঠে? শরীর চায় পুষ্টি, কিন্তু মন চায় বৈচিত্র্য। তাই যদি ব্রেকফাস্টে একটু চমক যোগ করা যায়, তবেই না দিনটা শুরু হবে একটু ভিন্ন স্বাদে, একটু বেশি আনন্দে। আজ রইল এমন অন্যরকম ব্রেকফাস্ট আইডিয়া যা সহজে বানানো যায়, স্বাস্থ্যকর, আর স্বাদে একেবারে নতুনত্বে ভরপুর।

১. ওটস-সবজি প্যানকেক
কী কী লাগবে
ওটস গুঁড়ো – ১ কাপ
গাজর কুচি – ১/২ কাপ
ক্যাপসিকাম (কুচি) – ১/৪ কাপ
টমেটো (বীজ বাদ দিয়ে ছোট কুচি) – ১/৪ কাপ
পেঁয়াজ (কুচি) – ১/৪ কাপ
দই – ২ টেবিল চামচ
নুন – স্বাদমতো
Shalimar's Chef Spices গোলমরিচ গুঁড়ো – ১/৪ চা চামচ
অল্প Shalimar's sunflower তেল
কীভাবে বানাবেন
সব উপকরণ মিশিয়ে ঘন ব্যাটার তৈরি করে অল্প তেলে প্যানকেকের মতো সেঁকে নিন।
চাটনি বা দই দিয়ে পরিবেশন করুন।

২. পেঁয়াজ-আমচুর পরোটা রোল
কী কী লাগবে
আটা – ১ কাপ
পেঁয়াজ কুচি – ১/২ কাপ
Shalimar's Chef Spices আমচুর গুঁড়ো – ১ চা চামচ (স্বাদমতো)
কাঁচালঙ্কা কুচি – ১-২টি
ধনে পাতা কুচি – ২ টেবিল চামচ
নুন – স্বাদমতো
Shalimar's sunflower তেল – পরোটা সেঁকতে
কীভাবে বানাবেন
মসলা মেখে পরোটা বেলে সেঁকে নিন।
তার মধ্যে কুচনো পেঁয়াজ ও ধনে পাতা ছড়িয়ে রোল করে দিন।
সঙ্গে টক দই দিলে জমে যাবে।

৩. মিক্সড দালিয়ার খিচুড়ি
কী কী লাগবে
দালিয়া (ভাঙা গম) – ১/২ কাপ
মুগ ডাল – ১/৪ কাপ
গাজর (ছোট টুকরো) – ১/৪ কাপ
বীনস (ছোট টুকরো) – ১/৪ কাপ
টমেটো (কুচি) – ১টি
আদা বাটা – ১ চা চামচ
সামান্য ঘি – ১ চা চামচ
নুন – স্বাদমতো
জিরে – ১/২ চা চামচ (ইচ্ছা হলে)
Shalimar's mustard তেল
কীভাবে বানাবেন
প্রেসার কুকারে সব উপকরণ একসাথে দিয়ে রান্না করুন।
উপরে ঘি ছড়িয়ে গরম গরম পরিবেশন করুন।
হালকা, পুষ্টিকর ও সহজপাচ্য।

৪. মশলাদার পনির ব্রেড টোস্ট
কী কী লাগবে
ব্রাউন ব্রেড – ৪-৬ টুকরো
পনির (কুচনো) – ১/২ কাপ
টমেটো (কুচি) – ১টি
ক্যাপসিকাম (কুচি) – ১/৪ কাপ
পেঁয়াজ (কুচি) – ১/৪ কাপ
Shalimar's Chef Spices গোলমরিচ গুঁড়ো – ১/৪ চা চামচ
চিজ – ইচ্ছামতো (গ্রেটেড)
নুন – স্বাদমতো
বাটার – টোস্ট করার জন্য/Shalimar's sunflower তেল
কীভাবে বানাবেন
পনির ও সবজি মিশিয়ে ব্রেডের উপর ছড়িয়ে গ্রিল করুন বা তাওয়ায় সেঁকে নিন।
অন্যরকম স্বাদের ওপেন স্যান্ডউইচ।

৫. সুজির চিলা উইথ টুইস্ট
কী কী লাগবে
সুজি – ১ কাপ
টক দই – ১/২ কাপ
গাজর কুচি – ১/৪ কাপ
পেঁয়াজ কুচি – ১/৪ কাপ
ধনে পাতা কুচি – ২ টেবিল চামচ
কালো নুন – স্বাদমতো
নুন – প্রয়োজনমতো
Shalimar's Chef Spices গোলমরিচ গুঁড়ো – ১/৪ চা চামচ (ইচ্ছা হলে)
জল – প্রয়োজনমতো
Shalimar's sunflower তেল– চিলা সেঁকতে
কীভাবে বানাবেন
ব্যাটার তৈরি করে অল্প তেলে ডোশার মতো করে চিলা তৈরি করুন।
সঙ্গে টক টক টমেটো চাটনি।

৬. ফল-মিউসলি-দই বোল
কী কী লাগবে
গ্রিক দই বা ঘন টক দই – ১ কাপ
মধু – ১-২ টেবিল চামচ (স্বাদমতো)
মিশ্র ফল – ১ কাপ (আপেল, কলা, ড্রাগন ফ্রুট, বা পছন্দের যে কোনো ফল)
মিউসলি বা ওটস – ১/২ কাপ
ড্রাই ফ্রুটস বা সিডস – ইচ্ছামতো (বাদাম, কিশমিশ, চিয়া সিডস)

কীভাবে বানাবেন
একটি বাটিতে দই নিয়ে হালকা মিশ্রণ করুন, তাতে ফল ও মিউসলি ছড়িয়ে হানি ড্রিজ়ল করে দিন।
ঠান্ডা ঠান্ডা ও হেলদি।

৭. বেসন-পালং চিলা
কী কী লাগবে
বেসন (ছোলা ডাল গুঁড়ো) – ১ কাপ
কুচনো পালং শাক – ১/২ কাপ
পেঁয়াজ কুচি – ১/৪ কাপ
কাঁচালঙ্কা কুচি – ১-২টি
জিরে – ১/২ চা চামচ
নুন – স্বাদমতো
জল – প্রয়োজনমতো
Shalimar's soyabean তেল – চিলা সেঁকতে
কীভাবে বানাবেন
সব উপকরণ মিশিয়ে জল দিয়ে ব্যাটার তৈরি করুন।
নন-স্টিক প্যানে অল্প তেলে চিলা সেঁকে নিন।
হেলদি, গ্লুটেন-ফ্রি ও আয়রন সমৃদ্ধ একটি অপশন।

৮. আলু-মেথি থেপলা
কী কী লাগবে
আটা – ১ কাপ
মেথি পাতা (কুচি) – ১/২ কাপ
সেদ্ধ আলু (ম্যাশ করা) – ১টি (মাঝারি)
Shalimar's Chef Spices হলুদ গুঁড়ো – ১/৪ চা চামচ
Shalimar's Chef Spices জিরে গুঁড়ো – ১/২ চা চামচ
Shalimar's Chef Spices লঙ্কা গুঁড়ো – ১/২ চা চামচ
নুন – স্বাদমতো
Shalimar's sunflower তেল – মাখতে ও সেঁকতে
কীভাবে বানাবেন
সব উপকরণ মিশিয়ে ডো তৈরি করুন, পাতলা করে বেলে সেঁকে নিন।
সঙ্গে দই বা টমেটো আচার পরিবেশন করুন।
ভ্রমণেও দারুণ।
নিত্যদিনের একঘেয়ে ব্রেকফাস্টকে যদি একটু নতুন রূপে পরিবেশন করা যায়, তবে সকাল যেমন প্রাণবন্ত হয়, তেমনই শরীর-মনও থাকে ফুরফুরে। এই সহজ, পুষ্টিকর ও অন্যরকম রেসিপি আপনার রান্নাঘরে নতুন ভাবনার হাওয়া আনতে পারে। তাই কাল সকালেই ঝটপট বানিয়ে ফেলুন নতুন কিছু, আর দেখে নিন সকালের খাওয়ার টেবিল কতটা হাসিখুশি হয়ে ওঠে!
ত্বক ও চুলের যত্নে সিরাম: কোন সমস্যায় কোন সিরাম, আর ঘরেই কীভাবে বানাবেন?

বর্তমান ব্যস্ত জীবনে সৌন্দর্যচর্চার অন্যতম উপাদান হয়ে উঠেছে সিরাম। ত্বক ও চুলের গভীর যত্নে এই হালকা, দ্রুত শোষিত ফর্মুলা অসাধারণ ফলদায়ক। বাজারে নানা রকমের সিরাম মিললেও সবসময় সেগুলি ত্বক বা চুলের ধরন অনুযায়ী উপযুক্ত হয় না। আবার অনেক সিরামে থাকে কেমিক্যাল, যা পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াও সৃষ্টি করতে পারে। তাই আজ আমরা জানবো সিরাম আসলে কী, কোন সমস্যা ও চাহিদায় কোন সিরাম উপযুক্ত, এবং কীভাবে ঘরেই প্রাকৃতিক উপাদানে বানিয়ে নেওয়া যায় নিরাপদ ও কার্যকরী ত্বক ও চুলের সিরাম।
সিরাম কী এবং কেন প্রয়োজন?
সিরাম হলো হালকা, উচ্চ ঘনত্বের পুষ্টিকর তরল যা ত্বক বা চুলে দ্রুত প্রবেশ করে ভেতর থেকে যত্ন নেয়। এটি মূলত বিশেষ কোনও সমস্যার সমাধানে কেন্দ্রীভূতভাবে কাজ করে—যেমন দাগ-ছোপ, ডিহাইড্রেশন, চুলকানি, রুক্ষতা, আগা ফাটা, চুল পড়া ইত্যাদি।

ত্বকের যত্নে সিরাম: সমস্যা ও সমাধান
১. শুষ্ক ও নিষ্প্রভ ত্বক
বাজারজাত উপাদান: হায়ালুরোনিক অ্যাসিড, গ্লিসারিন
ঘরোয়া সিরাম:
উপকরণ: গোলাপজল ২ টেবিল চামচ, অ্যালোভেরা জেল ১ টেবিল চামচ, গ্লিসারিন ১ চা চামচ
ব্যবহার: মুখ পরিষ্কার করে দিনে দু'বার ব্যবহার করুন। ত্বক থাকবে হাইড্রেটেড ও কোমল।
২. ব্রণ প্রবণ ত্বক
বাজারজাত উপাদান: নিয়াসিনামাইড, টি ট্রি অয়েল
ঘরোয়া সিরাম:
উপকরণ: অ্যালোভেরা জেল ২ চামচ, টি ট্রি অয়েল ২ ফোঁটা, হ্যামামেলিস বা উইচ হ্যাজেল এক চামচ
ব্যবহার: রাতে মুখ ধুয়ে প্যাচপ্যাচে না করে লাগান। ব্রণ শুকোবে ও ত্বক থাকবে ঠান্ডা।

৩. পিগমেন্টেশন ও দাগ
বাজারজাত উপাদান: ভিটামিন C, লিকোরিস এক্সট্র্যাক্ট
ঘরোয়া সিরাম:
উপকরণ: লেবুর রস অল্প (অতি সংবেদনশীল ত্বকে এড়িয়ে চলুন), অ্যালোভেরা জেল, ১ ক্যাপসুল ভিটামিন ই
ব্যবহার: সপ্তাহে ২–৩ দিন রাতে লাগান। পিগমেন্টেশন হালকা হবে।
৪. বয়ঃজনিত রেখা ও বলিরেখা
বাজারজাত উপাদান: রেটিনল, পেপটাইড
ঘরোয়া সিরাম:
উপকরণ: গোলাপজল, গ্রিন টি এক্সট্র্যাক্ট, ১ ক্যাপসুল ভিটামিন ই
ব্যবহার: প্রতিরাতে ব্যবহারে ত্বক টানটান হবে, বলিরেখা হ্রাস পাবে।

চুলের যত্নে সিরাম: সমস্যা ও সমাধান
১. রুক্ষ ও ড্যামেজড চুল
বাজারজাত উপাদান: আর্গান অয়েল, কেরাটিন
ঘরোয়া সিরাম:
উপকরণ: নারকেল তেল ১ চামচ, অলিভ অয়েল ১ চামচ, অ্যালোভেরা জেল ১ চামচ
ব্যবহার: চুল ধোয়ার পর ভেজা অবস্থায় আগায় লাগান। চুল মোলায়েম ও শাইনিং হবে।
২. ডগা ফাটা ও চুল ভাঙা
বাজারজাত উপাদান: সিলিকন বেসড সিরাম, ক্যাস্টর অয়েল
ঘরোয়া সিরাম:
উপকরণ: ক্যাস্টর অয়েল ১ চামচ, বাদাম তেল ১ চামচ, অল্প অ্যালোভেরা জেল
ব্যবহার: সপ্তাহে ২ দিন আগায় ভালোভাবে মাসাজ করে নিন। আগা ফাটার প্রবণতা কমবে।
৩. চুল পড়া
বাজারজাত উপাদান: ক্যাফেইন, বায়োটিন
ঘরোয়া সিরাম:
উপকরণ: পেঁয়াজের রস ১ চামচ, নারকেল তেল ১ চামচ, ল্যাভেন্ডার এসেনশিয়াল অয়েল ২ ফোঁটা
ব্যবহার: স্ক্যাল্পে ম্যাসাজ করে রেখে দিন ৩০ মিনিট, এরপর ধুয়ে ফেলুন।

৪. স্ক্যাল্পে চুলকানি ও খুশকি
ঘরোয়া সিরাম:
উপকরণ: টি ট্রি অয়েল ২ ফোঁটা, অ্যালোভেরা জেল ১ চামচ, গোলাপজল ১ চামচ
ব্যবহার: স্ক্যাল্পে ছড়িয়ে হালকা ম্যাসাজ করুন। চুলকানি কমে যাবে, স্ক্যাল্প থাকবে ঠান্ডা।
✅ সিরাম ব্যবহারের কয়েকটি টিপস:
সিরাম ব্যবহারের আগে মুখ বা চুল পরিষ্কার করে নিতে হবে।
একাধিক সিরাম একসঙ্গে মিশিয়ে না ব্যবহার করাই ভালো।
মুখের সিরাম দিনে SPF-এর সঙ্গে ব্যবহার করুন।
চুলের সিরাম ভেজা বা আধা শুকনো চুলে ব্যবহার করলে বেশি কার্যকর।
সংরক্ষণের জন্য সিরাম ঠান্ডা, অন্ধকার জায়গায় রাখুন।

ত্বক ও চুলের সৌন্দর্য বাড়াতে যতটা দরকার ভালো ঘুম, জলপান ও সুষম খাদ্য, ততটাই দরকার কার্যকরী পুষ্টিকর সিরাম। তবে সবসময় বাজারের পণ্যের ওপর নির্ভর না করে, নিজের ত্বক ও চুলের ধরন বুঝে ঘরেই বানিয়ে নেওয়া যায় নিরাপদ, সাশ্রয়ী ও কার্যকর সিরাম। তাই নিজের রূপচর্চাকে দিন এক প্রাকৃতিক পরশ—প্রতিদিন একটু একটু করে।
ভয়ঙ্কর সেই তান্ত্রিক
ড.নির্মল বর্মন- ডি.লিট

তমলুকের গড়সাফাৎ মৌজার ময়নাগড়ের পুরাকীর্তি দেখার জন্য ভোরবেলায় পৌঁছে গেলেন সুবীরদা ও তার দলবল। দিবস রজনী প্রায় ফিকে। পশ্চিমে রাঙারোদ জলরঙের মতো ম্লান। বিহঙ্গেরা গুঞ্জন শুরু করেছে। গগনের পূব কোণে গোল হালকা আভা। আকাশে বাতাসে শীতলতার ছাপ 'হোটেল সম্রাট' এ ফিরেই নজর কাড়ে ,ছোটরা তখনও ঘুমোচ্ছে না।
আত্মীয়-স্বজনদের উদ্বেগের চূড়ান্ত ছাপ। লিপিকাদির অবস্থা ভয়ংকর।
সবার মধ্যে সংবাদ জানার অধীর আগ্রহ ।ভোরবেলার গা ছমছম পরিবেশের বর্ণনা করা হলো। সবার কৌতুহল,চেটুয়াবাবাজী আসার খবরে সবাই খুশি। তান্ত্রিক এলেই লিপিকাদির ঘাড় থেকে ভূত নামবে।
সুবীরদা তান্ত্রিকের দেওয়া তাবিজ লিপিকাদির বামহাতে বেঁধে দেওয়ার নির্দেশ দিলেন কিন্তু লিপিকাদি তাবিজের কথা শুনে চিৎকার চেঁচামেচি শুরু করে দিল।
তখন সবাই জোর জবরদস্তি করে তাবিজ বেঁধে দিয়েছিল। তাবিজ পরা মাত্রই লিপিকার বিশাল পরিবর্তন। বাড়ি শুদ্ধ সবার আশা ভরসা শ্রদ্ধা বেড়ে গেল তান্ত্রিকের উপর।

তান্ত্রিকের নিশ্চয়ই অলৌকিক শক্তি রয়েছে। তান্ত্রিকবাবাজি এলে লিপিকা সুস্থ হবেই।
সন্ধ্যা পেরিয়ে রাত্রি শুরু হলেও তান্ত্রিকবাবাজি তখনো এলোনা। সবাই অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে। আদৌ পৌঁছাবেন কিনা সন্দেহ।
রাত্রি ক্রমশ গভীর হচ্ছে। পাখির কলরব বন্ধ।হোটেল ভর্তি মানুষগুলো থমথমে। কারো মুখে কথা নেই।
হঠাৎ গেটের কাছে অশুভ সংকেতের লক্ষণ।কুকুরগুলো চিৎকার করছে । কুকুরের করুণ ডাকের মধ্যে কান্নার আতঙ্ক মেশানো ।বিষাদ ঘন অন্ধকার পরিবেশ।
দুপুরে দমকা ঝোড়ো হাওয়ায় ইলেকট্রিকের তার ছিঁড়ে সব কিছু অন্ধকারাচ্ছন্ন।যেন গোদের উপর বিষফোঁড়া ,অন্ধকার যেনো ভূতের মত থমথমে অবস্থা।
মোমবাতি জ্বালিয়ে উঠনের আবছা অন্ধকারে দূরীভূত হয়েছে । আর সব জায়গা ঘন অন্ধকার।
এমন সময় হোটেলের প্রাচীরের বাইরে কাঁটা বাঁশের জঙ্গল থেকে ভয়ংকর কণ্ঠের আওয়াজ "জয় মা বর্গভীমা"
প্রায় সঙ্গে সঙ্গে চিৎকার করে উঠলো সুবীরদা , চেটুয়াবাবাজী এসে গেছেন বোধ হয় । বাবাজী এসে গেছেন।
প্রায় ঘন অন্ধকার ঘরের মধ্যে জাদু বলে ঝিমানো মানুষগুলো নিমেষেই চাঙ্গা হয়ে উঠে বসলো।
সুবীরদা দলবল নিয়ে টর্চ নিয়ে বাঁশের ঝোপঝাড়ের নিচে আবর্জনা ঢিপিতে দেখতে পেলেন,বসে আছেন স্বয়ং চেটুয়াবাবাজী ।
সুবীর দা সামান্য এগিয়ে গিয়ে চেটুয়াবাবাজী কে প্রণাম করে বললেন -- 'বাবাজি কখন এসেছেন ?
বাবাজি উত্তর না দিয়ে বিদঘুটে অথচ সহজপাচ্য খাদ্য আনার কথা বললেন । সাদা পান্তা ভাত, কাঁচালঙ্কা ও তেঁতুল । সবাই বিপন্ন ,অন্ধকার বাঁশের ঝোপের তলায় নোংরা আবর্জনায় বসে আহার করলেন বাবাজী ।
লিপিকা আর মণিমা আড়াল থেকে চেটুয়াবাবাজীর ভোজন প্রক্রিয়া দেখতে এসেছিলেন কিন্তু বাবাজির ধমকে এক ছুটে অন্দরমহলে।
পরিপাট্য করে আহারাদি সুসম্পন্ন হলে এঁটো হাত আর না ধুয়ে ,ছেঁড়া নোংরা ধুতিতে হাত পরিষ্কার করে বললেন -- 'এবার চল, ভূতে ধরা মানুষের কাছে'।
হোটেল শুদ্ধ মানুষজন চেটুয়াবাবাজী কে যত্নআত্তি করে ভিতরে নিয়ে গেলেন। চেটুয়াবাবাজী খানিকক্ষণ লিপিকার দিকে অপলক দৃষ্টিতে চেয়েছিলেন, তারপর ভয়ংকর শব্দ করে বললেন -- 'ওর তাবিজ শরীরে রাখিস না'!
চেটুয়াবাবাজীর কথা শুনে লিপিকাদির পুরনো ভাবনায় ফিরে আসেন। দুর্বল চিত্ত এক লহমায় সতেজ সাবলীল হয়ে ওঠে। ধরফর করে উঠে পারস্পরিক সবাইকে দেখেও না দেখার ভান করছিল,তারপরে হঠাৎ হিহিহিহি করে উঠলো।
চেটুয়াবাবাজী ---' বললেন মেয়েটাকে এক্ষুনি ছেড়ে দিস'।
জবাবে কঁকিয়ে লিপিকাদি বললো--' অসম্ভব! আদৌ না !এখানে এই ঘরে আমার প্রতিষ্ঠা ! যতবড়ই তান্ত্রিক হোন না কেন , আমি এখান থেকে যাবই না'।
বাবাজী রাগান্বিত হয়ে বলল- 'মূর্খ গোবর্ধন কোন শ্মশানে হাড় পুঁতে ভূত-প্রেত প্রতিষ্ঠা করেছিস'। গোবর্ধন খতরনাক ,হাতের ইশারায় পোঁতা হাড়কে দেখিয়ে বলল-- 'ওই যে রক্ত জবা গাছের তলায়'।

চেটুয়াবাবাজী , হাড়ের সামনে বসে ঝুলি থেকে মাথার খুলি আর ছয়টি হাড় বের করে ভূমির মধ্যে রেখে মনে মনে মন্ত্র উচ্চারণ করল । তারপর ছয়টি হাড় কুমন্ডলের জলের মধ্যে ডুবিয়ে রেখে মন্ত্রপাঠ করলেন ।
কুমন্ডেলের জল প্রতিষ্ঠা করে হাড়ের উপর ছিটোতে লাগলেন , আর ঠিক তখনই লিপিকাদি চিৎকার করে বলল --'মন্ত্র পড়া, জল ছেটানো , যাই করুণ না কেন, তাতে আমার কিছুই হবে না--হি হি হা হা হা হা হা হা।
চেটুয়াবাবাজীর চোখে মুখে আগুনের ধোঁয়া গলগল করে বেরোতে লাগলো। । কি বললে --'ফাজলামো'! তবে দ্যাখ মজার মজা বলার সঙ্গে সঙ্গে চোখ প্রায় বন্ধ করে মন্ত্র পাঠ করেই চলেছেন । হঠাৎ আশ্চর্যজনক ঘটনা ঘটলো ।সামনে রাখা মাথার খুলি থেকে ধোঁয়া গলগল করে বেরোতে লাগলো । ধোঁয়া বেরোনো পর আগুনের ফুলকি বেরিয়ে হাড়কে স্পর্শ করল, কিন্তু কাজ কিছুই হলো না। লিপিকা বিকট চিৎকার করে বলল --'সব কিছু চুপ , কিছুই হবে না ' আমি প্রেতাত্মা কিন্তু প্রতিষ্ঠিত। কোন মন্ত্রই কিছু করার সাহস নেই'।
চেটুয়াবাবাজী দীর্ঘশ্বাস ফেলে ' গোবর্ধন কে দেখিয়ে পরিষ্কার বলল--' এই গোবর্ধন টার জন্যই এমন জটিল হাল'! তারপর ধরপড় করে উঠে লিপিকাদির কাছে গিয়ে বলল --'এই মেয়েটাকে ছাড়ার জন্য তোর শর্ত কি?
লিপিকাদি বলল--' প্রেতাত্মানন্দ শান্তি হোম যজ্ঞ করলেই এলাকা ছেড়ে চলে যাবে, তারপরই করুন আর্তি লিপিকার কণ্ঠে ঝরে পড়ল-- 'তোরা প্রেতাত্মানন্দ শান্তিহোম যজ্ঞ করে আমাকে কষ্ট থেকে রেহাই দিয়ে শান্তি দিস'।
ফুপিয়ে ফুপিয়ে কাঁদলো লিপিকাদি। চোতুয়াবাবাজী এবার বললো - 'অন্য পথ, আপাতত নেই ,তাই এই হোম শান্তি যজ্ঞ করতে হবে। একজন মাধ্যম দরকার। তার মৃত্যুর সম্ভাবনা প্রায় প্রবল। ফলতো কে রাজি হবে?
চেটুয়াবাবাজীর কথা শোনা মাত্র , পিন পতনের নৈশব্দ নেমে এলো । সবাই চুপচুপানন্দ, চাপা কান্না, কে এমন নিজের জীবন বিপন্ন রেখে, লিপিকাদিকে বাঁচাবে? মহৎ কে আছেন? চোখ মুখে চাপা কান্নার ছাপ! তাহলে কি লিপিকাদি আর কি সুস্থ জীবনে ফিরে আসবে না?

হঠাৎ নিস্তব্ধতা খান খান করে দিয়ে 'নিয়মগুরু' লাঠিতে ভর দিয়ে পাকা দাড়ি চুলে ভরপুর ভগবান মূর্তির মত পরিষ্কার বলে উঠলো--' আমি মাধ্যম হতে রাজি', সবাই বিস্মৃত - 'নিয়মগুরু' পরিষ্কার বলল-- 'আপনি হোম শান্তি যজ্ঞর সুব্যবস্থা করুন ,আমি তৈরি'!
চেটুয়াবাবাজী বলল - 'তোর মন বিশাল ,জয় মা বর্গভীমা,জয় মা ঝিঙ্গেলেশ্বরী, তোর কল্যাণ করবেন' ।এরপর চেটুয়াবাবাজীর নির্দেশ মত বেলপাতা,বেলকাঠ, ঘি ও পূজার উপকরণ সংগ্রহ করা হলো।
'নিয়মগুরু' কে স্নান করে, নতুন জামা কাপড় পরিয়ে চেটুয়াবাবাজীর সামনে বসিয়ে দেওয়া হল। চেটুয়াবাবাজী 'নিয়মগুরু'র কপালে সিঁদুর তিলক কেটে দিল ,গলায় রক্ত দেওয়া মালা পরিধান করিয়ে দিলেন। হুহু করে যজ্ঞের আগুন জ্বলছে! মুখগুলো বিষাদের ছায়াছন্ন পরিবেশ ।বাতাসে আকাশে পোড়া ঘি এর গন্ধ, উচ্চস্বরে মন্ত্র পাঠ।
যজ্ঞ সম্পন্ন হওয়ার শেষ পর্যায়ের সময় চেটুয়াবাবাজী পরিষ্কার বললে-- 'তোরা সব কেটে পড়, ওই দক্ষিণ দিক থেকে প্রেতাম্মা আসবে, ওই নিম গাছের উপরে বসে প্রেত। প্রেতের হাওয়া গায়ে লাগলেই অকল্যাণ হবে'। চেটুয়াবাবাজী যজ্ঞ সমাপনে কুমন্ডলের জল ছিটিয়ে উচ্চকণ্ঠে বলে উঠলো--"'জয় মা বর্গভীমা, জয় মা ঝিঙ্গেলেশ্বরী"।

আর তখনই নিম গাছের পাতা ঝড় ঝড় শব্দ করে দুলে উঠায়, চুলকাস বলল --'লীলাবতীর প্রেতাত্মা মুক্তি পেয়েছে। লিপিকাদি সুস্থ হয়ে উঠল কিন্তু 'নিয়মগুরু' মাটিতে লুটিয়ে পড়লেন'! আত্মীয়-স্বজন শ্বাস পরীক্ষা করে কান্নায় ভেঙে পড়লেন। হোটেলের সব আত্মীয়-স্বজন চিৎকার করে বলে উঠলেন-- "নিয়মগুরু' সত্যিকারের মহান মানুষ আমরা এখনো বন মানুষ, হতে পারেনি মানুষ"।
চিত্রনাট্যের পুরো কাজ শেষ করে সুবীর দা দলবল নিয়ে যখন গাড়ি ধরলো তখন প্রায় ভোর হয়ে এসেছে। লিপিকা জিজ্ঞেস করলো, এর পর আমি কিন্তু আর ভুতে ধরা রোল করবো না। বাপরে বাপ, সত্যি সত্যি যদি ভূতে ধরে!
পাশ থেকে বিপিন বাবু বলেন,আর চেটুয়াবাবা আছেতো,, তারপর হেসে বলে, কেমন তান্ত্রিকের পাঠ করলাম বল?
সবাই হই হই করে বলে ওঠে, জয় চেটুয়াবাবার জয়...

Comments