top of page

নটরাজ এবং অপস্মরা.. বুকে ব্যথা মানে হার্ট অ্যাটাক নয়, গলস্টোন'ও হতে পারে কারণ! গেরস্থালির গপ্পো, গেরি গুগলি আর জঙ্গলমহল.. বর্ষার খিচুড়ি আর তেলেভাজা.. রবিবারের গল্প: রক্তের দোষ..

অজ্ঞতার ওপর পদচিহ্ন: নটরাজ ও অপস্মরা, জ্ঞান ও মুক্তির এক চিরন্তন প্রতীক

দেবী দুর্গার অসুরবিনাশী রূপে আমরা দেখেছি শুভ শক্তির জয়, অশুভের পরাজয়। মহিষাসুরের বধের মাধ্যমে দেবী প্রতিষ্ঠা করেন ন্যায় ও সত্যকে। তবে হিন্দুধর্মের আরেক শক্তিরূপের মাধ্যমেও আমরা দেখতে পাই অশুভ শক্তির দমন, কিন্তু এক ভিন্ন ব্যাখ্যায় সে হল নটরাজ শিব, এবং তাঁর পদতলে চিরকাল পিষ্ট এক বামন-অসুর: অপস্মরা বা মুয়ালাকা।

অপস্মরা (Apasmara), যিনি মুয়ালাকা নামেও পরিচিত, হলেন হিন্দু পুরাণে এক অদ্ভুত রকমের অসুর। তিনি দৈহিক আকারে খর্বকায়, কিন্তু প্রতীকি অর্থে বিপজ্জনক ও প্রভাবশালী। তিনি আধ্যাত্মিক অজ্ঞতা, মানসিক বিভ্রান্তি ও অহঙ্কারী সংজ্ঞাহীনতাকে প্রতীকায়িত করেন। তিনি কেবল একটি পৌরাণিক চরিত্র নন তিনি এক মানসিক অবস্থার রূপক।

নটরাজ শিবের বিখ্যাত নৃত্য-মূর্তিতে দেখা যায় তাঁর ডান পা একটি ছোট বামন-দানবকে চেপে রেখেছে, যার মুখ বিকৃত, দেহ পিষ্ট, এবং ভঙ্গিমা অস্থির। এ অসুরই অপস্মরা। পুরাণে বলা হয়, জ্ঞানের ভারসাম্য বজায় রাখতে শিব অপস্মরাকে হত্যা করেননি। কারণ, অপস্মরা অজ্ঞতার প্রতীক হলেও তার একটি অনিবার্যতা আছে- মানবজীবনে অজ্ঞতা চিরকালীন, কিন্তু সেটিকে বশীভূত করা যায় জ্ঞান ও সাধনার মাধ্যমে।

শিব যখন নৃত্যরত, তখন তিনি বাম পা তুলেছেন উপরের দিকে এই পা মুক্তির প্রতীক, মোক্ষের ইঙ্গিত। অন্যদিকে, ডান পা পিষ্ট করছে অজ্ঞতার প্রতীক অপস্মরাকে। অর্থাৎ, পরম জ্ঞান অর্জনের পথে চলতে গেলে অজ্ঞতাকে পদদলিত করতে হয়, এবং তখনই মোক্ষ বা আত্মমুক্তি সম্ভব হয়। পুরাণ মতে, অপস্মরা অমর। তাকে হত্যা করা যাবে না, কারণ তার মৃত্যু মানেই জ্ঞান ও অজ্ঞতার ভারসাম্য নষ্ট হওয়া। তবে তাকে দমন করা যায়। নটরাজ শিব সেই চিরন্তন নৃত্যের মাধ্যমে দেখিয়ে দেন, কীভাবে প্রতিদিন, প্রতি মুহূর্তে, আমাদের মনোজগতে চলতে থাকে এক নৃত্য- জ্ঞান বনাম অজ্ঞতার।

নটরাজ ও অপস্মরার সম্পর্ক আসলে এক গভীর আধ্যাত্মিক অনুশাসনের শিক্ষা। তা শুধুই ধর্মীয় ভক্তির ব্যাপার নয়, বরং এটি প্রতীকীভাবে আমাদের শেখায়:


অজ্ঞতা চিরন্তন সত্য, কিন্তু তাকে নিয়ন্ত্রণ করা যায়।

জ্ঞান, সাধনা, ধ্যান ও আত্মনিবেদন ছাড়া প্রকৃত মুক্তি অসম্ভব।

আত্মতত্ত্বে অজ্ঞতাকে দমন করাই আত্মউন্নয়নের পথ।

দুর্গার পায়ে মহিষাসুরের পিষ্ট দেহ যেমন অশুভ শক্তির বিনাশের কথা বলে, তেমনি নটরাজ শিবের পদতলে অপস্মরা আমাদের জানায়, আত্মজ্ঞানই মুক্তির পথ, এবং সেই পথে অজ্ঞতা চিরকাল পথের কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়ে থাকলেও তা জয় করা সম্ভব। এই প্রতীকায়ন শুধুই একটি পুরাণ নয়, বরং আমাদের আত্মজিজ্ঞাসার এক গভীর অনুবাদ।

বুকে ব্যথা মানেই হার্ট অ্যাটাক নয়! গলস্টোন'ও হতে পারে কারণ।

বুকে ব্যথা মানেই যে তা হার্ট অ্যাটাক বা হৃদ্‌রোগজনিত সমস্যা, এমন নয়। অনেক সময় এই ব্যথার পেছনে লুকিয়ে থাকতে পারে পিত্তথলির পাথর (গলস্টোন), গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা কিংবা এসিড রিফ্লাক্স। ভুল রোগ নির্ধারণ কখনও বিপজ্জনক হতে পারে, আবার অপ্রয়োজনীয় আতঙ্কও সৃষ্টি করে। তাই সচেতনতা এবং উপযুক্ত চিকিৎসা পরামর্শ নেওয়া জরুরি।

বুকের ব্যথার সম্ভাব্য কারণসমূহ:

১. হৃদ্‌রোগজনিত কারণ (Cardiac Origin):

হার্ট অ্যাটাক বা এনজাইনা পেক্টোরিস হলে সাধারণত মাঝের দিকে বা বাম দিকে চাপ ধরা ব্যথা হয়, যা কাঁধ, বাহু, চোয়াল বা পিঠে ছড়াতে পারে। সঙ্গে থাকতে পারে ঘাম, বমি বমি ভাব, শ্বাসকষ্ট।


২. গলস্টোন (Gallstones):

পিত্তথলিতে পাথর জমে গেলে তা লিভার ও পাচনতন্ত্রে চাপ সৃষ্টি করতে পারে। এতে বুকের ডান পাশে বা মাঝামাঝি জায়গায় একটানা চাপ বা ব্যথা অনুভূত হয়, যা অনেক সময় হার্টের ব্যথার সঙ্গে মিল খায়। গলস্টোনের কারণে ব্যথা খাওয়ার কিছুক্ষণ পর শুরু হতে পারে এবং দীর্ঘস্থায়ী হয়।

৩. গ্যাস্ট্রিক ও অ্যাসিড রিফ্লাক্স (GERD):

অতিরিক্ত ঝাল, তেল-ঝাল খাবার, অনিয়মিত খাওয়া ও স্ট্রেসের কারণে গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা দেখা দিতে পারে। এতে বুক জ্বালা, পেট ফেঁপে থাকা, ঢেকুর ওঠা, এই উপসর্গ দেখা যায়। অনেক সময় বুকের মাঝখানে ব্যথা অনুভূত হয়, যা হৃৎপিণ্ডের ব্যথার মতো মনে হতে পারে। গলস্টোনের বড় কারণ হলো উচ্চ কোলেস্টেরলযুক্ত খাবার ও অতিরিক্ত ওজন। তাই খাদ্য তালিকায় পরিবর্তন আনলে গলস্টোনের ঝুঁকি অনেকটাই কমানো যায়।


খাবারে কী রাখবেন?

উচ্চ ফাইবারযুক্ত শাকসবজি (পালং, লাউ, পেঁপে)

ফলমূল (আপেল, নাশপাতি, আমলকি)

ওটস, লালচাল

পর্যাপ্ত জল (দিনে অন্তত ২.৫–৩ লিটার)

কী কী এড়িয়ে চলবেন?

অতিরিক্ত তেল, চর্বি ও ভাজাভুজি

প্রসেসড ফুড ও ফাস্ট ফুড

খুব বেশি ঝাল বা মসলা

অতিরিক্ত চিনি ও রিফাইন্ড খাবার


চিকিৎসকের কাছে কখন যাবেন?

যদি ব্যথা তীব্র হয় এবং পিঠ বা বাহুতে ছড়ায়।

ঘাম, শ্বাসকষ্ট বা বমি বমি ভাব থাকে।

ব্যথা দীর্ঘস্থায়ী হয় বা নিয়মিত ফিরে আসে।

খাওয়ার পর ব্যথা বাড়ে এবং ওষুধেও আরাম হয় না।

বুকের ব্যথা একটি গুরুতর উপসর্গ হলেও তা সবসময় হার্ট অ্যাটাক বোঝায় না। গলস্টোন, গ্যাস্ট্রিক, বা অ্যাসিড রিফ্লাক্সও এই ব্যথার পেছনে থাকতে পারে। তবে এই ব্যথার প্রকৃতি, সময়কাল, এবং সংশ্লিষ্ট উপসর্গ বিচার করে একজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। পাশাপাশি সচেতন খাদ্যাভ্যাস ও জীবনযাপন বুকের ব্যথার অনেক কারণ প্রতিরোধে সহায়ক হতে পারে।

গেরস্থালির গপ্পো, গেড়ি-গুগলি আর জঙ্গলমহল

সুস্মিতা মিত্র


পাতা ঝরার মরশুম হোক কি বর্ষা, যেকোনও সময়েই জঙ্গলমহল পর্যটকদেরকে আকর্ষণ করে। শাল, শিমূলে ভরা এই অঞ্চল বিখ্যাত পর্যটন মানচিত্রে। শীত আর বর্ষা এই দুই মরশুমে এ অঞ্চলের রূপ দুরকম। বৃষ্টি ভেজা গাছের পাতা, তার মধ্যে থেকে এসে পড়া সূর্যের আলোতে মোহময়ী জঙ্গলমহল। মনে হবে যেন সবুজ গালিচা বিছিয়ে রেখেছে কেউ। তার মধ্যে ফুটে থাকে ছোট সাদা ফুলের কুঁড়ির মতো ছাতু। জঙ্গল লাগোয়া গ্রামগুলোতে চোখ রাখলেই দেখা যায় সকাল বিকাল মহিলারা দল বেঁধে চলেছে জঙ্গলের উদ্যেশ্যে। শালপাতায় অথবা চুবড়ি ভরে তাঁরা তুলে আনবেন জলজ গেড়ি, গুগলি, শামুক। মুঠো ভরে কুড়িয়ে আনবেন মাটি মাখা ছাতু। সন্ধ্যে নামার আগে ঘরে ফিরতে হবে তাদের। আয়ের উৎস থেকে প্রোটিনের যোগান সব'ই এরা। বড্ড সাধারণ, ভালোবাসায় মোড়া এদের জীবন যাপন। রোজকার রোজনামচায় নিজেদের অনন্য সংলাপ।

গেঁড়ি, গুগলি, ঝিনুক..

এক সময় আদিবাসী অধ্যুষিত প্রত্যন্ত এলাকার গরিব মানুষ বা আদিবাসী পরিবারগুলির মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে এই গেড়ি গুগলি খাওয়ার চল ছিল। শহুরে লোকেরা নাক সিঁটকে বলতেন এসব কে খায়!! তবে বর্তমানে মৎস বিভাগের উদ্যোগে নলবন সহ শহরের রেস্তোরাঁ গুলিতেও বাড়ছে গেঁড়ি, গুগলি, ঝিনুকের চাহিদা৷ গুগলির স্যুপ কিংবা ‘র মাজেল মিট’ চেটেপুটে খাচ্ছেন ভোজনরসিকেরা৷

বাস্তুতন্ত্রের পক্ষেও গেঁড়ি কতটা অপরিহার্য, তা জানেন বিশেষজ্ঞরা। কিন্তু সেই গেঁড়িই এখন বিলুপ্তির পথে। রাসায়নিক সার ব্যবহার করার ফলে খুব একটা পাওয়া যায়না আর। এছাড়াও তাপপ্রবাহ এবং কীটনাশক এই জলজ প্রাণীর ব্যাপক ক্ষতি করে। এবার শুধু কিন্তু মুখের স্বাদ নয়, গেঁড়ি গুগলি খাওয়ার উপকারীতা অনেক। প্রোটিন ও ভিটামিনে এ জিনিস ভরপুর। দৃষ্টিশক্তি ভালো রাখতে সাহায্য করে। গুগলিতে পটাশিয়ামের মাত্রা বেশি এবং সোডিয়ামের মাত্রা কম থাকে যার ফলে এটি রক্ত চাপের মাত্রা বজায় রাখে, হার্ট ও কিডনির রোগের ঝুঁকি কমায়। এছাড়াও প্রচুর পরিমাণে ফ্যাটি এসিড পাওয়া যায় সেজন্য এটি মস্তিষ্কের বৃদ্ধি এবং স্মৃতিশক্তি বাড়াতে সাহায্য করে।

জঙ্গলমহলের ছাতু:

জঙ্গল লাগোয়া গ্রাম গুলোতে চোখ রাখলেই দেখা যায় সকালে ও বিকালে মহিলারা দল বেঁধে চলেছে জঙ্গলের উদ্যেশ্যে। ছাতু কুড়াতে। বর্ষায় যেখানে বাঙালি পাতে হয় ইলিশ নয় খিচুড়ি, সেখানে জঙ্গলমহলে বর্ষা মানেই নানান ধরনের ছাতুর ছড়াছড়ি। বর্ষার শুরুতেই ফুটতে শুরু করে "কুড়কুড়ে" বা "পুটকা" ছাতু। এর বিজ্ঞানসম্মত নাম Astraeus Hygrometricus (Pors.) Morg. দেখতে গোল গোল মার্বেলের মতো। ফোটা ফুলের মতো সাদা ধবধবে। উপরের শক্ত খোলটা খাওয়ার সময় কুড়কুড় শব্দ হয় বলেই হয়তো এহেন নামকরণ। একে আবার পুটকা ছাতুও বলে। 'পুটকা' মানে ছোট। এর পুষ্টিগুণ প্রচুর। বিভিন্ন ধরনের ছাতু জঙ্গলমহলে পাওয়া যায়। যেমন "কুড়কুড়ে" ছাতু, "বালি" ছাতু, "উই" ছাতু, "কাড়ান" ছাতু, "মোঢাল" ছাতু, "পাতড়া" ছাতু, "খড়" ছাতু ইত্যাদি।

বীরভূম, পুরুলিয়া, ঝাড়গ্রাম ও পশ্চিম মেদিনীপুরের লাল বর্ণের ল‍্যাটেরাইট মাটিতে শাল গাছের তলায় জন্মানো এই ছাতুতে ফ‍্যাট থাকে কম, ফাইবার থাকে বেশি। পুষ্টিগুণে ভরপুর এই ছত্রাকটিতে রয়েছে অ্যাস্ট্রাকুরকুরোন ও অ্যাস্ট্রাকুরকুরোল নামে দুটি জৈব যৌগ। মানুষের লিভার, হৃৎপিণ্ডের প্রদাহ কমায় এই ছত্রাক। শুধু তাই নয়, লিভার ও ফুসফুসের ক‍্যান্সার কোষ মোকাবিলায় এই ছত্রাক বিশেষভাবে কার্যকরী। তবে শুধু স্বাস্থ্যকর দিকের কথা বললে বড্ড অন্যায় হবে।ঠিক মতো রাঁধতে পারলে, স্বাদেও মাছ মাংসের থেকে কোনো অংশে কম নয়। ছোট ডুমো করে কাটা আলু আর পেঁয়াজ আদা রসুন লঙ্কায় কষিয়ে রাঁধতে হবে শুধুমাত্র।


লাল পিঁপড়ার চাটনি:

বৈজ্ঞানিকভাবে ওকোফিলা স্মারাগডিনা নামে পরিচিত, কামড়ালেই ফুলে ওঠে, ত্বক লাল হয়, ব্যথাসহ ফোস্কা তৈরি হয়। ঐ লাল পিঁপড়া খুবই সাবধানে ডিম সহ তাদের বাসা থেকে সংগ্রহ করে ভালো মতো পরিষ্কার করা হয়। তাতে লবণ, আদা, সরষের তেল, রসুন এবং লঙ্কা মিশিয়ে বেটে চাটনি তৈরি করা হয়। প্রচন্ড ঝাঁঝালো এই ‘কাই’ চাটনি সাধারণত ভাত, রুটি বা পরোটার সঙ্গে খাওয়া হয়। পুষ্টিগুণের তালিকাও বিশাল এক্ষেত্রে। প্রোটিন, ক্যালসিয়াম, দস্তা, ভিটামিন বি -১২, আয়রন, ম্যাগনেসিয়াম, পটাসিয়াম ইত্যাদির মতো পুষ্টির একটি ভাল উৎস এমনটাই বলেন বিশেষজ্ঞরা। এটি স্বাস্থ্যকর মস্তিষ্ক এবং স্নায়ুতন্ত্রের বিকাশে তার ভূমিকার জন্যও মূল্যবান, সম্ভবত হতাশা, ক্লান্তি এবং স্মৃতিশক্তি হ্রাসের মতো অবস্থার পরিচালনায় সহায়তা করে এই লাল পিঁপড়ের চাটনি।


শুষ্ক আবহাওয়ার কারণে এই অঞ্চলে চাষবাস সীমিত। যখন শাকসবজি ফলে না, এইসব উপকরণেই ক্ষুণ্ণিবৃত্তি করেন এই এলাকার মানুষ।

বেশ কিছু ফল ও এখানে পাবেন, যা অন্যত্র পাবেন না। বৈঁচি, কুসুম, বন খেজুর, কেঁদ, মহুল, ভুররু, শেঁওয়া কুল ইত্যাদি। জঙ্গলের এই মায়াভরা ভালোবাসা পেতে হলে আসতে হবে এখানেই। যেখানে প্রতি ঘরে, গেরস্থালিতে বোনা হয় স্বপ্ন, যেখানে তাঁরা প্রতিদিন সহজ ভাবে, সুন্দর এবং সাবলীল ভাবে বাচার স্বপ্ন দেখেন। সামান্য স্থানীয় উপকরণ আর নিজেদের যত্নের ছোঁয়ায় সাজিয়ে তোলেন প্রতিদিনের থালা। যার প্রতি কণায় পরমাণ্ণ। ভালোবাসা।

বর্ষায় তেলেভাজা ও খিচুড়ি রেসিপি সংকলন

বর্ষা এলেই প্রকৃতির রঙ বদলে যায়। চারপাশে সবুজের ছোঁয়া, মাটির গন্ধ আর বৃষ্টির স্নিগ্ধ সুর যেন হৃদয় জয় করে। এমন আবহাওয়ায় বাঙালির ঘরে যে জিনিসটি বারবার ফিরে আসে, তা হল খিচুড়ি আর তার সঙ্গে নানা রকম তেলেভাজা। মেঘলা আকাশ, ভেজা মাটি আর চায়ের কাপে চুমুক দেওয়ার সেই অনবদ্য মুহূর্তের সঙ্গী হয়ে ওঠে খিচুড়ির ধোঁয়া ওঠা গন্ধ আর ভাজাভুজির ঝরঝরে স্বাদ।

এই সংকলনে আমরা তুলে ধরেছি বর্ষায় ঘরে বসেই বানিয়ে নেওয়া যায় এমন কিছু সহজ, সুলভ এবং একেবারে ঘরোয়া খিচুড়ি ও তেলেভাজার রেসিপি। কখনও তা হবে সাদামাটা মুগডালের খিচুড়ি, কখনও সবজি মেশানো ভরপেট খিচুড়ি। তার পাশে থাকবে বেগুন ভাজা, ঝাল আলু ভাজা, পেঁয়াজি, বা ধোঁয়া ওঠা চপ। বর্ষার দিনে এই রেসিপিগুলি কেবল রসনাতৃপ্তি দেয় না, বরং মনে করিয়ে দেয় ছেলেবেলার স্মৃতি, রান্নাঘর, কিংবা মায়ের সেই আদর মাখানো দুপুরগুলো। রান্নার স্বাদে, ঘ্রাণে ও গন্ধে একবার যেন গোটা বর্ষা ধরা থাকে এই পাতায়। চলুন, বর্ষার এই বিশেষ রন্ধন-সংকলনে আপনিও খুঁজে নিন আপনার প্রিয় স্বাদ আর স্মৃতির ছোঁয়া।

ডালিয়ার ভুনা খিচুড়ি

ডালিয়া, বা গম ভাঙা দানা, বাঙালি রান্নাঘরে অনেকটাই স্বাস্থ্য সচেতন খাবারের তালিকায় চলে এসেছে। তবে কেবল উপকারী বলেই নয় ডালিয়া দিয়ে বানানো ভুনা খিচুড়ি স্বাদেও সমৃদ্ধ, সহজপাচ্য, এবং বর্ষার দিনে বা হালকা শরীর খারাপের সময়েও একদম পারফেক্ট। এই ডালিয়ার ভুনা খিচুড়ি হল মশলাদার, সোনালি রঙের, হালকা ভাজা স্বাদে ভরপুর এক সুস্বাদু খাদ্য যা উপোসের দিনেও খাওয়া যায় আবার দুপুরের মুখরোচক খাবার হিসেবেও জমে ওঠে।


কী কী লাগবে

ডালিয়া (গম ভাঙা) – ১ কাপ

মুগ ডাল (হালকা ভাজা) – ১/২ কাপ

আলু – ১টি (কিউব করে কাটা)

গাজর – ১টি

ফুলকপি – ১ কাপ

মটরশুঁটি – ১/২ কাপ

কাঁচা লঙ্কা – ২টি (চিরে নেওয়া)

মসলা ও ফোড়নের জন্য:

ঘি বা Shalimar's Sunflower তেল – ২ টেবিলচামচ

তেজপাতা – ১টি

গোটা জিরে – ১ চা চামচ

শুকনো লঙ্কা – ১টি

আদা কুচি বা বাটা – ১ চা চামচ

Shalimar's chef spices হলুদ গুঁড়ো – ১/২ চা চামচ

Shalimar's chef spices জিরে গুঁড়ো – ১/২ চা চামচ

Shalimar's chef spices গরম মসলা – ১/২ চা চামচ

নুন – স্বাদ অনুযায়ী

জল – প্রায় ৩ কাপ


কীভাবে বানাবেন

আলাদা করে শুকনো কড়াইতে ডালিয়া হালকা সোনালি রঙে ভেজে তুলে রাখুন। একইভাবে মুগ ডালও শুকনো ভেজে আলাদা করে রাখুন। কড়াইতে সামান্য তেল দিয়ে সবজি হালকা ভেজে তুলে রাখুন। কড়াইতে ঘি বা তেল গরম করে তাতে তেজপাতা, জিরে, শুকনো লঙ্কা ফোড়ন দিন। এরপর আদা কুচি যোগ করে নেড়ে নিন। এবার ভাজা ডালিয়া ও মুগ ডাল কড়াইতে দিয়ে ভালোভাবে ভুনে নিন ৩–৪ মিনিট। হলুদ, জিরে গুঁড়ো, নুন ও কাঁচা লঙ্কা দিয়ে ভালো করে মিশিয়ে নিন। প্রয়োজনমতো জল দিন, এবং ভাজা সবজি কড়াইতে দিন। ঢেকে দিন এবং মাঝারি আঁচে রান্না হতে দিন ১২–১৫ মিনিট বা যতক্ষণ না সব উপকরণ নরম হয়ে যায়। জল শুকিয়ে এলে ও খিচুড়ি সেদ্ধ হলে ওপর থেকে গরম মসলা ছড়িয়ে দিন। ঢেকে রেখে দিন ৫ মিনিট, তারপর পরিবেশন করুন। ডালিয়ার ভুনা খিচুড়ি গরম গরম পরিবেশন করুন টক দই, পাপড়, আলু ভাজা বা এক চামচ ঘি দিয়ে। কাঁচা পেঁয়াজ ও কাঁচা লঙ্কা থাকলে স্বাদ আরও বাড়ে।

নবরত্ন খিচুড়ি

নবরত্ন খিচুড়ি হল এক বিশেষ প্রকারের রাজকীয় খিচুড়ি যা সাধারণ খিচুড়ির তুলনায় অনেক সমৃদ্ধ ও মুখরোচক। এতে ব্যবহার করা হয় নয় রকমের পুষ্টিকর উপাদান ডাল, চাল, সবজি ও শুকনো ফল যা একত্রিত হয়ে একটি সম্পূর্ণ ও সুস্বাদু খাবার তৈরি করে। এটি উৎসব, ভোগ, বা অতিথি আপ্যায়নের জন্য একেবারে আদর্শ। চলুন জেনে নেওয়া যাক নবরত্ন খিচুড়ির রেসিপি।


কী কী লাগবে

গোবিন্দভোগ বা বাসমতী চাল – ১ কাপ

মুগ ডাল (ভাজা) – ১/২ কাপ

মসুর ডাল – ১/২ কাপ

আলু – ১টি

গাজর – ১টি

ফুলকপি – ১ কাপ

মটরশুঁটি – ১/২ কাপ

কুমড়ো – ১/২ কাপ

বীনস – ৮–১০টি


শুকনো ফল ও বাদাম:

কাজু – ৮–১০টি

কিশমিশ – ১ টেবিলচামচ

চিনি – ১ চা চামচ (ঐচ্ছিক)


ফোড়নের জন্য:

ঘি – ২ টেবিলচামচ

তেজপাতা – ২টি

গোটা জিরে – ১ চা চামচ

দারচিনি – ১ টুকরো

লবঙ্গ – ৩–৪টি

এলাচ – ২টি

শুকনো লঙ্কা – ১টি

আদা বাটা – ১ টেবিলচামচ

মসলা:

Shalimar's chef spices হলুদ গুঁড়ো – ১/২ চা চামচ

Shalimar's chef spices লঙ্কা গুঁড়ো – ১/২ চা চামচ

Shalimar's chef spices গরম মসলা গুঁড়ো – ১/২ চা চামচ

নুন – স্বাদমতো


কীভাবে বানাবেন

মুগ ডাল শুকনো কড়াইতে সোনালি করে ভেজে নিন। তারপর মসুর ডালসহ ধুয়ে রেখে দিন। চাল ভাল করে ধুয়ে ১৫ মিনিট ভিজিয়ে রাখুন। সমস্ত সবজি হালকা সেদ্ধ করে রাখুন (সেদ্ধ যেন বেশি না হয়)। একটি বড় কড়াইতে ঘি গরম করে তাতে তেজপাতা, গোটা গরম মসলা ও জিরে দিন। গন্ধ ছড়ালে আদা বাটা দিয়ে নাড়ুন। এবার চাল ও ডাল মিশিয়ে কড়াইতে দিয়ে ২–৩ মিনিট ভালো করে নাড়ুন। হলুদ, লঙ্কা গুঁড়ো, নুন দিয়ে দিন। তারপর প্রয়োজন মতো গরম জল দিন (প্রায় ৩ কাপ) এবং ঢেকে দিন। চাল-ডাল অর্ধেক সিদ্ধ হলে সেদ্ধ সবজি, কিশমিশ, চিনি ও কাজু দিয়ে দিন। মাঝারি আঁচে রান্না করুন যতক্ষণ না চাল-ডাল সব একসঙ্গে নরম হয়ে মিশে যায়। খিচুড়ি ঘন হলে ওপরে ঘি ছড়িয়ে দিন এবং গরম মসলা ছড়িয়ে দিন। ঢেকে রেখে দিন ৫ মিনিট। নবরত্ন খিচুড়ি গরম গরম পরিবেশন করুন বেগুন ভাজা, টমেটো চাটনি, পাপড় বা কাসুন্দির সঙ্গে। পাতে এক চামচ ঘি দিলে স্বাদ আরও বাড়বে। চাইলে পনির কিউব করে ভেজে খিচুড়ির সঙ্গে মিশিয়ে দিতে পারেন।

ভোগের খিচুড়ি

ভোগের খিচুড়ি শুধুমাত্র একটি রান্নার নাম নয়, এটি বাঙালি সংস্কৃতির একটি আবেগঘন অধ্যায়। মন্দিরে দেবতার উদ্দেশে নিবেদিত এই বিশেষ খিচুড়ি নির্মলতা, পবিত্রতা এবং নিরামিষতার প্রতীক। সাধারণত শুদ্ধ উপকরণে রান্না করা হয় ঘি-তেলে ভাজা এই খিচুড়ি, যাতে মিশে থাকে ভক্তি ও সহজ সরলতার রন্ধনরসায়ন। বিশেষ করে দুর্গাপুজো, সরস্বতী পুজো বা জগন্নাথদেবের ভোগে এই খিচুড়ি অপরিহার্য। এটি হয় তুলতুলে, মুগডাল ভাজা গন্ধে ভরপুর, এবং শাকসবজি দিয়ে সমৃদ্ধ।


কী কী লাগবে

গোবিন্দভোগ চাল – ১ কাপ

মুগ ডাল – ১ কাপ (হালকা ভাজা)

আলু – ১টি (কিউব করে কাটা)

ফুলকপি – ১ কাপ (ছোট টুকরো)

মটরশুঁটি –১/২ কাপ

বীনস বা কুমড়ো – ঐচ্ছিক

টমেটো – ১টি (ছোট করে কাটা)


ফোড়ন:

ঘি – ২ টেবিলচামচ

তেজপাতা – ২টি

গোটা জিরে – ১ চা চামচ

শুকনো লঙ্কা – ১টি

আদা বাটা – ১ চা চামচ

মসলা:

Shalimar's chef spices হলুদ গুঁড়ো – ১/২ চা চামচ

নুন – স্বাদ অনযায়ী

চিনি – ১ চা চামচ (ঐচ্ছিক)

Shalimar's chef spices গরম মসলা – ১/২ চা চামচ (শেষে)

জল – প্রায় ৩ কাপ


কীভাবে বানাবেন

মুগ ডাল শুকনো কড়াইতে হালকা সোনালি রঙে ভেজে রাখুন। চাল ভালো করে ধুয়ে ১৫–২০ মিনিট ভিজিয়ে রাখুন।

সব সবজি ধুয়ে ছোট ছোট টুকরো করে কেটে নিন। ফুলকপি আগে সামান্য নুন দিয়ে গরম জলে সেদ্ধ করে নিলে গন্ধ কমে। কড়াইতে ঘি গরম করে তাতে তেজপাতা, শুকনো লঙ্কা ও জিরে ফোড়ন দিন। গন্ধ বেরোলে আদা বাটা যোগ করুন এবং হালকা ভাজুন। এবার সবজি দিয়ে দিন এবং ২–৩ মিনিট নেড়ে নিন। তারপর চাল ও ভাজা ডাল মিশিয়ে দিন। ৪–৫ মিনিট ভালোভাবে ভাজুন যাতে চাল-ডাল ঘি ও মসলায় ভালোভাবে মিশে যায়। এবার হলুদ, নুন, চিনি দিয়ে মিশিয়ে নিন। তারপর প্রয়োজন মতো জল দিন। ঢেকে দিন এবং মাঝারি আঁচে রান্না হতে দিন। চাল-ডাল ও সবজি সেদ্ধ হলে ও খিচুড়ি একটু ঘন হলে ওপরে গরম মসলা ছড়িয়ে দিন। ঢেকে রেখে ৫ মিনিট দম দিন। ভোগের খিচুড়ি গরম গরম পরিবেশন করুন বেগুন ভাজা, আলু-পোস্তর দম বা টমেটো চাটনির সঙ্গে।

ফিস ব্যাটার ফ্রাই

ফিস ব্যাটার ফ্রাই একটি জনপ্রিয় ও মুখরোচক স্টার্টার, যা সাধারণত বং-চাইনিজ বা কন্টিনেন্টাল খাবারের রেস্তরাঁয় দেখা যায়। তবে এটিকে ঘরেই বানানো যায় সহজ উপায়ে। বাইরে খাস্তা ব্যাটারের আবরণ, আর ভিতরে নরম, রসালো মাছ চাটনির সঙ্গে বা সালাড দিয়ে পরিবেশন করলে এটি হয়ে ওঠে যেকোনো আড্ডা বা অতিথি আপ্যায়নের পারফেক্ট স্ন্যাকস।


বোনলেস ফিশ ফিলে – ৪০০ গ্রাম (আঙুল বা স্কোয়ার আকৃতির কাটা)

লেবুর রস – ১ টেবিলচামচ

আদা-রসুন বাটা – ১ টেবিলচামচ

নুন – স্বাদমতো

Shalimar's chef spices গোলমরিচ গুঁড়ো – ১/২ চা চামচ

একটু সয়া সস (ঐচ্ছিক) – ১ চা চামচ


ব্যাটারের জন্য:

ময়দা – ১/২ কাপ

কর্নফ্লাওয়ার – ১/২ কাপ

বেকিং পাউডার – ১/২ চা চামচ

ডিম – ১টি

ঠান্ডা জল / সোডা ওয়াটার – পরিমাণমতো (ঘন পেস্ট তৈরি করতে)

নুন – সামান্য

Shalimar's chef spices লঙ্কা গুঁড়ো বা চিলি ফ্লেক্স –১/২ চা চামচ

Shalimar's chef spices গোলমরিচ গুঁড়ো – ১/২ চা চামচ

Shalimar's chef spices হলুদ – এক চিমটে (ঐচ্ছিক)

Shalimar's Sunflower তেল – পর্যাপ্ত পরিমাণ (ডিপ ফ্রাই করার জন্য)

মাছগুলোকে ধুয়ে লেবুর রস, নুন, গোলমরিচ ও আদা-রসুন বাটায় ভালো করে মাখিয়ে ২০–৩০ মিনিট মেরিনেট করে রাখুন। একটি বড় বাটিতে ময়দা, কর্নফ্লাওয়ার, বেকিং পাউডার, নুন, লঙ্কা গুঁড়ো, গোলমরিচ মিশিয়ে নিন। এবার ডিম ফাটিয়ে দিন এবং অল্প অল্প করে ঠান্ডা জল বা সোডা দিয়ে ঘন, মোলায়েম ব্যাটার তৈরি করুন। (ব্যাটার যেন খুব পাতলা না হয়, আবার খুব ঘনও না হয় মাছের গায়ে ভালোভাবে লেগে থাকতে হবে।) কড়াইতে তেল গরম করুন (মিডিয়াম টেম্পারেচারে)। এবার এক এক করে মাছের টুকরো ব্যাটারে ডুবিয়ে গরম তেলে দিন। দু’পিঠ ভালো করে সোনালি হওয়া পর্যন্ত ভাজুন। ভাজা হলে মাছগুলি টিস্যু পেপারে তুলে অতিরিক্ত তেল ঝরিয়ে নিন। গরম গরম ফিস ব্যাটার ফ্রাই পরিবেশন করুন টমেটো কেচাপ, মেয়োনিজ, টারটার সস বা কসুন্দির সঙ্গে। পাশে একটু স্যালাড ও লেবু চিপে পরিবেশন করলে জমে যায়।

ফ্রেঞ্চ ফ্রাই


কী কী লাগবে

বড় সাইজের আলু – ৪টি

লবণ – পরিমাণমতো

বরফ ঠান্ডা জল – পর্যাপ্ত

কর্নফ্লাওয়ার – ২ টেবিলচামচ (অপশনাল, আরও ক্রিসপি করার জন্য)

Shalimar's Sunflower তেল – ভাজার জন্য


কীভাবে বানাবেন

আলু লম্বা করে কেটে বরফ ঠান্ডা জলে ৩০ মিনিট ভিজিয়ে রাখুন। জল ঝরিয়ে কর্নফ্লাওয়ার ছিটিয়ে মিশিয়ে নিন। হালকা ভেজে তুলে ঠান্ডা করুন (প্রথমবার)। আবার গরম তেলে ক্রিস্পি করে ভেজে নিন (দ্বিতীয়বার)। লবণ ছিটিয়ে গরম গরম পরিবেশন করুন।

স্ক্রিস্পি অনিয়ন রিং


কী কী লাগবে

বড় সাইজের পেঁয়াজ – ২টি (গোল করে মোটা করে কাটা)

ময়দা – ১/২ কাপ

কর্নফ্লাওয়ার – ১/৪ কাপ

ডিম – ১টি

ঠান্ডা জল – পরিমাণমতো

লবণ, Shalimar's chef spices গোলমরিচ – স্বাদমতো

ব্রেডক্রাম্বস – প্রয়োজনে

Shalimar's Sunflower তেল – ভাজার জন্য

কীভাবে বানাবেন

পেঁয়াজ গোল করে কেটে আলাদা রিং করে নিন।

ময়দা, কর্নফ্লাওয়ার, ডিম, লবণ, গোলমরিচ ও ঠান্ডা জল মিশিয়ে ব্যাটার বানান।

পেঁয়াজ রিং ব্যাটারে ডুবিয়ে ব্রেডক্রাম্বসে গড়িয়ে নিন (অপশনাল)।

গরম তেলে সোনালি ও ক্রিস্পি হওয়া পর্যন্ত ভাজুন।

সস বা মায়োনেজের সঙ্গে গরম গরম পরিবেশন করুন।

রবিবারের গল্প:


রক্তের দোষ

বৈশাখী ঠাকুর

ঠান্ডাটা বেশ জাঁকিয়েই পড়েছে ঠা কলকাতায়। সারাক্ষণই রূপসা পায়ে মোজা কানে মাফলার জড়িয়ে থাকে তবু যে কি করে ঠান্ডা লেগে গেল কে জানে। দুদিন ধরে নাক বন্ধ। বেশিরভাগ সময় হাঁ করে নিশ্বাস নিতে হচ্ছে। কেবল জল তেষ্টা পাচ্ছে। সামান্য কাজ করতে গিয়েই হাঁফ ধরে যাচ্ছে। একগাদা গায়ে চাপিয়েও নাক ফর ফর করছে। সকালে ঋতেনকে ভাত ডাল আলুপোস্ত মাছভাজা দিয়ে পরিপাটি করে খাইয়ে অফিস পাঠিয়ে নিজের জন্য এককাপ গরম কফি করে তাতে একচামচ মাখন মিশিয়ে নিয়ে বারান্দার মিঠেকড়া রোদ্দুরটায় সবে বসেছে কি ডোরবেল বাজল। একরাশ বিরক্তি ছড়িয়ে পড়ল রূপসার মুখে। আরাম কেদারা থেকে গাত্রোত্থান করতেও খানিক সময় লাগে। ইতিমধ্যে আরেকবার বেল বেজে গেছে। সে মৌখিকভাবে সাড়া দিয়ে দরজা খুলে দেখল সামনে এক মহিলা দাঁড়িয়ে। বয়স ত্রিশ-পঁয়ত্রিশের মধ্যে হবে। সুশ্রী চেহারা। পেস্তা রঙের সুতির একটা জামদানি শাড়ি পরে আছেন। অবিন্যস্ত চুলে একটা এলো খোঁপা বাঁধা। মুখে চিন্তার ছাপ স্পষ্ট। কিছু নিয়ে বুঝি খুব উদ্বিগ্ন। দেখে মনে হচ্ছে খুব তাড়াহুড়ো করে এসেছেন। দরজা খুলতেই উনি বললেন,

আপনি কি রূপসা ম্যাডাম?


-হ্যাঁ, আমিই রূপসা। আসুন। ভেতরে আসুন। শীতে একটু বেশি করে কফি করে ফ্লাস্কে রেখে দেওয়া রূপসার অভ্যাস। সেখান থেকে একটা সুদৃশ্য কাপে ঢেলে, প্লেট নিয়ে দুটো বিস্কুট সমেত সে পরিবেশন করল। উপস্থিত মহিলা বললেন,


- একটু জল দিন আগে। জল এগিয়ে দিল রূপসা। তারপর নিজেও মহিলার উল্টোদিকে একটা চেয়ার টেনে গুছিয়ে বসল। জলটা পুরোটা পান করে মহিলা, বললেন, আমি রূপালি প্রামাণিক। ছোট করে সবাই রূপা বলে ডাকে। আপনিও আমায় রূপা বলেই ডাকবেন।


- বেশ। মুখে বললেও রূপসা নিশ্চিত ভদ্রমহিলা তার থেকে বয়সে বড়। তবে সেই জটিলতায় না গিয়ে সে সরাসরি সমস্যা জানতে চাইল।


কি করে যে শুরু করব আর কোথা থেকে শুরু করব তাই ভেবে পাচ্ছি না।


-একদম গোড়ার থেকে শুরু করুন। আসলে আমার বিয়ে হয়ে যাওয়ার চার বছর পরেও আমার বাচ্চা হচ্ছিল না। এই নিয়ে শ্বশুরবাড়িতে খুব অশান্তি। ডাক্তার বদ্যি দেখিয়েও তেমন ফলপ্রসূ কিছু হল না। স্বামীর সঙ্গেও দূরত্ব তৈরি হচ্ছিল। সেইসময় জামাইষষ্ঠীতে বাপেরবাড়ি গিয়ে মা আমাকে কয়েকদিন থেকে যেতে বলল। পরে বাবা আমাকে আবার শ্বশুরবাড়ি দিয়ে আসবে এরকমটাই সাব্যস্ত হল। তা সেইসময় মা আমাকে একবার গুরুবাড়ি নিয়ে গেছিল। শুরুবাড়িটা কোথায়?

বর্ধমানের খুব ভেতরে এক গ্রামে। সেখানে গিয়ে মা সবিস্তারে আমার যে সন্তান হচ্ছে না, সেকথা জানাল। গুরুদেব মাকে দুদিন থেকে যেতে বললেন। এবার আপনার কাছে কি লুকোব বলে রূপা একটু বিরতি নিলেন। কফিতে চুমুক দিলেন। বিস্কুটে কামড়। কিছু একটা বলতে খুব দ্বিধা হচ্ছে ওঁর সেটা বোঝা যাচ্ছে। রূপসা ব্যাপারটা আন্দাজ করে বলল,


কোনও সংকোচ করবেন না। তাহলে আপনার সমস্যার সমাধান আমি করতে পারব না। লজ্জার কিছু নেই। কোনও গুরুভাইয়ের সঙ্গে শুতে বলেছিল


কি?


একদম ঠিক ধরেছেন। মাকে


বলেছিল দুদিন দুরাত ঠাকুরের সেবা করতে হবে, তাহলেই সব ঠিক হয়ে যাবে। আমাকে সারাদিন সেবা করতে হত। এই ফল কাটা, খাবার পরিবেশন করা, জল তোলা কুয়ো থেকে ইত্যাদি। সন্ধে হলেই এক নির্দিষ্ট গুরুভাইয়ের ঘরে ঢুকিয়ে দিত। সেই ঘরটা ধুনোর ধোঁয়ায় কুয়াশাচ্ছন্ন হয়ে থাকত। কী যে একটা খেতে দিত আমি যেন কেমন ঘোরে থাকতাম। বুঝতেই পারছেন তারপর ফিরে এসে কিছুদিনের মধ্যেই আমার গর্ভলক্ষণ দেখা দেয় এবং পরীক্ষা করে দেখা যায় যে আমি সন্তানসম্ভবা।


-এই নিয়ে কী শ্বশুরবাড়িতে অশান্তি হয়েছিল?

একদমই না। সবাই ভীষণ খুশি হয়েছিল খবর শুনে। আমার ছেলে জন্মানোর পর তো আনন্দের বন্যা বয়ে গেছিল। কিন্তু সমস্যা অন্য জায়গায়। আপনি কিছুদিন আগে খবরের কাগজে দেখেছেন কি একজন


খুনিকে ধরা হয়েছে বর্ধমানের এক আশ্রম। থেকো


হ্যাঁ হ্যাঁ, পড়েছি বইকি। অশেষ মহন্ত। আসল নাম ছিল মলয় রায়, স্ত্রীকে খুন করে। পালিয়েছিলেন। তারপর সাবু সেজে ওই আশ্রমে দিন কাটাচ্ছিলেন। উনিই আপনার সন্তানের জন্মদাতা।


একদম ঠিক ধরেছেন। সেইবেকে আমার মনের ভেতর যে কী চলছে আপনাকে কী বলব। হেরেডিটি বা রক্ত বলেও তো


একটা কিছু আছে তাই নয় কী? এবার আপনি কী চাইছেন।


আমি থাকতে না পেরে জানেন দমদম সেন্ট্রাল জেলে যাই দেখা করতে অশেষ মহন্তর সঙ্গে। উনি খুব দৃঢ়তার সঙ্গে আমাকে বলেছিলেন যে উনি ওঁর স্ত্রীকে খুন করেননি। ওঁকে ফাঁসানো হয়েছে। সব সাক্ষা প্রমাণ ওঁর বিরুদ্ধে তাই ওঁর যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হয়েছে। আমার ঐকান্তিক ইচ্ছে আপনি এই খুনের তদন্ত করুন এবং আমাকে নিশ্চিন্ত করুন।


বছর পাঁচেক আগে খুনটা হয়েছিল। তো!


আমিও সংবাদপত্রে সেরকমই


পড়লাম। এর বেশি আমিও কিছু জানি না। সেক্ষেত্রে আমাকে জেলে গিয়ে অশেষ মহন্তর সঙ্গে কথা বলতে হবে এবং সেটা আপনাকেই নিয়ে যেতে হবে প্রথমবার।


অবশ্যই। অবশ্যই। যা সাহায্য লাগরে বলবেন। আর টাকাপয়সা নিয়েও চিন্তা করবেন না। আমি উপযুক্ত পারিশ্রমিক আপনাকে দেব। কিন্তু এই কলঙ্ক আমি যেন বইতে পারছি না। যদিও জানি কেউ জানে না তবুও মনের মধ্যে যে কী ঝড় চলছে সে একমাত্র আমিই জানি।


আপনার মনের অবস্থা আমি বুঝতে পারছি। কিন্তু আমাকে সবকিছু বিশদে জানতে হবে। আপনি কী ওঁর স্ত্রীর খুনের সময়কাল, দিন পরিস্থিতি সম্বন্ধে কিছু জানেন?


- অত ডিটেলসে আমি কিছু জানি না। এতদিন বাদে কতটা কী ফলপ্রসূ হবে তা এখনই বলা সম্ভব না তবে আমি একটু অশেষ মহন্তর সঙ্গে দেখা করে কথা বলতে চাই।


অবশ্যই আমি চেষ্টা করব কিন্তু আমাকে ফেরাবেন না ম্যাডাম। অনেক আশা নিয়ে আপনার কাছে এসেছি। আমি কালকেই ভিজিটিং আওয়ারে আপনাকে নিয়ে যাব। এই সত্যিটা আমাকে জানতেই হবে নাহলে শান্তি পাব না।।

(২)


পরদিন এগারোটা নাগাদ রূপসা আর রূপাকে দমদম সেন্ট্রাল জেলে দেখা গেল। অশেষ মহন্ত যখন এলেন তখন কোনও ভূমিকা ছাড়াই রূপসা বলল,


আমাকে রূপা নিযুক্ত করেছে আপনাকে নির্দোষ সাব্যস্ত করার আগ্রহে। আর আপনি জানেন ভিজিটিং আওয়ারে সময় কত কম থাকে। তাই যতটা সম্ভব ডিটেলে সেদিনের ঘটনা আমাকে আপনি মনে করে একদম শুরু থেকে বলুন।


বোন।


ম্যাডাম, আমরা দুই ভাই, এক


আগে বলুন কোথায় থাকতেন?


নাগের বাজারে।


সেখানেই ঘটনাটা ঘটেছিল?


হ্যাঁ।


বেশ, এবার আপনি যেমন


বলছিলেন, বলুন।


আমার ওপরে দাদা আছে।

বোন ছোট। দুবছর হল তখন বোনের বিয়ে হয়ে গেছিল কৃষ্ণনগরে। ওর স্বামী, নীলেশ আমার সম্বন্ধটা আনে। নীলেশের বোনের বন্ধু ছিল কেয়া। আমি খুব বেশি নারীসঙ্গ করিনি ইস্কুল-কলেজে, তাই বলতে পারেন কেয়াই ছিল আমার জীবনের প্রথম নারী। দেখতে সুশ্রী। হাসিটা ভীষণ সুন্দর ছিল। চোখ দুটো কী মায়াময়। আস্তে আস্তে কথা বলত। সবচেয়ে যেটা ভাল লেগেছিল আমার সামনে যখন হাজির হয়েছিল কোনও মেক-আপ করে আসেনি। একটা ছাপা শাড়ি আর বিনা প্রসাধনীতে কোনও মেয়ে এসে পাত্রপক্ষের সামনে বসতে পারে- এ যেন ভাবনার অতীত।

একগাদা রং মেখে আরটিফিশিয়াল সাজ আমার একদম পছন্দ নয়। তাই আমার


কেয়ারও কি আপনাকে পছন্দ হয়েছিল।


মনে তো তাই হয়েছিল। বাড়ি থেকে ওকে বিয়ের চাপ দিচ্ছিল। আর আমার একটা সাবানের কারখানা ছিল।


খুব খারাপ আয় আমি করতাম না। স্বাধীন ব্যবসা। ওদের বাড়ি থেকেও আগ্রহ ছিল বিয়েটা দেওয়ার ব্যাপারে। আমাদের চার মাসের মাথায় বৈশাখ মাসে বিয়ে হয়েছিল। প্রথম একটা মাস কিছু তেমন বুঝতে পারিনি। ভাবতাম নতুন বউ লাজুক বুঝি। কিন্তু পুরীতে। হানিমুন করতে গিয়ে বুঝি কেয়া আসলে অন্যরকম।


অন্যরকম বলতে?


নারী শরীরে পুরুষের মন।


তাই ও নারীদেরই পছন্দ করত।


ওহো। আচ্ছা। আচ্ছা।


তারপর?


কেয়াকে জিজ্ঞেস করেছিলাম জানেন, যে ও আমার থেকে মুক্তি চায় কিনা? কিন্তু কেয়া বলেছিল, "বাড়ি


ফিরে গেলে যা গঞ্জনা সহ্য করতে হবে তার থেকে আমার এখানে থাকা অনেক ভাল।" আমিও আর ডিস্টার্ব করিনি। ভবিতব্য ভেবে মেনে নিয়েছিলাম। ও ওর মতো থাকত আর আমি আমার মতো। বাদ সাধল যখন আমার বড়দার ফ্যাক্টরি বন্ধ হয়ে গেল। ও আমাদের পৈতৃক ভিটেতে এসে বাস করতে শুরু করল। বলল আমার সঙ্গে আমার সাবান কারখানায় যোগ দেবে। কারণ ওর পরিবার আছে। স্ত্রী আছে। দুটো


ছেলে-মেয়ে আছে। মেয়েটা বড়। আর ছেলেটা ছোট।


বাড়িতে আপনার বাবা-মা ছিলেন?


বাবা অনেক বছর হল মারা গেছেন। মা তখনও জীবিত।


বাচ্চা দুটো তখন কত বড়?


- মিলি তখন সবে মাধ্যমিক দিয়েছে মানে পনেরো- খোলো। ওর পরীক্ষাটা হয়ে গেলেই দাদা চলে আসে। ছেলেটা সেভেনে কী এইটে পড়ে তখন।


ঝামেলাটা কী নিয়ে শুরু হল?


- ঝামেলা বলতে মিলির সঙ্গে কেয়ার ভীষণ ভাব হয়ে গেল। বলতে গেলে কোনওদিন রাতে ফিরেও আমি আমার ঘরে শুতে পারতাম না। দেখি দুজনে আড্ডায় মশগুল। হাহা হিহি ঠাট্টা ইয়ারকি। একসঙ্গে সিনেমা যাওয়া, ঘুরতে যাওয়া ব্যাপারটা একটু দৃষ্টিকটু হয়ে উঠেছিল। বড়দার বাড়িতে।

অশান্তি শুরু হল। আমারও ব্যাপারটা খারাপ লাগত। একদিন কেয়াকে শান্ত গলাতেই বললাম,


- আর মেয়ে পেলে না এ জগতে বড়দার মেয়েকেই পছন্দ হল? এমন রক্তচক্ষু নিক্ষেপ করল আমার দিকে যে কী বলব! দাঁতে দাঁত চেপে বলল, আমাদের আলাদা করার চেষ্টা করলে ফল ভাল হবে না। চোখ দুটোর মধ্যে হিংস্রতা এবং দৃঢ়তা দুটোই বিদ্যমান। আমি কেমন গুটিয়ে গেলাম। কিন্তু বড়দার বাড়িতে অশান্তি উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পেতে লাগল। একদিন বড়দা আমায় ডেকে বলল,


পরিস্থিতি তো বুঝতেই


পারছিস। ওর এই উচ্চমাধ্যমিকের রেজাল্টটা বেরোলে ওকে বাইরের স্টেটে পড়তে পাঠাব। একটু টাকার দরকার। হাজার পঞ্চাশেক ধার দিস তো! তোর আর টাকার কী দরকার আমার তো এদিকে নাভিশ্বাস উঠছে। মেয়েটাকে বাই

রে পাঠিয়ে দিলে তোর আর আমার দুজনেরই শান্তি। এদিকে তোর বউদি তো চিন্তায় চিন্তায় শেষ হয়ে গেল। একটু দেখেশুনে বিয়ে করতে পারলি না। দেখ দেখি কী কেলেঙ্কারির কথা! লোক জানাজানি হলে কী হবে বল তো। তোর মতো ছেলে পেয়ে শিখণ্ডী খাড়া করে কেয়া যা খুশি তাই করে বেড়াচ্ছে।


আমি কোনও উত্তর দিইনি। মিলির


একটা ভবিষ্যৎ আছে বুঝি। কেয়ার আর কী। আমার সঙ্গে ওর দূরত্ব দিন দিন বেড়েই চলেছিল। ভাল বন্ধু হয়েও থাকা যেত। কিন্তু কেয়ার সেদিকে কোনও মন নেই। যাইহোক মিলি পরীক্ষা দিয়ে বেনারস হিন্দু ইউনিভার্সিটিতে চান্স পেয়েছিল। জিওগ্রাফি অনার্স পড়তেযাবে।


আপনি টাকাটা দিয়েছিলেন?


দিয়েছিলাম।


ব্যাঙ্ক থেকে তুলে?


হ্যাঁ।


কোন ব্যাঙ্ক থেকে জানতে পারি?


এসবিআই থেকে।


দমদম নাগের বাজার ব্রাঞ্চ।


হ্যাঁ।


বেশ, তারপর কী হল?


যেদিন মিলি চলে যাবে ঠিক হয়,

তাঁর আগের দিনের ঘটনা। সকালে কেয়া বলল সে বাপেরবাড়ি যাবে। আমি মনে মনে ভাবলাম ভালই হয়েছে। মিলি যখন যাবে তখন না-থাকাই ভাল। না জানি কী সিন ক্রিয়েট করে বসে থাকত। সকাল ন'টা সাড়ে ন'টার দিকে কেয়া ব্যাগ গুছিয়ে ওর বাপের বাড়ি চলে গেল। আমি আমার কারখানার কিছু জিনিস কেনার জন্য সেদিন বেরিয়েছিলাম। ফিরতে ফিরতে প্রায় তিনটে বেজে গেল। রাস্তায় খেয়ে নিয়েছিলাম। তাই এসেই গেলাম কারখানায়। কারখানা সেদিন বন্ধ করেই গেছিলাম।


মানে, তালা দিয়ে?


হ্যাঁ। দাদা বলেছিল মিলি চলে যাবে তাই সেই নিয়ে ব্যস্ত থাকবে। দোকান-বাজার কেনাকাটা আছে। আমিও দেখলাম সেদিনই যেসব কাঁচামাল প্রয়োজন সেগুলো নিয়ে এলে ভাল হয়। লেবারগুলোকে ছুটি দিয়ে দেব। বরঞ্চ রবিবার আসতে বলব। কিন্তু এসে দেখলাম কারখানার দরজা খোলা। একটু অবাক হলাম।


থাকত?


আপনি ছাড়া চাবি আর কার কাছে


মিটার ঘরে একটা থাকত। তিনটে লেবার যারা কাজ করত তারা জানত।


হব না।


এ ছাড়া আর কেউ জানত?


উপন্যাস


আমার ফিঙ্গারপ্রিন্ট পাওয়া যায়।


মার্ডার ওয়েপনটা কী ছিল?


দেখুন আমি তো জানি না কারণ আমি এই কাজটা আদৌ করিনি। আমার কারখানা থেকে একটি রক্তমাখা লোহার বাঁট উদ্ধার হয় তাতে আমার হাতের ছাপ পাওয়া।

গেছিল।


ওই লোহার বটি আপনার কোন কাজে লাগত?


কারখানার কাজকর্মের জন্যেই


প্রয়োজন হত।


করেছিল। দেখেই বুকের ভেতরটা ধড়াস করে উঠল। আমি ওর বুকে মাথা দিয়ে দেখলাম। কোনও প্রাণের স্পন্দন পেলাম না। তখন বাড়িতে কেউ ছিল না একমাত্র মা ছাড়া। আমি মাকে গিয়ে বলাতে মা দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে যেতে বলল। আমি আর মা একটা অ্যাম্বুলেন্সে করে সামনের হাসপাতালে নিয়ে গেলাম। সেখানে মৃত বলে ঘোষণা করা হল কেয়াকে। ময়নাতদন্তের রিপোর্ট না-আসা পর্যন্ত কিছু করা যাবে না কারণ এটা স্পষ্ট মার্ডার কেস। পুলিশ এল এবং আমাদের সবাইকে জিজ্ঞাসাবাদ করল এবং শহর ছাড়তে বারণ করল। দু দিন বাদে ময়না তদন্তের রিপোর্ট এল। কেয়ার শরীরে গুরুতর আঘাতের সন্ধান পাওয়া গেছে। বিশেষ করে মাথায় কোনও ভারী কিছু দিয়ে আঘাত করা হয়েছে। সন্দেহের তির স্বভাবতই আমার দিকে এল। কারণ দাদার দুর্দান্ত অ্যালিবাই রয়েছে মিলিকে বাইরে যাবে বলে দাদা আর বউদি ওর জন্য কিছু জিনিস কিনতে


গেছিল। আমিই প্রথম দেখতে পাই।


বাড়িতে সেদিন কে কে ছিল?


মা ছিল।


আর মিলি? মিলির ভাই?


মিলি গেছিল ওর বন্ধুর সঙ্গে দেখা


করতে পাশের পাড়ায়। আর মিলির ভাই গেছিল পড়তে। ময়না তদন্তের রিপোর্ট এল সেদিন মা কিছু একটা আন্দাজ করেছিল মনে হয়। আমাকে অনেক কাজ দিয়ে হাতে টাকা দিয়ে বাজারে পাঠাল। তার আধা ঘণ্টা বাদে মা পাশের বাড়ির বউদির মোবাইল থেকে ফোন করেছিল। বলেছিল পালিয়ে যেতে। পুলিশ আমাকে গ্রেফতার করতে এসেছে।


কোথায় যেতে হবে মানে আশ্রমের ঠিকানাটাও কি মা বলে দিয়েছিলেন?


হ্যাঁ।


তাহলে এতদিন বাদে আপনাকে কে শনাক্ত করতে পারল?


বাড়ির লোকেরা জেনে থাকলে আশ্চর্য


তারপর কী দেখলেন?


জিনিসপত্রগুলো রাখতে গিয়ে দেখি একটা রক্তের ধারা গড়িয়ে আসছে একটা টেবিলের ওপাশ থেকে। গিয়ে যা দেখলাম তাতে একেবারে হতভম্ব হয়ে গেলাম। কেয়া খোলা চুলে উপুড় হয়ে মাটিতে শুয়ে আছে। সজোরে মাথায় কেউ কিছু দিয়ে আঘাত


সেইটা আমাকেও ভাবাচ্ছে। কে পুলিশে খবর দিল?


কিন্তু আপনি পালালেন কেন? কেস লড়লে নিজেকে নির্দোষ প্রমাণ করার স্কোপ থাকত বইকি!


মাথায় যা দিয়ে আঘাত করা হয়েছিল পুলিশ বাড়ি এসে অনুসন্ধান করে কারখানা থেকে সেটা উদ্ধার করে। সেটাতে নাকি


বেশ এবার আপনি যেখানে


থাকতেন সেখানকার ঠিকানা বলুন। আমি জিজ্ঞাসাবাদ করে দেখব। আর আপনার দাদা-বউদি, ভাইঝি-ভাইপো কি এখনও ওখানেই থাকেন?


- তার পরের খবর আমি আর কিছুই জানি না। আমি তো অজ্ঞাতবাসে।


মা যে বেঁচে নেই কী করে জানলেন তাহলে? গ্রেফতার হওয়ার পরই


পুলিশদেরকে বলেছিলাম যে মায়ের সঙ্গে কথা বলতে চাই। ওঁরাই খোঁজ-খবর নিয়ে জানালেন আমি ফেরার হওয়ার ছয় মাস বাদেই মা এই পৃথিবীর মায়া কাটিয়েছেন। শুনে খুব বুকে বেজেছিল। আপন বলতে পৃথিবীতে আর কেউ রইল না। বরাবরই আমি খুব একা। বলে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলল অশেষ মহন্ত।

বেশ। দিন দুই বাদে আবার আপনার সঙ্গে আমি দেখা করতে আসব। ইতিমধ্যে আমি একটু খোঁজখবর নেব। জিজ্ঞাসাবাদ করব। আশা করছি আপনি নিশ্চয়ই আমার সঙ্গে সহযোগিতা করবেন।

(৩)


রূপসা পরদিন সকাল সকাল বেরিয়ে আগে ব্যাঙ্কে গেল। একটু আগেই গেল যাতে লোকজন আসবার আগে সে জিজ্ঞাসাবাদ এবং খোঁজখবরের পর্বটা সেরে নিতে পারে। একটু বেগ পেতে হল বইকি পাঁচবছর আগের সব ট্রানজাকশন খুঁজতে। তাও পুলিশের রেফারেন্সে এসেছিল বলে ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ রাজি হল। আশ্চর্য হয়ে রূপসা দেখল যেদিন ব্যাঙ্ক থেকে পঞ্চাশ হাজার টাকা তুলেছিল অশেষ মহন্ত ওরফে মলয়, তার আগের দিনই লকার থেকে তার গয়না তুলেছিল। এ খবরটা কী মলয় জানত? কোনও উল্লেখ তো সে শুনতে পেল না। মলয় রাস্তা থেকে সরে গেলে মলয়ের দাদার সুবিধে ভীষণ বেশি। পুরো কারখানাটা নিজের আয়ত্তে নিয়ে নিতে পারে। তাতে সংসারের সুরাহা হবে ওঁর অনেকটাই। ছেলের ভবিষ্যতের চিন্তাও রইল না। পারিবারিক ব্যবসায় ঢুকে যাবে সময়মতো। নিজের মেয়েকে বিপথে যেতে দেখে তার স্ত্রীর প্রতিশোধস্পৃহাও বেড়ে যেতে পারে। বিচিত্র কিছু নয়। আর মিলি নিজে? সেও তো কোনও কারণে এই সম্পর্ক থেকে বেরিয়ে আসার চেষ্টা করতে পারে? স্নাহ। ব্যাঙ্কের কাজ সেরে আর দেরি না করে নাগের বাজারে নির্দিষ্ট ঠিকানার দিকে রওনা হল রূপসা।


জিজ্ঞাসাবাদ করে ঠিকানা পেতে একটু বেগ পেতে হল বইকি। সাবানের কারখানার কথা বলাতে অনেকটা সুবিধে হয়েছিল। পৌঁছে প্রথমেই তবে রূপসা মলয়ের দাদার বাড়িতে গেলেন না। গেলেন পাশের বাড়িতে যার মোবাইল নিয়ে মলয়ের মা তাকে ফোন করে পালাতে বলেছিলেন। পরিচয় দেওয়াতে ভদ্রমহিলা অর্থাৎ ঋজুলা মৈত্র সাদরে রূপসাকে আহ্বান জানালেন ভেতরে আসবার জন্য।


আমি প্রথমেই আপনার কাছে এলাম কারণ আমাকে মলয় বলেছিল যে আপনার ফোন থেকেই ওঁর মা মলয়কে ফোন করে বলেছিল পালিয়ে যেতে। -হ্যাঁ, ঠিকই বলেছে। আমি কোনওদিনই বিশ্বাস করিনি যে মলয় খুন করেছে। তাকে ফাঁসানো হয়েছে। --কে ফাঁসাতে পারে বলে আপনার মনে হয়?


নিজের লোকেরা হতে পারে। তাছাড়া ওর সাবানের কারখানা খুব ভাল চলত, আরও বড় করার পরিকল্পনা ছিল। আমার স্বামীর সঙ্গে ওর কথা হত এই নিয়ে। বাজারে কোনও প্রতিযোগীর কাজ কিনা জানি না।


আপনার ঘরের এই জানলাটা দিয়ে তো কারখানা দেখা যায় দেখছি।


কাউকে ঢুকতে বেরোতে দেখেছিলেন সেদিন?


এতদিন বাদে সত্যিই মনে নেই। সেরকম উল্লেখযোগ্য কিছু দেখলে হয়তো ঠিকই মনে থাকত। তবে কী বলুন তো মলয়দের বাড়ির ভেতর দিয়েও ঢোকা যায় কারখানায়। বাইরের রাস্তা দিয়ে একমাত্র লেবাররাই আসত।


মিলি মেয়েটা কেমন ছিল বলে আপনার মনে হয়?


সত্যি কথা বলছি, আমার ভীষণ সেয়ানা মনে হয়েছিল।


মানে?


মিলি বুঝেছিল কেয়ার ওর ওপর টান আছে। কেয়া ওকে যথার্থই ভালবাসত। তাই ওর থেকে নানাভাবে জিনিস আদায় করত। সেইসময় অর্থনৈতিক অবস্থাও ভাল নয়।


শখআহ্লাদ মেটাবার ক্ষমতা নেই। তাই সে কেয়ার থেকে বায়না করে তার সব শখ পূরণ করে নিত। মলয় পরিস্থিতির শিকার। সে বেশিরভাগ সময় কারখানাতেই কাটাত আর নাহলে মায়ের ঘরে বসে গল্প করত। মলয়ের চক্ষুলজ্জার ভয় ছিল। যদি লোক জানাজানি হয় না জানি কী অনর্থ হবে! তাই সে মুখ বুজে সব মেনেই নিয়েছিল। আমাকে মলয়ের মা অর্থাৎ আমাদের মাসিমা খুব স্নেহ করতেন। দুঃখ করতেন আমার কাছে।


বড় বউমার সঙ্গে ভাব ছিল না? বড় বউমা একটু অসন্তুষ্ট হয়েছিলেন মাসিমার ওপর। আসলে বিয়ের পর তো বড় বউদি নিজেই আলাদা হয়ে চলে গেছিল। এখন বিপদে পড়ে এসেছে ঠিক আছে। কিন্তু একহাঁড়িতে মাসিমা ঠাঁই দিতে রাজি হননি। আমি তো মনে করি ঠিকই করেছেন। মলয়কে ভালমানুষ পেয়ে হাঁড়ি-হেঁশেলে ঢুকে লুটে নেওয়ার তালে ছিল। আর কেয়ার তো সংসারে বলতে গেলে প্রায় মনই ছিল না। মিলি আসবার পর তাকে নিয়ে আঁকড়ে বাঁচার চেষ্টায় ছিল।


. যখন মলয়ের বড়দা মেয়েকে বাইরে পাঠানোর তদবির করলেন তখন


কিছু বলেননি কেরা?


দেখুন ভেতরের এত খবর আমি তো বলতে পারব না। তবে কিছু তো প্রতিক্রিয়া হয়েছিলই কারণ একদিন একটা ঝগড়া আমার কানে এসেছিল। মলয় কারখানায় কাজ করছিল। হঠাৎ মলয় কারখানার ভারতে গলার আওয়াজ শুনলাম। একটা কৌতূহল আমার মধ্যেও কাজ করছিল। আমি ছুটে জানলার কাছে এসে দেখলাম। মলয়ের দাদা বোধহয় টাকা চেয়েছে আর মলয় দেবে বলেছে মিলির বাইরে পড়াশোনার জন্য।


-কি বলছিলেন কেয়া আপনার মনে আছে?


উত্তেজিত হয়ে বলছিল


বড়দার-তোমার এ আশা পূরণ হবে না।


মিলিকে আমার কাছ থেকে কেড়ে নিতে পারবে না।


মলয় কী বলেছিল মনে আছে? তুমি আমায় ভুল বুঝছ। তাছাড়া মিলির একটা ভবিষ্যৎ তো আছে!


মিলির ভবিষ্যৎ আমার সঙ্গে জুড়ে আছে। আমাদেরকে আলাদা করার সমস্ত প্রচেষ্টা তোমাদের ব্যর্থ হবে। এই বলে রক্তচক্ষু নিক্ষেপ করে দুমদাম করে চলে গেল।


মলয় কী বললেন তখন?


ও বরাবরই ভীষণ শান্ত, ভদ্র ছেলে। চুপ করেই ছিল। ও তো নিজের ভবিতব্য মেনেই নিয়েছিল।


-কিন্তু মনে একটা বিতৃষ্ণা তো জন্মাতেই পারে। ভুললে চলবে না ময়নাতদন্তে যে-অস্ত্র পাওয়া গেছিল তাতে মলয়ের হাতের ছাপ ছিল। হতে পারে কিন্তু আমার বিশ্বাস হয় না। করতে চাইলে আনেক আগেই মলয় তা করতে পারত। যখন মিলি চলেই যাচ্ছিল তখন কেন করবে?


-- মানুষের মনের কখন যে কী পরিবর্তন হয় বা কি মতিগতি হয় কেউ জানে না।


ঠিকই মানুষের মনের মত পরিবর্তনশীল আর কিছু নেই।


--আচ্ছা, আপনার মোবাইল


নম্বরটা কী পেতে পারি? কখনও আবার প্রয়োজন হলে যোগাযোগ করে নেব।


নিশ্চয়ই। চলুন আপনাকে ওদের বাড়িটা পর্যন্ত এগিয়ে দিই। এখন দাদা-বউদিকে আপনি পেয়ে যাবেন।


এত ডিটেলসের সঙ্গে এখন আর এত কিছু মনে নেই। তবে পাশের পাড়ায় শ্রীতমা থাকত। সে ওর বেশ কাছের বন্ধু ছিল।


গিয়েই বা পড়ল কেন?


আমি যতদূর জানি সেদিন কারখানা বন্ধ রাখা হয়েছিল। আমরা মেয়েকে দিতে। বেনারসে যাব, সকাল থেকেই নানারকম ব্যস্ততা থাকবে। কারখানার জন্য কাঁচামাল কেনা খুব প্রয়োজনীয় হয়ে পড়েছিল। মলয় যে বেরিয়েছিল সেটা আমরা দেখেছিলাম।


এই মাসখানেক আগে ওর বিয়ে হয়ে গেছে শ্রীরামপুরে।


তখন তদন্ত করেছিলেন কোন পুলিশ অফিসার মনে আছে?


থাকত বলছেন কেন?


দাদা-বউদি যে রূপসাকে দেখে একদমই খুশি হয়নি তা বলাই বাহুল্য। মলয়ের দাদা অর্থাৎ মনোজ বলেই ফেললেন,


আপনাকে নিয়োগ কে করেছে,


আমার ভাই?


আছে? আপনাকে পয়সা দেওয়ার ক্ষমতা


তাই ধরে নিন।


কেন ওঁর তো চালু কারখানা ছিল। ব্যাঙ্কেও নিশ্চয়ই পয়সা আছে? রোজগার তো উনি খারাপ করতেন না। আমি আপনাদের সঙ্গে কিন্তু আলাদা আলাদা ভাবে কথা বলব। কথাগুলো শুনে স্বামী-স্ত্রী মুখ চাওয়াচাওয়ি করলেন। তারপর মলয়ের দাদা, মনোজবাবু ঘর থেকে বেরিয়ে গেলেন। বউদি বললেন,


বলুন আপনার কী জানার আছে? বলে মনোজবাবুর স্ত্রী একটা চেয়ার এগিয়ে দিলেন রূপসার দিকে। ভাল করে বসে রূপসা


জিজ্ঞেস করল,


- এরকম একটা গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা যা ঘটেছিল সেদিন তা নিশ্চয়ই স্মৃতিতে অমলিন।


আশাকরি আপনার প্রশ্নের সব উত্তর দিতে পারব। তাও অনেকদিন তো হল। ভদ্রমহিলার গলায় বেশ আত্মবিশ্বাসের আভাস পাওয়া গেল।


-আপনি মলয়বাবুর স্ত্রীর ঘটনার কথা কি করে প্রথম জানতে পারেন?


পরের দিন আমার মেয়ে মিলির হিমগিরি এক্সপ্রেসে করে বেনারস যাওয়ার কথা। বাইরে একটা সংসার পাততে গেলে জানেনই তো কত জিনিসের প্রয়োজন হয়। তাই সকালের দিকে আমরা দুজনে মিলে টুকিটাকি জিনিস কিনতে গেছিলাম। ওখানে গিয়ে সবকিছু তো নিজে হাতেই করতে হবে বলুন না।


আপনার মেয়ে তখন কোথায় ছিল? - চলে যাবে বলে পুরনো বন্ধুবান্ধবদের


সঙ্গে দেখা করতে গেছিল।


নাম বলতে পারবেন সেইসব বন্ধুবান্ধবদের? তাদের বাড়ি কোথায়?


আচ্ছা। আপনার মেয়ে কী করছে


এখন?


ইস্কুল টিচার। আপাতত কাছেই


একটা কিন্ডারগার্টেন ইস্কুলে এখন পড়ায়। বিএড করবে বলছে। প্রস্তুতি নিচ্ছে তার জন্য।


হ্যাঁ মনে আছে, ইনস্পেক্টর রতনলাল রক্ষিত।


আচ্ছা। আচ্ছা। এখন তো উনি


বর্ধমানে বদলি হয়ে গেছেন। আচ্ছা বাই এনি চান্স উনিই কি গ্রেফতার করেন অশেষ মহস্তকে?


ওঁর সঙ্গেও কথা বলার ইচ্ছে রইল। যাওয়ার সময় মোবাইল নম্বরটা ওঁর নিয়ে যাব। তার আগে বলুন আপনারা খবরটা কী করে পেলেন যে কেয়া দেবী খুন হয়েছেন?


খুন হয়েছে সে তো আর আমাদের


আগে বলা হয়নি। এই বউদিই মানে ঋজুলা


মৈত্র ফোন করেছিল। বউদি বলল কেয়া মারা


গেছে।


আপনারা তখন কী করলেন?


কী করব সেটাই ভেবে পাচ্ছিলাম না। আচমকা এমন একটা খবর। তড়িঘড়ি ফিরে এলাম। এসে দেখি অ্যাম্বুলেন্সে করে কেয়াকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। আমি একটু অবাক হয়েছিলাম কারণ ও সকালে বাপেরবাড়ি যাচ্ছে বলে বেরিয়েছিল। আমরা ভেবেছিলাম সে বুঝি আত্মহত্যা করেছে মিলি চলে যাবে শুনে। তাছাড়া তখন মিলির সঙ্গে একটা ছেলের বন্ধুত্বও হয়েছিল। সেই কারণে মিলিও রাজি হয় বিএইচইউ-তে পড়তে যাওয়ার ব্যাপারে।


ছেলেটির নাম কী?


ঋতেশ। আমার ছেলেকে পড়াতে আসত। সুদর্শন, সুশিক্ষিত ছেলে। এতদিন বাদে আপনার কাছে লুকিয়ে লাভ নেই, আমরা বেশ খুশিই ছিলাম যখন দেখতাম ঋতেশ আর মিলি গল্পগুজব করছে।


আত্মহত্যা খুন কখন জানতে


পারলেন?


ময়নাতদন্তে মাথায় আঘাতের প্রমাণ মেলে। সেটা ফরেনসিকে জানা যায় যে সজোরে কেউ পিছন থেকে আঘাত দিলে তবেই অমন আঘাতের চিহ্ন পাওয়া যায়।


সন্দেহটা আপনার দেওরের ওপর


একদম ঠিক ধরেছেন।


আচ্ছা, এবার আপনি বাইরে যান


এবং আপনার কর্তাকে পাঠিয়ে দিন। মনোজবাবু সিগারেটটা পা দিয়ে ঘষে শেষের স্তিমিত আগুনটুকু নিভিয়ে ঘরে ঢুকলেন। খাটে পা ঝেড়ে বসে বললেন,


-আপনার সঙ্গে আপনার ভাইয়ের


বলুন কি জানার আছে আপনার?


বয়সের তফাত কত?


- এটা আবার তদন্তে কিসে কাজে


লাগবে? যাইহোক আমার থেকে ও ছ'বছরের ছোট আর আমার বোন ওর থেকে তিন বছরের।


বেশ। আপনাদের পারস্পারিক


বোঝাপড়া কেমন ছিল?


- পারস্পারিক বোঝাপড়া ভালই ছিল। দেখুন ও নির্বিবাদী ভাল ছেলে ছিল- সেটা আমাকে স্বীকার করে নিতেই হবে। বড় ভাই বলে শ্রদ্ধাভক্তি করত। যা বলতাম শোনার চেষ্টা করত। আমার বিপদের সময় নিঃশর্তে পাশে এসে দাঁড়িয়েছে। তবে আমাদের মনে আদানপ্রদান কোনওদিনই তেমন ছিল না।


আপনার মেয়ের সঙ্গে আপনার ভাইয়ের স্ত্রীর সম্পর্কের জন্য কী কখনও ভাইকে দায়ী মনে হয়?


হ্যাঁ, মনে হয়। মলয় তো ডিভোর্স করে দিতে পারতো। দেওয়ার কথা মনে হয়নি?


-আপনি কি আমাকে খুনি সাব্যস্ত করতে চাইছেন? আমি কিন্তু তখন স্পটেই উপস্থিত ছিলাম না। আমি এবং আমার গিন্নি দোকানবাজার করতে গেছিলাম।


স্পটে সবসময় উপস্থিত থাকতে হয় কে বলল আপনাকে? লোক দিয়েও কাজ সারা যায় বইকি।


সুপারি কিলার। হাসালেন সত্যি। তাও আবার যে ভাই আমার অন্নদাতা হয়ে উঠেছিল। এত বেইমান আমি নই। রাগ ওর স্ত্রীকে কেন্দ্র করে ছিল কিন্তু সেটার জন্য ওর ভালমানুষিকে দায়ী করতাম। আর শেষের দিকে বোঝাতে আমার মেয়েও বুঝতে পেরেছিল। সারা জীবনটা ওর সামনে পড়ে। এভাবে নিজের পায়ে কুড়ল মারার কোনও মানেই হয় না।


ঋতেশ বলে কোনও


গৃহশিক্ষকের কাছে আপনার ছেলে পড়ত, তার সঙ্গে একটা সম্পর্ক গড়ে উঠছিল বলে আমি শুনছিলাম।


আমি নিজের কাজকর্ম নিয়ে ব্যস্ত থাকতাম। তাই এই নিয়ে ঠিক বলতে পারছি না।


আপনার ছেলে কোথায়? তার সঙ্গে একটু কথা ছিল।


ওকে নিয়ে আবার টানাটানি কেন? ও তো তখন বাচ্চা ছেলে।


সেইজন্যেই দরকার।


আপনাদের স্মৃতি থেকে যে সব তুচ্ছ ঘটনা মুছে গেছে তা ওদের স্মৃতিতে ধরা থাকে। যাইহোক, আপনার ছেলে কোথায় বললেন না তো।


কলেজে গেছে।


কোন কলেজে পড়ে শানু? কোন ইয়ার? নামটা রূপসার মুখে শুনে একটু চমকে গেছিলেন ভদ্রলোক। মুখের ভাবে তা স্পষ্ট। কিন্তু পরক্ষণেই সামলে নিলেন নিজেকে।


শানু এখন ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ে। এমসিকেভি কলেজে। ফার্স্ট ইয়ারে।


বেশ। আর আপনাদের বেশি বিরক্ত করব না। আজকের মতো উঠছি। আপনাদের সকলের মোবাইল


উপন্যাস


নম্বর আমাকে দিন।


মলয়ের দাদা-বউদি যথাক্রমে নিজেদের এবং তার পরে মিলি এবং শানুর ফোন নম্বর দিল। যাওয়ার আগে রূপসা একবার জিজ্ঞেস করল,


আপনার ছেলে এবং মেয়ের সঙ্গে কথা বলার জন্য কখন এলে সুবিধে হবে?


সে ওরাই ভাল বলতে পারবে। আপনি ওদেরকেই ফোন করে জেনে নেবেন।


মলয়ের দাদার কথা বলার ভঙ্গিতেই স্পষ্ট যে রূপসা বিদায় হলেই তারা বাঁচে।


আর অযথা কথা বাড়াল না রূপসা তবে বলে গেল যে প্রয়োজন হলেই যে আসবে।


বেরিয়ে ঘড়ির দিকে চোখ রাখল রূপসা। প্রায় দুটো বাজে। একটু খিদে খিদেও পাচ্ছে। সামনে একটা ক্যাফে নজরে এল। ভাবল সেখানে গিয়ে একটু কিছু খেয়ে নেবে। সুসজ্জিত বাতানুকূল


ক্যাফেতে ঢুকে সত্যি বেশ আরামবোধ করল রূপসা। তখনই তার মাথায় খেলে গেল আইডিয়াটা। সে তৎক্ষণাৎ মিলিকে ফোন করল। কিন্ডারগার্টেন স্কুলগুলোতে বেশিরভাগই দুপুরের দিকে ছুটি হয়ে যায়। কচিকাঁচার দল বাড়ি গিয়ে স্নান-খাওয়া সেরে যাতে নিশ্চিন্তে ঘুমোতে পারে। বিশ্রাম নিতে পারে। প্রথমবার ফোনটা বেজে গেল। রূপসা ততক্ষণে একটা চিকেন স্যান্ডউইচ আর কোল্ড কফি অর্ডার দিয়ে দিয়েছে।


খানিক বাদে অচেনা নম্বর দেখে মিলি কল ব্যাক করল।


কে ফোন করেছিলেন এই নম্বরে?


আমি মানে রূপসা সান্যাল। আমাকে নিয়োগ করা হয়েছে তোমার কাকিমা অর্থাৎ কেয়া দেবীর খুনের। মামলায় পুনরায় তদন্ত করার জন্য। তোমাদের বাড়িতে গেছিলাম। মায়ের কাছ থেকেই তোমার ফোন নম্বর পেয়েছি।


-আচ্ছা। আচ্ছা। বলুন কি জানতে চান। কথা বলার ভঙ্গিতেই রূপসা টের


পেল যে মিলির কাছে তার আগমনের খবর পৌঁছে গেছে। খুব বেশি আশ্চর্য তাই সে হল না।


এখন কোথায় আছ তুমি। তোমার কি ক্লাস শেষ হয়ে গেছে? তোমাকে কিন্তু তুমি করে বললাম। আশা করি কিছু মনে করোনি।


আমি বাড়ি ফিরছি। বাসে আছি। আমাকে তুমি বললেই খুশি হব। আমিও কাউকে চট করে আপনি বলতে পারি না।


তাহলে তোমাদের বাড়ির গলি দিয়ে বেরিয়ে বড় রাস্তার ওপর যে ক্যাফেটা আছে সেখানে চলে এসো।


আমি ওখানেই বসে আছি।


আচ্ছা, আমি পাঁচ মিনিটে পৌঁছে যাব।


ততক্ষণে রূপসা মনে মনে গুছিয়ে নিল কি কি প্রশ্ন মিলিকে করবে। প্রথমে এলোমেলো কথা বলে একটু সহজ করে তুলতে হবে কারণ ইতিমধ্যেই তাঁর অভিভাবকরা ভাল করেই তার মগজধোলাই করেছে নিশ্চয়ই। মিনিট ছয়েক বাদে কাচের দরজা ভেদ করে উল্টো ফুটে একটি মেয়েকে লক্ষ করল রূপসা। কুর্তি-লেগিংস পরা। যুবতী মেয়ে। কাঁধে ব্যাগ। দাঁড়িয়ে সে ফোনে কথা বলে চলেছে। রূপসার মন বলল এই সেই মেয়ে যার অপেক্ষায় সে বসে আছে, মগজধোলাই হয়তো চলছে তখনও। সে দৃষ্টি ঘোরাল যাতে মিলি যদি সেই ব্যক্তি হয়, তার দিকে যে নজর রাখা হচ্ছে যেন টের না পায়। মিনিট দুই বাদে কালো আর গোলাপি রঙের ছাপা ফুল ফুল একটা কুর্তি পরে মেয়েটি ঢুকল। জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে ভার দিকে তাকিয়ে মোবাইল বাজাল। ঝংকার দিয়ে রূপসায় মোবাইল বেজে উঠলে মিলি আশ্বস্ত হয়ে আসন গ্রহণ করল। একগাল হেসে রূপসা বলল,


-কি খাবে আগে বলো?


না না, কিছু খাব না।


সেকি ইস্কুল থেকে ফিরছ তো। খিদে পায়নি।


না না। এই তো বাড়ি গিয়ে আবার ভাত খেতে বসবো। সে যখন যাবে তখন খাবে। এখন অল্প কিছু খাও। লজ্জার কিছু নেই। আমিও তো খাচ্ছি। তাহলে তোমার জন্য একটা কোল্ড কফি আর স্যান্ডউইচ বলছি। মিলি নীরবে মাথা নাড়ে।


তুমি কোন স্কুলে পড়াও মিলি?


একটা কিন্ডারগার্টেন ইস্কুলে। নাম হাম্পটি ডাম্পটি।


উপন্যাস


আমি কাকিমার বিষয়ে কথা বলতে চাই না। ওই একটা ঘটনা আমাদের পরিবারকে শেষ করে দিয়েছে। আমার কাকাই আজ জেলের পিছনে। ভাবতেই কেমন লাগে।


কিন্তু কিছু তথ্য না পেলে যে


কাকাইকে জেল থেকে বের করে আনতে পারব না। যেদিনের ঘটনা সেদিনের কথা বলো তুমি। তোমার আর কেয়া দেবীর সম্পর্ক নিয়ে আমার তেমন কৌতূহল নেই। এরকম একটা দিন সব নিশ্চই স্মৃতি থেকে মুছে যায়নি।


গেল মিলি। আরেকবার স্যান্ডউইচে কামড় বসিয়ে কফিতে চুমুক দিল। তারপর খানিক আনমনা হয়ে বলল,


ও ঠিক আমাদের গ্রুপে ছিল না।


ঋতেশ কি করত যখন তোমার ভাইকে পড়াতা


কোন একটা বেসরকারি সংস্থায় কাজ করত আর ক্যালকাটা টেকনিক্যাল কলেজে তখন এএমআইই পড়ত।


বাহ। বেশ নাম তো। কতদূর তোমার বাড়ি থেকে?


কুড়ি মিনিট লাগে। দুটো অটো বদলাতে হয়। বাস পেয়ে গেলে টানা যাওয়া যায়। কিন্তু বাস সেই পনেরো মিনিট অন্তর অন্তর।


যদি দশ দশ করেও অটো ভাড়া ধরি, তাহলে প্রতিদিন চল্লিশ টাকা। মানে নশো ষাট টাকা মাসে। শনি রবি ছুটি ধরে নিয়েই হিসাবটা করলাম। তা মাইনে যা পাও তাতে পুষিয়ে যায়?


তা যায়। কারণ আড়াই হাজার টাকা মাইনে হলেও ওই ইস্কুলে পড়ানোর সুবাদে আমি অনেক টিউশন পেয়ে যাই।


এটা অবশ্য বেশ ভাল ব্যাপার। তা


কতদিন আছ এই ইস্কুলে?


এই তো ছয় মাস হবে।


তা টিউশন কিছু পেয়েছ?


হ্যাঁ, দশটা স্টুডেন্ট আমার।


বিএইচইউ-তে ভূগোল নিয়ে অনার্স করার পর কি করলে?


এখানে এসে অর্থাৎ ক্যালকাটা ইউনিভারসিটি থেকে মাস্টার্স করলাম।


বিএইচইউ থেকে করলে না কেন?


বাইরে থাকার খরচা আছে।


টাকা-পয়সার দরকার, তাই না।


তার মানে বাবা কারখানা খুব ভাল


চালাতে পারতেন না?


- না, সবকিছু তো কাকাই দেখত।


বাবা নতুন করে কাজ শিখছিল। রাতারাতি কি আর জ্ঞান অর্জন বা অভিজ্ঞতা লাভ হয়? তাছাড়া কাকাই যেমন ব্যবসা বুঝত, বাবার অত ব্যবাসায়িক বুদ্ধি নেই। এখন ওই খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে যা চলে। তারপর ভাইয়ের পড়ার খরচও বিপুল।


কাকাইয়ের কথা উঠলই যখন-তুমিও কি কেয়া দেবীকে ভালবাসতে?


যদি আপনার আপত্তি না থাকে


একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলল মিলি। ততক্ষণে মিলির কোল্ড কফি আর স্যান্ডউইচ চলে এসেছে। কোল্ড কফিতে একটা চুমুক দিয়ে সে বলল,


পরদিন আমার বেনারস যাওয়ার ছিল। আমি তাই আমার বন্ধুবান্ধবদের সঙ্গে দেখা করতে গেছিলাম।


-তুমি স্মৃতি হাতড়ে একদম সকাল থেকে শুরু করো মিলি। কে কে ফোন করল। কাটার সময় বেরোলে। কি খেয়েছিলে মনে করতে পারলে সেটাও বলতে পারো।


আমি চলে যাব পরের দিন বলে


অনেক ফোনই এসেছিল। সকালে সাতটার সময় আমার পিসি ফোন করেছিল।


আচ্ছা। কি বলছিলেন উনি?


উনি বললেন যে তোর কাকিমা তো আমাদের এখানে আসছে। তুইও চলে আয়। দুপুরে খাওয়াদাওয়া করে তোকে গাড়ি করে পাঠিয়ে দেব। আবার কত দিন দেখা হবে না। আমি তো যেতে পারছি না। জানিসই তো আমার শ্বশুরমশাই শয্যাশায়ী।


তা তুমি কি বললে?


আমার সেদিন বন্ধুবান্ধবদের সঙ্গে দেখা করার কথা ছিল। আমার এক বন্ধুর বাড়িতে আমরা সবাই মিলে দেখা করব আর ওর বাড়িতেই বন্ধুর মা অর্থাৎ কাকিমা


খাওয়াদাওয়ার ব্যবস্থা করেছিলেন।


পারবে? কোন বন্ধুর বাড়ি মনে করে বলতে


সুমনার বাড়ি। আমাদের পরের স্টপেজেই।


কে কে এসেছিল মনে আছে?


অলিভিয়া, শ্রীতমা, অগ্নিভ, রজত


আর আমি। আর সুমনা তো ছিলই।


আর ঋতেশ? একটু বুঝি থমকে


পড়ত মানে এখন পাশ করে গেছে। নিশ্চয়ই ভাল চাকরি করে এখন। তা বিয়ের কথা ভাবছ না।


উদাস হয়ে গেল মিলির দৃষ্টি। একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল,


গেছে।


নাহ্য অনেক আগেই ওই সম্পর্ক যুচে


বেশ, আমি একটা অন্য কথা


তোমাকে জিজ্ঞেস করি। তোমাদের আমি যেমন সামনে দেখতে পারছি, কথা


বলছি... ফলে কি একটা সম্যক ধারণা তৈরি হচ্ছে তোমাদের সম্পর্কে। তোমার কাকিমাকে তো আমি দেখতে পাচ্ছি না। তুমি কিছু কি ওঁর সম্বন্ধে বলতে পারো। ওঁর পছন্দ-


অপছন্দ। ওঁর ভাবনাচিন্তা।


কাকিমা রোজ ডায়রি লিখত। এটা আমি জানি। আর ডায়রিটা লুকিয়ে রাখত


যাতে কেউ না পড়ে। আপনার কাজে লাগবে সেটা হাতে এলে। আমি সরিয়ে রেখেছিলাম। কালকে যদি এই সময় আসেন আমি আপনার হাতে তুলে দেব। আমিও চাই এই খুনের কিনারা হোক। উচিত ব্যক্তি শাস্তি পাক। শেষের কথার মধ্যে এত দৃঢ়তা ছিল যে রূপসার মনে হল খুনির আভাস বুঝি মিলির আছে। মিলির দিকে তাকিয়ে তাই রূপসা বলল,


তুমি সময়মতো মুখ খোলোনি কেন?


আইন আদালত তো প্রমাণ চায়? আর আমি মানসিক দিক দিয়ে তখন এত বিপর্যন্ত ছিলাম যে মাথা ঠিকমতো কাজ করত না।


নার্ভাস ব্রেকডাউন মতো হয়ে গেছিল।


-তুমি জানো তোমার কাকা নির্দোষ? মাথা নাড়ে সে। তারপর বলে,


-খুনি ভীষণ চালাক। আমি কালকে এই সময় এসে ডায়রিটা দিয়ে যাব।


তোমার ভাইয়ের সঙ্গেও আমার কথা বলা দরকার।


সন্ধে ছ'টার পর ওকে পাবেন।


চেনাজানা কেউ বেরিয়ে যায় তাহলে একটু খোঁজখবর নেওয়া যাবে।


ফোন করে নেবেন।


কিন্তু একটা কথা বলো-সেদিনকে তোমার কাকিমা ফিরে এসেছিলেন কেন?


ভেবেছি।


এটা তো আমিও কতদিন।


আর উনি যে ব্যাঙ্ক থেকে ওঁর গয়না তুলেছিলেন তুমি জানো?


কই না তো!


গয়নাগুলো কি উদ্ধার হয়েছিল?


গয়নার কোনও খবর কেউ জানে না। এই আপনার মুখ থেকে প্রথম শুনছি।

রূপসার মুখেও চিন্তার ভাঁজ ফুটে ওঠে।

ভুরু কুঁচকে যায় তার।


(দ্বিতীয় পর্ব পরের সংখ্যায়)


Comments


ssss.jpg
sssss.png

QUICK LINKS

ABOUT US

WHY US

INSIGHTS

OUR TEAM

ARCHIVES

BRANDS

CONTACT

© Copyright 2025 to Debi Pranam. All Rights Reserved. Developed by SIMPACT Digital

Follow us on

Rojkar Ananya New Logo.png
fb png.png

 Key stats for the last 30 days

bottom of page