প্রতিরোধের অনেকটাই আপনার হাতে..
- রোজকার অনন্যা
- Jul 6
- 2 min read
ডাঃ রাজীব ভট্টাচার্য
কনসালট্যান্ট মেডিক্যাল অঙ্কোলজিস্ট, পিয়ারলেস হসপিটাল, কলকাতা

বাড়িতে কারও ক্যান্সার ধরা পড়লে বাড়ির লোকজনের প্রশ্ন, ‘ডাক্তারবাবু, কীভাবে আমরা নিজেদেরকে ক্যান্সার থেকে দূরে রাখতে পারবো?’ বিশ্ব ক্যান্সার দিবস পালনের উদ্দেশ্যও কীভাবে আমরা ক্যান্সার প্রতিরোধ করবো সে ব্যাপারে সচেতন করা। ক্যান্সার প্রতিরোধের কতগুলো সহজ উপায় আছে। চলুন একে একে সেই উপায়গুলো জেনে নিই..
১. ধূমপান ও মদ্যপানের বদভ্যাস ছাড়ুন
ক্যান্সারের মতো মারণব্যাধির জন্য দায়ী বদভ্যাসগুলো থেকে দূরে থাকুন। ধূমপান ও মদ্যপান ছাড়তেই হবে। আমরা জানি ফুসফুসের ক্যান্সারের কারণ ধূমপান আর লিভার ক্যান্সারের অন্যতম কারণ মদ্যপান। এছাড়া ওরাল বা মুখগহ্বরের ক্যান্সার থেকে বাঁচতে তামকজাত দ্রব্য (পানমশলা, খৈনি, গুটখা) থেকে দূরে থাকুন। ফুসফুসের ক্যান্সার খুব একটা কমন ক্যান্সার না হলেও, মৃত্যুর দিক থেকে অনেকটাই এগিয়ে। কারণ প্রাথমিক পর্যায়ে সাধারণত এটা ধরা পড়ে না। তৃতীয় বা চতুর্থ পর্যায়ে ধরা পড়ে। যিনি ধূমপান করেন না, তাঁর চেয়ে একজন ধূমপায়ীর ফুসফুসের ক্যান্সারে আক্রান্ত হবার সম্ভাবনা অন্তত ৩০গুণ বেশি। ফুসফুসের ক্যান্সার প্রতিরোধে ধূমপান ছাড়াও ঘুঁটে বা কয়লা পোড়া ধোঁয়া, অ্যাসবেস্টসের দূষণ থেকে দূরে থাকুন। মাস্ক ব্যবহার করুন।
২. অ্যাক্টিভ হেলদি লাইফস্টাইল
শরীরচর্চা করুন, হাঁটুন। কমবয়সীরা দৌড়ান। নিয়মিত শরীরচর্চা করলে শরীরে হরমোনের তারতম্য হয় না। সেগুলো সুন্দর ব্যালান্সের মধ্যে থাকে। বাড়ে শরীরের ইমিউনিটি পাওয়ার অর্থাৎ রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা। ওজনও থাকে নিয়ন্ত্রণে। ফলে ক্যান্সারও আমাদের থেকে অনেকটাই দূরে থাকে।
৩. ডায়েট বা খাদ্যাভ্যাস
একটা কথা ভেবে দেখুন, আমরা যে খাবার খাচ্ছি, সেটা যদি খারাপ হয়, তাহলে তা শরীরের মধ্যে গিয়ে বিভিন্ন খারাপ প্রভাব ফেলতে পারে, যার অন্যতম একটি হল ক্যান্সার। প্রতিদিনের ডায়েটে রাখুন সবুজ তাজা শাকসবজি, ফলমূল ও ফাইবারযুক্ত খাবার। রেড মিট ও প্রক্রিয়াজাত খাবার যতটা সম্ভব এড়িয়ে চলন।
৪. ইনফেকশন বা সংক্রমণ
কিছু সংক্রমণ আছে যেগুলো ক্যান্সারের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। যেমন হিউম্যান প্যাপিলোমা ভাইরাস (এইচপিভি)। এর থেকে সারভাইক্যাল বা জরায়ুমুখ এবং ফ্যারিংস বা গলার ক্যান্সার হতে পারে। এইচপিভি সাধারণত সেক্সচুয়াল অ্যাক্টিভিটি থেকে ছড়ায়। প্রতিরোধে রয়েছে ভ্যাকসিন। এ ছাড়া আরও কিছু সংক্রমণ রয়েছে যেমন এইচআইভি, যা থেকে লিম্ফোমা জাতীয় বিভিন্ন অসুখ হতে পারে। আবার হেপাটাইটিস ভাইরাস থেকে লিভার ক্যান্সার হবার সম্ভাবনা থাকে। হেপাটাইটিস প্রতিরোধেও আছে ভ্যাকসিন।
৫. সূর্যের ক্ষতিকর রশ্মি
স্কিন বা ত্বকের ক্যান্সার প্রতিরোধে বিদেশে সাদা চামড়ার মানুষেরা নিজেদেরকে সূর্যালোক থেকে দূরে রাখেন। আমাদের এখানেও যাঁরা খুব ফর্সা অর্থাৎ যাঁদের স্কিন পিগমেন্টেশনে ঘাটতি রয়েছে, তাদের সূর্যলোকে বেরনোর আগে ভালো ব্র্যান্ডের সানস্ক্রিন ব্যবহার করা উচিত।

৫. স্ক্রিনিং
স্ক্রিনিং হয়তো ক্যান্সার থেকে বাঁচাবে না, কিন্তু ক্যান্সার ছড়িয়ে পড়া থেকে বাঁচাবে। প্রাথমিক পর্যায়েই জানিয়ে দেবে শরীরে ক্যান্সার বাসা বেঁধেছে, এবার চিকিৎসা শুরু করুন এবং অ্যাডভান্স ক্যান্সারের হাত থেকে বাঁচুন। আর এখন প্রাথমিক পর্যায়ে ক্যান্সার ধরা পড়লে রোগী পুরোপুরি সুস্থ হয়ে ওঠেন। বর্তমানে কোলন, স্তন, জরায়ুমুখ ও ফুসফুস ক্যান্সার প্রতিরোধে রয়েছে স্ক্রিনিং।
এই সহজ, সরল কতগুলো নিয়ম মনে চললে নিজেকে ক্যান্সারের ভয় থেকে অনেকটাই মুক্ত রাখতে পারবেন। জেনেটিক কারণেও অনেক সময় ক্যান্সার হয়। এই জেনেটিক কারণ ছাড়া প্রতিরোধের বাকি উপায়গুলো কিন্তু আপনারই হাতে।
Comments